You are on page 1of 15

বাংলা ০১ঃ প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ, বাক্য শুদ্ধি (সংগৃহীত সহপুস্তক সংকলন)

সুব্রত শুভ·SATURDAY, OCTOBER 21, 2017·

শব্দের অপপ্রয়োগের কারণ

শব্দপ্রয়োগের নিয়ম জানা থাকলে অপপ্রয়োগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। নিম্নে শব্দের অপপ্রয়োগের কিছু
উদাহরণ কারণসহ তুলে ধরা হল।

অজ্ঞানতা- অজ্ঞতা অর্থে প্রয়োগ অশুদ্ধ। অজ্ঞানতা শব্দের প্রকৃত অর্থ জ্ঞানশূন্যতা।

অশ্রুজল- চোখের জল অর্থে ব্যবহার অসিদ্ধ। অশ্রু অর্থই চোখের জল।

আঙ্গিক- অর্থ অঙ্গ-সম্বন্ধীয়। কলাকৌশল অর্থে প্রয়োগ ভুল।

আয়াত্তাধীন-আয়ত্ত শব্দের অর্থই অধীন। আয়ত্তের পর অধীন ব্যবহার বাহুল্য।

অপোগন্ড- প্রকৃত অর্থ নাবালক বা অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক। অপদার্থ, অকর্মণ্য অর্থে প্রয়োগ অশুদ্ধ।

অধীনস্ত-শুদ্ধপ্রয়োগ অধীন।

আকন্ঠ পর্যন্ত-আকন্ঠ শব্দই কন্ঠ পর্যন্ত বোঝায়।পর্যন্ত এখানে বাহুল্য।

আন্তর্জাতিক-জাতির অন্তর্গত বা জাতির আভ্যন্তরিক বিষয়-সম্পর্কিত।বিভিন্ন জাতি-সংক্রান্ত বা সার্বজাতিক অর্থে


প্রয়োগ অশুদ্ধ হলেও ব্যাপকভাবে প্রচলিত।

আশ্চর্য-মূল অর্থ বিস্ময়কর। বিস্মিত অথ্যে ব্যবহার প্রচলিত হলেও ভুল,শুদ্ধরূপ আশ্চর্যান্বিত।

ইদানীংকালে-ইদানীং অর্থ বর্তমান কাল,এর সঙ্গে কাল যোগ করা বাহুল্য।

কর্মব্যপদেশে-কাজের ছুতায়।কর্মসূত্রে অর্থে প্রয়োগ ভুল।

কর্তৃপক্ষগণ-কর্তৃপক্ষ শব্দটি বহুবচনবাচক।অর্থ পরিচালকগণ,শাসকগণ।অতএব ‘গণ’প্রয়োগ বাহুল্য ও অশুদ্ধ।

খাঁটি গরুর দুধ-কথাটি অর্থহীন।শুদ্ধ রূপ গরুর খাঁটি দুধ।

কার্যকরী-কার্যকর অর্থই উপযোগী বা উপযোগী বা ফলদায়ক। ‘ঈ’-কার বাহুল্য।

কৃচ্ছতা-কৃচ্ছ শব্দের অর্থ শারীরিক ক্লেশ,কষ্টসাধ্য ব্রত।– ‘তা’ প্রত্যয় যোগ অশুদ্ধ।

জন্মবার্ষিকী-জন্মবার্ষিক শব্দই যথেষ্ট।অকারণ স্ত্রী-প্রত্যয়-যোগ বহুল প্রচলিত হলেও অশুদ্ধ।

জাতীয়করণ/রাষ্ট্রীয়করণ-ইংরেজী Nationalization -এর বাংলা অনুবাদ।প্রতিশব্দ। জাতীয়করণ বা

রাষ্ট্রীয়করণ বলতে জাতি বা রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্তিকরণ বোঝায়।রাষ্ট্রীয় বা সরকারী তত্ত্বাবধানে আনা বোঝায় না।
কাজেই রাষ্ট্রায়ত্ত করা অথবা সরকারী করা ইত্যাদি ব্যবহার বাঞ্ছনীয়।

তৎকালীন সময়-তৎকালীন অর্থ সেই সময়। ‘তৎকালীন সময়’ প্রয়োগ অশুদ্ধ।


ধুমপান নিষেধ-ইংরেজী smoking is prohibited –এর বাংলা অনুবাদ হিসেবে অশুদ্ধ। শুদ্ধ রূপ: ধুমপান করা
নিষেধ অথবা ধুমপান নিষিদ্ধ।

পদক্ষেপ-অর্থ পদার্পণ বা পা ফেলা। ব্যবস্থা গ্রহণ অর্থে পদক্ষেপ শব্দটির প্রয়োগ প্রচলিত হলেও অশুদ্ধ।

পূর্বাহ্নে-পূর্বে বা আগে অর্থে ব্যবহৃত শব্দটি ভুল।পূবাহ্নে অর্থ দিনের প্রথমভাগ বা সকালবেলা।

প্রমাণ্য-অর্থ প্রমাণিকতা বা বিশ্বস্ততা। এই বিশেষ্য শব্দটি প্রমাণসিদ্ধ,বিশ্বাসযোগ্য,প্রমাণিত বা প্রামাণিক(বিণ)অর্থে


প্রয়োগ ভুল।

প্রেক্ষিত-মূল অর্থ যা প্রেক্ষণ বা দর্শন করা হয়েছে।পরিপ্রেক্ষিত (পটভূমি বা পারিপার্শ্বিক)অর্থে প্রেক্ষিত শব্দটির
ব্যবহার অসিদ্ধ।

ফরাসীয়-ফরাসী শব্দের অর্থই ফরাসীদেশীয়। সুতরাং ‘ঈয়’প্রত্যয় যোগে ফরাসীয় সাহিত্য প্রয়োগ অসিদ্ধ। অনুরূপ
ভুল-রুশীয়,মার্কিনী ইত্যাদি।

ফলশ্রুতি-আভিধানিক অর্থ পূণ্যকর্ম করলে যে ফল হয় তার বিবরণ বা তা শোনা। ফল বা ফলাফল অর্থে প্রয়োগ
অশুদ্ধ।

বমালসুদ্ধ-বমাল শব্দের অর্থই মালসমেত,সেক্ষেত্রে শেষের ‘সূদ্ধ’ শব্দটি বাহুল্য।

ব্যক্তিত্ব-ব্যক্তি শব্দটি কর্তৃবাচক ও ব্যক্তিত্ব শব্দটি কর্মবাচক পদ। উভয়ই বিশেষ্য হলেও ‘ব্যক্তি’ অর্থে ব্যক্তিত্ব
(ব্যক্তির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য বা personality )শব্দটির প্রয়োগ অসিদ্ধ।

বৈদেহী/বিদেহী-বিদেহ শব্দের অর্থ দেহশূণ্য বা অশরীরী।বিদেহ বিশেষণ,কিন্তু ‘ঈ’-প্রত্যয় যোগে পুনরায় বিশেষণ
করা হয় –‘বিদেহী’। প্রচলিত হলেও ‘বিদেহী’ শব্দটি অশুদ্ধ।এই অর্থে ‘বৈদেহী’ শব্দটির প্রয়োগও ভুল।

ভাষাভাষী-ভাষা ব্যবহারকারী অর্থে ভাষীই যথার্থ ও যথেষ্ট। ভাষাভাষী প্রয়োগ বাহুল্য।

শায়িত-শায়িত শব্দের অর্থ ‘শয়ন করানো হয়েছে এমন’। যিনি নিজে শুয়ে আছেন তাঁকে ‘শয়ান’ বলা হয়। শুয়ে
আছেন অর্থে শায়িত শব্দের প্রয়োগ প্রচলিত হলেও অশুদ্ধ।

স্বপরিবার/সপরিবার/সপরিবারে- ‘আপনি স্বপরিবার আমন্ত্রিত’-নিমন্ত্রণ-পত্রে এই ভুল বাক্যটি প্রায়ই লক্ষ্য করা


যায়। ‘স্বপরিবার’ অর্থ নিজ পরিবার।সপরিবার শব্দটি বিশেষণ,অর্থ-‘পরিবারসহ’। ‘আপনি সপরিবার
আমন্ত্রিত’বাক্যটি তাই শুদ্ধ। সংস্কৃতে ‘সপরিবার’ ক্রিয়া-বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়,কিন্তু বাংলায় ক্রিয়া-
বিশেষণরূপে ‘সপরিবারে’ ব্যাকরণসম্মত না হলেও প্রচলিত।যেমন- ‘আপনি সপরিবারে আসিবেন’। অনুরূপ
শব্দ-সবান্ধব(বিণ)-সবান্ধবে (ক্রি-বিণ)। একটি পরিবার অর্থে পরিবারবর্গ প্রয়োগ অশুদ্ধ।

সমৃদ্ধশালী/সম্পদশালী- সমৃদ্ধ (বিণ)শব্দের অর্থ সম্পদশালী বা প্রাচুর্যযুক্ত। – ‘শালী’ যোগ করে বিশেষণ পদ
পুনরায় বিশেষণ করা অর্থহীন ও অশুদ্ধ। সম্পদ(বি.)বা সমৃদ্ধি (বি.) –র সঙ্গে ‘শালী’ যোগ করে বিশেষণ করা
যায়। সম্পদশালী-র সঙ্গে – ‘ইনি’ প্রত্যয়-যোগও (যেমন-সম্পদশালিনী) ব্যকরণসম্মত নয়। শস্যশালীনীও এ-
জাতীয় ভুল (শুদ্ধরূপ- শস্যশালী)।

বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ


ব্যাকরণজ্ঞান থাকলে ভাষার অশুদ্ধ প্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ অর্থাৎ অপপ্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন থাকা যায়।

ভাষা অপপ্রয়োগের ক্ষেত্র

বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভাষার অপপ্রয়োগ হতে পারে। যেমন:

১. শব্দ রূপান্তজাত অপপ্রয়োগ : দৈন্যতা, মাধুর্যতা, সমসাময়িক, উদ্ধেলিত, চোখের দৃষ্টিশক্তি, মাতাহারা। ২.
শব্দদ্বিত্ব অপপ্রয়োগ : শুধু/কেমলমাত্র, অশ্রুজল, ঘামজল, ভুলত্রুটি, ভুলভ্রান্তি। ৩. সংখ্যাজাত অপপ্রয়োগ : ১
জুলাই/১লা জুলাই। ৪. বচনজাত অপপ্রয়োগ : বড় বড় মানুষরা সব, সকল/সমস্ত /সব যুদ্ধাপরাধীদের। ৫.
নির্দেশকজাত অপপ্রয়োগ : এই লোকটি। ৬. সন্ধিজাত অপপ্রয়োগ : লজ্জাস্কর, ইতিমধ্যে, উল্লেখিত, দুরাবস্থা। ৭.
সমাসজাত অপপ্রয়োগ : দেশ ও বিদেশে। ৮. উপসর্গজাত অপপ্রয়োগ : সুস্বাগতম, অক্লান্তি হীনভাবে, উপ-
পরিচালক। ৯. বিভক্তিজাত অপপ্রয়োগ : আমাদেরকে, তাদেরকে, নারীদেরকে, বাড়িতে। ১০. প্রত্যয়জাত
অপপ্রয়োগ : দৈন্যতা, দারিদ্রতা। ১১. চিহ্নজাত অপপ্রয়োগ : সুন্দরী বালিকা, আসমা অস্থিরা, অভাগিনী,
কাঙালিনী। ১২. পক্ষজাত অপপ্রয়োগ : আমি অর্থাৎ হাসান জেনে শুনে ভুল করি না। ১৩. কারকজাত অপপ্রয়োগ
: ছুরিতে, আমের কাননে। ১৪. বিসর্গজাত অপপ্রয়োগ : পুন:প্রচার। ১৫. সমোচ্চারিত অপপ্রয়োগ : তাড়া
আমরাতলায় বসে আমরা খাওয়ার সময় মালির তারা খেয়েছে। ১৬. বাক্যজাত অপপ্রয়োগ : আমি স্বচক্ষে/নিজের
চোখে। ১৭. বাচ্যজাত অপপ্রয়োগ : সূর্য পূর্বদিকে উদয় হয়। ১৮. এককথায় প্রকাশ অপপ্রয়োগ : চারিদিকে
প্রদক্ষিণ, হাতে কলমে ব্যবহারিক শিক্ষা। ১৯. প্রবাদ অপপ্রয়োগ : স্বল্প বিদ্যা ভয়ংকরী। ২০. বাগধারা
অপপ্রয়োগ : পাকা ধানে আগুন দেয়া।

২১. বানান ও উচ্চারণ অপপ্রয়োগ : প্রাণীজগৎ, কীভাবে, পৃথিবীব্যাপী, স্ত্রীবাচক, শশীভূষণ, মন্ত্রীসভা, স্বামীগৃহ,
গুণীজন, নদীতীর, নদীমাতৃক, বৈশাখীমেলা, আগামীকাল।

সমাসবদ্ধ শব্দের বানান লেখা হয় ঈ-কার দিয়ে। ব্যাকরণ নিয়ম অনুসারে ঈ-কার হয়ে যায় ই-কার। ঊ-কার হয়ে
যায় উ-কার। ণ-হয়ে যায় ন। য-ফলা থাকে না। যেমন: ঘরনি, কানাই/কানু, বোশেখি, সুয্যি, সোনা, সন্ধে
ইত্যাদি।

প্রাদেশিক ও বিদেশি শব্দ হলে /ছ/য/ণ/ষ/ঞ্জ/ঞ্চ/ ঈ-কার/উ-কার বসে না তবুও ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন: লুংগি,
ডেংগু, ঠান্ডা, ঝান্ডা, লন্ঠন, মিসরি, পসন্দ, নামাজ, ওজু, ইস্টার্ন, স্টোর, ইনজিন, ইনজিনিয়ার, সেনচুরি, তির
(ধনুক অর্থে, পাড় অর্থে নয়), অ্যাকাডেমি/এ্যাকাডেমি/একাডেমি, রসুল, নুর ইত্যাদি।

সংস্কৃতশব্দে য-ফলা চল আছে কিন্তু ইংরেজি শব্দে নাই তবু লেখা হচ্ছে। যেমন: ইস্যু, টিস্যু, গ্যেটে, স্যার।
ইংরেজি শব্দকে তদ্ভব করে লেখা হচ্ছে। যেমন: হসপিটাল>হাসাপাতাল, চকোলেট>চকলেট।

শব্দের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

সংস্কৃত সহিত থেকে ‘সঙ্গে বা সাথে’র উৎপত্তি। নিয়ম আছে গদ্যে ‘সঙ্গে’ আর পদ্যে ‘সাথে’ ব্যবহার করতে হবে
তবে এখন সর্বত্রই ‘সঙ্গে’ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে বাক্য অুশুদ্ধ হতে পারে। যেমন :

অশুদ্ধবাক্য : রহিম ছেলেদের মধ্যে কনিষ্ঠতম/তর। শুদ্ধবাক্য : রহিম ছেলেদের মধ্যে কনিষ্ঠ।

অশুদ্ধবাক্য : আপনি সদাসর্বদা জনগণের মঙ্গল চেয়েছেন। শুদ্ধবাক্য : আপনি সর্বদা/সব সময় জনগণের মঙ্গল
চেয়েছেন।
অশুদ্ধবাক্য : শুনেছি আপনি স্বস্ত্রীক ঢাকায় থাকেন। শুদ্ধবাক্য : শুনেছি আপনি সস্ত্রীক/স্ত্রীসহ ঢাকায় থাকেন।

অশুদ্ধবাক্য : আপনি জনগণের হয়েও তাদের পক্ষে সাক্ষী দেননি। শুদ্ধবাক্য : আপনি জনগণের হয়েও তাদের
পক্ষে সাক্ষ্য দেননি।

অশুদ্ধবাক্য : ঘটনাটি শুনে আপনি তো উদ্বেলিত হয়ে পড়েছিলেন। শুদ্ধবাক্য : ঘটনাটি শুনে আপনি তো উদ্বেল
হয়েছিলেন।

অশুদ্ধবাক্য : বাসের ধাক্কায় তিনি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। শুদ্ধবাক্য : বাসের ধাক্কায় তিনি দৃষ্টিশক্তি
হারিয়েছেন।

অশুদ্ধবাক্য : আপনার এলাকার উন্নয়নের জন্য আপনি দিবারাত্রি পরিশ্রম করেছেন। শুদ্ধবাক্য : আপনার এলাকার
উন্নয়নের জন্য আপনি দিবারাত্র/দিনরাত পরিশ্রম করেছেন।

অশুদ্ধবাক্য : আমাদের প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা করেছেন নর-নারীর বৈষম্যতা দূর করতে। শুদ্ধবাক্য : আমাদের প্রধানমন্ত্রী
চেষ্টা করেছেন নর-নারীর বৈষম্য দূর করতে।

অশুদ্ধবাক্য : শুধু নিজের না, দেশের উৎকর্ষতা সাধন করা প্রত্যেকেরই উচিত। শুদ্ধবাক্য : শুধু নিজের না, দেশের
উৎকর্ষ/উৎকৃষ্টতা সাধন করা প্রত্যেকেরই উচিত।

অশুদ্ধবাক্য : বেশি চাতুর্যতা দেখাতে গিয়ে শেষে নিজেই দল থেকে বাদ পড়লেন। শুদ্ধবাক্য : বেশি চাতুর্য/চতুরতা
দেখাতে গিয়ে শেষে নিজেই দল থেকে বাদ পড়লেন।

অশুদ্ধবাক্য : তার কথার মাধুর্যতা নাই। শুদ্ধবাক্য : তার কথার মাধুর্য বা মধুরতা নাই।

অশুদ্ধবাক্য : ঢাকা দিন দিন তার ভারসাম্যতা হারিয়ে ফেলছে। শুদ্ধবাক্য : ঢাকা দিন দিন তার
ভারসাম্য/ভারসমতা হারিয়ে ফেলছে।

অশুদ্ধবাক্য : অন্য কোন উপায়ন্ত না দেখে তারা গুলি ছুড়তে লাগল। শুদ্ধবাক্য : অন্য কোন উপায় না দেখে তারা
গুলি ছুড়তে লাগল।

অশুদ্ধবাক্য : সে ক্যান্সারজনিত কারণে মারা গিয়েছে। শুদ্ধবাক্য : সে ক্যান্সার/ক্যান্সারজনিক রোগে মারা


গিয়েছে।

অশুদ্ধবাক্য : ঢাকার সৌন্দর্যতা বৃদ্ধিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। শুদ্ধবাক্য : ঢাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে
কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।

অশুদ্ধবাক্য : অনুমতি ছাড়া কারখানায় ঢুকা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। শুদ্ধবাক্য : অনুমতি ছাড়া কারখানায় ঢুকা
আইনত দণ্ডনীয়/আইনত অপরাধ।

অশুদ্ধবাক্য : এত বড় মানুষ হয়েও আপনার সৌজন্যতার কমতি নাই। শুদ্ধবাক্য : এত বড় মানুষ হয়েও আপনার
সৌজন্যের/সুজনতার কমতি নাই।

অশুদ্ধবাক্য : শহীদুল্লাহ কায়সার এবং মুনীর চৌধুরী দুজনই দেশের জন্য প্রাণ দিলেন। শুদ্ধবাক্য : শহীদুল্লাহ
কায়সার ও মুনীর চৌধুরী দুজনই দেশের জন্য প্রাণ দিলেন।
অশুদ্ধবাক্য : আগুনের দ্বারা নিভে গেছে কতগুলো প্রাণ। শুদ্ধবাক্য : আগুনে নিভে গেছে কতগুলো প্রাণ।

বচনের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

সচেতনভাবেই হোক আর অবচেতনভাবেই হোক অনেক লেখক/কবি/সাধারণ মানুষ একটি বাক্যে দুবার বা
তিনবার বহুচিহ্ন ব্যবহার করে বাক্যের গুণ নষ্ট করে। যেমন: গ্রামগুলো সব, লক্ষ লক্ষ শিশুগুলো সব, সব
রাজাকারদের, সকল যুদ্ধাপরাধীদের ইত্যাদি। ‘কিছু’ ব্যবহার হলে পরে বহুবচন হয় না। যেমন: কিছু লোকদের
না হয়ে হবে কিছু লোক। বচন ঘাটতি বা বাহুল্যের কারণেও বচন ভুল হতে পারে। যেমন:

অশুদ্ধবাক্য : সকল/সমস্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করেছে জনতা। শুদ্ধবাক্য : সকল/সমস্ত


যুদ্ধাপরাধীর/যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করেছে জনতা।

অশুদ্ধবাক্য : আইভী ছাড়া অন্যান্য মেয়র প্রার্থীদের অবস্থা কেমন? শুদ্ধবাক্য : আইভী ছাড়া অন্যান্য মেয়র
প্রার্থীদের/অন্য প্রার্থীদেদের অবস্থা কেমন?

অশুদ্ধবাক্য : এবারও আইডিয়াল স্কুলের সব ছাত্ররা ভালো রেজাল্ট করেছে। শুদ্ধবাক্য : এবারও আইডিয়াল
স্কুলের সব ছাত্র/ছাত্ররা ভালো রেজাল্ট করেছে।

অশুদ্ধবাক্য : লক্ষ লক্ষ জনতারা সব সভায় উপস্থিত হয়েছিল। শুদ্ধবাক্য : লক্ষ লক্ষ জনতা সভায় উপস্থিত
হয়েছিল।

অশুদ্ধবাক্য : সব পাখিরা ঘর বাঁধে না। শুদ্ধবাক্য : সব পাখি ঘর বাঁধে না।

অশুদ্ধবাক্য : যেসব ছাত্রদের নিয়ে কথা তারা বখাটে। শুদ্ধবাক্য : যেসব ছাত্রকে নিয়ে কথা তারা বখাটে।

অশুদ্ধবাক্য : যেসব অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দের পরে বসে শব্দ গঠন করে তাকে প্রত্যয় বলে। শুদ্ধবাক্য :
যেসব অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দের পরে বসে শব্দ গঠন করে তাদের প্রত্যয় বলে।

অশুদ্ধবাক্য : আমরা এমন কিছু মানুষদের চিনি, যারা এখনও দেশের জন্য প্রাণ দেবে। শুদ্ধবাক্য : আমরা এমন
কিছু মানুষকে চিনি যারা এখনও দেশের জন্য প্রাণ দেবে।

অশুদ্ধবাক্য : ক্লাসে যে ১০ জন ছাত্র আছে তার মধ্যে ৮ জনই ভালো ছাত্র। শুদ্ধবাক্য : ক্লাসে যে ১০ জন ছাত্র
আছে তাদের মধ্যে ৮ জনই ভালো ছাত্র।

অশুদ্ধবাক্য : কিছু কিছু মানুষ আছে যে অন্যের ভালো দেখতে পারে না। শুদ্ধবাক্য : কিছু কিছু মানুষ আছে যারা
অন্যের ভালো দেখতে পারে না।

অশুদ্ধবাক্য : সুজন, অন্যান্য মেয়র প্রার্থীদের খবর কী? শুদ্ধবাক্য : সুজন, অন্যান্য মেয়র প্রার্থীর খবর কী?

অশুদ্ধবাক্য : এমন কিছু লোকদের কথা বললেন, যারা রাজাকার। শুদ্ধবাক্য : এমন কিছু লোকের কথা বললেন,
যারা রাজাকার।

অশুদ্ধবাক্য : প্রধান মন্ত্রীর সঙ্গে অন্যান্য মন্ত্রীবর্গ উপস্থিত ছিলেন। শুদ্ধবাক্য : প্রধান মন্ত্রীর সঙ্গে অন্যান্য মন্ত্রী
উপস্থিত ছিলেন।

অশুদ্ধবাক্য : এটি সার্বজনীন ব্যাপার। শুদ্ধবাক্য : এটি সর্বজনীন ব্যাপার।


অশুদ্ধবাক্য : রহিমসহ অরো অনেকেই আছেন এই নাটকে। শুদ্ধবাক্য : রহিমসহ অনেকেই আছেন এই নাটকে।

নির্দেশকের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

‘টা/টি/খানা/খানি’ ব্যবহার করে শব্দকে নির্দিষ্ট করলে তার আগে ‘এই’ বা ‘ঐ’ ব্যবহার করা যাবে না। আবার
গুলো বা গুলি বা গুলিন থেকে শুধু গুলো ব্যবহার করা যায়। আল্লাদিপনা বাদ দিয়ে টি’র ব্যবহার বেশি করা যেতে
পারে।

অশুদ্ধবাক্য : ঐ লোকটি খুব সৎ। শুদ্ধবাক্য : লোকটি খুব সৎ।

অশুদ্ধবাক্য : আমি এই মানুষটিকে চিনি। শুদ্ধবাক্য : আমি এই মানুষকে চিনি। /আমি মানুষটিকে চিনি।

সন্ধির মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

সন্ধি শব্দ গঠনের শক্তিশালী মাধ্যম তবে সংস্কৃত ও সংস্কৃত শব্দে সন্ধি করতে হয়। সংস্কৃত ও বাংলা শব্দের সন্ধি
হয় না। বাংলা ও বাংলা শব্দে সন্ধি না করে আলাদা লেখাই ভালো। উচ্চারণে সুবিধা করতে গিয়ে শব্দকে অশুদ্ধ
করা ঠিক নয়। লেখা যায়: মিশি কালো>মিশকালো, নাতি বউ>নাতবউ, নাত জামাই> নাজ্জামাই, ঘোড়া
দৌড়>ঘোড়দৌড়, পিছে মোড়া>পিছমোড়া ইত্যাদি লেখি। কিন্তু লেখা যাবে না: বচ্ছর, কুচ্ছিত, উচ্ছব, ঘোড়গাড়ি
ইত্যাদি।

অশুদ্ধবাক্য : ব্যাপারটি ছিল আপনার জন্য লজ্জাস্কর। শুদ্ধবাক্য : ব্যাপারটি ছিল আপনার জন্য লজ্জা কর বা
লজ্জাজনক।

অশুদ্ধবাক্য : এবারের ইলেকশান করে আপনে নাকি খুব দুরাবস্থায় আছেন। শুদ্ধবাক্য : এবারের ইলেকশান করে
আপনে নাকি খুব দুরবস্থায় আছেন।

অশুদ্ধবাক্য : ইত্যাবসারে বৃদ্ধ লোকটির দিন কাটে। শুদ্ধবাক্য : ইত্যবসারে বৃদ্ধ লোকটির দিন কাটে।

অশুদ্ধবাক্য : উল্লেখিত বিষয় হলো তিনি এখন সমাজসেবী। শুদ্ধবাক্য : উল্লিখিত বিষয় হলো তিনি এখন
সমাজসেবী।

অশুদ্ধবাক্য : ইতিমধ্যে আপনি বলেছেন, আপনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। শুদ্ধবাক্য : ইতোমধ্যে আপনি বলেছেন,
আপনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

অশুদ্ধবাক্য : পয়লা বৈশাখ বাঙালির আসল উৎসবের দিন। (ভুলটাই শুদ্ধ) শুদ্ধবাক্য : পয়লা বৈশাখ বাঙালির
আসল উচ্ছবের দিন।

অশুদ্ধবাক্য : শরৎ চন্দ্র বাংলার বিখ্যাত কথাকার। শুদ্ধবাক্য : শরৎচন্দ্র বাংলার বিখ্যাত কথাকার/শরচ্চন্দ্র নামে
একজন প্রবন্ধকার আছে।

সমাসের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

সমাসবদ্ধ শব্দ হলে একশব্দে লিখতে হবে। অথবা মাঝে হাইফেন দিতে হবে। ও দিয়ে দুটি শব্দ যুক্ত হলে শব্দ
দুটি এ-বিভক্তিযুক্ত হতে হবে। সহ অর্থ বুঝালে ‘স্ব’ না বসে ‘স’ বসে। সংস্কৃত শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত শব্দের সমাস
হয়। সমাসজাত শব্দ ও ব্যাসবাক্য একই সঙ্গে বসে না। সমাসবদ্ধ শব্দের বানানে শুধু মাঝের ঈ-কার ই-কার হয়।
যেমন :

অশুদ্ধবাক্য : ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধ ও ভাতে’, এই কথা কবি বলেছেন। শুদ্ধবাক্য : আমার সন্তান যেন
থাকে দুধে ও ভাতে, এই কথা কবি বলেছেন। /আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে, এই কথা কবি বলেছেন।

অশুদ্ধবাক্য : শহর ও গ্রামে এখন ইলেকশনের আমেজ।

শুদ্ধবাক্য : শহরে ও গ্রামে এখন ইলেকশনের আমেজ।

অশুদ্ধবাক্য : তিনি স্বসম্মানে হল ত্যাগ করলন।

শুদ্ধবাক্য : তিনি সসম্মানে হল ত্যাগ করলন।

অশুদ্ধবাক্য : কুআকারের মানুষগুলো ভালো স্বভাবেরও হয়। শুদ্ধবাক্য : কদাকার মানুষগুলো ভালো স্বভাবেরও
হয়।

অশুদ্ধবাক্য : মাল বহনকারী গাড়িগুলোতে আগুন ধরিয়ে তারা পালালো। শুদ্ধবাক্য : মালগাড়িগুলোতে আগুন
ধরিয়ে তারা পালালো।

অশুদ্ধবাক্য : ঘি মাখা ভাত ডিম দিয়ে খেতে খুব মজা। শুদ্ধবাক্য : ঘিভাত ডিম দিয়ে খেতে খুব মজা।

অশুদ্ধবাক্য : দুধ মাখা ভাত কাকে খায়। শুদ্ধবাক্য : দুধভাত কাকে খায়।

অশুদ্ধবাক্য : আগে সিংহচিহ্নিত আসনে বসে রাজা দেশ চালাতেন। শুদ্ধবাক্য : আগে সিংহাসনে বসেরাজা দেশ
চালাতেন।

অশুদ্ধবাক্য : লোকটি মিশির মতো কালো হয়েও সাদা মনের মানুষ। শুদ্ধবাক্য : লোকটি মিশকালো হয়েও সাদা
মনের মানুষ।

অশুদ্ধবাক্য : তালে কানা লোককে দিয়ে কিছুই হবে না। শুদ্ধবাক্য : তালকানা লোককে দিয়ে কিছুই হবে না।

অশুদ্ধবাক্য : ছয়টি ঋতুর সমাহারের দেশ বাংলাদেশ। শুদ্ধবাক্য : ছয়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ।

অশুদ্ধবাক্য : রীতিকে অতিক্রম না করেও যথারীতি সে বড়লোক। শুদ্ধবাক্য : রীতিকে অতিক্রম না করেও সে
বড়লোক।

অশুদ্ধবাক্য : ক্ষণে ক্ষণে প্রতিক্ষণে মাকে পরে মনে। শুদ্ধবাক্য : ক্ষণে ক্ষণে মাকে পরে মনে। /প্রতিক্ষণে মাকে
পরে মনে।

বিভক্তির মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

দুটি বিভক্তি না বসিয়েও কিন্তু বক্তব্য অসম্পূর্ণ থাকে না। ‘কে’ একাধিক কারকে ব্যবহৃত হয় বলে একে তির্যক
বিভক্তি বলে। তবে যে কারকেই ব্যবহৃত হোক; এটি একবচনের বিভক্তি। বহুবচনজাতীয় শব্দে (দের) ‘কে’ বসে
না। যেমন: তাদেরকে (তাদের) দিয়ে একাজ করিও না। এক শব্দে দুটি বিভক্তি বসলে শব্দের গুণ হারায়। যেমন:
তোমার কথায় বুকেতে (বুকে) আঘাত পাই। বস্তুবাচক একবচন পদে কোন বিভক্তি (কে, রে) বসে না। যেমন:
ঘড়িকে (ঘরি/ঘরিটি) হাতে দাও।

অশুদ্ধবাক্য : ভিক্ষুকদেরকে ভিক্ষা দাও। শুদ্ধবাক্য : ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও। (একবচন) /ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দাও।
(বহুবচন)

অশুদ্ধবাক্য : বইকে পুড়িয়ে ফেলো/বইগুলোকে পুড়িয়ে ফেলো। শুদ্ধবাক্য : বই/বইটি পুড়িয়ে ফেলো
(একবচন)/বইগুলো পুড়িয়ে ফেলো (বহুবচন)

অশুদ্ধবাক্য : আপনি রবীন্দ্রনাথকে পড়ে কী পেলেন? শুদ্ধবাক্য : আপনি রবীন্দ্রনাথ পড়ে কী পেলেন?

অশুদ্ধবাক্য : এ কলমকে দিয়ে কাজ হবে না। শুদ্ধবাক্য : এ কলমে কাজ হবে না। /এ কলম দিয়ে কাজ হবে না।

অশুদ্ধবাক্য : এই কলমটিকে দিয়ে ভালো লেখা হয়। শুদ্ধবাক্য : কলমটি দিয়ে ভালো লেখা হয়।

অশুদ্ধবাক্য : গরুকে দিয়ে শুধু লাঙল না গাড়িও টানা হয়। শুদ্ধবাক্য : গরু দিয়ে শুধু লাঙল না গাড়িও টানা হয়।

অশুদ্ধবাক্য : সাতভাই যুক্তি করে ইউসুফ ফেলিল কুয়ায়। শুদ্ধবাক্য : সাতভাই যুক্তি করে ইউসুফকে ফেলিল
কুয়ায়।

অশুদ্ধবাক্য : তাদেরকে দিয়ে একাজ করিও না।

শুদ্ধবাক্য : তাদের দিয়ে একাজ করিও না।

অশুদ্ধবাক্য : তোমার কথায় বুকেতে আঘাত পাই। শুদ্ধবাক্য : তোমার কথায় বুকে আঘাত পাই।

অশুদ্ধবাক্য : গেলাসে করে দুধ দাও। শুদ্ধবাক্য : গেলাসে দুধ দাও।

অশুদ্ধবাক্য : ঘড়িকে হাতে দাও।

শুদ্ধবাক্য : ঘড়ি হাতে দাও /ঘড়িটি হাতে দাও।

অশুদ্ধবাক্য : ক্রিয়ার সঙ্গে যেসব বিভক্তি যুক্ত হয় তাকে ক্রিয়াবিভক্তি বলে। /ক্রিয়ার সঙ্গে যেসব বিভক্তি যুক্ত হয়
তাদেরকে ক্রিয়াবিভক্তি বলে।

শুদ্ধবাক্য : ক্রিয়ার সঙ্গে যেসব বিভক্তি যুক্ত হয় তাদের ক্রিয়াবিভক্তি বলে।

প্রত্যয়ের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

কোন শব্দের সঙ্গে কোন প্রত্যয় যুক্ত হয় তা খেয়াল রেখেই শব্দ তৈরি করতে হয়। ভুল প্রত্যয়ের ব্যবহারের কারণে
বানান ভুল হয়ে যায়। আর বানান ভুল হলে বাক্যের অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। একই শব্দের সঙ্গে দুটি প্রত্যয়চিহ্ন
বসে না। যেমন: এতটুকু মেয়ে কলেজ পড়ে, তোমার কথায় বুকেতে আঘাত পাই। তার সঙ্গে আমার সখ্যতা
(সখ+য-ফলা+ তা) আছে। এটি তার দৈন্যতা।

অশুদ্ধবাক্য : এতটুকু মেয়ে কলেজ পড়ে

শুদ্ধবাক্য : এতটুকু মেয়ে কলেজে পড়ে।


অশুদ্ধবাক্য : তবলাওয়ালা ভালোই তবলা বাজায়। শুদ্ধবাক্য : তবলচি /তবলাবাদক ভালোই তবলা বাজায়।

অশুদ্ধবাক্য : দারিদ্র কবি কাজী নজরুল ইসলামকে মহান করেছে

শুদ্ধবাক্য : দারিদ্র্য কবি কাজী নজরুল ইসলামকে মহান করেছে।

অশুদ্ধবাক্য : বিকার লোক যে কোন সময় ক্ষতি করতে পারে। শুদ্ধবাক্য : বিকৃত লোক যে কোন সময় ক্ষতি করতে
পারে।

অশুদ্ধবাক্য : এটি দল কোন্দল। শুদ্ধবাক্য : এটি দলীয় কোন্দল।

উপসর্গের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

উপসর্গে হাইফেন বসে না। যেমন: উপ-সচিব। ‘অ’ যদি নাবোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাহলে সেই শব্দের শেষে
হীন যুক্ত হয় না। যেমন: অসচেতনহীনভাবে, অক্লান্তিহীনভাবে।

অশুদ্ধবাক্য : ফুল দিয়ে তাঁকে সুস্বাগতম জানানো সবার কর্তব্য। শুদ্ধবাক্য : ফুল দিয়ে তাঁকে স্বাগতম জানানো
সবার কর্তব্য।

অশুদ্ধবাক্য : শিক্ষা উপ-পরিচাল ও সহ-উপ পরিচালক আজ এই স্কুলে আসবেন। শুদ্ধবাক্য : শিক্ষা উপপরিচালক
ও সহউপপরিচালক আজ এই স্কুলে আসবেন।

অশুদ্ধবাক্য : অক্লান্তি হীনভাবে প্রজন্ম চত্বরে সমায়েত হচ্ছে। শুদ্ধবাক্য : ক্লান্তি হীনভাবে প্রজন্ম চত্বরে সমায়েত
হচ্ছে।

অশুদ্ধবাক্য : তিনি নামকরা একটি দৈনিক পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। শুদ্ধবাক্য : তিনি
নামকরা একটি দৈনিক পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।

চিহ্নের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

১. সংস্কৃতিতে বিশেষণ ও বিশেষ্য দুটিকেই চিহ্নের আওতায় আনা হয়। যেমন: নর—সুন্দর বালক আর নারী—
সুন্দরী বালিকা কিন্তু বাংলাতে বিশেষণকে ঠিক রেখে শুধু বিশেষ্যকে নর বা নারী প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ বাংলায়
বিশেষণকে নারী বাচক করার দরকার হয় না। যেমন: সুন্দর বালক ও সুন্দর বালিকা।

২. সংস্কৃতিতে দুটি বিশেষ্যকেই চিহ্নের আওতায় আনা হয়। যেমন: মেয়েটি পাগলি, আসমা অস্থিরা কিন্তু বাংলাতে
দুটি বিশেষ্যের একটিকে নারিচিহ্নের আওতায় আনা হয়। যেমন: মেয়েটি পাগল, আসমা অস্থিরা ইত্যাদি।

৩. সংস্কৃতিতে ঈ বা ইনি বা নী প্রত্যয়ই একসঙ্গে বসে কিন্তু বাংলায় বসে না। যেমন: অভাগা—অভাগী—
অভাগিনী, ননদ—ননদী—ননদিনী, কাঙাল—কাঙালী—কাঙালিনী, গোয়াল—গোয়ালী—গোয়ালিনী কিন্তু বাংলায়
অভাগী, ননদী, মায়াবী, কাঙালী, গোয়ালী, বাঘিনী। তবে ক্লীববাচক শব্দে নী প্রত্যয় যুক্ত করে নারী বাচক শব্দ
তৈরি করতে হয়। যেমন: মেধাবিনী, দুখিনী, যোগিনী, মায়াবিনী ইত্যাদি।

৪. সংস্কৃতিতে ক্ষুদ্রার্থবাচক কিছু ক্লীববাচক শব্দকে নর বা নারী বাচক করা যায় যা বাংলাতে সঠিক নয়। যেমন:
নাটক—নাটিকা, উপন্যাস—উপন্যাসিকা, পুস্তক—পুস্তিকা, গীতি—গীতিকা ইত্যাদি।
৫. সংস্কৃতিতে নরবাচক শব্দ—বৃক্ষ, নারী বাচক শব্দ—লতার ক্লীববাচক শব্দ—জল আবার হিন্দিতে নরবাচক শব্দ
—রুটি আর নারী বাচক শব্দ—দই। এবার ভাবুন কত কঠিন।

৬. বাক্য দেখে নির্ণয় করতে হয় কোনটি নর আর কোনটি নারী বাচক শব্দ। যেমন: গরু গাড়ি টানে। গরু দুধ
দেয়। সে/তিনি গর্ভবতী, সে কৃষিকাজ করে।

অশুদ্ধবাক্য : রহিমা খুব সুন্দরী। শুদ্ধবাক্য : রহিমা খুব সুন্দর।

অশুদ্ধবাক্য : তার মা খুব মহান নেতা ছিলেন। শুদ্ধবাক্য : তার মা খুব মহিয়সী নেতা ছিলেন।

অশুদ্ধবাক্য : সেলিনা হোসেন একজন বিদ্বান লেখিকা।

শুদ্ধবাক্য : সেলিনা হোসেন একজন বিদ্বান লেখক। /সেলিনা হোসেন একজন বিদুষী লেখিকা।

পক্ষের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

প্রথমপক্ষ যদি অন্যপক্ষের সঙ্গে একই বাক্যে ব্যবহৃত হয় তাহলে ক্রিয়া প্রথমপক্ষ অনুসারে হয়। একশেষ হলে
নিয়ম অনুসারে প্রথমে সে, তুমি ও আমি বসে আর ক্রিয়া প্রথমপক্ষ অনুসারে হয়। আগে কবিতার বাক্যের ক্ষেত্রে
কবিগণ পক্ষ অনুসারে ক্রিয়ার ব্যবহার ঠিকরাখেন নাই। যেমন: হাসঁগুলো যায় ভাসি। বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে
চড়াই। কারণ সংস্কৃত ‘ভাসিয়া’ থেকে ‘ভাসি’ চলিত হয়েছে।

অশুদ্ধবাক্য : আমি অর্থাৎ হাসান জেনে শুনে ভুল করি না। শুদ্ধবাক্য : আমি অর্থাৎ হাসান জেনে শুনে ভুল করে
না।

অশুদ্ধবাক্য : এ ব্যাপারে আমার অর্থাৎ হাসানের ভুল হবে না। শুদ্ধবাক্য : এ ব্যাপারে আমার অর্থাৎ হাসানের ভুল
হয় না।

অশুদ্ধবাক্য : আপনি বা হুজুর যদি বলেন, তাহলে (আমি) যাই। শুদ্ধবাক্য : আপনি বা হুজুর যদি বলেন, তাহলে
(আমি) যাব।

অশুদ্ধবাক্য : আমি, সে আর তুমি কাজটি করব। শুদ্ধবাক্য : সে, তুমি আর আমি কাজটি করব।

কারকের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

বস্তুর প্রাণিবাচক শব্দে ‘কে’ বসে না। ব্যক্তির নামের সঙ্গেও ‘কে’ বসে না।

অশুদ্ধবাক্য : সাপুড়ে সাপকে খেলায়। শুদ্ধবাক্য : সাপুড়ে সাপ খেলায়।

অশুদ্ধবাক্য : পাহাড়কে নাড়ায় সাধ্য কার। শুদ্ধবাক্য : পাহাড় নাড়ায় সাধ্য কার।

অশুদ্ধবাক্য : আপনি তো ছুরিতে মানুষ মারেন।

শুদ্ধবাক্য : আপনি তো ছুরি দিয়ে মানুষ মারেন।

অশুদ্ধবাক্য : ধর্মের কল বাতাসেতে নড়ে।

শুদ্ধবাক্য : ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।


অশুদ্ধবাক্য : আপনি তো গরিবদেরকে সাহায্য করেন না। শুদ্ধবাক্য : আপনি তো গরিবদের সাহায্য করেন না।
/আপনি তো গরিবকে সাহায্য করেন না।

অশুদ্ধবাক্য : একসময় আমের কাননে মিটিং বসেছিল। শুদ্ধবাক্য : একসময় আম্রকাননে মিটিং বসেছিল।
/একসময় আমের বাগানে মিটিং বসেছিল।

বিপরীত শব্দের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

সরাসরি ‘না’ শব্দটি ব্যবহার না করে বিপরীত শব্দ ব্যবহার করে বাক্যের সৌন্দর্য বাড়ানো যায়। যেমন : দুদিন
ধরে ছেলেটির কোন খোঁজ নাই। আর দুদিন ধরে ছেলেটি নিখোঁজ। সব শব্দের পূর্বে উপসর্গ যোগে বিপরীত শব্দ
গঠন করা যায় না। অনেকেই ‘অ’ যোগে বিপরীত শব্দ তৈরি করে থাকেন। যেমন: সফলতা—অসফলতা, মূর্খ—
অমূর্খ, ভালো—অভালো।

অশুদ্ধবাক্য : লোকটি কায়দায় নাই।

শুদ্ধবাক্য : লোকটি বেকায়দায় আছে।

অশুদ্ধবাক্য : লোকজন তার প্রতিকূলে নাই। শুদ্ধবাক্য : লোকজন তার অনুকূলে নাই।

সমোচ্চারিত শব্দের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

উচ্চারণের দিক থেকে এক হলেও অর্থের দিক থেকে ভিন্ন। বাক্যের অর্থ ঠিক রাখতে সমার্থক শব্দের সঠিক
ব্যবহার জরুরি।

অশুদ্ধবাক্য : তাড়া আমরাতলায় বসে আমরা খাওয়ার সময় মালির তারা খেয়েছে। শুদ্ধবাক্য : তারা আমড়াতলায়
বসে আমড়া খাওয়ার সময় মালির তাড়া খেয়েছে।

অশুদ্ধবাক্য : সে ভুড়ি ভুড়ি খেয়ে ভুরিটি বাড়িয়েছে। শুদ্ধবাক্য : সে ভুরি ভুরি খেয়ে ভুঁড়িটি বাড়িয়েছে।

শব্দদ্বিত্বের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ

বিভিন্ন প্রকার শব্দ বা পদ দুবার ব্যবহার করে শব্দ বানাতে পারি। কিন্তু অর্থের দিকে খেয়াল করতে হয়। যেমন:
ফলাফল শব্দটি ঠিক ব্যবহার কিন্তু এর প্রতিশব্দ হিসেবে লেখা হয় ফলশ্রুতিতে’ তাহলে শব্দটি হবে ভুল। কারণ
‘ফলশ্রুতি’ অর্থ ‘শ্রবণ’ কোন বিষয়ের ফল নয়। ‘ভাষাভাষী’ অর্থ কোন একটি ভাষা ব্যবহারকারী। তাই
ভাষাভাষীর পূর্বে কোন ভাষার নাম উল্লেখ করে লিখলে তা হবে ভুল। যেমন: বাংলা ভাষাভাষী। এমন কিছু
দ্বিত্বশব্দ তৈরি করা হয় যা ভুল। যেমন: ভেদাভেদ, গুণাগুণ ইত্যাদি। এদের মধ্যে ভালোমন্দ দুটিই থাকে। যেমন:
ভেদ+অভেদ বা গুণ+অগুণ। এদের অপপ্রয়োগ আজ প্রবলভাবে দেখা দিচ্ছে। বলা হচ্ছে ‘ভেদাভেদ ভুলে গেছে’
যা ভুল। আবার বলা হচ্ছে ‘আমাদের পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা সচেতন’।

অশুদ্ধবাক্য : ঘামজলে তার শার্ট ভিজে গেছে। শুদ্ধবাক্য : ঘামে তার শার্ট ভিজে গেছে।

অশুদ্ধবাক্য : অশ্রুজলে তার কপল ভিজে গেছে। শুদ্ধবাক্য : অশ্রুতে তার কপল ভিজে গেছে।

অশুদ্ধবাক্য : ঘরটি ছিমছিমে অন্ধকার। শুদ্ধবাক্য : ঘরটি ঘুটঘুটে অন্ধকার।

বাক্যের মাধ্যমে ভাষার অপপ্রয়োগ ও শুদ্ধ প্রয়োগ


বিভিন্ন নিয়ম অর্থাৎ সন্ধি, সমাস, উপসর্গ, প্রত্যয় ইত্যাদি দিয়ে শব্দ বানানো যায়। কিন্তু এই বানানো শব্দ
পাশাপাশি বসালেই বাক্য হয় না। কিছু গঠন অনুসরণ করেই একটি সার্থক বাক্য তৈরি করা যায়। সার্থক বাক্যে
গুণরক্ষা করে বাক্য বানাতে হয়। বাক্যের অর্থ ঠিক না থাকলে বাক্য গুণহীন হয়ে যায়। আবার যতির ভুল
ব্যবহারের কারণেও বাক্যের অর্থের হেরফের হয়ে যায়।

অশুদ্ধবাক্য : পরবর্তীতে আপনি আসবেন। শুদ্ধবাক্য : পরবর্তিকালে /পরবর্তী সময়ে আপনি আসবেন।

অশুদ্ধবাক্য : সকল দৈন্যতা দূর হয়ে যাক। শুদ্ধবাক্য : সকল দৈন্য দূর হয়ে যাক। সকল দীনতা দূর হয়ে যাক।

অশুদ্ধবাক্য : সেখানে গেলে তুমি অপমান হবে। শুদ্ধবাক্য : সেখানে গেলে তুমি অপমানিত হবে।

অশুদ্ধবাক্য : আমি অপমান হয়েছি। শুদ্ধবাক্য : আমি অপমানিত হয়েছি।

অশুদ্ধবাক্য : সূর্য উদয় হয়নি। শুদ্ধবাক্য : সূর্য উদিত হয়নি।

অশুদ্ধবাক্য : সত্য প্রমাণ হোক। শুদ্ধবাক্য : সত্য প্রমাণিত হোক।

অশুদ্ধবাক্য : তার কথার মাধুর্যতা নাই। শুদ্ধবাক্য : তার কথার মাধুর্য/মধুরতা নাই।

অশুদ্ধবাক্য : রাধা দেখতে খুব সুন্দরী ছিল। শুদ্ধবাক্য : রাধা দেখতে খুব সুন্দর ছিল।

অশুদ্ধবাক্য : এটি অপক্ক হাতের কাজ। শুদ্ধবাক্য : এটি অপটু হাতের কাজ।

অশুদ্ধবাক্য : স্বল্পবিদ্যা ভয়ংকরী। শুদ্ধবাক্য : অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী।

অশুদ্ধবাক্য : অভাবে চরিত্র নষ্ট। শুদ্ধবাক্য : অভাবে স্বভাব নষ্ট।

অশুদ্ধবাক্য : বিদ্বান মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর। শুদ্ধবাক্য : বিদ্বান মূর্খ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

অশুদ্ধবাক্য : অল্পদিনের মধ্যে তিনি আরোগ্য হলেন। শুদ্ধবাক্য : অল্পদিনের মধ্যে তিনি আরোগ্য লাভ করলেন।

অশুদ্ধবাক্য : সৎ চরিত্রবান লোক সবার কাছে প্রিয়। শুদ্ধবাক্য : চরিত্রবান লোক সবার কাছে প্রিয়।

অশুদ্ধবাক্য : মাতাহীন শিশুর অনেক দুঃখ। শুদ্ধবাক্য : মাতৃহীন শিশুর অনেক দুঃখ।

অশুদ্ধবাক্য : সে ভাগ্যবতী মহিলা। শুদ্ধবাক্য : সে ভাগ্যবতী।

অশুদ্ধবাক্য : মিলাদে গোলাপজলের পানি ছিটাও। শুদ্ধবাক্য : মিলাদে গোলাপজল ছিটাও।

অশুদ্ধবাক্য : বইটি তার জরুরি প্রয়োজন। শুদ্ধবাক্য : বইটি তার (খুব) প্রয়োজন।

অশুদ্ধবাক্য : সবাই বাবা-মার সুস্বাস্থ্য কামনা করে। শুদ্ধবাক্য : সবাই বাবা-মার সুস্থতা কামনা করে।

অশুদ্ধবাক্য : ছেলেটি শুধুমাত্র /কেবলমাত্র ১০টি টাকার জন্য মারামারি করল। শুদ্ধবাক্য : ছেলেটি শুধু /মাত্র
/কেবল ১০টি টাকার জন্য মারামারি করল।

অশুদ্ধবাক্য : ৫ বছর সময়কাল ধরে তারা জনগনকে সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। শুদ্ধবাক্য : ৫ বছর ধরে তারা
জনগনকে সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
অশুদ্ধবাক্য : ভারত ব্রিটিশদের অধীনস্থ ছিল বলেই তারা যুদ্ধ করেছিল। শুদ্ধবাক্য : ভারত ব্রিটিশদের অধীনে ছিল
বলেই তারা যুদ্ধ করেছিল।

অশুদ্ধবাক্য : আপনারাই প্রথম তাদেরকে সুস্বাগতম জানালেন। শুদ্ধবাক্য : আপনারাই প্রথম তাদের স্বাগত
জানালেন।

অন্যান্যঃ

শব্দের অপপ্রয়োগজনিত ভুলঃ

অশ্রুজল - "চোখের জল" অর্থে ব্যবহার অশুদ্ধ, কারণ অশ্রু মানেই চোখের জল;

অজ্ঞানতা - "অজ্ঞতা" অর্থে এর প্রয়োগ ভুল, কারণ অজ্ঞানতা শব্দের প্রকৃত অর্থ জ্ঞানশূন্যতা;

আয়ত্তাধীন - "আয়ত্ত" শব্দের অর্থই অধীন, আয়ত্তের পর অধীন ব্যবহার বাহুল্য;

আকণ্ঠ পর্যন্ত - "আকণ্ঠ" মানেই কণ্ঠ পর্যন্ত, এখানে পর্যন্ত ব্যবহার বাহুল্য;

আশ্চর্য - মূল অর্থ বিস্ময়কর। "বিস্মিত" অর্থে ব্যবহার তাই অশুদ্ধ। "বিস্মিত" অর্থে আশ্চর্যান্বিত ব্যবহার করতে
হবে;

ইদানীংকালে - "ইদানীং" অর্থই বর্তমান কাল, এর সাথে "কাল" যোগ করা অপপ্রয়োগ;

খাঁটি গরুর দুধ - কথাটি অর্থহীন, শুদ্ধরূপ হবে গরুর খাঁটি দুধ;

জন্মবার্ষিকী - জন্মবার্ষিক শব্দই যথেষ্ট, এক্ষেত্রে স্ত্রী প্রত্যয় যোগ করা বহুল প্রচলিত হলেও অশুদ্ধ;

প্রেক্ষিত - মূল অর্থ প্রেক্ষণ বা দর্শন করা হয়েছে। প্রেক্ষিত হচ্ছে প্রেক্ষণ শব্দের বিশেষণ। পরিপ্রেক্ষিত (পটভূমি বা
পারিপার্শ্বিক) অর্থে প্রেক্ষিত শব্দের ব্যবহার অশুদ্ধ;

জন্মজয়ন্তী - জয়ন্তী শব্দের মাঝেই আছে জন্ম-প্রসঙ্গ। কাজেই জয়ন্তীর পূর্বে "জন্ম" শব্দের ব্যবহার অশুদ্ধ;

অত্র-তত্র-যত্র - অত্র মানে "এখানে", তত্র মানে "সেখানে" আর যত্র মানে "যেখানে"। তাই "অত্র" মানে "এই"
বুঝার কারণ নেই। যেমন "এই অফিস" বুঝাতে "অত্র অফিস" লিখলে অশুদ্ধ হবে;

অন্তরীণ - "অন্তরিন" শব্দের অর্থ কারাগারের বাইরে কাউকে আবদ্ধ করে রাখা। অনেকে "অন্তরিন" শব্দটিকে
"অন্তরীণ" লিখে থাকেন যা প্রমিত বানানরীতি অনুযায়ী অশুদ্ধ;

বৈদেহী/বিদেহী - শুদ্ধরূপ "বিদেহ" যার অর্থ দেহশূন্য বা অশরীরী। বিদেহ শব্দটি বিশেষণ, কিন্তু ঈ-প্রত্যয় যোগে
পুনরায় বিশেষণ করা হয় বিদেহী/বৈদেহী। এই উভয় শব্দের প্রয়োগই ভুল;

ভাষাভাষী - ভাষা ব্যবহারকারী অর্থে "ভাষী"ই যথেষ্ট ও যথার্থ। ভাষাভাষী প্রয়োগ অশুদ্ধ;

শায়িত - "শায়িত" অর্থ "শয়ন করা হয়েছে এমন"। যিনি নিজে শুয়ে আছেন তাঁকে "শয়ান" বলা হয়। শুয়ে আছেন
অর্থে "শায়িত" শব্দের প্রয়োগ অশুদ্ধ;
সমৃদ্ধশালী/সম্পদশালী - সমৃদ্ধ (বিশেষণ) শব্দের অর্থ সম্পদশালী বা প্রাচুর্যপূর্ণ। "শালী" শব্দ যোগ করে বিশেষণ
পদ পুনরায় বিশেষণ করা অর্থহীন ও অশুদ্ধ;

ফলশ্রুতি - শব্দটির আভিধানিক অর্থ "পুণ্যকর্ম করলে যে ফল হয় তার বিবরণ বা তা শোনা"। অফিস-আদালত,
স্কুল-কলেজে যে অর্থে ফলশ্রুতি লেখা হচ্ছে তা ভুল। তার বদলে "ফলাফল, ফল, পরিণতি" ব্যবহার শুদ্ধ

১. বহুবচনের দ্বিত্বজনিত ভুল : অনেক সময়েই দেখা যায়, ভাষা ব্যবহারকারী অশুদ্ধভাবে বহুবচনের দ্বিত্ব ব্যবহার
করে থাকেন। এ প্রবণতা এত ব্যাপক যে, কোন লেখক এ ত্রুটি থেকে মুক্ত তা খুঁজে বের করাও প্রায় দুরূহ হয়ে
ওঠে। 'সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশগুলো', 'সব প্রকাশ মাধ্যমগুলো', 'নিম্নলিখিত সব শিক্ষার্থীগণ', 'সব উপদেষ্টামণ্ডলী',
'কতিপয় সিদ্ধান্তবলি', 'দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলাসমূহে'- এমন ধরনের বহুবচনের দ্বিত্বজনিত অপপ্রয়োগ অহরহ
চোখে পড়ে। সামান্য সতর্কতাই এ ত্রুটি থেকে লেখককে মুক্তি দিতে পারে। উপরের দৃষ্টান্তগুলোর শুদ্ধ প্রয়োগ
হবে- 'সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশ', অথবা 'সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলো', 'প্রকাশ মাধ্যমগুলো' অথবা 'সব প্রকাশ মাধ্যম',
'নিম্নলিখিত সব শিক্ষার্থী' অথবা 'নিম্নলিখিত শিক্ষার্থীগণ', 'সব উপদেষ্টা' অথবা 'উপদেষ্টামণ্ডলী', 'কতিপয় সিদ্ধান্ত',
'দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলায়' অথবা 'দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহে' ইত্যাদি। এমন একটি অপপ্রয়োগের উদাহরণ
'কর্তৃপক্ষগণ'। কেননা, কর্তৃপক্ষ শব্দটি বহুবচন বাচক। 'কর্তৃপক্ষ' শব্দের অর্থ শাসকগণ, পরিচালকগণ, নিয়ন্ত্রকগণ
ইত্যাদি। অতএব, কর্তৃপক্ষ শব্দের শেষে 'গণ' প্রয়োগ বাহুল্য ও অশুদ্ধ।

২. ইং, তাং, নং, চৌং ইত্যাদি : অধিকাংশ বাঙালি তারিখের পর 'ইং' বলে একটা 'চিহ্ন' লিখে থাকে। তারিখ,
নম্বর, চৌধুরী_ এসব শব্দকেও লেখা হয় তাং, নং, চৌং রূপে। এমন দৃষ্টান্তের অভাব নেই। কবে এ প্রবণতার
সূত্রপাত তা আমাদের জানা নেই। তবে এসব চলছে দীর্ঘদিন ধরে- শিক্ষিত, শিক্ষার আলোকবঞ্চিত নির্বিশেষে।
কিন্তু কেন এমন হলো? তারিখ, নম্বর, চৌধুরীর পরিবর্তে যদি সংক্ষিপ্তরূপে লেখা হতো তা. ন. চৌ. তাহলেও মানা
যেত। কিন্তু সংক্ষেপে চিহ্নের পরিবর্তে কেন অনুস্বর (ং) বর্ণ? মনে রাখতে হবে সংক্ষেপে চিহ্ন (.) একটা বিরাম
চিহ্ন, পক্ষান্তরে অনুস্বর (ং) হচ্ছে একটা বর্ণ। একটা বর্ণ দিয়ে একটা বিরাম চিহ্নের কাজ চালাতে গিয়েই ঘটেছে
দৃষ্টিকটু অপপ্রয়োগ। তারিখ লেখার পর 'ইং' লেখা অনেকটা জাতীয় মুদ্রাদোষে পরিণত হয়েছে। 'ইং' কি
ইংরেজির সংক্ষিপ্ত রূপ? এক্ষেত্রে এক ধরনের অপপ্রয়োগ ঘটল- সংক্ষিপ্ত চিহ্নের (.) স্থলে বসানো হলো একটি বর্ণ
(ং)। অন্যটি কী? পৃথিবীতে ইংরেজি সাল বলে তো কোনো সাল নেই। তাই 'ইং'-এর প্রশ্নই আসে না। খ্রিস্টীয়
সালকে কে ইংরেজি সাল বলে চালিয়ে দিল? প্রথমে যে-ই চালু করুক না কেন, এ ক্ষেত্রে তার 'সাফল্য'
বিস্ময়কর। একটা অপপ্রয়োগের ব্যাধিতে গোটা বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীই আক্রান্ত। এমনকি পহেলা জানুয়ারিতে
বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে ঘোষক-ঘোষিকা, সংবাদ-পাঠকের মুখে শোনা যায় 'ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা'
জানানোর কথা, পর্দায়ও ভেসে ওঠে অভিন্ন শুভেচ্ছা, জাতীয় দৈনিকের পাতায়ও জানানো হয় একই রকম
অপপ্রয়োগজাত শুভেচ্ছা।

৩. প্রেক্ষিত : পরিপ্রেক্ষিত অর্থে বাংলা ভাষায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় 'প্রেক্ষিত' শব্দটি। লেখাই বাহুল্য যে, এটা
ভুল প্রয়োগ। 'প্রেক্ষিত' শব্দ এসেছে 'প্রেক্ষণ' থেকে। 'প্রেক্ষণ' বিশেষ্য পদ, যার অর্থ দৃষ্টি। এ থেকে তৈরি হয়েছে
বিশেষণ পদ 'প্রেক্ষিত' (উচ্চারণ 'প্রেকখিতো') যার অর্থ দর্শিত বা যা দেখা হয়েছে। অর্থাৎ 'প্রেক্ষিত' শব্দের সঙ্গে
দৃষ্টি/দেখা/দর্শিত এসব অর্থ জড়িত আছে। কিন্তু এই অর্থকে পাল্টে দিয়ে অধিকাংশ লেখক 'প্রেক্ষিত' শব্দ ব্যবহার
করেন পটভূমি/পরিপ্রেক্ষিত/ Perspective/background অর্থে। এই ব্যবহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচ. ডি
পর্যায়ের অভিসন্দর্ভের শিরোনামাতেও কখনো কখনো লক্ষ করা যায়। এ বিষয়ে সকলের সতর্কতা জরুরি।
৪. জন্মজয়ন্তী : 'জন্মজয়ন্তী' শব্দের ব্যবহারও এত বেশি যে একটি অপপ্রয়োগই শুদ্ধ প্রয়োগ বলে মনে হতে পারে।
'জয়ন্তী' শব্দের মাঝেই আছে জন্ম-প্রসঙ্গ; কাজেই জয়ন্তীর পূর্বে 'জন্ম' শব্দের প্রয়োজন পড়ে না। 'জয়ন্তী' শব্দের
অর্থ জন্মোৎসব, কোনো ব্যক্তির জন্মতিথি উপলক্ষে উৎসব। গ্রাম থেকে শহরে আসা শিক্ষার আলোকবঞ্চিত
কোনো কৃষক যদি হাসপাতালে তার আত্দীয়কে দেখে এসে বলেন, 'হাসপাতালে গিয়েছিলাম, আসার সময়
রোগীকে ফলফ্রুট দিয়ে এলাম'- এক্ষেত্রে 'ফলফ্রুটে'র ক্ষেত্রে যেমন অপপ্রয়োগ ঘটে, তেমনি অপপ্রয়োগ হয়
'জন্মজয়ন্তী'র ক্ষেত্রেও। অতএব, রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মজয়ন্তী না বলে বলা উচিত 'রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত
জয়ন্তী'।

৫. অত্র-তত্র-যত্র : 'অত্র' শব্দের অর্থ এখানে, 'তত্র' সেখানে, 'যত্র' যেখানে, 'যত্র-তত্র' যেখানে-সেখানে। 'অত্র'
কখনোই 'এই' অর্থে ব্যবহার শুদ্ধ প্রয়োগ হতে পারে না। কিন্তু 'অত্র অফিস', 'অত্র বিশ্ববিদ্যালয়', 'অত্র স্থান'- এমন
ব্যবহার প্রায়শই চোখে পড়ে। শুদ্ধ প্রয়োগ হবে- এই অফিস, এই বিশ্ববিদ্যালয়, এই স্থান প্রভৃতি। কাজেই 'এই'
অর্থে 'অত্র' যত্রতত্র যাতে ব্যবহার না করা হয়, সেদিকে ভাষা-ব্যবহারকারীকে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলা ভাষায়
প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ বিষয়ে অনেক কথা বলার আছে। এই আলোচনায় আমরা কতিপয় ব্যবহার নিয়ে কথা বলেছি।
ভবিষ্যৎ কোনো লেখায় অভিন্ন বিষয় নিয়ে আরও অনেক কথা জানানোর ইচ্ছে আছে।

You might also like