You are on page 1of 2

।। ১।।

ভেজা ঘাসের গন্ধ টা নাকে এসে লাগতেই চোখ খুলে তাকাল সোমনাথ। ঘাসের ওপর শুয়ে আছে ও, একটা ঘাসের ডগা
নাকে ঢু কে আসছে বারবার। মাথা টা একবার ঝাঁকিয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো ও। চারপাশ টা একবার চোখ বোলাতেই মুহুর্তে
চিনতে পারলো জায়গা টা। ভোম্বল সর্দার শিশু উদ্যান।

আবার সেই একই স্বপ্ন! দীর্ঘশ্বাস ফেলল সোমনাথ।

বেশ কয়েক মাস ধরে এই জায়গাটার স্বপ্ন দেখছে ও। স্বপ্ন টা সেরম আহামরি কিছুই না। ছেলেবেলার খেলার সেই পার্ক ,
সেখানেই এদিক ওদিক খানিক ঘোরাঘুরি, তারপর এগাছ-ওগাছ একটু নেড়েচেড়ে দেখা। নতু ন বলতে স্বপ্নটার ভেতর সেরম
কিছুই নেই। সবই মনের অবচেতনে লুকোনো ছেলেবেলার স্নৃতি। শুধু একটা জিনিসই নতু ন ,ফোয়ারা টা। পার্ক টার একদম
মধ্যিখানে রয়েছে ফোয়ারা টা। যেটা ওর ছোটোবেলার সেই সময়ে ওই পার্কে ছিল না।

স্বপ্নটা একই হলেও আজ কিছু একটা অন্যরকম। কিছুক্ষন পর সোমনাথ ব্যাপারটা ঠাওর করল, পায়ের তলার পার্কে র ঘাসটা
আজ ভিজে। যেন খানিকক্ষন আগেই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। আশপাশ টাও বেশ অন্ধকার , অন্যদিন এমনটা হয়না।
আর স্বপ্নটা আজ যেন অন্যদিনের থেকে একটু বেশিই রিয়েলিস্টিক ঠেকছে সোমনাথের কাছে।

হঠাৎ বাজ ডাকার শব্দ শুনে উপরে তাকালো সোমনাথ। বাজের শব্দটা অনেকটা যেন হর্ণের মত শোনালো। সোমনাথের মনে
পড়ল ও একটা বাসের মধ্যে বসে আছে। কোথায় যেন যাচ্ছে ! কিন্তু মনে করতে পারল না কোথয় যাচ্ছে। যাক গে! হর্ণের মত
বাজের শব্দটা শুনে উপরে তাকালো ও। মেঘ গুলো ঘণীভূ ত হয়ে কিসের যেন একটা আকার নিচ্ছে। বাম দিকে বেশ খানিকটা
কালো মেঘ একটা বেশ দারুন পেশিবহুল মানবের অবয়ব নিল। তারপর ডান হাতের ওপর ভর দিয়ে বাম হাঁটু মুড়ে ডান পা
ছড়িয়ে মেঘের ওপর হেলান দিয়ে বসল। বসেই বাম হাত টা শূণ্যে বাড়িয়ে দিল কোনো এক অদৃশ্য অতিথির উদ্দেশ্যে। সাথে
সাথেই ডান দিক দিয়ে ধেয়ে এলো আরো বেশ খানিকটা কালো মেঘ। এবার এরা অবয়ব নিলো এক বৃদ্ধের ও অনেক গুলো
ছোট ছোটো বাচ্চার। তারা চেয়ে আছে বাম দিকের লোকটার দিকে। লোকটা হাত বাড়িয়েই আছে। এবার বৃদ্ধ টাও কাছাকাছি
এসে তার ডান হাত বাড়িয়ে দিল। সে তার ডান হাত দিয়ে বাম দিকের লোকটার বাম হাত যেই ছুঁ তে যাবে অমনি কার যেন
গলার আওয়াজ পেল সোমনাথ। ধর্মতলা! ধর্মতলা! ধর্মতলা!

কন্ডাক্টারের ডাকে ঘুম ভাঙল সোমনাথের।

“ ও দাদা, ধর্মতলা টিকিট কেটেছিলেন তো? তা এবার নামুন, সেই কখন থেকে হাঁক পাড়ছি! কি কু ম্ভকর্নের ঘুম মাইরি
আপনার।“

“ না মানে ওই একটু ।‘ বলেই কোনো রকমে কাঁধের ঝোলা ব্যাগটা ঠিক করে নিয়েই নেমে পড়ল বাস থেকে। যেখানে বাস থেকে
নামলো তার উলটো দিকেই রামুকাকার চায়ের দোকান। সেই দিকেই পা বাড়ালো সোমনাথ।

“ রামুকাকা, একটা চা দাও আর একটা ছোটো গোল্ডফ্লেক।“ সামনের বেঞ্চটায় বসল ও। হাত ঘড়িতে সময় দেখল বেলা
দেড়টা। হাত নামিয়ে দোকানের উলটো দিকের বড় দশতলা বিল্ডিংটার দিকে তাকালো সোমনাথ। ওখানেই চারতলায়
অবিনাশদার অফিস। ও জানে অবিনাশদা এখন লাঞ্চে বেরিয়ে গেছে। ফিরবে দুটো নাগাদ। এখন আধ ঘন্টা এই চায়ের দোকানে
বসেই কাটাতে হবে।

রামুকাকার চায়ের দোকানটা চলে ভালো। আশেপাশে যত অফিস দোকান পাট আছে সেখানকার সকলেই প্রায় এখানেই চা-
সিগারেট খায়। আর সোমনাথ খুব অবাক হয় দেখে যে রামুকাকা প্রায় সক্কলকেই চেনে। শুধু মুখ চেনা নয় নামধাম সব মনে
থাকে তার। একদিন কৌতু হল বসত জিজ্ঞেস করেছিল সোমনাথ ,” আচ্ছা রামুকাকা তোমার এই সবার নাম মনে থাকে কি
করে?’ খুব একগাল হেসে রামুকাকা উত্তর দিয়েছিল, “উপরওয়ালাতো আমাকে আর বেশি কিছু দেননি শুধু ওই একটিই
জিনিস দিয়েছেন, নাম মনে রাখার ক্ষমতা। তাই ওই দিয়েই করে খাচ্ছি। নাম করে ডাকলে বাবুরা খুব খুশি হন। এই যেমন আমি
যখন পচা কে হাঁক পাড়ি , পচা সোমনাথ বাবুকে একটা চা আর সিগারেট দিয়ে আয়, বলুন আপনার ভালো লাগে কিনা।“
ভালো লাগে কিনা জানেনা সোমনাথ, হয়তো লাগে হয়তো বা লাগে না। সেদিন আরত কোনো উত্তর দেয়নি ও। শুধু বুঝেছিল
এইসব সুক্ষ্ম থেকে অতিসুক্ষ্ম বিশ্বাস চিন্তাধারা গুলোই মানুষ কে অন্য আরেক মানুষের থেকে আলাদা করেছে।
পচা এসে চা সিগারেট টা দিয়ে গেল সোমনাথের হাতে সাথে একটা দেশলাইও। সিগারেটটা ধরিয়ে একটা লম্বা করে টান দিল ও
সাথে চায়ে এক চু মুক মারতেই ঘুমের আলিস্যিটা কেট্বে গিয়ে মস্তিস্কের ধূসর পদার্থ গুলো নড়ে উঠলো ওর আর অমনি মনে
পড়ে গেল বাসের স্বপ্নটার কথা।

প্রায় মাস ছয়েক হতে চলল এই একটাই স্বপ্ন বারবার ঘুরেফিরে আসে সোমনাথের ঘুমের ভেতরে। অন্যকোনো স্বপ্ন দেখেছে
বলে ত আর মনেও পড়ে না। কেনো এই একটাই স্বপ্ন বারংবার ঘুরে ফিরে আসে তার কোনো উত্তর নেই সোমনাথের কাছে।
স্বপ্নের কি আদেও কোনো মানে থেকে? নাকি স্বপ্ন শুধুই মানুষের অবচেতনে লুকিয়ে বসে থাকা স্মৃতির সময় বুঝে পুনর্জীবন
লাভ? একবাড় একজন ওকে বলেছিল যে স্বপ্নের ভেতর যদি কোনোদিন নিজেকে মরতে দেখিস তাহলে ধরে নিস তোর সময়
শেষ। বিশ্বাস হয়নি ওর। প্রহ্লাদদার কাছে একবার যেতে পারলে হয়! এইসবের উত্তর ঝট করে পেয়ে যাবে ও। লোকটা ভীষন
জ্ঞানী, এত জানে লোকটা সোমনাথ অবাক হয়ে যায়! মনে মনে ভীষণ শ্রদ্ধাও করে ও।, কাল পরশুর মধ্যেই একবার যেতে হবে
ওখানে। স্বপ্নটা নিয়ে এবার একটা হেস্তনেস্ত হওয়া দরকার। হাতঘড়িতে সময় দেখল কাঁটা দুটর ঘর ছুঁ ই ছুঁ ই। এবার উঠতে হবে।
দাম মিটিয়ে বেরিয়ে এল ও।

।। ২ ।।

You might also like