You are on page 1of 102

বুকের উপর হাঁ ত বাধা সংক্রান্ত হাদিস নিয়েমিথ্যাচারের পোস্টমর্টেম এবং

নাভীরনিচে হাত বাধার পর্যালোচনাঃ


বুকের উপর হাঁ ত বাধা সংক্রান্ত হাদিস
নিয়ে মিথ্যাচারের পোস্টমর্টেম এবং
নাভীর নিচে হাত বাধার পর্যালোচনা
==============================
===============================

আমার এক ভাই বুকের উপর হাত বাঁ ধা


সংক্রান্ত একটি পোষ্ট দেখে অবাক
হয়ে গেলাম। তিনি লিখেছেন-
সালাতে নাভির নীচে হাত বাঁ ধার কথা
সহীহ হাদীসে নেই। বরং হাত
বুকের উপর বাঁ ধার কথা সহীহ হাদীস
দ্বারা প্রমাণিত।
সাহ্ল বিন সা’দ (রাযীঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেনঃ সালাতে লোকদেরকে ডান
হাত বাম হাতের বাহুর উপর স্থাপন করার
নির্দে শ দেয়া হত। (বুখারী-১ম খণ্ড,
আল-মাদানী প্রঃ হাঃ ৭৪০, পৃঃ ২৮৩, ১ম
খণ্ড, তাঃ পাঃ হাঃ ৭৪০, পৃঃ ৩৫৭-৩৬০, ইঃ ফাঃ, হাঃ
৭০৪, আঃ প্রঃ, হাঃ ৬৯৬)
.
ওয়াইল বিন হুজল (রাযীঃ) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন যে, আমি নাবী (সঃ) এর
সাথে সালাত আদায় করেছি। (আমি
দেখেছি) নাবী (সঃ) স্বীয় ডান হাত
বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর
রাখলেন। (সহীহঃ ইবনু খাযাইমাহ্ - ২০ পৃঃ;
বুখারী- ১০২ পৃঃ, ১ম খণ্ড, আযীযল
হক্ব, হাঃ ৪৩৫, ১ম খণ্ড, আঃ প্রঃ, হাঃ ৬৯৬,
২য় খণ্ড, ইঃ ফাঃ, হাঃ ৭০৪, ১ম খণ্ড, আল-
মাদানী প্রঃ হাঃ ৭৪০, পৃঃ ২৮৩, ১ম খণ্ড, তাঃ
পাঃ হাঃ ৭৪০, পৃঃ ৩৫৭-৩৬০; মুসলিম- ১৭৩ পৃঃ,
২য় খণ্ড, ইঃ ফঃ, হঃ ৮১; আবূ দাঊদ- ১ম
খণ্ড, আল-মাদানী প্রঃ হাঃ ৭২৩, পৃঃ
৪৬৫-৪৬৬। হাঃ ৭২৬, পৃঃ ৪৬৭, ১ম খণ্ড, ইঃ
ফঃ, হাঃ ৭৫৯; সহীহঃ আত্ -তিরমিযী- ১ম
খণ্ড, আল-মাদানী প্রঃ হাঃ ২৫২, পৃঃ ২৩০;
নাসাঈ- ১৪১ পৃঃ; ইবনু মাজাহ্ - ৫৮, ৫৯ পৃঃ;
মিশকাত- ৭৫ পৃঃ, ২য় খণ্ড, নূর মুহাম্মাদ
আযমী, মাদ্রাসা পাঠ্য, হাঃ ৭৪১, ৭৪২;
মুয়াত্তা মালিক- ১৭৪ পৃঃ; মুয়াত্তা মুহাম্মাদ-
১৬০ পৃঃ; যদুল মায়াদ- ১২৯ পৃঃ; হিদায়া
দিরায়াহ-১০১ পৃঃ; কিমিয়ায়ে সআদাত- ১ম
খণ্ড, ১৮৯ পৃঃ; বুলূগুল মারাম- আল-মাদানী
প্রঃ হাঃ ২৭৮, পৃঃ ৮০)
.
লিঙ্ক-
.  http://sonarbangladesh.com/blog/abdur_rouf66/42616
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

এর উত্তর হল-
আবদুর রউফ ভাই বলেছেন- সালাতে
হাত বাধার কথা সহীহ হাদীসে নেই।
বরং বুকের উপর বাধার কথা সহীহ
হাদীসে আছে।
তিনি প্রমান পেশ করেছেন বুখারীর
এই হাদীস ‍হযরত সাহল ইবনে সাদ (রা)
থেকে বর্নিত। তিনি বলেন নামাজে
লোকদেরকে ডান হাত বাম হাতের
বাহুর উপর স্থাপন করার নির্দে শ দেয়া
হত।
আবদুর রউফ ভাই এবং যারা এ সম্পর্কে
ভ্রান্তিতে আছেন তাদের বলছি, এই
হাদীসের কোন শব্দ দ্বারা আপনি
প্রমান পেলেন যে হাত বুকের উপর
বাধা হত ? দয়া করে জানাবেন।
বরং এই হাদীস কোনভাবেই হাত
বুকের উপর বাধার সামান্যতম প্রমান
নেই।
এরপর তিনি (আবদুর রউফ ভাই)একটি
মুনকার হাদীস পেশ করেছেন।
হাদীসটি হল ওয়াইল বিন হুজর(রা)
থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, “আমি
নবী করিম (সা) এর সাথে সালাত আদায়
করেছি। (আমি দেখেছি) নবী (সা)
স্বীয় ডান হাত বাম হাতের উপর
রেখে বুকের উপর রাখলেন।”
*****************************************

এবার আসুন মিথ্যাচারের পোস্ট


মর্টেম করি।
.
সহীহ বুখারী শরীফ
================
সাহল ইবন সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, লোকদের নির্দে শ দেওয়া
হত যে, সালাতে প্রত্যেক ডান হাত বাম
হাতের কব্জির উপর রাখবে।
‫ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﺆﻣﺮﻭﻥ ﺃﻥ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﻴﺪ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ‬
‫ ﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺣﺎﺗﻢ‬. ‫ ﻋﻠﻰ ﺫﺭﺍﻋﻪ ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ‬:
‫ﻻ ﺃﻋﻠﻤﻪ ﺇﻻ ﻳﻨﻤﻰ ﺫﻟﻚ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﻪﻠﻟﺍ ﻋﻠﻴﻪ‬
‫ﻭﺳﻠﻢ‬
.
[সহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, পৃষ্টাঃ১০২,
হাদিস নং ৭০৪, (ইঃফাঃ)]
.
স্ক্রিনসট দেখুন
.

.
আলী রাঃ (সালাতে) সাধারণত তার ( ডান
হাতের) পাঞ্জা বাম হাতের কব্জির
উপরে রাখতেন,তবে কখনো
শরীর চু লকাতে হলে বা কাপড় ঠিক
করে নিতে হলে তা করে নিতেন।
.
[ সহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, পৃষ্টাঃ ৩৩০,
হাদিস নং ৭৫৭, (ইঃফাঃ)]
.
স্ক্রিনসট দেখুন
.

.
এখানে কোথাও ‫( ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ‬বুকের
উপর) কথাটি নাই !
.
সহীহ মুসলিম শরীফ
================
যুহায়র ইবনে হারব রহঃ…… ওয়াইল ইবনে
হাজর রাঃ বর্ণিত।তিনি রাসুল সাঃ কে
দেখেছেন তিনি যখন সালাত শুরু
করলেন তখন তার উভয় হাত উঠিয়ে
তাকবীর বললেন। রাবী হুমাম
বলেন, তিনি উভয় হাত কান বরাবর
উঠালেন। তারপর কাপড়ে ঢেকে
নিলেন(গায়ে চাদর দিলেন)। তারপর তার
ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন।
তারপর রুকু করার সময় তার উভয় হাত কাপড়
থেকে বের করলেন। পরে উভয়
হাত উঠালেন এবং তাকবীর বলে
রুকুতে গেলেন। যখন “সামি
আল্লাহুলিমান হামিদা” বললেন,তখন উভয়
হাত তু ললেন। পরে উভয় হাতের
মাঝখানে সিজদা করলেন।
.
[সহীহ মুসলিম,১ম খন্ড,পৃষ্টাঃ ৩৮২,
হাদিস নং-৭৮১ (ইঃফাঃ)]
.
এখানে কোথাও ‫( ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ‬বুকের
উপর) কথাটি নাই !
.
স্ক্রিনসট দেখুন
.
.
তিরমিযী শরীফ
============
হযরত হুলব আতত্বয়ী রা. বলেন,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আমাদের ইমাম হতেন এবং
তাঁ র ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরতেন।
‫ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﻪﻠﻟﺍ ﺻﻠﻰ ﻪﻠﻟﺍ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺆﻣﻨﺎ‬
‫ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﻗﺎﻝ‬. ‫ ﻓﻴﺄﺧﺬ ﺷﻤﺎﻟﻪ ﺑﻴﻤﻴﻨﻪ‬:
‫ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ‬
.
[ তিরমিজি, ১ম খন্ড, পৃষ্টাঃ, ২৪১, হাদিস
নং-২৫২ (ই:ফা:)]
.
এখানে কোথাও ‫( ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ‬বুকের
উপর) কথাটি নাই!
.
স্ক্রিনসট দেখুন
.
.
আবু দাউদ শরীফ
==============
আবদুর রহমান হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি ইবনুয যুবায়ের রাঃ কে বলতে
শুনেছি- নামাজের সময় দুই পা সমান রাখা
এবং এক হাতের উপর অন্য হাত রাখা
সুন্নাত।
.
[সুনানে আবু দাউদ,১ম খন্ড, হাদীস :
৭৫৪; (ইফা)]
.
স্ক্রিনসট দেখুন
.
.
ইবনে মাসউদ রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি ডান
হাতের উপর বাম হাত রেখে নামাজ
পড়েছিলেন। নবী কারীম সাঃ তা
দেখতে পেয়ে তাঁ র বাম হাতের
উপরে ডান হাত রেখে দেন।
.
[সুনানে আবু দাউদ,১ম খন্ড, হাদীস :
৭৫৫; (ইফা)]
.
হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, ‘সুন্নাহ হচ্ছে নামাযে
হাতের পাতা হাতের পাতার উপর
নাভীর নিচে রাখা।’
‫ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺣﻔﺺ ﺑﻦ‬،‫ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻣﺤﺒﻮﺏ‬
‫ ﻋﻦ ﺯﻳﺎﺩ ﺑﻦ‬،‫ ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﺇﺳﺤﺎﻕ‬،‫ﻏﻴﺎﺙ‬
‫ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺟﺤﻴﻔﺔ ﺃﻥ ﻋﻠﻴﺎ ﺭﺿﻲ ﻪﻠﻟﺍ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ‬،‫ﺯﻳﺪ‬
: ‫ﺍﻟﺴﻨﺔ‬
‫ ﻭﺿﻊ ﺍﻟﻜﻒ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻜﻒ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ‬.
‫ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻤﺰﻱ ﻓﻲ ﺗﺤﻔﺔ ﺍﻷﺷﺮﺍﻑ‬
‫ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﺍﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ‬، ٤٥٨/ ٨
‫ ﻭﺍﺑﻦ ﺩﺍﺳﺔ ﻭﻏﻴﺮ ﻭﺍﺣﺪ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ‬،‫ﺍﻷﻋﺮﺍﺑﻲ‬،
‫ﻭﻟﻢ ﻳﺬﻛﺮﻩ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﻘﺎﺳﻢ‬
.
[সুনানে আবু দাউদ,১ম খন্ড, হাদীস নং
৭৫৬; (ইফা)]
.
হযরত মুহাম্মাদ ইবনে কুদামা …
ইবনে জুরাইজ হতে ,তার পিতার সনদে
বর্ণিত ,তিনি বলেন ,আমি হযরত আলী
রাঃ কে নামাজে নাভীর উপরে ডান হাত
দিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরে রাখতে
দেখেছি।
.
[আবু দাউদ শরীফ,১ম খন্ড,
,হাদিস নং :৫৫৭ (ইফা)]
.
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেছেন, ‘নামাযে হাতের পাতাসমূহ
দ্বারা হাতের পাতাসমূহ নাভীর নীচে
ধরা হবে।’
‫ ﻋﻦ‬،‫ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪ ﺑﻦ ﺯﻳﺎﺩ‬،‫ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻣﺴﺪﺩ‬
‫ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﺇﺳﺤﺎﻕ‪ Y‬ﺍﻟﻜﻮﻓﻲ‪ ،‬ﻋﻦ ﺳﻴﺎﺭ ﺃﺑﻲ‬
‫ﺍﻟﺤﻜﻢ‪ ،‬ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻭﺍﺋﻞ ﻗﺎﻝ ‪ :‬ﻗﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ‬
‫ﻪﻠﻟﺍ ﻋﻨﻪ ‪ :‬ﺃﺧﺬ ﺍﻷﻛﻒ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﻛﻒ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﻼﺓ‬
‫ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﺮﺓ‬
‫‪.‬‬
‫‪[সুনানে আবু দাউদ,১ম খন্ড, হাদীস নং‬‬
‫])‪৭৫৮, (ইফা‬‬
‫‪.‬‬

‫‪.‬‬
‫‪সুলায়মান ইবনে মুসা-এর সূত্রে একটি‬‬
মুরসাল রেওয়ায়েত তাউস রাহ. থেকে
বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তাঁ র ডান হাত বাম হাতের উপর
রাখতেন এবং তা বুকের উপর রাখতেন।
‫ ﺛﻨﺎ ﺍﻟﻬﻴﺜﻢ ـ‬،‫ ﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﺗﻮﺑﺔ‬: ‫ﻗﺎﻝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ‬
‫ ﻋﻦ ﺛﻮﺭ ﻋﻦ ﺳﻠﻴﻤﺎﻥ ﺑﻦ‬،‫ ﺍﺑﻦ ﺣﻤﻴﺪ‬: ‫ﻳﻌﻨﻲ‬
‫ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﻪﻠﻟﺍ ﺻﻠﻰ‬: ‫ﻣﻮﺳﻰ ﻋﻦ ﻃﺎﺅﻭﺲ ﻗﺎﻝ‬
‫ﻪﻠﻟﺍ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻀﻊ ﺍﻟﻴﻤﻨﻰ ﻋﻠﻰ ﻳﺪﻩ‬
‫ ﻭﻫﻮ ﻓﻲ‬،‫ ﺛﻢ ﻳﺸﺪ ﺑﻴﻨﻬﻤﺎ ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ‬،‫ﺍﻟﻴﺴﺮﻯ‬
‫ﺍﻟﺼﻼﺓ‬
.
[সুনানে আবু দাউদ,১ম খন্ড, হাদীস :
৭৫৯; (ইফা)]
.
তবে এই হাদিসটা মুরসাল হাদিস।
.
বিস্তারিত স্ক্রিনসটে দেখুন
.
.
এটি মুরসাল হাদীস। কারণ এটি বর্ণনা
করেছেন একজন তাবেয়ী। তিনি
কোন সাহাবী থেকে শুনেছেন তা
তিনি বলেননি। তাই এ হাদীসের সনদ
রাসূল সাঃ পর্যন্ত পৌঁছেনি। যে
হাদীসের সনদ রাসূল সাঃ পর্যন্ত
পৌঁছেনি। সেটি দিয়ে কথিত আহলে
হাদীস ভাইয়েরা কি করে দলীল
পেশ করেন?
.
তাছাড়া এ হাদীসে সুলাইমান বিন মুসা
নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন।
তার সম্পর্কে

ইমাম বুখারী রহঃ বলেছেন ‫ﻋﻨﺪﻩ ﻣﻨﺎﻛﻴﺮ‬
তথা তার কাছে আপত্তিকর বর্ণনা
রয়েছে।{আলকাশিফ লিযযাহাবী}

ইমাম নাসায়ী রহঃ বলেছেন,
‫ﻟﻴﺲ ﺑﺎﻟﻘﻮﻯ ﻓﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ‬
তথা তিনি হাদীসে মজবুত নন।
.
{আলকাশিফ লিযযাহাবী}

আলী ইবনুল মাদিনী রহঃ বলেছেন
‫ ﻣﻄﻌﻮﻥ ﻋﻠﻴﻪ‬তথা সমালোচিত ও অভিযুক্ত
রাবী।

আস সাজী রহঃ বলেছেন, ‫ﻋﻨﺪﻩ ﻣﻨﺎﻛﻴﺮ‬
তথা তার কাছে আপত্তিকর বর্ণনা
আছে।

হাকেম আবু আহমাদ রহঃ বলেছেন,
‫ﻓﻰ ﺣﺪﻳﺜﻪ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻤﻨﺎﻛﻴﺮ‬
তথা তার হাদীসে কিছু কিছু আপত্তিকর
বিষয় আছে।

ইবনুল জারূদ তাকে তার “যুআফা”
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। মানে
তার মতে সুলাইমান একজন দুর্বল রাবী।

আলবানী রহঃ বলেছেন, ‫ﺻﺪﻭﻕ ﻓﻰ‬
‫ ﺣﺪﻳﺜﻪ ﺑﻌﺾ ﻟﻴﻦ‬তিনি সত্যবাদী তবে তার
হাদীসে কিছু দূর্বলতা রয়েছে।
.
{আসলু সিফাতিস সালাহ২/৫২৮}
.
যে হাদীস একদিকে মারফূ তথা রাসূল সাঃ
পর্যন্ত সূত্রবদ্ধ নয়। অপরদিকে এমন
একজন রাবী রয়েছেন, যাকে
মুহাদ্দিসীনে কেরাম, এমনকি আহলে
হাদীস ভ্রান্ত মতবাদের শায়েখ
আলবানীও তার মাঝে দুর্বলতা আছে
বলে স্বীকার করেছেন, সেই
হাদীস কি করে কথিত আহলে হাদীস
ভাইয়েরা দলীল হিসেবে উপস্থাপন
করলেন?
.
এটি আমাদের কিছু তেই বোধগম্য
নয়।
.
এখানে ৭৫৯ নং হাদিসটা মুনকার হাদিস ছাড়া
আর কোথাও ‫( ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ‬বুকের উপর)
কথাটি নাই !
.
ইবনে মাজাহ শরীফ
================
হুলব রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নবী সাঃ আমাদের সালাতের ইমামতি
করতেন এবং তিনি তার ডান হাত দিয়ে বাম
হাত ধরতেন।
.
[ইবনে মাজাহ,১য় খন্ড,হাদিস নং ৮০৯]
.
স্ক্রিনসট দেখুন
.

.
ওয়ায়েল ইবন হুজুর রাঃ থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেব, আমি নবী সাঃ কে তার ডান
হাত দিয়ে বাম হাত ধরা অবস্থায় সালাত
আদায় করতে দেখেছি।
.
[ইবনে মাজাহ,১ম খন্ড,হাদিস নং ৮১০]
.
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ একদা নবী (সাঃ) আমার
নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, এ সময় আমি আমার বাম হাত ডান হাতের উপর
রেখেছিলাম। তখন তিনি আমার ডান হাত ধরে বাম হাতের উপর রেখে দেন। 
.
[ইবনে মাজাহ, ১ম খন্ড, হাদিস নং ৮১১]
.
এখানে কোথাও ‫( ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ‬বুকের
উপর) কথাটি নাই !
.
স্ক্রিনসট দেখুন
.
.
নাসাঈ শরীফ
============
ওয়ায়েল ইবন হুজুর রাঃ থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন,রাসুল সাঃ যখন সালাতে
দাড়াতেন তখন আমি তাকে ডান হাত
দিয়ে বাম হাত ধরে রাখতে দেখেছি।
[সুনানে নাসাঈ শরীফ,২য় খন্ড,হাদিস নং
৮৯০(ইঃফাঃ)]
.
ইবনে মাসউদ রাঃ হতে বর্ণিত। তিনি
বলেন, রাসুল সাঃ আমাকে দেখলেন,
আমি সালাতে ডান হাতের উপর বাম হাত
রেখেছি । তিনি আমার ডান হাত ধরে তা
বাম হাতের উপর রাখলেন।
.
[সুনানে নাসাঈ শরীফ,২ য় খন্ড,
হাদীস : ৮৯১; (ইঃফাঃ)]
.
৮৯২ নং হাদিসের সারসংক্ষেপ,,,,,, ওয়ায়িল
ইবনে হুজুর রাঃ থেকে বর্ণিত।
……………….. তারপর তিনি (রাসুল সাঃ) তার
ডান হাত রাখলেন বাম হাতের উপর
অর্থাৎ এক কব্জি অন্য কব্জির উপর কিংবা
এক হাত অন্য হাতের উপর রাখলেন।
.
[সুনানে নাসাঈ শরীফ,২য় খন্ড,হাদিস নং
৮৯২(ইঃফাঃ)]
.
এখানে কোথাও ‫( ﻋﻠﻰ ﺻﺪﺭﻩ‬বুকের
উপর) কথাটি নাই !
.
স্ক্রিনসট দেখুন
.
.
মোটকথা, বুকের উপর হাত বাধার কথা
কোনো সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়
নাই!!!
————————————————
———————————
.
মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবার নাভীর
নিচে হাত বাধার হাদীস সম্পকে একটি
চ্যালেন্জের জবাব
==============================
=============
মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা তে
নাভীর নিচে হাত বাধার বিষয়ে একটি
হাদীস রয়েছে,
‫ ﻋ َْﻦ ﻋ َْﻠﻘَ َﻤﺔَ ﺑ ِْﻦ‬،‫ ﻋ َْﻦ ُﻣﻮ َﺳﻰ ﺑ ِْﻦ ُﻋ َﻤﻴ ٍْﺮ‬،ٌ‫ َﻭ ِﻛﻴﻊ‬:‫َﺣ َّﺪﺛَﻨَﺎ‬
‫ﻲ‬ ُ ‫ « َﺭﺃَﻳ‬:‫ﺎﻝ‬
َّ ِ‫ْﺖ ﺍﻟﻨَّﺒ‬ َ َ‫ ﻗ‬، ‫ ﻋ َْﻦ ﺃَﺑِﻴ ِﻪ‬،‫َﻭﺍﺋِ ِﻞ ﺑ ِْﻦ ﺣُﺠْ ٍﺮ‬
ُ‫ﺿ َﻊ ﻳَ ِﻤﻴﻨَﻪ‬ َ ‫ﺻﻠَّﻰ ﻪﻠﻟﺍُ َﻋﻠَ ْﻴ ِﻪ َﻭ َﺳﻠَّ َﻢ َﻭ‬
َ
‫ﺼﻼَ ِﺓ ﺗَﺤْ ﺖَ ﺍﻟ ُّﺴ َّﺮ ِﺓ‬ َّ ‫ َﻋﻠَﻰ ِﺷ َﻤﺎﻟِ ِﻪ ﻓِﻲ ﺍﻟ‬.»
অর্থ:আমার নিকট ওকী বর্ণনা
করেছেন, তিনি হযরত মুসা বিন উমাইর
থেকে, তিনি হযরত আলকমা ইবনে
ওয়ইল থেকে,তিনি তার পিতা ওয়াইল
ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণনা
করেছেন, তিনি বলেনে, আমি রাসূল
স. কে দেখেছি, তিনি নামাযে তার ডান
হাতকে বাম হাতের উপর নাভীর নিচে
রেখেছেন।
মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, খ.৩,
পৃ.৩২১-৩২১, তাহকীক, শায়খ মুহাম্মাদ
আওযামা। মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবার
কোন কোন নুসখায় নাভীর নিচে
শব্দটি নেই। একারণে অনেক
আহলে হাদীস উক্ত হাদীসের
উপর সমালোচনা ও চ্যালেন্জবাজি
করে থাকেন।
এক গাইরে মুকাল্লিদ চ্যালেন্জ
করেছেন,
সে এও বলেছে ১২০০ হি এর আগে
কোন কিতাবে যদি মুসান্নাফে ইবনে
আবি শাইবার হাদীসটি দলিল হিসেবে
দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে সে
নাভীর নিচে হাত বাধা শুরু করবে।”
কথাটা আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং মনে
হয়েছে। আল-হামদুলিল্লাহ কোন
গাইরে মুকাল্লিদ কোথায় হাত বাধলো
তা নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই এবঙ
সে নাভীর নিচে হাত বাধবে কি না,
সেটাও আমাদের কোন আগ্রহের
বিষয় নয়। তবে, তার চ্যালেন্জের
কারণে একটা সত্য যেন চাপা না থাকে
এবঙ সঠিক সুন্নাহের অনুসারীগণ
যেন তাদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না
হয়, সেজন্য এখানে তার দাবীর
অসারতা আলোচনা করা হলো।
ইউসুফ ইবনে আব্দুল লতিফ ইবনে
আব্দুল বাকী ইবনে মাহমুদ আল-
হাররানী ৭৪১ হি: তে ইবনে আবি শাইবার
একটি নুসখা লেখেন। এই নুসখায় তিনি
নাভীর নিচে হাত বাধার কথাটি উল্লেখ
করেছেন। নিচে উক্ত নুসখার ছবি
দেয়া হলো,
.
<p
.
উক্ত গাইরে মুকাল্লিদের চ্যালেন্জ
ছিলো, ১২০০ হি. এর আগে উক্ত
হাদীস দ্বারা কেউ দলিল দিয়েছে কি
না। ইমাম কাসেম ইবনে কুতলুবগা আত-
তা’রীফ ওয়াল আখবার বিতাখরিজি
আহাদিসিল ইখতিয়ারে উক্ত হাদীস দ্বারা
দলিল পেশ করেছেন। ইমাম কাসেম
ইবনে কুতলুবুগা রহ. এর জন্ম ৮০২ হি:
এবঙ মৃত্যু ৮৭৯। অর্থাৎ আপনার কাঙ্খিত
১২০০ হি: এর পূর্বে ইমাম আব্দুল
লতীফ ইবনে আব্দুল বাকী প্রায়
সাচে চারশ বছর পূর্বে এবঙ ইমাম
কাসেম ইবনে কুতলুবগা প্রায় সাড়ে
তিন শ বছর পূর্বে এটা লিখেছেন
এবঙ এটা দিয়ে দলিল দিয়েছেন।
নাভীর নিচের কথাটি আল্লামা আবেদ
সিন্ধি রহ. এর নুসখাতেও বিদ্যমান
রয়েছে। নিচে মূল নুসখার স্কিনশট
দেয়া হলো,
.
<p
.
মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবার মূল
নুসখাতে যখন বিষয়টি রয়েছে, তখন
গাইরে মুকাল্লিদদের পক্ষ থেকে
উক্ত হাদীসের ব্যাপারে নিজেদের
মতের বিরোধী হওয়ার কারণে
মনগড়া অপবাদ আরোপ কোনভাবেই
সঙ্গত নয়।
শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা মুসান্নাফে ইবনে
আবি শাইবার তাহকীক করার সময এই
হাদীসে উপর তিন পৃষ্ঠার একটি টীকা
লিখেছেন এবঙ মুসান্নাফে ইবনে
আবি শাইবাতে উক্ত শব্দটি রয়েছে, তা
প্রমাণ করেছেন। নিচে উক্ত
আলোচনার স্ত্রিনশ্ট দেয়া হলো।
.

<p
.
<p
.
.
আল্লাহ পাক আমাদেরকে অমূলক
চ্যালেন্জবাজি থেকে বাচার তৌফিক দান
করুন।আমিন।
————————————————
————————————
নামাজে হাত বাধা : একটি হাদিস > দালিলিক ও
তাত্ত্বিক তাহকিক :
==============================
===========
মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা তে
নাভীর নিচে হাত বাধার বিষয়ে একটি
হাদীস রয়েছে,
‫ ﻋ َْﻦ ﻋ َْﻠﻘَ َﻤﺔَ ﺑ ِْﻦ‬،‫ ﻋ َْﻦ ُﻣﻮ َﺳﻰ ﺑ ِْﻦ ُﻋ َﻤﻴ ٍْﺮ‬،ٌ‫ َﻭ ِﻛﻴﻊ‬:‫َﺣ َّﺪﺛَﻨَﺎ‬
‫ﻲ‬ ُ ‫ » َﺭﺃَﻳ‬:‫ﺎﻝ‬
َّ ِ‫ْﺖ ﺍﻟﻨَّﺒ‬ َ َ‫ ﻗ‬، ‫ ﻋ َْﻦ ﺃَﺑِﻴ ِﻪ‬،‫َﻭﺍﺋِ ِﻞ ﺑ ِْﻦ ﺣُﺠْ ٍﺮ‬
‫ﺿ َﻊ ﻳَ ِﻤﻴﻨَﻪُ َﻋﻠَﻰ ِﺷ َﻤﺎﻟِ ِﻪ ﻓِﻲ‬ َ ‫ﺻﻠَّﻰ ﻪﻠﻟﺍُ َﻋﻠَ ْﻴ ِﻪ َﻭ َﺳﻠَّ َﻢ َﻭ‬
َ
‫ﺼﻼَ ِﺓ ﺗَﺤْ ﺖَ ﺍﻟ ُّﺴ َّﺮ ِﺓ‬
َّ ‫ ﺍﻟ‬.»
অর্থ:আমার নিকট ওকী বর্ণনা
করেছেন, তিনি হযরত মুসা বিন উমাইর
থেকে, তিনি হযরত আলকমা ইবনে
ওয়ইল থেকে,তিনি তার পিতা ওয়াইল
ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণনা
করেছেন, তিনি বলেনে,
আমি রাসূল স. কে দেখেছি, তিনি
নামাযে তার ডান হাতকে বাম হাতের উপর
নাভীর নিচে রেখেছেন।
মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, খ.৩,
পৃ.৩২১-৩২১,
তাত্ত্বিক তাহকিক :
এখন মুসান্নিফের নুসখাগুলোতে
উক্ত হাদিস খানা মজুদ থাকলেও কিছু
নুসখাতে . ‫ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﻴﺮۃ‬.শব্দটি নেই । এবং
কিছু নুসখায় . ‫ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﻴﺮۃ‬. শব্দটি আছে ।
মুসান্নিফের ৬টি নুসখায় . ‫ﺗﺤﺖ‬
‫ ﺍﻟﺴﻴﺮۃ‬.আছে
১.ইমাম আবেদ আস-সিন্ধী রহঃ +
.
৪.ইমাম মুরতাযা আযাবিদী রহঃ
৫.আল্লামা আঃ কাদির ইবনে আবু বকর আস-
সিদ্দিক রহঃ
৬.আল্লামা মুহাম্মদ আকরাম সিন্ধী রহঃ
*#* যেসব নুসখায় উক্ত শব্দটি নেই ,
তারমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য নুসখা হচ্ছে
নিমাভী হানাফী রহ: ,  হায়াত সিন্ধী রহঃ  ইত্যাদি ।
পর্যালোচনা>
এখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে , মোট ৬টি
নুসখায় . ‫ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﻴﺮۃ‬. শব্দটি আছে (এর
মধ্যে ৩টির শট দেয়া আছে) । এখন
তর্কে র খাতিরে মেনেও নেই যে ,
যে কেউ এই নুসখাগুলতে . ‫ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﻴﺮۃ‬.
শব্দটি যোগ করেছে , ত কে
করেছে ??? ৬টি নুসখা কি একজনের !!!
এটা একটা অহেতু ক , নির্লজ্জ ও
খামখেয়ালীপণা অপবাদ ছাড়া কিছু নয় ।
কেননা , প্রায় প্র্যতেক হাদিসের
কিতাবেই এরকম নজির দেখা যায় এবং এটা
একটা সাধারণ বিষয় । যেমন : ইমাম বুখারী রহ:
এর লিখিত  কিতাবের যতগুলো নুসখার
সংকলকগণের নাম পাওয়া যায় , তার মধ্যে
ইমাম ফিরাবী রহঃ এর নুসখায় “কিতাবুল তারাবিহ”
নামক একটা অধ্যায় পাওয়া যায় , অধিকিন্তু প্রায়
১১জন ইমামের নুসখায় তা পাওয়া যায় না !!
সুতরাং , এটা হাস্যকর যুক্তি । এটা মিথ্যাচার-
অপবাদ আরোপ ছাড়া কিছু ই নয় । {যা নিচে
আমরা সালফে সলেহীনদের উক্তি
দিয়ে প্রমাণ করব }
“যারা আমানতের ধারক-বাহক , আমানতের
স্বর্ণযুগের উজ্জ্বল-দীপ্তমান
আকাশের সূর্য
তাদের প্রতি চামচিকাদের থাকবেই নজর ,
করতে বদনাম-  তারা থাকবেই সর্বদা
অধ্যৈর্য”
স্পষ্টই প্রমাণ হচ্ছে “. ‫ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﻴﺮۃ‬.”
মুসান্নিফের পান্ডু লিপিতে ছিল ।
এমনকি মদিনা মুনাওয়ারার বিখ্যাত ফকিহ ও আলিম
শায়খ আওয়ামা হালাবী (দাঃবাঃ) মুসান্নিফের
প্রাচীন পান্ডু লিপি ঘেটে দেখেছেন
যে , সেখানে ‫ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﻴﺮۃ‬. আছে । এবং
তিনি তাহকিকসহ পেশ করেছেন তার
কিতাবে । সেখানে মূল পান্ডু লিপির
স্ক্রীনশটও রয়েছে , যা ‫ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﻴﺮۃ‬
কে প্রমাণ করে ।
.
অর্থ্যাৎ মুসান্নিফের ৬টি পান্ডু লিপিতে
থাকা এবং শায়খ আওয়ামার দলিল প্রমাণ
করে “ ‫ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﻴﺮۃ‬অবশ্যই ছিল ।
َ َ‫ْﺲ ﻟَﻚَ ﺑِ ِﻪ ِﻋ ْﻠ ٌﻢ ﺇِ َّﻥ ﺍﻟ َّﺴ ْﻤ َﻊ َﻭ ْﺍﻟﺒ‬
‫ﺼ َﺮ‬ ُ ‫َﻭﻻَ ﺗَ ْﻘ‬
َ ‫ﻒ َﻣﺎ ﻟَﻴ‬
ً‫َﻭ ْﺍﻟﻔُﺆَ ﺍ َﺩ ُﻛﻞُّ ﺃُﻭﻟـﺌِﻚَ َﻛﺎﻥَ َﻋ ْﻨﻪُ َﻣ ْﺴ ُﺆﻭﻻ‬
যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান
নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান,
চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই
জিজ্ঞাসিত হবে। ১৭;৩৬
{আমরা দেখাব যে , কোন নবী-
রাসূল , সাহাবা , তাবেঈ , মুহাদ্দিস,ফকিহ
অথবা মুফাসসির কেউই অপবাদের কবল
থেকে বাদ পড়েন নি । সুতরাং শাইখ
আওয়ামা হালাবী হযুরের আর কি
দোষ !! }
যারা বিনা দলিলে শায়খ আওয়ামার উপর
অপবাদ লাগাচ্ছে , তাদের উপর আল্লহ
এর লা`ণত বর্ষিত হোক ।
َ‫ ﻗُﺘِ َﻞ ْﺍﻟﺨَ ﺮَّﺍﺻُﻮﻥ‬অনুমানকারীরা ধ্বংস হোক,
৫১:১০
Point-2
———————
এখন , এই কথা শতভাগ সত্যি যে , ”
মুসান্নিফের সব নুসখায় ‫ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﻴﺮۃ‬
শব্দটি হাদিসের সাথে নেই । যারা
সত্যভাষী তারা কখনই সত্যকে
অস্বীকার করে না , অবলীলায়
স্বীকার করে থাকে । যেমন ,
হাদিসটির ভাষ্যের উপর মাঝহাব তথা
হানাফীদের আমল থাকা সত্যেও
নিমাভী হানাফী রহঃ নিজের কাছের
নুসখায় যা দেখেছেন , তাই তার
কিতাবে উল্লেখ্য করেছেন ।
এমনকি ভারতবর্ষের তৎকালিন নুসখায়
‫ ﺗﺤﺖ ﺍﻟﺴﻴﺮۃ‬শব্দটি না থাকাও হানাফী সকল
আলিম স্বীকার করেছেন , এমনকি
ত্বকী উসমান হযুরও এভাবেই বর্ণনা
করেছেন ।
আল্লহ তাআলা আহফীদেরকেও
চালবাজি পরিহার করে সত্যবাদীদের
সাথে চলার তৌওফিক দান করুন , আমিন ।
ْ ُ‫ﻮﺍ ﻪّﻠﻟﺍ َ َﻭ ُﻛﻮﻧ‬
‫ﻮﺍ َﻣ َﻊ‬ ْ ُ‫ﻮﺍ ﺍﺗَّﻘ‬
ْ ُ‫ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّ ِﺬﻳﻦَ ﺁ َﻣﻨ‬
‫ﺍﻟﺼَّﺎ ِﺩﻗِﻴﻦ‬
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর
এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। ৯;১১৯
উসূলে হাদিস ;
উসূলে হাদিসের পরিভাষায় , এই ধরণের
হাদিসগুলোকে বলা হয় “মুজতারিব হাদিস
” আর শুধু মুজতারিব হাদিস দলিল হিসেবে
গণ্য নয় । তবে এর সাথে যদি , আরও
হাদিস+সাহাবদের আমল+তাবেঈদের
আমল থাকে , তবেই এই মুজতারিব
হাদিসে ই দলিল হয়ে যায় !!!
{উল্লেখ্য যে, আমাদের এই
আলোচনার আলোচ্য বিষয় এটা নয়
যে, “এই হাদিস হুজ্জাত কিনা” । তাই এ
ব্যপারের পরর্বর্তীতে আলোচনা
করা হবে }
তবে উলূমূল হাদিসের মুহাদ্দিসেনে
কেরাম এবং রিজাল শাস্ত্রের ইমামগণ
এই ক্ষেত্রে যাচাই করে দেখেন ”
মূল হাদিসের সাথে নুসখায় বাড়তি সংযজিত
শব্দ রয়েছে , সেটাসহ হাদিসটি সহিহ
কিনা ” ……………
এই প্রেক্ষিতে আমরা দেখব , রিজাল
শাস্ত্রের ইমামগণ কি বলেছেন ???
” ১. তিরমিযী শরিফের ভাষ্যকার আবুত
তায়্যিব সিন্ধী রহ; হাদিসটিকে মজবুত ও
শক্তিশালী বলেছেন ।
২.আল্লামা আবেদ সিন্ধী রহঃও
হাদিসটিকে মজবুত ও শক্তিশালী
বলেছেন ।
৩.হাফেজ যাইনুদ্দিন কাসিম ইবনে
কুতলুবুগা রহ; বলেছেন ‫ﻝ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﻗﺴﻢ‬
‫ﺑﻦ ﻗﻄﻠﻮﺑﻐﺎ ﻓﻲ ﺗﺨﺮﻳﺞ ﺍﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻻﺧﺘﺎﺭ ﺷﺮﺡ‬
‫ ﻫﺬﺍ ﺳﻨﺪ ﺟﻴﺪ‬: ‫” ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ‬
অর্থ্যাৎ রিজাল শাস্ত্রের ইমামগণের
নিকট হাদিসটি সহিহ ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
~~
point-3
“”””””””””””””
এখন রিজাল শাস্ত্রের এক ইমামের
উপর আহাফিরা প্রশ্ন তু লেছেন যে ,
” ইবনে কুতলুবুগা রহঃ (৮০২-৮৭৯) সিকাহ
নয় ”
প্রমাণস্বরুপ ইমাম ইব্রাহিম বাকাঈ রহঃ(৮৮৫)
এর উক্তি তুলে এনেছেন , অর্থ্যাৎ
কাসিম ইবনে কুতলুবগা মিথ্যাবাদী ছিল
” {তাওযীহুল আহকাম ১/৩১৫ , যাওউল
লামী -ইমাম সাখাবী ; ৬/১৮৬}
পর্যালোচনা>স্পষ্টই দেখছেন যে
, এখানে জরাহ এর কোন ব্যাখ্যা দেয়া
হয় নি । এবং রিজাল শাস্ত্রের স্বসিদ্ধ
নিয়ামানুযায়ী ,
আল্লামা আব্দুল হাই লখলবী রহঃ
বলেন : “ব্যখ্যাহীন জারহর চেয়ে
তা’দীলই অগ্রগন্য “- যফারুল
আমানী /২৮১
এছাড়াও……………
এখন আমরা দেখব , ইবনে কুতলুবুগা
রহঃ, ইব্রাহিম বাকাঈ রহঃ এবং ইমাম সাখাবী রহ
; মধ্যে কি সম্পর্ক ছিল ??? ওনাদের
জম্ম-মৃত্যু সালের বিবরণ
১.যাইনুদ্দিন কাসিম ইবনে কুতলুবুগা রহ;
(৮০৬-৮৭৯)
২.ইব্রাহিম বাকাঈ রহঃ (৮০৯- ৮৮৫)
৩.ইমাম সাখাবী রহঃ (৮৩১-৯০২)
অর্থ্যাৎ তারা ৩জন ই সমসাময়িক ছিল !!!
একই যুগের মানুষ ছিল !!! এখন , জরাহ-
তাদীল এর স্বসিদ্ধ উসূল অনুযায়ী , ”
একই যুগের ইমামরা যে পরস্পর জরাহ
করেছেন , তা সর্বসম্মতিক্রমে
গ্রহণযোগ্য নয় ” !!!!
প্রমাণ >
আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবী রহঃ
উল্লেখ্য করেন , “জরাহ যদি
স্বদলপ্রীতি , গড়ামী , পারস্পরিক
বিদ্বেষ-শত্রুতা ইত্যাদির কারণে হয় ,
তাহলে তা গ্রহণযোগ্য নয় ।
প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের জরাহ
থেকে খুব কম মানুষই রক্ষা পেয়ে
থাকে ” {আর রাফাউ অয়াত তাকমিলু ঃ১৮২ }
হাফেজ যাহাবী রহঃ বলেন , ”
সমসাময়িকরা এঁকে অপরকে যে জরাহ
করেন , সেটার কোন গুরুত্ব নেই ।
বিশেষ করে যখন জানা যায় যে ,
জরাহটা মূলত পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ-
শত্রুতা , প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা
স্বদলপ্রীতি কারণে হচ্ছে । আর
এমন জরাহ থেকে কেবল সেই
রক্ষা পায় , যাকে আল্লহ বিশেষভাবে
রক্ষা করেন । নবী-রাসূল ও সিদ্দিকগণ
ব্যতিত আমার মতে কেউই এর
থেকে বাচতে পারে নি । যদি ইচ্ছা করি
, তাহলে এ বিষয়ে অনেক অনেক
দফতর লিখে ফেলতে পারব ইং শা
আল্লাহ্ ।” {মীযানুল ইতেদাল খঃ১
পৃঃ৫২}
ইমাম সুবুকী রহঃ বলেন , ” যদি আমরা
সকল ক্ষেত্রে জরাহকে অগ্রগণ্য
করি , তাহলে আমাদের কোন ইমামই
নিরাপদ থাকতেপারবেন না । কেননা
প্রায়ই সকল ইমামের ব্যপারে
দোষারোপকারীরা দোষ
আরোপ করেছে । আর এই অযথা
দোষারোপ করারকারণে অনেকে
ধ্বংস হয়েছে ” (তবাকতু শাফিয়ীয়্যাহ
১/১৮৮ পৃঃ )
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালীন রহঃ
বলেন ” কোন কোন ইমাম
ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে জরাহ
করেছেন , আবার কেউ কেউ
প্রতিদ্বন্দ্বিতামুলক মনোভাব থেকে
জরাহ করেছেন , কেউ কেউ আবার
নিজের চেয়েও বড় ও উর্ধের
রাবিকে জরাহ করেছেন ।
তিনি বলেন ‫ ﻭ ﻛﻞ ﻫﺬﺍ ﻻ ﻳﻌﺘﺒﺮ‬এগুলো
সবই অগ্রহণযোগ্য ” {মুকাদ্দামা ফতহুল
বারী :৪৪৬}
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
এখন জেনে নেই , ১.যাইনুদ্দিন কাসিম
ইবনে কুতলুবুগা রহ; ২.ইব্রাহিম বাকাঈ রহঃ
৩.ইমাম সাখাবী রহঃ ,
তিনজনই হাফেজ ইবনে হাজার
আসকালীন রহঃ এর ছাত্র । এবং ইমাম
সাখাবী রহঃ এরও ওস্তাদ কাসিম রহঃ ।
এখন আমরা দেখব , যাইনুদ্দিন কাসিম
ইবনে কুতলুবুগা রহ; এর জীবনী :
নাম> কাসিম ,পিতা > কুতলুবুগা (অর্থ
বরকতময় পুরুষ) , উপাধী > যাইনুদ্দিন ,
উপনাম > আবুল আদল , জম্মস্থান >
কায়রো , মিশর । {৮০৬-৮৭৯হিঃ}
* ছোটকাল অত্যন্ত জ্ঞানী ও
মেধাবী ছিলেন । বড় হয়ে তিনি
মিশরের যুগশ্রেষ্ঠ আলিম ও
ইমামদের কাছ থেকে ইলিম অর্জন
করেন । তাদের মধ্যে ইবনুল হুমাম ও
ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ অন্যতম ।
তার ব্যপারে আয-যওউল লামি এর লিখক
ও তার প্রসিদ্ধছাত্র ইমাম সাখাবী রহঃ
বলেন , (+)
“তিনি হলেন এক মহান ব্যক্তিত্ব , বিভিন্ন
শাস্ত্রে তার পারদর্শীতা আছে , তিনি
আরবী সাহিত্যে অগাধ জ্ঞান রাখেন ।
মাযহাবের দলিল প্রমাণ প্রচু র উপস্থাপন
করতে পারেন এবং মাযহাবের খুটিনাটি
দুর্লভ বিষয় তার আয়ত্বে আছে । তিনি
, এই এই শাস্ত্রে অগ্রগামী আর তিনি
ছিলেন সুমিষ্টভাষী । (আয যওউল লামি
৬/১৮৮)
.
ইমাম কাসিম রহঃ সম্পর্কে তার ওস্তাদ যুগের
মহান ইমাম ইবনে হাজার রহ; বলেন ,(+) “তিনি
হলেন শাইখে কামেল (পরিপুর্ণ শাইখ ) ,
মুহাদ্দিসে কামেল (পরিপুর্ণ একজন
মুহাদ্দিস ) , তিনি যুগের অন্যন্য ব্যক্তিত্ব
” (আয যওউল লামি ৬/১৮৫)
কিছু কাল পরে আবারো ইবনে হাজার রহঃ
বলেন , (+) ” তিনি হলেন ইমাম , আল্লামা ,
মুহাদ্দিস , ফকিহ ও হাফেয ” (আয যওউল
লামি৬/১৮৫)

উসূল > . উলুমুল হাদিসের সাথে যাদের সামান্য সম্পর্ক আছে , তারা জানেন
কারো ব্যপারে “ইমাম , শায়েখে কামেল , মুহাদ্দিস , হাফেয ইত্যাদি শব্দ ”
তাদিলের সর্বোচ্চ মান বুঝায় ।

এরপরও কি তাকে জরাহ করে , নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করবেন ??!!!??

বড়ই পরিতাপের বিষয় যে , আমাদের কিছু বন্ধু , ইমাম সাখাবীর “যাওঊল লাম ”
{আসল নাম ‘আয-যাওউল লামি } থেকে ইমাম কাসিম সমন্ধে জরাহ পেশ
করলেন কিন্তু সেখান থেকে তার উস্তাযের তাদিল ভু লে গেলেন !!!!

অর্থ্যাৎ ইমাম কাসিম রহঃ ছিলেন , একজন যুগশ্রেষ্ঠ ফকিহ , একজন বড় মাপের
মুহাদ্দিস ও আরবী সাহিত্যিক ।

সুতরাং , ইমাম যাইনুদ্দিন কাসিম ইবনে কুতলুবুগা রহ; ১০০% সিকাহ !!!

অর্থ্যাৎ মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা এর উপরোক্ত আলোচ্য হাদিসটি ১০০%


সহিহ । (প্রমাণিত)

==================================
নামাযে হাত বাঁ ধা ও নাভীর নিচে বাঁ ধাঃ ************************************ প্রশ্ন :
কিছু দিন আগে আমার এক বন্ধুর সাথে নামাযের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা
হচ্ছিল। তিনি বললেন, ‘নামাযে বুকের উপর হাত রাখা সুন্নাহ। হাদীস শরীফে এই
নিয়মটিই আছে। অন্য কোনো নিয়ম নেই। সহীহ বুখারীতে সাহল ইবনে সাদ রা.
থেকে বর্ণিত হাদীসে, সহীহ ইবনে খুযায়মায় ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত
হাদীসে এবং মুসনাদে আহমদে হুলব আতত্বয়ী রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে বুকের
উপর হাত বাঁ ধার কথা আছে। এছাড়া তাউস রাহ. থেকে একটি মুরসাল হাদীসে
এবং হযরত আলী রা. থেকে সূরায়ে কাওসারের তাফসীরে নামাযে বুকের উপর
হাত বাঁ ধার কথা বর্ণিত হয়েছে।

‘পক্ষান্তরে নাভীর নীচে হাত বাঁ ধার কোনো প্রমাণ সহীহ হাদীসে নেই। এ সম্পর্কে
যত হাদীস ও আছার আছে সব জয়ীফ।’

আমার বন্ধুটি একজন আলেম। আমারও উলূমুল হাদীস বিষয়ে কিছু পড়াশোনা
আছে। তার সাথে আলোচনার পর আমি বিষয়টির উপর কিছু পড়াশোনাও
করেছি।

নামাযে হাত বাঁ ধার বিষয়ে একটি পূর্ণ াঙ্গ আলোচনা এবং উপরোক্ত বিষয়ে ইলমী
সমাধান আপনাদের নিকট কামনা করছি। আল্লাহ তাআলা আপনাদের জাযায়ে
খায়ের দান করুন।

রাইয়ান ইবনে লুৎফুর রহমান

পল্লবী, ঢাকা-১২১৬

উত্তর : নামাযে হাত বাঁ ধা সুন্নত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
নামাযে হাত বেঁধেছেন। তাঁ র ডান হাত থাকত বাম হাতের কব্জির উপর। সাহাবায়ে
কেরামকে এভাবেই নামায পড়ার আদেশ করা হত এবং তাঁ রাও এভাবেই হাত বেঁধে
নামায পড়তেন।
নামাযে হাত বাঁ ধা

হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তাকবীর দিয়ে দুই হাত তু ললেন। রাবী বলেন, দুই কান বরাবর। এরপর পরিধানের
চাদর গায়ে জড়িয়ে নিলেন, এরপর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন …।

‫ وصف‬،‫ أنه رأى النبي صلى هللا عليه وسلم رفع يديه حين دخل في الصالة كبر‬: ‫عن وائل بن حجر‬
‫ ثم وضع يده اليمنى على اليسرى‬،‫ ثم التحف بثوبه‬،‫… همام حيال أذينه‬

-সহীহ মুসলিম ১/১৭৩

হযরত হুলব আতত্বয়ী রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাদের ইমাম হতেন এবং তাঁ র ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরতেন।

‫ حديث حسن‬: ‫ رواه الترمذي وقال‬.‫كان رسول هللا صلى هللا عليه وسلم يؤمنا فيأخذ شماله بيمينه‬.

-জামে তিরমিযী ১/৩৪; ইবনে মাজাহ ৫৯

হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. বলেন, লোকদেরকে আদেশ করা হত, পুরুষ যেন
নামাযে ডান হাত বাম বাহুর উপর রাখে।’-সহীহ বুখারী ১/১০৪

‫ ال‬: ‫ قال أبو حاتم‬.‫كان الناس يؤمرون أن يضع الرجل اليد اليمنى على ذراعه اليسرى في الصالة‬
‫أعلمه إال ينمى ذلك إلى النبي صلى هللا عليه وسلم‬.

হযরত জাবির রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন
নামাযরত ব্যক্তির নিকট দিয়ে গমন করছিলেন, যিনি ডান হাতের উপর বাম হাত
রেখে নামায পড়ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত
খুলে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫০৯০
‫مر رسول هللا صلى هللا عليه وسلم برجل وهو يصلي قد وضع يده اليسرى على اليمنى فانتزعها‬
‫ رجاله رجال الصحيح‬: ٢/٢۷٥ ‫ قال الهيثمي في مجمع الزوائد‬.‫ووضع اليمنى على اليسرى‬.

আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘আমরা নবীগণ আদিষ্ট হয়েছি দ্রুত (সময়
হওয়ামাত্র) ইফতার করতে, বিলম্বে (সময়ের শেষের দিকে) সাহরী খেতে এবং
নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে।’

‫ إنا معاشر األنبياء أمرنا بتعجيل فطرنا وتأخير سحورنا‬: ‫سمعت نبي هللا صلى هللا عليه وسلم يقول‬
‫ رجاله رجال‬:٢۷٥ /١ ‫ قال الهيثمي في مجمع الزوائد‬.‫وأن نضع أيماننا على شمائلنا في الصالة‬
‫الصحيح‬.

-সহীহ ইবনে হিববান ৩/১০১, হাদীস : ১৭৬৬; আলমুজামুল কাবীর ১১/১৫৯,


হাদীস : ১১৪৮৫

হারিছ ইবনে গুতাইফ রা. বলেন, ‘আমি এটা ভু লিনি যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখতে দেখেছি, অর্থাৎ
নামাযে।’

‫مهما رأيت نسيت لم أنس أني رأيت رسول هللا صلى هللا عليه وسلم وضع يده اليمنى على اليسرى‬
‫ في الصالة‬: ‫يعني‬.

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৫৬; মুসনাদে আহমদ ৪/১০৫, হাদীস :
১৬৯৬৭-৬৮, ২২৪৯৭

মোটকথা, নামাযে হাত বেঁধে দাঁ ড়ানো সুন্নাহ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক সাহাবী তা বর্ণনা করেছেন। এ কারণে নামাযে হাত ছেড়ে
দাঁ ড়ানো, যা মালেকী মাযহাবের কোনো কোনো ইমাম গ্রহণ করেছেন, মূল সুন্নাহ
নয়।
মালেকী মাযহাবের প্রাচীন গ্রন্থ ‘‘আলমুদাওয়ানাতু ল কুবরা’’য় আছে, আবদুর
রহমান ইবনুল কাসিম রাহ. ইমাম মালিক রাহ. থেকে নামাযে ডান হাত বাম হাতের
উপর রাখার বিষয়ে বর্ণনা করেছেন যে, ‘ফরয নামাযে এই নিয়ম আমার জানা
নেই এবং তিনি তা অপছন্দ করতেন। তবে নফল নামাযে কিয়াম যখন দীর্ঘ হয়
তখন হাত বাঁ ধতে বাঁ ধা নেই।’

‫ ال أعرف ذلك في الفريضة وكان‬: ‫ وقال مالك في وضع اليمنى على اليسرى في الصالة قال‬: ‫قال‬
‫ ولكن في النوافل إذا طال القيام فال بأس بذلك يعين به نفسه‬،‫يكرهه‬.

কিন্তু এ রেওয়ায়েত উল্লেখ করার পর সুহনূন (গ্রন্থকার) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে


ওয়াহব রাহ. সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর সূত্রে একাধিক সাহাবী থেকে বর্ণনা
করেছেন যে, তাঁ রা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামাযে ডান
হাত বাম হাতের উপর রাখতে দেখেছেন।

‫قال سحنون عن ابن وهب عن سفيان الثوري عن غير واحد من أصحاب رسول هللا صلى هللا عليه‬
‫وسلم أنهم رأوا رسول هللا صلى هللا عليه وسلم واضعا يده اليمنى على اليسرى في الصالة‬.

-আলমুদাওয়ানাহ ১/৭৬

ইমাম মালেক রাহ.-এর অন্য অনেক শাগরিদ তাঁ র থেকে হাত বাঁ ধার নিয়ম বর্ণনা
করেছেন। মালেকী মাযহাবের বিখ্যাত মনীষীদের অনেকেই তাঁ র এই
রেওয়ায়েতকেই বিশুদ্ধ ও অগ্রগণ্য বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

ইমাম মালিক রাহ.-এর ‘আলমুয়াত্তা’য় এ নিয়মই বর্ণিত হয়েছে।

‘আততাজ ওয়াল ইকলীল লিমুখতাসারিল খালীল’ কিতাবে ইমাম মালেক রাহ.


থেকে হাত বাঁ ধার নিয়ম বর্ণনা করার পর ইবনে রুশদ মালেকীর বক্তব্য উল্লেখ করা
হয়েছে যে, ‘এটিই অগ্রগণ্য ও শক্তিশালী। কারণ প্রথম যুগে মানুষকে এরই আদেশ
করা হত।’
‫ ألن الناس كانوا يؤمرون به في الزمان األول‬،‫ وهذا هو األظهر‬: ‫ابن رشد‬.

তদ্রূপ কাযী ইয়ায মালেকী রাহ. থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আমাদের শায়খগণ
ডান হাতের পাতা বাম হাতের কব্জির উপর মুঠ করার নিয়মই গ্রহণ করেছেন।’

‫ اختار شيوخنا قبض كف اليمنى على رسغ اليسرى‬: ‫عياض‬.

-আততাজ ওয়াল ইকলীল, আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ


আলমাওওয়াক আলমালেকী (৮৯৭ হি.) মাওয়াহিবুল জালীলের সাথে মুদ্রিত
২/২৪০

ইমাম কুরতু বী মালেকী রাহ.ও (৬৭১ হি.) হাত বাঁ ধার রেওয়ায়েতকে অগ্রগণ্য
সাব্যস্ত করে বলেন, ‘এটিই সঠিক। কারণ হযরত ওয়াইল রা. ও অন্যান্য সাহাবী
বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান হাত বাম
হাতের উপর রেখেছেন।’ -আলজামি লিআহকামিল কুরআনিল কারীম ২০/১৫০
এ প্রসঙ্গে মালেকী মাযহাবের বিখ্যাত মনীষী ইমাম ইবনে আবদুল বার রাহ. (৪৬৩
হি.) শক্তিশালী আলোচনা করেছেন। তিনি হাত বাঁ ধার নিয়মকে শুধু অগ্রাধিকারই
দেননি; বরং এর বিপরীতে ইমাম মালেক রাহ. থেকে যা কিছু বর্ণনা করা হয় তা
দ্ব্যর্থহীন ভাষায় খন্ডনও করেছেন। তাঁ র আলোচনার কিছু অংশ মূল পাঠসহ তু লে
দেওয়া হল।

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে (নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা) নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ভিন্ন কিছু বর্ণিত হয়নি এবং কোনো সাহাবী এ নিয়মের
বিরোধিতা করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। শুধু আবদুল্লাহ ইবনুয যুবায়ের রা.
সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়, তিনি নামাযে হাত ছেড়ে রাখতেন, তবে এর বিপরীত
কথাও তাঁ র থেকে বর্ণিত হয়েছে। ইতিপূর্বে আমরা তাঁ র বক্তব্য উল্লেখ করেছি যে,
‘সুন্নাহ হচ্ছে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা।’

জুমহূ র তাবেয়ীন ও মুসলিম উম্মাহর আহলুর রায় ও আহলুল আছর উভয়


ঘরানার অধিকাংশ ফকীহ এই নিয়মই গ্রহণ করেছেন।’
‫لم تختلف اآلثار عن النبي صلى هللا عليه وسلم في هذا الباب وال أعلم عن أحد من الصحابة في ذلك‬
‫خالفا االشيء روي عن ابن الزبير أنه كان يرسل يديه إذا صلى وقد روى عنه خالفه مما قدمنا ذكره‬
‫ وعلى هذا جمهور‬،‫عنه وذلك قوله صلى هللا عليه وسلم (كذا) وضع اليمين على الشمال من السنة‬
‫التابعين وأكثر فقهاء المسلمين من أهل الرأي واألثر‬.

-আততামহীদ ২০/৭৪-৭৫

তিনি আরো বলেন, ‘ইবনুল কাসিম ছাড়া অন্যরা ইমাম মালেক রাহ. থেকে বর্ণনা
করেছেন যে, ফরয-নফল কোনো নামাযেই হাত বাঁ ধতে বাধা নেই। আর এটিই তাঁ রা
মদীনাবাসী শাগরিদদের বর্ণনা।’

… ‫ وهي رواية المدنيين‬،‫ ال بأس بذلك في الفريضة والنافلة‬: ‫وقال عنه (أي عن مالك) غير ابن القاسم‬
‫عنه‬.

-প্রাগুক্ত

এরপর কোনো কোনো তাবেয়ী থেকে নামাযে হাত ছেড়ে রাখার যে বর্ণনা পাওয়া
যায় সে সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনার পর তিনি বলেন, ‘এই হচ্ছে কতিপয় তাবেয়ীর
(আমলের) কিছু বিবরণ। তবে তা (আলোচিত সুন্নাহর) খিলাফ ও বিরোধিতা নয়।
কারণ তাদের কেউ (হাত বাঁ ধা) অপছন্দ করতেন এমনটা পাওয়া যায় না। আর
পাওয়া গেলেও তা দলীল হিসেবে গ্রহণ করা যেত না। কারণ সুন্নাহর অনুসারীদের
জন্য সুন্নাহই হচ্ছে দলীল। আর যারা এর বিরোধিতা করে তাদের বিরুদ্ধেও দলীল
হচ্ছে সুন্নাহ, বিশেষত যে সুন্নাহয় কোনো সাহাবীর ভিন্নমত নেই।

،‫ ألنه ال يثبت عن واحد منهم كراهية‬،‫فهذا ما روي عن بعض التابعين في هذا الباب وليس بخالف‬
‫ وال‬،‫ ومن خالفها فهو محجوج بها‬،‫ ألن الحجة في السنة لمن اتبعها‬،‫ولو ثبت ذلك ما كانت فيه حجة‬
‫سيما سنة لم يثبت عن واحد من الصحابة خالفها‬.

-প্রাগুক্ত ২০/৭৬
তিনি আরো বলেন, ‘(হাত বাধার ক্ষেত্রে) ফরয-নফলে পার্থক্য করার কোনো যুক্তি
নেই, যদিও কেউ বলে থাকেন যে, হাত বাঁ ধার নিয়মটি নফল নামাযের ক্ষেত্রে,
ফরযের ক্ষেত্রে নয়। কারণ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সাধারণত নফল নামায ঘরে আদায় করতেন। সুতরাং এটা যদি তাঁ র ঘরের
নামাযের নিয়ম হত তাহলে তা বর্ণনা করতেন তাঁ র স্ত্রীগণ। কিন্তু তাঁ রা এ বিষয়ে
কিছু ই বর্ণনা করেননি। যাঁ রা বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন তাঁ রা তাঁ র নিকট
রাত্রিযাপন করতেন না এবং তাঁ র ঘরেও প্রবেশ করতেন না। তাঁ রা তো তা-ই বর্ণনা
করেছেন, যা তাঁ কে করতে দেখেছেন তাঁ র পিছনে ফরয নামায আদায়ের সময়।’

‫ ألن أكثر‬،‫ ولو قال قائل إن ذلك في الفريضة دون النافلة‬،‫وكذلك ال وجه للتفرقة بين النافلة والفريضة‬
‫ ولو فعل ذلك في بيته لنقل عنه ذلك أزواجه‬،‫ما كان يتنفل رسول هللا صلى هللا عليه وسلم في بيته ليال‬
‫ ومعلوم أن الذين رووا عنه أنه كان يضع يمينه على يساره في صالته‬،‫ولم يأت عنهن في ذلك شيء‬
،‫ وإنما حكوا عنه ما رأوا منه في صالتهم خلفه في الفرائض‬،‫ وال يلج بيته‬،‫لم يكونوا ممن يبيت عنده‬
‫وهللا أعلم‬.

-প্রাগুক্ত ২০/৭৯

হাত কোথায় বাঁ ধা হবে

তো এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
নামাযে হাত বাঁ ধতেন এবং সাহাবায়ে কেরামও হাত বাঁ ধতেন। এখন প্রশ্ন হল,
কোথায় তাঁ রা হাত বাঁ ধতেন? মৌখিক বর্ণনায় হাত বাঁ ধার মূল প্রসঙ্গ যত
পরিষ্কারভাবে এসেছে কোথায় বাঁ ধতেন তা সেভাবে আসেনি। কেন আসেনি?
আসার প্রয়োজন হয়নি। কারণ সবাই হাত বাঁ ধছেন। কোথায় বাঁ ধছেন তা সবার
সামনেই পরিষ্কার। কাজেই তা মুখে বর্ণনা করার প্রয়োজন হয়নি। তো যে সুন্নাহ
কর্মে ও অনুসরণে ব্যাপকভাবে রয়েছে তা মৌখিক বর্ণনায় সেভাবে নেই। এ ধরনের
ক্ষেত্রে পরের যুগের লোকদের জন্য সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল ও ফতোয়া
সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । কারণ তাঁ রা ঐ সময়ের কর্ম ও অনুশীলনের প্রত্যক্ষদর্শী।
নামাযে হাত বাঁ ধার সুন্নাহর উপর সাহাবা-তাবেয়ীন কীভাবে আমল করেছেন-এ
বিষয়ে ইমাম তিরমিযী রাহ. (২৭৯ হি.) বলেন-

‫ يرون أن‬،‫والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى هللا عليه وسلم والتابعين ومن بعدهم‬
‫ ورأى بعضهم أن‬،‫ ورأى بعضهم أن يضعهما فوق السرة‬،‫يضع الرجل يمينه على شماله في الصالة‬
‫ وكل ذلك واسع عندهم‬،‫يضعهما تحت السرة‬.

অর্থাৎ আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীন ও তাঁ দের পরবর্তী মনীষীগণ এই হাদীসের


উপর (ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরা) আমল করেছেন। তাঁ দের সিদ্ধান্ত এই ছিল যে,
নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে হবে। তাঁ দের কেউ নাভীর উপর হাত
রাখার কথা বলতেন, আর কেউ নাভীর নিচে রাখাকে (অগ্রগণ্য) মনে করতেন।
(তবে) দুটো নিয়মই তাঁ দের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল।-জামে তিরমিযী ১/৩৪

বস্ত্তত এটা হচ্ছে হাত বাঁ ধার হাদীসসমূহের ব্যাখ্যা ও প্রায়োগিক পদ্ধতি। সাহাবা-
তাবেয়ীনের যমানা থেকে এ দুটি নিয়মই চলে আসছে। পরবর্তীতে জুমহূ র ফকীহ ও
মুজতাহিদ ইমামগণ এ দুই নিয়ম গ্রহণ করেছেন। এভাবে উম্মাহর তাওয়ারুছ ও
ব্যাপক চর্চ ার মাধ্যমে নামাযে হাত বাঁ ধার যে নিয়ম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে
পৌঁছেছে তা উল্লেখিত হাদীসসমূহেরই ব্যবহারিক রূপ। এ কারণে পরবর্তী যুগে
বিচ্ছিন্ন কোনো নিয়ম আবিষ্কার করে তাকে হাদীস শরীফের উপর আরোপ করা
হাদীসের তাহরীফ ও অপব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছু ই নয়।

নাভীর নিচে হাত বাঁ ধা

উপরোক্ত দুই নিয়মের মাঝে নাভীর নিচে হাত বাঁ ধার নিয়মটি রেওয়ায়েতের বিচারে
অগ্রগণ্য। ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. (২৩৮ হি.) বলেছেন, ‘নাভীর নিচে হাত
বাঁ ধা রেওয়ায়েতের বিচারে অধিক শক্তিশালী এবং ভক্তি ও বিনয়ের অধিক
নিকটবর্তী।’

‫تحت السرة أقوى في الحديث تحت السرة أقوى في الحديث وأقرب إلى التواضع‬
তাবেয়ী আবু মিজলায লাহিক ইবনে হুমাইদ রাহ. (মৃত্যু : ১০০ হি.-এর পর) নামাযে
কোথায় হাত বাঁ ধবে-এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘ডান হাতের পাতা বাম হাতের
পাতার পিঠের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস :
৩৯৬৩

এই রেওয়ায়েতের সনদ সহীহ।

সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই –

‫ قلت‬: ‫ سمعت أبا مجلز ـ أو سألته ـ قال‬: ‫ أخبرنا الحجاج بن حسان قال‬: ‫حدثنا يزيد بن هارون قال‬
‫ يضع باطن كف يمنيه على ظاهر كف شماله ويجعلها أسفل من السرة‬: ‫كيف أصنع؟ قال‬.

বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.ও (মৃত্যু : ৯৬ হি.) এই ফতোয়া


দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-
মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬০

এই রেওয়ায়েতের সনদ হাসান। সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই-

‫ يضع يمينه على شماله في الصالة تحت‬: ‫ عن إبراهيم قال‬،‫ عن أبي معشر‬،‫ عن ربيع‬،‫حدثنا وكيع‬
‫السرة‬.

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশশাইবানী রাহ. (১৮৯ হি.) বর্ণনা করেছেন যে,
ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. নাভীর নিচে হাত বাঁ ধতেন। এরপর তিনি বলেন,
‘আমরা এই নিয়মই অনুসরণ করি এবং এটিই (ইমাম) আবু হানীফার সিদ্ধান্ত।’-
কিতাবুল আছার, হাদীস : ১২১

সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-

‫ أنه كان يضع يده اليمنى على يده‬: ‫ عن إبراهيم‬،‫ عن أبي معشر‬،‫ أخبرنا الربيع بن صبيح‬: ‫قال محمد‬
‫ باب الصالة‬،‫ (كتاب الصالة‬.‫ وبه نأخذ وهو قول أبي حنيفة رحمه هللا‬: ‫ قال محمد‬.‫اليسرى تحت السرة‬
)‫قاعدا والتعمد على شيء أو يصلي إلى سترة‬
প্রসঙ্গত আগেই বলা হয়েছে যে, সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল হচ্ছে হাত বাঁ ধা
সংক্রান্ত মারফূ হাদীসসমূহের ব্যবহারিক রূপ। এ কারণে মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান
রাহ. ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ-এর সূত্রে হাত বাঁ ধার মরফূ হাদীস বর্ণনা করার
পর এই নিয়ম দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন।

রেওয়ায়েতটি এই-

‫ عن حماد عن إبراهيم أن رسول هللا صلى هللا عليه وسلم كان يعتمد بإحدى يديه على‬،‫أخبرنا أبو حنيفة‬
‫ تحت‬،‫ ويضع بطن كفه األيمن على رسغه األيسر‬: ‫ قال محمد‬.‫ يتواضع هلل تعالى‬،‫األخرى في الصالة‬
‫ باب الصالة قاعدا والتعمد على‬،‫ كتاب الصالة‬،‫ (كتاب األثار‬،‫ فيكون الرسغ في وسط الكف‬،‫السرة‬
)‫شيء أو يصلي إلى سترة‬

ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি


ওয়াসাল্লাম নামাযে এক হাতের উপর অন্য হাত বাঁ ধতেন। এভাবে তিনি আল্লাহর
সামনে বিনীত হতেন।’

(ইমাম) মুহাম্মাদ বলেন, ‘ডান হাতের তালু বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে, নাভীর
নিচে; সুতরাং কব্জি থাকবে হাতের তালুর মাঝে।’-কিতাবুল আছার, হাদীস : ১২০

খাইরুল কুরূন ও পরবর্তী যুগের হাদীস ও ফিকহের বিখ্যাত ইমামগণও নাভীর


নিচে হাত বাঁ ধার নিয়ম গ্রহণ করেছেন।

ইমাম ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ. (৬২০ হি.) বলেন, নামাযে কোথায় হাত বাঁ ধা হবে এ
বিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনা আছে। (ইমাম) আহমদ রাহ. থেকে বর্ণিত, দুই হাত নাভীর
নিচে রাখবে। এটি (হযরত) আলী রা., আবু হুরায়রা রা., আবু মিজলায রাহ.,
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ., (সুফিয়ান) ছাওরী রাহ., ইসহাক (ইবনে রাহুয়াহ) রাহ. থেকে
বর্ণিত।-আলমুগনী ২/১৪১

উল্লেখ্য, ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ. ‘আলমুগনী’তে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.
থেকে মোট তিনটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন। তবে মূল মতন অর্থাৎ
‘মুখতাসারুল খিরাকী’তে শুধু নাভীর নিচে হাত বাঁ ধার কথাই বলা হয়েছে।
আরবী পাঠ-‫ويجعلهما ويجعلهما تحت سرته‬

‘মুখতাসারে’র ভূ মিকায় লেখক ইমাম আবুল কাসিম উমার ইবনুল হুসাইন


আলখিরাকী (৩৩৪ হি.) বলেছেন, ‘আমি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর
মাযহাব অনুসারে (শরীয়তের মাসাইল) এই কিতাবে সংকলন করেছি।’

‫اختصرت هذا الكتاب ليقرب على متعلمه على مذهب أبي عبد هللا أحمد بن محمد بن حنبل رضي هللا‬
‫عنه‬.

-আলমুগনী ১/৭-৮

শায়খ আবুল হুসাইন ইয়াহইয়া ইবনে আবুল খায়ের রাহ. (মৃত্যু ৫৫৮ হি.) বলেন,
(ইমাম) আবু ইসহাক (আলমারওয়াযী) রাহ. বলেছেন, ‘এক হাত অন্য হাতের উপর
নাভীর নিচে রাখবে।’-আলবায়ান ফী মাযাহিবিল ইমামিশ শাফেয়ী ২/১৭৫

উল্লেখ্য, ইমাম আবু ইসহাক আলমারওয়াযী রাহ. শাফেয়ী মাযহাবের একজন


প্রসিদ্ধ মনীষী। ইমাম শাফেয়ী রাহ. নাভীর উপর (বুকের নিচে) হাত বাঁ ধার নিয়ম
গ্রহণ করলেও আবু ইসহাক মারওয়াযী নাভীর নিচে হাত বাঁ ধার নিয়মকেই অগ্রগণ্য
মনে করেছেন।

ইমাম নববী রাহ. (৬৭৬ হি.) বলেন, (ইমাম) আবু হানীফা, (সুফিয়ান) ছাওরী ও
ইসহাক (ইবনে রাহুয়াহ) বলেন, ‘দুই হাত নাভীর নিচে রাখবে। আমাদের (শাফেয়ী
মাযহাবের) মনীষীদের মধ্যে আবু ইসহাক আলমারওয়াযী রাহ.ও তা গ্রহণ
করেছেন। আর ইবনুল মুনযির তা বর্ণনা করেছেন আবু হুরায়রা, (ইবরাহীম)
নাখায়ী ও আবু মিজলায রাহ. থেকে।

তিনি আরো বলেন, ‘আলী ইবনে আবী তালিব রা. থেকে দুটি রেওয়ায়েত আছে :
এক. নাভীর উপর হাত বাঁ ধা, দুই. নাভীর নিচে হাত বাঁ ধা।
-আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৪/৩৩০

উল্লেখ্য, জনৈক গবেষক একটি রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে,
ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. নামাযে বুকের উপর হাত বাঁ ধার অনুসারী
ছিলেন। কিন্তু তার এই প্রয়াস যথার্থ নয়। কারণ হাদীস ও ফিকহের বিখ্যাত
মনীষীগণ ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি
নাভীর নিচে হাত বাঁ ধার নিয়ম গ্রহণ করেছেন। ইবনুল মুনযির রাহ. (৩১৮ হি.) স্বয়ং
ইসহাক ইবনে রাহুয়াহর দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য উদ্ধৃ ত করেছেন যে, ‘নাভীর নিচে হাত বাঁ ধা
রেওয়ায়েতের বিচারে শক্তিশালী এবং ভক্তি ও বিনয়ের অধিক নিকটবর্তী।’

সুতরাং এখানে সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। আর যে রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে


বলা হয়েছে, তিনি বুকের উপর হাত বাঁ ধতেন ঐ রেওয়ায়েতেও তা নিশ্চিতভাবে
বলা হয়নি। বলা হয়েছে, তিনি বিতর নামাযে বুকের উপর হাত বাঁ ধতেন বা বুকের
নিচে।

আরবী পাঠ-

‫كان إسحاق يوتر بنا … ويضع يديه على ثدييه أو تحت الثديين‬.

আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি যে, নাভীর নিচে ও নাভীর উপরে (বুকের নিচে)
দু’জায়গায় হাত বাঁ ধার নিয়মই সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগে ছিল। তাঁ রা একটিকে
অগ্রগণ্য মনে করলেও কেউ অন্যটিকে অনুসরণযোগ্য মনে করতেন। তো ইসহাক
ইবনে রাহুয়াহ রাহ. যদি নাভীর নিচে হাত বাঁ ধাকে অগ্রগণ্য মনে করার পর কখনো
কখনো নাভীর উপরে হাত বাঁ ধার নিয়ম অনুসরণ করে থাকেন তাতে আশ্চর্যের কী
আছে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই একটি অস্পষ্ট রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে কোনো
একটি বিচ্ছিন্ন মত কারো উপর আরোপ করার অবকাশ নেই। এটি বরং
আরোপকারীর দলীল-প্রমাণের দৈন্য এবং শুযূয ও বিছিন্নতাকেই প্রকটভাবে
প্রকাশিত করে দেয়।
মূল আলোচনায় ফিরে আসি। এ পর্যন্ত আমরা খাইরুল কুরূন ও পরবর্তী যুগের
হাদীস ও ফিকহের বিখ্যাত ইমামগণের ফতোয়া ও আমল লক্ষ্য করেছি। এ থেকে
প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবা-তাবেয়ীনের যমানায় নাভীর নিচে হাত বাঁ ধার নিয়ম
ব্যাপকভাবে অনুসৃত হয়েছে, যা হাত বাঁ ধার মরফূ হাদীসমূহেরই ব্যাখ্যা ও
ব্যবহারিক রূপ।

নাভীর নিচে হাত বাঁ ধা যেমন সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল ও ফতোয়া দ্বারা প্রমাণিত
তেমনি মারফূ রেওয়ায়েতের সূত্রেও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত।

নাভীর নিচে হাত বাঁ ধার মারফূ রেওয়ায়েত

১. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নীচে
রেখেছেন।

সনদসহ রেওয়ায়েতের আরবী পাঠ এই-

‫ رأيت النبي صلى هللا‬: ‫ عن أبيه قال‬،‫ عن علقمة بن وائل بن حجر‬،‫ عن موسى بن عمير‬،‫حدثنا وكيع‬
‫عليه وسلم يضع يمينه على شماله في الصالة تحت السرة‬.

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৫১

এই বর্ণনার সনদ সহীহ। ইমাম কাসেম ইবনে কুতলূবুগা রাহ. (৮৭৯ হি.) বলেন-
‫ وهذاإسناد جيد‬এটি একটি উত্তম সনদ।-আততা’রীফু ওয়াল ইখবার রিতাখরীজি
আহাদীছিল ইখতিয়ার-হাশিয়া শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা

উল্লেখ্য, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবার একাধিক পান্ডু লিপিতে হাদীসটি এভাবেই
অর্থাৎ ‫( ةحةالسرة‬নাভীর নিচে) কথাটাসহ আছে। এর মধ্যে ইমাম মুরতাযা
আযাবীদী-এর পান্ডু লিপি ও ইমাম আবিদ আসসিন্দী রাহ.-এর পান্ডু লিপি
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইমাম কাসিম ইবনে কুতলূবুগা রাহ., আল্লামা আবদুল
কাদির ইবনে আবু বকর আসসিদ্দীকি ও আল্লামা মুহাম্মাদ আকরাম সিন্ধীর
পান্ডু লিপিতেও হাদীসটি এভাবে আছে। পক্ষান্তরে অন্য কিছু পান্ডু লিপিতে এই
বর্ণনায় ‫( ةحة السرة‬নাভীর নিচে) কথাটা নেই। এ কারণে ভারতবর্ষে মুদ্রিত মুসান্নাফ
ইবনে আবী শাইবার পুরানো সংস্করণে এই হাদীসে ‫( ةحة السرة‬নাভীর নিচে) অংশটি
ছিল না। বর্ত মানে মদীনা মুনাওয়ারার বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস শায়খ মুহাম্মদ
আওয়ামার তাহকীক-সম্পাদনায় মুসান্নাফের যে মুদ্রণ পাঠক-গবেষকদের কাছে
পৌঁছেছে তাতে হাদীসটি ‫( ةحة السرة‬নাভীর নিচে) অংশসহ রয়েছে। কারণ শায়খের
সামনে প্রথমোক্ত পান্ডু লিপি দুটিও ছিল। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর
শায়খ বলেন-

‫ معذور في عدم‬: ‫ التي ليست فيها هذه الجملة‬.‫ ش‬.‫ ن‬.‫ ظ‬.‫ومن نقل الحديث من إحدى النسخ األربع خ‬
‫ ومن نقله عن إحدى النسختين اللتين فيهما هذه‬،‫ ولكنه ليس معذورا في نفي ورودها‬،‫إثبات هذه الزيادة‬
‫ بل واجب عليه ذلك وال يجوز لها حذفها فعلى م التنابز والتنابذ؟‬،‫الزيادة هو معذور في إثباتها‬

উৎসাহী আলিমগণ শায়খের পূর্ণ আলোচনা মুসান্নাফের টীকায় দেখে নিতে


পারেন।

উল্লেখ্য, যারা মুআম্মাল ইবনে ইসমাইলের মুনকার রেওয়ায়েত অবলীলায় গ্রহণ


করেন তাদের তো এই রেওয়ায়েত গ্রহণে দ্বিধা থাকার কথা নয়। কারণ এক. এই
রেওয়ায়েতের সনদ ইবনে খুযায়মার ঐ রেওয়ায়েতের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।
দুই. ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে অন্য সূত্রে বর্ণিত কিছু রেওয়ায়েতেও এর বেশ
সমর্থন পাওয়া যায়। ইমাম তবারানী রাহ. হুজর আবুল আম্বাসের সূত্রে ওয়াইল
ইবনে হুজর রা.-এর এই বিবরণ উল্লেখ করেছেন। তাতে আছে, ‘তিনি তার ডান
হাত বাম হাতের উপর রাখলেন এবং তা রাখলেন পেটের উপর।’

সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-

‫ سمعت حجرا أبا العنبس‬: ‫ بن نصير ثنا شعبة عن سلمة بن كهيل قال‬Y‫حدثنا أبو مسلم الكشي ثنا حجاج‬
‫ ثم وضع يده اليمنى على‬،… ‫يحدث عن وائل الحضرمي أنه صلى مع رسول هللا صلى هللا عليه وسلم‬
‫اليسرى وجعلها على بطنه‬.
-আলমুজামুল কাবীর ২২/৪৪, হাদীস : ১১০

তেমনি সুনানে দারেমী ও আলমু’জামুল কাবীর তবারানীতে আবদুল জাববার


ইবনে ওয়াইলের সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর যে বিবরণ বর্ণিত হয়েছে, তাতে
আছে, ‘তিনি ডান হাত বাম হাতের উপর কব্জির কাছে রাখলেন।’ সনদসহ
রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-

،‫ ثنا زهير‬،‫ أخبرنا أبو نعيم‬: )‫قال اإلمام الدارمي في السنن (باب وضع اليمين على الشمال في الصالة‬
‫ رأيت رسول هللا صلى هللا عليه وسلم يضع‬: ‫ عن أبيه قال‬،‫ عن عبد الجبار بن وائل‬،‫عن أبي إسحاق‬
‫ انتهى‬.‫يده اليمنى على اليسرى قريبا من الرسغ‬

‫ عن‬،‫ ثنا إسماعيل بن عياش‬،‫ ثنا عمرو بن عثمان الحمصي‬،‫ورواه الطبراني بطريق عبدان بن أحمد‬
‫يونس بن أبي إسحاق عن أبي إسحاق به‬.

-সুনানে দারেমী ১/২২৮; আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ২২/২৫, হাদীস : ৫২

এই রেওয়ায়েতগুলো সামনে রাখলে বোঝা যায়, আসিম ইবনে কুলাইবের সূত্রে


ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর যে বিবরণ যাইদা ইবনে কুদামা বর্ণনা করেছেন, যাতে
‘ডান হাত বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর’ রাখার কথা আছে, তার
অর্থ ‘বাহু বাহুর উপর’রাখা নয়; বরং ডান হাতের পাতা এমনভাবে রাখা যে, তা
বাম হাতের পাতা, কব্জি ও বাহুর কিছু অংশের উপর থাকে। এ সম্পর্কে আমরা
বিস্তারিত আলোচনা করব বুকের উপর হাত বাঁ ধার মতটি পর্যালোচনা করার সময়
ইনশাআল্লাহ।

নাভীর নিচে হাত বাঁ ধার বিষয়ে জয়ীফ সনদে বর্ণিত কিছু রেওয়ায়েতও আছে।
তবে রেওয়ায়েতগুলোর বিষয়বস্ত্ত উপরে বর্ণিত হাদীস, আছার ও আমলে
মুতাওয়ারাছ দ্বারা সমর্থিত।
২. হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সুন্নাহ হচ্ছে নামাযে হাতের পাতা
হাতের পাতার উপর নাভীর নিচে রাখা।’-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৮৭৫; সুনানে
আবু দাউদ, হাদীস : ৭৫৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬৬

সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই-

‫ عن‬،‫ عن زياد بن زيد‬،‫ عن عبد الرحمن بن إسحاق‬،‫ حدثنا حفص بن غياث‬،‫حدثنا محمد بن محبوب‬
‫ السنة وضع الكف على الكف في الصالة تحت السرة‬: ‫أبي جحيفة أن عليا رضي هللا عنه قال‬.

‫ وابن داسة‬،‫ هذا الحديث في رواية ابي سعيد بن األعرابي‬،٨/٤٥٨ ‫قال المزي في تحفة األشراف‬
‫ ولم يذكره أبو القاسم‬،‫وغير واحد عن أبي داود‬.

৩. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘নামাযে হাতের পাতাসমূহ দ্বারা
হাতের পাতাসমূহ নাভীর নীচে ধরা হবে।’

সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-

‫ عن‬،‫ عن سيار أبي الحكم‬،‫ عن عبد الرحمن بن إسحاق الكوفي‬،‫ حدثنا عبد الواحد بن زياد‬،‫حدثنا مسدد‬
‫ أخذ األكف على األكف في الصالة تحت السرة‬: ‫ قال أبو هريرة رضي هللا عنه‬: ‫أبي وائل قال‬.

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭৫৮, তাহকীক : শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামাহ;


তু হফাতু ল আশরাফ, হাদীস : ১৩৪৯৪

এই দুই রেওয়ায়েতের সনদে আবদুর রহমান ইবনে ইসহাক নামক একজন রাবী
আছেন। ইমাম তিরমিযী রাহ. তার সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসকে হাসান বলেছেন।
দেখুন : জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩৪৬২; আরো দেখুন : হাদীস ২৫২৭

আবদুর রহমান ইবনে ইসহাকের সূত্রে হাদীসটি (২৫২৬) বর্ণনা করার পর ইমাম
তিরমিযী বলেন, কোনো কোনো মনীষী এই আবদুর রহমান ইবনে ইসহাকের
স্মৃতিশক্তি সম্পর্কে সমালোচনা করেছেন। আরবী পাঠ-
‫ وعبد‬،‫ا هذا حديث غريب وقد تكلم بعض أهل العلم في عبد الرحمن هذا من قبل حفظه وهو كوفي‬
‫ انتهى‬.‫الرحمن بن إسحاق القرشي مديني وهو أثبت من هذا‬

উল্লেখ্য, শায়খ আলবানী রাহ.ও আবদুর রহমান ইবনে ইসহাকের সূত্রে বর্ণিত
একটি হাদীসকে শাওয়াহেদের (অন্যান্য বর্ণনার সমর্থনের) কারণে সিলসিলাতু স
সহীহায় উল্লেখ করেছেন। দেখুন : সিলসিলাতু স সহীহা হাদিস

৪. আনাস রা. থেকে বর্ণিত, ‘তিনটি বিষয় (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
এর) নবী-স্বভাবের অন্তর্ভু ক্ত: ইফতারে বিলম্ব না করা, সাহরী শেষ সময়ে খাওয়া
এবং নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নিচে রাখা।’

‫ ووضع اليد اليمنى على اليسرى في الصالة‬،‫ وتأخير السحور‬،‫ تعجيل األفظار‬: ‫ثالث من أخالق النبوة‬
‫تحت السرة‬.

-আলমুহাল্লা ৩/৩০; আলজাওহারুন নাকী ২/৩১

উল্লেখ্য, ইবনে হাযম রাহ. (৪৫৬ হি.) তাঁ র নামাযে হাত বাঁ ধার আলোচনায় নাভীর
নিচে হাত বাঁ ধার একটি মারফূ হাদীস ও একটি আছর উল্লেখ করেছেন। তবে
সেগুলোর সনদ উল্লেখ করেননি।

পক্ষান্তরে এ আলোচনায় বুকের উপর হাত বাঁ ধার একটি রেওয়ায়েতও উল্লেখ
করেননি, না সনদসহ না সনদ ছাড়া। তদ্রূপ হাত বাঁ ধার নিয়ম উল্লেখ করতে গিয়ে
বলেছেন, ‘মুস্তাহাব হল, নামাযী তার ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে।’

‫ في وقوفه كله فيها‬،‫ويستحب أن يضع المصلي يده اليمنى على كوع يده اليسرى في الصالة‬.

-আলমুহাল্লা ৩/২৯

সারসংক্ষেপ : নামাযে হাত বাঁ ধা সুন্নাহ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি


ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক সাহাবী তা বর্ণনা করেছেন। এই সুন্নাহর ব্যবহারিক রূপ
খাইরুল কুরূনে কী ছিল তা সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল ও ফতোয়া এবং সে যুগ
থেকে চলে আসা ‘আমলে মুতাওয়ারাছ’ দ্বারা প্রমাণিত, যা ইবাদত-বন্দেগীর
সঠিক ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ও শক্তিশালী সূত্র। এ সূত্রে নামাযে হাত
বাঁ ধার দু’টি নিয়ম পাওয়া যায় : নাভীর নিচে হাত বাঁ ধা ও নাভীর উপর (বুকের
নীচে) হাত বাঁ ধা। দু’টো নিয়মই আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীনের কাছে গ্রহণযোগ্য
ছিল, যা ইমাম তিরমিযী রাহ. জামে তিরমিযীতে বর্ণনা করেছেন। তবে
রেওয়ায়েতের বিচারে নাভীর নিচে হাত বাঁ ধার নিয়মটি অগ্রগণ্য। ইমাম ইসহাক
ইবনে রাহুয়াহ রাহ. তা পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন।

খাইরুল কুরূন ও পরবর্তী যুগের হাদীস-ফিকহের বড় বড় ইমাম এই নিয়ম গ্রহণ
করেছেন। এঁদের মধ্যে ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম সুফিয়ান
ছাওরী, ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, ইমাম ইসহাক ইবনে
রাহুয়াহ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপরন্তু বেশ
কিছু মরফূ হাদীসেও নাভীর নিচে হাত বাঁ ধার নিয়ম বর্ণিত হয়েছে।

সুতরাং এটি নামাযে হাত বাঁ ধার মাসনূন তরীকা। এ সম্পর্কে দ্বিধা ও সংশয়ের
কোনো অবকাশ নেই।

====================================

বুকের উপর হাত বাঁ ধা : বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া


আব্দুল্লাহ প্রিন্ট সংস্করণশেয়ার ‘‘নামাযে হাত বাঁ ধা ও নাভীর নিচে হাত বাঁ ধা’’
শীর্ষক লেখায় বলা হয়েছে যে, সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগ থেকে হাত বাঁ ধার দুটো
নিয়ম চলে আসছে : বুকের নীচে হাত বাঁ ধা ও নাভীর নীচে হাত বাঁ ধা। মুসলিম
উম্মাহর বিখ্যাত মুজতাহিদ ইমামগণও এ দুটো নিয়ম গ্রহণ করেছেন। নিকট
অতীতে হাত বাঁ ধার নতু ন কিছু নিয়ম আবিষ্কৃত হয়েছে, যা সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগে
ছিল না এবং কুরআন-সুন্নাহর প্রাজ্ঞ মনীষী ও মুজতাহিদগণের সিদ্ধান্তেও তা
পাওয়া যায় না। বলাবাহুল্য, এসব নিয়ম ‘শুযুয’ ও বিচ্ছিন্নতা বলে গণ্য, যা দ্বীন ও
শরীয়তের বিষয়ে সম্পূর্ণ বর্জনীয়। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা এই যে, সম্প্রতি
এইসব বিচ্যুতি ও বিচ্ছিন্নতাকেই ‘সুন্নাহ’ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে এবং চরম
দায়িত্বহীনতার সাথে সাধারণ মানুষের মাঝেও তা প্রচার করা হচ্ছে। আমরা মনে
করি, সাধারণ মুসলমানদেরকে দলীল-প্রমাণের শাস্ত্রীয় জটিলতার মুখোমুখি করা
অনুচিত, কিন্তু এ সকল অনাচারের প্রতিরোধ ও আম মানুষকে বিভ্রান্তি থেকে
রক্ষার জন্য এখন কিছু বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার বিকল্প নেই। যথাসম্ভব সহজ
ভাষায় আমরা তা উপস্থাপনের চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা
আমাদের সকলকে হেদায়েতের উপর থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।
নামাযে হাত বাঁ ধার ক্ষেত্রে যেসব শুযুয ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায় তার মধ্যে
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সম্পর্কে আলোচনা করা হল। শুযুয ১ : বুকের উপরের
অংশে থুতনীর নিচে হাত রাখা সমসাময়িক গায়রে মুকাল্লিদ আলিমরাও এই
নিয়মকে খন্ডন করেছেন। শায়খ বকর বিন আবদুল্লাহ আবু যায়েদ ‘‘লা জাদীদা
ফী আহকামিস সালাহ’’ পুস্তিকায় আরো কিছু নতু ন নিয়মের সাথে এ নিয়মটিকেও
খন্ডন করেছেন। ভূ মিকায় তিনি লেখেন, ‘আমরা দেখেছি, কিছু লোক কোনো শায
ও বিচ্ছিন্ন মত গ্রহণ করে তার প্রচারে কিংবা কোনো দুর্বল রুখসত ও অবকাশ
গ্রহণ করে তার প্রতিষ্ঠায় সর্বশক্তি নিয়োজিত করে। এদের খন্ডনের জন্য মনীষী
আলিমদের এই নীতিই যথেষ্ট যে, ‘ইলমের ক্ষেত্রে কোনো বিচ্ছিন্ন মত এবং
(বিধানের ক্ষেত্রে) কোনো অপ্রমাণিত অবকাশ সম্পূর্ণ বর্জনীয়। ‘কিন্তু সম্প্রতি যে
দলটির উদ্ভব ঘটেছে, তাদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি, মুসলমানদের প্রতিদিনের
ইবাদত-বন্দেগীর ওয়াজিব-মুস্তাহাব বিষয়ে, যে ইবাদত-বন্দেগী ইসলামের মহান
নিদর্শন ও প্রতীকও বটে, এমন সব ধারণার বিস্তার ঘটছে যেগুলোর সাথে কোনো
যুগে আলিমসমাজের কোনো পরিচিতি ছিল না। অতিনমনীয় ভাষায় বললে, এসব
ধারণার কোনো কোনোটির সূত্র হচ্ছে বহুকাল আগের বর্জিত কিছু মত। ‘আর
কোনো ধারণা পরিত্যক্ত হওয়ার জন্য তো এ-ই যথেষ্ট যে, তা সকল আলিমের
মতামত থেকে বিচ্ছিন্ন। ‘ইসলামের দ্বিতীয় রোকন নামাযের ক্ষেত্রেও এমন নতু ন
কিছু কাজ ও অবস্থা আবিষ্কার করা হয়েছে, যার কোনোটা নামাযীকে একটা
অস্বাভাবিক রূপ দান করে, অথচ আল্লাহ তাআলা তাঁ র রাসূল সম্পর্কে বলেছেন-
‫ …‘ وما انا من المتكلفين‬এবং আমি ভনিতাকারীদের অন্তর্ভু ক্ত নই।’-সূরা সোয়াদ (৩৮)
: ৮৬ ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‫بعثت بالحنيفية السمحة‬
‘তেমনি তা নামাযীর মাঝে একটা উদ্যত ভঙ্গি সৃষ্টি করে, অথচ নামায হচ্ছে আপন
রব ও মাবুদের সামনে বান্দার বিনয় ও অক্ষমতার অবস্থা! ‘কোনো কোনো ধারণার
অর্থ দাঁ ড়ায়, ইসলামের প্রথম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত গোটা মুসলিম উম্মাহ ছিল
সুন্নাহ বর্জনকারী ও সুন্নাহ থেকে বিচ্যুত। অন্যভাষায়, তারা ছিল সম্মিলিতভাবে
পাপী ও অপরাধী। ‘তো এই সকল ভ্রান্তির কারণ কী? ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে
সুন্নাহ বোঝার ক্ষেত্রে অতিশয়তা, আর কখনো (আরবী) ভাষার বাকরীতি ও
হাদীস-ফিকহের মূলনীতি সম্পর্কে উদাসীনতা। ‘এই সকল বিভ্রান্তি হচ্ছে দলীলের
বিষয়ে মূলনীতি বর্জনের এবং নামাযের স্বাভাবিক অবস্থা ও ফিকহ-খিলাফিয়াতের
কিতাব থেকে বিমুখতার কুফল। অথচ ঐ সকল কিতাবে আহকাম ও বিধানের
তত্ত্ব, কারণ ও বিশেষজ্ঞদের মতভিন্নতার আলোচনা থাকে। …’-লা জাদীদা ফী
আহকামিস সালাহ পৃ. ৩-৪ বুকের উপরের অংশে গলদেশে হাত বাঁ ধার ‘দলীল’
সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা কুরআন মজীদের আয়াত-
‫ فصل لربك وانحر‬-এর তাফসীরে আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণনা করা
হয়। বায়হাকী তা বর্ণনা করেছেন (২/৩১) এবং তার সূত্রে তাফসীরের বিভিন্ন
কিতাবে তা বর্ণিত হয়েছে। যেমন দেখুন : আদ্দুররুল মানছূ র ৮/৬৫০-৬৫১ ‘এই
রেওয়ায়েত সহীহ নয়। কারণ এর সনদে রওহ ইবনুল মুসাইয়াব আলকালবী নামক
একজন রাবী আছেন। তার সম্পর্কে দেখুন : আলমাজরূহীন ১/২৯৯ সূরায়ে
কাওসারের ঐ আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে সঠিক কথা এই যে, তার অর্থও তা-ই
যা নিম্নোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে- ‫قل ان صالتى ونسكى ومحياى ومماتى هلل رب العالمين‬
(বল, আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ আল্লাহর
জন্য, যিনি রাববুল আলামীন।’ অর্থাৎ ঐ আয়াতে ‫ وانحر‬অর্থ কুরবানী, গলদেশে
হাত রাখা নয়।) ‘ইবনে জারীর এই তাফসীরকেই সঠিক বলেছেন এবং ইবনে
কাছীর তা সমর্থন করেছেন। তাঁ র মন্তব্য-এটি অতি উত্তম (ব্যাখ্যা)।’-লা জাদীদা ফী
আহকামিস সালাহ, বকর আবু যায়েদা পৃ. ৯ উপরে যে রেওয়ায়েতের দিকে ইঙ্গিত
করা হয়েছে তার পূর্ণ আরবী পাঠ সনদসহ তু লে দেওয়া হল- ‫أخبرنا أبو زكريا بن أبي‬
‫ ثنا روح بن‬،‫ انبأ زيد بن الحباب‬،‫ انبأ يحي بن أبي طالب‬،‫ أنبأ الحسن بن يعقوب بن البخاري‬،‫اسحاق‬
‫ حدثني عمرو بن مالك النكري عن أبي الجوزاء عن ابن عباس رضي هللا عنهما في‬: ‫ قال‬،‫المسيب‬
‫ وضع اليمين على الشمال في الصالة عند النحر‬: ‫قول هللا عز وجل “فصل لربك وانحر” قال‬.
-সুনানে বায়হাকী ২/৩০-৩১ রওহ ইবনুল মুসাইয়্যাব সম্পর্কে ইবনে হিববান রাহ.
(৩৫৪ হি.) বলেন, ‘সে ছিকা রাবীদের সূত্রে মওযু রেওয়ায়েত বর্ণনা করে। তার
থেকে বর্ণনা করা বৈধ নয়।’ ‫ يروي الموضوعات عن الثقات ال تحل الرواية عنه‬-কিতাবুল
মাজরূহীন ইবনে আদী বলেন, ‘সে ছাবিত ও ইয়াযীদ আররাকাশী থেকে এমন সব
রেওয়ায়েত বর্ণনা করে, যা মাহফুয নয় (সঠিক নয়)।’ ‫يروي عن ثابت ويزيد الرقاشي‬
‫ أحاديث غير محفوظة‬-আলকামিল ফী জুয়াফাইর রিজাল ৩/১৪৩ আরো দেখুন :
মীযানুল ইতিদাল ২/৫৭; লিসানুল মীযান ২/৪৬৮ সারকথা : এই রেওয়ায়েত
নির্ভ রযোগ্য নয়। আর এর দ্বারা উপরোক্ত আয়াতের তাফসীর করা তো
কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আয়াতের সঠিক তাফসীর তা-ই যা ইবনে জারীর
তাবারী রাহ. গ্রহণ করেছেন এবং ইবনে কাছীর যাকে ‘অতি উত্তম’ বলেছেন।
শুযুয ২ : নামাযে যিরার উপর যিরা রাখা আরবীতে হাতের আঙু লের মাথা থেকেই
কনুই পর্যন্ত অংশকে ‘যিরা’ বলে। সম্প্রতি কিছু মানুষ যিরার উপর যিরা রাখাকে
সুন্নাহ মনে করেন এবং ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতা, কব্জি ও যিরার উপর
না রেখে ডান হাতের যিরা বাম হাতের যিরার উপর রাখেন। হাত বাঁ ধার ক্ষেত্রে
এটাও একটা বিভ্রান্তি ও বিচ্ছিন্নতা। কোনো সহীহ হাদীসে যিরার উপর যিরা রাখার
কথা নেই, সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগেও এর কোনো অস্তিত্ব ছিল না এবং কোনো
মুজতাহিদ ইমাম এই নিয়মের কথা বলেননি। যারা একে সুন্নাহ মনে করেন তারা এ
বিষয় কোনো সহীহ-সরীহ নস (বিশুদ্ধ ও দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য) উপস্থাপন করতে
পারেননি। তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী দলীল হচ্ছে, দুটো সহীহ হাদীসের ভু ল
ব্যাখ্যা। নীচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হল। প্রথম হাদীস : সাহল ইবনে সাদ রা.
থেকে বর্ণিত, ‘লোকদেরকে আদেশ করা হত, পুরুষ যেন তার ডান হাত বাম যিরার
উপর রাখে।’ হাদীসটির আরবী পাঠ এই- ‫كان الناس يؤمرون أن يضع الرجل اليد اليمنى‬
‫ ال أعلمه إال ينمى ذلك إلى النبي صلى هللا عليه وسلم‬: ‫ قال أبو حازم‬.‫على ذراعه اليسرى في الصالة‬.
-মুয়াত্তা মালিক পৃ. ৫৫ ; সহীহ বুখারী ১/১০৪ এই হাদীসে যিরার উপর যিরা রাখার
কথা নেই। বাম যিরার উপর ডান হাত রাখার কথা আছে। দ্বিতীয় হাদীস : ওয়াইল
ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত হাদীসের একটি পাঠ। তাতে আছে, ‘(আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁ র ডান হাত বাম হাতের পাতা, কব্জি ও যিরার
উপর রাখলেন।’ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই- ‫ثم وضع يده اليمنى على ظهر كفه‬
‫ اليسرى والرسغ والساعد‬-মুসনাদে আহমদ ৩১/১৬০, হাদীস : ১৮৮৭০; সুনানে আবু
দাউদ ১/৪৮৩, হাদীস : ৭২৭ এই বর্ণনাতেও বলা হয়নি ডান যিরা রেখেছেন। বলা
হয়েছে, ডান হাত রেখেছেন। এই দুই হাদীসে ডান হাত অর্থ ডান হাতের যিরা-এর
কোনো প্রমাণ নেই; বরং এই ব্যাখ্যা করা হলে তা হবে এই দুই হাদীসের শায ও
বিচ্ছিন্ন ব্যাখ্যা। কারণ হাদীস ও ফিকহের নির্ভ রযোগ্য কোনো ইমাম ও ভাষ্যকার
এই ব্যাখ্যা করেননি। উল্লেখিত পাঠটি কি ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের
মূল পাঠ ওয়াইল ইবনে হুজর রা. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-
এর পিছনে নামায পড়েছেন এবং যেভাবে তাঁ কে নামায পড়তে দেখেছেন তা বর্ণনা
করেছেন। তাঁ র এই বিবরণ বেশ কয়েকজন রাবীর সূত্রে পাওয়া যায়। যেমন : ১.
আলকামা ইবনে ওয়াইল ২. আবদুল জাববার ইবনে ওয়াইল। (এরা দু’জন ওয়াইল
ইবনে হুজর রা.-এর পুত্র। আবদুল জাববার ইবনে ওয়াইল তার বড় ভাই আলকামা
ইবনে ওয়াইল রাহ. থেকেই পিতার বিবরণ গ্রহণ করেছেন। দেখুন : সহীহ মুসলিম
ফাতহুল মুলহিম ২/৩৯) ৩. হুজর ইবনুল আম্বাস, ৪. কুলাইব ইবনে শিহাব, প্রমুখ।
শেষোক্ত কুলাইব ইবনে শিহাব রাহ.-এর বর্ণনাই আমাদের আলোচ্য বিষয়। কুলাইব
ইবনে শিহাব থেকে বর্ণনা করেছেন তার পুত্র আসিম ইবনে কুলাইব রাহ.। আসিম
ইবনে কুলাইব রাহ. থেকে অনেক রাবী এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেমন শো’বা
ইবনুল হাজ্জাজ বিশর ইনুল মুফাদ্দাল কায়স ইবনুর রাবী আবদুল ওয়াহিদ ইবনে
যিয়াদ খালিদ ইবনু আবদিল্লাহ আবু ইসহাক আবুল আহওয়াস আবদুল্লাহ ইবনে
ইদরীস মুসা ইবনে আবী আয়েশা আবু আওয়ানা ও যাইদা ইবনে কুদামা প্রমুখ।
শেষোক্ত রাবী যাইদা ইবনে কুদামা-এর বর্ণনার পাঠ সকলের চেয়ে আলাদা। এ
কারণে তার পাঠকে আসিম ইবনে কুলাইবের বর্ণনার মূল পাঠ সাব্যস্ত করা
যুক্তিসঙ্গত নয়। এই সকল বর্ণনা সামনে রাখলে প্রতীয়মান হয়য, ওয়াইল ইবনে
হুজর রা.-এর হাদীস থেকে যিরার উপর যিরার নিয়ম গ্রহণ করার অবকাশ নেই।
কারণ : এক. আগেই বলা হয়েছে, আসিম ইবনে কুলাইব থেকে অন্যান্য ছিকা রাবী
উপরোক্ত শব্দে বর্ণনা করেননি। যাইদার রেওয়ায়েতের পাঠ তাদের সবার
রেওয়ায়েতের পাঠ থেকে আলাদা। সুতরাং যাইদার বর্ণনার উপর ভিত্তি করে
একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না যে, এটিই আসিম ইবনে কুলাইবের পাঠ। অর্থাৎ
আসিম ইবনে কুলাইব হুবহু এই শব্দে বর্ণনা করেছেন। দুই. আলোচিত হাদীসের
মূল রাবী হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা.। আসিম ইবনে কুলাইবের সূত্র ছাড়া
আরো বেশ কিছু সূত্রে তাঁ র বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে। সেসব রেওয়ায়েতের পাঠও
যাইদার পাঠের চেয়ে আলাদা। সুতরাং তাঁ র পাঠটিকেই ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-
এর বিবরণের মূল পাঠ সাব্যস্ত করা যুক্তিসঙ্গত নয়। তিন. যাইদার পাঠটিও
স্পষ্টভাবে ‘যিরার উপর যিরার’ নিয়ম নির্দে শ করে না; বরং সামান্য চিন্তা করলেই
বোঝা যায়, এই পাঠের অর্থও তা-ই যা এ হাদীসের অন্য সকল পাঠ থেকে গ্রহণ
করা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে পূর্ণ ‘সায়িদ’ (যিরা) উদ্দেশ্য নয়। সায়িদের কিছু অংশ
উদ্দেশ্য, যা কব্জি সংলগ্ন। চার. আসিম ইবনে কুলাইবের বিবরণ বহু সনদে বর্ণিত
হয়েছে। এসব বিবরণের মৌলিক পাঠ দু’ ধরনের : ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরা
এবং ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা। যেসব রেওয়ায়েতে ‫ أخذ‬বা ‫( إمساك‬ধরা) শব্দ
আছে সেখানে হাত দ্বারা যে হাতের পাতা উদ্দেশ্য তা তো বলাই বাহুল্য। আর যেসব
রেওয়ায়েতে ‫( وضع‬রাখা) শব্দ আছে সেখানে কনুই পর্যন্ত হাত বোঝানো হয়েছে-এই
দাবি যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ এর অর্থ হবে আসিম ইবনে কুলাইব রাহ. ওয়াইল
ইবনে হুজরের যে বিবরণ উল্লেখ করেছেন, পরবর্তী রাবীদের বর্ণনায় শব্দগত
পার্থক্যের কারণে একে দুই বিবরণ ধরে নেওয়া হয়েছে : একটি হল, ডান হাতের
পাতা দ্বারা বাম হাত ধরা। আরেকটি ডান যিরা বাম যিরার উপর বিছিয়ে রাখা!
এক্ষেত্রে সঠিক ও যুক্তিসঙ্গত চিন্তা হচ্ছে, যেসব বর্ণনায় ‘ডান হাত রাখা’ আছে
তারও অর্থ ডান হাতের পাতা রাখা, কনুই পর্যন্ত রাখা নয়। পাঁ চ. এটা আরো
শক্তিশালী হয় যখন দেখা যায়, এ হাদীসের অসংখ্য বর্ণনার মাঝে একটি সহীহ
রেওয়ায়েতেও ‘ডান হাতের যিরা’ বাম হাতের উপর রেখেছেন এমন কথা পাওয়া
যায় না। সুতরাং যিরার উপর যিরা একটা আরোপিত ব্যাখ্যা, হাদীস শরীফের সাথে
যার কোনো সম্পর্ক নেই। এ কারণেই হাদীস ও ফিকহের কোনো নির্ভ রযোগ্য ইমাম
থেকে হাদীসের এই ব্যাখ্যা এবং হাত বাঁ ধার এই নিয়ম বর্ণনা করা তাদের পক্ষে
সম্ভব হয়নি। সুতরাং দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়, উপরোক্ত নিয়মটি যেমন হাত বাঁ ধার
বিচ্ছিন্ন ও নবউদ্ভাবিত একটি নিয়ম তেমনি এই নিয়ম দ্বারা হাদীস শরীফের
ব্যাখ্যাও একটি শায ও বিচ্ছিন্ন ব্যাখ্যা। ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ কী ব্যাখ্যা করেছেন
যাইদা ইবনে কুদামার এই পাঠ হাদীস ও ফিকহের প্রাচীন গ্রন্থসমূহে উদ্ধৃ ত হয়েছে।
বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ তার অর্থ করেছেন ডান হাতের পাতা বাম হাতের
পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর কিছু অংশের উপর রাখা। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে
ইসহাক ইবনে খুযায়মা রাহ. (৩১১ হি.) সহীহ ইবনে খুযায়মায় হাদীসের এই পাঠ
বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ‘যিরার উপর যিরা’র অর্থ গ্রহণ করেননি। তিনি এই হাদীসের
উপর শিরোনাম দিয়েছেন- ‫باب وضع بطن الكف اليمنى على كف اليسرى والرسغ والساعد‬
‫جميعا‬. অর্থাৎ ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখা।
(দেখুন : সহীহ ইবনে খুযায়মা ১/২৭২, বাব : ৯০) বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ
বলেছেন, নামাযে হাত এমনভাবে রাখা উচিত, যাতে ডান হাতের পাতা বাম হাতের
পাতার কিছু অংশ, কব্জি ও বাহুর কিছু অংশের উপর থাকে। তাঁ রা ওয়াইল ইবনে
হুজর রা.-এর হাদীসের এই পাঠ এবং হযরত সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসকে
দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ. (৬২০ হি.) বলেন,
(নামাযে) ডান হাত বাম হাতের কব্জি ও তৎসংলগ্ন অংশের উপর রাখা মুস্তাহাব।
কারণ হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামাযের বিবরণ দিয়েছেন এবং সে
বিবরণে বলেছেন, ‘অতপর তিনি তাঁ র ডান হাত রাখলেন তার বাম হাতের পাতার
পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর।’ ‫ويستحب أن يضعهما على كوعه وما يقاربه لما روى وائل بن‬
‫ ثم وضع يده اليمنى على ظهر كفه‬: ‫حجر أنه وصف صالة النبي صلى هللا عليه وسلم وقال في وصفه‬
‫اليسرى والرسغ والساعد‬. -আলমুগনী ২/১৪১ একই কথা বলেছেন আল্লামা ইবনে
কুদামা মাকদেসী রাহ. (৬৮২ হি.)। তাঁ র বক্তব্যের আরবী পাঠ এই- )‫ويضعهما (كذا‬
‫على كوعه أو قريبا منه لما روى وائل بن حجر أنه وصف صالة النبي صلى هللا عليه وسلم وقال في‬
‫ ثم وضع يده اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد‬: ‫وصفه‬. -আশশারহুল কাবীর
(আলমুগনীর সাথে মুদ্রিত) ১/৫৪৯ ইমাম নববী রাহ. (৬৭৬ হি.) ‘‘শরহুল
মুহাযযাব’’ গ্রন্থে (৪/৩২৭) শাফেয়ী মাযহাবের মনীষীদের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করেছেন
যে, ‘সুন্নাহ হচ্ছে, তাকবীরে (তাহরীমার) পর দুই হাত নামিয়ে ডান হাত বাম হাতের
উপর রাখবে এবং ডান হাতের পাতা দ্বারা বাম হাতের পাতার গোড়া এবং কব্জি ও
বাহুর কিছু অংশ ধরবে। কাফফাল বলেছেন, ডান হাতের আঙ্গুল আড়াআড়িভাবে
কব্জির উপর রাখা বা বাহুর উপর ছড়িয়ে দেওয়া দুটোরই অবকাশ আছে। এরপর
বলেন, (পৃ. ৩২৯) আমাদের মনীষীগণ সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীস দ্বারা এ
নিয়ম প্রমাণ করেছেন। তেমনি ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকেও বর্ণিত হয়েছে যে,
‘অতপর (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁ র ডান হাত রাখলেন
বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর।’ ‫واحتج أصحابنا أصحاب بحديث أبي حازم‬
‫ قال‬،‫ كان الناس يؤمرون أن يضع الرجل يده اليمنى على ذراعه في الصالة‬: ‫عن سهل بن سعد قال‬
‫ رواه البخاري وهذه العبارة صريحة‬،‫ ال أعلمه إال ينمى ذلك إلى النبي صلى هللا عليه وسلم‬: ‫أبو حازم‬
‫ وعن وائل بن حجر أنه رأى رسول هللا صلى هللا عليه‬،‫في الرفع إلى رسول هللا صلى هللا عليه وسلم‬
‫ رواه مسلم‬،‫ ثم وضع يده اليمنى على اليسرى‬،‫ ثم التحف بثوبه‬،‫وسلم رفع يديه حين دخل في الصالة‬
‫ قلت النظر إلى صالة رسول هللا صلى هللا عليه وسلم كيف‬: ‫ وعن وائل بن حجر ايضا قال‬،‫بهذا اللفظ‬
‫ ثم وضع يده‬،‫يصلي فقام رسول هللا صلى هللا عليه وسلم فاستقبل القبلة فكبر فرفع يده حتى حاذى أذنيه‬
‫ رواه أبو داود بإسناد صحيح‬،‫ … اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد‬. ইমাম আবুল
ওয়ালিদ আলবাজী রাহ. (৪৯৪ হি.) হযরত সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসের
ব্যাখ্যায় বলেছেন, এ হাদীসের অর্থ হচ্ছে, ডান হাত কব্জির উপর রাখবে। কারণ
ডান হাত বাম হাতের পাতার উপর রাখা যাবে না। তা রাখতে হবে বাম হাতের
‫قوله ‪গোড়া ও কব্জির উপর। আর তার উপর ভর দেওয়া যাবে না। আরবী পাঠ এই-‬‬
‫أن يضع الرجل يده اليمنى على ذراعه اليسرى‪ ،‬يريد أن يضعها على رسغه‪ ،‬ألن يده اليمنى ال يضعها‬
‫‪.‬على كف يده اليسرى‪ ،‬وإنما يقتصر بها على المعصم والكوع من يده اليسرى‪ ،‬وال يعتمد عليها‬
‫‪-আলমুনতাকা শারহুল মুয়াত্তা ২/১৬৪ ইমাম আবুল আববাস আহমদ ইবনে উমার‬‬
‫‪আলকুরতু বী রাহ. সহীহ মুসলিমে বর্ণিত ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের‬‬
‫‪আলোচনায় বলেন, ইবনুল মাজিশূন ইমাম মালিক রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন যে,‬‬
‫‪(নামাযী) ডান হাত দ্বারা তার বাম হাতের গোড়া ও কব্জি পেঁ চিয়ে ধরবে। উপরের‬‬
‫قوله ‪ :‬ثم وضع يده اليمنى على اليسرى اختلف فيه – ‪হাদীসটি তার দলীল। … আরবী পাঠ‬‬
‫على ثالثة أقوال ‪ :‬فروى مطرف وابن الماجشون عن مالك أنه قال ‪ :‬يقبض باليمنى على المعصم‬
‫والكوع من يده اليسرى تحت صدره‪ ،‬تمسكا بهذا الحديث‪ ،‬وروى ابن القاسم ‪ :‬أنه يسدلهما وكره له ما‬
‫تقدم‪ ،‬ورأى أنه من االعتماد على اليد في الصالة المنهي عنه في كتاب أبي داود‪ ،‬وروى أشهب‬
‫‪. -আলমুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীসি কিতাবি মুসলিম‬التخيير فيهما واالباحة‬
‫‪২/২১ ইবনে তাইমিয়া রাহ. ও ইবনে হাযম রাহ. আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাহ.‬‬
‫‪নামাযে হাত বাঁ ধার নিয়ম সম্পর্কে বলেন, ‘তাকবীর সমাপ্ত হওয়ার পর দুই হাত‬‬
‫‪ছেড়ে দিবে এবং ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর এমনভাবে রাখবে যে, ডান‬‬
‫‪হাত দ্বারা কব্জির গোড়ার হাড় পেঁ চিয়ে ধরবে কিংবা ডান হাত কব্জির উপর‬‬
‫‪এমনভাবে বিছিয়ে দিবে যে, হাতের আঙ্গুলিসমূহ যিরার দিকে (ছড়ানো) থাকে।‬‬
‫‪ডান হাত যদি কব্জির ওপরের দিকে (যিরার উপর) কিংবা কব্জির নিচে বাম পাতার‬‬
‫‪উপর রাখে তবে সেটাও জায়েয।’ এরপর তিনি হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-‬‬
‫‪এর হাদীস, যাইদা ইবনে কুদামার বর্ণনা, সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীস ও হুলব‬‬
‫‪রা.-এর হাদীসকে দলীল হিসেবে উদ্ধৃ ত করেছেন। আলোচনার আরবী পাঠ এই-‬‬
‫يعني ‪ :‬إذا انقضى التكبير فإنه يرسل يديه ويضع يده اليمنى فوق اليسرى على الكوع‪ ،‬بأن يقبض‬
‫الكوع باليمنى‪ ،‬أو يبسط اليمنى عليه‪ ،‬ويوجه أصابعه إلى ناحية الذراع‪ ،‬ولو جعل اليمنى فوق الكوع‬
‫أو تحته على الكف اليسرى‪ ،‬جاز لما روى وائل بن حجر أنه رأى النبي صلى هللا عليه وسلم حين‬
‫دخل في الصالة‪ ،‬ثم التحف بثوبه ثم وضع يده اليمنى على اليسرى‪ ،‬رواه مسلم‪ ،‬وفي رواية ألحمد‬
‫وأبي داود ‪ :‬وضع يده اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد‪ ،‬وعن أبي حازم عن سهل بن‬
‫سعد قال ‪ :‬كان الناس يؤمرون أن يضع الرجل اليد اليمنى على ذراعه اليسرى في الصالة‪ ،‬قال أبو‬
‫حازم ‪ :‬وال أعلمه إال ينمى ذلك إلى رسول هللا صلى هللا عليه وسلم‪ .‬رواه أحمد والبخاري‪ .‬وعن‬
‫قبيصة بن هلب عن أبيه قال ‪ :‬كان رسول هللا صلى هللا عليه وسلم يؤمنا فيأخذ شماله بيمينه‪ ،‬رواه‬
‫أحمد وأبو داود وابن ماجه والترمذي وقال ‪ :‬حديث حسن‪ ،‬وعليه العمل عند (أكثر) أهل العلم من‬
‫‪ … -শরহুল উমদা পৃ. ৬৫-৬৬ আল্লামা ইবনে হাযম রাহ. (৪৫৬‬أصحاب النبي والتابعين‬
‫‪হি.) ‘‘আলমুহাল্লা’’ গ্রন্থে (৩/২৯-৩০) নামাযে হাত বাঁ ধার বিষয়ে বলেছেন, ‘মুস্তাহাব‬‬
এই যে, নামাযী কিয়ামের হালতে তার ডান হাত বাম হাতের পাতার গোড়ায়
রাখবে।’ এরপর তিনি সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসসহ আরো কয়েকটি হাদীস
বর্ণনা করেছেন। আলোচনার শেষে বলেন, ‘আবু মিজলায, ইবরাহীম নাখায়ী,
সায়ীদ ইবনে জুবাইর, আমর ইবনে মায়মূন, মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন, আয়্যুব
ছাখতিয়ানী ও হাম্মাদ ইবনে সালামা থেকেও আমরা বর্ণনা পেয়েছি যে, তাঁ রাও
(নামাযে) এভাবে করতেন (হাত বাঁ ধতেন)। আর এটি আবু হানীফা, শাফেয়ী,
আহমদ ও দাউদ-এর সিদ্ধান্ত। আরবী পাঠ এই- ‫ ويستحب أن يضع المصلي يده‬: ‫مسألة‬
‫اليمنى على كوع يده اليسرى في الصالة في وقوفه كله فيها … ومن طريق مالك عن أبي حازم عن‬
‫ كان الناس يؤمرون أن يضع الرجل اليد اليمنى على ذراعه اليسرى في الصالة‬: ‫سهل بن سعد قال‬
‫ محمد بن‬،‫ وعمرو بن ميمون‬،‫ وسعيد بن جبير‬،‫ وإبراهيم النخعي‬،‫… وروينا فعل ذلك عن أبي مجلز‬
،‫ والشافعي‬،‫ وهو قول أبي حنيفة‬،‫ أنهم كانوا يفعلون ذلك‬: ‫ وحماد بن سلمة‬،‫ وأيوب السختياني‬،‫سيرين‬
‫ وداود‬،‫وأحمد‬. আল্লামা শাওকানী রাহ.ও (১২৫৫ হি.) ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর
হাদীসের এই ব্যাখ্যাই গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘হাদীসের অর্থ এই যে, ডান হাত
বাম হাতের পাতা, কব্জি ও বাহুর উপর রাখবে। তবারানীর রেওয়ায়েতে আছে,
(আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাযে তাঁ র ডান হাত রাখলেন
বাম হাতের পিঠের উপর কব্জির কাছে। (ইমাম) শাফেয়ী রাহ.-এর শাগরিদরা
বলেছেন, ডান হাতের পাতা দ্বারা বাম হাতের পাতার গোড়া, কব্জি ও বাহুর কিছু
অংশ পেঁ চিয়ে ধরবে। হাদীসটি হাতের পাতা হাতের পাতার উপর রাখার বৈধতা
প্রমাণ করে। এটিই অধিকাংশ মনীষীর গৃহীত নিয়ম। …’ এরপর তিনি নামাযে হাত
ছেড়ে রাখার প্রসঙ্গ আলোচনা করেন। তার আলোচনার আরবী পাঠ এই- ‫والمراد أنه‬
‫ وضع يده اليمنى على‬: ‫ ولفظ الطبراني‬.‫وضع يده اليمنى على كف يده اليسرى ورسغها وساعدها‬
‫ يقبض بكفه اليمنى كوع اليسرى‬: ‫ قال أصحاب الشافعي‬،‫ظهر اليسرى في الصالة قريبا من الرسغ‬
‫ وإليه ذهب الجمهور‬،‫ والحديث يدل على مشروعية وضع الكف على الكف‬.‫وبعض رسغها وساعدها‬
… -নায়লুল আওতার ২/১৮১ এরপর হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত
হাদীস সম্পর্কে বলেন, ‘যিরার কোন অংশে ডান হাত রাখা হবে তা এ হাদীসে
অস্পষ্ট। তবে আহমদ ও আবু দাউদের রেওয়ায়েতে (যাইদা ইবনে কুদামার সূত্রে
ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীস) যা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে তা
পরিষ্কারভাবে পাওয়া যায়। ‫ وقد بينته‬،‫قوله على ذراعه اليسرى أبهم هنا موضعه من الذراع‬
‫ رواية أحمد وأبي داود في الحديث الذي قبله‬-প্রাগুক্ত ২/১৮৯ সুতরাং শাওকানী রাহ.-এর
মতেও সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসের অর্থ হাতের পাতা হাতের পাতার উপর
রাখা, তবে এমনভাবে, যেন তা যিরার কিছু অংশের উপর থাকে। সারকথা নামাযে
‘যিরার উপর যিরা’ রাখা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগ
থেকে পরবর্তী শত শত বছর এই নিয়মের কোথাও কোনো অস্তিত্ব ছিল না। নিকট
অতীতে আবিষ্কৃত এই নিয়ম প্রমাণের জন্য হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. ও হযরত
ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত দুটি হাদীসের যে ব্যাখ্যা করা হয় তা ভু ল
ব্যাখ্যা। হাদীস ও ফিকহের নির্ভ রযোগ্য কোনো ইমাম এই ব্যাখ্যা করেননি। বস্ত্তত
এই ভু ল ব্যাখ্যাই হচ্ছে উপরোক্ত শায ও বিচ্ছিন্ন নিয়মটির প্রধান সূত্র। শুযুয-৩ :
বুকের উপর হাত বাঁ ধাকে সুন্নাহ ও একমাত্র সুন্নাহ মনে করা। ইতিপূর্বে বলা হয়েছে
যে, সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে বুকের উপর হাত বাঁ ধার নিয়ম পাওয়া যায় না। কোনো
সহীহ মরফূ হাদীসেও এই নিয়ত বর্ণিত হয়নি। মুসলিমউম্মাহর কোনো মুজতাহিদ
ইমাম থেকেও নিখুঁত ও অগ্রগণ্য বর্ণনায় এই নিয়ম পাওয়া যায় না। কিছু শায ও
মুনকার রেওয়ায়েত পাওয়া যায়, যেগুলো হাদীস হিসেবে প্রমাণিত নয়। তেমনি
কোনো কোনো মুজতাহিদ ইমাম থেকে পরবর্তীদের অসতর্ক কিছু বর্ণনা পাওয়া
যায়, যেগুলো ঐ ইমামের বিশিষ্ট শাগরিদ ও মনীষীদের বর্ণনার বিরোধী। এ ধরনের
একটি মতকে সুন্নাহ ও একমাত্র সুন্নাহ মনে করা যে মারাত্মক বিভ্রান্তি তাতে
সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। রেওয়ায়েতসমূহের পর্যালোচনা বুকের উপর হাত
বাঁ ধা প্রমাণ করতে গিয়ে যেসব রেওয়ায়েতের সহযোগিতা নেওয়া হয় এখানে
সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করছি। মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইলের রেওয়ায়েত তাঁ র
বিবরণ অনুযায়ী সুফিয়ান ছাওরী রাহ., আসেম ইবনে কুলাইব থেকে, তিনি তার
পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘আমি আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নামায পড়লাম … তিনি তাঁ র ডান
হাত বাম হাতের উপর বুকের উপর রাখলেন। সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ
এই- ،‫ عن أبيه‬،‫ عن عاصم بن كليب‬،‫ نا سفيان‬،‫ نا مؤمل‬،‫ نا أبو موسى‬،‫ نا أبو بكر‬،‫أخبرنا أبو طاهر‬
‫ ووضع يده اليمنى على يده‬،‫ صليت مع رسول هللا صلى هللا عليه وسلم‬: ‫عن وائل بن حجر قال‬
‫اليسرى على صدره‬. -সহীহ ইবনে খুযায়মা ১/২৭২, হাদীস : ৪৭৯ মুয়াম্মাল ইবনে
ইসমাইলের পূর্ণ বিবরণ সঠিক নয়। হাদীস শাস্ত্রের নীতি অনুসারে এ বর্ণনায় ‫على‬
‫‘ صدره‬বুকের উপর’ কথাটা ‘মুনকার’। অর্থাৎ সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর বর্ণনায় তা
ছিল না। মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইল ভু লক্রমে তা বাড়িয়ে দিয়েছেন। কারণ সুফিয়ান
ছাওরী রাহ. থেকে এই হাদীস মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ ফিরয়াবী ও আবদুল্লাহ
ইবনুল ওয়ালীদ রাহ.ও বর্ণনা করেছেন। তাঁ রা দু’জনই ছিকা ও শক্তিশালী রাবী।
তাঁ দের রেওয়ায়েতে ‫‘ على صدره‬বুকের উপর’ কথাটা নেই। দেখুন : মুসনাদে আহমদ
৪/৩১৮; আলমুজামুল কাবীর তবারানী ২২/৩৩ রেওয়ায়েত দুটির সনদসহ আরবী
পাঠ নিম্নরূপ : ‫ عن عاصم بن كليب عن‬،‫ حدثني سفيان‬،‫ حدثنا عبد هللا بن الوليد‬: ‫قال اإلمام أحمد‬
‫ … ورأيته ممسكا بيمينه على شماله في الصالة … وقال اإلمام‬: ‫أبيه عن وائل بن حجر قال‬
‫ حدثنا عبد هللا بن محمد بن سعيد بن أبي مريم ثنا محمد بن يوسف الفريابي ثنا سفيان عن‬: ‫الطبراني‬
‫ رأيت النبي صلى هللا عليه وسلم يضع يده اليمنى‬: ‫عاصم بن كليب عن أبيه عن وائل بن حجر قال‬
‫ ومحمد بن يوسف الفريابي ذكره المزي‬: ‫على اليسرى وإذا جلس افترش رجله اليسرى … قال الراقم‬
‫ ففي إتحاف‬.‫في الرواة عن الثوري وابن عيينة كلهيما إال أنه يستظهر برواية الدارقطني أنه الثوري‬
‫ سمعت النبي صلى هللا عليه وسلم إذا قال غير المغضوب عليهم وال‬: ‫ تحت حديث‬13/662 ‫المهرة‬
‫ عن‬،‫ عن ابن زنجوية‬،‫ قط في الصالة … وعن يحي بن صاعد‬: ‫ يمد بها صوته‬،‫الضالين قال آمين‬
‫ وقد ذكرهما‬.‫ أي عن حجر أبي العنبس عن وائل بن حجر‬.‫ نحوه‬،‫ عن سلمة‬،‫ عن الثوري‬،‫الفريابي‬
)1( : ‫ رقم الحاشية‬.‫ في الرواة عن الثوري‬10/335 ‫ صاحب أنيس الساري‬এটা শুধু পাওয়া যায়
মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইল রাহ.-এর বর্ণনায়, যাঁ র সম্পর্কে জারহ-তাদীলের
ইমামদের সিদ্ধান্ত এই যে, তিনি সাধারণভাবে বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী হলেও
রেওয়ায়েতের ক্ষেত্রে তাঁ র প্রচু র ভু ল হয়েছে। এমনকি ইমাম বুখারী রাহ. তাকে
‘মুনকাররুল হাদীস’ বলেছেন।ইমামগণের মন্তব্য নীচে উল্লেখ করা হল- ‫قال‬
،‫ يكتب حديثه‬،‫ صدوق شديد في السنة كثير الخطأ‬: ‫ وقال أبو حاتم الرازي‬،‫ منكر الحديث‬: ‫البخاري‬
: ‫ وقال الساجي‬،‫ ثقة كثير الغلط‬: ‫ وقال ابن سعد‬،‫ في حديثه خطأ كثير‬: ‫وقال أبو زرعة الرازي‬
‫ ثقة كثير الخطأ‬: ‫ وقال الدارقطني‬.‫ كثير الخطأ وله أوهام يطول ذكرها‬،‫صدوق‬. দেখুন :
তাহযীবুল কামাল ১৮/৫২৬; তাযীবুত তাহযীব ১০/৩৪০; মীযানুল ইতিদাল ৮৯৪৯;
আলমুগনী ফী যুআফা ৬৫৪৭ শায়খ আলবানীও সিলসিলাতু য যয়ীফার অনেক
জায়গায় তাঁ কে জয়ীফ বলেছেন এবং তাঁ র সম্পর্কে ইমামগণের মন্তব্য উদ্ধৃ ত
করেছেন। দেখুন : সিলসিলাতু য যয়ীফা ১/১৩১; ২/২৪৬, ৩/১৭৯; ৩/২২৭; ৪/৪৫৫
ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত : সুফিয়ান ছাওরী রাহ. ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর বিবরণ
বর্ণনা করেছেন আসিম ইবনে কুলাইব থেকে। আসিম ইবনে কুলাইব থেকে এই
হাদীস আরো বর্ণনা করেছেন : ১. শোবা ইবনুল হাজ্জাজ, ২. বিশর ইবনুল
মুফাদ্দাল ৩. কায়স ইবনুর রাবী ৪. যাইদা ইবনে কুদামা ৫. আবদুল ওয়াহিদ ইবনে
যিয়াদ ৬. খালিদ ইবনু আবদিল্লাহ ৭.আবু ইসহাক ৮. আবুল আহওয়াস ৯.
আবদুল্লাহ ইবনে ইদরীস, ১০. মুসা ইবনে আবী আয়েশা ১১. আবু আওয়ানা প্রমুখ
হাদীসের বিখ্যাত ইমাম ও ছিকা রাবীগণ। তাঁ রা সকলে আসিম ইবনে কুলাইব
থেকে নামাযে হাত বাঁ ধার হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু কেউ ‫‘ على صدره‬বুকের
উপর’ কথাটা বর্ণনা করেননি। এঁদের রেওয়ায়েতগুলোর জন্য দেখুন যথাক্রমে : ১.
মুসনাদে আহমদ ৪/৩১৯, হাদীস : ১৮৮৭৮ ২. সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭২৬;
সুনানে নাসায়ী, কুবরা, হাদীস : ১১৮৯; মুজতাবা, হাদীস : ১২৬৫; মুসনাদে
বাযযার-আলবাহরুয যাখখার, হাদীস : ৪৪৮৫; আলমু’জামুল কাবীর তবারানী
২২/৩৭ ৩. আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ২২/৩৩ ৪. মুসনাদে আহমদ ৪/৩১৮;
আলমুজামুল কাবীর ২২/৩৫ ৫. মুসনাদে আহমদ ৪/৩১৬ ৬. সুনানে কুবরা
বায়হাকী ২/১৩১ ৭. আলমুজামুল আওসাত তবারানী ২/৪২৩ ৮. মুসনাদে আবু
দাউদ ত্বয়ালিসী ২/৩৫৮, হাদীস : ১১১৩; আলমুজামুল কাবীর তাবারানী ২২/৩৪ ৯.
সহীহ ইবনে হিববান ৫/২৭১; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৩/৩১৭ ১০. মুসনাদে
বাযযার আলবাহরুয যাখখার, হাদীস : ৪৪৮৯ ১১. মারিফাতু স সুনানি ওয়াল
আছার বায়হাকী ৩/৫০ এ থেকে বোঝা যায়, আসিম ইবনে কুলাইব বুকের উপর
হাত বাঁ ধার কথা বর্ণনা করেননি। তাহলে সুফিয়ান ছাওরীর সঠিক বর্ণনায় তা
কীভাবে থাকতে পারে? তো এই সকল ইমাম ও ছিকা রাবীর বর্ণনার সাথে তু লনা
করলে পরিষ্কার বোঝা যায়, এ হাদীসে ‫ على صدره‬অংশটা মুনকার তথা
অগ্রহণযোগ্য। উল্লেখ্য, কুলাইব ইবনে শিহাব ছাড়া অন্যদের সূত্রেও ওয়াইল ইবনে
হুজর রা.-এর এই হাদীস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কোনো সহীহ সনদে ‫على صدره‬
‘বুকের উপর’ কথাটা পাওয়া যায় না। দেখুন : বুগয়াতু ল আলমায়ী ফী তাখরীজিয
যায়লায়ী, নসবুর রায়াহর হাশিয়ায় ১/৩১৬ ২. হুলব আতত্বয়ী রা.-এর সূত্রে বর্ণিত
হাদীসে মুসনাদে আহমদের ‘শায’ অংশ বুকের উপর হাত বাঁ ধা প্রমাণ করার জন্য
হুলব রা.-এর সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসের উদ্ধৃ তিও দেওয়া হয়ে থাকে। অথচ ঐ
হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনায় ‘বুকের উপর হাত বাঁ ধা’র কথা নেই। একটিমাত্র বর্ণনায়
এই অতিরিক্ত কথাটি পাওয়া যায়, যা অন্য সকল বর্ণনার পরিপন্থী। রেওয়ায়েতটির
আরবী পাঠ এই – ‫ ثني سماك عن قبيصة بن هلب عن أبيه‬: ‫ حدثنا يحي بن سعيد عن سفيان‬: ‫أحمد‬
‫ ورأيته ـ قال ـ يضع هذه على‬،‫ رأيت النبي صلى هللا عليه وسلم ينصرف عن يمينه وعن يساره‬: ‫قال‬
‫ وصف يحي اليمنى على اليسرى فوق المفصل‬.‫صدره‬. -মুসনাদে আহমদ ৫/২২৬ এই
রেওয়ায়েতে দেখা যাচ্ছে, ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ রাহ. এই হাদীসটি সুফিয়ান
ছাওরী রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন। সুফিয়ান ছাওরী রাহ. থেকে এই হাদীস আরো
বর্ণনা করেছেন ১. ইমাম ওকী ইবনুল জাররাহ ২. ইমাম আবদুর রাযযাক ইবনে
হাম্মাম ৩. ইমাম আবদুর রহমান ইবনে মাহদী ৪. মুহাম্মাদ ইবনে কাছীর ৫. আবদুস
সামাদ ইবনে হাসসান ৬. হুসাইন ইবনে হাফস প্রমুখ ইমাম ও ছিকা রাবীগণ।
তাঁ দের কারো বর্ণনায় ‫‘ على صدره‬বুকের উপর’ কথাটা নেই। দেখুন যথাক্রমে : ১.
মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১/৩৯০; ২. মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/২৪০; ৩.
সুনানে দারাকুতনী ২/৩৩, হাদীস : ১১০০; ৪. আলমুজামুল কাবীর তাবারানী
২২/১৬৫; ৫. মারিফাতু স সাহাবা, আবু নুয়াইম ১৯/১৭২ ৬. সুনানে কুবরা বাইহাকী
২/২৯৫ তদ্রূপ সিমাক ইবনে হারব থেকে সুফিয়ান ছাওরী রাহ. ছাড়া আরো বর্ণনা
করেছেন : ১. আবুল আহওয়াস ২. হাফস ইবনু জুমাই ৩. শরীক ৪. আসবাত ইবনে
নাসর ৫. শো’বা ইবনুল হাজ্জাজ ৬. যাইদা ইবনে কুদামা আলকূফী প্রমুখ রাবীগণ।
এঁদের কারো বর্ণনায় ‫‘ على صدره‬বুকের উপর’ কথাটা নেই। (দেখুন যথাক্রমে : ১.
জামে তিরমিযী ১/৩১২, হাদীস : ২৫০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৮০৯;
আলমুজামুল কাবীর তবারানী ২২/১৬৫; ২. আলমুজামুল কাবীর তবারানী
২২/১৬৫; ৩. মুসনাদে আহমদ ৫/২২৬, হাদীস : ২১৯৬৯; ৪. আলমুজামুল কাবীর
তাবারানী ২২/১৬৫; ৫. ইবনে আবী আসিম ২৪৯৫-আনীসুস সারী ১০/৩৪৩; ৬.
ইবনু কানি ৩/১৯৯-আনীসুস সারী ১০/৩৪৩) এ থেকে প্রতীয়মান হয়, ছিমাক ইবনে
হারবের বর্ণনায় এ অংশটি ছিল না। সুতরাং সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর বিশুদ্ধ
বর্ণনায় তা কীভাবে থাকতে পারে? দ্বিতীয় কথা এই যে, ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ
আলকাত্তানের রেওয়ায়েত মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার বসরী-এর সূত্রে ‘‘মুখতাসারুল
আহকাম’’ তূ সীতেও (২/৯৭, হাদীস : ২৩৪) রয়েছে। কিন্তু ঐ কিতাবে ‘আলা
সাদরিহী’ নেই। সনসদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই- ،‫أخبرنا بندار محمد بن بشار‬
‫ رأيت النبي‬: ‫ عن قبيصة بن الهلب عن أبيه قال‬،‫ عن سماك‬،‫ ثنا يحي وهو ابن سعيد عن سفيان‬: ‫قال‬
‫صلى هللا عليه وسلم ينصرف عن شقيه عن يمينه وعن يساره ويضع اليمنى على اليسرى‬. তৃ তীয়
কথা এই যে, মুসনাদে আহমদেও বর্ণনাটি যেভাবে আছে, তা গভীরভাবে পাঠ
করলে আল্লামা নীমভী রাহ. যে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন তা বেশ শক্তিশালী মনে হয়।
তা এই যে, মুসনাদে আহমদের বর্ণনাতেও ‫ على صدره‬বুকের উপর কথাটা ছিল না।
এটা লিপিকারের ভ্রান্তিপ্রসূত। মূল রেওয়ায়েত সম্ভবত এ রকম – ‫يضع هذه على هذه‬
শেষোক্ত ‫ هذه‬লিপিকরের ভ্রান্তির কারণে ‫ صدره‬তে পরিণত হয়ে থাকতে পারে।
প্রাচীন হস্তলিখিত পান্ডু লিপিতে এ ধরনের ভ্রান্তি বিরল নয়। এসব ভ্রান্তি চিহ্নিত
করার নীতি ও পদ্ধতি সম্পর্কে হাদীসশাস্ত্রে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবং
মুহাদ্দিসগণ সফলভাবে তা প্রয়োগও করেছেন। রেওয়ায়েতের বিশুদ্ধ পাঠ যদি
সেটিই হয়, যা আল্লামা নীমাভী রাহ. বলেছেন তাহলে এর অর্থ হবে-‘তিনি এই হাত
এই হাতের উপর রাখলেন।’ হাদীসটি বর্ণনা করার পর রাবী ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ
রাহ. ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রেখে দেখালেন।’’ রেওয়ায়েতের শেষ
বাক্যটিও এই সম্ভাবনাকে সমর্থন করে। মোটকথা, এ রেওয়ায়েতেও ‫على صدره‬
বুকের উপর কথাটা ‘শায’ বা মুসাহহাফ, যা পরিত্যক্ত। এই দুটি রেওয়ায়েত প্রমাণ
হিসেবে গ্রহণের আগে আরো যে বিষয়গুলো চিন্তা করা উচিত তা এই যে, ওয়াইল
ইবনে হুজর রা.-এর হাদীস ও হুলব আতত্বয়ী রা.-এর হাদীস, উভয় হাদীসেরই রাবী
ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রাহ.। এই দুই হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনায় ‫ على صدره‬থাকলে
অবশ্যই তিনি বুকের উপর হাত বাঁ ধাকে সুন্নাহ মনে করতেন এবং বুকের উপর হাত
বাঁ ধতেন। কিন্তু তিনি হাত বাঁ ধতেন নাভীর নিচে, বুকের উপর নয়। দেখুন :
আলমুগনী ইবনে কুদামা ২/১৪১; আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৪/৩৩০ দুই.
মুসনাদে আহমদের সহীহ রেওয়ায়েতে ‘‘আলা সাদরিহী’’ থাকলে ইমাম আহমদ
ইবনে হাম্বল রাহ. কেন বুকের উপর হাত বাঁ ধাকে সুন্নাহ বলেননি? তেমনি ইমাম
ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ, ইবনে হাযম ও দাউদ জাহেরী রাহ. থেকেও কেন বুকের
উপর হাত বাঁ ধার নিয়ম পাওয়া যায় না? তিন. দু’ দুটি স্পষ্ট হাদীস বিদ্যমান থাকলে
মুসলিম জাহানের কোনো মুজতাহিদ ইমাম বুকের উপর হাত বাঁ ধাকে সুন্নাহ
বলবেন না তা কীভাবে সম্ভব? তবে কি বলতে হবে আল্লাহর রাসূলের হাদীস ত্যাগ
করার বিষয়ে হাদীস ও ফিকহের সকল ইমাম একমত হয়ে গেছেন? (নাউযুবিল্লাহ)
৩. সূরায়ে কাউসারের তাফসীরে হযরত আলী রা. থেকে একটি বর্ণনা হযরত আলী
রা. থেকে সূরায়ে কাওছারের দ্বিতীয় আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করা হয় যে, তিনি
বলেছেন, ‘ডান হাত বাম হাতের মাঝে রাখা, অতপর তা রাখা বুকের উপর।’
সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই- ،‫ عن أبيه‬،‫ ثنا عاصم الجحدري‬: ‫حماد بن سلمة‬
‫ وضع‬: ‫ قال‬،‫ فصل لربك وانحر‬: ‫ إن عليا رضي هللا عنه قال في هذه اآلية‬: ‫عن عقبة بن صهبان قال‬
‫ ثم وضعهما على صدره‬،‫يده اليمنى على وسط يده اليسرى‬. -সুনানে বায়হাকী ২/৩০; আসলু
ছিফাতিস সালাহ, আলবানী পৃ. ২১৭ এই রেওয়ায়েত সহীহ নয়। আল্লামা ইবনুত
তু রকুমানী রাহ. (৭৪৫ হি.) বলেছেন, ‘এই রেওয়ায়েতের সনদ ও মতনে ইযতিরাব
রয়েছে।’ ‫ وفي سنده ومتنه اضطراب‬-আলজাওহারুন নাকী, সুনানে বায়হাকীর সাথে
মুদ্রিত ২/৩০ শায়খ আলবানীও এর সনদের ইযতিরাব স্বীকার করেছেন। তিনি
বলেন, ‘এ রেওয়ায়েতের সনদের ইযতিরাব স্বীকৃত। সুতরাং এ সম্পর্কে দীর্ঘ
আলোচনার প্রয়োজন নেই। …’ ‫ فال حاجة إلطالة‬،‫ فهو مسلم‬: ‫وأما االضطراب في السند‬
‫ … الكالم ببيانه‬-আসলু ছিফাতিস সালাহ, পৃ. ২২১ মতনের (বক্তব্যের) ক্ষেত্রেও
ইযতিরাব স্বীকার করতে হবে কিংবা বলতে হবে, এই রেওয়ায়েতেও ‫على صدره‬
‫‪ ছাড়া‬على صدره ‪‘বুকের উপর’ কথাটা শায্ ও বিচ্ছিন্ন এবং এ হাদীসের যে বর্ণনা‬‬
‫‪সেটিই অগ্রগণ্য। কারণ এ হাদীসের কেন্দ্রীয় বর্ণনাকারী আসিম আলজাহদারী‬‬
‫‪রাহ.। তার থেকে বর্ণনা করেন হাম্মাদ ইবনে সালামা ও ইয়াযীদ ইবনে আবী যিয়াদ।‬‬
‫‪হাম্মাদ ইবনে সালামার বর্ণনায় ‘ইখতিলাফ’ ও ভিন্নতা পাওয়া যায়। হাম্মাদ ইবনে‬‬
‫‪সালামা থেকে মিহরান, আবু সালেহ খুরাসানী ও শাইবানের বর্ণনা এবং মুসা ইবনে‬‬
‫়‪ আছে। মুসা ইবনে ইসমাইলের দ্বিতীয় বর্ণনায‬على صدره ়‪ইসমাইলের এক বর্ণনায‬‬
‫‪ নেই। তাদের রেওয়ায়েতের আরবী‬على صدره ়‪এবং আবদুর রহমান-এর বর্ণনায‬‬
‫قال ابن جرير الطبري ‪ :‬حدثنا ابن حميد‪ ،‬قال ‪ :‬ثنا مهران‪ ،‬عن حماد بن سلمة‪ ،‬عن عاصم ‪পাঠ এই-‬‬
‫الجحدري‪ ،‬عن عقبة بن ظهير‪ ،‬عن أبيه‪ ،‬عن علي رضي هللا عنه فصل لربك وانحر قال ‪ :‬وضع يده‬
‫اليمنى على وسط ساعده اليسرى‪ ،‬ثم وضعهما على صدره‪ .‬وقال الطبري ‪ :‬حدثنا ابن حميد‪ ،‬قال ‪ :‬ثنا‬
‫أبو صالح الخراساني‪ ،‬قال ‪ :‬ثنا حماد‪ ،‬عن عاصم الجحدري‪ ،‬عن أبيه‪ ،‬عن عقبة بن ظبيان‪ ،‬أن علي‬
‫بن أبي طالب رضي هللا عنه قال في قول هللا تعالى ‪ :‬فصل لربك وانحر‪ ،‬قال ‪ :‬وضع يده اليمنى على‬
‫وسط ساعده األيسر‪ ،‬ثم وضعهما على صدره‪ .‬وقال البيهقي في السنن ‪ :‬أخبرنا أبو بكر أحمد بن محمد‬
‫بن الحارث الفقيه أنبأ أبو محمد بن حيان أبو الشيخ‪ ،‬ثنا أبو الحريش الكالبي‪ ،‬ثنا شيبان ثنا حماد بن‬
‫سلمة ثنا عاصم الجحدري عن أبيه عن عقبة بن صهبان كذا قال أن عليا رضي هللا عنه قال في هذه‬
‫اآلية فصل لربك وانحر قال ‪ :‬وضع يده اليمنى على وسط يده اليسرى‪ ،‬ثم وضعهما على صدره‪ .‬وقال‬
‫البخاري في التاريخ الكبير ‪ :‬قال موسى ‪ :‬حدثنا حماد بن سلمة ‪ :‬سمع عاصما الجهدري عن أبيه عن‬
‫عقبة بن ظبيان عن علي رضي هللا عنه ‪ :‬فصل لربك وانحر‪ .‬وضع يده اليمنى على وسط ساعده على‬
‫صدره‪ )2911( .‬وقال الطبري ‪ :‬حدثنا ابن بشار‪ ،‬قال ‪ :‬ثنا عبد الرحمن‪ ،‬قال ‪ :‬ثنا حماد بن سلمة‪ ،‬عن‬
‫عاصم ابن ظبيان‪،‬عن أبيه‪ ،‬عن علي رضي هللا عنه فصل لربك وانحر قال ‪ :‬وضع اليد على اليد في‬
‫الصالة‪ .‬وقال الحاكم في المستدرك في تفسير سورة الكوثر‪ … :‬منهما ما حدثناه علي بن حمشاذ‬
‫العدل‪ ،‬ثنا هشام بن علي ومحمد بن أيوب قاال ‪ :‬ثنا موسى بن إسماعيل‪ ،‬ثنا حماد بن سلمة‪ ،‬عن عاصم‬
‫الجحدري‪ ،‬عن عقبة بن صهبان‪ ،‬عن علي رضي هللا عنه فصل لربك وانحر‪ ،‬قال ‪ :‬هو وضع يمينك‬
‫;‪. -তাফসীরে তবারী (সূরাতু র কাউছার) ১২/৭২১-৭২২‬على شمالك في الصالة‬
‫‪আততারীখুল কাবীর, বুখারী ৬/৪৩৭; মুসতাদরাকে হাকিম ৩/৩৩৯; সুনানে‬‬
‫‪বায়হাকী ২/৩০ পক্ষান্তরে ইয়াযীদ ইবনে আবী যিয়াদ থেকে ওকী ইবনুল জাররাহ,‬‬
‫‪মুহাম্মাদ ইবনে রবীআ ও হুমাইদ ইবনে আবদুর রহমান প্রমুখ বর্ণনা করেছেন।‬‬
‫‪ ‘বুকের উপর’ নেই। তাদের রেওয়ায়েতের আরবী‬على صدره ়‪তাদের কারো বর্ণনায‬‬
‫قال الطبري ‪ :‬حدثنا أبو كريب‪ ،‬قال ‪ :‬حدثنا وكيع‪ ،‬عن يزيد بن أبي زياد‪ ،‬عن عاصم ‪পাঠ এই-‬‬
‫الجحدري‪ ،‬عن عقبة بن ظهير‪ ،‬عن علي رضي هللا عنه ‪ :‬فصل لربك وانحر‪ .‬قال ‪ :‬وضع اليمين على‬
‫الشمال في الصالة‪ .‬وقال ‪ :‬حدثني عبد الرحمن بن األسود الطفاوي‪ ،‬قال ‪ :‬ثنا محمد بن ربيعة‪ ،‬قال ‪:‬‬
‫ثني يزيد بن أبي زياد بن أبي الجعد‪ ،‬عن عاصم الجحدري‪ ،‬عن عقبة بن ظهير‪ ،‬عن علي رضي هللا‬
‫عنه في قوله تعالى فصل لربك وانحر‪ .‬قال ‪ :‬وضع اليمين على الشمال في الصالة‪ .‬قال البخاري في‬
‫التاريخ الكبير ‪ :‬وقال قتيبة‪ ،‬عن حميد بن عبد الرحمن عن يزيد بن أبي الجعد عن عاصم الجحدري‬
‫ وضعها على الكرسوع‬: ‫عن عقبة من أصحاب علي عن علي رضي هللا عنه‬. -তাফসীর তবারী
(সূরাতু ল কাউছার) ১২/৭২১-৭২২; আততারীখুল কাবীর, বুখারী ৬/৪৩৭; সুনানে
বায়হাকী ২/২৯ শায়খ আলবানী মতনের (বক্তব্যের) ইযতিরাব অস্বীকার করেছেন
এবং ‫ على صدره‬রেওয়ায়েতকে অগ্রগণ্য বলেছেন। তার এই প্রয়াস যথার্থ নয়।
কারণ তিনি শুধু হাম্মাদ ইবনে সালামার রেওয়ায়েতের ইখতিলাফ ও ভিন্নতা উল্লেখ
করে মুসা ইবনে ইসমাইলের বর্ণনাকে ‘গরীব’ আখ্যায়িত করেছেন। পক্ষান্তরে ওকী
ইবনুল জাররাহ, মুহাম্মাদ ইবনে রবীআ ও হুমাইদ ইবনে আবদুর রহমানের সূত্রে
বর্ণিত ইয়াযীদ ইবনে যিয়াদের রেওয়ায়েত, যেগুলোতে ‫ على صدره‬নেই, সম্পূর্ণ
এড়িয়ে গেছেন। বলাবাহুল্য, এভাবে মূল মতনের ইযতিরাবহীনতা প্রমাণ হয় না।
তাহকীক ও গবেষণার ক্ষেত্রে এ জাতীয় কর্ম আপত্তিমুক্ত নয়। হাম্মাদ ইবনে
সালামা রাহ.-এর রেওয়ায়েতে ‫‘ على صدره‬বুকের উপর’ কথার সমর্থনে আরেকটি
রেওয়ায়েত পেশ করা হয়। কিন্তু তা সঠিক নয়। কারণ : এক. ঐ রেওয়ায়েতে ‫على‬
‫‘ صدره‬বুকের উপর’ শব্দই নেই। তাতে আছে ‫ فوق السرة‬নাভীর উপর। দুই. ঐ
রেওয়ায়েতের অগ্রগণ্য বর্ণনায় ‫ فوق السرة‬শব্দটিও নেই। বর্ণনাটি এই- গযওয়ান
ইবনে জারীর আদদাববী রাহ. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘আলী রা. যখন
নামাযে দাঁ ড়াতেন তখন তার ডান হাত কব্জির উপর রাখতেন। কাপড় গোছানো বা
শরীর চু লকানোর প্রয়োজন না হলে রুকু পর্যন্ত এভাবেই থাকতেন।’ সনদসহ
রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই- ‫ حدثنا عبد السالم بن شداد الجريري أبو‬: ‫حدثنا وكيع قال‬
‫ كان علي إذا قام في الصالة وضع يمينه على‬: ‫ عن أبيه قال‬،‫ عن غزوان بن جرير الضبي‬،‫طالوت‬
‫ إال أن يصلح ثوبه أو يحك جسده‬،‫ فال يزال كذلك حتى يركع متى ما يركع‬،‫رسغه‬. -মুসান্নাফে
ইবনে আবী শাইবা ৩/৩২২, হাদীস : ৩৯৬১ ইমাম বায়হাকী রাহ.ও এই হাদীসটি
বর্ণনা করেছেন। তার সনদে এই হাদীসের রাবী জারীর আদাদাববী রাহ. সম্পর্কে
আছে যে, ‘তিনি ছিলেন হযরত আলী রা.-এর সার্বক্ষণিক সহচর।’ বায়হাকী আরো
বলেন, ‘এই হাদীসের সনদ হাসান।’ বায়হাকীর বর্ণনার সনদসহ আরবী পাঠ এই-
… ‫ثنا مسلم بن إبراهيم ثنا عبد السالم بن أبي حازم ثنا غزوان بن جرير عن أبيه أنه ـ وكان شديد‬
‫ كان علي إذا قام إلى الصالة فكبر ضرب بيده اليمنى‬: ‫اللزوم لعلي بن أبي طالب رضي هللا عنه ـ قال‬
‫ … هذا إسناد حسن‬،‫ إال أن يحك جلدا أو يصلح ثوبه‬،‫ فال يزال كذلك حتى يركع‬،‫على رسغه األيسر‬.
-সুনানে কুবরা ২/২৯ ইমাম বুখারী রাহ. এই আছরটি সহীহ বুখারীতে এনেছেন।
তবে সনদ উল্লেখ করেননি। তার বর্ণনার আরবী পাঠ এই- ‫ووضع علي رضي هللا عنه‬
‫ باب استعانة اليد في‬.‫ (كتاب العمل في الصالة‬.‫كفه على رصغه األيسر إال أن يحك جلدا أو يصلح ثوبا‬
)‫ الصالة إذا كان من أمر الصالة‬হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. সনদসহ মূল
পাঠ উদ্ধৃ ত করেছেন। তার আলোচনার আরবী পাঠ এই- ‫وكذلك رواه مسلم بن إبراهيم‬
‫أحد مشائخ البخارى عن عبد السالم بن أبي حازم عن غزوان بن جرير الضبي عن أبيه ـ وكان شديد‬
‫ كان علي إذا قام إلى الصالة فكبر ضرب بيده اليمنى‬: ‫اللزوم لعلي بن أبي طالب رضي هللا عنه ـ قال‬
‫ هكذا رويناه في‬،‫ إال أن يحك جلدا أو يصلح ثوبا‬،‫ فال يزال كذلك حتى يركع‬،‫على رصغه األيسر‬
‫السفينة الجرائدية من طريق السلفي بسنده إلى مسلم بن إبراهيم‬. -ফাতহুল বারী ৩/৮৭ এই
বর্ণনাগুলোতে হযরত আলী রা.-এর নামাযে হাত বাঁ ধার বিবরণ আছে। এখানে
কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় : এক. এই বিবরণ বর্ণনা করেছেন জারীর আদদাববী
রাহ., যিনি ছিলেন হযরত আলী রা.-এর সার্বক্ষণিক সহচর। উপরের নির্ভ রযোগ্য
একাধিক বর্ণনায় দেখা যাচ্ছে, এই বিবরণে ডান হাত (ডান হাতের পাতা) বাম
হাতের কব্জির উপর রাখার কথা আছে। কিন্তু ‫ فوق السرة‬নাভীর উপরে রাখার কথা
নেই। দুই. ইমাম বুখারী রাহ. সহীহ বুখারীতে এই বর্ণনাটিই (‫ )تعليقا‬উল্লেখ করেছেন।
সহীহ বুখারীতে উল্লেখিত রেওয়ায়েতে ‫( فوق السرة‬নাভীর উপর) শব্দ নেই। তিন.
ইমাম বায়হাকী রাহ. এই রেওয়ায়েতের, অর্থাৎ ‫ فوق السرة‬বিহীন রেওয়ায়েতের
সনদকেই হাসান বলেছেন। চার. এই রেওয়ায়েতের পরবর্তী বর্ণনাকারী আবদুস
সালাম ইবনে আবী হাযিম থেকে একাধিক রাবী এই বিবরণ বর্ণনা করেছেন। এদের
মধ্যে ইমাম ওকী ইবনুল জাররাহ ও মুসলিম ইবনে ইবরাহীম (যিনি ইমাম বুখারীর
উস্তাদ)-এর বর্ণনায় ‫‘ فوق السرة‬নাভীর উপর’ নেই। এটা শুধু পাওয়া যায় আবু বদর
শুজা ইবনুল ওয়ালীদের বর্ণনায়, যিনি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে শক্তিশালী ছিলেন না।
শুজা ইবনুল ওয়ালীদের রেওয়ায়েত সনদসহ তু লে দেওয়া হল- ‫حدثنا محمد بن قدامة‬
‫ رأيت عليا‬: ‫ عن أبيه قال‬،‫ عن ابن جرير الضبي‬،‫ عن أبي طالوت عبد السالم‬،‫ عن أبي بدر‬،‫بن أعين‬
‫ هذا الحديث في رواية أبي الحسن بن‬: ‫ قال المزي‬،‫رضي هللا عنه يمسك شماله بيمينه فوق السرة‬
‫ ولم يذكره أبو القاسم‬،‫ عن أبي داود‬،‫ وأبي سعيد بن األعرابي وغير واحد‬،‫العبد‬. -সুনানে আবু
দাউদ ১/৪৯৫, হাদীস : ৭৫৭; তাহকীক শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা, টীকা তু হফাতু ল
আশরাফ ৭/৩৪৯, হাদীস : ১০০৩০ আবু বদর শুজা ইবনুল ওয়ালীদ রাহ. ছিলেন
কুফার অন্যতম আবিদ ও নেককার ব্যক্তি। তবে বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি শক্তিশালী
ছিলেন না। ইমাম আবু হাতিম রাযী রাহ. তার সম্পর্কে বলেন- ‫ شيخ ليس‬،‫ولين الحديث‬
‫ إال أن عنده عن محمد بن عمرو أحاديث صحاح‬،‫ ال يحتج به‬،‫بالمتين‬. অর্থাৎ তিনি শক্তিশালী
রাবী নন, তাঁ র দ্বারা দলীল দেওয়া যায় না। তবে মুহাম্মাদ ইবনে আমরের সূত্রে
তিনি কিছু সহীহ হাদীস বর্ণনা করেন। -মীযানুল ইতিদাল ২/২৪৪ আলোচিত
বর্ণনাটি ঐ সহীহ বর্ণনাগুলোর অন্তর্ভু ক্ত নয়। কারণ এটা আবু তালূত আবদুস
সালাম থেকে তার বর্ণনা। হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন- ‫صدوق‬
‫ ورع له أوهام‬অর্থাৎ তিনি সত্যবাদী, নেককার। তবে বর্ণনায় ভু ল-ভ্রান্তি আছে।-
তাকরীবুত তাহযীব পৃ. ২৯৮ শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহ. আবু দাউদের সূত্রে
এই রেওয়ায়েতটি উদ্ধৃ ত করেছেন। তবে সনদ উল্লেখ করেছেন আবু বদর-এর পর
থেকে! এরপর বলেছেন, বায়হাকী এই সনদটিকে হাসান বলেছেন! … এবং বুখারী
আলী রা. থেকে তার (?) এই হাদীস দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেছেন। তার বক্তব্যের
আরবী পাঠ এই- ‫) من طريق أبي طالوت عبد‬1/120( ‫ ما أخرجه أبو داود‬: ‫ويشهد لرواية علي‬
‫ رأيت عليا رضي هللا عنه يمسك شماله بيمينه على الرسغ‬: ‫السالم عن ابن جرير الضبي عن أبيه قال‬
‫ حسن … وقد علق البخاري حديثه هذا مطوال في‬: )2/30( ‫ وهذا إسناد قال البيهقي‬،‫فوق السرة‬
‫ بصيغة الجزم عن علي‬،3/55 ‫صحيحه‬. -আসলু সিফাতিস সালাহ ১/২১৭-২১৮ অথচ
ইমাম বায়হাকী আবু বদর শুজা ইবনুল ওয়ালীদের বর্ণনা সম্পর্কে উপরোক্ত মন্তব্য
(হাসান) করেননি। করেছেন মুসলিম ইবনে ইবরাহীমের বর্ণনা সম্পর্কে , যে বর্ণনায়
‫ فوق السرة‬নেই। দ্বিতীয়ত ইমাম বুখারীও সহীহ বুখারীতে শুজা ইবনুল ওয়ালীদের
বর্ণনা উল্লেখ করেননি। তিনি যে বর্ণনা উল্লেখ করেছেন তাতে ‫ فوق السرة‬নেই।
গবেষণার ক্ষেত্রে এ জাতীয় কর্মকান্ড গ্রহণযোগ্য কি না তা পাঠক ভেবে দেখবেন।
৪. সুলায়মান ইবনে মুসা-এর সূত্রে একটি মুরসাল রেওয়ায়েত তাউস রাহ. থেকে
বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁ র ডান হাত বাম হাতের
উপর রাখতেন এবং তা বুকের উপর রাখতেন। সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী
পাঠ এই- ‫ عن ثور عن سليمان بن‬،‫ ابن حميد‬: ‫ ثنا الهيثم ـ يعني‬،‫ ثنا أبو توبة‬: ‫قال اإلمام أبو داود‬
‫ ثم يشد‬،‫ كان رسول هللا صلى هللا عليه وسلم يضع اليمنى على يده اليسرى‬: ‫موسى عن طاؤو‍س قال‬
‫ وهو في الصالة‬،‫بينهما على صدره‬. -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭৫৯; মারাসীলে আবু
দাউদ, তু হফাতু ল আশরাফ, হাদীস : ১৮৮২৯ তাউস রাহ. পর্যন্ত এ হাদীসের সনদ
গ্রহণযোগ্য, যদিও মাঝের তিনজন রাবী সম্পর্কে কিছু আপত্তিও আছে। এ বর্ণনার
রাবী সুলায়মান ইবনে মুসা রাহ. সম্পর্কে ইমামগণ প্রশংসা করেছেন, তবে তার
কিছু রেওয়ায়েত ‘মুনকার’ ছিল। এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী রাহ. তার সমালোচনা
করেছেন। ইমাম আবু হাতিম রাযী তার বর্ণনায় কিছু ইযতিরাব ও ইমাম ইবনে আদী
রাহ. তার ‘তাফাররুদে’র কথা উল্লেখ করেছেন। দেখুন তাহযীবুল কামাল ২৫৫৪
আরবী পাঠ এই- ،‫ أحد الفقهاء وليس بالقوي في الحديث‬: ‫ قال النسائي‬،‫ عنده مناكير‬: ‫قال البخاري‬
‫ وال أعلم أحدا من أصحاب مكحول أفقه‬،‫ وفي حديثه بعض االضطراب‬،‫ محله الصدق‬: ‫وقال أبو حاتم‬
‫ وهو‬،‫ حدث عنه الثقات من الناس‬،‫ وسليمان بن موسى فقيه را ٍو‬: ‫ وقال ابن عدي‬،‫منه وال أثبت منه‬
‫ وهو عندي ثبت صدوق‬،‫ ال يرويها غيره‬،‫ وقد روى أحاديث ينفرد بها يرويها‬،‫أحد علماء الشام‬.
এছাড়া এ রেওয়ায়েত দুটি মৌলিক কারণে মা’লুল। এক. রেওয়ায়েতটি মুরসাল
এবং এর সমর্থনে অন্য সনদে বর্ণিত কোনো মারফূ হাদীস বা আছর পাওয়া যায়
না। ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইল এর বর্ণনা
এবং হুলব রা. এর হাদীসের মুসনাদে আহমদের বর্ণনাকে এর সমর্থনে পেশ করা
হয়, কিন্তু ইতিপূর্বে দেখানো হয়েছে যে, এ দুটো বর্ণনা শায ও মুনকার। আর শায,
মুনকার রেওয়ায়েত শাহিদ (সমর্থক বর্ণনা) হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। দুই. মুসলিম
জাহানের কোনো প্রসিদ্ধ ফকীহ ও মুজতাহিদ ইমাম বুকের উপর হাত বাঁ ধাকে
সুন্নাহ বলেছেন এমনটা পাওয়া যায় না। এমনকি শাম অঞ্চলের বিখ্যাত ফকীহদের
থেকেও পাওয়া যায় না। অথচ উপরোক্ত মুরসাল রেওয়ায়েতের সবকজন রাবী
শাম ও শামের নিকটবর্তী অঞ্চলের এবং অধিকাংশ রাবীরই ফকীহ-পরিচিতি
রয়েছে। কিন্তু না শামের ফকীহগণ বুকের উপর হাত বাঁ ধার ফতোয়া দিয়েছেন, না
শামের সাধারণ আলিমগণ এই নিয়মের সাথে পরিচিত ছিলেন। এটি এ
রেওয়ায়েতের একটি ‘ইল্লত’ (ত্রুটি), যাকে পরিভাষায় ইল্লতে মান’বিয়্যাহ বা
শুযূযে মানবী বলে। উল্লেখ্য, ইমাম শাফেয়ী রাহ. সম্পর্কে কোনো কোনো কিতাবে
বলা হয়েছে যে, তাঁ র মাযহাব, বুকের উপা হাত বাঁ ধা। এই বর্ণনা সঠিক নয়। ইমাম
শাফেয়ী রাহ.-এর মাযহাব হচ্ছে বুকের নীচে (নাভীর উপর) হাত বাঁ ধা। ইমাম নববী
রাহ. বলেন- ‫ وفيه وجه مشهور‬،‫ هذا هو الصحيح المنصوص‬،‫ويجعلهما تحت صدره وفوق سرته‬
‫ والمذهب األول‬،‫ألبي إسحاق المروزي أنه يجعلهما تحت سرته‬. -আলমাজমু শরহুল মুহাযযাব
৩/২৬৮। আরো দেখুন : আলমিনহাজ ‘আননাজমুল ওয়াহহাজ-এর সাথে মুদ্রিত’
২/১৮০; আলমাজমূ ৩/২৬৯ সারকথা রেওয়ায়েতসমূহের পর্যালোচনা থেকে যা
পাওয়া গেল তা এই- ১. ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত হাদীসের বিশুদ্ধ
বর্ণনায় ‫ على صدره‬নেই। কারণ সুফিয়ান ছাওরী রাহ. থেকে দু’জন শক্তিশালী রাবী
আবদুল্লাহ ইবনুল ওয়ালীদ ও মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ এবং সুফিয়ান ছাওরীর
উস্তাদ আসিম ইবনে কুলাইব থেকে অন্তত ১১জন ইমাম ও ছিকা রাবী এই
হাদীসের হাত বাঁ ধার বিবরণ বর্ণনা করেছেন। তাঁ দের কারো বর্ণনায় ‫ على صدره‬নেই।
একমাত্র মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাঈলের বর্ণনায় এটা পাওয়া যায়, যার বর্ণনার ভু ল-
ভ্রান্তি সম্পর্কে জারহ-তাদীলের ইমামগণ বিশেষভাবে সাবধান করেছেন। এ কারণে
হাদীসশাস্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী তাঁ র বর্ণনার অতিরিক্ত অংশটি ‘মুনকার’ ও
অগ্রহণযোগ্য। ২. হুলব রা. থেকে বর্ণিত হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনাতেও ‫ على صدره‬নেই।
শুধু মুসনাদে আহমদে ও যেসব কিতাবে মুসনাদে আহমদের সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা
করা হয়েছে সেইগুলোতেই হাদীসটি ‫ على صدره‬সহ পাওয়া যায়। এই হাদীসের
অন্যান্য বর্ণনার সাথে তু লনা করলে এমনকি মুসনাদে আহমদের বর্ণনাটিও
গভীরভাবে পাঠ করলে প্রতীয়মান হয় এই হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনায় ‫ على صدره‬নেই।
৩. সূরা কাউসারের তাফসীরে হযরত আলী রা. থেকে যে রেওয়ায়েত বর্ণনা করা
হয় তা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। সনদ-মতন দুদিক থেকেই তা ‘মুযতারিব’।
এই হাদীসের ‫ على صدره‬ওয়ালা রেওয়ায়েতটিকে কোনোভাবেই অগ্রগণ্য সাব্যস্ত
করা যায় না। শায়খ আলবানী সনদের ইযতিরাব স্বীকার করেছেন, কিন্তু মতনের
ইযতিবাব খন্ডন করতে গিয়ে এমন কিছু কাজ করেছেন, যা দুঃখজনক। ৪.
সুলায়মান ইবনে মুসার সূত্রে বর্ণিত যে মুরসাল রেওয়ায়েতটি উদ্ধৃ ত করা হয়,
তাউস রাহ. পর্যন্ত এর সনদ মোটামুটি গ্রহণযোগ্য হলেও তা অন্তত দুটো কারণে
‘মা’লূল’। সুতরাং তা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

====================================

নামাযে কিয়াম অবস্থায় কোথায় হাত রাখা সুন্নাত?

*********************************

নামাযে হাত কোথায় রাখা সুন্নাত, এ ব্যপারে ইমামদের মাঝে মতভেদ আছে। ইমাম
শাফেয়ির মতে নাভীর উপরে বুকের নিচে হাত রাখা সুন্নাত এবং এটাই তার
বিশুদ্বতম মত। ইমাম মালীকের মতে হাত না বেধে ছেড়ে দেয়া সুন্নাত। ইমাম
আহমাদ ইবনে হাম্বলের মতে নাভীর উপরে বা নিচে যে কোন এক জায়গায় রাখলে
সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আবু ইউসূফ, ইয়াম
মুহাম্মদ,সুফয়ান সাওরী, ইসহাক ইবনে রাহবিয়াহ এবং আবু ইসহাক মযুরী
(শাফেয়ী) এবং অসংখ্যা ফোকায়ে কেরামের মতে নাভীর নিচে হাত বাধা সুন্নাত।
(ইলাউস সুনান ২য় খন্ড ১৯১পৃ, মাআরিফুসসুনান ২য় খন্ড ৪৩৬ পৃ) আমাদের
দেশে আহলে হাদিস নামধারি কিছু লোক এ ব্যাপারে অতিরঞ্জিত শুরু করেছে।
তারা বলে বুকের উপর হাত বাধা সুন্নত এবং নাভীর নিচে হাত বাধার সবগুলো
হাদীস দুর্বল এবং এ ব্যাপারে কোন ছহীহ হাদিস নেই। (ভূ মিকা, সালাতে নারী
পুরুষের বুকে হাত বাধা), অথচ নাভীর নিচে হাত বাধা ছহীহ হাদীছ এবং রসূল
(সাঃ) এর পবিত্র আমল দ্বারা প্রমাণিত এবং বুকের উপর হাত বাধার দলীল এর
চেয়ে নাভীর নিচে হাত বাধার দল অনেক বেশী শক্তিশালী। বিখ্যাত মুহাদ্দিস আবু
তৈয়ব মাদানি তিরমিযি শরীফের ব্যাখা গ্রন্থে বলেন চার ইমামের কোন ইমাম বুকের
উপর হাত বাধতে বলেননি। বুকের উপর হাত বাধার হাদীস যদি এতই শক্তিশালী
হত, তাহলে কোন না কোন ইমাম বুকের উপর হাত বাধা সুন্নাত বলত। (ফাইযুল
বারী শরহে বুখারী ১ম খন্ড ৬১৪পৃ,তানজিমুল আসতাত শরহে মিশকাত ৩০১পৃ,
মারেফুস সুনান ২য় খন্ড ৪৩৬, )

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বুকের উপর হাত রাখাকেমাকরুহ মনে করেন
(মাসায়েলে আবু দাউদ লিল ইমাম আহমদ (র) ৪৭-৪৮পৃ)

নিম্নে হাদিসের বিশুদ্ব এবং গ্রহণযোগ্য কিতাব সমুহ হতে নাভীর নিচে হাত বাধার
হাদিস সমুহ উল্লেখ করা হল।

১নং দলীলঃ

‫عن ابي حازم عن سهل بن سعد (رض) قال كان ناس يومرون ان يضع الرجل اليد اليمني علي‬
‫ذراعه اليسري في الصالة قال ابو حازم ال أعلمه أال ينمي ذلك الي النبي صلي هللا عليه وسلم‬

“সাহাবী সাহাল বিন সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন মানূষদের কে নামাযে ডান
হাত কে বাম হাতের উপর রাখতে রাখতে নির্দে শ দেয়া হয়েছে।

আবু হাজিম বলেন সাহাল এই হাদিছ টি রসূল(স) এর থেকে বর্ণনা করতেন।


(বুখারী ১ম খন্ড,১০২ পৃ)

উক্ত হাদিছে ডান হাত কে বাম যিরার উপর রাখতে নির্দে শ প্রদান করা হয়েছে।
কিন্তু হাত কোথায় রাখবে, নাভির উপরে না নাভীর নিচে, সে সম্পর্কে । উক্ত হাদিসে
কিছু বলা হয়নি। এখন আমাদের বুঝা দরকার যে আরবী তে “যিরা” শব্দের অর্থ
কি? কনুই থেকে মধ্যমা আঙু ল পর্যন্ত অংশ কে আরবি তে যিরা বলা হয়।
(মিছবাহুল লুগাত,মুজামুল ওয়াসিত,আল মুনযিদ)।

সে হিসাবে উক্ত হাদিসটি কোনভাবেই হানাফি মাযহাবের বিরোধী নয়, কারণ


আমরা নাভীর নিচে ডান হাত কে বাম হাতের কব্জির উপর রাখি এবং কবজি
নিংসন্দেহে “যিরা” এর অন্তর্ভূ ক্ত। সুতরাং কোন ভাবেই উক্ত হাদিস আমাদের
বিরোধী নয় এবং আমরা উক্ত হাদীস মতি আমল করে থাকি। তবে যেহেতু উক্ত
হাদিসে স্পষ্ট করে হাত কোথায় রাখা উচিত তা বলা হয়নি, সে জন্য আমাদের কে
এ ব্যপারে সুস্পষ্ট হাদিস এবং সাহাবায়ে কেরাম এর আমল দেখতে হবে।

উল্লেখ্য যে কিছু লোক উক্ত হাদিস দ্বারা নামাজে বুকের উপর হাত রাখাকে সুন্নাত
প্রমাণ করতে চায়, অথচ উক্ত হাদিসে বুকের উপর হাত রাখা বিষয়ক কোন শব্দ
নেই। সুতরাং উক্ত হাদিস দ্বারা বুকের উপর হাত রাখা কোনভাবেই প্রমাণিত হয়না।

২ নং দলীলঃ

‫ ثم وضع يده اليمني علي ظهر كفه اليسري والرسغ والساعد‬: ‫عن واأل بن حجر في حديث طويل‬

“ওয়াইল ইবনে হাজর থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসে শেষে তিনি বলেন, অতঃপর রসুল
(স) ডান হাত কে বাম হাতের কবজি এবং বাহুর উপর রেখেছেন। ইমাম আবু
দাউদ হাদিসটি উল্লেখ করে নিরবতা পালন করেছেন”।

(আবু দাউদ ১ম খন্ড ১০৫পৃ, ছহীহ ইবনে খুযাইমা হাদিস নং ৪৮০

৮৮নং অধ্যায় ১ম খন্ড ২৪৩পৃ, মাআরেদে জামান হাদিস নং ৪৪৭ অধ্যয় নং ৬৩


১ম খন্ড ১২৪পৃ)

৩নং দলীলঃ

‫ ثم وضع يده اليمني علي يده اليسري في الصالة قريبا من الرسغ‬: ‫عن واأل بن حجر في حديث طويل‬
অনুবাদঃ ওয়াইল ইবনে হাজর থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসে শেষে তিনি বলেন
অতঃপর রসুল (স) নামাযে ডান হাত কে বাম হাতের কবজির কাছে রেখেছেন।
(তালখিসুল হাবির ১ম খন্ড ২২৪ পৃ হাদিস নং ৩৩২, এলাউস সুনান ২য় খন্ড
১৯০পৃ)

৪ নং দলীলঃ

‫عن قبيصة بن هلب عن ابيه قال كان رسول هللا صلي هللا عليه وسلم يومنا فياخذ شماله بيمينه رواه‬
‫الترمزي وقال حسن والعمل علي هذا عند أهل العلم من اصحاب النبي صلي هللا عليه وسلم والتابعين‬
‫ومن بعدهم يرون ان يضع الرجل يمينه علي شماله في الصالة وراي بعضهم ان يضعهما فوق السرة‬
‫وراي بـعضهم ان يضعهما تحت السرة وكل ذلك واسع عندهم‬

অনুবাদঃ কুসাইবা ইবনে হালাব (র) থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা
করেন যে রসুল (স) আমাদের নামাযের ইমামতি করতেন এবং ডান হাত দ্বারা বাম
হাত কে আকড়ে ধরতেন।

ইমাম তিরমিযি বলেন যে এই হাদিসটি হাসান এর পর্যায়ে। সাহাবায়ে কেরাম ইহার


উপর আমল করতেন এবং ডান হাত কে বাম হাতের উপর রাখা কে সুন্নাত মনে
করতেন। তবে কেহ নাভীর উপর রাখা কে সুন্নাত মনে করেন এবং কেহ নাভীর
নিচে রাখা কে সুন্নাত মনে করেন। তবে উভয় পদ্বতির উপর আমল করা যায়েয
হবে। (তিরমিযি শরীফ ১ম খন্ড ৩৪পৃ)

৫নং দলীলঃ

‫حدثنا يزيد بن هارون قال أنا الحجاج بن حسان قال سمعت أبامجلز أو سألته قلت كيف يضع؟ قال‬
‫يضع باطن كف يمينه علي ظاهر كف شماله ويجعلهما اسفل عن السرة‬

হাজ্জাজ ইবনে হাসসান বর্ণনা করেন যে আমি আবু মুজলিজ কে জিজ্ঞেস করলাম
যে রসুল (স) নাযাজে হাত কোথায় রাখতেন?
তিনি উত্তর দিলেন যে রসুল (স) নাভীর নিচে ডান হাতের কবজি কে বাম হাতের
কব্জির উপর রাখতেন। আল্লামা ইবনে আবি শায়বা হাদিস টি কে ছহীহ বলে
আখ্যায়িত করেছেন।( মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১ম খন্ড ৩৯০-৩৯১পৃ, আল
যাওহারুন নকী ২য় খন্ড ৩১পৃ)

৬ নং দলীলঃ

‫قال العالمة ابن التركماني ومذهب ابي مجلز الوضع اسفل السرة حكاه عنه ابو عَمر في التمهيد وجاء‬
‫ذلك عنه بسند جيد‬

আল্লামা ইবনে তু রকুমানি বলেন আবু মুযলিজ সাহাবীর আমল ছিল যে তিনি
নাভীর নিচে হাত রাখতেন। আবু আমর “তামহিদ” নামক কিতাবে তা বর্ণনা করেন
এবং উক্ত হাদিস টি তার থেকে বিশুদ্ব সনদে বর্ণিত হয়েছে।

(বাযলুল মাযহুদ শরহে আবু দাউদ ৪র্থ খন্ড ৪৭৭ পৃ, এলাউস সুনান ২য় খন্ড
১৯২পৃ)

৭নং দলীলঃ

‫حدثنا وكيع عن ربيع عن ابي معشر عن ابراهيم قال يضع يمينه علي شماله تحت السرة رواه ابن ابي‬
‫شيبة واسناده حسن‬

“প্রসিদ্ব তাবেয়ি ইব্রাহিম নাখয়ী থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে রসুল (স) নাভীর নিচে
ডান হাত কে বাম হাতের উপর রাখতেন। এ হাদিসের সনদটি হাসান। (আসারুস
সুনান ১ম খন্ড ৭১পৃ, আসারে মুহাম্মদ ইবনুল হাসান শাইবানি ২৫ পৃ)”

৮নং দলীলঃ

‫عن ابي حجيفة ان عليا (رض) قال السنة وضع الكف علي الكف في الصالة تحت السرة‬
“আবূ যূহাইফা (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আলী (র) বলেছেন যে সুন্নাত হল
নামাযে নাভীর নিচে এক হাত কে আরেক হাতের উপর রাখা। (মুসনাদে আহমদ
১ম খন্ড ১১০পৃ, বায়হাকি শরীফ ২য় খন্ড ৩১পৃ, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১ম
খন্ড ৩৯১ পৃ )

উক্ত হাদিস টি আবু দাউদ শরীফে ও বর্ণিত হয়েছে তবে সেটি “ইবনুল আরাবী”
এর পান্ডু লিপিতে আছে, “লুলয়ী” এর পান্ডু লিপিতে নয়। (এলাউস সুনান ২য়
খন্ড১৯৩পৃ, তাকরিরে তিরমিযী ২য় খন্ড ২৪পৃ)

উল্লেখ্য যে উসূলে হাদিস অনুযায়ী যখন কোন সাহাবী রসুল (স) এর কোন আমল
কে “সুন্নাত” বলে আখ্যায়িত করে তখন হাদিসটি মারফু হাদিস এর হুকুমে হয়ে
যায়। সে হিসাবে উক্ত হাদিসটি মারফু হাদিস।

এখানে একটি প্রশ্ন আছে। তা হল ইমাম আবু দাউদ উক্ত হাদিস বর্ণনা শেষে বলেন,
আমি ইমাম আহমদ ঈবণে হাম্বল থেকে শুনেছি যে তিনি আব্দুর রহমান ইবনে
ইসহাক কূফি কে জয়ীফ বলেছেন।

উক্ত প্রশ্নের জবাবে বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা আজলী বলেন আব্দুর রহমান ইবনে
ইসহাক কূফি রাবী হিসাবে কিছু টা দুর্বল হলেও তার তার হাদিস গ্রহণ করা যাবে।

আল্লামা জালালুদ্দিন সূয়ুতি বলেন মুসনাদে আহমদের সমস্ত হাদিস গ্রহণযোগ্য,


তাছাড়া সেখানে কিছু হাদিসের মধ্যে সামাণ্যতম দূর্বলতা থাকলেও সে গুলো
“হাসান” এর পর্যায়ে। (কানযুল উম্মাল ১ম খন্ড ৯পৃ)

ইবনুল হাজম এবং আল্লামা তাকী উস্মানি বলেন হজরত আলীর উক্ত হাদিসে
কিছু টা দুর্বলতা থাকলেও যেহেতু বিভিন্ন সাহাবায়ে কেরাম যেমন হজরত আবু
মুযলিজ,হযরত আনাস এবং হজরত আবু হুরায়রা সহ আরো অনেকে তাবেয়ির
আমলের দ্বারা নাভীর নিচে হাত বাধা সাব্যাস্ত এবং প্রমানিত, সেহেতু উক্ত হাদিস টি
গ্রহণযোগ্য এবং বিশুদ্ব।( মহল্লি ১৩পৃ ৪র্থ খন্ড, তাকরিরে তিরমিযি ২য় খন্ড ২৪পৃ,
এলাউস সুনান ২য় খন্ড ১৯৩পৃ)
৯ নং দলীলঃ

‫عن أنس رضي هللا عنه قال ثالث من اخالق النبوة تعجيل االفطار وتاخير السحور ووضع اليد اليمني‬
‫علي اليسري في الصالة تحت السرة‬

“হজরত আনাস (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে তিনটি জিনিষ নবীদের সুন্নাত।
প্রথম হল ইফতারের সময় হলে বিলম্ব না করা, দ্বিতীয় হল ভোর রাত্রে শেষ সময়ে
সেহরি খাওয়া এবং নামাযে নাভীর নিচে ডান হাত কে বাম হাতের উপর রাখা”
(আল যাওহারুন নকী ২য় খন্ড ৩১ও ৩২ পৃ)

১০ নং দলীলঃ

‫عن ابي واءل (رض) قال قال ابو هريرة (رض) اخذ االكف علي االكف في الصالة تحت السرة‬

“আবু ওয়াইল (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে আবু হুরায়রা (র) বলেছেন যে
নামাযে নাভীর নচে কব্জির উপর হাত রাখা সুন্নাত। (আবু দাউদ ১ম খন্ড ২৭৫পৃ)

আল্লামা শাওকানী বলেন নামাযে হাত বাধা সম্পর্কে আবু ওয়াইল এর উক্ত
হাদিসের চেয়ে আর কোন সহীহ হাদিস নেই। (এলাউস সুনান ২য় খন্ড ১৯৫পৃ)

১১ নং দলীলঃ

‫ رأيت النبي صلى هللا عليه وسلم يضع يمينه على‬: ‫عن وائل بن حجر عن ابيه رضي هللا عنه قال‬
‫شماله في الصالة تحت السرة‬

ওয়াইল বিন হাজর (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে আমি রসুল (স) কে দেখেছি
যে তিনি নামাযে নাভীর নিচে ডান হাত কে বাম হাতের উপর রেখেছেন। (মুসান্নাফে
ইবনে আবি শায়বা ১ম খন্ড ৩৯পৃ)
হাফেযুল হাদিস আল্লামা কাসেম ইবনে কাতলুবুগা উপরোক্ত হাদিস সম্বন্ধে বলেন
উক্ত হাদিসটি বুকের উপর হাত রাখার হাদিসের চেয়ে অধিক শক্তিশালী এবং
ছহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে।

বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা নিমী তালিকুল হাসান কিতাবে বলেন যে উক্ত হাদিসটি
যদিওবা মতন এর দিক দিয়ে কিছু টা দুর্বল, তবুও সেটি বুকের উপর হাত রাখার
হাদিসের চেয়ে অধিক শক্তিশালী এবং এর সনদ মযবুত।

আল্লামা আবু তৈয়ব মাদানি তিরমিযি শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন উক্ত হাদিসটি
সনদের দিক দিয়ে অধিক শক্তিশালী।

শেখ আবেদ সিন্দি তাওয়ালিয়ুল আনওয়ার কিতাবে বলেন উক্ত হাদিসের রাবীগণ
নর্ভ রযোগ্য। (ফাতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম ৩য় খন্ড ৩০৮ পৃ, তানযিমুল আস্তাত
শরহে মিশকাত ১ম খন্ড ৩০২)

‫ أنه كان يضع يده اليمنى على يده‬: ‫ عن إبراهيم‬،‫ عن أبي معشر‬،‫ أخبرنا الربيع بن صبيح‬: ‫قال محمد‬
‫ باب الصالة‬،‫ (كتاب الصالة‬.‫ وبه نأخذ وهو قول أبي حنيفة رحمه هللا‬: ‫ قال محمد‬.‫اليسرى تحت السرة‬
‫قاعدا والتعمد على شيء أو يصلي إلى ستر‬

“ইব্রাহিম নাকয়ী থেকে বর্ণিত আছে তিনি নাভীর নিচে ডান হাত কে বাম হাতের
উপর রাখতেন। (কিতাবুল আসার হাদিস নং ১২১)

ইমাম ইবনে কুদামা হাম্বলী (রাহ) (৬২০ হি.) বলেন, নামাযে কোথায় হাত বাঁ ধা হবে
এ বিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনা আছে। (ইমাম) আহমদ (রাহ) থেকে বর্ণিত, দুই হাত নাভীর
নিচে রাখবে। এটি (হযরত) আলী রা., আবু হুরায়রা রা., আবু মিজলায রাহ.,
ইবরাহীম নাখায়ী রাহ., (সুফিয়ান) ছাওরী রাহ., ইসহাক (ইবনে রাহুয়াহ) রাহ. থেকে
বর্ণিত। (আলমুগনী ২য় খন্ড ১৪৩পৃ)
শায়খ আবুল হুসাইন ইয়াহইয়া ইবনে আবুল খায়ের রাহ. (মৃত্যু ৫৫৮ হি.) বলেন,
(ইমাম) আবু ইসহাক (আলমারওয়াযী) রাহ. বলেছেন, ‘এক হাত অন্য হাতের উপর
নাভীর নিচে রাখবে।(আলবায়ান ফী মাযাহিবিল ইমামিশ শাফেয়ী ২/১৭৫)

উল্লেখ্য, ইমাম আবু ইসহাক আলমারওয়াযী রাহ. শাফেয়ী মাযহাবের একজন


প্রসিদ্ধ মনীষী। ইমাম শাফেয়ী রাহ. নাভীর উপর (বুকের নিচে) হাত বাঁ ধার নিয়ম
গ্রহণ করলেও আবু ইসহাক মারওয়াযী নাভীর নিচে হাত বাঁ ধার নিয়মকেই অগ্রগণ্য
মনে করেছেন।

ইমাম নববী রাহ. (৬৭৬ হি.) বলেন, (ইমাম) আবু হানীফা, (সুফিয়ান) ছাওরী ও
ইসহাক (ইবনে রাহুয়াহ) বলেন, ‘দুই হাত নাভীর নিচে রাখবে। আমাদের (শাফেয়ী
মাযহাবের) মনীষীদের মধ্যে আবু ইসহাক আলমারওয়াযী রাহ.ও তা গ্রহণ
করেছেন। আর ইবনুল মুনযির তা বর্ণনা করেছেন আবু হুরায়রা, (ইবরাহীম)
নাখায়ী ও আবু মিজলায রাহ. থেকে।

সুতরাং উপরোক্ত হাদিস সমূহের দ্বারা এ কথা স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে নাভীর
নিচে হাত রাখা রসুল (স) থেকে প্রমাণিত এবং সাহাবা এবং তাবেইন দের যুগে
এটার উপর ব্যাপকভাবে আমল হয়েছে এবং খায়রুল করুনের বিশিষ্ট ইমামগণ
এটাকে প্রাধাণ্য দিয়েছেন।

বুকের উপর হাত রাখার হাদিস সমুহ

‫عن واءل بـن حجر رضي هللا عنه قال صليت مع النبي صلي هللا عليه وسلم فوضع يده اليمني علي‬
‫يده اليسري علي صدره‬

“ওয়াইল ইবনে হাজর (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রসুল (স) এর সাথে
নামায পরেছি। তিনি বুকের উপর ডান হাতের উপর বাম হাত কে রেখেছেন”।
(ছহীহ ইবনে খুযাইমা ১ম খণ্ড ২৪৩পৃ)
উক্ত হাদিস সমবন্ধে মুহাদ্দিসিনে কেরাম কালাম করেছেন এবং উক্ত হাদিস্টি কে
সনদ হিসাবে খুবই দুর্বল হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। নিচে আমি সে সম্পর্কে
আলোচনা করছি।

(বুকের উপর) শব্দটি বাস্তবে হাদিসে নেই।‫علي صدره‬বলেন আল্লামা নিমী

কারণ উক্ত হাদিসটি মোট সাত টি সুত্রে বর্ণিত হয়েছে অর্থাৎ বিভিন্নজন
হাদিসটিকে বিভিন্ন সুত্রে বর্ণনা করেছেন।

১ ইমাম আহমদ তার মুসনাদে আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়ালিদের সুত্রে হাদিসটি বর্ণনা
করেছেন।

২ ইমাম নাসায়ী “জায়েদা” এর সুত্রে বর্ণনা করেছেন।

৩ ইমাম আবু দাউদ বশর ইবনে মুফাদ্দাল এর সুত্রে বর্ণনা করেছেন।

৪ ইবনে মাজা তে আব্দুল্লাহ ইবনে ইদ্রিস এবং বশর ইবনে মুফাদ্দাল এর সুত্রে
বর্ণনা এসেছে।

৫ আহমদ আব্দুল ওয়াহিদ,জুহাইর এবং এবং শুবা এর সুত্রে বর্ণনা করেছেন।

৬ “মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালসি” তে সালাম ইবনে সালিম এর সুত্রে হাদিসটি


বর্ণিত হয়েছে।

৭ ছহীহ ইবনে হাব্বানে শু’বা এর সুত্রে হাদিস টি বর্ণিত হয়েছে।

উপরের সাতটি সুত্রের কোনটি তে ‫ علي صدره‬বা বুকের উপর হাত রাখা শব্দটি নেই।
একমাত্র মোমিল ইবনে ইস্মাইল এর সুত্রে বর্ণনাকৃত হাদিসে “বুকের উপর হাত
রাখা” শব্দটি আছে। তাছাড়া উপরোক্ত রাবীগণ মুমিলের চেয়ে অধেক গ্রহণযোগ্য।
সুতরাং এতগুলো রাবির বীপরিতে মুমিলের মত একজন দুর্বল রাবির বর্ণনা
গ্রহণযোগ্য হবেনা। (ফাতহুল মুলহিম ৩য় খন্ড ৩০৪পৃ, মারেফুস সুনান ২য় খন্ড
৪৩৮পৃ,তানযিমুল আস্তাত ১ম খন্ড ৩০২পৃ, তাকরিরে তিযমিযি ২য় খণ্ড ২২পৃ)

বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম বলেন একমাত্র মুমিল ইবনে ইস্মাইল
ব্যতিত অন্য কেহ বুকের উপর হাত রাখা শব্দটি বর্ণনা করেনি। একমাত্র তিনিই
উক্ত শব্দটি বৃদ্বি করেছেন। সুতরাং সমস্ত রাবীর বিপরিতে মোমিলের মত একজন
দুর্বল রাবীর বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। (এলামুল মুয়াক্কিয়িন ২য় খন্ড
৩১২পৃ,তালিকুল হাসান ১ম খন্ড ৬৫পৃ)

তাছাড়া রাবী যদি বিশ্বস্ত ও হন তারপরেও তিনি যদি অণ্যান্য গ্রহণযোগ্য রাবী
অথবা তার চেয়ে শক্তিশালী রাবীর বিরোধিতা করেন তাহলে তার বর্ণনা গ্রহণযোগ্য
হবেনা। এখানে তাই হয়েছে।

মুমিল ইবনে ইস্মাইল কে মুহাদ্দিসিনে কেরাম রাবি হিসাবে খুবই দুর্বল বলেছেন।
আল্লাম নিমী বলেন মুমিল ইবনে ইস্মাইল কে বহু মুহাদ্দিস দুর্বল বলেছেন। প্রখ্যাত
মুহাদ্দিস ও ফকীহ আল্লামা যাহবী “কাশিফ” নামক কিতাবে বলেন মুমিল একজন
সত্যবাদি রাবি কিন্তু তার প্রচু র ভূ ল আছে। তার সম্পর্কে বলা হয়েছে তার কিতাব
সমুহ কে মাটির নিচে দাফন করে ফেলা হয়েছিল। ফলে তিনি মুখস্ত হাদিস বর্ণনা
করতেন এবং ভূ ল করতেন।

হাফেযুল হাদিস আল্লামা ইবনুল হাজল আস্কালানি “তাহযিবুত তাহযিব” নামক


কিতাবে বলেন ইমাম বুখারি তার সম্পর্কে বলেছেন মুমিল একজন হাদিস
আস্বীকারকারী। আল্লামা ইবনুল সাদ বলেন মুমিল গ্রহণযোগ্য, কিন্তু তার প্রচু র ভূ ল
হয়েছে। আল্লামা ইবনুল কানে বলেন মুমিল গ্রহণযোগ্য কিন্তু বেশি ভূ ল করে। ইমাম
দারে কুত্নি তার সম্পর্কে বলেন গ্রহণযোগ্য কিন্তু বেশি ভূ ল করে। আল্লামা আবু
যারআ এবং আবু হাতিম ও অনুরুপ কথা বলেছেন। তাকরিব নামক কিতাবে তার
সম্পর্কে বলা হয়েছে সত্যবাদি কিন্তু তার স্বরণশক্তি খুব খারাপ। আল্লামা ইবনুত
তু রকামানি “আলজাওহারুন নাকী” নামক কিতাবে বলেন তার সমস্ত কিতাব
দাফন করে ফেলা হয়েছিল। ফলে তিনি মুখস্ত হাদিস বর্ণনা করতেন এবং প্রচু র
ভূ ল করতেন। মুহাম্মদ ইবনে নসর আল মারুযি বলেন কোন হাদিস যদি শুধুমাত্র
মুমিল থেকে বর্ণিত হয় তাহলে সে হাদিস সম্পর্কে নিরবতা অব্লম্বন জরুরী। কারণ
তার স্বরণশক্তি খুব দুর্বল এবং সে প্রচু র ভূ ল করে।

(ফাতহুল মুলহিম ৩য় খন্ড ৩০৪পৃ, আল উরফুস সুযি ১ম খন্ড২৯০পৃ, মারিফুস


সুনান ২য় খন্ড ৪৩৫পৃ, বাযলুল মাযহুদ ২য় খন্ড ২৬পৃ, আসারুস সুনান ৬৫পৃ,
তানযিমুল আস্তাত ১ম খন্ড ৩০২পৃ)

মুমিল ইবনে ইস্মাইল এর উক্ত বর্ণনা ভূ ল হওয়ার আরেকটি প্রমাণ হল উক্ত


রেওয়াআতটি মুমিল সুফিয়ান সাওরি থেকে বর্ণনা করেছেন এবং সুফিয়ান
সাওরির মাযহাব ছিল নাভীর নিচে হাত রাখা। সুতরাং উক্ত কথার দ্বারা স্পষ্ট বুঝা
যায় যে মুমিল নিজের থেকে “বুকের উপর” শব্দটি বাড়িয়ে দিয়েছেন।(শরহুল
মুন্তাকা ২য় খন্ড ২৭৮পৃ, মারেফুস সুনান ৪৩৮পৃ)

শায়খ নাসিরুদ্দিন আল্বানিও উক্ত হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন।


(সূত্র http://www.masjidsalauddin.com)

তবে মুসনাদে বাজ্জারে একটি বর্ণনা আছে যেখানে উক্ত হাদিসে ‫( عند صدره‬বুকের
কাছে) শব্দ আছে।

এটার জবাব হল উক্ত হাদিসের ভিত্তি হল মুহাম্মদ ইবনে হাজর এর উপর। প্রখ্যাত
মুহাদ্দিস আল্লামা যাহবি তার সম্পর্কে বলেন, তার বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং
উক্ত বর্ণনাটিও গ্রহণযোগ্য নয়। (আযযাওয়াইদ ২য় খন্ড ৩৫পৃ,তাকরিরে তিরমিযি
২য় খন্ড ২২পৃ)

২য় দলীলঃ

‫عن ابن عباس في قوله تعالي فصل لربك وانحر قال وضع اليمين علي الشمال عند النحرفي الصالة‬

‫رواه البـيهقي في سننه‬


“ইবনে আব্বাস (র) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি উক্ত আয়াতের তাফসিরে বলেন
নামাযে বুকের কাছে ডান হাত কে বাম হাতের উপর রাখবে”। (বায়হাকী শরীফ)

উক্ত হাদিসের সনদ কে মুহাদ্দিসিনে কেরাম অত্যান্ত দুর্বল বলেছেন। কারণ উক্ত
হাদিসের সনদে “রুহ ইবনুল মুসাইয়য়াব” নামে একজন দুর্বল রাবি আছেন যিনি
হাদিস শাস্ত্রে পরিত্যক্ত। আল্লামা ইবনে হাব্বান বলেন তিনি জাল হাদিস বর্ণনা
করেন। সুতরাং তার হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লামা ইবনে আদি বলেন তার
হাদিসগুলো সংরক্ষিত নয়। এভাবে তিনি হজরত আলী (র) থেকে এরকম যে
সকল হাদিস বর্ণনা করেছেন সবগুলোর একই হুকুম। আল্লামা ইবনে তু রকুমানি
বলেন উক্ত হাদিসের সনদে ইযতিরাব আছে। আল্লামা মারদিনি “আল জাওহারুন
নকি” নামক কিতাবে প্রমাণ করেছেন যে উক্ত হাদিসের সনদ এবং মতন
উভয়টিতে ইযতিরাব আছে। আল্লামা ইবনে কাসির উক্ত তাফসির কে বর্ণনা করে
বলেন যে উক্ত তাফসিরটি সঠিক নয়। বরং উক্ত আয়াতের সঠিক তাফসির হল
কোরবানির দিন কোরবানির জন্তু জবেহ করা।

(তাফসিরে ইবনে কাসির ৪র্থ খন্ড ৫৫৮পৃ, তালিকুল হাসান ১ম খন্ড ৪৯পৃ, এলাউস
সুনান ২য় খন্ড ২০০পৃ, তানযিমুল আস্তাত ১ম খন্ড ৩০২পৃ, আল ফাতহুর রাব্বানি
৩য় খন্ড ১৭৪পৃ, আলজাওহারুন নকি ২য় খন্ড ৩০পৃ, তাকরিরে তিরমিযি ২য় খন্ড
২৩পৃ, মারিফুস সুনান ২য় খন্ড ৪৩৮পৃ,ফাতহুল মুলহিম ৩য় খন্ড ৩০৫পৃ)

৩য় দলীলঃ

‫عن هلب رض كان النبي صلي هللا عليه وسلم ينصرف عن يمينه وعن شماله ويضع هذه علي صدره‬

হুলুব (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রসুল (স) বুকের উপর হাত রেখেছিলেন।

আল্লামা নিমি “আসারুস সুনান” নামক কিতাবে শক্তিশালী দলীল দিয়ে এ কথা
প্রমান করেছেন যে উক্ত বর্ণনার শব্দে পরিবর্ত ন সাধিত হয়েছে। আসল করা
হয়েছে। সুতরাং উক্ত ‫ ويضع هذه علي صدره‬যেটাকে ভূ লে ‫ يضع هذه علي هذه‬বর্ণনা দ্বারা
দলীল দেওয়া ঠিক হবেনা।
সুতরাং নামাযে বুকের উপর হাত রাখার যে তিনটি দলীল বর্ণিত হয়েছে তিনটি
হাদিসেই সনদের দিক দিয়ে অত্যান্ত দুর্বল যা উপরে বিস্তারির আলোচনা হয়েছে।

সার কথা

সাহাবায়ে কেরাম এবং ইসলামের স্বর্ণ যুগ তথা কুরুনে সালাসার আমল দেখলে
আমরা এ ব্যপারে দু ধরণের আমল দেখতে পাই। প্রথমটি হল নাভীর নিচে হাত
বাধা এবং দ্বিতীয়টি হল নাভীর উপর বুকের নিচে হাত বাধা। উভয়টি সালাফ থেকে
প্রমাণিত এবং উভয়টির উপর আমল করা যাবে যেমন ইমাম তিরমিযি
(র)বলেছেন। তবে নাভীর নিচে হাত বাধার দলীল অধিক শক্তিশালী যা উপরে
বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে বুকের উপর হাত রাখা সালাফ থেকে প্রমাণিত
নয় এবং দু একটি বিচ্ছিন্ন বর্ণনায় তা এসেছে যা অত্যান্ত দুর্বল। ইমাম মালেক
বুকের উপর হাত রাখাই মাকরুহ বলেছেন। যদি বুকের উপর হাত রাখার সহিহ
কোন দলীল থাকত তাহলে তিনি কখনো এটিকে মাকরুহ বলতে পারতেননা।

এখানে আসল কথা হল যেটা খাতেমাতু ল মুহাদ্দিসিন আল্লামা আনওয়ার শাহ


কাস্মেরি বলেছেন যে আসলে নাভীর নিচে, নাভীর উপরে এবং বুকের কাছে, এ
শব্দগুলোর মধে খুব একটা পার্থক্য নেই এবং স্থানগুলোও খুব কাছাকাছি এবং এ
শব্দগুলোর অর্থ প্রায় এক।

শায়খ আবেদ সিন্দি এবং শায়খ ইবনুল হুমাম বলেন নাভীর নিচে হাত রাখার
হাদিস অধিক শক্তিশালী। যেহেতু বুকের উপর অথবা নাভির নিচে উভয় বর্ণনায়
কিছু টা দুর্বলতা পাওয়া যায়, যদি আমরা উভয় বর্ণনাকে বাদ দিয়ে নেকায়া
গ্রন্থকার এর কথা মেনে নেই তাহলে সবচেয়ে ভাল হয়। তিনি বলেছেন ডান হাত কে
বাম হাতের উপর রাখা ছহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, কিন্তু বুকের উপর অথবা
নাভীর নিচে হাত রাখার ব্যাপারে সুষ্পষ্ট এমন কোন হাদিস নেই যার দ্বারা আমল
ওয়াজিব হয়। সুতরাং এখানে আমাদের কে কিয়াসের দিকে ফিরে যেতে হবে।
নামাযে দন্ডায়মান অবস্থা হল নম্র ভিক্ষুকের অবস্থার মত। দুনিয়াতে আমরা
সম্মানিত ব্যাক্তির সামনে দাড়ানোর সময় হাত নিচের দিকে রাখি, কখনো উপরে
উঠাইনা। তদ্রুপ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সামনেও তার সম্মানার্থে আমরা
হাত নিচে রাখব । উপরে উঠাবনা।এটাই সম্মানের দাবি। সুতরাং কিয়াস অনুযায়ী
নাভীর নিচে হাত রাখাই প্রামাণিত হয়। তবে মহিলারা হাত বুকের উপর রাখবে
কারণ সেটার দ্বারা তাদের পর্দ া রক্ষা হবে যা তাদের জন্য ফরয। (মিরকাতু ল
মাফাতিহ ৫০৯পৃ ২য় খন্ড, ফাতহুল মুলহিম ৩য় খন্ড ৩০৬পৃ, মারিফুস সুনান ২য়
খন্ড ৪৪৫পৃ, আলুউরফুস সুযি ১ম খন্ড২৯১পৃ, তাকরিরে তিরমিযি ২য় খন্ড ২৪পৃ)

আমাদের দেশে কিছু মানুষ না জেনে না বুঝে এ কথা প্রচার করছে যে নাভীর নিচে
হাত বাধার সবগুলো হাদিস দুর্বল। আমি তাদেরকে সবিনয়ে অনুরোধ করব সিহাহ
সিত্তাহ সহ অন্যাণ্য ছহীহ হাদিসের কিতাবসমূহ এবং তার বিখ্যাত ব্যাখাগ্রন্থগুসমূহ
অধ্যায়ন করার জন্য। তাহলে আমরা সঠিকভাবে সুন্নাহ এর অনুসরণ করতে
পারব। তারা আরো বলে থাকেন আমরা নাকি ইমাম আবু হানিফার অন্ধ অনুসরণ
করে থাকি এমন কি ছহীহ হাদিস যদি ইমাম আবু হানিফার বিরুদ্বে যায় তারপরেও
নাকি আমরা ইমাম আবু হানিফার অনুসরণ করে থাকি। অথচ এ সব কথা সম্পূর্ণ
ভূ ল এবং আমাদের বিরুদ্বে প্রপাগান্ডা ছাড়া আর কিছু নয়। যাদের প্রকৃত কোরান
সুন্নাহর জ্ঞান নেই একমাত্র তারাই এসব কথা বলতে পারেন। আমরা স্পষ্ট ভাষায়
বলতে চাই আমরা ইমাম আবু হানিফাকে অনুসরণ করিনা, বরং আমরা কোরান ও
সুন্নাহ কে অনুসরণ করি। তবে যে সব মাসয়ালা জটিল এবং সবার বোধগম্য নয়
এবং ইজতিহাদের প্রয়োজন সে সব মাসয়ালায় ইমাম আবু হানিফা কোরান ও
হাদিস থেকে যে সমাধান দিয়েছেন আমরা শুধু সেটার অনুসরণ করি।

আলআজহার বিশ্ববিদ্যালয় এর ফতওয়া

،‫وخالصة الموضوع أن أرجح األقوال هو استحباب قبض اليد اليمنى على رسغ اليد اليسرى‬
، ‫ وذلك هو قول الشافعية‬، ‫ ويجوز إرسالهما عند السكون‬،‫ووضعهما على أسفل الصدر فوق السرة‬
‫هذا وليس هناك دليل صحيح على أن‬

‫اليدين يسن وضعهما ألعلى الصدر عندالعنق‬

“বিভিন্ন মতামত থেকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতামত হল নাভীর উপরে বুকের নিচে
ডান হাত কে বাম হাতের উপর কব্জির উপর রাখা। তবে বুকের উপর হাত রাখার
উপর কোন ছহীহ দলীল নেই”
‫”‪ফাতওয়ার শেষাংশে উল্লেখ আছে‬‬

‫وأنبه إلى أن األمر واسع كما قال ابن قدامة ‪ .،‬وال يجوز التعصب لرأى من اآلراء ‪ ،‬والخالف‬
‫والتنازع فى هذه الهيئة البسيطة مع عدم االهتمام بالخشوع الذى هو روح الصالة واألساس األول فى‬
‫قبولها عند هَّللا ‪ ،‬هو ظاهرة مرضية ال صحية ‪ .‬واإلسالم قد نهى عن الجدل وبخاصة فى هذه الهيئات‬
‫البسيطة‬

‫‪“স্বরণ রাখা প্রয়োজন যে এখানে মাসয়ালা প্রসস্ত যে রকম আল্লামা ইবনে কুদামা‬‬
‫‪বলেছেন যে এখানে কোন একটি রায়ের উপর অটল থাকা জায়েয হবেনা। আর‬‬
‫‪নামাজের আসল রুহ এবং কবুল হওয়ার আলামত তথা খুশু এর দিকে দৃষ্টিপাত‬‬
‫‪না করে এ সব নিয়ে ঝগড়া করা (হাত কোথায় রাখব) একটি প্রকাশ্য রোগ। আর‬‬
‫‪ইসলাম বিশেষভাবে এ সমস্ত ব্যাপারে ঝগড়া করা থেকে সম্পূর্ণ নিষেধ করে‬‬
‫‪দিয়েছে। (সুত্র Click This Link‬‬

‫‪মিশরের প্রখ্যাত আলেম শাইয়খ আব্দুল আলিম মুতাওয়াল্লি বলেন-‬‬

‫ومن هنا فوضع اليدين في الصالة على أي صورة سنة من سنن الصالة ال تبطل بفقدها ‪ ،‬وال ينبغي أن‬
‫يكون هذا الخالف الفقهي بين المذاهب مدعاة للتفرقة والشحناء والبغضاء ‪ ،‬فاألمر فيه واسع ‪ ،‬وال‬
‫‪ .‬داعي لتخطئة أي فريق‬

‫‪“নামাযে যে কোন জায়গায় হাত রাখলে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে, তার দ্বারা‬‬
‫‪নামাজের কোন ক্ষতি হবেনা। মাযহাবগত এই মতবিরোধ যাতে মানুষের মধ্যে‬‬
‫‪দলাদলি,হিংশা এবং বিদ্বেষের কারণ না হয় সে দিকে সবার লক্ষ রাখা উচিত।‬‬
‫‪কারণ এখানে মাসয়ালা প্রসস্ত এবং কোন দল কে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করা উচিত‬‬
‫‪হবেনা”।‬‬

‫فليس هناك من المذاهب األربعة يذهب إلى وضع اليدين على الصدر‪ .‬قال اإلمام الذهبي رحمه هللا‪( :‬ال‬
‫يكاد يوجد الحق فيما اتفق أئمة اإلجتهاد األربعة على خالفه‪ ،‬مع اعترافنا بأن اتفاقهم على مسألة ال‬
‫يكون إجماع األمة‪ ،‬ونهاب أن نجزم في مسألة اتفقوا عليها بأن الحق في خالفها) سير أعالم النبالء‬
‫‪7/17 .‬‬
‫ فمن أين جاءنا وضع اليدين‬.‫ وعلى هذا درج الناس إلى وقت غير بعيد‬،‫وال النحر في القيام في الصالة‬
‫على الصدر أو على النحر في الصالة؟‬

‫في ظني أن أول من ظهر بهذا بعض المشتغلين بالحديث الشريف بالهند والمتحاملين على المذاهب‬
‫ ثم انتقل هذا األمر إلى بالد‬..‫ أرادوا أن يتميزوا عن أتباع المذاهب األربعة في صفة الصالة‬،‫األربعة‬
‫ فذكر هذا في بعض‬،‫ وظن بعض الناس أن هذا من اجتهاداته وفرائده‬،‫الشام فأخذها مشتغل بالحديث‬
‫كتبه وقسا على من يخالفهم‬.

“চার ইমামের কোন ইমাম বুকের উপর হাত বাধতে বলেননি। প্রখ্যাত আলেম
আল্লামা যাহবি বলেন চার ইমামের মতের বাহিরে হক থাকতে পারেনা,চার ইমাম
যে বিষয়ের উপর ঐক্যমত্য পোষন করেছেন তার বাহিরে হক থাকার বিশ্বাস করা
কে আমরা ভয় করি। (সিয়ারে আলামুন নুবালা ৭ম খন্ড ১৭পৃ)

মানুষ চার ইমামের কথার উপর বহুদিন ধরে আমল করে আসছে, সুতরাং নামাজে
বুকের উপর হাত রাখা কোথা থেকে আসল?

আমার ধারণা মতে, ভারতে মাযহাবের বিরোধিতাকারি কিছু লোক এই কাজ শুরু
করেছে এবং তাদের আসল উদ্দেশ্য হল নামাজের ক্ষেত্রে চার ইমামের বিরোধিতা
করা।তারপর ধিরে ধিরে এই কাজ সিরিয়ায় চলে গিয়েছে এবং সেখানকারর কিছু
লোক এটি গ্রহণ করেছে এবং কিছু লোক মনে করল যে এটা তারা ইজতিহাদ করে
বের করেছে। (http://www.masjidsalahuddin.com)

আমাদের দেশে আমরা দেখছি যে কিছু মানুষ নামাজের ব্যাপারে মানুষদের কে


বিভ্রান্ত করছেন এবং উদ্দেশ্যগতভাবে হানাফি মাযহাবের আনুসারিত
হাদিসগুলোকে দুর্বল বলছেন। যার ফলে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং দলাদলি সৃষ্টি
হচ্ছে যা কখনো আমাদের মধ্যে কাম্য ছিলনা। তার মধ্যে একটি বিষয় হল নামাজে
নাভীর নিচে হাত রাখা। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবয়ে তাবেয়ি্‌ন, মুহাদ্দিসিনে
কেরাম এবং ফোকাহায়ে কেরাম থেকে নিয়ে শত শত বছর ধরে উক্ত আমল টি
চলে আসছে যাকে ফেকাহের ভাষায় তাওয়াতু র বলা হয়। এবং এটাই হল উক্ত
আমল টি সুন্নাত হওয়ার সবচেয়ে বড় দলীল। এখন কেহ যদি নতু ন করে এসে
নতুন করে মনগড়া কিছু চালু করতে চায় তাহলে সেটা হাদিসের অপব্যাখা এবং
নিজের মনপূজা ছাড়া আর কিছু হবেনা।

আমার জানা মতে শায়খ নাসিরুদ্দিন আল্বানি নামাজে বুকের উপর হাত রাখতে
বলেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে শায়খ নাসিরুদ্দিন আল্বানি হাম্বলি মাযহাবের
অনুসারী ছিলেন (সুত্রঃ ওয়েকেপেডিয়া) তবে তিনি এখানে এসে স্বীয় মাযহাবের
বিরোধিতা করেছেন এবং বুকের উপর হাত বাধতে বলেছেন।

এখানে যেহেতু তিনি স্বীয় মাযহাবের বিরোধিতা করেছেন তাই এটি তার ব্যাক্তিগত
ব্যাপার যাকে ফিকাহের ভাষায় তাফাররুদাত বলে। ফোকাহায়ে কেরামের উসূল
হল কেহ যদি স্বীয় মাযহাবের বিরোধিতা করে ভিন্ন মত পোষণ করে তাহলে তার
কথা অণ্যান্যদের জন্য দলীল হতে পারেনা। তাছাড়া ফোকাহায়ে কেরামদের ৭টি
স্থর আছে ৬০০ হিজরির পরে যারা এসেছেন তারা সবাই ৭ম স্থরের। এবং পরের
যুগের কোন ফকীহের কথা ততক্ষন গ্রহণযোগ্য হবেনা যতক্ষন সে পূর্ববর্তী
ফকীহদের কথার রেফারেন্স না দেয়। (শরহে উকূদে রাসমুল মুফতি)

শায়খ আলুবানি সম্পর্কে সৌদি আরবের প্রাক্তন গ্রান্ড মুফতি আল্লামা বিন বায (র)
কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন-

‫ من خيرة الناس وهو من العلماء المعروفين‬-‫الشيخ محمد ناصر األلباني –ناصر الدين األلباني‬
‫ ولكن‬,‫ وبيان حالها فهو عمدة في هذا الباب‬,‫باالستقامة والعقيدة الطيبة والجد في تصحيح األحاديث‬
,‫ ولكن مثل غيره من العلماء‬,‫ قد يقع منه خطأ في تصحيح بعد األحاديث أو تضعيفها‬,‫ليس بمعصوم‬
‫ فالواجب على طالب العلم أن ينظر فيما‬,‫كل عالم هكذا له بعض األخطاء من األولين واآلخرين‬
‫ من أهل الصناعة يعرف الحديث وينظر في طرقه‬,‫صححه وحسنه وضعفه إذا كان من أهل العلم‬
‫ من األدلة‬..………… ‫ وإال اعتمد‬,‫وينظر في رجاله فإن ظهر له صحة ما قاله الشيخ فالحمد هلل‬
‫التي سلكها أهل العلم في هذا الباب؛ ألن أهل العلم وضعوا قواعد في تصحيح األحاديث وتضعيفها‬

“শায়খ নাসিরুদ্দিন আল্বানি প্রসিদ্ব হাক্বানি আলেম ছিলেন কিন্তু তিনি মাসুম নন,
কিছু কিছু হাদিস কে ছহীহ এবং যয়ীফ বলার ক্ষেত্রে তার ভূ ল হয়েছে, যে রকম
অণ্যদের হয়। সাধারণত এ রকম ভূ ল সবারই হয়ে থাকে। সুতরাং আলেমদের
উপর ওয়াজিব শায়খ আলবানি যে সমস্ত হাদিস কে ছহীহ অথবা জয়ীফ বলেছেন
সে গুলোর ব্যাপারে গবেষনা করা,যাচাই বাচাই করা, যদি শায়খ আলবানির কথা
সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে আলহামদুলিল্লাহ, অণ্যথায় ওলামায়ে কেরাম দলীলের
আলোকে যেটি বলেছেন সেটি গ্রহণ করবে। কারণ মুহাদ্দিসিন কেরাম হাদিস ছহীহ
এবং যয়ীফ বুঝার জন্য কায়েদা প্রনয়ন করেছেন।(সূত্র http://www.al-
sunan.org)

আল্লামা বিন বায শাইয়খ আলবানি রচিত “ছিফাতু স সালাত” নামক কিতাবের ও
কিছু ভূ ল ধরেছেন এবং সে গুলোর সংশোধন করে দিয়েছেন। বিস্তারিত জানতে
উপরের ওয়েবসাইটটি দেখুন।

আল্লামা বিন বাযের উক্ত উত্তর থেকে আমরা অনুধাবন করতে পারি যে শাইয়খ
আলবানির সব কথা দলীল নয়, বরং সে গুলোর ব্যাপারে গবেষনা করা প্রয়োজন।
সে হিসাবে বুকের উপর হাত রাখা এটি তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। এটি কখনো
অন্যদের জন্য দলিল হতে পারেনা।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ইসলাম এর প্রথম তিন যুগ এর আমল হল


আমাদের দলীল। রসূল (স) বলেন-

‫خير الناس قرني ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم‬

পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল মানুষ হল আমার যুগের মানুষ (অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম)
এরপর হল তাবেইনগণ এরপর তাবয়ে তাবেয়িনগণ।

উপরোক্ত তিন যুগের জন্য রসূল (স) সার্টিফিকেট প্রদান গিয়েছেন। সুতরাং এর
পরে যত বড় আলেম আসুক না কেন, তার কথা কখনো কারও জন্য দলীল হতে
পারেনা। যদি কেহ সেটি কে দলীল হিসাবে নিতে চায় তাহলে সে পথভ্রষ্ট হবে।”

উপরের আলোচনার দ্বারা আমরা বুঝতে পারি যে নাভীর নিচে অথবা নাভীর
উপরে (বুকের নিচে) হাত রাখা উভয়টি রসূল (স) এর সহীহ হাদিস এবং সাহাবায়ে
কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। যে কোন একটির উপর আমল করা যাবে তবে
দলীলের দিক দিয়ে নাভীর নিচে হাত রাখা অধিক শক্তিশালী। এর বাইরে কোন
আমল রসূল (স) থেকে প্রমাণিত নাই। তাছাড়া এ ব্যাপারে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা, একে
অপরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা অজ্ঞতা এবং স্বজনপ্রীতি ছাড়া আর কিছু নয় যা
আমরা উপরের আলোচনা দ্বারা বুঝতে পেরেছি।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে সহীহ সুন্নাহ অনুযায়ি আমল করার এবং যাবতীয়
ফিতনা থেকে বেচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন!

—————————————————–

দেখে নিন হারামাইনের ১৫ জন ফেমাস ইমাম নামাজে কোথায় হাত বাধেন !


ভিডিও লিংক – https://scontent-b-sin.xx.fbcdn.net/hvideo-
xfp1/v/t42.1790-2/10476591_328071300707365_1641315443_n.mp4?
oh=003b996d59f184ec506552b1aa971fe4&oe=5456004C নামাযে হাত
বাঁ ধার নিয়ম। মূলঃ মাওলানা মুহাম্মদ যাকারীয়া আব্দুল্লাহ। সংকলনেঃ আহ্নাফ
বিন আলী আহ্মাদ এতে আলোচনা হয়েছে নাভীর নিচে হাত বাধার রেওয়াতগুলো
নিয়ে এবং নামাযে হাত বাঁ ধার ক্ষেত্রে যে সকল বিচ্ছিন্ন ও বেদায়াত আমল রয়েছে
সেগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে
কিতাবটিতে। https://archive.org/download/NamjeHatBadharShothikPo
dhoti/namje%20hat%20badhar%20shothik%20podhoti.pdf

Share this:

 Twitter

 Facebook

Published by Muhammad Saifur Rahman's Site

Name: Muhammad Saifur Rahman (Saif) . Profession: Student .


Follower: Ahle Sunnat Wal Jamat (Hanafi) . Home Town: Jessore,
Khulna, Bangladesh .View all posts by Muhammad Saifur Rahman's
Site
Uncategorized
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Comment 

Name * 

Email * 

Website 

 Notify me of new comments via email.


 Notify me of new posts via email.

Post navigation
PREVIOUS দ্বীনের ঝান্ডাবাহী তাবলীগ জামাত নিয়ে বানানো প্রতারণামূলক
একটি কথিত হাদীসের তাহক্বীক (স্কিনশট সহ)

NEXT ফাযায়েলে হজ্জে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কবর থেকে হাত বের হওয়ার
ঘটনা নিয়ে লা-মাজহাবীদের অপপ্রচার এবং আমাদের দাঁ ত ভাঙ্গা জবাব
TEXT WIDGET

This is a text widget. The Text Widget allows you to add text or
HTML to your sidebar. You can use a text widget to display text,
links, images, HTML, or a combination of these. Edit them in the
Widget section of the Customizer.

Search for:
RECENT POSTS

 তারাবীহ এর নামাজ সংক্রান্ত একটি পূর্ণ াঙ্গ বিশ্লেষন এবং আহলে


হাদিসদের মিথ্যাচারের জবাব May 3, 2020
 হানাফী মাযহাবের গ্রন্থাবলী কত হিজরীতে লিপিবদ্ধ করা হয়? August 27,
2019
 ইমাম বুখারীর উস্তাদ ও ইমাম আবু হানীফা রহ. এর শাগরিদ মক্কী বিন
ইবরাহীমের জীবন যেভাবে আমূল পরিবর্ত ন সূচিত হলো! August 27, 2019
 ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ছাত্রগণ কেন তার উস্তাদের বিরোধীতা
করলেন? ফিক্বহে হানাফীতে শুধু ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বক্তব্যের
উপরই ফাতওয়া দেয়া হয়? August 27, 2019
 মহিলাদের মসজিদে নামায পড়ার অনুমোদন আছে কি? August 15, 2019
BLOG AT WORDPRESS.COM.

Privacy & Cookies: This site uses cookies. By continuing to use this website, you agree to their use.
To find out more, including how to control cookies, see here: Cookie Policy

You might also like