You are on page 1of 3

"যোনিবর্গ কালশরীরম্"

মায়িক মল ও কর্ম মলওও বন্ধন

"যোনিবর্গ "মানে বিভেদ জ্ঞান। এটা আমার এটা আমার নয়, এইটা সুন্দর আর এই টা অসুন্দর বা এটা ভালো বা এটা মন্দ,
এই রকম সব নির্ণয় জ্ঞানই যোনির্বগের উদাহরণ স্বরূপ। আর এই ধরনের জ্ঞানকেই মায়িক মল বলে। "কালশরীরম্ " কথার
অর্থ হল কার্য রূপায়ন। এই কাজটি করা হয়, এই কাজটি করতেই হবে। এই কাজটি অপূর্ন রয়েছে আবার এই কাজটি সুচারু
রূপে পূর্ন হয়েছে। এগুলি কালশরীরের উদাহরণ, এই জ্ঞানকেই কর্ম মল বলে।

যোনিবর্গ শব্দটি দুটি শব্দ দ্বারা নিস্পন্ন হয় যোনি এবং বর্গ। যোনি শব্দটির অর্থ হল " বিশ্বের কারন", বর্গ কথাটির অর্থ হলো"
শ্রেণি, বিভাগ বা জাতি"। আমাদের এই বিভক্তিকরণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের শরীরের সাথেও যুক্ত। আমারা জগৎ
সংসারকে কে মায়া শক্তি দ্বারা বিভক্ত করে দেখি। এই বিভক্তিকরন আমদের শরীরের সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত। এইটি মধ্যমা
আঙু ল এইটি তর্জ নী। ইহা হাটু ইহা কুনই। এই বিভক্তিকরণ জ্ঞানই যোনি বর্গ। এই বিবৃতিগুলি প্রতক্ষ্যভাবে শরীর সম্বন্ধে
সর্ম্পক যুক্ত। আর পরোক্ষ বিবৃতি গুলি এই রকম এই হলো আমার স্ত্রী, এই হলো আমার বন্ধু, এই হলো আমার চাকর,এই
হলোভাত এই হলো থালা। এই রকম পরোক্ষ অনুভূতি বা আসক্তি বা অনুরাগ।

প্রতক্ষ্য ও পরোক্ষ এই দুই বর্গ আমাদের শরীর ও শরীরের সাথে যুক্ত বর্হি জগৎ এর সৃষ্টির কারন। এই শরীরই যোনিবর্গ বা
বিভেদ জ্ঞানের কারন। যখন আমরা সব দিক দিয়ে নিজাদের সীমাবদ্ধ অনুভব করি, জ্ঞানের দিক দিয়ে বা ক্রিয়ার দিক
দিয়ে, ইহাই যোনিবর্গ। আমরা এই সীমাবদ্ধতা অনুভব করি পঞ্চ কুঞ্চকে কাল তত্ব থেকে, কাল হলো প্রথম তত্ব তার অর্থ হলো
ক্রিয়া শক্তির সীমাবদ্ধতা, দ্বিতীয় কুঞ্চক হলো বিদ্যা এর অর্থ হলো জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, তৃ তীয় অর্থ হলো রাগ,এর অর্থ হলো
সবকিছু র প্রতি অনুরাগ বা আসক্তি এই সীমাবদ্ধতা, চতু র্থ কুঞ্চক হলো নিয়তি, এর অর্থ হলো কোন বিশেষ কিছু র প্রতি
আসক্তি,শেষ কুঞ্চক হলা কলা সময়য়,স্থান, রূপ বা আকারের সীমাবদ্ধতা । আমরা সীমাবদ্ধতা অনুভব করতে আরম্ভ করি
কাল তত্ব থেকে পৃথিবী তত্ব অবধি। মায়া তত্ব থেকেই বিভিন্ন জগতের অভিব্যক্তি হয়। মায়া তত্বের পর থেকে কাল তত্ব থেকে
শুরু, আর মায়া তত্বের উপরে শুদ্ধ তত্বের প্রকাশ। সুতরাং পৃথিবী থেকে কাল তত্ব অবধি যোনিবর্গ এবং মায়িক মলের
অবস্থান।

এখন আমরা কালশরীর সম্বন্ধে আলোচনা কোরবো। আগেই বলা হয়েছে এর অর্থ হলো কার্যের প্রতিরূপ বা রূপায়ন। যখন
শরীর দ্বারা আমরা কোন কর্মে প্রবেশ করি, তখন আমার আত্মাই আমার জ্ঞান রূপ ধারন করে, আমার মনই আমার চিন্তা
রূপ ধারন করে, এবং এগুলি আমাদের মধ্যে ছাপ বা প্রভাব বা রূপ ছেড়ে যায় আমাদের মধ্যে, ইহা কালশরীরম্। যখন কোন
মানুষ ভাবে বা চিন্তা করে যে "সে অযোগ্য, সে হেরে গেছে,আমি আর বেশী দিন বাঁঁচব না বা আমি প্রায় মৃত প্রায়" এই ধরনের
মনোদশা কর্ম মলের ফলে। স্পন্দন কারিকাতে বলা হয়েছে " যখন আমরা আমাদের ব্যক্তি স্বতন্ত্রতা ও স্বাধীনতার জন্য, ধীরে
ধীরে আমরা অকেজো, শক্তিহীন, কোন কিছু রই অযোগ্য হয়ে যাই তখন আমাদের মধ্যে বিভিন্ন সঙ্কল্প বিকল্প চলতে থাকে "।
এখানে আরাকটি বিষয় প্রানিধান যোগ্য যে অজ্ঞানতার বা সীমাব্ধতার মূল স্তম্ভই হলো আনব মল, আনব মলের সাথে অন্য
মল দুটির অস্তিত্ব থাকে। আর আনব মলের নিবারনের সাথে সাথে অন্য মল দুটি বিলুপ্তি পায়।

স্বচ্ছন্দ তন্ত্রে খুবই সুন্দর বর্ননা করা হয়েছে :

প্রথম সুত্র অনুযায়ী আমারা দেখেছি যে চৈতন্য হলো স্বতন্ত্র পরম চেতনা কিন্তু আনবমলের কারনে ক্রিয়া(কাল), জ্ঞান(বিদ্যা)
সীমাবদ্ধতার দ্বারা পরম চৈতন্য বদ্ধ হয় বা তার স্বাতন্ত্র্যতা নস্ট হয়। এরপর সে (রাগ) আসক্তি ও সময় (কাল)দ্বারা
অভিনিবিষ্ট হয়। এবং সে নিয়তী ( কোন বিশেষ কিছু র উপর আসক্তি) সীমাবদ্ধ হয়। এই সীমাবদ্ধতা আমাদের অহং কে পুস্ট
করে। ইহা আমাদের শরীর বোধের সাথে যুক্ত হয় এবং সত্ব, রজঃ ও তমঃ গুনের সাথে মিশ্রিত হয় এবং সে প্রতিষ্ঠিত হয়
বুদ্ধিতে। সর্বভৌমিক পরম চেতনা অহং, ব্যক্তি চেতনায় ছোট আমিতে রূপান্তরিত হয়। এরপর মন,জ্ঞানেন্দ্রিয়, কর্মন্দ্রিয়, পঞ্চ
তন্মাত্রা এবং পঞ্চ ভূ ত সেই পরম চেতনা সীমাবদ্ধতার চরম পরাকাস্টায় পৌঁছায়।

এখানে দু একটি বিষয় আরেকটু পরিস্কার করে নেওয়া উচিত। যেমন " নিয়তি ", আমরা ভাবি যে এটা আমর বাড়ি আর
ওটা তোমার বাড়ি, এখন ব্যাপার টি হচ্ছে বাস্তবে এইটা তোমার বাড়ি নয়, কারন তু মি সর্বব্যপী চৈতন্য আত্না, কিন্তু নিয়তির
সীমাবদ্ধতার কারনে তু মি ভাবছ এটা তোমার বাড়ি। তারপরে বুদ্ধি কী? বুদ্ধিকে ছাপিয়ে রয়েছে চৈতন্য। চৈতন্য যখন
সীমাবদ্ধতার মধ্যে প্রবেশ করে তখন তা রূপান্তরিত হয় বুদ্ধিতে। পঞ্চ সুক্ষ ও পঞ্চ স্থুল ভূ ত, পঞ্চ সুক্ষ ভূ ত বা তন্মাত্রা হল শব্দ,
স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ এই সুক্ষ ভূ ত গুলি আবার স্থুল ভূ ত গুলির জড়িত, স্থুল ভূ ত গুলি হলো আকাশ,বায়ু, অগ্নি,জল ও
পৃথিবী।

আমরা আগেই দেখেছি অন্য দুটি মল আনব মলের মধ্যেই অবস্থান করে। আনব মলের মধ্যে ভেদবুদ্ধি জ্ঞান ঊৎপণ্ণ করে
মায়িক মল। এবং যেখানে সে স্বরূপ কে জ্ঞাত বা স্বীকৃ তি দিতে পারে না তা কর্ম মল। ফলে পুনঃ পুনঃ জন্ম মৃত্যু চক্রে ঘরতে
থাকে,প্রমোদ ও দুঃখে দুলতে থাকে। কর্ম দুরকমই হতে পারে ভাল বা মন্দ, কিন্তু তোমার ভাল কর্ম দ্বারাও বদ্ধ হবে আবার
খারাপ কর্ম দ্বারাও বদ্ধ হবে। তোমার ভাল বা মন্দ কর্ম দ্বারা মুক্তি পাওয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তোমার স্বাধীন ক্রিয়া
তোমাকে পরম চেতনার দিকে নিয়ে যাবে। আসলে ইহা প্রকৃ ত পক্ষে কোন ক্রিয়া নয় ইহা স্বতন্ত্রতা। আসলে কর্ম সবসময়ই
সীমাবদ্ধ এবং ভাল মন্দ দ্বারা জড়িত।

রামকৃ ষ্ণ দেব যেমন বলেছেন লোহার শিকল ও শিকল, সোনার শিকল ও শিকল তাই দুই থেকেই মুক্তি চাই।

এখন প্রশ্ন আসে কী ভাবে এই তিন মল আমাদের বন্ধনে আবদ্ধ করে?

You might also like