You are on page 1of 3

#হোমিওপ্যাথি_ও_কুযুক্তি

'কুযুক্তি' কাকে বলে এবং তার প্রকারভেদ বিষয়ে পড়তে গিয়ে বুঝেছি যুক্তিতর্কের আলোচনায় হোমিওপ্যাথি-পন্থীরা
এর প্রত্যেকটিরই বারংবার ব্যবহার করে থাকেন। লেখার শুরুতেই দুটো বিধিসম্মত সতর্কীকরণ দিয়ে দেবো..
ক.
ছদ্ম-বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে বারবার যুক্তি ও প্রমাণ দেওয়ার পরেও কিছু তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের জ্ঞানচক্ষু উন্মীলন হয়
না। এই লেখাটি মূলত তাঁদের জন্য।
খ.
বোঝার সুবিধার্থে লেখায় 'অ্যালোপ্যাথি' কথাটি ব্যবহৃত হবে। বহুল প্রচলিত এই শব্দটির জনক হ্যানিম্যান।
যদিও এই শব্দের সাথে আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার কোনও সম্পর্ক নেই। আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার কোনও বইতে বা
পাঠ্যক্রমের কোথাও এই শব্দের উল্লেখ নেই। হ্যানিম্যানের সময় 'অ্যালোপ্যাথি' বলে যে চিকিৎসাপদ্ধতি প্রচলিত
ছিল তার প্রায় কোনোকিছুই বর্তমান মডার্ন মেডিসিনে নেই। কাজেই 'অ্যালোপ্যাথি ওষুধ' বা 'অ্যালোপ্যাথি
ডাক্তার' বলে আজকের দিনে কিছুই হয় না। সঠিক কথা- মডার্ন মেডিসিন।
হোমিওপ্যাথির বিজ্ঞানসম্মত কার্যপ্রণালী ও কার্যকারিতার উপযুক্ত প্রমাণ দিতে না পেরে তাঁরা সাধারণত যেসব
কুযুক্তির আশ্রয় নিয়ে থাকেন সেগুলো সংক্ষিপ্তভাবে বলার চেষ্টা করবো..
১.
God of the gaps fallacy:
হোমিওপ্যাথির কার্যকারিতা ও কার্যপ্রণালী না জানার পেছনে বিজ্ঞানের অজ্ঞতাকে দায়ী করা হয়। যেহেতু বিজ্ঞান
সবকিছু ব্যাখ্যা করতে পারে না, যেহেতু এই বিপুল সৃষ্টির অনেককিছুই আজও অজানা তাই তাঁরা নির্দ্বিধায় বলে
দেন হোমিওপ্যাথিও এরকম কোনও অজানা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে। এই কুযুক্তি মানলে ইয়েতি,
জ ল প রী, পাথর, তাবিজ, ঝাড়ফুঁক ইত্যাদি সবকিছুকেই বিজ্ঞান বলতে হয়। সেক্ষেত্রেও দাবী করা যায় একদিন সব
প্রমাণ হয়ে যাবে। হাস্যকর, তাই না?
২.
Argument from authority fallacy:
তাঁরা বলেন- রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর ও আরও অনেক বড় বড় মানুষ যেহেতু হোমিওপ্যাথি মানতেন তাই
হোমিওপ্যাথি বিজ্ঞান। রবীন্দ্রনাথ আর বিদ্যাসাগরকে লোকে অসামান্য সাহিত্যিক বা সমাজ-সংস্কারক হিসেবেই মনে
রাখবে। লেজেন্ডকে 'ভগবান' বানিয়ে ফেললেই মুশকিল। সেক্ষেত্রে সচিনের সেতার আর রবিশঙ্করের ফুটবল দেখতে হয়।
রসায়নবিদ্যা এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের জ্ঞান ছাড়া এ ব্যাপারে মন্তব্য করা মুশকিল। তাছাড়া প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানীরও
অপ্রমাণিত তত্ত্বকথার কোনও দাম নেই। 'কে বলছেন'-এর থেকে 'কী বলছেন' এবং 'কেন বলছেন' সেটা বোঝা
গুরুত্বপূর্ণ। নিউটন প্ল্যানচেট করতেন বলে, কিছু সংখ্যক ফিজিক্সের প্রফেসর বা ডাক্তার হাতে পাথর পরেন বলে
সেগুলো বিজ্ঞান হয়ে যায় না। বিজ্ঞানের চোখে 'ব্যক্তি' ব্যাপারটিই মূল্যহীন।
৩.
Argument from popularity:
'এই যে এতজন ব্যবহার করছেন তাঁরা সব মিথ্যে বলছেন নাকি?'
বিজ্ঞান কখনোই গণবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় না। গণবিশ্বাস আর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিজ্ঞানের
মাপকাঠি হ'লে তাবিজ-মাদুলি আর ধর্ম-ব্যবসা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান হ'ত। বিজ্ঞানে স্রোতের উল্টোদিকে
দাঁড়িয়ে থাকা একজনের (মাত্র একজনের) কথা সত্যি হতে পারে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাগুলো আদৌ সঠিক ভাবনা কিনা
সেটা বিচারের নির্দিষ্ট বিজ্ঞানসম্মত মাপকাঠি আছে। তাতে হোমিওপ্যাথি কোনোদিনই পাশ করে নি। এই স্রোতের
উ ল্টোদিকে দাঁ ড়ানোর ঘ টনা শুধু বিজ্ঞা ন নয়, যে কোনও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্যই প্রযোজ্য। 'বিধবা-বিবাহ' প্রচলনের
সময় বিদ্যাসাগরের লড়াইটা ভাবুন। (অবান্তর মন্তব্য এড়ানোর জন্য বলে রাখি, বর্তমান লেখক বিদ্যাসাগরের
উদাহরণ শুধু যুক্তি দেওয়ার খাতিরেই এনেছেন)
৪.
Begging the question:
'চেম্বারে পেশেন্ট হয় না বলে হোমিওপ্যাথির পেছনে পড়েছেন বুঝি?'
অর্থাৎ কুপ্রশ্নের কুযুক্তি। এ ধরনের প্রশ্নের সাথে যুক্তিতর্কের কোনও মিল থাকে না। শুধুমাত্র বিপক্ষের প্রশ্নের তীর
এড়ানোর অযৌক্তিক প্রচেষ্টা থাকে।
৫.
Strawman fallacy:
'আপনি নিশ্চয়ই ওষুধ কোম্পানির দালাল'
অর্থাৎ, কাল্পনিক 'খড়ের মানুষ' গড়ে আলোচনাটিকে এমন একটা দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা যার সাথে মূল ব্যক্তির
মূল আলোচনার কোনও সম্পর্ক নেই। এরপর বহুজাতিক ওষুধ সংস্থার বিভিন্ন দোষের কথা বলে আলোচনার মূল
বিষয়বস্তু অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ওই কল্পিত 'খড়ের মানুষ'-এর মতোও হন তবু
হোমিওপ্যাথিতে যুক্তিহীনতার বিষয়টি বদলায় না।
৬.
Circular fallacy:
অর্থাৎ, একটাকে স্বতঃসিদ্ধ ধরে আরেকটিকে প্রমাণের চেষ্টা।
'হোমিওপ্যাথি সত্যি তাই এতজন বিশ্বাস করে। যেহেতু এতজন বিশ্বাস করে তাই হোমিওপ্যাথি সত্যি।'
ঘুরেফিরে সেই এক কথা। এবং, এই ধরনের শিক্ষিত ঘুমন্তদের বোঝানো মুশকিল- বিজ্ঞানে আগে স্বতঃসিদ্ধটিকে প্রমাণ
করতে হয়। নইলে তার ভিত্তিতে আরেকটি কথার যাথার্থ্য খোঁজা যায় না।
৭.
Argument from ignorance fallacy:
"আপনি ঘুমিয়ে থাকলে বাইরে কী হচ্ছে জানতে পারেন?" কিংবা "আপনার মাথায় ক'টা চুল জানেন?"। যেহেতু
এসব ছোট্ট ব্যাপারও জানা নেই কাজেই তাঁদের বক্তব্য হোমিওপ্যাথির মতো জটিল একটি বিষয় জানা এত সহজ নয়।
ঘুমিয়ে থাকলেও বাইরের পৃথিবীতে কী হচ্ছে বা মাথায় চুলের সংখ্যা চাইলেই বিজ্ঞানের সাহায্যে বুঝে নেওয়া
যায়। বিজ্ঞানের যেসব শাখা আছে তার প্রতিটিই একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। হঠাৎ, কোনও একটি বিষয় প্রচলিত
বিজ্ঞানের সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ অবস্থান নিলে ধরে নিতে হবে হয় বাদবাকি সব প্রচলিত বিজ্ঞান ভুল অথবা হোমিওপ্যাথি
ভুল। যেহেতু দৈনন্দিন জীবনে প্রচলিত বিজ্ঞানের সব ব্যবহারিক সুবিধে আমরা সবাই নিই তাই হাতে মোবাইল,
চোখের সামনে টিভি আর পেছনে এসি নিয়ে প্রচলিত বিজ্ঞানকে অস্বীকার করা সম্পূর্ণ দ্বিচারিতা।
৮.
Ad hominem:
ব্যক্তি-আক্রমণ। বিস্তারিত বর্ননার প্রয়োজন নেই। যুক্তিহীনতার শেষ খড়কু টো।
৯.
Appeal to hypocrisy:
"অ্যালোপ্যাথিতে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয়" কিংবা "প্রচুর অযৌক্তিক ওষুধ আছে।" ইত্যাদি।
তাই হোমিওপ্যাথি ব্যবহার করা উচিত।
বলাই বাহুল্য, মডার্ন মেডিসিনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ অনেকাংশে সত্যি। কিন্তু তার সাথে এই আলোচনার কোনও
সম্পর্ক নেই। অপ্রয়োজনীয় কিংবা অযৌক্তিক অ্যালোপ্যাথি ওষুধ ব্যবহার হ'লে সেটা সেই সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ
সমস্যা। তার সমাধান নিশ্চয়ই প্রয়োজন কিন্তু এই সমস্যা হোমিওপ্যাথিকে 'বিজ্ঞান' বানিয়ে দেয় না।
১০.
Burden of proof:
প্রচলিত বিজ্ঞানের বাইরে কোনও অভূতপূর্ব দাবী করলে প্রমাণ দেওয়ার দায় তাঁরই। আমি দাবী করলাম ক্রমাগত দ্রবণে
দ্রাবকের পরিমাণ বাড়িয়ে শক্তিবৃদ্ধি হয়, এমনকি অণুহীন হয়ে গেলেও। তারপর সেটা ৫০০ বছর বাদে অন্য কেউ ঠিক
প্রমাণ করে দেবেন। সম্পূর্ণ হাস্যকর যুক্তি। সুন্দরবনে গোলাপী বাঘ দেখার দাবী করলে প্রমাণের দায়িত্ব আমারই।
তার বদলে আমি বলতে পারি কি যে 'আপনি প্রমাণ করুন আমি দেখি নি?' বিশেষত, যেখানে অ্যাভোগাড্রো
নাম্বার অনুযায়ী অধিকাংশ তথাকথিত উচ্চশক্তির হোমিওপ্যাথি ওষুধ বিশুদ্ধ অ্যালকোহল ছাড়া কিছু নয়। এটি
আমার দাবী নয়। সহজ অঙ্ক কষে সারা পৃথিবী এটাই বুঝেছে।
১১.
False dilemma:
"যেহেতু স্বাস্থ্যের পণ্যায়নের ফলে এত মানুষ কপর্দকহীন হয়ে যান তাই হোমিওপ্যাথির মতো কমদামী চিকিৎসা-
ব্যবস্থার প্রয়োজন।"
অদ্ভুতভাবে এমন দাবী করা হয় যেন কর্পোরেট ব্যবস্থা এবং হোমিওপ্যাথি- এর মাঝামাঝি কিছু হতে পারে না।
'সবার জন্য স্বাস্থ্য'র ধারণা একটু জানুন। আধুনিক চিকিৎসা নিঃসন্দেহে ব্যয়বহুল। তার সমাধানও করতে হবে
সেখানে দাঁড়িয়েই। বিজ্ঞানের প্রশ্নে 'দাম' আসে কীভাবে? সবার জন্য বিনামূল্যে আধুনিক চিকিৎসা সরকারের
দায়িত্ব। সাধারণ মানুষের দুরবস্থার জন্য স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা দায়ী হতে পারে, চিকিৎসা-বিজ্ঞান নয়।
১২.
No true scotsman:
অগুনতি ক্রসপ্যাথদের প্রসঙ্গ তুললেই উত্তর আসবে তাঁরা প্রকৃত হোমিওপ্যাথ নন। তাই যদি হয়, তাহলেও এটা নিশ্চয়ই
ধরে নেওয়া যায় একটা বড়ো অংশ হোমিওপ্যাথি-গ্রাজুয়েট হোমিওপ্যাথির কার্যকারিতায় সংশয়াচ্ছন্ন।
১৩.
Argument from final consequences and confirmation bias:
আপনি যতই বিজ্ঞানের যুক্তি দিন তিনি ঠিক জানেন হোমিওপ্যাথি মিথ্যে হতে পারে না। মাঝের তর্ক -বিতর্কের
অবস্থান যেদিকেই ঝুঁকে থাক 'সাত কান্ড রামায়ণ পড়ে..'
১৪.
Confirming an explanation with an excuse:
"না, না.. এসব বড্ড জটিল ব্যাপার। বুঝতে হলে আপনাকে ১০ বছর হোমিওপ্যাথি পড়ে আসতে হবে।"
পৃথিবীতে বিজ্ঞানের এমন কোনও শাখা নেই যেটাকে সাধারণের বোধগম্য ভাষায় সহজ করে বলা যায় না। হ্যাঁ,
তাতে হয়তো অঙ্ক কষা বা জটিল শব্দবন্ধ থাকবে না কিন্তু মূল প্রতিপাদ্যটুকু ঠিক বলা যায়। এসব কুযুক্তির একটাই
অর্থ হতে পারে- তার মধ্যে প্রমাণিত বিজ্ঞানের অভাব।
১৫.
Naturalisation fallacy:
"যুগ যুগ ধরে চলে আসছে আর আপনি কোথাকার অর্বাচীন একে নাকচ করছেন?"
যুগ যুগ ধরে চলে এলেই কোনোকিছু সত্যি হয়ে যায় না। বিশেষত, বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। এক সময়ের
জ নপ্রিয় চিকিৎসা ছিল প্রায় স ব রোগে রক্ত বের ক রে দেও য়া। তাতে বহু মানুষের মৃত্ যুহ'ত। বস্তুত, হ্যানিম্যান
'অ্যালোপ্যাথি' বলতে এ ধরনের চিকিৎসা-পদ্ধতিকেই ইঙ্গিত করেছিলেন। যুগ যুগ ধরে চলে আসার তত্ত্ব মানলে
রক্তমোক্ষণ সঠিক চিকিৎসা ছিল। অথচ, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে সামান্য এক-আধটা রোগ বাদ দিলে রক্তমোক্ষণের
কোনও স্থান নেই। ডা. জে নার বা লুই পাস্ তু র যত ই বড় বিজ্ঞা নী হোন না কেন তাঁদের বক্ত ব্যের বিজ্ঞা নস ম্ ম

নির্যাসটি সমাদৃত কিন্তু তাঁদের সময়ের চিকিৎসাবিদ্যার বই পড়ে আজকের দিন কেউ চিকিৎসা করেন না।
ধর্মগুরুর বাণী আর অন্ধবিশ্বাস অপরিবর্তিত থাকে। বিজ্ঞান রং বদলায়। সেটাই তার সৌন্দর্য।
১৬.
Cherry picking fallacy:
চোখের সামনে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সেগুলো আত্মস্থ করতে তাঁদের সমস্যা হয়। বিজ্ঞান নয়, বিশ্বাসই
তাঁদের কাছে বড় কথা।
১৭.
Argument from personal experience:
"আমার সেজো মাসির ছোট নাতির উমুক হয়েছিল। সবাই জবাব দেওয়ার পরে উমুকের কাছে হোমিওপ্যাথি খেয়েই..
" কিংবা "তাহলে আমার যে উমুক রোগ সেরে গেল সেটা মিথ্যা?"
বিজ্ঞানে আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কোনও মূল্য নেই। অজস্র মানুষ আছেন যাঁরা বলবেন, 'পাথর ধারণের পরেই
চাকরি হয়', 'সবাই হাল ছেড়ে দেওয়ার পরে মন্দিরে হত্যে দিয়ে..' ইত্যাদি। জন্ডিসের মালা, তাবিজ, মাদুলি
দিয়ে রোগ সারার দাবী করেন অজস্র লোক। দাবী আর বিশ্বাস সত্যিই ঠিক কিনা সেটা বোঝার জন্য নির্দিষ্ট
বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি আছে। তাতে বারবার হোমিওপ্যাথি মুখ থুবড়ে পড়েছে।
একটা সহজ উদাহরণ ধরা যাক। অফিস থেকে বেরোনোর সময় আপনার প্রবল মাথাব্যথা। আপনি ব্যাগ থেকে এক শিশি
হোমিওপ্যাথি ওষুধ বের করে দু'দানা মুখে দিলেন। তারপর, বাড়ি ফেরার বাস ধরার আগে বন্ধুর সাথে এক কাপ
কফি খেলেন। বাসে জানলার পাশে সিট পেয়ে একটু ঘুমিয়েও নিলেন। তারপর যখন বাড়ি ফিরে এলেন তখন আপনি
একদম ঝরঝরে। অর্থাৎ, মাথা ব্যথা শুরু থেকে বাড়ি আসা অব্দি 'দু দানা ওষুধ', 'কফি', 'বন্ধুর সাথে
আড্ডা', 'বাসের ঘুম' এর মধ্যে কোনও এক বা একাধিক কারণে আপনার মাথাব্যথা কমে যেতে পারে। আপনি
অন্ধবিশ্বাসী হ'লে হোমিওগুলি ছাড়া অন্য কিছুর অবদান মানতেই চাইবেন না। এমনিতেই ক্রনিক রোগগুলির প্রায়
৮০% এমনিই সেরে যায়। সেখানে অন্ধবিশ্বাসী হলে প্লাসিবো (অকাজের বা মিছিমিছি ওষুধ) চিকিৎসার ফলাফল
আপনাকে বিস্ময়াবিষ্ট করবেই। এই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এতটাই দৃঢ় এবং অপরিবর্ত নীয় যে তার মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞানের
আলো আসা মুশকিল। ইমার্জেন্সিতে কেউ কোনোদিন হোমিওপ্যাথি খেয়েছেন বলে শোনা যায় না। কী এমন গুঢ় কারণ
থাকতে পারে যে একটি রাসায়নিক বেছে বেছে শুধু দীর্ঘদিনের রোগগুলিতেই কাজ করে?
প্রমাণের অভাবে পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে হোমিওপ্যাথি নিষিদ্ধ। এমনকি হ্যানিম্যানের নিজের দেশেই
মাইক্রোস্কোপের তলায় খুঁজতে হয়। বিজ্ঞান ছেড়ে শুধু যদি সাধারণের বিশ্বাসের কথাই ধরি, সেক্ষেত্রেও তৃতীয়
বিশ্বের দেশগুলোর তুলনায় উন্নত দেশগুলোতে হোমিওপ্যাথি-বিশ্বাসীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কম। আর
বিশ্বাস এমন বিপজ্জনক জিনিস যা সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞান পড়া মানুষটির থেকেও বিজ্ঞানমনস্কতা কেড়ে নিতে পারে
অবলীলায়।
© Soumyakanti Panda

You might also like