You are on page 1of 4

ডা. মুরাদ কানাডায় ঢু কতে না পারা বাংলাদেশের অন্যদের জন্য বিশেষ সতর্ক বার্তা!

ড. মঞ্জুরে খোদা

সবকিছুই ঘটছিল খুব দ্রুততার সাথে। প্রতিমন্ত্রী ডা: মুরাদের নারীর প্রতি অত্যন্ত আপত্তিকর ও অবমানকর বক্তব্য,
ফোনালাপ ফাঁসসহ নানা ঘটনায় ফু সে ওঠে সামাজিক মাধ্যম। সরকারী দলও বিলম্ব না করে- এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত
নিয়ে নেয়। মুরাদকে ২৪ ঘন্টার নোটিশে মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এ ঘটনার পরপরই আওয়ামী লীগ
সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায় থেকেও তাকে অপসারণ করা হয়, অব্যাহতি দেয়া হয়।

যতটু কু জেনেছি, নারীর প্রতি অসম্মানমুলক কথাবার্তার বিষয়টি যখন প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত হয়েছেন, তখন
তিনি তাকে পদত্যাগের নির্দে শ দিয়েছেন। সেটাই যদি হয় তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, চারিত্রিক ও
নৈতিক স্খলনের দায়েই তাকে মন্ত্রিসভা থেকে চলে যেতে হয়েছে। প্রশ্ন হলো- নৈতিক স্খলনের কারণে যদি
মন্ত্রিসভা থেকে তাকে পদত্যাগ করতে হয় তাহলে তার সংসদ সাংসদপদ থাকে কি করে? সংবিধানের
৬৬ অনুচ্ছেদের ঘ-এ বলা আছে, কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি
নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দণ্ডিত হন।‘ ডা. মুরাদ আদালতে দন্ডিত না হলেও তার বিরুদ্ধে
অভিযোগ তো নৈতিক স্খলনজনিত তাই না? প্রধানমন্ত্রীর নির্দে শে তার মন্ত্রীত্ব যাওয়া তো দন্ডেরই
নামান্তর। সেটা কি অস্বীকার করার উপায় আছে? তাহলে কিভাবে তার সংসদ সদস্যপদ থাকে? তথ্যমন্ত্রী
কিভাবে বলেন, অশালীন মন্তব্য করার ঘটনায় তার মন্ত্রীত্ব গেলেও সংসদ সদস্যপদ থাকবে! তিনি মন্ত্রী
হয়েছেন সংসদ সদস্য বলেই। তিনি তো এমন কেউ নয় যে, টেকনোক্রাট মিনিস্টার হবেন!

সে যাইহোক, সবচেয়ে অবাক বিষয় এ ঘটনার পর তিনি দ্রুততার সাথে দেশত্যাগের ঘোষণা দেন এবং কানাডায়
আসার এমিরাটস এয়ারলাইন্সের টিকিট করে ফেলেন। পত্রিকায় এ সংবাদ আসার পর কানাডা প্রবাসী
বাংলাদেশীরা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষু ব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাদের ক্ষু ব্ধ প্রতিক্রিয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে,
কানাডাকে ঘিরে বাংলাদেশে যে তীব্র নেতিবাচক প্রচার আছে তার অপবাদ ঘুচানো। কারণ বাংলাদেশের অধিকাংশ
মানুষ মনে করে কানাডা হচ্ছে বাংলাদেশের অভিযুক্ত বিত্তবান ও ক্ষমতাবানদের অভয়ারণ্য ও নিরাপদ আশ্রয়।

এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসীরা স্বতস্ফু র্ত ভাবে সামাজিক মাধ্যমে যে যার মত করে কানাডায় ডা. মুরাদকে বর্জ ন ও
অবাঞ্চিতের ঘোষণা দেয়। এবং কানাডা বর্ডার সার্ভি স এজেন্সি বরাবর- তথ্যপ্রমানসহ শতশত ইমেইলের মাধ্যমে
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রদান করেন। তাকে কানাডায় প্রবেশ করতে অনুমতি না দেয়ার অনুরোধ করেন। এ
প্রেক্ষাপটে ডা. মুরাদ টরন্টোর পিয়ারসনস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছালে এ সব অভিযোগের ভিত্তিতে
সিবিএস কর্মকর্তারা তাকে দীর্ঘসময় জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অনেক প্রশ্নের সন্তষজনক উত্তর দিতে না পারার সিবিএস
তাকে কানাডায় প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে দুবাইয়ের আরেকটি ফ্লাইটে ফেরত পাঠিয়ে দেন।

বর্ডার এজেন্সি বেশ কয়েকটা কারণে কোন আগন্তককে বর্ডার থেকে ফিরিয়ে দিতে পারেন। যেমন কানাডার জাতীয়
নিরাপত্তা, মানবাধিকার বা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লংঘন, সেখানে নারীর প্রতি অসদাচরণ-যৌনহয়রানি,
বর্ণবিদ্বেষসহ নানা বিষয় আছে। কানাডার নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরী করাসহ আরো অনেক বিষয় এর
অন্তর্ভূ ক্ত।

ডা. মুরাদকে কানাডায় ঢু কতে না দেয়ার কারণ হিসেবে কেউকেউ বলছেন যে, ৭২ ঘন্টার কোভিড ভ্যাকসিন সনদ
না নেয়ার কারণে তাকে কানাডায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এই বক্তব্য আসলে গ্রহনযোগ্য নয়, কারন এখন
কোভিড ভ্যাকসিনের কাগজপত্র ছাড়া আন্তর্জাতিক ভ্রমন কোনভাবেই সম্ভব নয়। তারপরো সেটা বাংলাদেশ
এয়ারপোর্টে ক্ষমতা দেখিয়ে কোনভাবে ম্যানেজ করা গেলেও দুবাই এয়ারপোর্টে সেটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আর
দুবাইতে সেটা সম্ভব না হলে- তিনি কোনভাবেই সেখান থেকে কানাডা এয়ারপোর্টে আসতে পারতেন না।

অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়াও কোন ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা কানাডা বর্ডার এজেন্সির জন্য নতু ন কিছু নয়।
আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও শৃংখলা রক্ষা কানাডা সীমান্ত সংস্থার একটি পেশগত দায়িত্ব। কারো বিরুদ্ধে যদি কোন
সুনির্দি ষ্ট তথ্যপ্রমানসহ অভিযোগ প্রদান করা হয় সেটা খতিয়ে দেখা এবং সে হিসেবে ব্যবস্থা নেয়া তাদের দায়িত্ব।
এক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে ভু ক্তভোগী ব্যক্তি চ্যালেঞ্জও করতে পারেন, আদালতে যেতে পারেন।
তিনি যদি প্রমান করতে পারেন যে তার বিরুদ্ধে আনীতি অভিযোগ-বক্তব্য সঠিক নয়- সেক্ষেত্রে তিনি কানাডায়
প্রবেশের অনুমতি পাবেন। এমন ঘটনাও এদেশে অনেক আছে।

ডা. মুরাদকে কানাডা তাকে প্রবেশের অনুমতি না দেয়াটা প্রায় সবার জন্যই ছিল অভাবনীয় ও বিষ্ময়ের। কিন্তু
ততোধিক বিষ্ময়ের হবার কথা ছিল, এতবড় একটা ঘটনার পর, মন্ত্রীত্ব হারানো একজন ব্যক্তি- কিভাবে বিনাবাধায়
বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট ক্রস করে থেকে চলে আসতে পারলেন- সেটা! তা নিয়ে কোন কথা নেই! সবাই মেনে
নিয়েছেন আমাদের দেশে এটাই স্বাভাবিক।
স্থানীয় প্রভাবশালী সাংবাদিকের মাধ্যমে জেনেছি, সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃ তি দিয়ে তারা বলেছেন, তার বিরুদ্ধে ১৭১টি
অভিযোগ পড়েছে। এবং বর্ডার কর্তৃ পক্ষ তাদের বলেছেন বিগত এক দশকে নাকি তারা কারো বিরুদ্ধে এত ব্যাপক
অভিযোগ পাননি। অভিন্নসূত্র থেকে জেনেছি, কানাডা বর্ডার সার্ভি স শুধু তাকে সেখান থেকে দুবাই ফেরতই
পাঠাননি, তারা সেখানেও নাকি এ বিষয়ে নোট পাঠিয়েছেন। যে কারণে তিনি সেখানে প্রবেশের অনুমতি পাননি।

কানাডায় বাংলাদেশের প্রবাসী নাগরিকরা যেভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন তাতে এমন একটি সংবাদের
অপেক্ষায় ছিলাম। প্রবাসী নাগরিকরা দেশের প্রতি ভালবাসা থেকে এই দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সাথে
কানাডা বিএনপি’র পক্ষ দায়িত্বশীল নেতৃ ত্বের সাক্ষর করা চিঠি বর্ডারে পাঠিয়েছিলেন বলে জেনেছি। অনেকে সন্দেহ
করে বলেছিলেন যে, এ সব অভিযোগ, বাদ-প্রতিবাদে কোন কাজ হবে কিনা? কারণ তিনি একজন সরকারের
প্রভাবশীল ব্যক্তি এখনো এমপি, তাই কাজ নাও হতে পারে। যে জন্য এ সংবাদ ছিল তাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা।
কিন্তু মূল কথা হচ্ছে, যথাসময়ে যথাযথভাবে যথাস্থানে তথ্যপ্রমানসহ প্রতিবাদ রাখলে তাতে কাজ হয়, এটাই তার
প্রমান। বাংলাদেশের সেটা অনেকাংশে সত্য না হলে কানাডার ক্ষেত্রে এ কথা বলা যায়।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যারা অপকর্ম করে কানাডাকে নিজেদের নিরাপদ আশ্রয় ও শান্তির দেশ মনে করবেন,
তাদের জন্য এটা একটা বিশেষ সতর্ক বার্তা। সুতরাং সে ভাবনায় যারা বাংলাদেশে দূর্ণীতি ও অপকর্ম করেছেন
তারা ভু ল করছেন। এখন থেকে বর্ডারগুলোতে অর্থপাচারকারী, খুনী, ধর্ষক, সন্ত্রাসী, অভিযুক্ত, বিতর্কি ত,
দূর্ণীতিবাজদের প্রকাশিত সংবাদ-তথ্য সরবরাহ করবে প্রবাসীরা। কানাডায় গড়ে ওঠা লুটেরা বিরোধী সামাজিক
আন্দোলন তাদের সে মতলবকে কঠিন করে দিয়েছে। কানাডায় আর তাদের জীবন সুখের ও স্বস্তির হবে না।

ডা. মুরাদকে কানাডায় কেন ঢু কতে দিল না’ তা জানতে নিশ্চিত হতে অনেক যোগাযোগ করেছেন।
সংবাদপত্রগুলোও সুনির্দি ষ্ট সংবাদ পাচ্ছিলেন না। কারণ কানাডা বর্ডার এজেন্সি এ বিষয়ে কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য
প্রদান করেননি। তারা সাংবাদিকদের কিছু তথ্য দিলেও- নিজেদের সূত্রদিতে অসম্মতি জানিয়েছেন। সেটাই ছিল এই
বিভ্রান্তির কারণ। এখনো তা বিদ্যমান। আসলে এ সংবাদটি ছিল বাংলাদেশের জন্য ভাবনীয় বিষয়। আমরা বঞ্চিত
হতে হতে আমাদের আকাঙ্খাকে ক্ষু দ্র করে ফেলেছি। সে জন্যই এ অবিশ্বাস ও বিভ্রান্তি তৈরী হয়েছে।

স্বতস্ফু র্ত ভাবে এই সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে লুটেরা বিরোধী মঞ্চ, কানাডা প্রধান ভূ মিকা পালন
করে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের বক্তব্য একটাই কানাডা কোনভাবেই বাংলাদেশের অভিযুক্ত অপরাধীদের অভায়ারণ্য
ও নিরাপদ আশ্রয় হতে পারে না। অপরাধী যেই হোক, যত ক্ষমতাবানই হোক সে বা তারা যদি বাংলাদেশের জনস্বার্থ
বিরোধী কোন কর্মকান্ডকে করে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সামাজিক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে, জোড়ালো হবে।
ডা. মুরাদকে নিয়ে আমাদের বক্তব্য ছিল বিগত আন্দোলনের ধারাবাহিকতা। যদিও তার বিরুদ্ধে কোন অর্থপাচারের
অভিযোগ আসেনি। কিন্তু কানাডার বিরুদ্ধে সেই যে অপবাদ-, কানাডা হচ্ছে অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়, সেই
অপবাদ ঘুচাতেই প্রবাসীদের এই প্রতিবাদ।

এখানে শুধু আমরা একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তু লছি না কানাডা সরকাররের আর্থিক ব্যবস্থার যদি কোন
আইনী দূর্বলতা থাকে- তাকে সংশোধনের কথাও বলছি। এখনকার মূলধারার রাজনীতিতে একে রাজনৈতিক
ইস্যুতে পরিণত করার প্রচেষ্টাও চলছে। এই আন্দোলনের ঘনিষ্টজন ও সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর তিনি তার
একাধিক লাইভ প্রগ্রামে এখানকার রাজনীতিকদের তার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানিয়ে সে প্রশ্ন করেছেন। তারাও
নীতিগতভাবে এ দূর্বলতার কথা স্বীকার করেছেন। প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্য বাংলাদেশী বংশদ্ভু দ তরুণ
রাজনীতিক- ডলি বেগম বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে কথা বলবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ আন্দোলন
কোন দল-ব্যক্তি-গোষ্ঠী-পরিবারের বিরুদ্ধে নয়, এটা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের পক্ষের একটি আন্দোলন এবং এ
আন্দোলনের সাথে দল-মত নির্বিশেষে কানাডা প্রবাসী প্রায় সকল ভালবোন সম্পৃক্ত আছেন, সমর্থন করছেন।

-----------------------------------------------------------------

ড. মঞ্জুরে খোদা, লেখক-গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক

You might also like