You are on page 1of 2

উপন্যাস : ‘অপেক্ষা’ (হুমায়ূন আহমেদ)

সারাংশ : হুমায়ূন আহমেদ (১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ - ১৯ জুলাই ২০১২) ছিলেন একজন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক,
ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা।তাঁর পিতার নাম শহীদ ফয়জুর
রহমান আহমদ এবং মাতার নাম মা আয়েশা ফয়েজ। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি
কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক বলে গণ্য করা
হয়।
‘অপেক্ষা’ হুমায়ূন আহমেদ রচিত একটি উপন্যাস। হুমায়ূন আহমেদের অন্যান্য উপন্যাসের মতোই এ
উপন্যাসটির প্রেক্ষাপটও একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে ঘিরে। উপন্যাসটিতে একইসাথে মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন
এবং প্রিয় মানুষের প্রতি অকৃ ত্রিম ভালোবাসার নিদর্শন ফু টিয়ে তোলা হয়েছে। ‘অপেক্ষা’ উপন্যাসে স্ত্রী সুরাইয়া
আর ৫ বছরের সন্তান ইমনকে নিয়ে ছিল হাসানুজ্জামানের ছোট পরিবার। তাদের এই সংসারে তাদের সাথে থাকত
হাসানুজ্জামানের ছোট ভাই ফিরোজ। মাঝে মাঝে কয়েকদিনের জন্য তাদের মা বেড়াতে আসত। একদিন অফিসে
যাওয়ার পর আর ফিরে আসে না হাসানুজ্জামান। নানাভাবে খোঁজাখুঁজির পরও তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু
সুরাইয়া বিশ্বাস করে তার স্বামী একদিন ফিরে আসবে। আর এই অপেক্ষাতেই সে বছরগুলি পার করে দেয়। কিন্তু
তার ব্যবহারে ভিন্নতা আসে। সে আস্তে আস্তে নিজেকে গুঁটিয়ে ফেলে। মাঝে মাঝেই অতি অল্প কারণেই তার
ছেলে-মেয়েদের প্রতি অমানুষিক অত্যাচার করে। পরবর্তীতে সুরাইয়া তার সন্তানদের নিয়ে তার ভাইয়ের বাড়িতে
যায়। ধীরে ধীরে ইমন বড় হয়। এক সময় এক পীর এসে সুরাইয়াকে বলে যেদিন ইমনের বিয়ে হবে সেদিন ইমনের
বাবা ফিরে আসবে। একদিন বিয়ে হয় ইমনের। এভাবেই এগিয়ে চলে তাদের জীবন।

উপন্যাসের শক্তিশালী দিকসমূহ : একটি ভালো উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মূল গল্পের সাথে
অন্যান্য পার্শ্বগল্প একই সমান্তরালে এগিয়ে যাবে। অপেক্ষা উপন্যাসে এই গুণটি বেশ ভালোভাবেই লক্ষ্য করা
যায়। স্বামীর জন্য সুরাইয়ার অপেক্ষা করাটা মূল গল্প হলেও গল্পের নায়ক ইমন ও নায়িকা মিতু র অন্যরকম প্রেম
কাহিনীটাও বেশ সুন্দরভাবে ফু টে উঠেছে। উপন্যাসের অধিকাংশ সময়ে একটা করুণ ধারা বয়ে গেছে, সেই
করুণ ধারার বিপরীতে মিতু আর ইমনের মজাদার সংলাপগুলো পাঠকের মনে বেশ খানিকটা স্বস্তির হাওয়া হয়েই
এসেছে। ইমনের কাছে পাঠানো মিতু র উড়ো প্রেমের চিঠি কিংবা বেবিটেক্সিতে বসে ভবিষ্যতে ইমনকে বিয়ে করার
কথা বলে হকচকিয়ে দেওয়ার সংলাপগুলো পড়ে যেকোনো পাঠকই হেসে উঠবেন। এছাড়া সুরাইয়ার ভাই
জামিলুর রহমানের পরিবারের গল্পটাও বেশ ভালোভাবে উঠে এসেছে। পরিবারের কর্তা শুধুমাত্র নিজের কাজ
নিয়ে ব্যস্ত থাকলে সেই পরিবারের গতিপথ ঠিক কতটা এলোমেলো হতে পারে তার বাস্তব প্রতিচ্ছবি ছিল এই
জামিলুর রহমানের পরিবার। এই পরিবারের দুই ছেলে শোভন ও টোকন যেন অসংখ্য বিপথে চলে যাওয়া
ছেলেদেরই প্রতিনিধিত্ব করে।

উপন্যাসের দূর্বল দিকসমূহ : স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে বাস্তব জগত থেকেই আলাদা হয়ে যায়। দুই
সন্তানের প্রতি তার আচরণও অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। নিজের সন্তানদের প্রতি তার এই অসদাচরণ অনেক
পাঠকের মনেই বিরক্তির জন্ম দেবে। অন্যদিকে এমন এক দুর্ঘটনা ঘটে যার ফলে ইমনের সমস্ত চেনা জগতই
এলোমেলো হয়ে যায়। লেখাপড়াতেও আর মন দিতে পারে না। সারাদিনই ভবঘুরের মতো রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে
থাকে সুরাইয়ার অপেক্ষা শেষ হবে কিনা এই অনিশ্চয়তাকে ছাপিয়ে ইমনের জীবনের এই প্রশ্নটাই একসময়
পাঠকের মনে বড় ঝড় তোলে।

ছোটগল্প : ‘স্তন’ (সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্)


সারাংশ : সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ছিলেন একজন বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার এবং নাট্যকার। সৈয়দ
ওয়ালীউল্লাহ্ (১৯২২-১৯৭১) চট্টগ্রাম শহরের ষোলশহরে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ আহমদউল্লাহ
এবং মাতার নাম নাসিম আরা খাতু ন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ রচিত ছোট গল্পগুলো সাধারণ মানুষের জীবন যুদ্ধের
চিত্র বহন করে, মানুষের জীবনের দুঃখ,বেদনা,সুখ,সমস্যা ইত্যদি বিষয়বস্তু তার বেশির ভাগ গল্পে ফু টে উঠেছে।
‘স্তন’ গল্পটি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ এর “দুই তীর এবং অন্যান্য গল্প”(১৯৬৫) থেকে নেওয়া হয়েছে। মাতৃ হারা এক
সন্তানের দুধ খাওয়াকে কেন্দ্র করে গল্পের কাহিনী, আবু তালেব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন সাহেব এর ছোট মেয়ে
প্রসবকালে মারা গেলে তার সন্তানকে নিয়ে সালাহ্‌উদ্দিন সাহেব চিন্তায় পড়েন। অপরদিকে সালাহউদ্দিন সাহেবের
আত্মীয় কাদেরের স্ত্রী মাজেদা একটি সন্তান প্রসব করে কিন্তু মাজেদার জন্ম দেওয়া সন্তান প্রসবের কয়েক ঘন্টার
মধ্যেই মারা যায়, সালাহউদ্দিন্ সাহেবের মনে হয় কাদেরের স্ত্রী এবং এই শিশু পরষ্পরের পরিপূরক হতে পারে,
এজন্য তিনি কোনো খবর না পাঠিয়ে সোজা কাদেরের বাড়িতে উপস্থিত হন এবং কাদেরের সাখে বিষয়টি
আলাপ করেন, কাদেরের স্ত্রী মাজেদা শিশুটির দুধ খাওয়ানোর দায়িত্ব গ্রহন করে কিন্তু সমস্যা হলো মাজেদার স্তনে
দুধ না আসা,মাজেদার কাছে মনে হয় তার দুধে তার স্তন স্ফীত হয়ে এসেছে কিন্তু শিশু সন্তানের মুখে মাজেদার
স্তনের কু চাগ্র প্রবেশ করালে শিশুুট দুধের অস্তিত্ব পায় না। মাজেদার মনে প্রশ্ন জাগে কেন এমন হলো, নিজের সন্তান
বেচেঁ নেই বলে কি তার এ দশা হয়েছে না অপরের সন্তান বলে নিজের মনে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃ ত অর্থে শিশুটি
অপরের হলেও মাতৃ ত্ব প্রকাশে মনে কোনো হেরফের হয় না মাজেদার । নিজের মনে অনুশোচনা জাগে মাজেদার
এবং তার কাছে মনে হয় তার স্তনের কু চাগ্রে কি যেন আটকে রয়েছে বলে দুধটা সরছে না। বোতলের গলায় ছিপি
আটকে গেলে যেমন কিছু সরে না এও তেমনি হয়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্য মাজেদা মাথার কাঁটা হাতে তু লে
নেয় এবং নিজের স্তনের কু চাগ্র বিদ্ধ করে। সেই কু চাগ্র দিয়ে অশ্রান্তভাবে দুধ ঝরে। তবে সে-দুধের বর্ণ সাদা নয়
,লাল।

গল্পের শক্তিশালী দিকসমূহ : ‘স্তন’ গল্পটি গভীর অর্ন্তভেদী। মানুষের সম্পর্কে র ব্যক্তিস্বার্থ’র তু লনায়
মানবতার সম্পর্ক কতখানি মহৎ এবং গভীর সেই বাতার্টি এই রূপকধর্মী গল্পের মধ্যে নিহিত আছে। গল্পে এক
অসম্ভবকে প্রায় সম্ভব করে তু লেছেন ওয়ালীউল্লাহ্। গল্পে, সালাহ্উদ্দিন নিজে শোকগ্রস্ত, তার আদরের মেয়ে
তিনদিনের বাচ্চা রেখে মারা গেছে। বাচ্চাটি খেতে পারছে না, এ এক বেদনা তার। কাদেরের পরিবারের
অপরিচ্ছন্নতা তাকে বিরক্ত করলেও তিনি বাচ্চাটিকে সেখানেই দেন। বাচ্চাটির একটা ব্যবস্থা করতে পেরে তিনি
আনন্দিত হয়ে ওঠেন। এ এক অদ্ভু ত মনের আর প্রকৃ তির ব্যবস্থা। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ এর গল্পসমস্তের মধ্যে ‘স্তন’
গল্পটির শিখা বেশ উজ্জ্বল। ‘স্তন’ গল্পের এত উজ্জ্বলতার কারণ দারুণ এক ব্যক্তিক, মৌনিক, প্রাকৃ তিক দ্বন্দ্ব-
প্রতিদ্বন্দ্ব।

গল্পের দূর্বল দিকসমূহ : গল্পেকাদেরেরবউয়েরমনের কত যেস্তর দেখানোহয়েছেতার ইয়াত্তানাই। কয়েকদিন


পার হয়ে গেলেও এবং কাদেরের বউ বাচ্চাকে দুধ দিতে না পারলে, তার মনে হয়, বুঝি দুধ জমাট বেধে আছে।
একবার তার মনে হয় যে প্রকৃ তি বাচ্চাটিকে মেরে ফেলেছে সে প্রকৃ তি তার স্তনের দুধকেও মেরে ফেলেছে। শেষে
ডাক্তার আসে। ডাক্তার বলে, তার স্তনে দুধই তৈরি হয়নি। শেষে সে প্রকৃ তির বিরুদ্ধে গিয়ে, ডাক্তারের কথার
বিরুদ্ধে গিয়ে বুকে তীক্ষ্ণ কাঁটা বিঁধিয়ে দেয়। কিন্তু রক্ত ছাড়া তখন আর কিছুই বের হয় না।

You might also like