Professional Documents
Culture Documents
Read Now
Read Now
তু লিকা রায়
ইতি লাবণ্য
(ট্যাব/কিন্ডেল/কম্পিউটার সংস্করণ)
2
published by Muktodhara
©muktodhara
3
একটা মিসিং ডায়রি ! একটা কেস ! না চাইতেও বেরিয়ে পড়া
একটা অপ্রিয় সত্য! মনুষ্যজীবন বড়ই বিচিত্র, এই জীবনে শাশ্বত
বলে কিছুই নেই। আজ যে পরম আপন, কাল সেই-ই শত
আলোকবর্ষ দূরের বাসিন্দা। সাথে থেকেও একে অপরের থেকে দূরে
থাকা কিংবা দূরে থেকেও সাথে থাকতে চাওয়া, এর নামই কি
সমঝোতা? এই সমঝোতা করতে না চাইলেই কি তকমা জোটে
'কলংকিত' ! বাঁচতে চাওয়ার অধিকার তো সবার আছে ! কিন্তু বেঁচে
থাকার সম্বল যে মানুষগুলো, নিজের আপনজন, নিজের পরিবারই
যখন অপরিচিতি হয়ে যায় তখন বেঁচে থাকার আর কি কোনো কারণ
বেঁচে থাকে? কোনো মানুষকে সম্পূর্ণ চেনা কি সম্ভব? নাকি চেনা
অচেনার মাঝে আসলে অনেক অংশই ধূসর? কোনটা আসল রূপ
কোনটাই বা নকল? এই মর্মান্তিক পরিণতির জন্য দায়ী আসলে কে?
এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেবে 'ইতি লাবণ্য'।
4
উৎসর্গ
সূরজকে
5
সূচিপত্র
প্রথম পর্ব 6
দ্বিতীয় পর্ব 16
তৃ তীয় পর্ব 29
চতু র্থ পর্ব 40
পঞ্চম পর্ব 48
ষষ্ঠ পর্ব 59
সপ্তম পর্ব 67
অন্তিম পর্ব 78
6
প্রথম পর্ব
।।১।।
দুপুর হতে চলল প্রায়। ঘড়ির কাঁটা বেলা ১টা ছুঁইছুঁই। বাইরে আজ প্রচন্ড
রোদে রাস্তাঘাট একটু ফাঁকা ফাঁকাই, ফোনটা বাজল।
একটু ঠান্ডা জলে তেষ্টা মেটাচ্ছিল সুদীপ্তা, ল্যান্ড লাইনটা ধরতে ইশারা
করল রাতু লকে।
রাতু ল একটা ফাইলে মুখ গুঁজে ব্যস্ত ছিল, বুঝতে খানিকটা সময় লাগল
ওর, বেশ খানিকক্ষণ বাজার পর ফোনটা এসে ধরল ও।
7
সুখবর দিতে ফোন করে? অঘটন ঘটলেই তো ফোনটা করে! তো যখন
অঘটনের কথা শুনব জানেই, তখন এমন ভাবভঙ্গির কি মানে? অনেকবার
রাতু লকে এটা বুঝিয়েছে সুদীপ্তা, যে একটু শান্ত রাখতে মাথাটা, মুখের
ভাবভঙ্গি যেন নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু বুঝলে তো? কে শোনে কার
কথা? বলে তো লাভ নেই তাই এই মানুষকে। তাই খুব একটা পাত্তা দিল না
সুদীপ্তা।
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল রাতু ল, "আরে হাইপ্রোফাইল কেস। মিসিং
সকাল থেকে বা কাল রাত থেকে, এখুনি যেতে হবে, নীলা ভবন।"
-"ইয়েস।"
-"হোয়াট!"
***
রাস্তায় খুব একটা জ্যাম ছিল না, পৌঁছাতে তাই খুব একটা সময় লাগল না
ওদের, মোটামুটি আধ ঘন্টার মধ্যেই 'নীলা ভবন'-এর গেট পেরিয়ে
প্রাসাদোপম বাড়িতে ঢু কল ওরা।
এর মধ্যেই লোকজন খবর পেয়ে গেছে। বাড়ির সামনে অল্প বিস্তর জটলা
বাঁধতে শুরু করেছে। গাড়ি থামতেই দ্রুত পায়ে নেমে এল সুদীপ্তা। বাড়িটার
সামনে বাগান। পুরো বাড়িটাই ধবধবে সাদা, সামনেই সিঁড়ি পেরিয়ে সদর
দরজা, খোলাই রয়েছে। প্রায় ১২-১৫ টা ধাপ পেরিয়ে বাড়ির ভিতর ঢু কল
ওরা। কয়েক সেকেন্ডের জন্য তাক লেগে গেল বাড়িতে ঢু কেই। একটা
বিশাল বড় পেন্টিং ঝোলানো রয়েছে সামনেই, মনোমুগ্ধ করা। গাঢ় নীল
রঙের শাড়িতে সিংহাসনে বসে দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে লাবণ্য সান্যাল। কি
8
বুদ্ধিদীপ্ত, প্রখর সেই দৃষ্টি! যেন অবলীলায় পড়ে নিতে পারে মানুষের মনের
ভিতর অবধি সমস্ত অলিগলি। রাতু লের গলার স্বরে ঘোর কাটল যেন
সুদীপ্তার।
-"দেখা হলো?"
-"হুম।"
***
বাড়িতে ঢু কতেই একটা উৎকণ্ঠা যে সবার মধ্যেই সেটা নজর এড়াল না।
স্বাভাবিক সেটাই। লাবণ্যর মেয়েকে দেখে ভারী মায়া হল সুদীপ্তার। কিন্তু ,
পরক্ষণেই দিদার কোন কথার উত্তরে এমনভাবে উত্তর দিল, ভু ল ভাঙল
সুদীপ্তার। দেখে যা মনে হচ্ছে, তা যে সত্যি না-ও হতে পারে, সেটা আগেই
বোঝা উচিত ছিল।
9
গেট অবধি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে, ইনফ্যাক্ট গেট
পেরিয়ে রাস্তাটাও। ব্যালকনিতে কোন গ্রিল নেই, ঝুঁকে এদিক ওদিক দেখল
সুদীপ্তা। কেউ চাইলে এই ব্যালকনি দিয়ে যেতেও পারে, আসতেও পারে।
ব্যালকনি আর ঘরের মাঝে একটি কাঁচের স্লাইডিং ডোর। ঘরে ঢু কে এল
ওরা। অ্যাটাচ্ড বাথরুমটাও খুলে ঢু কল একবার। নাকে একটা সুগন্ধি গন্ধ
এসে লাগল, এখন হাল্কা হয়ে গেছে। মিষ্টি কোন শাওয়ার জেল-এর গন্ধ
মনে হল।
একটা ড্রয়ার খোলাই ছিল, আরেকটা লক্ড। ড্রয়ারটা খুলতে হবে ইশারায়
বলতে বলল ওদের সাথে আসা নতু ন হাভালদার রানাকে। যেটা খোলা
ছিল, সেটা এদিক ওদিক দেখতে দেখতে বুঝল এই ড্রয়ার লক্ড না রাখার
কারণ। মামুলি কিছু ডকু মেন্টস-এর জেরক্স রাখা রয়েছে। ঘড়িটা একবার
দেখল সুদীপ্তা, আরেকবার রানার দিকে ইশারা করল, তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই
চাবি নিয়ে এলেন একজন বয়স্কা মহিলা। রানা কানের কাছে এসে পরিচয়টা
দিয়ে দিল জিজ্ঞাসা করার আগেই, 'সাবিত্রী দেবী'।
***
10
তাই আর সময় নষ্ট না করে সরাসরি প্রশ্ন করল ও, "আপনার পরিচয়টা
যদি একটু দেন ..."
-"হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়। আমার নাম সাবিত্রী দাস। বাড়ি কৃ ষ্ণনগর। তবে
কলকাতায় আছি বহুবছর। এবাড়িতে কাজ করছি ৪৫ বছর প্রায়।"
ভদ্রমহিলার দৃষ্টি চঞ্চল, অবনত। এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই দৃষ্টি,
যেন কতক্ষণে এই ঘর থেকে যেতে পারবেন, সে চাঞ্চল্য স্পষ্ট। উপরন্তু ,
এরকম একজন মানুষের মুখে উত্তরগুলো যেন বড় বেশি বসিয়ে দেওয়া,
কাঠকাঠ। শব্দগুলো আদৌ তার নিজের নয় বলেই মনে হল সুদীপ্তার।
-"হুম, চাবিটা।"
11
-"আচ্ছা, এই ড্রয়ারের চাবি কি আপনার কাছেই থাকে?"
-"না, মানে, হ্যাঁ, একটা চাবি মিষ্টির কাছে, আর একটা আমার কাছেই
থাকে।"
।।২।।
***
ওরা যখন বেরল নীলাভবন থেকে, তখন বিকেল হয়ে গেছে। গাড়িতে
চুপচাপ বসেই ছিল সুদীপ্তা। রাতু ল ড্রাইভ করতে করতে অনেক কিছুই
বলছিল, কিন্তু সুদীপ্তার ঐ দিকে পাত্তা দেওয়ার মতো ইচ্ছে নেই, তাই
স্বাভাবিক ভাবেই চুপচাপ নিজের ভাবনায় মগ্ন ছিল সুদীপ্তা।
-"কি আবার ভাবব ? হাই প্রোফাইল কেস, মিডিয়া এতক্ষণে জেনে গেছে
নিশ্চয়। এবার তো আমাদের অবস্থা খারাপ হবে।"
12
-"আমি প্রথমেই চেপে দিয়েছি। এত কিছু নেই টেনশন করার।"
রাতু লের মুখে হাসি। সুদীপ্তা একবার আড়চোখে রাতু লের মুখটা দেখে
হেসে আবার সামনে তাকাল। ওর বলার আগেই রাতু ল বলল, "বেশ কটা
ইন্টারেস্টিং জিনিস দেখেছি আজ জানিস।"
-"যেমন?"
-"দ্যাখ, আমি কথা বলে যা বুঝলাম, চিন্তিত তো নিশ্চয়, কিন্তু কোথাও যেন
একটু নিশ্চিন্তও।"
-"প্লিজ চুপ কর রাতু ল, যা পারছিস বকে যাচ্ছিস। কেস সল্ভ করতে হবে,
বানাতে নয়। আর কি এমন দেখেছিস, যে তোর এরকম মনে হল?"
13
বুঝব?"
-"পাপ?"
-"হুম।"
-"কি?"
-"মেয়ের সাথে, মানে লাবণ্য সান্যালের মেয়ের সাথে মায়ের সম্পর্ক টাও
না স্বাভাবিক নয়। মেয়েটা কিরকম অদ্ভু ত বিহেভ করছিল দেখলি?"
-"হুম, ঠিক আছে। মেয়েটার মায়ের উপর যেন ভীষণ রাগ, এমন একটা
ভাব যেন আপদ বিদায় হয়েছে, বাঁচা গেছে।"
14
-"দেরি করা যাবে না, কালই যেতে হবে।"
-এখনও অবধি কিছুই ক্লিয়ার নয়। সবার সাথেই আরেকবার কথা বলা খুব
দরকার। সবার মোটিভই দেখতে হবে। তবে তার আগে ডায়েরিটা আজ শেষ
করতেই হবে। ওটা থেকে অনেক ইনফরমেশন বেরোবে বলেই মনে হচ্ছে।"
-"আচ্ছা।"
-"কি বলতো?"
-"কি?"
-"দীপ মজুমদার।"
15
বোল্ড একজন মানুষ, অসাধারণ ব্যক্তিত্ব! আমি তো ইন্টারভিউ টিভিতে
এলেই হাঁ করে শুনতাম। কি সুন্দর কথা বলে! আর দুজনেই যেন একে
ওপরের পরিপূরক। এত সুন্দর মানাত দুজনকে, দুজনেই কি সুন্দর, শিক্ষিত,
সাকসেসফু ল, প্রভাবশালী, অথচ একে অপরের প্রতি কি অসাধারণ
আনুগত্য। কিন্তু , তারপর যখন এই দীপ মজুমদারের নামটা এল, আমার তো
বিশ্বাসই হয়নি। এ হতে পারে না। কিন্তু , এখন এত বছর পর; এখন সত্যি
অদ্ভু ত লাগছে..."
-"নারে, লাবণ্য সান্যালকে পছন্দ করে না এরকম মানুষ হয়ত হাতে গোনা।
এরকম একজন মানুষকে লোক ভালবাসবে, অ্যাডমায়ার করবে, পাগল হবে,
এটাই তো স্বাভাবিক।"
-"আর যারা পছন্দ করে না, তারা যখন নিজের পরিবারেরই লোক, তখন
কি বলবি?"
16
17
দ্বিতীয় পর্ব
।।১।।
রাতু ল সুদীপ্তার বিয়ে মাস ছয়েক পর। দুই বাড়ি থেকেই খুশী মনেই
মেনে নিয়েছে। দুজনে এখন একসাথেই থাকে, এটা অবশ্য বাড়িতে
জানে না। এতটাও খোলামনের মানসিকতা নেই বাড়িতে, তাই আর
জানায়নি। বাইরে থেকে মাকে ফোনটা করে ঘরে ঢু কল সুদীপ্তা।
রাতু লকে দেখতে না পেয়ে এদিক ওদিক দেখতে লাগল ও।
18
-"আমি তো খাবার কিনে নিলাম। তু ই আবার কি করছিস?"
19
একটা মানুষের এত গুণ কি করে থাকতে পারে? হাতের লেখা
যেন মুক্তোর মত ঝলমল করছে প্রতিটি পাতায়। পাতাগুলোয়
হলদেটে আভা, বেশ পুরোনো সেটা বোঝাই যাচ্ছে।
।।২।।
20
নিয়ে চলে যাচ্ছে ১৫-টো বছর আগের পুরোনো শহরটায়। কেউ এত
সুন্দর লিখলে হারিয়ে না গিয়ে উপায় কি? কেউ এত গুণের
অধিকারী কি করে হতে পারে? আর এরকম একজন মানুষের সাথেই
এমনটা হতে হল...
***
21
আজকের এই দুটো জায়গার মধ্যে একটা জিনিসই এক, তা হল
বৈভব। এটা ছাড়া সম্পূর্ণ বিপরীত দুটো জগত যেন। একদিকে কাল
বাড়ির প্রতিটা কোণে যেমন পাশ্চাত্যের ছাপ স্পষ্ট, শোবার ঘর থেকে
বসার ঘর পেরিয়ে বাগান সর্বত্র। অন্যদিকে আজ বনেদিয়ানা,
ঐতিহ্যে যেন মোড়া গোটা প্রাসাদোপম বাড়ি।
-"বসুন।"
-"আপনার নাম?"
22
চেষ্টা করেও মুখের অভিব্যক্তি পুরোপুরি লুকাতে পারলেন না
মহিলা। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে বললেন, "আমার ছেলের প্রাক্তন
স্ত্রী।"
23
হবে, ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়, যাই হোক না কেন। সন্দেহের তালিকায়
কিন্তু সকলেই আছে।"
24
এলোমেলো, হাতে দামী ঘড়ি, পায়ে স্লিপার। গায়ের রং উজ্জ্বল
শ্যামবর্ণ। চোখদুটো চশমার আড়ালে ঢাকা পড়লেও বেশ উজ্জ্বল।
বয়স মেরে কেটে ৪৫ এর মধ্যে। মুখে একগাল হাসি নিয়ে নমস্কার
জানাল অর্জুন রায়চৌধুরী। রগের দিকের চুলে রুপোলী আভা।
সুদীপ্তা এখনও অবধি একটি শব্দও খরচ করেনি। এবার মুখ খুলল,
"না, না, সে সব কোন দরকার নেই।"
25
-"থ্যাঙ্ক ইউ। বলুন।"
26
-"আপনাদের বিজনেস তো এখন খুব একটা ভাল চলছে না।"
।।৩।।
27
***
28
করে তু লেছে ব্যক্তিত্বকে। বেতের চেয়ার টেনে মুখোমুখি বসল ওরা।
***
29
করেন, সেটা হল একটা অসম্ভব ভাল বন্ধু । ভীষণ কাছের বন্ধু । ভীষণ
প্রিয় একজন মানুষ লাবণ্য। এর থেকে বেশি আর কি বলব বলুন?"
30
যাওয়ার..."
চুপ করে যায় দীপ। প্রশ্নোত্তর পর্ব চলতে থাকে, দাঁ বাবুকে
হ্যান্ডওভার করে ঘরের বাইরে বেরিয়ে সিঁড়ির দিকে আসে সুদীপ্তা,
রানা আর রাতু লকে বাকি দিকগুলো সার্চ করতে নির্দেশ দিয়ে উপর
দিকে আসতে থাকে ও। পুরো বাড়িটা একবার খুঁজে দেখা ভীষণ
দরকার। মনের ভিতর একটা খটকা লাগছে যেন।
***
হঠাৎ যেন মনে হল কেউ ঝট করে সরে গেল ছাদের দরজার কাছ
থেকে। সবকিছু বেশ পরিপাটি করে সাজানো, প্রথম ঘরটায় ঢু কে
এদিক ওদিক চোখ ঘোরাল সুদীপ্তা। এবাড়িতে দীপ মজুমদার যখন
একাই, তাহলে নিশ্চয় কাজের লোকই সব করে ঘরের কাজ। মানে
কাজের লোকের সাথেও কথা বলাটা দরকার। ঘরের ভিতর এদিক
ওদিক চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে একটা জিনিসের দিকে চোখ গেল,
কোথায় যেন দেখেছে চাবির রিঙটা, বেশ অন্যরকম, একটা নীল
কৃ ষ্টালের মতো। এরকমটাই দুই বাড়ির মধ্যেই কোন এক বাড়িতে
দেখেছে ও। চোখ বন্ধ করে ভাবতে ভাবতেই ঘর থেকে বেরিয়ে এল
31
সুদীপ্তা। আর তখনই হল শব্দটা। একটা কিছু মাটিতে পড়তে পড়তেই
কেউ খুব তাড়াতাড়ি তু লে নিল যেন জিনিসটা, ধাতব কোন
জিনিসের আওয়াজ। স্বাভাবিকভাবেই উৎসুক হল সুদীপ্তার
চোখদুটো। সঙ্গে সঙ্গে পিছন ঘুরে ঘর থেকে বেরতেই হতভম্ব হল
সুদীপ্তা। এখানে? এভাবে? ও তো এক্সপেক্টই করেনি!!!
32
তৃ তীয় পর্ব
।।১।।
33
আবার এবাড়িতে কাজও করে। আবার আপনিও এই বাড়িতে
কাজের সূত্রে আসেন।"
34
বেরিয়ে এল।
***
35
যাচ্ছে, যত দেরী হচ্ছে তত যেন তাকে খুঁজে পাওয়ার রাস্তাটা ধূসর
হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যে স্বেচ্ছায় হারিয়ে যায়, তাকে খুঁজে পাওয়া কি
এতই সোজা? ফোনটা বেজে উঠল সুদীপ্তার, অচেনা নম্বর।
"হ্যালো" বলতেই ওপাশ থেকে কাঁদো কাঁদো গলাটা ভেসে এল।
।।২।।
-"আমি বাড়িতে সত্যি বলে আসিনি, তাই আমার হাতে বেশি সময়
নেই।"
36
আমিও আর দেরী করতে চাই না।"
এটুকু বলে মাথা নীচু করে চুপ করে যায় পেখম। ছলছলে চোখদুটো
আড়াল করার চেষ্টা করে কয়েক সেকেন্ড। তারপর আবার বলে, "মা
বাবাকে ছোট থেকেই দেখে এসেছি কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। আমি
ওদের জন্য কতটা ইম্পরট্যান্ট সেটা আমি সত্যিই কোনদিন ফিল
করিনি। তারপর মা বাবার ডিভোর্স। আমি বুঝতেই পারছিলাম না
প্রথমে কার কাছে যাব আমি? কে আমায় রাখতে চায় এটা আমার
মাথায় আসেনি বিশ্বাস করুন। আমার মনে হচ্ছিল দুজনেই যদি
রাখতে না চায়, তখন আমি কোথায় যাব? কার কাছে থাকব? কিন্তু
তখন যখন মা আমার কাস্টডি নিয়ে কথা শুরু করে, আমি সত্যি খুব
অবাক হয়ে গেছিলাম সেদিন। বুঝতে পারছিলাম না, কি হচ্ছে?
আমাকে কাছে রাখার জন্য মা লড়ছে এটাই প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না।
তারপর থেকে মায়ের সাথে আমার সম্পর্ক টা বড় অদ্ভু ত জায়গায়
গিয়ে দাঁড়ায়। একবার মনে হতো, আর কেউ না থাক, মা আমার
জন্য আছে, থাকবে। নয়তো আমায় কাছে রাখার জন্য লড়ল কেন?
আরেকবার মনে হত, মা এত স্বার্থপর কেন? ঐ লোকটার জন্যই তো
মা বাবার ডিভোর্স, সমস্ত নিউজে, ম্যাগাজিনে, সোশ্যাল মিডিয়ায়
এই নিয়েই আলোচনা। মাথাটা দপদপ করত আমার এইসব নিয়ে
37
শুনতে শুনতে। খুব রাগ হতো, ঘেন্না হতো। ইচ্ছে করত এই সবকিছু
থেকে পালিয়ে যেতে।"
-"কে?"
38
-"তু মি এরকম বলছ, তার পিছনে নিশ্চয় যুক্তি সঙ্গত কারণ আছে
কোন, তো সেটা না বললে তো..."
-"ওরা মানে?"
।।৩।।
39
মানুষগুলো আলাদা।
***
40
আছে। বইটা খুলে পা দুটো মুড়ে স্টেশনেই বইয়ের পাতায় মশগুল
হয়ে গেল লাবণ্য।
-"কিরে, তু ই এখানে?"
41
কথা হয়েছে, হি ইজ আ সার্প মাইন্ড। হি ক্যান ডু ইট।"
-"হুম। অনেক হয়েছে, থাম এবার। নিজে এবার একটা দেখে শুনে
বিয়ে কর, আমরাও যাতে খাওয়ার সুযোগ পাই।"
***
***
42
বাড়িতে সত্যনারায়ণের পুজোও হয়নি, আর পরশু ডাক্তারের
রিপোর্ট টা আসার পর লাবণ্যরও খুব মনটা চাইছিল হোক আজ
পুজোটা। দিনটাও ভাল, গুরুপূর্ণিমা।
এবার অর্জুনের সাথে সম্পর্ক টাও ঠিক হবে নিশ্চয়। কপালে টিপটা
পরতে পরতে জানলার গরাদ দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে অন্যমনস্ক
হয়ে গেল লাবণ্য। এই লাল পাড় শাড়িটা আগের বছর অর্জুনই
দিয়েছিল ওকে, পরাই হয়নি। আজই প্রথম পরল, কই একবারও তো
অর্জুন বলল না, কেমন লাগছে।
43
বা এই বিয়েটাকে সুন্দর রাখার সব চেষ্টা অর্জুনই করেছে আর করছে।
হ্যাঁ, অর্জুন করেছে, অনেক করেছে, কিন্তু লাবণ্যর কি কোন অবদান
নেই? ও কি কিছুই করেনি? বহুবার বহুভাবে অর্জুন বলেছে,
বুঝিয়েছে ওকে। বহু অশান্তি হয়েছে, বহু ঝগড়া বাকবিতন্ডাও
হয়েছে। সব ঠিক হয়েছে, কিন্তু আবার যে কে সেই। অর্জুনকে
ভালবেসে বিয়ে করেছিল লাবণ্য। অর্জুন বরং চেয়েছিল আরও
কিছুদিন পর। লাবণ্যই আর দেরী করতে চায়নি। অর্জুনের সাথে
থাকলেই ও ভাল থাকবে, এই বিশ্বাসেই বিয়ের পিঁড়িতে তড়িঘড়ি
বসে পড়েছিল লাবণ্য। কিন্তু অর্জুন যে তখন বিয়েটা চায়নি, এটা
লাবণ্য ভাবেনি। কেন চায়নি অর্জুন? জীবনটা আরেকটু গুছিয়ে
নিতে চেয়েছিল। লাবণ্য কি ওর জীবনে ঢু কে পড়ে বরং আরও
এলোমেলো করেছিল ওর জীবনটাকে?
44
***
-"হুম।"
মুখটা বেশ গম্ভীর রাতু লের। রাতু ল যখন বাড়ি ফিরল তখনই ওর
সাথে একবার কথা বলা উচিত ছিল সুদীপ্তার।
-"হ্যালো।"
45
আসুন।"
46
চতু র্থ পর্ব
।।১।।
47
বেরোনোর জন্য একেবারে রেডি, তখন এই অশান্তিগুলোর কি
মানে? অর্জুনকে তো ও আগে থেকে বলেনি তা নয়।
তাহলে বেরোনোর মুখে হঠাৎ এরকম করে কি প্রমাণ করতে চাইল
ও? এক প্রকার জিদ করেই গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে এলো লাবণ্য।
রঘুদা গাড়ি চালাচ্ছিল, ও ওর ডায়েরিটা নিয়েই ব্যস্ত ছিল, আর
কাঁচের বাইরে তাকাচ্ছিল এটা দেখতে যে কতদূর এলো।
অর্জুনকে অনেক ছোট থেকে চেনে লাবণ্য, এখন কেন কে জানে
অর্জুনকে ঠিক চিনতে পারে না ও। নাকি আগেই চিনতে ভু ল
করেছিল, তাই এখন এত অচেনা লাগছে? লাবণ্য কোনোদিন
স্বপ্নেও ভাবেনি অর্জুন এরকম চিন্তাভাবনা পোষণ করতে পারে
কখনো, আর আজ যখন কথাগুলো...
যাক গে জোর করে কথাগুলো মন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা
করল লাবণ্য। পুচকিটাকে ছেড়ে আজ অব্দি বেরোয়নি ও এখনো।
এই তো সবে এক বছর হল গত ফেব্রুয়ারিতে, কি করছে কে জানে।
ঠাকু মার কাছে তো ভালই থাকে, মাকে বেশি না খুঁজলেই হল,
নয়তো কান্নাকাটি করবে। ও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি ফিরে
আসবে। সামনের দিকে আবার তাকাল লাবণ্য।
কিন্তু হঠাৎ করেই যে কি হয়ে গেল আচমকা। রং সাইড থেকে
একটা ম্যাটাডোর একেবারে গাড়ির কাছে চলে এল কোথা থেকে।
এত তাড়াতাড়ি সব কিছু হয়ে গেল যে কিছু বুঝে উঠতেই পারল না
লাবণ্য। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে জানলার এই পাশ থেকে ওই পাশে
যাওয়ার চেষ্টা করল।
রঘুদা গাড়ির স্টেয়ারিংটা যতটা সম্ভব ডান দিকে ঘোরানোর চেষ্টা
করছিল যাতে কোনভাবে ধাক্কাটা এড়ানো যায়, কিন্তু শেষ রক্ষাটা
আর হলো না। ম্যাটাডোরটা সজোরে এসে ধাক্কা মারল গাড়ির বাম
দিকের দরজায়। লাবণ্য বাম দিকেই বসে ছিল, নিজের মুখটা
ওইপাশে সরিয়ে নিল। নিজেও যতটা সম্ভব সরে গেছে ডান দিকে,
কিন্তু বাম হাতটায় একটা অসহ্য যন্ত্রনা অনুভব করল ও। তারপর
48
আর সেভাবে কিছু মনে নেই, শুধু ঐ কথাটা ছাড়া।
হসপিটালের বেডে অর্জুন সহ বাড়ির বাকি লোকজন যখন
পৌঁছালো তখনও লাবণ্যর সম্পূর্ণ চেতনা নেই, তবু ঐ সময়েও ও
ওর পেখম আর অর্জুনের কথাই ভাবছিল। বাচ্চাটা এবার ওকে ছাড়া
কি ভাবে থাকবে। ওর আধবোজা চোখ দুটো এদিক ওদিক খুঁজছিল।
এত ছোট বাচ্চাকে তো আর হাসপাতালে নিয়ে আসা সম্ভব না, ওর
মাথায় তখন এসব আসেনি, কিন্তু তখনও অর্জুন ওর পাশে বসে
একই কথা বলছিল, "এত বার বারণ করলাম, এখন এলো তোমায়
তোমার দীপ বাঁচাতে? কে দেখছে এবার? সেই তো আমিই। "
আর চোখ দুটো খুলতে ইচ্ছে করেনি লাবণ্যর। ওর বাম হাতটা
ভেঙেছিল, মাথাতেও চোট লেগেছিল কিন্তু সেরকম গুরুতর নয়,
স্টিচ হয়েছিল খান চারেক। সেই প্রথমবার জীবনে মনে হয়েছিল
কেন মাথার চোটটা আরো বেশি গুরুতর হলো না? তাহলে আর
চোখ দুটো খুলতেই হতো না এসব শোনার জন্য।
।।২।।
গাড়ির তীব্র হর্ণে যেন জেগে উঠল সুদীপ্তা। বাইরে বৃষ্টিও আরম্ভ
হয়ে গেছে।
রাতু ল গাড়ি চালাতে চালাতে একবার সুদীপ্তার দিকে দেখল, ও
হঠাৎ চমকে উঠল কেন?
"কিরে কি হলো তোর আবার?"
"আর কতক্ষণ?"
"কি করব বল জানিসই তো যা ট্রাফিক। তার মধ্যে আজ আবার
বৃষ্টি, এখনো ১৫ মিনিট লাগবে মনে হচ্ছে।"
সুদীপ্তা যে ভিতরে ভিতরে কতটা উশখুশ করছে আর অস্থির হচ্ছে,
সেটা জানে রাতু ল। ও বুঝতে পারছে কিন্তু ওর কিছু করার নেই।"
ফোনটা বাজছে রাতু লের। সুদীপ্তা নিজের ফোন টা চেক করতে
গিয়ে দেখল ফোনটা চার্জ আউট হয়ে সুইচ অফ হয়ে গেছে।
49
-"ইস!"
ফোনটায় একবিন্দু চার্জ নেই, এরকম কখনো করেনা সুদীপ্তা,
আজ কি করে এটা করল কে জানে।
"কটা বাজে?"
"৮ টা বেজে গেছে মনে হয়। কেন ঘড়িটা পরেও বেরোসনি?"
"পরে বেরোলে কি আর তোকে জিজ্ঞাসা করতাম?"
"আমার উপর চোটপাট করছিস কেন? আমি কি করলাম? আর
এত চাপ তো তু ই কখনো নিতিস না, আরে বডিটা তো লাবণ্য
সান্যালের নাও হতে পারে। "
"আর যদি হয়?"
আর কিছু বলল না রাতু ল, গাড়িটা ডান দিকে হাত দেখিয়ে
ঘোরাল। ব্যস, এটাই লাস্ট মোড়।
***
এদিকটায় এমনিতেই প্রচুর ঝিল,পুকু র। পুলিশি প্রহরায় মোড়া
পুরো রাস্তাটা। ব্যারিকেড সরিয়ে ভিতরে ঢু কে গেল ওরা, তখন
ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়েই চলেছে। আজ গিয়ে আর কিছুতেই
ইনভল্ভ হতে পারছে না ও, রাতু লই এগিয়ে গিয়ে কাজ শুরু করল।
সুদীপ্তা পুরো ব্ল্যাঙ্ক হয়েই দাঁড়িয়ে ছিল চুপচাপ। আশেপাশে কে কি
দেখছে, কে কি বলছে, কে আছে না আছে কিছুই দেখার মতো
মেন্টালিটি নেই আর ওর।
ঝিলটার পাশে একটা বেশ বড় লাইট জ্বলছে, জলের নীচ থেকে
এখনো ওঠেনি লোকগুলো, একটা বাচ্চা ছেলে জলে নেমেছিল
খেলতে। এরা এখানকার লোকাল, প্রায়দিনই এরা নামে, আজও
বিকেলে নেমেছিল, কিছু একটা দেখে ভয় পেয়ে উঠে এসেছে।
তারপর স্থানীয়রা জানতে পেরে পুলিশ কে খবর দিয়েছে।
ওদিকে লাবণ্য সান্যালের বাড়ির লোকজনও এসে গেছে। বাড়ির
লোকজন বলতে মা বাবা আর ওই সাবিত্রী পিসি। পেখমকে এখনও
কিছু জানায়নি হয়ত, কই ওকে তো দেখছে না।
50
একটা মূর্তি র মতন দাঁড়িয়ে আছে মানুষটা, মানে সাবিত্রী দেবী। মা
বাবা তু লনামূলকভাবে একটু যেন স্বাভাবিক।
সাবিত্রী দেবীর চোখগুলো দূর থেকে দেখছিল সুদীপ্তা। না, এই
মানুষটা সত্যিই ভালবাসে লাবণ্যকে, চোখের ভাষা এতটা মিথ্যে
হতে পারে না।
নিজেকে কখনো এতটা অসহায় লাগেনি ওর। এখনো সময়
লাগবে, বৃষ্টির জন্য আরো দেরি হচ্ছে। ছায়াতে গিয়ে বসল ও। বার
বার ওর মাথার মধ্যে লাবণ্যর লেখা ডায়েরিটার শব্দগুলোই ঘুরপাক
খাচ্ছিল।
।।৩।।
ঘরে বাইরে যেখানেই হোক মানুষের একটা অন্তত মাথা রেখে শ্বাস
ফেলার জায়গা থাকে। লাবণ্য এতটা সাকসেস এতটা অ্যাচিভমেন্টও
চায়নি যার সামনে ওর ভাল থাকার ইচ্ছেটাও লোকের কাছে খুব কম
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। আজকের দিনটার কথা অর্জুনকে অনেকদিন
ধরেই তো বলে রেখেছিল ও। আজকের দিনটা অন্তত একটা সন্ধ্যে
কি অর্জুন ওর জন্য রাখতে পারতো না?
পারতো, মনে থাকলে নিশ্চয় পারতো। আর শুধু অর্জুন কেন। ওর
নিজের মা বাবা? সকলেই তো ওর নিজের। নাকি সকলেই ওকে
ছেড়ে এগিয়ে গেছে, ও তো এগোতে চায়নি একা।
আজ সকাল থেকে কেউ একবারের জন্যও একটি উইশ অব্দি
করেনি ওকে, প্রথমে ও ভেবেছিল হয়তো ওকে সারপ্রাইজ দেবে
বলে সবাই নাটক করছে। কিন্তু যখন সারাটাদিন কেটে গেল, তখন
ওর বুঝতে বাকি রইলো না যে আসলেই কারো সত্যিই মনে নেই।
শুধু পিসি আর পেখম ছাড়া। পেখম সকাল বেলাতেই আধো আধো
গলায় উইশ করে স্কু লে গেছিলো, ওই শিশু টা আর কি বা জানে।
আর সাবিত্রী পিসি ওর ফ্লাইট ধরতে বেরোবার আগে ওকে পায়েস
টুকু করে খাইয়ে দিয়েছিলো। তারপর ওর কলকাতা থাকে বেঙ্গালুরু
পৌঁছে সারাটাদিন কেটে গেছে, কারো একবার মনেই পড়লো না।
51
উল্টে মায়ের ফোন করার কারণ এটা ছিল যে মিটিং সাকসেসফু ল
হলো কিনা সেটা জানা। ব্যস! এটুকু ই। প্রত্যেকটা মানুষ যাদের
নিজের বলে জানত লাবণ্য, এভাবে লাভ ক্ষতি হিসেব করে ওকে
হারিয়ে দিয়ে চলে যাবে ও স্বপ্নেও ভাবেনি। মাঝে মাঝে মনে হয় ওরই
কি দোষ ছিল? কিন্তু ও তো কোনোদিনই এতটা উচ্চাকাঙ্খী ছিল না,
ও তো শুধু অর্জুনের স্বপ্নের সাথে তাল মিলিয়ে ওকে সাথ দিতে
চেয়েছিল মাত্র, তার পরিবর্তে ও কি এগুলোই ডিজার্ভ করে? ওর
দোষটা কোথায়? অর্জুনের সাথে কেজো কথা ছাড়া আর কিছুই কথা
হয়নি সারাদিন। নিজের উপর নিজেরই হাসি পাচ্ছিল লাবণ্যর।
হোটেল থেকে শহরটা ভারী সুন্দর দেখা যায়, ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে
রেলিঙের উপর হাতে ভর দিয়ে আলো ঝলমলে শহরটাই দেখছিল
লাবণ্য। তখনি আবার বাজল ফোনটা।
আননোন নম্বর, এখন আর সেভাবে যেকোনো নম্বর তোলে না
লাবণ্য, অনেক সমস্যা হয়। কিন্তু ফোনটা বারবার বাজছে, তাই
অবশেষে রিসিভ করলো ফোনটা।
-"হ্যালো"
-"হ্যালো"
-"আপনার সাথে দুমিনিট কথা বলতে পারি ম্যাডাম। "
-"আপনি কে বলছেন বলুন আগে সেটা।" বেশ বিরক্তি নিয়েই
বললো কথাটা লাবণ্য।
-"ম্যাডাম আপনার মেজাজটা দেখছি এখনো একইরকম আছে,
বরং আরো বেড়েছে। তা থাকবে নাই বা কেন। মেজাজ করা
আপনার মানায় বৈকি। "
-"এক সেকেন্ডের মধ্যে মাথাটা খেলানোর চেষ্টা করলো লাবণ্য।
খুব চেনা চেনা লাগছে। অর্জুন? অর্জুন কি তাহলে... চিৎকার
করতেই যাচ্ছিল অর্জুন বলে তখনি ওপাশ থাকে মানুষটার বলা
শব্দগুলো সব তালগোল পাকিয়ে গেল লাবণ্যর।
-"কিরে! এই বুদ্ধি নিয়ে তু ই ব্যবসা করিস? এখনো চিনতে পারলি
52
না? তোর জন্মদিন আর তু ই এখন আমার শহরেই এসেছিস, সেটা
জেনেও কি করে ফোন না করে থাকি বলতো? তা সেই কখন থেকে
রিসেপশনে আমায় আটকে রেখেছে, পারমিশন নেই বলছে। তাই
বাধ্য হয়ে তোকে ফোনটা করতেই হলো। নীচে আসবি নাকি এখনো
বুঝতে পারছিসনা কিছু?"
-"দীপ!"
কাঁপা গলায় শুধু এটুকু ই বলতে পেরেছিল লাবণ্য। অজানা অচেনা
শহরে একলা এই বন্ধু টার সাথেই সেদিন নিজের জন্মদিন পালন
করেছিল লাবণ্য।
***
-"কিরে! আরে এই সুদীপ্তা। তোর কি হয়েছে বলতো! কখন থেকে
ডাকছি।"
চমকে উঠলো সুদীপ্তা, ডায়েরির ব্যাপারটা মাথা থাকে বেরোছেই
না ওর।
"সরি। "
হাত দুটো দিয়ে এলোমেলো চুলটা ঠিক করে চোখ মুখটা মুছে
নিলো সুদীপ্তা। তারপর বলল, "বল কি বলছিলি। "
"দীপ মজুমদার ফোন করেছেন, উনিও জানতে পেরেছেন
ব্যাপারটা। উনিও এখানে একবার আসতে চাইছেন, বারবার
রিকোয়েস্ট করছেন। গলা শুনেই মনে হলো ভীষণ টেনশন করছেন,
একলা আর থাকতে পারছেন না। কিন্তু সবাইকে তো এলাউ করতে
পারি না। কি বলি বলতো? এত বড় একটা লোক, কিছু বলতেও
পারছি না। "
-"আসতে বলে দে, উনি যেকেউ নন। উনি অন্তত এখানে থাকাটা
ডিজার্ভ করেন, বাকি অনেকের থেকে। "
কথাগুলো অদ্ভু ত ভাবেই বলল সুদীপ্তা, বলে উঠে গিয়ে দাঁড়ালো
সামনেটায়।
তখনই শোরগোল শোনা গেল, বডিটা এবার উঠছে।
53
এত টেনশন এর আগে জীবনে কোনোদিন হয়নি সুদীপ্তার। বুকের
ভিতর যেন ঝড়ের বেগে কেউ হাতু ড়ি পিটে চলেছে। মাথাটা পুরো
ব্লক হয়ে গেছে, আশেপাশের কোনো শব্দও আর কানে আসছে না
ওর। কানে তালা পড়ে গেলে যেমনটা হয় অনেকটা তেমন। শুধু
লোকজনকে দেখছে, সবাই দৌড়াদৌড়ি চেঁচামেচি কিন্তু কোনো শব্দ
আর ওর কানে পৌঁছচ্ছে না। ওর সম্পূর্ণ কন্সেন্ট্রেশন এখন জলের
দিকে। জল থেকে বডিটা যত উঠছে তত একটা পচা গন্ধে চারিদিক
ভরে যাচ্ছে। সবাই নাকে মুখে রুমাল চাপা দিচ্ছে, কিন্তু সুদীপ্তার যেন
কোনো ভ্রূক্ষেপই নেই। জলাশয়ের পাশে ঘাটের কাছে বডিটা সম্পূর্ণ
তোলা হতেই ঝড়ের গতিতে এগিয়ে গেল ও। ওকে শুধু এটুকু
জানতে হবে এটা লাবণ্য কি না। এক একটা সেকেন্ডও যেন এক
একটা যুগ লাগছে এখন। বাড়ির লোকই পারবে ডিটেক্ট করতে, তারা
এখনো খানিকটা দূরেই দাঁড়িয়ে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে, তাদের
দিকে তাকালো সুদীপ্তা। চোখের ইশারায় বললো তাড়াতাড়ি এগিয়ে
আসতে এদিকে।
বডি ডিগ্রেড করেছে যেরকম তাতে চিনতে পারা বেশ মুশকিল।
একমাত্র নিজের লোকই যদি পারে চিনতে। আর যদি এটা লাবন্যর
বডি না হয় তাহলে তো... হাঁপ ছেড়ে বাঁচবে সুদীপ্তা। ভগবানকে
ডাকছে শুধু ও, আর একটু সময় চাই। ও মানুষটাকে খুঁজে বের
করবেই।
প্রথমেই এগিয়ে এলেন লাবণ্য সান্যালের বাবা, আতঙ্কগ্রস্থ চোখ
মুখ। মা এখনো পিছনেই দাঁড়িয়ে, সাবিত্রী দেবী সামলাচ্ছেন, কিন্তু
চোখ এদিকেই। লাবণ্য সান্যালের মা ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছেন।
যতই যাই হোক, মা তো। সুদীপ্তা খুব ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল
ওই মানুষ দুটোকে। এই মানুষ দুটোর উপর তো সন্দেহ করতে মন
চাইছে না কিন্তু রাতু ল যা বললো আর ডায়েরি থেকেও ও যতটুকু
বুঝলো তাতে তো... তখনি আর্ত স্বরে চিৎকার করে উঠলেন লাবণ্য
সান্যালের বাবা।
54
-"লাবু"!
প্রচন্ড রকমভাবে চমকে উঠল সুদীপ্তা। ও সত্যিই মনে প্রাণে
এক্সপেক্ট করেনি এটা। সাবিত্রী দেবীর চোখ বিস্ফারিত। অরুন্ধতী
দেবী জ্ঞান হারাচ্ছেন হয়তো, বসে পড়লেন সামনের টিলাতে।
সুদীপ্তা তাকাল মরদেহটার দিকে।
রাতু ল ফোন নিয়ে বেরিয়ে গেল বলতে বলতে," হ্যাঁ, বডিটা
লাবণ্য সান্যালের, ফ্যামিলি এই মাত্র কন্ফার্ম করেছে!"
বসে পড়ল সুদীপ্তা!
55
পঞ্চম পর্ব
।।১।।
আজ সকাল থেকে অঝোরে বৃষ্টি। থামার কোনো নামগন্ধই নেই।
আজ মনে হয় সমস্ত ঘরে ঘরেই টিভি চলছে। নিউজ
চ্যানেলগুলোতে এখন একটাই খবর। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক, এত
বড় একটা ঘটনা ঘটলে এখন নিউজ চ্যানেলগুলোর আর কি চাই।
এটা নিয়েই চলবে কিছুদিন।
কফি মাগটা নিয়ে চেয়ারটা টেনে বসল সুদীপ্তা। এরকমটা কখনোই
হয়নি, এইবারই প্রথম হল ওর সাথে যে একটা কেস ওকে এভাবে
নাড়িয়ে দিয়ে গেল। কিছু স্বাভাবিকভাবে আর ভাবতেই পারছে না ও,
কন্সেন্ট্রেশনই করতে পারছে না। বার বার ভেসে আসছে মুখটা
কালকের। অথচ এসব তো আর ওর কাছে নতু ন নয়। রাতু ল ঠিকই
বলছিল, ও একটু বেশিই এটাচড হয়ে গেছে। অবসেসড? না না।
হাতের আঙ্গুলটা নিয়ে বার বার টোকা মারছিল আনমনেই
টেবিলটাতে, বাইরের বর্ষণের দিকে তাকিয়ে। এবার উঠে পড়লো,
ল্যাপটপটা নিয়ে এসে বসল এই ঘরটায়। কেমন যেন তারটা জুড়ছে
56
না। যদিও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া অবধি কিছুই বোঝাও
যাচ্ছে না, কিন্তু তাও ইন্সটিঙ্কট যেন একটা অন্য রকম ইঙ্গিত করছে।
ল্যাপটপটা খুলে গুগল সার্চ বার-এ কারসরটা নিয়ে গিয়ে থামল
সুদীপ্তা। গুগল যা বলবে তা সবাই জানে। কিন্তু ডায়েরির কথাগুলো
কেউ জানে না। ওগুলো তো ধ্রুব সত্য। মানে তাই তো হওয়া
উচিত।
আচ্ছা ডায়েরিটায় লেখা সবকিছু লাবণ্যরই লেখা তার কি
নিশ্চয়তা আছে? সত্যিই তো, এটা তো কখনো ভেবে দেখেনি ও।
খুব সহজেই ওই ডায়েরিটা ওর হাতে চলে এসেছিল, কেউ যেন
চাইছিল ওটা ওর হাতে পৌঁছাক। বড় বেশিই মসৃণভাবে ওর হাতে
এসেছিল ডাইরিটা। এইভাবে তো ভাবেনি ও।
গুগল-এ গিয়ে নামটা লিখে সার্চ করল ও। মনটা কাল থেকেই খচ
খচ করে চলেছে, শান্ত হতে পারছে না, মানতেই পারছে না, বিশ্বাসই
হচ্ছে না এখনো। যেন এটা অস্থায়ী এক মুহূর্ত , পরমুহূর্তে ই সব ঠিক
হয়ে যাবে। অথচ লাবণ্য সান্যাল তো ওর কেউ হয় ও না।
অনেকগুলো লিংক ভেসে উঠলো সামনে, বিভিন্ন জিনিসের মধ্যে
ওর হাতের আঙ্গুল আর ওর নিউরনগুলো ঠিক কি খুঁজে চলেছে
ও নিজেও জানে না।
একটা খবরে গিয়ে আঙ্গুলটা থমকে দাঁড়ালো ওর। ডোমেস্টিক
ভায়োলেন্স! সিরিয়াসলি!
খুব ছোট্ট করে একটা জায়গায় লেখা, দুই চার লাইনের মধ্যে,
চোখে পড়বার মতো নয়ও।
আরো কয়েকটা লিংকে গিয়ে ক্লিক করে খবরটা ভেরিফাই করার
চেষ্টা করল। সেরকম কিছু পেল না, মানে যদি এরকম কিছু হয়েও
থাকে সেটা নিয়ে বেশি জলঘোলা হওয়ার আগেই ধামাচাপা দিয়ে
দেওয়া হয়েছে সবকিছু। আর এখন ডেডবডি পাওয়ার পর এই
জিনিসগুলো সম্পর্কে নাড়াচাড়া করাও... এখন আর কতটা ওরা
সহযোগিতা করতে চাইবে বা পারবে? ২৪ ঘন্টার মধ্যে ময়নাতদন্তের
57
রিপোর্ট ও এসে যাবে হাতে। রিপোর্ট যাই আসুক, ব্যাপারটা যতটা
দ্রুত ঘটে গেল ততটা সহজ সরল লাগছে না ওর। মিডিয়ার
প্রেসারও বাড়ছে। আজ রাত্রে ওর ডিউটি, রাতু ল আর কিছুক্ষণের
মধ্যেই এসে যাবে, ওর সাথেও কথা বলাটা দরকার। পুরোনো খবরের
কাগজের থেকে ডিটেইলে যদি কিছু পাওয়া যায় তাহলে অন্তত
কতটা সত্যি মিথ্যে খবরটা তার একটা আন্দাজ পাওয়া যাবে।
মোবাইলটা নিয়ে ফোন লাগাল। কাজে যাওয়ার আগেই একবার
সুকান্তদার সাথে দেখা করে যেতে হবে। সুকান্তদা জিনিয়াস, ও জানে
না এরকম ঘটনা সারা পৃথিবীতেই হাতে গোনা। ডিটেইলে না
জানলেও সমস্ত বিষয়ে অসাধারণ ক্লারিটি মানুষটার। হেল্প করতে না
পারলেও কোথা থেকে হেল্প পাওয়া যাবে সেটা ও বাতলে দিতে
পারে। আর দেরি করা যাবে না। কথা বলে ফোনটা রেখে ঘড়িটা
দেখল একবার, এখনই বেরিয়ে পড়া উচিত, বৃষ্টিটাও একটু ধরেছে।
উঠে পড়ল ও।
***
সুকান্তদার বাড়ি এর আগে একবারই এসেছিল সুদীপ্তা। বেশিরভাগ
সময় অফিসেই দেখা করতে গেছে। আজ বলল ছুটি নিয়েছে তাই
অগত্যা এখানে। খুঁজে পেতে একটু অসুবিধা লাগল বটে, আসলে
অনেক দিন আসা হয় নি। রাস্তাঘাট দোকান বাজার অনেকটা বদলে
গেছে। কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুলল বৌদি। এক্সপেক্ট করেনি
রমাদিকে সুদীপ্তা তাই প্রথমে কি বলবে খুঁজেই পাচ্ছিল না। মুখে হাসি
টেনে কু শল বিনিময় শুরু করতেই বৌদি ডেকে ড্রয়িং রুমে বসাল।
ফ্ল্যাটটা বেশ চেঞ্জ হয়ে গেছে তো, ইন্টেরিয়র ডেকরেটর বেশ
ভালই কাজ করে গেছে তাহলে। বৌদি সুকান্তদাকে ডেকে দিয়ে
ভিতরে গেল।
-"দেখ সুকান্তদা আমার হাতে একদম সময় নেই..."
সুকান্ত দা ওকে শেষ করতে না দিয়েই বলল, যা বলছি চুপচাপ
শোন, আর এই কাগজগুলোয় তোর অনেকটাই কাজ হয়ে যাবে
58
আশা করি। "
-"ওকে। ফোনে বলতেই কাজ শুরুও করে দিয়েছ!"
-"না করে উপায় কি? দ্যাখ, আমার কাছে যা ইনফরমেশন আছে
তাতে এই ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এর ব্যাপারটা পুরোপুরি মিথ্যে
নয়। বরং এটাকে মেন্টাল এবিউস বলা বেটার। ইনফ্যাক্ট এই মেন্টাল
টর্চারই ওদের ডিভোর্সের একটা কারণ। দীপ মজুমদারের সাথে কি
ছিল সেটা আমার জানা নেই, বাট অর্জুন রায় চৌধুরীর সাথে সব
কিছু ঠিক ছিল না এটা ফর সিওর।"
-"হ্যাঁ সেটা তো আমিও জানি যে সব কিছু ঠিক ছিল না। কিন্তু এটা
এক্সপেকটেড ছিল না। তু মি এগুলো জানলে কি ভাবে? মানে
সোর্স... "
-"আমার সোর্স যে অথেন্টিক এই বিষয়ে আসা করি তোর সন্দেহ
নেই।"
-"না না... তা বলছি না... "
-"আরো একটা সোর্স হচ্ছে তোর বৌদি... "
-"মানে?"
-"মানে এটাই যে ও লাস্ট কয়েক বছর ধরে 'গোল্ডেনট্রি' তে কাজ
করছে, তো অফিসে তো সব খবরই ছড়ায়, আর দেখাও যায়। তো
এখন কেসটা হয়েছে বলে এসব নিয়ে নাড়াচাড়া করছি, কিন্তু
জানতাম এসব কেচ্ছা অনেক আগে থেকেই। তোর বৌদি বাড়ি ফিরে
সবই বলতো তো।"
-"ওহ মাই গড! এটা তো জানতামই না। এটা তো দারুন লিড,
বৌদির সাথে একটু কথা বলা যাবে প্লিজ?"
-"হ্যাঁ বল। অফিস ওদের তো আজ ছুটি। ও আরো কিছু যদি
বলতে পারে। এই রমা, একবার এস না।"
***
-"দেখো অফিস এ যা কিছু শুনেছি আমি সেগুলোই তোমায়
বলছি, কারণ আমার কাছে তো আর কোনো ফু লপ্রুফ প্রমাণ নেই
59
তাই যাচাইটা তোমাকেই করতে হবে। অনেক কথা সত্যিও হয় না
বাড়িয়ে চাড়িয়ে লোকে বলে, এর মধ্যে সত্যি যেমন আছে তেমনি
অসত্যও কিন্তু আছে। যাই হোক, সবার আগে এটাই বলব যে
মানুষটা ভীষণ ভীষণ ভাল একজন মানুষ ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবন
নিয়ে বলছি না, কিন্তু অফিস এ যতবারই দেখেছি বা আমাদের জন্য
কোম্পানির জন্য যথেষ্ট করেছেন। প্রতিটি কর্মচারী এই কথা বলবে।
আর এই আনুগত্য ওনার প্রতি এই কারণেই, কারণ উনি কর্মচারী
আর কোম্পানির জন্য সত্যিই ভাবতেন আর অনেক করেওছেন।
মানে অর্থের অহংকারে মাথা ঘুরে যায়নি, সবদিন পা-টা মাটিতেই
ছিল তাই কর্মচারীদের জন্যও একইভাবে ভেবেছেন করেছেন। এবার
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা যদি বলতে হয় আমি বার তিনেক ওনার
সাথে মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। যতবারই গেছি ভীষণ
পসিটিভ একটা ফিলিং আসত। কেন জানি না কিন্তু ওনার কথা বলার
ধরণ, ওনার হাম্বলনেস এগুলো খুব টানত আমায়। আর অর্জুন রায়
চৌধুরী সম্পূর্ণ বিপরীত ধারার মানুষ ছিলেন। আমি এখানে ভাল
খারাপ এসব বলছি না কিন্তু উনি একদম আলাদা ছিলেন। অফিস খুব
কমই এসেছেন বা আমাদের সাথে কখনো দেখাও হয়নি। এখানেই
তফাৎ, একজন এলে সবাই ভয় পেত আরেকজন এলে সবাই খুব
খুশি হত। আশা করি বোঝতে পারছি তোমায় কি বলতে চাইছি। "
-"হুম। বুঝলাম। আচ্ছা আরেকটা কথা, এই যে দীপ মজুমদারের
সাথে সম্পর্ক টা, এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারবে?"
-"দেখো সত্যি মিথ্যে তো জানি না। তবে হ্যাঁ, শুনেছি কিছু একটা
সম্পর্ক ছিল যার জন্য অর্জুন রায়চৌধুরীর সাথেও সম্পর্ক খারাপ
হয়। এবার এখন আমাদের সমাজের নিয়মই হচ্ছে কখনো কারো
সাথে একটু বেশি কথা বললে বা বেশি বন্ধু ত্বপূর্ণ হলেও লোকে সেটা
বাঁকা চোখেই দেখে। এবার জানি না। আর একটা কথা, আর যে যাই
বলুক, আমি এটা বিশ্বাসও করব না কোনোদিন যে লাবণ্য সান্যাল
আত্মহত্যা করতে পারে। অসম্ভব। কেউ বিশ্বাস করবে না। কিছু তো
60
ঘটেছে, ইনভেস্টিগেশন দরকার।"
একমনে কথাগুলো শুনলো সুদীপ্তা, কিছু বলল না। রমাদির কথায়
লাবণ্য সান্যালের বিষয়ে একটাও খারাপ কথা শুনলো না, হয়তো
রাতু ল-এর কথা মতো ইনিও সুদীপ্তার মতো অবসেসড লাবণ্য
সান্যালকে নিয়ে।
-"আচ্ছা, লাবণ্য সান্যালের এমন কোনো বিষয়ে কিছু খেয়াল
করেছেন বা জেনেছেন কখনো যেটাকে নেগেটিভ বলা যায়। আই
মিন... "
-"হ্যাঁ দোষে গুণেই মানুষ, গুণ থাকলে দোষ তো থাকবেই। তবে
আমার ঠিক জানা নেই। ওনার কাছের মানুষরা এটা ভাল বলতে
পারবেন।"
-"হুম। ওনার মা বাবা মেয়ে প্রাক্তন স্বামী শ্বশুরবাড়ি কারো কাছ
থেকেই সেভাবে ভাল কিছু শুনিনি। কিন্তু বাইরের সমস্ত মানুষ এত
ভালবাসে এত শ্রদ্ধা করে। এইজন্যই অদ্ভু ত লাগছে প্রথম থেকেই। "
-"সেকি। তারমানে..."
-"তারমানে এটাই দুটো সম্পূর্ণ আলাদা পৃথিবীতে দুটো সম্পূর্ণ
আলাদা মানুষ হয়ে বাঁচেন লাবণ্য সান্যাল। নয়তো এরকম তো
হওয়ার কথা নয়। "
-"বাঁচতেন। "
-"ও হ্যাঁ, সরি। "
-"হয়তো। কর্মজীবন আর ব্যক্তিগত জীবন কি সম্পূর্ণ আলাদা?
তাহলে সাধারণ কর্মচারীদের জন্যও এত এম্প্যাথি কেন ছিল? এ
থেকে তো এটাই বোঝায় যে মানুষটা সত্যিই ভাল ছিল?"
-"প্রশ্নটা ভাল খারাপের নয়, প্রশ্ন হল এমন কোনো ঘটনা যেটা
তার ব্যক্তিগত জীবনকে তিক্ত করে তু লেছিল, কর্মজীবনে সেই
ঘটনার প্রভাব পড়েনি তাই সব কিছু ঠিক-ই ছিল।"
-"আচ্ছা। কিন্তু তার সাথে মৃত্যু... "
-"সেটাই তো খোঁজার চেষ্টা করছি। যাক গে, রিয়েলি থ্যাংক ইউ।
61
আজ উঠি। দরকারে আবার যোগাযোগ করে নেব। আপনি কিছু
জানাতে চাইলে আমায় একটা ফোন করে নেবেন। "
-"হ্যাঁ হ্যাঁ,একদম। "
।।২।।
62
লাগিয়ে এসেছে, খুব জরুরি কাজটা, কিন্তু আনফিসিয়াল। উঠে
বারান্দায় বেরিয়ে ফটোটা দেখে আবার ঘরে ঢু কে এলো সুদীপ্তা।
-"প্লিজ কিছু বলুন!!!"
-"আরে আমি কি বলবো আর? কি বলবো আমি? কিছু বলার মুখ
আছে আর আমার?" হঠাৎ করেই চিৎকার করে উঠলেন অরুন্ধতী
দেবী। কান্নায় ভেঙে পড়লেন আর্ত কণ্ঠস্বরে।
সুদীপ্তা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আবার চিৎকার করে উঠলেন
অরুন্ধতী দেবী, বেশভূ ষা আলুথালু, চোখ লাল।
-"কিছু বলার মুখ নেই আর আমার। কম বয়স থেকেই সংসারের
সমস্ত দায় দায়িত্ব নিজের কাঁধে তু লে নিতে বাধ্য হয়েছিল মেয়েটা।
সবদিন নিজের দায়িত্বটুকু পালন করে গেছে কিন্তু নিজের জীবনে
কোনোদিন শান্তি পায়নি। স্বার্থপরের মতো কোনোদিন ওর কথা
বোঝার চেষ্টাই করিনি। আজ ওর পরিণতির জন্য আর যেই দায়ী
হোক, আমরাও নিজের দায় অস্বীকার করতে পারি না। আমি হয়তো
সত্যিই ভাল মা হতে পারিনি,দুজনকেই..."
-"তু মি দয়া করে এখন নিজেকে একটু সামলাও অরুন্ধতী।"
বাইরে থেকে দেবীপ্রসাদের গলার স্বর ভেসে এলো, কখন থেকে
উনি ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন?
***
-"ওদের জীবনে সমস্যা অনেক দিন থেকেই শুরু হয়ে গেছিল,
কিন্তু আমি বা আমরা কোনোদিনই সেটা বোঝার বা দায়িত্ব নিয়ে
সেটা ঠিক করার চেষ্টা করিনি। অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভাল
ছিল না। যখন একটু একটু করে সব ঠিক হচ্ছিল তখন ওদের মধ্যে
সমস্যাও বাড়ছিল, কিন্তু আমরা সেই দিকটা কোনোদিন দেখতেই
চাইনি, তখন মাথায় এটাই ঘুরত যে ওদের মধ্যে ঝামেলার কারণে
তার এফেক্ট ওদের বিজনেসে না পড়ে। কোনোভাবেই নিজেদের যে
দিন ফিরেছিল সেটাকে হারাতে চাইছিলাম না। এতটাই স্বার্থপরের
মতো ভাবতাম মা হয়ে। সবসময় ঐদিকেই মন দিতে ওকে বাধ্য
63
করতাম, আর সমস্যাটাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করতাম।
বেশিরভাগ ব্যবসার অংশীদারি সব অর্জুনের নামেই ছিল, তাই যখন
দীপের কথা সামনে আসে তখন কিছু জানার বোঝার চেষ্টা না করে
ওকেই দোষারোপ করে গেছি। ওর দোষটাকেই দেখে গেছি, কখনও
জানার চেষ্টাই করিনি আদৌ কি ছিল? অর্জুনের প্রতিটি কথাকে
সত্যি মেনে গেছি। আর আজ, সে সুখেই আছে, আর আমরা আবার
সব হারিয়ে সেই শুন্যে ফিরে এসেছি। আমি জানিনা কে বা কারা
দায়ী, কি হয়েছে, কিন্তু ওর মানসিক যন্ত্রণার অনেকগুলো কারণের
মধ্যে আমি ও একজন। আর এটা আজ স্বীকার না করলে আমার
নরকেও ঠাঁই হবে না।"
***
বাড়ি থেকে যখন বেরোল সুদীপ্তা তখন ঘড়ির কাঁটা প্রায় সাড়ে ৯
টা। থানায় পৌঁছে নিজের কেবিনে ঢু কে গেল ও, ফোনে আসা
ফটোটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। এখন অর্জুন রায়চৌধুরীর
সমস্ত মুভমেন্টস জানার জন্যই ওর এই সিদ্ধান্ত। এটা ছাড়া ওর আর
কোনো উপায় ছিল না। ও সিওর সবাই নিজের দিকটা লুকিয়েই বলে
চলেছে। অরুন্ধতী দেবী আর রমাদির থেকে ব্যাপারটা অনেকটা
পরিষ্কার হলো তাও। ছবিটা বাড়ির বাইরের গাড়িবারান্দার দিক থেকে
তোলা। ওখানেই হাতে একটা সিগারেট নিয়ে দাঁড়িয়ে অর্জুন, চোখ
মুখ অশান্ত, বিধ্বস্ত সেটা তো স্পষ্ট। মেয়ে যখন নিজে বলছে বাবার
প্রতি বিশ্বাস নেই তখন এতটাও সহজে ছাড়া যাবে না একে। ফোনটা
নিয়ে নম্বরটা ডায়াল করল আবার ও।
"আমার আর একটা কাজ করতে পারবি?"
বেশি ভনিতা না করে ওপারের মানুষটার দিকে সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ল
সুদীপ্তা।
-"---"
-"তোকে একজনের ফোন ট্যাপ করতে হবে। আমি জানি তু ই কি
ভাবছিস বাট আমার এটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। প্লিজ।"
64
-"---"
-"ঠিক আছে আমায় জানাস।"
ফোনটা রাখতে না রাখতেই দরজায় রাতু লের মুখ। ফোনটা সরিয়ে
রাখলো সুদীপ্তা, ভাগ্যিস ফোনে কথা হয়ে গেছিল।
-"রিপোর্ট এসে গেছে।" দরজা দিয়ে ঢু কে কথাগুলো বলে চেয়ারটা
টেনে বসল রাতু ল।
-"দেখি।"
রাতু লের হাত থেকে রিপোর্ট টা একপ্রকার ছিনিয়ে নিয়ে নিলো
সুদীপ্তা, বুকের ভিতর হাতু ড়ি পিটছে। দ্রুত হাতে রিপোর্ট খুলে মেলে
ধরল চোখের সামনে সুদীপ্তা। রাতু ল বলল, "জলে ডু বেই মৃত্যু।
কোনোরকম টর্চার বা কোনো রকম আঘাতের চিহ্নমাত্র নেই। "
-"মানে?"
-"মানে এটাই জলে ডু বে মৃত্যু কোনোরকম ধস্তাধস্তিও হয়নি তো
সুইসাইডই তো মনে হচ্ছে।"
-"কেউ তো জলে ধাক্কাও দিতে পারে। "
রাতু ল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল ওর দিকে। সুদীপ্তা আবার বলল,
"সুইসাইডই করতে হলে বাড়ি থেকে এত দূরে গিয়ে সুইসাইড করল
কেন? জায়গাটা ওনাদের বাড়ি থেকে অন্তত ৩৫ কিলোমিটার দূরে।
তার বেশি ও হতে পারে। অনেকটা ডিসটেন্স। এরকম কেন করবে?"
-"যাতে পরিচিত কেউ দেখতে না পায়?"
-"কেউ যাতে দেখতে না পায় এটা যে সুইসাইড করছে সে ভাবে
নাকি যে খুন করছে সে ভাবে? আর লাবণ্য সান্যাল কে সবাই চেনে,
কাছে হোক বা দূরে। আর কেউ নিজে সুইসাইড করার আগে এইসব
ভাবতে বসে না। তখন তার সেই মানসিক পরিস্থিতিও থাকে না। আর
ওরকম নিরিবিলি জায়গা অনেক ছিল ওনার বাড়ির কাছেও। এত
দূরে গিয়ে ওখানেই কেন? আর গেলই বা কি ভাবে? গাড়ি তো
নিয়ে যায়নি?" খানিক থেমে আবার বলল, "সিসিটিভি ফু টেজ চেক
হয়েছে?"
65
-"এক মিনিট দাঁড়া।"
***
নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে অন্যমনস্কভাবে ভাবে স্ক্রল করছিল
সুদীপ্তা। পুরো পরিবারটাকেই সন্দেহ হচ্ছে। সবাই নিজের মতো করে
একটা গল্প বুনে চলেছে। আর সেই জন্যই লুপহোলটা ধরতে পারছে
না ও। ডাকল রাতু ল পাশের ঘরে।
-"কিছু পাওয়া গেল সিসিটিভি ফু টেজ থেকে? "
-"তেমন কিছুই না। সেইদিন রাত্রে লাবণ্য সান্যাল একাই বেরোচ্ছে
বাড়ি থেকে। ব্যস এটুকু ই। সাথে লাগেজ গাড়ি কিছুই নেই।"
-"আচ্ছা ওনার ব্যাঙ্ক একাউন্ট বা কার্ড এ কোনো রিসেন্ট
এবনরমাল ট্রানসাকশান?"
-"নাথিং। রেগুলার যেমন হতো তেমনই, আর তো কিছু চোখে
পড়েনি।" আইটি-র প্রশান্তদা কনফিডেন্স নিয়েই বলল।
-"আর সবকিছু বাড়িতেই রেখে গেছে তাই ট্র্যাক করবার মতোও
কিছু সুযোগ নেই। আর লাস্ট যে সমস্ত কল হয়েছিল সেগুলোও
নরমাল কলস, বিসনেস কলস, এইসব। "
-"লাস্ট বেরোনোর আগে কাকে কল করেছিল?"
-"লেট্ মি চেক।"
কয়েকমিনিট এর মধ্যেই আবার বলল প্রশান্তদা, "লাস্ট কল আর
ওনার বাড়ি থেকে বেরোনোর মধ্যে প্রায় ৩ ঘন্টার পার্থক্য রয়েছে।
আর লাস্ট কলটা ওনার মেয়ে মানে পেখমকে।"
-"পেখম? ওকে। মানে পেখমের সাথে এমন কিছু হতে পারে যার
কারণে উনি এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। আর পেখম ওই
জন্যই ভয় পেয়ে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল যাতে আমি
ওকে আর সন্দেহ না করি?"
-"মানে?"
-"কিছু না। তার আগের কল?"
-"দেখছি।"
66
-"তার আগের কলটা অনেক আগে, অফিস কল। অফিসে বসেই
করেছিলেন। সন্ধ্যেবেলা।"
-"অফিস কল কিভাবে জানলে?"
-"প্রায়ই কল হয় এতে, নম্বরটা পি মুখার্জীর নামে আছে, যিনি
ওনার কোম্পানির CFO।"
-"ওকে। "
-"নম্বরটা আমায় ফরওয়ার্ড করো।"
ঘর থেকে বেরোতে বেরোতেই বাজল সুদীপ্তার ফোনটা।
-"হ্যালো। "
-"---"
-"হোয়াট! কি বলছটা কি? ওকে ওকে, কোন হসপিটাল?"
-"--"
ফোনটা রাখল সুদীপ্তা।
-"কি হয়েছে বলবি একটু?"
-"অর্জুন রায় চৌধুরী,হসপিটালে, মোস্ট প্রোবাবলি সুইসাইড
এটেম্পট।"
-"কি?"
-"হ্যাঁ। লেটস গো।"
67
ষষ্ঠ পর্ব
।।১।।
-"স্টপ স্টপ স্টপ। এই তো এন্ট্রান্স, এই দিকেই রাখো গাড়িটা।"
গাড়িটা হাসপাতাল গেটের সামনে দাঁড়াতেই প্রায় দৌড়ে নামল
রাতু ল আর সুদীপ্তা। রিসেপশনে কথা বলে লিফটের বোতাম টিপল।
অধৈর্য হয়ে এদিক ওদিক দেখছিল সুদীপ্তা। কি অবস্থা এখন কে
জানে? সুইসাইড এটেম্ট করেছে মানে ডাল মে কু ছ তো কালা হে।
লিফ্ট এসে গেছে। লিফ্ট আসতেই ভিতরে ঢু কে থার্ড ফ্লোরের বোতাম
টিপে দিল রাতু ল, দরজাটা বন্ধ হওয়ার মুহূর্তে ই দেখলো সুদীপ্তা
সামনের সিঁড়ি দিয়ে এক প্রকার ছুটে কাঁদো কাঁদো মুখে বেরিয়ে গেল
পেখম। সুদীপ্তা ডাকতে গেল কিন্তু ততক্ষণে লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে
গেছে। ও কি একবার পেখমের কাছে যাবে নীচে? সত্যিই তো। মা
বাবার একসাথে এইসব। কত নেবে ওইটুকু একটা মেয়ে। ভাবতে
ভাবতে লিফ্ট এসে থামল থার্ড ফ্লোর এ। লিফ্ট থেকে বেরোতেই
সামনের করিডোরে বেশ অনেক লোক। যদিও হওয়ারই কথা। এই
এরিয়ার লোকাল পুলিশও ছিলে। সুদীপ্তা ভালই চেনে জয়ন্ত দাসকে।
68
অল্প হেসে হাতটা বাড়িয়ে দিল। হ্যান্ডশেক করে আর সময় নষ্ট না
করে আসল কথা শুরু করল। রাতু ল গেল বাড়ির লোক আর
ডাক্তারের সাথে কথা বলতে।
-"কি করে হল এসব? কিছু জানতে পেরেছেন?"
সুদীপ্তার প্রশ্ন শুনে জয়ন্ত দাস হেসে বলল, "আপনারা এখানে?
আচ্ছা বললো লাবণ্য সান্যালের কেস-এর জন্য? এটাতো
সুইসাইড এটেম্পট, হাতের শিরা কেটেছে। এখন তো ডাক্তার দেখা
করতে দিচ্ছে না। কথা বললে জানতে পারবো। তবে যেটুকু জানতে
পারলাম মেন্টালি আনস্টেবল ছিলই। সাইকিয়াট্রিস্ট-এর সাথে কথা
বলতে হবে। সে আরো বেটার বলতে পারবে। সেও আসছে। অন দ
ওয়ে।
-"সাইকিয়াট্রিস্ট? মানে?"
-"হ্যাঁ। অনেকদিন ধরেই ট্রিটমেন্ট চলছিল। আমার যতদূর মনে
হচ্ছে যতই হোক, স্ত্রী ছিল তো। খবরটা শুনে আর থাকতে পারেনি।
এমনিই মানসিকভাবে সমস্যা তো ছিলই, এটার কারণে আরো...
তারপর দেখা যাক, কতটা কি জানতে পারি।"
সুদীপ্তা আর কিছু বললো না। এত বড় একটা কথা এরা কিভাবে
এড়িয়ে গেল! অর্জুন রায়চৌধুরী? আনবিলিভেবল!
***
-"পেশেন্টের এখন যা অবস্থা তাতে এখন দেখা করতে দেওয়া যাবে
না। রিয়েলি সরি। আপনারা কাল আসুন। "
-"কিন্তু আমাদের তো আমাদের কাজটা করতে হবে, বুঝতেই তো
পারছেন ব্যাপারটা কতটা সিরিয়াস। কেসটার জন্য উপরমহল
থেকেও প্রেসার আছে। বোঝার চেষ্টা করুন। "
-"সবই বুঝতে পারছি। আপনারা কাল আসুন। এখন সত্যি
পেশেন্টের কথা বলার মতো অবস্থা নেই। সরি। আসুন। "
-"হুম।"
আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। উঠে পড়ল সুদীপ্তা। গাড়িতে চাপলো
69
যখন তখন ১০টা ৪০।
-"তু ই বাড়ি যাবি তো?"
-"হ্যাঁ। "
-"দ্যাখ এত স্ট্রেস নিস না, আমাদের হাতে যা আছে যতটা আছে
ততটুকু ই তো করব। আর তাছাড়া এখনো যদি মানুষটাকে নিয়ে
কোনো আশা থাকতো ঠিক ছিল, এত তাড়াহুড়ো, প্রেসারের একটা
মানে ছিল। এখন যখন মানুষটাই নেই তখন... "
-"ঠিকই বলছিস। ভীষণ পাজেল্ড, কনফিউসড আমি। সব কিছু
এদিক ওদিক হয়ে যাচ্ছে। তবে আমি জানি লাবণ্য সান্যাল সুইসাইড
করেনি। কে বা কারা এর পিছনে আছে সেটা যতক্ষণ না বের করতে
পারছি ততক্ষণ শান্তিতে ঘুমাতে পারব না রে।"
-"তু ই কিন্তু আবার সেই একই ভু ল করছিস। লাবণ্য সান্যালের প্রতি
এতটা অবসেসড বলেই কিন্তু তু ই সমস্ত ফ্যাক্টসকেও ইগনোর
করছিস।"
-"কিসের ফ্যাক্টস? আর আমি যা কিছু বললাম সেগুলোও কি
যথেষ্ট সন্দেহের কারণ নয়?"
-"তার বডিতে এমন কোনো সাইন নেই যাতে প্রমাণ হয় খুন বা
খুনের চেষ্টাও করা হয়েছিল। সব কিছু ক্লিয়ার। তাহলে?"
-"সেটাই তো ধাঁধা। আমি যদি এতটুকু ও বুঝে থাকি লাবণ্য
সান্যালকে সে সুইসাইড করার মানুষই নয়। ওর আর্লি লাইফ প্রেসেন্ট
লাইফ সব জেনেই বলছি। অর্জুন রায়চৌধুরী কে এত সহজে ছাড়া
যাবে না। বড়লোকরা সব পারে। আই ওয়াশ করাটা কোনো বড়
ব্যাপার নয় ওদের জন্য।"
ফোনটা বাজল সুদীপ্তার।
-"হ্যাঁ বল।"
-"অর্জুন রায় চৌধুরীর ফোন ট্যাপ করা ইস নট এ জোক। নেক্সট টু
ইম্পসিবল। আমি এবার তাই পারব না রে তোকে হেল্প করতে। "
-"উফফফ! আচ্ছা ঠিক আছে, থ্যাংক্স। "
70
বিরক্ত হয়ে ফোনটা রেখে দিল সুদীপ্তা। গাড়িটা ক্রসিং এ দাঁড়াল।
***
ডিউটি সেরে বাড়ি এসেও কিছুতেই দু'চোখের পাতা এক করতে
পারল না সুদীপ্তা। একটা চাপা কষ্ট, যেন কিছু একটা ঠিক হচ্ছে না।
কিন্তু ও কিছুতেই ধরতে পারছে না কি হচ্ছে। সব কিছু একসাথে
মিলে মিশে তালগোল পাকিয়ে চলেছে শুধু। কোথাও কোনো ক্লু
নেই।
কাল লাস্ট আরেকবার ট্রাই করব অর্জুন রায়চৌধুরীর সাথে কথা
বলতে। আচ্ছা, পার্সোনালি তো ওই ডাক্তারের চেম্বারে গিয়েও কথা
বলা যায়। যদি কিছু জানতে পারা যায়। কি যেন নাম ছিল? আজ
একটা ভিসিটিং কার্ড নিয়ে নিয়েছিল রাতু ল। নাম ঠিকানাটা খুঁজে
বের করল, এভাবে এমনিও ঘুম আসছিল না।
***
( পরেরদিন )
-"দেখুন আপনাকে বলতে আমার খারাপও লাগছে এভাবে কিন্তু
আমার ডাক্তারি পেশারও তো কিছু এথিক্স আছে। তারপর এরকম
একজনের কথা জিজ্ঞাসা করতে এসেছেন আপনি, আমি কিভাবে
বলব আপনিই বলুন?"
-"আপনি যদি কেসটার গুরুত্ব বুঝতেন তাহলে বলতেন, যাই
হোক। ছাড়ুন। আচ্ছা ওনার যা মানসিক অবস্থা তাতে আপনার কি
মনে হয় উনি কতটা স্ট্যাবিলিটির সাথে কোনো কিছুর সিদ্ধান্ত নিতে
সক্ষম?"
-"আপনি আবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই জায়গায় আসছেন
অফিসার। দেখুন একটা কথা বলি আমার পেসেন্ট যে এই মুহূর্তে
মানসিক ভাবে খুব সেনসিটিভ সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এখন
ওনার যা অবস্থা তাতে ওনার যেকোন গতি বিধি বা যেকোন সিদ্ধান্তে
ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার মতো অবস্থায় নেই। না তো কথা বলার।
আগে অনেকটাই সুস্থ হয়ে গেছিলেন। ভাল ও ছিলেন। হঠাৎ
71
রিল্যাপ্সের কারণ অবশ্যই লাবণ্য সান্যালের ডেথ। তবে তার আগে
উনি অনেক সুস্থ ছিলেন, আনস্টেবিলিটির কোনো লক্ষণ ছিল না।
এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারব না ম্যাডাম। আর কিছু জিজ্ঞাসা
করবেন কি নয়তো আমার একটা মিটিং আছে আসলে।"
খুব ভদ্র ভাবে মিষ্টি ভাষায় তাড়িয়ে দেওয়া বোধহয় একেই বলে।
তবে মানুষটির ব্যবহার খুবই ভদ্র নম্র তাই বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।
-"যদি কিছু আর বলতে পারেন তো ফোন করবেন।" নমস্কার
জানিয়ে উঠল সুদীপ্তা। লিফটের বোতাম টিপে অপেক্ষা করছিল ও,
তখনই রাতু লের ফোন।
-"বল।"
-"কোথায়?"
-"আসছি। কেন কি হয়েছে?"
-"বাড়িতেই আসছিস তো?"
-"হ্যাঁ, কেন কি হল আবার?"
-"আয়। তোকে কিছু দেখানোর আছে। ফোনে বলা সম্ভব নয়।"
-"আচ্ছা আসছি। " ফোনটা কাটল সুদীপ্তা, আবার কি নতু ন ঘটল
কে জানে।
কাল রাত থেকেই দু'চোখের পাতা এক করতে পারেনি সুদীপ্তা।
যতক্ষণ না একটা কিছু হাতে আসছে শান্তি নেই। অন্যমনস্ক ছিলই,
কখন যে সিঁড়ি দিয়ে উঠে নিজেই ফ্ল্যাটের চাবি খুলে সোফাটায়
গিয়ে বসেছে নিজেই জানে না। রাতু লের গলার আওয়াজে তাকাল
ফিরে।
-"কি ব্যাপার? কি এত ভাবছিস? কখন থেকে ডাকছি তোকে।"
-"সরি একটু অন্যমনস্ক ছিলাম। বল কি বলবি বলছিলি। "
-"একটু না, পুরোই অন্য দুনিয়ায় আছিস তু ই। এত কেন প্রেসার
নিচ্ছিস তু ই বুঝতে পারছি না। আর এখন দয়া করে এইটা পড়বার
পর আমার মনে হয় না তোর আর টেনশন নেওয়ার কোনো দরকার
আছে।"
72
-"মানে?"
ডায়েরির একেবারে শেষ প্রান্তে গিয়ে পৃষ্ঠাগুলো ওল্টাতে লাগল
রাতু ল।
ও হঠাৎ এই ডায়েরি নিয়ে কখন বসল আর পড়ল? জিজ্ঞাসু
দৃষ্টিতে রাতু লের দিকে তাকাল সুদীপ্তা।
রাতু ল বলল, "তু ই হয়তো পুরোটা পড়িসনি, আমি পুরোটা পড়েই
বলছি।" এগিয়ে দিল ডায়েরিটা সুদীপ্তার দিকে।
হ্যাঁ, এতদূর অব্দি তো পৌঁছায়নি ও, সত্যিই। মুক্তাক্ষরে
লেখাগুলোয় চোখ বোলাতে লাগল সুদীপ্তা। ডায়েরিটা যে নিয়মিত
ভাবে লেখা হয়েছে তা নয়, বেশ অনিয়মিত। তাই আর শেষ অব্দি
পড়বার তাগিদ ছিল না সুদীপ্তার। যদি পড়ত তাহলে অনেক আগেই
দেখতে পেত, কতখানি যন্ত্রনা আর অসহায়তা জড়িয়ে আছে
পৃষ্ঠাগুলোয়। কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর আর না বাঁচার ইচ্ছেটা কতটা
তীব্র হয়ে ফু টে উঠেছে বারবার। মানুষ শুধু বাইরেটাই দেখেছে,
ভিতরে ভিতরে ওই কঠিন মানুষটা কবেই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে
গেছে কেউ দেখেইনি, দেখার বা বোঝার চেষ্টাও করেনি। মানসিক
অশান্তি, সাংসারিক সমস্যা, ব্যবসায়িক ঝামেলা এই সব কিছুই একে
একে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছিল, যেন সমস্ত রাস্তা বন্ধ। সব কিছু
ঠিক করার যেন একটাই রাস্তা। আর সেই রাস্তাটাই বার বার বেছে
নেওয়ার চেষ্টা করেছে লাবণ্য সান্যাল। কিন্তু পারেনি কিছুতেই।
পিছুটান, জীবনের মোহ, দায় দায়িত্ব এই সব কিছুই বার বার বেঁধে
ফেলেছে তাকে, তাই চলে যাওয়ার চেষ্টাটা আর করা হয়নি। কিন্তু
এবার যেন সব ভেঙে চুরে বেরিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছেটা কারো
রোখার ক্ষমতা ছিল না। এবার চলে না গেলে আর যে কোনভাবেই
কিছু ঠিক হবে না। জীবনে বেঁচে থেকে অনেক কাজ তো হল। এবার
যদি এই জীবনে না থাকলে কিছু শুধরায়, কিছু ভাল হয় তবে ক্ষতি
কি। একজন চলে গিয়ে যদি বাকি সকলে ভাল থাকে তাহলে
একজনের চলে যাওয়াটাই কাম্য।
73
ডায়েরির হলুদ হয়ে যাওয়া, জীর্ণ, শেষের পাতাগুলোয় এভাবেই
নিজের কথাগুলো ব্যক্ত করেছেন লাবণ্য সান্যাল।
অর্জুন রায়চৌধুরীর সাথে সমস্যা তো সর্বজনবিদিত। কিন্তু নিজের
মেয়ে, মা বাবা সবার ব্যাপারে বাইরের পৃথিবী কতটুকু জানতো?
কেউ তো ছিল না পাশে, আর এটাই তো সত্যি। দীপ মজুমদারের
সাথে দেখা সাক্ষাৎ বন্ধু ত্বটাও বড় ভু ল সময়ে, অনেকটা দেরি করে।
আগে হলে হয়তো...
নির্বাক হয়ে এলোমেলো এই কথাগুলোই ভাবছিল সুদীপ্তা। তখন
আবার মুখ খুলল রাতু ল, "আর একটা কথা বলার ছিল তোকে।"
-"হুম। "
-"উপরমহল থেকে এবার কেসটা বন্ধ করার জন্য চাপ আসছে,
তাড়াতাড়ি সলভ করে ফাইল দিতে হবে নয়তো কেস সিবিআই এর
হাতে হ্যান্ডওভার হবে। আর যখন সবকিছু ক্লিয়ার হয়েই গেছে তখন
বেকার কেসটাকে টেনে হিঁচড়ে বাড়ানোর কি মানে?"
-"কি ক্লিয়ার?"
-"আরে এই সুইসাইডটার জন্য পরোক্ষ ভাবে সিচুয়েশনও দায়ী।
ক্লিয়ার তো হয়েই গেল সব কিছু। আর সমস্ত ডকু মেন্টসও একই কথা
বলছে। সবার স্টেটমেন্ট রয়েছে আমাদের কাছে। আর কি চাই?"
-"এটা সুইসাইড নয়, ভেবে চিনতে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে,
বা আত্মহত্যা করার প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে। আর এটা খুনের থেকে
কোনো অংশে কম নয়। "
-"দেখ, আমরা আমাদের তরফ থেকে সব জমা দেব। এবার
বড়লোকদের ব্যাপার কেসটা ঘোরাতে কতটুকু সময় লাগবে ওদের?
কিছু করতে পারবো না আমরা। আর এটা আমাদের কাজও নয়।
আমাদের কাজ কেস ফাইল জমা করা উইথ ফ্যাক্টস। আমরা সব জমা
করব, দ্যাটস ইট। "
চুপচাপ শুনে হাসল শুধু সুদীপ্তা, রাতু লের দিকে তাকিয়ে বললো,
"হুম, সিস্টেমের ভিতর থেকে সিস্টেমের বিরুদ্ধে কি বা বলতে পারি
74
বল? আর সিস্টেম চালাচ্ছেই যারা তাদের এগেইনস্টে কিছু বলার
কথা ভাবতেই পারা যায় না, ঐ জন্যই তোর এত তাড়া তাই না?
টিকি উপর থেকে যে নাড়ছে কথাগুলো তারই, তোর আদৌ নয়।"
এটুকু বলেই উঠে নিজের ঘরে ঢু কে সজোরে দরজা লাগিয়ে দিল
সুদীপ্তা।
।।২।।
( পাঁচ মাস পর )
-"বিয়ের আর কদিন মাত্র বাকি, যে কটা জিনিস বাকি আছে কিনে
নে না মা, বাকি তো আমি সবই করে নিয়েছি। তোর আবার পছন্দ
হবে না হবে।"
ফোনটা কানে গুঁজে ব্যাগটা গোছাচ্ছিল সুদীপ্তা, এটা রোজকার
ব্যাপার। মা রোজ ফোনে কথা বলার শুরুতে আর শেষে একই কথা
বলে চলেছে। মায়ের দোষ নেই। সত্যিই তো মা আর কত করবে।
ডিউটির দোহাই দিয়ে সব কিছু মায়ের উপরেই তো দিয়ে দিয়েছে ও।
-"ঠিক আছে। আজ হাফ ডে নিয়েছি, কিনে নেব ফেরার পথে।"
ফোনটা রেখে ঘড়িটা দেখল সুদীপ্তা।
এক বন্ধু র পরিচিত ডিজাইনার-এর থেকেই ওড়না শাড়ি এগুলো
করাচ্ছে, কথা আগেই হয়ে গেছিলো, আজ যাবে একবার তার
স্টু ডিওয়। সোনারপুর এলাকায় তার ষ্টু ডিও। ওই জন্যই আজ অব্দি
গিয়ে উঠতে পারেনি, আজ সেরে নেবে কাজগুলো।
***
ডিজাইনারের সাথে কথা বলে বেরোলো যখন সুদীপ্তা তখন প্রায়
৩ টা বাজছে। মাস দুয়েক আগে একটা স্ক্যুটি কিনেছে ও, এখন তাই
যাতায়াতে বেশ সুবিধা হয়েছে। পেটে পুরো ইঁদুর দৌড়াচ্ছে খিদের
জ্বালায়, সামনেই একটা ফাস্টফু ড চপ সিঙ্গারার দোকান দেখে দাঁড়
করাল স্কু টিটা, এই ভর দুপুরে ভাত খেলেই ভাল হতো কিন্তু এখানে
ভাতের হোটেল কাছাকাছি তো দেখতে পাচ্ছে না, আর ঘোরাঘুরি
করে খোঁজার মতো অবস্থাও নেই ওর। পেট এ কিছু একটা না পড়লে
75
এবার আর থাকা যাচ্ছে না যে। দোকানে অর্ডারটা দিয়ে ফোনটা স্ক্রল
করছিল ও। মিনিট দশেকের মধ্যেই গরম গরম মোগলাই এসে হাজির।
ফোনটা রেখে তাড়াতাড়ি হাত আর মুখের কাজ শুরু করল সুদীপ্তা,
আর দেরি নয়।
***
ফোনে ইম্পরট্যান্ট মেইলগুলো দেখতে দেখতে মোগলাই-এর
টুকরোগুলো মুখে পুরছিল সুদীপ্তা। স্যালাডটা একটা কাগজের উপর
দিয়েছিল ওরা। স্যালাডটা শেষের পথে, শেষ পিঁয়াজের টুকরোটা
মুখে পুরে আরেকবার স্যালাড দিতে বলল সুদীপ্তা। আবার যথারীতি
খেতে শুরু করতেই স্যালাডের খালি কাগজটার দিকে হঠাৎ চোখ
গেল ওর। ব্যস, চোখের সামনে ভেসে উঠলো টুকরো টুকরো
মুহূর্ত গুলো, আবার, এতদিন পর। ওর হেরে যাওয়ার মুহূর্ত । ছেলেটা
স্যালাড দিয়ে চলে গেল, সাথে আরো কিছু বলেও গেল কিন্তু
সুদীপ্তার কানে কিছুই ঢু কলো না। ফাইল তো জমা পড়ে গেছে কবেই,
কেসও ক্লোস্ড, কিন্তু তাও কেন ওর ইনস্টিংক্ট একটাই কথা বলে, যা
সামনে আছে তা সত্যি নয়। কিছুতেই নয়। কিছু একটা যেন ও মিস
করে গেছে, ও দেখতে পায় নি। কেউ দেখতে পায়নি। কিন্তু সেটা
কি? সুইসাইড, মার্ডার উফফ! উঠে পড়ল সুদীপ্তা। পুরোনো কাগজ
জুড়ে হেডলাইন "লাবণ্য সান্যাল কেস ক্লোস্ড" , মুচড়ে ছুঁড়ে ফেলে
দিল সুদীপ্তা। দ্রুত ব্যাগ নিয়ে বিল মিটিয়ে বেরিয়ে পড়ল ও। আর
ভাববে না, কিছুতেই না। কিন্তু ওর ইনস্টিংক্ট কখনো ভু ল বলতে পারে
না। তাহলে?
76
সপ্তম পর্ব
( দিন দশেক পর )
77
এমনিতেও রোজ বিয়ে নিয়ে মাথা... যাক গে ছাড়। "
-"না করব না সাহায্য। কারণ আমি তোর মতো পাগল নই। আমি
সত্যিটা মানতে জানি।"
-"সেইটা তো তু ই।"
78
মাইন্ড?"
***
( দিন কয়েক পর )
79
বাবার পায়ের অবস্থা খুব একটা ভাল না, তাই কিছু নিমন্ত্রণের কাজ
সুদীপ্তাকেও করতে হচ্ছে। অবিনাশকাকু বাবার অত্যন্ত কাছের
একজন মানুষ, কিন্তু তার বাড়িটা অনেকটা দূর, রূপপুর। অতদূর
যাওয়ার থেকে তাকে তার অফিসে নিমন্ত্রণটা সেরে ফেলাই ভাল।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে হঠাৎ ব্যাংকে ছুটতে হল বাবাকে তাই সুদীপ্তাকেই
আসতে হল।
80
কাছে এসে গেছে খেয়াল করেনি। সামনে একটা ছোট ভ্যান এসে
গেল, ওই মহিলা ততক্ষণে রাস্তা পার হয়ে ওদিকের ফু টপাথে
যাওয়ার লক্ষ্যে, ওনার সামনে একটা এসইউভি কখন এসেছে
কোনোদিকে নজর নেই। উদ্ভ্রান্তের মতো হেঁটে যাচ্ছিল, গাড়িটা
সামনে ব্রেক কষে দাঁড়াল সজোরে, তখন যেন টনক নড়ল।
***
81
করেই দিচ্ছিল ও। মা তিনবার যখন বলল সবজির বাটিটা এদিকে
দিতে তখন টনক নড়ল ওর।
***
82
করে না কোনো বিশ্বাস করে না, বোঝার চেষ্টা করে না, তাহলে তার
সাথে ও আদৌ সসম্মানে পারবে বাস করতে?
***
বাড়ি থেকে স্কু টি নিয়ে বেরতে যাবে যখন তখনই মা হাতে আবার
একটা লিস্ট গছিয়ে দিয়ে বলল, "এগুলো তোর অফিসের কাছে
সস্তায় পাওয়া যাবে, দশকর্মার জিনিস, বেশিরভাগ ওই তত্ত্বতাবাসের
জিনিস, কিনে আনিস। " আজ আর তেমন রাগ হলো না মায়ের
উপর। কিছু বলল না তাই। এই দশকর্মার দোকান ওদের অফিস থেকে
বেশ খানিকটা দূরে। ঠিকই আছে, স্কু টি নিয়ে যেতে কতটুকু ? বাবাকে
বেকার আর আসতে হবে না। লিস্টটা পকেটে পুরে নিল সুদীপ্তা।
83
সেটা ওনার জড়োসড়ো হয়ে বসা বা পোশাকআশাক চেহারা দেখেই
বোঝা যাচ্ছে, আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আরেকবার
যখন দেখা হয়েছে তখন নিশ্চয় ভগবান কিছু জানাতে চাইছে বা
বোঝাতে চাইছে, এসব কথা একটু আজগুবি হলেও এগুলো ভীষণ
মানে সুদীপ্তা। সুতরাং ট্রাফিক সিগন্যাল সবুজ হতেই আর এদিক
ওদিক না দেখে পিছু ধাওয়া করল গাড়িটার। একটু দূরত্ব রেখেই পিছু
করতে লাগল ও।
84
নিশ্চয় থাকবে। ওনার থেকেই সাহায্য নিয়ে একবার দেখবে অর্জুন
রায়চৌধুরী এখানে আসে কি দেখাতে?
***
85
লাবণ্য সান্যাল-এর বোন, বহু বছর ধরে রয়েছেন। আমি তো এই
আট বছর হল এখানে কাজ করছি, তার অনেক আগে থেকে। ব্যস,
এটুকু ই বলতে পারি।"
***
86
আওয়ার্স শেষ হলে। হাতে সময় খুব কম। বেশিক্ষণের জন্য সিসিটিভি
অফ রাখা যাবে না ওই হল-এর, তাই যা করার কয়েক মিনিটে করতে
হবে। কিন্তু যার মানসিক স্থিতিই নেই সে একজন অপরিচিতকে দেখে
তো রিএক্ট করতেই পারে, আর এটাই ভয় লাগছিল সুদীপ্তার।
চিৎকার চেঁচামেচি হলে ও কোথায় পালাবে ও নিজেও জানে না।
ফোনটা সাইলেন্ট করে দিল সুদীপ্তা, তারপর অবিনাশকাকু র থেকে
গ্রীন সিগন্যাল পেতেই ফোর্থ ফ্লোরের দিকে রওনা হল। এই ফ্লোরটা
বাকি ফ্লোরগুলোর থেকে বেশ আলাদা, রীতিমতো ঝা চকচকে।
অবিনাশকাকু বলছিলেন হাইপ্রোফাইল কেসের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা
ব্যবস্থা এদের, স্বাভাবিক, এখনকার যুগে টাকাই তো কথা বলে।
করিডোর পেরিয়ে কোণের দিকে একদম ঘরটার সামনে এসে
দাঁড়ালো সুদীপ্তা। কাঁচের দরজা, ভিতরে আলো জ্বলছে, ঘরটাকে
কোনো হাসপাতালের ঘর তো মনে হচ্ছেই না বরং কোনো
বড়োসড়ো হোটেলের রুম মনে হচ্ছে। হা করে ভিতরের সাজসজ্জা
দেখছিল সুদীপ্তা। কিন্তু রুক্মিণী কোথায়? কাঁচের দরজা পেরিয়ে দৃষ্টি
এদিক ওদিক খুঁজছিলো তাকে, তখনি দেখা মিলল তার। পরনে সাদা
সিল্কের স্লিপিং গাউন মতো, চুল খোলা, চোখে চশমা, হাতে বই
নিয়ে ঘুরে ঘুরে কিছু পড়ছে, মুখটা ভাল করে দেখতেই হৃদপিন্ড বন্ধ
হয়ে যাওয়ার জোগাড় হলো সুদীপ্তার। এ কি দেখছে ও? কাকে
দেখছে ও? ওর তো মাথা কাজ করছে না। লাবণ্য সান্যাল স্বয়ং ওর
সামনে দাঁড়িয়ে! কিন্তু এ কি করে সম্ভব? ও নিজে বডি
শনাক্তকরণের সময় সামনে ছিল, নিজে হাতে লাবণ্য সান্যালের
ডেডবডি মর্গে পাঠিয়েছিল ও, তাহলে এই অসম্ভব সম্ভব হল কি
ভাবে?
87
ও আর দেরি না করে সন্ধ্যার জলখাবার সাজানো টেবিল নিয়ে ঘরে
ঢু কল। ঐদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই, ভাগ্যিস! কেমন অদ্ভু ত ভাবে
মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে ঘুরে ঘুরে হাতের বইটা নিয়ে পড়ছিল সে যেই
হোক। হা করে তার কার্যকলাপ দেখছিল সুদীপ্তা, মাথা কাজ করছে
না কিছুই। অবশেষে ঘরের ভিতর ঢু কে প্লেটগুলো টেবিলে সাজিয়ে
রাখতে রাখতে যতটুকু সময়, কিন্তু সেদিকে তার যেন কোনো
ভ্রূক্ষেপ-ই নেই। অপ্রকৃ তস্থ তো লাগছে অবশ্যই, কিন্তু সে যেন
নিজের জগতেই মগ্ন। প্লেটগুলো টেবিলে সাজিয়ে বেরিয়ে এলো
সুদীপ্তা, ঠিক ভু লের সব হিসেব গুলিয়ে গেছে।
***
88
যাচ্ছিল সুদীপ্তা, তখনি হল ঘটনাটা।
89
অন্তিম পর্ব
90
মানুষটাই একটু আগে অপ্রকৃ তস্থর মতো আচরণ করছিল! কি
অসাধারণ অভিনয়! সুদীপ্তা চোখে চোখ রেখেই বলল, "আপনার
অভিনয় শেষ হলে এবার কথা শুরু করা যাক?"
-"ধরলে কিভাবে?"
91
আমার মাথায় আসে যখন আমি আমার মোবাইলটা নিতে ফেরত
আসছিলাম। দুই বোন যতই যমজ হোক, বদ অভ্যাসও দুজনের
সম্পূর্ণ এক, এটা সম্ভব না। তাই চান্সটা নিয়েই নি।"
সুদীপ্তা খুব সাবলীল ভাবেই উত্তর দিল, " জানি না। সেটা বলতে
পারবো না। কিন্তু আমাকে ছাড়ুন, আপনি নিজেরটা বলুন। এসবের
মানে কি? কেন? আপনি জানেন আপনার কি কি শাস্তি হতে
পারে?"
92
বিসনেস আইকন হিসেবে দেখতাম। একজন নারী হয়ে আর একজন
নারীর প্রতি সম্মান ছিল আমার, আর আপনি তো?"
93
সুদীপ্তা ইশারায় ওনাকে শুরু করবার জন্য বলল।
লাবণ্য সান্যাল বরাবরই বাকচাতু র্যে পটু। উনি যখন কিছু বলেন
তখন সত্যি শুনতে ইচ্ছা করে, বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আজ
যখন উনি বলতে শুরু করলেন, সুদীপ্তা মনেপ্রাণে নিজেকে বাঁধার
চেষ্টা করল যেন কোনোভাবেই সেই কথায় ভেসে না যায়। খুঁটিয়ে
খুঁটিয়ে সামনের মানুষটাকে দেখছিল ও, সেই একইরকম তেজ, কথা
বলার ধরণ, হাতের ভঙ্গিমা, কোনো ভু ল করেনি সুদীপ্তা।
94
চলতে। ও কখন দৌড়ে বেরিয়ে গেল আমি বুঝতেই পারিনি। বড্ড
তাড়া ছিল ওর, কেন কে জানে। আমরা দুজন এটা ভেবে বিয়ে
করেছিলাম যে আমাদের পথ, আমাদের এই জীবন থেকে চাওয়া
পাওয়া একই, কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝলাম আমাদের দুজনের
প্রায়োরিটিস কতটা আলাদা। হয়তো আলাদাই ছিল, আমিই চিনতে
বুঝতে ভু ল করেছিলাম। আমাদের বন্ধু ত্বটা এই প্রেম ভালবাসা
বিয়ের চাপে শেষ হয়ে গেল। আমি একা হয়ে গেছিলাম অনেক
আগেই, অর্জুন বুঝতে ও পারেনি। ইনফ্যাক্ট ওর বোঝার মতো
সময়ও ছিল না। আমিও বলার আর প্রয়োজন বোধ করিনি। ফাঁকা
জায়গা ছিল বলেই দীপ আসতে পেরেছিল। একটা প্রকৃ ত বন্ধু র
অভাব ছিল। দীপ আমার প্রকৃ ত বন্ধু ই। কিন্তু সেটাকে ভু ল নজরে
দেখে বার বার অর্জুন আমাদের মধ্যে যা কিছু অবশিষ্ট ছিল সেটাকে
শুধু রক্তাক্ত করে গেছে, ক্ষতবিক্ষত করে গেছে। হ্যাঁ, দীপের আমার
প্রতি যে অনুভূ তি ছিল বা আছে তা আমি জানতাম।
95
লিমিট তো কোনোদিন ক্রস করিনি। দীপের সাথে থাকলে ওর সাথে
গল্প করলে ওর সাথে সময় কাটালে কোথা দিয়ে সময় কেটে যেত,
আমি বুঝতেই পারতাম না। আমি ভাল থাকতাম, আমি খুশি
থাকতাম। এতে কি অপরাধ? অপরাধ এটাই আমি আমার ভাল
থাকার হিসেব করতে গিয়ে এটা ভেবে দেখিনি দীপ কোথায় গিয়ে
দাঁড়াবে এবার? এটা আমার ভু ল নয় শুধু, বিরাট অন্যায়। এতটা
স্বার্থপরের মতো কিভাবে ভেবেছিলাম আমি এখন নিজেই ভাবতে
পারি না। ও তো আমার বন্ধু । ওর খারাপ থাকার কারণ আমি হতে
পারি না কিছুতেই, কিন্তু যখন সেটাই হল সেদিন থেকে আজ অবধি
আমি পুড়ে চলেছি, মরেও শান্তি পাবো না।
96
একটানা এতক্ষণ বলার পর থামল লাবণ্য, তাকাল সুদীপ্তার দিকে,
চোখ দুটো যেন জানতে চাইছে, ভ্যালিডেশন চাইছে, কোনটা ঠিক
কোনটা ভু ল বিচার করতে পারবে তো?
"না না, আমি ওকে কিছু করতে পারি এটা ভাবলে কি করে তু মি?
হ্যাঁ এটা ঠিক যে আমার কাছে কেন প্রমাণ নেই কিন্তু আমি শুধু
97
সত্যিটাই বলতে পারি যে সেদিন যখন আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে
গিয়েছিলাম শেষবারের মতো ওর সাথে একবার দেখা করতে আমি
এসেছিলাম, সেই মুহূর্তে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে আমার
কোনো ধারণাই ছিল না।"
-"মানে?"
98
তু ইও ভাল থাক, আমিও একটু ভাল থাকি, প্লিজ, রাগ করিস না
কেমন। আমার পিছু করিস না আর বনু, এবার মুক্তি দে তোরা।"
ব্যস, এটুকু ই, মুহূর্তে র মধ্যে ও যে আমার চোখের সামনে ঝাঁপ দেবে
আমি স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। আমি ঘটনার আকস্মিকতায় স্তম্ভিত হয়ে
যাই! কি করব কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না, আমি নিজেও সাঁতার
জানি না। নিজের মৃত্যু ভেবে এসেছিলাম, কিন্তু শেষ মুহূর্তে বাঁচার
তীব্র ইচ্ছাকে সম্বরণ করি কিভাবে, ওকে বাঁচাতে জলে ঝাঁপ দিতেই
যাচ্ছিলাম কিন্তু তখনই ওর লাইনটা আমার কানে বাজল। যেটার
মানে ওই মুহূর্তে বোঝা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না, কিন্তু শেষ বারের
মতো ভাল থাকার ইচ্ছেটা আরেকবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
তারপরে সব ঘটনাই তু মি জানো, কিন্তু মানো আর নাই বা মানো
সত্যি এটাই। রুনু আমায় নতু ন জীবন দিয়ে গেছে নিজের জীবন
দিয়ে, যাতে ও শান্তি পায় আর আমিও একটু ওর পরিচয়ে ভাল
থাকতে পারি, শান্তিতে থাকতে পারি।"
99
নেই। আর লাবণ্য সান্যাল যদি একবার আঁচ করতে পারে, তাহলে
সে নিজেকে বাঁচাতে সব করতে পারে, সুদীপ্তার প্রাণ সংশয় হওয়াও
অস্বাভাবিক না। এতদিন শ্রদ্ধা করত সুদীপ্তা মানুষটাকে, রাতু ল এর
সাথে এর জন্য কত অশান্তি করেছে, না, আর ভাবতে পারছে না।
***
100
কোনো অন্যায় নয়। এতে তো সকলেরই ভাল হবে, ইনফ্যাক্ট সবাই
ভাল আছে। এই খবরটা বাইরে বেরোলে যে ফিনান্সিয়াল ক্র্যাশ হবে
মার্কে টে, কোম্পানি তো ধুলোয় মিশবেই, তার সাথে কত মানুষের
চাকরি যাবে। তারা তো কেন দোষ করেনি, কিন্তু যে সুবিধা গুলো
লাবণ্য সান্যাল নিচ্ছে, সেটাও তো ঠকানোই, ইন্সুরেন্সের টাকায়
কোম্পানি ঘুরেও দাঁড়াচ্ছে, কিন্তু এক একটি টাকা দেশের সাধারণ
মানুষের। এটাও কি ঠকানো নয়? উফফফ! মাথা কাজ করছে না
আর। চোখ দুটো বুজে একটু চেয়ারটায় গা এলিয়ে দিল সুদীপ্তা,
কখন চোখ লেগে গেছে বুঝতে পারেনি। ঘুম ভাঙল যতক্ষণে
ততক্ষণে সকাল হয়ে গেছে। ও ভেবে নিয়েছে, ও লাবণ্য সান্যালের
এগেইনস্ট এ সমস্ত প্রুফ জমা করবে, তারপর কি হবে সেটা
উপরমহলের ব্যাপার, নয়তো ও নিজেকে কি উত্তর দিবে? এত বড়
একটা ঘটনা এভাবে মুখ বুজে হজম করে নেওয়া, অন্যায় কে প্রশ্রয়
দেয়া আর তারপর নিজের চোখে চোখ রাখা, না না, সম্ভব নয় ওর
পক্ষে।
-"হ্যালো। "
-"---"
101
বাবা কিছু বুঝতে না পেরে ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল, তাড়াতাড়ি
নিজেকে সামলে নিয়ে টিভিতে নিউস চালিয়ে দিল ও, ভিড়ে ভিড়
চারদিক। পাঠিকার কণ্ঠে আজকের খাস খবর, "লাবণ্য সান্যালের
বোন রুক্মিণী সান্যালের মৃতদেহ উদ্ধার হাসপাতালের ঘর থেকে,
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা সুইসাইড। লাবণ্য সান্যালের বোন চিরকাল
মিডিয়ার আড়ালেই থেকেছেন, ওনার পরিচয় কোনোদিনই তেমন
প্রকাশ্যে আসেনি। বেশিরভাগ মানুষের কাছেই তাই তার পরিচয়
অজ্ঞাত, সেই অজ্ঞাতবাসেই মৃত্যুকে বরণ করে নিলেন রুক্মিণী
সান্যাল। অনেকেরই অজানা যে ওনারা দুই যমজ বোন। এত কম
সময়ের ব্যবধানে একই পরিবারে পরপর দুই মৃত্যু, ভেঙে পড়েছেন
পরিবার। "
102
সিদ্ধান্তে তার পরিবারের তাকে সবার আগে বোঝা উচিত।
ও ফেসবুক পেজ-এ :-
Muktodhara-Tulika Roy
103
104