You are on page 1of 22

1) ~ আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা - কেন আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে পড়তে যাবেন না?

© Ragib Hasan

নানা সময়ে বিভিন্ন ফোরামে আমেরিকায় উচ্চতর শিক্ষা তথা মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে পড়া নিয়ে লিখেছি। অনেকেই সেসব লেখায় আমেরিকায় ব্যাচেলর্স বা স্নাতক পর্যায়
বা আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে পড়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করেছেন। আজকে সেটা নিয়েই কিছু লিখছি।

(শুরুতেই বলে রাখি এই লেখাটি আমার ব্যক্তিগত অভিমত। কারো অভিমত বা অভিজ্ঞতা ভিন্ন হতে পারে, সেটা জেনেই লিখছি।) আমেরিকার অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে
মাস্টার্স বা পিএইচডি পর্যায়ে বিদেশী শিক্ষার্থীদের পড়ার যে সুবিধা থাকে ফান্ডিং সহ, আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে সেরকম সুবিধা নেই বললেই চলে। তাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে
গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী হিসাবে বাংলাদেশীরা যত আসছেন, আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে সেরকম আসেনা বললেই চলে। এর পরেও অনেকেই এইচএসসির পরে পরেই আমেরিকার
নানা ইউনিভার্সিটি বা কলেজে পড়াশোনা করতে আসতে চান। লেখাটা তাঁদের জন্যই। এক কথায় বলতে গেলে, আমি আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায়
পড়তে আসাকে নিরুৎসাহিত করি পুরোপুরি।

কেন? কারণগুলো (আমার অভিমত) নিচে লিখছি -

১) খরচ - অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ দেয়া হয় না। কিছু ব্যতিক্রম আছে বটে কিন্তু তার জন্য সারা বিশ্বের বহু
শিক্ষার্থীর সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে পেতে হয়। কাজেই আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে ফু ল স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে আসার সম্ভাবনা খুবই কম, যেটা মাস্টার্স বা পিএইচডি
পর্যায়ে সহজেই সম্ভব। আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে রিসার্চ বা টিচিং এসিস্টেন্টশিপও কম বা নেই বললেই চলে -- আর থাকলেও সেটার বেতন ঘণ্টা হিসাবে। আর অধিকাংশ
আন্ডারগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীকে ডর্মিটরিতে থাকার খরচও দিতে হয় শুরুতে, ফলে টিউশন ও সেই খরচ মিলিয়ে বিশাল পরিমাণ টাকা দরকার হয় প্রতি সেমিস্টারে। দেশে যদি
কারো পরিবার কোটিপতি বা শতকোটিপতি হয়, তাহলে সমস্যা হবে না, কিন্তু অধিকাংশ মানুষের পরিবারই সেরকম নয়। কাজেই এই খরচ দিয়ে আমেরিকায় আন্ডারগ্রাজুয়েট
সেলফ ফিনান্সে পড়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার একটা।

২) কষ্ট - আন্ডারগ্রাজুয়েট শুরু করতে যাওয়া একজন শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বা ১৯ মাত্র। টিন এইজ শেষ হয়নি। এই বয়সের একজন কিশোর বা কিশোরী আমেরিকায় পুরোপুরি
একাকী পড়তে এসে যে পরিমাণ কষ্টের মধ্যে পড়ে, সেটা সামলে নেয়া অনেক কঠিন। খরচের কথা আগের পয়েন্টেই বলেছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ এই বয়সের কিশোর
কিশোরী কোন কাজ করে অভ্যস্ত না। পড়ার বিশাল খরচ মেটাবার জন্য আমেরিকায় আসার পরে নানা রকমের অড জব করতে হয়। এমনিতেই তাড়াতাড়ি পাশ করার তাড়া,
তার উপরে দিনে কয়েক ঘণ্টা স্বল্প বেতনে কাজ করা -- এই দুইটা জিনিষ সামলানো খুব কঠিন। কাজ করতে গিয়ে পড়ার সময় পাওয়া যায় না, ফলে রেজাল্ট ভাল রাখা কঠিন
হয়ে পড়ে। তার উপরে এত অল্প বয়সে জীবনের কঠিন দিকটা দেখা, টাকার খোঁজে দিশেহারা হয়ে পড়া, এবং তদুপরি পরিবার থেকে এত দূরে ভিন্ন একটি দেশে থাকা -- সব
মিলিয়ে সেটা এত অল্প বয়সী একজন শিক্ষার্থীর জন্য প্রচণ্ড মানসিক চাপের কারণ হয়। বাংলাদেশে পারিবারিক সাপোর্ট থাকে। এমনকি নিজের বাড়ি থেকে দূরে পড়তে গেলে
ও হলে থাকলেও চাইলেই ঘণ্টা কয়েকের মধ্যে বাড়িতে যাওয়া চলে। আর নিজের সংস্কৃ তি নিজের দেশের মধ্যে অনেক মানসিক শক্তি মিলে, যেটা বিদেশে হাজার চাইলেও
মিলবে না। কাজেই একজন কিশোর বা কিশোরীর পক্ষে বিদেশে আন্ডারগ্রাজুয়েট পড়ার সময়টা খুব মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাড়ায়।

৩) দেশে স্নাতক করার সুবিধা - বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময়ে সেশন জ্যাম ছিল প্রচু র। এখন সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটা কমে এসেছে। আর প্রাইভেটে সেটা নেই।
দেশে ভাল সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও অনেক ভাল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ও হয়েছে। কাজেই পড়ার মানের দিকে বিচার করলে বাংলাদেশের স্নাতক শিক্ষার মান আমেরিকার
স্নাতক শিক্ষার মানের চাইতে খুব একটা খারাপ না। (আমি অবশ্যই এমআইটি বা হার্ভার্ডে র স্নাতকের সাথে তু লনা করছি না -- গড়পড়তা আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক
শিক্ষার কথা বলছি)। কাজেই অনেক কষ্ট করে এবং লাখ লাখ টাকা খরচ করে আমেরিকায় আন্ডারগ্রাজুয়েট ডিগ্রি করতে গিয়ে খুব বেশি একটা সুবিধা তেমন পাওয়া যায় না
যেটা বাংলাদেশে মিলবে না। আর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করার পরে চাইলে মাস্টার্স বা পিএইচডি পর্যায়ে ফান্ডিং সহ বিনা খরচে পড়ার সুবিধা তো
আছেই। বাংলাদেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আমেরিকার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে হাজার হাজার ছাত্র আসছেন প্রতিবছর।

৪) মানসিক পরিপক্কতা - মানসিক পরিপক্কতা একটা বড় ব্যাপার। সদ্য এইচএসসি পাশ করা একজন শিক্ষার্থী বয়সে তখনো অনেক কাঁচা। এই অবস্থার চাইতে ২৩/২৪ বছর
বয়সের একজন স্নাতক পাশ করা শিক্ষার্থী মানসিকভাবে অনেক অভিজ্ঞ ও পরিপক্ক। কাজেই মাস্টার্স বা পিএইচডি পর্যায়ের একজন শিক্ষার্থী যতটা সহজে নতু ন একটি
দেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, ১৮ বছরের একজন কিশোর বা কিশোরীর পক্ষে সেটা করা সম্ভব হয় না। ১৮-২২ বছরের এই সময়টা আসলে মানুষের formative year এর
একটি অংশ। পরিবার কিংবা নিজের সমাজের সংস্কৃ তির ছত্রছায়ায় এই সময়টাতে নৈতিক ও মানসিক দৃঢ়তার যে ভিত্তি দেশে গড়ে উঠে, বিদেশে পরিবারপরিজনহীন
অবস্থায়, বাঁধনছাড়া পরিবেশে, এবং ভিন্ন একটি সমাজে সেভাবে একজন টিনেজারের বিকাশ ঘটে না। প্রচু র প্রচণ্ড মেধাবী শিক্ষার্থীর উদাহরণ জানি যাঁরা দেশে এইচএসসি
পর্যায়ে বিশাল ভাল ফলাফল করে পরে আমেরিকায় মাঝারিমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে পড়তে এসে উপরের বিভিন্ন কারণে আর সেরকম সেরা ফলাফল ধরে রাখতে
পারেননি। (ব্যতিক্রম আছে বটে, কিন্তু ব্যতিক্রম উদাহরণ না, আমি সামগ্রিক হিসাবের কথা বলছি যা একজন দুইজনের সাফল্য দিয়ে এড়ানো যায় না)।

কাজেই আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ এইচএসসি পাসের পরেই আমেরিকায় যদি স্নাতক করতে যেতে চান, শুরুতেই ভেবে দেখুন, অঢেল টাকা, বিদেশে পারিবারিক
সুবিধা, এসব আছে কি না। যদি না থাকে, তাহলে কষ্ট করে চার বছর অপেক্ষা করুন, এবং দেশে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করে তবেই প্রস্তুত হয়ে আমেরিকায় পড়তে আসুন। তার
আগে নয়। (আগেই বলেছি, একজন দুইজনে পেরেছে বলে সবাই পারবে তা নয়। আর উপরের মন্তব্যগুলো আমার ব্যক্তিগত অভিমত। আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে, তবে
আমার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমি উপরের কারণগুলোর জন্য আমেরিকায় আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে পড়তে আসাকে নিরুৎসাহিত করি।)

(কেউ যদি ইমিগ্র্যান্ট হন (গ্রিন কার্ড , বা সিটিজেনশিপ), তাঁদের কথা আলাদা। খরচের দিক থেকে তাঁদের অনেক সুবিধা আছে, কারণ সরকারী অনেক স্কলারশিপ বা
ফিনান্সিয়াল এইড সিটিজেন বা গ্রিনকার্ড ধারীরা পেতে পারেন।)

#আমেরিকায়উচ্চশিক্ষা

2) আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা -- মাস্টার্স/পিএইচডিতে ভর্তি র পদ্ধতিটা কী রকম? ~

মার্কি ন যুক্তরাষ্ট্র আর যাই হোক না কেনো, একটা দিক থেকে বিশ্বে প্রথম সারিতে, তা হলো এখানকার উচ্চতর শিক্ষা ব্যবস্থা। মার্কি ন গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা (অর্থাৎ
পিএইচডি বা মাস্টার্স) বেশ সমৃদ্ধ, এবং শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট খাটতে, পড়তে, লিখতে, ও উপস্থাপন করতে হয়। অন্যান্য অনেক দেশে যেমন কোর্সওয়ার্ক ছাড়াই সরাসরি ৩
বছরে পিএইচডি ডিগ্রি দিয়ে দেয়া হয়, এখানে তা নয়, বরং শুরুতে ২ থেকে ৩ বছরে নানা উচ্চতর কোর্স করার পরে বাকি ৩ বছর গবেষণা করলে তবেই পিএইচডি ডিগ্রি
মেলে। আবার এই কারণে ব্যাচেলরস বা স্নাতক ডিগ্রির পরে মাস্টার্স না করেই সরাসরি অধিকাংশ পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া যায় ফান্ডিংসহ। তাই মার্কি ন উচ্চতর
শিক্ষা সারাবিশ্বের শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ কাংক্ষিত। এদেশের উচ্চতর পর্যায়ে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই বিদেশী, অন্তত প্রকৌশল ও বিজ্ঞান ক্ষেত্রে। আমার পিএইচডির
বিশ্ববিদ্যালয় (ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আরবানা শ্যাম্পেইন এর কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে) ৪০০ গ্র্যাজুয়েট ছাত্রের মধ্যে সম্ভবত ৩৫০ এর বেশি ছিলো বিদেশী।
এদের মধ্যে চীনাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয়। জনসংখ্যার হিসেবে বাংলাদেশ থেকে বরং অনেক কমই আসে এদেশে উচ্চতর পর্যায়ে। আরো অদ্ভু ত হল প্রতিবেশী দেশ
নেপাল থেকে জনসংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশের চাইতে অনেক বেশি ছাত্রছাত্রী আমেরিকায় পড়তে আসে।

শিক্ষাখাতে মার্কি ন সরকার খরচও করে বিপুল পরিমাণ। উদাহরণ দেই, আমার পিএইচডির বিশ্ববিদ্যালয় (UIUC) এর পিএইচডি পর্যায়ের ছাত্রদের মধ্যে এমন কাউকে
দেখিনি, যে পূর্ণ ফান্ডিং পায়নি। সবাইই হয় গবেষনা সহকারী, বা শিক্ষা সহকারী হিসেবে ফান্ড পায়। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই হারটা একটু কম, কিন্তু তার পরেও
অধিকাংশই ফান্ড পেয়ে থাকে।

~~~ ভর্তি প্রক্রিয়া ~~~

এবার দেখা যাক, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি র প্রক্রিয়াটা কীরকম --

** আবেদন- ভর্তি র মৌসুম শুরু হয় সাধারণত নভেম্বর থেকে, আবেদন নেয়া হয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বা জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত।

অধিকাংশ জায়গাতেই যা যা লাগে তা হলো

- স্টেটমেন্ট অফ পারপাস (একটা রচনা)

- ২ বা ৩টি রেকমেন্ডেশন লেটার বা সুপারিশপত্র

- টোফেল স্কোর / বা ক্ষেত্রবিশেষে IELTS স্কোরও গ্রহণযোগ্য

- (অনেক ক্ষেত্রেই) জিআরই স্কোর

- (কোনো কোনো ক্ষেত্রে) সাবজেক্ট জিআরই স্কোর

** স্টেটমেন্ট অফ পারপাস (আমি কী হনুরে, কেনো এখানে আসবো রে, ইত্যাদি)

স্টেটমেন্ট অফ পারপাস হলো মোটামুটি ২ পৃষ্ঠার একটি রচনা, যাতে লিখতে হয় নিজের সম্পর্কে , কেনো এই বিষয়ে আগ্রহ, কেনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আগ্রহ, ইত্যাদি বিষয়
নিয়ে। ভর্তি র ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ। এটা খুব সাবধানে লেখা দরকার, বেশ সময় নিয়ে হলেও। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অন্যদের থেকে বা নেট থেকে
জোগাড় করা রচনা নিজের নামে চালিয়ে দেয়, যা ধরতে পারা যায় খুব সহজেই।

** "আমার দেখা সেরা ছাত্র"


রেকমেন্ডেশন লেটার বা সুপারিশপত্র নিতে হয় শিক্ষকদের কাছ থেকে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, আমাদের দেশে শিক্ষকেরা চিঠিগুলো লেখেন না, সাধারণত ছাত্রকেই লিখে
আনতে হয় নিজের রেকমেন্ডেশন, আর শিক্ষকেরা কেবল তা সই করে দেন। মার্কি ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত অনেকের সাথে কথা বলে দেখেছি, তারা এই
ব্যাপারটি জানেন ভালোই। তাই ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলো হতে আসা রেকমেন্ডেশন তারা খুব একটা পাত্তা দেন না। অনেক ক্ষেত্রেই "এই ছাত্র আমার দেখা সেরা
ছাত্র"-টাইপের লেখা একই শিক্ষক একই বছরে একাধিক ছাত্রকে লিখে দেন, তাতে বোঝা যায়, কপিপেস্ট চিঠিতে সই করেছেন মাত্র।

** টেস্ট স্কোর

টোফেল বা জিআরই স্কোর মূলত ব্যবহার করা হয় আবেদনকারীদের প্রাথমিক বাছাইয়ে, স্কোরের নিম্নসীমা দিয়ে অনেক আবেদনকারীকে শুরুতেই বাদ দেয়া হয়। এটা একেক
বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক রকম। অনেক জায়গায় বলে দেয়া থাকে কতো স্কোর লাগবে। আবার অনেক জায়গাতে জিআরই স্কোর দেয়া লাগে না।

কিছু কিছু বিষয়, যেমন কম্পিউটার বিজ্ঞানে বিষয়ভিত্তিক জিআরই স্কোর চাওয়া হয়। খেয়াল রাখতে হবে, এই স্কোরটি কি রেকমেন্ডেড নাকি রিকোয়ার্ড । রেকমেন্ডেড মানে
"দিলে ভালো" , আর রিকোয়ার্ড মানে দিতেই হবে।

~~~ বাছাই ~~~

যাহোক, আবেদন করার পর শুরুতে অনেক ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি র সাথে সম্পৃক্ত অফিস সহকারীরা টোফেল বা জিআরই-র কাঁচি চালিয়ে কিছু আবেদনপত্র
কমিয়ে ফেলে। তার পর যা বাকি থাকে সেগুলো যায় ভর্তি কমিটির কাছে। ভর্তি কমিটিতে সাধারণত থাকে অধ্যাপকেরা, আর অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের
কয়েকজন প্রতিনিধিও থাকে। শিক্ষকেরা প্রধানত স্টেটমেন্ট অফ পারপাস নামের রচনাটি দেখে বোঝার চেষ্টা করেন এই ছাত্রটি কেমন হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই
আবেদনপত্রগুলোকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয় শিক্ষকদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে, (১) হ্যাঁ (২) না (৩) দেখা যাক।

হ্যাঁ গ্রুপে যারা আছে, তাদেরকে শুরুতেই ভর্তি ও ফান্ডিং এর প্রস্তাব পাঠানো হয়। ভালো ছাত্রদের টেনে আনার জন্য অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্লেন ভাড়া/হোটেল ভাড়া
দিয়ে এসব ছাত্রদের বেড়াতে নিয়ে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে। (আমার সাবেক গ্রুপের এক ছাত্রকে জাপান থেকে এনেছিলো)। ছাত্ররাও এসময় মুফতে একাধিক জায়গায় ঘুরে
বেড়ায়, অধ্যাপক ও পুরানো ছাত্রদের সাথে কথা বলে, তার পর সিদ্ধান্ত নেয় কোথায় ভর্তি হলে। এটা অনেক সময় ফেব্রুয়ারি মাসেই জানানো হয়।

প্রথম দফায় যাদের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, তারা কেউ কেউ রাজী না হলে ২য় দফায় ভর্তি র প্রস্তাব দেয়া হয়। এই দফার প্রস্তাব আসে অনেক সময় মার্চ বা এপ্রিলে।

মার্কি ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অলিখিত চু ক্তি অনুসারে ফান্ডিং সহ ভর্তি র প্রস্তাব গ্রহন করলে এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখের মধ্যেই লিখিত কমিটমেন্ট দিতে হয়। ১৫ তারিখ
পেরিয়ে গেলে আর ভর্তি র সিদ্ধান্ত পালটানো যায় না।

~~~ পরামর্শ ~~~

১) স্টেটমেন্ট অফ পারপাস ভালো করে লিখুন। হুট করে লিখবেন না। মাস খানেক সময় নিয়ে ভালো করে লিখুন। নেট থেকে বা বড় ভাইদের থেকে নেয়া "চোথা" ব্যবহার
করবেন না। ওগুলো ভর্তি কমিটির লোকজন দেখলেই চিনতে পারে।

২) রেকমেন্ডেশন লেটার ভালো করে লিখতে বলুন শিক্ষককে। তাতে আপনি ঐ শিক্ষকের ক্লাসে/কোর্সে কেমন করেছেন, আপনি নিজের উদ্যোগে কাজ করতে পারেন, এই
রকমের কথা লিখতে বলুন।

৩) টেস্টগুলো ছাত্রাবস্থাতেই দিয়ে ফেলুন।

3)- ফোন ইন্টারভিউ - কীভাবে প্রস্তুতি নিবেন? ~

ফোন ইন্টারভিউ আসলে বড় একটা সুযোগ আবার বড় একটা আশংকারও ব্যাপার বটে। ফোন ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে এপ্লিকেশনের ভিত্তিতে আপনার উপরে যে ইম্প্রেশন
আছে সেটা খারাপ হয়ে যেতে পারে, আবার এপ্লিকেশনের অনেক সমস্যা এড়ানো যেতে পারে। কাজেই ফোন ইন্টারভিউ এর জন্য দরকার কিছু প্রস্তুতি।

** ফোন লাইন - শুরুতেই আসি ফোন লাইন নিয়ে। এমন ফোন লাইন বেছে নিন যাতে কথা স্পষ্ট শোনা যায়। ফোনের স্পিকার ভালো না থাকলে মাইকওয়ালা হেডসেট
ব্যবহার করুন যাতে করে ভালো শুনতে পারেন এবং ফোন কানে চেপে রাখার টেনশন না থাকে। এছাড়া এমন জায়গায় কথা বলুন যেখানে চারিদিকের শব্দ নাই বেশি। ল্যান্ড
লাইন হলে সুবিধা, কলের মানের দিক থেকে। মোবাইলের ক্ষেত্রে ভালো রিসেপশন আছে এমন জায়গা বেছে নিন। হাতের সামনে খাতা কলম রাখুন, পারলে ল্যাপটপ ও
ইন্টারনেট অবশ্যই। ইন্টারভিউ যদি ভয়েস ওভার আইপি যেমন স্কাইপের মাধ্যমে হয়, সেই ক্ষেত্রে ইন্টারনেট লাইন ভালো আছে এমন জায়গা বেছে নিন।
** পোশাক/ আলো - ভিডিও ইন্টারভিউ হলে আগে থেকে লাইটিং ও ব্যাকগ্রাউন্ড কেমন দেখা যায় তা খেয়ালে রাখুন। পোশাক ফর্মাল থাকাই ভালো, তবে বেশি ফর্মাল
আবার হাস্যকর লাগতে পারে।

** হোমওয়ার্ক - ইন্টারভিউতে যেসব প্রশ্ন সচরাচর করা হয়, সেগুলার জবাব তৈরী করে রাখুন। যেমন কেনো আপনি এই বিষয়ে পড়তে চান, কেনো এই বিশ্ববিদ্যালয় বেছে
নিলেন, কোন বিষয়ে পিএইচডি করতে চান, কেনো করতে চান, পাশ করে কী করবেন, দীর্ঘমেয়াদে কী করার ইচ্ছা, ৫ বছর পরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান, এসব। এর
সাথে সাথে ইউনিভার্সিটি এবং ডিপার্ট মেন্টের নানা প্রফেসরদের সম্পর্কে হোমওয়ার্ক করে রাখুন, যাতে করে কে কীসের উপরে কাজ করছে আন্দাজ থাকে। প্রফেসরদের
ওয়েবসাইট ছাড়াও তাদের পাবলিকেশনের পেইজ দেখে বোঝার চেষ্টা করুন কিসের উপরে তাঁরা কাজ করছেন।

** প্রশ্ন করা - ইন্টারভিউতে আপনাকে অবশ্যই সবশেষে প্রশ্ন করা হবে, আপনার কোনো প্রশ্ন আছে কি না। এইটার জবাবে আপনি যদি কিছুই নাই বলেন তাহলে ধরে নেয়া
হবে আপনার আগ্রহ কম। কাজেই উত্তর জানা থাকলেও কিছু প্রশ্ন তৈরী করে রাখুন। খুব বেশি না, ২/৩টা, যার মাধ্যমে আপনি আপনার আগ্রহটাকে প্রকাশ করবেন।

** অনুশীলন - সবশেষে পরামর্শ হলো টেনশন কম করুন, নিজে আসলে যেমন, নিজের পরিবারের সাথে নির্ভ য়ে যেভাবে কথা বলেন, সেভাবেই বলেন। আপনার
সাবলীলতাটা অনেক বেশি কাজ দেবে কাউকে কথা বলে ভালো ইম্প্রেশন দেয়ার ক্ষেত্রে। যদি নিতান্তই ভয় পেতে থাকেন, তাহলে কোনো বন্ধু কে অনুরোধ করে মক-
ইন্টারভিউ দিন, মানে বন্ধু কে বলেন ফোন করে ইন্টারভিউয়ের মতো করে প্রশ্ন করতে। আর আয়নার সামনে থেকে জবাব দেয়া অনুশীলন করেন, কারণ আপনার মুখভঙ্গী
দেখা না গেলেও কথার ধাঁচে/টানে আপনার মুখে হাসি না রাগ না বিরক্তি না ভয়, তার লেশ এসে পড়ে। কাজেই ফোনে কেবল কথা হলেও জোর করে হাসিমুখে বলার
অভ্যাস করেন, আপনার কথায় তার ছাপ পড়বেই।

ফোন ইন্টারভিউ- কেন, কীভাবে, কী কথা, এবং কী কী সমস্যা??

ভর্তি প্রক্রিয়ার একটি অংশ হলো ফোন ইন্টারভিউ। এই অংশটি হতে পারে দুই সময়ে -- কোনো প্রফেসরের সাথে কাজ করা বা ফান্ডিং পাওয়া নিয়ে আলোচনা অনেকদূর
আগালে প্রফেসর হয়তো শিক্ষার্থীর সাথে সরাসরি কথা বলতে চাইতে পারেন। আবার অনেক সময়ে ভর্তি প্রক্রিয়ার প্রাথমিক বাছাই শেষ হবার পরে শর্ট লিস্টে থাকা
প্রার্থীদের সাথে ভর্তি কমিটির প্রফেসরেরা কথা বলতে পারেন। সেজন্য ভর্তি চ্ছু শিক্ষার্থীর সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করে একটি সময় নির্ধারণ করে নেয়া হয় যখন এই
ইন্টারভিউটি নেয়া হয়।

~~ কেন নেয়া হয় ফোন ইন্টারভিউ?

শিক্ষকতা জীবন শুরুর পরে ভর্তি কমিটির সদস্য হিসাবে একাধিক ফোন ইন্টারভিউ নেয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। এর ভিত্তিতে ফোন ইন্টারভিউ কেনো নেয়া হয় এবং
কী কী দেখা হয়, তার উপরে একটু ধারণা দেই। কাগজে কলমে একজন শিক্ষার্থী অসাধারণ হতে পারে। মানে, সিভি, জিপিএ এসবের ভিত্তিতে কাউকে খুব ভালো মনে
হতে পারে। কিন্তু কথা বলে দেখে নেয়া হয় আসলেই সেই শিক্ষার্থী এরকম ভালো কী না। কাগজে কলমে অসাধারণ মনে হওয়া অনেক শিক্ষার্থী হয়তো দেখা যায় ফোনে
পুরাই উল্টা -- কথাবার্তা মুখ ফু টে বলতে পারে না, অথবা সহজ প্রশ্নের জবাব দিতে পারে না। কিংবা টেস্ট স্কোর ভালো হলেও ইংরেজি বলতে পারে না আদৌ। এসব
সমস্যা আছে কি না তা যাচাই করার জন্যই সাধারণত ফোন ইন্টারভিউ নেয় ভর্তি কমিটি।

~~ কীভাবে নেয়া হয় ইন্টারভিউ

ফোন ইন্টারভিউ এর নামের ফোন থাকলেও ফোনেই হবে এমন কথা নাই। ইন্টারনেট এর সুবিধা আসার পরে ফোন এর পাশাপাশি ভয়েস ওভার আইপি ব্যবহার করে
ইন্টারভিউ নেয়া হয়। এজন্য ব্যবহার করা হতে পারে স্কাইপ, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা গুগল হ্যাংআউট। আর ইন্টারভিউ অডিও এর সাথে সাথে ভিডিও চ্যাটও হতে পারে
যাতে করে ভর্তি কমিটি বা প্রফেসর এবং শিক্ষার্থী একে অপরকে দেখতে পারেন কথাবার্তার সময়ে।

~~ কী জিনিষ যাচাই করা হয়?

ফোন ইন্টারভিউতে কী যাচাই করা হবে সেটা আসলে ইন্টারভিউকারীদের উপরে নির্ভ র করে। তবে কতগুলা সাধারণ জিনিষ আছে যা দেখা হয়। প্রথমত -- শিক্ষার্থীটি
ইংরেজি কেমন বলছে, আটকে যাচ্ছে কি না, আমতা আমতা করছে কি না। টোফেল বা আইইএলটিএস এর স্কোর ভালো হলেও অনেক সময়ে ইংরেজি বলতে অভ্যস্ত না
থাকায় অনেকে এখানে আটকে যান। ভর্তি কমিটি এইটাই দেখে -- শিক্ষার্থীটি কাগজে কলমে ইংরেজি পারে নাকি আসলে বলতেও পারে।

এর পরে দেখা হয় শিক্ষার্থীটি নানা প্রশ্নের জবাব দিতে পারছে কি না। একটা বেশ প্রচলিত প্রশ্ন হলো কেনো গ্রাজুয়েট স্কু লে মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে চান , কী বিষয়ে
আগ্রহ, কেনো এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বেছে নিলেন, এরকম। অনেক সময়ে শুরুই করা হয় এভাবে, Tell me about yourself অর্থাত নিজের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়
শিক্ষার্থীটিকে, এক মিনিটে নিজের সম্পর্কে গুছিয়ে কী বলতে পারে সেটা দেখার জন্য। পিএইচডি বা মাস্টার্স লেভেলের প্ল্যান কী? পাস করার পরে কী করতে চান সেটা,
এসব প্রশ্ন আসতে পারে। আবার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা কী, সেটাও যাচাই করা হতে পারে, এই ক্ষেত্রে প্রশ্ন আসতে পারে পাঁচ বছর পরে কোথায় দেখতে চান নিজেকে। আর
প্রায় সব ক্ষেত্রেই ইন্টারভিউ এর শেষে প্রশ্ন করা হবে, Do you have any questions?
~~ ইন্টারভিউতে ঝামেলা হয় কীভাবে?

ফোন ইন্টারভিউ ভজঘট বাঁধতে পারে বেশ কিছু কারণে, আসুন দেখা যাক সেগুলো। প্রথমেই আসে ফোন লাইনের গণ্ডগোল। ফোন লাইনে কথা যদি শোনা না যায় অথবা
খড়খড় শব্দের কারণে কথা বুঝতে ঝামেলা হয়, সেটা বেশ বিরক্তিকর এবং আপনার সম্পর্কে ইম্প্রেশন খারাপ করে দিবে আপনি যতোই ভালো প্রার্থী হন না কেনো।

এর পর আসছে কথা বার্তা বলা। ইংরেজিতে খাবি খাওয়া, তোতলানো, এসব আসলে আপনার ইংরেজি বলার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্নের কারণ হবে। বিদেশী শিক্ষার্থী হিসাবে
চোস্ত ইংরেজি বলবেন সেটা আসলে কেউই আশা করছে না, বাংলাদেশী এক্সেন্টে কথা বললে সেটা সমস্যা না। কিন্তু একটা বাক্য বলতে গিয়ে যদি দশবার ইয়ে ইয়ে অথবা
আই মিন, ইউ নো এরকম হোঁচট খান, তাহলে সেটা সমস্যা।

আর প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত তৈলমর্দ ন করা কথা বলাও ভালো না। প্রফেসরেরা শিক্ষার্থীদের কথা শুনে অভ্যস্ত, তাঁরা সহজেই ধরতে পারেন কে তেলাচ্ছে আর কে
আসলেই নিষ্ঠাবান। কারো কথা শুনে যদি মনে হয় সে সব কথাতেই হুজুর হুজুর করছে, সেটা খারাপ দেখায়।

আরেকটা ব্যাপার হলো অল্প কথায় সরাসরি জবাব না দিয়ে দীর্ঘ জবাব দেয়া, অথবা রবোটের মতো বলা, কিংবা কাগজে চোথা দেখে বা মুখস্ত বলছেন এমন মনে হওয়া।
আমার অভিজ্ঞতায় এমন অনেক সময় গেছে যখন খুব সহজ একটা প্রশ্ন করেছি কিন্তু জবাবে শিক্ষার্থীটি প্রায় ১ মিনিট ধরে দীর্ঘ জবাব দিয়েই চলেছে, আমি আর আমার
কলিগেরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি, কখন এই জবাব শেষ হবে তা নিয়ে। অথবা প্রশ্ন করা মাত্রই হড় বড় করে বিটিভির খবর পড়ার মতো করে বলছে, শুনে মনে হচ্ছে হাতে
প্রশ্ন-আর-জবাবের গাইড বই নিয়ে কথা বলছে।

প্রফেসরের সাথে রিসার্চ নিয়ে ফোন ইন্টারভিউ এর সময়ে আরো একটা গণ্ডগোল হতে পারে। প্রফেসরেরা সাধারণত নিজের রিসার্চে র সাথে মিল আছে কিনা বা নিজের
রিসার্চ এরিয়াগুলাতে শিক্ষার্থীর আগ্রহ কেমন সেটা জানতে চান কথা বলে। প্রায় সময়েই শিক্ষার্থীরা প্রফেসরকে পটানোর জন্য প্রফেসরের সাইট দেখে যা যা লেখা আছে
তার সবগুলাতেই আগ্রহ এমন ভাব দেখান। এখানে সমস্যা দুইটা -- প্রফেসরের সাইটের তথ্য হালনাগাদ করা নাও থাকতে পারে যার ফলে সেই সব বিষয়ে প্রফেসর এখন
আর কাজ নাও করতে পারেন। আবার সব-বিষয়েই-আগ্রহী এমন ভাব দেখালে প্রফেসরের মনে হতে পারে, এই ছাত্রের গভীরতা কম -- ভর্তি র মতলবে সবকিছুতেই
আগ্রহের ভান করছে।

পরিশেষে দেখা যাক ভিডিও থাকলে অতিরিক্ত সমস্যা কী হতে পারে -- আপনার পোষাক যদি অতিরিক্ত ক্যাজুয়াল হয় অথবা চকরা বকরা হয়, তাহলে সেটা দৃষ্টিকটু ।
আবার অন্ধকার ব্যাকগ্রাউন্ড, কিংবা ব্যাকগ্রাউন্ডে অগোছালো ময়লা এরকম হয় তাহলে সেটা অবচেতনভাবে হলেও ইন্টারভিউ নেয়া মানুষদের মনে প্রভাব ফেলবে।

4) রেকমেন্ডেশন লেটার বা সুপারিশপত্র ~

মার্কি ন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে ভর্তি র আবেদনের অপরিহার্য অংশ হলো রেকমেন্ডেশন লেটার বা সুপারিশপত্র। সাধারণত প্রত্যেক আবেদনকারীকে অন্তত ৩টি
রেকমেন্ডেশন লেটার জমা দিতে হয়। ভর্তি চ্ছু শিক্ষার্থীর পড়ালেখা বা গবেষণার মান সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্যই এই চিঠিগুলো চাওয়া হয়, আর এগুলো সাধারণত এই
শিক্ষার্থীকে চেনেন, এমন শিক্ষকেরা দিয়ে থাকেন। যেমন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শেষে বিদেশে আবেদন করা শিক্ষার্থীরা সাধারণত যেসব শিক্ষকের ক্লাস করেছেন,
বা থিসিস করেছেন যাদের সাথে, তাদের কাছ থেকে রেকমেন্ডেশন লেটার নেন।

ভর্তি র ক্ষেত্রে এহেন সুপারিশের গুরুত্ব বেশ ভালোই। কারণ কাগজে পত্রে, জিপিএ এর দশমিক শূন্য এক পয়েন্টের ব্যবধান থাকা দুজন ছাত্রের পার্থক্য করা বেশ কঠিন।
এক্ষেত্রে এই শিক্ষার্থীকে কাছ থেকে দেখেছেন, এমন কারো মূল্যায়ন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই মাস্টার্স বা পিএইএচডি পর্যায়ে ভর্তি র সময়ে আবেদন প্যাকেজের চিঠিপত্রের
অংশটি বেশ ভালো করে দেখা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পাঠানো রেকমেন্ডেশন লেটারে বেশ কিছু গুরুতর সমস্যা থাকে। এই কারণে অন্য অনেক দেশের কম
মেধার ছাত্রদের কাছে ভর্তি যুদ্ধে পিছিয়ে পড়তে হয় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের অনেক সময়েই। চলুন, এক এক করে দেখা যাক, কী কী গুরুতর ভু ল করে থাকেন
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা -

(১) নিজের সুপারিশ নিজেই লেখা

এটা আসলে শিক্ষার্থীদের দোষ না, বরং বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটা বড় রকমের দোষ। ছাত্রদের কেবল পড়ানোই তাদের কাজ না, বরং তার সাথে সাথে
ছাত্রদের মূল্যায়নটাও যে শিক্ষকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, সেটা অনেকেই মনে রাখেন না। ফলে কোনো শিক্ষকের অতি পরিচিত, এমনকি সেই শিক্ষকের অধীনে থিসিস করা
ছাত্রটিও যখন রেকমেন্ডেশন লেটারের জন্য যায়, তখন ভাব দেখানোর সুযোগ পেয়ে শিক্ষক নানা রকম ঝামেলা করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ব্যাপারটি হলো, ছাত্রকেই
নিজের সুপারিশ নিজেকেই লিখে আনতে বলা। নানা সময়ে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি চ্ছু ছাত্রদের সুপারিশ পড়তে গিয়ে খেয়াল করেছি, এই বিদঘুটে প্রবণতাটা দক্ষিণ
এশীয় মানে বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান নেপাল এসব দেশেই বেশি চালু, দুনিয়ার অন্য অধিকাংশ জায়গার শিক্ষার্থীদের সুপারিশপত্র তারা নিজেরাই লিখে বসে না। কিন্তু
বাংলাদেশের অনেক শিক্ষকই সময় নেই এই অজুহাতে ছাত্রকে ড্রাফ্ট লিখে আনতে বলেন, আর তার পর নিজে কিছু যোগ বিয়োগ বা মতামত পেশ না করেই স্বাক্ষর করে
দেন।

এসব স্বরচিত সুপারিশপত্র কিন্তু পড়েই বোঝা যায়, ছাত্রটির হাতেই লেখা এটা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে আমার অভিজ্ঞতা অল্পদিনের, কিন্তু এতেই এটু কু বুঝতে পারি,
কোন চিঠি কার লেখা। নিজের সম্পর্কে সুপারিশ লিখতে গিয়ে স্বভাবতই শিক্ষার্থীরা ফু লিয়ে ফাঁপিয়ে বিশাল প্রশংসা করে থাকে, যেটা দেখে বোঝা যায় কে লিখেছে এটা।
অথবা চিঠিতে অপ্রচলিত জটিল ইংরেজি শব্দের বহুল ব্যবহার দেখলেও এটা বোঝা যায় (সেটা আবার জিআরই পরীক্ষার জন্য খটোমটো শব্দ শেখার কু ফল!)।

বলাই বাহুল্য, এহেন স্বরচিত সুপারিশপত্রের স্থান হয় আস্তাকু ড়েই। আক্ষরিক অর্থে না, তবে এরকম লেখা দেখেই বোঝা যায়, আর সেই ছাত্রটির আবেদনে এটা বড় রকমের
নেতিবাচক প্রভাব রাখে।

কাজেই শিক্ষককে অনুরোধ করুন, চিঠিটা যাতে তিনিই লিখেন। পাতার পর পাতার দরকার নেই। শিক্ষকের নিজের লেখা আধা পাতার চিঠিই স্বরচিত বিশাল সুপারিশের
চাইতে অনেক বেশি কাজ দেবে।

(২) একই সুপারিশ কপিপেস্ট করে একাধিক ছাত্রের ব্যবহার করা।

এটা হতে পারে দুইভাবে। অনেক সময় শিক্ষকেরা নিজে একই চিঠি সব ছাত্রকেই কেবল নাম পাল্টে দিয়ে থাকেন। অথবা ছাত্ররা নিজেরা ইন্টারনেট বা সিনিয়রদের কাছ
থেকে নমুনা যোগাড় করে বেশি না পাল্টে একই লেখা ব্যবহার করে ফেলে। এখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি একই বাংলাদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষার্থী একই রকম চিঠি
পাঠায়, তাহলে সমস্যাটা কোথায় বুঝতে পারছেন তো? নকলের দায়ে এদের আবেদনপত্র একেবারে পত্রপাঠ বাতিল করা হতে পারে। কাজেই কোনো অবস্থাতেই এরকম
কপিপেস্ট যাতে না হয়, তার দিকে খেয়াল রাখবেন।

(৩) অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে সুপারিশ করা -- ধরা যাক, শিক্ষক নিজেই লিখেছেন চিঠিটি। এরকম ক্ষেত্রেও সমস্যা কম না। বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরই
এরকম চিঠি কীভাবে লিখতে হয়, বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। ফলে তারা হয় গৎবাঁধা কথা লিখেন (অমুকে আমার অতি পরিচিত, খুবই ভালো ছাত্র, অত্যন্ত মেধাবী, আমার ক্লাসে
এ প্লাস দিয়েছি ওকে - এরকম)। তমুকে রাষ্ট্রবিরোধী কোনকিছুর সাথে জড়িত নয়।

অথচ ভর্তি কমিটির লোকজন আসলে কিন্তু অন্য কিছু জানতে চায়। যেমন, এই ছাত্রটি কি অধ্যবসায়ী? বিশেষ কী গুণ আছে যা আলাদা করবে তাকে অন্যদের চাইতে?
জেনারেল টাইপের কথার চাইতে এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্দি ষ্ট করে বলা এই ছাত্রটির ব্যাপারে। দরকার হলে বিশেষ কোনো ঘটনার কথা বলা (যেমন, অমুক প্রজেক্টে এই
ছাত্র বেশ ইন্টারেস্টিং উপায়ে সমাধান করেছে, অথবা তমুকের অধ্যবসায় খুব ভালো, তাকে অমুক সময়ে তমুক প্রজেটে যা দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো, সব সময় মতো করেছে)।

বিশেষ কিছু পয়েন্ট আসলে ভর্তি র সময়ে খুব ভালো কাজ দেয়। যেমন, ছাত্রটি কি অধ্যবসায়ী? কিংবা পরিশ্রমী? শিখতে আগ্রহী? হাতে ধরে শেখাতে হয়না, নিজেই শিখে
নিতে পারে (সেল্ফ স্টার্টার) ইত্যাদি। ছাত্রের জিপিএ নিয়ে রচনা লেখার চাইতে এরকম গুণাবলীর কথা লেখাটাই আসলে অনেক বেশি ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। আর
রেকন্ডেশন লেটারের আরেকটা বড় ভু ল হলো শিক্ষার্থীর সম্পর্কে বাগাড়ম্বর ধাঁচের কথা লেখা। যদি শিক্ষক একাধিক ছাত্রের বেলাতেই লিখেন যে, তাঁর দেখা সেরা ১০%
ছাত্রের মধ্যে এই ছাত্রটি পড়ে, তবে সেই শিক্ষকের সুপারিশের মান সম্পর্কে ই প্রশ্ন উঠতে পারে। বলার দরকার নেই, এরকম রেকমেন্ডেশনে বরং হিতে বিপরীত হয়।

(৪) অনলাইনের বদলে প্রিন্ট করা রেকমেন্ডেশন লেটার পাঠানো

ভর্তি র সময়ে এক এক বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার আবেদন পড়ে। এক সাথে এতো আবেদন গ্রহন করতে গিয়ে ভর্তি অফিসের কর্মীদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, আর
প্রায়ই আবেদন প্যাকেজের নানা ডকু মেন্ট হারিয়ে যায়। অসম্পূর্ণ আবেদন প্যাকেজ অনেক ক্ষেত্রে আমলেই নেয়া হয় না, বাতিল করে দেয়া হয় যাচাইয়ের আগেই। এসব
ঝামেলা এড়াতে অনেক জায়গাতেই এখন অনলাইন আবেদনের রীতি চালু হয়েছে। রেকমেন্ডেশনের ক্ষেত্রেও অনলাইন, মানে ইমেইল বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে
রেকমেন্ডেশন দেয়ার সুযোগ থাকে। ছাপানো রেকমেন্ডেশনের খাম হারিয়ে যাওয়ার ঝামেলা এড়াতে হলে অবশ্যই শিক্ষকদের বলবেন, অনলাইনে রেকমেন্ডেশন পাঠাতে।

(৫) শিক্ষকেরাই কি কেবল সুপারিশ দিতে পারে?

না, অন্যদের থেকেও নেয়া যাবে, তবে তার মানে এই না যে মামা-চাচা, কিংবা যার তার থেকে নেয়া চলবে সুপারিশ। উদাহরণ দেই, যারা স্নাতক পাশ করে চাকু রি করছেন,
তারা আবেদনের সময়ে নিজের সুপারভাইজর বা বসের রেকমেন্ডেশন নিতে পারেন। নানা সফ্টওয়ার কোম্পানিতে যারা কাজ করছেন তারা কেমন কাজ করছেন, তার বর্ণনা
আসলে তাদের বসরাই ভালো দিতে পারবে। তবে খেয়াল রাখবেন, রেকমেন্ডেশনে যাতে আপনার কাজের মূল্যায়ন নিয়ে গোছানো কথা লেখা হয়, সেটা যাতে সুপারিশকারী
মাথায় রাখেন।
আশা করি এই লেখাটি যুক্তরাষ্ট্রে ভর্তি চ্ছু শিক্ষার্থীরা পড়বেন এবং তাঁদের শিক্ষকদেরকেও পড়াবেন। বাংলাদেশের তথা দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীদের আবেদনপত্রের
রেকমেন্ডেশন লেটারের অংশটি নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাত্তা দেয়া হয়না, বড় কারন হলো স্বরচিত কিংবা ভু লভাল কথায় ভর্তি সুপারিশ।কেবলমাত্র
রেকমেন্ডেশন লেটারের জোরে অন্য অনেক দুর্বলতাকে কাটিয়ে ওঠা যায়, আবার বাজে রকমের রেকমেন্ডেশন লেটারের কারণে ভালো ছাত্রদেরও ভর্তি র সমস্যা হতে পারে।

5) স্টেটমেন্ট অফ পারপাস লিখবেন কীভাবে? ~

স্টেটমেন্ট অফ পারপাস (Statement of Purpose) -- এ এমন এক রচনা, যার উপরে উচ্চতর পর্যায়ে ভর্তি র অনেক কিছুই নির্ভ র করছে। মার্কি ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর
নিয়ম হলো, মাস্টার্স বা পিএইচডি পর্যায়ে পড়ার আবেদন করার সময়ে নিজের উপরে একটা রচনা লিখতে হয়। এতে বলতে হয় নিজের সম্পর্কে , কেনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বা
এই বিষয়ে পড়তে আগ্রহী, এসব কিছু।

সমস্যা হলো, স্কু ল কলেজ থেকেই আমরা "নতু ন বাংলা রচনা" ধাঁচের লেখা মুখস্ত করে চলি, কাজেই নিজে থেকে রচনা লেখার অভ্যাসটা অনেকেরই থাকে না। কিন্তু ভর্তি র
আবেদনের এই স্টেটমেন্টটা অবশ্যই লিখতে হবে নিজেকে, একেবারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। তাই এখানে তু লে ধরছি এই গুরুত্বপূর্ণ রচনাটি লেখার জন্য কিছু পরামর্শ।

~~ কোরো নাকো কপিপেস্ট ~~

বহু বছর আগে যখন ভর্তি যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, তখন দেখতাম, বুয়েটে আমার সহপাঠী কিংবা সিনিয়র ভাইদের কম্পিউটারে বিভিন্ন ততোধিক সিনিয়র ভাইদের
স্টেটমেন্টের কপি ("চোথা") থাকতো। সময় বাঁচাতে অনেকেই আরেকজনের স্টেটমেন্ট এদিক সেদিক করে চালিয়ে দিতো। কিন্তু মার্কি ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি র লোকজন
এতো গাব নয় মোটেও। বছরের পর বছর ধরে একই লেখা দেখতে দেখতে তারাও বিরক্ত, কাজেই এরকম রিসাইকেল করা লেখা পেলে সেটার ফল কী হয়, বলাই বাহুল্য।
কাজেই স্টেটমেন্ট লেখার জন্য প্রথম পরামর্শ হলো, অন্য কারো নমুনাকে এদিক সেদিক করে চালাবার কাজটা কখনোই করবেন না। নিজে লিখুন।

~~ বিরত থাকু ন GRE-বিদ্যা জাহির করা থেকে ~~

স্টেটমেন্ট লেখার সময় আরেকটা ভু ল হলো, বিশাল বড় বড় সব বাক্য, আর জিআরইতে সদ্য শেখা জটিল সব শব্দের ব্যবহার। একটা ধাক্কা যুক্তরাষ্ট্রে এসে সবাই খায়, তা
হলো, আমাদের দেশে শেখা "ভালো ইংরেজি" এখানে অনেকটা অচল। আমরা বিশাল বিশাল, একাধিক বাক্যাংশের যে রীতিতে বাক্য লিখতে শিখি, মার্কি নীরা তা মোটেও
পছন্দ করে না। কাজেই এক বাক্য এক লাইনের বেশি গেলেই ওদের পড়তে/বুঝতে সমস্যা হয়, খেই রাখতে পারে না। কাজেই বাক্য যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত রাখতে হবে, আর
একাধিক বাক্যাংশের জটিল বাক্যগঠনের অভ্যাস বাদ দিতে হবে। শব্দ চয়নের ক্ষেত্রেও তাই। জিআরই-এর জন্য যেসব শব্দ শেখা হয়, ওগুলো বাস্তব জীবনে কেউ ব্যবহার
করে কি না সন্দেহ, তাই নিজের বাহাদুরি দেখাতে গিয়ে ওসব শব্দ ব্যবহার করলে পাঠক চরম বিরক্ত হবে নিঃসন্দেহে।

~~ তাহলে কী লিখবেন? ~~

স্টেটমেন্টে তাই লিখুন নিজের কথা। কেনো পড়তে আগ্রহী হলেন আপনার বিষয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে কোন কোর্স কেনো ভালো লাগলো, কীরকম কাজ করেছেন
তা গল্পের ভাষায় (সিভিতে কোর্সের বিশাল বৃত্তান্ত আছেই, কাজেই এখানে গল্পাকারে লিখতে হবে)। কেনো উচ্চতর শিক্ষা চান (চাপা না মেরে লিখুন), কেনো বেছে নিলেন
এই বিশ্ববিদ্যালয়। আসলে, এটা লেখার সময়ে ধরে নিন, আপনার সামনে বসে আছে ভর্তি কমিটি, তাদের পটিয়ে ভর্তি হতে হবে, কাজেই নিজেকে যথাযোগ্য প্রার্থী হিসেবে
উপস্থাপনের চেষ্টা করতে মাত্র ৫ মিনিট কথা বলার সুযোগ পাবেন। সেই সময়ে কী বলবেন, তাই লিখতে হবে আপনার স্টেটমেন্টে।

~~ লিখুন সময় নিয়ে ~~

স্টেটমেন্টটা কিন্তু হুট করে লিখে ফেলার কিছু না। এটা লেখার জন্য ২/৩ সপ্তাহ সময় নিন। একবার লিখুন, তার পর কয়েকদিন পরে পড়ে দেখুন পাঠকের দৃষ্টিতে, কী
লিখেছেন। দরকার হলে বন্ধু বা সিনিয়র কাউকে দেখান। যারা ইতিমধ্যেই উচ্চতর পর্যায়ে আছেন, তাদের বলুন একটু দেখে দিতে। বানান শুদ্ধ রাখুন। বানান বা ব্যকরণ ভু ল
হলে কিন্তু সুন্দর করে লেখা একটি স্টেটমেন্টও কাজ দেবে না। স্পেল চেকারের উপরে ভরসা করবেন না, স্টেটমেন্ট লিখে প্রিন্ট করে তার পর কাগজটা লাইন বাই লাইন
পড়ে দেখুন ঠিক আছে কি না।

~~ ফরম্যাটিং ~~

আর স্টেটমেন্ট দেখতে কেমন, তাও কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ফন্ট খুব বেশি ছোট ব্যবহার করবেন না। ১১ বা ১২ হলে ভালো। অনেক প্রফেসরের বয়সই কিন্তু ৪০ এর
উপরে, আর চশমার কারণে তারা ১০ ফন্টের লেখা পড়তে পারেন না বা অনেক কষ্ট করে পড়েন। টেক্সট লেফট জাস্টিফাইড, আর স্পেসিং সিঙ্গল বা ১.৫ স্পেসিং দিলে
ভালো। ৫/৬ প্যারার বেশি না লেখাই ভালো। সব মিলিয়ে দেড়পৃষ্ঠার মধ্যে শেষ করা উচিৎ। এর বেশি আসলে কেউ পড়ার ধৈর্য্য রাখতে পারেনা।

স্টেটমেন্ট অফ পারপাস ভর্তি র একটি গুরুতপূর্ণ নিয়ামক। কাজেই সময় নিয়ে, চিন্তা ভাবনা করে, তবেই লিখুন।
6) বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিবেন কীভাবে? ~

আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক। হাজার হাজার। এর মাঝে হার্ভার্ড , প্রিন্সটনের মতো বনেদি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন আছে, তেমনি আছে অখ্যাত নাম না জানা নাম
সর্বস্ব বিশ্ববিদ্যালয়। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেয়াটার পিছনে সময় দিতে হবে।

** কোথায় একেবারেই যাবেন না? **

শুরুতেই বলি কী ধরণের বিশ্ববিদ্যালয় একেবারেই বাদ দিবেন। প্রচু র বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা আসলে ডিগ্রি বেচার ব্যবসা করে। এসব জায়গার পিছনে টাকা পয়সা ঢালা
বোকামি, আর ভর্তি হলেও এসব জায়গার নাম দেখলে ভিসা রিজেক্ট নিশ্চিত। কাজেই শুরুতেই দেখবেন আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ভাবছেন সেটির বা সেটিতে
আপনার ডিপার্ট মেন্টের ডিগ্রি প্রোগ্রামের এক্রেডিটেশন আছে কি না, এবং যে সংস্থা এক্রেডিটেশন দিয়েছে সেটি নিজেই ভু য়া বা দুই নম্বর কী না। ইন্টারনেটে খোঁজ নিন এই
ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে কী বলা হয়েছে। মনে রাখবেন, দুইনম্বর অনেক ইউনিভার্সিটির কিন্তু গালভরা নাম থাকে যেমন অমুক ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, তমুক স্টেট
ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি। খেয়াল করে খোঁজ নিয়ে দেখুন আসলেই এইটা স্টেইট ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের অংশ কি না। এসব দুই নম্বর জায়গা শুরুতেই বাদ দিয়ে ফেলেন।

** কী কী ফ্যাক্টর বিচার করবেন? **

ইউনিভার্সিটি নির্বাচনে বেশ কিছু দিক খেয়াল রাখবেন, আসুন দেখা যাক এই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলা কী কী?

*** সুনাম -- ইউনিভার্সিটির সুনাম কেমন? সুনামের ব্যাপারটা আসলে আপেক্ষিক, তবে কিছু ইউনিভার্সিটির বনেদি হিসাবে নাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। সুনাম বের
করার আরেকটা উপায় হলো র‍্যাংকিং। নানা সংস্থার পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং করা হয়, এর মধ্যে আছে US News and World Report, টাইমস এডু কেশন,
ইত্যাদি। অনেকেই এই র‍্যাংকিং দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সমস্যাটা হলো এই রকমের অধিকাংশ র‍্যাঙ্কিংই আসলে নির্ভ রযোগ্য বা কার্যকর না।
মানে ধরা যাক কোনো এক র‍্যাংকিং এ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রম ২৫, আরেকটির ২৭। এর মানে কিন্তু এই না যে প্রথমটির চেয়ে পরেরটি কম মানের। কাজেই কেবল র‍্যাংকিং
দিয়ে ইউনিভার্সিটি নির্ধারণ করা বুদ্ধিমানের কাজ না। র‍্যাংকিং লিস্টগুলো একটি কাজেই ব্যবহার করতে পারেন, সেটা হলো ইউনিভার্সিটি কোন গ্রুপে পড়ে তা সম্পর্কে
মোটামুটি আন্দাজ করা। যেমন, প্রথম ১০ এর মধ্যে আছে, নাকি প্রথম ৫০ এর মধ্যে -- এরকম। প্রথম দশ এ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মোটামুটি নিঃসন্দেহে বিশ্বের সেরা
ইউনিভারসিটি। রাংকিং এ ১১ থেকে ৫০ এর মধ্যের ইউনিভার্সিটি গুলা মোটামুটি কাছাকাছি মানের, আর ৫১ থেকে পরেরগুলা এর পরের গ্রেডের। সহজ ভাষায় প্রথম
১০টাকে উচ্চবিত্ত্ব, মাঝের ৪০টাকে মধ্যবিত্ত্ব, আর পরের গুলাকে নিম্নবিত্ত্ব ধরতে পারেন। তবে তার মানে এই না যে শেষের গ্রুপের একটা ইউনিভার্সিটি মাঝের গ্রুপের
চাইতে একেবারেই কম মানের -- আসলে মানের দিক থেকে গ্রুপ ২ ও ৩ এর তফাৎ করাটা কঠিন। কারণ র‍্যাংকিং ছাড়াও আরো অনেক ফ্যাক্টর দিয়ে ইউনিভার্সিটির মান
ধরা হয়। আইভি লীগের যেকোনো ইউনিভার্সিটি যে গ্রুপেই থাকু ক না কেনো খুবই বনেদি হিসাবে গণ্য ও সারা বিশ্বে সমাদৃত। আবার পরের দিকে কোনো র‍্যাংকিং এ পড়ে
গেলেও অন্য কারণে ইউনিভার্সিটির ডিগ্রির সুনাম থাকতে পারে।

*** ডিপার্ট মেন্টের সুনাম -- খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ফ্যাক্টর হলো ডিপার্ট মেন্টের সুনাম। অনেক সময়ে ইউনিভার্সিটির র‍্যাংক পিছনে হলেও ঐ ডিপার্ট মেন্টের সুনাম থাকতে
পারে। ধরা যাক ক বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংক মাঝারি, খ বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংক নিচের দিকে। কিন্তু এটা সত্ত্বেও খ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো বিভাগের নাম ডাক ক
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নাম ডাকের চাইতে বেশি হতে পারে।

*** প্রফেসরের সুনাম -- বিশেষ করে পিএইচডির ক্ষেত্রে এডভাইজরের সুনাম খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যাপারটি বুঝবেন কী করে? প্রফেসরের নাম ধরে গুগল সার্চ করে দেখুন
কিংবা গুগল স্কলারে প্রফেসরটির পাবলিকেশন স্ট্যাটিস্টিক্স ঘেঁটে দেখুন। নামকরা কারো অধীনে কম র‍্যাংকের জায়গাতে পিএইচডি করলেও দীর্ঘমেয়াদে সেটা করা ভালো।

*** খরচ -- বিশেষ করে ফান্ডিং না পেলে এই ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। একেক ইউনিভার্সিটির টিউশন ফি একেক রকমের। পাবলিক ইউনিভার্সিটি যা নানা স্টেটের
অর্থে চালিত, তাদের টিউশন ফি কম। আবার প্রাইভেটের বেশি। আমেরিকার দক্ষিণের দিকে টিউশন ফি পশ্চিমের দিকের ইউনিভার্সিটির চাইতে কম। ইউনিভার্সিটির
ওয়েবসাইটে গেলে টিউশন ফি এর পরিমাণ সহজেই দেখতে পাবেন।

*** ইউনিভার্সিটির অবস্থান -- ইউনিভার্সিটির অবস্থানটাও একটা বড় ব্যাপার। আমেরিকার অনেক ইউনিভার্সিটি বড় শহরের মাঝে অবস্থিত, আবার অনেক ইউনিভার্সিটি
প্রত্যন্ত এলাকার খুব ছোট্ট এক শহরের মধ্যে অবস্থিত। অনেক সময়ে ইউনিভার্সিটি যেখানে আছে সেখানে হয়তো ইউনিভার্সিটি ছাড়া আর কিছুই নাই। বড় শহরে হলে
যাতায়াত, রেস্টু রেন্ট, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ অনেক বড় সুবিধা পাওয়া যায়। ঐ শহরেই হয়তো এয়ারপোর্ট আছে যার ফলে অন্যত্র যাওয়া সহজ। কিন্তু সমস্যাটা হলো বড়
শহরে বাসা ভাড়াটাও বেশি হতে পারে। ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকলে যাতায়াতে সময় লাগতে পারে, আবার অনেক সময়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে হবে, গাড়ির ইন্সুরেন্স সহ
অন্যান্য খরচ মিলে অনেক বেশি পড়তে পারে। ছোট ক্যাম্পাস টাউন বা কলেজ টাউন জাতীয় জায়গা অনেক সময়ে এমন হয় যে তার আসেপাশে কিছুই হয়তো নাই।
আমার পিএইচডির বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ের ক্যাম্পাস ছিলো আরবানা-শ্যাম্পেইন নামের দুই যমজ শহর জুড়ে। গুগল ম্যাপে জুম করলেই দেখতে পাবেন
তার আশে পাশে আসলে ভু ট্টা ক্ষেত ছাড়া কিছুই নাই -- কাছের বড় শহর শিকাগো থেকে ওটা প্রায় আড়াই ঘণ্টার ড্রাইভ দূরে। এরকম জায়গায় বাসা ভাড়া সস্তা হয়,
খাবার দাবারও হয়তো কম দামের হতে পারে। কিন্তু অনেক কিছুই যেমন দেশী খাবার দাবারের দোকান, দেশী মুদীর দোকান, এসবের কোনটাই নাও থাকতে পারে। পড়ার ফাঁকে
ফাঁকে এসব শহরে করার মতো কাজ খুব বেশি থাকেও না। ইউনিভার্সিটির অবস্থানের আরেকটি দিক হলো কাজের সুযোগ -- পড়ার সময়ে বা পাস করার পরে। বড় শহরে
অফ ক্যাম্পাস কাজ, ইন্টার্নশিপ, কিংবা পাস করার পর চাকু রির সুযোগ -- সবই অনেক বেশি। পক্ষান্তরে ছোট শহরে স্থানীয়ভাবে কাজের সুযোগ কম, ফলে পাস করার পরে
দূরে যেতে হবে নির্ঘাত। সেজন্য ইউনিভার্সিটিটা কোথায় অবস্থিত, কাছে ধারে বড় শহর কোথায়, সেটা অবশ্যই ঠিকমত দেখে নিবেন।

*** গরম ঠাণ্ডা -- আবহাওয়া -- আমরা বাংলাদেশের মতো গরম দেশের মানুষ -- তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে গেলেই জমে যাই, তাই না? আমি অন্তত এক
সময়ে সেরকমই ছিলাম। আমেরিকার একটা বড় ব্যাপার হলো এটি একটি মহাদেশ -- উত্তর আমেরিকার একু ল ওকু ল জুড়ে থাকা একটা বিশাল দেশ, ফলে এর নানা
জায়গায় জলবায়ুর বৈচিত্র্য অনেক বেশি। উত্তরের দিকে বেজায় ঠাণ্ডা, এতো ঠান্ডা যে কল্পনার বাইরে -- আমার মনে আছে একদিন বাইরে খটখটে রোদ দেখে খুশি হয়ে
বেরিয়ে টের পেলাম, তাপমাত্রা তখন -৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো (ছাপার ভু ল না, এটা মাইনাস তিরিশ!!)। নিঃশ্বাস ফেলার সাথে সাথে সেটা বরফ হয়ে যাচ্ছে চোখের
সামনেই। ঠাণ্ডা জায়গায় অনেকেই টিকতে পারেন না, কাজেই ইউনিভার্সিটির অবস্থান কোথায়, সেখানকার আবহাওয়া কী রকম, গুগল করে বা উইকি থেকে দেখে নিন।

তো, এতো সব ফ্যাক্টর বিচার করার পরে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিবেন? এই ক্ষেত্রে আসলে আপনার নিজের প্রোফাইল বিচার করতে হবে। আপনার প্রোফাইল যদি
ভালো হয়, মানে ধরুন বাংলাদেশের নামকরা ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর্স, ভালো সিজিপিএ, দুই এক খান পাবলিকেশন, ভালো টোফেল জিআরই স্কোর, এসব যদি
থাকে, তাহলে প্রথম শ্রেণীর ইউনিভারসিটিতে আবেদন করবেন। যদি আপনার সবকিছুর অবস্থা মধ্যবিত্ত টাইপের হয় মানে মাঝারি জিপিএ, পেপার নাই, মোটামুটি টোফেল
জিআরই স্কোর, তাহলে জোর দিবেন মধ্যম মানের ইউনিভার্সিটির উপরে। আর সবকিছুর অবস্থা নিচের দিকে হলে নিচের দিকের ইউনিভার্সিটিতেই বেশি আবেদন করেন।
নিজের অবস্থা যদি নিজে না বুঝেন তাহলে অনলাইনে বা ফেইসবুকে ভর্তি সংক্রান্ত নানা গ্রুপে পোস্ট করে অন্যদের পরামর্শ চান -- অনেক সময়েই এইসব গ্রুপের অন্যান্য
সদস্যরা আপনার প্রোফাইল দেখে অভিমত দিতে পারবেন। আরেকটা উপায় হলো যেখানে ভর্তি হতে চান, সেখানকার বর্ত মান শিক্ষার্থীদের সাইটে গিয়ে তাদের সিভি বের
করে দেখেন, আপনার প্রোফাইল কি সেই মাপের কি না। ভর্তি র আবেদন করার সময়ে মোটামুটি ভাবে এভাবে ইউনিভার্সিটি বেছে নিন -- ২০% আপনার লেভেলের উপরে,
৬০% আপনার লেভেলে, আর ২০% আপনার লেভেলের নিচে। মানে যদি আপনি মনে করেন আপনার অবস্থা মোটামুটি মাঝারির দিকে, তাহলে লাক ট্রাই করার জন্য
হলেও ২০% ভালো মানের ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করেন, ৬০% আপনার যেখানে চান্স ভালো, সেসব জায়গায়, আর এপ্লাই করলেই চান্স পাবেন নিশ্চিত এমন ২০%
জায়গায়। যদি ১০টা ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করেন, তাহলে ২টা খুব ভালোতে চান্স নেন, ৬টা আপনার চান্স ভালো এমন জায়গায়, আর ২টা অন্তত শিওর এডমিশন এমন
জায়গায়।

আরেকটা বড় ফ্যাক্টর হলো ভর্তি র আবেদনের ফি -- অধিকাংশ ইউনিভার্সিতিতে ৫০ থেকে ১০০ ডলারের মতো ভর্তি র আবেদন ফি লাগে। একটু কষ্ট হলেও যত বেশি
সংখ্যক জায়গায় পারেন, এপ্লাই করবেন। মনে রাখবেন, আপনি যদি ভর্তি বা ফান্ডিং পান, তাহলে এই টাকার হাজার গুণ ফেরত পাবেন ভবিষ্যতে, কাজেই যতদূর পারেন
এপ্লাই করেন। কিছু কিছু ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি র আবেদনের ফি লাগে না। গুগল সার্চ করে এসব ইউনিভার্সিটির তালিকা বের করে নিন এবং অবশ্যই এসব জায়গায়
আবেদন করুন, কারণ হারাবার তো কিছুই নাই।

7) আমেরিকায় পড়তে গেলে সেখানকার সংস্কৃ তির যে ৭টি ব্যাপার অবশ্যই খেয়াল রাখবেন

ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের এক যান্ত্রিক পাখিতে চড়ে ১৬ বছর আগে আমি আমেরিকাতে পিএইচডি করতে এসেছিলাম। আমার জন্য সেটা বহুদিক থেকেই নতু ন ব্যাপার--
জীবনে প্রথম প্লেনে চড়া, প্রথমবারের মতো মহাসাগর পেরিয়ে অন্য মহাদেশে যাওয়া। এখন শিক্ষকতার কারণে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে আমিই আমার গ্রুপে নিয়ে
আসি, আর প্রচু র বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ আছে। দেশের ছাড়াও অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের পড়াই ক্লাসে। ভিনদেশ থেকে আমেরিকায় পড়তে আসা এই
শিক্ষার্থীদের জন্য আমেরিকার সংস্কৃ তি, রীতিনীতি এসব অনেক ক্ষেত্রেই পুরোপুরি নতু ন। চিরচেনা সবকিছুর চাইতে আলাদা এই পরিবেশে খাপ খাওয়াতে গিয়ে অনেকেই
বিশাল সমস্যায় পড়েন। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে প্রথমে নিজে দেখে এবং পরে আমার শিক্ষার্থীদের দেখে এই কালচারাল শকগুলোকে ভালো করে দেখা ও জানা
হয়েছে। এই লেখাটা আমেরিকায় আসা শিক্ষার্থীদের জন্য-- কীভাবে এখানকার জীবনে খাপ খাওয়াবেন, তা নিয়ে। এ নিয়ে মোটামুটি একটা বই লেখা সম্ভব, এখানে তবুও
৭টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তু লে ধরা হয়েছে।

১) ধন্যবাদের সংস্কৃ তি

মার্কি নীরা খুব মিশুক জাতি। পথে ঘাটে অপরিচিত কারো চোখে চোখ পড়লে হাসি দিয়ে বলবে 'সুপ্রভাত, কেমন আছেন? ভালো তো?' মনে করুন লিফটে উঠলেন,
আপনার পরে যিনি ঢু কছেন তিনি আপনাকে দেখে এমন কু শলাদি ধরণের কথা বলবেন, আবার বেরোবার সময় 'হ্যাভ আ নাইস ডে' বলে বেরোবে। এছাড়াও সবকিছুতেই
ধন্যবাদ দেয়ার চল। এই ব্যাপারগুলো আমাদের দেশের সংস্কৃ তিতে খুব বেশি নেই। ফলে প্রথম প্রথম অবাক হতে পারেন যে অপরিচিত কেউ হাত নাড়ছে কেন, অথবা আগ
বাড়িয়ে কথা বলতে আসছে কেন! আবার দোকানদার আপনার পয়সা দিয়ে কেনা জিনিস হাতে দিলে আপনি কেন থ্যাংক ইউ বলবেন, সেটা নিয়েও খাবি খেতে পারেন।
সহজ সমাধান, প্রতিটি বাক্যেই প্লিজ বলার অভ্যাস করুন, আর কেউ কিছু দিলে, জানালে, তাকে অকু ণ্ঠ্য ধন্যবাদ দিতে থাকু ন থ্যাংক ইউ বলে। আর চলার পথে কারো
চোখে চোখ পড়লে হাই বলার অভ্যাস করুন। কেউ এটা বলার মানে আবার ধরে নেবেন না সে খাতির জমাতে চায়। হোমওয়ার্ক বা পরীক্ষার চাপে ভর্তা হয়ে গেলেও
গোমড়া মুখে প্যাঁচার মতো চেহারা করে না থেকে হাসিমুখ করে থাকার অভ্যাস করুন।

২) প্যাঁচানো বাদ দেয়া

কথাবার্তা সরাসরি বলুন ও লিখুন। ছোটবেলায় পিতার কাছে টাকা চাহিয়া পত্র লেখার যে ভনিতা অভ্যাস হয়ে গেছে, সে ধরণের অভ্যাসগুলো বাদ দেন। গেট টু দ্য পয়েন্ট।
অতি বিনয় অতি ভনিতা করতে থাকলে মূল বিষয় বাদ পড়ে যায়। তার উপর জিআরই, টোফেল থেকে যেসব দুর্বোধ্য শব্দ শিখেছিলেন, সেগুলা দ্রুত ভু লে যান, ঐসব
আমেরিকাতে কেউ কথ্য ভাষায় ব্যবহার করে না। ছোট ছোট বাক্য ব্যবহার করুন, কম্পাউন্ড বা কমপ্লেক্স বাক্য ব্যবহার করা কথায় বা লেখায় দুই ক্ষেত্রেই বাদ দেন।

৩) দরজা ধরে রাখার ভদ্রতা

দরজা ধরে রাখার ব্যাপারে আমেরিকার লোকজনের সৌজন্য রীতিমতো লিজেন্ডারি। ব্যাখ্যা করে বলি, ধরা যাক আপনি কোনো দোকানের দরজা খুলে ঢু কবেন। আপনার
পেছনে একজন আসছে। এখানকার রীতি হলো, ভদ্রতা করে দরজাটা পেছনের লোকের জন্য খুলে ধরে রাখা। বড় শহরে হয়তো কেউ এটা কেয়ার করে না, কিন্তু অধিকাংশ
কলেজ টাউন মানে ছোট শহরে দরজা ধরে রাখার ভদ্রতাটা সবাই আশা করে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে আপনি নিজেই চাপে পড়বেন , আপনি হয়তো ১০০ ফু ট দূরে, কিন্তু
আপনার সামনের ভদ্রলোক দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে, আপনাকে তাই হন্তদন্ত হয়ে হবে যেতে। আর এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে ভু লবেন না।

৪) চোখে চোখ রাখা

কথা বলার সময়ে চোখে চোখ রেখে কথা বলাটা বাংলাদেশের সংস্কৃ তিতে একটা বিশাল ট্যাবু। 'কত্ত বড় বেয়াদব, চোখ তু লে কথা বলে' এই ব্যাপারটা ছোটবেলা থেকে
আমাদের মাথায় ঢু কিয়ে দেয়া হয় বা ঢু কে যায়। ফলে মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে টিচারের বা বসের সঙ্গে কথা বলাটাই বাংলাদেশের রীতি। আমেরিকায় ব্যাপারটা
পুরোপুরি উল্টা। কারো সঙ্গে কথা বলার সময় যদি চোখে চোখ রেখে কথা না বলেন, সবাই সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাবে, ধরে নেবে আপনার মাথায় কোনো সমস্যা আছে বা
আপনি চরম লাজুক অসামাজিক রোগী। কাজেই চোখে চোখ রেখে মাথা উঁচু করে কথা বলুন, ওখানে সেটা বেয়াদবি ধরবে না কেউ। তবে এর আবার উল্টো দিকও আছে,
কারো দিকে অদরকারে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকাটা সন্দেহজনক, সেটা ভু লেও করবেন না।

৫) মিশুক কাউকে ভু ল বোঝা

এই পয়েন্টটা বিশেষ করে ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যত্র কেউ হাসিমুখে আপনার সঙ্গে কথা বলছে বা হাই বলছে তার মানে কিন্তু এই না যে
সে আপনার ব্যাপারে আগ্রহী। কাজেই কেউ আপনার সঙ্গে ভালো করে মিশলে তার ব্যাপারে রোমান্টিক চিন্তা শুরু করে দিলে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করলে বিশাল
সমস্যায় পড়বেন। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের ব্যাপারে ছাড় দেয়া হবে না, ভু ল বুঝে অফেন্সিভ উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেললে জেলে
যেতে হবে নিশ্চিত!

৬) স্টু ডেন্টের সঙ্গে কখনো প্রেম নয়

বাংলাদেশে টিউশনির শিক্ষকেরা অহরহ ছাত্রীদের সাথে রোমান্টিক সম্পর্কে জড়ান, এই ব্যাপারটাকে ডাল ভাত ধরা হয়। হুমায়ুন আহমেদের গল্পে প্রায়ই গোবেচারা
গৃহশিক্ষকের কিংবা কলেজের শিক্ষকদের দেখা যায় ছাত্রীর প্রেমে পড়তে। যারা উচ্চশিক্ষার্থে আমেরিকায় আসছেন বা আসবেন, তারা অনেকেই টিচিং অ্যাসিসটেন্ট হিসাবে
আন্ডারগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের ল্যাব কিংবা ক্লাসে পড়াবেন। সাবধান, ভু লেও দেশের মতো করে ক্লাসের শিক্ষার্থীদের দিকে রোমান্টিক নজর দেবেন না। শিক্ষার্থীর কাছ থেকে
আগ্রহ আসলেও না। আমেরিকার শিক্ষাক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা প্রচন্ড রকমের আন-এথিকাল বা অনৈতিক ধরা হয়, এবং এটাকে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট ধরা হয়, এমনকি যদি
দুই পক্ষের সম্মতি থাকেও! যতদিন পর্যন্ত আপনি কারো শিক্ষক থাকবেন, তার সঙ্গে এমন কোনো সম্পর্কে যাওয়া ওখানে বেআইনি। আবার কোনো কোনো স্টেটে এটা কঠিন
রকমের অপরাধ-- যেমন অ্যালাবামা রাজ্যে ১৯ বছরের কমবয়সী কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে রোমান্টিক বা অন্য সম্পর্ক বেশিদূর গড়ালে দীর্ঘ মেয়াদী জেলের সুব্যবস্থা আছে।
কাজেই টিচিং অ্যাসিসটেন্ট হিসাবে আপনার কাজ যেন কেবলই টিচিং হয়, সেটা খেয়াল রাখুন।

৭) এথিক্স

এথিক্স ব্যাপারটা আসলে কেবল বাংলাদেশের না, আমেরিকার বাইরে বিশেষ করে এশিয়ার প্রায় সব দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেই সমস্যার সৃষ্টি করে। আমাদের
দেশে কোর্সওয়ার্কে অ্যাসাইনমেন্ট কপি করা, একজনে লিখলে সেটাকে বাকি সবাই চোথা মেরে দেয়া, অথবা বই থেকে হুবুহু টু কে, ইন্টারনেট থেকে কপি-পেস্ট করে দেয়া,
পরীক্ষার সময় পাশের জনের খাতায় উঁকি দেয়া, এগুলো যে চরম গর্হিত কাজ, সেটা খুব বেশি কেউ মনে হয় ভাবে না। সমস্যাটা হলো আমেরিকার শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ করে
ইউনিভার্সিটিগুলাতে এসবের ক্ষেত্রে প্রচন্ড কড়া অনার কোড আছে। নকল করে এসাইনমেন্ট জমা দিলে ধরা খাবেন নিশ্চিত, কারণ নকল ধরার সফটওয়্যার ব্যবহার করা
হয় (যেমন Turnitin)। অধিকাংশ ইউনিভার্সিটিতে প্রথমবার ধরা খেলে ঐ অ্যাসাইনমেন্টে শূণ্য পাবেন, ওয়ার্নিং দেয়ার পরে আবারও যদি ধরা পড়েন একই কোর্সে, তাহলে
কোর্সে সরাসরি এফ গ্রেড তো পাবেনই, তার উপরে এটা ডিনের কাছে রিপোর্ট হবে, বহিষ্কার হয়ে যাবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এমনকি কোনো জায়গা থেকে কিছু উদ্ধৃ তি
দিলে সূত্র উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক, আর কোন অংশ উদ্ধৃ তি সেটা স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে। যেকোনো কিছু ইন্টারনেট থেকে বা বই থেকে কপি না করে নিজের ভাষায়
লিখতে হবে। আর যেসব অ্যাসাইনমেন্টে একা কাজ করার কথা, সেখানে নিজের হোমওয়ার্ক নিজেকেই করতে হবে।

8) প্রফেসরের ইমেইলের মর্মোদ্ধার সহায়িকা ~

মাস্টার্স বা পিএইচডিতে ভর্তি চ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক ধরণের পোস্ট প্রায়ই দেখি -- ভর্তি চ্ছু কেউ কোনো প্রফেসরকে ইমেইল করেছেন। তার পরে প্রফেসর এক
সময়ে একটা জবাব দিয়েছেন। এর মানে কী -- প্রফেসর কি আগ্রহ দেখিয়ে ফান্ডিং দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন নাকি এইটা জেনেরিক রিপ্লাই? প্রায়ই এসব পোস্টে অনেকে বিজ্ঞের
মতো অভিমত দেন, পজিটিভ রিপ্লাই -- ফান্ডিং নিশ্চিত ইত্যাদি ইত্যাদি। বিভ্রান্তি বাড়া, পকেটের পয়সা শুধু শুধু এপ্লিকেশন ফীতে খরচ হওয়া, আর টেনশনে মাথার চু ল
পেকে যাবার আগে এই লেখাটা একটু পড়ে দেখুন। প্রফেসরেরা ভর্তি র মৌসুমে প্রতিদিন অনেক অনেক ইমেইল পান ভর্তি চ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। আর দৈনন্দিন
কাজের জন্য শ-খানেকের মতো ইমেইল তো আছেই। এই অবস্থায় ইমেইল ম্যানেজ করার জন্য প্রফেসরেরা নানা কায়দা করেন। প্রফেসরের ইমেইল পেলে তাই একটু বুঝে
নিতে হবে আসলে সেটা কী রকমের ইমেইল জবাব। দেখা যাক নিচে --

১) আমার সাথে কাজ করতে চাও ভালো কথা। তবে তার আগে ভর্তি টা হয়ে নাও। ভর্তি হতে হলে এপ্লিকেশন করো। ----

এই রকমের জবাব হলো জেনেরিক রিপ্লাই বা ফর্ম লেটার। এটা ভদ্রতা বশত প্রফেসর জবাব দিয়েছেন। টাইপও সম্ভবত করেননি -- একটা টেক্সট ফাইলে এই জবাবটা তৈরী
করা আছে, সেখান থেকেই কপি পেস্ট করে দিয়েছেন। এই প্রফেসরের আপনার প্রতি তেমন আগ্রহ নাই। হতে পারে সেটা আপনার প্রোফাইলের জন্য, অথবা তার গ্রুপে
আরএ নেয়ার দরকার নাই। এই জবাবটা মোটেও "পজিটিভ রিপ্লাই" না। এই জবাব পেয়ে ইয়াহু বলে এপ্লাই করতে চলে যাবেন না।

২) আমার সাথে কাজ করতে চাও? আচ্ছা ভর্তি র স্টেটমেন্ট অফ পারপাজে আমার নাম উল্লেখ করতে পারো। --- এই প্রফেসর আগেভাগে ফান্ডিং দিয়ে রিস্কে যেতে চান
না। আরএ নেয়াটা তার জন্য অতো জীবন মরণ সমস্যা না এই মুহুর্তে । তবে হালকার উপরে ঝাপসা একটা ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন, যাতে ভর্তি কমিটি এই শিক্ষার্থীকে নিলে
তাঁর দিকে পাঠিয়ে দেয়। এটা হালকা উষ্ণ (কবোষ্ণ) জবাব। এইখানে এপ্লাই করতে পারেন। আরো লেগে থাকলে ভাগ্যে কিছু জুটতে পারে।

৩) আমার সাথে কাজ করতে চাও? আচ্ছা তোমার একটা পরীক্ষা নেই, অমুক বিষয়ে কিছু লিখে পাঠাও ইত্যাদি ইত্যাদি। ---- এই প্রফেসরের লোক দরকার। তবে সাবধানী
মানুষ। যাচাই করতে চান কেমন হবেন আপনি। তাই কাজ দিয়ে চেক করে নিতে চাচ্ছেন। লক্ষণ ভালো।

৪) আমার সাথে কাজ করতে চাও? তোমার ফোন বা স্কাইপ নাম্বার কতো? কখন কথা বলতে পারবা? ---ইনার জরুরি ভিত্তিতে আরএ লাগবে। ইন্টারভিউতে ঝামেলা না
করলে ভাগ্যে ফান্ডিং জুটার সম্ভাবনা বেশ ভালো।

যাহোক, মোটামুটি ভাবে সব প্রফেসর এই চার রকমের যে কোনো একভাবে জবাব দিবেন। ভদ্রতার জন্যই দেয়া জবাবকে ফান্ডিং এর গ্যারান্টি মনে না করে আসলে কী
রকমের আভাস পেলেন, উপরের হিন্ট থেকে বুঝে নিতে শিখুন। (সময়াভাবে ব্যক্তিগত বার্তার জবাব দিতে পারছিনা বলে ক্ষমাপ্রার্থী। কেউ কোনো বিশেষ ইমেইলের মর্মার্থ
বুঝতে চাইলে কমেন্টে পেস্ট করে দিতে পারেন। সময় পেলে জবাব দেবার চেষ্টা করবো)।

9) ফান্ডিং এর সোনার হরিণ ~

উচ্চ শিক্ষার খরচ যুক্তরাষ্ট্রে বেশ বেশি, কাজেই নিতান্ত উচ্চবিত্ত ছাড়া নিজের পয়সায় পড়াটা কঠিন। রাজ্য সরকারের বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ কম। তবে রাজ্যের বাসিন্দাদের
জন্য যে সুযোগ সুবিধা ও ফি-মাফ রয়েছে, সেটা বিদেশী ছাত্ররা পায় না। কাজেই বিদেশে পড়তে আসার আগে ভর্তি র পাশাপাশি ফান্ডিং জোগাড় করাটা খুব দরকার।

~~ কী রকম খরচ হবে? ~~

দেখা যাক টিউশন ফি-র ব্যাপারটা। অধিকাংশ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স বা পিএইচডি পর্যায়ে প্রতি সেমিস্টারে টিউশন ফি দেয়া লাগে কয়েক হাজার ডলার। যেমন,
ফু ল কোর্স লোড নিলে ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে গ্রাজুয়েট পর্যায়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এ লাগে প্রতি সেমিস্টারে প্রায় ১২ হাজার ডলার, ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়েও তাই
লাগে। কিন্তু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি-টা এর প্রায় ২ গুণ -- যেমন জন্স হপকিন্স মাস্টার্সেই লাগে ২১ হাজার। আমি এখন ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালাবামা অ্যাট
বার্মিংহাম এর সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত, এটি স্টেইট ইউনিভার্সিটি হওয়ায় এখানে খরচ প্রতি সেমিস্টারে ৬-৮ হাজার ডলার, কিন্তু সেটাও বাংলাদেশের হিসাবে
অনেক।

এতো গেলো কেবল টিউশন। থাকা-খাবার জন্য খরচটা জায়গা ভেদে নানা রকম। বড় বড় অনেক শহরে খরচ ব্যাপক। কারো সাথে রুম শেয়ার করে থাকলেও হয়তো
বাড়িভাড়া বাবদ মাসে ৪০০/৫০০ ডলার চলে যাবে। মিডওয়েস্টের ছোট শহর গুলোতে খরচ কম। সেখানে ৩০০/৪০০ ডলারে আস্ত ১ রুমের অ্যাপার্ট মেন্ট নিয়ে থাকা
চলে। দক্ষিণের দিকে খরচ অনেক কম। খাবার খরচ একা মানুষের ২০০-২৫০ ডলারে হয়ে যাবার কথা, চেষ্টা করলে আরো কমানো যায়। আর দূরে কোথাও না গেলে এবং
শহরে বাস সার্ভি স ভালো থাকলে গাড়ির দরকার নেই। সব মিলে একা কারো জন্য জায়গাভেদে ৭০০-১২০০ ডলার থাকা-খাবার খরচে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেয়ার
সময়ে তাই টিউশন ছাড়াও লিভিং কস্ট খেয়াল করে নিতে হবে।

~~ খরচ যোগাবেন কীভাবে? ~~

পিএইচডি পর্যায়ে প্রায় সবাই কোনো না কোনো উপায়ে ফান্ডিং পায়। ভর্তি র সময়েই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফান্ডের গ্যারান্টি দেয়। আগের লেখাতেই বলেছিলাম, মাস্টার্স পর্যায়ে
ফান্ডিং শুরুতে কমই পাওয়া যায়। তবে একবার এসে যাবার পরে ২য় সেমিস্টার নাগাদ চেষ্টা করে ফান্ড জোগাড় করা সম্ভব।

টিউশন ফি মাফ করার বেশ কিছু উপায় আছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধার ভিত্তিতে টিউশন ওয়েইভার বা ফি-মাফ দেয়া হয়। মাস্টার্স বা পিএইচডি পর্যায়ে টিচিং
অ্যাসিস্টান্ট বা রিসার্চ অ্যাসিস্টান্ট হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ পেলে বেতন পাওয়ার সাথে সাথে টিউশন মাফ হতে পারে, বা কম দিতে হতে পারে। আবার মেধাবী ছাত্রদের
ভর্তি র সময়ে ফেলোশীপ বা স্কলারশীপ দেয়ারও ব্যবস্থা আছে। কিছু নির্দি ষ্ট বৃত্তিতে বাংলাদেশের ছাত্ররা বেশ ভালো সুযোগ পায়। যেমন, "আব্বাসী ফেলোশীপ" নামে
একটা বৃত্তি ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ের ভারত, পাকিস্তান, ও বাংলাদেশের ছাত্র/ছাত্রীরা পায়। আবার দেশ থেকে ফু লব্রাইট নিয়েও অনেকে ইদানিং আসছেন।

অ্যাসিস্টান্টশীপ পেলে সপ্তাহে ১০ থেকে ২০ ঘণ্টা শিক্ষকতায় সহায়তা (যেমন, স্নাতক পর্যায়ে ক্লাস নেয়া, খাতা দেখা) অথবা প্রফেসরের গবেষণায় সহায়তা করতে হবে।
টিচিং অ্যাসিস্টান্টশিপ বা টি এ পেতে হলে ডিপার্ট মেন্টের অফিসে খোজ নিতে হবে সে ব্যাপারে। অনেক জায়গায় এজন্য টোফেল এর স্পিকিং অংশে ভালো স্কোর চায়।
রিসার্চ অ্যাসিস্টান্টশীপ বা আর এ নির্ভ র করে প্রফেসরের উপরে। ভর্তি র আবেদন করার আগে থেকে প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ করে সেটার ব্যবস্থা করা সম্ভব , অথবা ১ম
সেমিস্টারে কারো সাথে ফ্রি কাজ করে ভালো কাজ দেখিয়ে পরে তার কাছ থেকে আরএ পাওয়া যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, আরএ দের বেতন প্রফেসরের নিজের
রিসার্চ ফান্ড থেকে আসে, আর সেটা পাওয়া না পাওয়া প্রফেসরের মর্জি র উপরে নির্ভ র করে। কাজেই ভালো কাজ দেখানো, গবেষণা ঠিকমতো করা, এগুলো ভালোভাবে
করতে হবে। প্রফেসরদের সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করা নিয়ে আরেকদিন লিখবো।

এছাড়াও উপার্জ নের আরেকটা উপায় হলো ক্যাম্পাসের নানা জায়গা, যেমন লাইব্রেরিতে ঘণ্টা হিসাবে কাজ করা।অফ ক্যাম্পাস কাজ করাটা শুরুতে যায় কি না, আমার
এখন মনে পড়ছে না, তবে যতদূর জানি, প্রথম ৯ মাসে সেটার অনুমতি বের করা কঠিন। সেমিস্টার চলা কালে অন বা অফ ক্যাম্পাসে সপ্তাহে মোট ২০ ঘণ্টার বেশি কাজ
করা যায় না। তবে গ্রীষ্মকাল বা দুই সেমিস্টারের মাঝের বন্ধে ৪০ ঘন্টা কাজ করা চলে।

উপরের সব পদ্ধতিতেও ফান্ড জোগাড় না হলে সর্বশেষ তরিকা হলো শিক্ষা ঋণ নেয়া। মার্কি নীদের জন্য সেটা ডাল ভাত, কিন্তু বিদেশী ছাত্রদের জন্য সেটা বেশ কঠিন।
পরিচিত কেউ মার্কি ন নাগরিক হলে এবং ঋণে কো-সাইন করলে (মানে ঋণের অংশীদার/জামিনদার হলে) তবেই ঋণ মিলতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে সেটা ছাড়া হয়তো
উপায় থাকে না, যেমন কেবল কাজ করে দামি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির বছরে ৪০ হাজার ডলার টিউশন দেয়াটা প্রায় অসম্ভব -- সেক্ষেত্রে টিউশন ওয়েইভার বা ঋণ ছাড়া
উপায় নেই।

তবে একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি কিছুদিন ধরে। ভারত থেকে প্রচু র ছাত্র নিজের খরচে মাস্টার্সে আসে। তাদের জিজ্ঞেস করে জানলাম, তারা ভারত বা আমেরিকা থেকে
শিক্ষাঋণ নিয়ে আসছে, মাস্টার্স শেষ করে চাকু রি পাবার পর সেটা শোধ করবে। জানিনা বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক এটা দেয় কিনা, কিন্তু যদি দেয়, তাহলে এটা ফান্ড
যোগাড়ের একটা পদ্ধতি হতে পারে।

যাহোক, এত কথা বলছি একটা বিশেষ কারণে। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ ছাত্র ছাত্রী আমেরিকায় উচ্চশিক্ষাতে আসে, বাংলাদেশের চাইতে ছোট অনেক দেশ এমনকি
নেপাল থেকেও তু লনামূলক ভাবে তার চাইতে বেশি ছাত্রছাত্রী আসে। এরা সবাই কিন্তু রাজাবাদশার সন্তান নয়। কোন না কোন ভাবে ফান্ডের ব্যবস্থা হয়ে যায় উপরের কোন
একটা পদ্ধতিতে। কিন্তু দুঃখজনক হল বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা রিস্ক নিতে বা একটু কষ্ট করে নানা পদ্ধতির পিছনে সময় দিয়ে দেখতে অতটা উদ্যোগী নয়। ফলে আমেরিকায়
উচ্চশিক্ষার পর্যায়ে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি যতটা হতে পারত, ততটা নয়। আশা করি এই লেখা পড়ার পরে আরো অনেকে আগ্রহ করে এই ব্যাপারে খোঁজ
নিয়ে দেখবেন এবং সফল হবে।

★ ফান্ডিং না পেলে কীভাবে পড়বেন? ~

“আমার পরিবারের সামর্থ নাই ফান্ডিং ছাড়া পড়ার”

“আমি অমুক জায়গায় ফান্ড পাই নাই, তাই তাদের ভর্তি র অফার নিতে পারি নাই।”

এই কথাগুলা কি চেনা চেনা লাগে?

আপনি নিজেই কি বলছেন এসব কথা?


বাংলাদেশের অধিকাংশ পরিবারের ক্ষেত্রেই প্রথম কথাটা প্রযোজ্য, বাপের টাকায় বিদেশে টিউশন ফি দিয়ে পড়ার সামর্থ খুব কম মানুষেরই আছে। তাই উচ্চ শিক্ষার্থে
মাস্টার্স বা পিএইচডি পর্যায়ে পড়ার জন্য সবাই ফান্ডিং খোজে, যা ফেলোশীপ, রিসার্চ এসিস্টেন্টশীপ, কিংবা টিচিং এসিস্টেন্টশীপের মাধ্যমে আসে। কিন্তু সেগুলা পাওয়া
সম্ভব একাডেমিক বা রিসার্চে র ফল ভালো হলে। এর কারণে সবাই সেভাবে ফান্ডিং পান না। ফান্ডিং ছাড়া মাস্টার্সে ভর্তি র অফার বা আই-টু য়েন্টি সহজেই মিলে। কিন্তু
ফান্ডিং ছাড়া সেই অফার গ্রহণ করতে আগ্রহী হন না বাংলাদেশের অধিকাংশই। আমার কর্মস্থল ইউনিভার্সিটি অফ আলাবামা অ্যাট বার্মিংহাম এ কম্পিউটার সাইন্সে
মাস্টার্সে এরকম প্রচু র আনফান্ডেড এডমিশন দেই আমরা, এর মাঝে বাংলাদেশের অনেকেই থাকেন, কিন্তু অন্যদেশীয়রা এসে গেলেও বাংলাদেশ থেকে কেউ অফার নেননা,
এমনকি অন্যত্র ভর্তি র আমন্ত্রণ না থাকলেও।

আমি বলবো, এটা বড় রকমের বোকামি। ফান্ডিং না পেলে পড়বেনই না?

** ফান্ডিং ছাড়াই উচ্চশিক্ষার উপায় **

*** কেন? ***

কারণ পড়ার খরচ জোগাড়ের অজস্র তরিকা আছে, যা অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা ভালো করেই জানে এবং তা প্রয়োগ করে দিব্যি মাস্টার্সের খরচ বের করে ফেলছে।আমি
মাস্টার্স/পিএইচডি লেভেলের একটা ক্লাস পড়াই। রিসার্চ কোর্স বলে সেখানে সাধারণত ১৫ জন শিক্ষার্থী হতো, কিন্তু গত বছর দুয়েক ধরে বিপুল সংখ্যক মাস্টার্স লেভেলের
বিদেশী শিক্ষার্থী আসছে, ফলে সেই ক্লাসে জায়গাই মেলেনা। অধিকাংশ শিক্ষার্থী আসছে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, কিংবা চীন থেকে।

*** কীভাবে? ***

প্রথাগত ফান্ডিং সোর্সের যেমন টিএ আরএ এর বাইরেও যে কোনো ক্যাম্পাসে অনেক কাজের সুযোগ থাকে। হতে পারে সেটা অন্য কোনো বিভাগের কোনো প্রফেসরের
অধীনে রিসার্চ এসিস্টেন্টের কাজ। উদাহরণ স্বরূপ বলি, আমার পরিচিত একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স করতো, কিন্তু রিসার্চ এসিস্টেন্ট ছিলো মেডিকাল স্কু লের
এক প্রফেসরের সাথে, কারণ সেই প্রফেসরের কিছু সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট জাতীয় কাজ ছিলো এক প্রজেক্টে।আবার অনেক সময়ে ঘণ্টা হিসাবে নানা কাজ করা যায়
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই। আমার এক ইরানী ছাত্র ছিলো, মাস্টার্স করছে। তার কোনো ফান্ডিং ছিলো না, মাস খানেক ধরে আমার পিছনে ঘুরেছে, শেষমেশ তাকে
ডিপার্ট মেন্টের সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের অধীনে একটা প্রজেক্টে মোবাইল এপ ডেভেলপারের কাজ জুটিয়ে দিলাম, মাসে তার আয় দাঁড়ালো বারশ ডলারের মতো।
পুরাপুরি ফান্ড না হলেও কিন্তু তার অনেক খানি খরচ জোগাড় হলো। আর এর পাশাপাশি একটা ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে পার্ট টাইম চাকু রি জোগাড় করেছিলো , আয় হয়েছে
ভালোই, টিউশন কাভার করে থাকা খাওয়ার খরচ মিটে গেছে। বছর দুয়েক কষ্ট করে মাস্টার্স শেষ করে ফেলেছে, এই সময়ের মধ্যেই তার পকেট থেকে যা খরচ হয়েছে সবটা
তু লে ফেলতে পারবে মনে হয়।

আর অনেক ডিপার্ট মেন্টই ফান্ডিং না দিলেও টিউশন মাফ করা (ওয়েইভার) অথবা ইন-স্টেট টিউশন দিতে পারে। আমার কর্মস্থলে ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালাবামা অ্যাট
বার্মিংহাম এ কম্পিউটার বিজ্ঞানে মাস্টার্সে ফান্ড না দিলেও ৫-৬ জন ভর্তি চ্ছু শিক্ষার্থীকে টিউশন মাফ কিংবা কম টিউশনের সুবিধা দেয়া হয়। ফলে প্রতি সেমিস্টারে পড়ার
খরচ কমে দাঁড়ায় ৩-৪ হাজার ডলারের মতো, যা পার্ট টাইম চাকু রি থেকে মেটানো সম্ভব। আবার অনেক মাস্টার্সের শিক্ষার্থীই ঘণ্টা হিসাবে টিএ বা গ্রেডারের কাজ পান,
এতে করে কিছুটা খরচ উঠে আসে বটে। আমার দুঃখ লাগে যখন দেখি, অনেক বাংলাদেশী ছাত্রই ফান্ডিং না পেলে আসবেই না এই গোঁ ধরে বসে থাকে, আর সেখানে
ভারত, নেপাল, ইরান, চীনের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে ক্যাম্পাসে হাজির হলেই কাজ একটা জোগাড় হবে, এই বিশ্বাসে চলে আসে, পেয়েও যায় কাজ/ফান্ডিং।

আমার লেখাগুলা পড়ে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, সেলফ ফান্ডিং এ ভর্তি হলেও ভিসা মেলে না। এই যুক্তি কিন্তু অন্যান্য দেশের জন্যও প্রযোজ্য। ভারত বা পাকিস্তানী
শিক্ষার্থীদের জন্য যে পরিমাণ এডমিশন দেয়ায় হয় তাদের সবাই ভিসা পায়না বটে। কিন্তু অনেকেই পায়। আর বাংলাদেশী প্রচু র শিক্ষার্থীকেও আমার ইউনিভার্সিটিতেও
দেখেছি সেলফ ফান্ডিং এ ভিসা নিয়ে আসতে। কাজেই "ভিসা পাবো না" এইটাকে অবধারিত ধরে নেয়া এবং এরকম যারা বলছে তাদের কথা বিশ্বাস করাটাও বোকামির
মাঝেই পড়ে। চেষ্টা না করলে জানবেন কী করে?

সেদিন এক ইন্ডিয়ান রেস্টু রেন্টে গেছিলাম, কাউন্টারে যে আছে সে হাসি মুখে হাউ আর ইউ স্যার বলল, তাকিয়ে দেখি আমার ক্লাসের এক ভারতীয় ছাত্রী, পার্ট টাইম কাজ
করছে এখানে, পড়ার বা থাকা খাওয়ার খরচ তু লে নিচ্ছে এভাবেই। ফান্ডিং পাই নাই তাই পড়বোনা এরকম গোঁ ধরে থাকেনি, মাস ছয়েক পরে পাস করে চাকু রী পাবে তা
নিশ্চিত। (* নোট, একজন মনে করিয়ে দিলেন, অফ ক্যাম্পাস অড জব করাটা এফ-১ ভিসাতে লিগাল হবার কথা না, তাই এটা ভাল উদাহরণ না। আমি একমত। তবে
আমার ইরানী আর চীনা ছাত্রছাত্রীর যে উদাহরণ দিয়েছিলাম, তারা লিগাল ভাবেই অফ ক্যাম্পাস ওয়েব ডিজাইনের কাজ করেছিল একটা কোম্পানিতে, আমরা
ইউনিভার্সিটি থেকে অনুমতিপত্র দিয়েছিলাম সেটার জন্য।কাজেই সেভাবে কাজ জোগাড় করে নেয়াটাই ভাল। )

তাই এই গোঁ ধরে বসে থাকা বাদ দেন … ফান্ডিং শুরুতে সরাসরি না পেলেও পরে অবশ্যই পাওয়া যায় , সেটা বিশ্বাস করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য উদ্যম আর সদিচ্ছা থাকলে
ফান্ডিং এক সময়ে জোগাড় হবেই।
[এই লেখাটা কয়েক বছর আগে লিখেছিলাম। এর মাঝে আমার ইউনিভার্সিটিতে ভারত থেকে ছাত্রছাত্রী আসার হার অনেক বেড়ে গেছে -- প্রতি বছর ১০০ এর উপরে
মনে হয় আসছে মাস্টার্স লেভেলে। সবাই নিজের খরচেই। তবে এদের অনেকেই দেড় বা দুই বছরে মাস্টার্স করে ফেলে ভাল চাকু রীতে ঢু কে গেছে। একজন করিতকর্মা ছাত্র
গুগলেও যোগ দিয়েছে। বলাই বাহুল্য, সে হয়ত দুই তিন মাসের বেতন দিয়েই তার মাস্টার্সে পড়ার খরচ পুষিয়ে নিতে পেরেছে। ]

10) গবেষণায় হাতেখড়ি - গবেষণার ফল প্রকাশ: পাবলিকেশন/রিসার্চ পেপার প্রকাশ করবেন কীভাবে? ~

গবেষণার ফল প্রকাশ করার মূল মাধ্যম হলো গবেষণাপত্র বা research paper। আর সেটা প্রকাশ করতে হয় কনফারেন্স অথবা জার্নালে। আপনার গবেষণার ফলাফলকে
নির্দি ষ্ট ফরম্যাটে লিখে জমা দেয়ার পরে সেটা যাচাইবাছাইপূর্বক প্রকাশিত হয়। আজকের লেখায় থাকছে পেপার প্রকাশ করার প্রক্রিয়া -- পেপার কীভাবে লিখবেন সেটা
আগামীদিন লিখব।

** পেপার প্রকাশের নানা ধাপ **

প্রতিটি জার্নাল কিংবা কনফারেন্সে পেপার জমা দেয়ার সাইট থাকে। সেখানে তারা যে ফরম্যাটে লেখা প্রকাশ করে তার বিশদ বিবরণ দেয়া থাকে , যা থেকে আপনি জানতে
পারবেন কত পৃষ্ঠার মধ্যে লিখতে হবে, মার্জি ন কেমন হতে হবে, নানা সেকশন হেডিং, সাইটেশন স্টাইল এসব কেমন হবে, ফন্ট সাইজ — সবকিছুই। যেখানে পেপারটা
পাঠাচ্ছেন, সেখানকার সব নির্দে শনা হুবুহু মেনে চলতে হবে। কারণ অনেক সময়ে আপনার পেপারের সব কিছু ঠিক থাকলেও ফরম্যাটের সমস্যার কারণে পেপার প্রত্যাখ্যাত
বা রিজেক্টেড হতে পারে।সব ফরম্যাট ও নির্দে শনা মেনে পেপার প্রস্তুত করার পরে সেটা জমা দিতে হবে কনফারেন্স বা জার্নালের সাইটে। কনফারেন্সে পেপার জমা দেয়ার
নির্দি ষ্ট দিন তারিখ বা ডেডলাইন থাকে। তার আগে জমা দিতে হবে পেপারটা সেখানে। বর্ত মানে সব জার্নাল বা কনফারেন্স ইলেকট্রনিক সাবমিশন অর্থাৎ ওয়েবসাইটের
মাধ্যমে পেপার জমা নেয়।

পেপার জমা দেয়ার পরে সেটা অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞরা সেই পেপারটিকে রিভিউ বা যাচাই বাছাই করবেন। কনফারেন্সের ক্ষেত্রে একটি প্রোগ্রাম কমিটি থাকে, যা সেই বিষয়ের
অভিজ্ঞ গবেষকদের নিয়ে গঠিত হয়। আর জার্নালের ক্ষেত্রে জার্নালের সম্পাদক নির্ধারণ করেন কোন অভিজ্ঞ গবেষকেরা এই পেপার রিভিউ করবেন। সাধারণত একটি
পেপার ২ থেকে ৪ জন বিশেষজ্ঞ রিভিউ করে থাকেন।

পেপার রিভিউ করা শেষে রিভিউয়ারেরা সেই পেপারের ভালো খারাপ সব দিক মিলে একটি রিপোর্ট বা রিভিউ লিখেন এবং পেপারটি গ্রহণযোগ্য কি না, সেই ব্যাপারে
তাঁদের সিদ্ধান্তটি দেন। পেপারটির মান সম্পর্কে সবাই একমত হলে তবেই পেপারটি প্রকাশের যোগ্য হিসাবে বিবেচিত হয়। সম্পূর্ণ এই পদ্ধতিটিকে বলা হয় Peer review
(পিয়ার রিভিউ)।অনেক সময়ে রিভিউয়ারেরা পেপারের কিছু সমস্যা নির্দে শ করে সেগুলাকে সংশোধন করার জন্য লেখকদের সুযোগ দেন। সংশোধন শেষে আবার
আরেকবার রিভিউ করা হয় এবং সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।পিয়ার রিভিউ এর প্রসেসে মোট সময় লাগতে পারে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত। সাধারণত কনফারেন্সে নির্দি ষ্ট
সময়সীমা থাকে — এক মাস থেকে তিন/চার মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানা যায়। তবে অধিকাংশ জার্নালে অনেক সময় লাগে রিভিউ করতে, যা তিন মাস থেকে কয়েক বছর
পর্যন্ত হতে পারে।

পেপার যদি মানসম্মত না হয়, সেই ক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যান বা রিজেকশন এর সিদ্ধান্ত সহ রিভিউয়ারদের মতামত লেখকের কাছে পাঠানো হয়। আর গ্রহণযোগ্য হলে নির্দি ষ্ট সময়
পরে পেপারের চু ড়ান্ত সংস্করণ জমা দিতে হয়।

** পোস্টার অথবা এক্সটেন্ডেড এবস্ট্রাক্ট **

অনেক ক্ষেত্রে পেপারের বদলে পোস্টার হিসাবে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ প্রকাশ করা যায়। সেই ক্ষেত্রে সাধারণত ১ বা ২ পৃষ্ঠায় পোস্টারের বর্ণনাকে বর্ধিত ভূ মিকা বা
এক্সটেন্ডেদ এবস্ট্রাক্ট হিসাবে জমা দিতে হয়।

** উপস্থাপনা **

জার্নালের ক্ষেত্রে কাজ এখানেই শেষ। কিন্তু কনফারেন্সের ক্ষেত্রে আরেকটি ধাপ বাকি আছে, যা হলো কনফারেন্সে আমন্ত্রিত অন্যান্য গবেষকদের সামনে পেপারটি উপস্থাপন
করা। সেই ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২৫ মিনিটের একটি প্রেজেন্টেশন বানাতে হয় যা মঞ্চে সবার সামনে উপস্থাপন করতে হয়। উপস্থাপনার মাঝে বা শেষে উপস্থিত গবেষকেরা
গবেষণাটি সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারেন, তার জবাব দেয়ার জন্য থাকতে হবে প্রস্তুত।

** কনফারেন্স নাকি জার্নাল? **

কোথায় পাঠাবেন আপনার গবেষণার কাজ? আসলে এই প্রশ্নের জবাব নির্ভ র করছে আপনার গবেষণার এলাকার প্রথার উপরে। জার্নাল অবশ্যই সব ক্ষেত্রে সবচেয়ে
আকাঙ্ক্ষিত ধরণের প্রকাশনা। তবে সময়সাপেক্ষ বলে শুরুর দিকের কাজ অনেক ক্ষেত্রেই কনফারেন্সে পাঠানো হয়। কনফারেন্সে পাঠানোর একটা সমস্যা অবশ্য হলো,
যাতায়াত ও অংশগ্রহণের খরচ। অধিকাংশ কনফারেন্সে রেজিস্ট্রেশন ফি থাকে, যা কয়েকশো ডলার হতে পারে। আর কনফারেন্স যদি হয় বিদেশে, তাহলে প্লেন ভাড়া, হোটেল
ভাড়া, সবই বহন করতে হবে, যা সব মিলে হাজার খানেক ডলারের বেশি হতে পারে। কাজেই সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন কোথায় পাঠাবেন।(আমার বই গবেষণায়
হাতে খড়ি থেকে। )

11) প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ করা নিয়ে কিছু কথা ~

গ্রাজুয়েট পর্যায়ে ভর্তি র এবং গবেষণা সংক্রান্ত নানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ করাটা একটা বুদ্ধিমানের কাজ। অনেক জায়গাতেই টিচিং
এসিস্টেন্টশিপ বেশি থাকে না, এবং অধিকাংশ পিএইচডি শিক্ষার্থী রিসার্চ এসিস্টেন্টশিপের মাধ্যমে ফান্ডিং পেয়ে থাকেন। রিসার্চ এসিস্টেন্টশিপ এর ফান্ড আসে মূলত
প্রফেসরদের নানা রিসার্চ গ্রান্ট থেকে। আবার অনেক জায়গায় ভর্তি র আগেই এডভাইজর ঠিক করে যেতে হয়, সেই ক্ষেত্রে প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ করা দরকার।

** কখন থেকে যোগাযোগ করবেন?

একটা বড় ভু ল হলো ভর্তি র আবেদনের সময়ের ঠিক আগে আগে এপ্লাই করা। কারো সাথে কাজ করবেন বা কারো কাজে আগ্রহ প্রকাশ করছেন, এই ব্যাপারটাতে সময়
লাগে। প্রফেসরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, তাঁদের সাথে ইমেইলে আলাপচারিতা করা, এসব রাতারাতি করে ফেলা সম্ভব না। সেজন্য অন্তত মাস ছয়েক সময় হাতে নিয়ে কাজ
শুরু করা উচিৎ। সবচেয়ে ভালো হয় যখন ভর্তি র আবেদন করবেন তার অন্তত বছর দেড়েক আগে থেকে এই কাজটা শুরু করা। কেবল ভর্তি র সুবিধার জন্যই না , বরং
অনেক ক্ষেত্রে সামার ইন্টার্নশিপের জন্যও প্রফেসরদের সাথে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ করতে পারে। আমি নিজে প্রতি বছর ভারতের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য়
বর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইন্টার্নশিপের আবেদন পাই, আর রিসার্চে আগ্রহ প্রকাশ করেও অনেকে ইমেইল করে। কাজেই আগে থেকে যোগাযোগ শুরু করেন।

** কার সাথে যোগাযোগ করবেন?

শুরুতেই প্রশ্ন -- আপনি আসলে কী চান? আপনার লক্ষ্য কি আরএ এর ফান্ডিং বের করা, নাকি রিসার্চে র জন্য যোগাযোগ করতে থাকা? ভর্তি এবং ফান্ডিং যদি উদ্দেশ্য
হয়, তাহলে আপনার এমন কাউকে বের করতে হবে যাঁর হাতে ফান্ডিং আছে এবং যিনি নতু ন ছাত্র নিচ্ছেন। এই তথ্যগুলা বের করতে হলে আপনাকে একটু হোমওয়ার্ক
করতে হবে -- নানা জায়গায় খুঁজে দেখতে হবে --

(১) প্রফেসরদের ওয়েবসাইট: অনেক প্রফেসরই নতু ন ছাত্র নেয়ার ইচ্ছা থাকলে ওয়েবসাইটে ঘোষণা দেন।

(২) ডিপার্ট মেন্টের ওয়েবসাইট: আবার অনেক সময়ে প্রফেসরেরা নতু ন গ্রান্ট পেলে রিসার্চ এসিস্টেন্ট নিয়োগ দেন। সেই গ্রান্টের খবরও ডিপার্ট মেন্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ
হয়, সেটা খেয়াল করে দেখেন।

(৩) ফান্ডিং এজেন্সির সাইট: আরেকটা উপায় হলো ন্যাশনাল সাইন্স ফাউন্ডেশনের সাইট (NSF) এ গিয়ে সাম্প্রতিক গ্রান্ট / এওয়ার্ড এর পাতা ঘেঁটে দেখা এবং সেই সব
গ্রান্টের মূল প্রফেসরদের নাম বের করা। (সাইটে গিয়ে সার্চ পেইজে গিয়ে এই তথ্য পাবেন)। গ্রান্ট পেলেই নতু ন এসিস্টেন্ট নিবেন সেটা নিশ্চিত না, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই গ্রান্ট
পাওয়ার পরে পরে প্রফেসরেরা নতু ন রিসার্চ এসিস্টেন্ট নেন।

(৪) নতু ন প্রফেসর: আবার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতু ন এসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসাবে যাঁরা যোগ দেন, তাঁরা সবাইই নিজের রিসার্চ গ্রুপ গড়ে তোলার জন্য নতু ন এসিস্টেন্ট নেন।
সদ্য যোগ দেয়ার প্রফেসরদের ঘোষণা অনেক ক্ষেত্রেই ডিপার্ট মেন্টের সাইটে দেয়া থাকে, আবার প্রফেসরদের নিজেদের সাইট ও সেখানে দেয়া তাঁদের সিভি দেখেও বের করা
যায় কে সদ্য যোগ দিয়েছেন। রিসার্চে সহযোগিতা বা সহায়তা করার জন্য অবশ্য ফান্ডিং বা গ্রান্ট নিয়ে মাথা ঘামাবার দরকার নাই -- আপনার যে বিষয়ে গবেষণা করতে
আগ্রহ আছে, সেই বিষয়ের নামকরা প্রফেসরদের খুঁজে বের করুন।

12) গ্রাজুয়েট স্কু লে সফল হতে হলে ... ~

(লেখাটি মূলত উচ্চশিক্ষার্থে যাঁরা এ্যাডমিশন ও ভিসা পেয়ে সামনের মাসেই মাস্টার্স বা পিএইচডি শুরু করবেন, তাঁদের জন্য, তবে বাকিরাও উপকৃ ত হতে পারেন। কষ্ট
করে এই লেখাটি পড়ু ন।)

উচ্চশিক্ষা নিয়ে অনেক কিছু নানা সময়ে লিখেছি, যার অধিকাংশই আসলে ভর্তি ও ফান্ডিং নিয়ে। এবার ভাবছি যারা মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে এসেছেন, তাদের জন্য
কিছু পরামর্শ নিয়ে লিখবো। লেখাটা আমার নিজের ছাত্র ও শিক্ষক হিসাবে অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা বলে অনেকটা আমেরিকা কেন্দ্রিক তবে মূল ব্যাপারগুলো সব
দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

~ পড়ালেখার নতু ন ধরণ ~


মাস্টার্সে তো অবশ্যই, পিএইচডি প্রোগ্রামেও শুরুতে করতে হবে অনেক কোর্সওয়ার্ক । আপনি এখানে আসার আগে বহু কোর্স করে এসেছেন স্নাতক পর্যায়ে, তাই ভাবতে
পারেন এ আর এমন কি। আসলেই তেমন আলাদা কিছু না, তবে কিছু কিছু জিনিষ একেবারেই আলাদা।

- মুখস্ত করে পার পাবেন না -- গ্রাজুয়েট পর্যায়ে অধিকাংশ কোর্সে মুখস্তবিদ্যার স্থান নাই। বরং চিন্তা করে সমস্যা সমাধান করার উপরে গুরুত্ব দেয়া হয়। যদি আপনার আগের
অভ্যাস হয় বই নিয়ে অমুক জিনিষের সংজ্ঞা অক্ষরে অক্ষরে মুখস্ত ঠোঁটস্থ করে ফেলা আর পরীক্ষার খাতায় উগরে দেয়া, তাহলে অভ্যাসটা পাল্টাতে হবে। আর আগের
মতো পুরা সেমিস্টার গায়ে বাতাস লাগিয়ে পরীক্ষার আগের রাতে পড়ে ফাটিয়ে ফেলবেন, সেটাতেও কাজ হবে না, কারণ ফাইনাল পরীক্ষার ওজনটা কম, পুরো সেমিস্টার
জুড়ে এসাইনমেন্ট আর প্রজেক্ট কিংবা মিডটার্মের গুরুত্ব অনেকটা একই সমান। তাই নিয়মিতভাবে শুরু থেকেই পড়ার অভ্যাসটা গড়তে হবে।

ঘাপটি মারার অবসান -- আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুসারে বাংলাদেশে ক্লাস চলার সময়ে শিক্ষককে প্রশ্ন করাটাকে খুব নেতিবাচক হিসাবে দেখা হয় -- প্রশ্ন কর্তা আঁতেল
কিংবা বেয়াদব দুই রকমেরই খেতাব পেতে পারে। গ্রাজুয়েট স্কু লে বরং প্রশ্ন করাটাই মনোযোগী শিক্ষার্থীর লক্ষণ -- অনেক ক্লাসে রীতিমত ৫-১০% নম্বর থাকে ক্লাস
পার্টি সিপেশনের উপরে। কাজেই না বুঝলে বা প্রশ্ন আসলে ঘাপটি মেরে না থেকে প্রশ্ন করুন।

~ বৃত্তের বাইরে বেরুনো ~

বিদেশে পড়তে আসা বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখেন, কোথায় বাংলাদেশী ছাত্র বেশী আছে।যেখানে আছে সেখানে নিজের দেশী লোকজনের সাথে আরামে
আড্ডা দেয়া যাবে সেটাই লক্ষ্য। কিন্তু সব সময় যদি দেশী লোকজনের সাথেই লেগে থাকেন, তাহলে আপনি কূ পমণ্ডুকই হয়ে থাকবেন -- পরিচিতি ও নেটওয়ার্কিং কোনটাই
হবে না। তাই ক্লাসে প্রজেক্টের গ্রুপ করা কিংবা একসাথে বসা -- সব ক্ষেত্রেই চেষ্টা করুন কেবল দেশী লোকজনের সাথে দল না পাকিয়ে বিদেশীদের সাথেও মিশতে।একই
কথা প্রযোজ্য আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসে থাকা কিংবা অন্যান্য স্টাফদের ক্ষেত্রে -- মনে রাখবেন, ডিপার্ট মেন্টের অনেক কিছুই কিন্তু চালায় আসলে স্টাফেরা। কাজেই
ডিপার্ট মেন্ট সেক্রেটারি বা এরকম অন্যদের সাথে নিয়মিত কথা বলুন, পরিচিত হন।সপ্তাহান্তে কী করবেন? আবারও দেশী লোকজন সহ আড্ডা ও খাওয়াদাওয়া দাওয়াতের
বৃত্ত? সেগুলা করবেন বটে, কিন্তু তার সাথে সাথে স্থানীয় সংস্কৃ তি, অনুষ্ঠান, উৎসব এগুলোর সাথে পরিচিত হন। থাংকসিগিভিং ডিনারের দাওয়াত নিয়ে আসবে নানা
স্থানীয় সংস্থা -- নানা চার্চ থেকে ডাকাডাকি করবে তাদের ডিনারে যেতে, "ধর্ম যার যার উৎসব সবার" এই কথাটা অন্তত এইবার মনে রেখে এসব অনুষ্ঠানে যান। স্থানীয়
লোকজনের সাথে পরিচিত হন। আর আপনার ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকেও শিক্ষার্থীদের জন্য নানা রকমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে, সেগুলোর খোঁজ নিয়ে
নিয়মিতভাবে যান সেগুলোতে। অন্যান্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সাথে মিশুন ভালো করে, ওরাও আপনার মতোই দেশ ও প্রিয়জন ছেড়েই এসেছে। ইউনিভারসিটির
খেলাধুলার নানা ম্যাচের টিকেট শিক্ষার্থীরা সস্তায় পায়, সেটা দেখে নিন। কেবল ক্রিকেটে না মজে থেকে আমেরিকান ফু টবলটাও একটু বুঝে নিন, অন্তত অন্যদের সাথে কথা
বলার জন্যও খেলাধুলার খবর রাখা ভালো।

কেনো বলছি এতো সবার সাথে মেশার জন্য? কারণ এই যোগাযোগ ও বন্ধু ত্বগুলো আপনার কেবল পড়ার সময়ে না, বরং ক্যারিয়ারের সময়েও আগামী বহু বছর কাজে
আসবে।

~ মন ভালো রাখা ~

দেশ থেকে মাত্র এসেছেন, এই সময়টাতে আপনার মনের অবস্থা কেমন? এই ব্যাপারে গবেষণা করেছেন এমন একজনের তত্ত্ব হলো এই সময়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থাটা
হয় অনেকটা বাথটাব কার্ভে র মতো। শুরুতে নতু ন সবকিছু দেখে মনটা খুব উৎফু ল্ল থাকে, নিত্যনতু ন জিনিষ দেখে ও করে ভালো লাগে খুব। তার পরে? কিছুদিন পরে ধপ
করে মনটা খারাপ লাগে, প্রিয়জনদের ফেলে আসার কারণে মানসিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, মনে হয় সবকিছু ফেলে চলে যান দেশে। এই অবস্থায় কিছু দিন যাবার পরে
মনটা আস্তে আস্তে ভালো হয়, নতু ন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারেন নিজেকে।

এই বাথটাব কার্ভ ফলো করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন, হোমসিক হওয়াটা স্বাভাবিক, তবে নতু ন পরিবেশে নতু ন মানুষদের সাথে আস্তে আস্তে আপনি খাপ খাইয়ে নিতে
পারবেন অচিরেই। আর এখনকার যুগে ফেইসবুক, স্কাইপ কিংবা অন্যান্য ভিডিও চ্যাটের কল্যাণে প্রিয়জনের সাথে প্রতিদিন চাইলেই দেখা হচ্ছে ভার্চু য়াল জগতে, কাজেই
একদা শিক্ষার্থীরা যেভাবে বিশাল একটা ধাক্কা খেতো বা একাকী হয়ে যেতো, সেই দিন আর নাই। কাজেই মনটা ভালো রাখেন, ভাবেন যে জীবনে ক্যারিয়ারে আগানোর জন্য
গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করতেই আপনি এসেছেন। সেজন্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে হবেই।

~ রান্না ও গবেষণা ~

গ্রাজুয়েট স্টু ডেন্টদেরকে রান্নার উপরে ভালো কিছু পরামর্শ দেয়ার ইচ্ছা আমার অনেক দিনেরই। এর কারণ হলো নানা রান্নার বই কিংবা ভিডিও হয়েতো বগলদাবা করে নিয়ে
এসেছেন দেশ থেকে, কিন্তু সেইগুলা আসলে অনেক সময় নিয়ে দীর্ঘ পরিশ্রমে করা রান্নার বই। আপনার এতো সময় থাকবে না। কীভাবে শর্ট কাটে রান্না করে এবং মজার
খাবার বানিয়ে থাকবেন? এক্ষেত্রে আপনাদের রপ্ত করতে হবে কিছু কায়দা। বাংলাদেশী খাবার বানাতে অনেক সময় লাগে। যদি সিরিয়াল দিয়ে আমেরিকানদের মত নাস্তা করে
নিতে পারেন, স্বাস্থ্যকর একটা নাস্তা করা হবে। স্যান্ডু ইচ বানিয়ে নিতে পারেন বাসাতেই, টু না চিকেন বা হুম্মুস দিয়ে, সেটা সাথে নিয়ে গেলে লাঞ্চের ঝামেলা শেষ। আর ঘরে
রান্না করতে চাইলে থাই রান্নার একটা বই কিনে নেন বা অনলাইনে দেখে নেন -- খুব সহজে ১০ মিনিটে মজাদার খাবার পাবেন। ভু লেও সস্তা রামেন নুডলস খাবেন না অন্যরা
খেলেও -- ওগুলোতে প্রচণ্ড লবণ দেয়া থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। থাই খাবারে খুব অল্প লবণ, তেল, বা ভাজাভাজি করার ব্যাপার থাকে, তাই সেটা খুব স্বাস্থ্যকর।
আর নানা সময় মূল্যহ্রাসের সুযোগ নিয়ে ইন্সট্যান্ট পট নামের ধন্বন্তরি প্রেশার কু কার কিনে নেন -- মাত্র ১৫-৩০ মিনিটে বিরিয়ানি থেকে শুরু করে সব রকমের খাবার কিনতে
পারবেন। সময়ও বাঁচবে, নানা রকমের খাবারও খেতে পারবেন কম খরচে। আর না, দেশে চু লার ধারে কাছে না গেলেও এইটা ব্যবহারে কোন সমস্যা হবে না।

ভালো থাকু ন সবাই, সফল হন আপনাদের জ্ঞান সাধনায়।

13) মাস্টার্স করবেন নাকি পিএইচডি?

আপনি কি উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় গ্রাড স্কু লে ভর্তি হতে চান? কিন্তু বুঝতে পারছেন না মাস্টার্সে যাবেন না পিএইচডিতে? তাহলে এই লেখাটা আপনার জন্য। (হাতি
পোস্ট হলেও কষ্ট করে একটু পড়ে নিন ও জনস্বার্থে লেখাটা ভর্তি চ্ছুদের পড়ান।)

মার্কি ন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাইরেক্ট পিএইচডি করার সুযোগ আছে। অর্থাৎ, বিএসসি ডিগ্রিধারীরা সরাসরি পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি র সুযোগ পান। বাংলাদেশে
অনেকের মাঝে একটা ভু ল ধারণা দেখেছি -- পিএইচডি করতে গেলে আগে মাস্টার্স থাকা প্রয়োজন। অন্তত মার্কি ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটা ঠিক না -- সুযোগ্য প্রার্থীদের সরাসরি
পিএইচডিতে ভর্তি করা হয়। আর পিএইচডি করতে করতে মাস্টার্স ডিগ্রিটা নেয়া বা না নেয়া অনেক জায়গাতেই ছাত্রের ইচ্ছার উপরে নির্ভ র করে। যেমন, আমার গ্র্যাড
স্কু ল ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স করতে হলে ৬টা কোর্স আর থিসিস লিখতে হতো। অনেক জায়গায় আবার ৬/৭টা কোর্স করলেই
মাস্টার্স নেয়ার সুযোগ আছে।

আমি বর্ত মানে ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালাবামা অ্যাট বার্মিংহাম এর কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে সহযোগী অধ্যাপনার কাজ করছি, এই সেমিস্টারে গ্রাজুয়েট ভর্তি প্রক্রিয়ার
সাথে ভালো ভাবে জড়িত আছি। আমার বিভাগে মাস্টার্স করতে মোট ৩০ ক্রেডিট কোর্সওয়ার্ক লাগে, অথবা কিছু কম কোর্স কিন্তু থিসিস অপশনও আছে। গতবছর
থেকে প্রতি সেমিস্টারে অন্তত ৩০-৫০ জন নতু ন ভারতীয়/চীনা/পাকিস্তানী/নেপালী শিক্ষার্থী আসছে মাস্টার্সে, সেটা নিয়ে একটু পরেই লিখছি, আগে দেখা যাক, মাস্টার্স
আর পিএইচডির মধ্যে সুবিধা অসুবিধা কেমন।

১) ফান্ডিং

মাস্টার্স পর্যায়ে ফান্ড পাওয়াটা বেশ কঠিন। মার্কি ন অর্থনীতির এই দুর্দি নে মাস্টার্স পর্যায়ের ফান্ড প্রায় গায়েব হয়ে গেছে। কাজেই মাস্টার্সে ভর্তি হলে অন্তত ১ম সেমিস্টারে
ফান্ড পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। সেক্ষেত্রে টিউশন ফি দিয়ে পড়তে হবে, যা অনেক ক্ষেত্রেই নাগালের বাইরের পর্যায়ে। তবে কিছু "কিন্তু" আছে এই জায়গাটায়।

স্টেইট ইউনিভার্সিটি, অর্থাৎ রাজ্য সরকারের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন কম। যেমন, ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ে এক সেমিস্টারে খরচ পড়ে প্রায় ৩ থেকে ৬ হাজার
ডলার, তবে বিদেশী ছাত্রদের জন্য বেশি চার্জ সহ মোট ফি প্রায় ১০/১২ হাজার ডলারের মতো। আর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেই ফি এর পরিমাণ বেড়ে যাবে
অনেকখানি। আমার এক সময়ের কর্মস্থল জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব দিতে পারি, এখানে মাস্টার্স পর্যায়ে প্রতি সেমিস্টারের ফি প্রায় ২২ থেকে ২৫ হাজার ডলার।
তবে অনেক জায়গায় বিশেষ করে আমেরিকার দক্ষিণের দিকে টিউশন ফি অনেক কম। আমার এখনকার কর্মস্থল ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালাবামাতে প্রতি সেমিস্টারে আউট
অফ স্টেট ফি ৯ হাজার ডলারের মতো। মোট ৩ সেমিস্টারে মাস্টার্সের কাজ সারতে পারলে মোট খরচ আসলে ৩০ হাজারের নিচেই পড়বে।

মাস্টার্সে ১ম সেমিস্টারে ভালো কাজ দেখিয়ে প্রফেসরের কাছ থেকে রিসার্চ অ্যাসিস্টান্টশিপ (আরএ) যোগাড় করতে পারলে টিউশন মাফ হতে পারে, আর বেতনও পাওয়া
যেতে পারে। আবার ফান্ডিং না পেলেও ক্যাম্পাসে এটাসেটা কাজ করে অনেকেই কিছুটা কাজ চালিয়ে নিচ্ছে দেখেছি।

পক্ষান্তরে, পিএইচডিতে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই ফান্ড দেয়া হয়, টিচিং/রিসার্চ অ্যাসিস্টান্টশীপ বা ফেলোশীপের মাধ্যমে। এর সাথে টিউশন ফীও মাফ করা হয়। যা বেতন
দেয়া হয়, তা খুব বেশি না, তবে এদিক সেদিক করে বিদেশী ছাত্ররা ভালোই থাকতে পারে।

মাস্টার্সে ফান্ড দেয়া কম হয় বলে ভর্তি র কড়াকড়িও কম, অ্যাডমিশন পাওয়া সহজ। মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের ভর্তি র সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ে আমরা জিআরই চাই না
ইউএবিতে, আবার টোফেলও মোটামুটি হলেই চলে। পক্ষান্তরে পিএইচডির অ্যাডমিশন পাওয়াটা কঠিন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই কয়েকশ মাস্টার্স ছাত্র থাকে, কিন্তু পিএইচডি
ছাত্র নেয়া হয় জনা দশেক/বিশেক প্রতি বছরে।

(ইদানিং আমার ইউনিভার্সিটি (UAB) এ প্রচু র এশিয়ার ছাত্র আসছে, তাদের কেউ ফান্ড নিয়ে আসে নাই। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের বোকামি নিয়ে আমার
আক্ষেপের অন্ত নাই, বাংলাদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই ভারতীয়/চীনা/পাকিস্তানী শিক্ষার্থীদের সমান বা অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো বেশি মেধাবী, কিন্তু ফান্ডিং না পেলে
পড়বো না এই গোঁ ধরে থাকায় তারা দেশেই পড়ে আছে, যেখানে বাকি দেশের ছেলেপেলে দেড় বছরে মাস্টার্স সেরে ফেলে চাকু রিতে ঢু কে যাচ্ছে অনায়াসে। এরা ফান্ড পায়
কৈ? তা নিয়ে আরেকদিন লিখবো, আসল ঘটনা হলো এরা এক সেমিস্টারের খরচ যোগাড় করে এসে পড়ে, কারণ জানা কথা একবার এসে পড়তে পারলে এটা সেটা করে
ফান্ডিং মিলবেই।)

২) সময়
মাস্টার্সে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই বছর। আর পিএইচডিতে জায়গা ভেদে ৫ থেকে ৭ বছর (যদিও UAB তে আমার অধীনে কাজ করা আমার দুই তু খোড় ছাত্র সরাসরি
পৌনে চার বছরে পিএইচডি করেছে বটে, তবে তারা ব্যতিক্রম)। কাজেই ভেবে নিন, আপনার হাতে এতোটা সময় আছে কি না। জব মার্কে টের অবস্থা পাল্টায় নিয়মিত। আর
বিষয়ও পাল্টে যায় -- আজ যে বিষয়টি একেবারে হট টপিক, ৫ বছর পরে সেটার কথা ভু লে যেতে পারে সবাই।

(নতু ন যোগ করি, আমার ৬ বছরের অধ্যাপনা জীবনে দেখলাম, উদ্যমী ছেলেপেলে দেড় বছরে মাস্টার্স শেষ করে ফেলছে। আজকে এক ভারতীয় ছাত্রের সাথে কথা হলো,
সে ২০১৬ এর ফল সেমিস্টারে শুরু করেছিলো। এখন জানালো তার এই সেমিস্টারেই মাস্টার্সের কোর্সওয়ার্ক শেষ, এখন চাকু রি খুঁজছে। বলাই বাহুল্য, কম্পিউটার
প্রোগ্রামার হিসাবে চাকু রি এটা হোক সেটা হোক সে পেয়ে যাবে অচিরেই। দেড় বছরের মধ্যে ডিগ্রি সহ প্রতিষ্ঠা। এই ব্যাপারটা অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যদি
আপনার একাডেমিয়াতে যাবার ইচ্ছা না থাকে, লক্ষ্য যদি হয় ইন্ডাস্ট্রির চাকু রি, তাহলে মাস্টার্স করাই ভালো। দুই ডিগ্রির মাঝে সময়ের পার্থক্য ৩ থেকে ৬ বছর। যদি পাস
করে কোনো কোম্পানিতেই যোগ দেন এন্ট্রি লেভেলে, পিএইচডি অতিরিক্ত খুব একটা কাজ দেবে না, বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া (আর অ্যান্ড ডি ল্যাব, রিসার্চ ল্যাব ইত্যাদি
বাদে)। কাজেই কেবল ডক্টর তকমা লাগাবার এই সময়টা ছাত্রবেতনে কাটিয়ে পরিবারপরিজন ও নিজেকে অর্থকষ্টে রাখার মানেই হয় না। বিশেষ করে যখন দেখবেন আপনি
৬/৭ বছর পিএইচডি করে দারিদ্রসীমার নীচে বৌবাচ্চাদের রাখছেন যেখানে আপনার পাশের অনেকেই বুদ্ধি করে মাস্টার্স নিয়ে সম্মানজনক বেতনের চাকু রিতে আছে দুই
বছরের মাথায়।)

৩) খাটু নি

মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ের খাটু নির মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। মাস্টার্সের কোর্স রিকয়ারমেন্ট পিএইচডির প্রায় অর্ধেক, আর থিসিসের পার্থক্যও বিশাল। মাস্টার্সের
থিসিস প্রায় ক্ষেত্রেই একটি মাত্র প্রজেক্ট নির্ভ র, যেখানে পিএইচডি থিসিসে একাধিক রিসার্চ পেপারের কাজ নিয়ে বেশ বড় আকারের কাজ করতে হয়। এক সেমিস্টার
খেটেই এক্সপেরিমেন্ট সহ মাস্টার্স থিসিস অনেকে লিখে ফেলে, যেখানে পিএইচডির গবেষণা শেষ হবার পরে থিসিস লিখতেই অনেকের এর চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে।
আবার অধিকাংশ মাস্টার্স প্রোগ্রামেই নন থিসিস অপশন থাকে। আমার ইউনিভার্সিটিতে (UAB) সেটাই প্রায় সবাই করে।

কাজেই কয়েক বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করার মতো উদ্যম বজায় রাখতে পারবেন কি না, সেটা আগেই ভেবে দেখুন। সেশন জটের কল্যাণে বাংলাদেশ থেকে আসা গ্রাজুয়েট
স্টু ডেন্টরা অনেকেই ২৫+ বয়সের, পিএইচডি করতে করতে ৩০-৩৩+ হয়ে যায়, সেই বয়সে পড়া/পরীক্ষা দেয়ার মতো তেজ আছে/থাকবে কি আপনার? হয়তো আছে, তবে
অনেকেরই আর উদ্যমটা থাকে না।

৪) চাকু রি

আপনার লক্ষ্য যদি হয় কোনো মার্কি ন কোম্পানিতে চাকু রি পাওয়া, তাহলে তার জন্য মাস্টার্স করাই যথেষ্ট। অধিকাংশ চাকু রির জন্য মাস্টার্স ডিগ্রি হলেই চলে। আর ২ বছর
পড়েই চাকু রির বাজারে ঢু কতে পারছেন, যা বড় একটা সুবিধা।

অনেক চাকু রিতেই পিএইচডি থাকাটা কোনো অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসাবে ধরা হয় না। উদাহরণ দেই - গুগলে বিএসসি, মাস্টার্স, বা পিএইচডি সব রকমের লোকজনই নেয়া
হয়। মাস্টার্সের চাইতে পিএইচডিতে ৩ থেকে ৪ বছর সময় বেশি লাগে। কাজেই আজ যিনি মাস্টার্স নিয়েই ঢু কছেন সেখানে, ৩/৪ বছর পরে স্টক অপশন, বেতন, আর
বোনাস সব মিলে কয়েক মিলিয়ন ডলার এগিয়ে থাকবেন। অধিকাংশ টেক কোম্পানিতেই পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে শুরুতে অল্প একটু বেশি বেতন থাকে, কিন্তু ৩/৪ বছর
আগে যোগ দেয়া মাস্টার্স ডিগ্রিধারীরা সেই সময়টাতে তার চেয়ে অনেক বেশিই সুবিধা পেয়ে গেছে। গুগলে যখন ইন্টার্নশীপ করতাম, তখন অনেক গ্রুপের ম্যানেজারকে
দেখেছি মাস্টার্স বা ব্যাচেলর্স করা, যেখানে তাদের অধীনে কাজ করা অনেকেই আবার পিএইচডি করা। কাজেই চাকু রির বাজারের অনেক জায়গাতেই পিএইচডি বা
মাস্টার্সের কোনো পার্থক্য নেই।হাতে নাতে দেখা কিছু উদাহরণ দেই, গুগলে দেড় বছরে মাস্টার্স পাশ করেও অনেকে ঢোকে (আমার ছাত্রই ঢু কেছে), আবার নামকরা টপ
ইউনি থেকে ৭ বছরে পিএইচডি করেও ঢোকে, তাদের এন্ট্রি লেভেলের পজিশনে বেতনের পার্থক্য বছরে মাত্র ১০-১৫ হাজার ডলার মাত্র। আর ঢোকার পর দেখা যাবে বস
হয়তো কেবল ব্যাচেলর্স করা বা মাস্টার্স করা, পিএইচডি করার কারণে অতিরিক্ত সম্মান/সুবিধা অধিকাংশ কোম্পানিতেই নাই।

অবশ্য একাডেমিক ও রিসার্চ লাইনে আবার পিএইচডি অপরিহার্য। কাজেই আপনার লক্ষ্য যদি হয় একাডেমিক বা রিসার্চ লাইনে থাকা, সেক্ষেত্রে পিএইচডি করতেই হবে

তাহলে কী জিনিষ বিবেচনা করবেন????

- আপনার মূল লক্ষ্য কী -- রিসার্চ /একাডেমিক লাইন, নাকি চাকু রি? (প্রফেসর হতে চাইলে পিএইচডি করেন, নাইলে সময় নষ্ট না করে মাস্টার্সে যান)

- ফান্ড পাবেন কি পাবেন না? ফান্ড না পেলে টিউশন ফি অন্তত ১ম সেমিস্টারে দিতে পারবেন কি?

- ৫/৬ বছর আরো পড়ার ধৈর্য্য আছে কি? বয়স আছে কি? (নাকি দেড়-দুই বছরে মাস্টার্স করে কাজে নামতে চান?)

সব বিচার করে বেছে নিন, পিএইচডি নাকি মাস্টার্স, কোনটিতে আবেদন করবেন। উল্লেখ্য, একবার একটা বেছে নিলে অন্যটাতে যেতে পারবেন না, তা কিন্তু না। দরকার হলে
পরেও প্রোগ্রাম পাল্টানো যায়, যদিও সেটা সময়সাপেক্ষ।
14) - পিএইচডি - কী করবেন, কী করবেন না

এই লেখাটি যখন লিখছি, তখন ফল সেমিস্টারে ভর্তি র সিদ্ধান্ত এসে গেছে সবার কাছে, অনেকেই পিএইচডি করতে যাচ্ছেন আর কয়েক মাস পরেই। আপনাদের জন্যই এই
লেখাটি লিখছি।

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা সিরিজের পাঠকদের কাছ থেকে অনুরোধ পেয়েছি, পিএইচডি করার সময়ে কী করবেন, কী করবেন না, এরকম কিছু নিয়ে যেন লিখি। আজকের
লেখার বিষয়বস্তু সেটাই।

(১) প্রস্তুতি -- আপনি আগে যেসব ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করেছেন, ব্যাচেলর্স কিংবা মাস্টার্স, তাদের সবার চাইতে পিএইচডি ডিগ্রির পড়াশোনাটা আলাদা। কারণ হলো
অন্যান্য ডিগ্রিগুলো মূলত কোর্স ভিত্তিক -- অনেক সময় থিসিস অপশন থাকে বটে, কিন্তু মূল গুরুত্বটা কোর্সের উপরেই। পক্ষান্তরে পিএইচডি করার সময়ে মূল গুরুত্ব হলো
গবেষণার উপরে -- আপনার জিপিএ কতো, তা কিন্তু কেউ দেখবে না, বরং দেখবে আপনার গবেষণা কেমন এবং তার উপরে কয়টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে পেরেছেন।
কাজেই শুরু থেকেই বুঝতে হবে, আপনি এই পর্যায়ে গবেষণা করতে এসেছেন। গবেষণা কাকে বলে, কীভাবে শুরু করবেন, সেটা আপনার এডভাইজর শেখাবেন আস্তে
আস্তে, কিছু কোর্সও করতে হবে, তবে আগে থেকে কিছুটা আইডিয়া নিয়ে গেলে ভালো। আর মানসিকতাও পাল্টাতে হবে। গবেষণাকে অবহেলা করে কোর্সের উপরে
কেবল জোর দিলে আপনি পিএইচডি শেষ করতে পারবেন না।

গবেষণার ব্যাপারে তাই আগে থেকে কিছু ধারণা নিয়ে যান। আমার টাইমলাইনে বা গবেষণায় হাতে খড়ি বইটিতে এই সংক্রান্ত বেশ কিছু দিকনির্দে শনা দিয়েছি, সেটা দেখে
নিতে পারেন। (বই এর বিজ্ঞাপন দিচ্ছি না, হা হা হা, বইটা সংগ্রহ না করতে পারলে বইয়ের ফেইসবুক পেইজে গেলে এমনিতেই বইয়ের নানা লেখা পেয়ে যাবেন)।

(২) সময় ব্যবস্থাপনা -- টাইম ম্যানেজমেন্ট অনেক বড় একটা ব্যাপার, আর পিএইচডি করার সময়ে সেটার কথা খেয়াল রাখাটা আরো বেশি বেশি দরকার। পিএইচডি করার
সময়টাতে আসলে অনেক সময়েই একটা বদ্ধ কু য়ায় আটকে পড়ার দশা হয় -- মাস গেলে স্টাইপেন্ড আসে, চাকু রি খোঁজার চিন্তা নাই, এডভাইজর ঢিলা হলে কাজের
তাগাদাও নাই, সকাল বেলা ল্যাবে এসে এডভাইজরকে চেহারা দেখানো, আর তার পরে কম্পিউটারের সামনে বসে দুনিয়ার সব সাইট ব্রাউজ করে বেড়ানো, এরকম গণ্ডিতে
আটকে যাওয়াটা খুবই সাধারণ ব্যাপার -- নিজের চোখে এরকম প্রচু র মানুষকে দেখেছি। লাগে ফান্ডিং দিবে এডভাইজর। কাজের চাপ কম, তাই হৈহুল্লোড় করে উইকেন্ডে
দলবেধে ঘুরাঘুরি এসব করে করে অনেকেই ভু লে যান, সময় যাচ্ছে চলে, বয়স বাড়ছে, কিন্তু পিএইডির মূল লক্ষ্যের দিকে আগানো হচ্ছে না তেমন। আমার পিএইচডির
ইউনিভার্সিটি অর্থাৎ ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আরবানা শ্যাম্পেইনে অনেককে

দেখেছি ৮ বছর পার করে ফেলতে এভাবেই, কিন্তু এই সময়টাতে কী করেছেন তার জবাব দেয়ার মতো সেরকম কোনো পাবলিকেশন নাই। এডভাইজরকে খুশি রাখতে
পারার ভ্রান্ত সাফল্যে বুঁদ হয়ে এদের সময় যাচ্ছে, গেছে চলে। একটা সময় দেখেছেন সহপাঠী সবাই পাশ করে গেছে, কিন্তু নিজে আদু ভাই (বা বোন) হয়ে পড়ে আছেন
সেখানে।

কাজেই এমনটা মোটেও হবেন না। আপনি মোটামুটি কয় বছরে পিএইচডি করতে চান, সেটা ভেবে রাখুন। আর সেটা করতে হলে কী করতে হবে, তাও জেনে নিন, দরকার
হলে কম্পিউটারের উপরে প্রিন্ট করে লাগিয়ে রাখুন, যাতে প্রতিদিন নজরে পড়ে।

(৩) সফট স্কিল -- পিএইচডির পরে চাকু রি ও ক্যারিয়ার নিয়ে লিখেছি অন্য জায়গায়, এই সব চাকু রিতেই একটা ব্যাপার আছে তা হলো সফল হতে হলে আপনার
কোর্সলব্ধ বিদ্যার বাইরেও অন্যান্য দক্ষতা লাগবে। যেমন রিসার্চ কে প্রেজেন্ট বা উপস্থাপন করার দক্ষতা, অন্য মানুষের সাথে একসাথে কাজ করার ক্ষমতা, এবং দুর্দান্ত
কমিউনিকেশন স্কিল (লিখিত বা মৌখিক)। কাজেই পিএইচডি করার সময়ে শুরু থেকেই এসব দক্ষতা অর্জ নের দিকে নজর দিন।

(৪) নিজের গণ্ডির বাইরে যাওয়া -- প্রথমবার বিদেশে এসে অনেকেরই একটা প্রবণতা থাকে, নিজের দেশের গ্রুপ খুঁজে বের করে সেখানেই মেলামেশা করে বসা। আমি
নিজেও এক সময়ে এই ভু লটা করেছি। এই গণ্ডির বাইরে বেরুতে শিখুন। কেবল বাংলাদেশী ছাত্র সমাজ খুঁজে বের করে সেখানে আটকে না থেকে তার সাথে সাথে স্থানীয়
আমেরিকান কিংবা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং এলাকার অন্যান্য মানুষের সাথেও মিশতে থাকু ন জোরেসোরে। আপনি এইখানে অন্তত ৫ বছর থাকবেন, আর ক্যারিয়ারও
হয়তো করবেন আমেরিকাতেই। কাজেই নানা দেশের নানা রকমের মানুষের সাথে মেশার অভ্যাসটা করুন। আরামের জন্য আড্ডার লোভে বাংলাদেশীদের মধ্যে আটকে
থাকলে কু য়ার ব্যাঙের মতোই অবস্থা হবে। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে সবার সাথে মিশুন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে,
তাতে অংশ নিন, বন্ধু বাড়ান নানা দেশের।

15)- পিএইচডি -- তারপর কী? - প্রথম পর্ব ~

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে প্রচু র লেখালেখি হয়, আমি নিজেও এ নিয়ে অনেক লিখেছি। কিন্তু একটা বিষয়ে খুব বেশি আলোচনা দেখি না, তা হলো উচ্চশিক্ষা যেমন
পিএইচডি এর পরে কীভাবে ক্যারিয়ার গড়তে হবে। এ নিয়েই আজকের এই লেখা।

স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আমেরিকায় দুইটি অপশন -- মাস্টার্স, অথবা পিএইচডি। ডিগ্রি শেষ হবার আগে থেকেই চাকু রি খোঁজার কাজটা শুরু করতে হয়, কারণ চাকু রির
ইন্টারভিউ থেকে শুরু করে অফার পাওয়া এবং কাজ করার অনুমতি অর্জ ন পর্যন্ত বেশ অনেকদিন সময় লেগে যায়। তাই যদি কেউ স্প্রিং সেমিস্টারে পড়া শেষ করেন,
তাহলে মোটামুটি আগের বছরের ফল সেমিস্টার থেকে চাকু রি খুঁজতে হবে। পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের জন্য চাকু রির বাজারটা একটু ছোট। মানে কোয়ালিফিকেশন অনুসারে
চাকু রি চাইলে সুযোগের সংখ্যাটা কম। আমেরিকার অধিকাংশ কোম্পানিতেই মাস্টার্স লেভেলের ডিগ্রি হলেই চলে, পিএইচডির খুব একটা দরকার নাই। এই কথাটা রিসার্চ
ল্যাব আর ইউনিভার্সিটি বাদে মোটামুটি সব কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য। পিএইচডি করার পরে কোথায় চাকু রি করবেন সেটা আগে ঠিক করেন। এক সাথে একাধিক দিকে
চেষ্টা চালাতে অসুবিধা নাই।

পিএইচডি ধারীরা সাধারণত একাডেমিয়া, রিসার্চ ল্যাব, বা ইন্ডাস্ট্রি -- এই তিনটি জায়গায় যথোপযুক্ত চাকু রি পেতে পারেন। দেখা যাক কোথায় কীভাবে নিয়োগ হয় --

১) একাডেমিক চাকু রি -- প্রায় সব পিএইচডি শিক্ষার্থীরই স্বপ্নের সোনার হরিণ হলো টেনিউর ট্র্যাক একাডেমিক চাকু রি। পিএইচডি শেষ করার পরে সরাসরি অথবা কয়েক
বছর পোস্ট ডক করে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসাবে টেনিউর ট্র্যাকের চাকু রিতে যোগ দেয়া যায়। তার পরে ৬ বছর গবেষণা ও শিক্ষকতায় ভালো কাজ দেখালে এবং রিসার্চ
গ্রান্ট / ফান্ডিং বাগাতে পারলে টেনিউর পাওয়া যায় এবং মোটামুটি সারাজীবনের জন্য পাকা চাকু রি পাওয়া যায়। আর একাডেমিক চাকু রির সম্মানও অনেক। বেতনের দিক
থেকে কোম্পানির চাকু রির চাইতে কিছুটা কম হলেও নানা সুযোগ সুবিধার বিচারে একাডেমিক চাকু রির তু লনা নাই --- আর গবেষণা করাটা পেশার সাথে সাথে যাদের
নেশাও বটে, তাদের জন্য প্রফেসর হিসাবে চাকু রি করাটা সবচেয়ে ভালো।

নানা ইউনিভার্সিটিতে টেনিউর ট্র্যাক বা টিচিং/রিসার্চ প্রফেসর হিসাবে চাকু রি পেতে হলে পিএইচডি শেষের বছরখানেক আগে থেকে প্রক্রিয়াটা শুরু করতে হয়। আপনার
রিসার্চ ফিল্ডের নানা ম্যাগাজিন/সোসাইটি ইত্যাদির সাইটে চাকু রির বিজ্ঞাপন পাবেন। যেমন কম্পিউটার সাইন্সে কম্পিউটিং রিসার্চ এসোসিয়েশন (CRA) এর সাইটে এসব
প্রফেসর চাকু রির বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়। সিভি, রিসার্চ /টিচিং স্টেটমেন্ট, কাভার লেটার এগুলো সহ আবেদন করতে হয়, তার সাথে দিতে হয় ৩-৪টি রেফারেন্স লেটার।
সিলেকশন কমিটি এসব আবেদন দেখে প্রথমে ফোন ইন্টারভিউ এবং পরে অন সাইট ইন্টারভিউতে ডাকতে পারে। অন সাইট ইন্টারভিউতে মূলত রিসার্চে র উপরে একটি
লেকচার, এবং কখনো কখনো ক্লাস লেকচার দিতে হয়। আর সারাদিনের বাকিটা সময় থাকে সার্চ কমিটি বা অন্যান্যদের সাথে ইন্টারভিউ। এমনকি ব্রেকফাস্ট/লাঞ্চ বা
ডিনারের সময়েও গল্পের ছলে ইন্টারভিউ চলে। (এই নিয়ে বিস্তারিত আরেক লেখয় লিখবো)। অধিকাংশ জায়গায় ফল থেকে শুরু করা একাডেমিক চাকু রির ইন্টারভিউ
জানুয়ার-মার্চ এর মধ্যে হয়ে যায়। এগুলো অবশ্য টেনিউর ট্র্যাকের জন্য -- টিচিং বা রিসার্চ প্রফেসর -- যা আসলে অস্থায়ী পদ, সেগুলোর জন্য আলাদাভাবে ইন্টারভিউ
হতে পারে অন্য সময়েও। আর সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পরিচিত লোকজনের মাধ্যমে হয়, যেমন কনফারেন্সে কোনো প্রফেসরের সাথে দেখা হবার পরে তাঁকে অনুরোধ করে
বা আপনার এডভাইজরের যোগাযোগের মাধ্যমে এগুলো অনেক সময়ে পাওয়া যায়।

তবে কিছু তিক্ত সত্য জানিয়ে রাখি -- একাডেমিক টেনিউর ট্র্যাক চাকু রি পাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার হয়ে গেছে। প্রতিটি পদের বিপরীতে প্রায় ৪০০-৫০০টি আবেদন আসে।
এর মধ্যে প্রাথমিক ফোন বাছাইতে সুযোগ পেতে হলে আসলে আপনার এপ্লিকেশনটাকে কারো ঠেলা দেয়া লাগবে -- সেটা করার জন্য আপনার পিএইচডি এডভাইজর
হলো মোক্ষম ব্যক্তি। আর আপনার পরিচিত থাকলে একটু ঠেলা দিলে প্রাথমিক বাছাইতে সামনে আসতে পারেন। কিন্তু যাই হোক, প্রতি বছর যত পিএইচডি ডিগ্রি দেয়া হয়,
তার মাত্র ১০-১৫% প্রাপক একাডেমিক টেনিউর ট্র্যাকের চাকু রি পান। সেই সংখ্যাও কমছে। আর অনেক ক্ষেত্রেই সদ্য পিএইচডি পাশ করা কারোর বদলে কয়েক বছর
পোস্টডক করাদের প্রাধান্য দেয়া হয়। কাজেই চরম ধৈর্য এবং অধ্যবসায় এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থাকতে হবে একাডেমিক টেনিউর ট্র্যাক চাকু রি পেতে হলে।

একাডেমিক চাকু রি পেতে হলে কী করতে হবে? প্রথমত -- ভালো মানের গবেষণা করতে হবে, নামকরা কনফারেন্স বা জার্নালে পেপার ছাপাতে হবে। সংখ্যার চাইতে মানটা
গুরুত্বপূর্ণ। তাই পিএইচডি করার সময়ে দরকার হলে সময় নিয়ে ভালো কাজ করুন। দ্বিতীয়ত -- আপনার এডভাইজরও বাছতে হবে দেখে শুনে। ইউনিভার্সিটির পরিচিতির
পাশাপাশি আপনার এডভাইজর কেমন নাম করা সেটা গুরুত্বপূর্ণ। তৃ তীয়ত -- নেটওয়ার্কিং করতে হবে। এবং চতু র্থত -- ইন্টারভিউতে গেলে সেখানে সবাইকে পটাতে হবে
ভালো লেকচার দিয়ে আর কথোপকথনে সঠিকভাবে প্রফেশনাল কিন্তু বন্ধু ত্বপূর্ণ আচরণ করে। খুব ভালো রিসার্চ করেছে কিন্তু আচার আচরণে অপেশাদার কিংবা অভদ্র
এরকম হলে কাজ হবে না। ইন্টারভিউ এর পুরো সময়টাতেই সবাইকে ভালো করে বিমুগ্ধ করতে হবে সবভাবে।

~ আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা -- পিএইচডি -- তারপর কী? - দ্বিতীয় পর্ব ~

পিএইচডি ডিগ্রির পরে ক্যারিয়ার হিসাবে একাডেমিক চাকু রি নিয়ে বলছিলাম আগের পর্বে। একাডেমিক চাকু রি আবার বেশ কয়েক রকমের হতে পারে -- টেনিউর ট্র্যাক
ফ্যাকাল্টি (প্রফেসর), নন-টেনিউর ট্র্যাক টিচিং বা রিসার্চ ফ্যাকাল্টি (প্রফেসর বা সাইন্টিস্ট), অথবা স্বল্পমেয়াদী পোস্ট ডক্টোরাল ফেলো।

এগুলোর মধ্যে পার্থক্যটা একটু বলা দরকার। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে টেনিউর সিস্টেম চালু। টেনিউর হচ্ছে অনেকটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো। মানে চাকু রি আজীবন
পাকা করার ব্যবস্থা। যেসব প্রফেসরের টেনিউর আছে, তাঁদের চাকু রি যাবার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। আমেরিকার আর কোনো চাকু রিতে এরকম জব সিকিউরিটি নাই --
অন্যান্য এলাকা যেমন কোম্পানির চাকু রিতে যেমন লে-অফ এর মাধ্যমে ছাঁটাই হবার আশংকা থাকে, সেখানে টেনিউর প্রাপ্ত প্রফেসররা কেবল মাত্র চারিত্রিক স্খলন বা
এরকম গুরুতর অপরাধ, ইউনিভার্সিটির পুরো ডিপার্ট মেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়া, এসব কারণেই কেবল চাকু রি হারাতে পারেন। তবে টেনিউরের এই নিরাপত্তা পেতে হলে অনেক
কষ্ট করতে হয় বটে -- অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসাবে যোগ দেয়ার পর প্রথম ৬ বছর প্রচন্ড খেটেখুটে গবেষণা, শিক্ষা, এবং প্রশাসনিক নানা কাজে দক্ষতা প্রমাণ করতে হয়,
পেতে হয় বড় অংকের ফান্ডিং/গ্রান্ট। এসবের পরে টেনিউর রিভিউ এর বৈতরণী পেরুতে পারলে মিলে টেনিউর। তাই টেনিউর ট্র্যাকের চাকু রির প্রথম ৬ বছর বেশ
খাটাখাটু নি যায়।
প্রফেসর হিসাবে ক্যারিয়ারের সুবিধা অসুবিধা দুইটাই আছে। অসুবিধার মধ্যে আছে কাজের কোনো সময় অসময় না থাকা -- নিজের খাতিরেই হয়তো রাতে বা সপ্তাহান্তে
কাজ করতে হয়। অন্যান্য কোম্পানির চাকু রিতে যেমন ৫টার সময় অফিস থেকে বেরুলেই কাজ শেষ, প্রফেসরদের কাজ আসলে কেবল পেশা না নেশাতেও পরিণত হয়,
ফলে বাসায় ফিরেও হয়তো সময় বের করে পেপার লেখা, গ্রান্ট প্রপোজাল লেখা, অথবা কোর্স গ্রেডিং/শিক্ষার্থীদের ইমেইলের জবাব দেয়ার কাজ করতে হয়। প্রফেসরি তাই
দিনে আট ঘণ্টার কাজ না, বরং এটা একটা লাইফস্টাইলে পরিণত হয়।

কিন্তু সুবিধা? প্রচু র সুবিধা আছে। অনেকেরই ধ্যান-জ্ঞান সবই হয় গবেষণাকে ঘিরে, আর প্রফেসর হিসাবে এই কাজটা অনেক ভালো করে করা চলে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ
ল্যাবে যেমন কোম্পানির সুবিধামত বাণিজ্যিক লাভ আছে এমন কাজই কেবল করা যায়, প্রফেসর হিসাবে স্বাধীনতা অনেক। আর শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়মিত মেশা, তাদের
জীবন গড়তে সাহায্য করা, এসব তো অমূল্য। এর পাশাপাশি অন্যান্য অনেক স্বাধীনতা আছে -- যেমন আটটা-পাঁচটা অফিস ঘড়ির কাঁটা ধরে করার বাধ্যবাধকতা নাই,
প্রায় সব প্রফেসরই নিজেই নিজের বস, কাজেই সময় ম্যানেজ করাটা নিজের উপরেই। আর সামারে কিংবা উইন্টার ভ্যাকেশনের সময়ে অলিখিতভাবে অনেক ছুটি মেলে
(যদিও প্রায় সব প্রফেসরই নিজের তাগিদে এই সময়টাতেও কাজ করেন গবেষণায়, সেটা অন্য ব্যাপার)। বসের আধিক্য নাই -- অধিকাংশ জায়গাতেই একজন প্রফেসরের
মোট তিন বা চার জন বস থাকে -- ডিপার্ট মেন্ট চেয়ার, ডিন, প্রভোস্ট, আর ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট। তাও অনেকটাই ইনফর্মাল -- ম্যানেজার এসে ধমকাচ্ছে, ছড়ি
ঘুরাচ্ছে এসবের ব্যাপার নাই।

বেতনের দিক থেকে অধ্যাপনার বেতন কোম্পানির চাকু রির বেতনের চাইতে একটু কম কাগজে কলমে, কারণ কোম্পানির চাকু রির বেতন বলা হয় ১২ মাসের হিসাবে, আর
প্রফেসরদের চাকু রির বেতন ৯ মাসের হিসাবে। সামারের ৩ মাসে অবশ্য প্রফেসরেরা বেকার থাকেন না -- প্রায় সবাইই সামার কোর্স নিয়ে অথবা রিসার্চে র ফান্ড থেকে সামারে
বেতন যোগাড় করে থাকেন। ফলে সেটা যোগ করার পরে প্রফেসরদের বেতন কোম্পানির চাকু রির কাছাকাছি পৌছে যায় বটে।

আর অধিকাংশ স্টেট ইউনিভার্সিটিতে বেশ ভালো রকমের পেনশন ও বেনিফিটস প্যাকেজ থাকে -- যার ফলে রিটায়ার করার পরে ভালো অংকের পেনশন পাবার
নিশ্চয়তা থাকে। তাছাড়া স্বাস্থ্যবীমা সহ নানা

সুযোগ সুবিধা অনেক। আর ইউনিভার্সিটির শহরে থাকা খাওয়া সহ জীবনযাপনের খরচও কম হয় বলে বড় শহরের কোম্পানির চাকু রির চাইতে আসলে এক দিক থেকে
প্রফেসরদের বেতনের ক্রয়ক্ষমতা বরং বেশিই হয়। আর সব শেষে বলতে পারি ইমিগ্রেশনের সুবিধা -- ইউনিভার্সিটির এইচ-ওয়ান-বি এর কোটার ঝামেলা নাই, যে কোনো
সময়েই আবেদন করা যায়, আর ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে গ্রিনকার্ড পাওয়াটাও বেশ সহজ -- ইউনিভার্সিটির অফিসই সব কাজ করে দেয়। কাজেই সব মিলিয়ে টেনিউর
ট্র্যাকের প্রফেসরের চাকু রিটা আমেরিকায় যেমন অত্যন্ত সম্মানের, তেমনই অন্যান্য সুবিধার দিক থেকে অতু লনীয়। তবে এই কারণে এই চাকু রির সংখ্যাও কম এবং এরকম
চাকু রি পাবার প্রতিযোগিতাও অনেক বেশি।

নন টেনিউর ট্র্যাকে কন্ট্রাক্ট বেসিসে টিচিং ফ্যাকাল্টি নেয়া হয় অনেক জায়গাতেই। এসব চাকু রির টাইটেল হয় টিচিং প্রফেসর। এক্ষেত্রে টেনিউরের সুবিধা নাই আর প্রতি
সেমিস্টারে ৩/৪টি করে কোর্স পড়াতে হয়। তবে রিসার্চ করার বাধ্যবাধকতা নাই। অনেকেই এই দিকে যান প্রতিযোগিতা কম বলে আর পড়াতে ভালো লাগে বলে। এর সাথে
সাথে নন-টেনিউর ট্র্যাকে রিসার্চার পজিশনও থাকে, রিসার্চ প্রফেসর অথবা সাইন্টিস্ট হিসাবে নিয়োগ পাওয়া যায় ইউনিভার্সিটিতে। তবে এই পদগুলো প্রায় সব ক্ষেত্রেই
গ্রান্ট নির্ভ র মানে রিসার্চ সেন্টারের ফান্ডিং এর উপরে পদ থাকা না থাকা নির্ভ র করে। বড় ইউনিভার্সিটিতে ভালো ফান্ডিং সহ রিসার্চ সেন্টার থাকে, যেখানে বহু এরকম
রিসার্চ প্রফেসর বা সাইন্টিস্ট নিয়োগ করা হয়। এদের পড়ানোর বাধ্যবাধকতা নাই, পুরোটা সময় দিতে হয় গবেষণাতেই।

একাডেমিক চাকু রির মধ্যে সবশেষে বলবো পোস্ট ডক্টোরাল ফেলো হিসাবে চাকু রির কথা। এগুলো মূলত পিএইচডি করার পরে নানা প্রফেসরের অধীনে গবেষক হিসাবে
কাজ করার খণ্ডকালীন (১, ২, বা ৪ বছরের) চাকু রি। প্রফেসরেরা নানা প্রজেক্টে সাহায্যের জন্য পিএইচডিধারী গবেষক খোঁজেন। ল্যাবে সিনিয়র রিসার্চার হিসাবে কাজ করার
জন্য পোস্ট ডক্টোরাল ফেলো হিসাবে কাজ শুরু করা যায়। অনেক বিষয় যেমন বায়োলজি সংক্রান্ত বিষয়ে একাডেমিক লাইনে যেতে হলে পোস্ট ডক করাটা প্রায়
বাধ্যতামূলক। আবার কম্পিউটার সাইন্সে বাধ্যতামূলক না হলেও অভিজ্ঞতা অর্জ ন এবং কাজ শেখার জন্য অনেকেই আজকাল ১/২ বছর পোস্টডক করছেন। এরকম
চাকু রি পাওয়াটা বেশ সহজ। প্রথাগত ইন্টারভিউ লাগে না, মূলত নিয়োগকারী প্রফেসরের সাথে খাতির করতে পারলেই এরকম চাকু রি পাওয়া সম্ভব। তবে সমস্যা হলো
এগুলো অস্থায়ী চাকু রি -- সবাই জানে যে ১ বা ২ বছর, বা বড়জোর ৪ বছর পোস্ট ডক করবে তার পরে স্থায়ী চাকু রি খুঁজে নিবে। তবে পাশ করার পরে পরে চাকু রি নিয়ে
মাথা ঘামাবার চাইতে বছর কয়েক পোস্টডক করে নিলে নতু ন ইউনিভার্সিটির ব্র্যান্ডিঙ্গটা কাজে লাগতে পারে, আর ধীরে সুস্থে টেনিউর ট্র্যাকের চাকু রি পাওয়ার সময়ও
মেলে। বেতনটা বেশ কম। অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসরদের অর্ধেকের মতো হয়। তবে যেকোন সময়েই এই চাকু রি পাওয়া সম্ভব যদি নিয়োগকারী প্রফেসর রাজী থাকেন, তাই
স্বল্পমেয়াদী চাকু রি হিসাবে পিএইচড করার পরে পোস্ট ডক মন্দ নয়।

~ আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা -- পিএইচডি -- তারপর কী? তৃ তীয় পর্ব ~

আমরা এখন পর্যন্ত দেখেছি পিএইচডি করার পরে একাডেমিক চাকু রির কী কী অপশন আছে। এবারে দেখা যাক একাডেমিয়ার বাইরে আর কী কী সুযোগ আছে।

রিসার্চ ল্যাব -- পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের একটা বড় গন্তব্য হলো রিসার্চ ল্যাব বা গবেষণাগার। সরকারী বা বেসরকারী প্রচু র রিসার্চ ল্যাব আছে যাদের বড় কাজ হলো রিসার্চে র
পিছনে সময় দিয়ে নতু ন কিছু আবিষ্কার করা।
আমেরিকার সরকারের অনেকগুলো ন্যাশনাল ল্যাব আছে -- এগুলো প্রচন্ড মর্যাদাকর ও বিখ্যাত জায়গা। যেমন লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাব, লরেন্স বার্ক্লে ল্যাব,
আরাগোন ন্যাশনাল ল্যাব, ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাব, প্যাসিফিক-নর্থওয়েস্ট ন্যাশনাল ল্যাব ইত্যাদি। এসব ল্যাবে বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে গবেষণা হয়ে থাকে। সেজন্য
পিএইচডি ডিগ্রিধারী গবেষক ও বিজ্ঞানীদের কাজের সুযোগ আছে। ন্যাশনাল ল্যাবের সুবিধা হলো সুনাম -- প্রতিটি ন্যাশনাল ল্যাবই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নামকরা প্রতিষ্ঠান।
আর এখানকার চাকু রির নিরাপত্তাও বেশ ভালো। ব্যবসায়িক ল্যাব না হওয়ায় অনেক বিষয়ে মৌলিক গবেষণার সুযোগ আছে। অসুবিধার দিক হলো কিছু কিছু ল্যাবে নানা
রকমের গোপন গবেষণা চলে বলে সেখানে কাজ কেবল নাগরিক বা গ্রিনকার্ড ধারী স্থায়ী বাসিন্দারাই পারেন। তবে নন-ক্লাসিফাইড/সিক্রেট কাজও আছে।

ন্যাশনাল ল্যাব ছাড়াও নানা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নামকরা গবেষণাগার আছে। বেল ল্যাবসের নাম আমরা অনেকেই জানি, কিন্তু মাইক্রোসফট রিসার্চ ,
আইবিএম রিসার্চ , এসবের মতো মৌলিক গবেষণার প্রতিষ্ঠান আছে। এসব জায়গার সুবিধা হলো ভালো মানের গবেষণা করা যায় খুব ভালো রিসার্চারদের সাথে। সামারে
সাহায্য করার জন্য পাওয়া যায় ইন্টার্ন। তবে দুই একটি জায়গা বাদে আসলে ইচ্ছামতো গবেষণা সেভাবে করা চলে না -- কোম্পানির সুবিধা হয় এমন কাজই করতে হয়।
(মাইক্রোসফট রিসার্চ বা আইবিএম রিসার্চে এক সময় ইচ্ছামতো কাজ করার অপশন থাকলেও এখন কমে এসেছে বলে শুনেছি)।

রিসার্চ ল্যাবে কাজের সুবিধার মধ্যে আছে ভালো বেতন, নানা সুযোগ সুবিধা -- যেমন কোম্পানির ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং ডেটা নিয়ে কাজ করার সুযোগ ইত্যাদি। অসুবিধার
মধ্যে ঐ যে বললাম, ইচ্ছামতো কাজ করার বদলে আসলে অনেক সময়েই কোম্পানির স্বার্থে কাজ করতে হয়। আবার অনেক সময়ে প্যাটেন্ট পাওয়ার আগে পর্যন্ত রিসার্চ
পাবলিশ করা যায় না। রিসার্চ ল্যাবে এক সময়ে ছাঁটাই হতো না, তবে ইদানিং অর্থনীতির অবস্থা খারাপ হওয়াতে অনেক ল্যাব বন্ধ হয়ে গেছে বটে।

ইন্ডাস্ট্রি -- নানা কোম্পানিতেও প্রকৌশলী বা অন্যান্য পদে পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা কাজ করতে পারেন। যেমন গুগল, ফেইসবুক, মাইক্রোসফটে প্রচু র মানুষ রিসার্চ ল্যাবের
বাইরেও ডেভেলপমেন্ট অংশে কাজ করেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে, যেসব কাজ মাস্টার্স করেই করা সম্ভব, পিএইচডি করার পরে সেসব কাজে যোগ দেয়াটা
আসলে এক অর্থে সময়ের অপচয় -- অনেক কাজে রিসার্চে র দরকার হলেও দেখা যায় যে নন-পিএইচডি বসের বা ম্যানেজারের অধীনেই দিব্যি সেসব কাজ চলছে।
কোম্পানির এরকম চাকু রিতে আসলে কার কী ডিগ্রি বা ইতিহাস আছে সেটা ব্যাপার না, কে কী কাজ পারে সেটাই ব্যাপার। তার জন্য পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা অতিরিক্ত
কোনো সুবিধা তেমন পায় না।

যাহোক, এই শ্রেণীর কাজের সুবিধা হলো ডেভেলপমেন্ট ছাড়া আর কোনো মাথাব্যথা নাই। কাজেই বাসায় ফেরার পরে কাজ নিয়ে চিন্তা নাই, পড়ানোর ঝামেলা নাই। বেতনও
অনেক ক্ষেত্রে বেশ ভালো। ছুটি/বেনিফিট/স্টক অপশন এসব তো আছেই। তবে বেতনের অংকটা আসলে বিভ্রান্তিকর -- ক্যালিফোর্নিয়ার প্রচন্ড খরুচে জায়গায় ২ লাখ
ডলার বছরে পেলেও সেটা আসলে অপেক্ষাকৃ ত কম খরচের স্টেটের ৯০ হাজার ডলার বেতনের চাকু রির চাইতে কম বেতনের এক অর্থে -- থাকাখাওয়ার খরচ হিসাব
করলে ৯০ হাজারেই অনেক ভালো করে থাকা চলে।

যাহোক -- এই গেলো পিএইচডি করার পরে আমেরিকায় কর্মসংস্থানের নানা উপায়। প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে করুন। আমি বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের মানুষ বলে এর বাইরের নানা
ক্যারিয়ারের ব্যাপারে আমি খুব একটা কাজের জবাব দিতে পারবো না, সেজন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

You might also like

  • ND
    ND
    Document1 page
    ND
    S.I. Abdallah Ibn Iqbal
    No ratings yet
  • ETEN
    ETEN
    Document1 page
    ETEN
    S.I. Abdallah Ibn Iqbal
    No ratings yet
  • Ielts 101
    Ielts 101
    Document4 pages
    Ielts 101
    S.I. Abdallah Ibn Iqbal
    No ratings yet
  • 5 H 2 W
    5 H 2 W
    Document1 page
    5 H 2 W
    S.I. Abdallah Ibn Iqbal
    No ratings yet
  • Presentation 1 Ibkjln
    Presentation 1 Ibkjln
    Document1 page
    Presentation 1 Ibkjln
    S.I. Abdallah Ibn Iqbal
    No ratings yet
  • Siri
    Siri
    Document1 page
    Siri
    S.I. Abdallah Ibn Iqbal
    No ratings yet