You are on page 1of 4

উর্দু সাহিত্য এক অত্যন্ত সমৃ দ্ধ সাহিত্য। রুমি, মির্জ া গালিব, হাফিজ্‌, আমির খসরু’র মতো

প্রতিভা উর্দু সাহিত্য, মূ লত উর্দু কবিতাকে বিশ্বের দরবারে উপস্থিত করেছে।


উর্দু কবিতা অনেক ফর্ম বা রূপে বর্ত মান। এর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূ র্ণ এবং সর্বখ্যাত ফর্ম
হল গজল।
উর্দু কবিদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হলেন মির্জ া গালিব(১৭৯৭-১৮৬৯)। মু ঘল যু গের
অন্যতম এবং শেষ শ্রেষ্ঠ কবিত ছিলেন তিনি। শেষ মু ঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ্‌জাফর তাঁকে
‘দবির-উল-মু লুক’ এবং ‘নজম-উদ্‌-দৌল্লাহ্‌’ উপাধি দেন। গজল, কাসিদা, রুবাই, কোয়াতা,
মার্সিয়াহ্‌ইত্যাদি অনেক ফর্ম লিখলেও তাঁর আসল খ্যাতি মূ লত গজল এবং কাসিদা রচনার
জন্য।
নিম্নে গজল এবং কাসিদা নিয়ে কী তা আলোচনা করে মির্জ া গালিবের কিছু লেখার উদাহরণ
তুলে ধরে এই দুই ফর্মে তাঁর কৃতিত্ব দেখানোর চেষ্টা করা হল।
 গজল কী : প্রেমাস্পদকে উদ্দেশ করে বা মনে করে বা প্রেমাস্পদের সঙ্গে কথা বলা
হয় যে কবিতায়, তাকে গজল বলা হয়। গজল সাধারণত অনেকগুলি দ্বিপদ নিয়ে
গঠিত হয়, যেগুলোকে শের বা ব্যাত বলে। আদর্শ গজল হতে গেলে পাঁচটির কম
শের থাকলে চলবে না।
গজলের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যার দ্বারা গজলকে গজল বলে চেনা যায় –
1. গজলের প্রত্যেকটি পংক্তি একই মাত্রার হবে এবং একই রীতি অনু সরণ
করবে। একে ব্যাহের বলা হয়।
2. গজলের প্রথম শেরটিকে বলা হয় মাতলা এবং শেষ শেরটিকে বলা হয়
মাক্তাহ্‌। মাক্তাহ্‌তে কবি নিজের নাম ব্যবহার করেন, ঠিক যেমন বৈষ্ণব
পদাবলি বা বাউল গানের ভণিতায় হয়।
3. মাতলার শেষ দুটি শব্দ এবং পরবর্তী সবকটি শেরের দ্বিতীয় পংক্তির শেষ দুটি
শব্দকে রাদিফ বলা হয়।
4. রাদিফের পূ র্ববর্তী শব্দকে কাফিয়া বলে। প্রতিটি যু গ্মকে কাফিয়া অন্ত্যমিল
যু ক্ত হয়।
গজলের প্রত্যেকটি শেরের একটা সাধারণ বিষয় বা থিম থাকবেই (যেটা অপর আরেকটি
ফর্ম, নজম-এ দেখা যায়), এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। গজলের প্রত্যেকটি শেরই
স্বয়ংসম্পূ র্ণ এবং প্রত্যেকটি শেরই একটি বৃ হত্তর অর্থকে ধরতে চায়।
গজলের সম্পূ র্ণতার মধ্যে একটা সাঙ্গীতিক গুণ ফুটে ওঠে। এইজন্য দেখা যায়, বহু বিখ্যাত
গজল গান হিসেবে গাওয়া হয়।
নিম্নে মির্জ া গালিবের দুটি গজল আলোচনার মাধ্যমে দেখানো হল –
১। আ কি মেরি জান কো কারার নহীঁ হ্যায়
তাকত-এ-বেদাদ-এ-ইন্তেজার নহীঁ হ্যায়
...
কতল কা মেরে কিয়া হ্যায় আহদ তো বারে
ভায়ে আগর আহদ উস্তুওয়ার নহীঁ হ্যায়
তু নে কসম মেহকাশি কি খায়ি হ্যায় গালিব
তেরি কসম কা কুছ অ্যায়তবার নহীঁ হ্যায়।

এখানে কবি একটি একমু খী প্রেমের গজল রচনা করেছেন। শব্দচয়নের মাধ্যমে
অনু ভূতিগুলো বড্ড স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে, যেন কবির হৃদয় মু চড়ে শব্দগুলো বেরিয়েছে।
ফর্মগত দিক থেকে দেখলে, মাতলাতে রাদিফ ও কাফিয়া দুয়ের ব্যবহারই দেখা গেছে। এই
গজলে রাদিফ হল ‘নহীঁ হ্যায়’ এবং কাফিয়া হল ‘কারার’ ‘উস্তুওয়ার’ ‘অ্যায়তবার’ ইত্যাদি।
মাতলার পরে প্রত্যেক জোড় সংখ্যক পংক্তিতে রাদিফের পু নরাবৃ ত্তি ঘটেছে এবং তার
আগে কাফিয়াও বসেছে। মাক্তাহ্‌-তে কবির নামও রয়েছে। সু তরাং, ফর্ম এবং বিষয়, সবদিক
থেকেই এটি একটি আদর্শ গজল।
২। দিল ইয়ে নাদাঁ তুঝে হুয়া কেয়া হ্যায়
আখির ইস দর্দ কি দাওয়া কেয়া হ্যায়
হাম হ্যায় মু স্তাফা অওর উও বেজার
ইয়া ইলাহি ইয়ে মাজরা কেয়া হ্যায়
...
ম্যায়নে মানা কি কুছ নহীঁ গালিব
মু ফত হাথ আয়ে তো বু রা কেয়া হ্যায়।

এই গজলেও এক প্রেমিকের হৃদয়ের আর্তি ফুটে উঠেছে। ফর্মগত দিক থেকে দেখলেও
দেখা যায়, সার্থক গজল হয়ে ওঠার সবকটি শর্ত ই রয়েছে এর মধ্যে, যথা রাদিফ (কেয়া
হ্যায়), কাফিয়া(দাওয়া, মাজরা, বু রা), মাতলা(দিল ইয়ে...), মাক্তাহ্‌(ম্যায়নে মানা কি...)
এর থেকে বলা যায়, গজল রচনায় মির্জ া গালিব অত্যন্ত পারঙ্গম এক কবি এবং কৃতিত্বের
অধিকারী।
 কাসিদা কী: কাসিদা হল উর্দু প্রশস্তিমূ লক কবিতা। সমাজের শীর্ষস্থানীয় কোনো ব্যক্তি,
মূ লত রাজারাজড়া, জমিদার, সম্রাটদের, নায়ক, সাধু সন্ত, ধর্মপ্রবক্তা ইত্যাদিদের
প্রশস্তি করার উদ্দেশ্যে।
কাসিদার বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ –
১। কাসিদা বহিরঙ্গমূ লক কাব্য (যাকে খারিজি বলে)। একটি কাসিদা সাধারণত ১৫-২১টি
দ্বিপদ নিয়ে তৈরি হয়।
২। কাসিদার একটা ভূমিকা থাকে, যাকে তসবীব বলা হয়। এছাড়াও কাসিদা গুরেজ, মধ
এবং দুয়া – এই মোট চারটি অংশ নিয়ে তৈরি হয়।
৩। কাসিদায় গজলের মতোই প্রথম দুটি লাইন বা মাতলায় রাদিফ বা কাফিয়া থাকে।
তবে, গজলে যেমন মাতলায় রাদিফ ও কাফিয়া থাকতেই হবে, কাসিদায় সেটা না। কাসিদার
মাতলায় রাদিফ ও কাফিয়া নাই থাকতে পারে, পরে থাকতে পারে, এমনকী নাও থাকতে
পারে।
৪। কাসিদাতেও মাক্তাহ্‌থাকে, যেখানে কবি ভণিতা করেন বা নিজের নাম বলেন। তবে,
গজলের মতো শেষ দুটি লাইন নয়, যেখানে খু শি মাক্তাহ্‌থাকতে পারে।

মির্জ া গালিব কাসিদা রচনায়ও বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। তাঁর প্রতিভা সবথেকে
বেশি দেখা যেত কাসিদার ভূমিকা বা তসবীব রচনায়। এক হিন্দি সমালোচক বলেছেন,
“গালিব কো আপনি তসবীব পর বড়া নাজ্‌থা।” (গালিবের নিজের তসবীবের উপর খু ব গর্ব
ছিল)। তাঁর তসবীবে শব্দপ্রয়োগ, অলঙ্কারের ব্যবহার কাসিদাগুলোকে এক অন্য মর্যাদা
দিয়েছে।
নীচে মু ঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ্‌জাফরকে নিয়ে রচিত একটি কাসিদার তসবীব অংশটি তুলে
ধরা হল –
হাঁ মাহ্‌-এ-নাও! সু নে হম উসকা নাম
জিসকো তু ঝুঁ ককে কর রাহা হ্যায় সালাম
তু নহী জানতা তো মু ঝসে সু ন
নাম শাহেনশা-এ-বু লন্দ মকাম
কিবলা-এ-জান ব দিল বাহাদুর শাহ
মাজহার-এ-জ্‌দ্‌অল্‌জালাল ব হল কিবাম।
এখানে চাঁদকে কবি বলছেন, যাকে সে রোজ ঝুঁ কে সেলাম করে, কবি তার নাম জানেন। চাঁদ
যদি না জানে, যেন কবির থেকে জেনে নেয়। তিনি হৃদয়বান, ধর্মপ্রাণ, বিশ্বাধিপতি,
মহামহিম।
এই তসবীব থেকে এই সেই হিন্দি সমালোচকের কথাটিই প্রামাণ্য হয়ে দাঁড়ায়; “গালিব কো
আপনি তসবীব পর বড়া নাজ্‌থা।”

সু তরাং, উর্দু সাহিত্যে কবিতার মধ্যে গজল ও কাসিদা রচনায় মির্জ া গালিবের কৃতিত্ব
অনস্বীকার্য। উর্দু সাহিত্যকে জনপ্রিয় ও সমৃ দ্ধ করে তোলায় তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন
করেন, যা তাঁর গজল বা কাসিদা রচনার প্রতিভা থেকে সহজেই বোধগম্য হয়।

You might also like