Professional Documents
Culture Documents
ভদ্রলোকের বয়স তিপান্ন।নারায়ণগঞ্জে তাঁর দুটি গেঞ্জির কারখানা আছে।কারখানা থেকে তাঁর
মাসে সত্তর হাজার টাকা আয় হয়।ঢাকা শহরে তাঁর তিনটি বাড়ি আছে।সব ক'টা ভাড়া দিয়ে তিনি
মালিবাগে তিন কামরার একটা বাড়ি ভাড়া করে থাকেন।এত বড়ো বাড়ি তাঁর প্রয়োজন নেই বলে
এখন দু-কামরার ফ্ল্যাট খুঁজছেন।যাকে পান তাকেই বলেন—এত বড়ো বাড়ি দিয়ে আমি করবটা
কী?একা মানুষ।আমার একটা রুম হলেই চলে যায়।সারাদিন কাজকর্মে থাকি-রাতে এসে ঘুমিয়ে
থাকি।তার জন্য তিনটা ঘরের দরকার কি? ঘর বেশি হলেই তো আর ঘুম ভালো হবে না।
কেউ যদি বলে, আপনি একলা মানুষ, টাকা দিয়েই বা আপনি করবেন কি? তখন তিনি এমন
দৃষ্টিতে তাকান যে মনে হয় এত অদ্ভু ত কথা তিনি তাঁর জীবনে শুনেননি। প্রথম শুনলেন |
এক বর্ষাকালের কথা।রাত ন’টার মতো বাজে। নারায়ণগঞ্জ থেকে তিনি সবে ফিরেছেন। ফেরার
পথে একটা ডিম এবং দুটি কলা নিয়ে এসেছেন।তাঁর রাতের খাবার।ডিমসেদ্ধ এবং কলা। টিনের
কৌটায় টোষ্ট বিস্কুট আছে। একটা টোষ্ট বিস্কিট। তিনি মনে করেন জীবন রক্ষার জন্যে অতটু কু
খাওয়া প্রযোজন তার বেশি খাওয়া অপরাধের মতো।
তিনি কেরোসিনের চু লায় ডিম সিদ্ধ বসিয়ে বাথরুমে হাত-মুখ ধুতে গিয়েছেন তখন কলিংবেলের শব্দ
হল। হাত মুখ ধোয়া বন্ধ রেখে তিনি দরজা খোলার জন্যে গেলেন। দেরি করলে এই লোক
কলিংবেল টিপতেই থাকবেন। বেহুদা খরচ হবে। কি দরকার।
দরজা খুলতেই দেখেন চাদর গায়ে ২২/২৩ বছরের একজন যুবক ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আজহার খাঁ
কড়া গলায় বললেন, কাকে চান?
যুবকটি হাসিমুখে বলল, “আমি আপনার কাছে একটা জিনিস বিক্রি করতে এসেছি।'
আজহারউদ্দিন খাঁ বিরক্ত গলায় বললেন, ‘আমার কোনো জিনিসের দরকার নাই।’
‘আমি যে জিনিস বিক্রি করতে এসেছি – তার সত্যি আপনার কোনো দরকার নেই। তবে
আপনি ব্যবসায়ী মানুষ। ব্যবসায়ী মানুষ লাভ-লোকসান ভালো বুঝে। আমার জিনিসটা যদি আপনি
কিনে রাখেন তাহলে লাখ পঞ্চাশেক টাকা লাভ করতে পারবেন।’
আজহারউদ্দিন খাঁর ভু রু কুচকে গেল। বোঝাই যাচ্ছে লোকটা ঠগবাজ।তিনি ঠগৰাজের সাহস
দেখে চমৎকৃ ত হলেন।তাঁর মতো ঘাগু লোককে ‘ঠক’ খাওয়াতে এসেছে। সে জানে না তিনি একে
সাত ঘাটের পানি খাইয়ে ছেড়ে দিতে পারেন।
“আমার কাছে একটা হীরা আছে- পায়রার ডিমের চেয়ে খানিকটা বড়ো। ওইটা বিক্রি
করব”।
আজহার সাহেব মনে মনে হাসলেন। ঠগবাজদের ঘোল খাইয়ে দেওয়াতেও আনন্দ আছে।
তিনি এই আনন্দের লোভ সামলাতে পারলেন না ।গম্ভীর গলায় বললেন, ‘আমার কাছে পায়রার
ডিমের মতো সাইজের হীরা বিক্রি করতে এসেছেন?’
‘জি,স্যার।‘
‘জি না স্যার।কোহিনূর না। কোহিনূর আছে ব্রিটিশ মিউজিয়মে।কোহিনূরর পরের হীরার নাম
‘দি হোপ’।এটা আছে নিউ ইয়র্কে ।‘
আজহার সাহেব আবার মনে মনে হাসলেন।ঠগবাজের লক্ষণ হচ্ছে, ভারী ভারী কথা বলে
খোদ্দেরকে হকচকিয়ে দেওয়া। ব্যাট ঘুঘু দেখেছে ফাঁদ দেখেনি।
লোকটি বলল,’আপনি বোধহয় আমার হীরার ব্যাপারটা ঠিক বিশ্বাস করছেন না’।
"বিক্রি করে দিতে চাচ্ছি কারণ হীরা কোন কাজে আসে না।চোরের ভয়ে সারাক্ষন লুকিয়ে
রাখতে হয়। এর চেয়ে বিক্রি করলে টাকাটা কাজে লাগে।‘
আজহার সাহেব বললেন,’টাকা কী কাজে লাগবে? টাকাও তো সেই ব্যাংকে রেখে দিতে হয়’।
‘আমি অবশ্যি টাকা ব্যাংকে রাখার জন্যে হীরা বিক্রি করছি না। আমি এই টাকায় কিছু
সত্ কাজ করতে চাই’।
‘আমার লাভ কিছু ই না। বাচ্চাগুলির লাভ। অমি একটা হাসপাতাল করতে চাই।'
‘ফাজলেমি করছেন নাকি? এক কোটি টাকা দামের হীরা আপনি পকেটে নিয়ে ঘুরে
বেড়াচ্ছেন। আমার সঙ্গে মামদোবাজি করতে চাচ্ছেন। আমি আপনার মতো দশটা মামদোকে এক
ঢোক পানি দিয়ে গিলে ফেলতে পারি,তা জানেন?’
লোকটা হাসতে হাসতে বলল, 'আমি স্যার হীরাটি রেখে যাচ্ছি। আপনি যাকে ইচ্ছা তাকে
দিয়ে যাচাই করুন। আমি সাত দিন পরে আসব।'
"কোনো দরকার নেই। আসল হীরা হলেও আমি কিনব না। এত টাকা আমার নেই।‘
‘না কিনলেও জিনিসটা এক সপ্তাহ আপনার কাছে থাকুক। আপনার সন্দেহ দূর হোক।‘
‘এক কোটি টাকা দামের জিনিস আপনি আমার কাছে রেখে যাবেন?’
"জি। কারণ কৃ পণ হলেও আপনি মানুষ হিসেৰে সত্। আমি খোঁজখবর নিয়েই এসেছি।স্যার।'
লোকটা পকেটে হাত দিয়ে কাঠের এক ছোট্ট কালো বাক্স বের করে আজহার সাহেবের
হাতের দিকে বাড়িয়ে দিল। আজহার সাহেব হাতে নিলেন। বাক্স খুলে জিনিসটা একবার দেখতে তো
কোনো ক্ষতি নেই। দেখা যাক।
লোকটি আজহার সাহেবকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না। লম্বা লম্বা পা ফেলে অতি
দ্রুত রাস্তায় নেমে পড়ল। ‘আরে আরে, এই এই’ বলে আজহার সাহেব পিছু পিছু গিয়েও লোকটির
নাগাল পেলেন না।
তিনি বাক্স খুললেন। পায়রার ডিমের মতোই ঝকঝকে একটা কি যেন দেখাচ্ছে। খাঁজ কাটা
কাঁচের টু করো,বলাই বাহুল্য। জার্মান ক্রিস্টাল হবে। তবে জিনিসটা বানিয়েছে সুন্দর।
তিনি টু করোটা হাতে নিলেন। যদি হীরা হয় তাহলে এটা দিয়ে কাঁচ কাটা যাবে। ঘরের
আয়নায় একটা আঁচড় দিয়ে দেখবেন না কি? কোনো মানে হয় না যদিও।
তিনি আয়নায় একটা আঁচড় দিলেন। আয়না নিমিষে দু’টু করো হয়ে গেল। একী কাণ্ড! সত্যি
কি হীরা! তা কি করে হয়। এত বড়ো একটা হীরা অচেনাঅজানা একজন মানুষ তার হাতে দিয়ে
উধাও হয়ে যাবেন। মানুষ এমন বোকা এখনো হয়নি। নিশ্চয়ই কোথাও কোনো চালাকি আছে।
চালাকিটা কি?
জিনিসটা বেশ ভারি। আলো পড়লে জ্বলন্ত অঙ্গারের মতো ঝিকমিকিয়ে উঠে। আসল হীরা
কেমন হয় তিনি জানেন না। তিনি হীরা আগে কখনো দেখেননি।