You are on page 1of 21

বাংলাদেশের ধর্মীয় রাজনীতি

বাংলাদেশে বর্ত মানে ছোট বড় অনেক ইসলামপন্থী


রাজনৈতিক দল কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটি দল
নিবন্ধিত। কিছু দল নিবন্ধন পায়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই
দলগুলোর সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক তৎপরতা সীমিত।
রাজনৈতিক প্রাপ্তি উল্লেখযোগ্য নয়। নির্বাচনে ইসলামপন্থী
দলগুলোর অবস্থানও দুর্বল। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির এই দুর্বল
অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশের বাস্তব
পরিস্থিতির বিশ্লেষণ প্রয়োজন। এ বিশ্লেষণের সূত্র ধরেই
সঠিক ও উপযুক্ত আন্দোলন এবং সংগঠন গড়ে তোলার পথ
তৈরি হতে পারে। এই পথে এসব দল ক্রমান্বয়ে রাজনীতির
মূলধারায় সম্পক্ত
ৃ হতে পারে।

১৯৪৭ এর পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে ধর্মীয়


উত্থান :
১৯৪৭ সালে বঙ্গভঙ্গ ভারতবর্ষ বিভক্তির একটি অংশ হিসেবে
ধর্মের উপর ভিত্তি করে ব্রিটিশ
ভারতের অন্তর্ভু ক্ত বঙ্গ প্রদেশ ভারত এবং পাকিস্তানের অংশ
হিসেবে বিভক্ত হয়। প্রধানত হিন্দু অধ্যুষিত "পশ্চিম
বঙ্গ" ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত "পূর্ব বঙ্গ" পাকিস্তানের
সাথে যুক্ত হয়। ৩ জুন পরিকল্পনা বা মাউন্টব্যাটেন
পরিকল্পনা অনুসারে ১৯৪৭ সালের ১৪ এবং ১৫ অগাস্ট
যথাক্রমে পাকিস্তান এবং ভারতের নিকট এই নতু ন ভাবে
বিভক্ত বাংলা প্রদেশের ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।
সেকালে ব্রিটিশ ভারতে,বিশেষ করে বংগদেশে চল্লিশের
দশকে রাজনীতির খেলা,লীগ কংগ্রেসের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
আর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর তথাকথিত দ্বিজাতিতত্ত্বের
বাহারি পাকিস্তানি বেলুন যা মুগ্ধ করেছিল বাংগালী
মুসলমানদের। এ মুগ্ধতার পেছনে আসল কারণ ছিল
বিরাজমান আর্থ–সামাজিক বৈষম্য থেকে মুক্তির স্বপ্ন। এই
মুক্তি ছিল অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার জন্য,স্বচ্ছলতা না হোক
অন্তত পক্ষে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য অর্জ নের জন্য।তাই
বাংগালী মুসলমানরা ছিল শ্রেণিনির্বিশেষে মুসলিমলীগের প্রধান
জিন্নাহর ভক্ত।প্রচারের মহিমায় অভিভূ ত বাংগালী মুসলমান
জনতা রাজনীতির খেলায় শ্রেণিস্বার্থের তফাৎ বুঝতে পারে
নি।বিষয়টি আর ও সহজ হয়েছিল হিন্দপ্র
ু ধান জমিদার
শ্রেনীর প্রজাপীড়ন নিয়ে।শোষণ যে ভিন্ন নয় তা ধর্মীয়
প্রচারের গুণে চোখের আড়ালে থেকে যায় মুসলমান
প্রজাসহ,ক্ৃ ষকজনতার।সামন্ত শাসনের সংগে যুক্ত হয়
মহাজনদের লাগামহীন অর্থনৈতিক শোষণ। মহাজনদের প্রায়
সবাই হিন্দু সম্প্রদায়ভু ক্ত হওয়ায় সেই ঐতিহাসিক ঘটনা
ও সাম্প্রদায়িক সমস্যা তৈরি করে।এরইফলস্বরুপ ১৯৪৬
সালের সাধারণ নির্বাচনে বাংলার শিক্ষিত শ্রেণির
পাশাপাশি গ্রামের ছাত্র সহ নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠী ও ধর্মের
সমর্থনে মুসলীমলীগকে ভোট দেয়।এই সমর্থন আদায়ে
জিন্নাহর রাজনৈতিক বিচক্ষণতাসহ বাংলার বিশেষভাবে
সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম,কামরুদ্দিন আহমেদসহ প্রমুখ
নেতা ও শেখ মুজিবুর রহমানের মত যুবাদের ভু মিকা
ছিল।এ অবস্থার হুবহু প্রতিরুপ দেখা যায়,দুই যুগ পর
১৯৭০ সালের নির্বাচনে।এই নির্বাচন ছিল শেখ মুজিবুর
রহমানের নেতৃ ত্বে অসাম্প্রদায়িক বাঙালির জাতীয়তাবাদী
রাজনীতিকে প্রকাশের সংগ্রাম।

জামাতের উত্থান;
কট্টর সাম্প্রদায়িক ও ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী রাজনৈতিক
দলের লেবাস নিয়ে 'জামায়াতে ইসলামি 'নামে দলটির
আবির্ভ াব ঘটে ১৯৪১ সালে।প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই
এরা ভারতীয় উপমহাদেশের (বাংলাদেশ, ভারত,
পাকিস্তান) এবং আফগানিস্তানে তাদের ধর্মান্ধ কার্যক্রম
চালাতে থাকে।জামায়াতে ইসলামী ততকালীন প্রচলিত
আধুনিক গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে দাবি
করলেও দলটির মূল লক্ষ্য ছিল প্রশিক্ষিত নেতাকর্মী
সমর্থকদের সমন্বয়ে কট্টর ইসলামি রাস্ট্র ও শাসনব্যবস্থা
প্রতিষ্ঠা করা। দলটি ইসলামি মতবাদের আড়ালে প্রচার
করতো ফ্যাসিবাদ।জামায়াত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের
স্বাধীনতার এবং পাকিস্তান বিভক্তির বিরোধিতা
করেছিল। দলটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বাঙালি
জাতীয়তাবাদী, বুদ্ধিজীবী এবং সংখ্যালঘু হিন্দদে
ু র হত্যায়
সহযোগিতা করেছিল। দলটির অনেক নেতাকর্মী সেসময়
গঠিত আধা-সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেছিল যারা
গণহত্যা, বিশেষ করে হিন্দদে
ু র ধর্ষণ এবং জোরপূর্বক
ইসলাম ধর্মে স্থানান্তরের মত যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকায়
অভিযুক্ত।৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানের
জামায়াতের আমির গোলাম আযম জেনারেল টিক্কা
খানের সাথের দেখা করে হানাদার বাহিনীর গণহত্যা,
বুদ্ধিজীবীহত্যা,ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ,লুটতরাজের
মতো কর্মকান্ড সমর্থন করে।এবং দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে
রাজাকার, আলবদর,আলশামস বাহিনী গঠন করে।
অতপর পাকিস্তান বাহিনীর পরাজয় অত্যাসন্ন দেখে অধ্যাপক
গোলাম আযম ২২ নভেম্বর ১৯৭১ এ পাকিস্তানে পালিয়ে
যায়।এরা পাকবাহিনীর পরাজয়ের পূর্বক্ষণে ১৪ ডিসেম্বর
আলবদর বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজধানীর
বিভিন্ন স্থান থেকে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণের পর
নির্মমভাবে হত্যা করে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর নতু ন
সরকার জামায়াতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে
এবং দলের নেতারা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান।
পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ
মুজিব হত্যাকান্ডের পর এবং কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের
পর ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায়
এলে জামায়াতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে
নেওয়া হয়। দলটির নেতাকর্মীরা ফিরে আসার অনুমতি পান
এবং ১৯৭৯ সালের মে মাসে তৎকালীন জামায়াতে
ইসলামীর অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা আব্বাস আলী
খানের নেতৃ ত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই সংগঠনের উদ্দেশ্য হলো শরিয়া ভিত্তিক একটি ইসলামী
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যা পাকিস্তান ও সৌদি আরবের দেশসমূহে
লক্ষ করা যায়।[
১৯৮০-এর দশকে জামায়াত গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের জন্য
বহুদলীয় জোটে যোগদান করে। এসময় দলটি আওয়ামী
লীগ ও সমসাময়িক বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে পরবর্তীতে
দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্ত নের জন্য আন্দোলন
করে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে নির্বাচনের পূর্ব
মুহূর্তে  বিএনপির সাথে মিলিত হয়ে আরো অন্য দুটি দলসহ
চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট জয়লাভ করলে বেগম খালেদা
জিয়ার নেতৃ ত্বাধীন সরকারের অধীনে জামায়াতের দুজন
সদস্য মন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৮ সাল থেকে দলটির
জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে এবং নবম জাতীয় সংসদ
নির্বাচনে দলটি ৩০০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৫টি আসন লাভ
করে। ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃ ত্বাধীন
সরকার আন্তর্জ াতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ১৯৭১
সালে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে; ২০১২
সালের মধ্যে দুজন বিএনপি নেতা ও জামায়াতের সাবেক ও
বর্ত মান সদস্যসহ ৮ জন নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের
মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত
জামায়াতের সাবেক সদস্যসহ মোট চার জনকে অভিযোগ
প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা ও একজনকে যাবজ্জীবন
কারাদণ্ড ও সাবেক আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছর
কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। রায়গুলোর প্রতিবাদে জামায়াত
দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংস প্রতিবাদ করে যাতে অনেক
লোক নিহত হয় ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হয়।২০১৩
সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  জামায়াতের নিবন্ধন
সম্পর্কি ত একটি রুলের রায়ে এই সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল
করে।

হেফাজতের উত্থান;
হেফাজতের উত্থানের ইতিহাস ছিল ২০১৩ সালে মূলত
নাস্তিক ইস্যুতে। হেফাজতের নাস্তিক বিরোধী আন্দোলন ছিল
গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে একটি প্রটেস্ট মুভমেন্ট।
গণজাগরণ মঞ্চের জনপ্রিয়তা যখন তু ঙ্গে, রাজাকারদের
সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে সারা দেশ যখন সোচ্চার, ঠিক
তখনই হেফাজতের উত্থান। হেফাজতের আন্দোলন বিএনপি
এবং জামাতপন্থি দ্বারা প্রত্যক্ষ মদদ দেয়া গণজাগরণ মঞ্চ
বিরোধী মুভমেন্ট এবং সর্বোপরি সেই সুযোগে সরকার
পতনের আন্দোলন। যদিও হেফাজত সবসময়ই বলে এসেছে
তাদের আন্দোলন রাজনীতি বহির্ভূ ত, সম্পূর্ণ ধর্মীয়
আন্দোলন। কিন্তু তাদের সমাবেশে স্বঘোষিত নাস্তিক লুঙ্গি
মাজহারের মত ব্যক্তির উপস্থিতির কারণ সঠিক ভাবে তারা
কখনোই ব্যাখ্যা করেনি। হেফাজতের সমাবেশ থেকে ৫ই
এপ্রিল ঘোষণাও এসেছিলো, ৬ই এপ্রিল ২০১৩ সালে
প্রেসিডেন্ট হবেন আল্লামা শফি এবং প্রধানমন্ত্রী জুনায়েদ বাবু
নাগরি। একই দিন সন্ধ্যায় বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ
থেকেও ঘোষণা এসেছিলো হেফাজতের সাথে একাত্মতা
ঘোষণা করে বিএনপি এবং তার অঙ্গ সংঘটনের সকল
নেতা কর্মীদের হেফাজতের পাশে দাঁড়ানোর।এভাবেই তাদের
আন্দোলন শুরু হয়।

হেফাজতে ইসলাম তাদের এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে


সরকারের কাছে ১৩ দফা দাবি পেশ করে ঢাকায় লং
মার্চ করে।। এই আন্দোলন থামাতেই অপারেশন সিকিউর
শাপলা নামে সরকার একটি অভিযান চালায়। অপারেশন
সিকিউর শাপলা বা শাপলা চত্বর অভিযান হল ২০১৩ সালের
৫ ও ৬ ই মে বাংলাদেশের ঢাকায় সংঘটিত ঘটনাসমূহ, যার
মাধ্যমে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের
তৎকালীন সদ্যপ্রসূত ইসলামী রাজনৈতিক জোট  হিসাবে
দলটির একটি গনসমাবেশ এবং আন্দোলন এবং তাদেরকে
বিতাড়িত করার জন্য সরকার কর্তৃ ক পুলিশ, র‌ ্যাব ও
বিজিবির সমন্বিত বাহিনীর ব্যবহারকে বোঝানো হয়। এই
আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইসলামিক
নবী মুহাম্মদ সম্পর্কে অপ্রীতিকর মন্তব্যকারী "নাস্তিক
ব্লগার"দের ফাসি কার্যকর করার জন্য একটি ব্লাসফেমি আইন
প্রনয়ন এবং জনসম্মুখে "নারী পুরুষের মেলামেশা" সহ নানা
কারণ স্থান পায়।
২০১৩ সালের ৫ই মে হেফাজতে ইসলাম এর ঢাকা অবরোধ
এবং শাপলা চত্বরে অবস্থান নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে
ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল।ভোররাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীর অভিযানে অবস্থানকারীদের শাপলা চত্বর থেকে
উঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা নিয়েও ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল।,
ফজরের নামাযের পরই ঢাকার প্রবেশপথগুলো দখলে
নিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা।রাজধানীকে
ঘিরে ছয়টি প্রবেশমুখেই অবরোধ তৈরি করেছিলেন হেফাজতে
ইসলামের ব্যানারে সারাদেশ থেকে আসাবিভিন্ন কওমি
মাদ্রাসার হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক।বেলা বাড়ার সাথে
সাথে অবরোধকারীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়াতে থাকলো,
যখন এর নেতৃ ত্ব ঢাকার ভিতরে প্রবেশ করে মতিঝিলের
শাপলা চত্বরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলো।

সকাল সাড়ে ১১টা,অনুমতি মেলার আগেই কয়েকটি মিছিল


ঢু কে পড়ে এবং সংঘর্ষ শুরু হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং
পল্টন এলাকায়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয়
কার্যালয়ের কাছে ।সহিংসতা চলেছিল সন্ধ্যার পরও। এই
সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন হতাহতও হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
ু গ্যাস ,লাঠি চার্জে র
বাহিনীর সদস্যরা ফাকা গুলি,কাঁদনে
মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী শাপলা চত্বর খালি করার সময় কাউকে গ্রেপ্তার
করেনি।
ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও
ব্লগগুলোতে বলা হচ্ছে, রোববার রাতের ওই অভিযানে হাজার
হাজার লোক নিহত হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির
পক্ষ থেকে আড়াই থেকে তিন হাজার লোককে হত্যার কথা
বলা হয়েছ। ফ্রান্সের বার্ত া সংস্থা এএফপি গতকাল মঙ্গলবার
জানায়, বাংলাদেশে গত তিন দিনের সহিংসতায় কমপক্ষে
৩৮ জন নিহত হয়েছেন। তবে বিএনপির মুখপাত্র খন্দকার
মোশাররফ এএফপিকে জানান, সহিংসতায় শত শত মানুষ
নিহত হয়েছেন। কর্তৃ পক্ষ লাশ গুম করেছে বলে অভিযোগ
করেন তিনি।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বার্ত া সংস্থা বাসসের বরাত দিয়ে
যুক্তরাষ্ট্রের সিএনএনের গতকালের খবরে নিহতের সংখ্যা
উল্লেখ করা হয়েছে ১৪ জন। তবে সিএনএন একটি মন্তব্য
করেছে—নিহতের প্রকৃ ত সংখ্যা কত, তা হয়তো কোনো দিন
জানা যাবে না।
আর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস-এর সোমবারের খবরে দুই
দিনে নিহতের সংখ্যা ২২ বলে জানানো হয়।
কাতারভিত্তিক আল-জাজিরার সোমবারের খবরে বলা হয়,
শুধু ওই দিনেই সহিংসতায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৪
জন। এর আগে রোববার নিহত হন কমপক্ষে ১৪ জন।
একই দিনে ভারতের এনডিটিভির খবরে রোববার ও
সোমবারের সহিংসতায় ৩২ জন নিহত হওয়ার কথা বলা
হয়। আর যুক্তরাজ্যের টেলিগ্রাফ পত্রিকার সোমবারের এক
প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা ২২ বলে জানানো হয়। দিন ও
রাতের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের উপপরিদর্শকসহ (এসআই)
মোট ২২ জন নিহত হয়েছেন বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো
হয়।
৫ মে সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক আর্থিক লেনদেন
হয়েছিল বলে আগেই অভিযোগ উঠেছিল। যদিও হেফাজত
নেতারা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ৫ মে রাতে
উচ্ছেদের সময় হতাহতদের সাহায্যের জন্য দেশ-বিদেশ থেকে
বিপুল অংকের চাঁদা তোলা হয়। এসব টাকা কুক্ষিগত করে
রাখা, মামলা-মোকদ্দমা থেকে নিজেদের রক্ষা, নানান সুবিধার
শর্তে অতি সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে গোপন সমঝোতার
অভিযোগ উঠেছে আমির আল্লামা আহমদ শফীর ছেলে
আনাসসহ গুটিকয়েক হেফাজত নেতার বিরুদ্ধে। নানা
ধরনের বিরোধের জের ধরে শফী থেকে সরে আছেন
হেফাজতের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা। অধিকাংশ শীর্ষপর্যায়ের
নেতাকর্মীই এখন আহমদ শফীর কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন
না। তাছাড়া ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন হেফাজতের ব্যানারে এতদিন
আন্দোলনকারী অধিকাংশ কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক।
সরকারের সঙ্গে আঁতাত হচ্ছে এমন অভিযোগ এনেই কওমি
মাদরাসার শিক্ষকরা তার কাছ থেকে সরে আসছেন।
এদিকে অভ্যন্তরীল দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে হেফাজতের
ঢাকা মহানগর কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম। কেন্দ্রীয়
নেতাদের কর্তৃ ত্ব, একচ্ছত্র ভূ মিকা ও আধিপত্য বিস্তারকে
কেন্দ্র করে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি বলে কমিটির একাধিক সূত্রে
জানা গেছে।
জঙিবাদের উত্থান ;
বাংলাদেশের ইতিহাসে সশস্ত্র জঙ্গিবাদের উত্থানের সর্ববৃহৎ
আলামত দৃশ্যমান হয় ২০০৫ সালে জেএমবির ৬১টি জেলায়
একযোগে বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে। গত ১২ বছরে সারা
দেশে ছোট-বড় আরও অনেক সশস্ত্র জঙ্গি হামলার ঘটনা
ঘটেছে। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ ও নৃশংস ঘটনা ঘটে গত
বছরের ১ জুলাইয়ে গুলশানে হলি আর্টি জান বেকারি
রেস্তোরাঁয়। সেখানে ৫ জঙ্গিসহ ২৯ জনের প্রাণ হানি ঘটে।
এছাড়াও কল্যাণপুর(ঢাকা), গাজীপুরের পাতারটেক, ঢাকার
আশকোনা, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড আর সর্বশেষ ঢাকার RAB
ব্যারাকে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। বাংলাদেশে জঙি
প্রতিষ্ঠান হিসাবে হরকাত-উল-জিহাদ-আল-ইসলাম বা হুজি
প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭৯-১৯৯২ পর্যায়ে। দ্বিতীয় প্রজন্মের আবির্ভ াব
ঘটে ১৯৯৬ সালে, যখন ‘কিতাল-ফি-সাবিলিল্লাহ' বলে
সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়৷ এটিই ১৯৯৮ সালে এসে
জামায়াত-উল-মুজাহিদিন বা জেএমবি'তে রূপান্তরিত হয়, যার
সঙ্গে হুজি'র যোগাযোগ ছিল ওতপ্রোত৷ তৃ তীয় প্রজন্ম হচ্ছে
২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হিযবুত-তাহরির৷ এদের সূচনা এবং
বিকাশ বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে৷ চতু র্থ প্রজন্মের জন্ম
হয় জামাতু ল মুসলেমিন নামে ২০০৭ সালে, পরে যা
আনসারউল্লাহ বাংলা টিম নামে কার্যক্রম চালায়৷ এরা
অনুপ্রাণিত হয়েছে আনওয়ার আলওয়াকি'র দ্বারা এবং এরাই
এখন আনসার-আল-ইসলাম বলে আল কায়েদার প্রতিনিধিত্বের
দাবি করে৷ পঞ্চম প্রজন্ম হচ্ছে যারা ২০১৪ সালে ইসলামিক
স্টেটের উদ্ভবের পরে ইসলামিক স্টেটের আদর্শের সঙ্গে যুক্ত
হয়, কেউ কেউ সিরিয়াতে যুদ্ধ করতে যায়৷

বর্ত মান সরকারের প্রথম মেয়াদে (২০০৯-২০১৩) জঙ্গিবাদ


দমনে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিসহ উদ্বদ্ধ ু করণ কার্যক্রম গ্রহণ
ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী
আসাদুজ্জামান খানকে সভাপতি করে ১৭ (সতের) সদস্যের
জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার কমিটি গঠন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ন শেখ হাসিনার নির্দে শনায় ও  তার নেতৃ ত্বেই
আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রম্নত বিচার) (সংশোধন)
আইন-২০১৪ (আইনটির মেয়াদ ৫ বছর বৃদ্ধি) করা হয়েছে।
মোবাইল কোর্ট (সংশোধন) আইন ও বিধিমালা প্রক্রিয়াধীন
আছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিধিমালা-২০১৪ প্রণীত
হয়েছে। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশে
১ লাখ ৬১ হাজার ৩শ ৩ জন জনবল ছিল। বর্ত মানে তা
২ লাখ ৫ হাজারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮ সালে নারী পুলিশ
সদস্য ছিল মাত্র ২৫২০ জন। বর্ত মানে তা বেড়ে হয়েছে ১১
হাজার ৭৬৭ জন। পুলিশবাহিনীতে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃ ক ৫০
হাজার পদ সৃজনের নীতিগত সিদ্ধান্তের পর পর্যায়ক্রমে ৫০
হাজার পদ সৃষ্টির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও
পুলিশ পরিদর্শক পদকে ২য় শ্রেণি থেকে ১ম শ্রেণিতে এবং
উপ-পুলিশ পরিদর্শককে ৩য় থেকে ২য় শ্রেণিতে উন্নীতকরণ
এবং পুলিশের নতু ন নতু ন উইং সৃষ্টি হয়েছে। যেমন, এ
বাহিনীতে শিল্পাঞ্চল পুলিশ, টু রিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশ, পিবিআই,
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ, ৩০টি ইন-সার্ভি স ট্রেনিং সেন্টার
এসপিবিএনসহ মোট ১০টি নতু ন ইউনিট তৈরি করা হয়েছে।
এ ছাড়াও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ
পুলিশের কর্মরত থাকার ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন
প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ৭টি ফর্মড পুলিশ
ইউনিটে ১২১১ জন পুলিশ সদস্য কর্মরত আছেন। এর মধ্যে
১৬০ জন নারী সদস্য। নতু ন ২টির্ যাব ব্যাটালিয়ন গঠন
করা হয়েছে।র্ যাবের জন্য ২টি হেলিকপ্টার ক্রয় করা
হয়েছে। পুলিশের জন্য ২টি হেলিকপ্টার টিওএন্ডইতে
অন্তর্ভু ক্তির কার্যক্রম চলমান।
বর্ত মান সরকারের আমলেই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে
(সিআইডি) এলআইসি শাখা গঠন করা হয়। বিশেষ অপরাধ
তদন্তের জন্য গঠন করা হয় পুলিশ বু্যরো অব
ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম
অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের অভিযানে
আসে একের পর এক সাফল্য। নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতারা
গ্রেফতার কিংবা নিহত হয়। আলোচিত মামলাগুলোর তদন্তও
সফলভাবে শেষ করেছে পুলিশ। এতে কমেছে জঙ্গি
তৎপরতা। একইসঙ্গে সংঘবদ্ধ অপরাধ, হত্যা, ডাকাতি,
ছিনতাই ও দসু্যতার হারও কমেছে অনেকখানি। বিশেষত
বন ও জলদসু্য এবং সর্বহারাদের আত্মসমর্পণ  দেশের
অন্যতম অবদান যা ব্যাপকভাবে প্রশংশিত হয়।২০০৯ সালে
সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গি দমনে 'জিরো টলারেন্স'
নীতির ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করায়
জঙ্গি দমনে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ 'রোল মডেল' হিসেবে
বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা রোধে
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সবসময়ই তৎপর রাখা হচ্ছে। জঙ্গি
সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বিচারে ফাঁসি হয়েছে কয়েকজন দুর্ধর্ষ
জঙ্গি সদস্যের। জঙ্গিদের অনলাইন তৎপরতা রোধে এখন
প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে নিশ্চিন্তে
কাজ করছেন কর্মকর্ত ারা। পাশাপাশি ফেসবুক, গুগলসহ
বিভিন্ন অনলাইন পস্নাটফর্ম এবং স্মার্ট ফোন অ্যাপ নির্মাতাদের
সঙ্গে এদেশের পুলিশ প্রশাসনের সখ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যাতে
প্রয়োজন হলে দ্রম্নত সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া
যায়। আসলে বর্ত মান সরকারের পক্ষ থেকে এলিট ফোর্সর্
যাব, বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াটসহ পুলিশের সব ইউনিট ও
গোয়েন্দা সংস্থাকে জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও কার্যক্রম
জোরদার করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দে শনা প্রদান করা
হয়েছে।    

কওমি মাদ্রাসার বিবরণঃ


গত ৬ই এপ্রিল অশান্ত বাংলাদেশে কাওয়ামি মাদ্রাসা-ভিত্তিক
চরমপন্থী সংগঠণ হেফাজত-এ-ইসলামি ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের
শাস্তিসহ অন্যান্য দাবিতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অবধি লং
মার্চ ’ করে। তাদের এই কর্মসূচীর আগে প্রবল উত্তেজনা ও
আশঙ্কায় কেঁ পেছে দেশ। পরিস্থিতির আরও অবনতির
সম্ভাবনা দেখা যায় যখন পালটা কর্মসূচী নিয়ে সন্মিলিত
সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি এবং
গণজাগরন মঞ্চ সহ ২৭ টি স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগঠণ একই
দিনে দেশজুড়ে হরতালের ডাক দেয়। তারও পালটা হিসেবে
হেফাজতে-এ-ইসলাম আবার হুমকি দেয় এই বলে যে, যদি
হরতালের ডাক ফিরিয়ে নেওয়া না হয়, তবে তারা পরের
দিন থেকেই লাগাতার হরতাল করে যাবে। এই ধরনের
সংঘর্ষময় পরিস্থিতি বিষম দুশ্চিন্তার কারন হয় দাঁড়ায় আর
সন্ত্রস্ত মানুষ অপেক্ষায় থাকেন আরও রক্তপাত, আরও
নৈরাজ্যের। বি এন পি-র নেতৃ ত্বাধীন জামাত-এ-ইসলামি সহ
১৮ দলের জোট হেফাজত-এ-ইসলামির এই লং মার্চ কে
সমর্থন জানিয়েছিল।
জামাতের ‘বি’ টিম হিসেবে উঠে আসা হেফাজতের জন্ম
সন্মন্ধে খুব সামান্য তথ্যই পাওয়া যায়। শুধু এইটু কুই জানা
যায় যে, এই সংগঠণটি কাওয়ামি মাদ্রাসাগুলি থেকে কাজ
করে। দু’ হাজার এক থেকে ছয় পর্যন্ত বি এন পি-জামাতের
শাসনকালে কাওয়ামি  মাদ্রাসার ব্যাপক বাড়বাড়ন্ত দেখা
গিয়েছিল। বাংলাদেশে বহু কাওয়ামি মাদ্রাসা জঙ্গি ইসলামি
আদর্শ এবং জিহাদি কার্যকলাপের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে
বলে খবর। একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় প্রকাশ পেয়েছে যে,
এই ধরনের অনেক মাদ্রাসাই জঙ্গি ইসলামি শিবির তৈরি
করেছে।আন্তর্জ াতিক যোগাযোগ থাকা এই সব শিবিরে দেশে
ইসলামি শাসন কায়েম করার উদ্দেশ্যে অস্ত্র শিক্ষা দেওয়া হয়
বলে খবর। 
আমেরিকার নেতৃ ত্বে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকে
ইসলামের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ বলে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল,
তারই পরবর্তী ক্রিয়ায় এই সব মাদ্রাসাগুলিতে আল কায়দা
নেতা ওসামা বিন লাদেন এবং তালিবান নেতা মুল্লা
ওমরকে ‘ইসলামের নায়ক’ হিসেবে বন্দনা করে অডিও এবং
ভিডিও ক্যাসেট বিলি করা শুরু হয়। মাদ্রাসার ছাত্রদের
বলা হয় এইসব নায়কদের পথ অনুসরণ করে বিধ্বংসী
কাজকর্মে যুক্ত হতে। এ ছাড়াও ছাত্রদের মধ্যে ধর্মীয় আবেগ
জাগিয়ে তু লে ইসলামের স্বার্থে সশস্ত্র জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়তে
প্ররোচিত করতে ভিডিও ক্লিপিংগুলিতে কাশমির, গুজরাট এবং
ভারতের অন্যান্য জায়গায় তথা আফগানিস্তান এবং ইরাকে
মুসলমানদের উপর তথাকথিত অত্যাচারের ছবি দেখানো
হয়। এইভাবে ছাত্রদের মধ্যে একটি পশ্চিম এবং ভারত-
বিরোধী মানসিকতা তৈরি করা হয় এইসব প্রতিষ্ঠানগুলিতে।
কাওয়ামি মাদ্রাসাগুলি স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ভাষা
শহীদ দিবস এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের মত দিনগুলি
পালন করেনা। বস্তুতপক্ষে এইসব মাদ্রাসাগুলিতে ১৯৭১
সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের
বিরুদ্ধে অস্ত্র তু লে নেওয়ার ঘটনাকে গৌরবান্বিত করে তাকে
জিহাদের অঙ্গ বলে ছাত্রদের বোঝান হয়। এইসব
প্রতিষ্ঠানগুলি কোনওদিনই কোনও উপলক্ষ্যেই জাতীয় পতাকা
উত্তোলন করেনা অথবা মাদ্রাসা অঙ্গনে ছাত্রদের জাতীয়
সঙ্গীত গাইতেও দেয়না। জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব
বিভাগের একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এইসব
মাদ্রাসার ছাত্র এবং শিক্ষকরা নারীদের বিরুদ্ধে ধর্মীয়
নেতাদের ‘ফতোয়া’-তে আস্থা রাখে। এন জি ও দের
উন্নয়নমূলক কাজকর্ম, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা, পরিবার
পরিকল্পনা, নারী স্বাধীনতা ও অগ্রগতি, নারী নেতৃ ত্ব, পশ্চিমী
শিক্ষা, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ও এরা বিরূপ এবং
নেতিবাচক মতামত পোষন করে। এর কারন, এরা মনে
করে এই সব কিছু ই দেশে ইসলামি চরমপন্থা বিকাশের
পরিপন্থী। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের জন্য এরা পশ্চিমী
শিক্ষা, আধুনিকতা এবং মহিলাদের অগ্রগতিকে দায়ী বলে মনে
করে।
যদিও পূর্ববর্তী বি এন পি-জামাত সরকার কাওয়ামি
মাদ্রাসার দেওয়া ডিগ্রীকে স্বীকৃ তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল,
শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। এর ফলে, এই সব মাদ্রাসা থেকে
পাশ করে বের হওয়া ছাত্ররা মসজিদ অথবা মাদ্রাসা ছাড়া
অন্য কোথাও কাজ পায়না এবং তাদের জীবন অতিবাহিত
হয় হেফাজত সহ বিভিন্ন জঙ্গি ইসলামি সংগঠনের কর্মী
হিসেবে, সারা দেশে, এমনকি বিদেশে—কাশমির, আফগানিস্তান
এবং ইরাকের মত জায়গাতেও জিহাদি অথবা ধ্বংসাত্মক
কার্যকলাপে অংশ নিয়ে। এরাই ২০০৫ সালে দেশের ৬৪ টি
জেলার মধ্যে ৬৩ টি জেলায় ধারাবাহিক বোমা
বিস্ফোরনসহ ইসলামের নামে প্রায় সমস্ত সন্ত্রাসবাদী
নাশকতায় যুক্ত ছিল। দেশে ইসলামি আইনের শাসনের
প্রবর্ত ন দাবি করে এরাই বাংলাদেশে আত্মঘাতী মানব বোমা
হয়ে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়েছে।
ব্যাপক আন্তর্জ াতিক যোগাযোগ-সমৃদ্ধ এইসব মাদ্রাসাগুলি যে
শুধুমাত্র জিহাদি তৈরি করে তা নয়, এরা বহু জঙ্গি ইসলামি
সংগঠনগুলিকে তাদের সদস্যদের অস্ত্র শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ
করে দেয়।  এই ধরনের বেশ কিছু অস্ত্র প্রশিক্ষন শিবির
আছে চট্টগ্রামের দুরধিগম্য পার্বত্য এলাকায় অথবা ঘন
জঙ্গলের ভিতর, যেখানে আইন রক্ষকরা সহজে পৌঁছোতে
পারেনা এবং অস্ত্র শিক্ষা চলে রাতের অন্ধকারে। যে সব
জঙ্গি সংগঠন এই সব মাদ্রাসার তরুনদের অস্ত্র শিক্ষা দেয়
তাদের ভান্ডারে মজুত আছে বিপুল পরিমানে আধুনিক অস্ত্র
এবং বারুদ। এমনকি পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদি আরব
এবং মধ্য প্রাচ্যের জঙ্গি সংগঠনগুলির নেতারাও মাঝে মাঝেই
এই সব মাদ্রাসাগুলি পরিদর্শন করেন এবং বাছাই করা
ছাত্রদের ‘অ্যাডভান্স ট্রেনিং’-এর জন্য নিজদের দেশে নিয়ে
যান।
এই ধরনের লক্ষ লক্ষ কাওয়ামি মাদ্রাসার ছাত্ররাই আজ বি
এন পি-জামাতের ডাকে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং
হরতাল পালনে সক্রিয়। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে
যে, বিরোধীরা তাদের ডাকা বেশির ভাগ সরকার-বিরোধী
বিক্ষোভেই কাওয়ামি মাদ্রাসার এই সমস্ত ছাত্রদের  কাজে
লাগিয়েছে।

You might also like