You are on page 1of 3

তাঁর নাম ছিল নুয়াইমান ইবনু আমর রাদিআল্লাহু আনহু। বদরের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা যাদের ছিলো তাদের মধ্যে

তিনি একজন।
ওহুদের যুদ্ধ, খন্দকের যুদ্ধ এবং বড় বড় সকল যুদ্ধই তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে প্রত্যক্ষ করেছেন।
ধীরে ধীরে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘনিষ্ঠতম সঙ্গীদের একজন হয়ে ওঠেন। আব্দুর রহমান ইবনে
আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বোনের সাথে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু তাঁর একটি অভ্যাস ছিল তিনি একের পর এক
হাসি ঠাট্টা,কৌতু ক করতে থাকতেন স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবীদের সাথে, এবং রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদাই সেটাকে উৎসাহিত করেছেন। যেমন একবার মদিনায় বাহির থেকে বড় একটি কাফেলা
আসছিল , যেটাতে বিদেশী মূল্যবান একটি ফল ছিল। তিনি সেটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে যান
এবং বলেন, এটি আপনার জন্য একটি উপহার। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফলটি খেয়ে ফেললেন, তৃ প্ত হলেন।
পরবর্তীতে তারা যখন নুয়াইমানের কাছে মুল্য চাইতে আসলো, তিনি বললেন, আমি এটি খাই নি, আল্লাহর রাসূল ফলটি
খেয়েছেন। তোমাদের তাঁর কাছে যাওয়া উচিত এবং তাকেই পাকড়াও করা উচিত। পরে তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর ঘরে গেলেন এবং বললেন, আমরা ফলগুলোর মূল্য চাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
তোমরা কিসের ব্যাপারে কথা বলছো? এগুলো তো আমাকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল !

তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নুয়াইমান ডাকলেন এবং বললেন, নুয়াইমান তু মি কি বলনি যে এগুলো তোমার
পক্ষ থেকে উপহার ? নুয়াইমান বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি চেয়েছিলাম ফলটির স্বাদ সবার আগে আপনি নিন কেননা আমার
মনে হয়েছিল সেটার জন্য আপনিই সর্বাধিক যোগ্য। কিন্তু আমার কাছে সেটার মূল্য পরিশোধ করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না,
তাই ইয়া রাসুলুল্লাহ আপনি সেটার মূল্য পরিশোধ করে দিন! সবশুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসলেন এবং
ব্যক্তিটিকে তার প্রাপ্য মূল্য পরিশোধ করে দিলেন। যাই হোক, আপনি যদি আসলেই তার জীবনের দিকে লক্ষ্য করেন,
সুবহানাল্লাহ আপনি অবিশ্বাস্য কিছু উদাহরণ দেখতে পাবেন।

একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ব্যক্তির সাথে ঘরে বসে আছেন। ব্যক্তিটি ছিল একজন বেদুইন,
তিনি তার উট রাসুলুল্লাহর ঘরের বাইরে বেঁধে রেখে এসেছিলেন। যেহেতু সাহাবীরা সকলেই নুয়াইমানের দুষ্টু প্রকৃ তি সম্পর্কে
অবগত ছিলেন, তারা নুয়াইমানের দিকে একটু ইঙ্গিত করে বললেন, হেই নুআইমান দেখো এখানে একটি উট বাধা আছে । তো
নুয়াইমান কী করলেন, তিনি উটটি নিলেন এবং পরে সেটি জবাই করে দিলেন। নুয়াইমান বেদুইনের উটটি দিয়ে ভোজন উৎসব
করতে চেয়েছিলেন। সে ব্যক্তি যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ঘর থেকে বের হলেন, চিৎকার দিয়ে
উঠলেন এবং বললেন, আমার উট কোথায় গেল ? আমার উট কোথায় গেল ?! পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের উটটির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন এবং সাহাবীরা বললেন, নুআইমান উটটি নিয়ে গেছে এবং সেটি
জবাই করে ফেলেছে। নুয়াইমান একটি গর্তে র ভিতর গিয়ে লুকালেন। তিনি নিজেকে কাদামাটি, গাছের লতাপাতা দিয়ে ঢেকে
রাখলেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে গেলেন। ময়লা আবর্জ না থেকে তাকে টেনে তু ললেন এবং তার মুখ থেকে
ধুলাবালি সরালেন। এখন দেখুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে হাসছিলেন। এমনকি তিনি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই বেদুইন ব্যক্তিকে উটের মূল্য এবং তার চাইতে বেশি অর্থ পরিশোধ করে দিলেন। এবং এরপর
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নুয়াইমানের জবাইকৃ ত উট দিয়ে ভোজন উৎসবের আয়োজন করলেন। তো
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মানুষটির কদর করেছেন - যত হাসি ঠাট্টার কাজকর্ম তিনি করতেন, তাঁর ব্যক্তিত্ব
ও সাহাবিদের মাঝে যে আনন্দ তিনি সঞ্চার করতেন, সবকিছুরই।

এবার দেখুন, উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু তিনি একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন - একবার আবু বকর রাদিয়াল্লাহু
আনহু একটি সফরের সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি তাঁর সাথে নুয়াইমান ইবনু আমর এবং সুয়াইবিত ইবনু হারমালা যিনি অন্য একজন
সাহাবি, সঙ্গী হিসেবে নিলেন। তিনি সুয়াইবিতকে খাবার-দাবারের দায়িত্বে রাখলেন। যেটা হলো পথিমধ্যে নুয়াইমান সুয়াইবিতকে
বললেন, দেখো আমি ক্ষু ধার্ত কিছু খাবার দিতে পারবে ? সুয়াইবিত জবাব দিল -
‫حتى يجي ابو بكر‬
তিনি বললেন যতক্ষণ আবু বকর না আসে এবং অনুমতি না দেয় তু মি এই খাবার-দাবার স্পর্শও করতে পারবে না। তো
নুয়াইমানের মন খারাপ হয়ে গেল এবং অন্য কোনভাবে সুয়াইবিতের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তাদের পাশে
দিয়েই অন্য একটি কাফেলা যাচ্ছিল তিনি তাদের নিকট গেলেন এবং বললেন দেখো আমার কাছে এই গোলামটি আছে। তাকে
আমি তোমাদের নিকট বিক্রি করে দিতে চাই। কিন্তু সে খুবই বুদ্ধিমান, আরবের মানুষ। তোমরা যখনি তাকে নিতে চাইবে তখনই
সে জোর দিয়ে বলবে যে সে কোন গোলাম নয়। তোমরা তাকে ক্রয় করতে ইচ্ছুক নাকি না? তারা বলল, হ্যাঁ অবশ্যই আমরা
তাকে নিতে চাই । তারপর তিনি বললেন, আচ্ছা, তাকে আমি দশ দিরহাম এর বিনিময়ে বিক্রি করব। তো তিনি তাদের
সুয়াইবিতের কাছে নিলেন এবং বললেন, এই যে সে। তারা সুয়াইবিতের ওপর লাফিয়ে পরলো,তাকে হাতেপায়ে ধরে শৃঙ্খলাবদ্ধ
করে নিতে লাগলো। সুয়াইবিত বললেন,
‫انا حر انا حر‬
আমি মুক্ত, আমি স্বাধীন।

আর তারা বললো, হ্যা তোমার মালিক আমাদের আগেই বলে রেখেছে যে তু মি এমন বলবে। নুয়াইমান সেখানেই ছিলেন,
চুপচাপ বসে দেখছিলেন কোন কথাবার্তা বলা ব্যতিত। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ফিরে আসলেন, তিনি নুয়াইমান ও
বাকিদের দেখতে পেলেন এবং সুয়াইবিতের কথা জিজ্ঞেস করলেন। তো বাকিরা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সুয়াইবিতের
ব্যাপারে বললেন, এবং তারা সেই কাফেলার পিছনে ছুটে গেলেন। পরে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদেরকে তাদের অর্থ
ফেরত দিলেন এবং তারা সুয়াইবিতকে মুক্ত করে দিলেন।

অবশেষে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফেরত আসলেন এবং উম্মু সালামা
রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
‫فضحك صلى هللا عليه وسلم وأصحابه حوال‬
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীরা এই ঘটনা নিয়ে প্রায় একবছর হাসতে থাকেন। এতটাই
মজার ছিল এই ঘটনা তাদের জন্য।

এভাবেই চলতে থাকে এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পরও। তাঁর সেই ব্যক্তিত্ব অক্ষু ন্ন থাকে এবং
সাহাবীরা সর্বদাই তার থেকে এ ধরনের কৌতু কপূর্ণ হাসিতামাশা আশা করতেন। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর সময়কালে তিনি
আরও একটি অবিশ্বাস্য হাস্যরসাত্মক কান্ড ঘটান। একবার মসজিদে একজন অন্ধ ব্যক্তি আসেন যার হঠাৎ মূত্রত্যাগের
প্রয়োজন পরে। সাধারণত সে সময় অন্ধ মানুষদের মসজিদের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেউ না কেউ এগিয়ে আসতো। তো
নুয়াইমান বললেন, এ বিষয়টি আমাকে দেখতে দিন। নুয়াইমান অন্ধ ব্যক্তিটির কাছে গেলেন এবং তিনি তাকে মসজিদের এক
কোনায় নিয়ে গেলেন। অন্ধ লোকটি যখন মূত্রত্যাগ করলো সবাই তার দিকে দৌড়ে আসলো এবং লোকটি ভয় পেয়ে গেল ।
লোকটি বলল, আগে আমাকে বল সেই ছেলেটি কে যে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিল। তারা বলল এটি নুয়াইমান ছাড়া আর
কে হবে। তিনি বললেন, নুয়াইমান কোথায় আমি তাকে উচিত শিক্ষা দিতে চাই। কেউ আমাকে নুয়াইমানের কাছে নিয়ে চলো!
নুয়াইমান তার কাছে ফিরে আসলেন এবং নিজের কন্ঠ একটু পাল্টিয়ে বললেন, আপনি নুয়াইমানের কাছে যেতে চান ? তিনি
বললেন, হ্যা। তো নুয়াইমান ব্যক্তিটির হাত ধরে তাকে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট নিয়ে গেলেন । অন্ধ লোকটি উসমান
রাদিয়াল্লাহু আনহুর উপর ঝাপিয়ে পড়ল এবং বাকিরা ওসমানকে তার থেকে সরিয়ে নিলেন। ওসমান হাসতে লাগলেন কেননা
তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন এবং নুয়াইমান সেখান থেকে পালিয়ে গেলেন।

যাইহোক, সুবহানাল্লাহ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এই মানুষটি ছিল.., তিনি আমাদের কিছু বিষয় বুঝিয়ে গেছেন। তিনি আমাদের
দেখালেন যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবিরা হাস্যরস, মজা ঠাট্টা এগুলো সবই করতেন। তবে
শর্ত সাপেক্ষে । হ্যা আপনা রা বলতে পারেন যে নুআইমান বিষয়টি তে বাড়া বাড়ি করেছেন। কিন্তু তিনি কখনো ই তাঁর
সীমা অতিক্রম করেননি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কাছ থেকে এ ধরনের হাস্যরস আশা করতে থাকেন,
এই ধরনের দুষ্টু মিগুলো নুয়াইমান করবে জানতেন এবং তিনি সর্বদাই তাঁর সকল কর্মকান্ডের খেসারত বহন করেছেন,
আক্ষরিকভাবেই। আর তাঁর মত একজন মানুষ আশেপাশে থাকা মজার ব্যাপার ছিল। বিষিয়টি এটাও প্রমান করে যে আমাদের
দীনে হাস্যরসের জায়গা রয়েছে।
‫كان رسول هللا صلى هللا عليه وسلم بساما ضحاكا‬
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসি হাসতেন, জোরেও হাসতেন। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তবে হ্যা,
তিনি হাসিঠাট্টার শর্ত সমূহ সর্বদাই মেনে চলতেন এভাবে যে তিনি কখনোই কৌতু ক করা অবস্থাতেও মিথ্যা বলেননি। তাই চলুন,
আমাদের সমাজের ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ব্যক্তিত্বকে আমরা উৎসাহিত করি। ইন শা আল্লাহ। আর আসুন আমরা সকলের সাথে
ভাল সম্পর্ক রাখি।

You might also like