You are on page 1of 4

শোষিতের ভাষা কি আমরা শুনতে পাই?

কমলা রকেট ও শ্রেণী সংঘাতের রাজনৈতিক উপাখ্যান

Mankind, which in Homer’s time was an object of contemplation for the Olympian gods, now is one for
itself. Its self-alienation has reached such a degree that it can experience its own destruction as an
aesthetic pleasure of the first order. This is the situation of politics which Fascism is rendering aesthetic.
Communism responds by politicizing art.
- Walter Benjamin

শিল্পকে কিংবা সিনেমাকে রাজনৈতিক করে তোলার মধ্য দিয়েই ফ্যাসিবাদের রাজনীতিকে সিনেমা বানিয়ে ফেলার প্রকল্পের
বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সূচনা হয়। শিল্পের অন্যান্য মাধ্যমের চেয়ে সিনেমা যান্ত্রিক পুনরুৎপাদনের যুগে এসে যে নতু ন শিল্প-

সংগ্রামের জমিন তৈরি করেছে তা ওয়াল্টার বেঞ্জামিন পরিষ্কার করেছেন। সে কথার সূত্র ধরে ‘কমলা রকেট’ সিনেমাটি
নিয়ে আলাপ শুরু করা যেতে পারে, যা সমসামায়িক নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় সিনেমাকে করে
তু লেছে রাজনৈতিক আখ্যান। টেলিভিশনে আগুন লাগা ফ্যাক্টরির বড় বড় অগ্নিকু ণ্ড আর কালো ধোঁয়া দেখে

‘ডায়াস্টোপিক ফিল্মের’ সাথে ফারাক করতে না পারা আমাদের যে চোখ ধ্বংসযজ্ঞে নিহিত শৈল্পিকতাকে খুঁজতে থাকে
কিংবা টেলিভিশনে শৈল্পিক উপস্থাপনের মাধ্যমে খুঁজতে বাধ্য করা হয়- সেই চোখের সামনে ‘ধ্বংসের শিল্পকরণের’

পেছনের ‘রাজনীতিকে শিল্পকরণ’ করার মাধ্যমে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁ ড়ে দিয়েছেন কমলা রকেটের পরিচালক। নূর ইমরান

মিঠু শাহাদুজ্জামানের ‘মৌলিক’ও ‘সাইপ্রাস’ নামের দুটি গল্প অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন। মধ্যবিত্ত শ্রেনীর
শিল্পজগতে শাহাদুজ্জামানের তারকাখ্যাতিকে কাজে লাগানোর জন্য কিংবা নিছকই গল্পের আবেদনের কারণে অথবা উভয়
কারণেই সিনেমাটির প্রচারণায় শাহাদুজ্জামানের নাম জোরেশোরেই প্রচারিত হয়েছে। সিনেমা একটি সামষ্টিক শিল্প
মাধ্যম(নির্মাণ থেকে প্রচার যেহেতু বহুজনের শ্রমের দ্বারা সাধিত হয়) বলেই শাহাদুজ্জামানের মূল গল্প দুটির নিরিখে
সিনেমাটিকে পাঠ করার চেয়ে বরং সিনেমায় যা দেখানো/বলা হয়েছে তার নিরিখে সিনেমাটিকে পাঠ করলে চলচ্চিত্রটির
নির্মাণ প্রেক্ষিত সমেতই টেক্সটের কাছাকাছি থাকা সম্ভব। শাহাদুজ্জামান যেহেতু সিনেমার চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন, গল্পকার
শাহাদুজ্জামানের আসর থেকে সিনেমাটি বেরিয়ে এসেছে যার সাক্ষ্য শাহাদুজ্জামান নিজেই দিয়েছেন তার ফেসবুক পোস্টে-

‘চিত্রনাট্য করতে গিয়ে মুল গল্পের কাহিনী কাঠামো থেকে সরে আসতে হয়েছে অনেকটু কু ।‘

তবে শাহাদুজ্জামানের লেখার সাথে পূর্ব পরিচয়ের কারণে তার প্রভাব সিনেমায় উপেক্ষা করা কঠিন, যেটি নুর ইমরান মিঠু র
চলচ্চিত্রায়নের দক্ষতার কারণেই সম্ভব হয়েছে যিনি চিত্রায়নের বেলায় চিত্রনাট্যকারের ছাপ জানান দিয়ে গেছেন নিতান্তই নিষ্ঠার
জোরে অর্থাৎ তিনি চিত্র নাট্যের নাটকীয়তা চলচ্চিত্রে অক্ষু ণ্ণ রেখেছেন। ফলে চলচ্চিত্রে আমরা মিঠু কে যেমন পাই তেমনি
প্রবলভাবে পাই শাহাদুজ্জামানকেও, জোর করে নয় বরং পাওয়ার উপলক্ষ সিনেমায় তৈরি করা আছে বলেই পাওয়া যায়।

এই উপলক্ষগুলো বিন্যস্ত করা হয়েছে সিনেমার চরিত্র ও কাহিনীর পরতে পরতে। প্রচলিত মিডিয়ায় সিনেমাটির কাহিনী
সংক্ষেপ বর্ণিত হয়েছে এভাবে-
‘রকেটের নিয়মিত সব যাত্রীর সঙ্গে উঠে পড়েছে এক ফার্স্ট ক্লাস যাত্রী আতিক। ব্যবসায়ী আতিক নিজের
কারখানায় আগুন লাগিয়ে দেয় ইনস্যুরেন্স কোম্পানি থেকে টাকা পাওয়ার জন্য। আগুনের ঘটনা যখন সারা
দেশের মূল খবরে পরিণত হয় তখন সে মংলায় বন্ধু র বাসায় আত্মগোপন করার জন্য স্টিমারে ওঠে। অন্যদিকে
কারখানার আগুনে পোড়া এক নারী কর্মীর লাশ নিয়ে স্বামী মনসুরও একই স্টিমারের যাত্রী হয়।

এমন একটি গল্প নিয়েই নির্মিত হয়েছে ‘কমলা রকেট’।‘

তবে সিনেমাটি তার সমসাময়িক বাংলাদেশী বাংলা সিনেমার মতো কাহিনীতে যা বলা হলো তাতে সীমাবদ্ধ থাকে না বরং
সিনেমায় যা দেখানো হয়নি নানা সংকেতে সেদিকে দর্শককে নির্দে শ করে – দর্শককে পরিনত করে সমালোচকে, দর্শকের
অজান্তেই। পরিচালক নিজেই অবশ্য সিনেমার সাংকেতিকতা নির্দে শ করে সাক্ষ্য দিয়েছেন সিনেমাটিতে বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ
ও বর্ত মান বাংলাদেশের চিত্র দেখাতে চেয়েছেন এই বলে। তবে এমন বুলি হরহামেশাই শোনা যায়। তাহলে দেশী সিনেমার
বাজারে প্রচলিত এসব বয়ানের সাথে কমলা রকেটের ফারাক কোথায়? ফারাক হলো ‘কমলা রকেট’ শ্রেনী দ্বন্দ্ব ও তদসংশ্লিষ্ট
জটিল অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটকে জানান দিতে পেরেছে সচেতন মার্ক্সবাদী কায়দায় -যা দর্শক কাহিনী
ও দৃশ্যের ঘনঘটার মাঝে অসেচতনভাবেই গ্রহণ করছে। ওয়াল্টার বেঞ্জামিন যাকে বলেছেন ‘রিসিপশন ইন দি স্টেট অব
ডিস্ট্রাকশন’।

সিনেমার নাম কমলা রকেট রাখার মধ্যেই নির্দে শিত আছে প্রেক্ষাপটের প্রাধান্য। কমলা রকেট সিনেমার ঘটনার জমিন।
রকেটের ঢাকা থেকে খুলনা যাত্রার সাথে সমান্তরালে যাত্রা করে সিনেমাটি নিজেই এবং চরে আটকে রকেট থেমে গেলে থেমে
যায় সিনেমাটি। যদিও আদতে কমলা রকেটের আভিধানিক নাম স্টিমার। কিন্তু স্টিমার কার কাছে এবং কিভাবে রকেট হয়ে
গেলো? এই নামকরণের পেছনে রয়েছে শ্রেনী পরিচয়। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত কিংবা অভিজাত শ্রেনীর কাছে স্টিমারের স্টীম ইঞ্জিনে
চালিত হবার জ্ঞাণ জাহির করে শ্রেনী পরিচয় জানান দেয়ার তাগিদ রয়েছে বিধায় তাদের কাছে এটি স্টিমার। কিন্তু নিতান্তই স্টিম
ইঞ্জিনের জ্ঞানের অভাবে যাদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এই জলযানের গতি ও যাত্রাপথের দূরত্ব তাদের কাছে এটিই রকেট –
যা মহাশূন্যে না গেলেও ঢাকায় যায়। যার উষ্ণ রংয়ের সাথে মিল আছে আগুন কিংবা সূর্যরশ্মির। ফলে কমলা রঙ যেন
আভাস দেয় সূর্য কিংবা আগুনের মতো ঊর্ধ্বমুখী যাত্রার যা অপেক্ষাকৃ ত কম শিল্পায়িত ও অনুন্নত দক্ষিণাঞ্চল হতে যাত্রা
করে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ও শিল্প কেন্দ্রে- নিম্ন থেকে ঊর্ধ্বে- উন্নয়নের কেন্দ্রে - ঢাকায়। কমলা রঙা এই আগুন সিনেমার কাহিনী
আবর্ত নেরও একটি মূল উপাদান। নিজের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে আগুন দিয়ে কমলা রকেটে করে মংলায় গা ঢাকা দিতে যাচ্ছে
শিল্পপতি আতিক, একই রকেটে সেই ফ্যাক্টরিতে লাগা আগুনে পুড়ে যাওয়া স্ত্রীর লাশ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে রিকশাচালক মনসুর
যাদের দুজনেরই ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে যাত্রার কারণ একই- আগুন – একজন আগুন লাগানোর হোতা আরেকজন সেই
আগুনে পুড়ে যাওয়া নিহত।

গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি অর্থাৎ উৎপাদন যন্ত্রের মালিক ক্ষমতাধর আতিক ও যার শ্রমে আতিকের উৎপাদন যন্ত্র চলে কিন্তু যে
নিজের শ্রমফসলের মালিক নয় সেই ক্ষমতাহীন শ্রমিকের লাশ ও তার স্বামী মনসুরের মাঝে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করে
দালাল শ্রেনীর মফিজুল যার বিচরণ দুই শ্রেনীতেই। মফিজুল নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের কাছে বিক্রি করে করে কবিরাজি বই যাতে
আছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা, কি করিলে কি হয় ইত্যাদি সাহিত্যিকতা যাকে বুর্জোয়া সাহিত্য সাহিত্যজ্ঞান করে না। জনপ্রিয় সাহিত্য ও
বুর্জোয়া সাহিত্যের বিভেদের প্রতি তীব্র কটাক্ষ আছে মফিজুলের কবি ও কবিরাজ পরিচয়ে শুধু সাহিত্যিকতার শ্রেণী মানদণ্ডে
নয় বরং কবিতাও কিভাবে কবিরাজি হয়ে উঠতে পারে এই বিচারে। আবার প্রাতিষ্ঠানিক পাশ্চাত্যপ্রধান শিক্ষায় শিক্ষিত
উঁচু শ্রেণীর পুরুষের কাছে যেহেতু তার কবিরাজি কিংবা বোদ্ধিকতা চলবে না, তাদের কাছে মফিজুল সরবরাহ করে নিজ
শ্রেনীর নারী শরীর। এখানেও দুই শ্রেনীতেই পুরুষ কর্তৃ ক নারীর নিয়ন্ত্রণ ও নারী শরীরের উপর পুরুষের আধিপত্য খোলাসা
করা হয়েছে সাথে এও জানান দেয়া হয়েছে যে আতিকদের কিংবা অপেক্ষাকৃ ত অধিক ক্ষমতাশালী পুরুষের ভোগের বস্তু হয়
ক্ষমতাহীন নারী যার নিজের শরীর এমনকি লাশেরও ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে পুরুষ- আতিক, পতিতা সরবরাহকারী মফিজুল
কিংবা স্ত্রীর লাশের শেষকৃ ত্য নির্ধারণকারী মনসুর। মফিজুল যেহেতু নিজেও ক্ষমতাহীনদেরই কাতারে ফলে তার সহমর্মিতা
থাকে মনসুরের সাথে কিন্তু একইসাথে সে আতিকের প্রতিও থাকে আনুগত্যশীল ও সহযোগিতা পরায়ন যেহেতু তার অর্থের
বিরাট যোগান দেয় আতিকদের মতো ধনিক শ্রেণী যাদের কবিরাজি জ্ঞানে বশ করা যায় না, কিন্তু বশ করা যায় শরীর দিয়ে কারণ
নিম্নশ্রেণীর শরীর উৎপাদিত শ্রম ভক্ষণ কিংবা শোষণ করেই তারা ধনী।

এই ধনিক শ্রেণীর মাঝেও আছে রাজনৈতিক চরিত্র যা সিনেমাটিতে তু লে ধরা হয়েছে নব‍্য ধনী এক দম্পতির মাধ্যমে যাদের
সাথে যাত্রা করছে দম্পতির স্ত্রীর সদ‍্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা ছোট বোন। আতিকের সাথে কথোপকথনে
অভিজাত শ্রেণীর পরিচায়ক হিসেবে যখন ঢাকা ক্লাবের সদস‍্যপদ নিয়ে কথা হয়‌তখন আতিক জানায় পাঁচ বছর আগে ঢাকা
ক্লাবের সদস‍্যপদ ছেড়ে দিয়েছে সে, এখন আর যাওয়া যায় না বলে। বাংলাদেশে পাঁচ বছর একটি সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ
ফলে প্রচ্ছন্নভাবে সরকার পরিবর্ত ন ও তার সাথে নব‍্য ধনিক শ্রেণী তৈরি হওয়ার যোগ এবং তাদের অর্থ থাকলেও বুর্জোয়া
রুচি না থাকার চিরাচরিত বাস্তবতার মুখোমুখি করা হয়েছে। আবার এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করা মেয়েটির
একদিকে সমাজসেবী হবার বাসনা, আবার স্বাধীন এন্টারপ্রনার হবার খায়েশ, অন‍্যদিকে ধনী পাত্রের সাথে বিয়ের কথাবার্তা,
সাথে চলতি একটা প্রেম যা শারীরিক সম্পর্কে গড়ায় রকেটের কেবিনেই, আবার বিসিএসের রেজাল্ট পেয়ে উৎফু ল্ল হওয়া
বর্ত মানে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ু য়া মধ‍্যবিত্ত/ উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণীর যেকোনো উপায়ে শ্রেনী উত্তরণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠার অ‍্যাখান।
সিনেমাটি‌রাজনৈতিক ইতিহাস বিস্মৃত না করেই শুরুতেই কৌতু কবশতঃ জানিয়ে দেয়় আতিকের কেবিনে একবার রানী‌
এলিজাবেথ খুলনায় যাত্রা করেছিল যা শুধু দেশের উপনিবেশিক ইতিহাসকেই নির্দে শ করে না বরং ঔপনিবেশিক শাসকের
স্থলে দেশীয় শোষক প্রতিস্থাপিত হবার নব‍্য‍্ উপনিবেশিক বাস্তবতাকে তু লে ধরে। যা প্রকট শ্রেনী বৈষম্য ও বিভেদের প্রতীক
হিসেবে রকেটের প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় ও তৃ তীয় শ্রেণীর এই‌পিরামিডীয় কাঠামো ও তার উপনিবেশিক ইতিহাসকেই স্মরন
করিয়ে দেয়। সিনেমার মফিজুল চরিত্রটি সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে কারণ তার আন্তঃশ্রেনী যাত্রাকে সিনেমাটি অনুসরণ
করে। চলে রকেটটি আটকে গেলে শ্রেনী কাঠামোর এই‌বিভেদ ভেঙ্গে পড়ে। যেহেতু রকেটের উপরতলার খাদ‍্যের জোগান
নীচতলায় হয়, ফলে খাদ‍্য সংকটের সময় শাসক শ্রেণীর মুখাপেক্ষী হতে হয় খাদ‍্য উৎপাদনকারী শোষিতদের কাছে যার
ঘোষণাও আসে সিনেমাতে- ‘ফার্স্ট ক্লাসের খাবার শেষ।' যাদের শ্রমে ও ঘামে ফার্স্ট ক্লাসের খাবারের ব্যবস্থা হয় কিন্তু তারাই থার্ড
ক্লাস হয়ে থাকে - দুর্যোগের সময় এই রাজনীতি ভেঙ্গে পড়ে। ফলে আতিক বাধ‍্য হয় নিচু তলায় নামতে। এদিকে গার্মেন্টসে
আগুনের ঘটনা চাউর হয়ে থাকলে দুঃস্বপ্নে আতিক দেখে সে ডু বে আছে তার বিছানায় বিশ্বের সব নামিদামি ব্র্যান্ডের লোগো
আর পানির উপরে নারী শ্রমিকদের মুখ। ফ্রয়েডীয় মনোবিশ্লেষনের নিরিখে আতিকের অবচেতনে আছে ইড বা কামনা যা
এখানে পুঁজিবাদী লোভ যা ব্রান্ডের লোগো হিসেবে হাতছানি দিচ্ছে তাকে, তার ইগো মাঝামাঝি জায়গায় ডু বে আছে পানিতে।
অপরদিকে তার সুপারইগো পানির উপরে অর্থাৎ সমাজ হতে শ্রমিকদের মুখ হয়ে তার ডু বন্ত ইগোকে তাড়িত করছে ফলে
তার ভেতর তৈরি হচ্ছে অপরাধবোধ তাই পানিতে ডু বে বাতাসের জন্য হাঁসফাঁস করছে সে। আবার মনসুরের স্বপ্ন আতিকের
এই বস্তুগত দুঃস্বপ্নের তু লনায় আধ্যাত্মিক। হালকা তন্দ্রায় সে দেখে গাঢ় কু য়াশা ভেদ করে একটি নৌকা ভেসে আসছে
রকেটের দিকে যেনো তার স্ত্রীর লাশ নিয়ে সে আবার ফিরে যাচ্ছে তীরে। ভোগবাদী-পুঁজিবাদী বনাম শোষিতের মনোজগতের
এক দ্বৈতকরন এখানে প্রতিভাত হয়। তবে শোষিত এই শ্রেনী যারা রাষ্ট্র কাঠামোর সুবিধা হতে বঞ্চিত- এই ভাগ‍্যাহতদের কিংবা
সাবঅল্টার্নদের এই পুঁজিবাদী শোষনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উপায় কী? কিংবা আদৌ লড়াই করা যায় কিনা? কিংবা লড়াই করা
গেলেও তার প্রতিবাদের ভাষা কী? সেই ভাষা কি আমরা বুঝতে পারি আদৌ? শ্রমিকের পচা লাশের গন্ধে আতিকের বমি
কিংবা শরীরের ভেতরের উদ্গীরন অথবা বমির মাধ্যমে শোষককেই মরণশীলতার দিকে ঠেলে দেওয়া - শোষকের বিরুদ্ধে
শোষিতের একমাত্র প্রতিবাদ হয়ে ওঠে। শোষিতের পুড়ে যাওয়া পচা শরীর দিয়ে শোষকের বিরুদ্ধে বদলা নিলেও আমরা কি তা
বুঝতে পারি? সাবঅল্টার্ন কি তা জানান দিতে পারে কিংবা এই জানান দিয়ে যাওয়া কি আমরা বুঝতে পারি? এই প্রশ্নের মুখে
আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়ে ক্যামেরা কমলা রকেট থেকে এগিয়ে আসতে থাকে আমাদের দিকে যেনো আমাদের চোখে ক্যামেরা
বিলীন হয়ে যায় আর পর্দায় নেমে আসে অন্ধকার – আমরা দর্শক হয়ে সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে পড়ি সমাজে, আমাদের
চোখে ঢু কে যাওয়া ক্যামেরা নিয়ে হলের বাইরেও দেখতে থাকি ‘কমলা রকেট’।

You might also like