You are on page 1of 3

বাস্তব চিত্র

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ইসলামিক রাজনৈতিক দল হলো ১০টি৷ এগুলো হলো
– বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে
ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফতে
মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও খেলাফত মজলিস৷
জামায়াতে ইসলামির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে আদালতের নির্দে শে৷ কিন্তু এর বাইরে আরো
শতাধিক ইসলামি রাজনৈতিক দল আছে৷ শুধু ইসলাম নয় অন্যান্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈকি দলও
আছে বাংলাদেশে৷ যেমন, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু জোট৷ ৫০টি হিন্দু রাজনৈতিক দল ও
সংগঠনের সমন্বয়ে আছে বাংলাদেশ জনতা পার্টি বা বিজেপি৷ এর বাইরে বাংলাদেশের প্রধান
দু'টি রাজনৈতিাক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার (অপব্যবহার)
করে বলে অভিযোগ আছে৷ বিএনপি'র নির্বাচনের আগে প্রচারণায় থাকে ইসলাম রক্ষায় নামে
ভোট চাওয়া৷ তারা প্রচারণা চালায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশে ইসলাম থাকবে না৷
বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ভোটের রাজনীতিকে টার্গেট করেই সংবিধানে
‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' সংযোজন করেন৷ এরপর সামরিক শাসক হুসেইন মোহাম্মদ
এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করেন ভোটের রাজনীতিকেই টার্গেট করে৷
এদিকে ভোটের আগে আওয়ামী লীগের বহুল ব্যবহৃত স্লোগান হলো, ‘‘লা ই লাহা ইল্লাহ,
নৌকার মালিক তুই আল্লাহ৷'' দলটি প্রচারণা চালায়, তারা নির্বাচিত হতে না পারলে সংখ্যালঘু রা
দেশে থাকতে পারবে না৷'' আর প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা নির্বাচনের আগে হজ
বা ওমরাহ করেন, যান মাজারে৷
বাংলাদেশের প্রধান দু'টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ইসলামিক গ্রুপ আছে৷
আওয়ামী ওলামা লীগ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন আর জাতীয়তাবাদী ওলামা দল
বিএনপি'র সহযোগি সংগঠন৷

সংখ্যালঘু নির্যাতন
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবু ল বারাকাত তাঁর ‘পলিটিক্যাল
ইকোনমি অব আনপিপলিং অফ ইন্ডিজিনাস পিপলস: দ্য কেইস অফ বাংলাদেশ' শিরোনামে
একটি গবেষণা গ্রন্থে বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশে সরকার ২২টি ক্ষুদ্র নৃ -গোষ্ঠীকে স্বীকার করে না৷
২৭টি ক্ষুদ্র নৃ -গোষ্ঠীকে স্বীকার করা হলেও বাস্তবে দেশের ৪৮ জেলায় ৪৯ টি ক্ষুদ্র নৃ -গোষ্ঠী'র
বসবাস৷ তাদের মোট জনসংখ্যা ৫০ লাখ, যদিও সরকারি হিসেবে ২৫ লাখ৷'' তিনি তাঁর
গবেষণায় দেখিয়েছেন, গত ৬৪ বছরে সমতলের ১০টি ক্ষুদ্র নৃ -গোষ্ঠীর দুই লাখ দুই হাজার
১৬৪ একর জমি কেড়ে নেয়া হয়েছে৷ যার দাম প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা৷ আর গত ২ জু ন
পার্বত্য চট্টগ্রামের লংগদু উপজেলা সদরসহ তিনটিলা, বাইট্টাপাড়া, মানিকজোড় ছড়া গ্রামের
প্রায় তিন শতাধিক পাহাড়ির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়৷ যু ক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক
আন্তর্জ াতিক কমিশন-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘২০১৬ সালে বাংলাদেশে ধর্মীয়
সংখ্যালঘু , ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারদের ওপর বেশি হামলা হয়েছে৷'' সংস্থাটি বলছে, ‘‘ভূমি দখলের
ক্ষেত্রে হিন্দু , বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা আক্রমনের শিকার হন৷ ২০১৪ সালের জাতীয়
নির্বাচনের পর বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু রা বার বার আক্রমনের শিকার হয়েছেন৷'' গত
বছরের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হামলা চালিয়ে ১৫ টি মন্দির
ও ২০০ ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়৷ হিন্দু -বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক
অ্যাডভোকট রানা দাসগুপ্ত'র মতে, ‘‘২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে সংখ্যালঘু দের ওপর
হামলা পাঁচগুণ বেড়েছে৷ তবে চলতি বছরের শুরু থেকেই তা আবার কমে আসছে৷'' হিন্দু -
বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ জানায়, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালের প্রথম তিন মাসেই প্রায়
তিনগুণ সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে৷ জানু য়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ এই তিন মাসে ৮২৫০টি
নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে৷ এর মধ্যে হত্যা, আহত, অপহরণ, জোরপূ র্বক ধর্মান্তরিত, গণধর্ষণ,
জমিজমা, ঘরবাড়ি, মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লু টপাট, অগ্নিসংযোগ ও
উচ্ছেদের ঘটনা রয়েছে৷ তারা জানান, ২০১৫ সালের বাংলাদেশে ২৬১টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের
ঘটনা ঘটে৷ আর ১৫৬২টি প্রতিষ্ঠান, পরিবার ও ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ কিন্তু ২০১৬ সালের ১
জানু য়ারি থেকে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে সংখ্যালঘু দের ওপর কমপক্ষে ৭৩২টি
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, যা আগের বছরের ঘটনার প্রায় তিনগুণ৷ এতে ক্ষতিগ্রস্ত
ব্যক্তি, পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯৫৬৬, যা আগের এক বছরের তুলনায় ছয়গুণেরও বেশি৷
এ সময়ে ১০ জন নিহত, ৩৬৬ জন আহত এবং ১০ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন৷
জোরপূ র্বক ধর্মান্তরের অভিযোগ রয়েছে দু’টি৷ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন আটজন৷ জমিজমা,
ঘরবাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, দখল ও লু টপাটের ঘটনা ঘটেছে ৬৫৫টি৷ ২২টি
পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি দেয়া হয়ে৷ ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশের বরিশাল,
বাগেরহাট, পাবনা ও নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে৷
এরপর থেকে একযোগে বিভিন্ন সংখ্যালঘু নির্যাতন কমে এলেও তা থামেনি৷ ২০১২ সালের
অক্টোবরে কক্সবাজারের রামু তে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর বড় ধরনের হামলা হয়৷ আর গত
বছরের ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসির নগরে হিন্দু দের শতাধিক বাড়ি ঘরে হামলা-ভাঙচুর
এবং লু টপাট করা হয়৷ অন্তত ১৫টি মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়৷ হিন্দু পল্লিতে নারী-
পু রুষকে বেধড়ক পেটানো হয়৷
বাংলাদেশ হিন্দু -বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাসগুপ্ত
ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার মূ লনীতি
হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হয়৷ ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা অর্জ নের বিধান
ফিরে আসে সংবিধানে৷ কিন্তু সংবিধানের প্রস্তাবনার আগে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' থেকে
যায়৷ থেকে যায় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম৷ ফলে সংবিধানের মধ্যেই ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে এখন সাংঘর্ষিক
অবস্থা বিরাজমান৷ একটি ধর্মের প্রাধান্য স্পষ্ট৷ ফলে ধর্মনিরপেক্ষতা একটা বু লি মাত্র৷ এ প্রভাব
বাস্তব জীবনেও আছে৷ যার ফলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সহ সংখ্যালঘু রা নির্যাতনের শিকার হয়৷
তাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের কোনো বিচার পাওয়া যায় না৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘৭২-এর সংবিধানে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক বা ধর্মীয়
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ছিল৷ কিন্তু ৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মু জিবু র
রহমানকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন৷ তিনি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সু যোগ করে দেন৷ পঞ্চদশ সংশোধনীর পর সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা
ফিরিয়ে আনা হলেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়নি৷ ফলে ধর্মীয় গ্রুপগুলো এর সু যোগ
নিচ্ছে৷ এবং অপব্যবহার করছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রাজনীতিবিদদের মধ্যে
‘হিপোক্রেসি’ আছে৷ তারা সু বিধামতো শব্দ ব্যবহার করেন৷ কখনো বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ, আবার
কখনো বলেন মু সলিম রাষ্ট্র৷ এতে সংখ্যালঘু দের ওপর চাপ সৃ ষ্টি হয়৷ সু যোগসন্ধানীরা চাপ সৃ ষ্টি
করে সু বিধা নেয়৷'' আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ডয়চে ভেলেকে বলেন,
‘‘সংবিধান তো আমাদের আদিবাসী হিসেবেই স্বীকৃতি দেয় না৷ আর আমরা আদিবাসী হিসেবে
নানা ধর্মের অনু সারী৷ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম৷ কিন্তু আমাদের ধর্মের কথা তো সংবিধানে নাই৷ আর
সংবিধানের ৬ অনু চ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালি এবং
নাগরিকগণ বাংলাদেশি বলিয়া পরিচিত হবেন৷ তাহলে বাংলাদেশে বসবাসরত অন্য জাতিসত্তার
মানু ষের পরিচয় কী হবে?'' তিনি বলেন, ‘‘সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা সঠিকভাবে থাকলে আমরা
চাপে থাকতাম না৷ আমাদের ওপর হামলা নির্যাতন নেমে আসত না৷'' রানা দাসগুপ্ত বলেন,
‘‘সংবিধানে প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতা যতদিন স্বচ্ছভাবে না থাকবে, ততদিন এটা বাস্তবেও
পাওয়া যাবে না৷ এখন ধর্মনিরপেক্ষতা আছে, কিন্তু দেখা যায় না৷ এখন উপরে বিসমিল্লাহ, নীচে
রাষ্ট্রধর্ম আর মাঝখানে সেক্যুলারিজম৷''

You might also like