Professional Documents
Culture Documents
Suicide Celebrity Final - 2
Suicide Celebrity Final - 2
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বরে ঢাকার ইস্কাটনে নিজ বাস ভবনে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে
ঝু লন্ত অবস্থায় সালমান শাহের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নানা রহস্যময়তায় ঘেরা
সালমান শাহের মৃত্যু নিয়ে দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় বিতর্কে র পরে ২০২০ সালের ২৪
ফেব্রুয়ারি পুলিশের তদন্ত বিভাগ নিশ্চিত করে যে সালমান শাহ আত্মহত্যাই
করেছিলেন।
লেখা ছিল- “আমি চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার। পিতা কমরুদ্দীন আহমেদ চৌধুরী।
১৪৬/৫, গ্রীন রোড, ঢাকা #১২১৫ ওরফে সালমান শাহ এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে,
আজ বা আজকের পরে যে কোনো দিন আমার মৃত্যু হলে তার জন্য কেউ দায়ী থাকবে
না। স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে আমি আত্মহত্যা করছি।”
২০২৪ সালের ১৩ মার্চে সাদি মহম্মদের আত্নহননের পথ বেছে নেওয়া ছিল
বাংলাদেশের মিডিয়ায় সবশেষ আত্মহত্যার উদাহরণ। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে,
সালমান শাহ এবং সাদি মহম্মদের আত্মহত্যার মধ্যে রয়েছে প্রকৃ তিগত এক মিল। আর
এ অন্ত:মিলের কারণ খুঁজতে অবশ্যই স্মরণাপন্ন হতে হবে আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী
মাসলোর চাহিদা সোপানের।
মাসলোর এই চাহিদা সোপানটি দিয়ে এই দুই মৃত্যুর ব্যাখ্যায় পরে আসছি। তার আগে
বাংলাদেশের মো-বিজ জগতে যারা আত্মহত্যা করেছেন তাদের ঘটনাগুলো একনজর
দেখে আসা যাক।
২০১২ সালে মডেল অভিনেতা মইনুল হক অলি, ২০১৪ সালে সঙ্গীতশিল্পী পিয়াস
রেজা, একই বছরে হুমায়ূন আহমেদের ‘এইসব দিন রাত্রি’ ধারাবাহিক নাটকের টু নি
চরিত্র রূপদানকারী অভিনেত্রী লোপা নায়ার এবং ২০১৫ সালে অভিনেত্রী নায়লা বেছে
নেন আত্মহননের পথ।
২০১৭ সালে পরের আলোচিত শো-বিজের আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটান উঠতি মডেল
জ্যাকু লিন মিথিলা। জ্যাকু লিন মিথিলা সিনেমা বা নাটকের জগতের কেউ ছিলেন না।
সোশাল মিডিয়ায় খোলামেলা পোশাক পরে ছবি বা ভিডিও দেওয়ার কারণে অতি অল্প
সময়ের মধ্যেই হয়ে উঠেছিলেন পরিচিত এবং সমালোচিত। তার আসল নাম ছিল জয়া
শীল। তার বাবার বরাতে তখন জানা গিয়েছিল, শ্বশুরবাড়িতে বিয়ে মেনে না নেওয়ায়
তিনি আত্মহত্যা করেছেন। জ্যাকু লিন মিথিলাও গলাও ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা
করেছিলেন।
ওই বছর জু লাই মাসে আত্মহত্যা করেন মাইলস ব্যান্ডের কিবোর্ডিস্ট মানাম আহমেদের
ছেলে জাহিন আহমেদ। ব্যান্ড ম্যাকানিক্স এর গিটারিস্ট জাহিনের মৃত্যুর কারণ জানা
যায়নি। র্যাম্প মডেল ও অভিনেত্রী রিসিলা বিনতে ওয়াজও এ মাসেই বেছে নেন
পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার একই রাস্তা। তার মৃত্যুর কারণ অবশ্য দাম্পত্য কলহ।
অভিযোগ রয়েছে, একই কারণে ২০১৮ সালে চিত্রপরিচালক শামীম আহমেদ রনির
সাবেক স্ত্রী ও অভিনেত্রী তমা খান গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
২০২০ সালে তরুণ মডেল ও অভিনেত্রী লরেন মেন্ডেস এবং ২০২৩ সালে হোমাইরার
হিমুর আত্মাহুতি শো-বিজ জগতের পরের দুইটি আঘাত। এ দুইটির পেছনেও রয়েছে
দাম্পত্য কলহ।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, ২০১১ সালের পর সেলিব্রেটি আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়েছে। তবে
একটা বিষয় এখানে লক্ষ্যণীয় যে, যেসব সেলিব্রেটিরা আত্মহত্যা করেছেন তারা
কেউই ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় ছিলেন এবং প্রায় সবার ক্ষেত্রেই প্রেম কিংবা দাম্পত্য
দ্বন্দ্বের প্রাধান্য ছিল।
কিন্তু সাদি মহম্মদের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে বাংলাদেশকে দাঁড়াতে হয়েছে একটি
নতু ন প্রশ্নের মুখোমুখি। তবে কি তিনি অভিমানে মারা গেলেন?
এই মৃত্যুর সঙ্গে জীবনানন্দের মতো জীবনের প্রতি উদাসীনতার যোগ রয়েছে কি? এ
প্রশ্ন উঠছে বারবার।
সারা পৃথিবীর সেলিব্রেটি বা তারকাদের ক্ষেত্রে মাসলোর চাহিদা সোপানের চতু র্থ ও
পঞ্চম ধাপটি প্রযোজ্য। এর অর্থ হচ্ছে সুখ বা বেঁচে থাকার প্রেরণাই তাদের মূল
প্রয়োজন। তাহলে তারা এতো আত্মহত্যা করেন কেন? তারা কি সুখী নন?
বাংলাদেশের তারকাদের মধ্যে হয়তো সাদি মহম্মদই সন্দেহাতীতভাবে চতু র্থ ও পঞ্চম
ধাপের কোনও একটি চাহিদা পূরণ না হওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু এ পর্যায়ে
তিনি আসলেন কিভাবে?
সুখ অনেকের কাছেই একটি সাধারণ শব্দ হতে পারে। কিন্তু সুখের সংজ্ঞা বেশ
জটিল।
তার মানে এ গবেষণায় থেকে দেখা যাচ্ছে যে, মাসলোর চাহিদা সোপানের তৃ তীয়
স্তরটি সুখি থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দাম্পত্য সম্পর্ক এবং অন্যান্য
ভালোবাসার সম্পর্ক শারীরিক যন্ত্রণাকেও কমিয়ে দিতে পারে। এর মানে যে মানসিক
ব্যথার কারণে মানুষ আত্মহত্যার দিকে যায়, সেটি ভালো সম্পর্কে র মাধ্যমে কমানো
যায়। বাংলাদেশের আত্মহত্যা করা সেলিব্রেটিদের ৯৫ শতাংশের বেশি ঠিক তৃ তীয়
সোপানটিতেই আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের তারকা শেফ অ্যান্টনি বোরডেইনও ২০১৮ সালে আত্মহত্যা করেন। তার
প্রাক্তন বান্ধবী পাওলা ফ্রোইলিচ তার মৃত্যু সম্পর্কে টু ইট করেছেন, “আপনি অনেক
ধনী হতে পারেন, সম্পূর্ণ সফল কিন্তু একাকি...।" বোরডেইন অবশ্য একসময়
মাদকাসক্ত ছিলেন। পরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিলেন। তবে সমস্যা যে
কাটেনি সেটি নিশ্চিত।
২০০৯ সালের একটি ছোট-নমুনা সমীক্ষা অনুসারে, “শীর্ষে থাকা ব্যক্তিরা জনস্বীকৃ তির
দ্বীপে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারেন। যার ফলে হয়ে যান একাকি।"
বিশ্বব্যাপী প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যা করে বলে জানাচ্ছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা।
এর এক শতাংশেরও কম খবরের শিরোনাম হয়।
স্পষ্টতই, বিশ্বব্যাপী ঘটে চলা আত্মহত্যার পরিসংখ্যানে ফাঁক রয়েছে। তবে বিশ্বব্যাপি
যত রোগে মানুষ মারা যান, তার মধ্যে আত্মহত্যার অবস্থান ১৭ তম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, "প্রতি বছর প্রায় ৮ লাখ মানুষ আত্মহত্যার কারণে মারা যান।
আরও অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বিশ্বব্যাপী ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে
মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ।"
কেট স্পেড, রবিন উইলিয়ামস এবং অ্যান্টনি বোর্ডে ইনের মতো সেলিব্রিটিরা যখন
তাদের নিজের জীবন নেয়, তখন বিশ্ব হতবাক হয়ে যায়। টাকা-পয়সা, যশ-বিত্ত সবই
ছিল তাদের, তাহলে কেন? কেন এমন একটি চরম পদক্ষেপ তারা নিলেন?
প্রত্যেকেরই জীবনে এরকম কিছু মুহূ র্ত আসে। কিন্তু প্রকৃ তি এসব মুহূ র্ত কে মোকাবেলা
করার মতো করেই মানুষকে তৈরি করেছে। আমরা এসব মুহূ র্তে র মুখোমুখি হলে,
গ্রামে বেড়াতে যাই, প্রিয়জনকে ফোনে কল করে স্নায়ু শান্ত করি। আর এতেই
আমাদের স্নায়ুর উত্তেজনা প্রশমিত হয়।
প্রকৃ তি মায়েদের নিজ সন্তানের এই আবেগ ধারণ করা এবং বোঝার উপযোগী করে
তৈরি করে। আর তাই আত্মহত্যার বড় কারণগুলোর পেছনে ব্রোকেন ফ্যামিলি, কড়া
ও নির্যাতনকারী বাবা-মা এবং বাজে পারিবারিক সম্পর্ক থাকতে পারে।
আমরা বলতে ভালোবাসি কোনও মানুষই বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। কিন্তু বাস্তবে সব মানুষই একটা একটা
দ্বীপের মতোই একা।
প্রয়াত অধ্যাপক জন ক্যাসিওপ্পোর হাত ধরে রাইখম্যানের কাজ সামাজিক নিওরোসায়েন্সের কাজের
পরিধিও বাড়িয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর কগনিটিভ অ্যান্ড সোশাল নিওরোসায়েন্স বিভাগের
প্রধান ছিলেন জন ক্যাসিওপ্পো। দুই যুগেরও বেশি সময় নিয়ে কাজ করছেন ‘একাকিত্ব’ নিয়ে।
লিখেছেন ‘লোনলিনেস: হিউম্যান নেচার অ্যান্ড দ্য নিড ফর সোশাল কানেকশন’ শিরোনামে বই।
ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন,” উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচ্ছিন্নতা (Objective
loneliness) এবং বিচ্ছিন্নতা বোধ (Percieved loneliness) এই দুইয়ের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।
মাত্র কিছু দিন আগেই আমরা জেনেছি পরেরটি অর্থাৎ বিচ্ছিন্নতা বোধ আসলে একাকিত্ব।
এ বিষয়ে বিলিয়নিয়ারদের উদারহরণ টেনে তিনি বলেন, “সবাই তাদের বন্ধু হতে চাইলেও,
বিলিয়নিয়ারের চোখে এই সম্পর্ক টি গ্রহণযোগ্য নয়, কেননা তার কাছে হয়তো এইসব বন্ধু ত্ব ফায়দা
হাসিল করার পন্থা মাত্র।”
“আমি মনে করি একাকিত্ব অনেকটা ব্যথা, ক্ষু ধা ও তৃ ষ্ণার অনুভূ তির মতো। আমাদের কাছে কিন্তু এর
বিকল্পও নেই।”
বিজ্ঞান ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছে যে, একজন ব্যক্তির ক্রনিক একাকিত্বে ভোগার
সম্ভাবনা জিনেটিক্সের ওপরও নির্ভ র করে। এর সঙ্গে যোগ হয় মদ ও মাদকের নেশা।
এছাড়া কম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ব্যক্তিরাও রয়েছেন, যারা খুব সহজেই আত্মহত্যায়
প্ররোচিত হন।
কিন্তু, এমন বুদ্ধিমান ও দৃঢ়চেতা লোকও আছেন, যারাও শেষ পর্যন্ত জীবন চালিয়ে
যাওয়াকে কঠিন মনে করেন।
অনেকেই বলেন যে, আত্মহত্যা একটি তাৎক্ষণিক আবেগপ্রবণ কাজ। কিন্তু আসন্ন
বিপদ বা ব্যথার যে কোনও পরিস্থিতিতে 'লড়াই' করার সহজাত প্রবৃত্তি তো মানুষের
জিনেই রয়েছে। কাজেই স্বেচ্ছায় মারাত্মক আত্ম-ক্ষতি ঘটানোর সিদ্ধান্ত সেই নিছক
‘আবেগপ্রবণ হওয়ার চূ ড়ান্ত মুহূ র্তে ’র অনুমানকে অস্বীকার করে।
গভীর একাকিত্ব এবং হতাশার অন্ধকার থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসে বলে মনে
করছেন অনেক বিজ্ঞানী।
লেখক অ্যান্ড্রু সলোমন ২০১৪ সালে দ্য নিউ ইয়র্কারের তার এ বিষয়ক মন্তব্যে
বলেছিলেন, এটি সফল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও সত্য। তারা অসম্ভব উচ্চ মান নির্ধারণ করে
– বেঞ্চমার্ক , যা তাদের কিছু স্তরে অপ্রতু লতার অনুভূ তিতে আরও এবং আরও বেশি
বেশি ঠেলে দেয়।
“...যতবার কেউ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সুখ অগ্রিম অনুমান করা যায় না বা
চাইলের পাওয়া যায় না, তখনই আশা চু রমার হয়ে যায়- যে আমরা সবাই আমাদের
নিজেদের ত্রুটিপূর্ণ মস্তিষ্কে বন্দি; আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে চূ ড়ান্ত একাকিত্ব দানা
বেঁধে ওঠে এবং অবশেষে এটি অলঙ্ঘনীয় হয়ে দাঁড়ায়।"
কারও কারও ক্ষেত্রে দুর্বল একাগ্রতা এবং স্মৃতিশক্তিহীনতার ঘটনাও ঘটে। জার্মান
নিউরোসায়েন্স সেন্টারের ড. ড্যানিয়েলা গ্রাফ বলছেন, “অনেক ডিপ্রেশনে আক্রান্ত
শিশুর অ্যাটেনশন ডেফিসিট/হাই আ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি) পরীক্ষার
ফলাফলেও অস্বাভাবিকতা আসে।"
আত্মঘাতী হওয়ার জন্য শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, সম্পর্কে র সমস্যা,
কাজের চাপ, আর্থিক চাপ, আইনি ঝামেলা এবং পারিবারিক সমস্যা মূলত দায়ী।
অনেক সময় একাধিক কারণও দায়ী হতে পারে।
কোরিয়ান সেলিব্রেটিদের আত্মহত্যার প্রবণতার খবর পুরোনো। কোরিয়ার বিনোদন সাংবাদিক কিম
দায়ে তার সাংবাদিক ক্যারিয়ারে অন্তত ৩০টি সেলিব্রেটির আত্মহত্যা নিয়ে রিপোর্ট করার কথা দাবি
করেছেন ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানে প্রকাশিত তার এক নিবন্ধে। শিরোনামটাও এরকম- ‘আই হ্যাভ
রিপোর্টে ড অন থার্টি কোরিয়ান সেলেব্রিটি সুইসাইডস। দ্য ব্লেম গেইম নেভার চেইঞ্জ।”
সাংবাদিক কিম লিখেছেন, “৩০ বছর ধরে আমি কোরিয়ার বিনোদন জগত নিয়ে রিপোর্ট করছি।
এরই মধ্যে ৩০টি আত্মহত্যা নিয়ে একাই কাভার করেছি, এবং আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এটা
দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজের একটি সংকট।”
অনলাইন ম্যাগাজিন মিডিয়াম বলছে, এই আত্মহত্যা প্রবণতা বিশেষ করে তাদের কে-পপ ইন্ডাস্ট্রির
তারকাদের মধ্যে প্রবল। । নিখুঁত স্টেইজ পারফরম্যান্স দিয়ে দুনিয়া মাত করে রাখা কে-পপ
তারকারাও যে ভু গতে পারেন বিষণ্ণতায় এ-কথা কে বলবে! কিন্তু ‘হোয়াই ডু সো মেনি কোরিয়ান
স্টারস কমিট সুইসাইড’ শিরোনামের লেখায় লেখক ওয়াই যে জান তু লে আনেন কোরিয়ান পপ
ইন্ডাস্ট্রির ভিন্ন এক দিক।
ওয়াই যে জান এর মতে, কে-পপ তারকাদের ভক্ত অনুরাগীদের পক্ষ থেকে আরও বেশি ‘হাই
স্টান্ডার্ড স’ অর্থাৎ নিখুঁত হবার চাপ তো আছেই, আছে অনলাইনে হেনস্তা হওয়ার মতো ভু রি ভু রি
ঘটনা। এই নিখুঁত হবার ‘স্টান্ডার্ড ’ ঠিক করে দিচ্ছে এন্টারটেইনম্যান্ট কোম্পানিগুলোও।
এ দুটো সামলাতে না পেরে নিজেদের শেষ করে দেওয়ার পথে হাঁটছেন কোন কোন কে-পপ
তারকা।
কে-পপ তারকা মুনবিনের ঘটনাটিই উল্লেখ করা যাক। এক সন্ধ্যায় মুনবিনের ম্যানেজার তার নিথর
দেহ আবিষ্কারক করে মুনবিনের নিজ অ্যাপার্ট মেন্টে। ধারণা করা হয় তিনিও হেঁ টেছেন আত্মহত্যার
পথে। অথচ ঠিক তার আগের দিন মুনবিন নাকি ভক্ত অনুরাগীদের অনলাইনে মোটিভেশনাল স্পিচ
দিচ্ছিলেন।
তবে কোরিয়ায় এই আত্মহত্যা প্রবণতা কে-পপ ইন্ডাস্ট্রি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আরও নানান
ক্ষেত্রে। এই তালিকায় আছেন অভিনয় শিল্পী, কমেডিয়ান এমনকি রাজনীতিবিদও।
ওয়াই যে জান বিশেষভাবে উল্লেখ করেন কোরিয়ান কমেডিয়ান পার্ক জি সানের কথা যাকে তার
মায়ের সঙ্গেই নিজ ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
কোরিয়ান পুলিশ তদন্তে কোন হত্যার আলামত না পাওয়ায় একে আত্মহত্যা বলে ঘোষণা দেয়।
লেখক তার বিশ্লেষণধর্মী ওই লেখায় আত্মহত্যার কারণ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ান সমাজ এবং
বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিকেই দায়ী করেন।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আত্মহত্যার হারে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান চতু র্থ।
আবার বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ডেটা অনুযায়ী ওইসিডি ভু ক্ত দেশগুলোর মধ্যে আত্মহত্যার হারে
সাউথ কোরিয়া প্রথম।
‘দ্য বিয়াথা (Werther) ইফেক্ট ফলোয়িং দ্য সুইসাইডস অব থ্রি কোরিয়ান সেলেব্রিটিস (২০১৭-
২০১৮): অ্যান একোলজিকাল টাইম-সিরিজ স্টাডি’ শিরোনামের গবেষণা পত্রে উঠে এসেছে কিছু
চমকপ্রদ তথ্য।
লি হিউন কিম এবং জিয়ং মিন লি সহ উত্তর কোরিয়ার বেশ কয়েকজন গবেষকের একটি যৌথ দল
গবেষণাটি করেন।
কী এই ‘বিয়াথা ইফেক্ট’?
সংবাদ মাধ্যমে আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশের পর সমাজে বেড়ে যায় আত্মহত্যা। একে বলা হচ্ছে,
বিয়াথা ইফেক্ট। একে কপিক্যাট সুইসাইডও বলা হয়। গবেষক ডেভিড ফিলিপস ১৯৭৪ সালে প্রথম
শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। জার্মান মহাকবি গোয়েথের এক উপন্যাস থেকে শব্দটি ধার করেন
তিনি। ১৭৭৪ সালে প্রকাশিত ‘দ্য সরোস অফ ইয়াং বিয়েথা’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র বিয়েথ এক
নারীর দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে পিস্তল দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করে। এই উপন্যাস প্রকাশের
কিছু দিন পরই জার্মানির অনেক যুবক ঠিক একই ভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
ফিলিপ তার গবেষণায় দেখিয়েছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একবার একটি সংবাদপত্র আত্মহত্যার
ঘটনা রিপোর্ট করার পরে হুট করে আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়ে যায়। তার মতে, আত্মহত্যার ঘটনাকে
যত বেশি প্রচার করা হবে, আত্মহত্যার সংখ্যা তত বাড়তে থাকবে।
এই তিন সেলিব্রেটি হলেন- গায়ক ও গীতিকার কিম জংহিউন, অভিনেত্রী চোই জিন রি ওরফে সুলি
এবং গায়িকা গু হারা।
গবেষকরা দেখান যে, তিন সেলিব্রিটির আত্মহত্যার পর আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে
যায়।
আত্মহত্যার হার পুরুষদের তু লনায় বেশি ছিল নারীদের মধ্যে। ১০ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের
আত্মহত্যার হার অন্যান্য বয়স সীমার তু লনায় ছিল বেশি।
গবেষণায় উঠে আসে আরও একটি দিক। সেটি হলো- তিন সেলিব্রিটির প্রত্যেকের আত্মহত্যার
পরের ১০ সপ্তাহে আত্মহত্যার গড় সংখ্যা অন্যান্য বছরের তু লনায় ছিল বেশি। (চিত্র-১,২)
জংহিউনের আত্মহত্যার পর দ্বিতীয়,পঞ্চম থেকে সপ্তম এবং দশম সপ্তাহে আত্মহত্যার সংখ্যা
অন্যান্য সময়ের তু লনায় ছিল বেশি।
একইভাবে, সুলির আত্মহত্যার পর, ১ম থেকে-১০ম সপ্তাহের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা অন্যান্য
বছরের একই সময়ের তু লনায় বেড়ে যায় আশঙ্কাজনক হারে।
ঠিক তেমনি, হারা গু’র আত্মহত্যার পর, ১ম থেকে ৭ম সপ্তাহে আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি ছিল
অন্যান্য বছরের তু লনায়।
‘আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই...’। অর্থাৎ যখন তিনি পোস্ট লিখছিলেন তখন আত্মহত্যার
কথা হয়তো মাথাতে ছিল না।
তাহলে কি তিনি লিখতে লিখতে এই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিলেন। আগেই থেকেই হয়তো একটি
সামাজিক ও নিরাপত্তার চাপ তিনি অনুভব করছিলেন। মাসলোর চাহিদা তত্ত্ব অনুযায়ী, তিন নম্বর ধাপ।
তাহলে সাদি মহম্মদের সং্ গে যোগাযোগটা কোথায়? যোগাযোগটা বোয়েথা ইফেক্টে হয়তো। হয়তো
একদিন আগে সাদি মহম্মদের আত্মহত্যা কাজ করেছে অবন্তিকার মাথায়। আমাদের দেশে এ নিয়ে
তেমন গবেষণা এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি অবশ্য।
https://gulfnews.com/world/understanding-celebrity-suicides-tackling-
depression-and-loneliness-1.2239540
https://www.intechopen.com/chapters/77918
https://timesofindia.indiatimes.com/tv/news/hindi/from-tunisha-sharma-
to-pratyusha-banerjee-tv-celebs-who-died-by-suicide-at-a-young-age/
photostory/96494656.cms
https://www.indiatoday.in/entertainment/photo/actresses-who-
committed-suicide-jiah-khan-kuldeep-randhawa-divya-bharti-in-their-
prime-372329-2014-05-27/2
https://optimalhappiness.com/celebrity-who-committed-suicide-2/
https://www.voanews.com/a/high-profile-suicides-influence-students-
teens/4436001.html
https://www.theguardian.com/music/2020/jan/04/i-have-reported-on-
30-korean-celebrity-suicides-the-blame-game-never-changes
https://www.usnews.com/news/best-countries/slideshows/countries-
with-the-highest-suicide-rates
https://worldpopulationreview.com/country-rankings/suicide-rate-by-
country
Background
কোরিয়ান সেলিব্রেটিদের আত্মহত্যার প্রবণতার খবর পুরোনো। কোরিয়ার বিনোদন সাংবাদিক কিম
দায়ে তার সাংবাদিক ক্যারিয়ারে অন্তত ৩০টি আত্মহত্যা নিয়ে রিপোর্ট করার কথা দাবী করেন।
গার্ডিয়ানে প্রকাশিত তার এক রিপোর্টে তিনি এই দাবী করেন।
“আই হ্যাভ রিপোর্টে ড অন থার্টি কোরিয়ান সেলেব্রিটি সুইসাইডস। দ্য ব্লেম গেইম নেভার চেইঞ্জ।”
শিরোনামের ঐ রিপোর্টে কিম উল্লেখ করেন “গত ৩০ বছর ধরে আমি কোরিয়ার বিনোদন জগত
নিয়ে রিপোর্ট করছি। এরই মধ্যে ৩০টি আত্মহত্যা নিয়ে একাই কভার করেছি, এবং আমি
নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এটা দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজের একটি সংকট।”
এই আত্মহত্যা প্রবণতা বিশেষ করে তাদের কে-পপ ইন্ডাস্ট্রির তারকাদের মধ্যে প্রবল। অনলাইন
ম্যাগাজিন মিডিয়ামে প্রকাশিত এক লেখায় এমনটাই জানা গেছে। নিখুঁত স্টেইজ পারফরম্যান্স
দিয়ে দুনিয়া মাত করে রাখা কে-পপ তারকারাও যে ভু গতে পারেন বিষণ্ণতায় এ-কথা কে বলবে!
কিন্তু “হোয়াই ডু সো মেনি কোরিয়ান স্টারস কমিট সুইসাইড” শিরোনামের লেখায় লেখক ওয়াই
যে জান তু লে আনেন কোরিয়ান পপ ইন্ডাস্ট্রির ভিন্ন এক দিক।
ওয়াই যে জান এর মতে, কে-পপ তারকাদের ভক্ত অনুরাগীদের পক্ষ থেকে আরও বেশি ‘হাই
স্টান্ডার্ড স’ অর্থ্যাৎ নিখুঁত হবার চাপ তো আছেই, আছে অনলাইনে হেনস্থা হওয়ার মতো ভু রি ভু রি
ঘটনা। এই নিখুঁত হবার ‘স্টান্ডার্ড ’ ঠিক করে দিচ্ছে এন্টারটেইনম্যান্ট কোম্পানীগুলোও।
আর এই নিখুঁত হবার চাপ আর অনলাইন হেনস্থা সামলাতে না পেরে নিজেদের শেষ করে দেওয়ার
পথে হাঁটছেন কোন কোন কে-পপ তারকা।
কে-পপ তারকা মুনবিনের ঘটনাটিই উল্লেখ করা যাক। এক সন্ধ্যায় মুনবিনের ম্যানেজার তার নিথর
দেহ আবিষ্কারক করে মুনবিনের নিজ অ্যাপার্ট মেন্টে। ধারণা করা হয় তিনিও হেঁ টেছেন আত্মহত্যার
পথে। অথচ ঠিক তার আগের দিন মুনবিন নাকি ভক্ত অনুরাগীদের অনলাইনে মোটিভেশনাল স্পিচ
দিচ্ছিলেন।
তবে কোরিয়ায় এই আত্মহত্যা প্রবণতা কে-পপ ইন্ডাস্ট্রি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আরও নানান
ক্ষেত্রে। এই তালিকায় আছেন অভিনয় শিল্পী, কমেডিয়ান এমনকি রাজনীতিবিদও।
ওয়াই যে জান বিশেষভাবে উল্লেখ করেন এক কোরিয়ান কমেডিয়ানের কথা যাকে তার মায়ের
সাথেই নিজ ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
কোরিয়ান পুলিশ তদন্তে কোন হত্যার আলামত না পাওয়ায় একে আত্মহত্যা বলে ঘোষণা দেয়।
তার মতে ক্রমাগত ‘সফল’ এবং ‘নিঁখুত’ হবার চাপ কোরিয়ান সংস্কৃ তির অনেক গভীরে জেঁ কে বসে
আছে। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই তাদের বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিও এতে আক্রান্ত হয়েছে। আর অনলাইনে
তারকাদের প্রতি নিষ্ঠু র আচরণ তো আছেই।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউর দেয়া তথ্য অনুযায়ী আত্মহত্যার হারে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান চতু র্থ।
আবার বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ডেটা অনুযায়ী ওইসিডি ভু ক্ত দেশগুলোর মধ্যে আত্মহত্যার হারে
সাউথ কোরিয়া প্রথম।
‘দ্য বিয়াথা (ওয়ার্দার) ইফেক্ট ফলোয়িং দ্য সুইসাইডস অফ থ্রি কোরিয়ান সেলেব্রিটিস (২০১৭-
২০১৮)ঃ অ্যান একোলজিকাল টাইম-সিরিজ স্টাডি’ শিরোনামের গবেষণা পত্রে উঠে এসেছে
কিছু চমকপ্রদ তথ্য।
লি হিউন কিম এবং জিয়ং মিন লি সহ উত্তর কোরিয়ার বেশ কয়েকজন গবেষকের একটি যৌথ দল
গবেষণাটি করেন।
বিয়াথা ইফেক্ট্বে র তত্ত্ব অনুযায়ী নিউজ মিডিয়ায় আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশের পর বেড়ে যায় সমাজে
বেড়ে যায় আত্মহত্যা। এই ঘটনাটিকে বলা হচ্ছে বিয়াথা ইফেক্ট। একে কপিক্যাট সুইসাইডও বলা
হয়। গবেষক ডেভিড ফিলিপস ১৯৭৪ সালে প্রথম শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। জার্মান কবি
গোয়েথের এক উপন্যাস থেকে শব্দটি ধার করেন তিনি। ১৭৭৪ সালে প্রকাশিত ‘দ্য সরোস অফ
ইয়াং বিয়েথা’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র বিয়েথ এক নারীর দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে নিজেকে পিস্তল
দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করে। এই উপন্যাস প্রকাশের কিছু দিন পরই জার্মানীর অনেক যুবক
ঠিক একই ভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
ফিলিপ তার গবেষণায় দেখিয়েছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একবার একটি সংবাদপত্র আত্মহত্যার
ঘটনা রিপোর্ট করার পরে হুট করে আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়ে যায়। তার মতে আত্মহত্যার ঘটনাকে
যত বেশি প্রচার করা হবে, আত্মহত্যার সংখ্যা তত বাড়তে থাকবে।
এই তিন সেলিব্রেটি হলেন- সিংগার সংরাইটার কিম জংহিউন, অভিনেত্রী এবং গায়ীকা চোই জিন রি
ওরফে সুলি এবং গু হারা।
গবেষকরা দেখান যে, তিন সেলিব্রিটির আত্মহত্যার পর আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে
যায়।
আত্মহত্যার হার পুরুষদের তু লনায় বেশি ছিল নারীদের মধ্যে। ১০ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের
আত্মহত্যার হার অন্যান্য বয়স সীমার তু লনায় ছিল বেশি।
গবেষণায় উঠে আসে আরও একটি দিক। সেটি হল- তিন সেলিব্রিটির প্রত্যেকের আত্মহত্যার
পরের ১০ সপ্তাহে আত্মহত্যার গড় সংখ্যা অন্যান্য বছরের তু লনায় ছিল বেশি। (চিত্র-১,২)
জংহিউনের আত্মহত্যার পর দ্বিতীয়,পঞ্চম থেকে সপ্তম এবং দশম সপ্তাহে আত্মহত্যার সংখ্যা
অন্যান্য সময়ের তু লনায় ছিল বেশি।
একইভাবে, সুলির আত্মহত্যার পর, ১ম থেকে-১০ম সপ্তাহের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা অন্যান্য
বছরের একই সময়ের তু লনায় বেড়ে যায় আশঙ্কাজনক হারে।
ঠিক তেমনি, হারা গু’র আত্মহত্যার পর, ১ম থেকে ৭ম সপ্তাহে আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি ছিল
অন্যান্য বছরের তু লনায়।
চিত্র-১
চিত্র-২