You are on page 1of 4

ঝাড়ফুঁ কের পেছনের গল্প

ঝাড়ফুঁ ক সম্পর্কে আমার মতামত দেওয়ার আগে প্রথমে আমি একটা গল্প দিয়ে
শুরু করতে চাই-

একদিন একটি ছেলে রাতে প্রচু র পড়াশোনা করতেছে কারণ আগামী কালকে
পরীক্ষা। কারণ পরীক্ষার পূর্বক্ষণে তার প্রস্তুতিটা আরো ঝালাই করে নেওয়া চাই।
এই উদ্দেশ্যে সে প্রায় সারা রাত ধরে পড়ল। তারপর সকালে কিছু ক্ষণ ঘুমিয়ে
পরীক্ষা হলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলো। এই প্রচন্ড তাড়াহুড়া তে সে ভু ল
করে তার নতু ন জুতাটা রেখে পুরনো ছেঁ ড়া জুতাটি পরে চলে গেল। পরীক্ষা হলে
পৌঁছানোর পর সে লক্ষ্য করলো সে ভু লক্রমে ছেঁ ড়া জুতোটি পড়ে এসেছে। কিন্তু
কোন উপায় না দেখে সে পরীক্ষা হলে বসে পড়ল এবং পরীক্ষায় মনোযোগী হলো।
শিক্ষক পরীক্ষার প্রশ্ন দেওয়ার সাথে সাথে সে লক্ষ্য করলো তার সবগুলো প্রশ্নই
কমন পড়েছে এবং সে আনন্দের সহিত পরীক্ষা শেষ করল। পরীক্ষা ভালো হওয়ার
খুশিতে অতিরিক্ত খুশি হয়ে সে পরবর্তী পরীক্ষা কোন প্রস্তুতি না নিয়ে সারারাত
ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিল। পরদিন সকালে সে আরামসে পরীক্ষার হলে যাওয়ার জন্য
প্রস্তুতি নিল। কিন্তু এবার সে গতদিনের মত ভু লটি করল না সে এবার নতু ন
জুতোটি পড়ে রওনা হল।পরীক্ষা হলে গিয়ে সে প্রশ্ন পয়সার সাথে লক্ষ্য করলো
পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের মধ্যে সে হাতেগোনা কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে
বাকি গুলোর উত্তর তার মনে আসছে না। গম্ভীরভাবে সে পরীক্ষা হল থেকে বের
হলো এবং সে তার পায়ের দিকে লক্ষ্য করলো দেখতে পেল শেয়ারকে ছিড়া
জুতোটি পড়ে আসেনি। ফলে কিছু ক্ষণের মধ্যে তার মাথার মধ্যে একটা চিন্তা
আসলো যে হয়তো সে গতকালকে ছেড়া জুতোটি পড়ে আসার কারণে তার পরীক্ষা
ভালো হয়েছে কিন্তু যেহেতু আজকের সে তার নতু ন জুতোটি পড়ে এসেছে তাই
তার পরিক্ষা তেমন ভাল হয়নি। সুতরাং এই যুক্তির উপর ভিত্তি করে সে পরবর্তী
দিন থেকে তার ছেঁ ড়া জুতোটি পড়ে পরীক্ষা দিতে আসার সিদ্ধান্ত নিল।

ঝাড়ফুঁ ক আমাদের সমাজে প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থার একটি অন্যতম অংশ। দীর্ঘ
কয়েক শতাব্দী ধরে আমাদের সমাজের মানুষ ঝাড়ফুঁ ক এর উপর বিশ্বাস করে
আসছে। যেখানে সিংহভাগ মানুষ উপরের গল্পের ছেলের মত তার ছেঁ ড়া জুতোটির
উপর বিশ্বাস করার যুক্তিতে নির্ভ র করে ঝাড়ফুঁ কে সমাজ একটি কার্যকরী
চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসাবে সমর্থন করে আসছে। উপরের গল্পের মত তারা আসলেই
জানেনা পরীক্ষার হলে পারফরম্যান্স আসলে জুতা পরিধান এর উপর নির্ভ র করে
না বরং এটি নির্ভ র করে তার পূর্বপ্রস্তুতির উপর। এ প্রসঙ্গে আমি কিছু বাস্তব
উদাহরণ নিচে তু লে ধরতে চাই:-

১) জন্ডিস আমাদের সমাজে একটি কমন রোগ যেখানে রোগীদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে
চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় কবিরাজের কাছে। কারণ তাদের
বিশ্বাস কবিরাজরা চু নের পানি দিয়ে হাত বা মাথা ধোয়ালে যে হলুদ রঙের পানি
বের হয় তাতে জন্ডিস চলে যায় এছাড়াও কোথাও কোথাও মাথায় লতা বেঁধে
দেওয়া হয় এবং এটি পুরো শরীর দিয়ে পড়ে গেলে জন্ডিস ভালো হয়ে যায় অথবা
কেউ এমন কিছু পাচন বা ভেষজ ওষুধ যা খেলে জন্ডিস মলমূত্রের মাধ্যমে শরীর
থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু আসলে কি তাই আসলে আমরা এটাই জানিনা জন্ডিস
আসলে কেন হয়? আমরা এটাই জানি না যে বিলুরুবিন কখনো ত্বক বা মলমূত্রের
মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা ঠিক রাখে। তারা এটা জানে
না যে কিছু দিন পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাদ্য খেলে
জন্ডিস ভালো হয়ে যায়। আরে অজ্ঞতাকে পুজি
ঁ করে সমাজে কবিরাজরা তাপের
প্রভাব বিস্তার করছে।

২) ছোটবেলায় আমরা যারা গ্রামে থেকেছি তাদের অনেকেই গ্রামের দাঁতে পোকা
বের করার জন্য বিভিন্ন কবিরাজের কাছে যেতে হয় । সেখানে কবিরাজরা কি
করেন দাঁত থেকে প্রায় আধা কর সমান পোকা বের করো আমাদের দেখান ।
কিন্তু আমরা এটা কখনো চিন্তা করিনা এত বড় একটি পোকা কিভাবে আমাদের
দাঁতের ফাঁকে বসবাস করতে পারে কিন্তু তাহলে কিভাবে আমাদের দাঁতের ব্যথা
ভালো হয়। আসলে তারা একধরনের লতা ওষুধ ব্যবহার করেন যা সাময়িকভাবে
আমাদের নার্ভ সিস্টেম কে অবশ করে রাখে।

৩) গ্রামের প্রায়ই সময় ছোট বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে তাদের কচু গাছের ডগা দিয়ে
ঝাড়ানো হয়। যেখানে তারা দেখেন যে প্রতিবার ঝাড়ানোর সময় রোগের মাথায়
আঘাত করার ফলে কচু র ডগার দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এটা আমি নিজের লক্ষ্য
করে দেখছি যে আসলে তারা যখন কচু র ডগা টিক কাটে তখন এমন অসমভাবে
কাটে যা সহজে বুঝবার মত না। প্রতিবার ঝাড়ার সময় ওই অসমতাকে তারা
সমান করে ফেলে এবং রোগীর‌ঠান্ডা ভালো হয়ে যাওয়াকে নির্দে শ করে।

৪) আমাদের সমাজে ঝাড়ফুঁ ক বা কবিরাজির উপর বিশ্বাস করে অনেক দম্পতি


যারা সন্তান জন্মদানে অক্ষম। তারা একটি সন্তান পাওয়ার জন্য যেকোনো কিছু
করতে রাজী। আরে সুযোগটাকে কাজে লাগান বিভিন্ন কবিরাজ এবং ফকির বাবা।
তারা মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের তেল পড়া, পানি পড়া, কলা পড়া বা বিভিন্ন
ধরনের ওষুধ দিয়ে সন্তান জন্মদানের জন্য সক্ষম করে তোলার আশ্বাস দেন। কিন্তু
তারা এটাই জানেন না যে আসলে সন্তান জন্মদানের জন্য স্বামী-স্ত্রী উভয়কে সক্ষম
হতে হয়। আর কলা পড়া, তেল পড়া, পানি পড়া কখনো সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা
কে তৈরি করে দেয় না।

এবার আসি ধর্মীয় দিক থেকে ঝাড়ফুঁ কের তাৎপর্য – আসলে আমি একজন ইসলাম
ধর্মের বিশ্বাসী সুতরাং ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আমরা আমাদের সকল সমস্যার
সমাধান পাওয়ার উপায় একমাত্র আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করতে পারি।
যেখানে আল্লাহ এবং তার রাসুল আমাদের বিভিন্ন ধরনের দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন।
তো প্রতিটি দোয়া কে যদি আমরা বাংলায় অনুবাদ করে দেখি তাহলে আমরা
দেখতে পাই আল্লাহ এবং তার রাসুল আমাদের যে সকল দোয়া যে সকল সমস্যা
সমাধানের জন্য পড়তে বলেছেন সেখানে আমরা আমাদের সমস্যা সমূহ আল্লাহর
কাছে শুধু আরবী ভাষায় উপস্থাপন করেছি। আমি বিশ্বাস করি একমাত্র আমার
সমস্যা সমাধানের জন্য আমি যতটু কু আন্তরিকতার সহিত আল্লাহর কাছে দোয়া
করব অন্য কোন ব্যক্তি সেভাবে দোয়া করবেন না। আর যেহেতু আল্লাহ এবং
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আমাদের এই সকল দোয়া উন্মুক্ত করে দিয়েছি
আমি তাহলে কেন আমি অন্য কারো কাছে দোয়া প্রার্থনা করতে চাইবো। আর
যদি করেও তাহলে তা হবে শিরক এর সমতু ল্য কারণ আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ
এক এবং অদ্বিতীয়। আমাদের সমাজের তাই করা হচ্ছে যেমন:- অমুক বাবার
দরবারে গিয়ে আমি রোগ মুক্তি লাভ করেছি, অমুকের সাহেব এর দোয়ার কারণে
আমি সন্তান লাভ করেছি, অমুক পীরের মাজারে দোয়া প্রার্থনা করায় আমারও
মুক্তিলাভ হয়েছে ইত্যাদি যা শিরক এর সমতু ল্য গুনাহ।যা সম্পূর্ণ ভন্ডামি, এখানে
আল্লাহ তাআলা বলেছেন সকল সমস্যার সমাধান শুধু একমাত্র তিনিই করতে
পারেন। এটা শুধু ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে না যে যার যার ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ
থেকে তা বিশ্বাস করে কিন্তু এই ধর্মীয় রীতিনীতি সমূহকে সমাজে বিকৃ তভাবে
উপস্থাপন করে ধর্মকে ব্যবহার করে ব্যবসা করা হচ্ছে যা কোনো ধর্মেই অনুমতি
দেওয়া হয়নি।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এতে স্পষ্ট হয় যে আমি ঝাড়ফুঁ ক, কবিরাজি, বা


ইল্লজিক্যাল সকল চিকিৎসা ব্যবস্থার বিপক্ষে অবস্থান করছে এবং সমাজে এসকল
ভন্ডামির পরিসমাপ্তি আশা করছি ধন্যবাদ।

You might also like