Professional Documents
Culture Documents
Space Suit
Space Suit
মানুষের মহাকাশ যাত্রার শুরু থেকেই অন্যান্য অপরিহার্য বিষয়ের সাথে যেটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে
বিরাজ করছে তা হল, নভোচারীদের ব্যবহার্য বিশেষ পোশাক, যাকে প্রচলিত ভাষায় বলা হয়
‘স্পেসস্যুট’। এই বিশেষ পোশাক ব্যতীত মহাকাশের প্রতিকূ ল ও কঠোর পরিবেশে মানুষের পক্ষে
বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
ব্যবহারিক ভাষায় স্পেসস্যুট বলা হলেও এটি শুধুমাত্র একটি পোশাক বা একগুচ্ছ পোশাকের সমষ্টিই
নয়, এটিকে “একজনের উপযোগী মহাকাশযান” (One-Person Spacecraft)-ও বলা হয়ে থাকে।
স্পেসস্যুটের দাপ্তরিক নাম ‘Extravehicular Mobility Unit’, সংক্ষেপে EMU. একটি পূর্ণাঙ্গভাবে
প্রস্তুত ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সাজানো স্পেসস্যুট পরা নভোচারী মহাকাশযানের বাইরে বেরিয়ে এসে
মহাশূন্যে ভেসে থাকতে পারেন। তিনি ভেসে ভেসে স্পেস স্টেশনের বাইরের ত্রুটি বিচ্যুতি মেরামতের
কাজও করতে পারেন। নতু ন গ্রহে নামার জন্যও স্পেসস্যুট প্রয়োজনীয়।
সাধারণভাবে বলা যায়, স্পেসস্যুট বা EMU হচ্ছে একগুচ্ছ বিশেষ নিরাপত্তামূলক পোশাক ও
যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে একটি বিশেষ ব্যবস্থা, যেটি মহাকাশযানের ভেতরের ও বাইরের প্রতিকূ ল পরিবেশে
নভোচারীর নিরাপদে অবস্থান করা, চলাচল করা ও স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা প্রদান করে।
স্পেসস্যুটের প্রয়োজনীয়তাঃ
পর্বতে উঠার সময় ভূ পৃষ্ঠের উপরের প্রতিকূ ল আবহাওয়ায় টিকে থাকার জন্য পর্বত আরোহীদের
বিশেষ পোশাক পরার দরকার হয়। মহাকাশে পর্বতের চেয়েও অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, মারাত্মক
ক্ষতিকর এবং প্রাণনাশকারী পরিবেশে থাকতে হয় নভোচারীদের। সেই প্রাণসংশয়কারী পরিবেশে বেঁচে
থাকার জন্যই প্রয়োজন বিশেষ নিরাপত্তামূলক স্পেসস্যুট।
মহাকাশের বায়ুশূন্যতায় অক্সিজেনের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ, নভোচারীর শরীরের বাহ্যিক চাপ নিয়ন্ত্রণ,
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, নভোচারীদের পারস্পারিক ও পৃথিবীর সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা (বায়ুশূন্যতায়
যেহেতু সরাসরি কথা বলা যায় না, তাই), মহাকাশের ভয়াবহ রেডিয়েশন প্রতিহত করা, সম্ভাব্য
‘এলিয়েন রোগ-জীবাণু’র হাত থেকে নভোচারীকে রক্ষা করা ইত্যাদি কাজের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা
হয় স্পেসস্যুটে, যাতে নভোচারী নির্বিঘ্নে তার কাজ নিরাপদে সম্পন্ন করতে পারেন।
আগেই বলা হয়েছে স্পেসস্যুট ঠিক ‘একটি পোশাক’ নয়। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা।
অনেকগুলো ছোট-বড় গুরুত্বপূর্ণ অংশের সমন্বয়ে পুরো স্পেসস্যুট গঠিত। স্পেসস্যুটের প্রধান
অংশগুলোর গঠন ও কার্যকারিতা সম্পর্কে জানা যাক।
প্রথমেই দেখা যাক স্পেসস্যুটের বাইরের শক্ত খোলসের ভেতরে থাকা অভ্যন্তরীণ পোশাক ও
ডিভাইস গুলোঃ
নভোচারীদের পারষ্পারিক ও মূল মহাকাশযান এবং পৃথিবীর সাথে যোগাযোগের পূর্ণ ব্যবস্থা হল
CCA. Communication Carrier Assembly (CCA) এই ব্যবস্থাপনায় হেলমেট এর ভেতরে
মহাকাশচারীর মাথায় একটি টেফলন ও নাইলন ফেব্রিক্সের তৈরি ক্যাপ থাকে। একে কমিউনিকেশন
ক্যাপ বলে। এখানে ভয়েস কমিউনিকেশন এর জন্য এয়ারফোন, মাইক্রোফোন এবং বৈদ্যুতিক
সংযোগ ব্যবস্থা থাকে।
এই সংযোগ ব্যবস্থার একটি অংশ যুক্ত থাকে নভোচারীর ‘ব্যাকপ্যাক’-এর রেডিও ট্রান্সমিশন ও
রিসিভার অংশের সাথে, আরেকটি অংশ যুক্ত থাকে বাইরের পোশাকের বুকের দিকে থাকা কন্ট্রোল
ইউনিট ও ডিসপ্লে অংশের সাথে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমেই নভোচারী তার প্রয়োজনীয় সকল প্রকার
যোগাযোগ রক্ষা করেন।
স্পেসস্যুট খুব ভাল তাপরোধী। সুনির্দি ষ্ট ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ছাড়া এর ভেতরের তাপ বাইরে বের হতে
পারে না, বা বাইরের তাপ ভেতরে ঢু কতে পারে না। এজন্য নভোচারীর দেহে যে তাপ উৎপন্ন হয়, সেটা
বাইরে বের করার ব্যবস্থা থাকা জরুরী। নভোচারীর শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাই হল LCVG. Liquid
Cooling & Ventilation Garment (LCVG) স্পেসস্যুটের বাইরের আবরণের ভেতরে একটি
বিশেষ তাপ নিয়ন্ত্রণকারী পোশাক থাকে। এই পোশাক খুব পাতলা কিন্তু ফাঁপা ও নমনীয় টিউবের
তৈরি। আন্ডারগার্মেন্টসের মত এই পোশাক পরতে হয়। পোশাকের পুরোটাই টিউব নেটওয়ার্কিংয়ের
আওতায়। এই টিউবের ভেতর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় যা নভোচারীর শরীরে উৎপন্ন তাপ সরিয়ে
নিয়ে নভোচারীর দেহের তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখে। এই পোশাকের সাথে পানি প্রবাহ ছাড়াও
বিশেষ বাতাস প্রবাহ ব্যবস্থা যুক্ত থাকে যা ভেন্টিলেশনের কাজ করে। এই পোশাকের পানি প্রবাহ ও
ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা ‘ব্যাকপ্যাক’-এর নিয়ন্ত্রণ অংশের সাথে যুক্ত থাকে, যেটি নিরবচ্ছিন্ন পানি ও
বাতাসের প্রবাহ বজায় রাখে।
একে বলা চলে নভোচারীদের বিশেষ আন্ডারওয়্যার। LCVG-এর নিচে আন্ডারওয়্যারের মতই এটি
পরতে হয়। এটি স্পেসস্যুটের ভেতরে নভোচারীর মূত্র সংরক্ষণ করে যথাসময়ে বাইরে বের করে দেয়।
Maximum Absorbency Garment (MAG) In-suit Drink Bag (IDB) একটি বিশেষ ধরণের
সুপেয় পানির ব্যাগ স্পেসস্যুটের বাইরের আবরণের ভেতরের দেয়ালে সংযুক্ত থাকে। সেখান থেকে
একটি পাইপ চলে যায় নভোচারীর মুখের কাছে। নভোচারী সেই পাইপ দিয়ে ব্যাগ থেকে পানি পান
করতে পারেন।
স্পেসস্যুটের সবার উপরের অংশটি একটি বিশেষ হেলমেট। স্পেসস্যুট পরার সময় এই বিশেষ আবদ্ধ
হেলমেটকে মূল স্পেসস্যুটের সাথে যুক্ত করা হয় ।
Helmet Assembly হচ্ছে একটি স্বচ্ছ হেলমেট। এর নিচের দিকে Neck Ring সংযুক্ত থাকে যার
সাহায্যে হেলমেট মূল স্পেসস্যুটের সাথে সংযুক্ত করা হয়ে থাকে। বিশেষ পলি-কার্বনেট পদার্থের তৈরি
এই হেলমেটের বাইরের স্তরে সংযুক্ত থাকে Extravehicular visor Assembly । শক্ত আবরণের এই
এসেম্বলি নভোচারীকে বাইরের আঘাত ও সরাসরি উজ্জ্বল সূর্যালোক এবং রেডিয়েশন থেকে রক্ষা
করে। স্বচ্ছ হেলমেটের সামনের দিকে বাইরে Extravehicular Assembly-এর প্রথম সুরক্ষা স্তর
Two-way Mirror-এর মত কাজ করে। এটি সূর্যালোক ও রেডিয়েশন প্রতিফলিত করে, কিন্তু
নভোচারী ঠিকই বাইরে দেখতে পান।
এই স্তরের উপরে আরেকটি সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ আবরণ থাকে। এটি সরাসরি নভোচারীর সম্মুখভাগে
সূর্যালোক পরলে সেটিকে বাধা দেয়।
এই দুটি সুরক্ষা স্তর এসেম্বলির কানের কাছে থাকে। ডানে ও বামে দুটি নব ঘুড়িয়ে এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ
করা যায়। প্রয়োজনে এগুলো দিয়ে ঢেকে দেয়া যায়, আবার চাইলে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ অংশটিও উন্মুক্ত রাখা
যায়।
HUT এর পেছনে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম ব্যাকপ্যাক থাকে। HUT এর উপরের নেক রিং এবং
Helmet এর নিচের নেক রিং দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ করে যুক্ত করা হয়। HUT এর সাথেই সংযুক্ত থাকে
Arm Assembly. নভোচারীর হাতের সুবিধাজনক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য বিশেষ সংযুক্তকরণ
ব্যবস্থা ও বিয়ারিংয়ের সাহায্যে Arm Assembly ও HUT পরস্পর যুক্ত থাকে। এতে নভোচারী তার
হাত সহজে নাড়াচাড়া করতে পারেন এবং বিয়ারিংয়ের জন্য হাতের নিচের অংশ ঘুরানো সম্ভব হয়।
Arm Assembly-এর শেষ অংশ Gloves এর সাথে যুক্ত করা হয়। নভোচারীর কব্জির ঘূর্ণনের জন্য
প্রয়োজনীয় বিয়ারিং ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা এখানে রাখা হয়, যাতে সহজে গ্লোভস সংযোজন-
বিয়োজন করা যায় এবং কব্জি নাড়ানো যায়।
Arm Assembly-এর শেষ অংশে যুক্ত করা হয় Glove Assembly. এটি নভোচারীর হাতের কব্জি,
আঙ্গুল ইত্যাদি ঢেকে রাখে ও বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে। এখানে কব্জির অংশে কব্জির ঘূর্ণনের
সুবিধার জন্য রোটারি বিয়ারিং ব্যবহৃত হয়। এসেম্বলির ভেতরে সংযুক্ত একটি Hot Pad অতিরিক্ত
গরম ও ঠাণ্ডা থেকে নভোচারীর হাতকে রক্ষা করে। এছাড়া নভোচারীর নিয়ন্ত্রণে একটি ‘ফিঙ্গার টিপ
হিটার’ থাকে যা আঙ্গুলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
HUT এর নিচে স্পেসস্যুটের পুরো অংশকেই একত্রে LTA বলা বলা হয়। Body Seal Closer
অংশের সাহায্যে স্পেসস্যুটের নিম্নাংশ LTA এবং ঊর্ধ্বাংশ HUT পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে।
এছাড়া LAT এর Waist Bearing এবং পায়ের ফ্লেক্সিবল অংশের দরুণ নভোচারী ভালভাবে কোমর
ও পা নাড়াচাড়া করে চলাফেরা করতে পারেন। সবশেষে এর সাথেই যুক্ত থাকে বিশেষ বুট।
Portable Life Support System (PLSS)
স্পেসস্যুটের ভেতরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করা এবং মহাশূন্যে বা ভিনগ্রহের মাটিতে
নভোচারীর বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ প্রস্তুত করার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সিস্টেম
‘ব্যাকপ্যাক’-এ থাকে, যা স্পেসস্যুটের HUT এর পেছনের দিকে সংযুক্ত থাকে। সামগ্রিকভাবে এই
ব্যবস্থাকেই PLSS বলা হয়। EMU এর PLSS Backpack ২৬”×২০.৫”×১০.৫” আকারের হয়ে
থাকে। সমগ্র ব্যবস্থাসহ এর ওজন ১০৪ পাউন্ড। ১৬.৮ ভোল্টের সিলভার-জিংক ব্যাটারির সাহায্যে
PLSS পরিচালিত হয়ে থাকে।
১৭” লম্বা এবং ৬” ব্যাসের সিলিন্ডারে 1380-1440 PSI চাপে থাকা প্রায় ১.৫ পাউন্ড অক্সিজেন
গ্যাস থাকে যা নভোচারীকে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। এখান থেকে স্পেসস্যুট ও হেলমেটের
ভেতরে অক্সিজেন প্রবাহিত হয় এবং সেখানে 3.9 PSI চাপ বজায় রাখে, যা নভোচারীর জন্য স্বস্তিকর
পরিবেশ তৈরি করে।
এই ব্যবস্থায় প্রাইমারি অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম থেকে প্রতি মিনিটে ৫.৫ ঘনফু ট অক্সিজেন
স্পেসস্যুটের ভেতরে প্রবাহিত হয়। নভোচারীর শ্বাস-প্রশ্বাস কার্যকর রাখার জন্য এই প্রবাহিত
অক্সিজেন স্যুটের ভেতর থেকে আর্দ্রতা, তাপ ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিয়ে সিস্টেমের ভেতরে
পরিশোধিত হয়ে পুনরায় স্পেসস্যুটে প্রবাহিত হয়। এটি একই সাথে স্পেসস্যুটের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার
একটি অংশ।
স্পেসস্যুটের LCVG এর ভেতর দিয়ে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা এই অংশের কাজ। একটি
ব্যাটারিচালিত পাম্প প্রতি মিনিটে ৪ পাউন্ড হারে ঠাণ্ডা পানি LCVG এর টিউব নেটওয়ার্কে র ভেতর
দিয়ে প্রবাহিত করে। এর মাধ্যমে নভোচারীর শরীরে উৎপন্ন বিপাকীয় তাপ অপসারিত হয়, ফলে
নভোচারীর দেহ ঠাণ্ডা থাকে। এটি প্রতি ঘণ্টায় 1600-2000 Btu তাপ অপসারণ করতে সক্ষম।
এটি তাপীয় ব্যবস্থাপনার আরেকটি অংশ। মোট ১১.৮ পাউন্ড পানি রাবার ব্লাডার ও রিসার্ভার
ট্যাংকে থাকে যা স্পেসস্যুটের অভ্যন্তরীণ তাপ নির্গমন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত থেকে তাপীয় স্বাভাবিকত্ব
বজায় রাখতে সহায়তা করে।
নভোচারীগণের পারষ্পারিক যোগাযোগ এবং পৃথিবীর সাথে যোগাযোগের সামগ্রিক ব্যবস্থা সংযুক্ত
থাকে PLSS এ। এটি প্রধানত একটি বিশেষায়িত রেডিও সিগন্যাল ট্রান্সমিশন ও রিসিভিং সিস্টেম।
নভোচারীদের কথোপকথন থেকে শুরু করে তাদের শারীরিক অবস্থা, স্পেসস্যুটের অভ্যন্তরীণ
ব্যবস্থাপনার কার্যকর অবস্থা, পারফর্মেন্স ইত্যাদি ডাটা সংগ্রহ করে মহাকাশযান ও পৃথিবীর কন্ট্রোল
সেন্টারে প্রেরণ করা হয় এই কমিউনিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে। এছাড়া স্পেসস্যুটের অক্সিজেন
সরবরাহের হার, তাপমাত্রা ও চাপ, পরিমাপক যন্ত্রাংশ এবং অন্যান্য স্থানে সংযুক্ত সেন্সর ও বৈদ্যুতিক
অংশে ভোল্টেজ ও কারেন্ট নিয়ন্ত্রণ করা সিস্টেমটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দশটি পৃথক চ্যানেলে
এসব তথ্য আদানপ্রদান হয়ে থাকে।
কমিউনিকেশন সিস্টেমের একটি অংশ উচ্চ অক্সিজেন সরবরাহ হার, কম চাপ, কু লিং ও
ভেন্টিলেশন সিস্টেমের যেকোনো অস্থিতিশীল অবস্থায় স্পেসস্যুটের HUT এ লাগানো DCM
অংশের ইন্ডিকেটরে সেই তথ্য পৌঁছে দিয়ে নভোচারীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সতর্ক করে থাকে।
PLSS এর উপরে আকারে অপেক্ষাকৃ ত ছোট ১৮”× ১০”×৮” আকৃ তির ৩৫.১ পাউন্ড ওজনের
নিরাপত্তামূলক এই ব্যাকআপ অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাটি সংযুক্ত থাকে। এখানে জরুরী অবস্থায়
ব্যবহারের জন্য ৫.৭ পাউন্ড অক্সিজেন 6950 PSI চাপে সংরক্ষিত থাকে। একটি পৃথক ব্যাটারি এই
ব্যবস্থাকে সচল রাখে।
কোনো দুর্ঘটনা বা যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে মূল PLSS কাজ না করলে, অক্সিজেনের সরবরাহ
আশঙ্কাজনক হারে কমে গেলে, কিংবা স্পেসস্যুটের ভেতরের চাপ কমে গেলে নভোচারী তার DCM
অংশে লাগানো একটি লিভারের সাহায্যে এই ব্যবস্থা সচল করতে পারেন। এই ব্যবস্থা সচল করলে
এটি ৩০ মিনিট সচল থাকতে সক্ষম। এই ব্যবস্থা ৩০ মিনিট স্পেসস্যুটের ভেতরের চাপ 3.7 PSI ধরে
রাখে এবং প্রতি ঘণ্টায় ৮.৩ পাউন্ড অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। সেই সাথে এই ব্যবস্থা
নভোচারীর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখা, অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিষ্কাশন
এবং হেলমেটের ভিসিয়র অংশকে পরিষ্কার ও স্বচ্ছ রাখে।
নিরাপত্তামূলক জরুরী অতিরিক্ত দ্বিতীয় ব্যবস্থা BSLSS এর সাথে একই সাথে যদি এই ব্যবস্থা সচল
করা হয়, তখন এটি এর অর্ধেক ক্ষমতায় কাজ করে এবং প্রায় ৭৫ মিনিট সচল থেকে নভোচারীকে
বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হয়।
কোনো কারণে নভোচারীর Body Temperature Cooling system কাজ না করলে বা সমস্যা দেখা
দিলে আরেকজন নভোচারীর PLSS ব্যাকপ্যাক থেকে কু লিং ওয়াটার ঐ নভোচারীর ব্যাকপ্যাকে
সরবরাহ করে তাঁর কু লিং সিস্টেম সচল রাখার জন্য এই বিশেষ ব্যবস্থা।
স্পেসস্যুট থেকে ৮.৫ ফু ট লম্বা নমনীয় দুটো পাইপ এর একটির মধ্য দিয়ে কু লিং ওয়াটার, কু লিং
সিস্টেম অকেজো হয়ে যাওয়া নভোচারীর কু লিং সিস্টেমের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অপর নমনীয়
পাইপ দিয়ে ফিরে এসে প্রবাহ সচল রাখে যাতে ঐ নভোচারীর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে।
এমন অবস্থায় নভোচারীদের স্পেসস্যুট একটি ৬ ফু ট লম্বা শেকলের সাহায্যে যুক্ত রাখা হয় যাতে
BSLSS এর পাইপ দুটো সর্বোচ্চ পরিমাণে দূরে গিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে না পারে। প্রয়োজনে এই
প্রক্রিয়া OPS এর সাপোর্ট সিস্টেম হিসেবে কাজ করে OPS এর কার্যকর সময়সীমা দুই থেকে তিন
গুণ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
NASA একটি ওয়েব-এ্যাপের সাহায্য স্পেসস্যুটের বিভিন্ন অংশের সচিত্র সংক্ষিপ্ত বর্ণনা উপস্থাপন
করেছে তাঁদের ওয়েবসাইটে।
এমন সব জটিল ও সূক্ষ্ম ডিভাইসের সমন্বয়ে গঠিত হয় স্পেসস্যুট বা EMU. মহাকাশযানের বাহিরে
গিয়ে মহাশূন্যে ভেসে বেড়ানো, মহাকাশযানের বাইরের দিকের ত্রুটি মেরামত ও regular
maintenance থেকে শুরু করে অন্য কোন গ্রহের মাটিতে পা রাখার জন্য হলেও সেই পরিবেশে
নভোচারীকে বাঁচিয়ে রাখতে স্পেসস্যুটের বিকল্প নেই।
Price:
মহাকাশ অভিযাত্রীদের বিশেষ পোশাকটার সঙ্গে সকলেই পরিচিত। স্পেস স্যুট একটি অত্যাধুনিক
পোশাক, বলাই বাহুল্য। দীর্ঘ গবেষণার ফসল। পোশাকটার দাম কত জানেন? একটি স্পেস স্যুটের
দাম ১২ মিলিয়ন মার্কি ন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৭৮ কোটি টাকার উপরে।
Raw Material:
স্পেসসুট তৈরির জন্য অসংখ্য কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। ফ্যাব্রিক উপকরণ বিভিন্ন ধরণের সিন্থেটিক
পলিমার অন্তর্ভু ক্ত। ভেতরের স্তরটি একটি নাইলন ট্রাইকোট উপাদান দিয়ে তৈরি। আরেকটি স্তর
স্প্যানডেক্সের সমন্বয়ে গঠিত, একটি ইলাস্টিক পরিধানযোগ্য পলিমার। এছাড়াও ইউরেথেন-কোর্টিং
যুক্ত নাইলনগুলির একটি স্তর রয়েছে, যা প্রেশার প্রয়োগের সাথে জড়িত। ড্যাক্রন — এক ধরণের
পলিয়েস্টার a একটি প্রেশার-নিয়ন্ত্রণের স্তরের জন্য ব্যবহৃত হয়। ব্যবহৃত অন্যান্য সিন্থেটিক কাপড়ের
মধ্যে রয়েছে নিওপ্রিন যা এক ধরণের স্পঞ্জ রাবার, এলুমিনাইজড মায়ালার, গর্টে ক্স, কেভলার এবং
নোমেেক্স।
সিন্থেটিক ফাইবারের বাইরে অন্যান্য কাঁচামালগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূ মিকা রয়েছে। ফাইবারগ্লাস হ’ল হার্ড
টর্স সেগমেন্টের প্রাথমিক উপাদান। লিথিয়াম হাইড্রোক্সাইড ফিল্টার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় যা কোনও
স্থানের হাঁটার সময় কার্বন ডাই অক্সাইড এবং জলীয় বাষ্পকে সরিয়ে দেয়। সিলভার জিঙ্কের
মিশ্রণটিতে এমন ব্যাটারি রয়েছে যা স্যুটটিকে শক্তি দেয়। প্লাস্টিকের পাইপগুলি স্যুট জুড়ে শীতল
জল পরিবহনের জন্য ফ্যাব্রিকের মধ্যে বোনা হয়। একটি পলিকার্বোনেট উপাদান হেলমেটের শেল
তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। বৈদ্যুতিন সার্কি টারি এবং স্যুট নিয়ন্ত্রণগুলি তৈরি করতে অন্যান্য বিভিন্ন
উপাদান ব্যবহৃত হয়।
জানেন কি? – স্পেস স্যুট ছাড়া মহাশূন্যে আপনার আয়ু মাত্র ১.৩০ মিনিট বা ৯০ সেকেন্ড!
নাসার স্পেস স্যুটে এই প্রথম বড় ধরনের পরিবর্ত ন এসেছে। এতে মহাকাশচারীকে জীবিত রাখার
পাশাপাশি মহাকাশ ভ্রমণকে আরও স্বাচ্ছন্দ্য করে তু লবে। এই স্যুট আগে শুধুমাত্র রূপায় মোড়ানো
ছিল। এখন তা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে মহাশূন্যের আরো গভীরে অভিযান চালানো যায়।
জি-১ নামের এই স্যুট দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের জন্য বেশকিছু বিষয় নতু ন সংযোজন করা হয়েছে।
হাঁটু , কনুইসহ প্রত্যেকটি সংযোগ স্থানে নমর করে তৈরি করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে যাতে মহাশূন্যে
অবস্থান করা যায়, রেডিয়েশন থেকে যেন মুক্ত থাকা যায়, এইসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতে সংযোজিত
করা হয়েছে। নভোযানের পৃষ্ঠে চলাচলের জন্য স্যুটের পিঠে একটি হ্যাচ লাগানো হয়েছে। স্যুটের
ভেতর থেকে ধুলোবালি বা বাতাস বের করার ব্যবস্থাও এতে করা আছে।
আপনি যদি মহাকাশ নিয়ে কখনো চিন্তা করে থাকেন তবে নিশ্চয় মনে কখনো না কখনো এ প্রশ্নটা
এসেছে যে মহাশূন্যে এত ভারি স্পেস স্যুট পড়ে যাওয়ার দরকারটা কি? এটি ছাড়া গেলে কি এমন
ক্ষতি হয়ে যেতো?
উত্তরে অনেকেই হয়তো বলবেন যে মহাকাশে স্পেসস্যুট ছাড়া গেলে নিজের শরীরের অভ্যন্তরীণ
চাপেই আপনি বেলুনের মতো ফু টে যাবেন। এমনকি, আমার ধারণাটাও এমনই ছিলো। তবে এটা নিয়ে
একটু ঘাটাঘাটি করে যা পেলাম তা হলো ব্যাপারটি আসলে তেমনটি নয়।
প্রথমত স্পেসস্যুট ছাড়া মহাকাশে গেলে আপনি বিস্ফোরিত হবেন না। কারণ অতটু কু চাপ সহ্য করার
ক্ষমতা আমাদের ত্বকের আছে। দ্বিতীয়ত শ্বাস আটকে রাখার চেষ্টা করবেন না। কারণ সেখানে বায়ুচাপ
মোটেই নেই, অর্থ্যাৎ ভ্যাকু য়াম। স্বাভাবিকতই আপনার উচ্চচাপের শরীর থেকে বেরিয়ে বায়ু
সেখানটায় যেতে চাইবে। তাই যদি শ্বাস ধরে রাখতে চেষ্টা করেন তবে আপনার ফু সফু স ফেটে যেতে
পারে। আবার আপনার শরীরে যেটু কু বাতাস রয়েছে তার আয়তন বেড়ে যাবে। ফলে আপনার শরীরটা
বেলুনের মতো ফু লে স্বাভাবিকের চেয়ে ২ গুণ সাইজে পৌছে যাবেন।
এরপর আপনার শরীরের বহীরাবরণে যে সমস্ত তরল রয়েছে, তা বাষ্পীভূ ত হতে শুরু করবে। ফলাফল
হিসেবে আপনার চোখ এবং জিহ্বা সেদ্ধ হতে শুরু করবে।
এদিকে আপনার শরীর মস্তিষ্কে অক্সিজেন সাপ্লাই দিতে পারবে না। ফলে ধীরে ধীরে আপনি অচেতন
হতে থাকবেন, আপনার শরীর নীলচে হয়ে যাবে। এভাবে আপনি সর্বোচ্চ ১৫ সেকেন্ড টিকে থাকতে
পারবেন। এর মধ্যেই ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে Asphyxiation বা অক্সিজেনের অভাবজনিত কারনে
আপনার মৃত্যু ঘটবে।
এরপর আপনার শরীরে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলোই আপনাকে খাওয়া শুরু করবে যতক্ষণ তারা বেঁচে
থাকে
আবার আপনি যদি কোনো নক্ষত্রের কাছাকাছি থাকেন তবে আপনি নিমেষেই তার তাপে সেদ্ধ হয়ে
যাবেন।
কিন্তু যদি আশেপাশে কোনো নক্ষত্র না থাকে তবে সেখানকার ঠান্ডায় আপনি জমে বরফ হয়ে যাবেন
এবং অনন্ত মহাকাশে ভেসে বেড়াবেন যদি না আপনাকে কোনো এলিয়েন খুঁজে না পায়।
একটু ভেবে দেখুন, যখন আপনি খুব শীতে বাহিরে কোথাও বেড়াতে যান । তখন, আপনার অবশ্যই
সুইটার, টু পি, হ্যান্ড গ্লোভস, জুতো ইত্যাদি কি রকম প্রয়োজন হয়ে পড়ে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে
না !
এখন, যদি আপনি মহাকাশের কোথাও অবস্থান করেন, তাহলে স্পেস স্যুট আপনাকে দেবে সর্বক্ষনিক
Life-Support যেমনটা আমাদের গ্রহ পৃথিবী অথবা মহাকাশযান আমাদের দিতে পারে ।
পৃথিবীর বাহিরে মহাকাশের পরিবেশ অতিরিক্তভাবে প্রতিকূ ল জায়গা ।
রক্ত এবং শরীর-বৃত্তীয় প্রবাহ উত্তপ্ত এবং তারপর জমাট হওয়া শুরু করবে কারণ সেখানে বায়ুচাপের পরিমাণ
একেবারেই নগণ্য অথবা নেই ।
শরীরের কোষ বিশেষ করে চামড়া, হার্ট ও অন্যান্য দেহের ভিতরের অঙ্গ উত্তপ্ত তাপীয় প্রবাহের কারনে গলিত
(Expand) হয়ে যেতে পারে ।
মহাকাশে অতি উচ্চ তাপমাত্রা পরিবর্ত নের মুখোমুখি একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয় ।
যেমন; সুর্যের আলোর তাপমাত্রা পৌঁছাতে পারে 120 ডিগ্রী সেন্ট্রিগ্রেড এ (248 Degrees F) এবং
সর্বনিম্ন (ছায়াতে) হতে পারে -120 ডিগ্রী সেন্ট্রিগ্রেড (-148 Degrees F).
আপনাকে মুখোমুখি হতে হবে বিভিন্ন রকমের বিকিরণ, কসমিক রশ্মি, সৌর ঝড়ের ফলে সুর্য থেকে আসা
বিভিন্ন উপাদান ।
আঘাত-প্রাপ্ত হতে পারেন ধুলো বা পাথরের ক্ষু দ্র বস্তু যা উচ্চ গতিতে আপনার দিকে ধেয়ে আসছে (স্যাটেলাইট
বা Micrometeoroids এর ধ্বংসাবশেষ) ।
স্পেস স্যুট কিভাবে আপনাকে রক্ষা করে ?
বিভিন্ন কাজের সময় এবং সুর্যের আলোতে বা অন্ধকারে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে ।
অতি ক্ষু দ্র-বস্তু এবং কিছু সাধারণ তাপীয় বিকিরণ রতে রক্ষা করবে ।
পরিষ্কার দেখতে এবং স্থান পরিবর্ত ন করতে ও আপনার সহকারীদের সাথে যোগাযোগ করতে সহজতর করবে
।
এসব ছাড়াও স্পেস স্যুট এর বিভিন্ন সমস্যা থেকেই যায় ! এখনো আধুনিক স্পেস স্যুট যথেষ্ট উন্নত
নয় । NASA পরবর্তী প্রজন্মের জন্য স্পেস স্যুট Z-2 Prototype সিরিজের Futuristic Z-2
Spacesuit স্পেস স্যুট প্রস্তুত করছে ।
Mars এ আবহাওয়া অত্যান্ত প্রতিকূ ল যা স্পেস স্যুট বানানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ । মঙ্গল
থেকে এখনো কোন নমুনা পৃথিবীতে ফেরত আসে নি ! সেক্ষেত্রে NASA’র তৈরি করা স্পেস স্যুট
এর উপর যেন মঙ্গলের পরিবেশের প্রভাব না পড়ে তা নিয়ে ভাবছেন স্পেস স্যুট ইঞ্জিনিয়াররা ।
তথ্যসূত্র – NASA
SpaceSuit eBook
PLSS eBook
Apollo Lunar Surface Journal
Space Suit Web-app