You are on page 1of 3

যেভাবে নিজামুদ্দিন ভাইরাসমুক্ত হলোঃ 

(ফিয়াস্কো অভ আলমি ফিতনা) 


********************************
দুইজন প্রত্যক্ষদর্শী বাংলাদেশি আলিম যাদের একজন মাস্তুরাতসহ ঐ সময় নিজামুদ্দিনে অবস্থান করছিলেন
আরেকজন পুরুষ জামাতে সময় দিচ্ছিলেন তাদের কারগুজারি অনুসারে লেখা হয়েছে ।
২০১৬ এর রমযানের কোন এক তারিখে পাকি হেদায়েত মোতাবেক আলমি ফেত্নাবাজরা সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লির
দেড়শ গুন্ডার এক বাহিনী দিয়ে হজরতজি মাওলানা সাআদকে জোরপূর্বক নিজামুদ্দিন থেকে বের করে দিবে ।
এই খবর মেওয়াতিদের কাছে পৌঁছানো মাত্রই তারা ৪০টি বাসে করে ১০০০ জনের জামাত নিয়ে নিযামুদ্দিনে
মারকাজে চলে আসে এবং গুন্ডা বাহিনীর আগেই পুরা মারকাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নেয় । নির্দি ষ্ট তারিখে
দেড়শ জনের গুন্ডা বাহিনী নিজামুদ্দিনে প্রবেশ করে ।

প্রতিদিনের মত ইফতার করার জন্য হজরতজি দস্তরখানে আসেন । হজরতজি দস্তরখানে বসার সাথে সাথেই ঐ
গুন্ডা বাহিনীর সরদার যে দিল্লিতে খুবই কুখ্যাত,সে হজরতজির মুখোমুখি এসে বসে এবং বিভিন্ন ধরনের
বেয়াদবি মূলক আচরণ ও কথা বলতে থাকে আর হজরতজিও সবর করতে থাকেন ।এক পর্যায়ে ইয়াসিন
দস্তরখান থেকে হজরতজির খাবারের প্লেট হজরতজির সামনে থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায় । এসবই ইফতারের ঠিক
আগ মুহূর্তে র ঘটনা । ইয়াসিন প্লেট নিয়ে যাওয়ার পর ঐ কুখ্যত গুন্ডা সরদার হজরতজিকে বলেন মোটামুটি
এরকম ” তোমার মামুররা তোমাকে মানে না , তাদের উপর তোমার কোন নিয়ন্ত্রন নাই , তোমার সামনে থেকে
তোমার খাবার উঠিয়ে নিয়ে গেলো অথচ তু মি কিছু ই করতে পারলে না তো আমি এখন ফয়সালা করলাম এখন
থেকে তু মি আর আমির না , আমির হলো জুহাইরুল হাসান ” । কিছু মেওয়াতিও ঐ সময় খানার কামরা এবং
আশপাশে অবস্থান করছিল । মেওয়াতিরা বার বার দূর থেকে করজোড়ে হজরতজিকে ইশারার মাধ্যমে অনুনয়
বিনয় করছিল যেন হজরতজি ওখান থেকে অর্থাৎ খানার কামরা থেকে চলে যায় । এক সময় হজরতজি
দস্তরখান থেকে উঠে দাঁড়ান চলে যাওয়ার জন্য এবং যাওয়ার আগে বলে যান যেসব ঘটনা ঘটেছে এসব নিয়ে
কেউ যেন বাড়াবাড়ি না করে । হজরতজি খানার কামরা থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই মেওয়াতিরা খানার
কামরার দরজা আটকে দেয় তারপর ঐ কুখ্যাত গুণ্ডা সরদারসহ তার সাঙ্গপাঙ্গদের উত্তম মধ্যম দেয়া শুরু করে
! গুণ্ডা সরদারের মাথা ফেটে রক্তারক্তিও হয় । এরপর মেওয়াতিরা সবাইকে উত্তম রূপে ধোলাইয়ের পর
তাদেরকে প্রয়োজনীয় ফার্স্ট এইড প্রদান পূর্বক অর্থাৎ মাথা হাত পায়ের ব্যান্ডেজ করে মারকাজের পিছনের
একটি দরজা দিয়ে তাদেরকে বের করে দেয় ! এইসব মারামারি থানা পুলিশ মেওয়াতিরা খুবই ভালো বুঝে ।
মেওয়াতিদের সম্পর্কে কিছু টা ধারনা পেতে চাইলে আবুল হাসান আলি নদভি রহঃ এর দ্বীনি দাওয়াত কিতাবটি
আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন ।শফিউল্লাহ কুরাইশির সম্ভবত কে সে জনেও মেওয়াতিদের বিষয়ে লেখা আছে ।
যাইহোক , এরপর মেওয়াতিরা পুরা খানার কামরা পরিষ্কার করে ঝকঝকে তকতকে করে ফেলে যাতে দেখে
কেউ বুঝতে না পাতে এখানে কোন রক্তারক্তি হয়েছে ! এই সমস্ত ঘটনাই মাগরিব অর্থাৎ ইফতারির ওয়াক্তে
ঘটেছে । নামাযের পড়ে অথবা আগে হজরতজি যেসব ঘটনা ঘটেছে সেসবের ব্যাপারে বলেন যে সবই উনার
অজান্তে এবং সম্মতি ছাড়াই ঘটেছে এবং তিনি সংশ্লিষ্টদেরকে বলেন তারা যেন আহতদের খোজখবর নেয় এবং
প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয় । এরপর হজরতজি এশা ও তারাবীহ পড়ান ।

1
তারাবীহর পর মারকাজে পুলিশ আসে । পুলিশ প্রথমে হযরতজির সাথে দেখা করে উনার বক্তব্য শুনেন ।
পুলিশের প্রশ্নের জবাবে হযরতজি বলেন পুরা স্টেটের মুতাওল্লি তিনি। পুলিশ কাগজপত্র দেখতে চাইলে হযরতজি
ইলিয়াস রহঃ এর জামানা থেকে যেসব কাগজ পত্র রয়েছে সমস্ত কাগজপত্র বের করে পুলিশকে দেখান । সব কথা
এবং কাগজপত্র দেখার পর পুলিশ এবার জোহাইরুল হাসানের কাছে যান তার বক্তব্য শোনার জন্য । জোহাইরুল
হাসানও তার কাগজপত্র দেখান ।মাত্র তিন ডেসিম্যাল জায়গা জোহাইরুল হাসানের নামে । কিন্তু তিনি যে
বাড়িতে থাকেন সেটা অনেক বড় জায়গা নিয়ে । যাইহোক , জোহাইরুল হাসানের বক্তব্য এবং কাগজপত্র দেখার
পর পুলিশ পুনরায় হযরতজির কাছে আসেন । পুলিশ হযরতজিকে জিজ্ঞাস করেন এতবড় সম্পত্তির মধ্যে মাত্র
তিন ডেসিমাল জায়গার মালিক জোহাইরুল হাসান কিভাবে হলো ? আর উনি( জোহাইরুল হাসান) এত জায়গা
নিয়ে কিভাবে বাড়ি বানালেন ? জবাবে হযরতজি বলেন হযরতজির দাদী এবং জোহাইরুল হাসানের দাদী
দুইজনেই আপন বোন ( হযরত শাইখের রহঃ দুই মেয়ে ) ছিলো । উনার দাদী ঐ তিন ডেসিমাল জায়গা তার
বোনকে অর্থাৎ জোহাইরুল হাসানের দাদীকে লিখে দেন । এরপর পুলিশ জিজ্ঞাস করে “কিন্তু জোহাইরুল
হাসানের বাড়িত অনেক বড় জায়গা নিয়ে তিন ডেসিমাল থেকেও বেশি এইটা কিভাবে হলো ? “ ।জবাবে
হযরতজি বলেন ঐ বাড়ি হযরতজিই করে দিয়েছেন যেহেতু সন্তান সন্ততি বেড়ে পরিবারও বড় হয়ে গিয়েছে ।
এসব কথাবার্ত ার পর পুলিশরা আশেপাশে চলে যায় । অনেকে চা খেতে যায় । পুলিশরা কি আলোচনা করে এটা
শোনার জন্য বাংলাদেশের ঐ দুই আলিমের একজনও পুলিশরা যে হোটেলে চা খেতে গিয়েছিল সেখানে যায় । দুই
পুলিশ চা খেতে খেতে আলোচনা করছিলো পুরা ঘটনা নিয়ে। আলোচনার ভিতর একজন বলে এই মাওলানা
সাআদ ইনিতো মানুষ না ইনি ভগবান ! নিজের জমিতে যাকে নিজেই আবার বাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন তারাই
তাকে উৎখাতের চেষ্টা করছে অথচ এই মাওলানা সাআদ তাদের বিরুদ্ধে কোন কথাই বলল না ইত্যাদি ইত্যাদি ।
এদিকে এই ঘটনায় আলমি শুরার অনুসারীরা দেখছে তারা যে প্লান করেছিল সেই মতই কিছু ই হলো না বরং
পরিস্থিতি সম্পূর্ণ তাদের প্রতিকুলে চলে গিয়েছে । যেখানে তাদের শেষ ভরসা পুলিশ ছিলো সেই পুলিশও সব
জানার পর নিরপেক্ষভাবে তাদের ভূ মিকা পালন করছে যেটা তাদের জন্য দুঃসংবাদ।এইজন্য আহমেদ লাট
,ফারুক জুতাওয়ালি সহ সকল গুজরাটি এবং আলিগড়ি আলমি শুরার অনুসারী যারা মারকাজে ছিলো তারা
এক এক করে গোপনে মারকাজ থেকে রাতের অন্ধকারে ভাগা শুরু করে । পরদিন ফজরের আগেই পাকি-কুকড
এই ষড়যন্ত্রে যারা জড়িত ছিলো তারা সবাই নিজেরাই ভেগে যায় , কেউ তাদের কিছু ই বলে নাই।
সবাই যখন মারকাজ ছেড়ে যাওয়া শুরু করেছে তখন জোহাইরুল হাসান সাহেব সম্পর্কে তার শশুর অথবা চাচা
শশুর হযরত শেখ জাকারিয়া রহঃ এর ছেলে মাওলানা তালহা সাহেবকে ফোনে সব ঘটনা জানিয়ে পরামর্শ চান ।
মাওলনা তালহা জোহাইরুল হাসান সাহেবকে বলেন মুটামুটি " তু মি যদি নিজামুদ্দিন মারকাজ ছেড়ে চলে যাও
তাহলে তবলিগে তোমার নাম নিশানা কিছু ই আর বাকি থাকবে না , তু মি বরং মারকাজেই থাকো । মাওলানা
সাআদ বরং আগের মতই তোমাকে ভালো জানবে টেক কেয়ার করবে আদর যত্নের কোন কমতি মাওলানা
সাআদের তরফ থেকে হবে না " । এই কথার প্রেক্ষিতে জোহাইরুল হাসান সাহেব মারকাজেই থেকে যান।
আলমি শুরা অনুসারীদের সকলেই অর্থাৎ মুরুব্বিরাসহ ছানাপোনা সবাই ঘটিবাটিসহ যে যেভাবে পারছে রাতের
অন্ধকারেই সকাল হওয়ার আগেই ভেগে গেছে ব্যাতিক্রম ছিলো শুধু মাওলানা ইব্রাহিম সাহেব । উনি স্বাভাবিক
ভাবেই মারকাজে অবস্থান করছিলেন । এই ঘটনার ২/৩ দিন পর মাওলানা ইব্রাহিম সাহেব উনার বাড়িতে

2
যাওয়ার জন্য মাওলানা সাআদ সাহেবের কাছে অনুমতি চান । শেষ ১৫ রমযান নিজের এলাকায় কাটানো এটা
মাওলানা ইব্রাহিম সাহেবের দীর্ঘদিনের অভ্যাস । তিনি স্বাভাবিক নিয়মেই হজরতজির কাছে বাড়িতে যাওয়ার
অনুমতি চান এবং উনি যাওয়ার পর যে কিতাব উনি পড়ান সেটাও কে পড়াবে এটাও হজরতজির সাথে
মাসোয়ারা করে ঠিক করেন এবং উনি যাওয়ার সময় অন্যদের মত তল্পিতল্পা সব নিয়ে যান নাই , শুধুমাত্র
একটি ব্যাগে উনার কিছু কাপড়চোপড় নিয়ে যেভাবে সবসময় যান সেভাবেই গিয়েছেন । পুরা ঘটনার সাথে
মাওলানা ইব্রাহিম সাহেবের গতিবিধি কর্মকান্ড পর্যালোচনা করলে দুইটা জিনিস পরিষ্কার হয় । উনি
হজরতজিকে আমির মেনেছেন বলেই উনার কাছে বাড়িতে যাওয়ার আগে সব মাসোয়ারা চেয়েছিলেন । দ্বিতীয়ত
আলমি ফেতনাবাজদের এতবড় ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে ইব্রাহিম সাহেব সম্ভবত কিছু ই জানতেন না ।

অনেকেই বলেন তবলিগে এইসব দখল আর বের করে দেয়ার সংস্কৃতি কখনই ছিলো না । এইসব কোত্থেকে শুরু
হলো ? এটা মূলত পাকি কালচার । আর বাংলাদেশে পাকিপ্রেমিক হেফাজতি বেফাকরা আছেন তাদের মধ্যে
এসব দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত । মুশফিকি ফেতনার জনক নিজেও এই কালচারটা দীর্ঘদিন তবলিগে নিয়ে আসার
চেষ্টা করেছে অবশেষে মৃত্যুর পর তার ছানাপোনারা এসব নিয়ে হেফাজতি বেফাকিদের কাজে লাগিয়ে বেশ
ভালোই আছে । যাইহোক , আমরা পরবর্তীতে ইংশাআল্লাহ আলোচনা করব কিভাবে মাহমুদল ু হাসান হজরত
মাওলানা মোতাসিম বিল্লাহর রহঃ যাত্রাবাড়ী মাদ্রসা দখল করেছিলো , মসজিদে মানুষ হত্যার ফেরারি আসামি
মাহফু জুল হক কিভাবে চিল্লা দিলো , মামুনুল হক (যে বলে হজরতজি নাকি নিজের অস্তিত্ব টিকায় রাখার জন্য
জোড় করে টঙ্গিতে আসতে চেয়েছেন ! ) মুফতি মুন্সুরুল হকরা কিভাবে জামিয়া রহমানিয়ার নাম দিয়া জমি
দখল করল ইত্যাদি ইত্যাদি ।

You might also like