You are on page 1of 6

১৯৫৪ সালের পূর্ববঙ্গের আইন পরিষদের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ কর। এ নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়

অথবা যুক্তফ্রন্টের জয় লাভের কারণ কি?

১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচন ছিল বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মূলত এ নির্বাচন ছিল
পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক ও তার দোসরদের শোষণের বিরুদ্ধে এক ‘ ব্যালট বিপ্লব’। পাকিস্তান সৃষ্টির কয়েক বছরের মধ্যেই
ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিভিন্ন উপদল, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ব্যর্থ শাসন, অঞ্চল ভেদে বৈষম্যমূলক নীতি প্রভৃ তির কারণে
নতু ন নতু ন রাজনৈতিক দল গঠন আবশ্যক হয়ে পড়ে। বিশেষ করে এ সময় পূর্ববাংলায় মুসলিম লীগ শাসনের চরম ব্যর্থতার
ফলে আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃ ষক শ্রমিক পার্টি , পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি . নিজামে ইসলাম, পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেস
প্রভৃ তি রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়। আগে থেকেই ১৯৫১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত
হওয়ার কথা থাকলেও মুসলিম লীগ সরকার পরাজয়ের আশঙ্কায় নানা টালবাহানা করে নির্বাচনের তারিখ বারবার পিছিয়ে
দেয়। অবশেষে পূর্ব বাংলার জনমত এবং রাজনৈতিক নেতৃ বৃন্দের চাপের মুখে সরকার পূর্ব বাংলায় প্রাদেশিক পরিষদের
নির্বাচনের তারিখ ধার্য করে ১৯৫৪ সালের ৮ ই মার্চ ।

যুক্তফ্রন্ট গঠনের পটভূ মি


১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে মুসলিম লীগ ছিল পুরাতন ও বড় দল। এছাড়া পূর্ব
বাংলার প্রাদেশিক সরকার পরিচালনা করতো মুসলিম লীগ। ফলে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক
দলগুলো মুসলিম লীগকে পরাজিত করার কৌশল হিসেবে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।এই
পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৩ সালের ১৪ই নভেম্বর ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলের যুক্তফ্রন্ট গঠনের
সিদ্ধান্ত হয় যুক্তফ্রন্ট মূলত চারটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয়। দলগুলো হলো-

রাজনৈতিক দল প্রধান নেতা

আওয়ামী মুসলিম লীগ মাওলানা ভাসানী এবং হোসেন শহীদ সোহ্‌


রাওয়ার্দী

কৃ ষক শ্রমিক পার্টি শেরে বাংলা একে ফজলুল হক

নেজামে ইসলাম পার্টি মাওলানা আতাহার আলী

গণতন্ত্রী দল (বামপন্থী) হাজী দানেশ

এই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রতীক ছিল নৌকা। আওয়ামী মুসলিম লীগের নির্বাচনী কর্মসূচির ৪২ দফার প্রধান প্রধান দাবি নিয়ে
যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। পূর্ববাংলার গণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে প্রণীত
এই ২১ দফা কর্মসূচির মুখ্য রচয়িতা ছিলেন আবুল মনসুর আহমদ।

নির্বাচনের ফলাফল
১৯৫৪ সালের ৮ ই মার্চ এ নির্বাচন ছিল পূর্ব বাংলায় প্রথম অবাধ ও সর্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সাধারণ
নির্বাচন। ১৯৫৪ সালের মার্চে র ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের এই নির্বাচনে সর্বমোট আসন
ছিল ৩০৯ টি। এর মধ্যে মুসলিম আসন ছিল ২৩৭টি এবং সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য ৭২টি আসন সংরক্ষিত ছিল।
এই নির্বাচনে শতকরা ৩৭.১৯ ভাগ ভোটার ভোট প্রদান করে। ২রা এপ্রিল সরকারি ভাবে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ সম্পূর্ণরূপে এ নির্বাচনে পরাভূ ত হয় ; তারা কেবল ৯টি আসন লাভ করতে সমর্থ
হয় এবং যুক্তফ্রন্ট একচেটিয়া জয়লাভ করে। ফলাফল নিম্নে তু লে ধরা হলো-
মুসলিম আসনসমূহের ফলাফল

রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ আসন সংখ্যা

আওয়ামী মুসলিম লীগ ১৪৩

কৃ ষক শ্রমিক পার্টি ৪৮
যুক্তফ্রন্ট ২২৩
নেজামে ইসলাম পার্টি ১৯

গণতন্ত্রী দল ১৩

মুসলিম লীগ ০৯

খেলাফত-ই-রব্বানী ০১

স্বতন্ত্র ০৪

সর্বমোট ২৩৭

অমুসলিম আসনসমূহের ফলাফল

রাজনৈতিক দলসমূহ ও জোট আসন সংখ্যা

তফসিলি ফেডারেশন ২৮

জাতীয় কংগ্রেস ২৪

সংখ্যালঘু যুক্তফ্রন্ট ০৯

কমিউনিস্ট পার্টি ০৫

গণতন্ত্রী দল ০২

বৌদ্ধ ০২

খ্রিষ্টান ০১

স্বতন্ত্র হিন্দু ০১

সর্বমোট ৭২

১৯৫৪ এর প্রাদেশিক আইন পরিষদ নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয় অথবা যুক্তফ্রন্টের জয় লাভের কারণ
১৯৫৪ সালের আইন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল মুসলিম লীগের চরম পরাজয়ের পেছনে বেশ কিছু কারণ নিহিত
রয়েছে নিম্নে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো

১) পূর্ব বাংলাকে উপেক্ষা: শুরু থেকেই মুসলিম লীগ পূর্ব বাংলাকে উপেক্ষা করে আসছিল। তারা কখনও পূর্ব বাংলাকে
সুনজরে দেখে নি। মুসলিম লীগ পূর্ব বাংলার রাষ্ট্রভাষার দাবিকে গ্রাহ্য করে নি। তাই ‘৫৪ এর নির্বাচনে পূর্ব বাংলার জনগণ
যুক্তফ্রন্টকে ম্যান্ডেট দেয়।
২) স্বায়ত্তশাসনের অবজ্ঞা: স্বায়ত্তশাসনের অবজ্ঞা মুসলিম লীগের ভরাডু বি ও যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের একটি বড় কারণ। পূর্ব
বাংলার জনসাধারণ তাদের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেখায়।
৩) অভ্যন্তরীণ কোন্দল: অভ্যন্তরীণ কোন্দল মুসলিম লীগের পরাজয়ের জন্য বিশেষভাবে দায়ী। মুসলিম লীগের মধ্যে
অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে পূর্ব বাংলায় এ দলের সাংগঠনিক তৎপরতা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে মুসলিম লীগের
সর্বনাশ ডেকে আনে এবং যুক্তফ্রন্টের সাফল্য ঘটে।
৪) ঔপনিবেশিক মনোভাব: ঔপনিবেশিক মনোভাবের কারণে ‘৫৪ -এর নির্বাচনে মুসলিম লীগের চরম পরাজয় ঘটে।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলাকে অবজ্ঞা করে আসছিল। মুসলিম লীগের তৎপরতায় তারা পূর্ব
বাংলাকে তাদের উপনিবেশে পরিণত করতে চেয়েছিল। এরূপ মনোভাবের কারণে ৫৪-এর নির্বাচনে মুসলিম লীগের
পরাজয় এবং যুক্তফ্রন্টের বিজয় অর্জি ত হয়।
৫) বিরোধী মনোভাব: মুসলিম লীগের বিরোধী মনোভাবের কারণে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পথ সুগম হয়। অন্যদিকে মুসলিম
লীগের বিজয়ের দ্বার রুদ্ধ হয়ে পড়ে। এ দল নির্বাচনে তাদের পরাজয় অনিবার্য মনে করে বিরোধী নেতা ও কর্মীদের প্রতি
অত্যাচার চালায়। ফলে তারা নির্বাচনে পরাজয় বরণ করে।
৬) অর্থনৈতিক ব্যর্থতা: ‘৫৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে পূর্ব বাংলায় ব্যাপক অর্থনৈতিক অবনতি ঘটে। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে
মুসলিম লীগ এ ব্যর্থতা রোধে ব্যর্থ হয়। ফলে নির্বাচনী রায় তাদের প্রতিকূলে এবং যুক্তফ্রন্টের অনুকূলে যায়।
৭) বিচ্ছিন্ন মনোভাব: নির্বাচনের আগে মুসলিম লীগের বিচ্ছিন্ন মনোভাব গড়ে ওঠে। এ দল জনগণের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে
তু লতে পারে নি। জনগণ তাদের এ বিচ্ছিন্ন মনোভাব উপলব্ধি করতে পারে। ফলে তাদের পরাজয় নিশ্চিত হয়।
৮) নির্বাচনে বিলম্ব: বিলম্ব নির্বাচন মুসলিম লীগের পরাজয়ের জন্য দায়ী। এ নির্বাচনে ১৯৫১ সালে হবার কথা ছিল। কিন্তু
ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ এ নির্বাচনে অহেতু ক বিলম্ব ঘটায়। তারা সময়মত এ নির্বাচন হতে দেয় নি। ফলশ্রুতিতে
যুক্তফ্রন্টের অনুকূলে জনমত গড়ে উঠতে থাকে।
৯) শাসনতন্ত্র প্রণয়ণে ব্যর্থতা: যুক্তফ্রন্টের বিজয় এবং মুসলিম লীগের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হল শাসনতন্ত্র প্রণয়নের
ব্যর্থতা। প্রথম গণপরিষদের উপর মূলত শাসনতন্ত্র প্রণয়নের দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। এ গণপরিষদের অধিকাংশ সদস্য ছিল
মুসলিম লীগের। এ ব্যর্থতার কারণে মুসলিম লীগ নির্বাচনে পরাজয়বরণ করে।
সুতরাং বলা যায় যে, উপরিউক্ত বিষয়গুলোর কারণে ‘৫৪-এর নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয় ঘটে। পক্ষান্তরে যুক্তফ্রন্টের
বিজয়ের পথ সুগম হয়।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন একজন পূর্ব পাকিস্তানি বাঙালি রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী, যুক্তফ্রন্ট গঠনের
মূলনেতাদের মধ্যে অন্যতম। গণতান্ত্রিক রীতি ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, তাই সুধী সমাজ কর্তৃ ক ‘গণতন্ত্রের
মানসপুত্র’ বলে আখ্যায়িত হন।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তিনি ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টে র
খ্যাতনামা বিচারপতি স্যার জাহিদ সোহরাওয়ার্দীর কনিষ্ঠ সন্তান। কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষাজীবন শুরু করার পর
ভর্তি হন সেইন্ট জ্যাভিয়ার্স কলেজে। সেখান থেকে বিজ্ঞান বিষয়ে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি তাঁর মায়ের
অনুরোধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষা এবং সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জ ন করেন।

অনেকটা পারিবারিক ঐতিহ্য মেনেই তিনি আইন পড়তে যান ইংল্যান্ডে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে ডিগ্রি
লাভ করেন এবং সেখানে আইনজীবী হিসেবে কিছু দিন কাজ করেন।

১৯২০ সালে তিনি ভারতে ফিরে আসেন এবং পরের বছর বাংলা প্রাদেশিক সভায় সদস্য নির্বাচিত হন। সোহরাওয়ার্দীর
রাজনৈতিক জীবনে আরও সাফল্য আসে ১৯৪৬ সালে, যখন তার নেতৃ ত্বে গঠিত হয় অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলিম লীগ
মন্ত্রিসভা।

তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৪৬ সালে কলকাতায় ভয়াবহ দাঙ্গা ঘটে। পরবর্তীতে লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভাইসরয় হিসেবে
ভারতে এসে উপমহাদেশকে ভাগ করা পরিকল্পনা পেশ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর তিনি কলকাতায় থেকে যান।
পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম ও প্রধান
বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূ মিকা ছিল।

বাংলা ভাষার মর্যাদার প্রশ্নে ইতিমধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আন্দোলনের মুখর হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে
বৈষম্যের কথা ও তখন তু লছেন কেউ কেউ। মুসলিম লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানোর লক্ষ্যে তখন ১৯৫৪ সালে তিনি মাওলানা
ভাসানী এবং একে ফজলুল হক কে সাথে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠনে উদ্যোগী হলেন। ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম
প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ঐতিহাসিক বিজয়ের পেছনেও ক্রিয়াশীল ছিল তাঁর দারুণ নেতৃ ত্ব।

পরবর্তীতে মোহাম্মদ আলী বগুড়ার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তিনি আইনমন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেন। তখন পাকিস্তানের
সংবিধান রচনায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূ মিকা পালন করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত
হলেন। সোহরাওয়ার্দী এক বছর সামান্য কিছু বেশি সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এরপর ১৯৫৮ সালে সামরিক
শাসন জারি করা হয়। তিনি তখন স্বেচ্ছায় নির্বাসনে চলে যান।

১৯৬৩ সালের ৫ই ডিসেম্বর বৈরুতে ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র’ নামক খ্যাত উপমহাদেশের এই কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ মৃত্যুবরণ
করেন।

শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক

শের-ই-বাংলা আবুল কাশেম (এ.কে.) ফজলুল হক ছিলেন ভারত উপমহাদেশের একজন অবিসংবাদিত মহান নেতা।
কর্মজীবনে তিনি একজন আইনজীবী, একজন সমাজকর্মী, একজন রাজনীতিবিদ এবং একজন কূটনৈতিক ছিলেন।

এ কে ফজলুক হক ১৮৭৩ সালে ২৬ অক্টোবর বরিশাল জেলায় রাজাপুর থানার সাতু রিয়া গ্রামে তার মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ
করেন। তার বাবার নাম কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ এবং তার মাতার সাইদুন্নেসা খাতু ন।

এ কে ফজলুক হক প্রাথমিক শিক্ষা বাড়িতেই শুরু করেন। ১৮৮৯ সালে ফজলুল হক প্রবেশিকা পরীক্ষায় ততকালীন ঢাকা
বিভাগে মুসলমানদের মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করেন। ফজলুল হক তার প্রখর স্মৃতিশক্তির কারণে শিক্ষকদের খুবই স্নহভাজন
ছিলেন। প্রবেশিকা পাশ করার পর উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্যে তিনি কলকাতায় গমন করেন। ১৮৯১ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি
কলেজ থেকে এফ.এ. পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৮৯৩ সালে তিনি তিনটি বিষয়ে অনার্সসহ প্রথম শ্রেণীতে বি.এ. পাশ
করেন।

১৮৯৭ সালে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে বি.এল. পাশ করে স্যার আশুতোষ মুখার্জি র শিক্ষানবিশ হিসেবে কলকাতা
হাইকোর্টে নিজের নাম তালিকাভু ক্ত করেন এ. কে. ফজলুক হক। পিতার মৃত্যুর পর ১৯০১ সালে তিনি বরিশালের ফিরে আসেন
এবং বরিশাল আদালতে যোগদান করেন। তিনি ১৯০৩ এবং ১৯০৪ সালে বরিশাল বার এসোসিয়েশনের সহকারী সম্পাদক পদে
বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।

১৯০৬ সালে আইন ব্যবসা ছেড়ে তিনি সরকারি চাকরি গ্রহণ করলেন। পূর্ব বাংলার গভর্ণর ব্যামফিল্ড ফু লার তাকে ডেকে
সম্মানের সাথে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেন। সরকারি চাকুরিতে তিনি কিছু দিন ঢাকা এবং ময়মনসিংহে কাজ
করেন।

১৯১৪ সালে ফজলুল হক নিখিল ভারত কংগ্রেস দলে যোগ দেন। একই সঙ্গে তিনি মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস দলের নেতা হয়ে
উঠেন। ১৯১৮ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন।১৯১৯ সালে তিনি নিখিল ভারত
মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট পদ লাভ করেন।

এ কে ফজলুল হক খেলাফত আন্দোলনেও অংশগ্রহণ করেন। ১৯৩৫ সালে এ কে ফজলুল হক কলকাতা মিউনিসিপ্যাল
করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। তিনিই কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের প্রথম মুসলিম মেয়র।

১৯৩৭ সালের মার্চে বঙ্গীয় আইন পরিষদের নির্বাচনে কৃ ষক প্রজা পার্টি র পক্ষ থেকে এ কে ফজলুল হক ১১ সদস্য বিশিষ্ট যুক্ত
মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন। উক্ত মন্ত্রিসভায় বাংলার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল
হক।

এ কে ফজলুল হক ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের অধিবেশনে ‘লাহোর প্রস্তাব’ উপস্থাপন করেন।

১৯৫৩ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের সময় তিনি কৃ ষক শ্রমিক পার্টি গঠন করেন। ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর এ কে ফজলুল
হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে নিয়ে গঠিত হল যুক্তফ্রন্ট। উক্ত নির্বাচনে জয়
লাভের পর তিনি পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৫৬ সালের ২৪ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালের ১ এপ্রিল পাকিস্তান কেন্দ্রীয়
সরকার তাকে গভর্নরের পদ থেকে অপসারণ করে। এরপরই তিনি তার ৮৬ বছরের বৈচিত্র্যময় রাজনৈতিক জীবন থেকে
স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন।

এ কে ফজলু হক ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল মৃত্যু বরণ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সমাহিত করা হয়।

বঙ্গ, বরেন্দ্র এবং পুণ্ড্র সম্পর্কে অল্প কথায় পরিচয় দাও ।


পুণ্ড্র: বাংলাদেশের বগুড়া জেলা এবং আশেপাশের কিছু অংশ নিয়ে এ জনপদ বিস্তৃ ত ছিল। এ নগর ছিল বাংলাদেশের
প্রাচীনকালের নগর এলাকা। তাছাড়া রাজশাহী রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ এর জনপদের অন্তর্ভু ক্ত ছিল।

বঙ্গ: বর্ত মান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার কিছু অংশ এবং বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের অন্তর্গত সবগুলো জেলা
নিয়ে প্রাচীন জনপদ বঙ্গ বিস্তৃ ত ছিল। কুষ্টিয়া, যশোর, ঢাকা, ফরিদপুর, বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া ছিল বঙ্গ
জনপদের অন্তর্ভু ক্ত।
বরেন্দ্র: বগুড়া,পাবনা, রাজশাহী বিভাগের উত্তর পশ্চিমাংশ, রংপুর ও দিনাজপুরের কিছু অংশ নিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চল গঠিত
ছিল।

ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি


ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজি বখতিয়ার খলজি নামেও সমধিক পরিচিত। তিনি ঘুরির একজন
তু র্কি -আফগান সেনাপতি ও প্রাথমিক দিল্লি সালতানাতের সেনাপতি ছিলেন এবং তিনিই প্রথম মুসলিম হিসেবে বাংলা ও বিহার
জয় করেছিলেন। তৎকালীন পূর্ব ভারতে তার ক্ষমতা অধিষ্ঠিত হবার পর ইসলামি পণ্ডিতদের দাওয়াতের তৎপরতা সর্বাধিক
সাফল্য অর্জ ন করেছিল এবং ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে পূর্ব ভারতীয় অঞ্চলসমূহে সবচেয়ে বেশি মানুষ ইসলাম ধর্ম
গ্রহণ করেছিল।

ফরায়েজী আন্দোলন
ফরায়েজী আন্দোলন ঊনিশ শতকে বাংলায় গড়ে ওঠা একটি সংস্কার আন্দোলন। ফরায়েজী আন্দোলন ধর্মীয় সংস্কারের
উদ্দেশ্যে সূচিত হলেও পরবর্তীতে এটি কৃ ষকদের আন্দোলনে রূপ লাভ করে। হাজী শরীয়তু ল্লাহ ফরিদপুর ও তার আশে পাশের
অঞ্চলে সংগঠিত এই আন্দোলনের নেতৃ ত্ব দেন। ধর্মীয় সংস্কারের পাশপাশি কৃ ষকদের জমিদার, নীলকরদের অত্যাচার ও
শোষন হতে মুক্ত করা ছিল এই আন্দোলনের লক্ষ্য।

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের দুইটি উদ্দেশ্য


১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন ছিল ব্রিটিশ সরকার রাজের পরাধীন ভারতের শেষ সংবিধান। এই আইনের গুরুত্বপূর্ণ
বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ছিল। দুইটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-
● এইটি ভারতে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা প্রবর্ত ন প্রদান করল
● সরাসরি নির্বাচন প্রথম বারের জন্য উপস্থাপন করা হল। ভোট দেবার অধিকার বৃদ্ধি কর হল।

ভাষা আন্দোলনে মৃত্যুবরণকারী পাঁচ জন শহীদ ব্যক্তির নাম


ভাষা আন্দোলনে বিত্তরণকারী পাঁচ জন শহীদ ব্যক্তির নাম নিম্নরূপ-
আব্দুস সালাম, আবুল বরকত, আব্দুল জব্বার, শফিউর রহমান এবং রফিক উদ্দিন আহমেদ।

You might also like