You are on page 1of 9

হযরত খান জাহান আলীঃ জীবন ও কর্ম

জন্ম, নাম ও পরিচয়ঃ

হযরত খান জাহান আলী ছিলেন একজন বিদেশী। তিনি কোন দেশ থেকে এসেছেন, এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়
না। তবে ধারণা করা হয় যে, তাঁর পূর্বপুরুষ তু রস্ক বা ইরাক বা আফগানিস্তান থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে
এসেছিলেন। যতটু কু জানা যায়, হযরতের পিতার নাম ছিল ফরিদ খান, মা আগিনা বিবি, শৈশবে হযরতের নাম
ছিল কেশর খান। তিনি বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর বংশধর ছিলেন বলেও জানা যায়।
বিভিন্ন তথ্য প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ১৪০০ খৃষ্টাব্দের সামান্য পূর্বে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা
ফরিদ খান ছিলেন গৌড়ের (প্রাচীন বাংলা গৌড় নামে পরিচিত ছিল) রাজপরিবারের গৃহশিক্ষক। কিন্তু অল্প কদিন
পরেই ফরিদ খান ইন্তেকাল করেন। কিন্তু ফরিদ খান ঘরে কোন সম্পদ রেখে যাননি। বিধবা মা আগিনা বিবি
পরের বাড়ি ধান ভাঙানোর কাজ করে তাঁকে লালন পালন করতে থাকেন। কিন্তু আগিনা বিবি কখনও পর্দার
খেলাফ কিছু করেননি।

তখন ইতিহাস বিখ্যাত সুফী সাধক “নূর-ই-কু তু ব-উল-আলম (রহঃ)”-এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলার
আনাচে কানাচে। তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন এক মহাপুরুষ ও নীরব সাধক। তিনি ছিলেন অত্যন্ত
মেধাবী মুবাল্লিগ। তিনি যেমন একদিকে মুসলমান শাসকদের মহল থেকে মদপানসহ হারাম কাজগুলো থেকে মুক্ত
করেন, ঠিক তেমনি সাধারন মুসলমানদের ঈমান-আমল শক্তিশালী করার জন্যও মেহনত করতে থাকেন। তিনি
তার ভক্ত-শিষ্যবৃন্দকে বাংলার বিভিন্ন দিকে পাঠিয়েছিলেন দ্বীনের দাওয়াত ছড়িয়ে দিতে। শৈশব থেকেই কেশর
খান সে যুগে এই মহান উস্তাদের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন। ব্যক্তিগতভাবে কেশর খান ছিলেন উস্তাদের খুবই
প্রিয়ভাজন।

শৈশবঃ

মায়ের কাছেই তিনি শৈশবের দিনগুলো কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু এসময়ের একটি ঘটনা কেশর খানের জীবনের বাঁক
পরিবর্ত ন করে দেয়। এসময় ঘটনাচক্রে তিনি তৎকালীন বাংলার শাসক সুলতান হোসেন শাহের সুনজরে পড়ে
যান, ফলে সুলতান তাঁকে নিজ প্রাসাদে নিয়ে যান। সেখানেই তিনি রাজপুত্রের মতো লালিত পালিত হন এবং
রাজকীয় শিষ্টাচারের সাথে পরিচিত হন। তবে তখনও তিনি উস্তাদ নূর-কু তু ব-উল-আলম (রহঃ)-এর মাদ্রাসার ছাত্র
ছিলেন।

সৈনিক জীবনঃ
সুলতান হোসেন শাহের মৃত্যুর পর তিনি রাজকীয় সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন, ফলে তিনি উস্তাদ নূর-কু তু ব-
উল-আলম (রহঃ)-এর পরামর্শে জৌনপুরের সে সময়ের (ঈসায়ী ১৪১৪-১৫) শাসক ইবরাহীম শর্কীর সেনাবাহিনীতে
সাধারণ সৈনিক হিসেবে চাকু রী নেন জীবিকার প্রয়োজনে। এখানে তিনি সৈনিক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। অত্যন্ত
মেধাবী, ক্ষিপ্র, সাহসী ও কৌশলী একজন সৈনিক হিসেবে তিনি সুলতানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং দ্র æ ত
পদোন্নতি পেতে থাকেন। এমনকি স্বল্পতম সময়ে তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে হয়ে যান, অথচ
তিনি তখনও বিয়েও করেননি।

রাজা গণেশ (১৪০০-১৪৫০)

ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, রাজা গণেশ বাংলার ইতিহাসে একজন অবিস্মরণীয় পুরুষ। তিনিই
একমাত্র হিন্দু, যিনি বাংলার ৫০০ বছরব্যাপী মুসলিম শাসনের মধ্যে কয়েক বৎসরের জন্য ব্যতিক্রম করিয়া হিন্দু
শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

‘তবকাৎ-ই-আকবরী’, ‘তারিখ-ই-ফিরিশতা’, ‘মাসির-ই-রহিমী’, ‘রিয়াজ-উস-সালাতীন’-সহ আরও বহু গ্রন্থে রাজা গণেশ


সম্পর্কে জানা যায়।” রাজা গণেশ ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী একজন জমিদার। উত্তরবঙ্গের ভাতু ড়িয়া অঞ্চলে তার
জমিদারী ছিল। বাংলায় তখন ইলিয়াস শাহী শাসকদের শাসন চলছিল। গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ (), সাইফু দ্দিন
হামজা শাহ (), শিহাবুদ্দিন বায়েজিদ শাহ () ও আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহের আমলে বাংলার রাজনীতিতে গণেশ
বিশিষ্ট ভূ মিকা রেখেছিল এবং শেষের দু’জন সুলতানের আমলে সে-ই যে বাংলার প্রকৃ ত শাসক ছিল- এটা
ঐতিহাসিকরা উল্লেখ করেছেন। ঈসায়ী ১৪১৫-১৪১৬-এর শেষভাগে গণেশের চক্রান্তে আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহ
সিংহাসনচ্যুত ও নিহত হন। এরপরই গণেশ নিজস্ব শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সাহায্যে মুসলমান রাজত্ব সম্পূর্ণ
উচ্ছেদ করে বাংলার সিংহাসন দখল করে।

গণেশ ছিল প্রচন্ড হিন্দুত্ববাদী রাজা। সে প্রসিদ্ধ ‘আদিনা মসজিদ’-কে কাছারী বাড়িতে রূপান্তর করে। এছাড়াও
বহু মসজিদ ও ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস করে ফেলে। তার এই অপকর্মের প্রতিবাদে সে যুগের আলেম সমাজ
বিদ্রোহ করলে, সে কঠোরভাবে সেই বিদ্রোহ দমন করে। বহু আলেম তার বাহিনীর হাতে শাহাদাতবরণ করেন।”
(বাংলাদেশের ইতিহাস, মধ্যযুগ)

ইতিহাসের অমূল্য গ্রন্থ “তারিখে ফেরেশতা”য় রাজা গণেশকে চিত্রায়িত হয়েছে একজন নরপিশাচ হিসেবে। কিন্তু
কেন? কেননা সে বাংলায় মুসলিম নারী ও শিশুদের উপর যে ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছিল, তা স্মরণ করলেও
শিউরে উঠতে হয়। এই নরপিশাচ পর্দানশীন মুসলিম মা-বোনকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে আগুন ধরিয়ে
দিয়েছে। ছন, বাঁশ আর কাঠের তৈরী সেইসব ঘরে শহীদ হয়ে গেছেন অসংখ্য মুসলিম মা-বোনেরা। বহু নাবালক
শিশুকে হাতীর পায়ের নিচে ফেলে শহীদ করেছে নরপিশাচ গণেশ। তাঁর অত্যাচার আর নিপীড়নের ভয়ে বহু
মুসলিম অসহায় শিশু ও স্ত্রীকে সাথে নিতে না পেরে পালিয়ে যান লোকালয় ছেড়ে।

শুধু সাধারণ মুসলমানই নয়, রাজা গণেশের নিষ্ঠু রতায় সে যুগে শাহাদাতবরণ করেছিলেন বহু সম্ভ্রান্ত ও ধর্মপ্রাণ
জ্ঞানী গুনী মুসলিম। বাংলার ইতিহাসে সে পরিচিত হয়েছিল মুসলিম হত্যাকারী কসাই গণেশ হিসেবে।

প্রথম জিহাদী অভিযানঃ

উপরোক্ত বর্ণনাগুলো থেকে বোঝা যায় যে, রাজা গণেশ কতটা নৃশংস ছিল। তার নির্যাতন, হত্যা, ধ্বংসের কাহিনী
আজও বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়।

রাজা গণেশের জুলুম নির্যাতন দারুনভাবে বিচলিত হন বাংলার সুফী জগতের প্রবাদপুরুষ হযরত নূর-কু তু ব-
উল-আলম (রহঃ)। তিনি সাধারণ মুসলিম জনগণের উপর হত্যা-নির্যাতনের প্রতিকার করার জন্য রাজমহল ও
জৌনপুরের বাদশাহ সুলতান ইব্রাহীম শর্কীর কাছে অনুরোধ করে চিঠি পাঠান এবং রাজা গণেশের রাজধানী
গৌড় আক্রমণ করার জন্য আহবান জানান।

হযরত নূর-কু তু ব-উল-আলম (রহঃ)-এর অনুরোধ পত্র টনিকের মত কাজ করল সুলতান ইব্রাহীম শর্কীর দরবারে।
এক বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি বাংলা অভিযানে বের হলেন। এটি ১৪০৯-১০ সালের দিকের ঘটনা। এই
সেনাবাহিনীতে ছিলেন ৬০০০০ মুজাহিদ আর ১১জন সুফি দরবেশ। আর এঁদেরই নেতৃ ত্বে ছিলেন সেনাপতি
কেশর খান। আরবী রণনৈপুন্য আর জিহাদে অংশ নিয়ে শাহাদাতবরণের বাসনা প্রদর্শন করলেন মুসলিম যোদ্ধারা।
ভীষন যুদ্ধ হলো। মহান আল্লাহ এই যুদ্ধে মুজাহিদদেরকে বিজয় দান করলেন আর রাজা গণেশ চরমভাবে লাঞ্ছিত
হয়ে পরাজয় বরণ করল।

পরাজিত রাজা গণেশ এবার ছল-চাতু রীর আশ্রয় নিল। সে মুসলমানদের বীরত্ব ও দয়ার কথা উল্লেখ করে
সুলতানের কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করল। কিন্তু সুলতান দরবেশ নূর কু তু বুল আলম (রহঃ)-এর প্রতি ঈঙ্গিত করলে
গণেশ দরবেশের কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করে। এমনকি মুসলমানদের ধোঁকা দেয়ার জন্য রাজা গণেশ নিজের ছেলে
যদুকে ইসলাম গ্রহণের আদেশ দেয়। যদু ইসলাম গ্রহণ করে জালালউদ্দিন নাম ধারণ করেন। বিশেষতঃ এই যুদ্ধে
অসাধারণ ভূ মিকার কারণেই প্রধান সেনাপতি কেশর খান “খান-ই-জাহান” উপাধি লাভ করেন এবং পরবর্তীতে
তিনি এই নামেই পরিচিত হন। রাজা গণেশকে ক্ষমা করার পেছনে হযরত খান-ই-জাহানের সুপারিশ ও সম্মতিও
ছিল বলে জানা যায়।
অনুশোচনা

যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে হযরত খান জাহান আলী মায়ের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য বাড়িতে গেলেন। দেখলেন,
জ্বালিয়ে দেয়া তাঁর বাড়ি-ঘরের ধ্বংসাবশেষ। জানতে পারলেন, তার মা রাজা গণেশের অগ্নিসংযোগের শিকার
হয়েছেন। পর্দার খেলাফ হবে- এই ভয়ে তিনি ঘরের বাইরে যাননি। ঘরের মধ্যে থাকা অবস্থায় আগুনে পুড়ে তিনি
শাহাদাত বরণ করেছেন। আর বেরোতে পারলেই কি তিনি বাঁচতে পারতেন? তিনি বয়সেও যে বৃদ্ধা ছিলেন এমন
নন। আশংকা ছিল, ইজজত হারানোর, নির্যাতনের আর সবশেষে মৃত্যুর।

এই দৃশ্য ছিল হযরত খান জাহান আলী (রহঃ)-এর জন্য সীমাহীন বেদনার। তিনি শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন।
তিনি ছুটে যান উস্তাদ নূর-কু তু ব-উল আলম (রহঃ)Ñ এর কাছে। যেহেতু রাজা গণেশকে ক্ষমা করে দেয়া
হয়েছিল, তাই তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ ইসলামী শরীয়তে নেই- এ কথা জানিয়ে উস্তাদ
হযরত খান জাহান আলীকে সান্তনা দেন। এ ঘটনার পর তিনি জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন। তিনি
দুনিয়াদারী থেকে সরে গিয়ে আধ্যাত্ম সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন এবং এক পর্যায়ে উস্তাদ নূর-কু তু ব-উল আলম
(রহঃ)Ñ এর খাস শাগরিদে পরিণত হন।

পরবর্তীতে সুলতান ইব্রাহীম শর্কী বারবার তাগিদ দেয়া সত্তে¡ও তিনি জৌনপুরে ফিরে যাননি। বাধ্য হয়ে সুলতান
ইকবাল খানকে প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিয়োগ দেন।

প্রথম বিবাহ

উস্তাদ নূর-কু তু ব-উল-আলম (রহঃ) হযরত খান জাহান আলী (রহঃ)-কে এতটাই ¯েœ হ করতেন যে, শেষ পর্যন্ত
নিজের একমাত্র মেয়েকে তাঁর সাথে বিয়ে দেন।

অন্যদিকে প্রতারক ও ধোঁকাবাজ গণেশ ততদিন চু প রইল, যতদিন সুলতান গৌড়ে রইলেন। যেই সুলতান গৌড়
ছেড়ে চলে গেলেন, সেই গণেশ আবার তার আসল চরিত্র প্রকাশ করল। সে পূর্বের থেকে আরও ভয়ানক,
আরও কু ৎসিত চেহারায় আবির্ভূ ত হল। নতু ন মাত্রায় শুরু হল খুন, লুন্ঠন। তবে দরবেশ নূর-কু তু ব-উল-আলম
(রহঃ)-এর মাদ্রাসাটি রক্ষা পেয়েছিল নিজস্ব ভাব-গাম্ভীর্য্যের কারণে।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পেরে উস্তাদ নূর-কু তু ব-উল-আলম (রহঃ) হযরত খান জাহান আলী (রহঃ)-কে রাজা
গণেশের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে ও একই সাথে ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করতে নির্দে শ দেন। তিনি
উস্তাদের নির্দে শে চিরদিনের জন্য বেরিয়ে পড়েন। বিদায় বেলায় উস্তাদ নির্দে শ দিয়েছিলেনঃ “কখনও আক্রমন
করবে না, আক্রান্ত হলে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করবে।”
যাত্রার পূর্বমূহুর্তে হযরত খান জাহান আলী (রহঃ) প্রাণপ্রিয় উস্তাদের কাছে জানতে চানঃ “আমার যাত্রায় শেষ
কোথায়?”

তখন উস্তাদ নূর-কু তু ব-উল-আলম (রহঃ) তাঁকে এক পাত্র পানি দিয়ে বলেনঃ “যে দীঘি খনন করে এই রকম
পানি পাওয়া যাবে, সেখানেই তোমার যাত্রা শেষ হবে।”

সেই পানির পাত্র সাথে নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন। উস্তাদের এই নির্দে শ পালন করতে যাত্রাপথে তিনি বহু দীঘি
খনন করেছেন। এভাবে তিনি উস্তাদের নির্দে শ পালন ও জনগণের কল্যাণ এই দুই উদ্দেশ্য সমন্বয় করে তার
নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ৩৬০টি সুবিশাল দীঘি খনন করেন এবং সেই সাথে ৩৬০টি মসজিদও নির্মাণ করেন।

যতদূর জানা যায়, উস্তাদ ও শ্বশুরের খেদমতের জন্য তাঁর বিবিকে রেখে ইসলাম প্রচারের জন্য সেদিন তিনি
বেরিয়ে পড়েছিলেন। তাঁর প্রথম স্ত্রীর মাজার গৌড়ে অর্থাৎ দিনাজপুর অঞ্চলে রয়েছে।

বারোবাজার

হযরত খান জাহান আলী (রহঃ) দিনাজপুরের দিক থেকে ধীরে ধীরে রাজশাহী, বরেন্দ্র অঞ্চল, পাবনা হয়ে বর্ত মান
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ থানার বারোবাজারে নদী তীরবর্তী একটি এলাকায় শিবির স্থাপন করেন। এখানে তিনি
বেশ কিছুদিন অবস্থান করে ইসলামের প্রচার প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর কাজের ধরণই ছিল এমন যে,
তিনি যেখানেই ঘাঁটি স্থাপন করে অবস্থান করতেন, সেখানেই জনহিতকর কাজও শুরু করে দিতেন। তিনি স্থানীয়
মানুষের মৌলিক সমস্যার সমাধানে বিশাল বিশাল দীঘি, প্রতিটি দীঘির সাথে একটি মসজিদ, প্রয়োজন অনুসারে
সুপ্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ ও রাস্তার পাশে ছায়াদানকারী গাছ লাগিয়ে দিতেন।

মহান আল্লাহর অসীম কু দরতে, তিনি পেয়েছিলেন সত্যিকার ৬০০০০ মুজাহিদদের এক বিশাল বাহিনী। যাঁরা
ছিলেন যেমন খুবই পরহেযগার ও ইবাদাতগুজার, তেমনি পরিশ্রমী, কৌশলী ও আনুগত্যপরায়ন। হযরতের প্রতিটি
নির্দে শকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করত। যে কারণে অতি অল্প সময়ে এই বিশাল খেদমতের
ব্যবস্থা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছিল।

তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, ইবাদাত, কারামত, জনসেবা ইত্যাদি লোকমুখে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার লোক
তাঁকে একজন কামেল পুরুষ হিসেবে আখ্যায়িত করে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা দূর-দূরান্ত থেকে তাঁর
দরবারে ছুটে আসত। তাঁর অমায়িক ব্যবহার, জনহিতকর উদ্যোগ, সাহসী কিন্তু সংযমী আচরণে মুগ্ধ হয়ে অত্র
অঞ্চলসহ দূর-দূরান্তের সাধারণ জনতা তাঁর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন।
এমন অনেক সম্ভ্রান্ত হিন্দু ব্যক্তি ছিল, যারা ইসলাম গ্রহণ না করলেও হযরতের দারুণ ভক্ত ছিল। হযরতও
তাঁদেরকে কাছে টেনে নিতেন। ফলে এসব বুদ্ধিমান সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ দীর্ঘদিন তাঁর সাহচর্যে থেকে এমনভাবে মুগ্ধ
হয়ে যেত যে, তাঁরাও একসময় সপরিবারে ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হতো। শুধু তাই নয়, এসব নওমুসলিম
পরিবারগুলো ইলম-আমলে ঈর্ষণীয় ছিলেন তৎকালীন সমাজে। এমনই যাদুকরী ব্যক্তিত্ব, সাহসিকতা, উদ্যমতা ছিল
তাঁর চরিত্রে।

তবে তাঁর একটা ব্যতিক্রমধর্মী কৌশল ছিল যে, যখনই কেউ তাঁর হাতে বাইয়াত নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করত,
তাঁকে তিনি চিরসঙ্গী হিসেবে ব্যবহার করার জন্য একখানি তরবারি উপহার দিতেন। তবে শর্ত আরোপ করতেন
যে, শুধুমাত্র শরীয়ত অনুমোদিত জিহাদের ক্ষেত্রেই এই তরবারি ব্যবহার করা যাবে, অন্যথায় তা খাপমুক্ত করা
যাবে না।

এতকিছুর পরও হযরত খান জাহান আলী (রহঃ)-এর পথ কখনও ঝামেলা মুক্ত ছিল না, নিরাপদও ছিল না।
তিনি প্রায়ই তখন স্থানীয় হিন্দু রাজাদের আক্রমণের শিকার হতেন, এজন্য তাঁর সার্বক্ষনিক প্রস্তুতিও থাকত।

আবার তিনি রাজা গণেশের বিরুদ্ধে অভিযান থেকে এক মূহুর্ত ও থেমে ছিলেন না। তিনি বিশাল এলাকাকে
ব্যাসার্ধ হিসেবে নিয়ে ধীরে ধীরে দক্ষিণে সুন্দরবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, যেন রাজা গণেশ তাঁর ফাঁদ থেকে
পালিয়ে যেতে না পারে। তিনি জানতে পেরেছিলেন রাজা গণেশ সুন্দরবনের মগ রাজার আশ্রয়ে আছে।

বারোবাজার থেকে তিনি আবার রাজা গণেশের পিছু ধাওয়া অভিযান শুরু করলেন। রাজা গণেশও বসে ছিল
না, সেও রণপ্রস্তুতি নিচ্ছিল। গণেশের প্রস্তুতির সংবাদ হযরত খান জাহানের সাথীদেরকে অত্যন্ত উত্তেজিত করে
তু লছিল। তাই তিনি যশোর, খুলনা হয়ে বাগেরহাটে গিয়ে যাত্রা শেষ করলেন। কেননা এখানেই তিনি উস্তাদ নূর-
কু তু ব-উল-আলম (রহঃ)-এর দেয়া পানির স্যাম্পলের মত পানির সন্ধান পেয়েছিলেন। এবার তিনি বাগেরহাটকে
কেন্দ্র বানিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন বাংলার ইতিহাসে একমাত্র ইসলামী ইমারাত “খলিফাতাবাদ”। এখানে আইন-কানুন
সবকিছুই ছিল খিলাফতের মতো কু রআন ও হাদীসের অনুসরণে।

তিনি রক্ষণাত্মক ভূ মিকায় এগিয়ে যাচ্ছিলেন। ছোট ছোট যুদ্ধের পাশাপাশি বড় বড় কিছু যুদ্ধও তিনি মোকাবিলা
করেন বাগেরহাটে পৌঁছার পর। এরমধ্যে রয়েছে পিলজঙ্গ বা হাতীর যুদ্ধ, নৈহাটির যুদ্ধ, রণবিজয়পুরের যুদ্ধ,
ফতেপুরের যুদ্ধ। এসব যুদ্ধে আক্রমণকারীরা বারবার পরাস্ত হয়েছে, এমনকি তাদের যুদ্ধ করার সাহস ও ক্ষমতা
দুই-ই শেষ হয়ে যায়। তবে ইসলামের শত্র æ রাজা গণেশ যে শেষ পর্যন্ত হযরতের অভিযানেই মারা পড়েছে,
ইতিহাস থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সে যে সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে কোণঠাসা হয়ে জীবনের
শেষ নিশ^াষ ত্যাগ করেছে, তা হযরতের অভিযানের সমাপ্তি থেকে ধরে নেয়া যায়।
ইসলামী রাজ্য, কিন্তু স্বাধীন রাজ্য নয়

কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্য্যরে বিষয় যে, তিনি এতগুলো যুদ্ধের বিজয়ী সেনাপতি, জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ার
পরেও স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি বা নিজেকে সুলতান বা বাদশাহ নামে পরিচিত করাননি। কিন্তু শাহী
রাজদরবারগুলোতে হযরত স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে সংবাদ পৌঁছে। তাই সিংহাসনে আরোহন করে
সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ সর্বপ্রথম দক্ষিণবঙ্গে অভিযান শুরু করেন। যশোরের কাছে পৌঁছে তিনি
জানতে পারেন যে, এই রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা খানজাহান একজন আল্লাহর ওলী ব্যক্তি। জনগণ তাঁকে পীর বলে
শ্রদ্ধা করে এবং সবাই তাঁর মুরিদ। সুলতান আরও জানতে পারেন যে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে তিনি এই
রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য হয়েছেন এবং নিজ নামে কোন মুদ্রা প্রচলন করেননি, তখন তিনি মনে মনে তাঁর
প্রতি খুশী হন। যখন দুই ব্যক্তির মধ্যে সাক্ষাৎ হলো, তখন সমস্ত ভু লের অবসান ঘটল। এমনকি হযরত
খানজাহান সুলতানকে এই রাজ্যের দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানান, কিন্তু তিনি সুলতান রাজ্য শাসনের
দায়িত্ব হযরতের হাতেই রেখে দেন। রাজ্য হিসেবে খানজাহান কোন কর বা খাজনা তো দেননি, বরং ইসলামের
প্রচার প্রসারের জন্য, রাজ্যকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সবধরণের সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার করেন।
সুলতান হযরতের রাজ্যে মুদ্রার সরবরাহ সহজলভ্য করতে একটি টাকশালও স্থাপন করেছিলেন। হযরতের মৃত্যুর
পরও সুলতান প্রতিশ্র æ তি পূরণ করেছেন। হযরত ও সুলতানের মধ্যে গভীর বন্ধু ত্বের নিদর্শন পাওয়া যায়,
হযরতের মাজারে তাঁর নাম উল্লেখ আছে। সুতরাং এটা সুস্পষ্ট হলো যে, হযরত খান জাহান বশ্যতা স্বীকার করে
নয়, বরং চমৎকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে র মাধ্যমে সুলতানের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন।

ষাটগম্বুজ মসজিদ

এই মসজিদ ছিল হযরত খান জাহান আলী (রহঃ)-এর মূল কেন্দ্র। অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর, নয়নাভিরাম নির্মাণ
কৌশলে এ মসজিদটি নির্মিত। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১৭০ফু ট ও প্রশস্ত ১০৫ ফু ট। ভিত্তি ৮ ফু ট ও ছাদের উচ্চতা
২২ ফু ট। এই মসজিদের ছাদ বহু গম্বুজ বিশিষ্ট। পূর্ব পশ্চিমে ৭টি ও উত্তর দক্ষিণে ১১টি, মোট ৭৭টি গম্বুজ
রয়েছে। এগুলি আবার ইটের প্রাচীর বেষ্টিত ৬০টি পিলারের উপর প্রতিষ্ঠিত। তবে অনেক পিলারের ইটের প্রাচীর
আজ আর নেই। সুন্দর ও দক্ষ কারিগর ছাড়া বড় বড় পাথরকে ৮ কোনা করে কেটে এবং এই পাথরের মধ্য
দিয়ে ছিদ্র করে একটি শক্ত লোহার শিক ঢু কিয়ে এই পিলারের পাথরগুলি কোন এক প্রকার মসলা বা মিক্সচার
মিশিয়ে এঁটে বসিয়ে দেয়া হয়েছিল। ক্রেন ছাড়া এই পাথরগুলি একটার পর একটা কিভাবে বসানো হয়েছে, তাও
এক বিস্ময়কর বিষয়।

এই ষাট গম্বুজ মসজিদই ছিল সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাজ্য “ খলিফাতাবাদ”-এর প্রধান কার্যালয়।
স্বাভাবিকভাবে হযরত খান জাহান আলী-ই ছিলেন এই রাজ্যের শাসক।
এই বিশাল মসজিদের পাশেই তিনি খনন করেন প্রায় ১ হাজার গজ দীর্ঘ ও ৬ শত গজ প্রশস্ত বিশাল ঘোড়া
দীঘি, যেন হাতে কাটা একটি ছোটখাট হ্রদ।

ওফাত

৮৬৩ হিজরী ২৬ জিলহজ্জ বুধবার, ইংরেজী ১৪৫৯ সালের ২৫ শে অক্টোবর তিনি ইন্তেকাল করেন। জীবনের
শেষ সময়ে তিনি একান্তভাবে মহান আল্লাহর ইবাদাতে মগ্ন থাকেন। বার্ধক্যের এক পর্যায়ে শবে কদরের মহিমান্বিত
রাতে ইন্তেকাল করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে, কোন এক শবে কদরের রাতেই তিনি কামালিয়াত অর্জ ন করেছিলেন।

মাজারের গায়ে লেখা মূল্যায়ন

দীর্ঘ দাওয়াতী কাজ, সশস্ত্র সংগ্রাম, জনহিতকর কাজ, অনন্য সাধারণ স্থাপত্য নিদর্শন হযরত খান জাহান আলী
(রহঃ)-কে এক অত্যুজ্জল তারকা হিসেবে বাংলার ইসলামের ইতিহাসে স্থান করে দিয়েছে। ইন্তেকালের পর তাঁকে
নিয়ে যে মূল্যায়ন তাঁর মাজারের গায়ে লেখা হয়েছে, তা আজ বহু বছর পরেও আমাদের সামনে উজ্জ্বল ও
জ্বলন্ত ইতিহাস হিসেবে আমাদের সামনে রয়েছে।

হযরত খান জাহান আলীর নিজ হাতে লেখা নিজের প্রথম খেতাব- আল মুহিববু লি আওলাদ-ই- সাইয়েদুল
মুরসালিন। যে পাথরটির গায়ে এ লেখাটি রয়েছে তা দেখতে অনেকটা কষ্টি পাথরের মতো। আল মুহিববু লি
আওলাদ কথাটির অর্থ- রাসুল করীম (সাঃ)-এর আওলাদ বুনিয়াদের প্রতি একান্ত অনুরক্ত।

তার দ্বিতীয় খেতাব ছিলঃ আল মুখলিছু লি উলামা ইর রাশিদিন।

আল মুখলিছু শব্দের অর্থ হচ্ছে সাহায্যকারী। নিকটতম সঙ্গী হিসেবে সৎকাজে সাহায্যকারীই হচ্ছে- আল মুখলিছু।
লি উলামা ইর রাশেদীন-দের জন্য। অর্থাৎ সৎপন্থী আলেম উলামাদের জন্য।

পৃথিবীর ইতিহাসে যে কজন মুষ্টিমেয় ব্যক্তি জীবনের বিনিময়ে কু রআনের রঙে নিজেকে রাঙিয়েছেন, মানুষের
সামনে তু লে ধরেছেন, রাসূল (সাঃ)-এর আওলাদ বা বংশধরদের প্রতি ভালবাসা দেখিয়েছেন, তিনি তাঁদেরই
একজন। তিনি ছিলেন আলেম, মোমেন, ভক্তিবাদী, আল্লাহর প্রতি তাওয়াজ্জু (ভক্ত) মহাসাধক ও সুফি। তাঁর
জীবনে শরীয়ত ও মারেফতের অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটেছে। মারেফাত অর্জ ন হয়ে গেছে, তাই শরীয়তের প্রয়োজন
নেই- এমন কোন বক্তব্য বা কাজ তার ইতিহাসে নেই।

তৃ তীয় খেতাবঃ
মাজারের গায়ে খোদাই করা তার তৃ তীয় খেতাবটি হলো “আল মুবগিজু কু ফফারি ওয়াল মুশরিকীন”।

আর চতু র্থ খেতাব হলঃ “আল ময়িনু লিল ইসলাম।” এই খেতাব দুটির অর্থ নি¤œ রূপঃ

১. “আল মুবগিজু” শব্দের অর্থ হলো ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করি। এককথায় শত্র æ বলা যেতে পারে।
তিনি ছিলেন একজন বিদ্বেষ পোষনকারী শত্র æ। কিন্তু কাদের? “লিল কু ফফারি ওয়াল মুশরিকীন” অর্থাৎ কাফের
ও মোশরেকদের বিদ্বেষপোষণকারী একজন মহাশত্র æ। কাফের ও মোশরেকদের অর্থাৎ যারা আল্লাহর সাথে শরীক
করে, তাদের শত্র æ হিসেবে তিনি ছিলেন সুপরিচিত, বরং এই খেতাবে ভু ষিত হতে তাঁর মাঝে বিন্দুমাত্র কোন
দ্বিধা-সংশয় ছিল না। ছিল না কোন ভয়-ভীতি।

২. চতু র্থ খেতাবটি তৃ তীয় খেতাবের ঠিক পরিপূরক। তিনি যদি কাফের মুশরিকদের মহাশত্র æ হন তবে তিনি
বন্ধু ছিলেন কাদের? এই প্রশ্নের জবাবই হল চতু র্থ খেতাব- আল মুয়িনু লিল ইসলাম। “আল ময়িনু” অর্থাৎ বন্ধু
ও সাহায্যকারী “লিল ইসলাম” তথা ইসলামের জন্য। এককথায় তিনি ছিলেন ইসলামের বন্ধু আর ইসলাম
বিরোধীদের শত্র æ।

আধুনিক আলেমগণ “আল ওয়ালা আর বারা- বন্ধু র সাথে বন্ধু ত্ব আর শত্র æ র সাথে শত্র æ তা” বলতে যা
বুঝিয়ে থাকেন, তিনি যেন ছিলেন এই বক্তব্যের বাস্তব রূপ।

তিনি এই খেতাবটি অর্জ ন করেছিলেন নিজের জীবনে এর বাস্তব রূপ প্রতিষ্ঠা করে। তাঁর জীবনী বিশ্লেষণ করে
এই সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, তিনি কখনও কোন কাফের মুশরিকের সাথে আঁতাত বা মিলে চলার চেষ্টা তো
দূরের কথা, চিন্তাও করেননি। সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে একজন বিদেশী হিসেবে এই আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা ছিল সত্যিই
এক বিস্ময়কর চ্যালেঞ্জ। তিনি বিশ্বাস করতেন, অমুসলিমদের সাথে আঁতাত করে এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা
সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দূরদর্শীতা থেকে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, অন্য ধর্মে হস্তক্ষেপ না করা- অন্যকে ধর্মীয়
স্বাধীনতা দেয়া আর আঁতাতের অজুহাতে ধর্ম নিরপেক্ষতার নামে অন্য ধর্মের পরোক্ষ পূজা এক নয়। ইসলাম
সম্পূর্ণভাবে দেব-দেবীর পূজা বা কোন ধর্মের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুখাপেক্ষী নয়, আর তাগুত সবসময়ই
মানুষকে ঈমান থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। তাই কোনভাবেই তাগুতের সাথে আপোষ-আঁতাত চলে না।

You might also like