Professional Documents
Culture Documents
Atomic Habits - Review
Atomic Habits - Review
সার-সংক্ষেপঃ
বইটি শুরু হয় লেখকের নিজের গল্পের মাধ্যমে- এরপর প্রতি অধ্যায়ে অণুর মত ক্ষু দ্র ক্ষু দ্র অভ্যাস বদলিয়ে নিজের
জীবন বদলে ফেলার গল্প ।
শুরুতে লেখক বর্ণনা করেন তার হাইস্কু লের শেষ দিনে বেসবল খেলায় ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনায় মাথায় বল লেগে
কীভাবে তিনি গুরুতর আহত হন । হাসপাতালে চলতে থাকে তার এবং তার পরিবারের যুদ্ধ । দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী
থাকার পর ধীরে ধীরে দুই বছর পর লেখক আবার বেসবল খেলায় ফিরে আসার শক্তি পেলেও দক্ষতা নেমে আসে
শূন্যে । আবার আগের দক্ষতায় ফিরে যাওয়ার জন্য তার ছোট ছোট অভ্যাসের পরিবর্ত নে জীবনে যাদুকরী সাফল্য
বয়ে আনে ।
অভ্যাস ফিরিয়ে আনার জন্যে লেখক কিছু ছোট পরিবর্ত নের সূচনা করেন । কলেজের দিনগুলোতে অন্যান্য
তরুণদের মত ভিডিও গেম না খেলে দ্রুত ঘুমাতে যাওয়া ,হোস্টেল রুম পরিষ্কার রাখা – এসব কাজ থেকে
মানসিক দৃঢ়তা অর্জ ন করেন ।দুর্ঘটনায় আগের দক্ষতা শূন্যে নেমে গেলেও নিয়ম মত ট্রেনিং ,বাড়তি পরিশ্রম ,
সময়মত ও নিয়মিত খাওয়া ও ঘুমের কারণে রাতারাতি ফল পান লেখক । কলেজের প্রথম বছরের শেষে
ক্যাপ্টেন , আর টার্মের শেষে অল-কনফারেন্স টিমের জন্যও নির্বাচিত হন তিনি।ছয় বছর বাদে নির্বাচিত হন
ইএসপিএন এর একাডেমিক অল আমেরিকা টিমের সদস্য হিসেবে ,পান প্রেসিডেন্টস মেডেল।
নিজের এই অভিজ্ঞতার সাথে তাত্ত্বিক বিজ্ঞান, মনস্তত্ত্বের আলোচনা মিলিয়ে অভ্যাস পরিবর্ত ন এর সুফল লেখা
হয়েছে বইটিতে।
যেমন একবারে বড় পরিবর্ত ন না এনে ধীরে ধীরে ছোট ছোট ভাগে ১% পরিবর্ত ন আনলে এক বছর শেষে তা ৩৭%
এর মত বিশাল সাফল্যে ধরা দেয়- ব্রিটিশ সাইক্লিং সোসাইটির উদহরণের মাধ্যমে এই গাণিতিক মডেলটি ব্যাখ্যা
করা হয়েছে । কিন্তু সাধারণত আমরা একদিন বা এক সপ্তাহেই কার্যকর পরিবর্ত ন না দেখে আবার আগের রুটিনে
ফিরে যাই । এই ঘটনাপ্রবাহের মানসিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে অধ্যায়টিতে ।
আমাদের এই অভ্যাসগত পরিবর্ত নের কিছু ভালো উপাদান আছে (জ্ঞান , কার্যস্পৃহা , সম্পর্ক )।তেমনি বাজে
অভ্যাসের কিছু খারাপ উপাদানও (অতিরিক্ত চাপ, মানসিকতা , স্বভাব) রয়েছে ।
যেকোন অভ্যাসের পরিবর্ত ন নির্দি ষ্ট মাত্রায় না আসলে তার কোন ফলাফল দেখা যায় না ।তাই নির্দি ষ্ট মাত্রাকে
ক্রিটিকাল থ্রেসহোল্ড ধরে সেটি অর্জ নের জন্য কাজ করে যেতে হবে।
একইভাবে ,আমরা সবসময় কোন একটি অভ্যাসের পেছনে একটা লক্ষ্য ধরে নেই ।কোন নির্দি ষ্ট লক্ষ্যে মনোযোগ
না দিয়ে বরং পুরো সিস্টেমটিক কাজে মনোযোগ দিলে কাজে সাফল্য আসে ।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে কীভাবে আমাদের অভ্যাসই আমাদের পরিচয়কে গড়ে তোলে । বিশেষ করে খারাপ বা
আলসেমির অভ্যাস একবার তৈরি হলে আর যেতেই চায় না ।তাই একটি ভালো অভ্যাস তৈরির চেয়ে একটি
খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করা অনেক কঠিন।
এই অভ্যাস পরিবর্ত ন কেন কঠিন আর ধাপে ধাপে আমরা কী ভু লগুলো করি তার চিত্র উঠে আসে দ্বিতীয়
অধ্যায়ে ।অভ্যাসগত পরিবর্ত নকে এখানে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে – ফলাফল, পদ্ধতি আর আত্নপরিচয়ের
পরিবর্ত ন ।আমরা অনেক সময় নিজের বর্ত মান পরিচয়ে অভ্যস্ত হয়ে যাই । বর্ত মান এর খোলস ছেড়ে বের হয়ে
আসা সম্ভব হয়ে উঠে না – তাই সবার প্রথমে নিজের অলস বা দুর্বল পরিচয়কে ঝেড়ে ফেলতে হবে ।নিজের
পরিচয়কে প্রশ্ন করে নিজের মধ্যে খুজে নিতে হবে নিজের সুপারহিরোকে।
মস্তিষ্কের সাথে অভ্যাসের সম্পর্ক বা নিউরোবায়োলজিক্যাল কারণসমূহ আমাদের কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করে ।
কোন কিছু যত দ্রুত অভ্যাসে পরিণত হয়,মস্তিষ্কে সেই কাজের জন্য তত কম পরিশ্রম করে । মস্তিষ্কের আগের
অভিজ্ঞতা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা সম্পন্ন হয় ।অর্থাৎ, কাজ দ্রুত সম্পন্ন হয় ।মস্তিষ্কে এ ধরনের স্বয়ংক্রিয় কাজ
সম্পন্ন করার চারটি ধাপ রয়েছে – সংকেত, তাড়না, প্রতিক্রিয়া আর প্রাপ্তি ।এই চারটি ধাপকে কেন্দ্র করেই
পরবর্তীতে বইয়ের অধ্যায়গুলি গড়ে উঠেছে ।
প্রথম ধাপ কেন্দ্রিক নীতি – সংকেতকে দৃশ্যমান করুন । এই অধ্যায়ে মানব মস্তিষ্কের পূর্বানুমান ক্ষমতা আলোচিত
হয়েছে। আমাদের মস্তিষ্কের রয়েছে চিন্তা না করেই অভ্যাসবশত কাজ সম্পন্ন করার শক্তি ।তাই তালিকার মাধ্যমে
সময় ধরে ,বা সংকেত দ্বারা নির্দি ষ্ট অভ্যাসের চর্চা করলে অভ্যাস ধরে রাখা সহজ হয় ।
অভ্যাসের সাথে আশেপাশের পরিবেশের সম্পর্ক রয়েছে । এই সম্পর্ক কে ব্যবহার করে সু অভ্যাস তৈরি করা যায়।
একইভাবে,আত্ননিয়ন্ত্রণের সাথেও অভ্যাসের সম্পর্ক আছে ।
অভ্যাস পরিবর্ত নের দ্বিতীয় নীতিতে হচ্ছে ভালো অভ্যাসগুলো নিজের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা । যে
অভ্যাস আমরা অর্জ ন করতে চাই তাকে খুব কঠিন বা অনতিক্রম্য ভাবলে হবে না । বরং লক্ষ্যকে আকর্ষণীয়
এবং সহজে করার যোগ্য ভাবতে হবে । আমাদের মস্তিষ্ক প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে তেল,চর্বি,লবণজাতীয় খাদ্যের
সন্ধানে ব্যস্ত- কেননা আদিম যুগে এগুলোর স্বল্পতা ছিল । সেকারণে এখনো ফাস্টফু ড পেলে মস্তিষ্ক অতিরিক্ত
ডোপামিন নিঃসৃত করে । এই ডোপামিনই আমাদের কাছে বিভিন্ন কাজকে আকর্ষণীয় করে তোলে ।
যেকোন ক্ষেত্রে পুরষ্কার পাওয়ার পরিতৃ প্তি নয়,বরং পুরষ্কার পাওয়ার জন্য যে আকাঙ্ক্ষা , যে উদ্দীপনা – সেটাই
ডোপামিনকে আরো বেশি ক্ষরিত করে ।
বন্ধু বান্ধব ও পরিচিতজনের সাহচর্যও আমাদের অভ্যাস পরিবর্ত নে সাহায্য করে । আমাদের মস্তিষ্ক স্বভাবতই
আমাদের চারপাশের সবাইকে অনুকরণ করে । তাই নিজের চারপাশে উন্নত জীবনাচরণের মানুষ রাখা উচিত ।
যেকোন অভ্যাস তৈরির আগে সাধারণত আমাদের চিন্তায় থাকে ,কতদিনে কাজটি আমার স্বভাবে পরিণত হবে।
কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হওয়া উচিত – কতবার চেষ্টা করলে কাজটি আমার অভ্যাসে পরিণত হবে ।
প্রকৃ তপক্ষে ,আমাদের তৈরি করা অভ্যাসগুলো আসলে কিছু পরিবর্ত নের প্রথম ধাপ । আমরা ডায়েট করি কারণ
আমরা ফিট থাকতে চাই, আমরা পড়াশোনা করি কারণ আমরা সাফল্য চাই ।লক্ষ্য অর্জ নের জন্য অভ্যাসের
প্রতিটা ধাপেই সেই ফলাফলকে মনে করতে হবে ।
ছোট ছোট করে সব অভ্যাসকে শুরু করতে হবে,যাতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল চোখের সামনে অর্জ ন করা সম্ভব হয় ।
অনেকসময়ই যে কোন অভ্যাস তৈরির ক্ষেত্রে আমরা বিশাল বড় লক্ষ্য সামনে রাখি – তারপর তা কয়েকদিনের
মাথায় অর্জ ন করতে না পারলে স্পৃহা হারিয়ে ছেড়ে দেই । তার বদলে ছোট ছোট লক্ষ্যে অভ্যস্ত হলে আস্তে আস্তে
লক্ষ্য বাড়িয়ে অভ্যাস তৈরি করতে হবে ।
একইভাবে,খারাপ অভ্যাসগুলোকে কঠিন করে ফেলতে হবে- যাতে তা করতে বাধার সৃষ্টি হয় ।
চতু র্থ ধাপে যেকোন অভ্যাসকে নিজের জন্য সুপ্রতিক্রিয়াশীল করতে হবে ।অর্থাৎ অভ্যাসকে আনন্দদায়ক কাজে
পরিণত করতে হবে,যাতে বারবার করতে ইচ্ছা হয় ।এজন্যে যে কোন অভ্যাস সম্পন্ন করার সাথে সাথে নিজেকে
ছোট পুরষ্কার দেয়া যায় ।
একইভাবে ,নিজের অভ্যাসের উন্নতিগুলো রেকর্ড করলে বা নিয়মিত চেকয়াপ করা যায় । এতে নিজের উন্নতির
চিত্র দেখে অভ্যাস ধরে রাখা সহজ হয় ।কোন একদিন অভ্যাস বা রুটিনের একটু পরিবর্ত ন হলেও পরদিন দ্রুত
ফেরত আসা যায় ।নিজের সাথে নিজেই অভ্যাসের নানারকম চু ক্তি করা যায় ।
বইয়ের দ্বিতীয় অংশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জ নের জিনগত দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে । জিনগত
পার্থক্য কিছুক্ষেত্রে আপনাকে এগিয়ে দিতে পারে ঠিকই ,কিন্তু এর মানে এই না আপনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে
প্রকৃ তিগতভাবে প্রতিভাহীন । বরং নিজের উপর জোর দিয়ে দক্ষতার জায়গা খুজে বের করতে হবে ।
বইয়ের পরবর্তী অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে কীভাবে অভ্যাস আপনাকে একটি নির্দি ষ্ট সীমা পর্যন্ত নিয়ে যায় ।
কিন্তু নিজেকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাওয়ার জন্যে অভ্যাসের পাশাপাশি জোর অনুশীলন করতে হবে প্রতিনিয়ত
উন্নতি করার জন্য ।উন্নতির সীমারেখা বাড়াতে হবে গ্রেট হবার জন্যে ।
নিজের এই অভ্যাস আর উন্নতির রেকর্ড নিয়মিত পর্যালোচনা করে নিজের ভু লগুলো শুধরে আরো দক্ষ হতে হবে
– তবে সবটাই ধীরে ধীরে ।
ক্ষু দ্র ক্ষু দ্র এইসব পরিবর্ত ন ধীরে ধীরে এনে দিতে পারে বিশাল সাফল্য । গোল্ড মেডালিস্ট থেকে শুরু করে
বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী – সবার উদহরণের মাধ্যমে সাবলীল ভাষায় তু লে ধরা হয়েছে জেমস ক্লিয়ারের ক্ষু দ্র অভ্যাস
বইটিতে ।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
প্রথমবার বইটি শুরু করার সময় আর দশটি সাধারণ আমেরিকান লাইফস্টাইল বই বলেই মনে হচ্ছিল – কিছু
উপদেশ,কিছু উদাহরণ – আমিও অনেক বড় কিছু করতে পারি এমন মানসিক শক্তি দেয়া - হয়তো এটু কু ই ।
কিন্তু ধীরে ধীরে বইটি সমাজতত্ত্ব ,আদিমযুগ থেকে মানুষের মনস্তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করে ।একই সাথে মানবমস্তিষ্কের
গঠন, কার্যকলাপ – এবং কীভাবে আমরা মস্তিষ্ক দিয়ে নিয়ন্ত্রিত না হয়ে বরং মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি – সে
রাস্তা দেখানো হয় । প্রতিটি নীতি এখানে খুব চমতকারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে – একই সাথে ঠিক কী কী পদক্ষেপ
নিলে যে কোন একটা অভ্যাস গড়ে তোলা যাবে – তার খুব দৃষ্টিনন্দন কিছু তালিকাও রয়েছে ।এই তালিকাগুলো
খুব সহজে নিজের জীবনে প্রয়োগ করা যায় ।
১। বইটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে লেখচিত্র ব্যবহার করে সহজবোধ্য দৃশ্যায়ন করা হয়েছে ।
২। বিভিন্ন পদ্ধতিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য গাণিতিক মডেল ব্যবহার করা হয়েছে ।
৩। অভ্যাস তৈরির বিভিন্ন নীতি কীভাবে নিজের জীবনে প্রয়োগ করা যায় – তা সহজ দৈনন্দিন উদাহরণের মাধ্যমে
দেখানো হয়েছে ।
৪। অন্যান্য লাইফস্টাইল বইয়ের তু লনায় চমৎকার ও আপডেটেড রেফারেন্সিং ব্যবহার করে হয়েছে ।
দুর্বল দিকঃ
বইটির সূচনা আর শেষে আরো মোহনীয় ধারাবাহিকতা রাখা যেত বলে মনে হয়।বইটির শুরু হয় লেখকের নিজের
জীবনের দুর্দ শা থেকে-কিন্তু শেষ পর্যন্ত উনার জীবনের টু করো চিত্র উঠে আসলেও উনার সাফল্যের দৃশ্যায়ন বইটির
শেষ অধ্যায়কে আরো পরিপূর্ণ করতে পারতো ।
বিপরীতভাবে,শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই ঘটনাপ্রবাহকে উদাহরণে ব্যবহার করা বইটিকে ধারাবাহিকতা দিয়েছে –
কিন্তু জীবনের আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই নীতিগুলোর প্রয়োগ দেখানোর সুযোগ ছিল এই উদাহরণগুলোর মাধ্যমে ।
বইটির শুরু এবং ধীরে ধীরে উত্তরণ যত শক্ত গাঁথুনির ,শেষটা তার চেয়ে তু লনামূলক দুর্বল – অনেকটা হুট করেই
সমাপ্তি টানার মত ।
Important Quotes:
The secret to getting results that last is to never stop making improvements.
- Submitted By
Ishmam Tasnim