You are on page 1of 2

কম্পিউটার সাধারণত ০ এবং ১ ছাড়া কিছুই বুঝে না । আচ্ছা এমন কম্পিউটার যদি থাকতো যা ০ এবং ১ ছাড়াও অন্য

বিট নিয়ে কাজ করতে পারে ? এমনই এক ধরনের কম্পিউটার হল কোয়ান্টাম কম্পিউটার। আমরা অনেকেই হয়তো
কমবেশি এর নাম শুনে থাকব কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার কী এবং কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে অনেকেরই তেমন কোন
স্বচ্ছ ধারণা নেই ।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার মূলত কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সূত্র মেনে কাজ করে । কোয়ান্টাম মেকানিক্স পদার্থবিজ্ঞানের বিশেষ
এক শাখা যেখানে বস্তুর ক্ষু দ্রতম কণা যেমন ইলেক্ট্রন, প্রোটন ইত্যাদির আচরণ, অবস্থান, গতিবিধি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সে বস্তুর অবস্থান, গতিবিধি সম্ভাব্যতা দিয়ে বিচার করা হয়, নিশ্চিত করে কিছুই বলা যায় না ।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে কিছু বলার আগে প্রচলিত কম্পিউটার সম্পর্কে ও আরেকবার বলি। প্রচলিত কম্পিউটারের
চিপ বিট ব্যবহার করে। বিট ক্ষু দ্র সুইচের মত যা অফ অবস্থায় থাকতে পারে ( ০ দিয়ে প্রকাশ করা হয়) অথবা অন অবস্থায়
থাকে (১ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। আমরা যত এপস, ওয়েবসাইট দেখি বা কম্পিউটারে যাই করি না তার সবই মিলিয়ন মিলিয়ন
বিটের তৈরি যা কেবল ০ আর ১এর কম্বিনেশন।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মূল ভিত্তি কিউবিট (Qubit)। কিউবিট অন- অফ ছাড়াও আরেকটি অবস্থায় থাকতে পারে যাকে
বলা হয় সুপারপজিশন(Superposition) ।
সুপারপজিশন হল একই সময়ে অন এবং অফ থাকা অথবা বলা যায় অন-অফের মধ্যবর্তী কোন অবস্থায় থাকা।
সুপারপজিশনকে একটি কয়েন স্পিনিং এর ঘটনার সাথে তু লনা করা যেতে পারে। কয়েন স্পিন করা হলে সেটি তখন হেড
বা টেলের মধ্যবর্তী অবস্থায় থাকে। নিশ্চিত ভাবে জানা যাবে না হেড হবে নাকি টেল হবে।
কিউবিট আরেকটি অদ্ভু ত যে সূত্র মেনে চলে তাহলো এনট্যাংগলমেন্ট ( Entanglement)। সাধারণত দুটি কয়েন নিক্ষেপ
করলে একটি কয়েনের ফলাফল অপর কয়েনকে প্রভাবিত করে না।এরা স্বাধীন। এনট্যাংগলমেন্টে দুটি কণা ফিজিক্যালি
পৃথক থাকলেও এরা পরস্পর সংযুক্ত। যদি একটি কয়েনে হেড আসে অপরটিতেও হেড আসবে। যদিও এটি জাদুর মত
শোনায় তবে পদার্থবিজ্ঞানীরা এখনো পুরোপুরি বুঝতে পারেনি কেন বা কীভাবে তা কাজ করে।
এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগতে পারে এই কম্পিউটার এমন কীই বা করতে পারবে? কোয়ান্টাম কম্পিউটার যে শুধু দ্রুত
বা দক্ষতার সাথে কাজ করে তাই নয়, এটি এমনকিছু করতে পারবে যা আমরা কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি বা সবচেয়ে ভালো
সুপারকম্পিউটারও যা করতে সক্ষম নয়। সুপারকম্পিউটারগুলো এখন যা করতে পারে তাহলো সবচে মৌলিক অণুগুলো
বিশ্লেষণ করতে পারে কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার অণুর কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে অপারেট করে যা
সুপারকম্পিউটারগুলো সিমুলেট করার চেষ্টা করে যাচ্ছে । তাই সবচেয়ে জটিল রিয়াকশন নিয়ে কাজ করতে এর কোন
সমস্যাই হওয়ার কথা না। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন কোয়ান্টাম সিমুলেশন Incurable Alzheimer's disease এর
প্রতিষেধক খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।
ক্রিপ্টোগ্রাফি এর অন্যতম প্রধান এপ্লিকেশন। বর্ত মানে অনেক এনক্রিপশন সিস্টেম ফ্যাক্টরিং এর উপর নির্ভ র করে যা
প্রচলিত কম্পিউটারে সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কাছে এটি কোন ব্যাপারই না যা আমাদের
ডেটাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। একইসাথে কেবল কোয়ান্টাম এনক্রিপশনই ডেটাকে নিরাপদ রাখতে পারে। এটি
অনিশ্চয়তার নীতির উপর নির্ভ র করে। কোয়ান্টাম এনক্রিপশন কী গুলো কপি বা হ্যাক করা অসম্ভব।
সাধারণ কম্পিউটারের মত কোয়ান্টাম কম্পিউটারেরও অপারেটিং সিস্টেম আছে যা সর্বপ্রথম ক্যামব্রিজ কোয়ান্টাম
কম্পিউটিং লিমিটেড ( CQCL) বানায়। এর নাম t|kt>। কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের জন্য বিশেষ কিছু অ্যালগোরিদম
ব্যবহার করা হয় - Shor's algorithm , Simon's algorithm, Duetsch - Jozsa's algorithm ইত্যাদি।
অনেকে হয়তো ভাবছেন, আমি কখনো কি নিজের জন্য একটা কোয়ান্টাম কম্পিউটার কিনতে পারব ? আপনি হয়তো
কখনোই আপনার লেপটপ বা স্মার্ট ফোনে কোয়ান্টাম চিপ পাবেন না। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মতবাদ প্রায় কয়েক দশক
আগে বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন কিন্তু এর কাঠামো দিতে এত দেরি হওয়ার কারণ ইন্টারফেয়ারেন্স (Interference) এর প্রতি এরা
খুবই সংবেদনশীল । প্রায় সবকিছুই একটা কিউবিটকে সুপারপজিশনের সূক্ষ্ম অবস্থা থেকে নক আউট করে দিতে পারে।
এজন্য কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে সব রকম ইলেক্ট্রিক্যাল ইন্টারফেয়ারেন্স থেকে আইসোলেটেড রাখতে হবে এবং পরম শূণ্য
তাপমাত্রায় রাখতে হবে যা মহাশূন্যের চেয়েও ঠান্ডা।
তাই বলে আশাহত হওয়ার কোন কারণ নেই। ইতোমধ্যেই IBM ৩ টি কোয়ান্টাম কম্পিউটারে ফ্রী ক্লাউড এক্সেস দিয়েছে।
IBM এর ওয়েবসাইটে গিয়ে কম্পিউটারগুলো যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে । চাইলে এতে আপনি কার্ড ও খেলতে
পারেন।
এখন পর্যন্ত বেস্ট কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলোর প্রায় ৫০ টি কিউবিট আছে যা এদের অতু লনীয় শক্তিশালী করার জন্য যথেষ্ট
কারণ একটি কিউবিট যোগ হওয়া মানে প্রসেসিং ক্ষমতার এক্সপোনেশিয়াল বৃদ্ধি। কিন্তু একইসাথে এরর রেটও খুব বৃদ্ধি পায়
কারণ একটাই - ইন্টারফেয়ারেন্স !

নিচের ছবিটি IBM এর তৈরি কোয়ান্টাম কম্পিউটার IBM Q এর

You might also like