You are on page 1of 9

প্রশ্ন: আইন বিজ্ঞান কাকে বলে?

উত্তর: আইনবিজ্ঞান (Jurisprudence): আইনবিজ্ঞানের একটি যথাযথ বা সার্বজনীন সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়। আইনবিদগণ
নিজস্ব চিন্তা চেতনা ও সমাজের প্রকৃ তির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে আইনবিজ্ঞানকে মূল্যায়ন করেছেন।

আইন বিজ্ঞানের ধারণা সর্বপ্রথম রোমান আইনে পরিলক্ষিত হয়। “আইনবিজ্ঞান” শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ “Jurisprudence”
(জুরিসপ্রুডেন্স) শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ “Jurisprudentia” হতে। যা “Knowledge of Law” (আইন সম্পর্কে
জ্ঞান) অথবা “Skill in Law” (আইনে দক্ষতা) এর সমার্থক অর্থকে নির্দে শ করে।

আইনবিদ আলপিয়ান (Ulpian) এর মতে, জুরিসপ্রুডেন্স হল,“The knowledge of things divine and human, the
science of the just and unjust.”

রোমান আইনবিদ পাওলো (Paulus) মনে করেন,“The law is not to be deduced from the rule, but the rule from
the law.”

যদিও রোমান আইনবিদগণের সংজ্ঞা অস্পষ্ট এবং অসম্পূর্ণ তথাপি পরবর্তী সমাজে আইনগত ধারণা তৈরিতে এগুলো বিশেষ
ভূ মিকা পালন করেছে।

অন্যদিকে আইনবিদ কেন্ট এর মতে, আইনবিজ্ঞান আইনের আদর্শ বা উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করে। তার মতে, আইন যথাযথ
আদর্শ অনুসারে হওয়া উচিত। তবে বেনথাম (Bentham) এর মতে, “প্রয়োজন সাধনের নীতি” আইন প্রণয়নের মূলনীতি হওয়া
উচিত। তিনি মনে করেন, সমাজে কোন আইন প্রণয়ন করা তখনই প্রয়োজন যখন আইনটি সেই সমাজের মূল্যবোধ বা
সমাজব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন।

আইন বিজ্ঞান ধারণাটির ক্ষেত্রে অস্টিনের মতবাদকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। তিনি আইনবিজ্ঞানকে একটি বৈজ্ঞানিক
ধারণা হিসেবে তু লে ধরেছেন। তার মতে আইনের মৌলিক নীতিগুলোর বৈজ্ঞানিক ধারণাই হচ্ছে আইন বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু।

প্রশ্ন: আইন বিজ্ঞানের তাৎপর্য এবং উপকারিতা

উত্তর: কখনো কখনো মনে করা হয় যে আইনবিজ্ঞান একটি বস্তু নিরপেক্ষ এবং তত্ত্বীয় বিষয় বলে এর কোন ব্যবহারিক
উপযোগিতা নেই। আইনবিদ স্যামন্ড (Salmond) এ ধারণার সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি মনে করেন অন্যান্য বিষয়ের
ন্যায় আইন বিজ্ঞানেরও তত্ত্বীয় ধারণার পাশাপাশি স্বাভাবিক ও অন্তর্নিহিত অর্থ ও উপযোগিতা রয়েছে। তত্ত্বীয় বিষয়ের পাশাপাশি
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয় এবং আইনগত সামাজিক মৌলিক উপাদান আইন বিজ্ঞানের অন্তর্গত। নিম্নে আইন বিজ্ঞানের
তাৎপর্য এবং উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

● আইনের মৌলিক উপাদান সম্পর্কে জানতে হলে আইন বিজ্ঞান পাঠ করা অত্যাবশ্যকীয় ।
● অধিকার শব্দটির সাথে আইন উৎপ্রুতভাবে জড়িত। আইনবিজ্ঞান আইনগত, রাজনৈতিক, সামাজিক প্রভৃ তি অধিকার
সম্পর্কে সচেতন হওয়ার একমাত্র মাধ্যম।
● অন্যান্য বিজ্ঞানের মূল বিষয়বস্তু যেখানে জড় পদার্থ সেখানে আইন বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হচ্ছে সমাজ ও সমাজে বসবাসকারী
মানুষের ব্যবহারিক ও অন্তর্নিহিত আচরণ। আইনবিজ্ঞানের যৌক্তিক জ্ঞান লাভ করে সহজে অন্যান্য বিজ্ঞানের ব্যবহারিক
দিক সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়।
● শিক্ষাগত দৃষ্টিকোণ থেকেও আইন বিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম। আইনগত ধারণাগুলির যৌক্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে
আইনজীবীগণ তাদের পেশাগত উন্নতি সাধন করতে পারেন। সমাজে প্রচলিত এবং সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়ম-নীতি
বা আইনগুলো আইনবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে তাদের কাছে সুপরিচিত হয়ে ওঠে যা তাদের পেশাগত উন্নতিতে অবদান রাখে।
● আইনবিজ্ঞানকে আইনের চোখ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এটি মূলত আইনের ব্যাকরণকে নির্দে শ করে। এটি আইনের মূল
ধারণা এবং মৌলিক নীতির দিকে আলোকপাত করে। আইনের ভাষা, ব্যাকরণ, আইনগত উপলব্ধি এবং কোন দৃষ্টিকোণ
থেকে আইনটিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এসব বিষয় শুধুমাত্র আইনবিজ্ঞান পাঠ করেই জানা সম্ভব।
● আইন-বিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে একজন আইন প্রণেতা আইনের প্রকৃ তি ব্যাখ্যা করতে পারেন এবং এর মাধ্যমে পরিভাষাগত
জটিলতা দূর করতে সক্ষম হন। একমাত্র আইন বিজ্ঞানই আইনের মূলনীতি সমূহ, যথা- অধিকার, দায়িত্ব, দখল, মালিকানা,
স্বাধীনতা, অবহেলা ইত্যাদির ব্যাখ্যা দান করে।

পরিশেষে এটা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে আইনবিজ্ঞান আমাদেরকে কেবলমাত্র যথার্থ আইনবিদ, বিচারক, আইন গবেষক
কিংবা সচেতন নাগরিক হতে সাহায্য করে না বরং এই শাস্ত্র পাঠের মাধ্যমে অর্জ নকৃ ত জ্ঞান যে কোন সামাজিক, রাজনৈতিক ও
আইনগত সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।

প্রশ্ন: অস্টিনের আইনতত্ত্ব (Austin's Theory of Law) এবং এর সমালোচনা (Criticism) আলোচনা কর।

উত্তর: অস্টিনের আইনতত্ত্ব (Austin's Theory of Law)


জন অস্টিন ছিলেন একজন বিখ্যাত দার্শনিক। অস্টিনের আইনতত্ত্ব "অনুজ্ঞাবোধক মতবাদ" হিসেবে পরিচিত। অস্টিনের মতে
সুনির্ধারিত আইনের তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যথা-

● আইন এক ধরনের আদেশ।


● আইন সার্বভৌম রাষ্ট্র কর্তৃ ক জারি করা হয়।
● আইন বল প্রয়োগ বা শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে বলবৎ করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, "Road Traffic Act, 1960" আইনটি ইংলিশ আইনে সার্বভৌম কর্তৃ ক জারিকৃ ত এক ধরনের
আদেশ। এই আইনে এমন কিছু নিয়ম নীতি রয়েছে যা সর্বসাধারণের জন্য বাধ্যতামূলক।

অস্টিনের মতে অনুরোধ, আকাঙ্ক্ষা প্রভৃ তি হচ্ছে মানুষের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। আদেশ হচ্ছে উর্ধ্বতন ব্যক্তি কর্তৃ ক অধস্তন ব্যক্তির
প্রতি ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কে র মধ্যে ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি কর্তৃ ক ভোগকৃ ত সুযোগ হচ্ছে
অধস্তন ব্যক্তিকে আদেশ অমান্য করার জন্য শাস্তি প্রদান করা।

প্রথমত অস্টিন আইনকে অন্যান্য সাধারণ আদেশ হতে পৃথক করেছেন। তিনি মনে করেন, কোন বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আদেশ
এবং সাধারণ আচরণের ধারা নির্দে শকারী আদেশের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আইন স্বভাবত সমাজের সকল সদস্যদের ক্ষেত্রে, অন্তত
কোন শ্রেণী বিশেষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে শুধুমাত্র কোন একজন ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য নয়।

অস্টিনের মতে আইনের দ্বিতীয় উপাদান বা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, আইন সার্বভৌম রাষ্ট্র কর্তৃ ক জারি করা হবে। অস্টিন মনে করেন,
সার্বভৌম হচ্ছে সর্বোচ্চ ক্ষমতা, একটি সমাজের সকল মানুষ যার অধীনস্থ। তার মতে আইন তখনই ফলপ্রসূ হয় যখন সেটা
কার্যকরী হয় এবং সাধারণভাবে সকলেই তা মান্য করে।

অস্টিনের মতে আইন দুই রকমের হতে পারে। যথা- পার্থিব আইন ও শাশ্বত আইন। শাশ্বত আইন হচ্ছে বিধাতা কর্তৃ ক প্রদত্ত যা
মানুষের জন্যে পালনীয়। অপরদিকে পার্থিব আইন হচ্ছে, মানব কল্যাণের উদ্দেশ্য মানবসৃষ্ট আইন। মানবসৃষ্ট আইনের মধ্যে কিছু
আইন রাজনৈতিক ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি দ্বারা সৃষ্ট হয়। আবার কিছু আইন অন্যান্য সংগঠন অথবা স্বেচ্ছাসেবক সংস্থার মাধ্যমেও সৃষ্টি
হতে পারে।

অস্টিনের আইনতত্ত্বের তৃ তীয় উপাদান বা বৈশিষ্ট্য হলো আইনকে অবশ্যই শাস্তি প্রদান বা বল প্রয়োগের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য হতে
হবে। অস্টিন আইন ও সার্বভৌমের মধ্যকার সম্পর্কে র দিকে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

অস্টিনের আইনতত্ত্বের সমালোচনা (Criticism of Austin's Theory of Law)

রাষ্ট্রের পূর্বে আইন (Law before State)


রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কি ত অস্টিনের আইনের সংজ্ঞাটি ঐতিহাসিক ও সমাজতান্ত্রিক মতবাদে বিশ্বাসী আইনবিদগণ মেনে নিতে
পারেননি। তাদের মতে, আইন প্রকৃ তিগতভাবে আদেশ হতে পারে কিন্তু আইনের অবস্থান রাষ্ট্রের পূর্বে। রাষ্ট্রের পূর্বে যে আদেশের
সৃষ্টি তা রাষ্ট্র কর্তৃ ক সৃষ্ট হতে পারে না।

এরূপ আদেশের উৎস হতে পারে প্রথা, ধর্ম অথবা জনমত; রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কর্তৃ ত্ব নয়। আইন সকল রাজনৈতিক কর্তৃ ত্ব
এবং বল প্রয়োগের উর্ধ্বে। রাষ্ট্র আইনকে শুধুমাত্র প্রয়োগ করে, সৃষ্টি করে না।

আইনের সর্বজনীনতা (Generality of Law)


অস্টিনের মতে, আইন মানব আচরণের সর্বজনীন নিয়ম। কিন্তু সকল আইনের ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য নয়। কিছু সুনির্ধারিত
আইন রয়েছে যেগুলো সকলের জন্য প্রযোজ্য নয়। যেমন বিবাহ বিচ্ছেদ আইনটি একটি যথার্থ আইন কিন্তু সকলের ক্ষেত্রে এর
ব্যবহার নেই। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে আইনের কিছু কিছু অংশ সর্বজনীন নয় শুধুমাত্র কোন বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

পটভূ মি (Promulgation)
আইন প্রণয়নের পদ্ধতি ও কার্যকারিতা বিশ্লেষণে আইনের প্রকৃ তি নির্ণয় করাই ছিল অস্টিনের মূল উদ্দেশ্য। তাই কোন কোন
আইনবিদ মনে করেন, সার্বভৌম কর্তৃ ক আইন প্রণীত হলেও সামাজিক জীবনের পটভূ মিকে আইন সৃষ্টির ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা
উচিত ছিল না। যেখানে সার্বভৌম নেই সেখানে আইনের প্রয়োজন ক্ষীণ এমন ধারণা ভু ল বরং সমাজের পটভূ মিতে আইনের
সংজ্ঞা নির্ণয় করা উচিত।

আদেশ হিসেবে আইন (Law as Command)


অস্টিনের মতে, সার্বভৌমের আদেশই হলো আইন। কিন্তু সকল ক্ষেত্রে আইন আদেশ হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব না। তাই আইনের
অবশ্য পালনীয় বৈশিষ্ট্যতার ক্ষেত্রে প্রদত্ত গুরুত্বটি ছিল বাহুল্যতা। যেমন, বিধিবদ্ধ আইনের সহায়ক নিয়মসমূহ, ভোটদানের
অধিকার, বিচার বিভাগীয় আইনের ব্যাখ্যাদান রীতি ও প্রচলিত কার্যক্রম সমূহ আদেশ না হলেও এগুলো আইন।

আন্তর্জ াতিক আইনের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা (Applicability of International Law)


অস্টিনের আইনের সংজ্ঞা আন্তর্জ াতিক আইনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যদিও আন্তর্জ াতিক আইন কোন আদেশ নয় তবুও
সর্ববিবেচনায় এটিকে আইন হিসেবে গণ্য করা হয়।

সাংবিধানিক আইনের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা (Applicability to Constitutional Law)


যেহেতু সংবিধানকে সার্বভৌমের আদেশ হিসেবে গণ্য করা যায় না। তাই অস্টিনের আইনের সংজ্ঞা সাংবিধানিক আইনের ক্ষেত্রে
গ্রহণযোগ্য নয়। সংবিধান বিভিন্ন প্রশাসনিক সংস্থাসমূহের ক্ষমতা নির্ধারণ করে।

পারিবারিক আইনের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা (Applicability to Family Law)


হিন্দু আইন, মুসলিম আইন প্রভৃ তি পারিবারিক আইনের ক্ষেত্রে অস্টিনের আইনতত্ত্ব গ্রহণযোগ্য নয়। সাধারণত ধর্ম, প্রথা ও
বংশানুক্রমিক কর্মধারা হতে হিন্দু বা মুসলমান সম্প্রদায়ের পারিবারিক আইনগুলোর সৃষ্টি হয়। যাকে সার্বভৌমের আদেশ হিসেবে
গণ্য করার কোন কারণ নেই। এসব প্রথাগত আইন সমাজে পূর্ণ স্বীকৃ ত এবং গ্রহণযোগ্য।

আইন ও নৈতিকতা (Law and Ethics)


আইন ও ন্যায় বিচারের সম্পর্কে র ক্ষেত্রে অস্টিনের আইনতত্ত্ব গ্রহণযোগ্য নয়। অস্টিনের আইনের সংজ্ঞায় নৈতিক উপাদানের
কথা উল্লেখ নেই। আইনের পরিণতি হওয়া উচিৎ ন্যায় বিচার। আইন হলো রাষ্ট্রের মাধ্যমে জনগণের উদ্দেশ্যে ন্যায়বিচার।
যেহেতু অস্টিনের সংজ্ঞায় নৈতিকতা বা ন্যায়বিচার অনুপস্থিত। সুতরাং এটি আইনের পরিপূর্ণ সংজ্ঞা হতে পারে না।

প্রশ্ন: আইন কাকে বলে? আইনের প্রকারভেদ আলোচনা কর।

উত্তর: আইন (Law): বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত আইন শব্দটি ইংরেজি দুটি শব্দের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যথা: Law এবং Act. Act
শব্দটি সাধারণত কোন বিশেষ আইন বা কোন সুনির্দি ষ্ট আইন কে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। তবে ইংরেজি Law এর স্থলে বাংলা
আইন শব্দটির প্রয়োগ ভালো মানায়।

এক কথায় কিংবা সংক্ষেপে আইনকে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়। কেননা যে পদ্ধতিতে আইনকে সংজ্ঞায়িত করা হবে সেই পদ্ধতি
টাই অনেকটা ব্যক্তিগত এবং ইচ্ছামূলক।

বিভিন্ন আইনবিদ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আইনকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যেমন:

কেন্ট (Kant) মত প্রকাশ করে বলেছেন, “একজনের ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে অন্যজনের অনুরূপ আশা-আকাঙ্ক্ষার বা
ইচ্ছার সমন্বয়ে গঠিত সামঞ্জস্যপূর্ণ রীতি-নীতির সমষ্টিই হল আইন।”

স্যার হেনরি মেইন (Sir Henry Maine) বলেন, “আদেশ এবং ক্ষমতা পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত এই দুটি ধারণা থেকে আইন শব্দটি
উদ্ভূ ত হয়েছে।”

আইনবিদ স্যামন্ড (Salmond) এর মতে, “ন্যায় বিচার পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠিত কোনো বিধি-বিধান যদি রাষ্ট্র কর্তৃ ক বলবৎ
করা হয় তবে সমষ্টিকভাবে একে আইন বলা হয়।”

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আইনের একটি কার্যকর এবং বাস্তব সম্মত সংজ্ঞা এরকম হতে পারে যে, আইন আনুষ্ঠানিকভাবে
প্রণীত অথবা প্রচলিত এমন কিছু নিয়মকানুন যা একটি রাষ্ট্র বা গোষ্ঠী নিজেদের উপর বাধ্যগত বা অবশ্য পালনীয় বলে স্বীকার
করে । আবার আইনকে আদালত কর্তৃ ক বলবৎযোগ্য কিছু নিয়ম কানুনের সমষ্টি বলেও আখ্যায়িত করা হয়।

আইনের প্রকারভেদ (Kinds of Law)

স্যার জন স্যামন্ড আইনকে মূলত আট ভাগে ভাগ করেছেন। এগুলো হচ্ছে:

1.অনুজ্ঞা বা আদেশ মূলক আইন (Imperative Law)


2.বৈজ্ঞানিক আইন (Physical or Scientific Law)
3.প্রাকৃ তিক বা নৈতিক আইন (Natural or Moral Law)
4.প্রচলিত আইন (Conventional Law)
5.প্রাথাসিদ্ধ আইন (Customary Law)
6.ব্যবহারিক বা কারিগরি আইন (Practical or Technical Law)
7.আন্তর্জ াতিক আইন (International Law)
8.দেওয়ানী বা রাষ্ট্রীয় আইন (Civil Law)

অনুজ্ঞা বা আদেশমূলক আইন (Imperative Law)


অনুজ্ঞা বা আদেশমুলক আইনের মূল প্রবক্তা হিসেবে জন অস্টিন কে গণ্য করা হয়। তিনি আইনকে ব্যাখ্যা করেছেন আদেশ
হিসেবে যার মাধ্যমে জনগণকে একটি নির্দি ষ্ট আচরণ বিধি মানতে বাধ্য করা হয়।

স্যামন্ড এর মতে, “আদেশ মুলক বা অনুজ্ঞামূলক আইন হচ্ছে এমন কতগুলো নীতি যা সাধারণত কার্যধারা নির্ধারণ করে দেয়
এবং একটি কর্তৃ পক্ষের দ্বারা আরোপিত হয়। ওই কর্তৃ পক্ষ শারীরিক শক্তি বা বিভিন্ন ধরনের বাধ্যবাধকতা দ্বারা এই আইন
বাস্তবায়ন করে।”

আইনের মৌলিক চরিত্রই হচ্ছে আদেশ মূলক। অন্যথায় এটি আইন হিসেবে গণ্য না হয়ে রীতি হিসেবে গণ্য হবে যা মানুষ মানতে
বাধ্য থাকবে না। আদেশমূলক আইনগুলো ঐশ্বরিক বা মানব সৃষ্ট।

মানুষের উপর আল্লাহর আদেশ সমূহ দ্বারা ঐশ্বরিক আইন গঠিত যা এই জীবনে বা পরবর্তী জীবনে শাস্তির হুমকির দ্বারা
বাস্তবায়িত হয়।

অন্যদিকে মানব সৃষ্ট আইন সমূহ আদেশ মূলক নীতিগুলোর সমষ্টি যা মানুষের উপর কার্যকর। এগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা
যায়।

রাষ্ট্রীয় বা দেওয়ানী আইন (Civil Law): রাষ্ট্রীয় বা দেওয়ানী আইন হচ্ছে কতগুলো আদেশের সমষ্টি যা রাষ্ট্র তার নাগরিকদের
উপর আরোপ করে এবং তার বাহ্যিক বা শারীরিক শক্তি দ্বারা বাস্তবায়ন করে।

সুনীতিসমূহের আইন (Law of Positive Morality): সুনীতিসমূহের আইন হচ্ছে সেই সব নীতি সমূহ যা সমাজ তার সদস্যদের
উপর আরোপ করে এবং নাগরিকদের অনুমোদন বা বাধা দানের মাধ্যমে যেটি বাস্তবায়িত হয়।

আন্তর্জ াতিক আইন(International Law): আন্তর্জ াতিক আইন হচ্ছে ওইসব আইনের সমষ্টি যা রাষ্ট্রসমূহ দ্বারা গঠিত সংগঠন
একটি নির্দি ষ্ট রাষ্ট্রের উপর আরোপ করে এবং যা বাস্তবায়িত হয় আংশিক আন্তর্জ াতিক মতামত এবং আংশিক যুদ্ধের হুমকি
দ্বারা। আন্তর্জ াতিক নীতিসমূহ অবশ্য পালনীয় এবং এর ভঙ্গকারীকে অবশ্যই শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়। যুদ্ধের মাধ্যমে,
কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্নতার মাধ্যমে, অর্থনৈতিক অবরোধের মাধ্যমে অথবা নিন্দা জ্ঞাপন এর মাধ্যমে এই শাস্তি সমূহ
বাস্তবায়ন করা হতে পারে।

বৈজ্ঞানিক আইন (Physical or Scientific Law)


স্যামন্ড বলেন, “বৈজ্ঞানিক আইন হচ্ছে প্রকৃ তির অখন্ডতার প্রকাশ সাধারণ নীতিসমূহ যেগুলো বিশ্বের ক্রিয়াসমূহের নিয়মিতভাবে
মেনে চলার মধ্যে নিহিত।”

বৈজ্ঞানিক আইন বা প্রাকৃ তিক আইনের অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে সমুদ্রের স্রোতের নীতি। বৈজ্ঞানিক আইনকে প্রাকৃ তিক আইন বা
প্রকৃ তির আইন হিসেবে বর্ণনা করা যায়। এই আইনগুলো কোনরকম ব্যতিক্রম ছাড়াই পরিচালিত হয় এবং এগুলো মানব সৃষ্ট নয়
এবং মানুষের দ্বারা পরিবর্তি ত হয় না। মানব সৃষ্টআইন সমূহ সময়ের সাথে সাথে এবং রাষ্ট্র ভেদে পরিবর্তি ত হতে পারে। কিন্তু
বৈজ্ঞানিক আইন সমূহ হচ্ছে অপরিবর্ত নীয় এবং প্রতিনিয়ত একভাবেই পরিচালিত হয়।
প্রাকৃ তিক বা নৈতিক আইন (Natural or Moral Law)
স্যামন্ড এর মতে, “প্রাকৃ তিক বা নৈতিক আইন বলতে ঐ সমস্ত নীতি সমূহ কে বোঝানো হয় যা স্বাভাবিক ভু ল বা অধিকারের
কথা বলে। যদি ন্যায়বিচার শব্দটি বৃহৎ অর্থে ব্যাখ্যা করা যায় তাহলে প্রাকৃ তিক ন্যায়বিচার সংক্রান্ত নীতি সমূহ সকল ধরনের
অধিকারমূলক কর্মকে অন্তর্ভু ক্ত করে।”

প্রাকৃ তিক আইনকে ঐশ্বরিক আইন, যুক্তির আইন, বৈশ্বিক আইন বা স্বাভাবিক আইন এবং চিরস্থায়ী আইন হিসেবে অবহিত করা
যায়। এটিকে আল্লাহর আদেশ হিসেবে গণ্য করা হয় যা মানুষের উপর অবতীর্ণ হয়েছে। এটি একটি অলিখিত আইন এবং এটি
বিশ্বের সব স্থানের সব মানুষ সমানভাবে সম্মান করে। এটি বিশ্বের শুরু থেকেই বিরাজমান। তাই এটিকে চিরস্থায়ী আইনও বলা
হয়।

প্রচলিত আইন (Conventional Law)


স্যামন্ড এর মতে, প্রচলিত আইন বলতে বোঝায় এমন কিছু নিয়ম বা নিয়মের ব্যবস্থা যা ব্যক্তিগণ তাদের একে অন্যের প্রতি
আচরণের সীমাবদ্ধতা প্রণয়নের ক্ষেত্রে একমত হয়েছে। এটি আইনের একটি বিশেষ প্রকার। এটি শুধুমাত্র তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য
যারা এটি স্বীকার করেছে। প্রচলিত আইনের উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে ক্রিকেট বা অন্যান্য খেলার নিয়মসমূহ, কোন
ক্লাব বা সংগঠনের নীতি এবং বাধ্যবাধকতা সমূহ ইত্যাদি প্রচলিত আইন। প্রচলিত আইন কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কর্তৃ ক প্রয়োগ
করা হয়। তখন একে রাষ্ট্রীয় আইনের অংশ হিসেবে গণ্য করা যায়।

প্রথাসিদ্ধ আইন (Customary Law)


স্যামন্ড এর মতে, প্রথাগত আইন হচ্ছে এমন কতগুলো নীতি বা কার্যাবলী যা মানুষ কর্তৃ ক পালিত হয়েছে। এমন কতগুলো
নীতিসমূহ যা কিছু স্বেচ্ছায় সংঘটিত কাজ বিধিবদ্ধভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

একটি প্রথা একই সাথে স্বতঃস্ফূ র্ত এবং আইন হতে পারে। যখন একটি প্রথা শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এটি রাষ্ট্র কর্তৃ ক প্রয়োগ
করা হয়। প্রথাগত আইন আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রথাগত আইন একটি বিশেষ ধরনের আইন এবং এটি রাষ্ট্রীয় আইন
হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

ব্যবহারিক বা কারিগরি আইন (Practical or Technical Law)


ব্যবহারিক বা কারিগরি আইন হচ্ছে সেই সমস্ত নিয়মের সমষ্টি যার দ্বারা একটি নির্দি ষ্ট লক্ষ্য অর্জ নে এগিয়ে যাওয়া যায়।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় স্বাস্থ্যের আইন, প্রকৌশল সংক্রান্ত আইন ইত্যাদি। এই নিয়ম আমাদের এমন একটি লক্ষ্য অর্জ নের পথ
দেখায় যা আমরা অর্জ ন করতে চাই। এ আইনের আওতায় সংগীতের আইন, ফ্যাশন সংক্রান্ত আইন ইত্যাদি অন্তর্ভু ক্ত।

আন্তর্জ াতিক আইন (International Law)


সাধারণত আন্তর্জ াতিক আইন বলতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সমন্বয়ে সৃষ্ট আইন, যা এক রাষ্ট্র বা জাতির সাথে অন্য রাষ্ট্র বা জাতির
সম্পর্ক নির্ধারণ করে। আন্তর্জ াতিক আইন কোন একক রাষ্ট্রের সৃষ্টি নয়। এ আইন বিভিন্ন রাষ্ট্রের ঐকমত্য ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে
সৃষ্টি হয় এবং তা প্রত্যেক রাষ্ট্রের নিজস্ব স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও অন্য রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সৃষ্ট।

আন্তর্জ াতিক আইন সম্বন্ধে বিভিন্ন আইনবিদগণ বিভিন্ন রকম মতামত প্রকাশ করেছেন।

লর্ড বারকেনহেড (Lord Birkenhead) এর মত অনুসারে, “আন্তর্জ াতিক আইন হচ্ছে এমন কতগুলো নিয়মের সমষ্টি যা কিছু
স্বাধীন সুশীল রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত কোন সংগঠন দ্বারা স্বীকৃ ত এবং এই নিয়মগুলো তাদের পারস্পরিক সম্পর্কে র ক্ষেত্রে প্রযোজ্য
হয়। এটি এমন কতগুলো নিয়ম দ্বারা তৈরি যা স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ তাদের পরস্পরের প্রতি আচরণ এবং সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য
পরিচালনা করে।
স্যামন্ড এর মতে, আন্তর্জ াতিক আইন অবশ্যই প্রচলিত আইনের একটি প্রজাতি এবং এটির উৎস হচ্ছে আন্তর্জ াতিক চু ক্তি। এটি সেই
সমস্ত বিধির সমষ্টি যা রাষ্ট্রসমূহ পারস্পরিক বোঝাপড়া করার ক্ষেত্রে মেনে চলতে একমত হয়।

বৃহৎ দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় যে সমস্ত আন্তর্জ াতিক আইন হচ্ছে প্রচলিত। কিন্তু আবার ক্ষু দ্র দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় যে
আন্তর্জ াতিক আইনের উৎপত্তি ঘটে প্রকাশ্য চু ক্তির মাধ্যমে যা রাষ্ট্র সমূহের সম্মেলন নামে পরিচিত।

দেওয়ানী বা রাষ্ট্রীয় আইন (Civil Law)


স্যামন্ড এর মতে, “রাষ্ট্রীয় আইন হচ্ছে রাষ্ট্র বা ভূ মির আইন, আইনজীবীদের আইন এবং আদালতের আইন।”

রাষ্ট্রীয় আইন হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ আইন অথবা সেই আইন যা বর্ত মান আছে। অন্যান্য আইনের মতোই এটি সংগঠিত এবং এই
সংঘবদ্ধতা স্থাপিত হয়েছে আইনের নজির এর মাধ্যমে। এটি আলোচিত হয়েছে এর ধারাবাহিকতার জন্য। রাষ্ট্রীয় আইন প্রবর্ত ন
করা হয় জনগণের উপর যারা একটি নির্দি ষ্ট রাষ্ট্রে বসবাস করে এবং ওই রাষ্ট্র জনগণের বশ্যতা আদায় করে বিচারিক প্রক্রিয়ার
মাধ্যমে। এটি রাষ্ট্রের শক্তি এবং ইচ্ছার দ্বারা পরিচালিত হয়।

রাষ্ট্রীয় আইনের মধ্যে অনুজ্ঞা মূলক আইনের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে এবং এর মধ্যে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অবশ্য এটি
একটি নির্দি ষ্ট অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যার উপর রাষ্ট্রের কর্তৃ ত্ব রয়েছে। এটি এমন কিছু আইনের অধিকার সৃষ্টি করে যা মৌলিক
বা প্রাথমিকও হতে পারে। যেকোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গের শাস্তি হিসেবে জরিমানা বা কারাদণ্ড অথবা উভয় ধরনের শাস্তি
দেওয়া হতে পারে। রাষ্ট্রীয় আইন উৎপন্ন হয়েছে রোমানদের “Jus Civil” অথবা রাষ্ট্রীয় আইন থেকে। এটি আগে যেরকম
জনপ্রিয় ছিল এখন ততটা জনপ্রিয় নয়। “রাষ্ট্রীয় আইন” শব্দটির তু লনায় “প্রত্যক্ষ আইন” শব্দটি এখন অনেক বেশি জনপ্রিয়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে “আঞ্চলিক আইন” (Municipal Law) শব্দটিও রাষ্ট্রীয় আইনের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়।

প্রশ্ন: আইনগত প্রশ্ন (Question of Law) এবং তথ্যগত প্রশ্ন (Question of Fact) কাকে বলে?

উত্তর: আদালতে বিচারাধীন প্রত্যেকটি মামলা বিচারকালে দুই ধরনের প্রশ্ন জড়িত থাকে। এগুলো হলো আইনগত প্রশ্ন এবং
তথ্যগত প্রশ্ন।

যে সকল বিষয় এককভাবে আইন দ্বারা নির্ধারণ করা যায় সেগুলোকে বলা হয় আইনগত প্রশ্ন (Question of Law)। অন্যদিকে
যে সকল প্রশ্ন ঘটনা বা তথ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট সেগুলোকে তথ্যগত প্রশ্ন (Question of Fact) বলা হয়।

আইনগত প্রশ্ন (Question of Law): আইনবিদ স্যামন্ড আইনগত প্রশ্নকে তিনটি আলাদা ভাগে বিভক্ত করেছেন। এগুলো
আলাদা হওয়া সত্ত্বেও পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত। যেমন-

ক) প্রথমত, আইনগত প্রশ্ন হল এমন কিছু প্রশ্ন যার জবাব আইনের নীতি অনুযায়ী আদালত দিতে বাধ্য। তবে এ সকল প্রশ্নের‌
সমাধান ইতিপূর্বে প্রতিষ্ঠিত কোন আইনের নীতি বা বিধান দ্বারা স্থির করা হয়েছে। এগুলো ব্যতীত অন্যান্য সকল প্রশ্ন তথ্যগত
প্রশ্ন।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, একটি খুনের জন্য কি শাস্তি হতে পারে তা দন্ডবিধিতে দেওয়া আছে তাই এটি একটি আইনগত প্রশ্ন।
আবার নয় বছরের কম বয়সী কোন শিশু যদি কোন অপরাধ সংঘটিত করে থাকে তাহলে সেই অপরাধ ঘটানোর কতটু কু
মানসিক সক্ষমতা তার রয়েছে এটি একটি আইনগত প্রশ্ন।
খ) দ্বিতীয়ত আইনগত প্রশ্ন হল এমন কোন প্রশ্ন যা কিনা আইনের ব্যাখ্যার জবাব হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে অর্থাৎ বলা যায়
আইনের ব্যাখ্যার অর্থের অনিশ্চয়তা থেকেই আইনগত প্রশ্নের উৎপত্তি। আইনের অস্তিত্ব থেকে আইনগত প্রশ্নের উদ্ভব ঘটে না।
কোনো বিচার্য বিষয়ে বা কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে কোন আইন প্রযোজ্য হবে এবং সে আইনের যথার্থ ব্যাখ্যা কি হবে তা হল আইনগত
প্রশ্ন।

গ) আইনগত প্রশ্নের তৃ তীয় ধারণা হচ্ছে সাধারণত বিচারকগণ এরূপ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন। আইনগত প্রশ্নের মাধ্যমে
আদালত স্থির করে থাকেন কিভাবে আইনের প্রয়োগ করতে হয়। তথ্যগত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন জুরিগণ।

তথ্যগত প্রশ্ন (Question of Fact): "তথ্যগত প্রশ্ন" ধারণাটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত আইনগত প্রশ্ন ব্যতীত
সকল প্রশ্নই তথ্যগত প্রশ্ন। যে বিষয়টি আইনগত নয়, সেটিই তথ্যগত। অধ্যাপক স্যামন্ডের মতে, তথ্যগত প্রশ্ন বলতে আইন
কিংবা জুরিগণের কর্তৃ ক উত্তর দিতে হয় এমন প্রশ্ন ব্যতীত যেকোন প্রশ্ন অথবা ইতিপূর্বে আইন দ্বারা সুনির্ধারিত নয় এমন যেকোন
প্রশ্ন তথ্যগত প্রশ্ন।

তথ্যগত প্রশ্ন প্রমাণযোগ্য অর্থাৎ সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়ে তথ্যগত প্রশ্নের বিষয়টি প্রমাণ করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন লোক
তার বাড়িতে বসবাস করে কিনা তা প্রমাণের মাধ্যমে প্রমাণ করা যাবে। এটি একটি তথ্যগত প্রশ্ন।

যে সকল কারণে তথ্যগত প্রশ্ন কে আইনগত প্রশ্নের বিপরীত বলে গণ্য করা হয় সেগুলো হলো-

ক) যে সকল প্রশ্ন ইতিপূর্বে কোন আইনের বিধান কর্তৃ ক নির্ধারিত হয়নি তা তথ্যগত প্রশ্ন।
খ) যে সকল প্রশ্ন একমাত্র আইনের প্রশ্ন ব্যতীত সমাধানযোগ্য তা তথ্যগত প্রশ্ন।
গ) যে সকল প্রশ্ন বিচারকের পরিবর্তে জুরিগণের দ্বারা নির্ধারিত হয় তা তথ্যগত প্রশ্ন।

উদাহরণস্বরূপ খুনের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড না অন্য কিছু তা আইনের প্রশ্ন হলেও কে খুন করেছে তা তথ্যের ব্যাপার। তাই সাক্ষ্যপ্রমাণ
দ্বারা এটি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

প্রশ্ন: আইন প্রণয়ন (Legislation) এবং প্রথা (Custom) সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তর: আইন প্রণয়ন (Legislation): ইংরেজি “Legislation” শব্দটি দুটি ল্যাটিন শব্দ “Legis” এবং “Latum” থেকে উৎপত্তি
হয়েছে। “Legis” শব্দের অর্থ হচ্ছে আইন এবং “Latum” শব্দের অর্থ হচ্ছে তৈরি, প্রণয়ন, আরোপ বা গুচ্ছবদ্ধ করা। সুতরাং
“Legislation” শব্দটির বাংলা অর্থ হচ্ছে আইন প্রণয়ন বা প্রণীত আইন। আইন প্রণয়ন বলতে মূলত কোন অনুমোদিত কর্তৃ পক্ষ
কর্তৃ ক আইন প্রণয়ন করাকে বোঝায়।

আইনবিদ স্যামন্ডের মতে আইন প্রণয়ন হচ্ছে, “আইনের একটি উৎস যা যথাযথ কর্তৃ পক্ষের আইনগত ঘোষণার মাধ্যমে তৈরি
হয়।” Legislation is that source of law which consists in the declaration of legal rules by a competent
authority

অস্টিন মনে করেন, “আইন প্রণয়নকারী কার্যকলাপ ছাড়া কোন ধরনের আইন তৈরি হতে পারে না।”There can be no law
without a legislative act.
সুতরাং দেখা যায় যে সমাজের যথোপযুক্ত কর্তৃ পক্ষ দ্বারা আইন প্রণয়ন করা হয় অর্থাৎ কোন কর্তৃ পক্ষ সমাজের নিকট থেকে
অধিকারপ্রাপ্ত হয়ে আইনগত পদ্ধতি অনুসরণ করে যদি কোন ঘোষণা বা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কোন আইন তৈরি করে তা আইন
প্রণয়ন নামে পরিচিত হবে।

প্রথা (Custom): সমাজে প্রচলিত কোন একটি চর্চ া যা কিনা সবচেয়ে বিজ্ঞ এবং প্রাজ্ঞ ব্যক্তিটিও স্মরণ করতে পারেন না যে ওই
চর্চ াটি কবে থেকে চালু হয়ে বর্ত মান অব্দি প্রচলিত আছে তাকে প্রথা বলা হয়। প্রথা একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত থাকে
এবং সমাজে এটির একটি বাধ্যতামূলক প্রভাব রয়েছে।

আইন প্রণয়ন (Legislation) এবং প্রথা (Custom)

আইন প্রণয়ন এবং প্রথার মধ্যে তু লনামূলক পার্থক্য নিম্নে আলোচনা করা হলো।

আইন প্রণয়ন প্রথা

আইন প্রণয়ন বিভিন্ন মতবাদ থেকে গড়ে ওঠে প্রথা বিভিন্ন অভ্যাস এবং আচরণ থেকে গড়ে উঠেছে

আইন প্রণয়নের অবশ্যই আইনগত ভিত্তি (de jure) থাকতে প্রথার ক্ষেত্রে সে ভিত্তিটি হচ্ছে বাস্তবগত(de facto)
হবে

আইন প্রণয়ন হচ্ছে সবচেয়ে নতু ন পদ্ধতি যার মাধ্যমে আইন প্রথা হচ্ছে সবচেয়ে পুরনো পদ্ধতি
তৈরি করা যায়

একটি আধুনিক এবং উন্নত সমাজের সমাজব্যবস্থা কতটা প্রথা হচ্ছে মূলত প্রাচীন সভ্যতার দুর্বল আইন ব্যবস্থার প্রতীক
অগ্রসর তা বোঝা যায় আইন প্রণয়নের মাধ্যমে

আইন প্রণয়ন মানুষের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে কাজ করে প্রথা মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক বেশি গুরুত্ব দেয়

আইন প্রণয়ন উদ্ভব হয় ইচ্ছাকৃ তভাবে প্রয়োগ বা তৈরীর প্রথার উদ্ভব ঘটে প্রয়োজনীয়তা এবং অনুকরণের মাধ্যমে
মাধ্যমে

আইন প্রণয়ন হচ্ছে “jus scriptum” অর্থাৎ লিখিত আইন প্রথা হচ্ছে অর্থাৎ “jus non scriptum” অলিখিত আইন

কিটন বলেছেন যে, “In early times, legislation either defined or supplemented custom, today the relative
position of custom and legislation have been reversed.” অর্থাৎ প্রাচীনকালে আইন প্রণয়ন প্রথাকে হয় ব্যাখ্যা
করতো নয়তো সহযোগিতা করত কিন্তু বর্ত মানে প্রথা এবং আইন প্রণয়ন-এর এই সম্পর্ক টি উল্টে গেছে।

আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ইচ্ছা রক্ষা করা অনেক সহজ কিন্তু প্রথা অনেক ক্ষেত্রেই জটিল এবং অনেক বছর থেকে
অনুকরণ হয়ে আসছে বলে জনমত নিরূপণ করা সম্ভব হয় না। প্রণীত আইন রদ করার জন্য আরেকটি আইন প্রণয়ন করলেই চলে
কিন্তু প্রথা আরেকটি প্রথার মাধ্যমে বাতিল করা খুবই কঠিন। সেক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন করার মাধ্যমে প্রথা বাতিল করা অনেক
বেশি সহজ।

You might also like