Professional Documents
Culture Documents
ইবনে কাসীর: দ্বীনের স্তম্ভ
ইবনে কাসীর: দ্বীনের স্তম্ভ
সংক্ষিপ্ত জীবনী
ইবনে কাসীর কবে জন্ম গ্রহণ করেছেন তা নিয়ে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। [৪] এটা হয় ৭০০
হিজরী নতু বা ৭০১ হিজরী যখন ইবনে কাসীর দামেস্কের [৫] পূর্বে বসরা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ
করেন। ৭০৬ হিজরীতে ইবনে কাসীর দামেস্কে যান তাঁর বড় ভাই আবদুল ওয়াহাব এর সাথে,
যিনি তাঁকে তাঁর বাবার মৃত্যুর পর লালন-পালন করেন, শিক্ষা দান করেন।
বুরহান আদ্-দ্বীন, ইব্রাহিম বিন আবদুর রহমান আল ফিরাজী এবং কামাল উদ্দিন ইবনে কাজী
সাহবা এর কাছে ইবনে কাসীর ফিক্হ অধ্যায়ন করেন। তখনকার দিনের রীতি ছিল যদি কেউ
কোন নির্দি ষ্ট ফিকহী মাযহাবে বিশেষজ্ঞ হতে চাইত, তাঁকে ঐ নির্দি ষ্ট মাযহাবের একটি ফিকহের
বই মুখস্ত করতে হতো। ৭১৮ হিজরীতে ইবনে কাসীর আবু ইসহাক সিরাজী লিখিত আত
তামবীহ ফী ফু রুইস শাফীয়াহ মুখস্ত করেন। [৬] তিনি ইবনে হাজীব মালেকী [৭]লিখিত মুখতাসার [৮] নামক
গ্রন্থও মুখস্ত করেন।
ইবনে আল হাজ্জার [৯] এবং তাঁর সম শ্রেণীর মুহাদ্দিসদের কাছে ইবনে কাসীর হাদীস শিখেন।
ইবনে কাসীরের শিক্ষকদের তালিকা অনেক দীর্ঘ। ইবনে কাসীর ইবনে তাইমিয়ার খুব ঘনিষ্ট
ছিলেন। তাঁর অনেক শিক্ষকদের মধ্যে যাদের থেকে তিনি অনেক শিখেছেন তারা হলেন
মুহাদ্দিস জামাল আদ-দীন, ইউসুফ আজ-জাকি আল-মিজ্জি। পরে ইবনে কাসীর তাঁর
মেয়েকে বিয়ে করেন।
লিখনী
যে কাজ দু’টোর জন্য ইবনে কাসীর সর্বাধিক পরিচিত, এমনকি জ্ঞান অন্বেষণের পথে যারা
মাত্র যাত্রা শুরু করেছে তারাও তাঁকে চিনে তা হলো, তাঁর তাফসীর যা তাফসীরে ইবনে কাসীর নামে
পরিচিত এবং তাঁর ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ আল-বিদায়াহ। এছাড়াও, জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ইবনে
কাসীর গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার মধ্যে এমনকি কাব্যও আছে। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য রচনার
বিবরণ নিছে দেয়া হল।
০১। তাফসীর আল-কোরআন আল-আজীম : কোরআন আল-কারীম এর তাফসীর।
০২। আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়া : এই ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থে মহা বিশ্বের সৃষ্টির শুরু থেকে বিশ্বের
শেষ, এমনকি এসকেটলজি পর্যন্ত আলোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থটি ১৪ খন্ডে মুদ্রিত হয়েছে।
০৩। আত্ তাকমিলাহ ফী মা’রিফা তিস সিফাত ওয়াযযুয়া’ফায়ে ওয়াল মুজাহিল : এটি জারাহ ও তাদিল
বিষয়ক গ্রন্থ।
০৪। জামি’ আল-মুসনাদ : বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থ থেকে নেয়া হাদীসের একটি সংকলন। তিনি
প্রত্যেকটি অধ্যায়কে ফিকহ্ এর বিষয়াবলী অনুযায়ী বিন্যস্ত করেছেন।
০৫। মুখতাসার উলুম আল-হাদীস : এটি হচ্ছে আবু আমর বিন আস-সালাহ লিখিত উলূম আল-
হাদীস এর একটি সংক্ষিপ্ত ভার্সন।
তাফসীর
ইবনে কাসীরের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলোর মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত হল তাফসীর ইবনে কাসীর। আজ
পর্যন্ত করা কোরআনের সর্বোত্তম তাফসীর গুলোর এটি একটি। ভূ মিকাতেই ইবনে কাসীর তাঁর
পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তাঁর পদ্ধতি ছিল আদর্শ পদ্ধতি। তাফসীর ইবনে কাসীর
হলো তাফসীর বির-রিওয়াহ [১১] অথবা তাফসীর বিল-মাশুর প্রকৃ তির। ইবনে কাসীর কোরআন
দ্বারা কোরয়ান এর তাফসীর এর ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি এই পদ্ধতির একজন সর্বোচ্চ
ব্যবহারকারী ছিলেন। তিনি কোরআন এর নির্দি ষ্ট আয়াত সম্পর্কি ত হাদীস, সাহাবাহ্ ও
তাবীঈদের মতামত ইসনাদ সহকারে উল্লেখ করেছেন। এই তাফসীরের একটা অসুবিধা হলো,
ইবনে কাসীর একটি বক্তব্যের বিভিন্ন ভার্সন ইসনাদ সহ পুনরাবৃত্তি করেছেন।
তিনি ইবনে জারীর আত তাবারী, কু রতু বী, ইবনে মিরদুইঁয়া, ইবনে আবি হাতিম এবং আল্-
বাগাভীর মতো অতীতের মুফাচ্ছিরদের বক্তব্য উদ্ধৃ তি করেছেন। যা হোক, তিনি ইবনে
জারীরের বিপরীতে গিয়ে অল্প কিছু ইস্রাঈলিয়াত উদ্ধৃ ত করেছেন এবং সেগুলোর ওপর মন্তব্য
করেছেন। ফিকহী বিষয়ে ইবনে কাসীর বিভিন্ন মাযহাবের মতামতগুলো উল্লেখ করেছেন। তিনি
কদাচিৎ ব্যাকরণগত ব্যাখ্যায় গেছেন।
দারুসসালাম এই তাফসীরের একটি অনুবাদ প্রকাশ করেছে। তবে, দারুসসালাম সংস্করণে,
একই বক্তব্যের বিভিন্ন ভার্সন এর পুনরাবৃত্তি কমিয়ে আনা হয়েছে । উপরন্তু, দুর্বল হাদীস এবং
সাহাবা ও তাবেঈদের দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা দুর্বল মতামত গুলো হয় বাদ দেয়া হয়েছে, না হয়
দুর্বলতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক ইস্রাঈলিয়াত বাদ দেয়া হয়েছে। সুতরাং এই
ভার্সনটি এরা বিক মূল ভার্সন এর ‘সংক্ষিপ্ত ভার্সন’ এ পরিণত হয়ে ছে।
শেষ কথা
ইবনে কাসীরের ছাত্র ইবনে হাজ্জি তাঁর সম্পর্কে বলেন, “প্রতিবার যখনই তাঁর সাথে আমার
সাক্ষাৎ হতো, আমি তাঁর থেকে উপকৃ ত হতাম”। ইবনে কাসীর সম্পর্কে আয-যাহাবীর মন্তব্য
হলো, “তিনি ইমাম, ঊসূল বা মূলনীতি বিষয়ে ইলমধারী, হাদীসের দক্ষ আলিম, পরিচিত
ফক্বীহ, এবং তাফসীর এর স্কলার যিনি অনেক উপকারি গ্রন্থ লিখেছেন”।[১২] ৭৭৪ হিজরীতে
২৬ শে শাবান [১৩], বৃহস্পতিবার, ইমাম ইবনে কাসীর ৭৪ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন। তাঁকে
তাঁর উস্তাদ ইমাম ইবনে তাইমিয়ার পাশেই সমাধিস্ত করা হয়,[১৪] আল্লাহ্ উভয়ের প্রতি সন্তুষ্ট
হোন।
রে ফা রে ন্স
[৯] হাজ্জার ছিলেন সেই সময়ের বিখ্যাত মুহাদ্দিস, ৭৩০ হিজরীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
[১০] এই লিংক থেকে নেয়া হয়েছে ২৯ জুন, ২০১৬ সালে ।