You are on page 1of 31

সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন

সদুপদেশ দিচ্ছেন
নাকি
তিরস্কার করছেন

ইবনু রাজাব হানবালি

অনুবাদ | মাসুদ শরীফ


© মাসুদ শরীফ ২০১৮
দা‘ওয়াহ উদ্দেশ্যে বিনামূল্য বিতরণ ও ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সর্বস্বত্ত্ব উন্মুক্ত।
বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ছাপালে অবশ্যই অনুবাদকের অনুমতি নিতে হবে।
ক�োন�ো সংকলন কাজে বা যে ক�োন�ো মাধ্যমে উদ্ধৃতির প্রয়�োজনে ‘ফেয়ার
ইউসেইজ’ নীতিমালা অনুযায়ী অনুবাদের যেক�োন�ো অংশ ব্যবহার করা যাবে।

পৃষ্ঠাসজ্জা: মাসুদ শরীফ


যেক�োন�ো পরামর্শ, সদুপদেশ, মন্তব্যের জন্য: masud.xen@gmail.com
মূল আরবিতে যেখানে নবিজি ও সাহাবিদের নামের পরে দু‘আসূচক বাক্য
এসেছে সেখানে বাংলা অনুবাদে যথাক্রমে ‫ ﷺ‬ও  ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রান্তটীকাও আরবির অনুরূপ রাখা হয়েছে।
ইংরেজি অনুবাদ: আবু মারিয়াম ইসমাঈল আলার্কন।
সূচি

7 • অবতারণা
15 • সদুপদেশের ধরন
17 • সুদপদেশের পদ্ধতি
21 • পরিণাম
23 • তিরস্কার
29 • ওষুধ
31 • প্রান্তটীকা
অনুবাদকের অর্পণ
লাগাতার অন্যায্য সমাল�োচনা বুকে মেখে যারা স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য
কাজ করে যাচ্ছেন...
অবতারণা

সারা জাহানের প্রভু আল্লাহর জন্য সব প্রশংসা। আল্লাহ ভীরুদের মাঝে


অগ্রগামী ও শেষ নবি মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার, সাহাবি এবং কিয়ামাত পর্যন্ত
ন্যায়নিষ্ঠভাবে তাদের অনুসারীদের সবার উপর ঝরুক আল্লাহর শান্তি ও
আশীর্বাদ।
আন্তরিক সদুপদেশ (নাসীহাহ) এবং তিরস্কারের পার্থক্য নিয়ে অল্প কথায়
সামগ্রিক ধারণা দেবে এমন কিছু কথা বলব এখানে। এ দুট�ো বিষয় একটি
আরেকটি সম্পূর্ণ বিপরীত। উভয় ক্ষেত্রেই মানুষকে অপছন্দনীয় কথা শুনতে
হয়। এজন্য বেশিরভাগ ল�োকই এ দুয়ের মাঝে পার্থক্য ব�োঝে না। সঠিক বুঝ
দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ। (সবাইকে তিনি সঠিক বুঝ দান করুন।)
একটু মন দিয়ে শুনুন: কারও ব্যাপারে যে কথাটা শুনতে সে ঘৃণা করবে
সেটা বলা হারাম। কখন?
যখন এর পেছনে মতলব হবে তার সমাল�োচনা, এবং তার ভুল আর
ঘাটতিগুল�ো ছড়িয়ে দেওয়া।
তবে ভুল কিবা ঘাটতিগুল�ো জানালে যদি সাধারণ মুসলিমদের কল্যাণের
সম্ভাবনা থাকে—অন্তত কিছু মুসলিমের জন্য হলেও—এবং এর পেছনে
একমাত্র উদ্দেশ্য যদি হয় কল্যাণকামিতা, তা হলে এটা নিষিদ্ধ নয়; বরং
তখন এ কাজে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
হাদীসশাস্ত্রের জার্‌হ তা‘দীল বিষয়ের আল�োচনায় হাদীসবিদগণ এ
মূলনীতির ব্যাপারে এককাট্টা। তারা বলেছেন ক�োন�ো হাদীস বর্ণনাকারীর
সমাল�োচনা করা এক জিনিস; আর তার তিরস্কার করা আরেক জিনিস।
এদুট�োকে যার এক মনে করেন, হাদীসবেত্তাগণ তাদেরকে খণ্ডন করেছেন। দু

7
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন

ধরনের মানুষ এ দুট�োকে এক করে দেখেন: সারাক্ষণ যারা নিজেদেরকে বিভিন্ন


‘ইবাদাতে মশগুল রাখেন (যে কারণে মানুষ তাদের বাহ্যিক আচার আচরণ
দেখে ভাবে তারা ব�োধ হয় খুব জ্ঞানী মানুষ), এবং যাদের জ্ঞান যথেষ্ট নয়।
(১) হাফিযদের (হাদীসবেত্তাগণের) ক�োন�ো এক বর্ণনাকারীর
সমাল�োচনা—তাদের মধ্যকার কার থেকে বর্ণনা গ্রহণ করা হবে, আর কার
থেকে গ্রহণ করা হবে না, এবং (২) কুরআন-সুন্নাহর অর্থ যে ভুল বুঝেছে,
যে ভুল কিছু অনুসরণ করেছে, সেগুল�ো শুধরে দেওয়া—এগুল�োর মাঝে
ক�োন�ো পার্থক্য নেই। যে বিষয়ে ল�োকটি ভুল করেছে সে বিষয়ে যেন তার
অনুসরণ করা না হয় এজন্যই ত�ো আসলে এ ভুল ধরিয়ে দেওয়া। ‘আলিমগণ
সর্বসম্মতভাবে এই সংশ�োধনের বৈধতার ব্যাপারে একমত।
এজন্যই আমরা দেখি তাফসীর, শার্‌হ, ফিক্‌হ, ‘আলিমদের মাঝে
ভিন্নমত সহ ইসলামের নানা শাস্ত্রীয় বিষয়ে তারা যেসব বই লিখেছেন সেগুল�ো
বিপরীত যুক্তিপ্রমাণ আর খণ্ডনে পূর্ণ। সাহাবি, তাবি‘ থেকে শুরু করে অনুজ
এবং অধুনা ‘আলিমদের দুর্বল মত নিয়ে তাদের এত সব পরিশ্রম।
জ্ঞানী ব্যক্তিরা কখন�ো সংশ�োধনের কাজটা থেকে নিরত হননি। কিন্তু তাই
বলে কাউকে খণ্ডন বা ভুল প্রমাণ করতে গিয়ে তাকে অবজ্ঞা, সমাল�োচনা
বা মানহানি করার মন�োভাব নিয়ে এগ�োননি। তবে যাকে খণ্ডন করছেন তার
কথাবর্তায় যদি নীতিবর্জিত ও জঘন্য কিছু থাকে সেক্ষেত্রে তারা ব্যতিক্রম
ছিলেন। কিন্তু তারপরও এসব ক্ষেত্রে ব্যক্তির নীতিবর্জিত ও অরুচিকর কথাকে
একপাশে ফেলে রেখে তার খণ্ডন ও বির�োধিতা করতেন। আর সবই হত�ো
স্পষ্ট প্রমাণ ও সুযুক্তির নিরিখে।
আল্লাহ তাঁর রাসূলকে যে সত্য সহ পাঠিয়েছেন, তা সবাইকে জানান�ো,
মানুষের পুর�ো জীবন ব্যবস্থাকে আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করা এবং তাঁর কথার
মর্যাদাকে সুউচ্চ করার অভিন্ন অভিলাষে ‘আলিমগণ এসব করেছেন।
তারা সবাই মানতেন জ্ঞানের ক�োন�ো না ক�োন�ো অংশ তাদের গ�োচরের
বাইরে থাকবে। একজনের পক্ষে এর পুর�োটা আয়ত্ত করা অসম্ভব। অতীত বা
বর্তমানের ক�োন�ো ‘আলিম কখন�ো দাবি করেননি, তিনি সব জেনে গেছেন।
সালাফদের মধ্যে যারা অত্যন্ত জ্ঞানী ও মেধাবি ছিলেন, যাদের জ্ঞানগত

8
ইবন রাজাব হানবালি

য�োগ্যতা নিয়ে কেউ সন্দেহ করবেন না, তাদেরকেও যদি সত্যটা জানান�ো
হত�ো, তার সেটা মেনে নিতেন। বয়সে কম কেউ যদি সঠিক জ্ঞান উপস্থাপন
করতেন, তারা নিজেদের পূর্বের মত থেকে সরে আসতেন। নিজেদের
সঙ্গীসাথি ও অনুসারীদের সত্যটা মেনে নিতে বলতেন। শুধু ভিন্ন কারও
কাছ থেকে এসেছে বলে সত্যের সামনে গ�ো ধরে থাকতেন না।
খলীফা ‘উমারে সময়ে এমন একটি ঘটনা আছে। আল্লাহ তার উপর
সন্তুষ্ট থাকুন। স্ত্রীদের ম�োহর কী পরিমাণ হবে সেটা নিয়ে তিনি একবার তার
ফায়সালা দিচ্ছিলেন। এক নারী উঠে তখন কুর’আনের একটা আয়াত তাকে
স্মরণ করিয়ে দিলেন। আয়াতটি ছিল:
যদি ত�োমরা ত�োমাদের স্ত্রীদের বদল করতে চাও, তাহলে তাকে বিপুল
স�োনাদান দিলেও তা ফিরিয়ে নেবে না। [সূরা নিসা’, ৪:২০]
আয়াতটি স্মরণ হতেই খলীফা তার আগের কথা ফিরিয়ে নিয়ে বললেন,
“একজন নারী ঠিক বলেছেন, আর একজন পুরুষ ভুল বলেছে।” বলা হয়
তিনি আরও বলেছেন, “‘উমারের চেয়ে ফিক্‌হি বিষয়ে বাকি সবার বুঝ
বেশি।”
প্রথিতযশা ‘আলিমদের মাঝে কেউ কেউ ক�োন�ো বিষয়ে নিজেদের
ফায়সালা দেওয়ার পর বলতেন, “আমরা শেষ পর্যন্ত এই মতে এসে স্থির
হয়েছি। কেউ যদি এর চেয়ে ভাল�ো ক�োন�ো ফায়সালা নিয়ে আসেন, আমরা
তা হলে সেটা মেনে নেব।”
ইমাম শাফি‘ঈ অত্যন্ত কঠ�োরভাবে এই মূলনীতি মেনে চলতেন। তার
ফায়সালার বিপরীতে ক�োন�ো সত্য থাকলে, সুন্নাহ থাকলে তার সঙ্গীরা যেন
সেটা অনুসরণ করে, মেনে নেয় এবং তার মতকে দেয়ালে ছুঁড়ে ফেলে
সে উপদেশ দিয়ে তিনি বলতেন, “আমার মতের মধ্যে অনেক কিছুই যে
কুর’আন-সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক পাবে তাতে ক�োন�ো সন্দেহ নেই। কারণ
সুমহান আল্লাহ-ই ত�ো বলেছেন,
কুর’আন যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে আসত, তা হলে
ত�োমরা এতে অবশ্যই অসংখ্য অসামঞ্জস্যতা খুজে
ঁ পেতে। [সূরা নিসা’
৪:৮২]

9
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন

“যত যার সাথে আমার বিতর্ক হয়েছে, আমি দেখেছি, সত্য হয় তার
মুখ থেকে বের হয়েছে, নয় আমার মুখ থেকে।”—তার কথার কী গভীরতা!
ভিন্নমত থেকেই হ�োক, আর বিতর্ক থেকেই হ�োক, সত্যটা ফুটে উঠুক—
এটাই ছিল তার একমাত্র চাওয়া।
যারা এ ধরনের মন�োভাব বুকের মাঝে আগলে রাখেন, কেউ তার ক�োন�ো
মত ছুঁড়ে ফেলে দিলে সেটা তার কখন�ো অপছন্দ হবে না। তার জীবদ্দশা
বা মৃত্যুর পরও যদি তার ক�োন�ো সুন্নাহবির�োধী মত শুধরে দেয়, তবু সেটা
তার খারাপ লাগবে না।
অন্যান্যদের ব্যাপারে অতীত ও বর্তমানের দীন সংরক্ষণকারী এবং দীনের
প্রয়�োজনে উঠে দাঁড়ান�ো ‘আলিমদের মন�োভাব এমনটিই ছিল। তাদের মতের
বিরুদ্ধে কেউ যদি প্রমাণসহ ভিন্নমত তুলে ধরতেন তা হলে সেটা তারা
ম�োটেও ঘৃণা করতেন না। শুধু তাই না, যে ভিন্নমতটা এল, তাদের দৃষ্টিতে
সেটা যদি যথেষ্ট শক্তিশালী না হত�ো, তখন তারা সেটা গ্রহণ না করলেও বা
নিজেদের মতের উপর সেটাকে না রাখলেও কিন্তু তাদের মন�োভাবে ক�োন�ো
হেরফের হত�ো না।
ইমাম আহমাদ ইসহাক বিন রাহাওয়াইকে অত্যন্ত প্রশংসার নজরে
দেখতেন। তার প্রসঙ্গে তিনি একবার বলেছিলেন, “যেখানে তার সঙ্গে কিছু
বিষয়ে আমার মত মেলে না, সেখানে অন্যান্যরা যে একে অন্যের সঙ্গে দ্বিমত
করবে সেটা খুবই স্বাভাবিক।” বা অনেকটা এমনই কিছু বলেছিলেন তিনি।
আল্লাহ তাদের দুজনের উপর দয়া করুন।
অনেক সময় ইসহাক ও অন্যান্য ইমামদের মত তার কাছে পেশ করা
হত�ো। তারা ক�োথা থেকে সেসব মত আহরণ করেছেন তা-ও উল্লেখ করা
হত�ো। তিনি তাদের মতের সাথে একমত হতেন না। আবার সেসব মত বা
প্রমাণাদি প্রত্যাখ্যানও করতেন না; অথচ সেগুল�োর ক�োনটার সঙ্গেই কিন্তু
তিনি সহমত হচ্ছিলেন না।
ইমাম আহমাদ হাতিম আসামের কাছে থেকে একটি ঘটনা বর্ণনা
করেছেন। কেউ তাকে জিজ্ঞেস করল, “আপনি অনারব। বাগ্মীও নন। কিন্তু

10
ইবন রাজাব হানবালি

যে-ই আপনার সাথে বিতর্ক করে, আপনি তাদের থামিয়ে দেন। কীভাবে
জেতেন আপনি?”
তিনি বললেন, “তিনটি জিনিস দিয়ে: ক�োন�ো বিষয়ে কেউ সঠিক কথা
বললে আমি খুশি হই। সে ভুল করলে আমি কষ্ট পাই। সে মুহূর্তে আমি চুপ
করে যাই, যাতে এমন ক�োন�ো কথা আমার মুখ দিয়ে তখন বের না হয় যেটা
হয়ত�ো তার ক্ষতি করবে।”—বা এরকম অর্থব�োধকই কিছু বলেছিলেন।
ইমাম আহমাদ ঘটনাটি বলার পর বলেছেন, “কী জ্ঞানী মানুষ ছিলেন
তিনি!”
ত�ো উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে দুর্বল মতকে ভুল প্রমাণ এবং তার
বিপরীতে সত্যটাকে স্পষ্ট করাকে ক�োন�ো ‘আলিম কুনজরে দেখেননি; তারা
বরং এটা পছন্দ করতেন। এবং যারা এ ধরনের কাজ করতেন তাদের
তারিফ করতেন।
এ বিষয়টা ক�োন�োভাবেই পরনিন্দার মাঝে পড়ে না।
কেউ তার সুন্নাহবির�োধী ক�োন�ো ভুল উন্মোচন হওয়াকে যদি অপছন্দ
করে, তা হলে তার সে অপছন্দকে আমলে নেওয়ার ক�োন�ো প্রয়�োজন
নেই। নিজের ভুলের বিরুদ্ধে সত্য উদ্ভাসিত হওয়াকে ঘৃণা করাটা ক�োন�ো
প্রশংসায�োগ্য বৈশিষ্ট নয়। নিজের মতের সঙ্গে মিলুক কি না মিলুক, সত্যের
প্রকাশ ও মুসলিমদেরকে তা জানিয়ে দেওয়ার বিষয়টিকে ক�োন�ো মুসলিম
অপছন্দ করতে পারবে না।
“আল্লাহ, তাঁর বই, তাঁর রাসূল, তাঁর ধর্ম, মুসলিমদের নেতা ও সাধারণ
জনতা”—এদের সবার প্রতি আন্তরিক সদুপদেশের নিদর্শন পাওয়া যাবে
এমন মন�োভাবের মাঝে। নবিজির ভাষায় এটাই ইসলামি জীবন ব্যবস্থা।
আল্লাহ তাঁর প্রতি আশীষ ও শান্তি বর্ষণ করুন।
অতীতে ভুলকারী ক�োন�ো ‘আলিমের ক�োন�ো ভুল কেউ সুন্দর আচরণ
বজায় রেখে সুন্দরভাবে খণ্ডন ও প্রতিবিধান করলে ক�োন�ো সমস্যা নেই।
এজন্য তাকে দ�োষও দেওয়া যাবে না। সে ‘আলিমের কারণে সে নিজে যদি
ভুল করে থাকে তাতেও তার ক�োন�ো দায় নেই।

11
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন

সালাফ বা পূর্বসূরি বিদ্বানগণ কারও মত প্রত্যাখ্যান করলে বলতেন,


‘তিনি সত্য বলেননি।’ কথাটি তারা নবিজির একটি বচন থেকে ধার নিয়েছেন।
একবার তাঁর কাছে খবর পৌঁছাল যে তিনি নাকি ফাতওয়া দিয়েছেন যে, বিধবা
নারীর সন্তান হওয়ার পর সাথে সাথে সে পুনরায় বিয়ে করতে পারবে না; ৪
মাস ১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন,
“আবুস-সানাবীল সত্য বলেনি।”|1|
ন্যায়পর ইমামগণ ক�োন�ো ক�োন�ো ‘আলিমের দুর্বল মত ছেড়ে দিতে
সাধ্যমত�ো চেষ্টা করতেন। খণ্ডন করলে সর্বোচ্চ নীতি বজায় রেখে তা
করতেন। আবু সাওর ও অন্যান্যদের যেসব মত শুধু তাদের একজনের কাছ
থেকেই পাওয়া যেত ইমাম আহমাদ সেগুল�োর সমাল�োচনা করতেন। এবং
খুব ভাল�োভাবেই করতেন সে কাজটা।
এ ত�ো গেল বাহ্যিক ও দৃষ্টিগ�োচর ব্যাপারগুল�ো। কাউকে সমাল�োচনায়
কারও উদ্দেশ্য যদি হয় শুধু সত্যকে স্পষ্ট করা এবং ভুল মত প্রদানকারীর
কথায় কেউ যেন ধ�োঁকা না-খায়, তা হলে সন্দেহ নেই তিনি তার নিয়্যাতের
কারণে পুরস্কৃত হবেন। এই নিয়্যাত রাখলে তিনি হবেন তাদের একজন
যারা আল্লাহ, তাঁর বই, তাঁর রাসূল, তাঁর ধর্ম, মুসলিমদের নেতা ও সাধারণ
জনতার প্রতি আন্তরিকতা দেখান। বয়স কম না বেশি সেটা ক�োন�ো কথা না।
এ ধরনের খণ্ডনের কিছু নমুনা পাবেন ইবনু ‘আব্বাসের মুত‘আহ (সাময়িক
বিয়ে), সার্‌ফ (অদলবদল), ‘উমরাতাইনসহ অন্যান্য যেসব মত ‘আলিমগণ
খণ্ডন করে অসম বলেছেন, বাতিল বলেছেন সেখানে।
এ ধরনের আরও কিছু ভাল�ো উদাহরণ পাবেন সা‘ঈদ ইবনুল-মুসায়্যিবের
দুর্বল কিছু মতের ভুল প্রমাণে। তার এরকম একটা মত ছিল যে, তিনবার
তালাকপ্রাপ্ত ক�োন�ো নারী অন্য একজনের সঙ্গে দৈহিক-মিলন ছাড়া কেবল
বৈবাহিক চুক্তিতে আবদ্ধ হলেই তিনি আবার তার প্রথম স্বামীর জন্য হালাল
হবেন। প্রমাণিত সুন্নাহর সঙ্গে বির�োধী এমন আরও কিছু মত ছিল তার।
হাসান বাসরির একটা মত ছিল যে ক�োন�ো স্ত্রী তার মৃত স্বামীর জন্য শ�োক
করতে পারবেন না। সম্মানিত ও অভিজ্ঞ ‘আলিমগণ এ ধরনের মত খণ্ডন
করেছেন। তারা ‘আতার দুর্বল মত খণ্ডন করেছেন। ‘আলিমদের সঙ্গে
তাউসের ভিন্নমতগুল�ো খণ্ডন করেছেন। যেসব ‘আলিমের জ্ঞান, সম্মান ও

12
ইবন রাজাব হানবালি

মর্যাদার ব্যাপারে কারও মধ্যে ক�োন�ো দ্বিমত নেই, তাদেরও ক�োন�ো ক�োন�ো
ভিন্নমত খণ্ডিত হয়েছে। কিন্তু একজন ‘আলিমও মনে করেননি এ ধরনের
এবং অন্যান্য যেসব ইস্যুতে যারা তাদের সাথে একমত হননি, তারা সেসব
ইমামের মর্যাদাহানি বা মানহানি করছেন।
আশ-শাফি‘ঈ, ইসহাক, আবু ‘উবাইদ, আবু সাওর-সহ হাদীস ও ফিক্‌হ
শাস্ত্রের অতীত ও বর্তমানের মুসলিম জ্ঞানীদের বইগুল�ো এসব মতের ব্যাখ্যায়
পূর্ণ। এখানে এসব উল্লেখ করতে গেলে আল�োচনা দীর্ঘ হয়ে যাবে।
কাউকে খণ্ডনের উদ্দেশ্য যদি হয় তার ভুল উন্মোচন করা, তার মানহানি
করা, তার অজ্ঞতা ও জ্ঞানের ঘাটতি দেখিয়ে দেওয়া তাহলে সেটা নিষিদ্ধ।
তার উপস্থিতিতে, অনুপস্থিতিতে, তার জীবিত অবস্থায় বা মৃত্যুর পর—ক�োন�ো
অবস্থাতেই এমন কাজ বৈধ নয়। মহান আল্লাহ কুরআনে এ ধরনের কাজের
নিন্দা করেছেন। যারা এহেন অপকর্ম করে তাদেরকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
নবিজিরও ‫ ﷺ‬তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন:
যারা মুখে বিশ্বাসের কথা বল�ো, কিন্তু অন্তরে কর�ো না সেসব ল�োকসকল
(শ�োন�ো): মুসলিমদের গালাগালি করবে না। তাদের খুঁত খুজে বেড়াবে না।
যে তাদের খুঁত খুঁজবে আল্লাহ তার খুঁত খুঁজে বের করবেন। আর আল্লাহ যখন
তার খুঁত উন্মোচন করবেন তখন সে নিজের ঘরে একাকী করলেও তার সেই
খুঁত ফাঁস করে দেবেন।|2|
আমাদের এসব কথা ইসলাম অনুসারীদের জন্য। যারা বিদ‘আতি ও
বিভ্রান্ত, যারা ‘আলিমদের অনুসরণ করে বলে দাবি করে, কিন্তু আদতে তা
নয়, তখন তাদের অনুসরণ করা থেকে সতর্ক করার জন্য তাদের অজ্ঞতা,
তাদের ভুলত্রুটি দেখিয়ে দেওয়া অনুম�োদিত।
সে যাহ�োক, আমাদের আল�োচনা এই প্রসঙ্গে নয়। আল্লাহ ভাল�ো জানেন।

13
সদুপদেশের ধরন

ক�োন�ো ‘আলিমকে খণ্ডন করা কারও কাজ দেখে যদি ব�োঝা যায়, এর মাধ্যমে
তার উদ্দেশ্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পথে আন্তরিক সদুপদেশ, তাহলে
তাকে মমতা, শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে দেখতে হবে। আমাদের পূরবর
্ব তী্ মুসলিম
ইমাম ও কল্যাণ ইচ্ছায় তাদের অনুসারীদের কর্মপন্থায় আমরা তা দেখেছি।
কারও কাজ দেখে যদি ব�োঝা যায় এই খণ্ডনের মাধ্যমে তার আসল
উদ্দেশ্য অন্যের মর্যাদাহানি করা, অপবাদ দেওয়া এবং খুঁত বের করা, তা
হলে এজন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে করে তার মত�ো অন্যান্যরা
এরকম কুৎসিৎ ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকবে।
কখন�ো খণ্ডনকারীর নিয়্যাত ব�োঝা যায় তার সমর্থন ও স্বীকৃতি থেকে।
কখন�ো তার কথা ও কাজ থেকে।
কারও মাঝে জ্ঞান, ধার্মিকতা, মুসলিম ইমামদের প্রতি শ্রদ্ধা ও উচ্চ
ধারণা থাকলে তার খণ্ডন-কর্ম বা ব্যাখ্যাবিশ্লেষণের ধরন এমন হবে যেটা
অন্যান্য ‘আলিমদের চ�োখে মানানসই হবে।
বই এবং গবেষণাপত্রের বেলায় লেখক ক�োন�ো কথাকে (কল্যাণের)
যে-উদ্দেশ্যে উল্লেখ করেছেন অবশ্যই সেভাবে বুঝতে হবে। লেখক যেভাবে
বলেছেন খণ্ডনকারী যদি সেভাবে না নেয়, তাহলে সে নিরপরাধ কারও
ব্যাপারে খারাপ ও সন্দেহমূলক চিন্তাকারীদের খাতায় নাম ওঠাবে। আল্লাহ ও
তাঁর রাসূল ‫ ﷺ‬এ ধরনের সন্দেহকে নিষিদ্ধ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন,
নিজে ক�োন�ো ভুল বা অপরাধ করে যে নিরপরাধ কাউকে দ�োষ দেয়,
সে নিজেই নিজের উপর মিথ্যাচার এবং স্পষ্ট পাপের ব�োঝা চাপিয়ে
নিয়েছে। [সূরা নিসা’, ৪:১১২]

15
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন

যার মধ্যে খারাপের ক�োন�ো নিশানা নেই তার ব্যাপারে সন্দেহমূলক


ধারণাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নিষিদ্ধ করেছেন। যে এমন ধারণা করে তার
মধ্যে দুট�ো জিনিস থাকে:
-- অপরাধ ও পাপ কামান�ো
-- নিরপরাধ কাউকে দ�োষী করা
সন্দেহমূলক ধারণাপ�োষণকারীর মাঝে যদি খারাপ কিছু থাকে—যেমন
বেইনসাফি, বিদ্বেষ, সামান্য ধার্মিকতা, বেপর�োয়া কথাবার্তা, পরনিন্দা ও
অপবাদ, আল্লাহ কাউকে যে-অনুগ্রহ আর আশীষ দিয়েছেন তা নিয়ে হিংসা,
অকালে কর্তৃত্ব পেতে প্রতিয�োগিতা—তা হলে এই আয়াতে যে-হুঁশিয়ারি
উচ্চারণ করা হয়েছে তা তার জন্য আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে।
জ্ঞানী ও বিশ্বাসী ল�োকজন এসব খাসলত পছন্দ করেন না। কারও
মধ্যে যদি এসব পাওয়া যায়, তাহলে বুঝতে হবে সে আসলে ‘আলিমদের
নিয়ে বিকৃত চিন্তা করে। আর কারও খণ্ডন করার কারণ যদি হয়ে দ্বিতীয়টি
(ছিদ্রান্বেষণ ও মানহানি), তাহলে তাকে ঘৃণা করে ও মর্যাদাহানি করে
ম�োকাবিলা করতে হবে।
তবে সার্বিকভাবে কারও মধ্যে যদি এরকম নির্দিষ্ট কিছু দেখা না যায় তা
হলে উত্তমভাবে তার কথাগুল�ো মেনে নিতে হবে। তখন আর ক�োন�োভাবেই
তা নেতিবাচকভাবে নেওয়াটা বৈধ হবে না।
‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, “আপনার ক�োন�ো মুসলিম ভাইয়ের
মুখ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ক�োন�ো কথার কারণে তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা
করবেন না। বরং, একে কল্যাণকর হিসেবে নেবেন।”

16
সুদপদেশের পদ্ধতি

কেউ যা শুনতে অপছন্দ করে সেটা তাকে সরাসরি কীভাবে বলবেন তা


নিয়ে এখন বলব।
কথা যদি আন্তরিক সদুপদেশের জন্য বলা হয় তা হলে সেটা ত�ো অবশ্যই
ভাল�ো। সালাফদের কেউ কেউ তাদের ভাইদের বলতেন, “আমি যা (শুনতে)
অপছন্দ করি তা না বলা পর্যন্ত আমাকে সদুপদেশ দিয়�ো না।”
কেউ যাতে তার ভুলগুল�ো এড়িয়ে চলতে পারে এজন্য ক�োন�ো ভাই যদি
তার অপর ভাইকে তার ভুল সম্পর্কে জানায়, তা হলে ভুলকারীর সংশ�োধনের
জন্য এটা ত�ো খুব ভাল�ো। যদি সেই ভুলের পেছনে ক�োন�ো কৈফিয়ত থাকে
তা হলে সেটা সে সাথে সাথে জানাতে পারবে।
কিন্তু উপদেশ যদি দেওয়া হয় কেবল কারও পাপের দায়ে তাকে দ�োষী
চিহ্নিত করার জন্য, তা হলে তা নিন্দনীয়, তিরস্কারয�োগ্য। সালাফদের
একজনকে বলা হয়েছিল: “কেউ আপনার ভুল ধরিয়ে দিলে কি পছন্দ
করবেন?”
তিনি বললেন, “যদি সে আমাকে দ�োষী করার জন্য করে, তা হলে না।”
পাপের দায়ে কাউকে দ�োষী করা এবং নিন্দা করা অপছন্দনীয়। একজন
ব্যভিচারী নারীকে আশি দ�োররা মারার হুকুম দিলেও তাকে নিন্দা করাকে
নিষেধ করেছেন নবিজি ‫ﷺ‬। হুদূদ বা ইসলামি আইন অনুযায়ী তাকে কশাঘাত
করা হয়েছে বটে, কিন্তু তাই বলে তার নিন্দা করা হয়নি। এর জন্য তাকে
তিরস্কারও করা হয়নি।

17
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন

আত-তিরমিযীতে মারফূ’ আকারের বর্ণিত একটি হাদীসে আছে নবিজি


‫ ﷺ‬বলেছেন,
ক�োন�ো মুসলিম ভাইকে কেউ যদি তার পাপের জন্য নিন্দা করে তাহলে সেই
পাপ সে নিজে না-করা পর্যন্ত তার মৃত্যু হবে না।|3|
যে-পাপ থেকে অনুশ�োচনা করা হয়েছে এখানে সেই পাপের ব্যাপারে
বলা হয়েছে।
ফুদাইল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “ঈমানদার লুকিয়ে রাখে, সদুপদেশ
দেয়। খারাপ ল�োক মর্যাদাহানি করে, তিরস্কার করে।”
এখানে সদুপদেশ ও তিরস্কারের গতিপ্রকৃতির কথা বলেছেন ফুদাইল।
সদুপদেশকে তিনি গ�োপনীয়তা রক্ষার সাথে জুড়ে দিয়েছেন, আর তিরস্কার
করাকে মিশিয়েছেন চাউর করার সাথে।
বলা হয়: “জনসমাবেশে কেউ যদি তার মুসলিম ভাইকে ভাল�ো কিছুর
আদেশ দেয় তা হলে সে আসলে তার নিন্দা করল।” অথবা অনুরূপ
অর্থব�োধকই কিছু বলা হয়েছে।
সালাফরা এ রকম জনসমুখে কাউকে ভাল�ো কাজের আদেশ দেওয়া
ও খারাপ কাজে নিষেধ করাকে অপছন্দ করতেন। বরং উপদেশদাতা যেন
নিভৃতে সদুপদেশ দেয় তারা এটা পছন্দ করতেন। এটাই আন্তরিক সদুপদেশের
নমুনা। কারণ সদুপদেশদাতার আসল উদ্দেশ্য উপদেশগ্রাহীর ভুল ছড়িয়ে
দেওয়া বা চাউর করা না। বরং তিনি যে ভুলের মধ্যে আছেন, তা থেকে
তাকে টেনে ত�োলা।
অন্যের ভুলত্রুটি ছড়িয়ে দেওয়া, ফাঁস করাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ‫ﷺ‬
নিষিদ্ধ করেছেন। সুমহান আল্লাহ বলেছেন,
যারা বিশ্বাসীদের মাঝে খারাপ ও অশ্লীল কাজের প্রাদর্ভা
ু ব চায়, তাদের
জন্য ইহকাল ও পরকালে জ্বালাময়ী শাস্তি আছে। আল্লাহ ভাল�ো
জানেন; ত�োমরা জান�ো না। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ আর মমতা ও
দয়া যদি ত�োমাদের উপর না-থাকত...! আল্লাহ বড় মমতাময়, দয়াময়।
[সূরা নূর, ১৯–২০]

18
ইবন রাজাব হানবালি

অন্যের দ�োষ গ�োপন রাখার ফাদীলা সম্পর্কে বেশ কিছু সংখ্যক হাদীসও
আছে।
যারা ভাল�ো কাজের আদেশ দেন তাদেরকে ক�োন�ো ক�োন�ো ‘আলিমেরা
বলতেন, “অপরাধীর ভুল গ�োপন রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা কর�ো। তাদের ভুল
ফাঁস করা ইসলামের দুরল্ব তা দেখিয়ে দেয়। যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি গ�োপন
রাখার দাবিদার তা হচ্ছে কারও ভুলত্রুটি।”
এজন্য কারও খারাপ ও অশ�োভন কাজ ছড়িয়ে দেওয়াকে নিন্দার সাথে
তুলনা করা হয়। দুট�োই দুষ্কৃতিকারীদের কাজ। এখানে খারাপ কাজটা থামান�ো
দুষ্কৃতিকারীর উদ্দেশ্য না; বা বিশ্বাসী ব্যক্তি সেই ভুল বা ত্রুটি এড়াক এটাও
তার কাম্য না; বরং তার একমাত্র উদ্দেশ্য তার বিশ্বাসী ভাইয়ের ভুলগুল�ো
রাষ্ট্র করা, তার সম্মান হানি করা। এ লক্ষ্যে সে কাজটা শুরু করে। এবং
চালিয়ে যায়। তার মতলব হল�ো তার বিশ্বাসী ভাইটির ভুলচুক ও বাজে
গুনগুল�ো ল�োকসমুখে ফাঁস করে দিয়ে তাকে অপদস্থ করা। যাতে এ দুনিয়ায়
তার কিছু ক্ষতি হয়।
অন্যদিকে যিনি আন্তরিকভাবে সদুপদেশ দেন তার আসল লক্ষ্য তার
বিশ্বাসী ভাইটির ভুলটাকে সমূলে উৎপাটন করা, এবং ভবিষ্যতে যেন আর
তা না করে সেজন্য তাকে সাহায্য করা। সুমহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে
এভাবেই বর্ণনা করেছেন:
ত�োমাদের কাছে ত�োমাদের মাঝ থেকেই একজন রাসূল এসেছেন।
ত�োমাদের যন্ত্রণাগুল�ো তাকে পীড়া দেয়। ত�োমাদের কল্যাণ চিন্তায় সে
উদ্বিগ্ন। বিশ্বাসীদের প্রতি সে করুণাসিক্ত, বড়ই রহমদিল। [৯:১২৮]
নবিজির সাহাবিদের প্রসঙ্গে বলেছেন,
মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। তার সঙ্গে যারা আছে তারা জঘন্য
অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠ�োর। কিন্তু পরস্পরের প্রতি অত্যন্ত
দয়াপরবশ। [ফাত্‌হ, ২৯]
বিশ্বাসীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন তারা সবুর
করে। দয়া ও মমতার দিকে পরস্পরকে সুপরামর্শ দেয়।

19
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন

যে দুট�ো জিনিস একজন দুষ্কৃতিকারীকে তার মুসলিম ভাইয়ের খারাপ


দিকটা চাউর করে দিতে, তাকে লজ্জা দিতে উসকে দেয় তা হল�ো: ক্ষমতা
আর রূঢ় স্বভাব। সঙ্গে য�োগ হয় তার বিশ্বাসী ভাইটিকে খিস্তি করার প্রতি মজা
এবং তার কিছু ক্ষতি করার খায়েশ। এগুল�ো আসলে শয়তানের খাসলত।
মানুষ যাতে জাহান্নামের কীট হতে পারে এজন্য সে অবিশ্বাস, পাপ ও
গ�োয়ার্তুমি স্বভাবকে তার কাছে ম�োহনীয় রূপে তুলে ধরে। অথচ আল্লাহ
আমাদের সাবধান করে দিয়ে বলেছেন,
শয়তান অবশ্যই ত�োমাদের শত্রু। তাকে শত্রু হিসেবেই নেবে। সে শুধু
তার দল ভারী করার মতলবে ডাকে যাতে তারা জাহান্নামের বাসিন্দা
হতে পারে। [ফাতির: ৬]
আদামের উপর তার ষড়যন্ত্রের বাণ কাজে লাগিয়ে তাকে জান্নাত থেকে
বের করে দেওয়ার ঘটনার কথা জানিয়ে আল্লাহ বলছেন,
আদাম সন্তান, ত�োমাদের বাবা-মা’কে শয়তান যেভাবে জান্নাত থেকে
বের করে দিয়েছিল, ত�োমাদেরকে সেভাবে যেন সে ক�োন�োভাবে
ধ�োঁকায় ফেলতে না পারে। সে তাদেরকে নগ্ন করে দিয়েছিল তাদের
লজ্জাস্থান উন্মুক্ত করার জন্য। [আ‘রাফ, ২৭]
একজন আন্তরিক সদুপদেশ প্রদানকারী আর একজন অবমাননাকারীর
মাঝে কত বিস্তর ফারাক! বিবেকবুদ্ধিহীন ল�োক ছাড়া আর কেউ এ দুয়ের
মাঝে গুলিয়ে ফেলে না।

20
পরিণাম

যে ল�োক তার বিশ্বাসী ভাইয়ের দ�োষ খুঁজে বেড়ায়, তার পিছে লেগে থাকে,
ছিদ্রান্বেষণ করে পরিণামে খ�োদ আল্লাহ তার ভুলত্রুটি মুখ�োশ উন্মোচন করে
দেবেন, তাকে অপমানের চূড়ান্ত করবেন; তা সে ওসব পাপ কাজ একান্তে
ঘরের নিরালাতেই করুক না কেন। নবিজি ‫ﷺ‬-এর অসংখ্য উক্তি আছে এ
ব্যাপারে। ইমাম আহমাদ, আবু দাঊদ, তিরমিযি বহু বর্ণনাসূত্রে এগুল�ো বর্ণনা
করেছেন।
ওয়াইলা বিন আসক’ সূত্রে তিরমিযি বর্ণনা করেছেন যে নবিজি সা.
বলেছেন,
“ত�োমার ভাইয়ের বিপাকে আনন্দোল্লাস ক�োর�ো না। নচেত আল্লাহ তাকে
এর জন্য ক্ষমা করে দেবেন। আর ত�োমাকে উল্টো তা দিয়ে পরীক্ষা করবেন।|4|
হাদীসটিকে তিনি হাসান গারীব বলেছেন।
মারফূ‘ ধাঁচে মু‘আয থেকে বর্ণনা করেছেন,
“ক�োন�ো পাপের কারণে যে তার ভাইয়ের তিরস্কার করবে, সে নিজে তা না
করা পর্যন্ত মারা যাবে না।”|5|
এর বর্ণনাসূত্র মুনকাতি’ (বিচ্ছিন্ন)।
হাসান বলেছেন, “বলা হত�ো, ‘কেউ ক�োন�ো পাপ নিয়ে তাওবা করার
পরও কেউ যদি তার সেই পাপ নিয়ে তিরস্কার করে, তা হলে আল্লাহ তাকে
সেই অপরাধ দিয়ে পরীক্ষা না করা পর্যন্ত তার মৃত্যু দেবেন না।’”

21
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন

দুর্বল বর্ণনাসূত্রে ইবনু মাস‘ঊদ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেন,


“কথার কারণে বিপর্যয় হয়। কেউ যদি অন্য কাউকে এই বলে তিরস্কার করে
যে সে কুকুরির দুধ খেয়েছে, তাহলে সে নিজেও সে দুধ খাবে।”
সম অর্থ ব�োধক অনুরূপ কিছু কথা সালাফদের আরও অনেকে বলে
গিয়েছেন।
ইবনু সিরীন একবার ঋণের টাকা শ�োধ করতে না পারায় কারাবন্দি
হন। অনুতাপের সুরে তখন বলেছেন, “ক�োন অপরাধের কারণে আজ এ
দশা আমি তা বুঝেছি। ৪০ বছর আগে আমি এক ল�োককে তিরস্কার করে
বলেছিলাম, ‘তুমি ত�ো দেউলিয়া’।”

22
তিরস্কার

তিরস্কারের বাহ্যিক ধরন হচ্ছে: সুদপদেশের ম�োড়কে কারও খারাপ কাজ


ফাঁস করে দেওয়া এবং চাউর করে বেড়ান�ো। এরা মুখে বলে এই খারাপ
কাজগুল�োই তাকে এই কাজে বাধ্য করেছে—হ�োক সেটা নির্দিষ্ট, বা সাধারণ
ক�োন�ো খারাপ কাজ। ভেতরে ভেতরে আসলে তার উদ্দেশ্য তিরস্কার এবং
ক্ষতি করা। সে আসলে মুনাফিকদের (ভণ্ড) ভাই। কুরআনের বহু জায়গায়
আল্লাহ এদের অবমাননা করেছেন। যারা মুখে ভাল�ো কথা বা কাজ ফুটিয়ে
ত�োলে, কিন্তু মনের ভেতর থাকে নষ্ট ও ভ্রষ্ট মতলব আল্লাহ অবশ্যই তাদের
অপদস্থ করেন। সূরা তাওবায় এমন কাজকে তিনি ভণ্ডামির সঙ্গে তুলনা
করেছেন। সেখানে তিনি তাদের মুনাফিকি খাসলতের মুখ�োশ উন্মোচন
করেছেন, তাদের নিকৃষ্ট চরিত্রকে ফাঁস করে দিয়েছেন:
যারা ক্ষতি করার জন্য, অবিশ্বাসের তাড়না আর বিশ্বাসীদের মাঝে
বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য মাসজিদ বানিয়েছে—উদ্দেশ্য হল�ো ইতিপূর্বে
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে তাদের ঘাঁটি
হিসেবে ব্যবহার— দেখবে তারা আল্লাহর দ�োহাই দিয়ে বলবে,
‘আমাদের উদ্দেশ্য খুবই ভাল�ো,’ কিন্তু আল্লাহ সাক্ষী: এরা চরম
মিথ্যাবাদী। [৯:১০৭]
নিজেদের কর্মে যারা উল্লাস করে, আর যা করেনি তা নিয়ে স্তব শুনতে
চায়, ভেব�ো না তারা শাস্তি থেকে রেহাই পাবে। চরম যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি
অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। [৩:১৮৮]
আয়াতটি ইহুদিদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছিল।
নবিজি ‫ ﷺ‬তাদেরকে একটা বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন। কিন্তু তারা
আসল খবর গ�োপন করে ভুলভাল একটা খবর জানিয়ে দেয় তাঁকে। কিন্তু
ভাব ধরে যে তারা সঠিক খবরটাই জানিয়েছে। এর জন্য তারা আবার তাঁর

23
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন

কাছ থেকে প্রশংসাবাণীও দাবি করে। ওদিকে খবর গ�োপন করে অনেক বড়
কিছু হাসিল করেছে ভেবে তারা ভীষণ উল্লাসও করে। আবার নবিজি যে
তাদের জিজ্ঞেস করেছে এটাও তাদের যথেষ্ট পুলকিত করেছিল। এ আয়াতের
ব্যাখ্যায় ইবনু ‘আব্বাস (আল্লাহ তার ও তার বাবার উপর সন্তুষ্ট থাকুন)
এমনটিই বলেছেন। বুখারি ও মুসলিমে এর উল্লেখ আছে।
আবু সা‘ঈদ খুদরী বলেছেন,
আল্লাহর রাসূল ‫ ﷺ‬লড়াইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হলে ভণ্ডরা তার সঙ্গে যেত না।
আল্লাহর রাসূলের বির�োধিতা করে পিছে পড়ে থাকা নিয়েই তারা আনন্দ কর।
আল্লাহর রাসূল ‫ ﷺ‬যখন লড়াই থেকে ফিরে আসতেন, তারা তখন আল্লাহর
দ�োহাই দিয়ে নানা অজুহাত খাড়া করত। আবার যা করেনি তা নিয়ে প্রশংসা
পেতে চাইত। আয়াতটি এ প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়।”
এ জন্য এ ধরনের খাসলত ইহুদি-মুনাফিকের খাসলত। এরা উপরে
উপরে একটা কাজ করে, দেখায় যে সে ভাল�ো কাজ করছে, কিন্তু ভেতরে
ভেতরে থাকে তার বদমতলব হাসিলের খায়েশ। ত�ো বাহ্যিকভাবে তার নেক
সুরতের কাজ দেখে মানুষ তাকে বাহবা দেয়; কিন্তু আসলে ত�ো ভেতরে
ভেতরে সে তার চেপে রাখা খারাপ উদ্দেশ্য সাধন করেছে। উপরে উপরে
ভাল�োর যে চিত্র সে পেশ করেছে তার সুবাদে প্রশংসার ফুল সে বসে বসে
খুব উপভ�োগ করে—কিন্তু আসলে ত�ো ভেতরে তার মতলব খারাপ—আর
অন্যদিকে নিজের খারাপ উদ্দেশ্য হাসিল হতে দেখে তৃপ্তির ঢেঁকুর ত�োলে।
এভাবে ধ�োঁকা দিয়ে তার ষড়যন্ত্র সুন্দরভাবে কার্যকর হয়। তার ‘কল্যাণ
কামনা’ পূর্ণ হয়।
যাদের চরিত্রে এ ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকবে সে অবশ্যই এই আয়াতের
হুমকির মধ্যে পড়বে। এক যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির হুঁশিয়ারি করা হয়েছে তাকে।
এ ধরনের নীচু কাজের উদাহরণ হল�ো: সে যখন যখন চায় ল�োকজন
কারও থেকে মুখ ফিরিয়ে নিক, তখন সে অন্যের ব্যাপারে কুৎসা রটায়,
তাচ্ছিল্য করে, তার অপরাধ ফাঁস করে দেয়। তার এমন করার কারণ হয় সে
তার ক্ষতি করতে ভাল�োবাসে, কিংবা তার প্রতি তার বিদ্বেষ আছে, কিংবা
সম্পদ, নেতত্বৃ বা অন্য ক�োন�ো নিন্দনীয় কারণে তার সঙ্গে সে প্রতিদ্বন্দ্বিতার

24
ইবন রাজাব হানবালি

ভয় করে। এজন্য ধর্মীয় ক�োন�ো কারণে ল�োকসমুখে তাকে হেয় করা ছাড়া
তার মকসুদ পূরণের আর ক�োন�ো তরিকা সে খুঁজে পায় না।
যেমন ধরুন, একজন সুপরিচিত ও প্রসিদ্ধ ‘আলিমের (ধরি তার নাম
‘ক’) অসংখ্য অভিমত থেকে ক�োন�ো একটা দুর্বল মতকে অন্য ক�োন�ো
একজন ‘আলিম (ধরি তার নাম ‘খ’) খণ্ডন করলেন। ত�ো ‘ক’-কে যারা
সম্মানের চ�োখে দেখে তাদের মাঝে এই বদ ল�োকটা (ধরি তার নাম ‘গ’)
এই খবর রটিয়ে বেড়াবে যে “‘খ’ আসলে ত�োমাদের ‘আলিমকে (মানে
‘ক’-কে ঘৃণা করে। তাকে অপমান ও সমাল�োচনার জন্য সে এসব করছে।”
এভাবে ‘গ’ ল�োকটা শাইখ ‘ক’-এর শুভানুধ্যায়ীদেরকে ধ�োঁকা দেয়।
তাদেরকে বিশ্বাস করিয়ে ছাড়ে যে শাইখ ‘খ’ ঘৃণা ও অপমানের স্বার্থে এবং
অহংকার ও উদ্ধত ভঙ্গিমায় এই খণ্ডন করেছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে
এই ল�োক শাইখ ‘ক’-এর সমর্থনে এবং তার প্রতি দাগান�ো অপবাদ সরাতে
এসব কাজ করছে। তার এ কাজ আল্লাহর কাছে কতই না সন্তোষজনক;
পুর�োপুরি তাঁর আনুগত্য অনুসারে। কিন্তু আসলে সদুপদেশের আড়ালে দুট�ো
জঘন্য ও নিষিদ্ধ জিনিসকে এক করেছে সে:
প্রথমত সে চাতুর্যতার সাথে এমন একটা কথা ছড়িয়ে দেয় যে, শাইখ
‘খ’ শাইখ ‘ক’-এর প্রতি বিদ্বেষবশত এ কাজ করেছে, এর মাধ্যমে তিনি
তাকে অবমাননা করেছেন, তিনি তার খায়েশের অনুসরণ করেছেন। অথচ
‘খ’-এর আসল উদ্দেশ্য ত�ো ছিল বিশ্বাসীদের আন্তরিক সদুপদেশ দেওয়া।
জ্ঞানের যেসব দিক গ�োপন করা অবৈধ, সেগুল�ো উন্মুক্ত করা।
দুষ্কৃতিকারী ল�োকটা শাইখ ‘খ’-এর মতটির পর্যাল�োচনাকে ফুলিয়ে
ফাঁপিয়ে ত�োলে, যাতে সদুপদেশ আর দীনের ‘আলিমদের সমর্থনের ছুত�োয়
সে তার খায়েশ পূরণ করতে পারে। তার অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে।
এ ধরনের চক্রান্ত যেন মারওয়ান ও তার অনুসারীরা যেভাবে অবিচার ও
নৈরাজ্য চালিয়েছিল সেগুল�োর মত�ো। ল�োকেদের মন প্রথমে তারা তাদের
দিকে ভিড়িয়ে পরে তাদের জনমতকে তারা ‘আলী ইবনু আবু তালিব, হাসান,
হুসাইন ও তাদের বংশধরদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ এ মহান
সাহাবি ও তার বংশধরদের উপর সন্তুষ্ট থাকুন।

25
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন

‘উসমান রা.-এর মৃত্যুর পর ‘আলী রা. ছাড়া আর কাউকে খলীফার


পদের জন্য মুসলিম উম্মাহ অধিকতর য�োগ্য মনে করেনি। ল�োকসকল তার
কাছে আনুগত্যের শপথ করেছিল। কিন্তু যারা নবমন�োনীত খলীফার থেকে
ল�োকজনদের মন বিষিয়ে তুলতে চেয়েছিল, তারা সাবেক খলীফা ‘উসমানের
নিষ্ঠুর ও কলঙ্কজন মৃত্যুকে সামনে তুলে ধরে। এ পর্যন্ত তাদের কথা ঠিক
ছিল। কিন্তু তারা এর সঙ্গে য�োগ করে এই হত্যার পেছনের কলকাঠি নেড়েছে
খ�োদ ‘আলী রা.। অথচ সেটা চরম মিথ্যা ও জঘন্য অপবাদ।
‘আলী রা. কসম কেটে এসব অপবাদকে অস্বীকার করেছেন। তিনি তার
কসমে অবশ্যই সত্য ছিলেন। তিনি নিরপরাধ ছিলেন। আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট
থাকুন। কিন্তু ও ল�োকগুল�ো তার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। তারা দাবি করে
তাদের এ লড়াই দীনের জন্য, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য। তারা খলীফার
সন্তানদের বিরুদ্ধেও এ লড়াই চালিয়ে যায়।
এ ল�োকগুল�ো এই রটনাকে রাষ্ট্র করার জন্য জুমু‘আর দিন মিম্বারে
দাঁড়িয়ে এগুল�ো বলা শুরু করে। যেক�োন�ো জনসমাগমে এসব বিষয় ছড়িয়ে
দিতে থাকে। এক সময় তাদের অনুসারীদের তারা গেলাতে সক্ষম হয় যে
তার যা বলছে তা-ই সঠিক। ‘উসমানের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে,
‘আলী ও তার সন্তানদের চেয়ে তারাই খলীফার পদের হকদার বেশি। ‘উসমান
হত্যার বদলা নেওয়ার অধিকারও তাদের বেশি। এসব কাজের মাধ্যমে তারা
‘আলী ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে পেরেছিল। তাদের
বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লেলিয়ে দিতে পেরেছিল সাধারণ মানুষকে। এটা তাদের
রাজতন্ত্রকে ভিত্তি দিয়েছিল। এর পরিণতিতেই তাদের রাজত্ব কায়েম হয়।
অথচ আড়ালে তাদের বাতচিতের ধরন হত�ো এমন:
“‘উসমানের বিরুদ্ধে সাহাবিদের মধ্যে ‘আলীর চেয়ে বেশি শুভানুধ্যায়ী
কেউ ছিলেন না।”
একজন জিজ্ঞেস করত, “তা হলে ল�োকজন তাকে গালাগাল করত
কেন?”
“তা না হলে যে রাজত্ব কায়েম হত�ো না।”

26
ইবন রাজাব হানবালি

এত কথার সারমর্ম হচ্ছে: তারা যদি ল�োকজনদের মনকে ‘আলী ও তার


সন্তানদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে না দিত, ‘উসমানের সাথে হওয়া অবিচারটাকে
তাদের উপর আর�োপ না করত, তা হলে তাদের প্রতি জনমানুষের হৃদয়ে
ক�োন�ো সহানুভূতি পয়দা হত�ো না। কারণ, ‘আলী ও তার সন্তানদের মর্যাদা
ও গুনাবলি ল�োকজনদের ভাল�োই জানা ছিল। কারণ অতীতে যথাসম্ভব দ্রুত
তারা পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করতেন, আনুগত্যের শপথ করতেন।
এক পর্যায়ে তাদের এ হীন বৈশিষ্ট্যের কারণে উমাইয়াহ রাজবংশ ধ্বংস
হয়ে যায়। ল�োকজন তাদের অমান্য করা শুরু করে।

27
ওষুধ

ত�ো কেউ যদি এমন চক্রান্তের শিকার হয় তাহলে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে,
তাঁর সহায় কামনা করে, সবুর করে। শেষ ভাল�ো তাকওয়া অবলম্বনকারীর
জন্য।
নবি ইউসুফের বেলায় তার আপন ভাইদের নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের
কারণে তাকে একের পর এক যেসব লাঞ্চনা সহ্য করতে হয়েছে, তার বর্ণনা
শেষে মহান আল্লাহ জানাচ্ছেন:
“এভাবেই আমরা ইউসুফকে জমিনে প্রতিষ্ঠিত করলাম।”
নবি ইউসুফ বলেছিলেন,
“আমি ইউসুফ। সে আমার ভাই। আল্লাহ সত্যিই আমাদের দাক্ষিণ্য
দিয়েছেন।” [১২:৯০]
অন্যদিকে ফিরাউনের চক্রান্তের শিকার হয়ে নবি মূসা যে অবর্ণনীয়
অপমানের গঞ্জনা সহ্য করেছেন তার বিপরীতে নিজের ল�োকদের বলেছিলেন,
“আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। সবুর কর�ো। এই দুনিয়া ত�ো আল্লাহরই।
তিনি তাঁর দাসদের মাঝে যাকে ইচ্ছা তাকে এটা দান করেন। তাকওয়া
অবলম্বনকারীদের জন্যই চূড়ান্ত সাফল্য বরাদ্দ।” [৭:১২৮]
আল্লাহ আমাদের জানিয়েছেন যে চক্রান্তকারীদের চক্রান্ত তাদের
নিজেদের উপরই এসে পড়বে:
“কুচক্র কুচক্রীদেরই ঘিরে ধরবে।” [ফাতির, ৪৩]
“এভাবে প্রত্যেক নগরে আমি কিছু নেতৃত্বস্থানীয় গুটিবাজদের
গুটি চালার সুয�োগ দিয়েছি। তাদের অজান্তে চুপিসারে এ দুরভিসন্ধি
তাদেরকেই চেপে ধরবে।” [৬:১২৩]

29
সদুপদেশ দিচ্ছেন নাকি তিরস্কার করছেন

তাছাড়া এর সপক্ষে আরও অনেক ঘটনা আছে। খুব সতর্কভাবে কেউ


যদি মানুষের বাস্তবতা অনুসন্ধান করে, পৃথিবীর ইতিহাস ছেনে দেখে, তাহলে
এরকম অসংখ্য নজির খুঁজে পাবে যেখানে কিনা নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই
পড়ে মরেছে চালবাজ ল�োক। তাদের এসব কাজ বরং আক্রান্তকারী ব্যক্তির
পাপম�োচন হয়েছে। তার পরকালীন পরিত্রাণের কারণ হয়েছে।
এ ধরনের ঘটনাবলি উল্লেখ করলে বইটা বড় হয়ে যাবে। কথা বেশি
হয়ে যাবে।
সঠিক বুঝ আল্লাহই দেন। সঠিক পথ দেখান�োর দায়িত্ব তাঁর হাতেই।
তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তিনি সেরা অভিভাবক। আল্লাহর শান্তি ও
আশীষ ঝরুক মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার ও সাহাবিদের প্রতি।

30
প্রান্তটীকা

|1| বুখারি, মাগাযি (৩৭৭০), মুসলিম, তালাক (১৪৮৪), নাসাঈ,


তালাক (৩৫১৮), আবু দাউদ, তালাক (২৩০৬), ইবনু মাজাহ, তালাক,
(২০২৮), আহমাদ (৪৩২/৬)
|2|  আবু দাউদ, আদাব (৪৮৮০), আহমাদ (৪২৪/৪)
|3| তিরমিযি, সিফাতুল-কিয়ামাহ ওয়ার-রাকাইক ওয়াল-ওয়ারা‘
(২৫০৫)
|4| তিরমিযি, সিফাতুল-কিয়ামাহ ওয়ার-রাকাইক ওয়াল-ওয়ারা‘
(২৫০৬)
|5| তিরমিযি, সিফাতুল-কিয়ামাহ ওয়ার-রাকাইক ওয়াল-ওয়ারা‘
(২৫০৫)

You might also like