You are on page 1of 2

Name: Irfan Hridoy

Batch: 50
Department: LLB
Article: ধোবলার পুল

পাথর চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করে। চোখ, মুখ অার পেটে রাজ্যের ক্ষু ধা। তপ্ত দুপরে
ু হাসেম বেরিয়ে পরেছে। সামনের
অজানা গন্তব্যের এই পৃথিবী চীরে-চ্যাপটা হয়ে অাছে, পুরো নিকেষ অন্ধকার। অার পেছনে তাঁর বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবা,
চারজন প্রতিবন্ধি সন্তান, লিকলিকে বউ নিয়ে আট সদস্যের পরিবারের অসহায় মুখ।
হাসেমের দীর্ঘ যাত্রায় সরু পথ অার ওপাড়ার বিলের পাশে ভাঙা ধোবলার পুল পেরুলে-ই শুরু হয়, শহুরে এলাকা।
বিরাট এলাকার কর্ত াবাবু হলেন ফাহাদ মোল্লা। কর্ত াবাবু বড্ড ভালো মনের মানুষ। অভাবী
হাসেমকে তিনি চাকরি দেন শহরের বড়ো দোকানটায়। সেখান থেকে যা মাইনে তা দিয়ে হাসেমের সংসার চলে,
কর্ত াবাবু অতিরিক্ত মাইনে-পাতিও দেন মাঝেমধ্যে।

হঠাৎ লোকে কি যেন বলে! ভয়, অাতংক দেশজুড়ে। রাস্তাঘাট দোকানপাট সব বন্ধ হয়, লোকজন পালায়। কেউ
কারোর কাছে নেই, সব যেন অচীনপুর। হাসেমের নিজেকেই নিজের শক্র মনে হয়। লাকডাউন না কি ডাউন হয়েছে
দ্যাশে তাই কর্ত াবাবু তাঁর সব দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন। হাসেমদের দোকানের শাটারটা যেদিন শেষবারের মতো
বন্ধ করে সেদিন কর্ত াবাবু পুরো মাসের মাইনে সাথে অতিরিক্ত কিছু অর্থ আর খাবার তু লে দেন।

অজান্তেই চোখের জল গড়িয়ে পড়ে। বাড়ির পাশের চায়ের দোকানটা বন্ধ আজ প্রায় ২২ দিন। রাস্তা ঘাটে মানুষ নেই,
মনেহয় জ্বীন-ভূ তের চাষ হচ্ছে। প্রায় কতদিন হাসেম বের হয়না ঘর থেকে, বের হবেই বা কিভাবে! মনে রাজ্যের
অাতংক, লোক বলে- এ রোগ, নাম মুখে নিতে নেই! এটা পাপ।

দিন পঞ্চাশেক হলো। বাজার-সদাই শেষ আরো অনেক আগে। মাঝখানে কিছু ছেলে-মেয়ে আইস্যা 'সেল্ফিবাজ
ফাউন্ডেশন' থেইকা কয়ডা চাল-ডাল-সাবান দিয়া ছবি তু ইল্যা নিছে। দু'দিন অাধা প্যাট চলছিলো। পোলাপানগুলা
সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়ার জন্য কয়, নাইলে "মহামারী সবাইরে মাইরা ফালাইবো'।
বউ কয় চাউল থুইয়্যা সাবান দেন ক্যান? সাবান খাইয়া বাচু ম? হাসেম ভাবে, রোগ নয় বরং তাঁর মৃত্যু হইবো
ক্ষু ধায়। নদী ভাঙা পোড়া কপালে বাইচ্যা থাকোন-ই বা কি দরকার!
হাসেম যে সামান্য মাইনে পায় তার অর্ধেক শেষ হয়ে যায় বৃদ্ধ মা-বাবার ঔষধ কিনতে। তার উপর এখন সব আয়
বন্ধ! বাড়িওয়ালাটাও বড্ড জাদরেল টাইপের। হাসেমের বৃদ্ধা মা বার বার বলেছিলেন অন্তত যেন এইবার ভাড়াটা না
নেয়। পাষাণ হৃদয় গলেনি।

এলাকার মেম্বার শামসু মোল্লা। লোকে বলে 'রিলিফ এবং ত্রান' অর্ধেক তাঁর পেটে যায়। অনেক চাওয়ার পরেও একটি
কানাকড়ি মেলেনি। সেদিন মোল্লার বাড়ি থেকে ফেরার পথে হাসেমের মনে পরে যায় ভোটের সময় মোল্লার দেওয়া
ভাষণগুলো। যেন তাঁর মতো মহান ব্যক্তি এই পৃথিবী দ্বিতীয়টি নেই।

এসব ভাবতে ভাবতে হাসেম কালিবাড়ি রোড পর্যন্ত চলে আসে। সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা, আরো মাইল দুয়েক পর
ধোবলার পুল। হাসেমের প্রতিবেশী রমিজ আলী বেড়িয়েছিল কাজের সন্ধানে। ওই পুলটায় বসে পুলিশ পাহাড়া।
পুলিশের ডান্ডার বাড়িতে রমিজের ভাঙা পা দেখে তানহা বিবি, আঃ ছাত্তার, অমল, হাসুনি, জোবায়দা, করিমন
পাড়ার সবাই এমনকি সাহসী হাসেমও সেদিন ভয় পায়। ওই পুলটায় আরো অনেক মৃত্যুর গল্প ছোটবেলায় শুনেছে
লোকে। হাসেম একদিন স্বপ্নে দেখেছিল ওই পুলটা তাকে ডাকছে, কাছে যেতেই তাকে গিলে খায়, মরে যায়, মেরে
যায়। ভয়ে কুঁ কড়ে সে রাতে অার ঘুমায় নি হাসেম।

চার-চারটা বাচ্চার ক্ষু ধার্ত মুখের আর্ত নাদ আর সহ্য হয় না। অল্প বয়সী ডাগরডোগর বউটাকেও অনেক অপরিচিত
মনে হয়! ঠান্ডা কালনাগিনী রুপ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে হাসেম। ক্ষু ধার জ্বালায় মরে যাবে কিন্তু
চোখের সামনে বাচ্চাগুলোর আর্ত নাদ আর কত শুনবে!!
তাই একমুঠো ভাতের জন্য জীবনের ঝুঁ কি নিয়ে সে বেড়িয়েছে। বউটা এখন ভাত চায় না-একটু বিষ চায়!

প্রায় ঘণ্টা তিনেক লাইনে দাঁড়িয়ে হাসেম ত্রান পায়। এবার ফিরবার পালা। আসার সময় কর্ত াবাবুও কিছু অতিরিক্ত
অর্থকড়ি তু লে দেয় তাঁর হাতে।
ত্রানের পোটলা মাথায় নিয়ে এবার বাড়ির পথে। তবে এখন আর পারছে না সে। মাথার উপরে পৃথিবী এখন
একটু করো জাহান্নাম, তিনদিনের না খাওয়া তাঁর রোগাটে শরীর, বড্ড জ্বালাচ্ছে। এত বড়ো পথ, একটা রোগাটে
শরীর চাচ্ছে না আর সামনে এগুতো।

বিশাল ধোবলার পুলটায় হাসেম উঠছো। ধোবলার পুলকে এখন ধোবলার পাহাড় মনে হয়। হঠাৎ তাঁর রোগাটে
শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে, গলা শুকচ্ছে। মাথা ঘুরছে, দেহটা তাঁর খুবই হালকা অনুভব হচ্ছে। কেন যেন মনে হচ্ছে
আকাশ থেকে লক্ষ লক্ষ তীর ধনুক তাঁর শরীরে পড়ছে। হাসেম যেন পুরো পৃথিবীটা তার সামনে দেখছে। তাঁর বাবা-
মা, তাঁর পরিবার।
হাসেম চিৎকার করতে চায়...
কে যেন টু টি চেপে ধরে। পড়ে যায় হাসেম...নাক মুখ তখন রক্তাক্ত। পুলের নিচে পানিতে শব্দ হয়...ত্রানের সবকিছু
চু ষে খায় নদী, কালা নদীর পেট চীরে তখন অট্টহাসি শব্দ হয়...দাঁড় কাক ডেকে উঠে, অনন্তে হারিয়ে যায় হাসেম।
বিকেলের পড়ন্ত সূর্যের আলোর সাথে নিভে যেতে কে দূর থেকে কে যেন গলা ফাটিয়ে অাসমান-জমিন কাঁপিয়ে উঠে,
দেশে "করোনা" অাইছে রে....
#StayHome
#StaySave

You might also like