Professional Documents
Culture Documents
শ্রমিকশ্রেণীর মুখপত্র
শ্রমিকশক্তি
মজদুর ক্রান্তি পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত ১৪তম বর্ষ ২য় সংখ্যা ডিসেম্বর ২০২০ বিনিময় - ৩ টাকা
এই কাজ করছি অথচ আমাদের ক�োন উন্নতি নেই। কালে কাজের যা পরিস্থিতি সেই দিক দিয়ে ভাবলে,
চাকরী জীবিরা যেমন সু বিধা পায়, আমাদের সে সব এই কাজ তুলনামূ লক ভাবে হালকা আর রেগুলার
কিছু ই নেই। কাজ করলে অল্প হলেও পয়সা নিয়মিত আয় হয়।
সরকারি অফিস থেকে আমাদের কার্ড করা যায়, যার জন্য
কিছু সু বিধা আমরা পেতে পারি। কিন্তু আমরা তা পাই
না। আমাদের এখানে এত শ্রমিক থাকা সত্ত্বেও ক�োন
ইউনিয়ন নেই। কলকাতায় শিয়ালদহ বা রাজাবাজার
অঞ্চলে কয়েকটি বিড়ি শ্রমিকদের ইউনিয়ন আছে।
সেখানে শ্রমিকরা নিজেদের র�োজ বাড়ান�ো ইত্যাদি
দাবী আদায় করতে পারে। আমি নিজেও বিজয়গড়ে
একবার ইউনিয়ন করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু
কিছু দাঁড়ায়নি। যাই হ�োক সব মিলিয়ে আমাদের বিড়ি
শ্রমিকদের অবস্থা বেশ সংকটজনক আর এর থেকে
অমর চন্দ্র মন্ডল বের হতে গেলে আমাদের সংঘবদ্ধ ভাবেই ভাবতে হবে।
স্কুল জীবনের পর থেকেই গত ৩০ বছর
ধরে বিড়ি বাধিঁ। আগে কলকাতায় গিয়ে বিড়ি বেধে
আসতাম। এখন বয়স হয়েছে তাই বাড়িতেই বাধি।
আমাদের এখানে অনেক কারবারিরা আছে তাদের
থেকে ল�োকেরা মাল নিয়ে আসে। মজুরি বিনিময়ে পূর্ণিমা, শ্রাবন্তী, শিখা, সুষমা, গ�ৌরী
বেধে আবার দিয়ে আসা হয়। এখানে মজুরি পাই আমরা মেয়েরা অনেক ছ�োট থেকেই এই অঞ্চলে
এক হাজার বিড়ি পিছু ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা। বিড়ি বাধাঁর কাজ করছি। আমাদের ছেলে মেয়েদের
১০০০ বিড়ি বাধতে ৭-৮ ঘন্টা সময় লাগে। যেখানে পড়াশুনার জন্য আমরা সরকারি অফিসে গিয়ে কার্ড
কলকাতায় এই রেট ২০০ টাকা। বানিয়েছিলাম, কয়েকবার কিছু টাকা কয়েকজন পেয়েছিল।
সরকার থেকে শুনেছিলাম আমাদের জন্য কিছু সূ য�োগ তবে এখন সব বন্ধ। আমাদের মহিলা বিড়ি শ্রমিকদের
সু বিধা আছে। মগরা হাটে সরকারি অফিসে গিয়ে দু র্দশা প্রচুর। সারাদিন খেটে ১০০০ বিড়িতে পাই মাত্র
আই কার্ড বানাই। কিন্তু ক�োন ধরণের সু বিধা হল না। ১২০-১৩০ টাকা। বিড়ির দাম বাড়লেও আমাদের মজুরি
আমরা কিছু ই পাই না। সারাজীবন বিড়ি বেধে ক�োমড় কিন্তু বাড়েনি। যাদের কাছ থেকে কাজ নিয়ে আসি, তারা
ভেঙে গেছে। এখন এই বয়সে আর অন্য কিছু করার বলেন আমাদেরই বাড়েনি, ত�ো ত�োমাদের দেব বারাব�ো
নেই। কার কাছে দাবী করব�ো বুঝতে পারি না। তাই কি করে! এখন গ্রামে অন্য কাজ না থাকায় মেয়েরা বিড়ি জামিরুন বিবি
কম হ�োক আর বেশি হ�োক এই র�োজেই যতদিন বেধেঁ সংসারে এটা ওটা গ�োঁজা দেওয়ার কাজ করে। মহাজন নয়, ক�োন�ো একজন মানু ষ নিজেই
পারব�ো কাজ করে যেতে হবে। এত খারাপ অবস্থা সত্তেও আমরা ভাবতেও পারিনা হয়ত আগে বিড়ি বাঁধত ,বাধতে বাধতে ক�োন�ো ক্রমে
প্রহ্লাদ মন্ডল যে সরকারি ভাবে আমাদের কিছু সাহায্য হতে পারে। কিছু পয়সা জ�োগাড় করে বিড়ি তৈরির সরন্জাম কিনে
আমার বয়স এখন ৭৪ বছর। ১৬ বছর বয়স আমাদের জন্য ক�োন নেতা মন্ত্রী নেই। এভাবেই এই যে বাড়ির মহিলাদের কাছে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে
থেকে বিড়ি বাধি। একটা সময় ছিল যখন আমাদের আমাদের জীবন চালাতে হবে। দেয়,এবং বিড়ি বাঁধা হয়ে গেলে আবার বাড়ি বাড়ি
গ্রামে রিতিমত�ো ক্যাম্প চলত�ো। এলাকা জলা ছিল। শম্ভু মন্ডল এসে নিয়ে যায়।কিন্তু এরা ছ�োট মালিক হলেও,শ�োষনের
তাই মাছ আর বিড়ি এই ছিল মানু ষের জীবিকা। গ্রামের তালপাতায় লিখে চতুর্থ ক্লাস শেষ করেই বিড়ি কায়দাটা ওই বড় মালিকের মত ই।ক�োন�ো সবেতন
বাধা বিড়ি কলকাতায় চালান দেওয়া হ�োত। এখন পাড়ায় বাঁধা শুরু করেছিলাম ৬ আনা হাজার প্রতি। আমার ছু টি শ্রমিকদের দেয় না।নেই ক�োন�ো অন্যান্ন সু য�োগ
পাড়ায় বিড়ির দ�োকান হয়েছে। অনেক কম মজুরিতে আগে আমার বাবাও এই কাজ করতেন। এই গ্রামে সু বিধা।এমনকি এই শ্রমিকরা যারা তার কাছে কাজ
কাজ করেছি একটা সময়। কিন্তু তখন ছেলেপুলে হয় বৃ টিশ আমল থেকেই বিড়ি বাঁধার কাজ চলছে। একটু করে তাদের নেই ক�োন�ো প্রমাণ পত্র!আর মজুরী
নি। এখন ছেলেরা না কাজ করলে আমার এই কম বেশি রেট পাবার জন্য কলকাতা থেকে বিড়ি বাঁধার বিষয়টা আরও হাস্যকর! একহাজার পিস বিড়ি বাঁধার
র�োজগারে (১২০-১৩০ টাকা) চালান�ো একেবারেই অর্ডার নিয়ে আসি। গ্রামে যেখানে রেট হাজার পিছু মজুরী ১০০-১২০টাকা।এখানে একটা জিনিস বলে রাখি
অসম্ভব। শুনেছি সরকারি অনেক সূ য�োগ সু বিধা আছে, ১৩০ টাকা সেখানে কলকাতায় ২২০ টাকা। কর�োনা একজন শ্রমিক দৈনিক ৪০০-৫০০ পিস বিড়ি অতি
কিন্তু আমরা সে সব পাই না। বংশপরম্পরায় আমরা কস্টে বানাতে পারে। n
সম্পাদক মহাশয়
শ্রমিকশক্তি পাঠকের চিঠি
মজদু র ক্রান্তি পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে প্রকাশিত, শ্রমিক শ্রেণীর মুখপত্র শ্রমিকশক্তি ১৪তম বর্ষ, ১ম সংখ্যা, অক্টোবর ২০২০ আমার হাতে এসেছে।
আঁধার মুক্ত চেতনার পক্ষ ম�োট ৮পাতার এই মুখপত্র পড়ে একথা বলা যায়। সত্যের দর্পণ শ্রমিক শক্তি কাগজ। উদার উদ্যোগ য�োগে পথ চলা, কথা বলা নজির রেখে
যাচ্ছে শ্রমিকশক্তি তার চলার পথে।
বর্তমান সময়কালে, সিংহভাগ মানু ষ নিজের পকেট ম�োটা স্বার্থে মাতাল। এমন দু র্দিনে, পক্ষ পাতী দূ ষণের মধ্যে, ব্যতিক্রমী চেতনার লক্ষ, ক্ষমতায় থাকা রাজশক্তির
লাল চ�োখকে ভয় না করে, জাগরণের জ�োয়ার আনা মানে, মৃ ত্যুর মিছিলে য�োগ দেওয়া। তবু মৃ ত্যু ভয় ভুলে ন্যায্য কথা বলা চেতনায় আগ্রহী আপনারা। তাই আপনাদের
সৎ সাহসের প্রতি কুর্নিশ, লাল সেলাম।
সালাম অন্তে-
এম মনিরুল হক
কান্দুরী, খড়গ্রাম, মুর্শিদাবাদ
শ্রমিকশক্তি 5