You are on page 1of 4

মেয়ে-সিট খালি আছে?

আমি-(কান থেকে ইয়ারফোন খুলে) বুঝিনি!!

মেয়ে- পাশের সিটে কেউ আছে?

আমি- ওহ, নাহ। কেউ নেই।

(গ্রামের বাড়ি চৌধুরানী থেকে ট্রেনে পাকশীর উদ্দেশ্যে আসার সময় প্রথম দেখা হয় মেয়েটার সাথে।

গঠন বলতে গেলে বলতে হয় বয়স অনুযায়ী পারফেক্ট । হালকা বাদামি কালারের বোরকা পরে ছিল মেয়েটি।হাতা কোনুই
পর্যন্ত টেনে তোলা। চেহারার সুন্দর্য শত গুনে বাড়িয়ে তু লেছে বাম পাশের ঠোটের নিচে থাকা তিল।

যাই হোক বেশি বর্ননা দেওয়া যাবে না )

মেয়ে- কই যাবেন আপনি? ( সাথে থাকা ব্যাগটা সিটের নিচে রাখতে রাখতে)

আমি- সান্তাহার যাব।

মেয়ে- ওহ, আমরাও যাব।

আমি- ওহ (আমি ভেবেছিলাম উনি একা)

মেয়ে- সাম্মি, তু ই বস এখানে।

(সাম্মি হলো মেয়েটির ছোট বোন। চেহারার গঠন দেখলেই বোঝা যায়। তবে বোনের চেয়েও দেখতে অনেক সুন্দর)

আমি এক কোনায় শরে বসলাম আর সাম্মি বসলো অন্য কোনায়। মাঝে বসিয়ে দিলো ৪/৫ বছরের এক ছেলেকে। এটা ওদের
ভাই সিয়াম।

একটা মেয়েকে দাড়িরে রেখে নিজে বসে আছি, কেমন যেন সমাজহীন ব্যক্তি মনে হচ্ছিল নিজেকে। তাই সিট থেকে দাঁড়িয়ে
মেয়েটিকে বসতে দিলাম। বার বার বসবো না, বসবো না বলেও শেষ পর্যন্ত বসলো।

মেয়ে- কি করেন আপনি?

আমি- স্টু ডেন্ট, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি।

মেয়ে- আমি ইন্টার পরছি। এবার সেকেন্ড ইয়ার। কোন কলেজে পড়েন?
আমি- পাবনা পলিটেকনিক।

মেয়ে- পাবনায় তো পাগলরা থাকে।

আমি- হুম, আমিও তাদের মধ্যে একজন।

মেয়ে- (হাসতে হাসতে) তো পাগল এদিকে কি করছে?

আমি- গ্রামের বাড়িতে এসেছিলাম ঈদ করতে। আপনি?

মেয়ে- মামার বাসায় যাচ্ছি ঘুরতে।

এভাবে গল্প চলতে থাকে প্রায় ৩ ঘন্টা। মেয়েটা অনেক কয়বার বসতে বলেছিল। কিন্তু কেন জানি এভাবেই গল্প করতে ভাল
লাগছিল। শেষ মেস যাওয়ার আগে যোগাযোগ করার জন্য ২ জনই ফেসবুকে ফ্রেন্ড হলাম।

আমার এই লেখা হয়ত কোনো না কোনো দিন তার কাছে পৌছাবে।

তার উদ্দেশ্যে কিছু কথা "ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না আপনাকে,আমার বোরিং মুহুর্ত গুলোকে স্বরণীয় করে রাখার জন্য।
হয়ত আমি যত দিন ট্রেন জার্নি করব আপনার কথা আমার মনে পড়বে। মনে পড়বে আপনার হাসি"

দিন যেতে লাগলো, সময় কাটতে লাগলো। জীবন তার নিজ গতিতে আমাকে নিয়েই ছু টে চললো কোনো এক লক্ষ্যহীন পথে।

হঠাৎ একদিন কোনো এক বিশেষ কাজে আমাকে মামার বাসায় যেতে হলো। মামা তখন লালমনিরহাট জেলায় চাকরিরত।
সর্বাপরি আমার যাতায়াত মাধ্যমই হলো রেল। তাই সকাল সকাল ফ্রেশ হয়ে ছু টে চলে আসলাম চৌধুরানী স্টেশনে। একা
একা ভাল লাগছিল না দেখে স্টেশনের পাশে যেসব বন্ধুদের বাড়ি তাদের কল করে ডেকে নিয়ে আসলাম।

চলছিল চায়ের আড্ডা সাথে পুরোনো দিনের গল্প। হঠাৎ করেই ট্রেন চলে আসে। যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে আমার। বন্ধুদের
কাছে বিদায় নিয়ে উঠে পরলাম ট্রেনে। বলে রাখা ভাল আমাদের ওই দিকে বেশিভাগই লোকাল ট্রেন চলাচল করে। তো
লোকাল ট্রেন হওয়ায় এখানে কোনো সিট নাম্বার নেই। যে যেখানে বসতে পারে বসবে।

এদিকে আমি খুজতে লাগলাম কোথাও কোনো জায়গা ফাকা আছে কি না। জানি খুজে পাওয়াটা ঘাসের মাঝে সুই খোজার
মতই কঠিন, তবুও চেষ্ঠা করতে দোষ কিসের। ২/৩ টা বগি পার হতেই এক জায়গায় ১ টা বসার সিট ফাকা দেখতে পেলাম।
যেই আমি গিয়ে বসবো অমনি এক বৃদ্ধা চাচি বলে উঠলো ওখানে লোক আছে। কি আর করার। কপালে না থাকলে যা হয়।
চলে আসলাম ট্রেনের বগির দরজায়। যদিও দরজায় দাঁড়িয়ে যাওয়ারও একটা আলাদা অনুভূতি আছে।
দুই স্টেশন পার হয়ে কাউনিয়া স্টেশনে ঢু কলো ট্রেন। শুরু হলো মানুষের ট্রেন থেকে নেমে পরার ধুম। মনে হচ্ছে পুরো
ট্রেনের মানুষই বোধ হয় এখানেই নেমে পড়বে। তো যাই হোক সবাই নেমে যেতে যখন ব্যাস্ত তখন আমি খুজে চলছি একটা
জানালার পাশের সিট। পেয়েও গেলাম সাথে সাথে। আরামে বসে পড়লাম সিটে। নতু ন যাত্রী ট্রেনে ওঠা শুরু করলো।আস্তে
আস্তে ফাকা ট্রেন যেনো আবার ফিরে পেলো তার আগের রূপ।

এদিকে আমি দুজনের জায়গা একাই দখল করে আছি। ভাবটা এমন যে ট্রেন আমার নিজের সম্পত্তি। মেইন ঘটনা ঘটলো
তখন যখন আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে চাপা শুরু করলাম ওমনি এক পরিচিত গলার শব্দ শুনতে পারি।
কোনো এক মেয়ে বলছে " এই যে সান সাহেব, একাই দুজনের সিট নিয়ে যাবেন নাকি? " আমি একটু বিচলিত হয়ে তাকিয়ে
দেখি এটা তো সেই মেয়েটা। সে আমাকে কত কি বলে যাচ্ছে তা আমার কান শুনতে পেলেও মস্তিষ্ক সেটা গ্রহন করতে নারাজ
কারন সে তো সেই শ্রেয়সীর রূপ শুধা পান করতে ব্যাস্ত।

মেয়ে: এই যে কথা গুলো কানে যাচ্ছে?

আমি: হ্যা, হ্যা বসুন।

মেয়ে: আপনার সাথে আবার দেখা হবে ভাবতে পারিনি।

আমি: হ্যা, আমিও আশা করিনি কখনো আপনার সাথে আর দেখা হবে।

মেয়ে: এমন ভাবে বলছেন যেনো দেখা হয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি।

আমি: আরে না না তা হবে কেনো। দেখা হয়ে আসলেই অনেক ভাল লাগলো।

মেয়ে: তো আজ কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

আমি: মামার বাসায়। আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

মেয়ে: লালমনিরহাট যাচ্ছি। ওখানে আমার ফু ফাতো বোন আছে। ওর কাছে।

আমি: বাহ, আমিও যাচ্ছি লালমনিরহাটেই। ভালই হলো জার্নি টা বোরিং লাগবে না।

মেয়ে: কেনো?

আমি: এই যে আপনি আছেন সাথে। সারা রাস্তা গল্প করতে করতে যাবো।

মেয়ে: আপনি করবেন গল্প! যে মানুষ কিনা কথা বলার থেকে চু পই থাকে বেশি সে আবার সারা রাস্তা গল্প করবে।

আমি: হাহাহা, হাসালেন।


এভাবেই চলতে থাকলো আমাদের কথোপকথন। কখন যে লালমনিরহাট স্টেশনে পৌঁছে গেছি খেয়ালই করিনি। এবার
আবার বিচ্ছেদ এর সময়। দুজন একটু দুজনের দিকে আলাদা মহব্বত এর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি কোনো কারন ছাড়াই। শেষে
মেয়েটির শেষ কথাটি ছিল " এই যে চলে যাচ্ছি, আবার দেখা হবে কোনো এক ট্রেনে, কোনো এক বগিতে আবার পাশাপাশি
সিটে, তত দিন ভাল থাকবেন'

আমিও বোকার মত আচ্ছা বললাম। হাত দিয়ে বিদায় এর ইশারা দিলাম।

হয়তো এটাই ছিল নিয়তি।

You might also like