Professional Documents
Culture Documents
Fire
Fire
By
অরোরা - আগস্ট 3, 2013
শিরোনামটা দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কোথাও আগুন লাগেনি। আমাদের আশেপাশে বিভিন্ন সময় ঘরবাড়ি বা কোন
প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগার কারণে আমাদের মাঝে অগ্নি ভীতি ঢুকে গিয়েছে। তবে এই আগুন আমাদের পূর্বপুরুষেরা আবিষ্কার
করেছে বলেই আজ আমরা এই বিলাসিতাপূর্ণ আধুনিক যুগে বসবাস করতে পারছি, একথা নিঃসন্দেহে সবাই স্বীকার করবেন।
কিন্তু এই আগুন সম্পর্কে আমাদের ধারণা কতটুকু আছে? দেখি বলুন তো,
আগুন কি?
আগুন
থাক, আপনাদেরকে আর বেশি চিন্তা করতে না বলে আমি নিজেই এ সম্পর্কে কিছু প্যাঁচাল পাড়ার চেষ্টা করি।
প্রাচীন গ্রীক অ্যালকেমিস্টরা আগুনকে একটি মৌল পদার্থ ভাবতো। তারা মাটি, বায়ু, পানিকেও মৌল উপাদান হিসেবে
বিবেচনা করতো। কিন্তু মৌল পদার্থের আধুনিক সংজ্ঞা থেকে আমরা জানি, এগুলোর কোনোটিই মৌল নয়, বরং এরা বিভিন্ন
মৌলের সমন্বয়ে গঠিত।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, আগুন হলো উত্তপ্ত গ্যাসের মিশ্রণ। এটি সৃষ্টি হয় রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে, যা প্রধানত বাতাসের মধ্যকার
অক্সিজেন এবং বিভিন্ন ধরণের জ্বালানীর মধ্যে সংঘটিত হয়। এসব বিক্রিয়ার উৎপাদ হিসেবে কার্বন ডাই অক্সাইড, বাষ্প,
আলো, তাপ প্রভৃতি উৎপন্ন হয়।
যখন তাপ বাড়তে থাকে, তখন জ্বালানীতে উপস্থিত কার্বন অথবা অন্যান্য মৌলের পরমাণুসমূহ আলো বিকিরণ করে। এই “তাপ
দ্বারা আলো উৎপাদন প্রক্রিয়া”-কে incandescence বা তাপোজ্জ্বলতা বলা হয় এবং এই প্রক্রিয়াতেই একটি লাইট বাল্বে
আলোর সৃষ্টি হয়। এ কারণেই জ্বালানীর বিক্রিয়ার ফলে অগ্নিশিখা দৃশ্যমান হয়।
যদি অগ্নিশিখা যথেষ্ট উত্তপ্ত হয়, তবে গ্যাসীয় পরমাণুগুলো আয়নাইজড হয়ে পড়ে এবং তা পদার্থের অন্য একটি অবস্থায় চলে
যায়। যা প্লাজমা নামে পরিচিত।
অগ্নিশিখার রঙের তারতম্য নির্ভর করে কি দহন করা হচ্ছে এবং তা কেমন উত্তপ্ত হয়েছে তার উপর। রঙের তারতম্য প্রধানত
অসম তাপমাত্রার কারণে হয়ে থাকে। সাধারণত আগুনের সবচেয়ে উত্তপ্ত অংশ এর বেইস, যা নীল রঙের আলো বিকিরণ করে।
সবচেয়ে শীতল অংশ হলো অগ্নিশিখার শীর্ষ যা লালচে-কমলা বা হলদে-কমলা হয়ে থাকে।
ছোটবেলায় আমরা অনেকেই প্রায়ই আগুন নিয়ে খেলা করতাম। মানে, অগ্নিশিখার উপরে আঙ্গুল নাড়ানো দেখিয়ে অনেককেই
অবাক করার চেষ্টা করতাম। আসলে আমরা আগুনের এই লালচে-কমলা শিখার উপর দিয়ে আঙ্গুল নাড়াতাম। কিন্তু তেমন
একটা উত্তাপ অনুভূত হতনা। তবে অগ্নিশিখার নীলাভ অংশে আঙ্গুল ভুলক্রমেও চলে গেলে উত্তাপ বেশি লাগত।
আগুনের এই শিখার আকার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নিয়ন্ত্রণ করে অনেকাংশেই। এর মধ্যবর্তী উত্তপ্ত গ্যাসসমূহের ঘনত্ব তাকে ঘিরে
থাকা বায়ুর চেয়ে অনেক কম। কিন্তু এদের তাপমাত্রা পারিপার্শ্বিক বায়ুর তুলনায় অনেক বেশী। তাই গ্যাসগুলো অধিক ঘনত্বের
এলাকা থেকে কম ঘনত্বের এলাকার দিকে যেতে থাকে। মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণেই এমনটি ঘটে থাকে।
তাই অগ্নিশিখা সাধারণত ঊর্ধ্বাভিমুখী ছড়ায়, এ কারণেই দেখবেন, এর মাথা সবসময় সূঁচালো হয়।
আমরা যদি শূন্য অভিকর্ষ পরিবেশে, যেমন মহাকাশে স্পেস শাটলে আগুন জ্বালাই, তাহলে অগ্নিশিখাটি গোলাক আকৃতি ধারণ
করবে!
গোলাকৃতি অগ্নিশিখা
যেমনটি দেখা যাচ্ছে নাসা কর্তৃক প্রকাশিত এই ছবিতে। নাসা কৃত্রিমভাবে মাধ্যাকর্ষণবিহীন পরিবেশ সৃষ্টি করায়, ছবিতে আমরা
গোলাকৃতির অগ্নিশিখা দেখতে পাচ্ছি!
আশা করি, আগুন নিয়ে খেলা করে হলেও এ সম্পর্কে আপনাদের খানিকটা ধারণা দিতে পেরেছি।
---------------------------------------------------------------------
[ লেখাটি বিজ্ঞান বাংলা প্রকাশিত গ্যালাক্টিকা ম্যাগাজিনের জানুয়ারি সংখ্যা,২০১২ তে প্রকাশিত। ]