You are on page 1of 4

“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের

হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে
এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী,
পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতু স্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভু ক্ত বাঁদী,
যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত
কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ
করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর,
যাতে তোমরা সফলকাম হও।” [সুরাহ আন-নুর (২৪):৩১]
মিষ্টি কথার বুলি অনেক হয়েছে, আর না – এখন সময় আল্লাহর বাণীকে সিরিয়াসলি নেয়ার।
আল্লাহর দেওয়া নিয়মগুলো মেনে চলতে কেন কষ্ট হয় আমাদের? কেন আমরা
যেকোনোভাবেই একটা মধ্যমপন্থা বেছে নেই যেটা উপরে উপরে মনে হয় সঠিক, কিন্তু গভীরে
গেলে বোঝা যায় তার কিছুই ঠিক নেই?

শুরুর আয়াতটা যা বলেছে তা খুব পরিষ্কার। এর মধ্যে কোনো অস্পষ্টতা নেই একদমই-
নিজেকে এমনভাবে আবৃত করো যাতে কোনোকিছুই প্রকাশ না পায়। কিন্তু আমরা এই ‘স্মার্ট ’
প্রজন্ম প্রকাশিত হওয়ার সংজ্ঞাটাকে পাল্টে দিয়েছি। আসুন আমরা বর্ত মান দুনিয়ায়
হিজাবিদের বিভিন্ন ট্রেন্ডের দিকে একটু তাকাই, মিলিয়ে দেখি আমরা ‘হিজাবি বার্বি’ কি না!

১। “কী? ঢাকলাম তো!”

অনেক বোনকে দেখি পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে রেখেছেন, হাত আর মুখ ছাড়া কিছু দেখা
যাচ্ছে না। আপনি বলতে পারেন, “সমস্যা কি তাতে?” ব্যাপার হচ্ছে তাদেরকে পোশাকে
আবৃত বলাই যেতে পারে। কিন্তু সুবহানআল্লাহ! তাদের ড্রেস এতটাই টাইট যে কোনোকিছুই
কল্পনা করে নিতে বাকি থাকে না। তাদের শরীরের প্রতিটি খাঁজ-ভাঁজ টাইট ড্রেসে মোড়ানো
অবস্থায় প্রদর্শিত হতে থাকে। আর সেইসব বোনেরা খুব দ্রুতই উত্তর দিয়ে দেন- আমরা তো
কিছুই দেখাচ্ছি না!
আমাদের অনেকেই মনে করে এক টু করা কাপড় দিয়ে মাথাটা ঢেকে নিলেই তাকে হিজাব বলা
যাবে … সমস্যা এটাই। না, এটা সত্যি না।
একটু সময় নিয়ে দেখি আসুন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মেয়েদের হিজাবকে বুঝাতে
কী কী শব্দ ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ কিন্তু শুধু এটু কু ই বলেননি যে, মার্জি ত ড্রেস-আপ
করো। বরং তিনি বলে দিয়েছেন পোশাক-আশাকের ধরন কেমন হবে। আপনি যদি এর
কারণটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন ‘মডেস্টি’র সংজ্ঞাটা একেক
সমাজ, একেক সংস্কৃ তিতে একেক রকম।
এ ব্যাপারে ভারতীয় উপমহাদেশের সাধারণ একটা উদাহরণ দেখি আসুন। শাড়ি পরা কোনো
ভারতীয় মহিলার কাছে মিনি স্কার্ট পরা কোনো মেয়েকে অশ্লীলই মনে হবে, অথচ সে নিজেই
বুঝতে পারে না যে, শাড়িতে নিজেকে জড়িয়েও তার পুরো কোমর এবং বুক-পিঠের কিছু
অংশ প্রকাশিত হয়ে গেছে। কিন্তু এটাই তার দেশের কালচার, এর মধ্যে সে কোনো সমস্যা
দেখতে পায় না। আসলে শাড়ি একটা মার্জি ত পোশাক তার কাছে।
এভাবেই আমাদের মন-মানসিকতা কাজ করে। আর আল্লাহ ‘আল-আলিম’ জানেন
আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো। একারণেই তিনি সুবহানাহু ওয়া তা’আলা একজন মুসলিমার
ড্রেসকোড বর্ণনা করতে ‘খিমার’,  জিলবাব, হিজাব – এরকম নির্দি ষ্ট পরিভাষা ব্যবহার
 

করেছেন।

২। হিজাব এবং হায়া

আরো একটা ভু ল ধারণা যেটা অনেকের মধ্যেই আছে তা হলো, হিজাব শুধু ‘বাহ্যিক’ একটা
ব্যাপার। এটা কিন্তু সত্যি না। হিজাব হচ্ছে এমন পর্দা যা আমাদের শরীর, আমাদের ব্যবহার
এবং আমাদের কথা-বার্তাকে আচ্ছাদিত করবে। হিজাবের বাহ্যিক নিয়মগুলো আমরা
ভালোভাবেই পালন করলাম, তা সত্ত্বেও আমরা আমাদের অবাধ কাজকর্ম-চলাফেরায়
কোনো কু ণ্ঠাবোধ করলাম না, হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে গেলাম, তাহলে এই পর্দা আমাদের কি
কাজে আসবে?

৩। ক্যামেল হাম্প ট্রেন্ড

এই প্রসঙ্গ যখন উঠলো, তখন তাৎক্ষণিকভাবে আমার কাজিনের কথা মনে আসলো। সে
উপসাগরীয় অঞ্চলে বেড়াতে গিয়েছিলো (যেখানে এই ট্রেন্ড খুবই কমন)। প্রথমেই সে
আমাকে যে জিনিসটা বলেছিলো তা হচ্ছে, “এখন আমি বুঝতেছি ‘ ক্যামেল হাম্প’ কী,
যেটার কথা নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাদীসে বলেছেন।”[১]
এই প্রশ্নটা নিজেদেরকে করতে হবে আমাদের, কাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছি আমরা,
আল্লাহকে নাকি অন্য কাউকে? আমাদের মাথার সেই ‘হাম্প’ দিনদিন আরো উপরে উঠতে
থাকে, মেকাপ আরো ভারী হতে থাকে, আরো বেশি গাঢ় হতে থাকে পারফিউমের ঘ্রাণ,
আমাদের বেশভূ ষা টাইটফিট হতে থাকে আরেকটু বেশি … তারপরও আমরা দাবি করতে
থাকি আমরা পর্দার মধ্যে আছি। আমাদের হিজাব কি সবার নজরকে আমাদের দিকে
টানছে? আমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ কি আমাদের দিকে তাকাতে নিরুৎসাহিত করছে, নাকি
তা না করে আরো বেশি প্রলুব্ধ করছে তাকাতে? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে কোনো বিশেষ জুরির
রায় দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
আমাদের হিজাব এমন হওয়া উচিত যাতে আপনা-আপনিই আমাদের মাঝে হায়া এর বোধ
চলে আসে। আমরা কোনো পাবলিক প্রদর্শনীর আইটেম না যা লোকেরা দেখবে আর প্রশংসা
করবে। আল্লাহ আমাদের ধন্য করেছেন অাভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়ে, যা সংরক্ষণ
করতে হবে আমাদের, ম্লান হতে দেওয়া যাবে না কখনও। যদি আমরা সত্যিই সেভাবে
নিজেদেরকে পর্দায় আবৃত করি, যেভাবে আল্লাহ নির্দে শ দিয়েছেন অন্তরে আর বাহিরে …
তাহলে লোকজন আমাদের দিকে তাকানোরই আগ্রহ পাবে না, ক্ষতি করা তো দূরের কথা।
কেউ তাকাবে না সম্মান করে, কারও হয়তো তাকানোর আগ্রহই হবে না, আবার কেউ কেউ
তাকাবে না তাচ্ছিল্য করে। কারণ যা-ই হোক না কেন, হিজাবের উদ্দেশ্য কিন্তু সফল হলো।
আপনি ঝিনুকের মধ্যে মুক্তার মতো সুরক্ষিত থাকবেন, থাকবেন সুন্দর, মোহনীয়, দিপ্তিময়ী,
ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সূরাহ আল আহযাবে হিজাবের আরো একটি উদ্দেশ্য উল্লেখ
করেছেন, “তোমাদেরকে চেনা যাবে।”[২] এটা বেশ মজার। ইবনে কাসির (রহ) তাঁর তাফসিরে
বলেছেন, “এটা বোঝা যাবে যে, তাঁরা স্বাধীন নারী, দাসী অথবা পতিতা নয়।”[৩]
আল্লাহ সূক্ষ্ম কিন্তু সুনির্দি ষ্ট পদ্ধতি দেখিয়ে দিয়েছেন ইসলামের প্রতিনিধি হওয়ার। এই হিজাবই
আমাদের ইউনিফর্ম, আমাদের সম্মানসূচক পরিচয় বা ব্যাজ অফ অনার, আমাদের গর্ব। এই
পরিচয় ধারণ করতে হবে ভালবাসার সাথে, দায়িত্বের সাথে আর আন্তরিকতার সাথে। জানুক
পৃথিবী আমরা নিগৃহীত নই, বরং আমরা শালীনভাবে আবৃত হওয়াকে নিজেরাই পছন্দ করে
নিয়েছি।
আপনার জন্য ছোট্ট একটা প্রশ্ন আছে, যেটার উত্তর আমার নিজেরও দেওয়া প্রয়োজন।
“যদি আমরা দাবিই করে থাকি যে, আমাদের হিজাব যথেষ্ট পরিমাণে মার্জি ত এবং আমরা
সঠিকভাবে আচ্ছাদিত করেছি নিজেদেরকে, তাহলে সালাতের সময় কেন ওই ঢিলাঢালা
জালাবীব[৪] পরতে হয় – যা নামাযের রুমে পাওয়া যায়? আল্লাহ কি আমাদের শুধু সালাতের
সময় দেখেন? আমরা কি ভু লে গেছি যে, তিনি আমাদেরকে সবসময়ই দেখতে থাকেন …
সেই সময়েও যখন আমরা ‘হিজাবি বার্বি’ সেজে ঘর থেকে বের হয়ে যাই!
ত থ্য সূ ত্র

[১] আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেছেন, “দুই শ্রেণীর জাহান্নামী এখনও আমি দেখিনি। (কারণ তারা এখন নেই, ভবিষ্যতে
আত্মপ্রকাশ করবে) একশ্রেণী হচ্ছে ঐ সকল মানুষ, যাদের হাতে ষাঁড়ের লেজের মতো চাবুক
থাকবে, যা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে। দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে- ঐ সকল নারী, যারা হবে
পোশাক পরিহিতা কিন্তু তারপরেও তারা থাকবে নগ্ন, তারা পর পুরুষকে আকৃ ষ্ট করবে এবং
নিজেরাও আকৃ ষ্ট হবে; তাদের মাথা হবে উটের হেলানো কুঁ জের ন্যায়। এরা জান্নাতে প্রবেশ
করবে না এবং জান্নাতের সু-ঘ্রাণও পাবে না অথচ জান্নাতের সু-ঘ্রাণ তো এত এত দূর থেকে
পাওয়া যাবে।” [ মুসলিম ২/২০৫, হাদীস: ২১২৮]
[২] সুরাহ আল আহযাব ৩৩ঃ৫৯

[৩] http://www.alim.org/library/quran/AlQuran-tafsir/TIK/33/59
[৪] জিলবাবের বহুবচন

উ ৎস: ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটি ব্লগ (মূল আর্টি কেল লিংক)

অনুবাদক: উম্মে আফরাহ, মুসলিম মিডিয়া প্রতিনিধি

You might also like