You are on page 1of 6

দুই.

মুসলিম ইউনিভার্সিটি আলীগড়ের শিক্ষাব্যবস্থা।


আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত : মুফতি তাকি উসমানি দা:বা তিন. দারুল উলুম নদওয়াতু ল ওলামার শিক্ষাব্যবস্থা।

[জামেয়া দারুল উলূম করাচির শাখা হেরা ফাউন্ডেশন স্কু ল তাদের হেফজসমাপনী ছাত্রদের আমার শ্রদ্ধেয় পিতা প্রায় ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে বলেছিলেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সরকারিভাবে
সমাবর্ত ন উপলক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সেখানে বড় বড় এদেশে না আলীগড়ের শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজন, না নদওয়াতু ল ওলামার শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজন,
ওলামায়ে কেরাম, বিজ্ঞ ও সুদক্ষ শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদরাও অংশগ্রহণ করেছিলেন। হযরত না দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজন। বরং সরকারিভাবে আমাদের এমন এক
মুফতি তাকি উসমানি সাহেব এ অনুষ্ঠানে শিক্ষা-কারিকু লামের ব্যাপারে যে সারগর্ভ ভাষণ শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজন যা আমাদের পূর্বসূরিদের শিক্ষাব্যবস্থার ধারাবাহিকতার সাথে যুক্ত। আমার
দিয়েছিলেন তা ছিল খুবই প্রাণবন্ত, মনোমুগ্ধকর ও যুগান্তকারী। এতে তিনি চমৎকার দিক-নির্দে শনা একথা শুনে আপনারা হয়তো অবাক হবেন যে, দারুল উলুম দেওবন্দের মুফতি আজম এবং
দিয়েছেন। এ ভাষণটি হযরত নিজে প্রয়োজনীয় সম্পাদনা, সংযোজন ও বিয়োজন করে প্রকাশের দারুল উলুম দেওবন্দের এক কৃ তিসন্তান ও বরপুত্র বলছেন, পাকিস্তানে এখন আর দেওবন্দের
অনুমতি দিয়ে আমাদেরকে কৃ তার্থ করেছেন। আলাহ তাআলা এর মাধ্যমে আমাদেরকে উপকৃ ত শিক্ষাকারিকু লামের প্রয়োজনীয়তা নেই বরং আমাদের নতু ন একটি শিক্ষা-করিকু লামের প্রয়োজন।
হওয়ার এবং আমল করার তৌফিক দান করুক। আমীন।] ভারতে প্রচলিত তিনটি শিক্ষাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আকবর এলাহাবাদী যথার্থই বলেছেন,
দেওবন্দ হলো জাগ্রত অন্তরের ন্যায়। নদওয়া হলো বিচক্ষণ মুখপাত্র। আর আলীগড়ের উপমা
উপস্থিত জামিআর সম্মানিত ও স্বনামধন্য প্রিন্সিপাল, বিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী ও শ্রোতাবৃন্দ! সকলের হলো সম্মানের সাথে উদরপূর্তি র মাধ্যম।
প্রতি রইলো আমার আন্তরিক সালাম। আমার শ্রদ্ধেয় পিতা যে কথা বলেছিলেন তা অত্যন্ত গভীর ও সূক্ষ্মদর্শী কথা। তা না বুঝার কারণে
আপনারা দীর্ঘ সময় ধরে এ অনুষ্ঠানের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন। আমি মনে করি আপনারা আমাদের অনেকে ভু ল ঝোবুঝির শিকার হয়েছেন। এ তিনটি শিক্ষাব্যবস্থা যা ভারতবর্ষে প্রচলিত
যে সময় এ অনুষ্ঠানে ব্যয় করেছেন তা ইনশাল্লাহ আপনাদের আত্মার খোরাক হিসেবে বিবেচিত ছিল সেগুলো মূলত ইংরেজদের প্রবর্তি ত শিক্ষাব্যবস্থার ফলাফল ছিলো। ইংরেজদের
হবে। সময় অনেক হয়ে গেছে। খাবারেরও সময় নিকটবর্তী। তাই আমি বেশী সময় নেব না। তবে ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থার পাল্টা ব্যবস্থা ছিল। নতু বা আপনি যদি এর পূর্বের মুসলিম বিশ্বের হাজার
আমি অত্যন্ত সংক্ষেপে হেরা ফাউন্ডেশন স্কু ল এর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই। বছরের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে পড়াশোনা ও চিন্তা ভাবনা করেন, তাহলে তাতে মাদরাসা ও স্কু লের
জামিআর প্রিন্সিপাল মুফতি আজম পাকিস্তান হযরত মাওলানা মুফতি রফি উসমানী সাহেব পার্থক্য দেখতে পাবেন না। সেখানে ইসলামের শুরু থেকে নিয়ে আধুনিককাল পর্যন্ত অব্যাহতভাবে
দা.বা. বিভিন্ন বৈঠকে এবং বিভিন্ন সুযোগে এ প্রসঙ্গে বারবার আলোচনা করেছেন। আমিও আমার মাদরাসা ও জামেয়াসমূহে একই সময়ে ধর্মীয় শিক্ষাও দেয়া হতো এবং সাথে সাথে যুগোপযুগী
শ্রদ্ধেয় পিতার এ কথা ইতোপূর্বে কয়েক জায়গায় আলোচনা করেছি। আমার শ্রদ্ধেয় পিতা দুনিয়াবি শিক্ষাও ছিল। ধর্মীয় জ্ঞানে পরিপূর্ণ আলেম হওয়া তো প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ফরজে
পাকিস্তানের সাধারণ শিক্ষা কারিকু লাম পর্যবেক্ষণ করে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদেরকে বলেছিলেন, আইন নয়, বরং ফরজে কেফায়া। কোনো এলাকা বা দেশে যদি প্রয়োজন পরিমাণ আলেম হয়ে যায়
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর আমাদের বাস্তবে নতু ন একটি ব্যাপকভিত্তিক ও সার্বজনীন শিক্ষা তাহলে সংশিষ্ট এলাকার সবার পক্ষ থেকে এ ফরজ দায়িত্ব আদায় হয়ে যায়। তবে দীনের মৌলিক
কারিকু লামের প্রয়োজন। জ্ঞান অর্জ ন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজে আইন। পূর্বকালে প্রতিষ্ঠিত সকল মাদরাসায়
ফরজে আইন পরিমাণ ইলমের শিক্ষা প্রত্যেককেই দেওয়া হতো। তবে যে ইলমে দীনের বিশেষজ্ঞ
এখানে উল্লেখ্য যে, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বে ভারতবর্ষে বড় বড় তিনটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রসিদ্ধ ও
হতে চাইত তার জন্য সে সুযোগ ছিলো আর যে যুগোপযুগী আধুনিক জ্ঞানে বিশেষজ্ঞতা অর্জ ন
প্রচলিত ছিল :
করতে চাইত তার জন্য তা অর্জ ন করারও ব্যবস্থা ছিল। আমি কয়েক বছর আগে মরক্কোতে
এক. দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষাব্যবস্থা।
গিয়েছিলাম। শ্রদ্ধেয় বড় ভাই হজরত মাওলানা মুফতি রফী উসমানী সাহেব দা. বা. গত বছর
মরক্কোতে গিয়েছিলেন। মরক্কোর একটি শহরের নাম হলো ‘ফাস’। আমি গতবছর এ শহরে চলতো। জামিআ যাইতু নাহ, জামিআতু ল আযহারও এভাবে চলতো এবং এখনো এভাবেই চলে।
গিয়েছিলাম। আমার বড় ভাই এবছর সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানে জামেয়াতু ল কারউইন নামে এ ইউনিভার্সিটি তিনটি আমাদের প্রাচীনকালের ইউনিভার্সিটি। সেগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষা ও
একটি প্রতিষ্ঠান আছে। আমরা যদি ইসলামি ইতিহাসের প্রসিদ্ধ জামেয়াসমূহের অনুসন্ধান করি জাগতিক শিক্ষা একই সাথে একই ছাদের নিচে দেওয়া হতো। এ ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে একটু
তাহলে আমরা প্রসিদ্ধ চারটি জামেয়ার সন্ধান পাই। সর্বপ্রথমটি হলো এ জামেয়াতু ল কারউইন। খেয়াল করুন- আলামা কাজী ইয়াজ রহ. -যিনি হাদিস ও সুন্নতের ইমাম ছিলেন- তার অবয়ব
দ্বিতীয়টি হলো তিউনিসিয়ার জামিআ যাইতু নাহ। তৃ তীয়টি হলো মিসরের জামিআতু ল আযহার। আকৃ তির দিকে তাকান, আলামা ইবনে খালদুন রহ. যিনি ফিলোসফি ও ইতিহাসের ইমাম ছিলেন
চতু র্থটি হলো ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দ। ঐতিহাসিক ক্রমধারাও অনুরূপ। তার অবয়ব আকৃ তির দিকে তাকান উভয়ের বাহ্যিক আকার অবয়বে কোনো পার্থক্য পাবেন না।
সর্বপ্রথম ইউনিভার্সিটি হলো জামেয়াতু ল কারউইন। এটা তৃ তীয় শতাব্দীর ইউনিভার্সিটি হওয়ার ইনি দীনের আলেম আর উনি দুনিয়ার আলেম এমন কোনো বাহ্যিক বিভাজন ছিল না। তাদের
ব্যাপারে ইতিহাসের গ্রন্থে দাবী করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত সেই দাবীর প্রত্যাখান আমার নজরে অবয়ব আকৃ তি তাহজীব তামাদ্দুন, তাদের জীবন-পদ্ধতি, তাদের কথা বলার ঢং ও মুখের ভাষা
পড়েনি। এটা শুধু ইসলমি জগতের প্রথম ইউনিভার্সিটি নয় বরং সমগ্র দুনিয়ার প্রাচীনতম সব একরকম ছিল। আমাদের যেসব প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী গত হয়েছেন, যেমন: ফারাবী রহ., ইবনে রুশদ
ইউনিভার্সিটি। ঐ সময় জামেয়াতু ল কারউইন ইউনিভার্সিটিতে সেসব বিষয় পাঠদান করা হতো রহ., আবু রায়হান আল বিরুনি রহ. তাদের সকলের অবয়ব আকৃ তির দিকে তাকান অতঃপর
সেগুলো হলো: আরবি ভাষা, তাফসির, হাদিস, ফেকাহ এবং তার সাথে সাথে চিকিৎসা বিজ্ঞান, মুহাদ্দিসীন ও ফু কাহায়ে কিরামের দিকে তাকান উভয় দলের আকার আকৃ তি একই রকম ছিল।
শারীরিক বিজ্ঞান, ইতিহাস, জোতির্বিদ্যা ইত্যাদি। যেসব বিষয়কে আজ আধুনিক বিষয় বলা হয়। যদি তারা নামায পড়েন তাহলে এরাও নামায পড়েন। যদি তাদের নামাযের মাসায়েল জানা থাকে
সেইসব বিষয় সেখানে পাঠদান করা হতো। আলামা ইবনে খালদুন (রহ.), আলামা ইবনে রুশদ তাহলে এদেরও আবশ্যকীয় সীমা পর্যন্ত জানা আছে। যদি তাদের রোজার মাসায়েল জানা থাকে
(রহ.), কাজী ইয়াজ রহ. সেখানে পাঠদান করেছেন পূর্বসূরীদের এক দীর্ঘ তালিকা আছে যারা তবে এদেরও জানা আছে। ধর্মের মৌলিক শিক্ষা যা শিক্ষা করা প্রত্যেকের জন্য ফরজে আইন তা
সেখানে পাঠদান করেছেন। তাদের আসন আজ পর্যন্ত সংরক্ষিত আছে। ওখানে আলামা ইবনুল প্রত্যেক ব্যক্তিই জানতো। আর ওইসব ইউনিভর্সিটিতে দীন-দুনিয়ার সববিষয় পড়ানো হতো।
আরাবী মালিকী (রহ.) ও পাঠদান করেছেন। তাদের আসনসমূহ সংরক্ষিত আছে। এটা পৃথিবীর পার্থক্য শুধু তখন থেকে সৃষ্টি হয়েছে যখন থেকে ইংরেজরা ধর্মহীন সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থা চালু
প্রাচীনতম ইউনিভার্সিটি। ছোট ছোট মাদরাসাতো সর্বত্রই ছিল কিন্তু জামিআতু ল কারউইন করে এদেশ থেকে দীন ধর্মের কবর রচনার প্রয়াস চালিয়েছিল। তখন আমাদের আকাবের
ইউনিভার্সিটি মর্যাদাস¤পন্ন ছিল। এখানে আধুনিক জ্ঞান, ধর্মীয় জ্ঞান, ও জাগতিক সকল জ্ঞান মাশয়েখরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে মুসলমানদের দীনি ইলমের সুরক্ষার জন্য কমপক্ষে যতটু কু
বিজ্ঞান পড়ানো হতো। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো সে যুগের অর্থাৎ হিজরি তৃ তীয় ও চতু র্থ শতাব্দীর ফরজে কেফায়া ততটু কু সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করেছিলেন। তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এরকম
বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের অনেক নমুনা সংরক্ষিত আছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের আলেমে দীন তৈরী করার ব্যবস্থা করেছিলেন যারা ধর্মীয় জ্ঞানে পান্ডিত্য অর্জ ন করে সাধারণ
আবিষ্কৃ ত ঘড়ি ও অন্যান্য্য আবিষ্কার এখনো সেখানে গেলে দেখতে পাবেন। মুসলমানদের ধর্মীয় প্রয়োজন পূরণ করতে এবং তাদের ধর্মীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবে। যে
একটু লক্ষ করুন! এটা তৃ তীয় হিজরী শতাব্দীর ইউনিভার্সিটি। ইসলামী জ্ঞানের বিদগ্ধ প-িতগণ কাজ সরকারি উদ্যোগে ব্যাপকভাবে করার কথা ছিল সেই কাজ তারা নিজেরা করে মুসলমানদের
সেখান থেকেই তৈরী হয়েছেন। দার্শনিক ইবনে রুশদ রহ. সেখান থেকেই তৈরী হয়েছেন। সেখান দীনের সংরক্ষণ করেছিলেন। এজন্যই তারা দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ
থেকে বড় বড় বিজ্ঞানী জন্ম হয়েছে। তাহলে সমস্যাটা কী? যতটু কু ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা করা ফরজে প্রতিষ্ঠান আলহামদুলিলাহ সেই বিশাল খেদমত আঞ্জাম দিয়েছে এবং এখনো দিচ্ছে। যার দৃষ্টান্ত
আইন তা তো একত্রে সবাইকে শিখানো হতো। এরপর যদি কেউ ধর্মীয় জ্ঞানে বিশেষজ্ঞতা অর্জ ন ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যদি পাকিস্তান সঠিক অর্থে ইসলামি রাষ্ট্র হতো এবং সঠিক অর্থে
করতে চাইত তাহলে সে ইলমে দীনের ক্লাসও ঐ জামেয়াতু ল কারউইনেই করতো। কেউ যদি তাতে ইসলামি বিধিবিধান প্রয়োগ হতো, তাহলে সে ক্ষেত্রে আমার শ্রদ্ধেয় পিতার কথা অনুযায়ী
অংকশাস্ত্রে পারদর্শিতা অর্জ ন করতে চাইত তাহলে সে শাস্ত্রও সে সেখানে পড়তো। পাকিস্তানে না আমাদের আলীগড়ের শিক্ষা-কারিকু লামের প্রয়োজন ছিল, না নদওয়ার, না দারুল
চিকিৎসাবিদ্যায় দক্ষতা অর্জ ন করতে আগ্রহীরাও সেখানেই পড়তো। এসকল নেজাম এভাবেই উলুম দেওবন্দের। আমাদের জামিউল কারউইনের প্রয়োজন ছিলো। আমাদের জামিআ যাইতু নার
প্রয়োজন ছিল। যেখানে সবধরনের জ্ঞান-বিজ্ঞান পাঠদান করা হতো। সেসব ইউনিভর্সিটির সকল এবং নানা শর্তে র জালে আবদ্ধ সেখানে কেন ইজতেহাদ হলো না এটা নিয়ে তাদের অভিযোগের
শিক্ষার্থী দীনের রঙে রঙিন হতো। কি ইঞ্জিনিয়ার, কি ডাক্তার, কি বিচারক, কি সরকারি আমলাÑ অন্ত নেই। কয়েকদিন আগে আমাকে জনৈক ব্যক্তি একটি ভিডিও ক্লিপ দেখিয়েছিলেন। সেখানে
সবাই দীনের রঙে রঙিন থাকত। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমাদের উপর এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা দেখলাম আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন ব্যক্তি জনৈক আলেমের কাছে প্রশ্ন করছেন:
চাপিয়ে দেয়া হয়েছে যা আমাদেরকে দাসত্বসুলভ মনোভাব ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। আকবর মাওলানা! ওলামায়ে কেরাম যে দীনি খেদমত করছেন তা তো ঠিক আছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে
এলাহাবাদী যথার্থই বলেছিলেন : আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় তো শুধু উদরপূর্তি র শিক্ষাব্যবস্থা চালু মুসলমানদের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের কোন বিজ্ঞানী কেন তৈরী হলো না? কেন কোনো মুসলমান
করেছে। ইংরেজদের প্রবর্তি ত এ শিক্ষাব্যবস্থার ফলে যে ক্ষতির সম্মুখীন আমরা হয়েছি তা হলো বিজ্ঞানী উলেখযোগ্য কোনো কিছু আবিস্কার করতে সক্ষম হলো না? আমি ওলামায়ে কেরামের
মুসলমানদের অতীত ইতিহাস এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের উত্তরাধিকার ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এ নতু ন কাছে এর উত্তর চাই। এর উত্তরে আমি বলবো: কোনো আলেমকেএ প্রশ্ন না করে আপনি নিজেকে
শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার ফলে দীনি ও দুনিয়াবী জ্ঞান বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মুসলমান সমাজ মোল্লা নিজে এ প্রশ্ন করুন আমাদের দেশে ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থায় কেন বিজ্ঞানী ও আবিষ্কারক তৈরী হলো
ও মিস্টারে ভাগ হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় যে ছাত্র এ শিক্ষাব্যবস্থায় গড়ে উঠেছে সে দীনের না? ইসলাম বা কোনো আলেম কি এ ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে? আবিষ্কারের পথ
মৌলিক ফরজ স¤পর্কে ও জানে না। কি কেউ রুদ্ধ করে রেখেছে? আসল কথা হলো সরকারের সব সুযোগ সুবিধা আপনারা পেয়েছেন।
দ্বিতীয়ত তাদের মন-মস্তিষ্কে এ চিন্তা-চেতনা ঢু কিয়ে দেয়া হয়েছে যে, যদি উন্নতি অগ্রগতি চাও আবিষ্কারের পথও খোলা ছিল। তা সত্ত্বেও মানসিক দাসত্বের কারণে আপনারা নিজেরাই
তাহলে শুধু পশ্চিমাদের অন্ধ অনুসরণ করো। তৃ তীয়ত মুসলমানদের তাহজীব তামাদ্দুন ও আবিষ্কারের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। ইংরেজ বা পশ্চিমারা যে মতবাদ বা থিউরি দিচ্ছে নিশ্চিন্তে তা
কৃ ষ্টিকালচার পাল্টে দেয়া হয়েছে। সকলের মস্তিস্কে একথা বসিয়ে দেয়া হয়েছে যে, যদি উন্নতি ও গ্রহণ করে নিচ্ছেন। যে রোগের যে ওষুধ তারা বলে দিচ্ছে নিজেরা গবেষণা না করে তাই মেনে
সমৃদ্ধি চাও তাহলে তা শুধু পশ্চিমাদের চিন্তা চেতনা ও তাদের ধ্যান ধারনার মধ্যেই পাবে। তাদের নিচ্ছেন। তারা যদি কোনো জিনিসকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে ঘোষণা করে তাহলে আপনারা
জীবনযাপন পদ্ধতির মধ্যেই রয়েছে কাঙ্খিত সুখ শান্তি ও উন্নতি অগ্রগতি। এ শিক্ষা ব্যবস্থার বিনা দ্বিধায় তাদের সাথে তাল মিলান। সব বিষয়ে তাদের মতামত চূ ড়ান্ত বলে মনে করেন। এতদিন
মাধ্যমে যেসব লোক শিক্ষিত হয় তাদের অধিকাংশ সব সময় ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিতদের যাবৎ ডিমের কু সুমের ব্যপারে ডাক্তাররা বলতেন যে, এটা কোলেস্টরল সৃষ্টি করে; যা হৃদরোগে
সমালোচনা করে। তারা বলে মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত আলেম ওলামারা কোনো কিছু আবিস্কার আক্রান্তদের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এখন সেই ডাক্তাররাই বলছেন, ডিমের কু সুম খান। এতে কোনো
করে না। আবিষ্কারের দরজা ও ইজতিহাদের পথ তারা বন্ধ করে রেখেছে। এর জবাবে আমি বলবো সমস্যা নেই। ডাক্তাররা কেন এভাবে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন? কারণ পশ্চিম থেকে এ ব্যপারে
: কোরআন সুন্নাহ ও ফেকাহতে যে ইজতেহাদ প্রযোজ্য তা তো অনেক জটিল প্রক্রিয়ার অধীন, ঘোষণা এসেছে তাই আমাদের ডাক্তাররা নির্দ্বিধায় তা মেনে নিয়েছেন।
এর জন্য বিশেষ জ্ঞান ও যোগ্যতা অপরিহার্য। এটা সবার জন্য ও সর্বক্ষেত্রে উন্মুক্ত নয়, কিন্তু আমাদের এদেশে পথেঘাটে ও বনে-বাদাড়ে অগণিত ও অসংখ্য ভেষজ উদ্ভিদ ও লতাপাতা
আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এর দরজা স¤পূর্ণভাবে উন্মুক্ত। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গণিত ও তথ্য রয়েছে। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতরা যদি এগুলো নিয়ে গবেষণা করতো! তারা যদি মারাত্মক কোন
যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আবিষ্কারের পথ কারো জন্য বন্ধ নয়। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যাধির ওষুধ আবিষ্কার করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতো! রাসুলে কারিম সা. কালোজিরার
ব্যবস্থা ও সাধারণ সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে আপনারা কেন এমন বিজ্ঞানী তৈরী করতে উপকারিতার কথা বলে গেছেন। এটা নিয়েও যদি নতু ন কোন গবেষণা হতো! গবেষণা হবে
পারলেন না যারা পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের সাথে টেক্কা দিতে পারে। এ শিক্ষাব্যবস্থায় পড়াশোনা করে কিভাবে? তারা তো গবেষণার দরজা বন্ধ করে বসে আছেন। তারা চেয়ে আছেন পশ্চিমের দিকে,
এমন চিকিৎসাবিজ্ঞানী কেন তৈরী হলো না যারা চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষনা করে নতু ন নতু ন সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে তা চোখ বুজে মেনে নিবেন। বস্তুত তারা ইজতিহাদ ও গবেষণার
রোগের ঔষধ আবিষ্কার করতে পারে। এমন সৌরবিজ্ঞানী কেন জন্ম নিলো না যারা নতু ন নতু ন গ্রহ খোলা দরজাকে বন্ধ করে বসে আছেন অথচ কোরআন সুন্নাহ নিয়ে আলেমরা কোন নতু ন গবেষণা
নক্ষত্র আবিস্কার করতে পারে। ইজতিহাদ ও আবিষ্কারের দরজা যেখানে স¤পূর্ণরূপে খোলা করছেন না কেন সে প্রশ্ন তু লছেন। এটা মূলত দাসত্বসুলভ মনোভাবের ফল। মানসিক দাসত্ব ও
সেখানে উলেখযোগ্য কোনো আবিস্কারের খবর নেই অথচ ইজতেহাদের পথ যেখানে খুবই সংকীর্ণ পরাধীনতার কারণে আমাদের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা আজ স্থবির হয়ে আছে। আধুনিক ইংরেজি
শিক্ষাব্যবস্থার একটি ক্ষতি হলো, এটা আমাদেরকে মানসিকভাবে ইংরেজদের গোলাম করে আমার শ্রদ্ধেয় পিতা শিক্ষাব্যবস্থা স¤পর্কে যে কথা বলেছিলেন তার উদ্দেশ্য হলো, ঔপনিবেশিক
রেখেছে। এর আরেকটি ক্ষতি হলো এ শিক্ষাব্যবস্থা মানুষের চিন্তা চেতনার মোড় সম্পুর্ণরূপে ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থার ফলে আমাদের আর্থসামাজিক ও মানসিক যে চেতনা ও চিন্তাধারা পাল্টে
ঘুরিয়ে দিয়েছে। আগে জ্ঞান অর্জ নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল উন্নত ও মানবিক আর এখন তা হয়ে গেছে তা যথাস্থানে ফিরিয়ে আনা। এর জন্য আমাদেরকে সে পথ অনুসরণ করতে হবে যে পথ
গেছে হীন ও অর্থনৈতিক। অর্থাৎ আগে জ্ঞান অর্জ ন করতো ও বিদ্যা শিখতো সমাজের দেখিয়েছে জামিআ কারউইন ও জামিআ যাইতু নাহ এবং প্রথম যুগে জামিআ আজহার। আমি
উপকারের জন্য, দেশ ও দেশের সেবা করার উদ্দেশ্যে। এটা ছিলো মুখ্য উদ্দেশ্য। আর চাকরি জামিআ আজহারের ক্ষেত্রে প্রথম যুগে শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেছি। এর কারণ হলোঃ উপনিবেশের
বাকরি ও অর্থনৈতিক স্বার্থ ছিল গৌন। কিন্তু আজ জ্ঞান ও বিদ্যা বিক্রি করে অর্থনৈতিক স্বার্থ বিষবাষ্প এ প্রতিষ্ঠানটিকে প্রভাবিত করে তার মূলধারা থেকে বিচ্যুত করে দিয়েছে। পাক ভারত
হাসিল করা মুখ্য হয়ে গেছে আর জনসেবা হয়ে গেছে গৌন। যে যত বড় শিক্ষিত সে অর্থ উপমহাদেশ থেকে ইংরেজরা চলে যাওয়ার পর পাকিস্তানে তো জামিআতু ল কারউইনের পথ
উপার্জ নে তত বেশি মরিয়া। অনুসরন করা দরকার ছিল। কিন্তু সরকার যেহেতু তা অনুসরণ করেনি এবং ধর্মীয় জ্ঞানের সুরক্ষার
যথাযথ ব্যবস্থাও করেনি। তাই ওলামায়ে কেরাম বাধ্য হয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষাব্যবস্থার
যারা গ্র্যাজুয়েশন করছে, মাস্টার্স করছে, পি এইচ ডি ডিগ্রি নিচ্ছে তাদের ব্রেইন রিডিং করে দেখুন
অনুসরণে মাদরাসা প্রতিষ্ঠান করেছেন। যেন কমপক্ষে নববী ইলমের তথা ধর্মীয় জ্ঞানের সুরক্ষা
এই তথ্যই ফু টে উঠবে। তারা পড়াশোনা করছে ক্যারিয়ার গঠন করার জন্য কিংবা ভালো চাকরি
নিশ্চিত হয়। আলহামদুলিল্লাহ। ওলামায়ে কেরাম প্রতিকূ ল পরিবেশে ব্যক্তিগত উদ্যোগে দীনি
পাওয়ার জন্য। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হয়ে গেছে অর্থ উপার্জ ন।
ইলেম সংরক্ষণের জন্য যে ত্যাগ তিতিক্ষা স্বীকার করেছেন এবং বড় বড় খেদমত স¤পাদন
তাই কেউ শিক্ষিত হয়ে যদি ভালো চাকরি না পায় বা বিপুল পরিমাণে অর্থ উপার্জ ন করতে না করেছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। দীনি ইলমের সংরক্ষণের জন্য পৃথিবীর আর কোনো দেশের
পারে তাহলে তাকে ব্যর্থ মনে করা হয়। জ্ঞান ও বিদ্যা-বুদ্ধির মাধ্যমে সমাজের সেবা এবং দেশ ও ওলামায়ে কেরাম ব্যপকভাবে এমন ত্যাগ স্বীকার করেছেন কিনা তা আমাদের জানা নেই। যাই
দেশের উপকার যে করতে হয় এ শিক্ষা বর্ত মান শিক্ষা ব্যবস্থায় নেই বললেই চলে। এ কারণে হোক যতদিন পর্যন্ত আমাদের দেশের শাসকশ্রেণি ও সমাজব্যবস্থা পরিপূর্ণরূপে ইসলামি ধাঁচে গড়ে
আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিতরা অর্থ উপার্জ নের ধান্ধায় লেগে আছে। তারা না দেশের চিন্তা করে না উঠবে এবং ইসলামি সরকার জামিআতু ল কারউইনের মতো দীন ও দুনিয়ার সমন্বিত
না দশের। দিনরাত শুধু টাকা আর টাকার স্বপ্ন দেখে। তারা উন্নত ক্যারিয়ার আর মাল্টিন্যাশনাল শিক্ষাব্যবস্থা চালু না করবে ততদিন পর্যন্ত আমরা এ (কওমি/দেওবন্দি) মাদরাসাসমূহকে যথারীতি
কোম্পানি কিংবা কর্পোরেট চাকরির ভাবনায় ডু বে থাকে। ব্যতিক্রম যে নাই সে কথা আমি বলছি সংরক্ষণ করবো এবং দেওবন্দের আকাবিরগণ যেভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন আমরা যথাসম্ভব
না। কিন্তু তাদের সংখ্যা কত পার্সেন্ট হবে? আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষদের কতজন সেভাবে এগুলোকে বহাল রাখবো। এগুলোর উপর আমরা কাউকে হস্তক্ষেপ করতে দেবো না।
নিঃস্বর্থভাবে দেশ ও দশের সেবায় এগিয়ে আসেন? হিসাব করলে এ সংখ্যা হতাশাব্যাঞ্জকই হবে। কেননা মুসলমানদের দীনের সুরক্ষা এ মাদরাসাসমূহের উপর নির্ভ রশীল হয়ে পড়েছে। তদুপরি
অথচ আমাদের নবী সা. আমাদেরকে এ দোয়া শিখিয়েছেন : আমাদের দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা যদি ইসলামি হয়েও যায় তবুও দীনি শিক্ষার বিশেষজ্ঞ
‫اللهم ال تجعل الدنيا اكبر همنا وال مبلغ علمنا و ال غاية رغبتنا‬ আলেম তৈরির অঙ্গঁন হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানগুলো বহাল থকবে। সাধারণ শিক্ষার সাথে (ফরজে
‘হে আলাহ দুনিয়া যেন আমদের সবচেয়ে বড় ধ্যানের বস্তু না হয়। কিংবা আমাদের বিদ্যা অর্জ নের আইন পরিমাণ) দীনি শিক্ষাকে সমন্বিত করার যে কাজ সরকারিভাবে করা হচ্ছে না, আমরা ধীরে
উদ্দেশ্য না হয় এমনকি দুনিয়া যেন আমাদের মূল আকাক্সক্ষার বস্তুতেও পরিণত না হয়।’ ধীরে সে কাজ আমাদের মাদরাসাসমূহের মাধ্যমে স¤পাদন করতে চাচ্ছি।
আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান দীনের রঙে রঙিন করে আমাদের মাদরাসার পরিবেশে পাঠদানের চেষ্টা
কিন্তু আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা কী করলো? আমাদের বিদ্যা-বুদ্ধি, ধ্যান-জ্ঞান ও আশা-আকাক্ষার কেন্দ্র
আমরা করছি। আলহামদুলিল্লাহ, পাকিস্তানে দীনি মাদরাসার সংখ্যা প্রয়োজন অনুপাতে যথেষ্ট
বানিয়ে দিলো দুনিয়াকে। আমাদেরকে আত্মকেন্দ্রিক করে দিলো। শিক্ষিত মানুষগুলোকে
রয়েছে। কিন্তু এ মাদরাসাসমূহ ফরজে কেফায়ার শিক্ষা বিস্তারে নিয়োজিত। এক পরিসংখ্যানে দেখা
উদরচিন্তায় ডু বিয়ে দিলো।
গেছে মাত্র এক শতাংশ ছাত্র/ছাত্রী এসব মাদরাসায় পড়াশোনা করছে। অবশিষ্ট ৯৯% ছাত্র/ছাত্রী
যে শিক্ষাব্যবস্থার অধীন শিক্ষা লাভ করছে সে শিক্ষাব্যবস্থার ফলে তারা মানসিকভাবে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অথচ আমাদের অনেকে এমন হীনমন্যতার শিকার হয়ে
(পশ্চিমাদের) গোলামে পরিণত হচ্ছে। আমি “হেরা ফাউন্ডেশন স্কু ল এর শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের আছে। তারা মনে করে পশ্চিমা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জ ন করতে হলে নিজেদের বাহ্যিক বেশ-
বারবার একথা বলেছি এবং এখনো বলছি: ভূ ষা ও জীবনাচারকেও পশ্চিমাদের আদলে গড়ে তু লতে হবে। এ চিন্তা-চেতনার কারণে আমরা
মানসিকভাবে পশ্চিমাদের গোলামে পরিণত হয়েছি। ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শনের ক্ষেত্রে আমরা
আপনাদের আসল উদ্দেশ্য হলো: আমাদের এই নতু ন প্রজন্মকে পশ্চিমাদের মানসিক গোলামি
স্বাধীনভাবে তথা নিজেদের মতো করে চিন্তা করতে পারি না। এ তত্ত্ব ও বাস্তবতাটিকেই আল্লামা
থেকে রক্ষা করুন। আপনারা আমাদের সন্তানদের মনে একথা বসিয়ে দিন যে, আমরা স্বাধীন জাতি
ইকবাল রহ. খুব চমৎকারভাবে ফু টিয়ে তু লেছেন। তার কথাগুলো আমাদের ঘুমন্ত চোখসমূহ
এবং স্বাধীন ও স্বতন্ত্র চিন্তার অধিকারী। আমরা আমাদের নবিজীর চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী।
জাগিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট। তিনি পশ্চিমাদের শিক্ষায় শিক্ষিত ও তাদের ধ্যান-ধারনায়
পশ্চিমারা একথা ছড়িয়ে দিয়েছে এবং তা আমাদের মনে বসিয়ে দিয়েছে যে, পশ্চিমাদের চিন্তা
লালিতদের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন: তোমরা কেবল অন্যদের জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জ ন করলে
চেতনা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানই সব কিছুর মূল এবং তাতেই রয়েছে উন্নতি এবং অগ্রগতির চাবিকাঠি।
এবং একেই প্রকৃ ত জ্ঞান মনে করে তৃ প্ত হয়ে গেলে। শুধু তাই নয়, এ জ্ঞানের রঙে নিজেদের
আল্লাহর ওয়াস্তে আমাদের বর্ত মান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মন ও মগজ থেকে এ চেতনা দূর করে আপাদমস্তক রঙিন করে নিলে। তাদের বেশ-ভূ ষায় আচ্ছাদিত হয়ে গর্ব করছো। আমার ভ্রম হচ্ছে,
দিন। তাদের মধ্যে ইসলামি চেতনা ও স্বাতন্ত্র্যবোধ জাগিয়ে তু লুন। এ মহৎ উদ্দেশ্য পূরণের জন্যই তোমরা কি তোমরা না অন্য কেউ? তোমাদের বিবেক-বুদ্ধি অন্যদের চিন্তা চেতনার শিকলে বন্দী হয়ে
আমরা হেরা ফেউন্ডেশন স্কু ল প্রতিষ্ঠা করেছি। পশ্চিমা সব কিছুই খারাপ একথা আমি বলছি না। আছে। তোমাদের গলায় যে শ্বাস প্রশ্বাস যাতায়াত করে তাও অন্যদের তন্ত্রীর মাধ্যমে। তোমাদের
বস্তুত পশ্চিমাদের মধ্যে খারাপ যেমন আছে তেমন তাদের কাছে অনেক ভালো জিনিসও আছে। মুখে যে ভাষা চর্চি ত হয় তাও অন্যদের কাছ থেকে ধার করা। শুধু তাই নয়, তোমাদের মনের গহীনে
তাই যা ভালো তা গ্রহণ করবেন আর যা কিছু মন্দ তা ছুড়ে মারবেন। পশ্চিমা দর্শন, ব্যবস্থাপনা ও যে আশা আকাঙখা উদিত হয় তাও বিজাতি থেকে গ্রহণ করা। তোমরা সূর্য নও চাঁদ। ধার করা
চিন্তা চেতনার ব্যাপারে আলামা ইকবাল রহ. যে পর্যবেক্ষণ আমাদের সামনে পেশ করেছেন, তা আলোয় কিঞ্চিত আলোকিত। আরবের সে নবী যিনি তোমাদেরকে সূর্য বানিয়েছিলেন। তিনি যদি
মুসলিম জাতির জন্য অমূল্য সম্পদ ও আলোকবর্তি কারূপে গণ্য হওয়ার যোগ্য। পৃথিবীর বুকে আবার আগমন করেন তাহলে তিনি তোমাদেরকে দেখলে বলবেন তোমরা তো
আমার নও, হায় আমাদের দুর্ভাগ্য! আমাদের অবক্ষয়! আমাদের বর্ত মান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এ
আল্লামা ইকবাল রহ. বলেছেন, পাশ্চাত্যের যে উন্নতি-অগ্রগতি ও প্রভাব-প্রতিপত্তি আমরা দেখছি
ভয়াবহ পরিণাম থেকে বাঁচাতে হলে তাদেরকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান শেখানোর জন্য আমাদের
তা বাদ্যযন্ত্র এবং নগ্ন মহিলাদের নৃত্যের কারণে অর্জি ত হয়নি; বরং তারা তা লাভ করেছে জ্ঞান-
এমন কিছু প্রতিষ্ঠান দরকার যেখানে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ শিক্ষা এমনভাবে দেওয়া
বিজ্ঞান নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টা তদবিরের মাধ্যমে। জ্ঞান সাধনার আগুনের মাধ্যমেই তাদের
হবে যে, সেখানের শিক্ষার্থীরা পশ্চিমাদের মানসিক গোলাম হবে না, উপর šুÍ তারা নিজেদের
উন্নতির প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত হয়েছে। নির্দি ষ্ট আকারের পোশাকে (শার্ট -প্যান্ট) জ্ঞান-বিজ্ঞান নেই।
ইতিহাস-ঐতিহ্য, সভ্যতা-সংস্কৃ তি ও দীন-ধর্মের ভাবধারার সাথে বেড়ে উঠবে।
জ্ঞান-বিজ্ঞান তো চেষ্টা সাধনা করে অর্জ ন করার জিনিস। জুব্বা-পাগড়ি আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের
জামিআ দারুল উলুম করাচি উম্মাহর এ প্রয়োজনটিকে অনুভব করে দারুল উলুমের পরিবেশ ও
পথে প্রতিবন্ধক নয়। বাস্তবেই পশ্চিমারা জ্ঞান-বিজ্ঞানে কয়েক শতাব্দীর মেহনতের ফলে আজ
সীমানার মধ্যে প্রথমে একটি উর্দু মিডিয়াম স্কু ল প্রতিষ্ঠা করেছিল। আর সেটা করা হয়েছিল
পার্থিব উন্নতি অগ্রগতি ও সীমাহীন প্রভাব-প্রতিপত্তির শীর্ষে আরোহণ করেছে। আমরাও যদি
আমার পিতামোহদয়ের জীবদ্দশায়। আর এখন হেরা ফাউন্ডেশন স্কু ল নামে একটি ইংলিশ
আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃ তি, দীন-ধর্ম বহাল রেখে স্বাধীনভাবে জ্ঞান-চর্চায় আত্মনিয়োগ করি তাহলে
মিডিয়াম স্কু ল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মুসলমানদের ধর্মীয় প্রয়োজনকে সামনে রেখে এর সিলেবাস
আমরাও উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করতে সক্ষম হবো।
ও শিক্ষা কারিকু লাম প্রণয়ন করা হয়েছে। আমরা মনে করি শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা মাতৃ ভাষায়
পার্থিব জ্ঞান-বিজ্ঞান ধর্মহীনতার উপর কখনো নির্ভ রশীল নয়। পার্থিব জ্ঞান-বিজ্ঞান ও উন্নতি
হওয়া উচিত। কিন্তু দাসত্বসুলভ মানসিকতায় আমরা এমনভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়েছি যে,
অগ্রগতি অর্জ ন করতে হলে পোশাক-আশাক ও জীবন-যাপন পদ্ধতি পশ্চিমাদের ধাচে গড়তে
ইংরেজি জানা ও ইংরেজি শিক্ষাকে আমরা বিদ্যাবুদ্ধির মাপকাঠি মনে করি। এটা আমাদের মধ্যে
মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণি ইংলিশ মিডিয়ামের পেছনে দৌঁড়াচ্ছে।
আর স্বাভাবিকভাবে এসব শ্রেণির শিশুরা বড় হয়ে দেশ ও সমাজের নেতৃ ত্বের আসনে বসছে। তাই
তাদেরকে ইংরেজির সাথে সাথে দীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে আমরা ইংলিশ মিডিয়াম
স্কু ল প্রতিষ্ঠা করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের ইংলিশ মিডিয়ামে দীনি শিক্ষার পাশাপাশি
আগ্রহী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে হিফজও পড়ানো হয়। আপনারা একটু আগে প্রদর্শনীতে
সবকিছু দেখেছেন। আমার ছেলে ইমরান আশরাফ ওসমানি স¤পর্কে আপনারা জানেন। আমি
তার স¤পর্কে বেশি কিছু বলবো না। আলহামদুলিল্লাহ, সে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে দারুল
উলুমের এ শাখাটিকে অত্যন্ত সুনামের সাথে পরিচালনা করে আসছে। তার সহকর্মীরাও তাকে
সহযোগিতা করছে। বিশেষ করে মাওলানা নাজীব সাহেব এর উন্নতির জন্য দিনরাত অনেক
পরিশ্রম করছেন। আলাহ সবাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের
নিয়তে এখলাস দান করুন। আমাদের কর্মপদ্ধতিকে যথার্থ করে দিন। সব ধরনের বিপদ-আপদ ও
বিচ্যুতি থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমাদের এই কাজটিকে তার সন্তুষ্টি মোতাবেক পরিচালনা
করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
--
অনুবাদ :মুফতি মহিউদ্দীন সাহেব

You might also like