You are on page 1of 1

২য় পর্ব অপটিকসের জনক ইবনে আল হাইসাম

বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার প্রতিটি বিভাগেই জনকের আসন অলংকৃ ত করেছেন মুসলিম বিজ্ঞানীরা যাঁদের রেখে যাওয়া
আবিষ্কার কিংবা পাণ্ডুলিপি অনুসরণ করে বিশ্ব এগিয়ে চলেছে বিদ্যুতের গতিতে। কিন্তু ইতিহাসচর্চা না থাকার কারণে আমরা
নিজেদের অকর্মা জাতি ভাবতে শুরু করেছি। সেই মহান মনীষীর একজন হলেন মুসলিম বিজ্ঞানী আল-হাজেন। পুরো নাম
আল-হাসান ইবন আল-হায়সাম। তিনি পশ্চিমা বিশ্বে আল-হাজেন নামেই পরিচিত।
দৃষ্টিবিজ্ঞান (অপটিকস), আলোকবিজ্ঞান ও আলো সম্পর্কে তিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত আবিষ্কার করে গেছেন। তিনি
ইসলামী সভ্যতার সোনালি যুগে ইরাকের বসরায় আনুমানিক ৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা,
চিকিৎসাশাস্ত্র, গণিত প্রভৃ তি বিষয়ে তিনি শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেন। চক্ষু বিজ্ঞান বিষয়ক মৌলিক গ্রন্থ ‘কিতাবুল মানাযির’
তাকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। মধ্যযুগে আলোক বিজ্ঞানের এটি একমাত্র গ্রন্থ। তিনি দৃষ্টি শক্তির প্রতিসরণ ও প্রতিফলন
বিষয়ে গ্রিকদের ভু ল ধারণা খন্ডন করেন। তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, বাহ্যপদার্থ থেকেই আমাদের চোখে আলোকরশ্মি
প্রতিফলিত হয়। চোখ থেকে বের হওয়া আলো বাহ্যপদার্থকে দৃষ্টিগোচর করায় না।তিনিই ম্যাগনিফাইং গ্লাস আবিষ্কার করেন ।
আধুনিক কালের বিজ্ঞানীরা গতি বিজ্ঞানকে তাদের আবিষ্কার বলে দাবি করলেও ইবনে হাসাম এ বিষয়ে হু পূবেই বিস্তারিত বর্ণনা
করেছিলেন যে বায়ুমণ্ডলের ওজন , চাপ এবং তাপের কারণে জড়পদার্থের ওজনেও তারতম্য ঘটে । মাধ্যাকর্ষণ বিষয়ে তিনি
তাঁর গ্রন্থসমূহে বর্ণনা করেছেন । নিউটনকে মাধ্যাকর্ষণ সম্পর্কি ত শক্তির আবিজারক মনে করা হলেও ইবনে হায়সাম এ বিষয়ে
প্রথম ধারণা দিয়েছিলেন বলে মনে করা হয।
বিজ্ঞান, বিশেষত জ্যোতির্বিদ্যায় প্রবল আগ্রহী ফাতেমীয় খলিফা আল-হাকিমের আমলে তিনি কায়রো আসেন এবং নীল
নদের বন্যানিয়ন্ত্রণপদ্ধতির উন্নতির উদ্দেশ্যে খলিফার কাছে একটি হাইড্রোলিক প্রজেক্টের প্রস্তাব তু লে ধরেন। এতে বর্ত মান
আসওয়ান ড্যামের স্থানে একটি ড্যাম নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে দেখা গেল,
পরিকল্পনাটি প্রযুক্তিগতভাবে বাস্তবায়ন সম্ভবপর নয়। এরপর কায়রোর বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই বাকি
জীবন অবস্থান করেন। এ সময় তিনি তাঁর বিখ্যাত পুস্তক বুক অব অপটিকস এবং জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যামিতি, সংখ্যাপদ্ধতি,
আলোকবিজ্ঞান ও প্রকৃ তির দর্শন সম্পর্কে বিভিন্ন গবেষণামূলক পুস্তক রচনা করেন।আধুনিক ক্যামেরার কার্যপ্রণালী তিনি তার
আবিষ্কৃ ত ‘’ক্যামেরা অবসিকউরা’’ এর মাধ্যমে উদ্ভাবন করে দেখিয়েছেন। তিনি মধ্যযুগে ইউরোপে দ্বিতীয় টলেমি নামে
পরিচিত ছিলেন । ছিল। গবেষক রোজার বেকন, নিউলার্ডো, কেপলার প্রমুখ এ গ্রন্থের উপর নির্ভ র করেই তাদের গবেষণা
করেন এবং তার উদ্ভাবিত ধারণাগুলো পরবর্তি তে ইউরোপের রেনেসাকে প্রভাবিত করেছে। তিনি বিজ্ঞানের জগতে ‘’ ather
of optics and describer of vision theory’’ হিসেবে আখ্যায়িত। এই মহান বিজ্ঞানী ১০৪০ সালে মিসরের কায়রোতে
মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের উচিত তাদের আবিস্কার, উদ্ভাবনের ইতিহাস খুঁজে নিজেদেরকে তাদের মতই পরিচালিত করে
জগতকে আলোকিত করা।

You might also like