Professional Documents
Culture Documents
(গ্রামের বাড়ি চৌধুরানী থেকে ট্রেনে পাকশীর উদ্দেশ্যে আসার সময় প্রথম দেখা হয় মেয়েটার সাথে।
গঠন বলতে গেলে বলতে হয় বয়স অনুযায়ী পারফেক্ট । হালকা বাদামি কালারের বোরকা পরে ছিল মেয়েটি।হাতা কোনুই
পর্যন্ত টেনে তোলা। চেহারার সুন্দর্য শত গুনে বাড়িয়ে তু লেছে বাম পাশের ঠোটের নিচে থাকা তিল।
মেয়ে- কই যাবেন আপনি? ( সাথে থাকা ব্যাগটা সিটের নিচে রাখতে রাখতে)
(সাম্মি হলো মেয়েটির ছোট বোন। চেহারার গঠন দেখলেই বোঝা যায়। তবে বোনের চেয়েও দেখতে অনেক সুন্দর)
আমি এক কোনায় শরে বসলাম আর সাম্মি বসলো অন্য কোনায়। মাঝে বসিয়ে দিলো ৪/৫ বছরের এক ছেলেকে। এটা ওদের
ভাই সিয়াম।
একটা মেয়েকে দাড়িরে রেখে নিজে বসে আছি, কেমন যেন সমাজহীন ব্যক্তি মনে হচ্ছিল নিজেকে। তাই সিট থেকে দাঁড়িয়ে
মেয়েটিকে বসতে দিলাম। বার বার বসবো না, বসবো না বলেও শেষ পর্যন্ত বসলো।
মেয়ে- আমি ইন্টার পরছি। এবার সেকেন্ড ইয়ার। কোন কলেজে পড়েন?
আমি- পাবনা পলিটেকনিক।
এভাবে গল্প চলতে থাকে প্রায় ৩ ঘন্টা। মেয়েটা অনেক কয়বার বসতে বলেছিল। কিন্তু কেন জানি এভাবেই গল্প করতে ভাল
লাগছিল। শেষ মেস যাওয়ার আগে যোগাযোগ করার জন্য ২ জনই ফেসবুকে ফ্রেন্ড হলাম।
তার উদ্দেশ্যে কিছু কথা "ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না আপনাকে,আমার বোরিং মুহুর্ত গুলোকে স্বরণীয় করে রাখার জন্য।
হয়ত আমি যত দিন ট্রেন জার্নি করব আপনার কথা আমার মনে পড়বে। মনে পড়বে আপনার হাসি"
দিন যেতে লাগলো, সময় কাটতে লাগলো। জীবন তার নিজ গতিতে আমাকে নিয়েই ছু টে চললো কোনো এক লক্ষ্যহীন পথে।
হঠাৎ একদিন কোনো এক বিশেষ কাজে আমাকে মামার বাসায় যেতে হলো। মামা তখন লালমনিরহাট জেলায় চাকরিরত।
সর্বাপরি আমার যাতায়াত মাধ্যমই হলো রেল। তাই সকাল সকাল ফ্রেশ হয়ে ছু টে চলে আসলাম চৌধুরানী স্টেশনে। একা
একা ভাল লাগছিল না দেখে স্টেশনের পাশে যেসব বন্ধুদের বাড়ি তাদের কল করে ডেকে নিয়ে আসলাম।
চলছিল চায়ের আড্ডা সাথে পুরোনো দিনের গল্প। হঠাৎ করেই ট্রেন চলে আসে। যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে আমার। বন্ধুদের
কাছে বিদায় নিয়ে উঠে পরলাম ট্রেনে। বলে রাখা ভাল আমাদের ওই দিকে বেশিভাগই লোকাল ট্রেন চলাচল করে। তো
লোকাল ট্রেন হওয়ায় এখানে কোনো সিট নাম্বার নেই। যে যেখানে বসতে পারে বসবে।
এদিকে আমি খুজতে লাগলাম কোথাও কোনো জায়গা ফাকা আছে কি না। জানি খুজে পাওয়াটা ঘাসের মাঝে সুই খোজার
মতই কঠিন, তবুও চেষ্ঠা করতে দোষ কিসের। ২/৩ টা বগি পার হতেই এক জায়গায় ১ টা বসার সিট ফাকা দেখতে পেলাম।
যেই আমি গিয়ে বসবো অমনি এক বৃদ্ধা চাচি বলে উঠলো ওখানে লোক আছে। কি আর করার। কপালে না থাকলে যা হয়।
চলে আসলাম ট্রেনের বগির দরজায়। যদিও দরজায় দাঁড়িয়ে যাওয়ারও একটা আলাদা অনুভূতি আছে।
দুই স্টেশন পার হয়ে কাউনিয়া স্টেশনে ঢু কলো ট্রেন। শুরু হলো মানুষের ট্রেন থেকে নেমে পরার ধুম। মনে হচ্ছে পুরো
ট্রেনের মানুষই বোধ হয় এখানেই নেমে পড়বে। তো যাই হোক সবাই নেমে যেতে যখন ব্যাস্ত তখন আমি খুজে চলছি একটা
জানালার পাশের সিট। পেয়েও গেলাম সাথে সাথে। আরামে বসে পড়লাম সিটে। নতু ন যাত্রী ট্রেনে ওঠা শুরু করলো।আস্তে
আস্তে ফাকা ট্রেন যেনো আবার ফিরে পেলো তার আগের রূপ।
এদিকে আমি দুজনের জায়গা একাই দখল করে আছি। ভাবটা এমন যে ট্রেন আমার নিজের সম্পত্তি। মেইন ঘটনা ঘটলো
তখন যখন আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে চাপা শুরু করলাম ওমনি এক পরিচিত গলার শব্দ শুনতে পারি।
কোনো এক মেয়ে বলছে " এই যে সান সাহেব, একাই দুজনের সিট নিয়ে যাবেন নাকি? " আমি একটু বিচলিত হয়ে তাকিয়ে
দেখি এটা তো সেই মেয়েটা। সে আমাকে কত কি বলে যাচ্ছে তা আমার কান শুনতে পেলেও মস্তিষ্ক সেটা গ্রহন করতে নারাজ
কারন সে তো সেই শ্রেয়সীর রূপ শুধা পান করতে ব্যাস্ত।
আমি: হ্যা, আমিও আশা করিনি কখনো আপনার সাথে আর দেখা হবে।
মেয়ে: এমন ভাবে বলছেন যেনো দেখা হয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি।
আমি: আরে না না তা হবে কেনো। দেখা হয়ে আসলেই অনেক ভাল লাগলো।
আমি: বাহ, আমিও যাচ্ছি লালমনিরহাটেই। ভালই হলো জার্নি টা বোরিং লাগবে না।
মেয়ে: কেনো?
আমি: এই যে আপনি আছেন সাথে। সারা রাস্তা গল্প করতে করতে যাবো।
মেয়ে: আপনি করবেন গল্প! যে মানুষ কিনা কথা বলার থেকে চু পই থাকে বেশি সে আবার সারা রাস্তা গল্প করবে।