You are on page 1of 1

2

এবার গল্পের দ্বিতীয় পর্ব শুরু। ফুলশয্যা রাতে ছেলে বৌমাকে


ঘরে দিয়ে বাইরে বসে থাকলেন শাশুড়ি মা। ছেলে সৌরভকে বিয়ে তো করিয়েছেন। কিন্তু বৌমাটি বাড়িতে পা
দেওয়ার পর তার শরীরে কি যেন একটা হল। ছেলে বৌমা ঘরের মধ্যে কি করছে, দরজা দিয়ে? তিনি সহ্য করতে
পারলেন না। বারবার কিছু না কিছু অজুহাতে ছেলেকে বাইরে ডাকতে থাকলেন। ছেলেও লজ্জায় মায়ের ডাককে অমান্য
করতে পারল না। এইভাবে চলতে থাকল বেশ কিছুদিন। সুমতির যেন অসহ্য ঠেকে গেল। রবীন্দ্রনাথের যুগ হলে
হয়তো, সে সব সহ্য করে থেকে যেত। কিন্তু আধুনিক যুগের মেয়ে সুমতি, কিছু শিক্ষার অহংকার তো রয়েছেই।
ফিরে গেল সে মায়ের কাছে। মা কামিনী দেবী যেন হাতে চাঁদ ধরে ফেললেন। তার ঘরের লক্ষ্মী ফিরে এসেছে।
কিন্তু কিছুদিন থাকার পর সৌরভ ও অস্থির হয়ে পড়লো। কি করে ফিরিয়ে আনা যায় স্ত্রীকে, ভাবতে ভাবতে
বন্ধুদের কাছে প্রকাশ করে ফেলল। বন্ধুরা যুক্তি দিল যা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আয়, আর এমন ভাবে আনবি যেন ফিরে
যেতে চাইলেও না যেতে পারে। সেজেগুজে দুরু দুরু বুকে গিয়ে উঠলো শ্বশুর বাড়ি। ভেবেছিল হয়তো বউ রাগ
করবে,আসবেনা। তাই একটু বেশি রাত করেই গেল। কিন্তু বউ অবশ্য তেমন কিছু ভাব দেখালো না। স্বাভাবিকভাবেই
আপ্যায়ন করলো। ওর দুজনের ভাব দেখে কামিনী দেবী বুঝলেন যে না! ঠিকই আছে, মেয়ে আর ফিরে যাবে না সে
ঘরে। যাক, রাতটুকু কোন রকমে কাটুক। তবে লোক লজ্জার ভয়ে ওদের একই ঘরে পাঠালেন। কি আর করা যায়।
কিন্তু ফল হলো উল্টো। চোখের জলে সমস্ত রাগ অভিমান মিটে গেল। আর আমার কাহিনীর মুখ্য চরিত্রের জন্মের
সূত্রপাত হল।

ফিরে গেল পরের দিন ওরা দুজনে। কামিনী দেবীর মাথায় হাত পরল। ঘরে আসা লক্ষ্মী যে পালিয়ে গেল! ছেলে বৌমা
বাড়ী ফিরতে, এদিকে অনিমা দেবীর সেই অসুস্থতা টা আবার ফিরে এলো। তিনি কিছুতেই পারলেন না, ওদের
দুজনের এক ঘরে থাকা টা মেনে নিতে। সংসারে অভাব; বাচ্চা হলে খাওয়াবি কি? এমন সব নানান অজুহাতে তিনি
ছেলেকে পাঠিয়ে দিলেন শহরে কাজ করতে। সে তো চলে গেল, এদিকে শুরু হলো গোপন অত্যাচার। বাইরের
ব্যবহার একদম সুমিষ্ট। কিন্তু ভিতরে ভিতরে সুমতি কে জর্জরিত করছিলেন। সারাদিন খাটিয়ে খাটিয়ে... নানা
ছলে বলে।

সুমতি কিন্তু মুখে কিছু বলত না, বারবার ঝগড়া সে করতে পারে না। গুমরে থাকতো। তারপর যেদিন তার
শাশুড়ি জানতে পারলো বৌমার পেটে বাচ্চা এসেছে। তখন আর যায় কোথায়? কিছুতেই সহ্য করতে পারলেন না।
অত্যাচারের মাত্রা ভয়ংকর রকম বেড়ে গেল। এতদিন যা গোপনে হতো, তা এখন প্রকাশ্যে হল। যার ফল হলো গিয়ে
সে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়ে উঠলো বাবার বাড়িতে। নয় মাস পরে জন্মালো তার ছেলে। শ্বশুর বাড়িতে খবর
দেওয়া হলেও তারা কেউ আসেননি। তাই ওরা বেশি যোগাযোগ করল না। মা কামিনী দেবী ও সুখের স্বপ্ন দেখতে
থাকলেন। এভাবে বছর দুই কেটে গেল। ছেলেকে কামিনী দেবীর কাছে রেখে শুরু হল সুমিতার নতুন জীবন।
প্রতিদিন নতুন নতুন কাস্টমার। কেউ ব্যাবসায়ী, কেউ চাকুরী জিবী, শিক্ষক, শ্রমিক সব রকমই লোকের আনাগোনা
শুরু হল রাতের অন্ধকারে। আর টাকার পাহাড় জমতে শুরু করল কামিনী দেবীর বাড়িতে। সেই টাকা দিয়ে জমি
কিনে একটা সুন্দর ঘরও করে দিলেন তিনি মেয়েকে। ২২ বছরের পূর্ণ যুবতীর শরীরে আনাচে-কানাচে যৌবনের
পূর্ণ আবেগ সকলকে মোহিত করে রাখে। এদিকে ছেলেকে কামিনী দেবী একদমই সামলাতে পারলেন না। পাঁচ বছরের
দীপেন যেন দুরন্ত ঘোড়া। দাদু, দিদা, মামা একেবারেই পারেনা তাকে সামলাতে। কোথায় যায়, কে জানে?
খাওয়ার সময় শুধু একটু খোঁজ নেয়। এদিকে সুমিতা চলে যায় সকাল থেকে; এগরা বাজার, দিঘা, কাঁথির
বিভিন্ন লজে। ফিরে প্রায় সন্ধ্যায়। আবার শুরু হয় সান্ধ্য অভিযান। প্রথম প্রথম গ্রামের লোকেরা প্রতিবাদ করত।
জরিমানাও করলো চার বার। জরিমানার টাকা অবশ্য সুমিতাকে যোগান দেওয়ার লোকের অভাব নেই। কিছুদিন পর
গ্রামের লোক এ নিয়ে আর মাথা ঘামাতে পারল না। কারণ যারা মাথা ঘামাবার লোক তারাই তো সুমিতের
বিলাসবহুল বাড়ির রাতের অতিথি হয়ে গেল। বেশ চলছিল। একদিন সুমিত স্কুটি নিয়ে বেরিয়েছে, চোখে হালকা
কাজল, ঠোটে হালকা লিপস্টিক সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে নিজেকে স্কুটিতে স্টার্ট দিচ্ছে। এমন সময় তার চুটন্ত
ঘোড়াটি দৌড়ে এসে গাড়ি ধরে টানতে লাগলো। সুমতি স্কুটি থেকে নেমে তাকে গালে চুমু খেলো তারপর
ব্যাগ থেকে কিছু প্যাকেট বের করে দিল। খাবার হাতে পেয়ে দিপেন কিছুক্ষণ সেখানে দাড়িয়ে থাকলো তারপর এক
দৌড় দিল। সুমতীর মনটা খুব খারাপ হলো। বেশ কিছুদিন থেকে তার মনে হচ্ছিল, ছেলেটার কি দোষ। বাবা,
কাকা, দাদু, ঠাম্মার আদর তো পায় না। মাকেও কাছে পায় না। দাদু, দিদার কাছ থেকেও খুব একটা যত্ন পায়
না। সেদিন সে সন্ধ্যা বেলায় এসে দেখেছে ছেলেটার মাথাটা খানিকটা ফুলে উঠেছে। হাতে পায়েও প্রায় ধুলো
লেগে থাকে। মাঝে মাঝে মুখটাকে ফুলিয়ে ঘুমিয়ে থাকে। চোখের কোন দিয়ে জল ধারা গড়িয়ে পড়ে। বেশ কষ্ট
হচ্ছিল সুমতির। কিন্তু কি বা করবে সে। সে তো ভালবেসেই বিয়ে করেছিল। শাশুড়ি তো সংসার করতে দিলেন
না। সৌরভ ও কেমন খালি মায়ের কথাই উঠে বসে। কই এতদিন একবারও ওদের নিতে এলো না। শশুর টা, দেওর
টাও না! যা করছি ঠিকই করছি। এত আবেগপ্রবণ হলে দিন চলবে? নিজের মা টাও কি ঠাঁই দিবে তাকে? টাকা
রোজগারের সহজতম উপায় কি কেউ হাতছাড়া করে? এই যে বাপের বাড়িতে এত খাতির, সে তো টাকার জন্যই।

You might also like