You are on page 1of 2

"মনরে কৃষি কাজ জান না। এমন মানব জমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলতো সোনা"। সাধক

রামপ্রসাদ সেনের এই
গান প্রায় সবারি শোনা । এই গানের মধ্যেই লুকিয়ে আছে জীবন সমস্যার সমাধান। মন নিয়েই আমাদের যত সব
সমস্যা শুরু।আমরা মনেই বদ্ধ, মনেই মুক্ত। মনই আমাদের বেঁধে রাখে সীমাবদ্ধতার মধ্যে। আবার মনই আমাদের আস্বাদ
দেয় মুক্তির আনন্দের। আমরা সবাই জীবনে কোন না কোন সীমাবদ্ধতা অনুভব করি। রামকৃষ্ণ কথামৃত তে একেই বারে
বারে ঠাকুর বলছেন " বদ্ধ জীব"। আমরা বদ্ধ কী সের দ্বারা ষড় রিপুর দ্বারা, মন দ্বারা, ইন্দ্রিয় দ্বারা। এর
থেকে মুক্তির উপায় কী বিবেক বৈরাগ্য জাগ্রত কর, সংযমী জীবন জাপন করা। দীক্ষা গ্রহন করা আরও কত কী? তাহলে
তুমি পাবে মুক্তি। জীবন মরন যন্ত্রণা থেকে। কিন্তু আমাদের মন যে আরেক দিকে বলে " মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর
ভুবনে"। বেশির ভাগ মানুষ কী সেই বিবেক বৈরাগ্য জাগ্রত মুক্তি চায়? দীর্ঘ ২০ বছর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন
বয়সের মানুষের সাথে কথা বলে দেখেছি তারা যে মঠে মন্দিরে বিভিন্ন গুরু আশ্রমে যাচ্চে, তারা আসলে যাচ্ছে
জীবন যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে। আমরা সাধারণত ভাগ্যে বিশ্বাসী। আমরা সুখ দুঃখ যা পাচ্ছি তা গ্রহ নক্ষত্র দ্বারা
নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু আরেক দিকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে এমন বহু মানুষ আছে যাদের জীবনে দেখা যায় কর্মের ও
পুরুষকারের জয়জায়াকার। তাদের জীবন ও কর্মকে পর্যাচোলনা করে এক মডেল তৈরির প্রচেষ্টা চলছে প্রথম বিশ্বে।
যাতে আরও বেশি মানুষ সাফল্য কে অর্জন করতে পারে।
আমরা কী সত্যি কী ভাগ্যের হাতে পুতুল? এ নিয়ে বিস্তর তর্ক বির্তক করা যেতে পারে। শুধু ইতিহাস নয়
আশেপাশে বহু মানুষই পাবেন যাদের জীবনে জ্যতিষীদের ভবিষ্যৎবানী ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আবার বহু মানুষের
জীবনে তা র্নিভুলও প্রমাণিত হয়ছে। ভাগ্য আসলে হল এক Probability বা সম্ভবনা, এই সম্ভবনা কে কী ভাবে
কর্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলে তাই জীবন। ভাগ্য + কর্ম=ফল।
ভাগ্য কি ভাবে তৈরী হয়, সেটি পর্যালোচনা করলে ব্যপারটি আরো পরিস্কার হবে। আমাদের কর্ম আমাদের ভাগ্য
তৈরী করে, কিন্তু কী ভাবে। বিভিন্ন শাস্ত্রে বিভিন্ন প্রকার সুক্ষ বিচারের মাধ্যমে এর বর্ননা দেওয়া আছে। তা
পর্যালোচনা এক সিদ্ধান্তে পৌঁছান যায় যে, আমরা এক জন্মে যে ধরনের কর্ম করি, তার দ্বারা বা আমাদের সেই
কাজের ভাব দ্বারা অনুযায়ী কর্ম সংস্কার তৈরী হয়। মানুষ যখন মৃত্যু হয় তখন তার কর্ম অনুযায়ী তার সুক্ষ
শরীরে গতি হয়। এই সুক্ষ শরীর আবার আমাদের সংস্কার সমূহ বহন করে। পূর্নজন্মে আবার সেই কর্ম গুলি সঠিক ক্ষেত্র
পেলে কর্ম গুলি অঙ্কুরিত হয়ে ফল প্রদান কর। কর্মবাদ অনুযায়ী আমরা যে কর্ম করছি তারই ফল আমরা এই জীবদ্দশায়
বা পরবর্তী কোন জীবন।এই বিষয়ের সমর্থনে বলা যায় বুদ্ধ ও মহাবীর জাতক কথা, গীতার এক জায়গায় অর্জুন
শ্রীকৃষ্ণ জিজ্জেসা করছে এই যোগ সম্পূর্ণ না করে যদি মৃত্যু বরন করি তাহলে কী এই যোগের ফল কী নস্ট হয়ে
যাবে। তখন কৃষ্ণ বলছেন "পরবর্তী কালে তুমি আবার জন্ম গ্রহণ করবে তখন আবার এই যোগ সুরু হবে"। স্বামী
অভেদানন্দের মরনের পরে এই মৃত্যু ও জন্মান্তরবাদ নিয়ে খুব সুন্দর আলোচনা করা আছে। যদিও এই সিদ্ধান্ত
বিজ্ঞানের চোখে প্রমানিত নয়। যেমন প্রমাণিত নয় জ্যতিষ ও। যখন আমরা পুনঃ জন্মগ্রহন করি তখন এই কর্মের
Graphically index পরবর্তী জীবনের রূপ রেখা বোঝার জন্য। যে রকম শেয়ার মার্কেট এ বিভিন্ন Data
Analysis করে ঐ কোম্পানি বা শেয়ারের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়। এই তত্ব কারোর বিশ্বাস না ও হতে
পারে, কিন্তু যারা ভাগ্যবাদী তাদের জন্য ভাগ্য কী ভাবে কর্ম দ্বারা তৈরী হয় তার জন্যই এই ব্যাখ্যা দেওয়া
হলো।
যারা ভাগ্যের মত Hypothetical বিষয়ে ভরসা করেননা,যারা বলেন ভাগ্য বলে কিছু হয় না
কর্মই সব, তাদের আরো সুবিধা। কারন তারা প্রথমেই ভাগ্য পুনঃজন্ম গ্রহ নক্ষত্রের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে গেছেন।
মানুষ কোন অতীত ছাড়া জন্মাল অর্থাৎ পুর্বজন্ম ছাড়া তাহলে তার কর্ম কীভাবে তৈরী হচ্ছে বা
নির্দিষ্ট হচ্ছে। জিন দ্বারা হচ্ছে?
কিন্তু মন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কর্ম নিয়ে এত কথার কী আছে, আসলে মানুষের জীবনটা কর্ম দ্বারা পরিপূর্ণ।
একথাটির অর্থ একটু গভীরতার সাথে বুঝতে হবে। আসলে আমরা ধর্ম,ইশ্বর,ভাগ্য,কর্ম বা কর্মফল এই কথাগুলি হয়ত
ভারতীয় হিসাবে কিছু ধারণা সংস্কৃতির অঙ্গ হিসাবে পাই। কিন্তু বহুল ব্যবহৃত এই কথাগুলি কে আমরা বেশির
ভাগই গভীর ভাবে ভেবে দেখিনা বা মনন করি না। হ্যাঁ , যেখানে ছিলাম আমাদের মানুষের জীবন কর্ম দ্বারা
পরিপূর্ন, কিন্তু কেন এ কথা বলা হচ্ছে। এই টি এই লেখার প্রতিপাদ্য, যে কর্ম প্রতি মূহুর্তে আমাদের কী ভাবে
তৈরী করছে বা কর্ম দ্বারা আমরা কী ভাবে তৈরী হচ্ছি। মনকে কীভাবে কৃষি কাজ শিখিয়, এই মানব জমিনএ ফসল
ফলাতে হবে।
মন কী? এই নিয়ে অনেক তাত্বিক মতবাদ আছে। কিন্তু আপাতত মন বলে একটি বস্তু আছে যা আপনি আমি অনুভব
করি প্রতি পলে তাকে মাথায় রাখলেই হবে। মন আমাদের অন্তরজগৎ ও বর্হিজগৎ এর মধ্যেখানে থেকে আমাদের সব
কর্মকে নির্বাহ করে। আমাদের মনের বিভিন্ন ভাগ নিয়ে এখন কথা বোলবো। মনের এই বিষয় গুলি স্বম্নধে এখন
অনেকেই জানেন। সাদা কথায় যেই মন দ্বারা আমরা সব কিছু কর্ম নির্বাহ করি তা আমাদের চেতন মন। একে আমাদের
চেতনার Base গ Line ধরে চলতে পার। বা অন্য ভাবে বলা যায় এটা আমাদের চেতনার প্রকাশিত অংশ। একে জাগ্রত
অবস্থা ও বলতে পারি। এই Base Line এর নিচে থাকে দুটি অংশ আর ওপরে থাকে একটি অংশ। নিচের অংশগুলি
হলো অবচেতন ও অচেতন। অবচেতন মন হলো যে মন আমদের চেতনার নিচে বা পেছনে থাকে। যেহেতু এই মন
আমদের চেতনার পেছনে থাকে তাই একে সাধারনত আমরা বেশীরভাগ লোক সরাসরি দেখি না বা চিহ্নিত করতে পারি
না। কিন্তু আমরা এর কার্যকলাপ বেশ অনুভব করতে পারি। যেমন ধরুন আপনি শুনলেন হাওড়া সঙ্গে সঙ্গে আমাদের
কারও কারও মনে হাওড়া স্টেশন কথা মাথায় আসবে বা হাওড়া স্বমন্ধিত কোন স্মৃতি মনে আসে। এরপর আপনি তার
স্বমন্ধিত বিভিন্ন স্মৃতি তে ডুবে যেতে পারেন। আবার এমন হয় ধরুন আপনারা কারোর সাথে মনমালিন্য বা ঝগড়া
হয়েছে একটু বেশী মাত্রায়, আপনি তাকে যখনই কোথাও দেখবেন আপনার মনে সেই ঝগড়ার বিরূপ মনোভাব জেগে
উঠবে। এই যে ঘটনা গুলি ঘটছে আপনারা আমার মনে এগুলো অবচেতন মনের ক্রিয়া। অবচেতন মনের ক্রিয়া অসীম।
ধরুন আপনি বাসে করে যাচ্ছেন আপনি একটা Pizz Hut দেখলেন, আপনার মনে লাস্ট বার আপনার বন্ধুদের সাথে
এখানে খেতে আসার কথা মনে পড়লো তার সাথে সেদিন কোন কোন বন্ধুর সাথে খেতে এসেছিলেন সে কথা ও মনে
পড়লো তার পরেই সেদিন কলেজে এক স্যার মারা গিয়েছিল সেই কারনে ছুটি হয়ে গিয়েছিল,স্যার খুবই ভাল
পড়াতেন মানুষ হিসাবে খুব ভাল ছিল। সব ভাল মানুষ গুলই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে, গত বছর আমার দিদা
মারা গেল খুব ভাল বাসত আমাকে। মনকে দেখুন একটু আগে পিজ্জা খাওয়ার আনন্দ থেকে কেমন ভারাক্রান্ত হয়ে গেল।
অবচেতন মন বহুমুখী ধারা প্রবাহিত নদীর মতো। পরে একে নিয়ে আলোচনা করা যাবে। একে চেতনার স্বপ্ন অবস্থাও
বলতে পারি। মনের আরেকটি অবস্থা অচেতন এই অবস্থা স্বমন্ধে অনেকের ধারনা এটি চেতনহীন এক জড় অবস্থা কিন্তু
তা নয়। অচেতন মানে হলো আমাদের চেতনার যে অংশ চেতনার সরাসরি কোনোরকম হস্তক্ষেপ ছাড়া চলতে পারে।
যেমন আমাদের শরীর বৃত্তিয় কার্যগুলি। হৃদস্পন্দন (Heart Beat), শ্বসন ( Breathing) পাচন
(Digestive) এরকম অনেক কাজ কোটি কোটি ক্যমিকাল রিঅ্যাকশন আমাদের মনের চেতনার অংশ গ্রহণ ছাড়া ঘটে
চলেছে চেতনার এই অংশ অচেতন ক্রিয়া।এই ক্রিয়া ঘটছে আমাদের সুষুপ্তিতে। এর পর আসি অতিচেতন মনে, এই
অতিচেতন মনের অবস্থান চেতন মন যাকে আমরা Base Line ধরে ছিলাম, এর পরিধি অসীম ও অনন্ত। কিন্তু
অতিচেতন অবস্থা নিয়ে মানুষের মনে অনেক প্রকার অস্পর্শী ধারণা আছে। কারন এই অবস্তায় আমরা সাধারনত সারা
জীবনে হয়ত প্রবেশ করিনা বা কোন ভাবে প্রবেশ করলেও তার স্বমন্ধে পূর্ব কোন জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা বা
Recognition না থাকায় তা অধরা থেকে যায়। এ হলো মনের তুরীয় অবস্থা।
আসলে আমরা ব্যাবহারিক জীবনে চেতন ও অবচেতন মনের আওতায় থাকি। অর্থাৎ জাগ্রৎ ও স্বপ্নের অধীনে, সুষুপ্তি
আমরা প্রবেশ করি গভীর ঘুমের মধ্যে। আর অতিচেতন বা তুরীয় থেকে যায় আমাদের নাগালের বাইরে। কিন্তু মনুষ্য
জীবনের শ্রেস্টত্বই হলো যা তার নাগালের বাইরে তাকে সে করতে চায় নিজের অধিগত। সেইখান থেকেই ধর্ম বা
ধর্মবোধ নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা।
তাই অতিচেতন কে অধিগত করার প্রথম চেতন পদক্ষেপই হলো সচেতনতা বৃদ্ধি কর।

You might also like