You are on page 1of 32

শরীরের ভাষা

শব্দ ছাড়া এই একটা ভাষাতে সেই আদিম যুগ থেকেই একে অন্যকে ইশারায় কথা
বুঝিয়েছে মানুষ। যুগে যুগে নানা প্রয়োজনে ব্যবহার করেছে ইচ্ছেমতন। তবে এই

70
শব্দহীন কথাগুলোর ভেতরেও অনেকগুলো আছে যার মানে খুব কম মানুষই
জানেন।

মানুষের আনন্দ, বেদনা বা হতাশার চিহ্ন যতটা ফু টে ওঠে মুখে, তার চেয়ে বেশি স্পষ্ট
হয়ে ওঠে তার শরীরের ভাষায়।

নীরবতারও একটা ভাষা আছে। শরীরের ভাষা নিরব । মানুষের সুখ -দুঃখ ,হাসি-
কান্না, আনন্দ- বেদনা, ভালোবাসা- ঘৃণা সবই
সফল ভাবে প্রকাশ পায় মানুষের শরীরে।

মানুষ যখন মনের কথা মুখ ফু টে বলতে পারে না তখন বলে দেয় শরীর । আমরা
বলি মুখ মনের আয়না । মনের ভাষা ফু টে উঠে শরীরের পর্দায় । মাথা থেকে পা
পর্যন্ত সব অঙ্গই মনের ভাব প্রকাশ করতে সক্ষম। যোগাযোগ বিজ্ঞানীরা বলেন
৫৫% ভাগের বেশি

মনের ভাব প্রকাশ হয় শরীরের মাধ্যমে । শরীরের ভাষা পূর্ণতা পায় ধনিতে ।

চিন্তার ভাঁজটা কপালে পড়ে সে শরীরের অংশ । ঠোট প্রকাশ করতে পারে আনন্দ

বার্তা । ফু টে উঠতে পারে কোমল হাসি ।শরীরের একেক অঙ্গ একেক ভাবের

71
প্রকাশক ।

চোখ

ভালোবাসা ও ঘৃনা দুটাই মানুষের চোখে লিখা থাকে - হুমায়ূন আহমেদ

চোখ দিয়ে আমরা দেখি । তারও ভাষা আছে । চোখের মাঝে ফু টে ওঠে কতনা

অনুভূ তি সত্য মিথ্যার খেলা , গভীর ভাব । ভালোবাসার ভাষা প্রকাশে চোখের

ভাষার তু লনা কোথায় !

মানুষের চোখ অনেক কথা বলে দেয়৷ তাই চোখের ভাষা পড়তে পারলে মানুষের মন
অনেকটা বুঝে নেওয়া যায়৷ একটি বিষয় নিয়ে যদি কোনও বেশি আগ্রহী হন তাহলে
তার চোখ স্বাভাবিকভাবে বড় হয়৷ কিন্তু চোখ বড়ো করার সঙ্গে সঙ্গে কেউ যদি
আবার চোখ ছোট করে নেন তাহলে বুঝতে হবে সে বিষয় নিয়ে সে আর আগ্রহী নয়৷
কিন্তু চোখ একটু বেশিক্ষন বড় থাকলে সে বিষয়ে তার যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে৷চোখে
চোখ রেখে কথা না বলতে পারলে দুর্বল ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব আছে বোঝা যায়।

লেখক David Junto বলেন, কোনো মানুষ পান করার সময় যখন কাপের ভেতরে
তাকায় তখন বোঝা যায় সে অন্তর্মুখী, আদর্শবাদী ও আত্মসচেতন। আর যে
কাপের প্রান্তের দিকে তাকায় সে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়, পরিবেশগতভাবে
সজাগ থাকে, ভাবনাহীন, মিশুক এবং বিশ্বাসী হয়। যে পান করতে করতে চোখ বন্ধ
করে বোঝা যায়, সে ব্যাথা বা অস্বস্তি অনুভব করছে অথবা আনন্দ ও স্বস্তি বোধ
করছে।

একটা মানুষ কি ভাবছে বা কি অনুভব করছে, এমনকি মানুষটা অনুগত নাকি


প্রতারক তাও বুঝা যায় চোখ দেখে।

72
সংকেত সম্ভাব্য অর্থ

ডানে তাকানো (সাধারণত) কথা বানাচ্ছে, মিথ্যা বলছে, গল্প তৈরি করছে

বামে তাকানো (সাধারণত) স্মরণ করছে , তথ্য পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে'

ডানে উপরের দিকে তাকানো চোখে কল্পনা করছে, কথা বানাচ্ছে, মিথ্যা
বলছে

ডানে পাশে তাকানো শব্দ কল্পনা করছে

ডানে নীচের দিকে তাকানো অনুভূ তিটা বুঝতে চাচ্ছে

বামে উপরের দিকে তাকানো ছবি কল্পনা করছে, সত্যবাদিতা

73
বামে পাশে তাকানো শব্দ স্মরণ করছে

বামে নীচের দিকে তাকানো নিজে নিজে কথা বলছে, যুক্তি তৈরী করছে

সরাসরি চোখের দিকে সততা বা মেকি সততা


তাকানো (কথা বলার সময়)

সরাসরি চোখের দিকে মনোযোগ , আগ্রহ , আকর্ষণ


তাকানো (কথা শোনার সময়)

প্রসারিত চোখ আগ্রহ , আমন্ত্রণ

74
চোখ ঘোষা অবিশ্বাস , বিপর্যস্ত , বা ক্লান্ত

চোখের মণি প্রসারিত আকর্ষণ ,আকাঙ্ক্ষা

ঘন ঘন চোখের পাতা পরা উত্তেজনা , চাপ

ভু রু উপরে তোলা অভিবাদন , স্বীকৃ তি, কৃ তজ্ঞতা

75
মুখ

হাস্যরত একজন মানুষের মুখে তার মনের ছায়া দেখা যায়।


- হুমায়ূন আহমেদ

সংকেত সম্ভাব্য অর্থ

আটকানো হাসি মেকি হাসি

টাইট ঠোঁটযুক্ত হাসি গোপনীয়তা বা অনুভূ তি গোপন করতে চাওয়া

76
পাকান হাসি মিশ্র অনুভূ তি বা বিদ্রূপ

চোয়াল ঝোলা হাসি মেকি হাসি

মাথা হেলানো , উপরের দিকে কৌতু কপূর্ণ, টিজিং , লাজনম্র


তাকিয়ে হাসি

77
কামড়ানো ঠোঁট টেনশন

দাঁতে দাঁত টেনশন, কন্ট্রোল

78
মাথা

সংকেত সম্ভাব্য অর্থ

মাথা উপর নীচ নাড়ানো রাজী, নিরপেক্ষতা , সতর্ক তা

আস্তে আস্তে মাথা উপর নীচ নাড়ানো মনোযোগে শোনা

দ্রুত মাথাউপর নীচ নাড়ানো তাড়াতাড়ি , অধৈর্য

মাথা উচু তে শ্রেষ্ঠত্ব, নির্ভীকতা , দাম্ভিকতা

মাথা একদিকে কাত বিনয়ী, ভাবুকতা

মাথা সামনের দিকে সোজা আগ্রহ , ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া

79
মাথা নীচের দিকে কাত সমালোচনা , মৃদু ভর্ত্সনা

মাথা নীচু (বক্তৃ তা শোনার সময়) নেতিবাচক, আগ্রহহীনতা

মাথা নীচু (কোন কাজ করার সময়) পরাজিত, ক্লান্ত

থুতনি উচু গর্বিত, বিশ্বস্ততা

বাহু

সংকেত সম্ভাব্য অর্থ

বাহু বুকে ভাঁজ করা রক্ষনাত্মক, রিলাক্স

80
বাহু বুকে ভাঁজ করা এবং হাত মুষ্ঠি করা আক্রমনাত্মক, আত্মরক্ষা

হাত

দুটি হাতেও ভাষায় অভাব নেই । কত ইশারা কত সংকেত দেয়া যায় হাতের

মাধ্যমে।

সংকেত সম্ভাব্য অর্থ

81
হাতের তালু উপরের দিকে বিনয়ী, সত্যবাদী , সততা

হাতের তালু উপরের দিকে রক্ষণাত্মক, বন্ধ করার নির্দে শনা।


এবং আঙ্গুল উত্তোলিত

হাতের তালু নীচের দিকে কর্তৃ পক্ষ , শক্তি , আধিপত্য

হাতের তালু উপরের দিকে এবং উপর একটি উত্তর চাইছে


নীচ উঠানামা করা যেন কোন জিনিস
ওজন করছে

হাত বুকের বাম সাইডে, হার্টে র কাছে বিশ্বাস করাতে সচেষ্ট

82
কারো দিকে অঙ্গুলি নির্দে শনা আগ্রাসন , হুমকি , জোর দেয়া

আকাশের দিকে অঙ্গুলি নির্দে শনা জোর দেয়া

মুষ্ঠিবদ্ধ হাত প্রতিহত, আগ্রাসন , সংকল্প

83
কথা বলার সময় নাক স্পর্শ করা বা মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত
চু লকানো

মুখে হাত কন্ট্রোল, শক

নখ কামড়ানো হতাশা, কন্ট্রোল।যারা নখ কামড়ায়


তারা অধৈর্য, হতাশ অথবা উদ্বিগ্ন বা
বিষণ্ণ অনুভব করে। একটি গবেষণায়

84
পাওয়া গেছে যে, যারা নখ কামড়ায়
তারা নার্ভাস থাকলেও
পারফেকশনিস্ট হয় এবং এরা
পুরোপুরি রিলেক্স হতে পারে না।

নাকের হাড়ে চিমটি নেতিবাচক মূল্যায়ন

হাত কানের উপর আটকানো প্রত্যাখ্যান বা প্রতিহত

কান টানা সিদ্ধান্তহীনতা

ঘাড় চু লকানো সন্দেহ , অবিশ্বাস

85
হাত নিতম্ব এর উপর আত্মবিশ্বাস , প্রস্তুত

চশমা খোলা কথা বলার জন্যে সতর্ক

২ আঙ্গুলের V চিহ্ন (হাতের তালু আক্রমণাত্মক - উপহাস , অবজ্ঞা


ভিতরের দিকে)

২ আঙ্গুলের V চিহ্ন (হাতের তালু বাহিরের বিজয় , শান্তি


দিকে)

হাতের তালু একসঙ্গে ঘষা ইতিবাচক প্রত্যাশা

86
হাতের আলিঙ্গন- ঊঠানো হতাশা- নেতিবাচক মনোভাব ধারণ

করে আছেন। হ্যান্ডেল করা কঠিন হবে

হাতের আলিঙ্গন- মাঝামাঝি হতাশা-নেতিবাচক মনোভাব ধারণ

করে আছেন। হ্যান্ডেল করা

অপেক্ষাকৃ ত কম কঠিন হবে।

87
হাতের আলিঙ্গন- নীচে অসহায় বোধ করছে

মিনারের মত করা হাত - উচু তে এক্সপার্ট হিসাবে মতামত বা ধারনা

দেওয়ার সময়

88
মিনারের মত করা হাত- নীচে বক্তা কথা বলার বদলে শুনছে বেশী

পিছনে হাতে হাত ধরা আত্মবিশ্বাস

পিছনে হাত কব্জী ধরা হতাশার চিহ্ন, নিজেকে কন্ট্রোল করতে


চাচ্ছে।

পিছনে হাত অগ্র বাহু বা তার উপরে ধরা রাগান্বিত, নিজেকে কন্ট্রোল করতে

89
চাচ্ছে।

মাথার পিছনে হাত আত্মবিশ্বাস


প্রভাবশালী
উচ্চতর

হ্যান্ডশেক ‘দৃঢ়ভাবে হ্যান্ডশেক আত্মবিশ্বাস ও


বলিষ্ঠতার প্রতিফলন। দুর্বল হ্যান্ডশেক
নির্দে শ করে কম আত্মবিশ্বাস
এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, দৃঢ়
হ্যান্ডশেক এর মানুষ মিশুক,
আবেগপূর্ণ হয় এবং এরা লাজুক ও
বাতিকগ্রস্থ হয় না।

পা

90
সংকেত সম্ভাব্য অর্থ

পা নাড়ানো নার্ভাসনেস বা বিরক্ত মন

প্রসারিত পা নিরুদ্বেগ

একজন ব্যক্তির দিকে পা সে ব্যক্তির সমন্ধে আগ্রহী

দরজার দিকে পা চলে যেতে আগ্রহী

গলার স্বর
একজনের কথা বলার ভঙ্গিও অনেক কিছু বুঝিয়ে দেয়৷ ধীরে ধীরে কথা বলার
সাধরণ অর্থ হল শান্ত এবং নিশ্চিন্ত থাকা৷ আবার অন্যদিকে খুব দ্রুত কথা বলার
অর্থ চিন্তা৷

91
শ্বাস প্রশ্বাস
কেউ যদি স্বাভাবিকভাবে গভীর শ্বাস নেয় তাহলে সে নিশ্চিন্ত৷ আবার যদি কেউ খুব
ঘন ঘন শ্বাস নেয় তাহলে বুঝতে হবে তার কোনও বিষয় নিয়ে চিন্তা বা ভয় রয়েছে৷
কেউ অস্থির ভাবে শ্বাস নেওয়া মানে তার ভিতর কিছু ভয় রয়েছে যা সে লুকিয়ে
রখতে চাইছে৷

সময়
একটি মানুষকে সঠিকভাবে চিনতে হলে তার সঙ্গে সময় কাটানো খুব দরকার৷ তার
সঙ্গে কথা বলা এবং দীর্ঘসময় কাটানো তাকে বুঝতে অনেকটা সাহায্য করে৷ যত
বেশি সময় কাটানো যায় একজন মানুষের সঙ্গে তাকে তত ভালো করে বোঝা যায়৷
নিজের তৈরি করা পরিবেশ শেষে একথা বলতেই হয় যে কিছু পরিবেশ নিজের তৈরি
করাও হয়৷ কোনও একটি ঘটনাকে বর্ননা করার অনেক রকম ভঙ্গিমা হয়৷ কোনও
ছোট্ট ঘটনাকে ইচ্ছাকৃ ত ভয়ানক ঘটনার মতো করেও প্রকাশ করা যায়৷

সময়ানুবর্তি তা
গুরুত্বপূর্ণ কোনো মিটিংয়ে দেরিতে গেলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, অন্যদিকে
সময়মতো উপস্থিত হলে বোঝা যায় যে, অন্যের সময়ের ব্যাপারে মানুষটা
সহানুভূ তিশীল এবং সে মানসিকভাবে প্রস্তুত ও স্ব-প্রণোদিত।

মিথ্যা কথা শনাক্ত করার পদ্ধতি

মানব জাতির স্বভাব হচ্ছে সে সত্যের চেয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিরাপদ মনে করে। -
হুমায়ূন আহমেদ ( দেয়াল)

মিথ্যা বলা মানে আত্মার ক্ষয়। জন্মের সময় মানুষ বিশাল এক আত্মা নিয়ে
পৃথিবীতে আসে। মিথ্যা বলতে যখন শুরু করে তখন আত্মার ক্ষয় হতে থাকে। বৃদ্ধ

92
বয়সে দেখা যায়, আত্মার পুরোটাই ক্ষয় হয়ে গেছে। - হুমায়ূন আহমেদ (তিথির নীল
তোয়ালে)

সময়ে-অসময়ে, কারণে-অকারণে মানুষ মিথ্যা বলে।কখনও স্বার্থের জন্যে, কখনও


জান বাঁচাতে, আবার কখনও মজা করার জন্য মানুষ মিথ্যা বলে।

অনেকের মিথ্যা বলা সহজেই ধরতে পারা যায়। আবার অনেক ‘দক্ষ’ মিথ্যুক আছে,
যারা মিথ্যা বলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে।

চোখ মিথ্যাবাদী ব্যক্তি চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না। যে মিথ্যা
বলছে সে সরাসরি চোখের দিকে তাকাবে না অর্থাৎ আই
কন্ট্যাক্ট তেমন হবে না। হলেও মিথ্যার মূল অংশটু কু তে সে
চোখ ফিরিয়ে নিবে।

কেউ যখন মিথ্যা বলে তখন তার মনে ভয় থাকে যে, অন্যরা
তা বুঝে ফেলবে। তাই তারা চোখের দিকে না তাকিয়ে মেঝের
দিকে কিংবা অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলে।
কথা আমতা আমতা করে কথা বলে। মিথ্যা বলার সময় অনেকে
না চাইতেই অনেক বাড়তি তথ্য দিতে শুরু করে। আপনি
হয়তো তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কাল রাতে আপনি কোথায়
ছিলেন? তখন সে হয়তো কাল কোথায় ছিল, সঙ্গে কে কে
ছিল, কী করেছে, কী খেয়েছে- তার ফিরিস্তি দেওয়া শুরু
করবে।

মিথ্যা প্রতিষ্ঠার জন্য কেউ কেউ বেশি কথা বললেও অনেকে


আবার মিথ্যা বলার সময় খুব বেশি কথা বলে না। কোনো
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ চাইলে তারা রেগে যায় কিংবা চু প
করে থাকে।
শরীরের নড়াচড়া নড়াচড়া কমে আসবে।শরীরের কোন অঙ্গ খুব বেশি নড়াচড়া
করবে না। স্বতস্ফূ র্ত ভাব অনেকটাই কমে আসবে।এছাড়াও

93
হাত-পা ছড়ানো অবস্থায় থাকলে সেগুলো কাছাকাছি টেনে
নিবে।কারও যদি হাত ভাঁজ করার অভ্যাস না থাকে, তাহলে
বিশেষ কোন কথা বলার সময় হাত ভাঁজ করলে মোটামুটি
আশি ভাগ সম্ভাবনা সে কথাটা মিথ্যা।
অস্থিরতা কখনও কখনও মিথ্যা বলার সময় মিথ্যাবাদীর মধ্যে অস্থিরতা
লক্ষ করা যায়। অনেক সময় সে ঘামতে শুরু করে, কণ্ঠস্বর
বদলে যায়, ঘন ঘন চোখের পাতা কাঁপতে থাকে।
আবেগের প্রকাশ মিথ্যা বলার সময় আবেগের বহিঃপ্রকাশে কম বেশি হতে
পারে। সেক্ষেত্রে আবেগের ব্যাপ্তিকাল সাধারণের থেকে বেশি
সময় স্থায়ী হলে এবং হঠাৎ করেই এই আবেগ শেষ হয়ে গেলে
বুঝতে হবে ব্যক্তিটির কথা মিথ্যা হবার সম্ভাবনা বেশি।

কারও কোনো কথার সাথেও যদি তার আবেগের কোনো মিল


খুঁজে পাওয়া না যায় তাহলেও বুঝতে হবে সে মিথ্যা বলছে।
আবেগের কথা ও আবেগের প্রকাশের সময়ের মধ্যে
অসামঞ্জস্যতা থাকবে, সাধারণভাবে কথা বলার পর সেটার
অভিব্যক্তি ফু টে উঠবে। যেমন- ‘আমার কিন্তু এখন তোমার
উপর দারুণ রাগ হচ্ছে...’ একটু বিরতি, তারপর রাগের চিহ্ন
ফু টে ওঠা, এর মানে কথাটা মিথ্যা হবার সম্ভাবনা বেশি। এবং
এই অভিব্যক্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হবেনা।

আবেগের কথা ও আবেগের প্রকাশের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা


থাকবে। যেমন- হাত ভাঁজ করে রেখে, শক্ত রেখে কিংবা পা
নাচাতে নাচাতে বলা, ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’। কিংবা
আবেগী, নরম স্বরে বলা, ‘সত্যি বলছি, এই কাজটা করতে
পারব, যতো কঠিনই হোক না কেন’।
হঠাৎ করে আবেগের পরিবর্ত ন হবে। যেমন- হঠাৎ খুব রেগে
যেতে যেতে কেঁ দে ফেলা, কিংবা হাসতে হাসতে হঠাৎ বিষম
খাওয়া, কাঁদতে কাঁদতে রেগে যাওয়া। উল্লেখ্য, এক্সপ্রেশনের
পরিবর্ত ন না হলে, কিংবা কোন নির্দি ষ্ট একটা এক্সপ্রেশন

94
মোটামুটি কিছু সময় ধরে স্থায়ী হলে নব্বই ভাগ সম্ভাবনা
অভিযুক্ত নির্দোষ, অর্থাৎ সে
সত্য বলছে।

শুরুতে নির্লিপ্ত থাকলেও পরবর্তীতে অধিক রেগে যাবে,


কিংবা অনবরত নির্লিপ্ত থাকবে। তবে রাগ থেকে হঠাৎ
নির্লিপ্ত হয়ে গেলে অভিযুক্ত নির্দোষ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এবং যে নির্দোষ সে কখনোই অভিযোগের ফলে নির্লিপ্ত বা
সহজ ভঙ্গিতে থাকবেনা, রেগে যাওয়ার সম্ভাবনা অন্তত নব্বই
ভাগ।
কথার সুর মিথ্যাবাদীর সাধারণ কথার সুর ও মিথ্যা কথার সুরের মাঝে
অবশ্যই পার্থক্য থাকবে। অনেকসময় মিথ্যা বলার সময় তারা
অনেক সুন্দর করে কথা বলে, আবার কখনও তাদের সরাসরি
মিথ্যা না বলে ঘুরিয়ে মিথ্যা বলতে দেখা যায়।
বিষয় পরিবির্ত ন মিথ্যাবাদী ব্যক্তি যে বিষয়ে মিথ্যা বলছে তা বদলে গেলে বেশ
শান্ত হয়ে যাবে। সেই সাথে তাদের গলার আওয়াজও মজবুত
শোনাবে। অন্যদিকে যিনি সত্য বলছেন তিনি হঠাৎ বিষয়
বদলে গেলে কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে যাবেন এবং আগের বিষয়ে
ফি রতে চে ষ্টা করবে ন।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মিথ্যাবাদীরা প্রশ্নকর্তাকে ভয় পেয়ে থাকে।


কারণ প্রশ্নকর্তা বেশি প্রশ্ন করলে তার মিথ্যা ফাঁস হওয়ার
একটা বড় সম্ভাবনা থাকে। ফলে বেশির ভাগ সময়ই সে
প্রশ্নকর্তাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
চু লকানো মিথ্যা বলার সময় অনেকে নাক অথবা কান চু লকাতে থাকেন।
আবার কখনো কখনো তাকে মাথা বা কানের পেছনও
চু লকাতে দেখা যায়। নিজের অজান্তেই শরীরের এই চিহ্নগুলোই
মিথ্যা বলার তথ্য জানিয়ে দেয়।
বাচনভঙ্গি মিথ্যাবাদী প্রশ্নকর্তার কথাকেই উত্তর দেয়ার সময় পুনরাবৃত্তি

95
করবে। যেমন- ‘তু মি কি এক হাজার টাকা নিয়েছ?’ ‘না, আমি
এক হাজার টাকা নেই নি’। শুধু ‘না’ বললে সত্যবাদী হওয়ার
সম্ভাবনা বেশী।
দৃষ্টিভঙ্গি অভিযুক্তের খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি সে তার কথার ব্যাপারে
আত্মবিশ্বাসী থাকে, তাহলে প্রশ্নকর্তাকে বোঝানোর চাইতে
নিজের প্রেজেন্টেশন নিয়ে বেশি মনযোগী থাকবে, যদি সে
মিথ্যা কথা বলে, তবে প্রশ্নকর্তাকে বোঝানোই হবে তার ধ্যান-
জ্ঞান।
আমাকে তু মি ‘আমাকে তু মি বিশ্বাস কর না?’ ‘আমি কি তোমার সাথে
বিশ্বাস কর না মিথ্যা বলতে পারি?’ ‘সত্যি করে বলছি...’ ‘আমি তোমার
কাছ থেকে এভাবে আশা করিনি,’ ইত্যাদি ধরনের বাক্য
ব্যবহার করলে সে কথা মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।‘কোথা
থেকে শুনেছ?’ ‘কে বলল?’ ধরনে র প্রশ্ন করতে থা কলে ,
এবং এ ধরনের প্রশ্ন রিপিট করা হলে নব্বইভাগ সম্ভাবনা
অভিযুক্ত মিথ্যা বলছে। এছাড়া সে অভিযোগটিকে নিজের
মতো করে রিপিট করে, যাতে সেটা রীতিমতো অসম্ভব বলে
মনে হয়। যেমন- ‘তু মি তাহলে বলতে চাচ্ছ আমি তোমার
সাথে প্রতারণা করেছি? আমি? যাকে তু মি ছয় বছর ধরে
চেনো?’
ব্যাপারটাকে সহজ ভঙ্গিতে উত্তর দিতে চাইবে, ব্যাপারটাকে তু চ্ছ করার
তু চ্ছ করা জন্যে শ্রাগ (কাঁধ ঝাকানো) করবে, কিংবা হাত নেড়ে পাত্তা না
দেয়ার ভঙ্গি করবে। সরাসরি অভিযোগকে কখনো কখনো
সিরিয়াসলি নেয়ার বদলে ব্যঙ্গাত্বক দিকে নিয়ে যাবে, হাসি-
ঠাট্টা করার চেষ্টা করবে।

প্রশ্নের উত্তর প্রশ্ন যেমন- ‘তু মি কি জায়গাটা চেন?’ ‘আমি তো কখনো যাই-ই
দিয়ে দেয়ার চেষ্টা নি, চিনব কিভাবে?’
পারস্পরিক কথা মিথ্যাবাদী নিজে প্রশ্নের জবাব দিতে পারুক বা না পারুক,
কম একই ব্যাপারে প্রশ্নকর্তাকে প্রশ্ন করার অধিকার থাকলেও সে
তা করবে না। যেমন- দুই বন্ধু র মধ্যে কথা হচ্ছে, ‘তু ই আগে

96
কখনো ড্রাগ নিয়েছিস?’ ‘না, আমি কখনো ড্রাগ নেইনি’।
বলে দ্বিতীয় বন্ধু চু প করে থাকল। মোটামুটি শতভাগ সম্ভাবনা
দ্বিতীয় বন্ধু টি মিথ্যা বলছে। সত্যি বললে সে অবশ্যই তার
বন্ধু কেও একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করত।
নিজেকে আড়াল অভিযুক্তের সামনে গ্লাস, চায়ের কাপ, বালিশ, বই ইত্যাদি
করার চেষ্টা থাকলে সেসব খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসবের ব্যবহার সাবধানে লক্ষ্য
করতে হবে। মিথ্যা কথা বলার সময় তার হাতে এগুলোর
কোনটা থাকলে সে সেটা দুজনের মাঝখানে রেখে দিবে, চায়ের
কাপ হাতে থাকলে চু মুক না দিয়েই টেবিলে রেখে দিবে। একটু
পরই যদি আবার চায়ের চাপ হাতে নেয় চা খাওয়ার জন্যে এবং
খাওয়া শুরু করে, তাহলে তার মিথ্যাবাদী হওয়ার সম্ভাবনা
বেশী। অথবা কাপ কিংবা গ্লাসে দু-এক কাপ চু মুক দিয়ে রেখে
দেয়া মানে কথাগুলো মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। কিন্তু
অভিযুক্ত যদি কাপ/গ্লাস নামিয়ে না রাখে বা পুরোটা খেয়ে নেয়,
তাহলে সে নিশ্চিত সত্য বলছে। তবে এক্ষেত্রে একটা খুব
সহজ কাজ করা যায়, কোন পানীয় খাবার সময় অকস্মাৎ
অভিযোগ করলে প্রকৃ ত দোষীর বিষম খাওয়ার, কিংবা
তৎক্ষণাৎ কাপ/গ্লাস নামিয়ে রাখার সম্ভাবনা শতভাগ।
পৃথিবীর মোটামুটি সব ইন্টারোগেশনেই তাই প্রশ্নকর্তা ও
অভিযুক্তের মধ্যে চা, সিগারেট ইত্যাদি থাকে। ক্রিমিনাল
সাইকোলজির জন্যে এটা খুব গুরুত্ব্বপূর্ণ। হাওয়ার্ড টেটেন
নামক এক বিখ্যাত ইন্টারোগেটর অভিযুক্তের খাওয়ার ধরন
দেখেই দোষ বিচার করতেন।

97
তবে মনে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার শুধু মাইক্রোএক্সপ্রেশন
পর্যবেক্ষণ করাই না; সেগুলো কে খাপে খাপে বসিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসা। এই
কাজটু কু ই সবচেয়ে কঠিন। একটা উদাহরণ - উপরের থিওরি অনুযায়ী কেউ যদি
বলে, ‘সত্যি করে বলছি, আমি কাজটা করিনি,’ তাহলে সে মিথ্যাবাদী। কিন্তু মনে
রাখুন, এভাবে চিন্তা করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ভু ল। এই কথাটা বলা মানে কেবল
অভিযুক্তের নেগেটিভ দিকে এক পয়েন্ট বেড়ে যাওয়া, এর বেশি কিছু না। আবার
কেউ কাপ হাতে তু লে চু মুক না দিয়ে রেখে দেয়া মানেই মিথ্যাবাদী হতে পারে না।
আপনার সেক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে তার মিথ্যা কথা বলার একটা সুযোগ রয়েছে,
কিংবা তার মিথ্যাবাদী হওয়ার সম্ভাবনার পাল্লা ভারী হল। তাই এভাবে পজেটিভ-
নেগেটিভ মিলিয়ে, অনেক হিসাব-নিকাশ করে তবেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত। মনে
রাখা দরকার, ছোট একটা বিষয় থেকে কোনভাবেই এসব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো
যায় না। আপনার সামনে একটা ৪ আর একটা ২ থাকলে সেগুলো গুণ, ভাগ, যোগ
না বিয়োগ করলে ফল পাওয়া যাবে, সেটা আপনিই ঠিক করবেন। এবং এসব
ক্ষেত্রে যথেষ্ট চর্চা থাকা উচিত; কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অভিযুক্ত একই
সাথে বিভিন্ন কন্ট্রাডিক্টরী ধরনের কাজ করে, যার ফলে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো কঠিন হয়ে
যায়। আর একজন নির্দোষ মানুষ কে সাইকোলজির প্যাঁচ কষে দোষী বানিয়ে ফেলা
খুবই খারাপ ধরনের অপরাধ! কিন্তু ঠিক ট্র্যাকে চিন্তা করতে পারলে আর মোটামুটি
চর্চা করলে ভু ল হবার সম্ভাবনা বেশ কমে যায়।

কিছু আবেগের শরীরের ভাষা

ভয়, উদ্বেগ ও নার্ভাসনেস

98
 ফ্যা কাশে মুখ
 ঠান্ডা ঘাম
 মুখ শুকিয়ে যাওয়া - ফলে ঠোঁ ট চা টবে , পানি খাবে, গলা হাত দিয়ে ঘষবে
 চোখ স্যাঁতসেঁতে
 কম্পিত ঠোঁট
 আশে পাশের অন্যান্য ব্যক্তিদের দিকে তাকাবে না
 কথা বলা- গলার স্বর উঠানামা করবে, গলা কাঁপবে, কথায় ভু ল হবে।
 ঘন ঘন শ্বাস নেয়া এবং গভীর শ্বাস নেয়া

 উসখুস করা

 প্রস্তুত শারীরিক ভাষা - ফাইট করা অথবা পালানোর জন্য

 মানসিক চাপের অন্যান্য লক্ষণ

বিব্রতবোধ

 মুখ এবং / অথবা ঘাড় লাল বা রাঙা হওয়া

 নীচে বা অন্যদের থেকে দূরে তাকানো

 মুখ ঘেঙচানো, মিথ্যা হাসা

 আলোচনার বিষয় পরিবর্ত ন বা অন্যভাবে বিব্রতকর বিষয়টি ধামাচাপা

দেয়ার চেষ্টা

বিস্ময়
 ভ্রু উপরে তোলা
 চোখ প্রশস্তকরণ
 খোলা মুখ
 হঠাৎ একটু পিছনে সরে আসা

99
ইন্টারভিউ বোর্ডে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কেমন হওয়া উচিত
 রুমে প্রবেশের সময় সোজা হয়ে প্রবেশ করুন। কুঁ জো ভাব যেন না থাকে। ভদ্র
ভাব থাকবে, সঙ্গে থাকবে বেশ কিছুটা আত্মবিশ্বাসের ভাব।
 যতক্ষণ পর্যন্ত না বসতে বলা হচ্ছে, ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকু ন।
 খেয়াল রাখুন, বসার সময় চেয়ার টানার শব্দ যেন না হয়।
 চেয়ারে বসতে হবে সোজা হয়ে। হাতের উপর হাত রাখতে পারেন। চেয়ারের
হাতলের উপরেও হাত রাখা যেতে পারে। তবে টেবিলের উপরে হাত রাখবেন
না কখনওই।

100
 কথা বলুন রিল্যাক্স হয়ে। উত্তেজিত হয়ে কোনও প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। মনে
রাখবেন সেখানে আপনার উচ্চারণ হবে স্পষ্ট, ভয়েস থাকবে ডাউন।
 হাতের আঙু ল ফাটাবেন না। নখ খোঁটাবেন না। আঙু ল বা নখ খাবেন না।
 হাই তু লবেন না।
 কথা বলুন চোখে চোখ রেখে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে।
 মাথা স্থির রাখুন। কথা বলার সময় মাথা দোলাবেন না।
 মাঝে মধ্যে মুখে ফু টিয়ে তু লুন হালকা হাসির ছোঁয়া।
 পেন্ট, জামার বোতাম বা পোশাকের অংশ নিয়ে নাড়াচাড়া করবেন না।
 প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে সরাসরি বলে দিন, জানেন না। অযথা মুখে
হাত দিয়ে, মাথা চু লকে সময় নষ্ট করবেন না।
 চেয়ারে বসে বসে পা দোলাবেন না।

101

You might also like