You are on page 1of 2

ফোর আর্ট স ক্লাবকে কি কল্লোলের অগ্রদূত বলা যায়?

 ফোর আর্ট স ক্লাব বা চতুষ্কলা সমিতি বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতির ইতিহাসে একটি
স্মরণীয় নাম। বঙ্গসংস্কৃতির মু খ্য কেন্দ্র কলকাতায় নারী-পু রুষের ক্লাব হিসেবে এর
প্রতিষ্ঠা। নারী-পু রুষ নির্বিশেষে সকল সদস্যের সমানাধিকার ছিল এর ভিত্তি। এর আগে
মানডে ক্লাবেও নারীর প্রবেশাধিকার ছিল, কিন্তু তাতে মেয়েদের বিভাগের দিকে
ফোর আর্ট স ক্লাবের মতো প্রবল ঝোঁক ছিল না। এর দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল একটা
আধু নিক রুচিসঙ্গত ও মনোভাবসম্পন্ন পরিবেশ পারিবারিক গণ্ডির বাইরে গড়ে
তোলা। আর এই উদ্দেশ্য সিদ্ধ করার জন্য সভ্যরা অনু শীলনের বিষয় হিসেবে গ্রহণ
করেছিলেন চারটি বিদ্যা – সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রশিল্প ও কারুশিল্প। ক্লাবটি মূ লত দুজন
ব্যক্তির স্বপ্ন ও ভাবনার ফল – চৌরঙ্গি অঞ্চলে খেলার সরঞ্জাম বিক্রেতা এস. রায়
অ্যান্ড কোম্পানিতে কর্মরত দীনেশরঞ্জন দাশ এবং মামা এস. বোস ফ্লোরিস্টের নিউ
মার্কে টের ফুলের স্টলের তত্ত্বাবধায়ক গোকুলচন্দ্র নাগ। এঁদের আলোচনা থেকেই
উঠে আসে একটি রুচিসঙ্গত ক্লাব প্রতিষ্ঠার কথা – দীনেশরঞ্জন দাশের ভাষায়,
“ভাবছি একটা পান্থশালার কথা – যেখানে মানু ষ এসে শ্রান্ত জীবন-ভার নিয়ে বিশ্রাম
করতে পারবে। জাতি, sex ও position সেখানে কোনো বাধা হবে না। আপন আপন
কাজকে মানু ষ আনন্দময় করে তুলবে, মানু ষ মানু ষের সঙ্গে নিঃসঙ্কোচে মিশে আপন
স্বচ্ছন্দ ইচ্ছায় আপনাকে সার্থক মনে করতে পারবে।“ এই কথাগুলো পড়লেই বোঝা
যায়, কল্লোলের মূ লমন্ত্র কীভাবে এরমধ্যে দিয়ে ধ্বনিত হয়েছিল। এই ক্লাব প্রতিষ্ঠায়
অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন আরো একজন – কবি বিজয়চন্দ্র মজু মদারের কন্যা এবং
অধ্যাপক বিজলীবিহারী সরকারের স্ত্রী শ্রীমতি সু নীতি দেবী। তাঁরা আলোচনা করে ঠিক
করেন যে ১৯২১-এর ৪ঠা জু ন ক্লাবের উদ্বোধন হবে। কিছু নিয়মকানু ন বিধিবদ্ধ হয়,
মাসিক চাঁদা এক টাকা ধার্য করা হয়। নামকরণ করেন গোকুলচন্দ্র আর সম্পাদক হন
দীনেশরঞ্জন। এর প্রথম অধিবেশন হয় ৮৮বি হাজরা রোডে। এইদিন দীনেশরঞ্জন
চতুষ্কলা সমিতি প্রতিষ্ঠার নিদর্শন-পত্র স্বহস্তে অলংকরণ করেন এবং চারজন বিশিষ্ট
সদস্য, যথা গোকুলচন্দ্র, দীনেশরঞ্জন, সু নীতি দেবী ও সতীপ্রসাদ সেন তাতে
নিজেদের মনের কথা লিখে স্বাক্ষর করেন – যে কথাগুলোর মধ্যে দিয়ে চলমান
জীবনের চিরকালের রূপটি ধরা পড়েছিল – যে পথিক মানু ষের শিলালিপিটিকেই পরে
পরিস্ফুট করার চেষ্টা হয়েছিল কল্লোল যু গে।
ফোর আর্ট স ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে এঁরা তো উল্লেখযোগ্য ছিলেনই, এছাড়াও
ছিলেন মণীন্দ্রলাল বসু , কান্তিচন্দ্র ঘোষ, সু ধীরকুমার চৌধু রী, নিরুপমা দাশগুপ্ত,
নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, মীরা দাশগুপ্ত প্রমু খ। মোটামু টি বছর দুয়েক বাদে ফোর
আর্ট স ক্লাব উঠে যায়। দীনেশরঞ্জনের মতে, “Club-এর একজন বিশেষ উদ্যোক্তা ও
একনিষ্ঠ সভ্যের মৃ ত্যুই তার প্রথম কারণ। তারপর মানু ষের শত্রুতা ত আছেই।“
মোটামু টিভাবে এই দু’বছরের আয়ুষ্কালে এমন অনেকে এর সাথে যু ক্ত ছিলেন, যাঁরা
পরবর্তীকালে লেখক ও শিল্পীরূপে প্রখ্যাতি লাভ করেছেন, কল্লোলের সাথেও
অনেকে প্রত্যক্ষভাবে যু ক্ত ছিলেন। জীবেন্দ্র সিংহ রায়ের ভাষায়, “তাঁদের
ফলপ্রসবিনী প্রতিভার বীজক্ষেত্র ছিলো (ফুলের দোকানের আড্ডাসহ) ফোর আর্ট স
ক্লাব, লীলাভূমি ছিলো কল্লোল পত্রিকা… যে নির্বাধ জীবনচর্চ া, যৌবনবন্দনা, অন্তহীন
পথ চলার আবেগ, নানামু খিন্‌চিন্তা ও অনু ভূতির উষ্ণ রক্তপ্রবাহ, সাহসিক দৃষ্টির
দিশাসন্ধান, নব্যরুচির সজীব হাওয়া কল্লোলের কালে উদ্বেলিত হয়েছিলো, চতুষ্কলা
সমিতিতে তার প্রথম সাড়া জেগেছিলো।“ (কল্লোলের কাল)। এইসব দিক থেকে
বিচার করলে বলতে দ্বিধা থাকে না, যে ফোর আর্ট স ক্লাবই ছিল কল্লোলের অগ্রদূত।

You might also like