You are on page 1of 1

মনীষী চতু র্থ পর্বঃ যাযাবর থেকে ভূ গোলবিদ আল মাসুদি

হেরোডটাসের নাম সকলের জানা। তাকে বলা হয় ইতিহাসের জনক। তবে ইতিহাসে আরো একজন হেরোডটাস আছেন, তা
কি জানা আছে? তার নাম হেরোডটাস না হলেও তার কাজ তাকে এনে দিয়েছিল ‘দ্য হেরোডটাস অব দ্য আরব’ খেতাব।
তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ইতিহাস এবং ভূ গোল নিয়ে বৃহত্তর পরিসরে কাজ করেছেন। তাকে ইসলামের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ
ভূ গোলবিদ হিসেবে গণ্য করা হয়। তার পুরো নাম আবু আল হাসান আলী ইবনে আল হুসাইন ইবনে আলী আল, মাসুদি যিনি
সংক্ষেপে আল মাসুদি নামে পরিচিত। আল মাসুদি ৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে ইরাকের বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব, পরিবার ও
শিক্ষা- এসব বিষয়ে কোনো নির্ভ রযোগ্য তথ্যই পাওয়া যায় না। তবে তার ভ্রমণবিলাসিতার কথা প্রায় সব ইতিহাসবিদই লিখে
গেছেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই আল মাসুদি তার যাযাবর জীবনের শুরু করেন এবং মৃত্যুর কয়েক বছর আগ পর্যন্ত তার এ
ভ্রমণ অব্যাহত থাকে।
ভূ গোল আর ইতিহাসের বাইরেও তার জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ হয়েছিল সৃষ্টিতত্ত্ব, আবহাওয়াবিদ্যা, সমুদ্রবিজ্ঞান, জোতির্বিজ্ঞান,
ইসলামিক শরিয়াহ আর আরব লোকজ সংস্কৃ তি দিয়ে। তিনি তৎকালীন সমাজে প্রচলিত অনেক কু সংস্কার থেকে নিজেকে
সফলভাবে মুক্ত করতে পেরেছিলেন। প্রচলিত তথ্যের উপর অন্ধভাবে বিশ্বাস স্থাপন না করে তিনি ভ্রমণের মাধ্যমে প্রামাণিক
ভৌগোলিক তথ্য সংগ্রহ করেন। মধ্যযুগে ইউরোপীয়দের বিজ্ঞানচর্চা ছিল সম্পূর্ণরূপে চার্চ কেন্দ্রিক। তাদের বিশ্বাস ছিল যে
পৃথিবী একটি বিশাল সমতল প্লেটের মতো যা চারদিক থেকেই জলবেষ্টিত। কিন্তু আল মাসুদি এই ধারণা উড়িয়ে দেন। তিনি
পর্যবেক্ষণ দ্বারা পৃথিবী যে গোলাকার সে বিষয়ে নিশ্চিত হন। তার মতে পৃথিবী সমতল হলে ভূ পৃষ্ঠ সর্বদা জলনিমগ্ন থাকতো।
কিন্তু পৃথিবী গোলাকার বলেই সমুদ্রে জাহাজ ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হয়। আল মাসুদি পৃথিবীর সমুদ্র এবং মহাদেশগুলোর সীমানা
নির্ধারণের প্রয়াস চালান।
আল মাসুদি পরিবেশ সম্পর্কে ভীষণ আগ্রহী ছিলেন এবং তিনি প্রাণ প্রকৃ তির সঙ্গে প্রাত্যহিক মানবজীবনের সংযোগ ঘটানোর
চেষ্টা করেন। আরবের যাযাবর বেদুইনদের জীবন সম্পর্কে আল মাসুদির রয়েছে বিচিত্র পর্যবেক্ষণ। তার মতে, শহুরে জীবনের
তু লনায় এ যাযাবর জীবনই শ্রেয়। কেননা শহর মানুষের ঘুরে বেড়ানো এবং মুক্ত পরিবেশে বসবাসের ইচ্ছাকে দমন করে ফেলে।
আরবরা মুক্তভাবে বসবাস করে বলেই তারা শারীরিকভাবে বলবান হয়। তিনি মানুষের আচরণ ও বৈশিষ্ট্যের ওপর আঞ্চলিক
প্রভাব চমৎকারভাবে বর্ণনা করেন। আল মাসুদি কেবল একজন অসামান্য ভূ গোলবিদই ছিলেন না, ছিলেন একজন চমৎকার
লেখকও। আর তার লেখার আগ্রহও ছিল ভীষণ বৈচিত্র্যময়। বিশেষত বিজ্ঞানের ইতিহাসবিষয়ক লেখায় তিনি একজন
পথিকৃ ৎ হয়ে আছেন। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখা ‘কিতাব আল মুরাজ আল ধাহাব ’, যার ইংরেজি অনুবাদ ‘গোল্ডেন
মিডোজ’ই একমাত্র অক্ষত অবস্থায় বর্ত মানকাল পর্যন্ত টিকে আছে। দুর্ভাগ্যক্রমে এ বইটি ছাড়া আল মাসুদির অধিকাংশ
লেখাই হারিয়ে গেছে। উনিশ বছর বয়সে আল মাসুদি যে ভ্রমণ শুরু করেন , তা শেষ করেন তার মৃত্যুর মাত্র কয়েক বছর
আগে। নিজের শেষ গন্তব্য মিসরেই তিনি জীবনের শেষভাগ কাটান। সম্ভবত ৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে মিসরের কায়রোতে শেষ নিঃশ্বাস
ত্যাগ করেন এ গুণী পণ্ডিত।
তথ্যসূত্রঃ
Roar media
historyofislam.com
দৈনিক যুগান্তর
Wikipedia

You might also like