You are on page 1of 7

রোহিঙ্গা: নির্যাতন, অতঃপর সম্ভাবনা

আবার ফিরে আসলাম আরাম আয়েশের জীবনে। এরকম সফর করলে বোঝা যায় আল্লাহ
সুবহানাহু তায়ালার কত নেয়ামতের মধ্যে ডু বে আছি। কিন্তু যাদের ফেলে আসলাম, তাদের
স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবার আশু কোন সম্ভাবনা দেখছিনা। আমরা বড়ই অকৃ তজ্ঞ। মৌলিক
সব চাহিদা মেটানো হলেও বাড়তি অসংখ্য চাহিদা পূরণের জন্য আমরা একে অপরের সাথে
প্রতিযোগিতা করে চলছি। পৃথিবীর প্রবঞ্চনা আমাদের স্থবির করতে পারেনি। অথচ আমাদের
নিকটবর্তী এই মানুষগুলোর এখন একটাই চিন্তা, পেটের জন্য দুমুঠো ভাত কিভাবে আসবে।
এদের মধ্যে অনেকেই আছেন শিক্ষক, আলেম, ব্যবসায়ী, কৃ ষিজীবী, আরও আনেকে যারা সামান্য
হলেও সচ্ছল জীবনের স্বাদ ভোগ করেছেন।

কি আছে তাদের ঘরে? বাঁশ আর প্লাস্টিকের তেরপলের ঘরে কিছু থালাবাসন, হয়ত কিছু কাপড়,
ত্রাণের সামান্য চাল-ডাল, এইতো। যাদের ঘরে পুরুষ আছেন তাদের কেউ কেউ ছোট সোলার
প্যানেল আনতে পেরেছেন যা দিয়ে ঘরে একটা বাতি জ্বালাতে পারেন। এই সামান্য রসদওয়ালা
মানুষগুলোর দিকে কিছু দালাল ও অসৎ ব্যবসায়ীদের কু দৃষ্টি পড়েছে। বাংলাদেশী মাঝিদের
ডাকাতি, বাঁশ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অসম্ভব চড়া মূল্য, একশ টাকার জিনিস দিয়ে পাঁচশ
টাকা কেড়ে নেওয়া, এরকম আরও কত কি। এরপরও তারা কৃ তজ্ঞ স্রষ্টার প্রতি, বাংলাদেশের
প্রতি। টেকনাফ শহরের নিকটবর্তী মুছনি ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের যখন বাংলাদেশে তাদের অনুভূ তি
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, সবাই মন থেকে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি অকৃ ত্রিম কৃ তজ্ঞতা
প্রকাশ করল এবং কোন অভিযোগই উত্থাপন করল না। অভিযোগ প্রকাশ না করার সম্ভাব্য
কারণগুলো চিন্তা করলাম। প্রকৃ তপক্ষে সর্বত্র দাঁড়ি-টু পিওয়ালা মানুষগুলোর অক্লান্ত শ্রম ও সেবা
এবং বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গাদের অবস্থানের ব্যাপারে স্বীকৃ তি দান তাদেরকে অভিভূ ত
করেছে এবং নতু ন করে জীবনের প্রতি আগ্রহী করে তু লেছে। যখন তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
জিজ্ঞাসা করলাম, তারা সবাই মাশা আল্লাহ নিজেদের আল্লাহ তায়ালার কাছে হাওয়ালা করেছেন
জানা গেল।

এখন অক্টোবরের শুরু। আগস্ট বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে যেসব রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছেন তারা
দারুণ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন। বসবাসের অনিশ্চয়তা, পানির অভাব, দালালের দৌরাত্ম্য
তাদেরকে অস্থির করে তু লেছিল। কিন্তু এখন আলহামদুলিল্লাহ প্রচু র সহযোগিতা আসছে।
টিউবওয়েল স্থাপন, পাহাড়ের চূ ড়াগুলোতে মসজিদ-মক্তব প্রতিষ্ঠা, টয়লেট তৈরি, সেনাবাহিনীর
মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ, অসৎ ব্যবসায়ী ও দালালদের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি, ফ্রি চিকিৎসা সেবা
ও ওষুধ প্রদান, প্রভৃ তি প্রচু র কাজ হচ্ছে। তবে যেটা মনে হয়েছে, ক্যাম্পগুলোর পিছনের বর্ধিত
অংশগুলোতে সবার সব সেবা পৌঁছাচ্ছেনা। সেসব অঞ্চলের খবর দীনদার তাবলীগী ভাই ও
আলেম সমাজই বেশি রাখছেন। কারণ যারা ত্রাণের টাকায় ব্যানার তৈরি করবেন, কেউ দশ টাকা
দান করলে বৃহৎ অংশই লজিস্টিক সাপোর্টে ব্যয় করবেন, তারা কাদামাটির পাহাড়ি পথ চলার কষ্ট
করতে যাবেন কেন? কষ্ট ও কাজতো দীনদার মুসলমানদের কাছেই আকাঙ্ক্ষিত যাদের জীবন
ইসলামের সৌন্দর্যে সজ্জিত। আমরা এরকম আমলদার আলেমদের দেখেছি যারা রোহিঙ্গাদের কষ্ট
ভাগ করে নিয়েছেন, তাদের ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন, কেউ দশ টাকা দিলে তারা নিজেদের
পকেট থেকে আরও দুই টাকা বাড়িয়ে বারো টাকা রোহিঙ্গাদের জন্য খরচ করেছেন, তাদের পানির
ব্যবস্থা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহ তায়ালাই সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট।

বালুখালী ক্যাম্পের চূ ড়াতে গিয়েছি। ঢাকার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা জামিয়াতু ল উলূমিল ইসলামিয়ার
শায়েখদের উদ্যোগে বেশ বড় মসজিদ ও মাদ্রাসা তৈরি হয়েছে। আশেপাশে অনেক টিউবওয়েল
ও টয়লেটের ব্যবস্থা করেছেন তারা। ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য জেলাগুলো থেকে বড় বড়
তাবলীগী জামাত আসছে এবং তারাও ব্যাপকভাবে সেবা দান করছেন ওষুধ দিয়ে, খাদ্য দিয়ে,
শ্রম দিয়ে, সময় দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে, চিকিৎসা দিয়ে এবং অর্থ দিয়ে। এলাকাটির নাম তারা
রেখেছেন মাহমুদ নগর। আমি নাম দিয়েছি জাবালে মাহমুদ। ছোট ছোট পাহাড়ের চূ ড়াগুলোতে
এরকম আরও অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পাহাড়কেই এরকম সুন্দর নাম দেওয়া
যায়। যাই হোক, শুধু তাবলীগ ও আলেম সমাজ নয়, বরং দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন সেবা সংস্থা ও
প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি উদ্যোগে প্রচু র কাজ হচ্ছে। তবে বাস্তবতা হল এত সেবা মোটেই যথেষ্ট হচ্ছে
না। কারণ রোহিঙ্গাদের সংখ্যা অনেক বেশি। এই সেবা অসম্ভব রকম অপ্রতু ল।

ফজরের পর একদিন শাহপরীর দ্বীপে গিয়েছি। যখন আমরা মিডিয়াতে খবর পাচ্ছি যে মায়ানমার
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় হয়েছে, তখনও প্রতিদিনই শত শত রোহিঙ্গা
দেশে প্রবেশ করছেন। শাহপরীর দ্বীপে বড় একটি মাদ্রাসায় তারা প্রথম আশ্রয় নেন। সম্ভবত
আরও একটি মাদ্রাসায় আশ্রয় নেন যেটা আমরা পরিদর্শন করিনি। মাদ্রাসার শিক্ষকবৃন্দ ও ছাত্ররা
প্রচু র খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছেন। দাঁড়ি-টু পিওয়ালা অনেক মানুষ এখানে অর্থ দেন, চিকিৎসা সেবা
দেন, ইঞ্জিন বোট ভাড়া করে শরণার্থীদের টেকনাফে পৌঁছাতে সহযোগিতা করেন। সেনাবাহিনী
তাদের ট্রাকে করে ক্যাম্পে পৌঁছে দেন। এই ট্রাকের ব্যবস্থা করতে সাধারণের অর্থ ব্যবহার করা
হয়। সেনাবাহিনীকে সেবার কাজে নিযুক্ত করা একটা অত্যন্ত উত্তম ও প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত বলে
বোধ হয়েছে। সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর হাতে অনেক ত্রাণ ও অর্থ পৌঁছে দেন। তারা দ্রুত ও
সুশৃঙ্খলভাবে সেসব ত্রাণ রোহিঙ্গাদের কাছে পৌঁছাতে সচেষ্ট থাকেন। প্রতিটি পরিবারের কাছে
আলাদা করে ত্রাণ পাঠানো কঠিন। তাই তারা মাজিদের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছান। প্রতি ১০০/২০০
পরিবারের জন্য একজন দলনেতা আছেন যাকে রোহিঙ্গারা মাজি বলে। মায়ানমারে তাদের মধ্যে
মাজিভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রচলন ছিল শুনেছি। থাইংখালীর একটি ক্যাম্পে কাজ করছেন,
বাংলাদেশে অমুসলিমদের মাঝে দাওয়াতী কার্যক্রম চালানো একটি জোটের একজন দাঈর সাথে
কথা হয়েছে, যিনি এই মাজিদের ব্যাপারে সুন্দর কিছু দিক নির্দে শনা দিয়েছেন। তিনি মাজিদের
প্রভাব বিস্তার সংক্রান্ত কিছু সমস্যার কথা বলেছেন। তিনি ও তার সহকর্মীরা রোহিঙ্গাদের
শেখানোর চেষ্টা করছেন যে, সব থেকে যোগ্য ও দীনদার যে ব্যক্তি, তারই হক মাজি হওয়ার এবং
মসজিদের ইমাম হওয়ার। এটাই ইসলামের শিক্ষা। ঐ ক্যাম্পের মসজিদে আরও অনেকের সাথে
কথা হয়। আমরা তাদের নির্যাতনের কথা ও হিজরতের ঘটনা শুনি। আমরা একজন বিধবা
মহিলার সাথে পরিচিত হই। তার স্বামী ও তিন ছেলেকে মায়ানমারের নরপশুরা জবাই করে হত্যা
করেছে। আমরা মোবাইলে লাশগুলোর ধারণকৃ ত ভিডিও দেখেছি। আমার দৃষ্টি ও মন
কোনভাবেই এই চিত্র দেখতে প্রস্তুত ছিলনা। ঐ মুসলিম নারীকে সম্পূর্ণ উদাসীন মনে হয়েছে।
জানিনা জীবনের প্রতি কোন আগ্রহ এখনও বাকি রয়েছে কিনা। আমরা তার মানসিক অবস্থা
বুঝতে অক্ষম। কিন্তু আল্লাহ রব্বুল আলামীন বুঝতে সক্ষম। তিনি অবশ্যই তাঁর বান্দাবান্দীর সব
থেকে নিকটবর্তী ও স্নেহশীল। এই মায়ের জন্য আমরা জান্নাতের প্রত্যাশী এবং তার পরবর্তী
ইহলৌকিক জীবনও সুন্দর হোক এই কামনা করি।

আমরা বৃদ্ধ, যুবক, আলেম, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, কৃ ষিজীবী, অনেকের সাথে কথা বলেছি। তাদের
নির্যাতনের বর্ণনা কম বেশি একই রকম। যা আমরা ফেসবুক ও মিডিয়াতে পেয়েছি তার কিছুই
অতিরঞ্জিত নয়। কোন গ্রামে কম কোথাও বেশি। মগ বৌদ্ধগোষ্ঠী ও সেনাবাহিনী একই সাথে
আক্রমণ চালায়। মগরা সাধারণত সন্ধ্যায় রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
সেনাবাহিনী গুলি ছোঁড়ে এবং বীভৎস রকম হত্যাযজ্ঞ চালায়। মায়ের কোল থেকে শিশু ছিনিয়ে
নিয়ে তারা আগুনে ফেলে দেয়। সুন্দরী তরুণীদের উঠিয়ে নিয়ে তাদের শয়তানের সেবক মন যা
চায় তাই করে এবং পরে হত্যা করে। একজন রোহিঙ্গা তার বর্ণনায় বললেন বাংলাদেশে আসার
পথে তিনি এমন এলাকা দেখেছেন যেখানে ঘরে একশ দেড়শ মানুষকে ঘরে বন্দী করে পুড়িয়ে
মারা হয়েছে। এরকম আরও ভয়ংকর সব বর্ণনা শুনেছি যা ফেরাউন ও নমরূদের সময় ছাড়া
ইতিহাসের পাতায় কমই দেখা যায়। নিঃসন্দেহে বর্ত মানে পৃথিবীতে রোহিঙ্গাদের থেকে অধিক
নিপীড়িত ও নিগৃহীত জাতি আর নেই।

এত লোকের সাথে কথা বলেছি কিন্তু খুব একটা উচ্চ শিক্ষিত কাউকে পাইনি। একজন
আলেমের ঘর পেয়েছি বালুখালী ক্যাম্পে যিনি বিশ্ববিখ্যাত দারুল উলূম করাচীতে পড়াশুনা
করেছেন। তার ছেলের সাথে কথা হয়েছে। ছেলেটি সুন্দর, তার কথাবার্তা এবং আচরণও সুন্দর।
দুর্ভাগ্যজনক আমদের জন্য যে তার বাবা ঐ সময় ক্যাম্পে ছিলেন না। হয়ত সেই আলেম থেকে
অনেক কিছু জানতে পারতাম। একটা জাতির মধ্যে যদি শিক্ষিত ও জ্ঞানী লোকজন আবশ্যক
হারে না থাকে এবং বলিষ্ঠ নেতৃ ত্ব না থাকে তবে এমন জাতিকে শয়তানের পূজারীরা ছিঁ ড়ে ফুঁ ড়ে
খাবে এটা অস্বাভাবিক নয়। আজ যখন তারা আমাদের মাঝে আছেন তখন শুধু ত্রাণ দিয়ে নয়
বরং তাদেরকে আমরা সুদূরপ্রসারী ও সুপরিকল্পিত রোডম্যাপ দেখাতে পারি যা তাদের জন্য সব
থেকে বড় গণিমত হতে পারে। বাংলাদেশের সরকার কূ টনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে তাদেরকে
মায়ানমারে পাঠানোর জন্য। আমরা সবাই চাই তারা তাদের দেশ ও নাগরিকত্ব ফিরে পাক যত দ্রুত
সম্ভব। কিন্তু যখন তারা ফিরে যাবে তখন যেন সম্পূর্ণ নিঃস্বভাবে ফিরে না যায়। বরং তারা এমন
এক চেতনা ও এক পরিকল্পনা নিয়ে যেন যেতে পারে যা তাদেরকে সব থেকে সম্মানিত জাতি
হিসাবে মায়ানমারে প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করবে। আমাদের উচিত হবে শিশুমনগুলোতে
ভালবাসা অঙ্কু রিত করা । যে বিভীষিকা তারা দেখেছে এর বিপরীতে ভালবাসার চর্চার মাধ্যমে
তাদের মনকে আতঙ্কমুক্ত করতে হবে। তরুণ সমাজের মন থেকে সঙ্কীর্ণতা ও
প্রতিশোধপরায়ণতা নির্মূল করে তাদের অন্তরকে জ্ঞানের আলোর মুখ দেখাতে হবে। তাদেরকে
উজ্জীবিত করতে হবে উন্নত জীবন প্রাপ্তির লক্ষ্যে জিহাদে নামার জন্য। আমি সশস্ত্র জিহাদের
কথা বলছি না। আমি জিহাদ বলতে জ্ঞান, মন ও শ্রম দিয়ে প্রচেষ্টা বুঝাচ্ছি। তাদেরকে ইসলামী
সমাজ ব্যবস্থার স্বরূপ দেখাতে হবে। সময় খুব কম। আমরা তাদের সবাইকে এখনি শিক্ষিত করে
গড়ে তু লতে পারব না। কিন্তু আমরা তাদের মাঝে এমন পরিকল্পনা উদ্ভাসিত করতে পারি যা
কাগজে বাক্যালংকারে সজ্জিত থাকবে না। ক্যাম্পগুলোতে আমরা কিছু নমুনা বাস্তবায়ন করে
দেখতে পারি। যেই ইসলামী সমাজব্যবস্থা আমরা সচরাচর মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে দেখছি না তা
ছোট পরিসরে পাহাড়ি টিলাগুলোর মাঝে বাস্তবায়ন সম্ভব যা আমাদের বাংলাদেশের তরুণ
সমাজের জন্যও একটি নতু ন দিগন্তের সূচনা হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন বড়রা একটা কমন
প্লাটফর্মে কাজ করবেন। মাশা আল্লাহ অনেক মাদ্রাসা ও মসজিদ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ
করছেন। এটা চালু রাখা প্রয়োজন। ব্যক্তি উদ্যোগে, প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে, সেবা সংস্থার উদ্যোগে
কাজ চালু রাখতে হবে। তবে এর পাশাপাশি সমন্বিত একটি উদ্যোগ দরকার যেখানে বড় আলেম
উলামা এবং ইসলামী জ্ঞানে আলোকিত অন্যান্য স্কলাররা (আইনজীবী, সচিব, ডাক্তার, শিক্ষক,
ইঞ্জিনিয়ার, প্রমুখ) একসাথে কাজ করবেন এবং আলেমদের মধ্যে কেউ নেতৃ ত্ব দিবেন। স্বার্থান্বেষী
কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে এখানে মূল কমিটিতে রাখা উচিত হবে না। সমন্বিত এই সংস্থা
অবশ্যই সরকারকে উপেক্ষা করে কাজ করবে না। বরং তারা সরকারকে সহযোগিতার মানসে
মদিনা রাষ্ট্রের এমন কিছু নমুনা এখানে দেখাবেন যা সুস্থ বিবেক মস্তিষ্ক সমর্থন না করে পারবে না।

ক্যাম্পের সমাজব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ মসজিদ ভিত্তিক করা যেতে পারে। শিক্ষা, চিকিৎসা,
পরামর্শসভা, ছোটখাট সমস্যার সমাধান, ত্রাণ, নেতৃ ত্ব সবকিছু মসজিদ ভিত্তিক হবে। মসজিদের
ইমাম হবেন মাজি। মাজিদের নিয়ে গঠন করা যেতে পারে ক্যাম্পের কমিটি। কমিটিতে
বাংলাদেশের স্কলাররাও থাকবেন। সব ক্যাম্পের কমিটির জন্য একজন আমীর থাকবেন এবং
সকল আমীরদের মধ্য থেকে একজন আমীর নির্ধারণ করতে হবে যিনি গোটা রোহিঙ্গা জাতিকে
নেতৃ ত্ব দিবেন। যা বোধগম্য হয়, রোহিঙ্গাদের মধ্যে এমন যোগ্য লোক পাওয়া খুবই কঠিন। এর জন্য
শরণার্থী শিবিরগুলোতে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকল বয়সের রোহিঙ্গা
পুরুষ ও নারীর জন্য বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যেহেতু তাদের জীবিকা ত্রাণের
উপর নির্ভ র করছে এবং তারা আর্থিক অভাব পূরণের জন্য তেমন কোন কাজ করছেন না বা
পারছেন না, তাই তাদেরকে দিন ও রাতের অধিকাংশ সময় শিক্ষা অর্জ নের জন্য ব্যয় করতে বাধ্য
করতে হবে। ক্যাম্পগুলোর অধিবাসী অধিকাংশই মহিলা ও ছোট ছোট শিশু। আমাদের এজন্য
শুধু পুরুষ জামাত নিলে চলবে না, মহিলা ও শিশুদের জন্য প্রচু র মহিলা কর্মী প্রয়োজন। এছাড়া
চিকিৎসা সেবার জন্যও মহিলা ডাক্তার প্রয়োজন অনেক।

আমরা যদি মদিনার একটি ছায়া রাষ্ট্র ক্যাম্পগুলোতে সৃষ্টি করতে পারি, তবে আশা করা যায়
মায়ানমারে ফিরে গিয়ে তারা মক্কা বিজয় পরবর্তী অবস্থার কিছুটা অবয়ব বিশ্বকে দেখাতে পারবে।
ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ নির্যাতনের বিপরীতে ইতিহাসকে বিস্মিত করে তারা করবে ক্ষমা।
তারা মগ বৌদ্ধদের দিবে ভালবাসা। দেশে ফিরে যাবে হৃদয় আপ্লুত করা মহব্বত ও ক্ষমা নিয়ে।
এমন ভালবাসা নিষ্ঠু রতম হৃদয়ও উপেক্ষা করবে না। রোহিঙ্গারা তাদের ভালবাসা, সৌহার্দ্য,
নিমন্ত্রণ, সৌজন্য দিয়ে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করবে যেন পরবর্তীতে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া সহজ
হয়ে যায়। এজন্য আমরা ক্যাম্পগুলোতে ভালবাসার শিক্ষা দিব এবং নিজেরাও শিখব। অনেক
ঘটনা শোনা হয়েছে নির্যাতনের। এখন সময় শুধু কাজের, শুধুই শিক্ষার, শুধুই ভালবাসার।
আল্লাহু সুবহানাহু তায়ালা তাওফীক দিন এবং সহজ করুন। আমীন।

You might also like