Professional Documents
Culture Documents
(1916-1999)
(1916-1999)
শ্রীনিবাস (1916-1999) ছিলেন একজন ভারতীয় সমাজবিজ্ঞানী, সামাজিক নৃতত্ত্ববিদ ও অধ্যাপক। তিনি ভারতীয়
সমাজের ধর্ম, সামাজিক স্তরবিন্যাস, সামাজিক পরিবর্ত ন প্রভৃ তি মতো অনেক বিষয়ের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন। তাঁর
রচিত গ্রন্থগুলি হল : Social change in Modern India (1966), Religion and Society among Coorgs of
South India(1952), Caste in Modern India and Other Essays(1966), The Dominant Caste and
Other Essays (1987), India’s Villages (1955), India: Social Structure (1980)
"Social change in Modern India" গ্রন্থে শ্রীনিবাস সামাজিক পরিবর্ত নের ধারণাটি বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সামাজিক পরিবর্ত নের মূল অর্থ হল সামাজিক কাঠামোর পরিবর্ত ন। সামাজিক পরিবর্ত ন শব্দটি আচরণের ধরণ এবং
সাংস্কৃ তিক মূল্যবোধের কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্ত নকে বোঝায়। তাঁর সামাজিক পরিবর্ত নের ধারণাটি মূলত সামাজিক
গতিশীলতা (Social mobility) ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। ভারতীয় সমাজের সামাজিক গতিশীলতাগুলি লক্ষ্য করে
তিনি ব্রাহ্মণ্যকরণ, সংস্কৃ তিকরণ, পাশ্চাত্যকরণ মতো ধারণা গুলি প্রবর্ত ন করেন।
ব্রাহ্মণায়ন (Brahmanization)
শ্রীনিবাস "Religion and Society among the Coorgs of South India" বইয়ের ব্রাহ্মণায়ন ধারণাটি প্রথম উল্লেখ
করেন। তিনি নিম্নবর্ণের জীবন পদ্ধতি এবং আচার-অনুষ্ঠানগুলো ক্ষেত্র সমীক্ষার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করেছেন। ভারতীয়
বর্ণাশ্রম প্রথা অনুসারে ব্রাহ্মণদের সামাজিক মর্যাদা সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থান করতো। তাই অব্রাহ্মণেরা অর্থাৎ নিম্নবর্ণের
হিন্দুরা অনেকেই তাদের নিম্ন সামাজিক মর্যাদার অবস্থান বলে মনে করেন। নিম্নবর্ণের হিন্দুরা ব্রাহ্মণদের জীবন প্রণালী প্রতি
আকৃ ষ্ট হয় এবং তা অনুসরণের মাধ্যমে উচ্চ সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রচেষ্টা করে। এই প্রক্রিয়াকে ব্রাহ্মণায়ন
বলা হয়।
অধ্যাপক শ্রীনিবাস সংস্কৃ তায়নের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন যে, " এটি হলো এমন প্রক্রিয়া যার দ্বারা কোন নিম্ন জাতি
বা জনজাতি অথবা কোন অন্যগোষ্ঠী, কোন উচ্চজাতি বা দ্বিজদের (dwij) প্রথা, রীতিনীতি, কর্মকাণ্ড, মতাদর্শ এবং
জীবনপদ্ধতি অনুযায়ী পরিবর্ত ন করে।" এই ধরনের পরিবর্ত নের মধ্য দিয়ে নিম্ন জাতিগুলির মর্যাদায় অবস্থানগত
শ্রীনিবাস প্রথমে 'ব্রাহ্মণীকরণ' শব্দটি প্রয়োগ করে, কিন্তু পরে তিনি দেখেন শুধুমাত্র ব্রাহ্মণদের নয়, উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন
ক্ষত্রিয়, বৈশ্য মতো অব্রাহ্মণ; যারা দুবার জন্মগ্রহণ করে, নিচু জাতিগুলি অনুসরণ করে। তাই শ্রীনিবাস 'ব্রাহ্মণায়ন' শব্দের
জাতিব্যবস্থায় কেবল বিভিন্ন জাতিগুলিকে একে অপরের থেকে উচ্চ বা নিম্ন মনে করা হয় না বরং পেশা, খাদ্য, বস্ত্র,
অলংকার ইত্যাদির মাধ্যমেও ভেদাভেদ করা হয়। স্তরবিন্যাস ব্যবস্থায় সেই জাতি গুলিকে উঁচু মনে করা হয়, যারা
নিরামিষাশী, মদ্যপান করতো না এবং অপবিত্র বস্তুগুলি সঙ্গে সম্পর্কি ত নয়। সুতরাং নিজেদের মর্যাদাগত অবস্থান উন্নত
করতে ইচ্ছুক জাতি নিজের থেকে উচ্চ জাতির জীবনপদ্ধতি অনুকরণ করে। এক্ষেত্রে সংস্কৃ তায়নের একটি অন্যতম প্রধান
বিষয় হলো 'স্বীকৃ তি' ও 'বৈধমান্যতা'। নিম্ন জাতির সংস্কৃ তায়ন সেই অঞ্চলের উচ্চ জাতিদের দ্বারা মান্যতা পেতে হতো।
নিম্নজাতি উচ্চ জাতির জীবন অনুসরণ করলেও তাদের উচ্চজাতি হিসেবে গণনা করা হবে না, সমাজ দ্বারা স্বীকৃ ত না হলে।
● সংস্কৃ তায়ন হলো নিজের থেকে উচ্চ জাতি জীবন পদ্ধতি অনুকরণ করা। ফলে এটা হল অনুকরণ প্রবৃত্তি। তাদের
● নিম্নজাতিগুলি এবং কিছু জনজাতিগোষ্ঠী কেবল ব্রাহ্মণদেরই আদর্শ হিসেবে অনুসরণ করেনি, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং
● সংস্কৃ তায়ন প্রক্রিয়ায় সামাজিকীকরণের ধারণা যুক্ত থাকে। একে অনেকেই অগ্রিম সামাজিকরণ (anticipatory
socialization) বলে মনে করেন। অর্থাৎ কোন নিম্ন জাতিগোষ্ঠী এক বা দুই প্রজন্ম ধরে কোন উচ্চ জাতিকে
অনুকরণ করে বা সামাজিকীকরণ করে, যাতে ভবিষ্যতে সে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মতো উচ্চস্থান লাভ করতে পারে।
● সংস্কৃ তায়ন হল অবস্থানগত পরিবর্ত ন কোন কাঠামোগত পরিবর্ত ন নয়। এর তাৎপর্য হলো যে এই প্রক্রিয়া জাতি
কাঠামোর মধ্যে কোন পরিবর্ত ন হয় না। এই প্রক্রিয়ায় সামাজিক গতিশীলতাকে ব্যক্ত করে।
● সংস্কৃ তায়ন কেবল সামাজিক পরিবর্ত নের একটি প্রক্রিয়া নয়, সাংস্কৃ তিক পরিবর্ত নের একটি প্রক্রিয়া। এর
ফলস্বরূপ ভাষা, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান ও ধর্মীয় বিধান ইত্যাদি ক্ষেত্রেও পরিবর্ত ন সংঘটিত হয়।
পশ্চিমীকরন (Westernization)
ভারতীয় সমাজে 'সংস্কৃ তায়ন' ও 'পশ্চিমিকরন'-এর ধারণার মধ্যে দিয়ে ভারতীয় সমাজের পরিবর্ত ন প্রক্রিয়াকে অধ্যাপক
শ্রীনিবাস ব্যক্ত করেছেন। সংস্কৃ তায়ন যেখানে জাতিব্যবস্থার অন্তর্গত আকাঙ্ক্ষিত সামাজিক গতিশীলতাকে ব্যক্ত করে,
সেখানে পশ্চিমীকরনের ধারণা সেই পরিবর্ত নগুলি সঙ্গে পরিচিতি ঘটায় যা পশ্চিমে বিশেষত গ্রেট বৃটেনের সাংস্কৃ তিক
পশ্চিমীকরনের ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃ তিতে 150 বছরেরও অধিক সময় পরিবর্ত ন অন্তর্গত রয়েছে, যা ইংরেজ শাসনকালে
ঘটেছে। এই শব্দের বিভিন্ন স্তরগুলি হল- প্রযুক্তি, চিন্তাধারা, মূল্যবোধের পরিবর্ত ন। ভারতের পশ্চিমীকরনের ধারণার
অন্তর্গত হলো সকল সাংস্কৃ তিক পরিবর্ত ন এবং সংস্থাগত নবীনতা যা এই দেশের প্রধানত বৃটেনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃ তিক
পশ্চিমীকরণের ফলে ভারতের কিছু নতু ন সংস্থা যেমন- সমাচারপত্র, নির্বাচন, খ্রিস্টান মিশনারী ইত্যাদির প্রাধান্য শুরু হয়
এবং প্রাচীন সংস্থাগুলির মৌলিক পরিবর্ত ন শুরু হয়। ইংরেজরা ভারতে আসার আগে পরম্পরাগত পাঠশালা গুলিতে কেবল
উচ্চজাতির বালকেরা শিক্ষালাভ করতো। কিন্তু ইংরেজদের দ্বারা স্থাপিত স্কু লগুলির দ্বার সব জাতির লোকেদের জন্য খুলে
দেওয়া হল। পশ্চিমী শিক্ষা ফলে লোকেদের দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্ত ন আসে। ইংরেজি সাহিত্য, ইতিহাস ও
রাজনৈতিক সংস্থাগুলির উত্থানের ফলে মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশ ঘটে। পশ্চিমীকরনের প্রক্রিয়া ভারতের মানবতাবাদী
দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে এবং তার্কি ক পদ্ধতিতে বিচার করতে লোকেদের প্রেরণা যোগায়। মানবতাবাদের সাথে মানুষের মনে
পশ্চিমীকরন, সংস্কৃ তায়নের প্রক্রিয়াকে আরো তীব্র করে। উদাহরণ হিসেবে ডাক ব্যবস্থা, রেল, বাস, সংবাদপত্র ইত্যাদি
ভারতে যেগুলি ছিল পশ্চিমি প্রভাবের ফলস্বরুপ, তা সংগঠিত ধর্মীয় ক্রিয়া-কলাপ, সভা-সমিতি, জাতীয় দৃঢ়তা ইত্যাদিকে
সমালোচনা
সামাজিক পরিবর্ত নে অধ্যাপক শ্রীনিবাস সংস্কৃ তায়ন এবং পশ্চিমিকরণ ধারণা মধ্যে জটিলতা ও বৈষম্যতা লক্ষ্য করা যায়।
শুধুমাত্র তাই নয়, ধারণাগুলি মধ্যে যথেষ্ট স্পষ্টতা ও যুক্তিসংগত এর অভাব রয়েছে।
অধ্যাপক শ্রীনিবাস সংস্কৃ তায়ন ধারণা সম্পর্কে কিছু পরস্পরবিরোধী কথা বলেছেন। তিনি কোথাও লিখেছেন 'কোন গোষ্ঠীর
আর্থিক উন্নয়ন ছাড়া সংস্কৃ তায়ন হতে পারে' আবার অন্য জায়গায় তিনি লিখেছেন 'আর্থিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক শক্তির
বিকাশ, শিক্ষা, নেতৃ ত্ব ও স্তর প্রণালীর উপরে ওঠার ইচ্ছা ইত্যাদি এর উপযুক্ত উপাদান।'
এছাড়াও সংস্কৃ তায়নে নিম্ন জাতি কোন পরিবার অথবা সমগ্র গোষ্ঠীর মর্যাদায় পরিবর্ত ন হয় কিনা বা সমগ্র নিচু গোষ্ঠী
স্তরবিন্যাসের উঁচু স্তরে অবস্থান করে তাহলে পূর্বে নিচু স্তরটি কি ভাবে পূরণ হয়? এই সকল বিষয়ক সঠিক তথ্য পাওয়া
যায়নি।
শ্রীনিবাসের মতে, পশ্চিমীকরন ধারণাটি আধুনিকীকরণের মত নিরপেক্ষ। কিন্তু ড. যোগেন্দ্র সিংহ বলেছেন যে, ভারতে
নতু ন অভিজাত শ্রেণীর এবং এশিয়ার নতু ন রাজ্যে পশ্চিমীকরনের একটি নিন্দাজনক ঘটনা। আধুনিকীকরণ ধারণাটি
উভয় ধারনাই সাংস্কৃ তিক পরিবর্ত ন বিশ্লেষিত রূপ; সামাজিক কাঠামোর পরিবর্ত নের ব্যাখ্যা করতে অক্ষম।