You are on page 1of 9

বিপণণ সমীক্ষা

পণ্য-ময়দা/আটা
০১. ভূ মিকাঃ

দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য হিসাবে ময়দার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ।খাদ্য হিসাবে চাঊলের পরই
ময়দা ও আটার স্থান। ইতো মধ্যেই জন সাধারনের নিকট শুকনা খাবার হিসাবে ময়দা/আটার তৈরী
খাবার বেশ জনপ্রিয়তা অর্জ ন করেছে । যার ফলশ্রুতিতে জন সাধারনের নিকট ময়দা/আটার
চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । তাছাড়া খাদ্য ও সংশ্লিষ্ট শিল্পে কাঁচামাল হিসাবে ময়দা/আটার
ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে ।

০২. ময়দা/আটার ব্যবহারঃ-


শহর ও গ্রামের প্রতিটি পরিবার সকালের নাস্তা, পরাটা, লুচি এবং রুটি তৈরিতে ময়দা/আটার
ব্যবহার করে থাকে ।হোটেল এন্ড রেষ্টু রেন্ট এ পরাটা, রুটি, চাপাতি,সমুচা, পুরি, সিংগারা ইত্যাদি
ময়দা ও আটা ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া খাদ্য শিল্পে যেমন বিস্কু ট এন্ড বেকারী শিল্পে পাঊরুটি,
কেক,বিস্কু ট,ক্রিমরোল,পেটিস ইত্যাদি তৈরিতে ময়দা কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয় । এছাড়া
সেমাই কারখানায় ময়দা কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয় ।সাধারণ জনগন অনেকেই ভাতের বিকল্প
হিসাবে ময়দার তৈরি রুটি খেয়ে থাকে ।

০৩.বৃহত্তর ফরিদপুরে ময়দা/আটার চাহিদাঃ


বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার আটা/ময়দার সঠিক চাহিদা কত তা যথাযথ জরীপ ছাড়া বলা কঠিন ।
বর্ত মানে বাংলাদেশে প্রায় ২৫০.০০লক্ষ টন খাদ্য শস্যের চাহিদা বিদ্যমান। যদি এর ২০% গম
জাতীয় খাদ্য প্রয়োজন হয় তাহলে ৫০.০০ লক্ষ টন গমের চাহিদা ধরা যেতে পারে । বৃহত্তর
ফরিদপুর জেলার লোক সংখ্যা প্রায় ৫০লক্ষ । এই জনসংখ্যা এক তৃ তীয়াংশের দৈনিক ১০০ গ্রাম

1
করে ময়দা/আটা জাতীয় খাদ্য খেলে এ জেলার বার্ষিক ময়দার চাহিদা প্রায় ৬০৮৩৩ মেঃ টঃ ।
তাছাড়া খাদ্য শিল্পেও এর ব্যাপক চাহিদা বিদ্যমান ।

ক) বেকারী এন্ড কনফেকশনারীঃ-


বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে প্রায় ১৮টি বড় বেকারী শিল্প রয়েছে । তাছাড়া ছোট ছোট আকারের
আরও প্রায়
৮৫টি বেকারী শিল্প চালু আছে । এক জরীপে দেখা যায় যে,এই সব বেকারী শিল্পের প্রাক্কলিত
ঊৎপাদন
ক্ষমতা ৪৬৯০ মেঃটন । এদের প্রাক্কলিত ময়দা/আটার চাহিদা প্রায় ৪৬৯০ মেঃটন ।

খ) সেমাই কারখানাঃ
বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে প্রায় ৭টি সেমাই কারখানা রয়েছে । এদের বার্ষিক ঊৎপাদন ক্ষমতা
২৯৪০ টন।
তাহলে এই সব কারখানায় কাঁচামাল হিসাবে ময়দা/আটার চাহিদা ২৯৪০ মেঃটন ।

গ) হোটেল এণ্ড রেষ্টু রেন্টঃ

বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় খাদ্যের দোকান,হোটেল এণ্ড রেষ্টু রেন্ট প্রায় ৫০০টির মত বিদ্যমান আছে ।
প্রতিটি হোটেলে রুটি, পরাটা, চাপাতি সমচা,মসলা, পুরি, সিংগারা ইত্যাদি খাদ্য দ্রব্য তৈরী হয় ।
এই সমস্ত খাদ্য দ্রব্য তৈরী করতে দৈনিক প্রায় ৪০০০/-কেজি ময়দা/আটার প্রয়োজন হলে
বাৎসরিক ময়দা/আটার প্রয়োজন ১৪৬০ মেঃটন ।

উপরোক্ত আলোচনা হতে আমরা ধরে নিতে পারি যে, বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় ময়দা/আটার মোট
বাৎসরিক চাহিদা ৯৮৭৭৭ মেঃটন ।

০৪। ভবিষ্যৎ চাহিদার প্রাক্কলনঃ

2
বার্ষিক জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার ৪% ধরে পরবর্তী ৫ বৎসরে ময়দা/আটার প্রাক্কলিত চাহিদা নিম্নরূপঃ-

বৎসর বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার পারিবারিক বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার শিল্পের


চাহিদা চাহিদা

২০১২ ৬০৮৩৩ মেঃটন ৭৫২৭ মেঃটন

২০১৩ ৬৩২৬৬ মেঃটন ৭৮২৮ মেঃটন

২০১৪ ৬৫৭৯৭ মেঃটন ৮১৪১ মেঃটন

২০১৫ ৬৮৪২৮ মেঃটন ৮৪৬৬ মেঃটন

২০১৬ ৭১১৬৬ মেঃটন ৮৮০৫ মেঃটন

বিঃদ্রঃ ইহা নিরুপিত চাহিদা মাত্র,প্রকৃ ত চাহিদা এর চেয়ে কম বেশী হতে পারে ।

০৫। সরবরাহঃ-
বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় ময়দা/আটা ঊৎপাদন/তৈরির চালু কারখানার সংখ্যা অটো মিল ৬টি
এবং R3 মিল ১২টির মতো। এইসব কারখানার বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে দেখানো হলো।

ক্রঃ নং কারখানার নাম ও ঠিকানা কারখানার ধরণ বার্ষিক ঊৎপাদন

১। মেসার্স আরিফ ইণ্ডাষ্ট্রিজ অটো ফ্লাওয়ার ময়দা-২২৫০


প্রোঃ আরিফ গাফফার মিল মেঃটন
গোয়ালচামট,ফরিদপুর।
আটা- ৪৫০
মেঃটন

ভূ ষি-৯০০
মেঃটন

২। মেসার্স গাফফার ফ্লাওয়ার মিল - ঐ- ময়দা-


3
প্রোঃ হারুন গাফফার ১৯৫০০মেঃটন
রাজবাড়ি রাস্তার
আটা- ২১০০
মোড়,ফরিদপুর।
মেঃটন

ভূ ষি-৬৯০০
মেঃটন

৩। মেসার্স পদ্মা ফ্লাওয়ার মিল - ঐ- ময়দা-৬৯০০


প্রোঃ বাদল চন্দ্র রায় মেঃটন
টেপাখোলা,ফরিদপুর।
আটা- ৪৫০
মেঃটন

ভূ ষি- ৪৭৫
মেঃটন

৪। ডিলাক্স ফ্লাওয়ার মিল - ঐ- ময়দা-২২৫০


প্রোঃ কালীপদ সাহা মেঃটন
শোভারামপুর, ফরিদপুর।
ভূ ষি- ৪৭৫
মেঃটন

৫। রাজবাড়ি ফ্লাওয়ার মিল -ঐ- ময়দা-৪৫০০


প্রোঃ মোঃ ইদ্রিস মিয়া মেঃটন
গোয়ালচামট,ফরিদপুর।
ভূ ষি- ৯৫০
মেঃটন

৬। বোয়ালমারী ফ্লাওয়ার মিল - ঐ- ময়দা-২২৫০


মেঃটন
প্রোঃ শ্যামল চন্দ্র সাহা
ভূ ষি- ৪৭৫

4
বোয়ালমারী, ফরিদপুর। মেঃটন

সুতরাং- মেজর ফ্লাওয়ার মিলের মধ্যে যে, বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় ময়দা,আটা,সুজি এবং ভূ ষির
ঊৎপাদন নিম্নরূপঃ-

১. ময়দা- ৩৩০০০ মেঃটন


২. আটা- ২৫৫০ মেঃটন
৩. সুজি- ১২০০ মেঃটন
৪. ভূ ষি- ১০১৭৫ মেঃটন

এ ছাড়া R3 মেশিনের মাধ্যমে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার ঊৎপাদন নিম্নরূপঃ-

5
ক্রঃ নং জেলার নাম কারখানার সংখ্যা বাৎসরিক ঊৎপাদন

১ ফরিদপুর ৬ টি ময়দা- ৫০০০ মেঃটন


আটা- ১৩৫০ মেঃটন
ভূ ষি- ১২২৩ মেঃটন

২ রাজবাড়ি ১ টি ময়দা- ২৭০ মেঃটন

আটা- ৯০ মেঃটন

ভূ ষি- ৯০ মেঃটন

৩ গোপালগঞ্জ ২ টি ময়দা- ৫৪০ মেঃটন

আটা- ১৮০ মেঃটন

ভূ ষি- ১৮০ মেঃটন

৪ মাদারীপুর ৩ টি ময়দা- ৮১০ মেঃটন

আটা- ২৭০ মেঃটন

ভূ ষি- ২৭০ মেঃটন

৫ শরীয়তপুর - -

উপরোক্ত বর্নণা মোতাবেক R3 ফ্লাওয়ার মিলের মাধ্যমে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় ময়দা,আটা এবং
ভূ ষির ঊৎপাদন হচ্ছে যথাক্রমে ৬৬২০ মেঃটন, ১৮৯০ মেঃটন এবং ২০৬৩ মেঃটন ।

সুতরাং- অটো ফ্লাওয়ার মিল এবং R3 মিলের মাধ্যমে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় ময়দা,আটা,সুজি
এবং
ভূ ষির ঊৎপাদন নিম্নরূপঃ

6
ক্রঃ শিল্পের ধরণ বার্ষিক ঊৎপাদন (মেঃটন)
নং ময়দা আটা সুজি ভূ ষি

১। আটা ফ্লাওয়ার ৩৩০০০ ২৫৫০ ১২০০ ১০১৭৫ মেঃটন


মিলের মাধ্যমে মেঃটন মেঃটন মেঃটন
ঊৎপাদন

২। R3 ফ্লাওয়ার ৬৬২০ ১৮৯০ - ২০৬৩ মেঃটন


মিলের মাধ্যমে মেঃটন মেঃটন
ঊৎপাদন

মোট= ৩৯৬২০ ৪৪৪০ ১২০০ ১২২৩৮মেঃটন


মেঃটন মেঃটন মেঃটন

৬। চাহিদা সরবরাহ ঘাটতিঃ


বৃহত্তর ফরিদপুরের খাদ্য শিল্প, হোটেল এণ্ড রেষ্টু রেন্ট, গৃহস্থ্য ও পুলিশের নিরুপিত ময়দার
বাৎসরিক
চাহিদা প্রায় ৬৮৩৬০ মেঃটন । আর এই অঞ্চলের চালু কারখানা সমূহের নিরুপিত বাৎসরিক
ঊৎপাদন
প্রায় ৩৯৬২০ মেঃটন। সুতরাং বাৎসরিক চাহিদা সরবরাহ ঘাটতি ২৮৭৪০ মেঃটন
৭। কাঁচামালঃ
ফ্লাওয়ার মিলের প্রধান কাঁচামাল গম,অর্থাৎ স্থানীয় কাঁচামালের উপর ভিত্তি করেই প্রকল্পটি স্থাপন
করা
হয়েছে । বাংলাদেশে গমের গড় উৎপাদন প্রায় ১৬ লক্ষ মেঃটন যার মধ্যে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায়
প্রায় ৮০,০০০ মেঃটন । এই অঞ্চলে উল্লেখ যোগ্য পরিমান গম না থাকলেও সরকারের উদার
উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী, রেশনিং ও, এম, এস,কর্মসূচীর
7
মাধ্যমে এইএলাকায় প্রচু র গম আমদানী হয়ে থাকে।তাছাড়া বাজারে ও বেশ গম আমদানী হয় ।
প্রয়োজনে উদ্যোক্তা প্রকল্পটির উৎপাদন সন্তোষ জনক পর্যায়ে রাখার জন্য সরকার থেকে বিশেষ
বরাদ্দের ব্যবস্থা করবেন ।
৮।

ফরিদপুর অঞ্চলে অনেকগুলি ফ্লাওয়ার মিল চালু থাকার জন্য এ জাতীয় নতু ন প্রকল্প ঊৎপাদিত
পন্য বিপননে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে পারে ।তবে সরবরাহের তু লনায় চাহিদা বেশী থাকায়
বাজারজাত করণে তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয় ।তাছাড়া পন্যের উন্নত গুনগত মান বজায়
রাখতে সক্ষম হলে এবং পণ্যের মূল্য ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকলে বাজার দখল করা
সহজ হবে

৯। মান নিয়ন্ত্রনেঃ
উন্নত মানের পণ্য ঊৎপাদন করতে হবে ।বি এস টি আই কতৃ ক নির্ধারিত মানের পন্য উৎপাদন
করে
ভোক্তার সন্তুষ্টি বিধানে সচেষ্ট থাকতে হবে ।
১০। পন্য বিপননঃ
ঊৎপাদিত পন্য প্রচলিত পাইকারী/খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে বিপনন করা যাবে । তাছাড়া খাদ্য
শিল্প

সংশ্লিষ্ট কারখানার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে ও ভোক্তা পর্যায়ে পন্য বিপননে করা যেতে
পারে ।

১১। মন্তব্য/সুপারিশঃ

বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় ময়দা,আটা,সুজি এবং ভূ ষির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ।উপরোক্ত পণ্যদির
মধ্যে

8
ময়দা,আটা এবং সুজি মানুষের খাদ্য হিসাবে এবং খাদ্য শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয় ।
অন্য
দিকে গমের ভূ ষি গবাদি পশু ও হাঁস মুরগী খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় । বর্ত মানে এই জেলায়
গ্রামগঞ্জে
অনেক পলট্রি ফার্ম গড়ে ঊঠেছে । গমের ভূ ষি এই সমস্ত পলট্রি শিল্পে বিক্রয়ের সুযোগ রয়েছে ।
তাছাড়া
অন্যান্য ঊৎপাদিত পন্য যেমন ময়দা,আটা,সুজি মানুষের খাদ্য হিসাবে এবং খাদ্য শিল্পের
কাঁচামাল
হিসাবে বিক্রয় করার সুযোগ রয়েছে ।কাজেই এ জাতীয় প্রকল্পের ঊৎপাদিত পন্য বিপননে কোন
সমস্যা
হবে না ।

You might also like