You are on page 1of 2

প্রশ্ন: মুসলিম আইনের বিভিন্ন উৎস গুলো বর্ণনা কর।

উত্তর: ইসলামিক আইন মূলত ঐশী বাণীর উপর প্রতিষ্ঠিত। মুসলিম আইনের প্রধান উৎস চারটি। যথা:

● কোরআন
● হাদিস
● ইজমা
● কিয়াস

মুসলিম আইনের প্রধান উৎস গুলো নিচে বর্ণনা করা হলো।

কুরআন

কুরআনের বিন্যাস: কোরআন একটি নাযিলকৃ ত কিতাব। নাজিলের পূর্বে লাওহে মাহফু জে এটি সংরক্ষিত অবস্থায় ছিল।
ইহা পর্যায়ক্রমে সুদীর্ঘ 23 বছরে জিব্রাইল (আ:) এর মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর নাযিল হয়। সর্বপ্রথম সূরা
আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত নাজিল হয় এবং সর্বশেষ নাযিল হয় সূরা মায়েদার তিন নম্বর আয়াত মতান্তরে সূরা তওবার
শেষ আয়াত। মোট 114 টি সূরা (অধ্যায়), 6666 টি আয়াত (বাক্য) এবং ত্রিশটি পারা (খন্ড) সম্বলিত কোরআন আজও
অবিকৃ ত অবস্থায় সকল রাষ্ট্রে বর্ত মান রয়েছে।

কুরআনের গ্রন্থায়ন: নবী করীম (সাঃ) এর জীবদ্দশায় কোরআন মুখস্ত করে কাঠের উপর, পাথরের উপর খোদাই করে
সংরক্ষণ করা হতো। নবী করীম (সাঃ) এর ইন্তেকাল করার পর ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক (রা:)
গ্রন্থবন্ধ করনের জন্য রাসূলের ব্যক্তিগত সহকারি হযরত যায়েদ বিন সাবিত কে দায়িত্ব অর্পণ করেন। তিনি নবী করীম
(সাঃ) এর থেকে প্রাপ্ত অংশ, সাহাবীগনের নিকট লিখিত প্রাপ্ত অংশ এবং কোরআনের হাফেজগণের পূর্ণ সহযোগিতা গ্রহণ
করে কোরআন মাজীদ গ্রন্থ বন্ধ করেন। পরবর্তী সময় হযরত উসমান (রা:) কুরআনের উচ্চারণের বিভিন্নতা দূর করেন
এবং মাত্র এক প্রকার রেখে অন্য সকল প্রকার ধ্বংস করে দেন। বর্ত মানে যে কোরআন পাওয়া যাচ্ছে তা ওই কোরআনেরই
অনুলিপি।

কোরআনের বিষয়বস্তু: কোরআনের বিষয়বস্তু ব্যাপক এবং বিস্তৃ ত। কোরআনের বিষয়বস্তু মানবককেন্দ্রিক। মানুষের
কল্যাণ ও অকল্যাণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে কোরআনে। মানব জীবনের দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত সকল সমস্যার
সমাধান দেওয়া আছে এই গ্রন্থে। মানুষকে বিকৃ ত মতবাদ ও ভু ল পথ থেকে ফিরিয়ে এনে নির্ভু ল কর্মনীতি ও আল্লাহ প্রদত্ত
জীবন ব্যবস্থার দিকে আহ্বান জানানো হচ্ছে কুরআনের চূ ড়ান্ত লক্ষ্য। কোরআন মানুষকে ভালো কাজের আদেশ দেয় এবং
অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দে শ দেয়। মানুষের ইহলৌকিক ও পরলৌকিক কল্যাণ এবং এ বিষয়ে মানুষের করণীয়
কি হবে এ সম্পর্কে আদেশ-নিষেধই কোরআনের মূল বিষয়বস্তু।

কোরআনের সূরার শ্রেণীবিন্যাস: নাযিলের সময়কাল বিবেচনায় সূরাগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, সূরা মক্কী সূরা ও
মাদানী সূরা।

মক্কী সূরা: প্রথম নাজিল থেকে শুরু করে রাসুল (সাঃ) এর হিজরত পর্যন্ত সময়ে নাযিলকৃ ত সূরা গুলোকে মক্কী সূরা বলে।
মক্কী সূরার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এইগুলি আল্লাহর একত্ববাদ, নবীর রিসালাত ও পরকালের বিষয়ে বিশ্বাস সংক্রান্ত।

মাদানী সূরা: নবী করীম (সাঃ) এর হিজরতের পর থেকে শুরু করে সর্বশেষ আয়াত নাজিল পর্যন্ত যে সূরাগুলি নাযিল
হয়েছে সেগুলোকে মাদানী সূরা বলা হয়। মাদানী সূরা সমূহে ব্যক্তিগত, সমষ্টিক ইবাদত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়
সমূহ, উত্তরাধিকার, যুদ্ধ ও শান্তি, সন্ধি, বাণিজ্য, আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ বিষয়ে সুস্পষ্ট দিক নির্দে শনা দেওয়া হয়েছে।
সুন্নাহ বা হাদিস: সুন্নাহ বা হাদিস মুসলিম আইনের দ্বিতীয় উৎস। সুন্নাহ হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর কাজ বা
আমল। আইনের পরিভাষায় সুন্নাহ বা হাদিস হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর কথা, কাজ ও সম্মতি। সুন্নাহ ও
হাদিসের মধ্যে সামান্য পার্থক্য আছে। সুন্নাহ হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু সালামের আমল ও উপদেশ। কিন্তু হাদিস হচ্ছে সুন্নাহ
এর লিখিত রূপ। হাদিস লিপিবদ্ধ করার পূর্বে সুন্নাহ ছিল।

হাদিসের শ্রেণীবিন্যাস: বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে হাদিসের শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে। শ্রেণীবিভাগ গুলি নিম্নরূপ:

● হাদিসে কাওলি: রাসুল (সাঃ) যা বলেছেন।


● হাদিসে ফেলি: রাসুল (সাঃ) যা করেছেন।
● হাদিসে তাকরিরি: রাসূল (সাঃ) যে সমস্ত বিষয় সম্মতি দিয়েছেন।
● হাদিসে কুদসি: রাসুল (সাঃ) এর ভাষায় আল্লাহর বক্তব্য।

ইজমা: ইজমার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে সর্বসম্মত মত। মুসলিম আইনের তৃ তীয় উৎস হলো ইজমা। আইনের পরিভাষায় ইজমা
বলতে কোন বিশেষ যুগের কোন বিশেষ প্রশ্নে মুসলিম আইনতত্ত্ববিদগণের ঐক্যমতকে বোঝায়। রাসুল (সাঃ) এর
ইন্তেকালের পর নতু ন নতু ন সমস্যা সমাধানের জন্য কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঐক্যমতের ভিত্তিতে সমাধান বের করা
হতো। আইনের দৃষ্টিতে ইজমা হলো রাসূল (সাঃ) এর উম্মতগণের মধ্যে বিভিন্ন যুগে যারা আইনবিদ ছিল তাদের মধ্যকার
ঐক্যমত। ইজমা অবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহ পরিপন্থী হলে চলবেনা। ইজমা সাহাবীগণ কর্তৃ ক গৃহীত ঐক্যমত তথা অন্য
একটি ইজমার পরিপন্থী হলে চলবে না। অর্থাৎ পরবর্তী যুগের মুস্তাহিদগণ সাহাবীগণের ইজমার বিরোধী কোন মতামত
প্রদান করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। অবশ্যই কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইজমা গঠিত হতে হবে।

কিয়াস: কিয়াস ইসলামী আইনের চতু র্থ উৎস। কিয়াসের অর্থ পরিমাপ, সমর্থন, প্রমাণ ও সততা। কিয়াস বলতে কোন
বস্তুর সাথে তু লনা করে কিংবা অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে তু লনামূলক পর্যালোচনা এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাকে বোঝায়।
সাদৃশ্যমূলকভাবে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিয়াসের একটি অন্যতম উপাদান। সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্ত ন,
রাষ্ট্রের বিস্তৃ তি, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, চিকিৎসা বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার, অপরাধের অভিনব কৌশল ইত্যাদির কারণে
নতু ন নতু ন সমস্যা উদ্ভব হলে সেগুলির প্রত্যক্ষ সমাধান কোরআন হাদিস ও ইসমাতে না পাওয়া গেলে কিয়াসের মাধ্যমে
ওইগুলি সমাধান বের করতে হয়।
কিয়াসের সমর্থনে একটি হাদিস প্রাধান্য যোগ্য। হাদীসটি হলো- মুয়াজ বিন জাবাল (রা:) কে রাসুল (সাঃ) ইয়েমেনের
শাসনকর্ত া নিয়োগ করেন। বিদায়ের প্রাক্কালে রাসুল (সাঃ) মুয়াজ (রা:) কে প্রশ্ন করেন যে কিভাবে তিনি তার সম্মুখে
উপস্থাপিত বিষয় সমূহ নিষ্পত্তি করবেন। মুয়াজ (রা:) উত্তরে বলেন, আমি কুরআনের আলোকে সমস্যার সমাধান
অনুসন্ধান করব। রাসুল (সাঃ) দ্বিতীয় প্রশ্ন করেন, তু মি যদি কোরআনে কিছু না পাও তবে কি করবে? মুয়াজ (রা:)
বললেন, আমি রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাহ অনুসন্ধান করব। রাসুল (সাঃ) তৃ তীয় প্রশ্ন করলেন, যদি এখানে কোন কিছু না পাও
তবে কি করবে? মুয়াজ (রাঃ) জবাবে বললেন, তখন আমি আমার নিজের বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করব। রাসুল (সাঃ) মুয়াজ
(রাঃ) এর জবাব এর সমর্থন করেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করেন।
মুসলিম আইনের অন্যান্য উৎস সমূহ

ইসতিসান: ইসতিসান অর্থ সমর্থন বা অনুমোদন বা অগ্রগনীয় আইন। যখন কতিপয় আইন কোন ক্ষেত্রে উপস্থাপন করা
হয় এবং প্রযোজ্য বলে প্রতীয়মান হয় তখন দুর্বল ভিত্তিক আইনের উপর দৃঢ় ভিত্তিক আইন প্রাধান্য লাভ করবে এবং
সমর্থনীয় বা অনুমোদনযোগ্য হবে এটাই ইসতিসান।

ইসতিসলাহ: ইসতিসলাহর মূলকথা হলো যেটা জনকল্যাণমূলক সেটাই গ্রাহ্য।

ইসতিদলাল: ইসতিদলাল অর্থ এক বস্তু হতে অন্য বস্তু অনুমান করা কোন একটি বিষয় হতে যুক্তি তর্কে র সাহায্যে অন্য
একটি অনুরূপ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাই ইসতিদলাল এর উদ্দেশ্য।

You might also like