You are on page 1of 3

ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে যোগাভ্যাস

লেখা নেত্রা নন্দিতা প্রকাশ: ০৩ মে ২০২১

অক্সিজেন গ্রহণ করে রক্তে সরবরাহ করা এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড বের করে
দেওয়া—এটাই ফুসফুসের প্রধান কাজ। যখনই ফুসফুস পর্যাপ্ত অক্সিজেনের
জোগান দিতে পারে না, তখনই শরীরে তৈরি হয় নানা জটিলতা। তাই ফুসফুস সুস্থ
রাখা জরুরি। এর জন্য যোগাভ্যাস হতে পারে একটি কার্যকর উপায়।

ডা. অর্চি রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ডা. সৈয়দ আনিসুল রহমান,
সাবেক সিভিল সার্জন, ঢাকা এবং কুশল রায় জয়, প্রতিষ্ঠাতা, জয়সান ইয়োগা
সার্টিফায়েড যোগ চিকিৎসক আইএওয়াইটি, আমেরিকা।

ডা. সৈয়দ আনিসুল রহমান বলেন, অক্সিজেনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে
শরীর প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না। ফলে রেসপিরেটরি ফেলিওর হওয়ার আশঙ্কা
তৈরি হয়। এতে অ্যারোবিক গ্লাইকোলাইসিস শুরু হয়। পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে
রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে, শরীরে ব্যথা শুরু হয় এবং অর্গান ফেলিওর শুরু হতে পারে।

ডা. সৈয়দ আনিসুল রহমান

কখন বুঝবেন আপনার শরীরে এই ব্যায়ামগুলোর প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে? ডা.


আনিসুল রহমান বলেন, ‘আমাদের ফুসফুসের ধারণক্ষমতা ছয় লিটার, কিন্তু আমরা
সাধারণত গ্রহণ করি মাত্র .৫ লিটার অক্সিজেন। বাকিটায় পূর্ণ থাকে টক্সিন বা
কার্বন। তাই সবার আগে শরীর থেকে জমে থাকা অক্সিজেন ও দূষণ বের করে
দিতে হবে। তারপর নতুন করে অক্সিজেন গ্রহণ করতে হবে।
কুশল রায় জানান, ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ধরে রাখতে প্রাণায়াম করা
যায়। এতে ফুসফুসের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ধরে রাখা যায়। যেমন যৌগিক
শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়া। ফলে শরীরের তিন জায়গায় দম নেওয়া যায়। হজম বাড়াতে
বুকে, রক্তে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়াতে বুকে ও কাঁধে।

কুশল রায়

এভাবে দম নিতে শিখলে ফুসফুস ভালো থাকে। এ প্রক্রিয়ায় পূরক, কুম্ভক ও


রেচক—এই তিন পর্যায়ে দম নেওয়া, ধরা ও ছাড়া হয়। নিয়ম হলো বজ্রাসনে বসে
প্রথমে পেটভরে, এরপর বুকভরে, তারপর শরীরের ওপরের অংশভরে বাতাস
নেওয়া বা পূরক করা। এরপর কিছুক্ষণের জন্য দম ধরে রাখা বা কুম্ভক, এরপর
ধীরে ধীরে ক্রমান্বয়ে বুক, ফুসফুস ও পেট থেকে বাতাসকে বের করে দেওয়া বা
রেচক করা।

কোভিডকালে চারদিকে তৈরি হয়েছে অক্সিজেনের স্বল্পতা। এজন্য ঘরে বসেও


মকরাসনের মাধ্যমে রক্তে অক্সিজেনের লেবেল বাড়ানোর ব্যায়াম করা যায়।
মকরাসনের উপকারিতা ২০ মিনিটের মাথায় পাওয়া যায়। মকরাসনের জন্য লাগবে
পাঁচটি বালিশ। মকরাসনের নিয়ম হলো, হাঁটুর নিচের অংশে দুটি, পেটের নিচে দুটি
এবং বুকের নিচে একটি বালিশ দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে হবে। ফলে শরীরে
রিভার্স সিস্টেম তৈরি হয় এবং শরীরের দূষিত বাতাস বের হয়ে অক্সিজেনের
উপস্থিতি বাড়ে। এভাবে ২০ মিনিট থাকতে হবে।
মকরাসন

ফুসফুসের ব্যায়ামের জন্য ভস্ত্রিকা প্রাণায়ামও খুবই কার্যকর। এর মাধ্যমে কামারের


হাপরের মতো খুব দ্রুত দম নেওয়া এবং ছাড়া। ফুসফুস থেকে দূষণ বের করার
জন্য যোগাসনে গিয়ে কাশি দেওয়া যেতে পারে। কাশি দেওয়ার জন্য প্রথমে
শশাঙ্গাসনে বা খরগোশের মতো উপুড় হয়ে বসতে হবে। এরপর জোরে কাশি
দিতে হবে। এভাবে কাশতে থাকলে খুব দ্রুত ফুসফুসে জমে থাকা দূষণ বের হয়ে
যায়।

ফুসফুস ভালো রাখার একটিই কার্যকর উপায়। বড় করে শ্বাস নেওয়া এবং বড়
করে শ্বাস ছাড়া। প্রাণায়ামে বসে লম্বা করে শ্বাস নেওয়া এবং ছেড়ে দেওয়ার এই
ব্যায়ামকে বলে কপালভাতি প্রণায়াম। আরেকটি অসাধারণ প্রণায়ামের নাম ভ্রামরি
প্রণায়াম। ভ্রমরের মতো গুঞ্জন করে ওঁ বা ওম বলে এই প্রাণায়াম করা হয়। শুধু
ফুসফুস নয়, এই প্রাণায়াম ব্লাড সুগার থেকে শুরু করে কোলেস্টেরল, থাইরয়েডের
সমস্যা সমাধানেও ভীষণ কাজে আসে।

শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে মানসিক চাপের একটি বড় সম্পর্ক আছে। শ্বাসপ্রশ্বাসের গতির


বহিঃপ্রকাশেই মন খারাপ, হতাশা ও দুশ্চিন্তা বোঝা সম্ভব। মন স্থির না হলে শরীরে
ও মনে নেতিবাচক বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। কিন্তু বড় করে দম নিলে শরীর স্থির হয়ে
আসে। ফলে নেতিবাচক চিন্তা ও অনুভূতিও কমে আসে।

You might also like