Professional Documents
Culture Documents
Religion - in - Politics
Religion - in - Politics
জামাতের উত্থান;
কট্টর সাম্প্রদায়িক ও ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী রাজনৈতিক
দলের লেবাস নিয়ে 'জামায়াতে ইসলামি 'নামে দলটির
আবির্ভ াব ঘটে ১৯৪১ সালে।প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই
এরা ভারতীয় উপমহাদেশের (বাংলাদেশ, ভারত,
পাকিস্তান) এবং আফগানিস্তানে তাদের ধর্মান্ধ কার্যক্রম
চালাতে থাকে।জামায়াতে ইসলামী ততকালীন প্রচলিত
আধুনিক গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে দাবি
করলেও দলটির মূল লক্ষ্য ছিল প্রশিক্ষিত নেতাকর্মী
সমর্থকদের সমন্বয়ে কট্টর ইসলামি রাস্ট্র ও শাসনব্যবস্থা
প্রতিষ্ঠা করা। দলটি ইসলামি মতবাদের আড়ালে প্রচার
করতো ফ্যাসিবাদ।জামায়াত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের
স্বাধীনতার এবং পাকিস্তান বিভক্তির বিরোধিতা
করেছিল। দলটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বাঙালি
জাতীয়তাবাদী, বুদ্ধিজীবী এবং সংখ্যালঘু হিন্দদে
ু র হত্যায়
সহযোগিতা করেছিল। দলটির অনেক নেতাকর্মী সেসময়
গঠিত আধা-সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেছিল যারা
গণহত্যা, বিশেষ করে হিন্দদে
ু র ধর্ষণ এবং জোরপূর্বক
ইসলাম ধর্মে স্থানান্তরের মত যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকায়
অভিযুক্ত।৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানের
জামায়াতের আমির গোলাম আযম জেনারেল টিক্কা
খানের সাথের দেখা করে হানাদার বাহিনীর গণহত্যা,
বুদ্ধিজীবীহত্যা,ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ,লুটতরাজের
মতো কর্মকান্ড সমর্থন করে।এবং দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে
রাজাকার, আলবদর,আলশামস বাহিনী গঠন করে।
অতপর পাকিস্তান বাহিনীর পরাজয় অত্যাসন্ন দেখে অধ্যাপক
গোলাম আযম ২২ নভেম্বর ১৯৭১ এ পাকিস্তানে পালিয়ে
যায়।এরা পাকবাহিনীর পরাজয়ের পূর্বক্ষণে ১৪ ডিসেম্বর
আলবদর বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজধানীর
বিভিন্ন স্থান থেকে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণের পর
নির্মমভাবে হত্যা করে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর নতু ন
সরকার জামায়াতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে
এবং দলের নেতারা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান।
পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ
মুজিব হত্যাকান্ডের পর এবং কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের
পর ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায়
এলে জামায়াতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে
নেওয়া হয়। দলটির নেতাকর্মীরা ফিরে আসার অনুমতি পান
এবং ১৯৭৯ সালের মে মাসে তৎকালীন জামায়াতে
ইসলামীর অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা আব্বাস আলী
খানের নেতৃ ত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই সংগঠনের উদ্দেশ্য হলো শরিয়া ভিত্তিক একটি ইসলামী
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যা পাকিস্তান ও সৌদি আরবের দেশসমূহে
লক্ষ করা যায়।[
১৯৮০-এর দশকে জামায়াত গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের জন্য
বহুদলীয় জোটে যোগদান করে। এসময় দলটি আওয়ামী
লীগ ও সমসাময়িক বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে পরবর্তীতে
দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্ত নের জন্য আন্দোলন
করে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে নির্বাচনের পূর্ব
মুহূর্তে বিএনপির সাথে মিলিত হয়ে আরো অন্য দুটি দলসহ
চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট জয়লাভ করলে বেগম খালেদা
জিয়ার নেতৃ ত্বাধীন সরকারের অধীনে জামায়াতের দুজন
সদস্য মন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৮ সাল থেকে দলটির
জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে এবং নবম জাতীয় সংসদ
নির্বাচনে দলটি ৩০০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৫টি আসন লাভ
করে। ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃ ত্বাধীন
সরকার আন্তর্জ াতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ১৯৭১
সালে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে; ২০১২
সালের মধ্যে দুজন বিএনপি নেতা ও জামায়াতের সাবেক ও
বর্ত মান সদস্যসহ ৮ জন নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের
মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত
জামায়াতের সাবেক সদস্যসহ মোট চার জনকে অভিযোগ
প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা ও একজনকে যাবজ্জীবন
কারাদণ্ড ও সাবেক আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছর
কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। রায়গুলোর প্রতিবাদে জামায়াত
দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংস প্রতিবাদ করে যাতে অনেক
লোক নিহত হয় ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হয়।২০১৩
সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন
সম্পর্কি ত একটি রুলের রায়ে এই সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল
করে।
হেফাজতের উত্থান;
হেফাজতের উত্থানের ইতিহাস ছিল ২০১৩ সালে মূলত
নাস্তিক ইস্যুতে। হেফাজতের নাস্তিক বিরোধী আন্দোলন ছিল
গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে একটি প্রটেস্ট মুভমেন্ট।
গণজাগরণ মঞ্চের জনপ্রিয়তা যখন তু ঙ্গে, রাজাকারদের
সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে সারা দেশ যখন সোচ্চার, ঠিক
তখনই হেফাজতের উত্থান। হেফাজতের আন্দোলন বিএনপি
এবং জামাতপন্থি দ্বারা প্রত্যক্ষ মদদ দেয়া গণজাগরণ মঞ্চ
বিরোধী মুভমেন্ট এবং সর্বোপরি সেই সুযোগে সরকার
পতনের আন্দোলন। যদিও হেফাজত সবসময়ই বলে এসেছে
তাদের আন্দোলন রাজনীতি বহির্ভূ ত, সম্পূর্ণ ধর্মীয়
আন্দোলন। কিন্তু তাদের সমাবেশে স্বঘোষিত নাস্তিক লুঙ্গি
মাজহারের মত ব্যক্তির উপস্থিতির কারণ সঠিক ভাবে তারা
কখনোই ব্যাখ্যা করেনি। হেফাজতের সমাবেশ থেকে ৫ই
এপ্রিল ঘোষণাও এসেছিলো, ৬ই এপ্রিল ২০১৩ সালে
প্রেসিডেন্ট হবেন আল্লামা শফি এবং প্রধানমন্ত্রী জুনায়েদ বাবু
নাগরি। একই দিন সন্ধ্যায় বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ
থেকেও ঘোষণা এসেছিলো হেফাজতের সাথে একাত্মতা
ঘোষণা করে বিএনপি এবং তার অঙ্গ সংঘটনের সকল
নেতা কর্মীদের হেফাজতের পাশে দাঁড়ানোর।এভাবেই তাদের
আন্দোলন শুরু হয়।