You are on page 1of 67

A critique of Harm Principle and How it became a weapon of colonialism

লিবারালিজমের একটি ভিত্তিমূল ধারণা হলো হার্ম প্রিন্সিপাল


''মানুষ স্বাধীন, তার যা ইচ্ছা করার অধিকার আছে যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা অন্যকারোর ক্ষতি না করছে।সে কারোর
ক্ষতি না করলে তাকে তাকে সমাজ,রাষ্ট্র,ধর্ম বা কোন প্রতিষ্ঠানের বাধা দেয়ার অধিকার নেই, শুধুমাত্র তখনই আছে
যখন তা কারোর ক্ষতি করবে।কোন কাজ অন্য কারোর ক্ষতি না করলে সেটা নৈতিকভাবে অনুমোদিত,শুধুমাত্র
তখনই খারাপ যখন তা কারোর ক্ষতি করবে।কোনকিছু বৈধ নাকি অবৈধ সেটা নির্ধারণ করা হবে তা অন্য কারোর
ক্ষতি করছে কিনা তার উপর ভিত্তি করে।'
মোটাদাগে এইরকমই একটি মানদণ্ড উঠে আসে প্রায় সবসময় লিবারালদের কথায়।বিষয় হচ্ছে লিবারালিজমের
ভাল- খারাপ, বৈধ- অবৈধ, স্বাধীনতা- পরাধীনতা নির্ধারণের জন্য এই মানদণ্ডকে পরম হিসেবে ভেবে নেয়া হয়।
প্রচু র মানুষ লিবারালিজমকে পরম,পারফেক্ট হিসেবে ভেবে নেয়,ভেবে থাকে লিবারালিজম মানেই উন্নত-ভাল-ন্যায়
আর যা লিবারালিজমের পরিপন্থী তাই খারাপ-অন্যায়-অবিচার-বর্বরতা। আসলে লিবারালিজমও পৃথিবীর
বাকিসব ''কিছু দার্শনিক থেকে উদ্ভূ ত মতাদর্শ'' এর মতই একটি মতাদর্শ, একটি সাধারন আইডিওলজি,এর মূল
ধারনায়ও ত্রুটি থাকা সম্ভব এবং থাকাটাই স্বাভাবিক, যা পৃথিবীর আর দশটা আইডিওলজির ক্ষেত্রে থেকে
থাকে,একে একেবারে ঐশ্বরিক পরম কোনকিছু ভাবার কারণ নেই।এইখানে আমি লিবারালিজমের একটি প্রধান
ভিত্তি -হার্ম প্রিন্সিপাল এর মূল জায়গা থেকে ক্রিটিসিজম করব।
Harm Principle:-হার্ম প্রিন্সিপালের মূল উৎপত্তি হয় লিবারালিজমের একজন প্রধান দার্শনিক জন স্টু য়ার্ট মিল
এর কাছ থেকে।তার বই On Liberty এর Introductory Chapter এ লিখেন,
'' That principle is, that the sole end for which mankind warranted, individually or
collectively, in interfering with the liberty of action of any of their number, is self-
protection.That the only purpose for which power can be rightfully exercised over any
member of a civilized community, against his will, is to prevent harm to others.''(On
Liberty, Chapter 1, Page 15)
''নীতিটি হল-একমাত্র কারণ যার জন্য কারোর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যেতে পারে,একক বা যৌথভাবে তা হল
আত্মরক্ষা।একমাত্র যে উদ্দেশ্যে কোন সভ্য সমাজের বাক্তির উপর তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্ষমতা প্রয়োগ করা যেতে
পারে/পরাধীন রাখা যেতে পারে/ জোর করা যেতে পারে তা হল অন্য কারোর ক্ষতি করা থেকে রক্ষা করা।''- মূল
কথা একটা ''সভ্য মানুষ'' ততক্ষন পর্যন্ত স্বাধীন যতক্ষণ সে অন্য কারোর ক্ষতি না করছে, ক্ষতি না করে যেকোনো
কাজ বৈধ, রাষ্ট্র-সমাজ কেউ তাকে বাধা দেয়ার অধিকার রাখে না,ক্ষতি না করে যেকোনো কিছু স্বাধীনভাবে করা
যেতে পারে,নৈতিকতার মানদণ্ড হবে হার্ম প্রিন্সিপাল, অন্য কারোর ক্ষতি না করে যেকোনো কিছু করা নৈতিকভাবে
অনুমোদিত, শুধুমাত্র অন্য কারোর ক্ষতি করলে সেটি অনৈতিক।
Criticism-
1. Excluding Self Harm and The Burden of Proof:-জন স্টু য়ার্ট মিল এবং লিবারালরা হার্ম
প্রিন্সিপালে নিজের উপর নিজে ক্ষতি করাকে ক্ষতি হিসেবে গণ্য করে না,নিজের উপর একজন মানুষ
সার্বভৌম। ''His own good, either physical or moral, is not a sufficient warrant. He
cannot rightfully be compelled to do or forbear because it will be better for him to
do so, because it will make him happier, because, in the opinions of others, to do
so would be wise, or even right. ''(On Liberty,Chapter 1,Page 15)- ''শারীরিক বা
নৈতিকভাবে তার নিজের ভালো ( স্বাধীনতা হরণ) করার কোনও যথেষ্ট কারণ নয়।এটি করা তার জন্য
ভাল হবে,এটি তাকে আরও সুখী করে তু লবে, অন্য কারোর মতে এটি করা প্রজ্ঞাপূর্ণ বা সঠিক এইসকল
কারনে তাকে বাধ্য করা অথবা বিরত রাখার অধিকার কারোর নেই।''(On Liberty,Chapter 1,Page
15) অর্থাৎ মিলের মতে কোন একা মানুষ যদি মদ্যপান করতে থাকে,নিজেকে মেরেও ফেলতে থাকতে
তারপরও কেউ তাকে বাধা দেয়ার অধিকার রাখে না!!মূলত ইনডিভিজুয়ালিজমেরই(Individualism)
রূপ এটি যা লিবারালিজমের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।সাধারণভাবেই ইনডিভিজুয়ালিজম পরার্থতার
ধারনাকে অবহেলা অথবা অবমূল্যায়ন করে। মানুষের কমন সেন্স থেকেই আসবে যে এই মানুষটাকে বাধা
দেয়া উচিত,নিজের সহানুভু তির বা করুনার জায়গা থেকেই মানুষ সহজাতভাবে বাধা দিতে চাবে।যখন
কোনকিছু মানুষের কমন সেন্স,সহজাত প্রবৃত্তির বিপরীত কোন অনুসিদ্ধান্ত দেয় তখন তাকে প্রমাণ করার
বার্ডে ন অফ প্রুফ বা প্রমাণের ভারটা চলে আসে,মানুষ এমনিতেই নিজের সহজাত অনুভু তিকে সরিয়ে
এমন ধারনা মেনে নিবে না যতক্ষণ পর্যন্ত প্রমাণ না করা হচ্ছে যে হার্ম প্রিন্সিপাল সঠিক। এইখানেই
সমস্যাটা, কেন ইনডিভিজুয়ালিজমকে পরম সত্য হিসেবে মেনে নিতে হবে? কেন একজন মানুষ নিজের
ক্ষতি করলেও তাকে বাধা দেয়া উচিত না? কেন সহানুভূ তি(compassion) একটি ভার্চু হওয়ার পরও
এই ধারণাকে মেনে নিতে হবে? হার্ম প্রিন্সিপাল যে সঠিক,সত্য এবং বৈধতা,স্বাধীনতা,নৈতিকতার একমাত্র
মানদণ্ড এর প্রমাণ কি?প্রশ্নগুলোর উত্তর এখানে অনুপস্থিত।যতক্ষণ পর্যন্ত উত্তরগুলি পাওয়া যাচ্ছে না
ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ হার্ম প্রিন্সিপাল মানতে বাধ্য না।
2. Mental Harm Dillema:- জন স্টু য়ার্ট মিল ফ্রিডম অফ স্পিচের ধারনারও প্রবর্ত ক,তিনি
বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন,তিনি কিন্তু হার্ম প্রিন্সিপালে অনুভু তিতে আঘাত হওয়া বা ''মেন্টাল হার্মকে''
অনেকক্ষেত্রে অন্তর্ভু ক্ত করেন নাই,তার মতে প্রত্যেকের অফেনড করার অধিকার আছে, শুধু সহিংসতা
ছড়ানোর মত কথা বন্ধ করা যেতে পারে কারণ সহিংসতা শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।ইমোশনাল
ক্ষতিকে অন্তর্ভু ক্ত করলে লিবারালিজমের আরেকটা ধারণা-ফ্রিডম অফ স্পিচের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক হয়ে
যায়।ইমোশনাল কষ্ট যে শারীরিক কষ্টের মতই বা অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি কষ্টকর তা বহু
সাইকোলজিকাল রিসার্চ প্রমাণ করে।তাহলে কেন মেন্টাল হার্মকে অন্তর্ভু ক্ত করা হল না?একজন মানুষ যে
তার ধর্মের নবি বা ঈশ্বরকে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসে পাবলিকলি তার সামনে তার নবিকে
শিশুকামী, নারীলোভী,ধর্ষক এবং আরও জঘন্য ভাষায় অপমান করা,তার ধর্মের উপাস্যের ব্যাপারে
অসম্মানজনক ভাষায় মন্তব্য করা,নবিকে বিকৃ তভাবে অপমান করে, ব্যাঙ্গ করে বানানো কার্টু ন প্রকাশ্যে
পুলিশ পাহারায় প্রদর্শন করানো তার জন্য যথেষ্ট মানসিক কষ্টের ব্যাপার, কারোর সামনে নিজের বাবা
মাকে এইসব বললে সে যতটা কষ্ট পেত একজন ধার্মিকের সামনে তার ধর্ম নিয়ে বলাও একই রকম
কষ্টদায়ক কারণ একজন ধার্মিক তার সৃষ্টিকর্তাকে, নবিকে তার চেয়েও বেশি ভালোবাসে।তাহলে এইটাকে
কেন ফ্রিডম অফ স্পিচের কারনে জাস্টিফাই করা হচ্ছে কিন্তু তখন হার্ম প্রিন্সিপালের পরোয়া করা হচ্ছে
না,মানসিক যন্ত্রণা তো শারীরিক যন্ত্রণার চেয়েও বাজে? (আবার একেই উল্টা আর্গুমেন্ট হিসেবে ব্যাবহার
করা হয় কেন ইসলামে ফ্রিডম অফ স্পিচ নাই,মহানবি (সা) কে কেন অপমান করা যাবে না.আজব
ব্যাপার!!)
3. Value of Truth:- ফিলোসফিতে অনেক ধারণাকেই থট এক্সপেরিমেন্ট দিয়ে চ্যালেঞ্জ করা হয়,এইখানেও
একটা পুরোপুরি হাইপোথেটিকাল সিনারিও কল্পনা করে দেখুন, আপনার বন্ধু তার স্ত্রীকে অনেক
ভালোবাসে,তারা একসাথে অনেক সুখে আছে।এখন আপনি জানতে পারলেন তার স্ত্রী তাকে চিট করে
যাচ্ছে এবং ঘটনাটি আপনি ছাড়া কেউ জানে না আর আপনি না জানালে সে জীবনে জানতেও পারবে
না,তাদের সম্পর্ক একইভাবে থাকবে।কিন্তু জানিয়ে দিলে আপনার বন্ধু অনেক মানসিক কষ্টের ভিতর দিয়ে
যাবে,সম্পর্ক টা ভেঙ্গে যাবে। এখন আপনি সত্যতা আপনার বন্ধু কে জানিয়ে দিলেন।এখন কাজটা কি
অনুচিত ছিল? সত্য না জানালে কিন্তু কোন ক্ষতি ছিল না,বরং জানালেই তার ক্ষতি হচ্ছে,মেন্টাল কষ্ট
পাচ্ছে,হার্ম প্রিন্সিপাল অনুসারে কাজটা কিন্তু অনৈতিক ছিল।তারপরও সত্য জানানোটা অনুচিত হবে না,
কারণ সত্য এর আলাদা মূল্য আছে যা লাভ ক্ষতির ঊর্ধ্বে।কোন ধরনের কনসেকু ইনশালিজম বা
ফলাফল্ভিত্তিক নৈতিকতার মানদণ্ড এর মূল্যায়ন করে না ।লাভ বা ক্ষতির হিসাব করে অনেক সহজেই
সত্যকে অবমূল্যায়ন করা যায় এইরকম নৈতিক মানদণ্ডে।(এইখানে বলা যায় হার্ম প্রিন্সিপাল একটি
ডিলেমা এর ভিতরে চলে আসে,হার্ম প্রিন্সিপালে অন্তর্ভু ক্ত না করলে বড় ধরণের ক্ষতিকেই ক্ষতির সংজ্ঞা
থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হয় আবার মেন্টাল হার্মকে অন্তর্ভু ক্ত করলে ফ্রিডম অফ স্পিচের সাথে সংঘর্ষ এসে
পরে,সত্য মূল্যায়নের নৈতিকতার সাথে সংঘর্ষ চলে আসে অর্থাৎ উভয়ক্ষেত্রেই হার্ম প্রিন্সিপাল ব্যর্থ
হিসেবে প্রমাণিত)
4. Harm Principle and Justification of Colonialism:- হ্যাঁ,বিষয়টা দেখতে স্ববিরোধী লাগলেও
বৈধতা অবৈধতার এই পরম মানদণ্ড আসলে কলোনিয়ালিজম,ইম্পেরিয়ালিজমের নৈতিক জাস্টিফিকেশন
হিসেবে কাজ করে। হার্ম প্রিন্সিপালের মূল জায়গায় একটা বিষয় অনেকেই খেয়াল করে না ''over any
member of a civilized community'' এইখানেই মিলের ব্যতিক্রম গুলা তৈরি হয়।'' সভ্য'' আসলে
কারা?সভ্যতার সংজ্ঞাটা কি,এখন সভ্যতার মানদণ্ড কোনটা হবে? কে নিরধারণ করবে কোনটা সভ্যতা
কোনটা অসভ্যতা?তার লেখা বই On Liberty থেকেই পাওয়া যায়, '' It is perhaps hardly
necessary to say that this doctrine is meant to apply only to human beings in the
maturity of their faculties. We are not speaking of children, or of young persons
below the age which the law may fix as that of manhood or womanhood. Those
who are still in a state to require being taken care of by others must be protected
against their own actions as well as against external injury. For the same reason,
we may leave out of consideration those backward states of society in which the
race itself may be considered as in its nonage... Despotism is a legitimate mode
of government in dealing with barbarians, provided the end be their improvement
and the means justified by actually effecting the end. Liberty, as a principle, has
no application to any state of things anterior to the time when mankind have
become capable of being improved by free and equal discussion. Until then,
there is nothing for them but implicit obedience to an Akbar or a Charlemagne, if
they are so fortunate as to find one'' (On Liberty,Chapter 1,page 16)- এ কথা সম্ভবত
বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই মতবাদটি কেবলমাত্র তাদের
জন্য প্রযোজ্য যাদের পরিপক্কতা( ম্যাচু উরিটি) আছে। আমরা বাচ্চাদের কথা বলছি না, বা তার চেয়ে কম
বয়সের তরুণদের কথা বলছি না যাদের আইন পুরুষত্ব বা নারীত্ব হিসাবে ঠিক করতে পারে না। যাদের
এখনও অন্যের দ্বারা দেখে রাখা প্রয়োজন এমন অবস্থায় রয়েছেন তাদের অবশ্যই তাদের নিজের ক্রিয়া
এবং বাহ্যিক আঘাতের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত থাকতে হবে।একই কারণে,আমরা সমাজের সেই পশ্চাদপদ
রাষ্ট্রগুলিকে বিবেচনার বাইরে রেখে যেতে পারি যেখানে একটা জাতি নিজেই এর অকেজো হিসাবে
বিবেচিত হতে পারে ... স্বৈরাচার/স্বেচ্ছাতন্ত্র বর্বরদের সাথে আচরণ করার ক্ষেত্রে সরকারের বৈধ পদ্ধতি,এটা
তাদের জন্য হবে উৎকর্ষের কারণ এবং পরিণতি এর ফলে তা হবে ন্যায়সঙ্গত। নীতি হিসাবে লিবার্টি র
সেই সময়ের কোন ব্যাপারে কোনও প্রয়োগ নেই,যতক্ষণ না মানবজাতি অবাধ ও সমান আলোচনার
মাধ্যমে উন্নত হতে সক্ষম হয়ে উঠছে। ততক্ষণে তাদের পক্ষে আকবর বা শার্লাম্যাগনের নিখুঁত আনুগত্য
ছাড়া আর কিছুই নেই, যদি তারা এতটা ভাগ্যবান হয় যেকোনো একজনকে খুঁজে পাওয়ার জন্য''(On
Liberty,Chapter 1,Page 16)অসভ্য/বর্বরদের প্রতি এই হার্ম প্রিন্সিপাল প্রযোজ্য না,তাদের অধিনস্ত
হয়ে থাকতে হবে তাদের চিন্তাধারা শিশুসুলভ ফলে তাদের স্বাধীনতা মূল্যহীন।স্বৈরাচারই তাদের জন্য ন্যায্য
সরকার।যদি এইটাকে অতিরঞ্জন মনে হয় তাহলে তার আরেকটি প্রবন্ধ আছে যেখানে সে সরাসরি বর্বর
জাতিদের প্রতি আক্রমণ ও দখলকে সে সমর্থন করে।
 ''But there assuredly are cases in which it is allowable to go to war, without
having been ourselves attacked, or threatened with attack; and it is very
important that nations should make up their minds in time, as to what these
cases are... To suppose that the same international customs, and the same rules
of international morality, can obtain between one civilized nation and another,
and between civilized nations and barbarians, is a grave error...''(A Few Words
On Non-Intervention, John Stuart Mill) -'' তবে নিশ্চিতভাবেই এমন কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে
যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, নিজেরাই আক্রমণ এর শিকার বা হামলার হুমকি না পেয়েও; এবং এটি
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে দেশগুলিকে সময়মত তাদের মন তৈরি করা উচিত,এই ঘটনাগুলি কি তা নিয়ে
...একই আন্তর্জাতিক রীতিনীতি এবং আন্তর্জাতিক নৈতিকতার নিয়মগুলি একটি সভ্য জাতি ও অন্য
এক সভ্য জাতির মধ্যে এবং একটি সভ্য জাতি ও বর্বরদের মধ্যে সমান হতে পারে এটা ধরে নেয়া একটি
মারাত্মক ত্রুটি ... '' (A Few Words On Non-Intervention, John Stuart Mill)
 ''বর্বর,অসভ্য'' আর সভ্যরা সমান না। বর্বররা থাকবে সভ্যদের শাসনে,তাদের রাষ্ট্রে আক্রমণ করা
হবে,দখল করা হবে। এখন প্রশ্ন আসে বর্বর কারা আর সভ্য কারা?সভ্যতার মানদণ্ডটা কি হবে? কে
নির্ধারণ করবে সভ্যতা কোনটা আর বর্বরতা কোনটা? বোঝাই যাচ্ছে এখানে উত্তরটা সহজ ব্রিটিশরা-
ইউরোপীয়ানরা সভ্য আর ইন্ডিয়ানরা, আলজেরিয়ানরা অসভ্য বর্বর জাতি। ওয়েস্টার্ন কলোনিয়াল
প্রভু রাই নির্ধারণ করবে কারা সভ্য কারা অসভ্য।
 ''We are accustomed to call a country more civilized if we think it more improved;
more eminent in the best characteristics of Man and Society; farther advanced in
the road to perfection; happier, nobler, wiser. This is one sense of the word
civilization. But in another sense it stands for that kind of improvement only,
which distinguishes a wealthy and powerful nation from savages or barbarians.
(Civilization, John Stuart Mill) -''একটি দেশকে সভ্য ভাবতে পারি যদি আমরা মনে করি রাষ্ট্রটি
উন্নত হয়েছে; মানুষ ও সমাজের সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যে আরও বিশিষ্ট; পরিপূর্ণতার পথে আরও আগানো;
সুখ,উন্নতচরিত্র/আভিজাত্য, জ্ঞান ইত্যাদি বেশি। অন্য অর্থে এটি কেবল সেই ধরণের উন্নতির ব্যাপার,যা
ধনী ও শক্তিশালী জাতিকে বর্বর বা বর্বরদের থেকে পৃথক করে। (Civilization, John Stuart Mill)
 ''সুখী'',''উন্নত চরিত্রের''-''অভিজাত'', ''জ্ঞানী'',উল্লেখ্য এখানে প্রত্যেকটি বিষয়ের সংজ্ঞা নির্ধারণ হয়
তাদের মানদণ্ড মোতাবেক।পৃথিবীর সামনে সভ্যতার উদাহরণ হল ইউরোপীয়রা। পরের বক্তব্যটা বিষয়টা
আরও পরিষ্কার করে দেয়,''These elements exist in modern Europe, and especially in
Great Britain, in a more eminent degree, and in a state of more rapid
progression, than at any other place or time. ''(Civilization, John Stuart
Mill)-''আধুনিক ইউরোপে এবং বিশেষত গ্রেট ব্রিটেনে এই উপাদানগুলির উপস্থিতি অন্য যে কোনও স্থান
বা সময়ের চেয়ে আরও বিশিষ্ট পরিমাণে আছে এবং রাষ্ট্র উন্নত অবস্থা থেকে আরও দ্রুত উন্নতির অবস্থায়
রয়েছে। ''(Civilization, John Stuart Mill) যা কিছু সভ্যতার পরিপূরক আছে তার সবই ব্যাপক
পরিমাণে আছে ইউরোপে বিশেষ করে গ্রেট ব্রিটেনে, শিল্পের জ্ঞান- সম্পদ সবকিছু বিদ্যমান
এখানে,সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গা এইটাই,''সভ্য জাতি'' হিসেবে ইউরোপিয়ানদেরই দেখা হয়েছে।
 মার্ক টিউনিক তার লেখায় ''টলারেন্ট ইম্পেরিয়ালিজম''এর কথা বলেন, এইভাবে ডিফেন্স দেয়ার চেষ্টা
করে যে মিল তাদের অধিনস্ত করে তাদের উন্নত করার কথা বলেছেন।কিন্তু এইখানেও ঐ একই সমস্যা
উন্নতির মানদণ্ড কি হবে? কারা নির্ধারণ করবে উন্নতি কোনটা এবং কখন একটি রাস্ত্র উন্নত? উত্তর
এইখানেও একইরকম।কলোনিয়াল প্রভু রা নির্ধারণ করবে কখন একটা রাষ্ট্র নিজে চলার জন্য প্রস্তুত,ঐ
রাষ্ট্রের বাসিন্দারা না।পশ্চিমারা উন্নত জাতি তাদের সাদৃশ্যই উন্নতির মাপকাঠি।রাষ্ট্র উন্নত হবে সভ্য হবে
যদি তা কলোনিয়াল পাওয়ারের বৃদ্ধির জন্য,মার্কে টে অনুপ্রবেশের জন্য উদার থাকে এবং কলোনাইজাররা
সব এক্সপ্লোয়েট করতে পারে।এইজন্যই মিল ভাবত ভারতের পরিচালকরা হবে ''Indian in blood but
British in spirit'' অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে শেখানো উচিত কলোনিয়ালিজমের সাথে যাওয়ার জন্য
এবং রাষ্ট্রকে পশ্চিমা কলোনাইজারদের ইচ্ছামত তাদের তৈরি করার সাহায্য করার জন্য,নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি
থেকে নিজেদের মত তৈরি করার জন্য না।আমরা দেখেছি তাদের উচ্চ নৈতিকতার আছে আলাদা মানদণ্ড,
জ্ঞানের আছে আলাদা মাপকাঠি, সুখের আছে আলাদা দর্শন পশ্চিমাদের মত ''প্রজ্ঞা'' ''সমৃদ্ধি'' ''উচ্চ
নৈতিকতা'' তাদের নেই ফলে তারা বর্বর,যারা ওয়েস্টার্ন সংজ্ঞায় ''নৈতিক,জ্ঞানী, সমৃদ্ধ'' তারাই সভ্য।এবং
বর্বর হওয়ায় হার্ম প্রিন্সিপাল এদের জন্য প্রযোজ্য,এরা শিশুসুলভ চিন্তাধারার তাই এদের প্রতি হার্ম
প্রিন্সিপাল আসবে না, এদের ইনভেইড করা যাবে, কলোনাইজ করা যাবে,এক্সপ্লয়েট করা
যাবে,কলোনাইজাররা যেভাবে চাবে তাদের সংজ্ঞানুসারে রাষ্ট্র তৈরি হবে,এরা যাতে কলোনাইজারদের মেনে
নেয়,কলোনাইজাররাযেভাবে চায় সেভাবে রাষ্ট্র যাতে এরা বানাতে দেয় সেই বাবস্থা করতে হবে।
 ডেভিড গোল্ডবারগের ব্যাখ্যায় বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয়ে যায়, ''Mills argument for benevolent
despotism failed to appreciate that neither colonialism nor despotism is ever
benevolent. Benevolence here is the commitment to seek the happiness of
others. But the mission of colonialism is exploitation and domination of the
colonized generally and Europeanization at least of those among the colonized
whose class position makes it possible economically and educationally. And the
mandate of despotism is to assume absolute power to achieve the ruler's self-
interested ends. Thus colonial despotism could achieve happiness of colonized
others only by imposing the measure of Europeanized marks of happiness upon
the Other, which is to say, to force the others to be less so. Mill's Argument
necessarily assumed superiority of the despotic, benevolent or not; it
presupposed that the mark of progress is defined by those taking themselves to
be superior, and it presumes that the ruled will want to be like the rulers even as
the former lack of cultural capital quite to rise to the task.'' (Liberalism's Limits,
David Goldberg)-''মিলের কল্যাণময় স্বৈরশাসনের যুক্তি এই মর্ম উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয় যে
কলোনিয়ালিজম-উপনিবেশবাদ অথবা স্বৈরাচার কোনটাই কখনো পরোপকারী বা কল্যাণময় হতে পারে
না।পরার্থপরতা অন্যের সুখ খোঁজার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসে কিন্তু উপনিবেশবাদের লক্ষ্য হল অধ্যুষিতদের
সাধারণত শোষণ ও আধিপত্য এবং ইউরোপীয়করণ ,অধ্যুষিতদের মধ্যে অন্ততপক্ষে যাদের শ্রেণি
অবস্থানটি অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগতভাবে তা করা সম্ভব করে তোলে। এবং স্বৈরশাসনের ম্যান্ডেট হল
শাসকের চাওয়ার-আগ্রহের সকলকিছু অর্জ নের জন্য নিরঙ্কু শ শক্তি প্রয়োগ করা। সুতরাং উপনিবেশিক
স্বৈরাচারবাদ কেবল অধ্যুষিতদের অন্যদের সুখ অর্জ ন করতে পারে অন্যের উপর ইউরোপীয় সুখের চিহ্ন
চাপিয়ে দিয়ে,যা বলা যায়, অন্যকে কম থাকার জন্য বাধ্য করা। মিলের আর্গুমেন্ট অগত্যা যে শাসক,সে
পরোপকারী হোক বা না হোক,শাসিতের চেয়ে তার শ্রেষ্ঠত্বকে স্বীকার করে নিয়েছে নিশ্চিতভাবে; এটি
অনুমান করে যে অগ্রগতির চিহ্নটি তাদের দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয় যাঁরা নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচনা
করছে,এবং এটি অনুমান করে যে শাসিতরা শাসকদের মতো হয়ে উঠতে চাইবে এমনকি কাজটিতে
পৌঁছানোর জন্য শাসিতের কালচারাল ক্যাপিটালের অপ্রতু লতাতেও। ''(Liberalism's Limits,
David Goldberg)
 জন স্টু য়ার্ট মিল লিবারালিজমের একজন মূল প্রবর্ত ক ছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন
এডমিনিস্ট্রিটিভ অফিশিয়াল,তার ক্যারিয়ার ছিল আসলে এইটা।এদের সংজ্ঞায় ভারতীয়, আফ্রিকান,
আলজেরিয়ানরা অসভ্য- বর্বর জাতি।এর সব প্রভাব ভারতবর্ষের উপর পড়েছিল যার পরিণাম আমরা
আজও ভোগ করছি। ভারতের উপনিবেশ শাসন তার কাছে বৈধই ছিল।
১৮০১ থেকে ১৯০০ পর্যন্ত ১০০ বছরে ৩১ টা মন্বন্তরে মরেছে ৪ কোটি ১০ লাখ মানুষ— ‘না খেয়ে’।
বর্বর,শিশুসুলভ আখ্যা দিয়ে পশ্চিমের কলোনিয়াল প্রভু রা ভারতবর্ষ,আফ্রিকা ইত্যাদি জায়গায় চালিয়েছে
শোষণ, বিখ্যাত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী লর্ড সিসিল রোডসের কথাটা বেশ ভাল্ভাবেই মিলের কথার সাথে
মিলে যায়,'' নেটিভদের সাথে আচরণ করতে হবে শিশুর মত,তাদের ভোটাধিকার দেয়া যাবে না। দক্ষিণ
আফ্রিকার বর্বরদের সাথে বোঝাপড়ায় আমাদের স্বৈরতন্ত্রের নীতি গ্রহণ করতে হবে যেমনটা ইন্ডিয়াতে
সফলতার সাথে করা হয়েছে।''(The Making of a Racist State: British Imperialism and the
Union of South Africa) কঙ্গোর অধিবাসীদের প্রতি অসহনীয় অত্যাচার করেছিলই বেলজিয়াম
''জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন''''এর নামে ।রাবার চাষে বাধ্য করার জন্য চাষিদের স্ত্রী- সন্তানদের জিম্নি
করা,নিয়মানুবর্তি তা শেখানোর জন্য হাত কেটে ফেলা,টর্চার,ধর্ষণ,হত্যা ছিল নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার।
বেলজিয়াম অসভ্যদের ''জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন''' করে প্রায় ১ কোটি অধিবাসীর প্রাণ নিয়ে।''বর্বররা
চলবে সভ্যদের কথামত,অসভ্যদের সভ্য করতে হবে যে''
 বর্ত মানে একেবারে পরিবর্ত ন হয়ে গেছে লিবারালিজম তাও না এবং তা হওয়া সম্ভবও না কারণ
লিবারালিজমের ভিত্তিমূল জন লক,জন স্টু য়ার্ট মিল,জা জ্যাক রুশো ইত্যাদি এদের কাছ থেকেই এসেছে,
এরাই ছিল প্রবর্ত ক।লিবারালিজম যে বর্ত মানে ব্যতিক্রম তৈরি করে সেইটা বর্ত মান বিশ্বের দিকে তাকালে
বোঝাই যাচ্ছে,খেয়াল করে দেখুন এখন '' মধ্যযুগীয় বর্বর, অসভ্য'' কথাগুলি সবচেয়ে বেশি কখন শোনা
যায় এবং বর্বরদের প্রতি আচরণ কি হওয়া উচিত তা তো আমরা জানিই।এইখানেই আসে Sherene
Razack এর বই Casting Out: The Eviction of Muslims from Western Politics and
Law এ উল্লেখ করা ''Cultural Clash Narrative''- ইসলাম ওয়েস্টার্ন মূল্যবোধের পরিপন্থী, ওয়েস্টার্ন
মানদণ্ডের ভিত্তিতে তাদের আইন বর্বর,তাই ইসলামকে নির্মূল করতে হবে,বেশি হলে ততটু কু ই রাখতে হবে
যতটু কু ওয়েস্টার্ন মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক না,ওয়েস্টার্ন নৈতিকতার মানদণ্ডে ইসলাম বর্বর, জ্ঞানের
মাপকাঠি অনুসারে তারা কু সংস্কারপূর্ণ,সুখের দর্শন অনুসারে তারা হতাশাপূর্ণ এদের প্রতি হার্ম প্রিন্সিপাল
প্রযোজ্য হবে না।তারা থাকে মধ্যযুগীয় অসভ্য অংশে তাই তাদের আমরা ''সভ্যরা উন্নতরা'' করব
''স্বাধীন'', সেই স্বাধীনতা হবে আমাদের সংজ্ঞানুসারে তাদের না। ক্ষমতাশীলের আদর্শের
বিপরীতদের,তাদের আদর্শের বিপরীতে থাকা পটেনশিয়াল থ্রেটদের ব্যতিক্রম হিসেবে চিহ্নিত করা
হয়,ফাল্গুনি সেথ এর রেইস এর ফিলোসফি নিয়ে লেখা তার বই Toward a Political Philosophy of
Race'' এ এদেরকে ডিফাইন করেন'' আন্রুলি(Unruly)'' হিসেবে,''অপ্রত্যাশিত,অনির্ভ রযোগ্য,কোন
রাজনৈতিক নিয়মের প্রতি হুমকি স্বরূপ''(unpredictable, undependable or threatening to a
political order) এদের করা হয় রেশিয়ালাইজড এবং সাধারন নীতির ব্যতিক্রম রূপে দেখানো হয় এবং
মডার্ন আন্রুলি হল মুসলিমরা যারা পশ্চিমা লিবারালিজমের মূল্যবোধে বিশ্বাসী না,এমনকি পর্দা করা
নিজেই ''আন্রুলি'' এর বহিঃপ্রকাশ।
 ''The veil—as one among many such signifiers—has emerged as a
representation of the larger “problem” of “Muslim culture”—namely as the unruly
threat to the existing onto-juridical regime of Western secular liberalism. In the
cases of the teenagers, the degree to which they were perceived as potential
threats differed, and they were treated accordingly''(Toward a Political
Philosophy of Race, Falguni Sheth, Chapter 4)-'' পর্দা/হিজাব-এই জাতীয় বহু সংখ্যক
ইঙ্গিতদানকারীর মধ্যে একটি -যা "মুসলিম সংস্কৃ তি" -র বৃহত্তর "সমস্যার" বিবৃতি হিসাবে আবির্ভূ ত হয়েছে
- এটি পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ উদারপন্থার বিদ্যমান আইন-শাসনব্যবস্থার প্রতি ''আনরুলি(Unruly)''
হুমকিস্বরূপ। কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে, সম্ভাব্য হুমকির পরিমাণ নিয়ে ভিন্নতা আছে এবং সে অনুযায়ী
তাদের সাথে আচরণ করা হয় '' (Toward a Political Philosophy of Race, Falguni Sheth,
Chapter 4)
 '' As we saw with Huntington’s and Rawls’s descriptions, Islam is perceived as a
culture whose principles and visual significations are fundamentally transgressive
to Western liberal norms. As such, Islam (and Muslims) imply a radical
heterogeneity and a cultural ontology so distinct from the prevailing political
culture that it (and they) are naturalized under the banner of “irrationality,”
“unreason,” or madness. And those whose disagreements are “cultural,” and
therefore unreasonable, are thought to be difficult or unruly as a matter of choice.
''(Toward a Political Philosophy of Race, Falguni Sheth, Chapter 4) -আমরা হান্টিংটন
এবং রলস এর বিবরণে দেখেছি যে, ইসলাম একটি সংস্কৃ তি যার নীতি ও ভিজুয়াল চিহ্ন/অর্থ
মৌলিকভাবে পশ্চিমা লিবারাল নিয়ম-আইন অমান্যকারী হিসাবে অনুভূ ত হয়। এরূপ হিসাবে, ইসলাম
(এবং মুসলমানরা) বলতে বোঝায় র‌্যাডিক্যাল হেটেরোজেনেটি এবং একটি সাংস্কৃ তিক অনটোলজিকে
যা প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃ তি থেকে ভিত্তিগত এতটা পৃথক যে এটি (এবং তারা) "অযৌক্তিকতা,"
"অযৌক্তিক" বা পাগলামির ব্যানারে স্বীকৃ ত হয়। এবং যাদের মতবিরোধগুলি "সাংস্কৃ তিক" এবং সুতরাং
''অযৌক্তিক'',তাদের কঠিন বা অযৌক্তিক বা আনরুলি(Unruly) বলে মনে করা হয়।'(Toward a
Political Philosophy of Race, Falguni Sheth, Chapter 4)
 ''Since then, Muslim men—and women—have been subjected to remarkably
cruel treatment in the name of stopping or preventing terrorist activity. Which
transgressions have engendered such treatment? Liberals and conservatives
alike have argued that the Bush Administration’s “war on terror” is a legitimate
war, with its objective the elimination and prevention of threats to the (physical)
safety of American citizens.They suggest that preemptive policing strategies
must take precedence in a world threatened by terrorists. The goal of preventing
terrorism is important and defensible; however, their views do not account for the
hostile attention that has been visited upon Muslims in a range of arenas
unrelated to terrorism, and spanning back decades before the “war on terrorism”
began''(Toward a Political Philosophy of Race, Falguni Sheth, Chapter 4)'' তখন
থেকেই, সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ বা প্রতিরোধের নামে মুসলিম পুরুষ এবং মহিলাদের - উপর অত্যন্ত নিষ্ঠু র
আচরণ করা হয়েছিল। কোন সীমালঙ্ঘন এইরকম আচরণের জন্ম দিয়েছিল? লিবারালরা এবং
রক্ষণশীলরা সকলেই যুক্তি দেখিয়েছেন যে বুশ প্রশাসনের "সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ" একটি বৈধ যুদ্ধ, যার উদ্দেশ্য
আমেরিকান নাগরিকদের (শারীরিক) সুরক্ষার জন্য হুমকি প্রতিরোধ ও নির্মূল।তারা প্রস্তাব দেয় যে প্রাক-
পুলিশী কৌশলগুলি অবশ্যই একটি ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার গ্রহণ করবে,সন্ত্রাসীদের দ্বারা হুমকিতে থাকা বিশ্বে।
সন্ত্রাসবাদ রোধের লক্ষ্যটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিরক্ষামূলক; তবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সন্ত্রাসবাদের সাথে
সম্পর্কি ত না হওয়া এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে "ওয়ার অন টেরর" শুরুর কয়েক দশক আগে বিস্তৃ ত মুসলমানদের
প্রতি যে শত্রুতাপরায়ণ অভিনিবেশ,আচরণ বিদ্যমান তা বিবেচনা করে না।(Toward a Political
Philosophy of Race, Falguni Sheth, Chapter 4)
 Sheren Razack তার Casting Out: The Eviction of Muslims from Western Politics
and Law বইয়ে লিখেন, ''The body of the Muslim woman, a body fixed in the Western
imaginary as confined, mutilated, and sometimes murdered in the name of
culture, serves to reinforce the threat that the Muslim man is said to pose to the
West, and is used to justify the extraordinary measures of violence and
surveillance required to discipline him and Muslim communities. It is virtually
impossible to name and confront the violence that Muslim women (like all groups
of women) experience at the hands of their men and families without providing
ideological fuel to the ''war on terror'' (Casting Out: The Eviction of Muslims from
Western Politics and Law, Sherene Razack)- মুসলিম নারীর শরীর,পশ্চিমা কাল্পনা অনুসারে
আটক,বিকলাঙ্গ,এবং কখনও কখনও সংস্কৃ তির নামে হত্যা হওয়া-যা আরও শক্তিশালী করে তোলে
মুসলিমকে পশ্চিমের প্রতি হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করানোর জন্য,ব্যাবহারিত হয় মুসলিম সম্প্রদায়কে
''শিক্ষিত-শৃঙ্খলাবদ্ধ'' করতে অপ্রয়োজনীয় সহিংসতা ও সারভেলেন্সের পদক্ষেপগুলির ন্যায্যতা(
জাস্টিফিকেশন) প্রমাণ করুতে। '' ওয়ার অন টেরর''কে আদর্শগতভাবে ত্বরান্বিত না করেই মুসলমান
মহিলারা (অন্য সমস্ত গোষ্ঠীর মহিলাদের মতো) তাদের পুরুষ ও পরিবারের হাতে যে সহিংসতার মুখোমুখি
হয়,তার শনাক্ত করা ও লড়াই করা কার্যত অসম্ভব।(Casting Out: The Eviction of Muslims
from Western Politics and Law, Sherene Razack)
 লিবারালিজমের সর্বশেষ প্রসিদ্ধ দার্শনিক "জন রলস",তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ "the law of peoples" এর
মাঝে মানুষকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে। ( বইটি লেখা হয় ১৯৯০ সালে, যখন রাশিয়াকে
পরাজিত করে ইসলামী বিশ্ব আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল
আমেরিকাকে এটা বলা যে, আমেরিকা এখন মুসলমানদের সাথে কিরূপ আচরণ করবে।)রলস মানুষকে
ভাগ করেঃ-১.লিবারাল(Liberal)-এরা হচ্ছে নৈতিক আদর্শ, ন্যায়ের প্রতীক,লিবারাল মানদণ্ড দিয়ে
সবকিছু বিচার করে এবং সমস্ত লিবারেল রীতিনীতি মেনে চলে।২.ডিসেন্ট(Decent)- এরা পরিপূর্ণ
লিবারালিজমের প্রবক্তা না,কিন্তু লিবারালিজমের হিউম্যান রাইটের কিছু ধারণাকে মানে এবং বাস্তবায়ন
করে। ( রলস হিউম্যান রাইটস এর নূন্যতম একটা সংজ্ঞা দেয়, যেটাকে মানলে ডিসেন্ট বলা যায়। অনেক
বিশেষজ্ঞরাই তার শিথিলতার ও বিরোধীতা করে।)এদের সাথে সংলাপ আলোচনায় আসা উচিত,এরা
লিবারালিজমের আংশিক দাসত্বের মাঝেই আছে।রলস এর দাবি হল,এই ডিসেন্ট লোকেরা ধীরে ধীরে
স্বভাবজাত অবস্থায় অর্থাৎ লিবারাল হওয়ার পথে ফিরে আসবে। যেটা লিবারিলেজমের দৃষ্টিতে সত্য এবং
সঠিক। এজন্য তাদের সাথে লড়ার প্রয়োজন নেই। এই ক্যাটাগরির মানুষ মডারেট মুসলিম,লিবারাল
মুসলিম,সেকু লার মুসলিম,এমন মুসলিম যারা লিবারালিজমকে মেনে নিয়েছে,চ্যালেঞ্জ করে নি এবং সেই
ফ্রেমওয়ার্কে র এর ভিতর দিয়ে ইসলামকে ব্যাখ্যা করে যাচ্ছে। এদের সাথে সংলাপ- আলোচনায় আসা
হচ্ছে এবং এইসব মানুষ ধীরে ধীরে পূর্ণ লিবারাল হওয়ার দিকেই যাচ্ছে।৩.বার্ডে নড(Burdened)-এরা
হচ্ছে, অর্থ- সম্পদহীন দরিদ্র লোক। বিভিন্ন কারণে যারা দারিদ্রতায় ভু গছে এবং লিবারেলজমের বিরুদ্ধে
দাঁড়াতে তারা সামগ্রিকভাবে অক্ষম। রলস এর মত হল, লিবারেল ও ডিসেন্ট লোকদের দায়িত্ব হল এমন
লোকদের আর্থিকভাবে সাহায্য করা। যাতে করে এরা তাদের মতই লিবারেল এবং ডিসেন্ট হয়ে যায়।
৪.আউটল(outlaw)-এরা সেসব ব্যাক্তি,যারা হিউম্যান রাইটসকে প্রত্যাখ্যান করে এবং একে সরাসরি
চ্যালেঞ্জ করে।রলস এর মতে,এমন লোকদের কনডেম করতে হবে,তাদের Sanction দিতে হবে,তাদের
সাথে যুদ্ধ করতে হবে,এরা পৃথিবীর জন্য হুমকিস্বরূপ।''This refusal to tolerate those states is a
consequence of liberalism and decency. If the political conception of political
liberalism is sound, and if the steps we have taken in developing the Law of
Peoples are also sound, then liberal and decent peoples have the right, under
the Law of Peoples, not to tolerate outlaw states. ''(Law of peoples,John
Rawls,page 81)''এই রাজ্যগুলিকে সহ্য করতে অস্বীকার করা লিবারালিজম এবং ডিসেন্সির
পরিণতি। যদি পলিটিকাল লিবারালিজমের রাজনৈতিক ধারণাটি সঠিক হয় এবং ''ল অফ পিপলস''
বিকশিত করার জন্য আমাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলিও যদি যথাযথ হয় তবে লিবারাল ও ডিসেন্টদের
অধিকার রয়েছে, ল অফ পিপলের অধীনে,বেআইনী রাষ্ট্রগুলিকে সহ্য না করার।''(Law of
peoples,John Rawls,page 81)মুসলিম যারা লিবারালিজমকে মানে না,পশ্চিমা দর্শনের দেয়া
হিউম্যান রাইটসকে মানে না,শরিয়া বাস্তবায়ন চায়,লিবারালিজমের প্রকাশ্য বিরোধিতা করে তারা
লিবারালিজমের জন্য,পৃথিবীর ন্যায়ের প্রতি হুমকি ও যুদ্ধের বিষয়,তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াটাই
উচিৎ,এরা আউটল এর পর্যায়ে পরে।এদের জন্য কোন '' স্বাধীনতা'' ''মানবতা'' ''সমতা'' ইত্যাদির কথা
বের হবে না,কোন হার্ম প্রিন্সিপাল এইখানে প্রযোজ্য না,,এরা ''বর্বর'' ''অসভ্য'' ''Unruly'' ''Outlaw''
এদের জন্য আছে শুধু যুদ্ধ এবং ওয়েস্টের আনুগত্য,এদের ''উন্নত'' ''নৈতিক'' ''সুখী'' ''জ্ঞানী'' ''সভ্য''
করতে হবে পশ্চিমের উন্নতির সংজ্ঞানুসারে,আর যদি না হয় তাহলে বর্বরদের ফলাফল কি তা আলাদা
করে বলে দেয়ার প্রয়োজন নেই।

''War on Terror'' এর নামে প্রায় ২৪ লক্ষ ইরাকি, ১২ লাখ আফগান,২.৫ লাখ লিবিয়ান, ৬.৫ লাখ
সোমালিয়ান, ১.৫ লাখ ইয়েমেনী, ৩.৫ লাখ সিরিয়ান হত্যা করা হয়। War on Terror এর নামে প্রায় ৬ মিলিয়ন
মানুষ হত্যা করা এবং এখনও হত্যা চালাতে থাকা আমেরিকার কোন জবাবদিহিতা নেই। মধ্যযুগীয় অসভ্য
বর্বরদের আবার স্বাধীনতা কিসের?বর্বররা সভ্যদের পায়ের নিচে না থাকলে তারা বর্বরতাই করতে থাকবে। হার্ম
প্রিন্সিপাল তাদের জন্য না,ক্ষতির সংজ্ঞায় অসভ্যদের জায়গা নেই,স্বাধীনতা-সুরক্ষা এদের জন্য না।লিবারালিজম
অন্যসব রাজনৈতিক মতাদর্শের মত গোঁড়া থেকেই এভাবে ব্যতিক্রম রাখার জায়গা দিয়েই তৈরি করা,হার্ম
প্রিন্সিপালের গঠন মূল জায়গা থেকেই এমন যেইখানে কিছু মানুষের ক্ষতি, স্বাধীনতাকে অন্তর্ভু ক্ত করা হয় না।
এরপরও কি কলোনিয়ালিজমকে বৈধতা দেয়া কলোনিয়াল প্রভু র হার্ম প্রিন্সিপাল নীতি-নৈতিকতার,বৈধতা
অবৈধতার পরম মানদণ্ড হিসেবে মেনে নেয়া উচিত?কেন হার্ম প্রিন্সিপাল হবে ন্যায় নির্ধারণের পরম মাপকাঠি? কেন
লিবারালিজমকে পরম নিখুঁত মতাদর্শ হিসেবে মেনে নিতে হবে?
এইসব যদি বাদ দিয়েও দিই ,যদি মিলের-লিবারালদের এইসব ভু লেও যাই এরপরও হার্ম প্রিন্সিপাল নিলে তাতেও
বহু সমস্যা থেকে যায়-
1. Ignorance Problem:- প্রায় একই রকমভাবে আরেকটি আরেকটি সমস্যা আসে তা হল ক্ষতি
সাবজেকটিভ এবং কোনকিছু কারোর ক্ষতি করছে কিনা তা অনেক কনটেক্সটে সঠিকভাবে নির্ণয় করা
মানুষের সীমিত নলেজ দিয়ে সম্ভব হয়ে উঠে না যা মানদণ্ডটাকে অস্থিতিশীল,আরবিটারি,অনিরভরশীল
করে ফেলে। ক্ষতি একটি ফলাফল এবং মানুষ সম্পূর্ণ নিশ্চয়তার সাথে ভবিষ্যতের ফলাফল নির্ধারণ
করতে পারে না কারণ সেখানে অনেকগুলা ফ্যাক্টর কাজ করে যেমন- বাটারফ্লাই এফেক্টের ব্যাপার
আছে,অনেক ক্ষু দ্র ক্ষু দ্র ঘটনা যা আদতে তু চ্ছ মনে হয় তা অনেক সময় বড় প্রভাব ফেলে বসে।ব্রকেন
উইন্ডো থিওরি থেকে দেখা যায় অনেক ছোট কোন ঘটনা থেকেও বড় কোন অপরাধের উদ্ভব হয়। অনেক
ক্ষেত্রে আমরা বুঝতে পারি না যে কোন কাজ কিভাবে ট্রাজেডি অফ কমন্স নিয়ে আসছে,যেমন- অনেকেই
মনে করে প্রাইভেটে স্মোক করা বৈধ,এটি অন্য কারোর ক্ষতি করছে না।কিন্তু ধূমপানের জন্য প্রতি বছর
স্বাস্থ্যখাতে প্রায় দেড় ট্রিলিয়ন ডলার অপচয় হয়, তামাক চাষ ও ধূমপানের ২৫০ টি ক্ষতিকর পদার্থ
পরিবেশের যথেষ্ট ক্ষতি করে যার প্রভাব পরে সবার উপর। আসলে মূল বিষয়টা আরও বড় ধরে নিন
অতীতের এমন একটা পৃথিবীর কথা যেখানে মেডিকাল বা এনভাইরোমেনটাল সাইন্স এত উন্নত হয়নি যে
সিগারেটের ক্ষতিকর দিক জানতে পারবে তার মানে সেই পৃথিবীতে পাব্লিক প্লেস এও ধূমপান বৈধতা
পাবে।সমস্যা হল ক্ষতির বিষয়টা নির্ণয়ের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই মেডিক্যাল সাইন্স বা বিজ্ঞানের কোন
শাখার উপর নির্ভ র করতে হয়,আর বিজ্ঞানের প্রকৃ তি হল ইনডাকটিভ,বিজ্ঞান সদা পরিবর্ত নশীল,বিজ্ঞান
আজ যেটাকে ক্ষতিহীন বলছে পরবর্তীতে তার যে কোন ক্ষতিকর প্রভাব জানা যাবে না তার কোন
নিশ্চয়তা কেউ দেয় না। মানুষের সীমিত চিন্তাশক্তি,সীমিত ওয়ার্ল্ড ভিউ থেকে মানুষের কোন জিনিস
হার্মলেস মনে হতেই পারে কিন্তু তার মানে এই না যে সেটা আসলেই হার্মলেস,আমরা পরম জ্ঞানের
অধিকারী সর্বজ্ঞানী কোন ঈশ্বর না তাই সাধারনভাবেই আমরা নিশ্চিতভাবে ফলাফল নির্ণয় করতে পারব
না সেইটাই স্বাভাবিক, তাই হার্ম প্রিন্সিপাল নৈতিকতার একমাত্র মানদণ্ড, যা ক্ষতি করবে না তার সবই
অনুমোদিত,এইরকম একটা মানদণ্ড অনির্ভ রযোগ্য এবং অস্থিতিশীল নিজের স্বাধীনতা পরাধীনতা, বৈধতা
অবৈধতা ভাল খারাপ এত কিছু নির্ধারণ করার জন্য
2. Intention Problem:- একেবারে মোরাল দিক থেকে এবার দেখি। হার্ম প্রিন্সিপালকে নৈতিকতার
একমাত্র মানদণ্ড ধরা হলে,যা ক্ষতি করবে না তার সবই সঠিক বলে মেনে নিলে এটি সম্পূর্ণ একটি
ফলাফল নির্ভ র(consequentialist) নৈতিকতা হয়ে যায়,কোন কাজের ফল স্বরূপ যদি ক্ষতি না আসে
তাহলে কাজটা ঠিক। তার মানে কাজের উদ্দেশ্য এইখানে বিষয় না শুধু কাজের ফলাফল,ধরে নিন
একজন নিজের খ্যাতির জন্য,নিজেকে যাতে আরও বড় মনে হয়,নিজের সুপিরিওরিটি অনুভব করার
জন্য,অহংকারের কারনে,শো অফ করার উদ্দেশ্য নিয়ে দাতব্য দেয় তার কাজটি কি ভাল নাকি খারাপ?
কাজটা কি উচিত নাকি অনুচিত? কাজটা যদি অনুচিত হয় তাহলে সাধারনভাবেই এটি খারাপ।এইরকম
আরও উদাহরন আছে যেখানে মানুষ খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে উপকার করে। সে কিন্তু কোন ক্ষতিকর
ফলাফল আনে নি তাহলে তার কাজটি দান করার কাজটি ভাল না কেন? এখন যদি কাজের সাথে
কাজের উদ্দেশ্য কেও অন্তর্ভু ক্ত করা হয় তাহলে এইটা স্বীকার করে নেয়া হবে যে হার্ম প্রিন্সিপাল
নৈতিকতার মূল মানদণ্ড না,কোন কিছু ক্ষতি না করলেও তা নৈতিকভাবে অসমর্থনযোগ্য হতে পারে
অর্থাৎ হার্ম প্রিন্সিপালের নৈতিক দিকের মূল ধারণা রেফিউটেড হয়ে যায়।
3. Incest Cases- ইনসেস্ট হল নিজের আপন পরিবারের সাথে যৌনাচার করা।ধরে নিন কেউ নিজের
বোনের সাথে বা মায়ের সাথে বা বাবার সাথে বা ভাইয়ের সাথে কনট্রাসেপশন ব্যাবহার করে উভয়ের
সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করল, কারোর কোন ক্ষতি না করে,এইখানেও হার্ম প্রিন্সিপাল এর কোন
সমস্যা নেই।প্রশ্ন হল কাজটা ভাল নাকি খারাপ?কোন কাজ অনৈতিক না হলে সেটা নৈতিকভাবে
অনুমোদিত এর মধ্যে কোন থার্ড অপশন নেই,প্রশ্ন হল ইনসেস্ট নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য কিনা? এইটা
কি বৈধতা দেয়ার যোগ্য কি না? সাধারনভাবেই একজনের কাছে এটি বিকৃ ত জঘন্য লাগবে।যদি তাই হয়
তাহলে একটা বিকৃ ত বা জঘন্য কাজে বাধা দেয়াই উচিত।
4. Necrophilia- নেক্রোফিলিয়া হল মৃতের সাথে যৌনাচার করা।ধরে নিন কেউ কারোর মৃত দেহের সাথে
যৌন সম্পর্ক করছে বা কোন মৃত পশুর সাথে যৌনাচার করছে,এইখানে কারোর ক্ষতি হচ্ছে না,সে তো
মারাই গিয়েছে এইখানে তার দেহ জড় বস্তু,এইখানেও হার্ম প্রিন্সিপাল অনুসারে কোন সমস্যা নেই। এখন
প্রশ্ন আসে,নেক্রোফিলিয়ার মত বিকৃ ত যৌনাচার কি বৈধ হওয়ার যোগ্য!?
5. Cannibalistic Fetishism- পারস্পরিক সম্মতিতে একজন মানুষ অপর মানুষের মাংস ভক্ষণ করা।
লিবারালরা একে চরম বিরক্তির সাথে দেখলেও এটি কিন্তু হার্ম প্রিন্সিপাল ঠিক রেখেই হচ্ছে। এরা
সম্মতিতে একে অপরের নরমাংস ভক্ষণ করছে,অন্য কারোর ক্ষতি করা হচ্ছে না। এইরকম ব্যাপার পুরো
হাইপোথেটিকালও না! জার্মানিতে 2015 সালে একজনকে 8.5 বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় কারণ সে
একজনকে হত্যা করে এবং ভক্ষণ করে তার সম্মতিতেই, তারই বিকৃ ত ফ্যান্টাসি ছিল তাকে কেউ ভক্ষণ
করুক,হত্যা করুক। এখন হার্ম প্রিন্সিপাল ঠিক রাখার পরও আমরা এমনকি লিবারালরাও একে সমর্থন
করে না।
6. Unclear Definition Problem:-হার্ম প্রিন্সিপালের আরও সমস্যা শুরু হয় সংজ্ঞার- ব্যাখ্যার জায়গা
থেকে।আসলে কোনটা লাভ আর কোনটা ক্ষতি, ক্ষতির সংজ্ঞাটা কি,ক্ষতি বলতে কি বুঝানো হচ্ছে,হার্ম
এর সংজ্ঞা কি কি তা নিজেই একটা ফিলোসফিকাল ডিবেটের ব্যাপার।আর কে নির্ধারণ করবে কোনটা
হার্ম আর কোনটা বেনেফিট?পশ্চিমের প্রভু রা নাকি অধিকাংশের মত নাকি কতিপয় বিজ্ঞ উদারবাদিরা?
কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে কোনটা ক্ষতিকর?
7. Grounding Harm in Hedonistic Principle:-আগেই বলেছিলাম হার্মকে সংজ্ঞায় না আনার
সমস্যা আরও আসে,প্রচু র মানুষের মতে হার্ম হল কষ্ট অথবা যা কিছু একজনের অবস্থা খারাপ করে যা
অন্যথায় হত না।অনেক লিবারাল,উপযোগবাদি,নব্য নাস্তিক,হিউম্যানিসট এই অ্যাপ্রোচটা নেয় খারাপ হল
যা কষ্ট-দুর্দ শা প্রদান করে, ভাল হল যা সুখ প্রদান করে, নৈতিকতার মূল বিষয় দুঃখ সর্বনিম্নকরণ
করা,বর্ত মানে স্যাম হ্যারিসের বিখ্যাত Moral Landscape এও সে এইধরনের মানদণ্ড প্রদান করে।
অর্থাৎ ''হার্ম'' এর সংজ্ঞা দেয়া হয় লিবারালিজমের আরেকটি নীতির ভিত্তি দিয়ে,
Hedonistic Principle-''We should maximize as much pleasure as we can,we should
minimize as much pain as we can''-''আমাদের উচিত যতটা সম্ভব সুখ সর্বোচ্চ করা এবং কষ্ট সর্বনিম্ন
করা''
এইটার সমস্যা কিছু থট এক্সপেরিমেন্ট দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়।

 Harmless Rape Thought Experiment( Legal Philosopher John Gardner)-ধরে নিন,


একটা ঘরে একটা ছেলে এবং একজন মেয়ে অজ্ঞান অবস্থায় আছে। ছেলেটা কনট্রাসেপশন ব্যাবহার করে
তার সাথে সেক্স করল।সে কোন কষ্ট অনুভব করল না,কোন ধ্বস্তাধস্তি হল না, শারীরিক ক্ষতি হল না
কারণ সে অজ্ঞান ছিল।জ্ঞান ফেরার পর সারাজীবনে সে জানতেও পারল না কি হয়েছিল,জীবনের
অবস্থার কোন পরিবর্ত ন হল না, জীবন একইভাবে কাটতে লাগল। ছেলেটার কাজটা কি ভাল ছিল নাকি
খারাপ ছিল? অবৈধ নাকি বৈধ ছিল? ঐখানে কেউ থাকলে তার কি বাধা দেয়ার অধিকার থাকত?
এইখানে তো কোন কষ্ট- দুর্দ শার বিষয় থাকছে না, কারোর অবস্থা খারাপ হচ্ছে না বরং সুখ সর্বোচ্চকরন
হচ্ছে তারপরও কাজটা খারাপ,অপরাধ।এই থট এক্সপেরিমেন্ট দ্বারা হিডেনিসটিক প্রিন্সিপাল এবং এর
উপর ভিত্তি করা নৈতিকতার মানদণ্ড হার্ম প্রিন্সিপাল ভোগবাদ,উপযোগবাদ এর খণ্ডন হয়ে যায়।
 Overdetermination Problem-ধরে নিন একদিন Mr.X Ms. Y কে হত্যা করতে চায়,Ms. Y রাস্তা
দিয়ে হাঁটছিলেন তখন Mr. X তাকে হত্যার প্রস্তুতি নেয়, ধরে নিন আপনি কোনভাবে নিশ্চিতভাবে
জানেন,Ms. Y কে যদি Mr. X হত্যা নাও করে তারপরও সে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাবে ঐদিন। তাহলে
Mr. X কে বাধা দেয়া কি উচিত? Mr. X যদি হত্যা করে তারপর সেটা কি অপরাধ হবে,তার কাজটা কি
খারাপ হবে? তার কাজে কিন্তু কিচ্ছু পরিবর্ত ন করছে না,ক্ষতি করা হল কারোর অবস্থা খারাপ করা যা
অন্যথায় হত না,এই সংজ্ঞা অনুসারে তার তো কোন ক্ষতি হচ্ছে না।তারপরও কাজটা কেন অপরাধ?
 বাস্তবেও এই ধরণের ঘটনা পাওয়া যায় যেমন- ডাক্তার কোন টার্মিনালি ইল(Terminally ill) রোগীকে
হত্যা করলে।এইখানে কিন্তু নতু ন কারোর অবস্থা খারাপ করা হচ্ছে না, সে এমনিতেও মারা যেত বরং
রোগীর কষ্ট পাওয়াটা থাকছেনা ফলে সুখ সর্বাধিক হচ্ছে।তারপরও কিন্তু এটিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য
করা হয়।
 হার্ম প্রিন্সিপালের যতগুলো সমস্যা দেখানো হল প্রত্যেকটির যথাযথ উত্তর না পাওয়ার আগ পর্যন্ত হার্ম
প্রিন্সিপাল মেনে হবে না,উত্তর ছাড়া প্রমান ছাড়া আমরা কেউ লিবারালিজম মানতে বাধ্য না। হার্ম
প্রিন্সিপাল কেন মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নির্ধারণের মানদণ্ড হবে? কেন
সার্বজনীনভাবে মেনে নিতে হবে এই হার্ম প্রিন্সিপাল? কেন মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ হত্যা করে জোরপূর্বক
চাপিয়ে দেয়া হবে লিবারালিজমের মানদণ্ড? কিসের ভিত্তিতে আমরা একে মেনে নিব?কেন প্রমাণ ছাড়াই
,এত সমস্যার দিকে না তাকিয়ে ,হার্ম প্রিন্সিপাল নৈতিকতার মানদণ্ড হিসেবে ধরে নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে?
হার্ম প্রিন্সিপালকেন হবে নৈতিকতার পরম মানদণ্ড?কেন?

References:-
অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়, রাফান আহমেদ
On Liberty,John Stuart Mill
The Collapse of the Harm Principle
Civilization,John Stuart Mill
A Few Words on Non Intervention
Offences and Defences: Selected Essays in the Philosophy of Criminal Law,John
Gardner
Liberalism's Limits, David Goldberg
The Law of peoples,John Rawls
Toward a Political Philosophy of Race, Falguni Sheth
The Problems With Liberalism,Mohammed Hijab
Anarchy,State and Utopia-Robert Nozick
Post Written by : Ishrak Ahmed (Me)
''Everything good I have written is from Allah, every mistake is from me''
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------

Secularism and the illusion of religious freedom


-Part 1
বিষয়বস্তুঃ Introduction
Secularism as a religion
''Secularism never killed anyone'' and ''Secular Neutrality'' Myth
Myth of Religious Freedom
Religious Minority Rights in Islam
Introduction-সেকু লারিজম অনেক বৃহৎ পরিসরের একটা কনসেপ্ট,সেকু লারিজম শুধু রাজনৈতিক দর্শনের মধ্যে
সীমাবদ্ধ কিছু না।ধর্মের উপর নির্ভ র করা ছাড়াই মানুষ নিজের যুক্তি-বুদ্ধি,অভিজ্ঞতা,সমসাময়িক প্রয়োজন ইত্যাদির
উপর ভিত্তি করে কোনকিছু বিবেচনা করা চিন্তার ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা,যার বিখ্যাত নাম এনলাইটেনমেন্ট। সাধারণভাবে
রাষ্ট্রীয় সেকু লারিজমের ডিকশনারি ডেফিনিশন, দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ধর্ম জরিত হওয়া উচিত
নয় এমন বিশ্বাস।

 রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার মুল কথা হল ধর্ম ও রাষ্ট্রকে আলাদা রাখা(Separation of Church and
State) অর্থাৎ রাষ্ট্রের আইনের উৎস কোন ধর্ম হবে না,রাষ্ট্র ধর্মীয় বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিবে,রাষ্ট্রের চোখে
সকল ধর্ম সমান,সবাই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে,রাষ্ট্রের কোন বিষয়ে ধর্মীয় হস্তক্ষেপ থাকবে
না।

এখানে শুরুতেই বেশ কিছু জিনিস লক্ষণীয় যেমন-আইনের বৈশিষ্ট্য-

 ১-কোন আইন সম্পূর্ণ ভয়েডে তৈরি হয় না,আইন তৈরির মূল বিষয়ই থাকে আইনটা কতটু কু ন্যায্য অথবা
কতটু কু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করছে অর্থাৎ বাই ডেফিনিশন আইন কোন নৈতিক ফ্রেমওয়ার্কে র ভাল-
খারাপ,ন্যায়-অন্যায়ের ধারনা থেকে তৈরি হয়। অর্থাৎ রাষ্ট্র কোন নৈতিক ফ্রেমওয়ার্ক কে গ্রহণ করেই আইন
তৈরি করে
 ২- আইন রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের উপর প্রভাব রাখে,আইনের পরিসর সবখানে, ব্যাক্তি-সমাজজীবন
সবখানে। সকল ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের আইনের আনুগত্য করতে নাগরিক বাধ্য।

ধর্মের বৈশিষ্ট্য-

 ১- ধর্মের সংজ্ঞা কি? ধর্ম বলতে আসলে কি বোঝায়, ধর্মের কোন সংজ্ঞার ব্যাপারে একাডেমিক দার্শনিকদের
মধ্যে কোন ঐকমত নেই। এ বিষয়ে একটা পপুলার ধর্মের সংজ্ঞা দেন Emile Durkheim, ধর্ম হল- ''পবিত্র
বস্তুর সাথে সংযুক্ত বিশ্বাস এবং অনুশীলনের সামগ্রিক ব্যাবস্থা যা বিশ্বাসীদের নিয়ে একটি নৈতিক সম্প্রদায় সৃষ্টি
করে'' "a unified system of beliefs and practices relative to sacred things, that is to say
things set apart and forbidden - beliefs and practices which unite into one single
moral community called a church, all those who adhere to them."ধর্ম হওয়ার জন্য কোন
আকাশে থাকা দেবতা বা বিশ্বজগতের স্রষ্টা ঈশ্বরের বিশ্বাস থাকা প্রয়োজনীয় না যেমন- বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম
ইত্যাদি ধর্মে কোন স্রষ্টায় বিশ্বাস রাখা বা তার উপাসনা করা হয় না।একভাবে বলা যায়,ধর্ম হল বিশ্বাস,নৈতিক
দর্শন,কিছু বিধি-বিধানের সমষ্টি,কিছু পবিত্র প্রতীক, কোনকিছুর নিঃশর্ত আনুগত্য করা। ধর্ম মানবজীবনের
নির্দি ষ্ট উচিত-অনুচিতের ধারণা,নৈতিক ফ্রেমওয়ার্ক ।
 ২.ধর্মের পরিসর-সব ধর্ম কিছু রিচু য়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বিষয়টা এমন না। অনেক সময়ই ধর্মের
সামাজিক আচার আচরণের রীতি নীতি থাকে যেগুলা শুধু ব্যক্তিজীবনে সীমাবদ্ধ না। এমনকি রাষ্ট্রীয়
নীতি,সমরনীতি নিয়েও কোন ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে।যেমন- ইহুদিদের হালাকা, মুসলিমদের শরিয়া। ধর্ম
তার অনুসারীদের থেকে সকল ক্ষেত্রে নিঃশর্ত আনুগত্য দাবি করে। ধর্ম বলে দেয় একজন মানুষের বিপরীত
লিঙ্গের প্রতি কীরূপ ব্যাবহার হওয়া উচিত,কাকে বিয়ে করা উচিত,কাকে বিয়ে করা অনুচিত,সমলিঙ্গের
বিবাহের ক্ষেত্রে কীরূপ দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত,মানুষকে কোন কাজে বাধা দেয়া উচিত কোন কাজের আদেশ দেয়া
উচিত,নিজের বাচ্চাকে কি শেখানো উচিত,গণতন্ত্রের প্রতি কীরূপ দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত,ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি
কীরূপ দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত,কোন আইন রাখা উচিত,কিভাবে ধর্ম প্রচার করা উচিত,কখন প্রতিবাদ করা
উচিত।

Secularism as a Religion-
প্রথমত- সংজ্ঞার দিকে খেয়াল করলে বোঝা যায়,সেকু লারিজম নিজেই একটি ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Emile Durkheim ধর্মের সংজ্ঞা দেন,
"a unified system of beliefs and practices relative to sacred things, that is to say things set
apart and forbidden - beliefs and practices which unite into one single moral community
called a church, all those who adhere to them."
''পবিত্র বস্তুর সাথে সংযুক্ত বিশ্বাস এবং অনুশীলনের সামগ্রিক ব্যাবস্থা যা বিশ্বাসীদের নিয়ে একটি নৈতিক সম্প্রদায় সৃষ্টি
করে''
এখানে ধর্ম হওয়ার জন্য যেসব বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন তার সবই সেকু লারিজমের মধ্যে পাওয়া যায়-
১-পবিত্র বস্তু এবং এর সাথে সম্পৃক্ত বিশ্বাস ও প্র্যাকটিস-

 সেকু লারিজমে কিছু পবিত্র বিশ্বাস রাখা হয়, বিশ্বাস রাখা হয় রাষ্ট্রে, রাষ্ট্রের জাতীয়তায় এবং সেই সেকু লার
রাষ্ট্রে গৃহীত নৈতিকতার মানদণ্ডের প্রতি। সেকু লারিজম নিজস্ব পবিত্র সিম্বল থাকে যেমন-জাতীয়
পতাকা,স্মৃতি সৌধ ইত্যাদি।যাকে রাষ্ট্র পবিত্র জ্ঞান করে যা অবমাননা করা গর্হিত কাজ বলে বিবেচনা করা হয়।
সেকু লারিজমে পবিত্র রিচু য়ালও থাকে যেমন- জাতীয় সঙ্গীত, রাষ্ট্রের শহিদদের স্মরণ, স্বাধীনতা দিবস সহ
বিভিন্ন দিবস উদযাপন ইত্যাদি।এগুলোকে সেকু লার রাষ্ট্রের নাগরিকরা নিজ মনে পবিত্রতার সাথে ধারণ করে।
আমরা নিজেদের পরিবেশের দিকে খেয়াল করলেই সত্যতা অনুধাবন করতে পারব
 শুধু প্রাচ্যের রক্ষণশীল রাষ্ট্র নয়, সবসময় ফ্রিডম অফ স্পিচ, ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশানের বুলি আওড়ানো
পশ্চিমা রাষ্ট্ররাও এইসব পবিত্র সিম্বলকে বা রিচু য়ালকে অবমাননা করা সামাজিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে মেনে নেয় না।
সর্বদা বাকস্বাধীনতার কথা বলা ফ্রান্সও পতাকা অবমাননার আইন পাশ করে।এই আইন অনুসারে ফ্রান্সের
জাতীয় পতাকা নষ্ট করা, অবমাননা করা বা অপবিত্র করা অপরাধমূলক কাজ।
 লন্ডনের সেনোটাফ,একটি স্মৃতিসৌধ যা তৈরি করা হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং তার পরের যুদ্ধগুলোতে
নিহত বৃটিশ সাম্রাজ্যের সৈনিকদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে।এখানে মৃতদের স্মরণ করার জন্য প্রতীক হিসেবে পপি
ফু লের প্রচলন।২০১০ সালে ২১ বছরের এক তরুণ, বিক্ষোভের এক পর্যায়ে সে সেনোটাফের ওপর চড়ে বসে।
এর ফলে তাকে ১৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।২০১১ সালে এই দিনে ইংল্যান্ডে এক ব্যক্তি দুইটি প্লাস্টিকের
পপি ফু ল পুড়িয়ে ফেলে। একারণে পুলিশ তাকে কোর্টে হাজির করে। আদালত উক্ত ব্যক্তি যথারীতি দোষী
সাব্যস্ত হয়।এমনকি ২০১৬ সালে টপ গিয়ারের একটি পর্বের শুটিং করা হয় সেনোটাফের কাছে।সেটা নিয়েও
ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়,উপস্থাপক ক্রিস ইভান্সকে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়।
 রাষ্ট্রের এই বিভিন্ন বিভিন্ন মাধ্যমে পবিত্রতা আরোপের অবস্থাকে অনেকে ''civil religion'' বলে সংজ্ঞায়ন
করে।জাঁ জ্যাক রুশো সর্ব প্রথম তার লেখা Social Contract এ Civil Religion টার্মটা ব্যাখ্যা করেন।
পরবর্তীতে একডেমিক সোশিয়লজির ফিল্ডে আসে civil religion,রাষ্ট্রের জাতীয় পবিত্রতার ধর্ম,রাষ্ট্র নিজের
পবিত্র রিচু য়াল,সিম্বল,স্থান,কাল,মূল্যবোধ ইত্যাদি দ্বারা যেন জাতীয় ধর্ম তৈরি করছে।Robert Bellah তার
আর্টি কেল Civil Religion in America এ,American Civil Religion নিয়ে আলোচনা করেন,এ বিষয়ে
তার আরও কিছু উল্লেখযোগ্য বই আছে যেমন-Varieties of civil religion(১৯৮০),The Broken
Covenant: American Civil Religion in Time of Trial(১৯৭৫)।Emilio Gentile তাঁর Politics
as Religion(২০০৬) বইয়ে Political Religion,Civil Religion নিয়ে দেখান,অনেক সময় রাষ্ট্রের গৃহীত
আদর্শগুলো এত বেশি সাংস্কৃ তিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা পায় যে এটা স্বতন্ত্র ধর্মের জায়গা নিয়ে নেয়।

2-নৈতিক ফ্রেমওয়ার্ক ,বিশ্বাস এবং নৈতিক সম্প্রদায়-

 ধর্মনিরপেক্ষতা আইন তৈরি করে কোন নৈতিক ফ্রেমওয়ার্কে গ্রহণ করে। কোন সত্য বলে বিশ্বাস করা নৈতিক
ফ্রেমওয়ার্ক থেকেই,যাকে বলা যায়,স্রষ্টাহীন ধর্মের ভিত্তি থেকেই যেমন-
লিবারালিজম,ন্যাশনালিজম,হিউম্যানিজম,ফ্যাসিজম ইত্যাদি।
 সেকু লারিজমের নিজস্ব ওয়ার্ল্ড ভিউ আছে।সেকু লারিজম, লিবারালিজম, হিউম্যানিজম যে সত্য নৈতিক
মানদণ্ড তার কোন প্রমাণ নেই,এটা বিশ্বাসের জায়গা।প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস করতে হবে,সেকু লারিজম নিজেকে
উপস্থিত করে স্বপ্রমানিত সত্য(self evident truth) হিসেবে।
 সেকু লার রাষ্ট্রে প্রত্যেকে এই নৈতিক মানদণ্ড অনুসারে জীবন পরিচালনা করতে বাধ্য,প্রত্যেক নাগরিক
সেকু লার রাষ্ট্রের সেকু লার নৈতিক ফ্রেমওয়ার্ক থেকে আসা আইন অনুসারে জীবনযাপন করতে বাধ্য।এভাবে
একটা ঐক্যবদ্ধ সম্প্রদায় গঠন করে সেকু লার রাষ্ট্র,যারা মিলে হয় এক জাতি,একই রাষ্ট্রের নাগরিক,একই রাষ্ট্রে
বিশ্বাসী।সবাই রাষ্ট্রের পবিত্র ধারণার প্রতি বিশ্বাসের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়
 অর্থাৎ এখানে ধর্মের সংজ্ঞার সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান,পবিত্রতা,বিশ্বাস, রিচু য়াল,নৈতিকতা,ঐক্যবদ্ধ সম্প্রদায়
ইত্যাদি।অর্থাৎ সেকু লারিজম নিজেই এখানে ধর্মের স্থানে সমাসীন হয়।

বিষয়টা সহজ করার জন্য তু লনা দেই-

 -পূজা হয় এখানে সেকু লার রাষ্ট্রের,রাষ্ট্র নিজেকে বসায় ঈশ্বরের আসনে।ঈশ্বর হল এমন এক সত্ত্বা যার
উপাসনা করা হয় অথবা নিঃশর্ত আনুগত্য করা হয়,ধর্মনিরপেক্ষতায় রাষ্ট্র নিজেকে সেভাবেই উপস্থিত
করে,সবাই রাষ্ট্রের কথা মেনে চলতে বাধ্য,সেকু লার রাষ্ট্রের আনুগত্য করতেই হবে।সকল ক্ষেত্রে রাষ্ট্র নিজে
নির্ধারণ করবে আইন করে আপনার পুরো জীবনে কি কি করতে পারবেন কি কি করতে পারবেন না, কোনটা
উচিত-অনুচিত এটা রাষ্ট্র আপনাকে শিখাবে।
 -রাষ্ট্র তৈরি করে বিভিন্ন স্বতন্ত্র পরিচয় যাকে রাষ্ট্র ''আসল পরিচয়'' বা মুল পরিচয়রূপে গ্রহণ করতে বাধ্য
করে,ভাষাভিত্তিক পরিচয় , নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পরিচয়কে রাষ্ট্র প্রধান ও শাশ্বত হিসেবে
হাজির করে যা জাতীয়তার উদ্ভব ঘটায়।
 -- রাষ্ট্রের নাগরিক সকলের দায়িত্ব থাকে নিজ রাষ্ট্রকে ভালবাসা।দেশপ্রেমকে সবচেয়ে মহৎ গুণরূপে নির্ধারণ
করা হয়। ঠিক যেমনটা- ইসলামকে ভালোবাসা প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব এবং সবচেয়ে মহৎ গুণ।
 -রাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থায় সেকু লার ধর্মের শিক্ষা দেয়া হয়,একেবারে ছোট বয়স থেকেই। রাষ্ট্রের মতাদর্শগুলোকে
প্রচার করা হয় সুমহান হিসেবে এবং বিশ্বাস করতে শেখানো হয়।পাঠ্যপুস্তকের পাতায় পাতায়
জাতীয়তাবাদ,অসাম্প্রদায়িকতা/ধর্মনিরপেক্ষতার শিক্ষা। প্রেস,মিডিয়া সবকিছু করে রাষ্ট্রের প্রচারণার কাজ।
ঠিক যেমনটা ইসলামের দাওয়াতি কাজে করা হয়।
 -সেকু লার রাষ্ট্রের আছে নিজস্ব পবিত্রতার ধারণা,পবিত্রতার কতগুলো সিম্বল তৈরি করে রাষ্ট্র যেমন-জাতীয়
পতাকা,জাতীয় সঙ্গীত,শহিদ মিনার, জাতির স্থপতি ইত্যাদি।রাষ্ট্র এদের ঘিরে নিজস্ব রিচু য়াল তৈরি
করে,জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় দাঁড়ানো, শহিদ মিনারে খালি পায়ে যাওয়া এগুলো রাষ্ট্রীয় রিচু য়াল,যা
এখানে পবিত্রতা আরোপ করে। ঠিক যেমন-মুসলিমদের আযানের সময় সকল কাজ বন্ধ রাখতে হয়,মসজিদে
খালি পায়ে প্রবেশ করতে হয় পবিত্রতার কথা ভেবে।
 -রাষ্ট্রের থাকে নিজস্ব রিচু য়াল যেমন- শহীদ মিনারে ফু ল দেয়া,শ্রদ্ধা প্রদর্শন,বৈশাখের মঙ্গলশোভা
যাত্রা,স্মৃতিসৌধে ভ্রমণ,মুজিববর্ষ উদযাপন ইত্যাদি পবিত্র রিচু য়াল ঠিক যেমন ধর্মের স্বতন্ত্র পবিত্র রিচু য়াল
থাকে।
 -রাষ্ট্রের থাকে নিজস্ব বিশেষ পবিত্র দিবস বা উৎসব যা সবচেয়ে জাকজমক ও শ্রদ্ধার সাথে উদযাপন করা হয়
যেমন- স্বাধীনতা দিবস,শহীদ দিবস,বিজয় দিবস,পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি আলাদা একটা আমেজ নিয়ে আসে
এমনকি পুরো একটা মাসকেও উৎসবেরর মধ্যে ধরা যেতে পারে-ভাষার মাস।ঠিক যেমন- ইসলামের উৎসব
উদযাপিত হয় ঈদ উল ফিতর, ঈদ উল আযহা ইত্যাদি,থাকে আনন্দের রমজান
 -কেউ পবিত্র পতাকাকে লাঞ্ছনা করলে,পুড়িয়ে ফেললে তা হয় রাষ্ট্র অবমাননা,তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী গণ্য করা হয়
এবং কর্ম অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহীকে দেয়া হয় শাস্তি।ঠিক যেমনটা পবিত্র কু রআনকে বা ধর্মের পবিত্র প্রতীককে
লাঞ্ছনা করলে,পুড়িয়ে ফেললে তা হয় ধর্ম অবমাননা।ধর্ম ধর্মদ্রোহীতার শাস্তি প্রদান করে।
 -রাষ্ট্রদ্রোহকে গণ্য করা হয় নিকৃ ষ্টতম অপরাধ।রাষ্ট্রের জন্য হুমকি অথবা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এমন
মানুষদের সর্বনিকৃ ষ্ট বলে গণ্য করা হয়,রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ যারা করে তাদের বলা হয় রাষ্ট্রদ্রোহী,সন্ত্রাসী।তাদের
জন্য থাকে কঠোরশাস্তি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত।রাষ্ট্র তার প্রতি সকল হুমকিদের যথাসম্ভব দমন করে,যাকে বলে
উগ্রবাদ দমন।ঠিক যেমন- ধর্ম নিজের ধর্মদ্রোহীদের শাস্তির কথা বলে, ইসলামের থাকে হারবী,মুরতাদ যারা
ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে,তাদের জন্য থাকে হুদুদ।
 - রাষ্ট্রের জন্য জীবন দেয়াকে সবচেয়ে মহৎ কাজ বলে মহিমান্বিত করা হয়,রাষ্ট্রের রক্ষায়-রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় যারা
জীবন দেয় তাদের দেয়া হয় সর্বোচ্চ সম্মান,তারা হল ''শহীদ''।এখানে আলাদাভাবে তু লনা উল্লেখ করার
প্রয়োজনই নেই
 -রাষ্ট্রের থাকে সংবিধান-রাষ্ট্রের বাণী যা মানতে প্রত্যেক নাগরিক বাধ্য, ইসলামের থাকে আল কু রআন-স্রস্টার
বানী যা মানতে প্রত্যেক মুসলিম বাধ্য।
 মৌলিক বিষয় এখানে স্পষ্ট ধর্মনিরপেক্ষতা আদতে কোন নিরপেক্ষ কিছু না,সে নিজেই একটি ধর্মভাব হাজির
করে।যেখানে ঈশ্বর রাষ্ট্র,ধর্মগ্রন্থ সংবিধান,স্বতন্ত্র পরিচয় নাগরিক(বাঙালি/আমেরিকান/'মানুষ' ইত্যাদি),সওয়াব
রাষ্ট্রকে ভালোবাসা-গুনাহ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচার করা,হাশর এখানে কোর্ট ,জাহান্নাম এখানে কারাগার বা ফাঁসির
দড়ি,জি হা দ এখানে রাষ্ট্ররক্ষা-উগ্রবাদ দমন-সেনা অভিযান,মু জা হি দ এখানে আর্মি-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী,হারবি-মুরতাদ-খারেজী এখানে সন্ত্রাসী-রাষ্ট্রদ্রোহী-উগ্রবাদী,দাই এখানে প্রেস,মিডিয়া,শিক্ষাব্যাবস্থার
লোকজন,দাওয়াহ এখানে জাতীয়তাবাদ,অসাম্প্রদায়িকতা,মানবতাবাদ,উদারবাদ ইত্যাদির শিক্ষা, আকিদা
এখানে সেকু লারিজম,ন্যাশনালিজম, হিউম্যানিজম,লিবারালিজম,সোশালিজম ইত্যাদি বিশ্বাস,এই নৈতিক
দর্শনগুলাই এখানে প্রদান করে শরিয়া,সবমিলিয়ে তৈরি হয় সেকু লার দ্বীন।

''W.T Cavanaugh তার বই Migration of the Holy(২০১১)-এ দেখাচ্ছেন, যদিও ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতার কথা
বলা হয়, তবে আসল কথা হলো, পবিত্রতার ধারণা চার্চে র বদলে রাষ্ট্রের প্রতি স্থানান্তরিত হয়। চার্চে র ভু মিকা দখল করে
নেয় জাতিরাষ্ট্র,জাতিরাষ্ট্রই হয়ে উঠে আধুনিক চার্চ ।যাকে তিনি migration of the holy বলে অভিহিত করেন।তিনি
তাঁর Myth of religious Violence (২০০৯) বইয়ে দেখান, ধর্মসাপেক্ষতা-ধর্মনিরপেক্ষতা, ধর্ম-রাজনীতি এই যে
যুগ্মবৈপরীত্ব বা বাইনারিসমূহ এগুলো পশ্চিমা আবিষ্কার।তিনি এই বইটিতে প্রায় চল্লিশটি উদাহরণ দিয়ে দেখান যে, "ধর্ম
সমস্যা আর রাষ্ট্র সমাধান" এটি ভু য়া কথা।সেকু লার নেশন স্টেটকে সবকিছুর দাওয়াই ভাবা সমাধান তো নয়ই বরং
একটা সমস্যা।হোসে কাসানাভোর ফ্রেইজ ব্যবহার করে তিনি ধর্মের(ক্যাথলিক বনাম প্রোটেস্টান্ট) নামে পরিচালিত যুদ্ধ
যে আসলে "wars of early modern European state formation" বা "প্রাক-আধুনিক ইউরোপীয় জাতিরাষ্ট্র
গঠনের যুদ্ধ" সেটিকে সামনে আনেন। মার্টি ন লুথার কিং জুনিয়র ১৯৫৩ সালের জুলাই মাসে ছোট ছোট তিনটি
বেতার-কথিকা প্রচার করেন। The false God of Science, The false God of Nationalism, The false
God of Money এ শিরোনামত্রয়ীতে। "জাতীয়তাবাদের মিথ্যা খোদা" কথিকায় তিনি দেখান, একালে জাতীয়তাবাদ
ধর্ম হয়ে উঠেছে, আর এই জাতীয়তাবাদের আকীদা-বাক্যঃ"My country---right or Wrong"। তিনি তু লে ধরেন
সেই ১৯৫৩ তেই যে, বিজ্ঞানও একালে ধর্মের জায়গা নিয়ে নিয়েছে, মানি নিয়েছে খোদার জায়গা, সবাই যেন পুজো
করছে রাষ্ট্রের, বিজ্ঞানের আর অর্থের। আর,কার্ল স্মিত তাঁর Political Theology বা রাজনীতির ধর্মতত্ত্ব বইয়ে
দেখাচ্ছেনঃ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ধারণাগুলো "Secularized theological concept"। থিওলোজি থেকে রাষ্ট্রতত্ত্ব-এ
স্থানান্তরিত হয়েছে অনেক ধারণা। ধর্মের Omnipotent God হয়ে যায় 'সেকু লার রাষ্ট্র'-এর Omnipotent Law-
giver। তাঁর মতে, কর্তৃ ত্ব,আইনের প্রাধান্য,পবিত্রতা,মুক্তি,পরিশুদ্ধি ইত্যাদি অনেক ধারণাই ধর্মাগত। প্রকৃ ত প্রস্তাবেই
তো, 'সুনীতি'র বহু ধারণা মানুষের যুগ যুগান্তরব্যাপী ধর্মচর্চার ফল।' সম্ভবত "The Jewish Question" বইয়ে কার্ল
মার্ক্সও বলেনঃ রাষ্ট্র ইহলোকের ধর্ম হতে চায়,আর ধর্মকে রাখতে চায় পারলৌকিক রাষ্ট্র ক'রে। আসলে ধর্ম ও রাষ্ট্রকে
এখানে একাকার বা অভিন্ন ভাবছিনা। বরঞ্চ রাষ্ট্র নিজেকে ধর্ম থেকে বিযুক্তির কথা ব'লে নিজেই কীভাবে নিজেকে
"ধর্মভাবে" হাজির করে ও হাজির রাখে তা দেখানো উদ্দেশ্য।
টি এন মদনের "Secularism in its place" প্রবন্ধটির এই উক্তিটি "The secular is encompassed by the
sacred" মজার। উক্তিটির সহজ মানে হচ্ছে,যেটাকে ধর্মনিরপেক্ষতা বলা হয়,সেটাও ধর্মভাব(The sacred)মুক্ত
নয়।ধর্মনিরপেক্ষতা নিজেও নিজেকে ধর্মের মতোই অনুসরণীয় মনে করে। ধর্ম বলতে যা বুঝি, সেটার আছর
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদেও থাকে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ধর্ম নিরপেক্ষ হইতে যাইয়া নিজেই ধর্ম হয়ে বসে। তালাল আসাদ
দেখান সেকু লারিজম ধর্মের সীমাপরিসীমাও ঠিক করে দেয়, ধর্মকে সংজ্ঞায়িত করে, পাবলিক-প্রাইভেট বিভক্তি সামনে
আনে। তা-ই, সেকু লার রাষ্ট্র প্রয়োজনে ধর্মকে ছাড় দেয়, আবার প্রয়োজনে ধর্মকে সে রিপ্রেসও করে। তালাল আসাদ
অবশ্য "দ্য সেকু লার" ও ",সেকু লারিজম" এর মধ্যে পার্থক্য করেন। তাঁর মতে, The secular is not reducible to
secularism।
ধর্মনিরপেক্ষতার অনেক প্রকার ও প্রকরণ আছে।যেমন, উইলিয়াম ই কনোলি তাঁর " Why I am not a
secularist"(১৯৯৯) বইয়ে মডার্ণ সেকু লারিজমের ভেতরগত অবস্থা উন্মোচনের জন্যে বেশ বিখ্যাত। বিশেষত
কান্টিয়ান( Kantian Secularism) ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের । হেগেলিয়ান সেকু লারিজম ধর্মীয়( এক্ষেত্রে খ্রীষ্টীয়)
যুক্তিকে ব্যবহার করে সেকু লার লজিক প্রস্তুতে। ধর্মীয় যুক্তিকে সার্বজনীন করে ফেললেই তা হয়ে ওঠে সেকু লার।
অবশ্য, হেগেলে সেকু লারিজম খ্রীষ্টধর্মের সম্প্রসারণ। কিন্তু কান্টিয় সেকু লারিজম সেকু লার লজিককে আলাদা করে
ধর্মীয় ঐতিহ্য থেকে, জোর দেয় ",কর্তৃ ত্ব" ও যুক্তির পাবলিক পরিসরে ব্যবহারের উপর। কনোলি মনে করেন, কান্টিও
ও হেগেলীও সেকু লারিজম মিউচু য়ালি এক্সক্লু সিভ নয়। যাহোক, সেকু লারিস্ট বলতে, কনোলি খ্রীষ্টীয় ধর্মের ভেতরে যে
বৈচিত্র্যময় নানা ধারা আছে সেগুলোর প্রতি সহনশীলতাকেও বুঝান। ধর্মীয়সহ নানা দ্বন্দের মীমাংসাকারী প্রতিষ্ঠান
হিশেবে রাষ্ট্রও এক বৃহৎ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের রূপ পরিগ্রহ করে।'''
-স্যার জগ্লুল আসাদ,রাষ্ট্রের ধর্মভাব-ছাড়পত্র
দ্বিতীয়ত, আইন ও ধর্মের বৈশিষ্ট্যগুলা এখানে খেয়াল করেন,স্পট ওভারল্যাপ দেখা যাচ্ছে।আইনের ফিল্ড এবং ধর্মের
ফিল্ড যে সবসময় ভিন্ন হবে এমন হওয়াটাই অসম্ভব, ওভারল্যাপ হবেই।দুইটাই কিছু নৈতিকতার দর্শনের উপর ভিত্তি
করে মানুষের জীবনধারা নিয়ন্ত্রন করে সর্বক্ষেত্রে।দুইক্ষেত্রেই আছে নৈতিকতার প্যারাডাইম এবং তার প্রতি নিজের পুরো
জীবনের আনুগত্য।

 এখন,প্রশ্ন হল কখনো যদি সেকু লারিজমের কোন আইন আর ধর্মের কোন বিধান পালনের সংঘাত দেখা দেয়
তখন একজন ধার্মিক কি করবে,তখন কি সে তার ধর্মীয় স্বাধীনতার যুক্তিতে আইন অমান্য করতে পারবে?
এমন হওয়াটা মোটেও অসম্ভব না, এটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক আব্রাহামিক ধর্মের নৈতিকতার সাথে
সেকু লারিজম,লিবারালিজম, হিউম্যানিজম ইত্যাদি নৈতিক মানদণ্ড মিলবেনা,একইভাবে এইসব নৈতিক
মানদণ্ড থেকে আসা আইন ধর্মের বিপরীত হতে পারে এইটাও খুবই স্বাভাবিক, তখন কি সেকু লারিজম ধর্মীয়
স্বাধীনতা রাখতে দিবে?
 সোজাসাপটা উত্তর হচ্ছে-না,এই অনুমতি সেকু লারিজম দেয় না,সে সীমা নির্ধারণ করে কতটু কু ধর্ম পালন
করলে তা সেকু লার ধর্মের জন্য সমস্যাজনক না,সে নিজে বেঁধে দেয় ধর্মের সীমা,কতটু কু ধর্মপালন করবে ঠিক
যেমন একটা থিওক্রেসি নিজের জন্য হুমকি না হয় এভাবেই ধর্মের স্বাধীনতাকে বৈধতা দেয়,ধর্মের বিধান
লঙ্ঘন করতে পারবা কিন্তু সেকু লার ধর্মের সংবিধান লঙ্ঘন করতে পারবানা,সোজা হিসাব।(মজার ব্যাপার,
ইতিহাসে এমন ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র ছিল যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা এখনকার অনেক সেকু লার রাষ্ট্রের চেয়েও বেশি)

''সবচেয়ে বড় বিপদগুলোর একটি হচ্ছে সেকু লার ধর্ম-রাষ্ট্র পূজা।”-নোয়াম চমস্কি


(Note:-এটা বড় একটা আর্টি কেলের প্রথম অংশ।লম্বা পোষ্ট সাধারণত অনেকে পড়তে ধৈর্য হারিয়ে ফেলে এবং
আমার সর্বশেষ লেখা পোস্ট করার পর অনেকে সাজেস্ট করেছেন খণ্ড খণ্ড করে দিতে,তাই Secularism এর
সিরিজের বাকি অংশ পরে প্রকাশিত করা হবে।)
চলবে...
Written by: Ishrak Ahmed
সম্পাদনায়- Asif Mahmud ভাই

—-----------------------------------------------------------------------------------------------------------

Secularism and illusion of religious freedom


Part 1- (https://www.facebook.com/.../permalink/1333004960434144/)
(Part 2)
''Secularism has never killed anyone'' and ''Secular neutrality'' Myth
একটা পপুলার মিথ হল সেকু লারিজম নিরপেক্ষ এবং অহিংস একটা দর্শন।সম্প্রতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল
ম্যাক্রন গর্ব করে বলেছিল,''secularism has never killed anyone'' ঐতিহাসিকভাবে এর বিপরীতে অজস্র
উদাহরণ আছে।এখানে তাঁর নিজের ফ্রান্স থেকেই তাহলে দেখা যাক সেকু লারিজম নিয়ে তার কথার সত্যতা
কতটু ক,সেকু লারিজমের নিরপেক্ষতা নিয়ে মিথের অসারতা ফ্রান্সের কেস আলোচনা করলেই বোঝা যাবে।
সেকু লারিজম বোঝার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হল ফ্রান্স,সেকু লারিজমের পুণ্যভূ মি।ইউরোপীয় অঞ্চলে বলা যায়
বিখ্যাত ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমেই সুচনা হয় সেকু লারিজমের।ফ্রান্স ঐতিহ্যগতভাবে laïcité-ধর্মনিরপেক্ষতাকে নিজের
অবিচ্ছেদ্য মূলনীতি হিসেবে বিশ্বাস করে আসছে। laïcité ফ্রান্সের সবচেয়ে অলঙ্ঘনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে বিশ্বাস
করা হয়।
ফরাসি বিপ্লব- ফ্রান্সের সেকু লারিজমের উদ্ভব,নিরপেক্ষ কিছু ছিল না,ছিল রক্তাক্ত,চরম আগ্রাসী। রেভলিউশনারিরা
ক্ষমতার আসার পর ''ধর্মনিরপেক্ষতার প্রসার'' শুরু করে,যাকে বলে ডিক্রিশ্চিয়ানাইজেশন। এইসময় চার্চ কে দমন করা
হয়, চার্চে র সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়, ৩০ হাজারেরও বেশি পাদ্রীদের নির্বাসিত করা হয়,বহু চার্চে র মূর্তি ,ক্রু শ,প্লেট
এবং বিভিন্ন উপাসনার প্রতীক ভেঙে ফেলা হয়,ধর্মীয় হলিডে উদযাপন বাতিল করা হয় এমনকি খ্রিস্টান ক্যালেন্ডার
পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়,৪০ হাজারের বেশি গীর্জার বেশিরভাগ জোরপূর্বক বন্ধ করে দেয়া হয়।-(Tallett, Frank
(1991). "Dechristianizing France: The year II and the revolutionary experience")এমনকি নতু ন
নাস্তিক্য ধর্ম তৈরি করা হয় ''ধর্মনিরপেক্ষ মুক্তচিন্তা ও যুক্তির প্রসারে'' যাকে বলে Cult of Reason, বহু ধর্মীয় চার্চ কে
টেম্পল অফ রিজন বানানো হয়,ধর্মীয় উৎসবের পরিবর্তে ''যুক্তির উৎসব''(festival of reason) রাখা হয়।-
(Kennedy, Emmet (1989). A Cultural History of the French Revolution)শুরুতে যেসব পাদ্রী,নানরা
সমর্থন দেয় নি তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে হয় গিলোটীনে শিরচ্ছেদ করা হয়েছে বা দেশ থেকে বিতারিত করে ফ্রেঞ্চ গুয়ানায়
নির্বাসিত করা হয়েছে।যারাই নিজের পুরাতন মৌলিক ধর্মীয় নীতিতে বিশ্বাসী ছিল,সেকু লার মুক্তচিন্তা সমতার এই
বিপ্লবের বিরুদ্ধে ছিল তাদের উপর চলে ‘ভেন্ডি’র গণহত্যা(Vendée)।

 ফ্রেঞ্চ ইতিহাসবিদ François Furet ভেণ্ডি ম্যাসাকার সম্পর্কে বলেন,"not only revealed massacre
and destruction on an unprecedented scale but also a zeal so violent that it has
bestowed as its legacy much of the region's identity ... The war aptly epitomizes the
depth of the conflict ... between religious tradition and the revolutionary foundation of
democracy."( A Critical Dictionary of the French Revolution,p.175)অর্থাৎ তার মতে ''
যুদ্ধটি ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং গণতন্ত্রের বিপ্লবী ভিত্তির মধ্যে ... সংঘাতের গভীরতার চিত্রকে যথাযথভাবে
উপস্থাপন করে।''
 অনেকে এটিকে একটি গণহত্যা(Genocide) হিসেবে সংজ্ঞায়ন করেছে। ফ্রেঞ্চ ইতিহাসবিদ Pierre
Chaunu একে বলেন,''first ideological genocide''
 ঐতিহাসিক Mark Levin এর মতে এটা ছিল,'‘আধুনিক গণহত্যার পূর্বসুরী’'
 ফ্রেঞ্চ ইতিহাসবিদ Reynald Secher ভেন্ডি জেনোসাইড নিয়ে কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ প্রকাশ করেন,তার
একটা বেশ বিখ্যাত বই ''A French Genocide: The Vendée'', তিনি সেখানে দেখান যে এটি ছিল
প্রথম আধুনিক গণহত্যা।যদিও একে গণহত্যা হিসেবে সংজ্ঞায়ন করা উচিত কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে কিন্তু
এই ব্যাপারে সবাই একমত যে ফরাসী বিপ্লবীরা বিপুল হত্যাযজ্ঞ চালায়। ১.৫ লক্ষ থেকে ২.৫ লক্ষ মানুষ মারা
যায় এই হত্যাযজ্ঞে।এটা ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার রক্ষা,ঐতিহ্যগত ধর্মতন্ত্রে বিশ্বাসীদের দমন,এখানে
নিরপেক্ষতার কিছু নেই, আছে রক্ত,আছে সহিংসতা,আছে দমন নিপীড়ন নিষ্পেষণ।
 এরপরে ১৭৯২ সালে ঘটে সেপ্টেম্বর ম্যাসাকার যেখানে ১,১০০-১,৪০০ কয়েদীকে হত্যা করা হয়।
 ফরাসি বিপ্লবের ব্যাপক হত্যা ও ত্রাসের মাধ্যমে টিকে থাকার সময়কে ইসিহাসে বলা হয় ‘ত্রাসের রাজত্ব’
(Reign of Terror)।টেরোরিসম’ (সন্ত্রাসবাদ) বলে যে শব্দটা আজ আমরা ব্যবহার করি, সেক্যূলার ফরাসী
বিপ্লবের সময়টাতেই ফ্রেঞ্চ ‘terrorisme’ শব্দ থেকে তার উৎপত্তি। ফরাসী বিপ্লবের রথীমহারথীদের অন্যতম
ম্যাক্সেমিলিয়ান রবসপিয়ের এ সময় ঘোষণা করে,সন্ত্রাস হল তাৎক্ষনিক, তীব্র এবং অনমনীয় বিচার। সন্ত্রাস
হল শুদ্ধির বিচ্ছুরণ।

যারাই এই বিপ্লবের প্রতি সমর্থন দেয় নি,বিপ্লবের সাথে একত্ব ঘোষণা করে নি,তাদের হত্যা,জেল বা নির্বাসিত করা
হয়েছে এমনকি যদি সন্দেহও হয় কেউ ''মুক্তচিন্তার-স্বাধীনতার-সমতার'' বিপ্লবের বিরুদ্ধে তাহলেও তাকে হত্যা করা
হয়েছে।কমপক্ষে ২০-৪০ হাজার শিকার হয় ত্রাসের রাজত্তের।
https://www.theguardian.com/commentisfree/belief/2015/jan/16/france-much-vaunted-
secularism-not-neutral-space-claims-to-be
https://quillette.com/2019/03/10/the-french-genocide-that-has-been-air-brushed-from-
history/
আলজেরিয়ান গণহত্যা-
আসলে সেকু লাররা ঠিকই বলে,সেকু লার মতাদর্শ ধর্মের মত সহিংস না, কথাটা অবশ্যই সঠিক কারণ সেকু লার
মতাদর্শগুলো ধর্ম থেকে অনেক বেশি সহিংস।
কলোনিয়ালিজমে বিশ্বাসী ফ্রান্স ১৮৩০-১৯৬২ সাল পর্যন্ত আলজেরিয়ায় শাসন চালায়। বিখ্যাত ফরাসী ঐতিহাসিক ও
রাজনীতিবিদ অ্যালেক্সিস দ্য তকিউভিলে তার ‘Democracy in America’(১৮৩৫) গ্রন্থে এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত
দিয়ে বলেছে, ‘আমরা যদি আমাদের চিন্তাধারার প্রতি লক্ষ্য করি, আমাদেরকে প্রায় এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয় যে,
ইউরোপীয়রা মানবজাতির এক ভিন্ন গোত্রভু ক্ত সম্প্রদায়, যেমন ইতর প্রাণীর বিপরীতে মানব সম্প্রদায়। সে তার নিজের
প্রয়োজনে তাদেরকে বশীভূ ত করে এবং যখন তা করতে ব্যর্থ হয় তার বিনাশ সাধন করে।
আলজেরিয়া ছিল মুসলিম অঞ্চল।কলোনিয়াল ফ্রান্স সেখানে মুসলিম সংস্কৃ তি ক্রমান্বয়ে ধ্বংস করার চেষ্টা করে,ফ্রেঞ্চ
আইন অনুসারে আলজেরিয়ানরা ছিল ফ্রেঞ্চ সাবজেক্ট, তাদের ফ্রেঞ্চ সিটিজেন হওয়ার জন্য ইসলামিক আইন ত্যাগ
করা ছিল শর্ত ।

 Frantz Fanon তার Algeria Unveiled এ মুসলিম নারীদের নিকাব উৎখাত করার মাধ্যমে তাদের
সংস্কৃ তি ধ্বংস করার প্রচেষ্টার কথা ব্যাখ্যা করেন। তিনি লিখেন,''"If we want to destroy the structure
of Algerian society, its capacity for resistance, we must first of all conquer the
women; we must go and find them behind the veil where they hide themselves and
in the houses where the men keep them out of sight."
 ফরাসি লেখক ও রাজনীতিবিদ Farancis Jeanson লিখেছেন,'১৯৯৫ সালে শুরু হওয়া আলজেরীয়
স্বাধীনতা আন্দোলন নিছক ধর্মীয় বা জাতিগত কোন আন্দোলন নয়,এটি নিপীড়িত শাসকের পীড়ন থেকে
মুক্তির আন্দোলন।ইসলাম আলজেরীয় মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রেরণা।আলজেরীয়রা প্রথম দিনই
বুঝেছিল ফ্রেঞ্চরা তাদের মুসলিম পরিচয় মুছে দিতে চায়।সুতরাং মুক্তি পেতে হলে ইসলামকে নিয়েই মুক্তি
পেতে হবে।(L'Alge'rie hors,267-268)
 আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মুজাহিদিন বলা হতো।সে সময় ফ্রান্স ও তার দোসররা
শ্লোগান দিত ''আলজেরিয়া ফরাসি'' আর মুজাহিদরা শ্লোগান দিতেন ''আলজেরীয় জাতি মুসলমান,আরব্যবোধ
তার চেতনা'' যেটি ছিল স্বাধীন আলজেরিয়ার স্বপ্ন দ্রষ্টা শাইখ ইবনু বাদিস প্রদত্ত।
 ফ্রান্সের গণহত্যা ও নির্যাতন নিয়ে Henri Alleg একটি বই প্রকাশিত করেন,যার নাম ছিল La Question,
বইটি পরবর্তীতে ব্যান করে দেয়া হয়।

সেকু লার ফ্রান্স তখন প্রায় ১.৫ মিলিয়ন আলজেরীয়কে হত্যা করে এবং ভয়াবহ নির্যাতন করে,আলজেরিয়ানদের হত্যা
করে তাদের হাড়গোর সাবান এবং চিনির ছাঁকনি তৈরিতে ফ্রান্সের মার্সেইতে পাঠানো হতো। তাদের টর্চার মেথডের
ভিতরে ছিল,যৌনাঙ্গে সামরিক অস্ত্র ঢু কিয়ে দেয়া, অঙ্গচ্ছেদসহ আরও বহু ভয়াবহ নির্যাতন।ফ্রান্স আলজেরিয়ায় প্রায়
মোট ৫ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করে।
https://www.trtworld.com/magazine/millions-of-dead-later-algeria-s-war-of-independence-
never-ended-37877
https://www.dailysabah.com/politics/2020/01/29/algerian-president-said-french-massacred-
5-million-erdogan-reveals
নিজের দেশের এই রক্তাক্ত ইতিহাসের পরও ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলল ''secularism has never killed anyone''!!
হাস্যকর,হয় এটা তার চরম মূর্খতা অথবা এটা তার হিপোক্রেসির পরিচয়।
পুরো বিষয়টায় রাষ্ট্র কিন্তু ছিল সেকু লার,কিন্তু সেকু লারিজমের,সেকু লার মতাদর্শের প্রসার ও রক্ষায় চলেছে চরম
নিষ্পেষণ।ধরেন,কেউ ফরাসি বিপ্লবের সময় বলে উঠল, চার্চ বানানো আমার ধর্মীয় স্বাধীনতা,খ্রিস্টবাদের পাবলিকলি
প্রসার ঘটানো আমার ধর্মীয় স্বাধীনতা,ধর্মনিরপেক্ষ এই বিপ্লব যা পাবলিক স্পেস থেকে আমার ধর্মকে সরিয়ে দিচ্ছে
তাকে সমর্থন না দেয়া আমার ধর্মীয় স্বাধীনতা,ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ঐতিহ্যগত ধর্মতন্ত্রে বিশ্বাস আমার ধর্মীয়
স্বাধীনতা বা আলজেরীয় মুসলিম ফ্রেঞ্চ আইন গ্রহণ না করে শরিয়া চাইল,নারীরা নিকাব চাইল,পূর্ণ মুসলিম সংস্কৃ তি ও
আইন চাইল।তার পরিণতি?-হত্যা,জেল,নির্বাসন,দমন,নিপীড়ন,নিষ্পেষণ।এখানে নিরপেক্ষতা নেই,নেই স্বাধীনতা,আছে
দমন নিষ্পেষণ নিপীড়ন আর রক্তের বন্যা।
সহজভাবে বর্ত মানে ফ্রান্সের দিকে তাকালেও বোঝা যায়,সেকু লারিজম নিরপেক্ষ না বরং স্বতন্ত্র একটা পক্ষ।
সেকু লারিজম এখানে ধর্মকে অধিনস্ত করছে, সেকু লার মূল্যবোধের সাপেক্ষে সীমাবদ্ধ করছে,ধর্মকে নিজের মত করে
ডিফাইন করে দিচ্ছে,এখানে সেকু লারিজম নিরপেক্ষ কিভাবে থাকল!?
Separatism Bill and French Islam- ফ্রান্স সেই বিংশ শতাব্দীর শেষ থেকেই ইসলামকে বিকৃ ত করে ফ্রেঞ্চ
ইসলাম প্রসারের কাজ করে আসছে.১৯৯৭ সালে ফ্রান্সের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,'' আমরা ফ্রেঞ্চ ইসলামের
প্রতিষ্ঠা করতে চাই।'' ২০০৩ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,''আজ ফ্রান্সের মুসলিমরা ফ্রেঞ্চ ইসলাম গ্রহণ করেছে।এ
ইসলাম তাদের বংশধারাও বহন করবে।আমরা এমন ইমাম চাই,যারা আমাদের সভ্যতা ধারণ করবে,আমাদের যুবকদের
সাথে কথা বলতে পারবে,আমাদের সাথে আমাদের ভাষায় কথা বলবে।''বর্ত মানে ইমানুয়েল ম্যাক্রন একই উদ্দেশ্য নিয়ে
আগাচ্ছে।
সম্প্রতি নতু ন বিল পাশ করেছে ফ্রান্সের National Assembly, ফ্রান্সে যাকে বলা হচ্ছে ''Separatism Bill''-এর
মূল লক্ষ্য Islamist Separatism দমন করা,ইমানুয়েল ম্যাক্রন Islamist Separatism এর ব্যাখ্যা
দেয়,'“willingness to contravene the laws of the republic, to promote other values … to
organise another society”
''The will of it's ideologists is precisely to turn a part of our citizen because of their
religion,against the republic''
মূলত ফ্রেঞ্চ মূল্যবোধের পরিপন্থী যে ইসলাম।ফ্রান্স রাষ্ট্রের মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ইসলামকেই রাখবে, ফ্রান্সের
মূল্যবোধের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ ইসলামকে প্রচার করে এমন এক প্রজন্ম তৈরি করা এখন অপরিহার্য বলে দাবি
করে ইমানুয়েল ম্যাক্রন।
Separatism Bill-এর কিছু বিষয় হল-
Secularism(laïcité)- রাষ্ট্রের প্রত্যেকের ''সেকু লারিজমের মূলনীতির প্রতি সম্মান ও পাবলিক সার্ভি সে নিরপেক্ষতা''
নিশ্চিত করা।যেমন-ধর্মীয় চিন্তার ভিত্তিতে সুইমিং পুলে লিঙ্গভিত্তিক পৃথকীকরণ করা হবে না বা শুধু ভিন্ন লিঙ্গ হওয়ার
জন্য মেডিক্যাল সার্ভি স নিতে প্রত্যাখ্যান করা যাবে না
বা খাবারের সার্ভি সে শুধু হালাল ফু ড রাখা যাবে না বা সমকামিদের বিয়ের জন্য কেক বানাতে বা কোন সার্ভি স দিতে
অস্বীকৃ তি জানানো যাবে না,সেকু লারিজমের বিরোধী ইসলামের প্রচার করা বা শিক্ষা দেয়া যাবে না, ধর্মনিরপেক্ষতার
মূলনীতিকে সম্মান করতে হবে ও পাবলিক লাইফে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।কেউ পাবলিক সার্ভি সে ধর্মীয় বিশ্বাসের
ভিত্তিতে অন্যথা করলে তাকে শাস্তি দেয়া হবে ৫ বছরের জেল ও €75,000 ফাইন।
ফ্রান্সের “neutrality principle” এর বিস্তৃ ত প্রয়োগ করা হবে অর্থাৎ শুধু পাবলিক সেক্টর কর্মচারী না,এখন প্রাইভেট
কর্মকর্তা যারা পাবলিক সার্ভি স দিচ্ছে তারাও ধর্মীয় সিম্বল ব্যাবহার করতে পারবে না।
Dignity-মানুষের প্রতি,বিশেষভাবে নারীর প্রতি অমর্যাদাবান কোনকিছুর প্রতি আরও কঠোর হওয়া হবে। বহুবিবাহ,
জোরপূর্বক বিবাহ ইত্যাদির প্রতি আরও কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে।বহুবিবাহের জন্য নাগরিকত্ব বাতিল করা হতে পারে।
যদি সন্দেহও থাকে কোথাও জোরপূর্বক বিবাহ হচ্ছে সেখানে রাষ্ট্র আলাদাভাবে হস্তক্ষেপ করবে।উত্তরাধিকার আইনের
ব্যাপারে ছেলে ও মেয়েকে সমান দিতে হবে।কোন ধরনের ভার্জি নিটি সার্টি ফিকেট প্রদান করলে মেডিক্যাল
সার্ভি সদাতাকে ব্যান করা হবে,15,000 euro এবং 1 বছরের জেলের শাস্তি দেয়া হবে।
Oversight of religious practices-লোকাল অথোরিটি যেকোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখবে
যদি জানা যায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি গোত্র,ধর্মীয় বিশ্বাস,লিঙ্গ, সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন ইত্যাদির ভিত্তিতে ''বৈষম্য'',''ঘৃণা'',
''সহিংসতা'' ছড়ানোর মত ধারণা শিক্ষা দিচ্ছে।
ধর্মীয় গ্রুপগুলোকে বাইরে থেকে €10,000 এর বেশি অর্থ অনুদান পেলে তা ঘোষণা করতে হবে, উদ্দেশ্য হল ধর্মীয়
বিষয়ে বৈদেশিক প্রভাব দমন করা।
Oversight of associations-কোন সংস্থাকে সরকারি অনুদান পেতে হলে,সেই সংস্থাকে রিপাবলিকের মূল্যবোধের
প্রতি সম্মান রাখার চু ক্তিতে একটি চু ক্তি সাক্ষর করতে হবে,ফ্রেঞ্চ রিপাবলিকের নৈতিকতার পরিপন্থী কাউকে কোন
অনুদান দেয়া হবে না।
Hate Speech Law- কোন ''হেট স্পিচ'' প্রচারকারী ওয়েবসাইট আরও সহজে ব্লক করে দেয়া হবে।
“separatism” অভিযোগে অভিযুক্ত কাউকে 5 বছরের জেল ও 75,000 euro ফাইন দিতে হবে। কোন পাবলিক
সেক্টর কর্মকর্তার ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে তার ব্যাক্তিগত তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করলে শাস্তি আরও
কঠোর শাস্তির প্রয়োগ করা হবে।
Homeschooling-হোমস্কু লিং নিষিদ্ধ,বাচ্চাদের মেডিক্যাল কারণ বাদে।সবাইকে সেকু লারাইজড শিক্ষা দেয়া স্কু লে
পাঠানো হবে,ঘোষণা করা হয়েছে,''Schools must first and foremost instil the values of the Republic
and not those of a religion, and educate citizens, not worshippers"
National Assembly তে পাশ হওয়া বিলটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করার প্রবল সম্ভাবনা আছে।ফ্রান্সের মূল্যবোধ-
সেকু লারিজম,ফ্রিডম অফ স্পিচ,লিবারাল সংস্কৃ তি ইত্যাদি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক।সাধারণভাবেই বোঝা যায় পুরো
বিলটা ফ্রান্সের সেকু লারিজমকে মুসলিম অধিবাসীদের উপর রাষ্ট্রীয়ভাবে চাপিয়ে দেয়া হবে,ইসলাম পরিপন্থী
কোনকিছুও করতে বাধ্য থাকবে সেকু লারিজমের রক্ষার্থে,আপনি তখন কোন ধর্মীয় স্বাধীনতার দোহাই দিতে পারবেন
না।পুরো বিলটা শুধু সেকু লারিজমের ফ্রেমওয়ার্কে র ভিতরেই হচ্ছে তা নয় বরং সেকু লারিজমের জন্যই হচ্ছে!
https://www.euronews.com/.../here-s-what-you-need-to-know...
https://www.theguardian.com/.../emmanuel-macron-outlines...
https://www.aljazeera.com/.../frances-controversial...
https://www.politico.eu/.../france-law-emmanuel-macron.../
আপনি সেকু লারিজমের বিরুদ্ধে নিজের আব্রাহামিক ধর্মের ধর্মীয় স্বাধীনতার ব্যাবহার না করতে পারলেও সেকু লারিজম
ঠিকই নিজের সেকু লার ধর্মীয় স্বাধীনতা ব্যাবহার করতে পারবে আপনার ধর্মের বিরুদ্ধে।
 বিশ্বের ১২৪ টি দেশে ধর্ম অবমাননা নিয়ে কোন আইন নেই, যেসব দেশে আছে সেখানেও চেষ্টা করা হয় উঠিয়ে
দেয়ার। ফ্রান্সে ইসলামকে নিয়ে কু টু ক্তি করার ঘটনা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। ফ্রান্সের
সেকু লারিজমে ব্লাসফেমি,ধর্মকে উপহাস,কটাক্ষ,অপমান করা, মহানবী সা.কে গালাগালি করা,অশ্লীল জঘন্য
কার্টু ন আঁকা এবং সেটা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রকাশ করা ফ্রিডম অফ স্পিচ,বাকস্বাধীনতা,সেকু লারিজমের মৌলিক
অধিকার।

https://www.theguardian.com/.../macron-wades-into-french...
কিন্তু ফ্রান্সের ''রিপাবলিক ভ্যালু'' সেকু লার মূল্যবোধের বিরোধিতা করা অপরাধ,অর্থাৎ ধর্মকে গালাগাল করা যাবে
ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধকে না।
সেকু লারিজম আপনার ধর্মের অবমাননা করলে সে ঠিকই নিজের সেকু লার স্বাধীনতার দোহাই দিতে পারবে,কিন্তু আপনি
সেই একই সেকু লার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দোহাই দিয়েও সেকু লারিজমের মূল্যবোধকে অবমাননা করতে পারবেন না।
সেকু লারিজম এখানে মোটেও নিরপেক্ষ অবস্থান নিচ্ছে না,সেকু লারিজম এখানে ধর্মকে অধিনস্ত করে,সীমাবদ্ধ
করে,রিডিফাইন করে,অপদস্ত করে।
https://www.fr24news.com/.../the-dangerous-french...
(ব্লাসফেমি এবং সেকু লারিজমের বিষয়ে পলিটিকোর এই আর্টি কেলটা দেখা যেতে পারে,যেটা পরবর্তীতে '' editorial
standards'' এর সাথে পরিপন্থী হওয়ার জন্য পলিটিকো থেকে সরিয়ে দেয়া হয়!)
Written by- Ishrak Ahmed
সম্পাদনায়- Asif Mahmud ভাই
চলবে...

—---------------------------------------------------------------------------------------------------------------

Secularism and Illusion of Religious Freedom


Part-3
(Part 1 এবং 2 নিচে লিংক দেয়া)
Myth of Religious Freedom
ধর্মীয় স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা-
ধর্মীয় স্বাধীনতা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি অধিকার,স্বাধীনভাবে নিজের ধর্ম পালনের অধিকার,এটার অবশ্যই প্রয়োজনীয়তা
আছে।কিন্তু পরম ধর্মীয় স্বাধীনতা(absolute religious freedom),সকল ধর্মের মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজের
ধর্মের সকল কিছু পালন করতে পারবে এটা অসম্ভব একটি ধারণা।সবধরণের রাষ্ট্রই ধর্মীয় স্বাধীনতাকে কোন না
কোনভাবে সীমাবদ্ধ করে,সেকু লার রাষ্ট্রও এই একই কাজটা করে থাকে,কিন্তু সামনে একটা মিথ তৈরি করে যে,
সেকু লারিজম মানুষকে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়,ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেটা দিতে পারে না।Winnifred Fallers Sullivan
তাঁর The Impossibility of Religious Freedom(২০০৫) এ দেখান সেকু লার রাষ্ট্র শুধু রাষ্ট্র ও ধর্মের পৃথকীকরণ
না বরং ধর্মকে নিজের ইচ্ছামত ডিফাইন-রিডিফাইন করে,ধর্মকে নিজের অধিনস্ত করে,ধর্মীয় স্বাধীনতা একটা অসম্ভব
কনসেপ্ট।
বাস্তবিক পৃথিবীতে সেকু লারিজমের অধীনে ধর্মীয় স্বাধীনতার সীমা কতটু কু হওয়া উচিত এটা সরাসরি ICCPR অথবা
UN এর International standards on freedom of religion or belief থেকেই দেখা যায়-

 "Further emphasizes that, as underlined by the Human Rights Committee,


restrictions on the freedom to manifest religion or belief are permitted only if
limitations are prescribed by law, are necessary to protect public safety, order, health
or morals, or the fundamental rights and freedoms of others, and are applied in a
manner that does not vitiate the right to freedom of thought, conscience and
religion;"Commission on Human Rights resolution 2005/40 (paragraph 12) and
Human Rights Council resolution 6/37 (paragraph 14)
 "Freedom to manifest one's religion or beliefs may be subject only to such limitations
as are prescribed by law and are necessary to protect public safety, order, health, or
morals, or the fundamental rights and freedoms of others."-International Covenant
on Civil and Political Rights(ICCPR),Art.18(3)
 অর্থাৎ "কারও ধর্ম বা বিশ্বাসকে প্রকাশ করার স্বাধীনতা কেবল আইন দ্বারা নির্ধারিত সীমাবদ্ধতার অধীন হতে
পারে এবং জনসাধারণের সুরক্ষা,শৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য বা নৈতিকতা বা অন্যের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতা রক্ষা
করার জন্য প্রয়োজনীয় রক্ষার জন্য সীমাবদ্ধ করা যেতে পারে।"

এখানে লক্ষণীয়, ''নৈতিকতা'',''অধিকার'',''স্বাধীনতা'' ইত্যাদি টার্মগুলা খুবই অস্পষ্ট,এদের প্রত্যেকটার ভিন্ন ভিন্ন
ফ্রেমওয়ার্কে ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা আছে।দর্শনে নৈতিকতার ডজনখানেক সংজ্ঞা আছে এখানে কোন নৈতিকতার কথা
এখানে বলা হচ্ছে,একজনের ফ্রেমওয়ার্কে যেটা অধিকার আরেকজনের ফ্রেমওয়ার্কে সেটা অপরাধ এমনটা হওয়াও
স্বাভাবিক, লিবারালিজমের নৈতিকতা,অধিকার, স্বাধীনতা ইত্যাদি সংজ্ঞার সাথে, ইসলামের
নৈতিকতা,স্বাধীনতা,অধিকারের সংজ্ঞা মিলবে না,তাহলে টার্মগুলা ঠিক কোন অর্থে ব্যাবহার করা হচ্ছে,কে নির্ধারণ
করে দিবে নৈতিকতা কি,অধিকার কি,স্বাধীনতা কি উত্তরটা আর যাই হোক একটা সেকু লার রাষ্ট্রে উত্তরটা ধর্ম না।
সেকু লারিজমের মোরাল ফ্রেমওয়ার্ক থেকে সংজ্ঞাগুলা নির্ধারণ করা হয় এবং বেঁধে দেয়া হয় ধর্মের সীমা।

 পুরো বিষয়টা সংক্ষেপে উদাহরণ দিয়ে বুঝাই,-শিশু বলিদান:-কল্পনা করেন, বর্ত মান কোন সেকু লার রাষ্ট্রে প্রাচীন
কেনানাইট ধর্মের অনুসারীরা বাস করছে অথবা একদল মানুষ প্রাচীন কোন কেনানাইট ধর্ম গ্রহণ করল।ধর্মের
একটা রিচু য়াল ছিল দেবতার উদ্দেশ্যে আগুনে পুড়িয়ে শিশু বলিদান, এখন কেউ যদি চাইল্ড সেক্রিফাইস
পালন করে এবং বলে এটা আমাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা তাহলে কি সেটা রাষ্ট্রের মেনে নেয়া উচিত?অবশ্যই না!
ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে এই ধরনের ''বর্বর প্রথা'' কোনভাবেই বৈধতা দেয়া যায় না,ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে কোন
কাজগুলা ন্যায্যতা পেতে পারে তার সীমা তো অবশ্যই থাকা উচিত।

সব রাষ্ট্রই এই সীমা নির্ধারণ করে থাকে,একটা থিওক্রেসিও করে,একটা সেকু লার ডেমোক্রেসিও করে,পার্থক্য শুধু
''বর্বর প্রথা''- এর সংজ্ঞায়, সেকু লারিজমের ফ্রেমওয়ার্কে ''বর্বরতা''- এর স্বতন্ত্র সংজ্ঞা আছে,ধর্মেও বর্বরতার স্বতন্ত্র
সংজ্ঞা আছে। কিন্তু বলা বাহুল্য,সংজ্ঞা দুইটা সাধারণত মেলে না এবং সেকু লারিজম ধর্মের সংজ্ঞাকে গ্রহণ করে না।
যেমন- নিকাব-পর্দা ইসলামের বিধান হলেও সেকু লারিজমে সেটা ''বর্বর'' ''অমানবিক'' ''নারী নিপীড়নের প্রতীক''।
সেকু লারিজম নিজের ইচ্ছামত,ধর্মকে সীমাবদ্ধ করে,যখনই ধর্ম সেকু লারিজমের নৈতিকতার বিরোধী হয়ে
দাড়ায়,সেকু লারিজমের জন্য কোন ধরণের হুমকি আনে তখন সেকু লারিজম আর ধর্মীয় স্বাধীনতা
দেখবেনা,সেকু লারিজম রাষ্ট্র ও ধর্মকে পৃথক করার নামে আদতে ধর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে
উদাহরণ-
হিজাব,নিকাব,বোরকা,টু পি ইত্যাদি ও নানা ধর্মীয় প্রতীক নিষিদ্ধকরণ-
ধর্মনিরপেক্ষতায় পাবলিক স্পেসে ধর্মের প্রভাবকে দমন করে,পাবলিক স্পেস রাষ্ট্রীয় আধিপত্যের অন্তর্গত, সেকু লার
রাষ্ট্রে ধর্ম রাষ্ট্রের উপর প্রভাব বিস্তার করার অধিকার রাখে না, পাবলিক লাইফ চলবে সেকু লারিজম অনুসারে,পাবলিক
স্পেসে অনুপ্রবেশ করাকে ধর্মনিরপেক্ষতার লঙ্ঘন ভাবা হয়।ধর্মনিরপেক্ষতার 'নিরপেক্ষতা'' এর কথা ভেবেই বিভিন্ন
ক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রতীক ব্যান করা হয়,যাকে ''neutrality principle'' বলে।অনেক সময় এর বাইরেও স্বতন্ত্র
নৈতিক(সেকু লার ফ্রেমের) কারণে নিষিদ্ধ করা হয়।যেমন-অনেকক্ষেত্রে হিজাব-নিকাব- বোরকাকে ''নারী নিপীড়নের
প্রতীক'' ''বর্বর'' ''পশ্চাদপদ'' ''উগ্রবাদের সম্ভাব্য প্রসার'' বলে বিবেচনা করা হয়।পশ্চিমজুড়ে হিজাব-বোরকা-নিকাবের
প্রতি নেতিবাচক আইনি পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়।এমনকি দেখা যায় অধিকাংশ মুসলিম থাকা সেকু লার রাষ্ট্রেও
হিজাব-বোরকা-নিকাব ব্যান করা হয় এবং অনেক মুসলিম প্রধান দেশে বোরকা-নিকাব-হিজাব পরিধান করা
নারী,দাঁড়ি-টু পিওয়ালা পুরুষদের প্রতি বৈষম্যের খুবই কমন ঘটনা দেখা যায়।সেখানে বলবেন, হিজাব আমার ধর্মীয়
স্বাধীনতা,ধর্মীয় প্রতীক ব্যাবহার করা আমার ধর্মীয় স্বাধীনতা? না,সেকু লারিজম মানবে না কারণ সেকু লারিজমেরই নীতি
প্রসারিত করতেই এই নিষেধাজ্ঞা,ধর্মীয় স্বাধীনতা সেকু লারিজমের জন্য ক্ষতিকর হলে ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে
না,সেকু লারিজমের জন্যই হিজাব নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। সেকু লারিজম ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে ''বর্বর প্রথা'' ''নারীবিদ্বেষী
প্রথা'' এর বৈধতা দিবে না।

 তাজিকিস্তান- তাজিকিস্তানে ৯৮ শতাংশ মুসলিম কিন্তু এইখানকার আইনে হিজাব এবং দাঁড়ি নিষিদ্ধ!
 https://www.independent.co.uk/.../tajikstan-muslim-hijabs...
 https://www.bbc.com/news/world-asia-35372754
 আজারবাইজান- আজারবাইজানের প্রায় ৯৬%-৯৯% মানুষ নিজেকে মুসলিম দাবি করে কিন্তু এই রাষ্ট্রের
আইনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং সরকারি ক্ষেত্রে হিজাব নিষিদ্ধ
 https://iwpr.net/global.../azerbaijani-hijab-ban-controversy
 তিউনিশিয়া-তিউনিশিয়ায় প্রায় ৯৯% মুসলিম কিন্তু এখানে পাবলিক প্রতিষ্ঠানে বোরকা নিষিদ্ধ এবং
হিজাবের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যায়।
 https://www.reuters.com/.../uk-tunisia-niqab-security...
 http://news.bbc.co.uk/2/hi/africa/5382946.stm
 মরক্কো- মরক্কোতে বোরকা তৈরি,বিক্রয়,উৎপাদন নিষিদ্ধ এবং বোরকা-হিজাবের জন্য নানা সময় বৈষম্যের
স্বীকার হতে হয়
 https://www.bbc.com/news/world-africa-38574457
 চাদ- আফ্রিকান রাষ্ট্র চাদে অধিকাংশ মুসলিম সেখানেও বোরকা নিষিদ্ধ নিরাপত্তা রক্ষার কারণে
 https://www.bbc.com/news/world-africa-33166220

ফ্রান্সের বর্ত মান laïcité

 -ফ্রান্সে পাবলিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে হিজাব,বোরকা,খিমার,ক্রু শ অথবা যে কোন ধরনের ধর্মীয় প্রতীক ব্যাবহার করা
নিষিদ্ধ।
 https://www.cambridge.org/.../0A30A102F9FE41BBC9F771D2D4A...
 সেই আলজেরিয়ার গণহত্যার সময় থেকে আধুনিক সময়েও সেকু লার ফ্রান্স নিকাব নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টা
করেছে।ফ্রান্স সর্বপ্রথম ইউরোপীয় রাষ্ট্র যে নিকাব ব্যান করে।নিকাব-পর্দা ইসলামের বিধান হলেও
সেকু লারিজমে সেটা ''বর্বর'' ''অমানবিক'' ''নারী নিপীড়নের প্রতীক''। বলবেন বোরকা পরা আমার ধর্মীয়
স্বাধীনতা? না সেকু লারিজম মানবে না, ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে ''বর্বর প্রথা'' ''নারীবিদ্বেষী প্রথা'' এর বৈধতা দেয়া
হবে না।
 https://indianexpress.com/.../france-problem-with-the.../
 এমনকি বুরকিনি-পুরো শরীর ঢাকা সুইমওয়্যার পর্যন্ত ব্যান করা হয়।ফ্রান্সের নিউজ এজেন্সি AFP এই বিষয়ে
বলে,“she was not wearing an outfit respecting good morals and secularism”
 https://www.theguardian.com/.../french-police-make-woman...
 -ফ্রান্সে একটা পার্কে মেরির মূর্তি তৈরি করা হয়েছিল।সেটাও সরানোর নির্দে শনা দেয়া হয়।সেখানে
বলবেন,একজন খ্রিস্টানের এইটা ধর্মীয় স্বাধীনতা,ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশান?না,সেকু লারিজম মানবে না এর
কারণ সেকু লারিজম নিজেই,সে ধর্মকে পাবলিক ক্ষেত্রে আসতে দিবে না,সেকু লারিজমের জন্যই মেরির মূর্তি
সরানো উচিত।
 https://www.bbc.com/news/world-europe-38196238

সুইজারল্যান্ড-

 সুইজারল্যান্ড সম্প্রতি বোরকা ব্যান করে, এইখানেও একইভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতার যুক্তি অকেজো।ধর্মীয়
স্বাধীনতার জন্য ''বর্বর প্রথা'' ''নারী নিপীড়নের প্রতীক'' ''উগ্র ইসলামের প্রসার'' এর বৈধতা না দেয়া
সেকু লারিজমের জন্য বৈধ।
 https://www.theguardian.com/.../switzerland-on-course-to...
 সুইজারল্যান্ডে মসজিদে মিনার তৈরি করা নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।কারণ ছিল,মিনার একটা ইসলামিস্ট
পলিটিকাল সিম্বল,রাষ্ট্রে শরিয়া আইনের প্রসার রোধ বা সেকু লারিজমের রক্ষার জন্য মিনার ব্যান করা হয়েছে।
 https://www.theguardian.com/.../switzerland-bans-mosque...

জার্মানি-

 জার্মানিতে স্কু লে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিকাব, বোরকা নিষিদ্ধ।


 https://www.infomigrants.net/.../german-state-bans-burqas...
 জার্মানিতে ব্যাভারিয়ান কোর্টে বিচারকার্য বা আইনের সাথে জড়িত নারীদের হিজাব পরিধান করা নিষিদ্ধ কারণ
এর ফলে ''নিরপেক্ষতা'' প্রকাশ পায় না।
 https://www.dw.com/.../germany-bavarian-court.../a-47960676
 জার্মানিতে ''নিরপেক্ষতা'' রক্ষার্থে বিচারকার্যে যুক্তদের হিজাব পরিধান করা নিষিদ্ধ।
 https://www.aljazeera.com/.../german-court-upholds...
 বার্লিনে সব পাবলিক সেক্টরের কর্মচারীদের,পাবলিক প্রতিষ্ঠানে সকল ধরনের ধর্মীয় প্রতীক ব্যাবহার করা
নিষিদ্ধ
 https://yaleglobal.yale.edu/.../berlin-ban-religious-symbols
 বার্লিনে স্কু লে শিক্ষকদের হিজাব নিষিদ্ধ করার রায় দেয় কোর্ট কারণ ছিল ''নিরপেক্ষতা রক্ষা ধর্মীয় স্বাধীনতা
রক্ষা থেকে গুরুত্বপূর্ণ''
 https://www.dw.com/.../germany-berlin-court.../a-43723157
 জার্মানির ১৬ টা স্টেটে স্কু লে শিক্ষকদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ
 https://www.zeit.de/zustimmung...

স্পেন-

 স্পেনে ভিন্ন অঞ্চলে পাবলিকে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেমন- বারসেলোনা
 https://www.bbc.com/news/10316696
 https://www.theguardian.com/.../02/lleida-burqa-ban-spain

ইটালি-

 ইটালির উত্তর অঞ্চল,লম্বার্ডি সহ বিভিন্ন অঞ্চলে বোরকাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে


 https://www.thelocal.it/.../lombardy-bans-the-burqa-and.../
 https://www.theguardian.com/.../05/woman-fined-burqa-italy

নরওয়ে-

 নরওয়েতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোরকা-নিকাব নিষিদ্ধ


 https://www.thelocal.no/.../norway-bans-burqa-and-niqab.../

বসনিয়া-

 বসনিয়াতে কোর্ট বা আইনি প্রতিষ্ঠানে হিজাবসহ সকল ধর্মীয় প্রতীক ব্যান করা হয়েছে ''নিরপেক্ষতা''
প্রকাশের জন্য
 https://www.rferl.org/.../bosnia-judiciary.../27545654.html

কসোভো-

 কসোভোতে পাবলিক স্কু লে হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ কারণ ''ইউরোপিয়ান মূল্যবোধের পরিচয়'' ''হিজাব নারীর
দাসত্বের প্রতীক''
 https://www.bbc.com/news/world-europe-11065911

অস্ট্রিয়া-

 অস্ট্রিয়াতে নিকাব, বোরকা ব্যান করা হয় কারণ এটি ''মুক্ত সমাজের জন্য গ্রহণযোগ্য না''
 https://www.bbc.com/news/world-europe-38808495

বুলগেরিয়া-

 বুলগেরিয়াতে নিকাব, বোরকা পরিধান আইনত নিষিদ্ধ


 https://www.smh.com.au/.../bulgaria-the-latest-european...
লাটভিয়া-

 লাটভিয়াতে মাত্র তিনজন বোরকা পরত তারপরও সেইখানে বোরকা আইনত নিষিদ্ধ করা হয়
 https://www.independent.co.uk/.../islamic-muslim-face...

নেদারল্যান্ড-

 নেদারল্যান্ডে ২০১৬ সালে পাবলিক প্লেসে বোরকা,নিকাব আইনত নিষিদ্ধ করা হয়


 https://www.loc.gov/.../netherlands-burqa-ban-enters.../

লুক্সেমবার্গ-

 লুক্সেমবার্গে বোরকা-নিকাব পাবলিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে


 https://delano.lu/d/detail/news/veil-ban-passed/177456

ডেনমার্কে ও নিকাব এবং বোরকা আইনত নিষিদ্ধ।

 https://www.bbc.com/news/world-europe-45064237

বেলজিয়ামে নিকাব এবং বোরকা পরিধান নিষিদ্ধ।

 https://www.independent.co.uk/.../belgium-burqa-ban...

বেলজিয়ামে হিজাব পরিধান করার জন্য একজন কর্মচারীকে বহিস্কার করা হয়। ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস এর
পক্ষে রায় দেয় এবং ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস যেকোনো কোম্পানিতে হিজাব বা ধর্মীয় প্রতীক ব্যাবহারে
নিষেধাজ্ঞা জারি করার অনুমোদন দেয়।কারণ ''নিরপেক্ষতা বজায় রাখা''অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতার জন্যই পাবলিক
সার্ভি সের কোনো প্রতিষ্ঠান নিজের কর্মচারীদের হিজাব বা ধর্মীয় প্রতীক গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে।

 https://www.bbc.com/news/world-europe-39272231

ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন সকল প্রতিষ্ঠানকে নিজ প্রতিষ্ঠানে ''নিরপেক্ষতা রক্ষার্থে'' হিজাবসহ সকল ধর্মীয় সিম্বল ব্যান
করার অনুমোদন দেয়।

 https://www.bbc.com/news/world-europe-13038095
 https://www.bbc.com/news/world-europe-39264845
 কানাডা-
 কানাডার ক্যুবেকে পাবলিক সার্ভি সে যারা কাজ করে তাদের বোরকা,নিকাব,হিজাবসহ সকল ধর্মীয় সিম্বল
ব্যাবহার করা নিষিদ্ধ
 https://www.theatlantic.com/.../quebec-bans.../593998/
 ক্যামেরুন- মধ্য আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুনে বোরকা ব্যান করা হয়
 https://www.nytimes.com/.../cameroon-north-bans-burqas.html
 কঙ্গো- কঙ্গোতে ''উগ্রবাদ দমন'' এর জন্য বোরকা-নিকাব ব্যান করা হয়
 https://www.bbc.com/news/world-africa-32555204
 গ্যাবন- গ্যাবনে ২০১৫ সাল থেকেই ''উগ্রবাদ দমন'' এর জন্য বোরকা আইনত নিষিদ্ধ
 https://www.economist.com/.../2016/02/11/banning-the-burqa
 সিরিয়া- ২০১০ সালে সিরিয়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিকাব ব্যান করা হয়
 https://www.bbc.com/news/world-middle-east-10684359
 মিশর-এমনকি মিশরের কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে বোরকা ব্যানের পক্ষে কোর্ট রায় দেয়
 https://egyptindependent.com/egypts-high-administrative.../
 শ্রীলংকা- সম্প্রতি শ্রীলংকায় বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়, বোরকা এবং মাদ্রাসা স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবনা
দেয়া হয়েছে
 https://www.dw.com/.../sri-lanka-bans-on.../a-57003933

হালাল খাদ্য ও জবাইয়ে নিষেধাজ্ঞা - উগ্র হিন্দুত্তবাদের প্রভাবহীন একেবারে সেকু লারিজমের আদর্শ ইউরোপীয়
দেশেও হালাল জবাই, কু রবানি নিষিদ্ধ করা হয়।অনেক স্কু লে শুকর খাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।বাধ্য করা হয় শুকর
ও মদ বিক্রি করতে।

 ডেনমার্ক -
 ডেনমার্কে পশুদের হালাল জবাই আইনত নিষিদ্ধ।এখানেও ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা কাজ করে নাই।নিষেধাজ্ঞার
পক্ষে যুক্তি ছিল,''পশু অধিকার ধর্মের আগে''।ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য পশু অধিকার হরন করার অনুমোদন
সেকু লারিজম দেয় না।
 https://time.com/3974498/denmark-ban-kosher-halal/
 বেলজিয়াম-
 বেলজিয়ামেও একইভাবে হালাল জবাই আইনত নিষিদ্ধ।
 https://www.arabnews.com/node/1096336/world
 ফ্রান্স-
 -ফ্রান্সে এমন বৈধ স্কু লও আছে “pork or nothing” পলিসি নেয়া হয়, অর্থাৎ স্কু লে খেতে হলে শুকরের
মাংস খেতে হবে নাহলে বাচ্চারা না খেয়ে থাকবে।National Front leader Marine le Pen এর সম্পর্কে
বলেন যে এটা ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য অনিবার্য পদক্ষেপ!এখানে বলবেন,একটা বাচ্চার শুকর না খাওয়া
তার ধর্মীয় স্বাধীনতা? না,সেকু লারিজম এখানেও মানবে না বরং সেকু লারিজমই বলবে পলিসিটা
নিতে,যেমনটা Marine le Pen নিজেই বলেছিলেন,“There is no reason for religion to enter the
public sphere.”
 https://www.telegraph.co.uk/.../Frances-Le-Pen-ban-non...
 https://www.theguardian.com/.../pork-school-dinners...
 -ফ্রান্স হালাল স্টোরে শুকর ও মদ বেচার আইনত নির্দে শ দেয়, না মানলে স্টোর বন্ধ করে দেয়া হবে।এখন
বলবেন,শুকর বা মদ বিক্রি না করা একজনের ধর্মীয় স্বাধীনতা? নাহ,সেকু লারিজম মানবে না।হালাল স্টোর
মানুষকে সঠিক সার্ভি স দিচ্ছে না,হালাল স্টোর ধর্মের ভিত্তিতে পৃথকীকরণ করছে তাই সেকু লারিজমের
জন্যই হালাল স্টোর নিষিদ্ধ হওয়া উচিত।
 https://www.independent.co.uk/.../paris-halal-supermakret...

লিঙ্গ পৃথকীকরণ নিষিদ্ধকরণ-

 সুইজারল্যান্ড-
 স্কু লে কিশোর-কিশোরীদের একসাথে সাঁতার শেখার বাধ্যতামূলক ক্লাসে নিজেদের ১২ ও ১৪ বছর বয়সী
মেয়েদের পাঠাতে অস্বীকৃ তি জানালে তু র্কী বংশোদ্ভূ ত সুইস নাগরিক বাবা-মাকে প্রায় ষোল শ পাউন্ডের মতো
জরিমানা করে সুইজারল্যান্ডের এক স্কু ল। দাবি করে, সাঁতার শেখার ক্লাস স্কু ল কারিকু লামের অংশ,তাই
সন্তানদের এ ধরনের ক্লাসে না পাঠানোর অধিকার অভিভাবকদের নেই।জবাবে মামলা করেন দুই কিশোরীর
বাবা-মা।তাদের যুক্তি হলো, পুরুষের উপস্থিতিতে একই সুইমিং পুলে মেয়েদের সাঁতার শেখা ইসলামের শিক্ষা
অনুযায়ী বৈধ না, স্কু ল তাদেরকে এ ক্ষেত্রে বাধ্য করতে পারে না। এটা তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার অংশ। মামলা
সুইস আদালত নাকচ করে দিলে তারা যান ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটস (ECHR) এর কাছে।
ইউরোপিয়ান কোর্ট ও রায় দেয় স্কু ল কর্তৃ পক্ষ এবং সুইস আদালতের পক্ষে। রায়ে বলা হয়, অভিভাবকদের
আপত্তি অগ্রহণযোগ্য এবং মুসলিম অভিভাবকরা তাদের কিশোরী মেয়েদের ছেলেদের সাথে একই সাঁতারের
ক্লাসে পাঠাতে আইনত বাধ্য। ইউরোপিয়ান আদালতের বিচারকরা স্বীকার করে যে, অভিভাবকদের এভাবে
বাধ্য করার কারণে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। তবে আদালতের মতে, হস্তক্ষেপ হলেও
এতে ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন হচ্ছে না।
 https://www.politico.eu/.../muslim-parents-must-send.../
 সুইটযারল্যান্ডের এক মুসলিম পরিবারকে প্রায় ৫,০০০ সুইস ফ্রাঙ্ক জরিমানা করা হয়, কারণ তাদের ১৪ ও ১৫
বছর বয়সী দুই ছেলে স্কু লের মহিলা শিক্ষকের সাথে হাত মেলাতে রাজি হয়নি।
 https://www.theguardian.com/.../switzerland-ruling...
 মিউনিসিপ্যাল কমিটির সাক্ষাৎকারে বিপরীত লিঙ্গের কারও সাথে হাত না মেলানোর কারণে ২০১৮ তে এক
মুসলিম দম্পতির নাগরিকত্বের আবেদন বাতিল করা হয়।
 https://www.bbc.com/news/world-europe-45232147

এমনকি কোন দেশে এটা সরাসরি আইনত অপরাধ না হলেও এইরকম বহু উদাহরণ পাওয়া যাবে যেখানে সেকু লার রাষ্ট্র
এমন সিস্টেম তৈরি করেছে আপনি চাইলেও সে দেশে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি পর্দা রক্ষা করতে পারবেন না।আপনার
জীবিকার কর্মক্ষেত্র, শিক্ষার শিক্ষাক্ষেত্র, চিকিৎসা নেওয়ার চিকিৎসাক্ষেত্র ইত্যাদি সকল মৌলিক চাহিদা পূরণের
জায়গায় ফ্রি মিক্সিং বিদ্যমান,আপনি চাইলেও এড়াতে পারবেন না,এইখানে আলাদাভাবে রেফারেন্স দেয়ারও প্রয়োজন
নেই,নিজেই বুঝতে পারবেন পরিবেশের ব্যাপারটা।সুইজারল্যান্ডের কেসগুলাতে ধর্মীয় স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে কোন
লাভ হল না।ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে সেকু লারিজম লিঙ্গ পৃথকীকরণ এর মত ''নৈতিকতা পরিপন্থী'' ধারণা মেনে নিবে
না,বিপরীত লিঙ্গের সাথে পর্দা রক্ষা করা মুসলিমদের একটি ফরজ বিধান হলেও সেকু লারিজমের লিবারাল নৈতিকতায়
এটা ''মধ্যযুগীয় বর্বর'' প্রথা,তাই সেকু লারিজম এক্ষেত্রে এদের কারোরই ধর্মীয় স্বাধীনতার দোহাই গ্রহণ করবে না,ধর্মীয়
স্বাধীনতার নামে ''বর্বর'' প্রথার বৈধতা সেকু লারিজম দিবে না।
সমকামি এবং ট্র্যান্সজেন্ডার অধিকার জোরপূর্বক সমর্থন করানো- LGBTQ+ Community নিয়ে পশ্চিমে বেশ
বিখ্যাত ইস্যু দেখা যায়, কেউ যদি ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে সমকামিদের সার্ভি স দিতে না চায় তাহলে সেকু লার রাষ্ট্র
সেটাকে কিভাবে দেখবে?পশ্চিমে এমন হয়ে থাকে যে ফেডারেল কোর্ট রায় দেয়,ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান সমকামিদের
সার্ভি স দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারবে না।যেমন- একজন ফটোগ্রাফার ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে সমকামিদের
বিয়েতে সার্ভি স দিতে বিরত থাকতে পারবে না,এটা ''বৈষম্য''।

 https://www.usatoday.com/.../supreme-court-gay.../7304157/
 ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে সমকামিদের প্রতি সার্ভি স-কর্মক্ষেত্র ''বৈষম্য'' থেকে রক্ষার জন্য আরও আইনি
ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে।
 https://www.theguardian.com/.../us-house-equality-act...
 ইউরোপে খুবই কঠোরভাবে LGBTQ+ Community এর প্রতি যেকোনো ধরনের ''বৈষম্য'' দমন করা হয়।
 https://www.politico.eu/.../no-place-for-anti-lgbtq.../
 ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমকামি দম্পতিদের দত্তকের জন্য বাচ্চা প্রদান করা থেকে বিরত থাকতে পারবে না।
 https://www.theguardian.com/.../catholic-adoption-agency...
 ধর্মীয় কারণে সমকামিদের হোটেলে রুম দিতে প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না। হোটেলের মালিক ধর্মীয়
স্বাধীনতার যুক্তি দিলে বলা হয়,"When offering a service, people cannot use their beliefs -
religious or otherwise - to discriminate against others."
 https://www.theguardian.com/.../catholic-adoption-agency...
 ধার্মিক কাউন্সিলর ধর্মীয় কারণে সমকামিদের কাউন্সিলিং করা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না
 https://www.clarkewillmott.com/.../christian-counsellor.../
 ধর্ম প্রচারক ''সমকামিদের উপর ঈশ্বরের ক্রোধ বর্ষিত হবে,সমকামিরা জাহান্নামে যাবে'' বলার জন্য শাস্তি
পাবে।
 https://www.scotsman.com/.../preacher-fined-homophobia...
 সমকামিতা 'জঘন্য পাপ' প্রচার করার জন্য অ্যারেস্ট করা হয়।
 https://www.telegraph.co.uk/.../Christian-preacher...
 এমনকি সমকামি বিরোধী ধর্মগ্রন্থের আয়াত দেখানও যাবে না।
 https://www.bbc.com/news/uk-england-lancashire-15072408
 স্কু লে LGBTQ+ সেক্স এডু কেশন ক্লাস সবার বাচ্চার জন্য বাধ্যতামূলক।
 https://www.gaytimes.co.uk/.../lgbtq-inclusive-lessons.../
 চার্চে ঝু লতে থাকা LGBTQ+ পতাকা পোড়ালে জেলে যেতে হবে।
 https://edition.cnn.com/.../iowa-man-burns.../index.html
 ট্র্যান্সজেন্ডারদের তারা নিজেরা নিজেদের যে লিঙ্গের মনে করে সেই লিঙ্গের প্রোনাউন ধরে ডাকতে হবে,তাকে
সেই লিঙ্গের অনুসারেই সার্ভি স দিতে হবে,আচরন করতে হবে,এটাই আইন।
 https://www1.nyc.gov/.../legal-guidances-gender-identity...
 এখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা খাটবে না,আইন আপনাকে বাধ্য করবে।ধর্মীয় বিশ্বাসের দোহাই দিয়ে ''বৈষম্য'' করার
অনুমোদন সেকু লারিজম দিতে বাধ্য না।
 https://www.insidehighered.com/.../religious-colleges-see...

এইরকম বহু উদাহরণ দেয়া সম্ভব, কিন্তু এতক্ষণের আলোচনায় সম্ভবত পয়েন্টটা বোঝানো গেছে।এতক্ষণের আলোচনায়
যা যা দেখা গেল সবক্ষেত্রেই কিন্তু ধর্ম বহির্ভূ ত কোনকিছু নিষিদ্ধ করা হয় নি বরং অনেক ক্ষেত্রে ধর্মে অবশ্য পালনীয়
বিধানের উপরেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেকু লার রাষ্ট্র। বোরকা-নিকাব-হিজাবের মত আবশ্যকীয় বিধান পালনে
নিষিদ্ধকরন,পাবলিকে ধর্মীয় প্রতীক ব্যাবহারে নিষেধাজ্ঞা,হালাল পশু জবাই এবং কু রবানি নিষিদ্ধকরণ,গায়রে মাহরামের
সাথে পর্দা রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা,মসজিদে মিনার তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা,শুধুমাত্র হালাল খাদ্য বিক্রয়ের প্রতি
নিষেধাজ্ঞা,সমকামিদের বিয়েতে সার্ভি স দিতে বাধ্য থাকা,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সমকামিদের নিয়োগ করতে চাপ
দেয়া,সমকামিতার সম্পর্কে সেক্স এডু কেশন ক্লাসে বাচ্চাদের পাঠাতে বাধ্য করা, ট্র্যান্সজেন্ডারদের তাদের ট্র্যান্স লিঙ্গ
পরিচয় মেনে নিতে বাধ্য করা,এমনকি ধর্ম সমকামিদের ব্যাপারে কি বলে সেটা প্রকাশ থেকে বাধা দেয়া,ধর্ম গ্রন্থ পাঠে
বাধা দেয়া ইত্যাদি সবকিছুই সেকু লার রাষ্ট্র করে গিয়েছে ধর্মীয় স্বাধীনতাকে উপেক্ষা করেই,এইসব আইন সেকু লারিজমের
নৈতিক ফ্রেমওয়ার্কে র ভিতরেই ছিল,এবং অনেক সময় সেকু লারিজমের জন্যই ছিল!আগেই উল্লেখ করেছি
যে,আন্তর্জাতিকভাবেই এটা স্বীকৃ ত যে,''কারও ধর্ম বা বিশ্বাসকে প্রকাশ করার স্বাধীনতা কেবল আইন দ্বারা নির্ধারিত
সীমাবদ্ধতার অধীন হতে পারে এবং জনসাধারণের সুরক্ষা,শৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য বা নৈতিকতা বা অন্যের মৌলিক অধিকার
এবং স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় রক্ষার জন্য সীমাবদ্ধ করা যেতে পারে।" এই ক্ষেত্রগুলায় সেকু লারিজম
সেটাই করেছে,সবগুলা কেসকে এই ফ্রেমের ভিতরে নিয়ে আসা সম্ভব।বোরকা-নিকাব ব্যান করেছে কখনো ''উগ্রবাদ
দমন'' করে জনসাধারণের সুরক্ষার জন্য, কখনো ''নারী নিপীড়নের প্রতীক'' ''বর্বর'' নৈতিকতা পরিপন্থী হওয়ার জন্য,
কখনো ''নিকাব নারী দাসত্বের প্রতীক'' হওয়ায় অন্যের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য।কখনো ধর্মনিরপেক্ষতার ''নিরপেক্ষতা''
বজায় রাখার জন্যই হিজাব- বোরকা ইত্যাদি ধর্মীয় সিম্বল ব্যাবহার নিষিদ্ধ করেছে বা নিষিদ্ধ করার স্বাধীনতা দিয়েছে
সেকু লারিজম।সেকু লারিজম পশুর ''মৌলিক অধিকার'' রক্ষার জন্য নিষিদ্ধ করেছে হালাল জবাই,''নৈতিক মূল্যবোধ''-
এর জন্য গায়রে মাহরামের সাথে পর্দা করায় বাধা দিয়েছে,''সুরক্ষা''-এর জন্য মিনার তৈরি নিষিদ্ধ করেছে, ''অনৈতিক
বৈষম্য'' থেকে রক্ষার জন্য সমকামিদের বিয়েতে সার্ভি স দিতে, ট্র্যান্সজেন্ডার পরিচয় গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে
সেকু লারিজম,এমনকি ধর্ম গ্রন্থের আয়াত দেখানো বা কোন বিষয়ে তাঁর ধর্ম কি বলছে সেটা প্রচারে পর্যন্ত বাধা দিচ্ছে
সেকু লারিজম, ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার জন্যই ধর্মকে সীমাবদ্ধ করে আইনের প্রস্তাব দিচ্ছে।ইতিহাসে ''ধর্মনিরপেক্ষতা
প্রসারের জন্য,রক্ষার জন্য'' ''সুরক্ষা, শৃঙ্খলা,নৈতিকতা রক্ষার্থে'' ''স্বাধীনতা- মৌলিক অধিকার-মুক্তচিন্তার আন্দোলন
রক্ষার্থে'' সেকু লারিজম উদ্ভব ঘটিয়েছে আধুনিক গণহত্যার, ''সন্ত্রাস'' এর উত্থান ঘটিয়েছে,ধার্মিকদের ও ধর্মীয়
প্রতিষ্ঠানের দমন নিষ্পেষণ করেছে।
ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য ''বর্বর প্রথা'' ''নারী নিপীড়ন'' ''বৈষম্য'' ''উগ্রবাদ প্রসার'' ''অনৈতিক মূল্যবোধের চর্চা'' ''অন্যায়''
''অধিকার হরণ'' ''নিরপেক্ষতা নষ্ট করা'' ইত্যাদির অনুমোদন সেকু লারিজম দিতে বাধ্য না, ঠিক যেমন- ধর্মীয় স্বাধীনতার
জন্য শিশু বলিদানের মত ''অনৈতিক'' ''বর্বর'' প্রথাকে বৈধতা দেয়া যায় না।কিন্তু এখানে ''বর্বর প্রথা'' ''অনৈতিক''
''বৈষম্য'' ''উগ্রবাদ'' ''মূল্যবোধ'' প্রত্যেকটা টার্মের সংজ্ঞায়ন করবে সেকু লারিজমের স্ট্যান্ডার্ড ।
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা মূলত একটা বহুল প্রচলিত মিথ, রাষ্ট্র যতক্ষণ চাবে ততক্ষন আছে যখন রাষ্ট্র চাবে
না তখন সিস্টেম্যাটিকালি ধর্মীয় স্বাধীনতা নাই হয়ে যাবে, প্রয়োজন পরলে ধর্মকে রিডিফাইন করবে নিজের খেয়াল
খুশিমত।
সেকু লারিজমে নিজের ধর্মের বিধান আপনি লঙ্ঘন করতে পারবেন কিন্তু রাষ্ট্রের বিধান পারবেন না,রাষ্ট্র যতটু কু নিজ
নৈতিকতার ধারনা অনুযায়ী আপনার ধর্মকে মেনে নিবে ততটু কু ই আপনার ধর্ম পালন।
সম্পাদনায়- Asif Mahmud ভাই
চলবে
Part 1- https://www.facebook.com/.../permalink/1333004960434144/
Part 2- https://www.facebook.com/.../permalink/1334971403570833/

—---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
Homosexuality:- A Scientific and Philosophical Analysis

 Ishrak Ahmed and Md Abdullah Al Akib

সমকামিতা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। প্রতিবছর জুন মাসে প্রাইড মান্থ(Shame month)এ এইটা নিয়ে অনেক
আলোচনা হয়। এই লেখায় সমকামিতা নিয়ে একটা বিজ্ঞান ও দর্শনের আলোকে একটা যুক্তিসঙ্গত আলোচনার চেষ্টা
করব যেখানে এর পক্ষে-বিপক্ষে প্রায় সব যুক্তির আলোচনা করা হবে।
Born This way Argument
সমকামিতার স্বপক্ষে একটা বহুল প্রচারিত আর্গুমেন্ট হচ্ছে ''Born this way Argument''
সমকামিতা জেনেটিকাল তথা Gay gene নামের একটি জিন রয়েছে তাই মানুষ জন্মগতভাবেই সমকামি,তাদের
কোন নিয়ন্ত্রন নেই নিজের যৌন আচরণের উপর। সে সমকামী হতে প্রকৃ তি গত ভাবে বাধ্য। এই কারণে সমকামিতা
স্বাভাবিক। এইটা প্রকৃ তিগতভাবেই মানুষ হয়ে থাকে। এইটা হল সমকামিতার পক্ষের প্রথম আর্গুমেন্ট।
কিন্তু সত্য হল সমকামিতা জন্মগত এই দাবির কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।2019 এ সমকামিতা এবং জেনেটিক্সের
উপর সর্ববৃহৎ রিসার্চ করা হয়। প্রায় ৫ লাখ মানুষের উপর করা স্টাডি এর ফলাফলে Gay gene বলে আলাদা করে
কিছু নেই এটা প্রমানিত হয়। কোন single link নেই এর মধ্যে,অনেকগুলা Gene হালকাভাবে এই ক্ষেত্রে প্রভাব
ফেলে। জিন প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিষয়টা এমন না যে অনেকগুলা জিন পুরোপুরি নির্ধারণ করে দেয় একজনের
sexual orientation কি হবে বরং
মাত্র ৮-২৫% প্রভাবিত করে। জেনেটিক্স,জেনেটিকাল প্রভাব মাত্র ৮-২৫% ব্যাখ্যা করতে পারে। রিসার্চ পেপারটি
প্রকাশিত হয়েছে বিশ্ববিখ্যাত ন্যাচার এবং সায়েন্স জার্নালে। পেপারের লিংকঃ
ন্যাচার-
https://www.nature.com/articles/d41586-019-02585-6
(অনুবাদ-https://www.facebook.com/.../permalink/1358660884535218/)
সায়েন্স-
https://www.sciencemag.org/.../genetics-may-explain-25...
রিসার্চে র ব্যাপারে ডিজাইন করা বিস্তারিত ওয়েবসাইট:-
https://geneticsexbehavior.info/what-we-found/
https://www.harvardmagazine.com/.../there-s-still-no-gay...
এর দ্বারা কোনভাবেই প্রমাণিত হয় না যে সমকামিতা স্বাভাবিক বা গ্রহণযোগ্য কিছু বা মানুষ জন্মগতভাবে সমকামি
হয়।সমকামিতার জন্য জিন দায়ী ৮-২৫%।
অন্যদিকে অ্যালকোহোলিজম(Alcoholism) এমনকি সহিংসতার জন্য জেনেটিকাল প্রভাব দায়ী ৫০%! এখন
মদ্যপান আর সহিংসতা অবৈধ এমন কোন রাষ্ট্রে কেউ যদি বলে মদ্যপায়ী বা সহিংস হওয়া জন্মগত জেনেটিকাল
বিষয়,এর জন্য কাউকে শাস্তি দেয়া উচিত না বরং স্বাভাবিকভাবে নেয়া উচিত সেটা কি গ্রহণযোগ্য হবে!?
একইভাবে সমকামিতাকে Born This way Argument দিয়ে কোনভাবেই স্বাভাবিক প্রমান করা যায় না।
এলকোহলিজম এবং সহিংসতার সাথে জিনের সম্পর্ক নিয়ে পড়ু নঃ
https://www.jax.org/.../the-genetics-of-violent-behavior...#
https://vertavahealth.com/alcohol/is-alcoholism-genetic/...
https://americanaddictioncenters.org/.../hereditary-or...
https://www.nature.com/articles/d41586-019-02585-6
টু ইনদের উপরে করা স্টাডিও প্রমান করে সমকামিতা জেনেটিকাল না। এমনকি অনেক প্রো এলজিবিটিকিউ+
অ্যাক্টিভিস্টরাও Born This way Argument এর বিরোধিতা করে-
https://www.youtube.com/watch?v=RjX-KBPmgg4&t=187s
সমকামিতা স্বাভাবিক,কোন মানুষিক ব্যাধি না-বিজ্ঞান এ বিষয়ে নিরপেক্ষ মত দিয়েছে
এরপরে ২য় যেই আর্গুমেন্ট টা দেয়া হয় সেটা হল যে সমকামিতাকে ১৯৭৩ সালে মানসিক রোগের চার্ট থেকে বাদ
দিয়েছে American Psychiatrist Association (APA) সংস্থাটি। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, তারা জানেই না যে
সমকামিতাকে মানসিক রোগের চার্ট থেকে বাদ দেয়ার কারণ ছিল পলিটিক্যাল, সাইন্টিফিক না। এই ব্যাপারে ডা.
শামসুল আরেফীন এর বই " কাঠগড়া" থেকে উল্লেখ করে দিচ্ছি। নিজেই যাচাই করে দেখুন।
"মানসিক রোগনির্ণয়ে ও শ্রেণিকরণে American Psychiatric Association (APA) কর্তৃ ক নির্মিত Diagnostic
and Statistical Manual of Mental Disorders (DSM)-এর বহুল প্রচলন রয়েছে। ১৯৫২ সালে DSM-1
এবং ১৯৬৮ সালের DSM-2 তে সমকামকে যৌনবিকৃ তি ও মানসিক রোগ হিসেবে তালিকাভু ক্ত রাখা হয়েছিল।
১৯৭৪ সালে DSM-2 এর ৬ষ্ঠ মুদ্রণে গিয়ে সমকামিতাকে রোগের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। রিসার্চে র ভিত্তিতে?...
একদমই না।
১৯৬৪ সাল থেকেই সমকামীরা নিজেদের দুরবস্থার কারণ হিসেবে APA যে তাদেরকে রুগী বানিয়ে রেখেছে, এটাকে
দায়ী করে আসছিল। ১৯৬৯ থেকে স্টোনওয়াল দাঙ্গার মাধ্যমে সমকামীদের আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হল।
১৯৭০ সালে সানফ্রান্সিসকোতে APA-এর সম্মেলন চলাকালে সমকামী এক্টিভিস্টরা সম্মেলনকক্ষে ঢু কে পড়ে, বক্তাদের
বক্তব্যের মাঝে শোরগোল করতে থাকে, চিৎকার ও টিটকারি করতে থাকে। APA-এর সদস্যগণ ও বিক্ষোভকারীদের
মাঝে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ পর্যন্ত ডাকা লাগে।
১৯৭১ সালে ওয়াশিংটনের সম্মেলনে গে-এক্টিভিস্টদের সাথে আলোচনার জন্য 'গে-প্যানেল' রাখা হয়। সেখানে তাদের
নেতা Frank Kameny মাইক্রোফোন ছিনিয়ে নিয়ে চিৎকার করতে থাকেন:
Psychiatry is the enemy incarnate. Psychiatry has waged a relentless war of extermination
against us. You may take this as a declaration of war against you.
"মনোচিকিৎসা বিভাগই আমাদের নব্য শত্রু। পুরো বিষয়টিই আমাদেরকে সমূলে ধ্বংস করতে নিরন্তর সংগ্রামে লিপ্ত।
আপনারা একে আমাদের পক্ষ থেকে 'যুদ্ধের ঘোষণা' হিসেবে নিতে পারেন"। [১]
পরের বছর তারা আবার অংশ নেয় সম্মেলনে। পরের বছর ১৯৭৩ সালে সমকামিতাকে রোগের তালিকা থেকে
তড়িঘড়ি করে রিসার্চ ছাড়াই বাদ দেবার সিদ্ধান্ত হয়। প্যানেলে সমকামিদের পক্ষে ওকালতি-কারী Barbara Gittings-
ও বলেন:
it was never a medical decision. And it was a political move, that's why i think the decision
came so fast' [২]
১৯৭৪ সালে ভোট হয়, সমকামিতাকে কি বাদই রাখা হবে, নাকি আবার ঢু কানো হবে লিস্টে। ৫৮% ভোট পড়ে 'বাদ-ই
থাকু ক' এর পক্ষে। এভাবেই রিসার্চ ছাড়াই ভোটে, হুমকিতে আর প্রেসারে তৈরি হয়ে গেল বিজ্ঞান। যাকে গত ৫০
বছর অন্ধভাবে অনুসরণ করে চলেছে বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকেরা। [৩] "
[১] Ronald Bayer Homosexuality and American Psychiatry: The Politics of Diagnosis (1981)
Princeton University Press p. 105.
[২] Marcus E. (2002), Making Gay History: The Half-century fight for lesbian and gay equal
rights, p179
[৩] Sarah Baughey-Gill, When Gay was not Okay with the APA, Occam's Razor, vol 1
(2011)
তো উপরে আপনারা সমকামিতাকে মানসিক রোগের চার্ট থেকে বাদ দেয়ার আসল কারণ দেখলেন।
পশুদের সাথে তু লনা করে স্বাভাবিকীকরন
এরপরে সমকামিতার পক্ষে একটা হাস্যকর যুক্তি দেয়া হয়। সেটা হল, প্রাণিজগতে প্রায় ১৫০ প্রজাতির মধ্যে
সমকামিতা দেখা যায়। তাই সমকামিতা স্বাভাবিক। এহেন দাবির প্রেক্ষিতে আসিফ আদনান এর নিচের লেখাটি পড়ু ন।
"সমকামীতার পক্ষে দেয়া একটা যুক্তি হল- প্রকৃ তিতে সম লিঙ্গের সাথে যৌনতার উদাহরণ আছে। বিভিন্ন প্রানীর মধ্যে
এমন আচরণ দেখা যায়। অতএব, মানুষের মধ্যেও সম লিঙ্গের সাথে যৌনতা স্বাভাবিক এবং প্রাকৃ তিক।
.
তর্কে র খাতিরে ধরে নিলাম, প্রকৃ তিতে এমন আচরণ পাওয়ার বিষয়টা সত্য এবং এমন আচরণের হার স্ট্যাটিসটিকালি
সিগনিফিক্যান্ট। কিন্তু তাতে মূল সমস্যার সমাধান হয় না। প্রকৃ তিতে, অন্য প্রাণীদের মাঝে কোন আচরণ থাকার অর্থ
কি সেটা সঠিক হওয়া? প্রাণীজগতে ‘ক’ আচরণ দেখা যায়, অতএব মানুষের জন্যও ‘ক’ আচরণ স্বাভাবিক, সঠিক
এবং প্রাকৃ তিক – এটা কি খুব শক্ত অবস্থান? এই অবস্থান কি কনসিসটেন্টলি মেইনটেইন করা সম্ভব?
.
প্রকৃ তিতে সেক্সুয়াল ক্যানিবালিসম দেখা যায়। যৌনসংগমের পর মেয়ে ব্ল্যাক উইডো মাকড়শা সঙ্গীকে হত্যা করে খেয়ে
ফেলে। প্রজাপতি, হনুমান, সিংহ, ইদুরসহ বিভিন্ন প্রানী নিজ প্রজাতির শিশুদের হত্যা করে। কখনো নিজের কর্তৃ ত্ব ধরে
রাখার জন্য, কখনো নিহত শিশুদের মায়ের সাথে সঙ্গমের জন্য। সমুদ্রের ভোঁদড় (সী-অটার) শিশু সীলদের ধর্ষন এবং
হত্যা করে। পেঙ্গুইনের একটা জাত আছে যারা নিজ প্রজাতির নারীদের গ্যাং-রেইপ করে। অনেক সময় মৃতদেহের সাথে
সঙ্গম করে। ডলফিনদের মধ্যে কোন কারণ ছাড়া পরপইস নামের প্রানীকে টর্চার এবং হত্যা করার মতো আচরন দেখা
যায়। এছাড়া ডলফিনরা দলবেঁধে নিজ প্রজাতির নারীদের রেইপ করে।
.
‘প্রকৃ তিতে আছে তাই কাজটা স্বাভাবিক এবং মেনে নেয়া উচিৎ’- এই যুক্তি কনসিস্টেন্টলি অনুসরণ করলে বলতে হবে
ক্যানিবালিসম, সেক্সুয়াল ক্যানিবালিসম, রেইপ, গ্যাং-রেইপ, নেক্রোফিলিয়া, স্যাডিসম-সব প্রাকৃ তিক এবং স্বাভাবিক।
মানুষের মধ্যে এমন আচরণ দেখা গেলে তা সঠিক এবং স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেয়া উচিৎ, কারণ প্রানীজগতেও
এসব আচরণ দেখা যায়। এগুলো ন্যাচারাল। পশ্চাৎপদতা থেকে বের হয়ে এসে আমাদের এগুলো মেনে নেয়া উচিৎ।
কিন্তু ক্লিয়ারলি কোন সুস্থ মানুষ এমন কথা বলে না। যারা সম লিঙ্গের সাথে যৌনতার স্বাভাবিকীকরণ চায়, তারাও
(হোপফু লি) এমন বলবে না। অর্থাৎ কনসিসটেন্টলি এই যুক্তি মেইনটেইন করা সম্ভব না।
.
তাহলে বিষয়টা শেষ পর্যন্ত কী দাড়ালো? প্রানীজগতের মাঝে কোন আচরণ থাকা সেটা মানুষের জন্য স্বাভাবিক, সঠিক
এবং অনুকরনীয় গণ্য হবার জন্য যথেষ্ট না। যদি যথেষ্ট হতো তাহলে ধর্ষনের পক্ষেও প্রানীজগত থেকে দলিল দেখানো
যেতো। ব্যাপারটা আসলে এলিমেন্টারি। পশুর মতো হওয়া কখনোই মানবজাতির লক্ষ্য ছিল না। বরং আমাদের প্ল্যান
ছিল, যথাসম্ভব পশুত্ব থেকে বের হয়ে আসা। কিন্তু আধুনিক মানুষ কোন এক কারণে উল্টোটা করছে।"
Liberalism:-
''অন্যকারোর ক্ষতি না করলে এবং কনসেন্ট থাকলে যেকোন কাজ বৈধ হবে। সমকামিরা সসম্মতিতে অন্য কারোর
ক্ষতি না করে সম্পর্ক করছে তাই কাজটা বৈধ হওয়া উচিত''
Response-
এইটা দার্শনিক আলোচনা। কারণ কোন কাজটা নৈতিক আর কোন কাজটা অনৈতিক এইটা দর্শনের আলোচনা,
বিজ্ঞানের না। কারণ নীতিনৈতিকতা সংক্রান্ত বিষয় বিজ্ঞানের আওতার বাইরে।
তো অন্য কারোর ক্ষতি না করলেই কোন কাজ বৈধ এই স্ট্যান্ডার্ড টা এসেছে ইউরোপিয়ান এনলাইটমেন্ট এর সময়কার
একটি দার্শনিক মতবাদ Harm Principle থেকে। এই স্ট্যান্ডার্ড টাই ভু ল।কনসেন্ট থাকলেই এবং অন্য কারোর
ক্ষতি না করল কোন কাজ বা যৌন সম্পর্ক বৈধ-স্বাভাবিক হয়ে যায় এই স্ট্যান্ডার্ড টাই ঠিক না। Harm Principle কেন
নৈতিকতার মানদণ্ড হওয়ার যোগ্য না এবং এইটা কীভাবে কলোনিয়াল পিরিয়ডে গণহত্যা, লুটপাটের কথিত বৈধতা
দেয়ার পক্ষে ইউজ করা হয়েছিল সে সম্পর্কে জানতে পড়ু নঃ
https://m.facebook.com/.../permalink/1206354236432551/
একই ষ্ট্যাণ্ডার্ডে প্রায় সব প্যারাফিলিয়াই বৈধ হয়ে যায়।
-শুধু কনসেন্ট এবং হার্ম প্রিন্সিপালভিত্তিক নৈতিকতা যেভাবে পেডোফিলিয়াকে বৈধতা দেয়-
https://www.lostmodesty.com/.../%E0%A6%86%E0%A6%AA%E0%A7.../
এজ অফ কনসেন্টই কেন একটা আর্বিটারি ফ্যাক্টর তা জানতে পড়ু ন-
https://www.facebook.com/AsifAdnanFBPG/posts/131566265468416
শুধু কনসেন্ট এবং হার্ম প্রিন্সিপাল ভিত্তিক নৈতিকতা একইভাবে ইনসেস্ট ও নেক্রোফিলিয়াকেও বৈধতা-
স্বাভাবিকীকরণ করে, কারণ এখানেও কনসেন্ট নিয়ে কারোর ক্ষতি ছাড়াই করা হচ্ছে -
https://rafanofficial.wordpress.com/.../problem-of.../
একই যুক্তিতে পশুকামিতাও বৈধ বিষয় হয়ে যায়,কারণ পশুর ক্ষেত্রে কনসেন্ট ইরেলেভেন্ট।পশুর ব্যাপারে
কোনকিছুতেই কনসেন্ট নেয়া হয় না,পশুকে ব্যাবহার করা হয়,পালন করা হয়,হত্যা করে খাওয়া হয় সবই কনসেন্ট
ছাড়া। এই ব্যাপারে পড়ু ন-
https://www.facebook.com/.../permalink/1028948530839790/
সুতরাং শুধু লিবারালিজমকে মানদণ্ড ধরলে,সমকামিতার সাথে শিশুকামিতা,পশুকামিতা,অজাচার,মৃতচার সবই বৈধ
হয়ে যায়, মোট কথা যৌন বিকৃ তি বলতেই কিছু থাকে না।এখন যারা এলজিবিটি রাইটের সমর্থক তারা কি একইভাবে
এই প্রত্যেকটা জঘন্য জিনিসকে সমর্থন করবে?! সাধারণত একজন স্বাভাবিক মানুষ করবে না।
কিন্তু কেউ যদি এরপরও এইসবকিছু সমর্থন করে,তাহলে লিবারালিজমের বেসিক এপিস্টেমোলজিকাল প্রবলেম থেকে
যায়। তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়, পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষের বিবেকের কাছে জঘন্য-অনৈতিক-অস্বাভাবিক মনে হওয়া
কাজগুলা যেই ষ্ট্যাণ্ডার্ড স্বাভাবিক-বৈধ বলে দাবি করে সেই মোরাল ষ্ট্যাণ্ডার্ড যে সম্পূর্ণ সত্য এবং সঠিক এর প্রমাণ কি?
নৈতিকতার অনেক থিওরি আছে,বিশ্বাস আছে এতকিছুর মধ্যে কেন লিবারালিজমই নৈতিকতার একমাত্র সঠিক
মানদণ্ড এর প্রমাণ কি?লিবারালিজম মোটেও মানুষের সহজাত কোন বিষয় না,প্রমান না দেয়া পর্যন্ত কেউ
লিবারালিজমকে মেনে নিতে বাধ্য না।
সমকামিতা শারীরিকভাবে চরম ক্ষতিকর এবং অপ্রাকৃ তিক-অস্বাভাবিক একটা প্র্যাকটিস। এর ফলে এইডস,
মলদ্বারের ক্যান্সার,ইনফেকশন,বিভিন্ন যৌনবাহিত রোগ ঘটিত হয়। এইটা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও ধ্বংস
করে দেয়। সমকামিতার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের লেখা পড়তে পারেন-
https://www.facebook.com/notes/3738681786151491/
https://www.facebook.com/notes/783995289060634/
https://www.platform-med.org/%e0%a6%9a%e0%a6%bf%e0%a6%95.../
সমকামিতা একজনের জীবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতি এবং হুমকি নিয়ে আসে।তাই যদি কেউ আসলেই সমকামিদের
ভাল চায় বা তাদের ব্যাপারে অনেক পরোয়া করে তাদের উচিত এটাকে স্বাভাবিকিকরণ না করে বরং এর বিরোধিতা
করা!এলজিবিটি+ রাইটের জন্য কাজ না করে বরং এই সামাজিক সমস্যাকে যেভাবে সম্ভব থামানোর চেষ্টা করা।
পাশাপাশি সমকামিতা সামাজিকভাবেও ক্ষতিকর। আমেরিকাতে যৌন রোগগুলোর ৫৭ ভাগ ছড়ায় সমকামীদের
মাধ্যমে। সেই দেশে সমকামীদের সংখ্যা মাত্র ৩.৫ ভাগ কিন্তু এইডস আক্রান্ত ৫৪ ভাগ হল সমকামী। প্রতিবছর
সমকামীদের জন্যে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়। পাশাপাশি তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও ২-১১ গুণ বেশি স্বাভাবিক
মানুষের তু লনায়।
সমকামিতা অবাধ যৌনাচার সভ্যতার সামগ্রিকভাবে ক্ষতি করে। একটা সভ্যতার সামাজিক সংহতি নষ্ট করে
সভ্যতাকে পতনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। সভ্যতা ও যৌনতার সম্পর্ক জানতে নিচের লেখাটি পড়ু ন।
অবক্ষয়কাল-
https://www.lostmodesty.com/...
এতসব কিছুর পরে কোনো সুস্থ ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব না সমকামিতাকে সমর্থন করা। বরং কোনো ব্যক্তি যদি
মানবজাতির প্রকৃ তই ভালো চায় তবে তার এই LGBTQ মুভমেন্ট এর বিরোধিতা করা উচিৎ।
#ShameMonth

—---------------------------------------------------------------------------------------------------------
পশ্চিমা যৌন দাসত্বের প্রথা
পশ্চিমা কলোনিয়ালিস্ট রাষ্ট্রগুলো নারী মুক্তি, মানবতা ইত্যাদির কথা বলে একের পর অন্যায় যুদ্ধকে বৈধতা দিয়ে
এসেছে। কিন্তু বাস্তবে বহু আগে থেকেই এরা ধর্ষণ-যৌন নিপীড়নকে অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করে আসছে। ম্যাস মিডিয়া,
বিখ্যাত আইকনরা, বহু তথাকথিত মানবতাবাদী লোকেরা বছরের পর বছর ধরে চলে আসা পশ্চিমা ধর্ষণতন্ত্রকে, পশ্চিমা
আর্মির সমর্থন দেয়া যৌনদাসত্ব, সাধারণ মানুষের প্রতি পশ্চিমা আর্মির নির্যাতনকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছে। সেইটার
বাস্তবতাই তু লে ধরব-
''সভ্য'' পশ্চিমা আর্মি,আমেরিকান বাহিনীর ভেতরেই ধর্ষণতন্ত্র বিদ্যমান।আর্মিতে কর্মরত নারীরাই এই স্বীকারোক্তি
দেন,এই ব্যাপারে গবেষণা করে জানা যায়-''আমরা অনেক সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন বা আছেন এমন অনেক
অনেক মহিলার সঙ্গে কথা বলেছি, যারা সবাই একটা ব্যাপারে একমত হয়েছেন – ইউ.এস সামরিক বাহিনীর পুরুষরা,
সামরিক বাহিনীর নারীদের ধর্ষণ করাকে তাদের অধিকার মনে করে। সামরিক বাহিনীতে তো একটা কৌতু ক প্রচলিতই
আছে – পুরুষ সহকর্মী বা অফিসারদের হাতে ধর্ষিত হওয়া নারী অফিসার বা সৈন্যদের পেশাগত দায়িত্বের মধ্যেই
পড়ে।''
বিস্তারিত - https://www.facebook.com/shottokothon1/posts/250091305427257
শর্ট ডকু মেন্টারি- https://www.youtube.com/watch...
আমেরিকার মিলিটারি নিজের সহকর্মী নারীদেরই ধর্ষণ করাকে অধিকার মনে করে,তাহলে বোঝাই যাচ্ছে তারা যুদ্ধে
শত্রুর নারীদের বা যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে কি ভাবে।এর প্রমাণ তাদের কাজেই মিলে-
এই আফগানিস্তানে ''সন্ত্রাস দমনের মহান যুদ্ধ''-এ জয় পাওয়ার জন্য আমেরিকানরা কিছু স্থানীয় মিত্র দালালদের ব্যবহার
করেছে যাদের অনেকেরই হবি হচ্ছে ধর্ষণ।আমেরিকানদের এই মিত্রদের কমান্ডাররা কমবয়েসী শিশু এবং কিশোরদের
নিজেদের যৌনদাস হিসেবে ব্যবহার করতো। তাঁদেরকে ২৪ ঘন্টা বিছানার সাথে শেকল দিয়ে বেধে রাখা হতো আর
রাতে ধর্ষণ করা হতো। এবং এই কাজগুলো হতো আমেরিকানদের বেইসের ভেতরে অর্থাৎ আমেরিকানদের
সেনাঘাটিতে, অ্যামিরিকানদের মিত্ররা, আমেরিকানদের উপস্থিতিতে শিশুদের ধর্ষণ করতো। শুধু তাই না, আমেরিকান
সেনাবাহিনী এই বিকৃ তকাম, ধর্ষক ও সমকামিদের বিভিন্ন গ্রামের নেতৃ ত্বের পদে বসাতো।
http://tinyurl.com/psqpqqd
এইরকম প্রমাণও পাওয়া যায় আমেরিকান সেনারা-আমেরিকার সিআইএ নিজেরাই আফগানিস্তানে বন্দীদের-
সিভিলিয়ানদের উপর টর্চার,যৌন নির্যাতন,ধর্ষণ চালিয়েছে।এমনকি ফারাহ প্রদেশে কয়েকজনকে মাত্রাতিরিক্ত ধর্ষণ
করার ফলে রক্তক্ষরণে মৃত্যুবরণ করে। আফগানিস্তান থেকে বন্দী করা হয়  'গ্রে লেডী অব বাগরাম' নির্দোষ ডক্টর
আফিয়া সিদ্দিকীকে,যাকে বছরের পর বছর ধরে বন্দী করে ক্রমাগত নির্যাতন ও ধর্ষণ করা হয়, তাকে নগ্ন করে
কু রআনের উপর হাঁটতে বাধ্য করা হয়।  আফিয়া সিদ্দিকীর কেস ছাড়াও প্রচু র যৌন নিপীড়ন-ধর্ষণের কেস আছে
আফগানিস্তানে।ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (ICC) সেই ২০১৬ সাল থেকেই আমেরিকার যুদ্ধাপরাধ(War Crime)
নিয়ে বিচারের কথা বলছে,গত বছর আইসিসির রিপোর্ট মতে কমপক্ষে আশিটা ভিক্টিমের কেস তদন্ত করার দাবি রাখে।
আমেরিকা আফগানিস্তানে প্রচু র যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী, আফগানিস্তানে তদন্ত করতে দিলে আইসিসি আরও অনেক
ভিক্টিমের কেস পাবে,আমেরিকার মহান সেনাদের করা বর্বরতা-যুদ্ধাপরাধ প্রমানিত হয়ে যাবে এজন্য ট্রাম্প আইসিসিকে
সরাসরি অবরোধ দেয়,বাইডেন পরে সেই অবরোধ সরালেও আইসিসির বিরুদ্ধাচারে অনড় থাকে।হয়ত আফগানেও
ঘটেছে আবু গ্রাইব বা এর চেয়েও খারাপ কিছু যা জানতে দেয়া হচ্ছে না।
http://peacewomen.org/.../afghanistan-afghan-girl-raped...
https://5pillarsuk.com/.../dr-aafia-siddiqui-assaulted.../
https://www.theguardian.com/.../senior-icc-judges...
https://www.cfr.org/.../iccs-probe-atrocities-afghanistan...
https://www.theguardian.com/.../how-the-good-war-went-bad...
আমেরিকার সিআইএ বন্দীদের ইন্টারোগেশনের একটা মেথড ছিল-ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতন।আমেরিকার সিআইএ
গুয়েন্তেনামো,বাগরাম,কান্দাহার ইত্যাদি ডিটেনশন ক্যাম্প সহ পোল্যান্ড,রোমানিয়া,লিথুনিয়া ইত্যাদি জায়গায় বিভিন্ন
ব্ল্যাক সাইট- গোপন কারাগারে  ''এনহ্যান্সড ইন্টারোগেশান মেথড'' ব্যাবহার করে ''সন্ত্রাসীদের'' জন্য। যেখানে ধর্ষণের
সাথে যৌনাঙ্গ দিয়ে বরফ ও বিভিন্ন দ্রব্য ধুকানো হয়।গুয়েন্তেনামো ও বিভিন্ন ব্ল্যাক সাইটে ধর্ষণের ব্যাবহার ছিল
''সন্ত্রাসীবাদ দমনের জরুরি পন্থা'', ''নির্মম সন্ত্রাসীদের থেকে তথ্য বের করার উপায়''। পুরুষদের ধর্ষণ ছিল ''সন্ত্রাসীদের''
মানহানিকরন করার একটা পন্থা।কাউকে পুরুষরা ধর্ষণ করে কাউকে নারীরা গনধর্ষণ করে,অনেকে সেখানে নির্যাতন সহ্য
করতে না পেরে মৃত্যু কামনা করত।সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকার সাইকোলজিকাল অস্ত্র ছিল ধর্ষণ-যৌন নির্যাতন।
https://zeroimpunity.com/the-uss-psychological-weapon.../...
https://www.theguardian.com/.../cia-sexual-abuse-torture...
https://theconversation.com/rectal-feeding-is-rape-but...
https://www.thedailybeast.com/guantanamo-detainee-i-was...
একই রকম ঘটনা ইরাকেও ঘটে, ইরাককে ধর্ষণের সাম্রাজ্য বানায় সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা।ইরাক যুদ্ধের সময় ১৪ বছর
বয়সী আবির আল জানাবিকে গনধর্ষণ করে সপরিবারে হত্যা করে আমেরিকান পশুরা।ধর্ষক পরবর্তীতে বিবৃতি দেয়
''আমি ইরাকীদের মানুষই মনে করি নাই''!
https://www.dailymail.co.uk/.../I-didnt-think-Iraqis...
কু খ্যাত আবু গ্রাইব কারাগারে বন্দীদের উপর এমন কোন ভয়ঙ্কর নির্যাতন নেই যেটা চালানো হয় নাই।সরাসরি ডিফেন্স
সেক্রেটারি রামস্ফেল্ড এর সাথে জড়িত ছিল।আবু গ্রাইব কারাগারে বন্দীদের নগ্নদেহের পিরামিড বানানো হয়,
বিভিন্ন ভয়াবহ অকথ্য যৌন নির্যাতন চালানো হয়, প্রতি রাতে সেখানে ধর্ষিতা নারীর চিৎকার শোনা যেত। ফাতেমা
নামের একজন নারী প্রতি রাতের নিয়মিত ধর্ষণ নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে মৃত্যু ভিক্ষা চেয়ে চিঠি লিখে! এমনকি
আবু গ্রাইব কারাগারে শুধু নারীদেরকেই ধর্ষণ করে নি, বরং তাঁদের সামনে তাঁদের ছোট ছেলেদের ধর্ষণ করেছে এবং
সেটার ভিডিও করেছে! সেখানে মায়ের সামনে সন্তানকে ধর্ষণ করা হয়, মাকে ধর্ষণ করা হয় সন্তানের সামনে! মার্কি ন
সেনারা বেশ আনন্দের সাথে তাদের পশুর চেয়েও নিকৃ ষ্ট সব কর্মের ছবি তু লে,ভিডিও করে!
ইরাকে নারী বন্দীদের ধর্ষণ একটা প্রথার মত হয়ে দাঁড়ায়। ব্রিটিশ আর্মির হাজার হাজার যুদ্ধাপরাধের কেস আসে
ইরাকে, আবু গ্রাইবের ছবিগুলোকে করাসরি কপি করে একইরকম যৌন নির্যাতন নিপীড়ন করে বলে দাবি করে ইরাকি
ভিক্টিমরা। ব্রিটিশ আর্মিদের যুদ্ধাপরাধের কেসের সংখ্যা হাজারের উপরে আসতে থাকে কিন্তু ব্রিটেনের সরকার এবং
মিলিটারি ক্রমাগত চেষ্টা করতে থাকে অপরাধের প্রমাণ মুছে ফেলার, ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার, এমনকি চার্জ পাওয়ার
পরও বিচার করা হয় না।আমরা যেগুলা দেখেছি এইগুলা tip of the Iceberg, আসল অপরাধের মাত্রা আরও বড়।
https://www.middleeasteye.net/.../uk-british-forces-six...
https://www.hrw.org/.../23/uk-seeks-stop-justice-war-crimes
https://www.bbc.com/news/uk-50419297
https://www.thetimes.co.uk/.../uk-soldiers-face-iraqi-sex...
https://www.abc.net.au/.../british-forces-accused.../1142112
এইখানে যা যা বলা হচ্ছে এইগুলা স্রেফ আসল বর্বরতার ছিটেফোটা মাত্র, পশ্চিমা সরকার, মিলিটারি, গোয়েন্দা সংস্থা
সর্বোচ্চ চেষ্টা করে নিজের অপরাধগুলা ধামাচাপা দেয়ার, সিস্টেম্যাটিকভাবে কেস নিশ্চিনহ করে ফেলা হয়। যেইগুলার
কথা বলা হয়েছে এই ঘটনাগুলাও ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল বার বার, ঘটনাক্রমে পরে বিভিন্ন হুইসেন
ব্লোয়ারের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে।কোন ঘটনা বেরিয়ে আসলেও সেটাকে বলা হয় ''few bad apples'', আমাদের
সেনারা বেশিরভাগই ভাল এইগুলা স্রেফ অল্পকিছু বাজে উদাহরণ অন্যদিকে তাদের উপরে স্রেফ কয়েকজন সন্ত্রাসী
আক্রমণ করলে একটা গোটা জাতির উপর হত্যাযজ্ঞ নেমে আসে! 
http://tinyurl.com/otfeory
http://tinyurl.com/qyqrjh
http://tinyurl.com/nnhh59u
https://www.cbsnews.com/.../abuse-of-iraqi-pows-by-gis.../
https://www.reuters.com/.../us-usa-abuse...
https://meaningfulworld.com/.../sexualized-violence...
পশ্চিমা আর্মিকে মুভি-মিডিয়াতে দেখানো হয় মহান বীর যোদ্ধা হিসেবে!
এমনকি পেন্টাগন সক্রিয়ভাবে হলিউডকে সাহায্য করে এবং মুভির স্ক্রিপ্ট তৈরি করে নিজেদের সেনাদের যুদ্ধাপরাধ
ঢাকতে। যেমন- বিখ্যাত ব্লক বাস্টার ব্লাক হক ডাউনের মূল চরিত্রে এমন একজন সেনা সদস্যের পরিচয় ব্যাবহার করা
হয় যে বাস্তবে সোমালিয়াতে শিশুধর্ষণ কারী ছিল। এইরকম বহু প্রোপাগান্ডা মুভি কালচারাল প্ল্যাটফর্মে প্রচার করেছে
বছরের পর বছর ধরে। তার সাথে ম্যাস মিডিয়া পশ্চিম কন্ট্রোল করে, সেইখানে সম্পূর্ণ একপাক্ষিক চিত্র, চেরিপিকিং
করা এমনকি সরাসরি প্রোপাগান্ডা ছড়ানো তো আছেই। যার জন্য এদের অনেক বর্বরতাই ধামা চাপা পরে যায়
https://nypost.com/2001/12/18/war-film-hero-is-a-rapist/
http://america.aljazeera.com/.../hollywood-and...
এতদিনের যুদ্ধবন্দীদের উপর এত বর্বর নির্যাতনের ব্যাপারে ২০ বছর এরা যে কোথায় ছিল খুঁজে পাওয়া যাবে না, কিন্তু
দক্ষিণ হস্ত মালিকানা নিয়ে এরা ঠিকই আবার প্রশ্ন তু লতে আসবে!

—------------------------------------------------------------------------------------------------------------
A detailed analysis about-
-Historical use of feminism and women's rights issues for justifying colonization and
Islamophobia
- use of feminism and propaganda in the Afghan war
-Reality of women's rights given western occupiers
-Present situation for women
https://www.kebabcast.com/afghan-war-feminism-colonialism/
(Also you can check out Israel's use of LGBTQ+ rights to whitewash colonization of
Palestine for better clarification - https://www.kebabcast.com/israel-palestine-conflict-and-
using-lgbtq-rights-for-colonialism/ )
 
—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
 
 
Secularism and illusion of Religious Freedom
Last part:- Religious freedom and Minority Rights in Islam
ইসলাম অমুসলিমদের কিরকম আচরণ করতে বলে/শরিয়া অনুসারে মুসলিমদের অমুসলিমদের কি কি অধিকার প্রদান
করা উচিত?
ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অধিকারের বিষয়ে অসংখ্য ইসলামবিদ্বেষী প্রচারণা হয়,শুধু ইসলামবিদ্বেষী না বর্ত মানে অনেক
মুসলিম নামধারী লোকজনও (?) এটা বিশ্বাস করে শরিয়া-ইসলাম অমুসলিমদের প্রতি ইনসাফ প্রদর্শন করে না, তাদের
সাধারণ মানুষের প্রতি উগ্র আচরণ করতে বলে।
ইসলাম শুধু মুসলিম না,ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্যও যথাযত ইনসাফ প্রদান করতে বলে,এটা শুধু ইসলামিক সোর্স
না,অমুসলিম সোর্স থেকেও উল্লেখ করব।
ইসলামিক রাষ্ট্রে বসবাসরত অমুসলিমদের বলা হয় যিম্মি।যিম্মি’ (‫ )ذمي‬শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘সংরক্ষিত ব্যক্তি’।

 ‘যিম্মি’র আওতাভু ক্ত কারা,শুধুমাত্র আহলে কিতাবরা (ইহুদি,খ্রিষ্টান,সাবেয়ি) জন্য নাকি মুশরিক
(পৌত্তলিক)রাও এর অন্তর্ভু ক্ত – এ নিয়ে উলামাদের মধ্যে কিছু ফিকহী ইখতিলাফ আছে। তবে হাদিস থেকে
প্রতিষ্ঠিত এবং অশিকাংশ আলেমের অভিমত যে, মুশরিকরাও(বহুঈশ্বরবাদীরাও) এর আওতাভু ক্ত, তারাও
শরিয়া অনুসারে সংরক্ষিত।
 ''... ...যখন তু মি শত্রুপক্ষের মুশরিকদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে, তখন তাদেরকে তিনটি বিষয়ের
প্রতি আহবান জানাবে। ... ... তারা যদি ইসলামে দাখিল হতে অস্বীকার করে তবে তাদেরকে জিজিয়া দিতে
বলো। তার যদি তা দেয় তবে তাদের নিকট থেকে তা গ্রহণ করো এবং তাদেরকে আক্রমণ করা থেকে বিরত
থাকো। ... ...”[সহীহ মুসলিম ১৭৩১, সুনান ইবন মাজাহ ২৮৫৮, তিরমিযী ১৩০৮, ১৬১৭, আবু দাউদ
২৬১২, ২৬১৩, মুসনাদ আহমাদ ২২৪৬৯, ২২৫২১, দারিমী ২৪৩৯, ২৪৪২, ইরওয়া ১২৪৭, ৭/২৯২, রাওদুন
নাদীর ১৬৭। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।]ইমাম কু রতু বী(র.) আওযায়ী(র.) থেকে উল্লেখ করেছেনঃ জিজিয়া
সকল মূর্তি পুজক, অগ্নিপুজক, নাস্তিক কিংবা (ধর্ম) অস্বীকারকারীদের কাছ থেকে নেয়া হবে।ইমাম
মালিক(র.) এর অভিমত হচ্ছে, সকল প্রকার মুশরিক (মুর্তি পুজারী), ধর্মহীন নাস্তিক, আরব, অনারব,
তাগলিবি (একটি খ্রিষ্টান গোত্র), কু রাঈশ – সবার কাছ থেকে নেয়া হবে।[ জামিউল আহকাম আল কু রআন
(তাফসির কু রতু বী) ১১০/৮ ]
 ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল(র.) এর একটি অভিমত অনুযায়ীঃ শুধুমাত্র আরবের মূর্তি পূজক ব্যতিত যিম্মার
চু ক্তি সকল কাফিরের সাথে হতে পারে।[আল মুক্বনী, ইবনু কু দামা(র.), অধ্যায়: জিহাদ, পরিচ্ছেদ: যিম্মার
চু ক্তি; আব্দুল কাদির আল আরনাউতের তাহকীক, ১৪৬ পৃষ্ঠা]
 ইমাম আবু হানিফা(র.), ইমাম আবু ইউসুফ(র.) ও হানাফী ইমামদের থেকেও অনুরূপ অভিমত পাওয়া
যায়।[‘সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ’ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), ‘জিযয়া’ অংশ, পৃষ্ঠা ৪০১]
 শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাঈমিন(র.) এর অভিমত অনুযায়ীও আহলে কিতাব ছাড়াও মুশরিকদের
থেকে জিজিয়া নেয়া হবে। [শারহুল মুমতি ৮/৫৮] এবং এটিই সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের অভিমত।
 যিম্মিরা ইসলামিক রাষ্ট্রে সুরক্ষিত অবস্থায় বসবাস করবে,তাদের প্রতি ন্যায়বিচার ও দয়ার সাথে আচরণ করা
হবে।

ন্যায়বিচার করতে হবে- শুধু অমুসলিম হওয়ার জন্য অন্যায় ও নির্দ য় আচরণ করা যাবে না।

 দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে
দেয়নি, তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ
করছেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।(আল কু রআন, মুমতাহিনা ৬০ : ৮) ”
 হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে (হকের উপর) দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত (এবং) ন্যায়পরায়ণতার সাথে
সাক্ষ্যদাতা হও। কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনও সুবিচার না করাতে প্ররোচিত না
করে।সুবিচার কর, এটা আত্মসংযমের নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর
রাখেন।( সূরা আল মায়েদা,আয়াত ৮)
 হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ; যদিও তা তোমাদের নিজেদের
বা পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে হয়; সে বিত্তবান হোক বা বিত্তহীন হোক আল্লাহ্‌উভয়েরই
ঘনিষ্টতর। কাজেই তোমরা ন্যায়বিচার করতে প্রবৃত্তির অনুগামী হয়ে না। যদি তোমরা পেঁচালো কথা বল বা
পাশ কাটিয়ে যাও তবে তোমরা যা কর আল্লাহ তো তার সম্যক খবর রাখেন।(সূরা নিসা, আয়াত ১৩৫)
 রাসুল (সা) চু ক্তিবদ্ধ ইহুদিদের সম্পর্কে বলেন,''আমাদের সাথে চু ক্তি সম্পাদনকারী ইহুদিদের প্রতি
সহানুভূ তিমূলক আচরণ করা এবং তাদের সাহায্য করা আমাদের সকল মুসলমানের কর্ত ব্য। তাদের উপর
কোনও প্রকার অত্যাচার চালানো উচিত নয় এবং তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে তাদের সহায়তা করা উচিত
নয়।''(সিরাত ইবনে হিশাম)
 আবূ যর গিফারী(রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসুল(‫ )ﷺ‬ইরশাদ করেন: আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:‘‘হে
আমার বান্দারা, নিশ্চয়ই আমি আমার উপর যুলুম হারাম করে দিয়েছি। অতএব তোমাদের উপরও তা
হারাম। সুতরাং তোমরা পরস্পর যুলুম করো না’’।(সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৫৭৭)
 আনাস বিন মালিক(রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ(‫ )ﷺ‬বলেছেন:তোমরা মজলুমের বদদুআ
থেকে বেঁচে থাকো। যদিও সে কাফির হয়। কেননা মজলুমের দুআ কবুল হওয়ার কোনো অন্তরায় নেই।”
(মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং : ১২১৪০, সহীহ)
 হিশাম বিন্ ’হাকীম(রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসুল(‫ )ﷺ‬বলেন:“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা ওদেরকে
শাস্তি দেবেন যারা দুনিয়াতে মানুষকে (অন্যায়ভাবে) শাস্তি দেয়’’।(সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ২৬১৩)
 সাহাবী আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তার জন্য একটি ছাগল যবেহ করা হলে তিনি তার
গোলামকে বলতে লাগলেন, তু মি কি আমাদের ইহুদি প্রতিবেশীকে তা দিয়েছো? তু মি কি আমাদের ইহুদি
প্রতিবেশিকে তা দিয়েছো? আমি রাসুলুল্লাহ(‫)ﷺ‬-কে বলতে শুনেছিঃ জিবরাঈল(আ.) আমাকে প্রতিবেশী
সম্পর্কে অবিরত নসিহত করতে থাকেন। আমি মনে মনে ভাবলাম যে, তিনি তাকে হয়তো (সম্পদের)
ওয়ারিস বানাবেন(তিরমিজি, আবু দাউদ, আদাবুল মুফরাদ—ইমাম বুখারী(র.), হাদিস নং : ১০৪ (সহীহ))

অমুসলিমদের হত্যা,নিপীড়ন,অধিকার হরণ,কষ্ট দেয়া,জোরপূর্বক তাঁর কোনকিছু নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি কঠোরভাবে
নিষিদ্ধ।

 রাসুলুল্লাহ(‫ )ﷺ‬বলেন,''যে একজন যিম্মিকে কষ্ট দিল সে আমাকে কষ্ট দিল।''( আল তাবারানি)
 ''অমুসলিমদের অধিকার রক্ষা করা আমার ওপর আরোপিত বিশেষ কর্ত ব্যগুলোর একটি''( সুনানে
বায়হাকি,খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৩০)
 '‘সাবধান! যদি কোনো মুসলিম কোনো মুআহিদ (চু ক্তিবদ্ধ অমুসলিম নাগরিক) এর ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার
অধিকার খর্ব করে, তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে
কিয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করব।’(সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং :
৩০৫২)
 যদি কোন মুসলিম কোন নিরপরাধ অমুসলিমকে হত্যা করে তাহলে সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না,যদিও
জান্নাতের সুঘ্রান ৪০ হাজার বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।(সহিহ আল বুখারি, ০৩/ ২২৯৫)
 হানাফি মাজহাবের অনেক ফকিহগন অনুসারে,যিম্মি হত্যাকারীকে মুসলিমদেরই অনুরূপ কিসাসের মাধ্যমে
বিচার করা হবে,তবে যুদ্ধরত কাফেরের বিষয় আলাদা।ইমাম কু দুরি(রহ) বলেন, ''যিম্মির হত্যার বিপরীতে
মুসলমানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া যাবে'' (আল হিদায়া,খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩৫০)ইমাম কু দুরি (রহ) আরও
বলেছেন,''মুসলিম এবং যিম্মির দিয়াত সমান'' (আল হিদায়া, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩৯৫)

জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা নিষিদ্ধ, স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে দিতে হবে।

 '' ধর্মের ব্যাপারে কোন জোরজবরদস্তি নেই।নিশ্চয় হিদায়াত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে। অতএব, যে ব্যক্তি
তাগূতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন
হবার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।''( সূরা বাকারা, আয়াত ২৫৬)
 এই আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আনসারদের কিছু যুবক ছেলেরা ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান
হয়ে গিয়েছিল। পরে যখন আনসাররা ইসলাম গ্রহণ করল, তখন তারা তাদের ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান হয়ে যাওয়া
সন্তানদেরকে ইসলাম গ্রহণের জন্য বাধ্য করতে চাইলে এই আয়াত অবতীর্ণ হল। আয়াত নাযিল হওয়ার
কারণের দিকে লক্ষ্য করে কোন কোন মুফাসসির এটাকে আহলে-কিতাবদের জন্য নির্দি ষ্ট মনে করেন। অর্থাৎ,
মুসলিম দেশে বসবাসকারী ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা যদি জিযিয়া-কর আদায় করে, তাহলে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণে
বাধ্য করা যাবে না। তবে এই আয়াতের নির্দে শ ব্যাপক। অর্থাৎ, কাউকে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করা যাবে
না। কারণ, মহান আল্লাহ হিদায়াত ও গুমরাহী উভয় পথই সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন।(তাফসীরে
আহসানুল বয়ান)
 খলিফা উমর (রা) এর দাস আশাক বলেন,'' আমি ছিলাম উমারের(রা.) খ্রিষ্টান গোলাম। তিনি একদিন
আমাকে বললেন, “মুসলিম হয়ে যাও।...কিন্তু আমি অস্বীকৃ তি জানালে তখন তিনি বললেন, “ধর্মে জোর-
জবরদস্তি নেই।”তাঁর মৃত্যু ঘনিয়ে তিনি আমাকে মুক্ত করে দেন। বলেন, “তোমার যেখানে ইচ্ছা চলে যাও”।
(আমিরুল মুমিনিন উমার ইবনুল খাত্তাব রা.—আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩০)
 মিসরবিজয়ী সাহাবী আমর ইবনুল আস(রা.) সেখানকার অধিবাসীদের সাথে যে চু ক্তি করেছিলেন তাতে
উল্লেখ ছিলঃ“পরম দাতা ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। এটা হচ্ছে মিসরবাসীদের প্রতি দেয়া হযরত
আমর (রা.)-এর একটি নিরাপত্তানামা, তাদের জানের জন্যে, তাদের জনতার জন্যে, তাদের ধন-দৌলতের
জন্যে, গির্জা, ক্রু শ, জল ও স্থলের জন্যে, কোন কিছুর ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা হবে না। কোন প্রকার সুযোগ-
সুবিধা হ্রাস করা হবে না বা পরিহার করা হবে না। মিসরের বাসিন্দাগণ কর আদায় করবে যদি তারা এ
সন্ধিনামায় একাত্মতা প্রকাশ করে।( ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ – ইবন কাসির, ৭ম খণ্ড (ইসলামিক
ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), পৃষ্ঠা ১৮৪)

এমনকি ইসলামিক রাষ্ট্রের সেনাদের যুদ্ধক্ষেত্রেও নিরপরাধ অমুসলিমকে হত্যা করার,উপাসনালয় ধ্বংস করার,নির্যাতন
করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
 মুতার যুদ্ধে রওনার সময় রাসূলুল্লাহ(‫ )ﷺ‬তাঁর বাহিনীকে নির্দে শ দেন :‘তোমরা কোনো নারীকে হত্যা করবে না,
অসহায় কোনো শিশুকেও না; আর না অক্ষম বৃদ্ধকে। আর কোনো গাছ উপড়াবে না, কোনো খেজুর গাছ
জ্বালিয়ে দেবে না। আর কোনো গৃহও ধ্বংস করবে না।’ (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং : ১৭৩১)
 আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস(রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ(‫ )ﷺ‬নিজের কোনো বাহিনী প্রেরণ করলে
বলতেন, “তোমরা গির্জার অধিবাসীদেরকে হত্যা করবে না।”(ইবন আবী শাইবা, ‘মুসান্নাফ’ : ৩৩৮০৪)
 "... আমি তোমাদের কয়েকটি উপদেশ দিয়ে প্রেরণ করছি : (যুদ্ধক্ষেত্রে) তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না, ভীরুতা
দেখাবে না, (শত্রুপক্ষের) কারো চেহারা বিকৃ তি ঘটাবে না, কোনো শিশুকে হত্যা করবে না, কোনো গির্জা
জ্বালিয়ে দেবে না এবং কোনো বৃক্ষও উৎপাটন করবে না।’' (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক : ৯৪৩০)
 উসামাহ (রা.)-এর নেতৃ ত্বে শাম অভিমুখে অভিযান প্রেরণের সময় তার প্রতি আবু বকর (রা.)-এর একটি
গুরুত্বপূর্ণ আদেশ এই ছিল যে,“যাত্রাপথে তোমাদের সাথে এরূপ অনেক লোকের সাক্ষাতও হবে, যারা তাদের
জীবনকে উপাসনালয়ের মধ্যে উৎসর্গ করে দিয়েছে, তাদেরকে তোমরা তাদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দেবে।”
(তাবারী’, তারীখুল উমাম ওয়াল মুলূক’, খ. ২, পৃ. ৪৬৩; ইবনু আছীর, ‘আল-কামিল’... খ. ১, পৃ. ৩৬২)
 বিশিষ্ট ফকীহ আল-কাসানী বলেন, ‘‘ প্রাচীন উপাসনালয়গুলোকে ধ্বংস করা কোন অবস্থায়ই বৈধ
নয়।’’(আল-কাসানী, ‘বাদাই’ খ. ৭,পৃ. ১১৪ )

মুসলিম শাসনে অমুসলিমদের সম্পূর্ণ সুরক্ষা দেয়া হবে

 রাসুল (সা) বলেন,''আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজরান(খ্রিস্টানদের ভু মি) এবং তাঁর শাসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত
করা হয়েছে।তাঁদের জীবন,তাঁদের ভু মি,তাঁদের সম্পদ,তাঁদের উপাসনালয় সবকিছুরই নিরাপত্তা দেয়া হবে।
কোন যাজককে তাঁর কাজ হতে, কোন কর্মকর্তাকে তাঁর চাকরি হতে চাকরিচ্যুত করা হবে না।(তাবাকাত
ইবনু সাদ,খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২২৮)
 উমর ইবনে আল খাত্তাব (রা) ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানদের সাথে নিজের চু ক্তিতে লিখেন,“আল্লাহর দাস…
ফিলিস্তিনের মানুষকে এই সুরক্ষা দান করেছে। সুতরাং, সুরক্ষা তাদের জীবন, সম্পত্তি, গির্জা, ক্রস,সুস্থ এবং
অসুস্থ এবং তাদের সকল ধর্মবাদীদের জন্য।এইভাবে তাদের গীর্জাগুলিকে আবাস ঘরে পরিণত করা হবে না
এবং তাদেরকে টেনে নামানো হবে না এবং তাদের বা তাদের ঘেরে বা তাদের ক্রু শের কোনও ক্ষতি করা হবে না
এবং তাদের সম্পদ থেকে কোনকিছু নিয়ে নেওয়া হবে না।তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পর্কি ত কোনও বিধিনিষেধ
আরোপ করা হবে না। ”(তারিখ আর রাসুল ওয়াল মুলুক,তাবারি, পৃষ্ঠা-২৪০৫)
 খলিফা আবু বকর(রা.) ইরাকের হীরাবাসীদের সাথে সম্পাদিত চু ক্তিপত্রের ভাষা নিম্নরূপঃ“তাদের খানকাহ ও
গির্জাগুলো ধ্বংস করা হবে না। প্রয়োজনের সময় শত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য যে সব ইমারতে
তারা আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে সেগুলোও নষ্ট করা হবে না। নাকু স ও ঘণ্টা বাজাতে নিষেধ করা হবে না। আর
উৎসবের সময় ক্রু শ মিছিল বের করার ওপরও কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে না।”(‘কিতাবুল খাৱাজ’
– ইমাম আবু ইউসুফ, ১/১৭০)
 ইমাম শিহাবুদ্দিন আল কারাফি (রহঃ) যিম্মিদের প্রতি আচরণকে ব্যাখ্যা করেন,''সুরক্ষার চু ক্তি আমাদের উপর
আহল আল ধিম্ম [মুসলিম সুরক্ষার অধীনে অমুসলিম] প্রতি কিছু নির্দি ষ্ট বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দিয়েছে। তারা
আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং ইসলাম ধর্মের গ্যারান্টি অনুসারে আমাদের আশ্রয় ও সুরক্ষার আওতায় আমাদের
প্রতিবেশী। যে ব্যক্তি তাঁদের কোন একজনের প্রতি এই বাধ্যতাগুলোর লঙ্ঘন করে এমনকি এতটু কু
আপত্তিজনক কথা বলে, তার সুনামের নিন্দা করে, বা তাকে কিছু আঘাত করে বা তাতে সহায়তা করে, সে
আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সাঃ)এবং ইসলাম ধর্মের দেয়া নিশ্চয়তাকে লঙ্ঘন করেছে ।''(আল ফু রুক)

অমুসলিমদের করও প্রদান করা লাগত মুসলিমদের তু লনায় খুবই সামান্য,যাকে বলে জিজিয়া কর।

 আবু বকর(রা.) এর সময়ে জিজিয়ার পরিমাণ ছিল যৎসামান্য। সে সময়ে মুসলিমদের দ্বারা বিজিত হিরা
অঞ্চলের অধিবাসীর কাছ থেকে বছরে মাত্র ১০ দিরহাম আদায় করা হতো।(‘কিতাবুল আমওয়াল’ - আবু
উবাইদাহ পৃষ্ঠা ২৭)
 মুসলিম শাসককে জিজিয়ার অর্থ পরিশোধ করবেন আর্থিক সক্ষমতা আছে এমন পূর্ণবয়স্ক পুরুষরা যারা
রাষ্ট্রের রক্ষার কাজে নিয়োজিত না।রাষ্ট্রের রক্ষার কাজে নিয়োজিত শিশু-কিশোর, নারী, পাগল, দাস-দাসী,
প্রতিবন্ধী, উপাসনালয়ের সেবক, সন্যাসী, ভিক্ষু , অতি বয়োবৃদ্ধ এবং বছরের বেশির ভাগ সময়ে রোগে কেটে
যায় এমন লোকদের জিজিয়া দিতে হবে না।(আল মুগনী’ - ইবনু কু দামা মাকদিসী(র.), খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ২৭০-
২৭৩)(‘আহকামুয যিম্মিয়িন ওয়াল মুসতা’মিমীন ফি দারি ইসলাম’ – আব্দুর কারিম যায়দান, পৃষ্ঠা ১৫৭)
( ‘সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ’,‘জিযয়া’ অংশ, পৃষ্ঠা ৪০১)
 অমুসলিমদের উপাসনালয়ের সেবক, সন্যাসী, ভিক্ষু এদেরকে ইসলামী রাষ্ট্রে কোনো জিজিয়া করও দিতে হয়
না। তারা বিনা জিজিয়ায় ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাস করেন।(‘আল-মুগনী’ - ইবনু কু দামা মাকদিসী(র.), খণ্ড ৯,
পৃষ্ঠা ২৭০-২৭৩;‘বাদাই’ - আল কাসানী, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ১১১)
 ইমাম ইবনু কু দামা মাকদিসী(র.) উল্লেখ করেছেনঃযে সকল অমুসলিম নাগরিক দারিদ্র্যের শিকার ও পরের
উপর নির্ভ র করে চলে, তাদের জিজিয়া মওকু ফ তো করা হবেই উপরন্তু বাইতু ল মাল থেকে তাদের জন্য
নিয়মিত সাহায্য বরাদ্দ দিতে হবে। (‘আল মুগনী’ - ইবনু কু দামা মাকদিসী(র.), খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ২৭২)
 ১ম খলিফা আবু বকর(রা.) বলেন, “যদি কোনো অমুসলিম বৃদ্ধ অকর্মণ্য হয়ে পড়ে অথবা কোনো বিপদে
পতিত হয় অথবা কোনো সম্পদশালী যদি এমনভাবে দরিদ্র হয়ে পড়ে যে তার গোত্রের লোকেরা তাকে সাহায্য
করে—এরূপ পরিস্থিতে তাকে জিজিয়া থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। উপরন্তু মুসলিমদের বাইতু ল মাল
(ইসলামে রাষ্ট্রের কোষাগার) থেকে তার ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যতদিন সে মদীনায় বা ইসলামী
রাষ্ট্রের অধীনে বসবাস করে।”(কিতাবুল খারাজ’ – ইমাম আবু ইউসুফ(র.), পৃষ্ঠা ১৪৪)
 একবার খলিফা উমার(রা.) এক অন্ধ বৃদ্ধকে ভিক্ষা করতে দেখেন। এ সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে তিনি জানতে
পারলেন যে সে ইহুদি। উমার(রা.) জানতে চাইলেন, কেন সে ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়েছে।জবাবে সে
জানালোঃ জিজিয়া, প্রয়োজন এবং জীবনধারণের চাহিদা।খলিফা উমার(রা.) হাত ধরে তাকে নিজের বাড়ীতে
নিয়ে আসেন, তৎক্ষণাৎ তার প্রয়োজন পূরণ করেন এবং বাইতু ল মালের খাজাঞ্চীর কাছে বার্তা পাঠানঃ “এ
ব্যক্তি এবং এর মতো অন্য ব্যক্তিদের প্রতি পূর্ণ দৃষ্টি রাখবে। আল্লাহর কসম, আমরা যৌবনে (জিজিয়া) নিয়ে
বার্ধক্যে তাকে কষ্ট দিলে তার প্রতি এটা আমাদের ইনসাফ করা হবে না। সদকা তো নিঃসন্দেহে অভাবগ্রস্ত ও
নিঃস্ব ব্যক্তিদের জন্য। আর এ হচ্ছে আহলে কিতাবের নিঃস্ব ব্যক্তি। (‘কিতাবুল খারাজ’ – ইমাম আবু
ইউসুফ(র.), পৃষ্ঠা ১২৬)
 খলিফা উমার(রা.) দামেস্ক সফরকালে একস্থানে কু ষ্ঠরোগে আক্রান্ত কিছু খ্রিষ্টানকে দেখতে পান। তিনি
তাদেরকে সরকারী কোষাগার (বাইতু ল মাল) থেকে সাহায্য দেবার নির্দে শ দেন। তাদের জীবন-জীবিকার
উপায়-উপকরণ সরবরাহেরও নির্দে শ তিনি দেন। (ফু তু হুল বুলদান’ -আল বালাযুরী, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭৭)
 আমিরুল মু’মিনীন উমার(রা.) এর ওসিয়ত ছিল –“…আমি তাঁকে এ ওয়াসিয়াতও করছি যে, তিনি যেন
রাজ্যের বিভিন্ন শহরের আধিবাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করেন। কেননা তারাও ইসলামের হেফাযতকারী। এবং
তারাই ধন-সম্পদের যোগানদাতা। তারাই শত্রুদের চোখের কাঁটা। তাদের থেকে তাদের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে
কেবলমাত্র তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ যাকাত আদায় করা হয়। আমি তাঁকে পল্লীবাসীদের সহিত
সদ্ব্যবহার করারও ওয়াসিয়ত করছি। কেননা তারাই আরবের ভিত্তি এবং ইসলামের মূল শক্তি। তাদের
প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ এনে তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া হয়। আমি তাঁকে আল্লাহ ও তাঁর
রাসুলের(‫ )ﷺ‬যিম্মিদের বিষয়ে ওয়াসিয়াত করছি যে, তাদের সাথে কৃ ত অঙ্গীকার যেন পুরা করা হয়। (তারা
কোনো শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হলে) তাদের পক্ষাবিলম্বে যেন যুদ্ধ করা হয়, তাদের শক্তি সামর্থ্যের অধিক জিজিয়া
যেন চাপানো না হয়।”(সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৩৪৩৫)
 উরওয়া বিন যুবায়ের বিন আওয়াম থেকে হিশাম বিন উরওয়ার মাধ্যমে আবু ইউসুফ বর্ণনা করেছেন,
উমার(রা.) সিরিয়া থেকে ফেরার পথে এক স্থানে দেখলেন, কয়েকজন লোককে প্রখর রৌদ্রে দাঁড় করিয়ে রাখা
হয়েছে। তিনি বললেন, ব্যাপার কী? লোকেরা বললো, এদের উপর জিজিয়া অত্যাবশ্যক ছিলো। কিন্তু এরা
জিজিয়া পরিশোধ করেনি। তাই তাদেরকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তিনি বললেন, এরা জিযিয়া পরিশোধ করতে চায়
না কেন? লোকেরা বললো, এরা বলছে, এরা কপর্দ কহীন। উমার(রা.) বললেন, এদেরকে ছেড়ে দাও।
সাধ্যবহির্ভূ ত বোঝা এদের উপর চাপিয়ো না। আমি রাসুল(‫)ﷺ‬কে বলতে শুনেছি, “মানুষকে শাস্তি দিয়ো না।
পৃথিবীতে মানুষকে যারা (অন্যায়ভাবে) শাস্তি দেবে, আখিরাতে আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দেবেন।” ( তাফসির
মাযহারী – কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী(র.), ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩০৬)
 খলিফা উমার(রা.) এর শাসনামলে একজন জিজিয়া সংগ্রহকারী সংগ্রহকৃ ত জিজিয়া উমার(রা.) এর নিকট
অর্পণ করলেন। বিপুল পরিমাণ জিজিয়ার অর্থ দেখে উমার(রা.) বিচলিত হয়ে পড়লেন। উমার(রা.) তাকে
জিজ্ঞেস করলেন, তিনি জনগণের এগুলো চাপিয়ে দেননি তো! তিনি উত্তর দিলেন, “মোটেও না। আমরা
শুধুমাত্র উদ্বৃত্ত এবং বৈধ অংশই সংগ্রহ করেছি।” উমার(রা.) জিজ্ঞেস করলেন, “কোনো প্রকারের চাপ কিংবা
অত্যাচার ব্যতিরেকে?” তিনি উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ”। উমার(রা.) বললেন, “যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর, আমার
শাসনকালে অমুসলিম প্রজাদের উপর অত্যাচার হচ্ছে না। ”(আল মুগনী’ - ইবনু কু দামা মাকদিসী(র.), খণ্ড
৯, পৃষ্ঠা ২৯০)
 আলী(রা.) আদেশ প্রদান করেন,“যখন তাঁদের কাছে [ভু মি রাজস্বের] জন্য যাও, তাদের শীত বা গ্রীষ্মের জন্য
উদ্বৃত্ত পোশাক বিক্রি করে দিও না। তাদের আহারের খাদ্য, তাদের প্রয়োজনীয় পশু বিক্রী করো না। দিরহামের
জন্য তাদের কাউকে কখনো চাবুক মেরো না। অথবা দিরহামের জন্য কখনো তাদের কাউকে এক পায়ে দাঁড়
করিয়ে রেখো না। তাদের গৃহস্থলী জিনিসপত্র বিক্রী করো না। কারণ আমরা তো সেটাই গ্রহণ করি যা তাঁদের
হাতে আছে। যদি আমার এ আদেশ মেনে না চলো, তাহলে আমার অনুপস্থিতিতে আল্লাহ তোমাদেরকে শাস্তি
দেবেন। আর আমি যদি তোমাদের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ শুনি, তাহলে তোমরা বরখাস্ত হবে।”(কিতাবুল
খারাজ’ – ইমাম আবু ইউসুফ(র.), পৃষ্ঠা ১৫-১৬)

জিজিয়া গ্রহণও করা হতো সদব্যাবহারের সাথে,অসম্মান,অপদস্ত করে নেয়া হতো না। মুসলিমরা সুরক্ষা প্রদানে বার্থ
হলে তা ফিরিয়ে দেওয়া হত।

 ইমাম আল নববি(রহ) যারা জিজিয়া প্রদানের সাথে যারা অবমাননা আরোপ করবেন তাদের সম্পর্কে মন্তব্য
করে বলেছেন:পূর্বোক্ত অনুশীলন (হায়াহ) সম্পর্কে , আমি জানি যে এ ক্ষেত্রে এটার পক্ষে কোন সমর্থনযোগ্য
সমর্থন নেই এবং এটি কেবল খুরসানের আলেমগণই উল্লেখ করেছেন। আলেমদের অধিকাংশ (জুমহুর)
বলেছেন যে জিজিয়াকে নম্রতার সাথে গ্রহণ করতে হবে, যেভাবে কেউ দেনা গ্রহণ করে। নির্ভ রযোগ্যভাবে
সঠিক মতামতটি হল এই অনুশীলনটি অবৈধ এবং যারা এটি তৈরি করেছিলেন তাদের খণ্ডন করা উচিত।
এটি সম্পর্কি ত নয় যে জিজিয়াকে আদায় করার সময় নবী বা সঠিক পথনির্দে শিত খলিফারা এ জাতীয়
কোনও কাজ করেছিলেন। আল-রাফি'আল্লাহ (রহ) তিনি জিযিয়া সম্পর্কি ত তাঁর গ্রন্থের প্রথম অংশে
বলেছিলেন যে আমাদের সাহাবীদের মধ্যে আরও সঠিক মতামত হ'ল সিগারের অর্থ হচ্ছে ইসলামের নিয়ম
মেনে চলা এবং সেগুলি নিজের উপর ধার্য করা। তারা বলেছিল যে সিঘারের সবচেয়ে মারাত্মক রূপটি ঘটতে
পারে এমন কিছু হ'ল তাদের উপর ধার্য করা যার সাথে তারা একমত নয়। (রাওয়াদাত আল তালিবিন, খণ্ড
10, পৃষ্ঠা 315-15)
 ইবনুল কাইয়িম(রহ) বলেছেন:এটি ভিত্তিহীন এবং আয়াতটি এটিকে বোঝায় না। এটি নবী বা সাহাবায়ে
কেরামের আচরণের সাথে সম্পর্কি ত নয়। এই আয়াত সম্পর্কে সঠিক মতামতটি হ'ল 'সিঘার' শব্দের অর্থ
অমুসলিমদের দ্বারা "গ্রহণ করে নেয়া" মুসলিম অধিকারের কাঠামো এবং তাদের জিজিয়া প্রদান। (আহকামু
আহলুল যিম্মাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৩-২৪)
 ইবনে কু দামা(রহ)ও একই কথা বলেছেন (আল-মুগনি, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২৫)
 ইয়ারমুকের যুদ্ধে যখন রোমানরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিশাল সৈন্য সমাবেশ ঘটালো এবং মুসলিমরা শামের
(বৃহত্তর সিরিয় অঞ্চল) বিস্তীর্ণ এলাকা পরিত্যাগ করে একটি ক্ষু দ্র অঞ্চলে নিজেদের শক্তি কেন্দ্রিভূ ত করতে
বাধ্য হল, তখন আবু উবাইদাহ(রা.) নিজের অধীনস্ত সেনাপতিদের নির্দে শ দিলেন যে—তোমরা যে সব
জিজিয়া ও খারাজ (ভূ মি রাজস্ব) অমুসলিমদের নিকট থেকে আদায় করেছিলে তা তাদের ফিরিয়ে দাও এবং
তাদের বলো যে, “এখন আমরা তোমাদের নিরাপত্তা দিতে অক্ষম। তাই যে অর্থ তোমাদের রক্ষা করার বিনিময়ে
আদায় করেছিলাম তা ফেরত দিচ্ছি।”এই নির্দে শ মোতাবেক সকল সেনাপতি অমুসলিম নাগরিকদের তাদের
থেকে আদায় করা জিজিয়া ও খারাজের অর্থ ফেরত দিলেন।(‘কিতাবুল খারাজ’ – ইমাম আবু ইউসুফ(র.),
পৃষ্ঠা ১১১)

ইসলামিক শাসনের প্রতি অমুসলিমরা এত বেশি সন্তুষ্ট ছিল যে অমুসলিমরা ইসলামিক রাষ্ট্র রক্ষায় যুদ্ধ করতে প্রস্তুত
হয়।

 এ সময়ে অমুসলিম নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করে ঐতিহাসিক বালাযুরী(র.) লিখেছেন, “মুসলিম
সেনাপতিগণ যখন শামের হিমস নগরীতে জিজিয়ার অর্থ ফেরত দেন, তখন সেখানকার (খ্রিষ্টান) অধিবাসীরা
সমস্বরে বলে ওঠে—ইতোপূর্বে যে জুলুম-অত্যাচারে আমরা নিষ্পেষিত হচ্ছিলাম, তার তু লনায় তোমাদের
শাসন ও ন্যায়বিচারকে আমরা পছন্দ করি। এখন আমরা তোমাদের গভর্নরের [আবু উবাইদাহ(রা.)] সাথে
মিলে যুদ্ধ করে হিরাক্লিয়াসের বাহিনীকে দমন করব।সেখানকার ইহুদিরা সমস্বরে বলে ওঠে, “আমরা প্রাণপনে
যুদ্ধ করে পরাজিত হওয়া ছাড়া কোনো অবস্থাতেই হিরাক্লিয়াসের কোনো প্রতিনিধি আমাদের শহরে ঢু কতেই
পারবে না.(‘ফু তু হুল বুলদান’ -আল বালাযুরী, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৬২)

এমনকি অমুসলিমদের নিজস্ব কোর্ট ছিল, উসমানী- অটোমান খিলাফতের সময় অমুসলিমরা নিজস্ব ধর্মীয় আইন
অনুযায়ী, নিজস্ব ধর্মীয় নেতার সাথে নিজেদের সমাজে বসবাস করতে পারত।যেমন-অমুসলিমরা মদ, শুকর ইত্যাদি
অমুসলিমদের মধ্যে বিক্রি করতে পারত।এমনকি ইরানের মাজুসি বা জরাথ্রুস্টবাদীরা নিজস্ব আইন অনুসারে নিজেদের
মধ্যে অজাচার বিবাহের স্বাধীনতাও পেত কারণ এটা তাদের ধর্মে বৈধ ছিল! অর্থাৎ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের আইন
অনুসারে নিজেদের অঞ্চলে বসবাস করতে পারত যা এখন সেকু লার রাষ্ট্রেও কেউ পারে না (আহকামু আহলুল
যিম্মাহ,৫৬০,৭৬৪,৭৬৫,৭৬৬-ইবনুল কাইয়িম(রহ)
মুসলিমরা যে সব কাজকে পাপ ও অপরাধ মনে করে, অমুসলিমরা এ ধরনের কোন কাজকে বৈধ রূপে জানলে (যেমন-
মদ সেবন, শুকর পালন ও ক্রয়-বিক্রয়, ক্রু শ বহন ও শঙ্খ ধ্বনি বাজানো এবং রমযানের দিনে পানাহার প্রভৃ তি) তা
করতে তাদেরকে বাধা দেয়া যাবে না, যদি না তারা তা প্রকাশ্যে মুসলিমদের মধ্যে সম্পাদন করে।(আল-কাসানী, ‘বাদাই’,
খ. ৭, পৃ. ১১৩)
মুসলিম সোর্স পক্ষপাতদুষ্ট মনে হলে অমুসলিম সোর্সেও অজস্র প্রমান পাওয়া যায় মুসলিম শাসন অমুসলিমদের
প্রতি কত ভাল ছিল।

 বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ক্যারেন আর্মস্ট্রং উল্লেখ করেন,'' "মুসলমানরা একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল যা ইহুদি,
খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের প্রথমবারের মতো একসাথে জেরুজালেমে বসবাস করতে সক্ষম
করেছিল।"( Karen Armstrong, A History of Jerusalem: One City Three Faiths. London.
1997, p. 245)
 ইস্রায়েলী ঐতিহাসিক Moshe Gil লিখেছেন, ''বিজয়ী মুসলিমরা জেরুজালেমের সাথে ইহুদিদের শক্তিশালী
বন্ধনের কথা খুব ভালো করেই জানতো। ইহুদিরা অনুভব করছিলো যে (রোমানদের দ্বারা) ৫০০ বছর ব্যপি
জেরুজালেমে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার কাল শেষ হতে চলছে।''
 ''দশম শতাব্দীর কারাইট (ইহুদিদের একটি দল) কিতাব ব্যাখ্যাকারকরা মুসলিমদের জেরুজালেম বিজয়ের
নাটকীয় বিভিন্ন প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাইবেলের দানিয়েল ১১ : ৩২ এর
ব্যাখ্যায় ৯ম শতকের ব্যাখ্যাকারক দানিয়েল আল কু মাইসি লিখেছেন,“নেগেভের রাজার [অর্থাৎ বাইজানটাইন
শাসক] উপর বিজয়ী ইসমাঈল বংশধরদের রাজার [অর্থাৎ খলিফা উমার(রা.)] আগমনের পূর্বে ইহুদিদের
জেরুজালেমে ঢু কতে দেয়া হতো না।...তাঁর [উমার(রা.)] সেখানে আগমনের পর তিনি ইহুদিদেরকে
জেরুজালেমে নিয়ে আসেন, তাদেরকে থাকার জায়গা দান করেন। ইহুদিদের অনেকেই সেখানে বসতি গাড়ে।
এরপর থেকেই সারা পৃথিবী থেকে ইহুদিরা জেরুজালেমে এসে প্রার্থনা করছে এবং (ধর্মীয় কিতাবাদী)
অধ্যায়ন করছে।''
 ''কারাইট (ইহুদিদের একটি দল) কিতাব ব্যাখ্যাকারকেরা খ্রিষ্টান সূত্রগুলোর তথ্যকেই সমর্থন করেছেন যা
আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি। ইহুদিদের জন্য জেরুজালেমে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিলো। তারা সুনির্দি ষ্টভাবে উল্লেখ
করে যে, জেরুজালেম জয় করার পরে মুসলিমরাই এ পরিস্থিতির পরিবর্ত ন ঘটায়। “Secrets of Rabbi
Shimon bar Yohy”তে উল্লেখ আছে, “ইসমায়েলীয়দের ২য় রাজা [অর্থাৎ উমার বিন খাত্তাব(রা.)]
ইস্রায়েলীয়দের বন্ধু হয়ে থাকবেন। তিনি তাদের ভাঙা দেয়ালগুলো মেরামত করবেন এবং বাইতু ল মুকাদ্দাসের
দেয়ালগুলো সংস্কার করবেন।” গেনিজায় প্রাপ্ত নথিপত্রের মধ্যে প্রাপ্ত একটি ইহুদি ঘটনাপঞ্জি এ তথ্যকেই
সমর্থন করে। সেখানে বলা হয়েছে যে উমার(রা.) ইহুদিদেরকে জেরুজালেমে পুনরায় বসবাসের অনুমতি দেন।
অনুমতি পাওয়ামাত্র ৭০টি ইহুদি পরিবার তাবারিয়া (শামের একটি অঞ্চল) থেকে জেরুজালেমে চলে আসে।''
 ''Jerusalem Yeshiva থেকে, একাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে [মিসরে] ছড়িয়ে থাকা ইহুদি সম্প্রদায়ের
নিকট পাঠানো এক চিঠিতে এই কথাগুলো লেখা হয়েছেঃ“ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যিনি ইসমায়েলীয় রাজত্বের [ইহুদি
লেখক এ দ্বারা ইসলামি খিলাফতকে বুঝিয়েছে] দয়া-মায়াকে আমাদের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন। ফলে তারা
পবিত্র ভূ মি (ফিলিস্তিন)কে এদোমিয়দের থেকে জয় করেছে এবং জেরুজালেমে এসেছে। ইসমায়েলীয়দের
(আরব মুসলিম) সাথে ইহুদিরা ছিলো, যারা তাদেরকে বাইতু ল মুকাদ্দাসের স্থানটি দেখিয়ে দিয়েছিলো। আর
তারা তখন থেকে আজ পর্যন্ত তাদের সাথেই জেরুজালেমে আছে।”(The History of Jerusalem: The
Early Muslim Period (638-1099) edited by Joshua Prawer, Haggai Ben-Shammai)
 ইহুদি একাডেমিক ইতিহাসবিদ Amnon Cohen লিখেছেন,''No one interfered with their internal
organisation or their external cultural and economic activities…The Jews of Ottoman
Jerusalem enjoyed religious and administrative autonomy within an Islamic state,
and as a constructive, dynamic element of the local economy and society they could
– and actually did – contribute to its functioning.”(Amnon Cohen, A World Within:
Jewish Life as Reflected in Muslim Court Documents from the Sijill of Jerusalem
(XVIth Century). Part One. Pennsylvania. 1994, pp. 22-23)
 Theodosius of Jerusalem(869 CE) লিখেছেন,''The Saracens [i.e. the Muslims] show us
great goodwill. They allow us to build our churches and to observe our own customs
without hindrance.”(Christopher J. Walker, Islam and the West. Gloucester. 2005, p.
17)
 Michael Bonner লিখেছেন,“To begin with, there was no forced conversion, no choice
between “Islam and the Sword”. Islamic law, following a clear Quranic principle
(2:256), prohibited any such things: dhimmis [non-Muslim under Islamic rule] must
be allowed to practice their religion.”(Michael Bonner, Jihad in Islamic History.
Princeton. 2006, pp. 89-90)
 ইসলামিক ইতিহাসের বিষয়ে একজন অন্যতম প্রধান ইতিহাসবিদ De Lacy O’ Leary লিখেছেন,“History
makes it clear, however, that the legend of fanatical Muslims sweeping through the
world and forcing Islam at the point of the sword upon conquered races is one of the
most fantastically absurd myths that historians have ever repeated.”(De Lacy O’
Leary, Islam at the Crossroads. London. 1923, )
 ১৪৫৩ সালে একজন ইহুদি Rabbi মুসলিম শাসনে নিজেদের অবস্থা নিয়ে একটা চিঠিতে লিখেন,“Here in
the land of the Turks we have nothing to complain of. We possess great fortunes;
much gold and silver are in our hands. We are not oppressed with heavy taxes and
our commerce is free and unhindered. Rich are the fruits of the earth. Everything is
cheap and everyone of us lives in peace and freedom.”(Philip Mansel.
Constantinople : City of the World’s desire, 1453-1924. Penguin Books. 1995, p. 15)
 Bernard the Wise একজন খ্রিস্টান সন্ন্যাসী মিশর ও ফিলিস্তিনে ভ্রমণ করে সে বিষয়ে লিখেন,''…the
Christians and the Pagans [i.e. Muslims] have this kind of peace between them there
that if I was going on a journey, and on the way the camel or donkey which bore my
poor luggage were to die, and I was to abandon all my goods without any guardian,
and go to the city for another pack animal, when I came back, I would find all my
property uninjured: such is the peace there.”(Christopher J. Walker, Islam and the
West. Gloucester. 2005, p. 17)
 মুসলিমরা যখন বাইজেন্টাইনদের পরাজিত করে সিরিয়া বিজয় করল তখন সিরিয়ার খ্রিস্টানরা মুসলিমদের
আগমনকে সানন্দে উদযাপন করে।Dionysius উল্লেখ করেন,''So the Arabs left Damascus and
pitched camp by the river Yarmuk. As the Romans marched towards the Arab camp
every city and village on their way which had surrendered to the Arabs shouted
threats at them. As for crimes the Romans committed on their passage, they are
unspeakable,and their unseemliness ought not even to be brought to mind…The
Arabs returned, elated with their great victory, to Damascus; and the Damascenes
greeted them outside the city and welcomed them joyfully in,and all treaties and
assurances were reaffirmed.''
 John of Nikiu (690 CE),মিশরের কপটিক বিশপ(Egypt),লিখেন মুসলিমরা মিশর বিজয় করার একটা
গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল মিশরের জনগণ মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তো করেই নি বরং মুসলিমদের সাহায্য
করেছিল! তিনি লিখেছেন,“When Muslims saw the weakness of the Romans and the
hostility of the people to the emperor Heraclius… they became bolder and stronger
in the war…And people began to help the Muslims.”
 Alfred J. Butler মুসলিম শাসনামলে মিশরের খ্রিস্টানদের অবস্থা বর্ণনা করে বলেন,''After all that the
Copts had suffered at the hands of the Romans and the Patriarch Cyrus, it would not
have been unnatural if they had desired to retaliate upon the Melkites [the
Romans].But any such design, if they cherished it, was sternly discountenanced by
‘Amr, [the Muslim conqueror of Egypt] whose government was wisely tolerant but
perfectly impartial between the two forms of religion. Many facts might be cited in
proof of this contention…two forms of Christianity must be imagined as subsisting
side by side under the equal protection of the conquerors''
 স্পেন বিজয়ের সময় মুসলিমদের ইহুদিরা মুক্তিদাতা ও ত্রাণকর্তা রূপে বরন করে নেয়, Zion Zohar,একজন
ইহুদি আমেরিকান ইতিহাসবিদ,এই ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন,“Thus, when Muslims crossed the
straits of Gibraltar from North Africa in 711 CE and invaded the Iberian Peninsula,
Jews welcomed them as liberators from Christian Persecution.”
 Zion Zohar মুসলিমদের শাসনে ইহুদিদের অবস্থা বর্ণনা করেন,''Born during this era of Islamic
rule, the famous Golden Age of Spanish Jewry (circa 900-1200) produced such
luminaries as: statesman and diplomat Hasdai ibn Shaprut, vizier and army
commander Shmuel ha-Nagid, poet-philosophers Solomon Ibn Gabriol and Judah
Halevi, and at the apex of them all, Moses Ben Maimon, also known among the
Spaniards as Maimonides.''
 Heinrich Graetz ইহুদি ইতিহাসবিস ব্যাখ্যা করেন,''It was in these favourable circumstances
that the Spanish Jews came under the rule of Mahometans [Muslims], as whose
allies they esteemed themselves the equals of their co-religionists in Babylonia and
Persia. They were kindly treated, obtained religious liberty, of which they had so long
been deprived, were permitted to exercise jurisdiction over their 121 co-religionists,
and were only obliged, like the conquered Christians, to pay poll tax...''
 মুসলিমদের শাসন যাওয়ার সাথে সাথে স্পেনের মানুষের সমৃদ্ধিও চলে যায়, স্প্যানিশ ইতিহাসবিদ Ulick
Burke উল্লেখ করেন,''The institutions that had flourished under the Moslem, died when
the Moslem departed; and after four centuries of light and learning, Andalusia fell
back, under the Christian rule, into a condition of ignorance and barbarism, nearly, if
not quite,equal to that of the north western provinces of the peninsula''
 Reinhart Dozy উল্লেখ করেন,“…the unbounded tolerance of the Arabs must also be
taken into account. In religious matters they put pressure on no man…Christians
preferred their rule to that of the Franks.”(Reinhart Dozy, A History of Muslims in
Spain. p.235)
 Professor Thomas Arnold,একজন ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ এবং অরিয়েন্টালিস্ট উল্লেখ করেন খ্রিস্টানরা
মুসলিম শাসনের প্রতি এত বেশি সন্তুষ্ট ছিল যে তারা মুসলিমদের প্রতি আশীর্বাদ প্রার্থনা করে।(T. W.
Arnold , Preaching of Islam. London. 1913, p. 61)
 অরিয়েন্টালিজমের ইতিহাসবিদ Hamilton A. R. Gibb লিখেছেন,''But Islam has a still further
service to render to the cause of humanity. It stands after all nearer to the real East
than Europe does, and it possesses a magnificent tradition of inter-racial
understanding and cooperation. No other society has such a record of success
uniting in an equality of status, of opportunity, and of endeavours so many and so
various races of mankind…Islam has still the power to reconcile apparently
irreconcilable elements of race and tradition. If ever the opposition of the great
societies of East and West is to be replaced by cooperation, the mediation of Islam is
an indispensable condition. In its hands lies very largely the solution of the problem
with which Europe is faced in its relation with East. If they unite, the hope of a
peaceful issue is immeasurably enhanced. But if Europe, by rejecting the
cooperation of Islam, throws it into the arms of its rivals, the issue can only be
disastrous for both.”(Hamilton A. R. Gibb. Whither Islam. London, 1932, p. 379)
 ইতিহাসবিদ A.J. Toynbee লিখেছেন,“The extinction of race consciousness as between
Muslims is one of the outstanding achievements of Islam and in the contemporary
world there is, as it happens, a crying need for the propagation of this Islamic
virtue…”(A. J. Toynbee. Civilisation on Trial. New York. 1948, p. 205)
 Uriel I. Simonsohn,তাঁর বই A Common Justice: The Legal Alliances of Christians and
Jews under Early Islam (Philadelphia: University of Pennsylvania Press, 2011)
Avigdor Levy এর The Jews of the Ottoman Empire (Princeton, 1994),Aryeh
Shmuelevitz এর The Jews of the Ottoman Empire in the Late Fifteenth and Sixteenth
Centuries(Leiden, 1984) এ উল্লেখ করেছেন ইহুদি- খ্রিস্টানদের নিজেদের আইনের কোর্ট ছিল, তারা
নিজেদের আইন অনুসরন করতে পারত।এমনকি মুসলিম কোর্ট এত ন্যায়পরায়ন ছিল যে ইহুদি নারীরা
নিজেদের কোর্টে র বদলে মুসলিম কোর্টে আসত।
 ''Jewish women would take advantage of the more generous provisions of Islamic
law to claim their inheritance through the Islamic rather than through the Jewish
courts.''(Aryeh Shmuelevitz, The Jews of the Ottoman Empire, 69)
 কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রিচার্ড ডব্লিউ বুলেটের মতে, ইসলামি শাসনব্যবস্থায় ধর্ম-বর্ণ, পদমর্যাদা
নির্বিশেষে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা হতো। ইহুদি ও নাসারাদের নিজস্ব ধর্মীয় কর্তৃ পক্ষের কাছে বিচারের জন্য
যাওয়ার অনুমতি ছিল। এতদসত্ত্বেও তারা অনেকক্ষেত্রে মুসলিমদের আদালতের শরণাপন্ন হতো।(Richard
W. Bulliet. 2004. The Case for Islamo-Christian Civilization.)

ইসলাম কিভাবে বিপ্লবের সূচনা করেছে এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত আবু জাকারিয়ার বই The Eternal Challenge
এবং উস্তাদ হামজা জর্জ রিসের The Divine Reality: God, Islam and The Mirage of Atheism বইয়ে
আরও বিস্তারিত পাওয়া যাবে।
অর্থাৎ প্রমাণ দেখা যাচ্ছে শুধু মুসলিম না নিজ অমুসলিমরাও সাক্ষ্য দিচ্ছে ইসলামিক শাসনে তাদের জীবন কত ভাল
ছিল, তারা নিজেদের জন্য পেয়েছে নিরাপত্তা,দয়া, ন্যায়বিচার,ধর্মপালনের স্বাধীনতা এমনকি নিজস্ব আইনও, তারা
ইসলামিক শাসনে এত সন্তুষ্ট ছিল যে তারা অমুসলিম হয়েও মুসলিমদের দেখেছে মুক্তিদাতা হিসেবে,মুসলিমদের
বিজয়কে সানন্দে বরণ করেছে,এমনকি ইসলামিক শাসন রক্ষার জন্য নিজেরা যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়েছে।ইসলামি রাষ্ট্রে
অমুসলিমদের অবস্থান বরং ইসলামের ইনসাফের নিদর্শন।
Note:- পোস্টে উল্লেখিত বেশীরভাগ রেফারেন্স প্রখ্যাত দাঈ মুশফিকু র রহমান মিনার, হামজা জরজিস, আবু
জাকারিয়া থেকে সংগৃহীত। আল্লাহ তাদের উপর শান্তি বর্ষণ করুক

—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------

Closeup free to love campaign


বর্ত মানে ক্লোজআপের সমালোচিত ছবিটা ছিল ইন্টারফেইথ ম্যারেজ নিয়ে, প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায় ক্লোজআপ অল্প
সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে সেইম সেক্স ম্যারেজ, এলজিবিটিকিউ+ প্রমোট করা শুরু করবে বা ''কাছে আসার সাহসী
গল্প''-এ সমকামীদের দেখা যাবে।অলরেডি সমকামিতার প্রোমোশনে ক্লোজআপ ক্যাম্পেইন করেছেও।
বর্ত মান অ্যাডটা ছিল মূলত ফ্রি টু লাভ ক্যাম্পেইনের অংশ।
ক্লোজআপের ফ্রি টু লাভ ক্যাম্পেইনের মূল লক্ষ্য প্রেমের স্বাধীনতাকে প্রোমোট করা, যার মধ্যে সমকামীরাও(সেইম
সেক্স) অন্তর্ভু ক্ত।এমনকি তাদের জন্য আরও বিশেষভাবে সাহায্য করা হয়।
ক্লোজআপের ওয়েবসাইটেই উল্লেখ করা:-

 ''Love knows no gender, age, or boundaries.''


 ''Same-sex unions also face prejudice, especially in countries where they’re still
illegal. Atypical hook-ups threaten society’s norms, often forcing traditional folk out of
their comfort zone. Cue freak outs!''
 ''One in two confessed that they would keep their relationship a secret due to their
parents’ disapproval, with 53% fearing discrimination, judgment and public shame
when in an unconventional relationship – the most challenging matches being mixed-
race (Brazil), inter-caste (India) and same-sex (Philippines). ''
 ''Celebrate the freedom to love, no matter who you fancy''
Official website:-
https://www.close-up.com/bd/free-to-love.html
https://www.close-up.com/bd/articles/freedom-to-love.html...
উল্লেখিত সমকামবিদ্বেষী ফিলিপাইন ছিল ফ্রি টু লাভ ক্যাম্পেইনের একটি মেইন গ্রাউন্ড।
ফিলিপাইনে সরাসরি সমকামী কাপল দেখিয়ে অ্যাডভারটাইজমেন্ট করা হয়, কেউ সম লিঙ্গের কারোর প্রতি আকর্ষণ
অনুভব করলে তাকে প্রোপোজাল দিতে অনুপ্রেরণা দিয়ে MakeYourMove films তৈরি করে, সমকামী সম্পর্কে র
জন্য নিরাপদ জায়গা বের করে LoveRules Live Map দিয়ে। Tim and Javi,Joey and Angie,Issa and
Marga ইত্যাদি সমকামী কাপলের গল্প নিয়ে FreeToLove stories মুভি তৈরি করেছে।
Make your move(love knows no gender):- https://www.youtube.com/watch?
v=XRzYVOrG3r8
https://www.youtube.com/watch?v=yfk9HrmFKGE
FreeToLove stories:- https://www.close-up.com/ph/free-to-love.html
LoveRules:- https://www.youtube.com/watch?v=spg-wLFGKig
https://twitter.com/CloseupPH/status/1197409519136956416...
Same sex couple:-https://www.youtube.com/watch?v=6a3mE1NMOII
https://www.youtube.com/watch?v=E1U9pKq1IVI
https://www.youtube.com/watch?v=c7vQfU3QESo
ভারতে ক্লোজআপ Dhanak of Humanity নামক লিবারাল NGO সংস্থারসাথে কাজ করে, যাদের একটা মুল লক্ষ্য
এলজিবিটি ইকু য়ালিটি প্রতিষ্ঠা করা। ক্লোজআপ অনেক আগে থেকেই ভারতীয় সমকামী কাপল নিয়ে
অ্যাডভারটাইজমেন্ট তৈরি করে ''ভালোবাসতে'' উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে।
Sources:-
https://www.close-up.com/in/free-to-love.html
https://www.youtube.com/watch?v=7gMWrwpXklI&t=15s
https://www.youtube.com/watch?v=95yAbBBYaR4
বিভিন্ন জায়গায় ক্লোজআপ সমকামীদের গল্প তু লে ধরা, প্রোমোট করা, নিরাপত্তা দেয়া,সমকামিতায় সাহায্য করার কাজ
করে আসছে।সবখানে এই মেসেজই দেয়া হচ্ছে লিঙ্গ, ধর্মের সব পার্থক্য ভু লে ''প্রেমে পর'', ''প্রেমকে প্রকাশ কর
''প্রেমের জন্য লড়াই করো''। ক্লোজআপ পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছে ফ্রি টু লাভ ক্যাম্পেইন ততদিন চলবে যতদিন পর্যন্ত
''প্রত্যেকে প্রেমের স্বাধীনতা'' পাবে না।
ক্লোজআপ মূলত ইউনিলিভার দ্বারা পরিচালিত এবং ইউনিলিভার গর্বের সাথে অনেক আগে থেকেই প্রকাশ্যে
এলজিবিটিকিউ প্রোমোট করে। ২০২১ সালের প্রাইড মান্থে বহু কর্পোরেশানের সাথে ইউনিলিভারও নিজেদের সিম্বল
রেইনবো কালারের করে এলজিবিটিকিউদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে। এর সাথে ইউনিলিভার ‘United We
Stand’ ক্যাম্পেইন চালু করে, সমকামীদের মুভির প্রচারণা করে। এবং ইউনিলিভার সমকামিতা সমর্থন মোটেও
গোপন করার চেষ্টা করছে না বরং তারা এটা নিয়ে গর্বিত। ইউনিলিভার গর্বের সাথে বলছে তার ব্র্যান্ডগুলো এলজিবিটি
রাইটস প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে।
ইউনিলিভারের এলজিবিটি প্রোমোশন নিয়ে আরও বিস্তারিত তাদের ওয়েবসাইটেই পাওয়া যাবে।
ইউনিলিভারের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের লেখা:-
''Proud to ally, celebrate, and advocate LGBTQI+ rights.''
''We believe in equality for everyone, everywhere, no matter who they are or who they love.
While we pride ourselves on being a diverse and tolerant business, we know that there is
still much to be done to make the world more tolerant and inclusive.
So our brands are taking action.''
Website:-https://www.unilever.com/news/news-search/2020/sharing-our-pride/?
fbclid=IwAR09nuQmVcrQGbA02_Jp5h-qmaRa8UXCmF2d8oIG37dgJ6EPdkQmkoONkfc
https://www.unilever.co.uk/news/press-releases/2021/unilever-launches-pride-film-series-
united-we-stand/?fbclid=IwAR3jOSukX9xNcnos648wnuyVQzMIrpGkQdk-
e8xS0COKCaur85Kk7XDi0Z8
https://www.unilever.co.uk/planet-and-society/equity-diversity-inclusion-at-unilever/lgbtqia/?
fbclid=IwAR1_YWOE308j8b_LHKk4A7_BTtM-0dTLaKj55XHdCtVR6_lYy3aE35t37Rw
https://www.unilever.com/planet-and-society/health-and-wellbeing/championing-inclusion-
via-our-brands/?
fbclid=IwAR1rrIVNg9WHgxnbUvz9T4qV0_zCh4SzyArv2Wn6kMlTH4BBKIxX2xN0sIU

—----------------------------------------------------------------------------------------------------------

হিজাব
মডার্নিটির সঙ্গে ইসলামের দ্বন্দ মূলত নাফসানিয়াতের বিরুদ্ধে রুহানিয়াতের দ্বন্দ। এইটারই ডিকলোনিয়াল রেজিস্ট্যান্স
সিম্বল হচ্ছে হিজাব।
ইসলাম নারীকে প্রথম যে কাজটা করে তা হলো স্পিরিচু য়ালাইজেশান ও ডিসেক্সুয়ালাইজেশান। ইসলামে নারী জগতে
খোদার জামালের তথা সৌন্দর্যের বাহক তার অস্তিত্ত্ব খোদার ভালোবাসায় অস্তিত্ত্বমান।নারী পুরুষের যৌনতার জন্য নয়,
ভোগ্যবস্তুসত্ত্বা নয় বরং নারী ইনসাফের জন্য, স্রস্টাকে ভালোবাসার জন্য, স্রস্টার ভালোবাসার জন্য। ইসলামিক
থিওলজি নারীকে ডিসেক্সুয়ালাইজেশন করে-যেটা প্রকাশ পায়,ড্রেস কোড থেকে সম্পূর্ণ স্পিরিচু য়ালিটিতে,বস্তুগত
সৌন্দর্য, যেটা সোশালি চাপায়ে দেয়া, সেটা থেকে ঐশ্বরিক সৌন্দর্যের দিকে ফোকাস আনে ইসলাম।
নারীকে সাধারনভাবে সমাজ আগে শুধু একটা শরীর,যৌনতার বস্তু হিসেবে দেখত এবং এখনও অনেক ক্ষেত্রে দেখা
হয় যেটা বস্তুগত সত্তার ব্যবহার, এইভাবে নারীর সেক্সুয়ালাইজেশন, অবজেক্টিফিকেশন ঘটে। সমাজে সমাজে নারীর
আধ্যাত্মিক সত্তাকে ছোট করে বস্তুসত্তায় ফোকাস করা হয়েছে,নারীর জীবনের মূল দেখা হয়েছে স্রস্টার ভালোবাসার
পরিবর্তে পুরুষের ইরোটিক ফ্যানটাসি পূরণ হিসেবে। মডারনিটির কলোনিয়ালাইজেশন করার প্রক্রিয়াতে নারীর ঐ
বস্তুগত সত্তাকে মূল করে নারীকে অবজেক্টিফাই করা হয়, সমাজে নারীর শারীরিক সৌন্দর্যকে দিয়ে মূল সত্তা নির্ধারণ
করা হয়। ক্যাপিটালিস্ট ম্যাস মিডিয়া, ফ্যাশন ট্রেন্ড, ইয়ুথ আইকন, বিউটি কনটেস্ট- ভ্লগিং, পপ কালচার ইত্যাদি
পুঁজিবাদী সিস্টেম প্রতি মুহূর্তে নারীর উপর চাপিয়ে দেয় আর্টি ফিশিয়াল বিউটি স্ট্যান্ডার্ড । নারীর সৌন্দর্যকে ডিফাইন
করা হয়, যেভাবে নারীকে দেখলে এলিট পুরুষদের ভালোলাগে সেটাকে।
মিলিয়ন ডলার কসমেটিক বা ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি সেলের জন্য নারীর মধ্যে ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়, ভাবানো
হয় তার স্রস্টা প্রদত্ত শরীর সুন্দর না যেটার জন্য অনেকের লেজার ট্রিটমেন্ট, কসমেটিক সার্জারি করে যাওয়া লাগে।
হয় ক্যাপিটালিস্ট সিস্টেম নারীকে চিয়ারলিডার, আইটেম সং ড্যান্সার, সেক্স ওয়ার্কার, বিউটি মডেল হিসেবে
অব্জেক্টিফাই, সেক্সুয়ালাইজ করে নাহয় আর্টি ফিশিয়াল বিউটি স্ট্যান্ডার্ড দিয়ে এমন পরিবেশ তৈরি করে যার ফলে
নিজেকে 'সুন্দর' দেখানোর স্বার্থে নিজেকে নিজেই সেক্সুয়ালাইজ করার জন্য নারী বাধ্য হয়।
হিজাব নারীর অব্জেক্টিফিকেশানের বিরুদ্ধে সেই প্রতিরোধের প্রতীক,হিজাব প্রতিবাদের প্রতীক, হিজাব আর্টি ফিশিয়াল
বিউটি স্ট্যান্ডার্ড কে ডিনাই করে, এইজন্যই পর্দার মূল লক্ষ্য ছিল সৌন্দর্য প্রদর্শন থেকে বিরত থাকা, যেকোনো ধরণের
সেক্সুয়ালাইজেশান থেকে বিরত থাকা যাতে মুসলিম নারী স্পিরিচু য়াল বিয়িং হিসেবে তৈরি হয়, সেক্সুয়ালাইজড
অবজেক্ট হিসেবে নয়।
ক্যাপিটালিস্ট সিস্টেমের চাপায়ে দেয়া বিউটি স্ট্যান্ডার্ড থেকে যত দুরেই যাক নারীর স্রস্টা প্রদত্ত সাধারণ অবস্থাই মূল
সৌন্দর্য, স্রস্টার নির্ধারিত ডিসেক্সুয়ালাইজড ড্রেস কোডই মূল সৌন্দর্য কারণ স্রস্টার ভালোবাসা পাওয়া অবস্থার চেয়ে
বড় সৌন্দর্য সম্ভব না, এই স্পিরিচু য়াল সৌন্দর্যকেই ইসলাম তু লে ধরে যাকে মডার্নিটি ডিনাই করে বস্তুবাদের মাধ্যমে।নারী
কোন প্রোডাক্ট না, নারী স্রস্টার ভালোবাসায় তৈরি স্পিরিচু য়াল বিয়িং। নারীর জীবনের উদ্দেশ্য পুরুষের চোখে শান্তি দেয়া
না, নারীর সত্ত্বার মূল উদ্দেশ্য স্রস্টাকে ভালোবাসা।
ফ্রান্স বা কামাল আতাতু র্কে র তু রস্কে যখন হিজাব ব্যান করা হয় তখন একটা পপুলার যুক্তি ছিল, ''হিজাব নারীর
দাসত্বের প্রতীক, মুক্তির না''।আসলে যুক্তিটা সম্পূর্ণ ভু ল না, হিজাব আসলে নারীর দাসত্বের প্রতীক, নারীর স্রস্টার
প্রতি দাসত্বের প্রতীক, স্রস্টার প্রতি নারীর ভালোবাসার প্রতীক, নারীর স্পিরিচু য়ালিটির প্রতীক।
হিজাব নারীর নিজের নাফসানিয়াতের উপরে রুহানিয়াতকে প্রাধান্য দেয়ারই প্রতীক, নারীর নিজ খেয়ালখুশির উপরে,
সৃষ্টির পরিবর্তে স্রস্টার আনুগত্য করার প্রতীক। মুসলিমের সাংস্কৃ তিক এবং আধ্যাত্মিক পরিচয় ধারণ করে হিজাব,
প্রকৃ তরূপে হিজাব কলোনিয়াল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ। মডার্নিটির বিরুদ্ধে ডিকলোনিয়াল লড়াইয়ে
ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন প্রতিরোধ পেয়েছে মুসলিম নারীদের থেকেই, নারীদের কলোনাইজ করা ছিল সবচেয়ে কঠিন।
আলজেরিয়াতে যখন ফ্রান্স কলোনি স্থাপন করে,তখন তাদের প্রথম মূল টার্গেট ছিল পর্দায় আবৃত আলজেরিয়ান নারী,
ইব্রাহিম ফানো তখন লিখে,আমাদের আলজেরিয়া জয় করতে হলে আগে তাদের নারীদের জয় করতে হবে।১৯৫৮
সালের পর থেকে ফরাসী সরকারের অর্থায়নে দেশটির অনেক জায়গায় কিছু অনুষ্ঠান করে ফরাসি বাহিনীতে
কর্মরতদের স্ত্রীরা যেখানে বোরকা-নিকাব পরা কিছু আলজেরিয়ান নারীকে একটি মঞ্চে এনে হাজির করা হয়, তারপর
তারা বোরকা খুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলে ও নিজেরা ‘মুক্ত’ হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়। ব্যাপক প্রোপাগান্ডা  চালানো
হয়, বোঝানো হয়, কীভাবে ইউরোপীয় মূল্যবোধের কাছে মুসলিম নারীরা নিজেদের সমর্পণ করে দিয়েছে, কিভাবে
পশ্চিমের লড়াইয়ের বিজয় হচ্ছে। তবে এসব ঘটনার পর থেকে ফরাসী উপনিবেশবাদীদের গালে চপেটাঘাত করে
আলজেরীয় মুসলিম নারীরা আরও ব্যাপকভাবে পর্দার বিধান মানতে শুরু করে।
বোরকা-হিজাব ছিল তখন কলোনিয়াল শোষকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক,পশ্চিমের সামরিক ও সাংস্কৃ তিক
আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজ সাংস্কৃ তিক প্রতিরোধ।আলজেরিয়ার স্বাধীনতার আন্দোলনেও মূলে ছিল এই স্পিরিচু য়ালিটি,
আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মুজাহিদিন বলা হতো। সে সময় ফ্রান্স ও তার দোসররা শ্লোগান দিত
''আলজেরিয়া ফরাসি'' আর মুজাহিদরা শ্লোগান দিতেন ''আলজেরীয় জাতি মুসলমান,আরব্যবোধ তার চেতনা'' ।পূর্বের
মূল সত্তা স্পিরিচু য়াল সত্তা, সাংস্কৃ তিক অবস্থা, যার জন্য তারা কলোনিয়ালিস্টদের মডার্নিটির প্রতিরোধ করে তাকে
শেষ করা পশ্চিমের কলোনাইজেশনের একটা মূল লক্ষ্য।
এজন্যই ইউরোপীয় রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান হিজাব ব্যান করে, বর্ত মান ২৪ টা দেশে বোরকা ব্যান, আফগানিস্থানের নীল
বোরকায় আবৃত নারীর ছবিগুলা পশ্চিমকে দেয় আক্রমণের  ''মানবিক কারণ'', ফ্রান্সের অতীত উপনিবেশ
আলজেরিয়ায় পর্দার বিরুদ্ধে আনভেইলিং প্রজেক্ট শুরু করা হয় এবং বর্ত মান ফ্রান্সে বিভিন্ন ক্ষেত্রে হিজাব ব্যান করা
হয়, বাংলার শাহবাগী কলোনিয়াল স্লেভদের বোরকা-হিজাব দেখলে গা জালাপোড়া করে।
ফ্রান্সের উপনিবেশ আলজেরিয়া থেকে বর্ত মান আফগানিস্থান সবখানে কলোনাইজেশান প্রজেক্টের বিরুদ্ধে
ডিকলোনিয়াল রেজিস্ট্যান্স সিম্বল হিসেবে দাঁড়ায় হিজাব।
মডার্নিটির এই ধারা নারীকে দেখে বস্তুবাদী দুনিয়ার বস্তু হিসেবে,ভোগবাদী সিস্টেমের কনজিউমার হিসেবে অন্যদিকে
ইসলাম দেখে স্রস্টার ভালোবাসা হিসেবে,যাকে কোনভাবে সেক্সুয়ালাইজডভাবে উপস্থাপন করা নিষিদ্ধ, যার অস্তিত্তের
মূল বস্তুজগত না বরং আধ্যাত্মিকতা,যার অস্তিত্ব প্রকাশ পায় স্রস্টার ভালোবাসায় স্রস্টার ভাললাগাকে-স্রস্টার কথাকে
মেনে নিয়ে,সেই সৃষ্টির জন্য স্রস্টাই যথেষ্ট। এইখানেই আমাদের সভ্যতার সংঘাত।
১ ফেব্রুয়ারি, ইন্টারন্যাশনাল হিজাব ডে

—---------------------------------------------------------------------------------------------------------

কাশ্মির ফাইলস
কাশ্মীর ইস্যুতে বিজেপির ছড়ানো অন্যতম বড় প্রোপাগান্ডা হচ্ছে কাশ্মীরি হিন্দু পন্ডিতদের উপর মুসলিমরা গণহত্যা
চালিয়েছে এবং সকল কাশ্মীরি মুসলিমরা গণহত্যাকে সমর্থন দিয়েছিল। এর উপর ভিত্তি করে মুসলিমদের ভিলিফাই
করা হয় এবং কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়া ও কাশ্মীরি স্বাধীনতাকামীদের জঙ্গি হিসেবে প্রচার করার বৈধতা তৈরি
করে হিন্দুত্ববাদীরা। এই প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর সবচেয়ে সাকসেসফু ল প্রজেক্ট ছিল কাশ্মীর ফাইলস সিনেমা। কাশ্মির
ফাইল সিনেমাটি ইতোমধ্যেই ভারতে ব্লকবাস্টার এবং বিপুল পরিমান আয় করেছে। কাশ্মীরি হিন্দুদের গল্প নিয়ে বানানো
মুভিটাকে নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির সদস্যরাসহ বহু হিন্দুত্ববাদীরা বাস্তব ইতিহাস বলে দাবি করছে এবং প্রোমোট
করছে। এমনকি বাংলাদেশেও দ্য ডেইলি স্টারের সৈয়দ নাজমুস সাকিব নামের এক উপস্থাপক কাশ্মির ফাইলস নামে
রিভিউয়ের শুরুতেই বলছেন, "এটি একটি সত্য ঘটনা এই ঘটনাতে মিথ্যা কিছুই নেই''। মুভিটা আসলেই কাশ্মিরে
হিন্দুদের বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে নাকি ভারতের মুসলিম গণহত্যা বৈধতা দেয়ার উদ্দেশ্যে বানানো প্রোপাগাণ্ডা মুভি
সেইটা এখানে অ্যানালাইজ করবো-
হিন্দু গণহত্যাঃ-
মুভির পুরো স্টোরিতে মূলত এটা দেখানো হয়, ১৯৯০ সালে কাশ্মীরি হিন্দুদের উপর কাশ্মীরি মুসলমানদের গণহত্যা
করে, যাকে সত্য ঘটনা বলে দাবি করা হয়। প্রথমে জানা দরকার গণহত্যা/ জেনোসাইডের সংজ্ঞা কি।
জেনোসাইডের সংজ্ঞা-
সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে একটি জাতীয়, নৃতাত্ত্বিক, বর্ণবাদী বা ধর্মীয় গোষ্ঠী ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
নিম্নলিখিত ক্রিয়াকলাপ গুলি গণহত্যা হিসাবে বিবেচিত:
(i)পরিকল্পিতভাবে কোন জাতি বা গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে তাদের সদস্যদেরকে হত্যা
করা।
(ii)গোষ্ঠীর সদস্যদের গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা।
(iii)ইচ্ছাকৃ তভাবে পুরো বা আংশিকভাবে জাতীর ধ্বংস আনতে গোষ্ঠীর জীবনধারার অবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করা।
(iv)গোষ্ঠী বা জাতির মধ্যে জন্ম রোধ করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়া।
(v)জাতির বাচ্চাদের জোর করে অন্য দলে স্থানান্তর করা এবং তাদের জন্মপরিচয় ও জাতিগত পরিচয় মুছে ফেলাকেও
গণহত্যা বলে।
(UN Convention on the Prevention and Punishment of the Crime of Genocide, article 2)
https://www.un.org/en/genocideprevention/genocide.shtml
এটা হলো জেনোসাইডের সংজ্ঞা। এখানে বোঝা দরকার, কোনো ঘটনা জেনোসাইড বা গণহত্যা হতে হলে সংখ্যা
মূল বিষয় না, মূল বিষয় হচ্ছে জাতির নির্মূলকরণ বা নির্মূলকরণের উদ্দেশ্যে করা অপরাধ। অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে দেখুন,
সেখানে যখন কর্তৃ পক্ষ আদিবাসী শিশুদের তাদের মায়েদের কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছিল তখন অনেক সমালোচনা শুরু
হয়েছিল৷ অস্ট্রেলিয়ান ইংরেজিতে ঐ ঘটনা জেনোসাইড বলে পরিচিত, যদিও তখন কেউ মারা যায়নি৷ এখন তাহলে
দেখা যাক আসলেই ১৮৮৯-১৯৯০ সালে কাশ্মীরে হিন্দু গণহত্যা হয়েছিল কিনা।
প্রেক্ষাপটঃ-
প্রথমত, তখনকার প্রেক্ষাপট বোঝাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৭ সাল থেকেই কাশ্মির অন্যায়ভাবে ভারতের নিয়ন্ত্রনে
আছে। কাশ্মির জুড়ে বহু আগে থেকেই ভারতীয় আগ্রাসন চলে আসছে, সেই পরিস্থিতিতে ১৯৮৭ কাশ্মিরে নির্বাচনের
সময় প্রথম বারের মত এমিউএফ বা ‘ মুসলিম ইউনাইটেড ফ্রন্ট’ নামে একটি যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। এমইউএফ যখন
নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিপুল ভোটে জয়লাভের কাছাকাছি চলে যায় তখন ভারত সরকার প্রকাশ্য জালিয়াতি করে
এমইউএফকে পরাজিত ঘোষনা করে নির্বাচনে এবং তাদের অনুগত ফারুক আব্দুল্লাকে নির্বাচনে বিজয়ী বানায়। তখন
এমইউএফের অনেক তরুণ নেতাকে গ্রেপ্তার ও ভয়াবহ নির্যাতন শুরু করা হয়। এরপরেও এমইউএফ এর সাইয়েদ
আলী শাহ গিলানি আর মিরওয়াইজ কাজি নিজারসহ বেশকিছু তরুন বিজয়ী হলেও প্রচন্ড নিপীড়নের জন্য দ্রত
পদত্যাগও করতে বাধ্য হয়। কিন্তু কাশ্মীরের মানুষের অধিকারের জন্য কাজ করা প্রিয় নেতাদের এত ভয়াবহ নিপিড়ন-
নির্যাতন তখনকার বেশিরভাগ কাশ্মীরিই মেনে নিতে পারেননি। সিস্টেমের ভেতর থেকে কাশ্মীরের প্রতি হওয়া
আগ্রাসন থামানোর শেষ আশা যখন শেষ হয়ে যায় তখন কাশ্মীরিরা আন্দোলন শুরু করে এবং ভারতীয় আগ্রাসনের
মুখে এই আন্দোলন বাধ্য হয়েই এক সময় সশস্ত্র হয়ে পরে। চলমান হামলা-পালটা হামলার মধ্যে ভারত উগ্র
হিন্দুত্ববাদী জাগমোহন মালহোত্রাকে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়। মুভিতে জগমোহনকে হিন্দু হত্যার ব্যাপারে
নির্বিকার হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, কাশ্মীরের পক্ষে বাসায়ড লোক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যা ছিল পুরো
মিথ্যা। আসলে জাগমোহন ছিল উগ্র হিন্দুত্ববাদী এবং তৎকালীন বিজেপির পূর্ণ সমর্থনপ্রাপ্ত, পরবর্তীতে আর্টি কেল
৩৭০ উঠিয়ে দেয়ার সময় বিজেপির পক্ষে ক্যাম্পেইন করে।এইখান থেকেই বোঝা যায় একটা হিন্দুত্ববাদী গভর্নরের
অধীনে এইরকম হিন্দু গণহত্যা সম্ভব না আর সম্ভব যদি হয়ও সেই ঘটনা বছরের পর বছর চেপে থাকা সম্ভব না। সেই
সময় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ছিল চরম পর্যায়ে এবং কাশ্মীরিদের উপর অন্যায় ভাবেই যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল।
এইরকম যুদ্ধাবস্থায় ভায়োলেন্স বাড়বে এবং কেউ যদি নাও চায় তবুও বহু মানুষ মারা যাবে এটাই স্বাভাবিক। সেই সময়
চলমান হামলা- পালটা হামলার মধ্যে অনেক কাশ্মীরি মুসলমান এবং কাশ্মীরি পণ্ডিত মারা যায়, কাউকে আবার
হত্যা করা হয় আগ্রাসী কেন্দ্রীয় ভারত সরকারের সাথে সুসম্পর্ক রাখার ভিত্তিতে। সেই সময়ে দুর্বৃত্ত ফেইক
মিলিটান্টরাও বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড চালায় যারা মূল মুভমেন্টের সাথে জড়িত ছিল না। বিভিন্ন হত্যাকান্ডের ভিক্টিম যে
কাশ্মীরি পণ্ডিতরা হয়েছিল সেটা সঠিক তবে সেটার স্কেল কখনোই গণহত্যার লেভেলে ছিল না, কাশ্মীরি সশস্ত্র
বিদ্রোহিরা হিন্দু নির্মূলকরণ উদ্দেশ্য নিয়ে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে নাই, ভায়োলেন্স যা ঘটেছে সেগুলার বেশিরভাগই
পলিটিকাল এবং এক্সট্রিম পরিস্থিতির ফলের ভায়োলেন্স যা প্রত্যেক রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল অঞ্চলেই ঘটে। সেই
সময়ে ভারতীয় সরকার থেকেই কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ভেতরে ভয় ছড়িয়ে দেয়া হয় কাশ্মীর আজাদ হয়ে গেলে একটা
উগ্র ইসলামপন্থী রাষ্ট্র তৈরি হবে এবং হিন্দুদের হত্যা করা হবে। প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কাশ্মীরি পণ্ডিতরা তখন
ভারতের অন্য অঞ্চলে মাইগ্রেট করে,
তখন তাদের সংখ্যালঘু হওয়ার জন্য ভয় ছিল, বিছিন্ন ভায়োলেন্স গুলোর জন্য ভয় ছিল, তার উপর একটা যুদ্ধাবস্থায়
সাধারণভাবেই অনেক মানুষ থাকতে চাবে না এবং এইজন্য দেখা যায় ১৯৯০-এ ১২ হাজারেরও বেশি মুসলমানরাও
মাইগ্রেট করে। যুদ্ধে সহিংসতার শিকার হওয়া আর গণহত্যা এক জিনিস না, বেছে বেছে পন্ডিতদের ধরে গণহারে
উচ্ছেদ করে দেয়া হয় নাই। মুভিতে যেভাবে দেখানো হয়, হিন্দুদের এথনিক ক্লেন্সিং করা হয়, ম্যাস জেনোসাইড থেকে
বাঁচতে হিন্দুরা পালাতে বাধ্য হয় বাস্তবে বিষয়টা তেমন কিছু ছিল না।
বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদীদের প্রোপাগান্ডা ব্যাতীত, কাশ্মীরি হিন্দুদের প্রতি ম্যাস লেভেল গণহত্যা হয়েছে এই
ঘটনার সমর্থনে কোনো নির্ভ রযোগ্য ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। এইরকম দাবি বহু কাশ্মীরি পন্ডিতরাই বিশ্বাস করে না।
https://www.youtube.com/watch?v=v0O9FmSgjLE
কাশ্মিরি পণ্ডিত সাঙ্গারাশ সমিতি(KPSS), যেই অরগানাইজেশানের মূল কাজ কাশ্মীরে বর্ত মানে বসবাসরত হিন্দুদের
সমস্যা নিয়ে কাজ করা। KPSS এর প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় টিক্কো বলেন, কাশ্মীরের বাইরে যেভাবে প্রচার করা হয় সেরকম
কোনো হিন্দু গণহত্যা বা ম্যাস মার্ডার হয় নাই।
https://www.aljazeera.com/.../kashmiri-pandits-why-we...
কোনো হত্যা বা সহিংসতাই যে একেবারে হয় নাই বিষয়টা সেরকম না, তবে সেগুলো বিছীণ্ণ ভায়োলেন্সের ঘটনা,
গণহত্যার বা বেছে বেছে হিন্দু হত্যা করে নির্মূলকরণের কোনো প্যাটার্ন ছিল না, মুভিতে যে গণহত্যার স্কেলে দেখানো
হয়েছে তার পুরোটাই অবাস্তব। মুভিতে বলা হয় চার হাজার পন্ডিতকে হত্যা করা হয়েছে যা পুরোপুরো প্রোপাগান্ডা।
কাশ্মীরের পন্ডিতদের সংস্থাই সরাসরি বলেছে যে, ১৯৯০-২০১০ পর্যন্ত পুরো বিশ বছরের মোত চারশত পণ্ডিত হত্যা
হয়েছিল, সর্বোচ্চ হলে ৬৫০ হতে পারে কিন্তু চার হাজারের ধারে কাছেও না। এমনকি অফিশিয়াল রেকর্ড অনুসারে
১.৫ লক্ষ কাশ্মীরি পন্ডিতদের মধ্যে হত্যা হওয়া পণ্ডিতের সংখ্যা মাত্র ২১৯। KPSS বলে, '' ৩-৪ হাজার কাশ্মীরি
পন্ডিতকে হত্যা করা হয়েছে এই প্রোপাগান্ডার সাথে আমরা একমত না।''
https://economictimes.indiatimes.com/.../8914441.cms...
https://www.greaterkashmir.com/.../219-kashmiri-pandits...
ভারতীয় RTI অ্যাক্টিভিস্ট পি. পি. কাপুর তথ্য প্রকাশ করেন, কাশ্মীরের পুলিশ ডিপার্ট মেন্টের সোর্স থেকে দেখান
১৯৯০ এ মাত্র ৮৯ জন হিন্দু পণ্ডিত হামলায় মারা যায় কিন্তু অন্য ধর্মীয় বিশ্বাসের মানুষ মারা যায় ১৬৩৫ জন যাদের
বেশিরভাগই মুসলমান, অর্থাৎ হিন্দুদের চেয়ে মুসলমান বেশি মারা গিয়েছে, হিন্দুদের উপর গণহত্যা হয়েছে এটা
সম্পূর্ণ মিথ্যা। উল্লেখ্য যে, কাশ্মীরি পুলিশ ফোর্স অনেক সময়ই কাশ্মীরি সশস্ত্র বিদ্রোহীদের ব্যাপারে বায়াসড এবং মিথ্যা
তথ্য দেয়, যেসব হত্যার জন্য ভারতীয় মিলিটারি দায়ী বা অন্য সন্ত্রাসী গ্রুপ দায়ী, সেগুলার দায়ও কাশ্মীরি বিদ্রোহীদের
উপর চাপায় কিন্তু এরপরও সেই সোর্স থেকেও প্রমাণ আসে যে কাশ্মীরি বিদ্রোহীরা হিন্দুদের গণহত্যা করে নাই। এবং
যেসকল হিন্দু হত্যা করা হয়েছে তার কারণ ছিল মূলত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি,
মূলত পলিটিকাল ভায়োলেন্সকে হিন্দু বনাম মুসলিম ফ্রেম করে জাতিগত নিধন বানিয়ে দেয়া হয়েছে। যদি হিন্দু
নির্মূলকরণ করার উদ্দেশ্যে গণহত্যা হতো তাহলে বর্ত মান সময়েও আমরা প্রায় ৩,৪০০ কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বসবাস
করতে দেখতাম না। যত হিন্দু পণ্ডিত হত্যা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি হিন্দু পণ্ডিত এখন ভালো লাইফস্টাইল
নিয়ে কাশ্মীরে বসবাস করছে।
https://thewire.in/.../rti-findings-shed-light-on...
জেনোসাইডাল মুসলিম:-
পুরো মুভি জুড়ে দেখানো হয় কিভাবে সব কাশ্মীরি মুসলমানরা হিন্দুদের প্রতি গণহত্যা চালাতে আসে, একটা
মুসলমান ক্যারেকটারও দেখানো হয় নাই যে গণহত্যার সমর্থক ছিল না, এমনকি ছোট শিশুদের পর্যন্ত গণহত্যার ডাক
দিতে দেখানো হয়। কোনো ক্রাইম সিন দেখালে, ক্রিমিনালটা যে মুসলমান এবং ইসলাম দ্বারা মোটিভেটেড সাথে এটা
দেখানোও নিশ্চিত করা হয় প্রত্যেক ক্ষেত্রে। প্রচণ্ড মুসলিমবিদ্বেষী চিন্তাধারা থেকে দেখানো এই চিত্রের সাথে বাস্তব
কাশ্মীরিদের ন্যূনতম মিল নেই। কাশ্মীরের সাধারণ মুসলমানরা প্রতিবেশী কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সাথে খুবই সম্প্রীতিমূলক
আচরন করতো। কাশ্মীরি মুসলিমরা চায় নিজের ঘর ছেড়ে যাওয়া হিন্দু পণ্ডিতরা যেন ফিরে আসে। এমনকি কাশ্মীরি
মুসলিমরা এখনও পণ্ডিতদের ছেড়ে আসা ঘরের রক্ষনাবেক্ষণ করে।
https://kashmirobserver.net/.../missing-link-in-kashmir.../
ভিভেক রেইনা, একজন কাশ্মীরি পণ্ডিত বলেন, ''একজনও কাশ্মীরি মুসলমান নেই যারা ১৯৮৮-১৯৯০ এর ঘটনা
নিয়ে অনুশোচনা করে না।''
আরও বলা হয়, অস্থিতিশীল অবস্থার আগে এইরকম স্লোগানও ছিল, ''পান্ডিত-মুসলিম ভাই ভাই ভারতিয়া ফউজ
কাহা সে আয়ে'' (Not Just Cricket: A Reporter's Journey Through Modern India')।
বিজয় ধর, একজন কাশ্মীরি পণ্ডিত, দুই বছর পর ফিরে আসলে কাশ্মীরের মুসলমান প্রতিবেশীরা রোজ তার জন্য
খাবার নিয়ে আসতো।
https://thewire.in/rights/kashmiri-pandits-kashmiri-muslims
তাই কাশ্মীরি মুসলিমরা সব গণহত্যা সমর্থক ছিল এই তথ্য স্রেফ মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য প্রচার করা মিথ্যা ছাড়া
আর কিছুই না।
আজাদ কাশ্মীর আন্দোলন সন্ত্রাসবাদ এবং ৩৭০ ধারা:-
মুভিতে কাশ্মীরের মুক্তি আন্দোলনকে সরাসরি জঙ্গিবাদ বলা হয়েছে, বলা হয়েছে কাশ্মীরের স্বাধীনতা চাওয়া
সন্ত্রাসবাদ। কাশ্মীর সেই ১৯৮৭ থেকে ভারতের অবৈধ দখলের মধ্যে আছে, ভারতীয় বাহিনীর করা ধর্ষণ, নিপীড়ন,
হত্যার প্রতিবাদ করা, কাশ্মীরের স্বাধীনতা চাওয়া যদি সন্ত্রাসবাদ হয় তাহলে বিশ্বের প্রত্যেক স্বাধীনতাকামীই সন্ত্রাসবাদী।
সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হচ্ছে মুভিতে হিন্দু গণহত্যার প্রোপাগান্ডা দেখানোর পর ৩৭০ ধারাকে গণহত্যার জন্য
দোষারোপ করা হয়। ৩৭০ ধারা বাতিল করার মাধ্যমে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিয়ে, কাশ্মীরকে একটা
কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প বানানো হয়, এছাড়া আর কিছুই না।৩৭০ ধারার সাথে হিন্দুদের প্রতি হওয়া সহিংসতা সম্পূর্ণ
আনরিলেটেড ইভেন্ট, দুইটার মাঝে কোন সম্পর্ক নাই। ৩৭০ ধারা না থাকলে কোনো হিন্দু মারা যেত না এইটা
ভিত্তিহীন কথা। ১৯৯০-এ জাগমোহন কাশ্মীরের ক্ষমতায় ছিল যে নিজেই চরম মুসলিমবিদ্বেষী এবং বিজেপির
সমর্থনপ্রাপ্ত। কাশ্মীরের সাধারণ মুসলমানের সাথে আগেও হিন্দু পণ্ডিতদের যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক ছিল কাশ্মীর মুক্ত
হলেও থাকবে, কাশ্মীরের মুক্তির সাথে হিন্দুবিদ্বেষের কোনো সম্পর্ক নেই।
আসল কাশ্মীর ফাইলসঃ-
জেনোসাইড সংখ্যার বিচারে হয় না কিন্তু কেউ যদি সংখ্যার বিচারেই গণহত্যা কাউন্ট করতে চায় তাহলে কাশ্মীরে হিন্দু
গণহত্যা নয় বরং মুসলিম গণহত্যা হয়েছে।'' কাশ্মীর ফাইলস'' এর ঘটনা প্রোপাগান্ডা হলেও এখন যা পড়বেন
এইগুলো নির্ভ রযোগ্য সোর্স থেকে কনফার্ম করা। ১৯৮৯-১৯৯০ সালে অফিশিয়াল রেকর্ডে ২১৯ জন হিন্দুদের হত্যা
করা হয়েছে, যাকে মুভিতে হিন্দু পণ্ডিত গণহত্যা হিসেবে উপস্থাপন করে কিন্তু একই ১৯৯০ সালে স্রেফ এক
ম্যাসাকারেই এর চেয়ে বেশি মুসলমান মারা গিয়েছে ভারতীয় আর্মির হাতে।

 ক্ষমতায় আসার পরের দিনই জাগমোহন ইন্ডিয়ান প্যারামিলিটারি দিয়ে গাওদাকালে প্রতিবাদকারী কাশ্মীরিদের
হত্যা করে, কাশ্মীরিদের মতে ঐদিন ২৮০ জন নিরপরাধ কাশ্মীরি মুসলমানদের হত্যা করা হয়। (Kashmir:
The Scarred and the Beautiful, William Dalrymple)
 ১৯৯০ এর জানুয়ারিতেই ইন্ডিয়ান প্যারামিলিটারি বাহিনী অন্তত ৩০০ প্রতিবাদকারী সিভিলিয়ান কাশ্মীরিদের
হত্যা করে।http://news.bbc.co.uk/2/hi/south_asia/6947968.stm
 এরপর হান্দওয়ারায় প্রতিবাদ করলে সেখানেও ম্যাসাকার চালানো হয়, গুলি করে ২১ জনকে হত্যা করা
হয়।https://www.greaterkashmir.com/.../handwara-massacre-jan...
 ঐ বছরই হাওয়ালে মিরওয়াইজের জানাজায় হাজার হাজার মানুষের উপর গুলি চালানো হয়, অন্তত ৬০
জন ঐখানেই মারা যায়।https://www.greaterkashmir.com/.../hawal-massacre-when.../
 জাকু রা ও টেংপোরায় কাশ্মীরে মানবাধিকার চেয়ে বা ইউএন রেজোলিউশান বাস্তবায়নের দাবিতে প্রতিবাদ
করলেও সরাসরি গুলি করে অন্তত ২৬ জনকে হত্যা করে ইন্ডিয়ান ফোর্স, একে জাকু রা ও টেংপোরা
মাস্যাকার বলে ।(The Human Toll of the Kashmir Conflict: Grief and Courage in a South
Asian Borderland,page 33)

এইগুলো স্রেফ কিছু উদাহরণ , এইরকম অসংখ্যা উদাহরণ পাওয়া যাবে ভারতীয় বাহিনী দ্বারা কাশ্মীরি মুসলমানদের
ম্যাসাকারের। একই বছরে এতগুলো মুসলমান হত্যার পরও তাদের নিয়ে কোনো কাশ্মীর ফাইলস তৈরি হয়নি। কাশ্মীরে
বিগত ৩০ বছরে ১ লাখ কাশ্মীরি মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু তাদের জন্য কোনো কাশ্মীর ফাইলস তৈরি হয়নি।
মুভিতে অদ্ভু তভাবে কাশ্মীরে কোনো ইন্ডিয়ান আর্মি মেম্বারের উপস্থিতিই দেখানো হয় নাই।
কাশ্মীর ফাইলসে দেখানো মুসলমানরা গণহারে হিন্দু মেয়েদের ধর্ষণ করে এর পক্ষে কোনো নির্ভ রযোগ্য প্রমাণ না
থাকলেও ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীরে মুসলমান নারীদের গণহারে ধর্ষণ করে এর বহু প্রমাণ আছে।
উল্লেখিত অনেক তথ্য লেখক মুনশী নাঈমের লেখা থেকে নেওয়া।
১৯৯৩ সালের হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) রিপোর্ট অনুসারে, কাশ্মীরি নাগরিকদের বিদ্রোহের প্রতিশোধ
হিসেবে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করে ভারতীয় সিকিউরিটি ফোর্স, ধর্ষণের ঘটনাগুলো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়
বরং সিস্টেম্যাটিক টু ল। ১৯৯৬ সালের হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) রিপোর্ট অনুসারে কাশ্মীরে নারীদের
ধর্ষণ করা ছিল ভারতীয় বাহিনীর যুদ্ধনীতি। বহু একাডেমিকরা স্বীকৃ তি দিয়েছে যে, কাশ্মীরে ধর্ষণকে ব্যাবহার করা হয়
কাশ্মীরিদের ভেতরে ভয়, হিউমিলিয়েশন ছড়ানোর জন্য। মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ারসের করা ২০০৫ সালের একটি
গবেষণায় বলা হয়েছে, কাশ্মীরি নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার হার বিশ্বের সংঘাতময় অঞ্চলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে
বেশি। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর রিপোর্ট অনুসারে, স্রেফ ১৯৯২ সালে ভারতীয় বাহিনী ৮৮২ কাশ্মীরি মহিলাকে
গণধর্ষণ করেছে।
কিছু রিপোর্টে ড ইন্সিডেন্টের উদাহরণ দেই-

 ১৯৯০ সালের ২৬ জুন বিএসএফ সদস্যরা জামির কাদিমের একটি এলাকায় তল্লাশি চালানোর সময় ২৪ বছর
বয়সী একজন তরুণীকে গণধর্ষণ করে। সেবছর জুলাইয়ে সোপোরের পুলিশ থানায় বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে
একটি মামলা দায়ের করা হয় [Kazi, Seema. “Rape, Impunity and Justice in Kashmir]
 ১৯৯০ সালের ৭ মার্চ সিআরপিএফ শ্রীনগরের ছানপোরা এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িতে হানা দেয়। এসময়
বেশ কয়েকজন মহিলা ধর্ষণের শিকার হন। ১৯৯০ সালের ১২ থেকে ১৬ মার্চ ‘কমিটি ফর ইনিশিয়েটিভ ইন
কাশ্মীর’-এর সদস্যরা কাশ্মীর সফর করেন এবং ধর্ষিতাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। ধর্ষিতাদের মধ্যে ২৪ বছর
বয়সী নূরা বিবরণে জানান যে, নূরা ও তাঁর ননদ জাইনাকে তাঁদের রান্নাঘর থেকে সিআরপিএফের ২০ জন
সদস্য টেনে-হিঁচড়ে বের করে এবং তারপর তাঁদেরকে গণধর্ষণ করে। তাঁরা অন্য দু’জন কিশোরীকে ধর্ষিত
হতে দেখেছেন বলেও বর্ণনা করেন[ CHAPTER-V PROBLEM OF HUMAN RIGHTS IN
JAMMU AND KASHMIR (PDF)। পৃষ্ঠা 224।]।
 ১৯৯১ সালে শ্রীনগরের বাবর শাহ এলাকায় ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীরা একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত বৃদ্ধা
মহিলাকে ধর্ষণ করে [Bhat, Aashaq Hussain, and R. Moorthy. “Impact of Security
Provisions in Kashmir.” (2016).]।
 ১৯৯১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দল কাশ্মীরের কু পওয়ারা জেলার কু নান
পোশপোরা গ্রামে একটি তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ অভিযান পরিচালনা করে। এসময় তারা গ্রামটির বিভিন্ন
বয়সের শতাধিক নারীকে গণধর্ষণ করে।
 ১৯৯১ সালের ২০ আগস্ট ভারতীয় সৈন্যরা কু নান পোষ্পোরা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের পাজিপোরা-
বাল্লিপোরা গ্রামের ১৫ জনেরও বেশি নারীকে গণধর্ষণ করে [Mathur, Shubh (১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। The
Human Toll of the Kashmir Conflict: Grief and Courage in a South Asian Borderland।
Palgrave Macmillan US। পৃষ্ঠা 60]
 ১৯৯২ সালের ১০ অক্টোবর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২২তম গ্রেনেডিয়ার্সের একদল সৈন্য কাশ্মীরের চক
সাইদপোরা গ্রামে প্রবেশ করে এবং ৯ জন নারীকে গণধর্ষণ করে। ধর্ষিতাদের মধ্যে ছিলেন ৬০ বছর বয়সী এক
বৃদ্ধা এবং ১১ বছর বয়সী এক বালিকা [Rape in Kashmir: A Crime of War” (PDF). Asia Watch
& Physicians for Human Rights A Division of Human Rights Watch.]।
 ১৯৯২ সালের ২০ জুলাই কাশ্মীরের হারান এলাকায় একটি সেনা অভিযানের সময় বেশ কয়েকজন মহিলা
ধর্ষিত হন। এশিয়া ওয়াচ এবং পিএইচআর কয়েকজন ধর্ষিতার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। ধর্ষিতাদের একজনকে
দুইজন সৈন্য পালাক্রমে ধর্ষণ করেছিল। আরেকজন ধর্ষিতাকে একজন শিখ সৈন্য ধর্ষণ করেছিল [“Rape in
Kashmir: A Crime of War” (PDF). Asia Watch & Physicians for Human Rights A
Division of Human Rights Watch. ]।
 ১৯৯২ সালের ১ অক্টোবর বিএসএফ সদস্যরা কাশ্মীরের বাখিকার গ্রামে ১০ জন লোককে হত্যা করে এবং
এরপর নিকটবর্তী গুরিহাখার গ্রামে প্রবেশ করে কয়েকজন নারীকে ধর্ষণ করে। এশিয়া ওয়াচ গ্রামটির একজন
নারীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে, যিনি তাঁর মেয়েকে অসম্মানের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিজেকে ধর্ষিতা
বলে দাবি করেন (প্রকৃ তপক্ষে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন তাঁর মেয়ে) [“Rape in Kashmir: A Crime of
War” (PDF). Asia Watch & Physicians for Human Rights A Division of Human Rights
Watch]।
 ১৯৯৩ সালে ভারতীয় সৈন্যরা কাশ্মীরের বিজবেহারা শহরের বহুসংখ্যক নারীকে গণধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন
করে। স্থানীয় বয়স্ক ব্যক্তিরা ঘটনাটি প্রচার হলে ধর্ষিতাদের পরিবার অসম্মানিত হবে এই আশঙ্কায় এই ঘটনাটি
ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর ওপর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য
সৈন্যরা বিজবেহারা শহরের প্রান্তে গাধাঙ্গিপোরায় একজন নারীকে ধর্ষণ করে [“The Massacre Of A Town
By Murtaza Shibli”। www.countercurrents.org]।
 ১৯৯৪ সালের ১৭ জুন মেজর রমেশ ও রাজ কু মারসহ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সৈন্যরা কাশ্মীরের হিহামা গ্রামের ৭
জন মহিলাকে ধর্ষণ করে [Hashmi, Syed Junaid (৩১ মার্চ ২০০৭)। “Conflict Rape Victims:
Abandoned And Forgotten]।
 ১৯৯৪ সালে কাশ্মীরের শেখপোরায় সৈন্যরা একটি বাড়িতে প্রবেশ করে বাড়ির পুরুষদের বন্দি করে ৬০ বছর
বয়সী এক নারীকে ধর্ষণ করে [Bhat, Aashaq Hussain, and R. Moorthy. “Impact of Security
Provisions in Kashmir.” (2016).]।
 ১৯৯৪ সালে ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সদস্যরা কাশ্মীরের থেনো বুদাপাথারীতে এক মহিলা ও তাঁর ১২
বছর বয়সী মেয়েকে ধর্ষণ করে [Bhat, Aashaq Hussain, and R. Moorthy. “Impact of Security
Provisions in Kashmir.” (2016).]।
 ১৯৯৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সৈন্যরা কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার বুরবুন গ্রামের একটি
বাড়িতে প্রবেশ করে তিনজন নারীকে যৌন নির্যাতন করে এবং ধর্ষণের চেষ্টা করে [ “India’s Secret Army
in Kashmir”। Human Rights Watch।]।
 ১৯৯৭ সালের নভেম্বরে কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার নরবল পিঙ্গালগোমে ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীরা একজন
তরুণীকে ধর্ষণ করে [Bhat, Aashaq Hussain, and R. Moorthy. “Impact of Security
Provisions in Kashmir.” (2016).]।
 ১৯৯৭ সালের ১৩ এপ্রিল ভারতীয় সৈন্যরা শ্রীনগরের নিকটে ১২ জন কাশ্মীরি তরুণীকে জোরপূর্বক নগ্ন করে
এবং গণধর্ষণ করে [Van Praagh, David (২০০৩)। Greater Game: India’s Race with Destiny
and China। McGill-Queen’s University Press। পৃষ্ঠা 390]।
 ১৯৯৭ সালের ২২ এপ্রিল ভারতীয় সৈন্যরা কাশ্মীরের বাভু সা গ্রামে ৩২ বছর বয়সী এক নারীর বাড়িতে প্রবেশ
করে ঐ নারীর ১২ বছর বয়সী মেয়ের ওপর যৌন নির্যাতন করে এবং ১৪, ১৬ ও ১৮ বছর বয়সী বাকি তিন
মেয়েকে ধর্ষণ করে। অন্য একটি বাড়িতে তারা আরো কয়েকটি মেয়েকে ধর্ষণ করে এবং মেয়েটির মা বাধা
দেয়ার চেষ্টা করলে তাঁকে মারধর করে [ “India: High Time to Put an End to Impunity in Jammu
and Kashmir” (PDF). 15 May 1997. Archived from the original (PDF) on 29 October
2013]।
 কাশ্মীরের দোদা জেলার লুদনা গ্রামের ৫০ বছর বয়সী এক নারী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানান যে, ১৯৯৮
সালের ৫ অক্টোবর রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সদস্যরা তাঁর বাড়ি থেকে তাঁকে তু লে নিয়ে যায় এবং প্রহার করে।
এরপর একজন হিন্দু ক্যাপ্টেন তাঁকে ধর্ষণ করে এবং বলে যে, “তোমরা মুসলিম, এবং তোমাদের সকলের
সাথে এমন আচরণ করা হবে”[“Under Siege: Doda and the Border Districts”। Human
Rights Watch]।
 ২০০০ সালের ২৯ অক্টোবর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৫ বিহার রেজিমেন্টের সৈন্যরা কাশ্মীরের বিহোটায় একটি
তল্লাশি অভিযানের সময় একজন মহিলাকে তু লে নিয়ে আসে। পরবর্তী দিন ২০ জন নারী ও কয়েকজন পুরুষ
ঐ মহিলাকে মুক্ত করার জন্য যান। কিন্তু সৈন্যরা আগত মহিলাদের ৪-৫ ঘণ্টার জন্য বন্দি করে রাখে এবং
তাদের ওপর অত্যাচার করে [Kazi, Seema. “Rape, Impunity and Justice in Kashmir ওয়েব্যাক
মেশিনে আর্কাইভকৃ ত ১৮ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে.]।
 ২০০৪ সালের ২৮ অক্টোবর কাশ্মীরের জিরো ব্রিজের একটি গেস্ট হাউজে ৪ জন নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর
সদস্য ২১ বছর বয়সী এক তরুণীকে গণধর্ষণ করে [ Bhat, Aashaq Hussain, and R. Moorthy.
“Impact of Security Provisions in Kashmir.” (2016)]।
 ২০০৬ সালের ৬ নভেম্বর কাশ্মীরের বাদেরপাইনে এক মা এবং তাঁর মেয়ে ধর্ষিত হন[৭]। ধর্ষণকারী সেনা
কর্মকর্তা (মেজর রহমান হুসেইন) একজন মুসলিম হওয়ায় সেনা কর্তৃ পক্ষ এটিকে কোনো ইস্যু হিসেবে
বিবেচনা করে নি। পরবর্তীতে ঐ কর্মকর্তাকে ধর্ষণের বদলে বেসামরিক সম্পত্তিতর অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে
শাস্তি দেয়া হয়[Ashraf, Ajaz। “‘Do you need 700,000 soldiers to fight 150 militants?’:
Kashmiri rights activist Khurram Parvez”। Scroll.in (ইংরেজি ভাষায়)]।
 ২০০৯ সালের ২৯ মে কাশ্মীরের শোপিয়ান জেলায় ভারতীয় সৈন্যরা আসিয়া এবং নিলুফার জান নামে দু’জন
নারীকে অপহরণ ও গণধর্ষণের পর হত্যা করে।
http://news.bbc.co.uk/2/hi/south_asia/8076666.stm

এইগুলো স্রেফ টিপ অফ দা আইসবার্গ, এইরকম লক্ষ লক্ষ কেস আছে চাপা পড়ে আছে, এগুলো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা
না বরং ভারতীয় বাহিনীর নিয়ম মাফিক চালানো আগ্রাসনের অংশ।হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর মতে প্রকৃ ত ধর্ষণের
সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি কিন্তু গ্রাম্য অঞ্চলে হওয়ায় এবং রিপোর্টিং না হওয়ায় এগুলো উঠে আসে না, কোন
অথোরিটির কাছে এরা রিপোর্ট করবে যেখানে অথোরিটিই এদের ধর্ষণ করছে। হাভারড ইউনিভার্সিটির স্কলার ডারা
কেই কোহেন যুদ্ধে হওয়া সবচেয়ে জঘন্য গণধর্ষণগুলোর তালিকায় রাখে কাশ্মীরি মুসলমান নারীদের গণধর্ষণকে।
বেশিরভাগ ধর্ষণের ঘটনাই তাই আনরিপোর্টে ড থাকে এবং রিপোর্ট হলেও কোনটারই বিচার হয় না, বিচার তো দূরের
কথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তদন্তই করা হয় না। সীমা কাজীর মতে, কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে সবচেয়ে কম তদন্ত
ও মামলা হচ্ছে ধর্ষণ মামলায়। ভারতীয় সরকার কাশ্মীরের ধর্ষণের কেসগুলোকে যতটা সম্ভব ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা
করে। ভারত সরকার ধর্ষকদের আইনি প্রোটেকশন দেয় এবং উৎসাহিত করে।
https://fateh24.com/%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7.../
https://www.hrw.org/reports/1996/India2.htm
https://www.hrw.org/sites/default/files/reports/INDIA937.PDF
https://www.hrw.org/sites/default/files/reports/INDIA937.PDF
কাশ্মীরের ভেতরে ভারত কাশ্মীরিদের জন্য টর্চার সেল তৈরি করেছে। যেখানে ইলেকট্রিক শক, ছাদের সাথে উল্টো করে
বেঁধে পেটানো, গোপনাঙ্গে মরিচ গুঁড়া দেওয়া, ক্ষতস্থানে লবণ ছিটানো, ঘুমোতে না দেওয়া, নগ্নাবস্থায় রাখা, যৌন
নিপীড়ন, হাত-পা টেনে ধরা, লোহার রড ঢু কানো, পায়ের রানের উপর বড় বড় বার রেখে সেখানে বসে থাকা সহ এমন
কোনও টর্চার মেথড নেই যা সেখানে অ্যাপ্লাই করা হয় না। এইরকম ঘটনাও আছে যেখানে ইন্ডিয়ান আর্মি কাশ্মীরির পা
হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলে, তার কোমরের থেকে মাংস কেটে লবণ মরিচ মাখিয়ে তাকেই সেটা খেতে বাধ্য করে।
এইগুলো কাশ্মীরের বাস্তব ঘটনা, আসল কাশ্মীর ফাইলস যেটা কেউ আপনাকে দেখাতে চাবে না। পশ্চিমা মেইন্সট্রিম
মিডিয়া কাশ্মীরের মানবাধিকার লংঘন নিয়ে বেশিরভাগ সময়ই এড়িয়ে যায়, ভারতীয় আগ্রাসনকে কভার করে না।
কাশ্মীরের মিডিয়ার মানুষদের নির্যাতন করা হয়, হত্যা করা হয় যাতে বাস্তব খবর বাইরে না যায়। সোশ্যাল মিডিয়া
কোম্পানিগুলো যেমন- ফেসবুক,টু ইটার, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি কাশ্মীরিদের ভয়েসকে থামিয়ে দেয়, তাদের প্রতিবাদকে
সেন্সর করে। আসল কাশ্মীর ফাইলসগুলো সেজন্য সামনে আসে না।
https://www.aljazeera.com/.../india-kashmir-press-clud...
https://www.trtworld.com/.../how-kashmiri-voices-are...
বাস্তব গণহত্যাঃ-
জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা ড. গ্রেগরি স্টেনটন বলেন ভারতে অতি শীঘ্রই মুসলিম গণহত্যা শুরু হবে এবং
কাশ্মীরে সেটার লক্ষণ ও প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে। ড. গ্রেগরি স্টেনটন রুয়ান্ডার গণহত্যা ঘটার ৫ বছর আগেই ভবিষ্যৎবাণী
করেছিলেন রুয়ান্ডার গণহত্যার ব্যাপারে যা পরে মিলে যায়, সে এখন একই কথা বলছে ভারতের ব্যাপারে। ড. গ্রেগরি
স্টেনটন ব্যাখ্যা করেন, কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়ার মাধ্যমে মোদি মূলত হিন্দু
আধিপত্যবাদের মত প্রতিষ্ঠা করে। এবং ভারতে নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে মুসলিমদের নাগরিকত্ব সরানোর প্রক্রিয়া
শুরু করা হয় যা একইভাবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার আগে করা হয়েছিল।গণহত্যা একটা প্রসেসের মাধ্যমে হয়
যার অনেক লক্ষণ কাশ্মীর এবং আসামে দেখা গিয়েছে। নোয়াম চমস্কি কিছুদিন আগেই বলেছেন, ইসলামোফোবিয়া
সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ভারতে।
ভারতে ২০২১ এর ডিসেম্বরেই বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী ধর্মগুরুরা বিজেপি নেতাদের উপস্তিতিতেই মুসলিম গণহত্যার ডাক
দেয়। বর্ত মানে এইরকম বহু মানুষ পাওয়া যাচ্ছে যারা কাশ্মীর ফাইলস দেখার পরে মুসলিম গণহত্যার জন্য ডাক দিচ্ছে।
গণহত্যা চালানোর আগে একধরণের পাবলিক সিম্পাথি তৈরি করতে হয় নিজের কাজের জন্য, ভিক্টিমদের খুবই
বাজেভাবে ভিলিফাই করতে হয়, ডিহিউম্যানাইজ করতে হয় এবং এক ধরণের সেইভিয়র কমপ্লেক্স তৈরি করতে হয় যে
এদের হত্যা করার মাধ্যমে আমরা কাউকে বাঁচাচ্ছি। এর সবগুলো একসাথে করেছে কাশ্মীর ফাইলস মুভি। এইজন্যই
কাশ্মীর ফাইলস বিজেপির বিপুল সমর্থন পেয়েছে, বিভিন্ন স্টেটে কাশ্মীর ফাইলসকে টাক্স ফ্রি ঘোষণা করেছে, আইনি
কর্মকর্তাদের ছুটি দেয়া হচ্ছে মুভি দেখানোর জন্য। অভিনেতাদের মধ্যে অনুপম খের, মিঠু ন চক্রবর্তী সরাসরি বিজেপির
হয়ে কাজ করেছে একসময় এবং পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী সরাসরি বলছে, মুভিটা ন্যারেটিভ তৈরির জন্যই
বানানো হয়েছে, মুভিটার ক্রিটিসিজম যারা করে তারা সন্ত্রাসবাদী। অর্থাৎ এটা এখন পরিষ্কার যে কাশ্মীর ফাইলস
আসলে গণহত্যার পক্ষের পাবলিক সেন্টিমেন্ট তৈরি করার উদ্দেশ্যে বানানো হয়েছিল। মিথ্যা জেনোসাইডের গল্প
শুনিয়ে আসল জেনোসাইড ঘটানোর উদ্দেশ্যে এইসব প্রোপাগান্ডা মুভি বানানো হয়। সত্যটা জানেন অন্যকে জানান,
আসল কাশ্মীর ফাইলস নিয়ে আওয়াজ তোলেন
https://www.youtube.com/watch?v=4QFb_GbJCUM
https://www.aljazeera.com/.../expert-warns-of-possible...

—-------------------------------------------------------------------------------------------------------------

Abortion, Infanticide and Utilitarianism


সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় গর্ভ পাত করানো নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়।কিন্তু একটা বিষয় অনেকেই
খেয়াল করে না সেটা হচ্ছে এই দাবির Slippery Slope বা সামনে আরও কি আসতে পারে।বর্ত মানে পৃথিবীর কিছু
উন্নত প্রগতিশীল রাষ্ট্রে মানুষ চাইলে জন্মের পরেও সন্তানকে হত্যা করতে পারে! যেমন-
নেদারল্যান্ড:- নেদারল্যান্ডে বর্ত মানে যেসকল শিশু টার্মিনাল ইলনেস(Terminal illness) নিয়ে জন্ম নেয় তাদের হত্যা
করা বৈধ,যদি বাবা-মা সম্মতি দেয়। মাত্র ১২ বছরেরও কম, এমনকি এক বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রেও হত্যা করা বৈধ।
শুধু বৈধতার শর্ত হচ্ছে, বাবা-মায়ের সম্মতি থাকতে হবে এবং শিশুর প্রায় আরোগ্যহীন কোনো রোগ থাকতে হবে
যেমন- ক্যান্সার, হাইড্রোসেফালাস, ডিমেনশিয়া ইত্যাদি।[1]
বেলজিয়াম:- বেলজিয়ামে ২০১৪ সাল থেকে টার্মিনাল ইলনেস(Terminal illness) নিয়ে জন্ম নেয়া যেকোনো বয়সের
শিশুকে হত্যা করা বৈধতা দেয়া হয়। এখানেও বৈধতার শর্ত হচ্ছে, বাবা-মায়ের সম্মতি থাকতে হবে এবং শিশুর প্রায়
আরোগ্যহীন কষ্টদায়ক কোনো রোগ থাকতে হবে।আইন পাস করার পর দুই বছরেই তিনজন শিশুকে এই প্রক্রিয়ায়
হত্যা করা হয়।[2]
নিউজিল্যান্ড:- নিউজিল্যান্ডে সবার প্রিয় লিবারাল প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন ২০২০ সালে সবচেয়ে এক্সট্রিম
গর্ভ পাত আইন পাশ করে। নতু ন Abortion Legislation Bill এর কারণে কেউ চাইলে প্রেগনেন্সির যেকোনো স্টেজে
গর্ভ পাত করাতে পারে। এমনকি কেউ যদি বাচ্চা জন্ম নেয়ার মাত্র এক সপ্তাহ আগেও বাচ্চাকে হত্যা করে সেটাও বৈধ,
অর্থাৎ বাইরের একটা শিশুর মতোই বাচ্চার অঙ্গ, চেতনা, কষ্ট অনুভব করার ক্ষমতা সব থাকবে কিন্তু তাও তাকে হত্যা
করা যাবে স্রেফ নারীর গর্ভে ভেতরে থাকার জন্য![3]
আরও ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, লেইট টার্ম গর্ভ পাত করার চেষ্টার পর যদি কোনো শিশু বেঁচে যায় এবং জন্মগ্রহণ করে
তাকে বিনা চিকিৎসায় হত্যা করা যাবে! বাস্তবে এমন ঘটনা ঘটেও, ২০২১ সালে একটা শিশুকে জন্ম নেয়ার পর দুই ঘণ্টা
কোনোরকম মেডিকাল কেয়ার ও চিকিৎসা দেয়া হয় না, বাচ্চাটা দুই ঘণ্টা ধরে সেই অবস্থায় শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করছিল,
পরে সেভাবেই মারা যায়। একজন হেলথকেয়ার স্টু ডেন্ট ঘটনাটি দেখার পর বলে, ''আমি পশুর সাথেও কখনো এমন
আচরণ করতাম না।''[4]
এই বর্বর আইনগুলো বৈধতা দেয়া হয়েছে ইউটিলিটারিয়ানিজমের মাধ্যমে। ইউটিলিটারিয়ান প্রিন্সিপাল অনুসারে,
মানুষের সর্বোচ্চ সুখ ম্যাক্সিমাইজ করা উচিত এবং কষ্ট মিনিমাইজ করা উচিত এইটাই নৈতিকতার সংজ্ঞা। প্রগতিশীল
এই মানুষগুলোর মতে, বাচ্চাগুলো বেঁচে থাকলে কষ্ট ভোগ করবে, সামগ্রিক কষ্টের পরিমাণ বাড়বে, সর্বোচ্চ মানুষের
জন্য সর্বোচ্চ সুখ ম্যাক্সিমাইজ করতে তাই এদের হত্যা করা প্রয়োজন। এইটা ইউটিলিটারিয়ান প্রিন্সিপাল সমর্থিত
হওয়ায় একইসাথে হার্ম প্রিন্সিপাল সমর্থিতও। ইউটিলিটারিয়ান প্রিন্সিপাল হার্ম প্রিন্সিপালের হার্মকে ডিফাইন করে
দেয়, বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে ছোট ক্ষতি করা বৈধ, তাই ইউটিলি ম্যাক্সিমাইজ করতে শিশুহত্যা করা এই দর্শনে
বৈধ।বর্ত মানের বিখ্যাত ইউটিলিটারিয়ান দার্শনিক পিটার সিঙ্গার ''Should the Baby Live?:The Problem of
Handicapped Infants'' নামে একটা সম্পূর্ণ বই লিখে প্রতিবন্ধী শিশুহত্যার জাস্টিফিকেশান ব্যাখ্যা করে।
আজকে অনেকে শিশুকে গর্ভে র ভেতরে হত্যা করার অধিকার যারা চাচ্ছে, এদের আরেকটু প্রগতি হলেই এরা গর্ভে র
বাইরের শিশুকেও হত্যা করার দাবি তু লবে। সবচেয়ে প্রগতিশীল দেশে নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়ামে এটাই
হয়েছে।
Refference:-
1. https://www.theguardian.com/.../dutch-government-backs...
2. https://www.theguardian.com/.../belgium-law-extends...
3. https://bothlivesmatter.org.nz/the-law-in-detail/...
4. https://www.voiceforlife.org.nz/.../exclusive-healthy...
5. Should the Baby Live?:The Problem of Handicapped Infants, Peter Singer

—--------------------------------------------------------------------------------------------------------------

A critique of Feminism
বর্ত মানে সবচেয়ে বহুল আলোচিত মতাদর্শগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ফেমিনিজম। ফেমিনিজমের সাধারণ ডেফিনিশন
হলো- নারী ও পুরুষের সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকার অর্জ ন ও পুরুষতন্ত্র সম্পূর্ণ নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে যে সোশিও-
পলিটিকাল মুভমেন্ট কাজ করে তাকে ফেমিনিজম বলে। এইখানে সাধারণভাবে বর্ত মান মেইন্সট্রিমে যে ফেমিনিজমের
প্রচারণা করা হয় সেটার ব্যাপারে লিখবো। কিছুদিন পরপরই ফেমিনিজম নিয়ে কোনো একটা ইস্যু চলেই আসে তাই
একবারে পুরো বিষয়টা ব্যাখ্যা করবো। ফেমিনিজম নিয়ে শর্টে আলোচনা করলে অনেককিছু বাদ পরে যায় তাই
কম্প্রিহেনসিভ ক্রিটিসিজম করার জন্য পোস্টটা একটু বড় করা হয়েছে।
Problem of Complexity:-
লিবারাল ফেমিনিজম সমতার নীতিকে অ্যাবসোলিউট অলঙ্ঘনীয় হিসেবে বিশ্বাস করে অর্থাৎ প্রত্যেক ক্ষেত্রে
সমানভাবেই অধিকার দিতে হবে, এই নীতিকেই দাবি করে। তাহলে প্রথমত ইকু য়ালিটি কেন সর্বক্ষেত্রে অ্যাবসোলিউট
কিছু না বা অলঙ্ঘনীয় না সেটা প্রমাণ করা প্রয়োজন।
দার্শনিক John R. Lucas এর ''Against Equality'' ও “Against Equality Again”-এ এবং Nicholas
Rescher এর Distributive Justice. A Constructive Critique of the Utilitarian Theory of
Distribution- এ সমতার কনসেপ্টের বিরুদ্ধে Problem of Complexity ব্যাখ্যা করা হয়। নৈতিকতা- ভালো-
খারাপ- অধিকার নির্ধারণ অনেকগুলো ভ্যালু এবং নীতি বিবেচনা করে করা হয়, ভালো-খারাপ নির্ধারণের ক্ষেত্রে
ইকু য়ালিটি একমাত্র কনসেপ্ট না। ইকু য়ালিটি কোনো অ্যাবসোলিউট বিষয় না, কোনো এথিকাল থিওরি স্রেফ একটা
কনসেপ্ট দিয়ে তৈরি করলে সেটা সমস্যাজনক। প্রিন্সিপাল অফ মেরিট, প্রিন্সিপাল অফ কোয়ালিফিকেশান ইত্যাদি
নীতি অনেক সময়ই প্রিন্সিপাল অফ ইকু য়ালিটির চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়।অনেক এথিকাল থিওরিতেই
সমানাধিকারের কথা বলা হয়, ইকু য়ালিটিকে মোরাল ভ্যালু গণ্য করা হয় কিন্তু অন্যান্য মোরাল ভ্যালুর জন্য অনেক
সময় বিভিন্ন ফ্যাক্টর বিচার করে ইকু য়ালিটির বিপরীতে কাজ করা হয় যাতে ইকু ইটি নিশ্চিত করা যায়। সবাইকে সবকিছু
সমানভাবে দেয়া হচ্ছে ইকু য়ালিটি এবং যে যেটা পাওয়ার 'যোগ্য' তাকে সেটা দেয়া হচ্ছে জাস্টিস।এমন কোনো ফ্যাক্ট
নেই যে, সবাই শারীরিক পার্থক্য, লিঙ্গভেদে সবসময়ই সমানভাবে সবকিছু পাওয়ার যোগ্য হবে। যোগ্যতা আর
সক্ষমতার পার্থক্যের জন্য অসমানভাবে কিছু ক্ষেত্রে আচরণ করা যায় আবার অন্য কোনো ভ্যালু রক্ষার জন্য সমতার
লঙ্ঘন করা যায়।
যেমন- একজন অপরাধীকে যখন জেলে দেয়া হয় তখন সমাজের সাধারন মানুষের সাথে তার ইকু য়ালিটি লঙ্ঘন হয়
কিন্তু সমাজে সেইফটি ও ভিক্টিমের রিটালিয়েশানের ভ্যালু রক্ষা হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী
মানুষকে বিভিন্ন কাজে নিয়োগ দেয়া হয় না, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে এয়ার ফোরসে নেয়া হয় না, এতে করে ইকু য়ালিটি লঙ্ঘন
হয় কিন্তু মেরিট বা যোগ্যতার নীতি ঠিক থাকে। লিঙ্গের ভিত্তিতে ইনইকু য়াল কিন্তু স্বাভাবিক আচরণের উদাহরণ
বর্ত মানেই অনেক আছে। বর্ত মানে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৮-৬০ বছর বয়সী পুরুষদের ইউক্রেন ত্যাগের
ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, এডাল্ট পুরুষ সবাইকে বাধ্যতামূলক যুদ্ধ করতে বলা হয়েছে। পুরুষের শারীরিক
ক্ষমতা এবং দেশ,নারী-শিশুদের রক্ষা করার সামাজিক দায়িত্ব থাকার কারণে এই আইন করা হয়েছে। এখানে
ইকু য়ালিটি লঙ্ঘন হয়েছে কিন্তু পুরুষের সুরক্ষা প্রদান করার নৈতিক দায়বদ্ধতা, রাষ্ট্রীয় সিকিউরিটির ভ্যালু- রক্ষা
হয়েছে। এখানে, নারীদের জন্য যুদ্ধ বাধ্যতামূলক করা হয়নি, সমানাধিকার-ইকু য়ালিটি নিশ্চিত হয়নি কিন্তু মেইন্সট্রিমের
কোনো নারীবাদী নেই যে এই আইনের বিরোধিতা করেছে। সমতা সবসময় সবার জন্য, এমনকি নারীদের জন্যও জাস্টিস
দিতে পারবে এমন কোনো প্রমাণ নেই। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে নৈতিকতা কমপ্লেক্স ফ্যাক্টরের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় এবং
অন্যান্য নীতির কারণে সমতার নীতির লঙ্ঘন করা যেতে পারে, তাই সমতা অ্যাবসোলিউট কিছু না যেমনটা
ফেমিনিজম দাবি করে।
Problem of Equality:-
লিবারাল ফেমিনিজমের একটা মূল কনসেপ্ট হচ্ছে-ইকু য়ালিটি, নারী ও পুরুষকে সর্বক্ষেত্রে সমানভাবে দেখা এবং
সমান অধিকার দেয়া। কনসেপ্টটা প্রথমে শুনতে বেশ ভালো লাগলেও একটু চিন্তা করলেই কিছু বড় সমস্যা বের হয়ে
আসে।
প্রথমত, নারী এবং পুরুষ সমান না, নারী এবং পুরুষের মধ্যে বায়োলজিকাল অনেক পার্থক্য আছে। নারী-পুরুষ
উভয়েরই ক্ষেত্র অনুসারে বায়োলজিকাল অ্যাডভানটেজ আছে, এখানে নারী বা পুরুষ কাউকেই মানুষ হিসেবে ছোট
করা হচ্ছে না, স্রেফ সায়েন্টিফিক ফ্যাক্টের ভিত্তিতে পার্থক্য বলা হচ্ছে।
যেমন-

 হরমোনাল পার্থক্যের কারণে গড়ে পুরুষের শারীরিক ক্ষমতা নারীর চেয়ে বেশি, এইজন্যই এথলেটদের মধ্যে
পুরুষ এবং নারী আলাদা করা হয় যাতে পুরুষরা এক্সট্রা অ্যাডভানটেজ না পায়।(Circulating
Testosterone as the Hormonal Basis of Sex Differences in Athletic
Performance,David J Handelsman)[1]
 Glasgow Caledonian University-এর Pamela Andrews এবং Teesside University-এর
Mark A Chen এর গবেষণায় ৪৭৮ জন নারী ও পুরুষ দৌড়বিদের উপর গবেষণা করা হলো পুরুষের
টোটাল এবং যৌথ মানসিক শক্তি, আত্মবিশ্বাস ও কাজের প্রতি পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি নারীর চেয়ে বেশি।
পরিস্থিতি মোকাবেলার ধরণও তাদের ভিন্ন পুরুষ পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছে আরও বেশি করে কাজে
লেগে থেকে (task orientated coping) কিন্তু বেশিরভাগ নারীরা কাজ থেকে দূরে থেকে বা একেবারে
ছেড়ে দিয়ে (disengagement and resignation coping) পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছে বা উত্তোরণের
চেষ্টা করেছে।(Gender Differences in Mental Toughness and Coping with Injury in
Runners,Journal of Athletic Enhancement)[2]
 Nature-এর গবেষণায় ৮০,৯২৮ জন পার্টি সিপেন্ট নিয়ে Progressive Raven's Matrices ব্যাবহার করে
রিসার্চ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, নারীদের গড় আইকিউ পুরুষদের চেয়ে ৪.৬ পয়েন্ট কম (Is there a
sex difference in IQ scores?,Nature)[3]
 পোস্ট মনোপজ বাদে নারীদের মনে রাখার ক্ষমতা সাধারণ ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে বেশি(Who has the
better memory, men or women? NAMS)[4]
 স্ট্রেস বাড়লে টেস্টোস্টেরন হরমোনের কারণে পুরুষের বেপরোয়া বা রিস্কি সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রবণতা নারীদের চেয়ে
বেশি.(Cortisol boosts risky decision-making behavior in men but not in
women,psychoneuroendocrinology)[5]
 পুরুষের নিজের যৌন ইচ্ছার উপর নিয়ন্ত্রণ নারীর চেয়ে কম।(Is There a Gender Difference in
Strength of Sex Drive? Roy F. Baumeister)[6]
 গড়ে পুরুষের চেয়ে নারীদের করুণা-মমত্ববোধের পরিমাণ বেশি। অক্সিটোসিনের কারণে নারীদের স্নেহের আলাদা
বৈশিষ্ট্য থাকে(Girls exhibit greater empathy than boys,Nature)[7]
 নারীদের হিমোগ্লোবিন কম থাকায় হাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতা পুরুষের চেয়ে বেশি।বেশি গরম ও বেশি ঠাণ্ডায়
পুরুষদের তু লনায় নারীদের নেগেটিভ প্রভাব বেশি পরে।[8]
 স্টেসে থাকা নারীর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির পরিমাণ স্ট্রেসে থাকা পুরুষের চেয়ে বেশি।[9]
 অতিরিক্ত পরিশ্রম অনেক ক্ষেত্রে নারীর বন্ধ্যা হওয়ার কারণ হয়।[10]
 প্রায় ৯০% নারী Premenstrual syndrome (PMS) এ ভোগে, যার ফলে সামাজিক পারফর্মেন্সে কমতি
আসে।[11]

এগুলোসহ অসংখ্যা পার্থক্য আছে নারী এবং পুরুষের মাঝে যেটা এভিডেন্স দ্বারা প্রমাণিত। প্রত্যেকটা ফ্যাক্টের জন্য
আলাদা রিসার্চ পেপারগুলো রেফারেন্সে দিয়ে রাখছি এবং লিঙ্ক কমেন্টে দিচ্ছি।অনেকগুলো রেফারেন্স ডা শামসুল
আরেফিন শাক্তি ভাইয়ের লেখা থেকে নেয়া।
এখানে মূল পয়েন্ট হচ্ছে নারী-পুরুষ যদি শারীরিক-মানসিক সবক্ষেত্রে সমান না হয় তাহলে তাদের কেন সমানভাবে
ট্রিট করা লাগবে সবক্ষেত্রে।
কমন সেন্স লজিক থেকেই, দুইটা অসমান সাবজেক্টকে আমরা কখনোই সবক্ষেত্রে সমানভাবে দেখি না বা সবসময়
সমান আচরণ করি না, তাহলে কেন অসমান হওয়ার পরও সবক্ষেত্রে নারী ও পুরুষকে সমান অধিকার দিতে হবে,
কোনো এক্সসেপশান রাখা যাবে না। ইকু য়ালিটির কনসেপ্টটা যে ধ্রুব সত্য সেটার প্রমাণ কি, ইকু য়ালিটি যে সবসময়
ইকু ইটি বা জাস্টিস আনে সেটারই বা প্রমাণ কি। আমরা অনেক সময় ইনইকু য়াল আচরণকে বৈধতা দেই বিভিন্ন বড়
ফ্যাক্টর বিবেচনা করে যেমন- বয়স,এক্সপেরিয়েন্স, দক্ষতা, শারীরিক ক্ষমতা ইত্যাদি। একইভাবে লিঙ্গও সেরকম ফ্যাক্টর
হতে পারে কারণ লিঙ্গভেদে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অনেক বড় পার্থক্য থাকে। ইকু য়ালিটির লঙ্ঘন করা
সবসময় খারাপ কিছু না, অনেক ক্ষেত্রেই করা হয়ে থাকে। সমতার নীতি তাই ধ্রুব সত্য হিসেবে ভাবার কারণ নেই।
Levelling down objection:-
ফেমিনিজম শুধুমাত্র ইকু য়ালিটিতে ফোকাস করে, ইকু য়ালিটিকে ফেমিনিজম জাস্টিস অর্জ নের একমাত্র বিষয় বলে মনে
করে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, থিওরিটিকালি কোনো সমাজে সম্পূর্ণ ইকু য়ালিটি থাকার পরও সেই সমাজটা
জাস্টিসবিহীন হতে পারে, সমতা এবং ন্যায়বিচার তাই আলাদা বিষয়। এটা সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা যায়
Derek Parfit এর ‘Levelling down objection’ থেকে। সমতা অনেক ক্ষেত্রে একটা বড় অংশের মানুষের প্রতি
অন্যায় করার মাধ্যমেও অর্জ ন করা সম্ভব। অধিকারের লেভেল আপ করার বদলে বাকি সবার অধিকার কেড়ে নেয়ার
মাধ্যমেও সমতা অর্জ ন সম্ভব, সেক্ষেত্রে সমতা হয় কিন্তু ন্যায় হয় না। Derek Parfit এর ভাষায়, '' আমরা অন্ধদের
সমতা প্রদান করার জন্য চোখে দেখতে পাওয়া সবার চোখ উপড়ে ফেলতে পারি। স্রেফ সমতাভিত্তিক বিচারে এই
সমাজ বর্ত মান সমাজ থেকে বেশি ন্যায্য কারণ এখানে অসমতার পরিমাণ কম। আবার এই সমাজের কোনো ধনী
ব্যাক্তি যদি প্রাকৃ তিক দুর্যোগে নিজের সম্পদ হারিয়ে সমাজের অন্যদের মতো দরিদ্র হয়ে যায় তাহলে আমাদের খুশি
হওয়া উচিত কারণ সমাজে সমতা আরও বাড়ছে।কিন্তু আমরা এইসব অবস্থাকে খারাপ বলেই মনে করি কারণ সমতা
মানেই ন্যায় না, শুধুমাত্র অসমতা মানেই অন্যায় না।''
এখানে মূল পয়েন্ট হচ্ছে, সমতা নেগেটিভ ভাবেও অর্জ ন করা সম্ভব এবং শুধুমাত্র সমতাভিত্তিক নৈতিকতায় এটাকে
বৈধতা দেয়া হয়।ফেমিনিজম নারী এবং পুরুষের সমতার কথা বলে অর্থাৎ ফেমিনিজম কোনো সমাজে শুধু পুরুষের
সমান অধিকার দাবি করে।সমস্যা হলো অনেক ক্ষেত্রে সমাজে পুরুষরাই অনেক মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত বা
তারা যেসব 'অধিকার' ভোগ করে সেগুলো আসলে ক্ষতি বয়ে আনে, ফেমিনিজম সেক্ষেত্রে ''পুরুষের সমান অধিকার''
স্ট্যান্ডার্ড গ্রহণ করার জন্য অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়, ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষের সমান হতে গিয়ে নারীর জন্য ক্ষতি নিয়ে আসে।
আরও বড় সমস্যা হলো- ফেমিনিজমের ইকু য়ালিটিভিত্তিক নৈতিক মানদণ্ড গ্রহণ করলে কিন্তু অ্যাবসার্ড
থিওরিটিকাল ফলাফল আসে, যেমন- যে সমাজে স্রেফ পুরুষরা যথেষ্ট শিক্ষার অধিকার পায় সেই সমাজ থেকে যে
সমাজে নারী-পুরুষ উভয়ই যথেষ্ট শিক্ষার অধিকার পায় না সেই সমাজ ভালো কারণ এখানে ইনইকু য়ালিটি কম।
Leveling Down Objection কিছু বাস্তব উদাহরণ থেকেই ভালোভাবে বোঝা যায়-
১৯২৯ সাল, তখন আমেরিকায় নারীদের ধূমপান করা ট্যাবু ছিল। তখন অ্যামেরিকান টোবাকো অ্যাসোশিয়েশনের
প্রধান জর্জ হিল, এডওয়ার্ড বার্নেইসের মাধ্যমে নতু ন ক্যাম্পেইন শুরু করলো। অ্যাড ক্যাম্পেইন শুরু হল- টর্চে স অফ
ফ্রিডম, মুক্তির মশাল। বার্নেইস সিগারেটকে উপস্থাপন করলেন নারীর মুক্তি এবং পুরুষের সমান হবার প্রতীক
হিসেবে।পুরুষরা যদি রাস্তায় বুক ফু লিয়ে সিগারেট টানতে পারে, নারীরা কেন পারবে না? এটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের
তৈরি ট্যাবু ছাড়া আর কিছুই না, নারীর ধূমপান করতে না দেয়া স্রেফ সেক্সিজম, তাই পাবলিক প্লেইসে নারীর ধূমপান
এক ধরনের বৈপ্লবিক কাজ। এতে নিছক সিগারেট ফোকা হচ্ছে না, বরং এটা হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
তাই নারীর হাতে ধরা সিগারেট আসলে তার মুক্তির মশাল। তখন ফেমিনিজম নারীদের ''পুরুষের মতো ধূমপানের
অধিকার'' অর্জ নের ক্যাম্পেইন করলো। ১৯২৯ সালের ইস্টার সানডে-র দিন দশ জন সুসজ্জিত তরুনীকে জ্বলন্ত
সিগারেট হাতে গর্বিত ভঙ্গিতে নিউইয়র্কে র ফিফথ অ্যাভেনিউতে মার্চ করতে দেখা গেল। এদের বলা হলো মুক্তির
মশাল হাতে মুক্ত নারী।
বিষয়টা এমন ছিল, নারীদের ক্যান্সার হবে হোক কিন্তু তারপরও পুরুষের সমানই হতে হবে, সেক্সিজম ক্যান্সার
থেকেও খারাপ। নারীদের ক্যান্সার হলেও সমস্যা নাই, পুরুষতন্ত্র নির্মূল হলেই হলো। পুরুষের সমান অধিকার অর্জ ন
করার লক্ষ্যে এটা সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হলো যে পুরুষের এই অধিকার পুরুষকে স্রেফ ক্ষতিগ্রস্থ করছিল।( The
Cigarette Century. New York: Basic Books, Brandt, Allan M.)
ফেমিনিস্ট মুভমেন্ট অনেক ক্ষেত্রে ক্যাপিটালিজমের সমর্থনে লাভজনক প্রজেক্ট হিসেবে কাজ করে এসেছে। পুঁজিবাদী
পশ্চিম ও সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যখন স্নায়ুযুদ্ধ চলে তখন পশ্চিমে পুঁজিবাদের প্রোমোশনে
ফেমিনিজম কাজে লাগে। তখন বিখ্যাত পোস্টার বানানো হয়েছিল "We Can Do It!", ১৯৪৩ সালে বানিয়েছিলেন
J. Howard Miller নারী কর্মীদের উৎসাহ ধরে রাখার জন্য। আরেকটা বিখ্যাত ক্যারেক্টার তৈরি করা হয়েছিল যার
নাম Rosie the Riveter, আমেরিকায় অস্ত্র ও সামরিক ফ্যাক্টরি এবং অন্যান্য কারখানায় কর্মরত নারীদের গ্লোরিফাই
করে একটা সাংস্কৃ তিক আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছিল। অর্থাৎ, তখন থেকেই পুঁজিবাদী সিস্টেমের বিরোধিতার
পরিবর্তে পুঁজিবাদী সিস্টেমের মধ্যে স্বল্প বেতনে কাজ করাকে নারীমুক্তি হিসেবে তু লে ধরা হয়, যা এখনও চলছে।
যেসব নারীরা অর্থাভাবের জন্য বাধ্য হয়ে কাজ করে সেটার কনটেক্সট সম্পূর্ণ আলাদা। গৃহিণী নারীদের আগাছার মতো
মনে করা, বিয়েকে পুরুষের দাসত্ব মনে করা, মাতৃ ত্বের গ্লোরিফিকেশানের বিরোধিতা করা, কর্পোরেশনের শোষনমুলক
দাসত্বকে ''নারীমুক্তি'' বলে প্রচার করা সবকিছুই ক্যাপিটালিজমকে লাভ দেয়, এই ন্যারেটিভ দাঁড়ায় যে
ক্যাপিটালিজমের মাধ্যমেই নারীমুক্তি হচ্ছে। পুরুষের মতো তখন নারীরাও ক্যাপিটালিস্ট সিস্টেমে শোষিত হয় কিন্তু
তারপরও ফেমিনিজমের সমর্থন থাকে কারণ এক্ষেত্রে পুরুষের মতো সমানভাবে কাজ করা যাচ্ছে, অর্থনৈতিক
শোষণের বিরুদ্ধে ফেমিনিজমের কিছু বলার নাই কারণ এখানে নারী ও পুরুষ সমানভাবে শোষিত হচ্ছে, ''নারী-পুরুষের
সমতা'' অর্জ ন হচ্ছে।
Cambridge University-এর gender studies-এর প্রোফেসর Nancy Fraser লেখেন—
পুরুষ জীবিকা উপার্জ ন করবে, নারী ঘর সামলাবে— এই পরিবার কাঠামো (male breadwinner-female
homemaker family) ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত পুঁজিবাদের কেন্দ্রবিন্দু। নারীবাদের নামে আমরা এই কাঠামোটার সমালোচনা
করেছিলাম। এই সমালোচনা এখন কাজে লাগাচ্ছে কর্পোরেট বেসরকারী পুঁজিবাদ (flexible capitalism)। কেননা
বেসরকারি পুঁজিবাদ নির্ভ রই করে নারীর শ্রমের উপর, বিশেষ করে সেবা ও শিল্প খাতে নারীর কমমূল্যের শ্রমের উপর।
এই শ্রম কেবল তরুণী অবিবাহিতারা দেয় তা না, বরং বিবাহিতা ও মায়েরাও দিচ্ছে। কেবল কট্টর নারীবাদীরাই দেয় তা
না, বরং সব জাতির মেয়েরাই দিয়ে চলেছে। সারা দুনিয়াতেই যেহেতু মেয়েরা শ্রমবাজারে বানের মত আসছে, আগের
সেই পরিবার কাঠামো বদলে হয়েছে, ‘দুই রোজগেরে’ পরিবার (two-earner family), নারীবাদের কারণে।(How
feminism became capitalism's handmaiden - and how to reclaim it, Nancy Fraser) এই ব্যাপারে
বিস্তারিত বইও লিখেন-Feminism, Capitalism, and the Cunning of History নামে।
অর্থাৎ, ফেমিনিজম নারী ও পুরুষের সমতা অর্জ ন করছে ধনী ও দরিদ্রের অসমতা তৈরি করা সিস্টেমকে সহায়তা
করে। মার্ক্সিস্ট ফেমিনিস্টরা পুঁজিবাদের বিরোধিতা করলেও দিনশেষে তারা মূলধারার মুভমেন্ট হয়ে উঠতে পারে না,
পশ্চিমা লিবারাল ফেমিনিস্টরাই তাদের বিরোধিতা করে। সেটা করাই স্বাভাবিক কারণ ফেমিনিজমের মূল স্ট্যান্ডার্ড ই
পুরুষের সমতা, পুরুষ যদি ''কর্মের অধিকার'' নিয়ে কর্পোরেট সিস্টেমে শোষিত হয়ে থাকে, সমতা অর্জ নের জন্য
নারীরাও সেভাবে যাওয়া উচিত।এভাবে ''পুরুষের সমান অধিকার'' অর্জ নকে স্ট্যান্ডার্ড বানিয়ে ফেমিনিজম কাজ
করতে গিয়ে যেসব ''অধিকার'' পুরুষকে ক্ষতিগ্রস্থ করছিল সেগুলোকেও নারীদের সাথে নিয়ে আসে। লেভেল আপ
করার বদলে লেভেল ডাউন করার মাধ্যমে সমতা অর্জ ন হয় কিন্তু ন্যায় অর্জ ন হয় না।
Dilemma of Rights:-
একটা বিষয় বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ-''নারীবাদ'' এবং ''নারী অধিকার'' সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।আমি নারী অধিকার সমর্থন
করি তার মানেই আমি নারীবাদী না, ''নারী অধিকার'' একটা মোরাল ভ্যালু যা বিভিন্ন নৈতিকতার মানদণ্ড বিভিন্নভাবে
ডিফাইন করে।''অধিকার'' এর ধারণা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিতর্কি ত হয়ে আসছে, লিবারালিজমের অধিকারের
সংজ্ঞা একরকম,ইসলামে অধিকারের সংজ্ঞা আরেকরকম,ইউটিলিটারিয়ানিজমে অধিকারকে একভাবে ডিফাইন করা
হয়, ডিওন্টোলজিতে আরেকভাবে ডিফাইন করা হয়, কোনটাই এক জিনিস না, এখানে প্রত্যেকটা দর্শনই ''নারী
অধিকার'' প্রদান করে বলে দাবি করবে কিন্তু প্রত্যেকের নারী অধিকারের সংজ্ঞা সম্পূর্ণ ভিন্ন।নারীবাদ যখন নারী
অধিকারের কথা বলে তখন বোঝা দরকার নারীবাদ কোন নৈতিক স্ট্যান্ডার্ডে র নারী অধিকারের কথা বলে, যেহেতু বিভিন্ন
দর্শন নারী অধিকারকে বিভিন্নভাবে ডিফাইন করে।
নারীবাদ একটা বিশেষ দর্শনের নারী অধিকারকে সমর্থন করে, একটা নির্দি ষ্ট নৈতিক মানদণ্ডকে সত্য মনে করে।মেইন্সট্রিম
ফেমিনিস্টরা মুলত পশ্চিমা লিবারালিজমের দর্শনকে গ্রহণ করে নারী অধিকারকে ডিফাইন করে। লিবারালিজমে
একজন মানুষের মূল অধিকার ''স্বাধীনতা'', যতক্ষণ কেউ অন্য কারোর ক্ষতি না করছে ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ যা ইচ্ছা
করতে পারে, এটাই তার অধিকারের সংজ্ঞা, একে বলে হার্ম প্রিন্সিপাল।নারী অধিকার এভাবেই ডিফাইন করা হয় যে,
নারী নিজের উপর সার্বভৌম, এখান থেকেই ''আমার শরীর আমার সিদ্ধান্ত(my body my rules)''-এর বিখ্যাত দাবি
আসে।হার্ম প্রিন্সিপালের সমস্যার ব্যাপারে আলাদাভাবে বিস্তারিত লিখেছি আগেই, সেটা চেক করতে পারেন।[12]
এখানে স্রেফ কিছু ধারণা দেই।
প্রথমত, নারীর নিজের শরীর নিয়ে যা ইচ্ছা করার পূর্ণ অধিকার আছে যতক্ষণ না অন্য কারোর ক্ষতি হচ্ছে, এই দাবির
প্রেমিজটাই ভু ল। নারী নিজের শরীরকে নিজে সৃষ্টি করে নাই, নিজের শরীর সৃষ্টির জন্য কোনো এফোর্ট ও দেয় নাই, এটা
তার অর্জ ন না স্রেফ জন্মসূত্রে পাওয়া ব্যাপার, স্রস্টা তৈরি করে জন্মের সাথে দিয়ে দিয়েছে। যেটা একজন মানুষ সৃষ্টি
করে নাই, সৃষ্টি করার জন্য কোনো এফোর্ট ও দেয় নাই, যেটা তার অর্জ ন না সেটার উপর তার অথোরিটি নাই, সেটা নিয়ে
যা ইচ্ছা তাই করার অধিকার মানুষের থাকতে পারে না। মানুষের শরীরের উপর সম্পূর্ণ অথোরিটি আছে সৃষ্টিকর্তার,
নারীর তাই ইচ্ছাস্বাধীনভাবে চলা যাবে না, সৃষ্টিকর্তা যেই নিয়মে চলতে বলেছে সেই নিয়মে চলতে হবে। এখন কেউ
স্রস্টার অস্তিত্বকে ডিনাই না করলে ফেমিনিজম,লিবারালিজম সত্য হওয়া সম্ভব না। আবার কেউ যদি স্রস্টার অস্তিত্বকে
ডিনাই করে তাহলেও সমস্যা থাকে। তখন তার শরীর Random-ভাবে পাওয়া, একটা Random-ভাবে পাওয়া
কোনকিছুর উপর পূর্ণ অথোরিটি মানুষ কিভাবে রাখে।যেমন- রাস্তায় Random-ভাবে কোনো মৃত মানুষের টাকা খুঁজে
পেলে সেটার উপর আমার অথোরিটি চলে আসে না।
দ্বিতীয়ত- অধিকারের এই সংজ্ঞা সম্পূর্ণ প্রমাণহীন, কেন অধিকারের এত সংজ্ঞা থাকার পরও এই সংজ্ঞাটাই মেনে
নিতে হবে, কেন এই সংজ্ঞাটাই ঠিক এর কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয় না। ''যতক্ষণ কেউ অন্য কারোর ক্ষতি না
করছে ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ যা ইচ্ছা করতে পারে''- এই ধারণাটা পশ্চিমা সংস্কৃ তি বাদে পৃথিবীর বেশিরভাগ সংস্কৃ তিই
মানে না, প্রমাণ কি যে শুধু লিবারালিজমই ঠিক বাকি সব ভু ল। ধর্মভিত্তিক নৈতিকতা প্রচার করতে গেলে প্রশ্ন করা হয়
তোমার ধর্মই ঠিক প্রমাণ কর কিন্তু লিবারাল নৈতিকতার ক্ষেত্রে এই দাবি কমই করা হয় যে লিবারালিজম সত্য সেটা
প্রমাণ কর। কোনোরকম প্রমাণ ছাড়াই লিবারাল ফেমিনিজমকে সঠিক বলে ধরে নেয়ার কোনো অর্থ নেই।
Anti Religion and Anti Culture beliefs:-
আগেই ব্যাখ্যা করেছি, ফেমিনিজমের নারী অধিকারের সংজ্ঞাটা পশ্চিমা লিবারালিজম অনুসারে নির্ধারিত হয়।
ফেমিনিজমের ''নারী অধিকার'' এর ধারণা, সমতার ধারণা পৃথিবীর বেশিরভাগ ধর্ম এবং সংস্কৃ তির সাথেই সাংঘর্ষিক।
ফেমিনিজমের মতো মতাদর্শ সত্তাগতভাবে সংস্কৃ তি এবং ধর্ম বিদ্বেষী হওয়াটাই বেশ স্বাভাবিক।
ফেমিনিজম “পুরুষতন্ত্র তত্ত্ব” (Patriarchal Thesis)-এ বিশ্বাস করে, এই থিসিসের উপর ভিত্তি করে আন্দোলনের
লক্ষ্য ঠিক করে।পুরুষতন্ত্র তত্ত্ব হল এই বিশ্বাস যে – সভ্যতার শুরু থেকেই পুরুষরা এমন এক বৈষম্যমূলক সামাজিক
কাঠামো গড়ে তু লেছে এবং টিকিয়ে রেখেছে যার উদ্দেশ্য হল নারীকে অধীনস্ত করা, শোষণ করা, নির্যাতন করা এবং
তাদের ওপর কর্তৃ ত্ব বজায় রাখা।ধর্মের নেতৃ ত্ব দেয়া পুরুষ নবীদেরও ফেমিনিজম এই সিস্টেমের থেকে আলাদাভাবে দেয়
না।
ফেমিনিজমের অধিকারের সংজ্ঞা-বডিলি অটোনমি- অন্যের ক্ষতি না করে নারীর নিজের শরীর নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করার
অধিকার, সম্পূর্ণ ধর্মীয় মেটাফিজিক্সের সাথে সাংঘর্ষিক কারণ ধর্ম সৃষ্টিকর্তার ধারণা আনে, স্রস্টার নিয়ম অনুসারে নারী
চলবে কারণ তার সবকিছু স্রস্টার তৈরি, আগেই ব্যাখ্যা করেছি।স্রস্টার অস্তিত্ব থাকলে ইন্ডিভিজুয়ালিজমের ধারণা সত্য
হওয়া সম্ভব না, তাই ধর্মকে মেনে নিলে ফেমিনিজমই আর থাকে না।ফেমিনিস্ট লেন্স থেকে যদি দেখা হয় তাহলে,
মেজর ধর্মগুলোর নবীরা প্রায় সবাই ছিল পুরুষ।ফেমিনিজম ধর্মকে স্রস্টাপ্রদত্ত কিছু মনে করে না তখন ধর্ম ফেমিনিজম
অনুসারে হয়ে দাঁড়ায় কিছু পুরুষের চাপিয়ে দেয়া নিয়ম, যা ফেমিনিস্টদের মতে পুরুষতন্ত্রেরই নামান্তর।
ফেমিনিজমে যে অ্যাবসোলিউট ইকু য়ালিটির কথা বলা হয়, সেটা ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক। সব আব্রাহামিক ধর্মেই নারী
এবং পুরুষের প্রতি অনেকসময় আলাদা আচরণ করা হয়।
যেমন-

 ইসলামের ক্ষেত্রে বিধান আছে নারীরা ইসলামিক খিলাফতে রাস্ট্রপ্রধান হতে পারবে না।‘সকল ওলামায়ে
কেরাম এব্যপারে একমত যে, কোনো নারীর জন্য ‘রাষ্ট্র প্রধান’ হওয়া জায়েয নয়’।[মারাতিবুল ইজমা, ইবনে
হাযাম- ১২৬ পৃষ্ঠা]
 ইসলামিক উত্তরাধিকার বন্টনের ক্ষেত্রে চারক্ষেত্রে পুরুষ নারীর দ্বিগুন পাবে, এগারো ক্ষেত্রে নারী পুরুষ সমান
পাবে এবং ষোলোক্ষেত্রে নারী পুরুষের চেয়ে বেশি পাবে।[সূরা নিসাঃ১১]
 -পুরুষের উপর স্ত্রীর যৌনচাহিদা পূরণের সাথে ভরণপোষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, কিন্তু স্ত্রীর উপর যৌনচাহিদা
পূরণের দায়িত্ব আছে, স্বামীর ভরণপোষনের দায়িত্ব নেই, ইচ্ছাধীন ব্যাপার।[সূরা নিসাঃ৩৪]
 - ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারলে পুরুষের একসাথে চার বিয়ে জায়েজ,কিন্তু নারীর একসাথে একের অধিক
বিয়ে হারাম।[সূরা নিসাঃ৩]
 -মুসলিম নারীদের জন্য অমুসলিম পুরুষদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ,তবে মুসলিম পুরুষরা চাইলে আহলে
কিতাবদের নারীদের বিয়ে করতে পারবে।[সূরা মুমতাহিনা, আয়াত ১০]
 - মুসলিম নারীর জন্য হিজাব পরিধান করা ফরজ এবং পুরুষের সতর ঢাকা ও দৃষ্টি হেফাজত করা ফরজ।
[সূরা নূরঃ৩১]
 -মুসলিম নারীর পুরুষদের নামাজে ইমাম হওয়া হারাম।[আল মুহাল্লা ২/১৬৭]
 -স্বর্ণ ও রেশমি বস্ত্র পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ কিন্তু মুসলিম নারীদের জন্য বৈধ।(সিলসিলা সহীহা হা-
১৮৬৫/৩০৩০)
 -ইসলামে সন্তানের প্রতি মাতার অধিকার পিতার চেয়ে বেশি।আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন,
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কছে এলো এবং সে প্রশ্ন করল,ইয়া রাসুলাল্লাহ!
মানুষের মধ্যে আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাপেক্ষা যোগ্য কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, এরপর
কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। সে বললঃ এরপর কে? তিনি বললেন, এরপরও তোমার মা। সে
বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা।(সহিহ মুসলিম,৬২৬৯)
 -কন্যার লালনপালন জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কন্যা সন্তানের
লালনপালনের যে পরিমাণ ফযীলতের কথা বলেছেন, পুত্র সন্তান লালনপালনের ক্ষেত্রে সে পরিমাণ বলেননি।
আনাস রাযিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- যে ব্যক্তি দুইজন
কন্যা সন্তানকে লালনপালন ও দেখাশুনা করল ।সে এবং আমি জান্নাতে এরূপ একসাথে প্রবেশ করব যেরূপ
এ দুটি আঙু ল। তিনি নিজের দুই আঙু ল মিলিয়ে দেখালেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯১৪)
 যে ব্যক্তিকে কন্যা সন্তান লালনপালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সাথে তা সম্পাদন করেছে সেই
কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নাম থেকে আড় হবে। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯১৩)
 বোনদের ভালোভাবে লালনপালনের জন্য বেহেশতের সুযোগ দেয়া হয়েছে, ভাইদের ক্ষেত্রে বলা হয়নি।আবু
সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা
সন্তান বা তিনটি বোন আছে এবং সে তাদের সাথে মমতাপূর্ণ ব্যবহার করে, সে বেহেশতে প্রবেশ করবে
(আদাবুল মুফরাত ৭৯)
 নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলে-সন্তান এবং মেয়ে-সন্তান, উভয়কেই সমানভাবে ট্রিট করতে
বলেছেন। তবে, দু'জনের মধ্যে যদি কাউকে বেশি করে ট্রিট করতে হয়, যদি কোন একজনকে বেশি প্রায়োরিটি
দিতে হয়, তাহলে নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কন্যা সন্তানকেই তা দিতে বলেছেন। মানে,
আপনার ছেলে এবং মেয়ে, দুজনের মধ্যে কোন একজনকে যদি আপনি একটু বেশি ভালোবাসতে চান,
তাহলে নবিজী বলেছেন সেই বেশিটা যেন কন্যা সন্তানের জন্যই হয়।(আস-সুনান আল কু বরা, হাদিস নম্বর
১১০৯২)

এইরকম বহু নিয়ম আছে, যেখানে ইসলামে নারী ও পুরুষের মধ্যে ইকু য়ালিটি নেই, নারীবাদী-পুরুষবাদী অনেকেরই এটা
ভালো লাগবে না, কারণ ইসলাম ন্যায়বিচার দেয় ইকু য়ালিটি না।
ফেমিনিজম সবক্ষেত্রে পুরুষতন্ত্রকে নারীর প্রতি নির্যাতনমূলক মনে করে এবং নির্মূলকরণ করতে চায়। কিন্তু বর্ত মানে
আমাদের এবং বেশিরভাগ ধর্ম ও কালচারেই পরিবার ব্যাবস্থা পুরুষতান্ত্রিক, শুধু বিভিন্ন ক্ষু দ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজে
মাতৃ তান্ত্রিক।বংশপরিচয় নির্ধারিত হয় পিতৃ পরিচয় দ্বারাই, পারিবারিক কাঠামোর প্রধান থাকে পিতা, তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের
ক্ষেত্রে মাতার মতামতকেও বিবেচনা করা হয়। এই পুরুষতন্ত্র এবং ফেমিনিজমের ''পুরুষতন্ত্র(Patriarchy)'' এক না।
পারিবারিক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ফর্মে পুরুষতন্ত্রের অস্তিত্ব আছে, যেটা ফেমিনিজম যে টক্সিক পুরুষতন্ত্রের ধারনায় বিশ্বাস
করে সেরকম না, এটা নারীর প্রতি নির্যাতনমূলক কিছু না।পুরুষতান্ত্রিক পরিবার ব্যাবস্থা খুবই স্বাভাবিক এবং ন্যাচারাল
বিষয়, যা বহু সমাজ ব্যাবস্থাই স্বাভাবিকভাবে চলে আসছে।
অধিকারের সংজ্ঞা দেখলে, ফেমিনিজম অনুসারে সেক্সুয়াল অটোনমি নারীর অধিকার। নারী স্বাধীনভাবে অন্য কারোর
ক্ষতি না করে যার সাথে ইচ্ছা যৌন সম্পর্ক করার অধিকার রাখে কারণ তার নিজ শরীরের উপর পূর্ণ স্বাধীনতা আছে,
এজন্য পশ্চিমে সেক্সুয়াল রেভোলিউশানের সময় বহু মেইন্সট্রিম ফেমিনিস্ট সমর্থন করেছিল। এইরকম অবাধ যৌন
স্বাধীনতা প্রাচ্যের সাধারন কালচারের সাথে, এমনকি আগেকার পশ্চিমের কালচারের সাথেও সাংঘর্ষিক।
ফেমিনিজম অনুসারে নারী সম্পূর্ণ পোশাকের স্বাধীনতা রাখে, সে যদি নগ্ন বা অর্ধনগ্ন হয়েও বের হতে চায় সেটাও তার
অধিকার। এটা ঐতিহাসিকভাবে গ্রহণ করে আসা শালীনতার ধারণাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে, যা প্রায় সব মেজর ধর্মেই
আছে।
ফেমিনিজম অনুসারে নারীর সংজ্ঞাটাও ভিন্ন। বর্ত মানের ফেমিনিস্ট মুভমেন্ট ট্র্যান্স ইনক্লু সিভ অর্থাৎ কোনো
বায়োলজিকালি পুরুষ যদি মনে করে সে নারী তাহলেও তাকে নারী হিসেবে গণ্য করা হবে।আমেরিকার বৃহত্তম
ফেমিনিস্ট অরগানাইজেশান National Organization for Women (NOW) এবং League of Women
Voters (LWV) এলজিবিটিকিউ রাইটসকে একটা মূল ফেমিনিস্ট ইস্যু মনে করে। NOW এর প্রেসিডেন্ট টেরি'ও
নেইল বলে, ট্রান্স নারীরাও নারী, ট্রান্স নারীদের অধিকার রক্ষা করা ফেমিনিস্টদের দায়িত্ব। এখানে জেন্ডার স্রেফ একটা
সোশ্যাল কন্সট্রাক্ট, কেউ চাইলেই পুরুষ থেকে নারী, নারী থেকে পুরুষ হতে পারে। একজন নারী চাইলে লেসবিয়ান
হতে পারে, নারীর সাথেও যৌন সম্পর্ক রাখতে পারে, এটাও লিবারাল ফেমিনিজম অনুসারে নারী অধিকার।
এইধরনের দাবিগুলো সরাসরি পৃথিবীর বেশিরভাগ সমাজের মতে ''অসভ্যতা'' কিন্তু লিবারাল সমাজে স্বাধীনতা।
পৃথিবীর বেশিরভাগ সমাজ যে সমতার লঙ্ঘন করে সেই সমতা ফেমিনিস্ট সমাজে অলঙ্ঘনীয়। প্রশ্ন হলো, কেন
পৃথিবীর বেশিরভাগ ধর্ম ও সমাজের সাথে সাঙ্ঘরশিক হওয়ার পরও ফেমিনিজম মেনে নিতে হবে? প্রমাণ কি যে
ফেমিনিজম যে ভালো-খারাপের ধারণা দেয় সেটাই সত্য, প্রমাণ কি যে লিবারালিজম নারী অধিকারের যে সংজ্ঞা দেয়
সেটাই সত্য? কেন পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষকে নিজেদের সব বিশ্বাস ফেলে ফেমিনিজম গ্রহণ করা লাগবে?
প্রথমদিকের নারীবাদীরা তাত্ত্বিকরা মনে করতেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল নারী অধিকার খর্ব করার পেছনে ভূ মিকা
রাখে না; বরং ধর্মই হলো ''নারীবিদ্বেষী বিশ্বাস ও আচার-আচরণের'' মূল উৎস। নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয়
নেত্রীদের একজন, সুসান বি অ্যানথনি বলেছিল-.

 ‘নারীর সবচেয়ে নিকৃ ষ্ট শত্রু হলো গির্জার বেদি’।(Micmillen, Sally as cited in: ‘Seneca Falls and
the Origins of the Women’s Rights Movements.’)

ঊনবিংশ শতাব্দীর আরেক উল্লেখযোগ্য নারীবাদী হেলেন এইচ গার্ড নার। নারীর বিরুদ্ধে খ্রিষ্টধর্মের ‘অপরাধ’ আর
নিপীড়ন’ নিয়ে অনেকে লেখাজোখা ছিলেন হেলেনের। সে লিখেছিল–

 ‘এই ধর্ম আর কিতাব (বাইবেল) নারীর কাছে দাবি করে সবকিছু। বিনিময়ে দেয় না কিছুই। এরা নারীর সমর্থন
আর ভালোবাসা চায়, বিনিময় দেয় অত্যাচার, নিগ্রহ আর অবজ্ঞা …খ্রিষ্টধর্মীয় দেশগুলোতে নারীর বিরুদ্ধে যত
অত্যাচার আর নিগ্রহ হয়েছে, সেগুলোর বৈধতা দিয়েছে বাইবেল আর টিকিয়ে রেখেছে গির্জার বেদি’।
( Gardener, Helen Hamilton. Men, Women, and Gods. S.I., Forgotten Books, 2017.)

গার্ড নারের ঘৃণা শুধু খ্রিষ্টধর্মের প্রতি ছিল না। Men, Women And Gods বইতে সে লিখেছিল–

 '‘ধর্মগুলো যদিও অতিপ্রাকৃ ত উৎস থেকে আসার কথা বলে, কিন্তু আমি মনে করি এই দাবিগুলোকে যাচাই
করা উচিত মানবীয় বুদ্ধির আলোকে। আমাদের সর্বোচ্চ নীতিবোধ যদি ধর্মের কোনো বিধানকে মেনে নিতে
অস্বীকার করে তাহলে সেই বিধান বাদ দিতে হবে। কারণ, ধর্মের একমাত্র ভালো জিনিস হলো নৈতিকতা।
আর নৈতিকতার সাথে বিশ্বাসের কোনো সম্পর্ক নেই। নৈতিকতার সম্পর্ক দুনিয়াতে সঠিক কাজ করার সাথে,
আর বিশ্বাসের সম্পর্ক পরকালের অজ্ঞাত বিষয় নিয়ে। একটা হলো সময়ের চাহিদা আরেকটা চিরন্তনের স্বপ্ন।
নৈতিকতার ভিত্তি হলো সর্বজনীন বিবর্ত ন। বিশ্বাসের ভিত্তি হলো ‘ওয়াহি’। আর আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত
‘ওয়াহি’ এসেছে তার কোনোটাই নারীর পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না। মুসা কিংবা কনফু শিয়াস, মুহাম্মাদ কিংবা
পল, ইব্রাহিম কিংবা ব্রিঘাম ইয়াংএসে আমাদের সামনে দাবি করে তার ধর্মমত ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে।
ঈশ্বর এদের কোনো একজনের সাথে বা সবার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে এই ধর্মগুলো দিয়েছে কি না, তার
কোনো মূল্য আমাদের কাছে নেই। যদি তাদের ধর্মমত আমাদের নৈতিকতা, সুচিন্তা, উন্নত আদর্শ এবং বিশুদ্ধ
জীবনবোধের সাথে খাপ না খায় তাহলে আমাদের ওপর এসব ধর্মের কোনো কর্তৃ ত্ব নেই। তাদের মধ্যে কে
আছে এই পরীক্ষায় পাশ করার মতো? আজ পর্যন্ত যত ‘ওয়াহি’ এসেছে, তার কোনটা ঊনবিংশ শতাব্দীতে
এসে দাবি করতে পারে, “আমি তোমাদের সর্বোত্তম বিকাশের সমকক্ষ, আমি আজও তোমাদের সর্বোন্নত
চিন্তার পথ দেখাতে সক্ষম, আমার মধ্যে এমন কোন শিক্ষা নেই, যা তোমাদের ন্যায়বিচারের বোধের সাথে
সাংঘর্ষিক?”একটাও না’'(Gardener, Helen Hamilton. Men, Women, and Gods. S.I.,
Forgotten Books, 2017.)

এর পরের প্রতি প্রজন্মে নারীবাদের ধর্মবিদ্বেষ আরও বেড়েছে। নারীবাদের সেকেন্ড ওয়েভের শুরু ফরাসী দার্শনিক সিমন
দি ব্যুভয়ার হাত ধরে। ধর্মের প্রতি তার বিরোধিতা সিমন প্রকাশ করেছিল এভাবে–

 ‘পুরুষের বড় সুবিধা হলো পুরুষের লেখা নিয়মগুলোকেই ঈশ্বর বৈধতা দিয়েছে। আর পুরুষ যেহেতু নারীর
ওপর কর্তৃ ত্ব করে তাই সার্বভৌম সত্তাও যে ধর্মমতে পুরুষকেই কর্তৃ ত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে, এটা বিশেষ সৌভাগ্যই
বলতে হবে। ইহুদী, মোহাম্মাদান, খ্রিষ্টধর্মসহ অন্যান্য সব ধর্মে ঐশ্বরিক অধিকার বলে পুরুষই কর্তা। নিপীড়িত
নারীর বিদ্রোহের যেকোনো চেতনা দমন করার জন্য স্রষ্টার ভীতি বরাবরই পুরুষের পক্ষে আছে।’(Beauvoir,
Simone de, and H.M. Parshley. The Second Sex. South Yarra, Vic., Louis Braille
Productions, 1989.)

সেকেন্ড ওয়েভের আরেক বিখ্যাত নারীবাদী, গ্লোরিয়া স্টাইন্যাম ধর্মের ব্যাপারে বলেছিল–

 ‘(ধর্ম) অবিশ্বাস্য মাত্রার জোচ্চু রি। ব্যাপারটা চিন্তা করে দেখুন। মৃত্যুর পরের পুরস্কারের আশায় বর্ত মানে একটা
বিশ্বাসকে আঁকড়ে থাকা! গ্রাহক ধরে রাখার জন্য কর্পোরেশানগুলো নানা পুরস্কারের অফার দেয়, কিন্তু তারাও
মরণোত্তর পুরস্কার দেয়ার বুদ্ধি বের করতে পারেনি’। (Gloria Steinem. Freedom From Religion
Foundation.Accessed September 12, 2017.)

সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে স্টাইনেমকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘আজকের নারীবাদের সবচেয়ে বড় সংকট কী’? জবাবে
স্টেইনেম বলেছিল –

 ‘আজকের নারীবাদীরা ধর্মের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সোচ্চার না। আধ্যাত্মিক হওয়া এক জিনিস, ধর্ম আরেক জিনিস।
ধর্ম হলো আকাশের রাজনীতি। আমার মনে হয় নারীবাদীদের ধর্মের বিরুদ্ধে আরও কথা বলা দরকার। কারণ,
আমাদের নীরবতা ধর্মকে আরও শক্তিশালী করে’।(Calloway-Hanauer, Jamie. “Is Religion the
‘Biggest Problem’ Facing Feminism Today?” Sojourners, May 6, 2015.)

নারীবাদের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের এ ধর্মবিদ্বেষ আরও তীব্র হয় তৃ তীয় পর্যায়ে এসে।

 উইমেন, জেন্ডার এবং সেক্সুয়ালিটির প্রফেসর সুসান শ’র মতে, বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর (যেমন,
গির্জা, সিনাগগ, মসজিদ) অবস্থার আলোকে বলা যায়, ‘পুরুষতন্ত্রই পৃথিবীর কর্তৃ ত্বশালী ধর্ম।’ আর ‘ধর্মগুলো
লিঙ্গের (gender) যে ধারণা দেয় তাতে সমস্যা আছে। এই সমস্যা পুরো পৃথিবীর সমস্যা। তাই আমাদের
এমন এক সংস্কার দরকার (তা বিপ্লবও হতে পারে), যা পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতার বেদিগুলো ভেঙে বিশ্বজুড়ে
অন্তর্ভু ক্তি, সাম্য, ন্যায়বিচার, শান্তি এবং ভালোবাসার এক পবিত্র আশ্রম গড়ে তু লবে।’ (Shaw, Susan M.
“Is Patriarchy The Religion of the Planet?’. The Huffington Post, October 1, 2015)

র‍্যাডিকাল লেসবিয়ান নারীবাদী দার্শনিক ম্যারি ড্যালির মতে, ধর্ম প্রকৃ তিগতভাবেই নারীকে নিগৃহীত করে।ড্যালির
বক্তব্য অনুযায়ী–

 ‘ইংরেজি সিন (পাপ) শব্দটি এসেছে ইন্দো-ইউরোপীয় “এস/es” ধাতু মূল থেকে। এস/es অর্থ অস্তিত্বমান
হওয়া (to be)। সিন শব্দের এই উৎস আবিষ্কার করার পর আমি বুঝতে পারলাম, বর্ত মান পৃথিবীর ধর্ম
হলো পুরুষতন্ত্র। আর পুরুষতন্ত্রের জাঁতাকলে আটকা পড়া মানুষের জন্য অস্তিত্বমান হবার পূর্ণাঙ্গ অর্থ হলো
পাপ করা (to sin)’।( Daly, Mary. Sin Big. The New Yorker, June 19, 2017.)
নারীবাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো এ ধরনের কথাবার্তা দিয়ে ভর্তি । এগুলো সব একসাথে করতে গেলে কয়েক
ভলিউমেও হয়তো ফু রাবে না।
ড্যানিয়েল হাকিকাতজুর ''The Modernist Menace To Islam'' বইয়ের অনুবাদ ''সংশয়বাদী'' থেকে এই অংশে
অনেকগুলো রেফারেন্স নেয়া হয়েছে।
Family Destruction:-
ফেমিনিজম বহু আগে থেকেই পরিবার ব্যাবস্থার সরাসরি বিরোধী এবং পরিবারের ধ্বংসকে ফেমিনিজমের একটা লক্ষ্য
মনে করে। বিষয়টা মেইন্সট্রিম ফেমিনিস্ট যারা ফেমিনিজমের মুভমেন্টে লিড দিয়েছে তাদের লেখা থেকেই স্পষ্টঃ-

 American Women's Movement এর একজন মূল অ্যাক্টিভিস্ট Robin Morgan লিখেছিল,"We


can't destroy the inequities between men and women until we destroy marriage.''
(From Sisterhood Is Powerful (ed), 1970, p. 537)
 বিখ্যাত আমেরিকান ফেমিনিস্ট Linda Gordon লিখেছিল, "The nuclear family must be
destroyed, and people must find better ways of living together.... Whatever its
ultimate meaning, the break-up of families now is an objectively revolutionary
process.''("Functions of the Family," WOMEN: A Journal of Liberation, Fall, 1969)
 Phyllis Chesler সেকেন্ড ওয়েভ ফেমিনিজমের একজন লিডিং এক্টিভিস্ট লিখেছিল, "most mother-
women give up whatever ghost of a unique and human self they may have when
they 'marry' and raise children."(Women and Madness, p. 294)
 Barbara Findlen লিখেছিল, "Feminists have long criticized marriage as a place of
oppression, danger, and drudgery for women.''(Ms magazine, May-June, 1995)
 Helen Sullinger মেনিফেস্টো রিলিজ করেছিল, "Male society has sold us the idea of
marriage.... Now we know it is the institution that has failed us and we must work to
destroy it...."
 Suzanne Venker তার বই The Flipside of Feminism এ ব্যাখ্যা করে, ''The desire to
eliminate the full-time homemaker has been feminists’ goal all along. The need for a
second income was never the goal.''
 বর্ত মানের ফেমিনিস্ট Sophie Lewis এই ব্যাপারে বিস্তারিত বই লিখে, Full Surrogacy Now:
Feminism Against Family, Abolish the Family: A Manifesto for Care and Liberation
নামে যেখানে ব্যাখ্যা করে ফেমিনিজম কেন পরিবার বিরোধী ধারনা এবং কেন ফেমিনিস্টদের পরিবার ধ্বংসের
জন্য কাজ করা উচিত।

এইরকম অসংখ্যা অ্যান্টি ফ্যামিলি লেখা পাওয়া যাবে মেইন্সট্রিম ফেমিনিস্টদের লেখায়।
পরিবার ব্যাবস্থার ধ্বংস চাওয়ার কারণটা সরাসরি ফেমিনিজমের কনসেপ্টের সাথেই জড়িত। পরিবার ব্যাবস্থা টিকেই
থাকে একজনের জন্য অন্যজনের স্যাক্রিফাইস করার মাধ্যমে, পরিবারে দায়বদ্ধতা থাকে সবার, যা মানুষের
স্বাধীনতাকে বাই ডিফল্ট কমিয়ে আনে। কিন্তু ফেমিনিজম নারীর অ্যাবসোলিউট স্বাধীনতাকে সবসময় প্রাইয়োরিটি দেয়।
এরপরে ফেমিনিজমের ''পুরুষতন্ত্র তত্ত্ব(Patriarchal Thesis)'' এর বিশ্বাসের জন্য, আদি সমাজ থেকে পরিবার
ব্যাবস্থার তৈরিকে দেখা হয় নারীদের নির্যাতন করার জন্য পুরুষতন্ত্রের বানানো কাঠামো হিসেবে। বেশিরভাগ সমাজে
সাধারণত পিতাকেন্দ্রিক পরিবার ব্যাবস্থা থাকে, তাই বাই ডিফল্ট ফেমিনিজম এর বিরোধিতা করে।কিন্তু বাস্তবে এই
পিতৃ তন্ত্র মোটেও ফেমিনিজম যেভাবে নারীর অত্যাচারের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ''পুরুষতন্ত্র''-এর ব্যাখ্যা দেয় সেরকম না। প্রশ্ন
হলো, হাজার হাজার বছর ধরে স্রেফ নারীদের অত্যাচার করার জন্য সব কালচারে ''পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো'' তৈরি কেন
করবে পুরুষরা যেখানে তার সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষগুলো, তার মা,বোন,স্ত্রী নির্যাতিত হতে থাকবে, বিলিয়ন
বিলিয়ন পুরুষকে স্রেফ একটা তত্ত্বের ভিত্তিতে এত স্যাডিস্ট ভাবা পয়েন্টলেস।
ট্রাডিশনাল পরিবার সমাজের বেসিক স্ট্রাকচার তৈরি করে এবং বহু রিসার্চ প্রমাণ করে স্থিতিশীল পরিবার মানুষের সুখ
অর্জ নের একটা মূল সোর্স। বিখ্যাত সাইকোলজিস্ট Jonathan Haidt তার The Happiness Hypothesis:
Finding Modern Truth in Ancient Wisdom বইয়ে ব্যাখ্যা করেন, পরিবার ও পরিবারের মানুষের ভালোবাসা
মানুষের সুখ অর্জ নের প্রাইমারি বিষয়। Authentic Happiness বইয়ে পেনসিলভ্যানিয়া ইউনিভার্সিটির
মনোবিজ্ঞানের প্রোফেসর Martin E. P. Seligman, Ph.D বলেন: বহু রিসার্চ দেখিয়েছে যে, একটা ভালো চাকরি
পাবার চেয়ে বিয়ে করা-টা বেশি সুখ নিশ্চিত করে। এই ব্যাপারে অজস্র প্রমাণ আছে ট্র্যাডিশনাল পরিবার মানুষের
বেসিক সুখের জন্য অপরিহার্য। তাই ফেমিনিজম যখন পরিবারের ধ্বংস চায় তখন ফেমিনিজম মানুষের মৌলিক
সুখেরও ধ্বংস নিয়ে আসে।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আছে সেগুলো পরের অংশে লিখেছি, লিঙ্ক কমেন্টে দেয়া আছে। পরের অংশে বাস্তবিক
ক্ষেত্রে আরও বড় সমস্যাগুলো নিয়ে লেখা হয়েছে, সময় থাকলে পড়ে দেখবেন।
Amiruzzaman Muhammad Shamsul Arefin ভাইয়ের প্রতি বিশেষ কৃ তজ্ঞতা থাকবে, তার লেখাগুলো
থেকে অনেক সাহায্য পেয়েছি, এই বিষয়ে।
—-----------------------------------------------------------------------------------------------------
 
Another critique of Feminism
ফেমিনিজমের প্রবলেমগুলো ব্যাখ্যা করার সময় আগের অংশে যে ইম্পরটেন্ট পয়েন্টগুলো ব্যাখ্যা করা হয় নাই
সেগুলো এখানে ব্যাখ্যা করছি:-
Feminism's Misogyny Problem:-
ফেমিনিজমের বিরুদ্ধে মূল সমস্যা কিন্তু কখনোই পুরুষবিদ্বেষ না বরং নারীবিদ্বেষ। ফেমিনিজম খুবই নারীবিদ্বেষী একটি
ধারনা। যেসকল মেয়েরা ফেমিনিজমকে সমর্থন করে না বা ফেমিনিজম যেরকম ''নারী''-দের আদর্শ মনে করে সেরকম
হতে চায় না তাদের বিরুদ্ধে চরম বিদ্বেষ প্রকাশ করে। ইন্টার্নালাইজড প্যাট্রিয়ার্কি বলতে একটা কনসেপ্ট আছে
ফেমিনিজমে, ইন্টার্নালাইজড প্যাট্রিয়ার্কি বলতে বোঝায় যেসকল নারীরা নিজে নারী হয়েও পুরুষতন্ত্রের পক্ষে থাকে
এবং পুরুষতন্ত্রের ব্রেইনওয়াশিং- এর কারণে নিজের ক্ষতিটা অনুধাবনই করতে পারে না, ফলে সামগ্রিকভাবে নারীর
জন্য ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত নেয়। ফেমিনিজমে নারী অধিকারের সংজ্ঞা ছিল, কারোর ''ক্ষতি'' না করে নিজের যা ''ইচ্ছা''
করা। এখানে লুপ হোলটা হলো, কোনটা ক্ষতি-কোনটা ক্ষতি না সেটাও নির্ধারণ করা হবে পশ্চিমা ফেমিনিজমের
স্ট্যান্ডার্ড দিয়েই। কোনটা নারীর ''ইচ্ছা'' আর কোনটা ব্রেইনওয়াশিং এইটা ঠিক করে দিবে ফেমিনিস্টরাই কারণ শুধু
তারাই ব্রেইনওয়াশিং থেকে মুক্ত নারী। তাই কোনো ফেমিনিজম নারীর চয়েসের কথা বললেও কোনো নারী যখন নিজ
ইচ্ছায় ফেমিনিজমের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো চয়েস নেয় তখন ফেমিনিজম সেটা বিরোধিতা করে। ফেমিনিজম
ততটু কু ই নারী স্বাধীনতা দিবে যতটু কু ফেমিনিজমের সুবিধা হয়। এটা কোনো হিপোক্রেসি না বরং ফেমিনিজমেরই কোর
কনসেপ্ট।
ফেমিনিজমের নারীবিদ্বেষের বহু উদাহরণ আছে আমাদের আশেপাশেই-
ফেমিনিজম সাধারণ গৃহিণী নারীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করে, তাদের স্রেফ সমাজের আগাছা এবং পুরুষের দাসী মনে
করে।

 সেকেন্ড ওয়েভের প্রবর্ত ক বিখ্যাত ফেমিনিস্ট Simone de Beauvoir গৃহিণীদের নিয়ে লিখেছিল, “A
parasite sucking out the living strength of another organism…the [housewife’s] labor
does not even tend toward the creation of anything durable…. Woman’s work within
the home [is] not directly useful to society, produces nothing.”(The Second
Sex,Simone de Beauvoir)
 সেকেন্ড ওয়েভের আরেকজন প্রবর্ত ক Betty Friedan লিখেছিল, “women who ‘adjust’ as
housewives, who grow up wanting to be ‘just a housewife,’ are in as much danger as
the millions who walked to their own death in the concentration camps… they are
suffering a slow death of mind and spirit.”
 গৃহিণীদের মস্তিষ্কহীন হিসেবে আখ্যা দিয়ে লিখে, “Housewives are mindless and thing-hungry…
Housework is peculiarly suited to the capabilities of feeble-minded girls; it can hardly
use the abilities of a woman of average or normal human intelligence.”(The Feminine
Mystique, Betty Friedan)
 Simone de Beauvoir তার The Second Sex বইতে লিখেছিল, '' কোনো নারীকে গৃহিণী হওয়ার
চয়েসটাই দেয়া উচিত না কারণ যদি চয়েসটা দেয়া হয় তাহলে অনেক নারীরা এই ভু ল চয়েসটা গ্রহণ করে
ফেলবে।''(The Second Sex,Simone de Beauvoir)

ফেমিনিজম অনুসারে নারীর পরিবার গঠন করার বা গৃহিণী হওয়ার ''চয়েস'' আসলে ''চয়েস'' না স্রেফ পুরুষতন্ত্রের
বেইনওয়াশিং এর ফলাফল। তাই নারীদের জোর করে শোষণমূলক কর্পোরেট সিস্টেমে কাজ করানো, পরিবার গঠনে
বাধা দেয়া এগুলো নারীর স্বাধীনতার লঙ্ঘন না বরং এভাবেই নারীর প্রকৃ ত স্বাধীনতা আসে যেটা নারী নিজেই বুঝতে
পারে না।
ফেমিনিস্টরা অনেক ক্ষেত্রে মুসলিম নারীদের হিজাব ও বোরকা ব্যান করার পক্ষে অ্যাক্টিভিজম করে। স্রেফ বোরকা
পরার জন্য নারীকে স্কু ল থেকে বের করে দেয়া, নারীকে কর্মক্ষেত্র থেকে বহিষ্কার করা, অ্যারেস্ট করা, জেলে কারাদণ্ড
ভোগ করানো এর সবই পশ্চিমা রাস্ট্রগুলোয় অনেক ফেমিনিস্টদের সমর্থনে হয়ে এসেছে।
জার্মানির সবচেয়ে আইকনিক ফেমিনিস্ট Alice Schwarzer হিজাব ব্যান করার পক্ষে প্রচারণা করেছে।(1)
সুইজারল্যান্ডে বোরকা ব্যান করার পক্ষে সমর্থন ছিল সুইজ ফেমিনিস্টদের।(2)
ফ্রান্সে বোরকা এবং হিজাব ব্যানের পক্ষে বহু ফেমিনিস্ট সমর্থন দিয়েছে।(3)
বেলজিয়ামে লিবারাল MP Daniel Bacquelaine বোরকা ব্যানের প্রস্তাব দিয়েছিল, যা পরে গৃহীত হয়।(4)
ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রগুলোর কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলেই কর্মক্ষেত্রে হিজাব ব্যান করতে পারে, লিবারাল ইউরোপিয়ান
ইউনিয়নের টপ কোর্ট এই রায় দিয়েছে।(5)
লিবারালিজম প্রচার করা ইউরোপে ফেমিনিস্টরা যখন বোরকা- হিজাব ব্যান হয় তখন সেটা হিপোক্রেসি না আসলে।
ফেমিনিজম সত্তাগতভাবেই ইসলামবিদ্বেষী। ইসলাম ফেমিনিজমের বিরোধী তাই ইসলামকে ফেমিনিজম সত্য বলে মানে
না, সুতরাং ইসলাম ফেমিনিজমের লেন্সে স্রেফ কিছু পুরুষের চাপিয়ে দেয়া নিয়ম ছাড়া আর কিছুই না। যেসব নারীরা
হিজাব পরছে তারা ইসলামের ''পুরুষতান্ত্রিক'' নিয়মে ব্রেইনওয়াশড হয়ে পরছে। তাই হিজাব ব্যান করার মাধ্যমে
ফেমিনিজম অনুসারে নারীদের প্রকৃ ত স্বাধীনতা দেয়া হচ্ছে, পুরুষতন্ত্র থেকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে। আর যেসব নারীরা
মুসলিম, এরপরও হিজাব পরছে, তারা ফেমিনিজম অনুসারে পুরুষতন্ত্রেরই অংশ সুতরাং তাদেরও নির্মূল করে
ফেলতে হবে। এইজন্য হিজাব পরার জন্য মুসলিম নারীদের জেলে দেয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়ার
সমর্থন করে ফেমিনিস্টরা। বাংলাদেশের মেইন্সট্রিম পপুলার ফেমিনিস্টদেরও দেখবেন প্রকাশ্যে হিজাব ব্যান জাস্টিফাই
করছে যেমন- Womenschapter এর সুপ্রিতী ধর, Feminist Factor এর মুনমুন শারমিন শামস, নারীবাদী শাওন
মাহমুদসহ বহু ফেমিনিস্টরা বোরকা-হিজাব পরার অধিকারের বিরোধী, Womenschapter এর মতো ফেমিনিস্ট ব্লগে
গেলেই লেখা পাবেন, হিজাবকে সাংস্কৃ তিক আগ্রাসন বলা হচ্ছে। বর্ত মানের ''মুসলিম ফেমিনিস্ট'' মুভমেন্ট হিজাব
পরে নারীবাদ প্রচার করছে কিন্তু পরবর্তী স্টেজে এরাই হিজাব ব্যানের পক্ষে দাঁড়ায়।
নারীদের কাছে আগে প্রচার করে পরিবর্ত ন করার চেষ্টা করা হবে কিন্তু এরপরও যারা ফেমিনিজম গ্রহণ করতে চায় না,
নিজের ধর্মকে মেনে চলতে চায়, নিজের সংস্কৃ তিকে রক্ষা করতে চায়, নিজের পরিবার তৈরি করতে চায়, ফেমিনিজমের
বিরুদ্ধে প্রচারণা করে, এরা সবাই ফেমিনিজম অনুসারে ''পুরুষতন্ত্র''-এর সমর্থক, পুরুষতন্ত্রের সাথে সাথে এদেরও নির্মূল
করতে হবে, এই নারীরা ফেমিনিজমে না-মানুষ। এইজন্যই মুসলিম নারীদের প্রতি হওয়া বিশ্বজুড়ে আগ্রাসনের ব্যাপারে
মূলধারার ফেমিনিস্টরা চু প থাকে ক্ষেত্রবিশেষে সমর্থনও দেয়। আফিয়া সিদ্দিকী, কাশ্মীরের ধর্ষণের শিকার লক্ষাধিক
মুসলিম নারীরা, ইয়েমেনে অনাহারে মৃত্যুবরণ করা মুসলিম নারীরা, ভারতে গরু খাওয়ার জন্য ধর্ষণের শিকার মুসলিম
নারী, ফিলিস্তিনের গৃহহীন মুসলিম নারী, সালেহ অঞ্চলের অনাহারে মারা যাওয়া অসংখ্যা আফ্রিকান নারী, ধর্ষণের জন্য
আত্মহত্যা করতে চাওয়া উইঘুর নারীরা কারোর জন্যই ফেমিনিজম তেমন কথা বলে নাই।
এমনকি চাইনিজ সরকার উইঘুর গণহত্যাকে ফেমিনিজমের বিজয় হিসেবে বৈধতা দেয়ার চেস্টা করেছে। বলা হয়েছে,
''Study shows that in the process of eradicating extremism, the minds of Uygur women in
Xinjiang were emancipated and gender equality and reproductive health were promoted,
making them no longer baby-making machines. They are more confident and
independent.''(Chinese Embassy in US)
তাদের দাবি অনুসারে, নারীদের বাচ্চা উৎপাদনের মেশিন হওয়া থেকে রোধ করতে চাইনিজ সরকার জোর করে
মুসলিম নারীদের স্টেরালাইজ করছে, জোরপূর্বক গর্ভ পাত করিয়ে দিচ্ছে। এভাবে ''পুরুষতান্ত্রিক ব্রেইনওয়াশিং'' ভেঙে
নারীরা আরও স্বাধীন -স্বনির্ভ র হচ্ছে। একেবারে ফেমিনিস্ট সিমন দে বোভোয়ার কথার মতোই কাজ করা হয়েছে,
গৃহিণী হয়ে বাচ্চা লালন-পালন করার বা বাচ্চা জন্ম দেয়ার অপশনটাই নারীদের দেয়া হচ্ছে নারীদের জোর করে বন্ধ্যা
বানিয়ে দেয়া হচ্ছে। ইসলামে মুসলিম নারীদের নাস্তিক পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ, যেসব উইঘুর মুসলিম নারীরা
নাস্তিক চাইনিজ পুরুষদের সাথে সম্পর্ক করছে না তাদের জোর করে যৌনসম্পর্ক করানো হচ্ছে। যেভাবে ''পুরুষতান্ত্রিক
ধর্মের নিয়ম''-এর জন্য হিজাব না খুললে জোর করে হিজাব খোলা হয়, সেভাবেই ''পুরুষতান্ত্রিক ধর্মের নিয়ম''-এর
জন্য যৌন সম্পর্ক না রাখতে চাইলে ধর্ষণ করা হচ্ছে। আমি এটা বলছিনা সব ফেমিনিস্টরা উইঘুর গণহত্যা সমর্থন করে
শুধু এটা বোঝাচ্ছি যে উইঘুর নারীদের সাথে যা হচ্ছে সেটা ফেমিনিজমের ফ্রেমওয়ার্কে র ভেতরেই হচ্ছে, ফেমিনিজমের
মাধ্যমে এটা কন্ডেম করার উপায় নেই।
ফেমিনিজম সবচেয়ে বেশি যাদের ক্ষতি করে তারা হচ্ছে নারীরা, ফেমিনিজম বিরোধী নারীদের না-মানুষের পর্যায়ে নিয়ে
আসে, ক্যাপিটালিস্ট সিস্টেমে নারীর শোষন করায়, পরিবার থেকে আসা নারীর জীবনের মৌলিক সুখ কেড়ে নেয়,
নারীদের ডিপ্রেশনের হার বাড়ায়, সুইসাইডের হার বাড়ায়, অনেক সময় কলোনাইজেশন প্রজেক্টে নারীদের উপর
ম্যাসাকার চালায়।
Feminism's Justification for Colonialism:-
ফেমিনিজম কিভাবে আগ্রাসী ওয়েস্টার্ন কলোনিয়ালিজমের বৈধতা দেয় সেটা নিয়ে আলাদাভাবে এখানে লিখেছি:-
https://www.kebabcast.com/afghan-war-feminism-colonialism/
Practical Harms of Feminism:-
ফেমিনিস্ট মুভমেন্টের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো সহজেই বোঝা যায় দক্ষিণ কোরিয়ার কনটেক্স খেয়াল করলে। ২০২২-এর
ইলেকশনে দক্ষিণ কোরিয়ার নতু ন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয় এন্টি ফেমিনিস্ট ইউন-সক-ইয়ল। তার নির্বাচনী
ক্যাম্পেইনের মূল বিষয়ই ছিল ফেমিনিজমের বিরোধিতা। কোরিয়ার রিসেন্ট ইলেকশনের একটা সেন্ট্রাল পয়েন্ট ছিল
ফেমিনিজম। বিপুল জনসমর্থনে ইউন-সক-ইয়ল প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়। এখন বোঝা দরকার ফেমিনিজমের
প্রতি একটা গোটা দেশের জনসাধারণ এত ঘৃণা কেন তৈরি হলো।
দক্ষিণ কোরিয়ার ফার্টি লিটি রেট বিপদজনক হারে কম, পৃথিবীর সবচেয়ে কম সন্তান প্রসবের হার দক্ষিণ কোরিয়ায়। [1]
প্রচু র কোরিয়ান নারীরা এখন আর বিয়ে করতে বা সন্তান নিতে চায় না। বিবিসির ইন্টারভিউয়ে কোরিয়ান নারীরা বলে,
''আমি সন্তান নিতে চাই না কারণ সন্তান নেয়ার কস্ট আমি ভোগ করতে চাই না। সন্তান আমার ক্যারিয়ারের জন্য
মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে।'' তারা আরও বলে, '' পরিবার গঠনের বদলে আমি স্বাধীন, স্বনির্ভ র থাকতে চাই।''[2]
বিয়ে দাসত্ব,সন্তান বোঝা এইধরনের মেন্টালিটি তৈরিই করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার ফেমিনিস্টরা। একটু আগেই যা বললাম
তার প্রাক্টিকাল এফেক্ট। ফেমিনিস্টরা সেখানে সরাসরি ''NoMarriage Movement'' করেছে যেখানে নারীদের বিয়ে
এবং সন্তান গ্রহণের বিরোধী মেন্টালিটি তৈরি করা হয়।[3]
শুধু তা-ই না, সন্তান হয়ে গেলে সেটাকে যাতে হত্যা করা যায় সেজন্য গর্ভ পাত বৈধকরণের পক্ষে কাজ করেছে।[4]
মাত্রাতিরিক্ত কম ফার্টি লিটি রেট একটা জাতির জন্য ভয়াবহ মাত্রায় ক্ষতিকর এটা সব সমাজই বুঝতে পারে। প্রথমত,
এটি সেই জাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি। এরপর, এরফলে মিলিটারিতে সার্ভি স দেয়ার মতো মানুষও কমে যায়। বৃদ্ধের
সংখ্যা বাড়ে কিন্তু বৃদ্ধদের দেখার মতো যথেষ্ট যুবকরা আসে না। এছাড়াও জনসংখ্যার মাত্রাতিরিক্ত ঘাটতি দেশের পুরো
ইকোনমির জন্য ক্ষতিকর।দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষের পরিবার থাকছে না ফলে, মানুষের একাকীত্বের পরিমাণ বাড়ছে এবং
প্রতিবছর দেখের ডিপ্রেশন রেট বাড়ছে।এখানে সুইসাইড রেটও মারাত্মক বেশি।এই পুরো এক্সিস্টেনশিয়াল থ্রেট তৈরি
করে ফেমিনিজম।[5]
দক্ষিণ কোরিয়ার মূলধারার ফেমিনিস্ট মুভমেন্ট সময়ের সাথে সম্পূর্ণ পুরুষবিদ্বেষের রূপ ধারণ করে। এইটা সঠিক যে,
ফেমিনিজম মানেই পুরুষ বিদ্বেষ না, প্রত্যেক ফেমিনিস্টই পুরুষবিদ্বেষী না, এমা ওয়াটসনের মতো লিবারাল ফেমিনিস্টরা
পুরুষবিদ্বেষের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ফেমিনিজম দিনশেষে পুরুষবিদ্বেষ তৈরির মূল প্রভাবক হয়ে
দাঁড়ায়। ফেমিনিজম পুরুষতন্ত্রের ধারনার ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে পুরুষকে ইন্ডাইরেক্টলি শত্রুপক্ষ ভাবতে শেখায়, এই
মেসেজটা দেয় এরাই সেই জাত যারা হাজার বছর ধরে সবক্ষেত্রে নির্যাতন করে আসছে। পুরুষদের নেচারই নারীর প্রতি
অত্যাচারী হিসেবে দেখানো হয়, এভাবে প্রত্যেক পুরুষকে পটেনশিয়াল থ্রেট ভাবতে শুরু করে নারীরা।
মেইন্সট্রিম ফেমিনিস্ট মুভমেন্টের লিডিং এক্টিভিস্ট থেকেই পুরুষবিদ্বেষী বহু স্টেইটমেন্ট পাওয়া যায়-
Andrea Dworkin সেকেন্ড ওয়েভের লিডিং ফেমিনিস্ট লিখেছিল,
Under patriarchy, every woman's son is her potential betrayer and also the inevitable rapist
or exploiter of another woman,"
(Liberty, p.58)
"All men benefit from rape, because all men benefit from the fact that women are not free in
this society; that women cower; that women are afraid; that women cannot assert the rights
that we have, limited as those rights are, because of the ubiquitous presence of
rape."(Letters from a War Zone, p. 142)
Gloria Steinem লিখেছিল,
''The most dangerous situation for a woman is not an unknown man in the street, or even
the enemy in wartime, but a husband or lover in the isolation of their home."(Gloria Steinem
in Revolution from Within: A Book of Self-Esteem, pp. 259-61)
বর্ত মান ফেমিনিস্টদের ''Men are trash'', ''All men are potential rapists'', ''Killallmen'' ইত্যাদি বলা বেশ
কমন ট্রেন্ড যেটা অহরহ দেখা যায়। Killallmen হ্যাসট্যাগ টু ইটারে ট্রেন্ডিং হয়। এবং অনেক ফেমিনিস্টদের এইধরনের
পুরুষবিদ্বেষী স্টেটমেন্ট জাস্টিফাই করতেও দেখা যায়।[6]
এভাবে পুরুষবিদ্বেষ সরাসরি ফেমিনিজম না হলেও, ইন্ডাইরেক্টলি ফেমিনিজমেরই বাই প্রোডাক্ট। দক্ষিণ কোরিয়াও
এভাবে পুরুষবিদ্বেষী হয়ে ওঠে ফেমিনিজম। WOMAD, Megalia ইত্যাদি পপুলার ফেমিনিস্ট প্ল্যাটফর্ম থেকে
রেগুলারলি পুরুষদের প্রতি বিদ্বেষমূলক স্টেইটমেন্ট প্রচার করে। তাদের ওয়েবসাইটে কিছু নারী গর্বের সাথে পোস্ট করে
যে তারা পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে এবং কফির সাথে বিষ মিশিয়ে পুরুষকে হত্যা
করেছে। পুরুষ হত্যার মাধ্যমে পুরুষতন্ত্রের পটেনশিয়াল একজন রক্ষক মারা যাচ্ছে।কেউ কেউ পুরুষ সন্তানের গর্ভ পাত
করার মাধ্যমে ''পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ'' করছে[7]
WOMAD এর আরেকজন মেম্বার অস্ট্রেলিয়ান এক ছেলেকে ধর্ষণ করে গর্বের সাথে ওয়েবসাইটে পোস্ট করে।[8]
এছাড়াও একজন গোপন ক্যামেরা ব্যাবহার করে পুরুষ মডেলের নগ্ন ছবি তু লে ওয়েবসাইটে দেয়ার কাজও করে।[9]
Megalian এর ওয়েবসাইটে সরাসরি ছেলেশিশু ধর্ষণের ইচ্ছা প্রকাশ করে এক নারী শিক্ষক পোস্ট দেয়। ধরা পরার পর
সে বলে, সে শুধু পুরুষরা যে মেয়ে শিশু ধর্ষণের ইচ্ছা প্রকাশ করে সেটায় ফোকাস আনার জন্য, সেটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
হিসেবে এটা বলেছে।[10]
এইগুলো স্রেফ কিছু উদাহরণ, এইরকম বহু ভয়াবহ নিকৃ ষ্ট ক্রাইম করে এরা ''পুরুষতন্ত্রের প্রতিবাদ'' করতে।
দক্ষিণ কোরিয়ার লিগাল সিস্টেমে নারীকে বাই ডিফল্ট ইনোসেন্ট ধরা হয় যা পুরুষের ক্ষেত্রে হয় না, সেখানে ফেমিনিস্টরা
সব ক্ষেত্রে নারীপক্ষের হয়ে কাজ করে এবং নারীর অভিযোগ কোনো প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস করার পক্ষে কাজ করে।
নারীদের উপর ইতিহাসে অনেক নির্যাতন হয়েছে তাই নারীকে প্রমাণের ভারও দেয়া যাবে না। যেমন- কোরিয়ার একজন
ব্যাবসায়ীকে কোনো প্রমাণ ছাড়াই স্রেফ একজন নারীর আনা যৌন হয়রানীর অভিযোগের ভিত্তিতে জেলে দেয়া হয়,
ফেমিনিস্টরা এই রায়কে সানন্দে সমর্থন করে।[11]
আরও খারাপ পরিস্থিতির উদাহরণ আছে, একজন সাধারণ ট্যাক্সি ড্রাইভারের গাড়ির উপরে উঠে এক মহিলা তার
গাড়ি ভাঙে। দরিদ্র ট্যাক্সি ড্রাইভার কিছু করতেও পারে না, স্রেফ দেখে, কারণ তাকে থ্রেট দেয়া হয়, সে যদি মহিলাকে
ট্যাক্সির উপর থেকে জোর করে নামাতে যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা হবে কারণ সে নারীর
কনসেন্টের বিরুদ্ধে নারীকে স্পর্শ করেছে।
এইরকম বহু মিথ্যা যৌন হয়রানির অভিযোগে অনেকের জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এইজন্য অন্তত ২.২ লক্ষ কোরিয়ান
পিটিশিন সাইন করেছিল এবং বর্ত মান প্রেসিডেন্ট ইউন-সক-ইয়লের ইলেকশন ক্যাম্পেইনের অংশ ছিল মিথ্যা ধর্ষণের
অভিযোগ আনলে শাস্তি বৃদ্ধি করার।[12]
মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ এনে শাস্তি দেওয়ার প্রথার দায়ও বর্ত মান ফেমিনিস্ট মুভমেন্টের উপরেই পরে, ওয়েস্টের বহু
ফেমিনিস্ট ''Innocent untill proven guilty'' এর ধারনাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে, Beliveallwomen
মুভমেন্টই করা হয় যাতে কোনো প্রমাণ ছাড়াই নারীর অভিযোগে বিশ্বাস করা হয় এই দাবিতে।[13]
দক্ষিণ কোরিয়ার পুরুষদের জন্য জব মার্কে ট খুবি কম্পিটিটিভ,সেখানে পুরুষরা চাকরি না পাওয়ার জন্য অনেক আগে
থেকেই ফেমিনিজমকে দোষ দিচ্ছে। ফেমিনিস্টরা অনেক সময় নারীদের জন্য আলাদা কোটা রাখার দাবি তোলে এবং
নানা বৈধতা হাজির করে যেমন- এর ফলে আসলে অসমান সামাজিক অবস্থায় সমান সুযোগ পাবে নারীরা, নারীদের
রিপ্রেজেনটেশন বাড়বে ইত্যাদি। দক্ষিণ কোরিয়ার জব মার্কে ট অলরেডি অনেকবেশি কম্পিটিটিভ ছিল, অবস্থা আরও
খারাপ হয় যখন সরকারি ও প্রাইভেট সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহন
আরও বৃদ্ধি করার জন্য Ministry of Gender Equality থেকে প্রজেক্ট নেয়া হয়। নারী জন্য বিভিন্নক্ষেত্রে আলাদা
কোটা থাকে ফলে যোগ্যতা থাকার পরও পুরুষের চাকরির সম্ভাবনা কমে যায়। নারী শিক্ষা প্রোমোট করতে নারীদের
জন্য আলাদা ১২ টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখান থেকে আইন বিভাগের কোর্স করে আইনের সেক্টরে চাকরি পাওয়া
পুরুষের চেয়ে সহজ। আরও বড় সমস্যা হচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় পুরুষদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রায় দুই বছর
মিলিটারিতে সার্ভি স দিতে হয়। এর জন্য প্রথমত, জীবনের দুই বছর চলে যায় এবং বের হয়েই নারীদের সাথে চাকরির
কম্পিটিশিন করতে হয় যারা দুই বছর এক্সট্রা সময় পেয়েছে চাকরি ক্ষেত্রে ঢোকার জন্য। নারীদের আরও বেশি পরিমানে
কর্পোরেট জব সেক্টরে আনা, নারীদের জন্য আলাদা কোটার পরিমাণ বাড়ানো, নারীদের বাধ্যতামূলক মিলিটারি সার্ভি স
দেয়া থেকে অব্যাহতি দেয়া সবকিছুই কোরিয়ার ফেমিনিস্টদের সমর্থনে হয়েছিল। এর জন্য সাধারণ কোরিয়ান পুরুষদের
একটা ভালো চাকরি খুজতে অনেকসময় হিমশিম খেতে হয় , যার কারণে ফেমিনিজমের প্রতি আরও ঘৃণা বাড়ে।[14]
দক্ষিণ কোরিয়ায় মোটাদাগে ফেমিনিজম যা যা দিয়েছে তা হলো- কোরিয়ান পুরুষদের বেকারত্ব, মিথ্যা যৌন হয়রানির
অভিযোগে জেলে দেয়া, পরিবার ব্যাবস্থা ধ্বংস করা, গর্ভ পাত করে শিশুহত্যার সুযোগ দেয়া,সন্তান প্রসবের হার
অতিরিক্ত কমিয়ে জাতির এক্সিস্টেনশিয়াল ক্রাইসিস তৈরি করা, মানুষের একাকীত্বের হার, ডিপ্রেশনের হার,
আত্মহত্যার হার বাড়ানো এবং ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষদের হত্যা ও ধর্ষণ করা। কোনো সন্দেহ নেই এইরকম অবস্থায় একটা
দেশের জনগণ ফেমিনিজমের প্রতি প্রবল বিদ্বেষই রাখবে, এইটাই স্বাভাবিক। উগ্র নারীবাদের ফলে একটা সমাজে
কিভাবে চরম ক্ষতিগুলো আসতে পারে সেটা দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থা থেকেই সহজে বোঝা যায়।
Women's rights without Feminism:
ফেমিনিজমের প্রচারণায় সবচেয়ে বড় মিথ্যা হলো ফেমিনিজম এবং নারী অধিকার একই জিনিস। কোনো নারী
ফেমিনিজমের বিরোধিতা করলেই তাদের বলা হয় ''ফেমিনিজম না থাকলে তু মি পড়ালেখা করতে পারতা না,
ফেমিনিজম না থাকলে তু মি ঘর থেকেই বের হতে পারতা না।'' সমস্যা হলো, এরা সবসময় পশ্চিমের ইতিহাসকে
নিজের ইতিহাস মনে করে ভু ল করে। ফেমিনিজম ছাড়াই নারী অধিকার অর্জ ন সম্ভব এবং সেটা হয়েছেও।
৮৫০-১১৫০ হিজরি
তখন পৃথিবীতে ফেমিনিজমের কোনো অস্তিত্ব নেই । বরং ইউরোপ ডাইনী-নিধনের (Witch Hunt) নামে তিনশত বছর
ধরে ৪ থেকে সাড়ে ৬ লাখ নারীকে হত্যা করেছে। কিন্তু সেই সময় ইসলামী খিলাফতের শাসনব্যাবস্থায়-
আয়িশা বিনতে জারুল্লাহ শাইবানি (মৃত্যু ৮৭৩ হি.) বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে ১০৫ জন শিক্ষকের কাছে সনদ নিচ্ছেন।
আসিয়া বিনতে মুহাম্মাদ ইরবিলি ২০০ এর অধিক উস্তাদের থেকে সনদ নিয়েছেন।
উম্মুল হায়া উমামাহ (মৃত্যু ৯৩৯ হি.) আরবি ব্যাকরণের বইগুলো মুখস্ত করছেন।
বাদশাহ আওরঙ্গজেবের কন্যা যাইবুনিইসা (মৃত্যু ১১১৩ হি.) কু রআন-হাদীস-ফিকহ-ক্যালিগ্রাফি শিখছেন।
উম্মে হানি বিনতে নুরুদ্দীন (মৃত্যু ৮৭১ হি.) তখন ৭ জন উস্তাদের কাছে শিখছেন ৫০ এর অধিক বই।
চার্চ যখন পান থেকে চু ন খসলে নারীদের পুড়িয়ে মারছে, নিত্যনতু ন ডিভাইস বানিয়ে টর্চার করছে, তখন-
আয়িশা বিনতে আল-যাইন (মৃত্যু ৮৮০ হি.) এবং সারা বিনতে উমার হামাবী (মৃত্যু ৮৫৫ হি.) বিনা পারিশ্রমিকে
ছাত্র-ছাত্রীদের সেশান নিয়ে চলেছেন।
শাইখা আসমা বিনতে কামাল (মৃত্যু ৯০৪ হি.) বিশেষভাবে মেয়েদের ক্লাস নিচ্ছেন।
হাদীসবিদ যাইনুশ শরীফ (মৃত্যু ১০৮৩ হি.) ও তাঁর বোন মুবারাকাহ মিলে মক্কার মতো জায়গায়, যেখানে হাদীসের
সর্বোচ্চ পুরুষ প্রফেসর গিজ গিজ করতো সবসময়। সেখানে হাদীসের সর্বোচ্চ কিতাব বুখারী শরীফ –সহ অন্যান্য
বড়ো বড়ো কিতাব পড়াচ্ছেন।
মক্কার ফকীহা কু রাইশ আল তাবারী শ্রেষ্ঠ ৭ জন হাদীসবিদদের একজন হিসেবে স্বীকৃ তি বাগিয়ে নিচ্ছেন পুরুষদের
ডিঙিয়ে।
মদীনার দীর্ঘজীবী শাইখা মুফতী ফাতিমা বিনতে শুকরুল্লাহ নিজ বাসায় পুরুষ-মহিলাদের লেকচার দিচ্ছেন ৯০ বছর
ধরে।
সবচেয়ে চূ ড়ার সময়টা ছিলো ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম হিজরি শতক, এই তিনশ বছর।সে সময় ইউরোপে চলছে ক্যাথলিক
সমর্থিত পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য এবং সেখানে চলছে নারীদের ব্যাপারে সেন্ট পলের ফতোয়া-
“I don’t permit a woman to teach or have authority over man… And Adam was not the one
deceived it, it was the woman who deceived and became a sinner.”(1 Timothy 2:11-14)
আর এদিকে মুসলিম বিশ্বে-
তখন মদীনার মসজিদে উম্মুল খাইর ফাতিমা আর দামেশকের বনু উমাইয়া মসজিদে আয়িশা বিনতে আব্দুল হাদী
সর্বোচ্চ ক্লাসে মুহাদ্দিসা হিসেবে বুখারী শরীফ পড়াচ্ছেন। আয়িশা বিনতে হাদীকে তো তাঁর সময়ের সর্বোচ্চ লেভেলের
হাদীস স্পেশালিস্ট মনে করা হতো। দূর দূর থেকে ছাত্ররা আসতো তাঁর কাছে।
তখন একই ক্লাসে ১৪১ জন ছাত্র-ছাত্রীকে ‘তাবরানি শরীফ’ পড়াচ্ছেন শাইখা যাইনাব বিনতে কামাল (মৃত্যু ৭৮০ হি.)।
দামেশক ও কায়রোর মসজিদে মসজিদে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে সারাটা দিন ধরে বুখারী শরীফের লেকচার দিচ্ছেন
সিত্তু ল উযারা বিনতে উমার তানূখী (মৃত্যু ৭১৬ হি.) এরকম আরও আছেন ফাতিমা বিনতে সাদ খাইর।
ইস্পাহানে শাইখা ফাতিমা জুযদানী দামেশকে আমিনা বিনতে মুহাম্মাদ পড়াচ্ছেন নারী-পুরুষ বিদ্যার্থীদের।
মার্ভ শহরে কারীমা ৫ দিনে পুরো বুখারী পড়িয়েছেন খতীব বাগদাদীকে।
সিত্তু ল উজারা বিনতে মুনাজ্জা যাহাবীকে পড়াচ্ছেন বুখারী আর মুসনাদে শাফিঈ।
শাইখ মুওয়াফফাক দীনের বাসায় বড়ো বড়ো ক্লাস হত। সেখানে অধিকাংশই ছিলেন শিক্ষিকা। ২৪ জনের তালিকা
পাওয়া গেছে, যারা নিয়মিত এখানে ক্লাস নিতেন।
ইমাম হাফিয ইবনু নাজ্জার ৪০০ নারী শিক্ষিকার কাছে, ইবনু আসাকির ৮০-এর অধিক, আবু সাদ সামানী ৬৯ জন,
আবু তাহির সিলাফী ২০ –এর অধিক এবং ইবনুল জাওযী ৩ জন শিক্ষিকার নাম উল্লেখ করেছেন। ইবনুল আছির,
ইবনুল সালাহ, জিয়াউদ্দিন মাকসিদী, আল-মুনযিরী সকলেই বহু সংখ্যক শিক্ষিকার অধীনে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ আল-মুনাজ্জা (মৃত্যু ৮০৩ হি.) ১৬৪টি কিতাবের লেকচার দিচ্ছেন নিয়মিত।
ইবনু হাজার আসকালানী ‘আদ-দুরার আল-কামিনাহ’ গ্রন্থে হিজরি ৮ম শতাব্দীর ১৭০ জন প্রখ্যাত নারীর জীবনী
উল্লেখ করেন, যাঁদের অধিকাংশই হাদীসবিদ ছিলেন। এর মধ্যে কয়েকজন ছিলেন প্রফেসর লেভেলের। যেমন:
জুয়াইরিয়া বিনতে আহমদ। তিনি বড়ো বড়ো মাদ্রাসায় ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন।
বাগদাদে শুহদা বিনতে নাসর –এর ছাত্রদের ৫৯ জনের ছাত্রদের তালিকা এসেছে যাঁদের সবাই উঁচু উঁচু পদে আসীন
হয়েছেন পরে; কেউ বিচারপতি, কেউ অধ্যক্ষ, কেউ গবেষক।
যাইনাব বিনতে মাক্কীর ছাত্র ছিলেন আল-মিযযী, ইবনু তাইমিয়্যা, যাহাবী, বিরযালী সহ বিখ্যাত আরও অনেকে।
হিজরি ৯ম শতাব্দীর ১৩০ জন নারী বিশেষজ্ঞদের নাম এসেছে আব্দুল আযীয ইবনু উমার এর ‘মুজাম আল-শুয়ুখ’
গ্রন্থে।১০২ জনের একটি তালিকা এসেছে যাঁদের সবাইকে সনদ দিয়েছেন শাইখা উম্মে মুহাম্মাদ যাইনাব মাকদিসী, এঁদের
প্রায় সবাই পুরুষ।নিজ বাসায় ক্লাস নিতেন ফাতিমা বিনতে আলি, উম্মুল ফাখর জুমুয়া, উম্মুল ফিতইয়ান হান্তামাহ,
ইবনু রুশাইদের উস্তাদা যাইনাব বিনতে আলাম, উম্মুল ফজল কারীমাহ –সহ অনেক শিক্ষিকা।
শুধু স্বাধীন নারীরা না, দাসীরাও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেত যেমন- স্পেনের খলিফা ৩য় আবদূর রহমানের দাসী রাদিয়াহ,
আবুল মুতাররিফের দাসী ইশরাক আল- সুওয়াইদা। আবুল মুতাররিফ তাকে আরবি, ব্যাকরণ, সাহিত্য শিখাতেন, এর
জন্য পরে সেই দাসীই সাহিত্যে বড়ো উস্তাযা হয়ে যান।
মধ্যযুগীয় বর্বরতা শব্দটা ইউরোপের জন্য, মুসলিম বিশ্ব তখন আলোয় ঝলমল করছে।
ইসলামের প্রথম শতাব্দীতেই দেড়শ নারী স্কলার ছিল যাদের কাছে মানুষ শিখতে আসত।আয়িশা(রা.) যাকে
ইসলামবিদ্বেষীরা নির্যাতিত বলে দাবি করে, তিনি ছিলেন একইসাথে আইন, হাদীস, চিকিৎসাশাস্ত্র, গণিতে বহুমুখী
প্রতিভার অধিকারী।তিনি শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে জানতেন এমন না, মেডিসিন ও সার্জারিতেও দক্ষ ছিলেন।
আরেকজন নারী সাহাবি ছিলেন, আল শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.)।তিনি পিঁপড়ার কামড়ের ভিন্ন ধরনের শিফা বা
নিরাময় বের করেছিলেন।এতে খুশি হয়ে মহানবি(সা.) তাকে অন্যদের এটি শেখাতে বলেন। তার নাম কিন্তু আল শিফা
ছিল না। তার চরম দক্ষতার জন্য মানুষ তাকে টাইটেল দিয়েছিল।
কর্ডোভার লাবনা ছিলেন জটিল বীজগণিতে পারদর্শী।ঐ সময়ের সবচেয়ে কঠিন ধরণের অঙ্কগুলো সহজেই করতে
পারতেন।(Al-Muhaddithat, Mohammad Akram Nadwi, vo1 ,p 112) সুতাইতা বিন্তে হুসেইন আল
মাহামালি বিভিন্ন ইসলামি বিজ্ঞান, ভাষাতত্ত্ব ও গণিতে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তিনি অন্যান্য গণিতবিদদের উত্থাপিত
বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যাগুলোর সমাধান দেন। তিনি পাটিগণিতে খুব পারদর্শী ছিলেন। ইসলামের আলিমদের মধ্যে
আল্লামা ইবনে কাসির, ইবনুল খাতিব বাগদাদি, ইবনুল কাইয়্যিম আল জাওযিয়্যাহ তার প্রশংসা করেছেন।(Women
of Science in Muslim Heritage, Salim al-Hassani) তিনি তখন শারিয়াহ কোর্টে এক্সপার্ট ইউটনেস ছিলেন।
যারা এক্সপার্ট ইউটনেস থাকত, তারা বৈজ্ঞানিকভাবে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ করে সাক্ষীর সত্যতা যাচাই করত।(Early
Women of Science, Technology, Medicine and Management,Salim al-Hassani)
মারয়াম জিনয়ানি নামক একজন নারীর উল্লেখ পাওয়া যায়, যিনি কেমিস্ট্রি নিয়ে কাজ করতেন।মারইয়াম আল
আস্তরলাবি অ্যাস্ট্রোলেব বানাতেন।একে বলা হয় আগেকার কম্পিউটার।রুফাইদা আল আসলামিয়্যাহ ঐ সময়
মেডিকেল কোর্স করাতেন।মেডিসিনের ক্ষেত্রে মুসলিম নারীরা অনেক এগিয়ে ছিল।মধ্যযুগে আরব, সিরিয়া,ইরাক,
মিশরে অসংখ্যা বিখ্যাত নারী চিকিৎসক ছিলেন।বিখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী আল জাহরাবি নারীদের বিজ্ঞান শিক্ষার
ব্যাপারে কথা বলেছিলেন, নারীদের বিজ্ঞান সাধনায় অনুপ্রাণিত করেছিলেন।(Encyclopedia of Women in
Islamic culture,Saud Joseph,vol.1,p 8,360,400)
মোহাম্মাদ আকরাম নদভি ৪৩ খন্ডের আল-ওয়াফা বি আসমা আল-নিসা লিখেছিলেন ১০০০০ আলিমার বর্ণনা করে!
এর থেকে সহজেই বোঝা যায় সেই সময়ে নারীদের জ্ঞানার্জ নের সুযোগ কতটা বেশি ছিল,সেটা না হলে স্রেফ
ইসলামিক সভ্যতার জ্ঞানী মুসলিম নারীদের নিয়ে এত বড় বই লিখা সম্ভব না।কিছু উদাহরণ দেই- বিনতে আলি আল
মিনশার চার হাজারের বেশি বই সমৃদ্ধ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।এমন রিপোর্ট ও আছে, একজন নারী ফিকহ নিয়ে
৬০ খণ্ডের বই লিখেছিলেন, যা দুঃখজনকভাবে হারিয়ে গিয়েছে।
ইসলামের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ উলামারা একাধিক নারী শিক্ষকের নিকট পড়েছেন। যেমন-
আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ আল নাজ্জার- ৪০ জন
ইবনু হাজম- ৭০ জন
ইবনে আসাকির- ৮০ জন
ইবনুল জাওজি- ৩ জন
আবু তাহির সিলাফি- ২০ জনেরও বেশি
শামসুদ্দিন সাখাবি- ৬৮ জন
ইবনে হাজার আসকালানি- ৫৩ জন
তাজুদ্দিন সুবকি- ১৯ জন
জালালুদ্দিন সুয়ুতি- ৩৩ জন
আবু সাদ আল সামআনি- ৬৯ জন
এছাড়াও ইবনে তাইমিয়া, জারকাশি, ইবনে রজব ও অসংখ্যা বিখ্যাত উলামার নারী শিক্ষক ছিলেন। ইবনে হাজার
একজনের কথা বলেন- জাইনাব বিনতু কু তু বুদ্দিন।তার ইজাজাসমূহ বহন করতে একটি আস্ত উট লাগত! ইবনে হাজার
তার শাইখা মারইয়াম আল আজরিয়্যার লেকচার সংকলন করে বই প্রকাশ করেছিলেন মুজাম আল শাইখা আজরিয়্যা
নামে।ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা স্কলারদের একজনের কাছে
একজন নারীর দেয়া লেকচার এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।(Women Scholars of Hadith, Mohsen Haredy,p
911)
তখনকার হারেম বলতে মানুষ সাধারণত বোঝে- যেখানে খলিফার স্ত্রী আর দাসীরা থাকেন।কিন্তু হারেম এর পাশাপাশি
ছিল মুসলিম রাস্ট্রের স্ট্যাটিস্টিক্স সেন্টার।সেখানে খলিফার স্ত্রী আর দাসীরা গাণিতিক দক্ষতা দিয়ে রাজ্যের হিসাব
সংরক্ষণ করতেন।এমনকি মরক্কোর হারেমের স্ত্রীদের যদি জিজ্ঞেস করা হতো যে রাস্ট্রের উত্তর দিকের গ্রামে আজ
কয়টি মুরগির ডিম ফোটানো হয়েছে তারা গাণিতিক দক্ষতা দিয়ে সেটিও বলে দিতেন।মুসলিম স্পেনে বেশ কজন
মহিলা কবি- সাহিত্যিক ছিলেন যাদের খ্যাতি পুরো সাম্রাজ্যব্যাপী ছিল।৩য় হিজরি শতকে সেভিলের মারইয়াম বিনতে
ইয়াকু ব মহিলাদের সাহিত্যের প্রফেসর ছিলেন।এছাড়া বুজায়া শহরের গাসগানিয়া, সেভিলের দাদী আসিয়া, গ্রানাডার
নাজহুন, সভাবকবি ওয়াল্লাদা প্রমুখ খুবই মশহুর ছিলেন।মক্কার খাদিজা নুওয়াহরী,
যাইনাব বিনতে কামালুদ্দিন হাশেমী, মরক্কোর সারা বিনতে আহমাদ, উম্মে হুসাইন বিনতে কাযীরে মক্কা, উম্মে আলী
বিনতে আবুল ফরজ সুরী প্রমুখের কাব্যচর্চা ইতিহাসে বিখ্যাত।ছাপাখানা আবিষ্কারের পূর্বে হস্তলিপিবিদ্যা বহুল চর্চি ত
ও প্রয়োজনীয় বিষয় ছিল।বহু নারী লিপিকার রাষ্ট্রীয় অনুলিপিকারের দায়িত্বে ছিলেন।তাঁদের মাঝে কাতেবা বিনতে
আকরা বাগদাদী ছিলেন উস্তায পর্যায়ের।আরও ছিলেন লুবনা উন্দুলুসী, মুযনাহ উন্দুলুসী।কেবল কর্ডোভা শহরের
পশ্চিমাঞ্চলে ১৭০ জন আলিমা ছিলেন যারা কু রআন অনুলিপি করতেন।এছাড়া সাফিয়া বিনতে আবদুল্লাহ উন্দুলুসী,
ফখরুন্নিসা শুহদা বিনতে আহমাদ, আয়িশাহ বিনতে উমারা ইফ্রিকিয়াহ প্রমুখ ক্যালিগ্রাফি জগতে বিখ্যাত ছিলেন।
জাফর আল মনসুরের কন্যা জুবাইদাহ অসংখ্যা স্থাপনা করেছিলেন, বাগদাদ-মক্কা হাইওয়ে তাঁর বানানো, হাইওয়ের
নির্দি ষ্ট স্থানগুলোতে সার্ভি স সেন্টার স্থাপন করেছিলেন।
ইসলামিক ইতিহাসে নারীর শিক্ষাগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ন হয়েছিল।ইসলামি শাসনব্যাবস্থা বর্ত মান
গণতন্ত্রের মতো না, যোগ্য-চিন্তক বিশেষ লোকদের পরামর্শেই রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হতো।নারীদের ভেতরেও যোগ্য
চিন্তকদের মতামত নেয়া হতো।
উমর(রা.) খলীফা থাকা অবস্থায় বিদুষী নারীদের মতামত নিতেন।(সুনানে কু বরা ১/১১৩) তৃ তীয় খলিফা নির্বাচনে যোগ্য
নারীদের রায় নিয়েছিলেন সমন্বয়ক আবদূর রহমান ইবনে আওফা(রা)।(আল ইস্তিয়াব ৮/১৮৬৮)
নবিজির পরের প্রজন্মে উম্মুদ দারদা(রা.) দামেশকের মসজিদে লেকচার দিতেন আর সেই লেকচারে বসতেন খলীফা
আবদুল মালিক নিজে।এজলাসে ঢু কে মদিনার চীফ জাস্টিসকে দলিল দিয়ে চ্যালেঞ্জ করে অমুসলিম আসামীর দিকে
মামলা ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন আমরাহ বিনতে আব্দুর রহমান(রহ)।খলীফা উমারকে গনজামায়াতে চ্যালেঞ্জ করে মত
পরিবর্ত নে বাধ্য করেছিলেন খাওলা বিনতে সালবা(রা.)।নবম শতকের ফাতিমা বিনতে ইয়াহিয়া নিজ বিচারপতি পিতার
সাথে নানা বিষয়ে বিতর্ক করতো।বিচারপতি স্বামীও কঠিন মামলায় তাঁর সাহায্য চাইতো।শাইখা আসমা বিনতে
কামালের কাছে পুরুষরা সুপারিশ নিয়ে আসতো।তিনি তাঁদের জন্য সুলতান, কাযীদের কাছে সুপারিশ লিখে দিতেন
এবং তা গৃহীতও হতো।হানাফী মাজহাবের বিখ্যাত গ্রন্থ 'তু হফাতু ল ফু কাহা' লিখেছিল বাবা, এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখেছিল
স্বামী এবং এই বইয়ের ভু ল সংশোধন করেছিল ফাতিমা। যেকোনো লিগাল ডকু মেন্টে তাঁদের তিনজনেরই স্বাক্ষর
থাকতো।
মধ্যযুগে ইসলামবিদ্বেষীরা এই বলে মুহাম্মাদ(সা.) সমালোচনা করতো- তিনি নারীদের বেশি অধিকার দিয়ে দিয়েছেন! ১৭-
শতকে শিক্ষিত ইউরোপিয়ানরা পর্যন্ত মুসলিম মহিলাদের মতো নারীর খোঁজ করতো।ইংল্যান্ডের রানি প্রথম এলিজাবেথ
টার্কি শ ফ্যাশন অনুযায়ী মুসলিম নারীদের মতো পোশাক পরতেন। হেনরি ইউলিয়ামস বলেন, ''মুসলিমরা না থাকলে
মহিলা বিজ্ঞানী তো দূরে থাক,কোনো সময় মহিলা বিজ্ঞানী নিয়ে এমন কল্পকাহিনীও রচিত হতো না।''
(Renaissance England and the Turban,Nabil I. Matar)
উপরের তথ্যগুলো Amiruzzaman Muhammad Shamsul Arefin ভাইয়ের ''ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২.০'' এবং
আরমান ফিরমান ভাইয়ের ''মুসলিম মস্তিষ্ক'' বই থেকে নেয়া।
মুসলিম নারীদের ব্যাপারে এখানে যা যা বললাম সেটা স্রেফ বাস্তব অবস্থার ক্ষু দ্র অংশ, আরও বহু জ্ঞানী মুসলিম নারীরা
ছিল যাদের কথা কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে। নারীদের ক্ষমতায়ন ইসলামিক বিশ্বে কোনো ফেমিনিজম ছাড়াই
হয়েছিল। শত-সহস্র আলিমা ও ক্ষমতাবান মুসলিম নারীরা কখনও 'মুসলিম ফেমিনিজম' নামের অক্সিমোরোন তৈরি
করেন নাই, সাহাবাদের ইসলামের বুঝকে ''পুরুষতান্ত্রিক অপব্যাখ্যা'' বলেন নাই, নারী মুক্তির কথা বলে ইসলামের ফরজ
কখনো লঙ্ঘন করেন নাই।
তারা সবকিছু অর্জ ন করেছে ইসলামের পর্দা, শালীনতা, সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্ব ইত্যাদি ঠিক রেখে।
নারীদের রাজনৈতিক,সামাজিক,পারিবারিক সবক্ষেত্রে যতটু কু অধিকার প্রয়োজন সবটাই মুসলিম বিশ্বে পশ্চিমের বহু
আগেই দেয়া হয়েছিল। ফেমিনিজমের অফার করা নারীদের যৌন স্বাধীনতার অধিকার, গর্ভ পাতের অধিকার, ইচ্ছামতো
কাপড় খোলার অধিকার,পুরুষের সাথে ফ্রি মিক্সিং-এর অধিকার, লিঙ্গ পরিবর্ত নের অধিকার, লেসবিয়ান হওয়ার
অধিকার ইত্যাদির কোনো প্রয়োজন নেই। পশ্চিমের চাপিয়ে দেয়া নারী অধিকারের সংজ্ঞার কোনো প্রয়োজন নেই
আমাদের।
শেষ করবো এটু কু বলেই যে, নারীবাদকে প্রতিরোধ করতে হলে নারী অধিকার দিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। নারী
অধিকার না দিয়ে বা নারীবিদ্বেষ প্রকাশ করে কখনও নারীবাদের প্রতিরোধ সম্ভব না। বাস্তবক্ষেত্রে নারীদের অধিকার না
দিলে আমার এই লেখা অর্থহীন, তাই আমার অনুরোধ থাকবে নারীদের ন্যায্য অধিকার দিন।
 

You might also like