Professional Documents
Culture Documents
Shodupodesh Naki Tiroshkar
Shodupodesh Naki Tiroshkar
সদুপদেশ দিচ্ছেন
নাকি
তিরস্কার করছেন
7 • অবতারণা
15 • সদুপদেশের ধরন
17 • সুদপদেশের পদ্ধতি
21 • পরিণাম
23 • তিরস্কার
29 • ওষুধ
31 • প্রান্তটীকা
অনুবাদকের অর্পণ
লাগাতার অন্যায্য সমাল�োচনা বুকে মেখে যারা স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য
কাজ করে যাচ্ছেন...
অবতারণা
7
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন
8
ইবন রাজাব হানবালি
য�োগ্যতা নিয়ে কেউ সন্দেহ করবেন না, তাদেরকেও যদি সত্যটা জানান�ো
হত�ো, তার সেটা মেনে নিতেন। বয়সে কম কেউ যদি সঠিক জ্ঞান উপস্থাপন
করতেন, তারা নিজেদের পূর্বের মত থেকে সরে আসতেন। নিজেদের
সঙ্গীসাথি ও অনুসারীদের সত্যটা মেনে নিতে বলতেন। শুধু ভিন্ন কারও
কাছ থেকে এসেছে বলে সত্যের সামনে গ�ো ধরে থাকতেন না।
খলীফা ‘উমারে সময়ে এমন একটি ঘটনা আছে। আল্লাহ তার উপর
সন্তুষ্ট থাকুন। স্ত্রীদের ম�োহর কী পরিমাণ হবে সেটা নিয়ে তিনি একবার তার
ফায়সালা দিচ্ছিলেন। এক নারী উঠে তখন কুর’আনের একটা আয়াত তাকে
স্মরণ করিয়ে দিলেন। আয়াতটি ছিল:
যদি ত�োমরা ত�োমাদের স্ত্রীদের বদল করতে চাও, তাহলে তাকে বিপুল
স�োনাদান দিলেও তা ফিরিয়ে নেবে না। [সূরা নিসা’, ৪:২০]
আয়াতটি স্মরণ হতেই খলীফা তার আগের কথা ফিরিয়ে নিয়ে বললেন,
“একজন নারী ঠিক বলেছেন, আর একজন পুরুষ ভুল বলেছে।” বলা হয়
তিনি আরও বলেছেন, “‘উমারের চেয়ে ফিক্হি বিষয়ে বাকি সবার বুঝ
বেশি।”
প্রথিতযশা ‘আলিমদের মাঝে কেউ কেউ ক�োন�ো বিষয়ে নিজেদের
ফায়সালা দেওয়ার পর বলতেন, “আমরা শেষ পর্যন্ত এই মতে এসে স্থির
হয়েছি। কেউ যদি এর চেয়ে ভাল�ো ক�োন�ো ফায়সালা নিয়ে আসেন, আমরা
তা হলে সেটা মেনে নেব।”
ইমাম শাফি‘ঈ অত্যন্ত কঠ�োরভাবে এই মূলনীতি মেনে চলতেন। তার
ফায়সালার বিপরীতে ক�োন�ো সত্য থাকলে, সুন্নাহ থাকলে তার সঙ্গীরা যেন
সেটা অনুসরণ করে, মেনে নেয় এবং তার মতকে দেয়ালে ছুঁড়ে ফেলে
সে উপদেশ দিয়ে তিনি বলতেন, “আমার মতের মধ্যে অনেক কিছুই যে
কুর’আন-সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক পাবে তাতে ক�োন�ো সন্দেহ নেই। কারণ
সুমহান আল্লাহ-ই ত�ো বলেছেন,
কুর’আন যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে আসত, তা হলে
ত�োমরা এতে অবশ্যই অসংখ্য অসামঞ্জস্যতা খুজে
ঁ পেতে। [সূরা নিসা’
৪:৮২]
9
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন
“যত যার সাথে আমার বিতর্ক হয়েছে, আমি দেখেছি, সত্য হয় তার
মুখ থেকে বের হয়েছে, নয় আমার মুখ থেকে।”—তার কথার কী গভীরতা!
ভিন্নমত থেকেই হ�োক, আর বিতর্ক থেকেই হ�োক, সত্যটা ফুটে উঠুক—
এটাই ছিল তার একমাত্র চাওয়া।
যারা এ ধরনের মন�োভাব বুকের মাঝে আগলে রাখেন, কেউ তার ক�োন�ো
মত ছুঁড়ে ফেলে দিলে সেটা তার কখন�ো অপছন্দ হবে না। তার জীবদ্দশা
বা মৃত্যুর পরও যদি তার ক�োন�ো সুন্নাহবির�োধী মত শুধরে দেয়, তবু সেটা
তার খারাপ লাগবে না।
অন্যান্যদের ব্যাপারে অতীত ও বর্তমানের দীন সংরক্ষণকারী এবং দীনের
প্রয়�োজনে উঠে দাঁড়ান�ো ‘আলিমদের মন�োভাব এমনটিই ছিল। তাদের মতের
বিরুদ্ধে কেউ যদি প্রমাণসহ ভিন্নমত তুলে ধরতেন তা হলে সেটা তারা
ম�োটেও ঘৃণা করতেন না। শুধু তাই না, যে ভিন্নমতটা এল, তাদের দৃষ্টিতে
সেটা যদি যথেষ্ট শক্তিশালী না হত�ো, তখন তারা সেটা গ্রহণ না করলেও বা
নিজেদের মতের উপর সেটাকে না রাখলেও কিন্তু তাদের মন�োভাবে ক�োন�ো
হেরফের হত�ো না।
ইমাম আহমাদ ইসহাক বিন রাহাওয়াইকে অত্যন্ত প্রশংসার নজরে
দেখতেন। তার প্রসঙ্গে তিনি একবার বলেছিলেন, “যেখানে তার সঙ্গে কিছু
বিষয়ে আমার মত মেলে না, সেখানে অন্যান্যরা যে একে অন্যের সঙ্গে দ্বিমত
করবে সেটা খুবই স্বাভাবিক।” বা অনেকটা এমনই কিছু বলেছিলেন তিনি।
আল্লাহ তাদের দুজনের উপর দয়া করুন।
অনেক সময় ইসহাক ও অন্যান্য ইমামদের মত তার কাছে পেশ করা
হত�ো। তারা ক�োথা থেকে সেসব মত আহরণ করেছেন তা-ও উল্লেখ করা
হত�ো। তিনি তাদের মতের সাথে একমত হতেন না। আবার সেসব মত বা
প্রমাণাদি প্রত্যাখ্যানও করতেন না; অথচ সেগুল�োর ক�োনটার সঙ্গেই কিন্তু
তিনি সহমত হচ্ছিলেন না।
ইমাম আহমাদ হাতিম আসামের কাছে থেকে একটি ঘটনা বর্ণনা
করেছেন। কেউ তাকে জিজ্ঞেস করল, “আপনি অনারব। বাগ্মীও নন। কিন্তু
10
ইবন রাজাব হানবালি
যে-ই আপনার সাথে বিতর্ক করে, আপনি তাদের থামিয়ে দেন। কীভাবে
জেতেন আপনি?”
তিনি বললেন, “তিনটি জিনিস দিয়ে: ক�োন�ো বিষয়ে কেউ সঠিক কথা
বললে আমি খুশি হই। সে ভুল করলে আমি কষ্ট পাই। সে মুহূর্তে আমি চুপ
করে যাই, যাতে এমন ক�োন�ো কথা আমার মুখ দিয়ে তখন বের না হয় যেটা
হয়ত�ো তার ক্ষতি করবে।”—বা এরকম অর্থব�োধকই কিছু বলেছিলেন।
ইমাম আহমাদ ঘটনাটি বলার পর বলেছেন, “কী জ্ঞানী মানুষ ছিলেন
তিনি!”
ত�ো উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে দুর্বল মতকে ভুল প্রমাণ এবং তার
বিপরীতে সত্যটাকে স্পষ্ট করাকে ক�োন�ো ‘আলিম কুনজরে দেখেননি; তারা
বরং এটা পছন্দ করতেন। এবং যারা এ ধরনের কাজ করতেন তাদের
তারিফ করতেন।
এ বিষয়টা ক�োন�োভাবেই পরনিন্দার মাঝে পড়ে না।
কেউ তার সুন্নাহবির�োধী ক�োন�ো ভুল উন্মোচন হওয়াকে যদি অপছন্দ
করে, তা হলে তার সে অপছন্দকে আমলে নেওয়ার ক�োন�ো প্রয়�োজন
নেই। নিজের ভুলের বিরুদ্ধে সত্য উদ্ভাসিত হওয়াকে ঘৃণা করাটা ক�োন�ো
প্রশংসায�োগ্য বৈশিষ্ট নয়। নিজের মতের সঙ্গে মিলুক কি না মিলুক, সত্যের
প্রকাশ ও মুসলিমদেরকে তা জানিয়ে দেওয়ার বিষয়টিকে ক�োন�ো মুসলিম
অপছন্দ করতে পারবে না।
“আল্লাহ, তাঁর বই, তাঁর রাসূল, তাঁর ধর্ম, মুসলিমদের নেতা ও সাধারণ
জনতা”—এদের সবার প্রতি আন্তরিক সদুপদেশের নিদর্শন পাওয়া যাবে
এমন মন�োভাবের মাঝে। নবিজির ভাষায় এটাই ইসলামি জীবন ব্যবস্থা।
আল্লাহ তাঁর প্রতি আশীষ ও শান্তি বর্ষণ করুন।
অতীতে ভুলকারী ক�োন�ো ‘আলিমের ক�োন�ো ভুল কেউ সুন্দর আচরণ
বজায় রেখে সুন্দরভাবে খণ্ডন ও প্রতিবিধান করলে ক�োন�ো সমস্যা নেই।
এজন্য তাকে দ�োষও দেওয়া যাবে না। সে ‘আলিমের কারণে সে নিজে যদি
ভুল করে থাকে তাতেও তার ক�োন�ো দায় নেই।
11
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন
12
ইবন রাজাব হানবালি
মর্যাদার ব্যাপারে কারও মধ্যে ক�োন�ো দ্বিমত নেই, তাদেরও ক�োন�ো ক�োন�ো
ভিন্নমত খণ্ডিত হয়েছে। কিন্তু একজন ‘আলিমও মনে করেননি এ ধরনের
এবং অন্যান্য যেসব ইস্যুতে যারা তাদের সাথে একমত হননি, তারা সেসব
ইমামের মর্যাদাহানি বা মানহানি করছেন।
আশ-শাফি‘ঈ, ইসহাক, আবু ‘উবাইদ, আবু সাওর-সহ হাদীস ও ফিক্হ
শাস্ত্রের অতীত ও বর্তমানের মুসলিম জ্ঞানীদের বইগুল�ো এসব মতের ব্যাখ্যায়
পূর্ণ। এখানে এসব উল্লেখ করতে গেলে আল�োচনা দীর্ঘ হয়ে যাবে।
কাউকে খণ্ডনের উদ্দেশ্য যদি হয় তার ভুল উন্মোচন করা, তার মানহানি
করা, তার অজ্ঞতা ও জ্ঞানের ঘাটতি দেখিয়ে দেওয়া তাহলে সেটা নিষিদ্ধ।
তার উপস্থিতিতে, অনুপস্থিতিতে, তার জীবিত অবস্থায় বা মৃত্যুর পর—ক�োন�ো
অবস্থাতেই এমন কাজ বৈধ নয়। মহান আল্লাহ কুরআনে এ ধরনের কাজের
নিন্দা করেছেন। যারা এহেন অপকর্ম করে তাদেরকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
নবিজিরও ﷺতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন:
যারা মুখে বিশ্বাসের কথা বল�ো, কিন্তু অন্তরে কর�ো না সেসব ল�োকসকল
(শ�োন�ো): মুসলিমদের গালাগালি করবে না। তাদের খুঁত খুজে বেড়াবে না।
যে তাদের খুঁত খুঁজবে আল্লাহ তার খুঁত খুঁজে বের করবেন। আর আল্লাহ যখন
তার খুঁত উন্মোচন করবেন তখন সে নিজের ঘরে একাকী করলেও তার সেই
খুঁত ফাঁস করে দেবেন।|2|
আমাদের এসব কথা ইসলাম অনুসারীদের জন্য। যারা বিদ‘আতি ও
বিভ্রান্ত, যারা ‘আলিমদের অনুসরণ করে বলে দাবি করে, কিন্তু আদতে তা
নয়, তখন তাদের অনুসরণ করা থেকে সতর্ক করার জন্য তাদের অজ্ঞতা,
তাদের ভুলত্রুটি দেখিয়ে দেওয়া অনুম�োদিত।
সে যাহ�োক, আমাদের আল�োচনা এই প্রসঙ্গে নয়। আল্লাহ ভাল�ো জানেন।
13
সদুপদেশের ধরন
ক�োন�ো ‘আলিমকে খণ্ডন করা কারও কাজ দেখে যদি ব�োঝা যায়, এর মাধ্যমে
তার উদ্দেশ্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পথে আন্তরিক সদুপদেশ, তাহলে
তাকে মমতা, শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে দেখতে হবে। আমাদের পূরবর
্ব তী্ মুসলিম
ইমাম ও কল্যাণ ইচ্ছায় তাদের অনুসারীদের কর্মপন্থায় আমরা তা দেখেছি।
কারও কাজ দেখে যদি ব�োঝা যায় এই খণ্ডনের মাধ্যমে তার আসল
উদ্দেশ্য অন্যের মর্যাদাহানি করা, অপবাদ দেওয়া এবং খুঁত বের করা, তা
হলে এজন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে করে তার মত�ো অন্যান্যরা
এরকম কুৎসিৎ ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকবে।
কখন�ো খণ্ডনকারীর নিয়্যাত ব�োঝা যায় তার সমর্থন ও স্বীকৃতি থেকে।
কখন�ো তার কথা ও কাজ থেকে।
কারও মাঝে জ্ঞান, ধার্মিকতা, মুসলিম ইমামদের প্রতি শ্রদ্ধা ও উচ্চ
ধারণা থাকলে তার খণ্ডন-কর্ম বা ব্যাখ্যাবিশ্লেষণের ধরন এমন হবে যেটা
অন্যান্য ‘আলিমদের চ�োখে মানানসই হবে।
বই এবং গবেষণাপত্রের বেলায় লেখক ক�োন�ো কথাকে (কল্যাণের)
যে-উদ্দেশ্যে উল্লেখ করেছেন অবশ্যই সেভাবে বুঝতে হবে। লেখক যেভাবে
বলেছেন খণ্ডনকারী যদি সেভাবে না নেয়, তাহলে সে নিরপরাধ কারও
ব্যাপারে খারাপ ও সন্দেহমূলক চিন্তাকারীদের খাতায় নাম ওঠাবে। আল্লাহ ও
তাঁর রাসূল ﷺএ ধরনের সন্দেহকে নিষিদ্ধ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন,
নিজে ক�োন�ো ভুল বা অপরাধ করে যে নিরপরাধ কাউকে দ�োষ দেয়,
সে নিজেই নিজের উপর মিথ্যাচার এবং স্পষ্ট পাপের ব�োঝা চাপিয়ে
নিয়েছে। [সূরা নিসা’, ৪:১১২]
15
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন
16
সুদপদেশের পদ্ধতি
17
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন
18
ইবন রাজাব হানবালি
অন্যের দ�োষ গ�োপন রাখার ফাদীলা সম্পর্কে বেশ কিছু সংখ্যক হাদীসও
আছে।
যারা ভাল�ো কাজের আদেশ দেন তাদেরকে ক�োন�ো ক�োন�ো ‘আলিমেরা
বলতেন, “অপরাধীর ভুল গ�োপন রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা কর�ো। তাদের ভুল
ফাঁস করা ইসলামের দুরল্ব তা দেখিয়ে দেয়। যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি গ�োপন
রাখার দাবিদার তা হচ্ছে কারও ভুলত্রুটি।”
এজন্য কারও খারাপ ও অশ�োভন কাজ ছড়িয়ে দেওয়াকে নিন্দার সাথে
তুলনা করা হয়। দুট�োই দুষ্কৃতিকারীদের কাজ। এখানে খারাপ কাজটা থামান�ো
দুষ্কৃতিকারীর উদ্দেশ্য না; বা বিশ্বাসী ব্যক্তি সেই ভুল বা ত্রুটি এড়াক এটাও
তার কাম্য না; বরং তার একমাত্র উদ্দেশ্য তার বিশ্বাসী ভাইয়ের ভুলগুল�ো
রাষ্ট্র করা, তার সম্মান হানি করা। এ লক্ষ্যে সে কাজটা শুরু করে। এবং
চালিয়ে যায়। তার মতলব হল�ো তার বিশ্বাসী ভাইটির ভুলচুক ও বাজে
গুনগুল�ো ল�োকসমুখে ফাঁস করে দিয়ে তাকে অপদস্থ করা। যাতে এ দুনিয়ায়
তার কিছু ক্ষতি হয়।
অন্যদিকে যিনি আন্তরিকভাবে সদুপদেশ দেন তার আসল লক্ষ্য তার
বিশ্বাসী ভাইটির ভুলটাকে সমূলে উৎপাটন করা, এবং ভবিষ্যতে যেন আর
তা না করে সেজন্য তাকে সাহায্য করা। সুমহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে
এভাবেই বর্ণনা করেছেন:
ত�োমাদের কাছে ত�োমাদের মাঝ থেকেই একজন রাসূল এসেছেন।
ত�োমাদের যন্ত্রণাগুল�ো তাকে পীড়া দেয়। ত�োমাদের কল্যাণ চিন্তায় সে
উদ্বিগ্ন। বিশ্বাসীদের প্রতি সে করুণাসিক্ত, বড়ই রহমদিল। [৯:১২৮]
নবিজির সাহাবিদের প্রসঙ্গে বলেছেন,
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। তার সঙ্গে যারা আছে তারা জঘন্য
অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠ�োর। কিন্তু পরস্পরের প্রতি অত্যন্ত
দয়াপরবশ। [ফাত্হ, ২৯]
বিশ্বাসীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন তারা সবুর
করে। দয়া ও মমতার দিকে পরস্পরকে সুপরামর্শ দেয়।
19
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন
20
পরিণাম
যে ল�োক তার বিশ্বাসী ভাইয়ের দ�োষ খুঁজে বেড়ায়, তার পিছে লেগে থাকে,
ছিদ্রান্বেষণ করে পরিণামে খ�োদ আল্লাহ তার ভুলত্রুটি মুখ�োশ উন্মোচন করে
দেবেন, তাকে অপমানের চূড়ান্ত করবেন; তা সে ওসব পাপ কাজ একান্তে
ঘরের নিরালাতেই করুক না কেন। নবিজি ﷺ-এর অসংখ্য উক্তি আছে এ
ব্যাপারে। ইমাম আহমাদ, আবু দাঊদ, তিরমিযি বহু বর্ণনাসূত্রে এগুল�ো বর্ণনা
করেছেন।
ওয়াইলা বিন আসক’ সূত্রে তিরমিযি বর্ণনা করেছেন যে নবিজি সা.
বলেছেন,
“ত�োমার ভাইয়ের বিপাকে আনন্দোল্লাস ক�োর�ো না। নচেত আল্লাহ তাকে
এর জন্য ক্ষমা করে দেবেন। আর ত�োমাকে উল্টো তা দিয়ে পরীক্ষা করবেন।|4|
হাদীসটিকে তিনি হাসান গারীব বলেছেন।
মারফূ‘ ধাঁচে মু‘আয থেকে বর্ণনা করেছেন,
“ক�োন�ো পাপের কারণে যে তার ভাইয়ের তিরস্কার করবে, সে নিজে তা না
করা পর্যন্ত মারা যাবে না।”|5|
এর বর্ণনাসূত্র মুনকাতি’ (বিচ্ছিন্ন)।
হাসান বলেছেন, “বলা হত�ো, ‘কেউ ক�োন�ো পাপ নিয়ে তাওবা করার
পরও কেউ যদি তার সেই পাপ নিয়ে তিরস্কার করে, তা হলে আল্লাহ তাকে
সেই অপরাধ দিয়ে পরীক্ষা না করা পর্যন্ত তার মৃত্যু দেবেন না।’”
21
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন
22
তিরস্কার
23
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন
কাছ থেকে প্রশংসাবাণীও দাবি করে। ওদিকে খবর গ�োপন করে অনেক বড়
কিছু হাসিল করেছে ভেবে তারা ভীষণ উল্লাসও করে। আবার নবিজি যে
তাদের জিজ্ঞেস করেছে এটাও তাদের যথেষ্ট পুলকিত করেছিল। এ আয়াতের
ব্যাখ্যায় ইবনু ‘আব্বাস (আল্লাহ তার ও তার বাবার উপর সন্তুষ্ট থাকুন)
এমনটিই বলেছেন। বুখারি ও মুসলিমে এর উল্লেখ আছে।
আবু সা‘ঈদ খুদরী বলেছেন,
আল্লাহর রাসূল ﷺলড়াইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হলে ভণ্ডরা তার সঙ্গে যেত না।
আল্লাহর রাসূলের বির�োধিতা করে পিছে পড়ে থাকা নিয়েই তারা আনন্দ কর।
আল্লাহর রাসূল ﷺযখন লড়াই থেকে ফিরে আসতেন, তারা তখন আল্লাহর
দ�োহাই দিয়ে নানা অজুহাত খাড়া করত। আবার যা করেনি তা নিয়ে প্রশংসা
পেতে চাইত। আয়াতটি এ প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়।”
এ জন্য এ ধরনের খাসলত ইহুদি-মুনাফিকের খাসলত। এরা উপরে
উপরে একটা কাজ করে, দেখায় যে সে ভাল�ো কাজ করছে, কিন্তু ভেতরে
ভেতরে থাকে তার বদমতলব হাসিলের খায়েশ। ত�ো বাহ্যিকভাবে তার নেক
সুরতের কাজ দেখে মানুষ তাকে বাহবা দেয়; কিন্তু আসলে ত�ো ভেতরে
ভেতরে সে তার চেপে রাখা খারাপ উদ্দেশ্য সাধন করেছে। উপরে উপরে
ভাল�োর যে চিত্র সে পেশ করেছে তার সুবাদে প্রশংসার ফুল সে বসে বসে
খুব উপভ�োগ করে—কিন্তু আসলে ত�ো ভেতরে তার মতলব খারাপ—আর
অন্যদিকে নিজের খারাপ উদ্দেশ্য হাসিল হতে দেখে তৃপ্তির ঢেঁকুর ত�োলে।
এভাবে ধ�োঁকা দিয়ে তার ষড়যন্ত্র সুন্দরভাবে কার্যকর হয়। তার ‘কল্যাণ
কামনা’ পূর্ণ হয়।
যাদের চরিত্রে এ ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকবে সে অবশ্যই এই আয়াতের
হুমকির মধ্যে পড়বে। এক যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির হুঁশিয়ারি করা হয়েছে তাকে।
এ ধরনের নীচু কাজের উদাহরণ হল�ো: সে যখন যখন চায় ল�োকজন
কারও থেকে মুখ ফিরিয়ে নিক, তখন সে অন্যের ব্যাপারে কুৎসা রটায়,
তাচ্ছিল্য করে, তার অপরাধ ফাঁস করে দেয়। তার এমন করার কারণ হয় সে
তার ক্ষতি করতে ভাল�োবাসে, কিংবা তার প্রতি তার বিদ্বেষ আছে, কিংবা
সম্পদ, নেতত্বৃ বা অন্য ক�োন�ো নিন্দনীয় কারণে তার সঙ্গে সে প্রতিদ্বন্দ্বিতার
24
ইবন রাজাব হানবালি
ভয় করে। এজন্য ধর্মীয় ক�োন�ো কারণে ল�োকসমুখে তাকে হেয় করা ছাড়া
তার মকসুদ পূরণের আর ক�োন�ো তরিকা সে খুঁজে পায় না।
যেমন ধরুন, একজন সুপরিচিত ও প্রসিদ্ধ ‘আলিমের (ধরি তার নাম
‘ক’) অসংখ্য অভিমত থেকে ক�োন�ো একটা দুর্বল মতকে অন্য ক�োন�ো
একজন ‘আলিম (ধরি তার নাম ‘খ’) খণ্ডন করলেন। ত�ো ‘ক’-কে যারা
সম্মানের চ�োখে দেখে তাদের মাঝে এই বদ ল�োকটা (ধরি তার নাম ‘গ’)
এই খবর রটিয়ে বেড়াবে যে “‘খ’ আসলে ত�োমাদের ‘আলিমকে (মানে
‘ক’-কে ঘৃণা করে। তাকে অপমান ও সমাল�োচনার জন্য সে এসব করছে।”
এভাবে ‘গ’ ল�োকটা শাইখ ‘ক’-এর শুভানুধ্যায়ীদেরকে ধ�োঁকা দেয়।
তাদেরকে বিশ্বাস করিয়ে ছাড়ে যে শাইখ ‘খ’ ঘৃণা ও অপমানের স্বার্থে এবং
অহংকার ও উদ্ধত ভঙ্গিমায় এই খণ্ডন করেছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে
এই ল�োক শাইখ ‘ক’-এর সমর্থনে এবং তার প্রতি দাগান�ো অপবাদ সরাতে
এসব কাজ করছে। তার এ কাজ আল্লাহর কাছে কতই না সন্তোষজনক;
পুর�োপুরি তাঁর আনুগত্য অনুসারে। কিন্তু আসলে সদুপদেশের আড়ালে দুট�ো
জঘন্য ও নিষিদ্ধ জিনিসকে এক করেছে সে:
প্রথমত সে চাতুর্যতার সাথে এমন একটা কথা ছড়িয়ে দেয় যে, শাইখ
‘খ’ শাইখ ‘ক’-এর প্রতি বিদ্বেষবশত এ কাজ করেছে, এর মাধ্যমে তিনি
তাকে অবমাননা করেছেন, তিনি তার খায়েশের অনুসরণ করেছেন। অথচ
‘খ’-এর আসল উদ্দেশ্য ত�ো ছিল বিশ্বাসীদের আন্তরিক সদুপদেশ দেওয়া।
জ্ঞানের যেসব দিক গ�োপন করা অবৈধ, সেগুল�ো উন্মুক্ত করা।
দুষ্কৃতিকারী ল�োকটা শাইখ ‘খ’-এর মতটির পর্যাল�োচনাকে ফুলিয়ে
ফাঁপিয়ে ত�োলে, যাতে সদুপদেশ আর দীনের ‘আলিমদের সমর্থনের ছুত�োয়
সে তার খায়েশ পূরণ করতে পারে। তার অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে।
এ ধরনের চক্রান্ত যেন মারওয়ান ও তার অনুসারীরা যেভাবে অবিচার ও
নৈরাজ্য চালিয়েছিল সেগুল�োর মত�ো। ল�োকেদের মন প্রথমে তারা তাদের
দিকে ভিড়িয়ে পরে তাদের জনমতকে তারা ‘আলী ইবনু আবু তালিব, হাসান,
হুসাইন ও তাদের বংশধরদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ এ মহান
সাহাবি ও তার বংশধরদের উপর সন্তুষ্ট থাকুন।
25
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন
26
ইবন রাজাব হানবালি
27
ওষুধ
ত�ো কেউ যদি এমন চক্রান্তের শিকার হয় তাহলে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে,
তাঁর সহায় কামনা করে, সবুর করে। শেষ ভাল�ো তাকওয়া অবলম্বনকারীর
জন্য।
নবি ইউসুফের বেলায় তার আপন ভাইদের নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের
কারণে তাকে একের পর এক যেসব লাঞ্চনা সহ্য করতে হয়েছে, তার বর্ণনা
শেষে মহান আল্লাহ জানাচ্ছেন:
“এভাবেই আমরা ইউসুফকে জমিনে প্রতিষ্ঠিত করলাম।”
নবি ইউসুফ বলেছিলেন,
“আমি ইউসুফ। সে আমার ভাই। আল্লাহ সত্যিই আমাদের দাক্ষিণ্য
দিয়েছেন।” [১২:৯০]
অন্যদিকে ফিরাউনের চক্রান্তের শিকার হয়ে নবি মূসা যে অবর্ণনীয়
অপমানের গঞ্জনা সহ্য করেছেন তার বিপরীতে নিজের ল�োকদের বলেছিলেন,
“আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। সবুর কর�ো। এই দুনিয়া ত�ো আল্লাহরই।
তিনি তাঁর দাসদের মাঝে যাকে ইচ্ছা তাকে এটা দান করেন। তাকওয়া
অবলম্বনকারীদের জন্যই চূড়ান্ত সাফল্য বরাদ্দ।” [৭:১২৮]
আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন যে চক্রান্তকারীদের চক্রান্ত তাদের
নিজেদের উপরই এসে পড়বে:
“কুচক্র কুচক্রীদেরই ঘিরে ধরবে।” [ফাতির, ৪৩]
“এভাবে প্রত্যেক নগরে আমি কিছু নেতৃত্বস্থানীয় গুটিবাজদের
গুটি চালার সুয�োগ দিয়েছি। তাদের অজান্তে চুপিসারে এ দুরভিসন্ধি
তাদেরকেই চেপে ধরবে।” [৬:১২৩]
29
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন
30
প্রান্তটীকা