Professional Documents
Culture Documents
Life in Cities
Life in Cities
“Here there are things going on all the time; Migrants encounter with the city”
সাব-সাহারান অঞ্চলে তরূনী অবিভাসীদের ক্রমবর্ধ্মান উপস্থিতি সত্ত্বেও গবেষনা কর্মগুলো শুধুমাত্র যুবক ও তরুন শ্রমিকদের
দিকেই মনোনিবেশ করে। অবিভাসী তরুনীদের শহরে স্থানান্তরের অবিজ্ঞতা সম্ভলিত উল্ল্যেখযোগ্য কোন প্রবন্ধ বা পাঠ্য নেই।
তাছাড়া তরুনী ও যুবতী নারীদের শহুরে অভিজ্ঞতা বেশিরভাগ সময় ই তাদের শহরে প্রত্যাবাসনের উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে
অবলম্বনকৃ ত নতু ন কৌশল এর দিকে দৃষ্টি নয়া দিয়ে তাদের কে ঝু কি ও দুর্বলতার দৃষ্টি ভঙ্গিতেই দেখানো হয় (clark &
cotton 2013)। কোন প্রক্রিয়ার শহুরে পরিবেশে অবস্থান তৈরি করে, কিভাবে জীবন পরিচালনা করে, তাদের প্রাত্যহিক
জীবনের অভিজ্ঞতা ও হতাশা ইত্যাদি বিষয় নিয়েই এই অধ্যায়ের আলোচনা।
এখানে কিভাবে তারা তাদের জন্যে শহরে একটা স্থান তৈরি করে নেয়, তাদের প্রাথমিক আবাসস্থল, চাকরি বা জীবিকা নির্বাহের
কৌশল, চাকরি জীবনের অবিজ্ঞতা ও হতাশা। নিম্নে কিছু কেস স্টাডি এর মাধ্যমে বিষয়টি আলোচনা করা হলো।
আলোচিত তিনটি কেস স্টাডিতেই কিশোরীরা সামাজিক নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি, বৈষম্য, ও হয়রানির শিকার হয়। লিঙ্গ, বয়স,
সামাজিক শ্রেণী, এথনিসিটি এবং অভিগমন অবস্তা এমনভাবে বিভক্ত করে, যার কারনে অভিবাসী ও উদ্বাস্তু তরুনীদের
অত্যন্ত দুর্বল ও ঝু কির মধ্যে থাকে। একই সাথে শহুরে পরিবেশ কিছু সম্ভাবনার তৈরি করে দেয় যাতে করে তারা ভিন্ন ধরনের
জীবন যাপন পচন্দ করতে পারে, তারা ইচ্ছা ও পচন্দ অনুযায়ী চলতে পারে, জীবন সম্পর্কে তাদের ধারনার পরিবর্ত ন ঘটে।
বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয় এর উন্মোচন ঘটে শারমিন এর গল্পের মাধ্যমে, একজন তরুনী শহুরে জীবনে প্রথম অভিজ্ঞতা,
বিচ্ছিন্নতাবোধ, একাকিত্ব, অপরিচিত এবং পরিবারের অনুপস্থিতির অনুভু তি। একই সাথে নতু ন একটা সম্ভাবনাময় পরিবেশের
সাথে তার পরিচয় ঘটে।
১। ঢাকা, বাংলাদেশঃ
“ঢাকায় আসার পূর্বে গার্মেন্টস এর কাজ সম্পর্কে কিছুই আমি জানতাম না, ঢাকায় আসার প্রথম দিকে আমার খুব কষ্ট হয়,
সকাল ৮টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত কাজ করতে হত। আমি সারাদিন কান্না করতাম আমার বাচ্ছার জন্যে”। ১৪ বছর বয়সে
শারমিন এর বিয়ে হয়, এবং তার একটা বাচ্ছা আছে (যাকে মা-বাবার সাথে গ্রামের বাড়িতে রেখে আসছে) । শারমিন যখন
ঢাকায় আসে তখন তার বয়স ১৭ বছর, প্রথম মাসের কঠিন অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলে
ঢাকা আমার একেবারেই পচন্দ ছিলনা, সকাল ৮ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে সুতা কাটা এবং অন্যান্য কাজ
এর পর বাসায় যায় (কাজিনের বাসা) । ঘরের কাজকর্মে কাজিনকে সাহায্য করতে হত আর এভাবে সাত মাস
ছিলাম । এখানে থাকা ও খাবারের জন্যে টাকা দেওয়ার পর বাকি টাকা দিয়ে তৈল -সাবান কেনার পর জমানোর
মত কোন টাকা অবশিষ্ট্য থাকতো না। হটাৎজন্ডিস হওয়ার কারনে আমি কিছুদিনের জন্যে বাড়ি চলে যাই।
কয়েক মাস পর শারমিন ঢাকায় ফিরে আসে, কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে কাজ, প্রথম সমস্যা বা বাচ্চা ও পরিবারের কথা মনে পড়া
সত্ত্বেও সে শহুরে জীবনের সাথে মানিয়ে নেয়। তার ভাষায়
”আমি গ্রামের চেয়ে অনেক ভালো আছি, গ্রামে সর্বদায় ছিলো অভাব, কোন স্বাধীনতা ছিল না। আর এখানে
আমি নিজে আয় করছি। গ্রামে সন্ধ্যা নামার সাথেই সবাই ঘরে প্রবেশ করে আর এখানে যখন খুশি বাইরে যাওয়া
যায়, তাছাড়া বিনোদনের অনেক মাধ্যম আছে যেমন সিনেমা দেখা, ঘুরতে যাওয়া যা এবং বান্ধবীদের বাসায় ও
ঘুরতে যাওয়া যায়।
এভাবেই শারমিন শহুরে পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়, কিন্তু তার অবস্থা আবারো পরিবর্ত ন ঘটে যখন তার স্বামী (পূর্বের)
তার সাথে ঢাকায় থাকতে শুরু করে। তার পরিবার তাকে নতু ন করে বিয়ে দেওয়ার জন্যে চাপ দেয় , কিন্তু সে তার সন্তান
হারানোর ভয়ে স্বামীর সাথে থাকতে রাজি হয়। তার বর্ত মান অবস্থা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শারমিন বলে,
”বেশির ভাগ সময়ই আমি রিক্সা নিয়ে অফিস এ যাই, ফিরে এসে রান্না থেকে সকল কাজ আমাকেই করতে হয়,
কখনো একটূ দেরি হলেই সে আমাকে প্রশ্ন করবে দেরি কেন হলো। এখনকার বন্ধের দিন আমি বাসায় বসেই কাটাই
কারন আমাকে অনেক কাজ করতে হয় ঘরের কিন্তু সে বাইরে সময় কাটায়। এখন টাকার জন্যে আমাকে চিন্তা
করতে হয় এবং স্বামীর কথামতই সব করতে হয়। এখন আমার কোন স্বাধীনতা নাই, আমার নিজের ইচ্ছামত
কিছুই করতে পারিনা”।
জামিলা, ১৭ বছরের বালিকা, গবাষনার তথ্যসংগ্রহকালীন সময়ে তার অভিজ্ঞতার কথা বর্ননা করতে গিয়ে বলে “মা-বাবাকে
ছাড়া এখানে থাকা খুব ই কষ্টের যদিও আমরা প্রতিদিন ফোনে কথা বলি তবুও গ্রামে থাকাকালীন আমি বাড়ি ফেরার পরেই
তাদের দেখতে পেতাম কিন্তু এখানে কাউকেই দেখিনা বরং নিজের সবকাজ নিজেকেই করতে হয় । একইভাবে ইথিওপিয়া এবং
ইরিত্রিয়া থেকে খারতু মের উদ্দেশ্যে যারা আসে তারা তাদের পারিবারিক অথবা আত্বীয়সজনের সাহায্যেই প্রাথমিক বাসস্থান ও
অন্যান্য সুজোগ এর ব্যবস্থা করার চেষ্টা করে। সালাম (ইথিওপিয়ান বালিকা), ১৩ বছর বয়সেই এক আন্টির সাথে খারতু ম এ
আসেন। গবেষোনাকালীন সময়ে তার বয়স ছিল ২৩, তাকে তখন আমারাতের চা বিক্রি করতে দেখা যায়, এছাড়া তারমত
পরিবারের সদস্যদের সাথে যারা এসেছিলো তার খুব সহজে শহুরে জীবনযাপনের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়।
সালামের বর্ণ্নায় “ খারতু ম ছিলো আমার শহর থেকে কিছুটা ভিন্ন ধরনের, এটা অনেক বড় শহর যেখানে পোশাক থেকে শুরু
করে যাবতীয় বিষয়সমূহ ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে কিন্তু আন্টির সাথে থাকার কারনে খুব সহজেই আমি এসবের সাথে মানিয়ে
নিতে সক্ষম হই। যদিও প্রথম কয়েক বছরই শুধুমাত্র আমি আন্টির সাথে থাকি…”। শহরে যাদের কোন রিলেটিভ নেই তাদের
শহরে আসা খুবই বিব্রতকর ও ঝু কিপূর্ন অভিজ্ঞতা। একই ভাবে বলা যায় কিব্রার কথা বলা যায় ”ওমুদারমান এ একটা
বাড়িতে আমি গৃহবন্দী অবস্থায় ছিলাম, সেখানে শমসেরা(মানবপ্রাচারকারী) এর সাহায্যেই আমি আসতে সক্ষম হই কিন্তু টাকা
দিতে না পারার কারনে আমাকে বন্দী থাকতে হয়। বন্দীথাকাকালীন শমসেরা, তারপরিবার ও যাদের কে প্রাচার করা হচ্ছে
তাদের জন্যে রান্না করতে হত আমাকেই, তার পর আমি সেখান থেকে যখন পালাই আমি জানতাম না শহরের কোথায় আমি
আছি কিংবা কোথায় যাচ্ছি…”
কিব্রা গর্ভ বতী ছিলো (সম্ভবত দর্শন), তাকে সাহায্য করার ইচ্ছা থাকলেও তার কাজ করতে না পারার কারনে তাকে তাড়িয়ে
দেয় অনেকেই। তার জায়গা হয় রাস্তায়, অতঃপর তাকে একটা চার্চে রেখে আসা হয় এবং চার্চে র লোকজন তাকে এবং
নবজাতক এর খাবার, বাসস্থান ও নতু ন পরিধেয় প্রধানের মাধ্যেমে সাহায্য করে।
আদ্দিস আবাবায় যাদের সাক্ষাতকার নেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে বর্ত মান কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের সকল উৎসাহ ম্লান হয়ে
যায়, অথবা নিরবতাই তিক্ত অভিজ্ঞতায় মানিয়ে নেওয়ার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়, খুব কম সংখ্যকই তাদের প্রথম দিকের
উৎসাহের কথা ব্যক্ত করেছেন। তাদের সবার মধ্যে একটা ইতিবাচক দৃষ্টিভংগি এবং উচ্চাকাঙ্খা ছিল। শহর কে আধুনিকতার
প্রতিক এবং মাইগ্রেশন কে অধুনিক হওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা হত। ম্যাসেরেট, ১৫ বছর বয়সেই শহরে চলে আসে তার
আন্টির সাথে; “শহরের রঙিন আলোয় আমি খুব বিস্মিত হই এবং আমার আশা-আকাঙ্খা আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠে শহরের
আলোর সাথেই। আমার ভবিষ্যৎ এর চিন্তায় খুব ই আশাবাদী এবং খুশি ছিলাম”।
আধুনিকত্বই হলো শহরের আকর্ষন, ব্যক্তি শুধুমাত্র শিক্ষা ও চাকরির মাধ্যমেই নয় বরং বিভিন্ন ধরনের পন্য, খাবার এবং
জীবনচর্চার মাধ্যমেও আধুনিক হতে পারে। এই আকাঙ্ক্ষা লিঙ্গভিত্তিক ভাবে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে , কিশোরী এবং যুবতী
নারীদের মাইগ্রেশন প্রায় দুইধরনের প্রভাব বিস্তার করে; নিজেদের নিয়ন্ত্রনমূলক জীবনযাপন থেকে নিজের মত করে জীবনযাপন
করার একটা সম্ভবনা দেখে। আবার মাইগ্রেশন মানে পরিবারের বাইরে প্রথম একা জীবন। যার ফলে নিরাপত্তাহীনতা, বিষন্নতা
এবং একাকীত্ত্বে ভোগার সম্ভবনা থেকে যায়।
খুব অল্পসময়ের মধ্যে তাদের সকল আশা হতাশায় পরিবর্তীত হয়, যার ফলে দেখা যায় নিন্ম মানের জীবনযাপন, অতিরিক্ত
কাজের চাপ এবং নানা ধরনের অপব্যবহারের শিকার হয়।
অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা, সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে মাইগ্র্যান্ট এবং রিফিউজি
সম্প্রদায়ের জীবনযাপন ভিন্নতর হয়ে থাকে.. Garau et al. 2005, আবাসনের দিক দিয়ে বর্ত মার মাইগ্র্যান্টদের সকলে
তথাকথিত বস্তিতে বাস করার সুজোগ পায় না. গবেষনায় অংশ নেওয়া অনেকেই তার চেয়ে নিন্মমানের অবস্থানে থাকে।
মাইগ্র্যান্টদের মধ্যে শহরবেদে জীবনযাপন প্রনালীর পার্থক্য রয়েছে; যেখানে ঢাকায় মাইগ্র্যান্ট কিশোরীদের আলাদা বস্তী
এলাকায় সংঘবদ্ধভাবে বসবাস করতে দেখা যায়, সেখানে আদ্দিস আবাবা এবং খারতু ম এ কিশোরীদের শহরজুড়ে ছড়িয়ে
থাকতে দেখা যায়, যার ফলে জীবনযাত্রার পার্থক্য ব্যাপক ভাবে পরিলক্ষ্যিত হয়। অনেকেই পরিবার বা বন্ধু দের সাথে বাসস্থান
শেয়ার করে থাকে, যার মাধ্যমে শুধুমাত্র সীমিত ব্যয় এর জন্যে নয় বরং একা্কীত্ব দূরিকরন ও নির্যাতন এর হাত থেকে
নিরাপত্ত্বার কৌশলমাত্র। সুদানে কিশোরী, কমবয়সী নারীদের কোন পুরুষের সাথে ফ্ল্যাট শেয়ার করার অনুমতি নেই । কারো
পরিবারের সদস্য বা ভাই যদি শহরে আসে তখন তার জন্যে ভিন্ন বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হয়।
ভোলা বস্তির, মিরপুর-ঢাকা, এখানকার জীবন সম্পর্কে এর বাসিন্দাদের অভিব্যক্তি হলো অপরিষ্কার এবং দুর্গন্ধযুক্ত পানি,
স্বাস্থসম্মত টয়লেট না থাকার কারনে ঘনঘন এবং গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অনেকেই গ্রাম থেকে আসার কিছুদিনের
মধ্যে জন্ডিস, হেপাটাইসিস এবং ডাইরিইয়াই আক্রান্ত হয়। তবে ঢাকা অবস্থানরত গরো কিশোরিরা অবাসনগত ভাবে বেশ
ভালো অবস্থানে আছে, তারা বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় পরিচিতজনের সাথে ফ্ল্যাট শেয়ার করে থাকছে। এছাড়া যাদের কোন
জানাশোনা নেই তারা পার্লারেই অবস্থান করে। নানবিদ সমস্যা থাকা সত্বেও তিনটা শহরের ই বাসাভাড়া খুব বেশি , যার কারনে
অনেকেই খুব ঘনঘন বাসা পরিবর্ত ন করতে দেখাগেলেও তারা একই এলাকার মধ্যে থাকে কারন তারা পরিচিত জনদের
পাশাপাশিই থাকতে চায়।
যারা আত্বীয়ের সাথে থাকে তাদের কিছুটা ব্যতিক্রম পরিস্থিতির সম্মুক্ষীন হতে হুয়। সালমা, ১৫ বছরের বালিকার অভিব্যক্তি “
একা কোথাও যাওয়ার অনুমতি নেই আমার, এমন কি আমি দোকান থেকে কিছু নেওয়ার জন্যেও যেতে পারিনা। আন্টি বলে
আমাকে গ্রামের মতই চলতে হবে। কারো সাথে কথা বলাও সম্মানহানীর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়, আমার নিজেকে এখানে
নজরবন্ধী লাগে“। এট বাংলাদেশের শিশু শশ্রিক মাইগ্রেশনের চিত্র তু লে ধরে যার মাধ্যমে সামাজিক নিয়ত্রন এর বহিঃপ্রকাশ
লক্ষনীয়।
মাইগ্র্যান্ট ও অভিবাসী নারীদের দৈনন্দিন জীবন একটা নির্দি ষ্ট চক্রের মধ্যেই ঘুরতে থাকে, তারা নিজের এবং পরিবারের অন্য
সদস্যদের জন্যেই প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করেই যায়। এই কথার ই প্রতিধ্বনিত হয় সালাম (১৯ বছর বয়সী ইথিপিয়ান কিশোরী)
এর কথায়। সালাম খারতূ ম এ রাস্তায় একটী ফু ডকার্ট এ চা বিক্রেতা , প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৭.০০ টা পর্যন্ত সে
কাজ করে, ৯.০০ টা নাগাদ বাসায় ফিরে নিজের দৈনন্দিন কাজ করে। কাজ শেষে বন্ধু দের সাথে কিছুক্ষন গল্প করে ১১ টা
নাগাদ ঘুমায়। শুক্রবার তার ছুটি ঐদিন সে চার্চে যায়, বাকিটা সময় বাসায় বন্ধু দের সাথে গল্প করেই কাটায়। একই রকম
জীবনধারা দেখা যায় ঢাকা এবং আদ্দিস আবাবায়।
লামিয়া, একজন গার্মেন্টস কর্মী, ভোর ৫.৩০ এ ঘুম থেকে উঠে এবং দৈনন্দিন কাজ সেরে ৭.৩০ এ অফিস এ যায়, সেখানে
সন্ধ্যা ৫ টা নাগাদ কাজ করতে হয়। ওভারটাইম করতে হলে তাকে রাত ১০ টা পর্যন্ত অফিসে কাজ করতে হয়। একই ভাবে
সেও তার ছুটির দিন বান্ধবিদের সাথে বাসায় অথবা কোথাও ঘুরে বেড়ায়।
আদ্দীস আবাবায় মাইগ্র্যান্ট দের মধ্যে যারা পরিবারের গৃহকর্মী হিসেবে থাকে তাদের ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে ঘর-পরিষ্কার
করা, নাস্তা তৈরি করা ইত্যাদি কাজকর্ম চলতে থাকে রাত ১০ টা আগাদ। তাদের কোন ছুটি নেই, যদি কোন ধর্মীয় উৎসবে
যেতে হয় তখন মালিকের অনুমতি সাপেক্ষে যেতে হয়। তাছাড়া যদি বাচ্চার দায়িত্ব তার উপর থাকে তাহলে তাকে আরো বেশি
কষ্ট করতে হয়। মাইগ্র্যান্টদের মধ্যে যারা যৌনকর্মের সাথে সংযুক্ত তারা রাত ১০ টা থেকে ভোর নাগাদ কাজ করে (ক্লায়েন্ট এর
উপর নির্ভ র করে)। এবং বেলা ২ টা নাগাদ ঘুমায়। তাদের কোন নির্দি ষ্ট ছুটি নেই।
উপরোক্ত তথ্যগুলো এটাই প্রকাশ করে যে শহরে মাইগ্র্যান্ট এবং রিফিউজি কিশোরী ও নারীদের জন্যে তেমন কোন পচন্দের
সুজোগ নেই। তাই প্রান্তিক ও কলঙ্কিত অর্থিক কাজগুলো বাধ্য হয়েই করতে হয়। এছাড়াও কিছু ঝু কিপূর্ন কাজও এরা করে
থাকে যার যথাযথ মূল্য তারা পায় না।
Social Life
শহরে জীবনের নানাবিধ সুজোগ-সুবিধা মাইগ্র্যান্ট কিশোরীদের নানভাবেই প্রভাবিত করে, তার মধ্যে পরিবারের বিধিনিষেধ এর
বাইরে থেকে নিজের মত করে স্বাধীনভাবে চলতে শুরু করে। শহুরে জীবনের সুবিধার সম্পর্কে শারমিন বলে” এখানে যখন
খুশি আমি বাজারে যেতে পারি, মন খারাপ থাকলে বান্ধবিদের সাথে ঘুরতে যেতে পারি, এখানে নিষেধ করার মত কেউ নেই।
বাড়িতে বাবা-মা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দিত না, তাদের নানাবিধ নিষেধ ছিলো। কিন্তু এখানে সিনেমাহলে যাই এবং যখন
খুশি বান্ধবীদের সাথে ঘুরাঘুরি করতে পারি”। একই ভাবে অন্যান্য মাইগ্র্যান্ট কিশোরী এবং নারীদের মধ্যেও একই ক্থার
প্রতিধ্বনিত হয়।
অনেকেই গ্রামের তাজা খাবার এর কথা উল্লেখ্য করলেও তা খুব কমই প্রভাব ফেলে । কেউ কেউ গ্রামের খোলা মাঠ ও স্নিগ্ধ
বাতাসের কথা বললেও অনেকেই তার উল্টোটা বলে, তাদের কাছে এখানে নতু ন মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি হওয়ার একটা
সম্ভবনা থাকে যার মাধ্যমে নতু ন সুজোগ সুবিধা সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। এভাবেই শহুরে জীবনের সাথে তাদের একটা
সামাজিকীকরন হয়ে থাকে।
এই সামাজিকীকরন প্রক্রিয়ার মধ্যে তিনটা শহরেই একটা বিষয় খুব সামঞ্জস্যপূর্নভাবে দৃষ্টিগোচর হয়, তা হলো বন্ধু ত্ব। বন্ধু ত্ব ই
শহুরে জীবনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ন কৌশল হিসেবে দেখা হয়। আর এখানে বন্ধু ত্ব টা তৈরি হয় কর্মস্থল ,
বাসা বা একই সাথে আড্ডা দেওয়ার মাধ্যমেই। তারা একে অপরের খোজখবর রাখে, বিপদে সাহায্য করে, একসাথে ঘুরতে
যায় ইত্যাদি। উদাহরন হিসেবে বলা যায়, লামিয়ার বোনের অসুস্থতার সময় সূমা (লামিয়ার বান্ধবী) তাকে আর্থিকভাবে সাহায্য
করে।