You are on page 1of 63

সম্পাদনায়

আবিদ হাসান
মিফতাহুল ইসলাম
সৈয়দ শামস ইশতিয়াক নিয়াজ
ফটো ক্রেডিট
আব্দল্ল
ু াহ আল মেহেদী
সম্পাদকীয়

আসসালামু আলাইকুম সম্মানিত পাঠকবৃন্দ,


মহান আল্লাহ রব্বুল আ'লামীনের অশেষ রহমতে আমাদের সি ল ম
ম্যাগাজিনের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হলো। ইসলাম আল্লাহ তায়ালার
মনোনীত একমাত্র ও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। আমাদের জীবনের প্রতিটি
মুহূর্তকে সুশৃংখল, কার্যকরী ও সর্বোপরি আল্লাহর প্রতি অনুগত করে
দেওয়ার প্রতিটি নির্দেশনাই এতে রয়েছে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়,
বিশ্বজুড়ে মানবিক অবক্ষয় এবং ইসলামবিদ্বেষীদের নানান অপপ্রচারের
ফলে আমাদের যুবসমাজ আজ ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তারা
একদিকে নিজেরা ইসলামকে বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে, অন্যদিকে নিজেদের
আচার আচরণ ও কথাবার্তায়ও ইসলামের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে পারছে
না । পশ্চিমা মিডিয়ার ইসলাম সম্পর্কে অপপ্রচার ক্রমে আমাদেরকে অন্ধ
করে দিচ্ছে। যুবসমাজের মাঝে ইসলামের সঠিক জ্ঞান পৌঁছে দেওয়ার
মাধ্যমে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ সাধন তাই অত্যন্ত জরুরি হয়ে
দাঁড়িয়েছে। আর এ কাজে ইসলাম নিয়ে লেখালেখির কোনো বিকল্প নেই।
আমাদের প্রতিটি কাজেরই একমাত্র লক্ষ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আমাদের
ম্যাগাজিন যদি মাত্র একজন ব্যক্তিকেও ইসলামের পথে সামান্য অণুপ্রাণিত
করতে পারে, তবে আমরা নিজেদেরকে অনেক সফল মনে করবো।
দেশের সিংহভাগ মানুষের মাঝেই ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও পর্যাপ্ত জ্ঞান
নেই- সেটা আমাদের আশেপাশে তাকালেই আমরা বুঝতে পারি। আমাদের
এই ক্ষুদ্র পদক্ষেপ হয়তো বিশাল মরুভূমিতে ক্ষুদ্র এক জলকণা প্রদানের
মতো হয়ে থাকবে। কিন্তু রাসুল‫ ﷺ‬বলেছেন,
সি ল ম ম্যাগাজিন 1
ঁ য়ে দাও, যদি তা একটা আয়াতও হয়।"[১]
"আমার কথা পৌছি

আর তাই আমাদের এই প্রচেষ্টা।


মানুষ মাত্রই ভুল করে। আমরাও ভুলের উর্ধ্বে নই। আমাদের ম্যাগাজিনে
ইচ্ছায় অনিচ্ছায় যে সমস্ত ভুল ত্রুটি হয়েছে, সেগুলোকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে
বিবেচনা করার জন্য পাঠকমহলকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি
দুআ করবেন, যেন আগামীতে আমরা আরও সুন্দরভাবে কাজ করতে পারি।
যেকোনো ত্রুটির বিষয়ে পাঠকগণ আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে
পারেন। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো ভুলগুলো সংশোধন করে নেওয়ার।
যে সমস্ত লেখক ও সম্পাদক ভাইয়েরা এই ম্যাগাজিন গড়ে তোলার পেছনে
অবদান রেখেছেন, আল্লাহ তাদের সকলের কাজকেই কবুল করুন। সেই
সাথে যেসকল সম্মানিত পাঠকবৃন্দ ধৈর্যসহকারে আমাদের এই ম্যাগাজিন
পড়ছেন, তাদেরকেও যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কাজেকর্মে উত্তম
বারাক্বাহ দান করেন।
ইসলামের আলো যেন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে, কালিমার পতাকা যেন
প্রতিটি প্রান্তে উড়তে থাকে- এটাই আমাদের দুআ।
আর বলুন, ‘সত্য এসেছে ও মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে; ‘নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই

ছিল[২]

আল্লাহ আমাদের সকলকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন।


[১] সহিহ বুখারি: ৩৪১৬

[২] সূ রা ইসরা, ১৭/৮১

সি ল ম ম্যাগাজিন 2
এরূপ দুটি নিয়ামাত আছে যে ব্যাপারে বেশিরভাগ লোক ধোঁকায় নিপতিত: সুস্বাস্থ্য
ও অবসর সময়।

জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৩০৪

সি ল ম ম্যাগাজিন 3
কল্পনার পাতায়
রাফা এবং তার বাবা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ০৯

ব্যতিক্রমী এক জামাত আসিফ ইকবাল রিফাত ১১

তাঁদের পানে মিফতাহুল ইসলাম ১৩

আমার বিবেক রেজওয়ান আল সাইফ ১৭

এক চিলতে বিরিয়ানি লুবান মাহফুজ ২০

জীবন থেকে নেয়া

মরণ বিচিত ও বিরচিত ২৩

বাহিরে প্রস্রাব, অতঃপর মিফতাহুল ইসলাম ২৮

ভার্চুয়াল অহংকার নাভিদ আহমেদ ৩২

আমরা দুই ভাই মোঃ নাহিদ হাসান ৩৬

প্রত্যয়ে প্রতীতি

গীবত ফারহান শাহরিয়ার সায়েম ৩৯

If Freedom Of Speech… Sheikh Shakil Shahriar ৪৫

সি ল ম ম্যাগাজিন 4
ছন্দ খচিত সুগন্ধি

রোমন্থন! শেখ শাকিল শাহরিয়ার ৪৮

সাড়ে তিন হাত জমি মোঃ শাহরিয়ার শান্ত ৫৩

দ্বীনী মৃত্যু মোঃ আব্দুল্লাহ আল নোমান ৫৫

জাগরণ তাহজির তানসীম ৫৭

হে বিদ্বেষীগণ সৈয়দ শামস ইশতিয়াক নিয়াজ ৫৯

আমাদের ফেসবুক গ্রুপটি ঘুরে আসতে এখানে ক্লিক করুনঃ সি ল ম

সি ল ম ম্যাগাজিন 5
ِ ‫َف ٱ ْذ ُك ُرو ِن ى َْأذ ُك ْر ُك ْم َوٱشْ ُك ُرو ۟ا ِلى َواَل تَ ْك ُف ُر‬
‫ون‬
ٓ
কাজেই তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।

সূরা বাক্বারাহ, ২/১৫২

সি ল ম ম্যাগাজিন 6
সি ল ম ম্যাগাজিন 7
কল্পনার পাতায়

সি ল ম ম্যাগাজিন 8
রাফা এবং তার বাবা
- নাম প্রকাশে অনিচ্ছু ক

—[১]—

এশার জামাত শেষ। সালাম ফেরানো মাত্রই রাফা উঠে এল, বলা যায়
দৌড়েই বাসায় এল, সুন্নতের অভ্যেস নেই তার, বিতরও বাদ।বাবা জানে
বিষয়টা, এতদিন কিছুই বলেননি। আজকে মাথায় একটা বুদ্ধি এল। বাসায়
এসে দেখলেন রাফা আছে কম্পিউটারের সামনে।তারা ভাড়া থাকে ১০
বছর ধরে। নিজেদের বাসার খুব ইচ্ছে রাফার। ভাড়ায় থেকে শান্তি নেই।
বাবাকে অনেক বলেছে, কিন্তু তেমন কোন কাজ হয়নি। জাতি তাই এখন
হতাশ। আজ হঠাৎ বাবা ঢুকেই বললেন "আচ্ছা, আমাদের সবার যদি
একটা করে বাসা থাকে নিজেদের, কেমন হয়?" হঠাৎ এমন কথায় হতাশ
জাতি মুহূর্তেই আশাবাদী হয়ে ওঠে, কিসের কম্পিউটার, কিসের গেম, রাফা
এসে বসে বাবার পাশে। বলে "এরম মজা করা একদম ঠিক না , বাবা!"
"আরে মজা না, সত্যি, প্রতিদিন ২০ মিনিট তোকে একটা কাজ করা
লাগবে, বিনিময়ে গুলশানে একটা বাসা একদম তোর।"
"এ কেমন কথা? কিছুই বুঝলাম না।"
"আগে বল রাজি কি না।"
"অবশ্যই, দিনে ২০ মিনিট কেন, ১ ঘণ্টা, ২ ঘণ্টা, ৫ ঘণ্টা যা লাগে।
বিনিময়ে আমার নিজের বাসা। ইয়েএএএএএ!"
"কিন্তু একটা সমস্যা।"

সি ল ম ম্যাগাজিন 9
"কী?"
"মানুষ মাত্রই মরণশীল। সো কেবল একটা বাসার জন্য দিনের এত সময়
তুই এসব গেম টেম থেকে দূরে থাকতে পারবি?"
"কেন পারব না?"
"আচ্ছা তোকে যদি বলা হয় যে বাসাটা এই দুনিয়াতে না দিয়ে আখিরাতে
তোকে দেয়া হবে? মানে কোনো টাইম লিমিট নাই, একটা বাসা অনন্তকাল
ধরে তোর, তাও আবার জান্নাতে, এমন জায়গায় বাসা যা কোনো চোখ
কোনদিন দেখেনি, কোনো মন কখনো কল্পনাও করেনি ।"
হঠাৎ কোথায় যেন হারিয়ে যায় রাফা। এরকমও সম্ভব বুঝি?বাবাকে বলে,
" কী করা লাগবে বাবা?"
"নামাযটা তুই তো মাশাআল্লহ ৫ ওয়াক্তই পড়িস, খালি আরো ২০ মিনিট
সময় বেশি দিয়ে ১২ রাকাত সুন্নাত নামাজটাও পড়ে নিস।"
" এইটুকুই জাস্ট?'
"হ্যাঁ, সোনা।"
"থ্যাঙ্ক ইউ বাবা। আই লাভ ইউ!"
বাবাকে জড়িয়ে ধরে রাফা। কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে যায়।
—[২]—
মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের গলা ভেসে আসছে, আসসলাতু খইরুম মিনান
নাউম। রাফার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ইশ! কী সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিল। নিজের
বাসার স্বপ্ন। পরক্ষণেই নিজেকে বলে ওঠে সে
"জান্নাতের বাসা তো কল্পনা করা যায় না। স্বপ্নেও কি দেখা যায় না?
বাবাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। দেখি নামাজ শেষে জিজ্ঞেস করব হিহি!"
সি ল ম ম্যাগাজিন 10
ব্যতিক্রমী এক জামাত
- আসিফ ইকবাল রিফাত

নামাযের জন্য ওযু করছিলাম। মসজিদটা বাসা থেকে একটু দূরে।মিনিট


পাঁচেক লাগে হেঁটে গেলে।তাড়াতাড়িই করছিলাম।একটু দেরিই হয়ে গেছে।
পিছের কাতারে নামাজ পড়লে আমার আবার কেমন জানি লাগে।ওযু করেই
কোন মতে স্যান্ডেলটা পায়ে গলিয়ে একরকম ছুট লাগালাম।পথে শিহাব
আর ওয়ালিউল্লাহ এর সাথেও দেখা।তাদের চোখে মুখেও তাড়াতাড়ি ভাব।
আমরা আর কথা না বাড়িয়ে পা চালাতে থাকলাম।
বাসা থেকে মসজিদ যাওয়ার পথে দু তিন বাড়ি হিন্দু পরিবার পড়ে। তাদের
সাথে আমাদের সবার ই সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল। ছোট থেকেই তাদের সাথে
মিলেমিশে বেড়ে ওঠা।সমরদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটা
চাপা কান্নার আওয়াজ পেলাম।তিনজনের পা ই থমকে গেল কিছুক্ষণের
জন্য। ওয়ালিউল্লাহ প্রশ্ন চিহ্ন নিয়ে আমার দিকে তাকাল। আর আমি তার
দিকে।শিহাবের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। সে দৌড় দিয়েছে সমরদের
বাসায়। কিছুটা দ্বিধা নিয়ে আমরাও তার পিছে পিছে গেলাম।দরজা
পেরিয়েই একটা ডাইনিং হল।সেখানে সমরের মা বসে কাঁদছেন।তার
কোলে সমরের বাবা।ছোট্ট পাঁচ বছর বয়সী সমর উদ্রান্ত চোখে তাকিয়ে
আছে।কাকার চোখ দুটা প্রায় বন্ধ।সে যেয়ে সমরের মা কে বলল, “কাকি
কি হয়েছে?” কাকি কাঁদতে কাঁদতে বলল,” বাবা সমরের বাবা তো হুট

সি ল ম ম্যাগাজিন 11
করে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলেন।”মুখটাও সামান্য বাকা হয়ে গেছে আমি
খেয়াল করলাম।হার্ট এট্যাক বোধহয়। শিহাব ওয়ালিউল্লাহ কে বলল, যা
একটা রিকশা ডাক।
কিছুক্ষণ পর
আমরা হাসপাতালে একটা ছোট জায়গা ফাঁকা করে কাতার করে দাড়ালাম।
শিহাব ইমামতি করছে।আমি আল্লাহু আকবর ধ্বনি তুলে একামত দিলাম।
সালাতে এতটা শান্তি আমি, আমরা আগে কখনো পাই নাই।

‫يب ٌۭة قَ ا ُل ٓو ۟ا ِإ َّنا ِل ّل َِه َوِإ َّنٓا ِإ َل ْي ِه َٰر ِج ُعون‬ ِ ‫ب‬ ‫َ ِي‬
َ ‫ٱ ّلذ نَ ِإ َذٓا ََأصـٰ َتْ ُهم ُّمص‬
َ
যারা তাদের উপর বিপদ আসলে বলে, ‘আমরা তো আল্লাহ্‌রই। আর নিশ্চয় আমরা
তা ঁর দিকেই প্রত্যাবর্ত নকারী

সূরা বাক্বারাহ, ২/১৫৬

সি ল ম ম্যাগাজিন 12
তা ঁদের পানে

- মিফতাহুল ইসলাম

—[১]—
"৭০০০০। প্রত্যেক হাজারের জন্য আরো ৭০০০০।"
"কী বলছিস এসব?", কাঁধ ঝাকাতে ঝাকাতে রায়হানকে ডাকে ইফতি।
" ধ্যাঁত! ঘুমটা ভাঙায় দিলি! কী সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম।"
"সকাল হয়েছে তো। স্কুলে যাবি না? উঠ উঠ!"

চোখে পানির ঝাপটা দিল ইফতি। হোস্টেলের দুই তলার ওয়াশরুমের


বেসিনটা বেশ বড়। পাশাপাশি বেশ কজন দাঁড়ানো যায়। ১০-১২ জন তো
হবেই। বিরাট একটা আয়না। কিছুটা ময়লা হলেও এতেই কাজ সেরে যায়
সবার। অন্তত টয়লেটের থেকে ঢের ভালো। টয়লেটের যা অবস্থা!
"তুই তখন কী যেন বলছিলি? ঘুমের মধ্যে কথা বলার বদ অভ্যাস তোর
গেল না," ব্রাশে পেস্ট লাগাচ্ছে অহি।

সকালে ইফতি যখন রায়হানকে ডাকছিল তখন তাদের পাশেই ঝিমুচ্ছিল


অহি। রাত জেগে পড়াশোনা করা অভ্যাস। স্কুল না গেলে স্যারের বকা
খেতে হবে। আজ তো আবার ডন স্যারের ক্লাস। স্যারের নামের সাথে তার
চেহারার মিল না থাকলেও আচরণে ডনের থেকে কোনো অংশেই কম না।
কিন্তু স্থূলদেহ আর ইয়া মোটা লেপটাকে হঠানোর কথা চিন্তা করতেই আবার
ঘুম চলে আসে অহির। হঠাৎ ইফতির ডাকাডাকিতে খুব কষ্টে উঠে বসে।
ওদিকে আবার রায়হান বরাবরের মতোই কথা বলতে থাকে ঘুমের ঘোরে।
প্রতিদিন তার নতুন নতুন কথা। তবে আজকের ৭০০০০ এর কথাটা কেন
যেন অন্যরকম লাগলো অহির।
সি ল ম ম্যাগাজিন 13
"ঘুমের মধ্যে কথা বলার জন্যও ট্যালেন্ট লাগে বস," অহির পাশে ব্রাশ
করতে থাকা রায়হান উত্তর দেয়।
"তোরা কী নিয়ে কথা বলছিস রে?"
প্রশ্ন ছুড়ে দেয় সিয়াম। চিকন হলেও কথায় বেশ জোর।
"আরে বলিস না আর। এই রায়হানকে নিয়ে আর পারছি না। নিজেতো
শোবে রাত ২ টার দিকে আর এদিকে আমাদের ঘুমাতে দেবে না। কিছুক্ষণ
পরপর কী যে বিড়বিড় করে। যত্তসব!" পাশে ভাঙা একটা ডেস্কের উপর
বসে থাকা ইফতি কথা বলে ওঠে।
"হ্যাঁ, আর তোর নাকের ঘ্যানঘ্যানানি কত্তো সুন্দর!" বলে রায়হান হাসতে
শুরু করে। সাথে সাথে বাকি দুজনও হেসে উঠে।
"ঠিক বলছিস রে। ওর বাঁশির সুর শুনে কাকও হেসে ওঠে" অহির কথা শুনে
জোরে জোরে হাসতে থাকে সবাই।
"প্রতিদিন সকালে ডেকে দেই দেখে মুখ ফুটেছে। স্যারের বকা খাইলে
তখন আবার আমার কাছেই আসতি।
- ইফতিরে ডেকে দিস তো!"
ইফতি রাগী চোখে তাকায় ওদের দিকে।
একটু রগচটা টাইপের ছেলে ইফতি। পড়াশোনা, খেলাধুলাতে সিরিয়াস।
কিন্তু ওই এক সমস্যা, একটুতেই রেগে যায়।
"আহারে! সোনাবাবা ক্ষেপে গেছে।"
সিয়াম আরো ক্ষ্যাপায় দেয় ইফতিকে।

ইফতি ক্লাস ৮ এ পড়ে। বাকিরা সবাই পড়ে ক্লাস নাইনে। একই রুমে
থাকে ইফতি, রায়হান আর অহি। দুইশত দশ নাম্বার রুমে। সিয়াম থাকে
তিন তলায়। তিনশ চার নাম্বারে। তবে একই স্কুলে পড়ায় এদের যোগাযোগ
বেশ ভালো। মাঝে মাঝেই সিয়াম এসে ঘুমিয়ে যায় ইফতিদের রুমে।
বেচারা অহির জায়গার এমনিতেই সংকট, তার উপর আবার সিয়ামের
ঠ্যালা। তবে দিনকাল ভালোই যায় এদের। ইফতি মাঝে মাঝে ক্ষেপে
সি ল ম ম্যাগাজিন 14
গেলেও পরক্ষণেই আবার ঠিক হয়ে যায়। ইফতিকে ক্ষ্যাপায়ে মজাও পায়
সবাই।
"ওই এবার চল। নাশতা সেরে স্কুলে যাই"
তাড়া দেয় রায়হান।
সবাই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
—[২]—
আজ কেন যেন রায়হানকে অন্যরকম লাগছে। জানালা দিয়ে বাইরে
তাকিয়ে আছে। বিদঘুটে একটা স্বপ্ন দেখেছে সে।
চিরিদিকে তীব্র আলো। চোখ খুলে রাখতে পারছে না রায়হান। একটু কষ্ট
করে তাকালে বুঝতে পারে সে মসজিদের ভেতরে বসে আছে। চার তলা
মসজিদের ঠিক ওপর তলাতে। আজকে একটু আগেই সে মসজিদে চলে
এসেছে। কেন জানি ইচ্ছা করল মসজিদে যেতে। খুব বেশি আগে না।
মিনিট পাঁচেক হবে। জুমার বয়ান চলছে।
"৭০০০০। প্রত্যেক হাজারের জন্য আরো ৭০০০০।"
খতিব বেশ জোর গলায় কথাটা বললেন। রায়হান দেরীতে আসায় আগের
কথাগুলো শুনতে পায়নি সে।
"কীসের কথা বলছে হুজুর? কিছুই তো বুঝছি না।"
নিজের সাথেই কথা বলে ওঠে রায়হান।
"ভাইয়েরা আমার। ওই সত্তর হাজারের মাঝে থাকতে পারলে আমাদের
জীবন সার্থক। আর কিছু চাই না, কিচ্ছু না।"
কথাটি শেষ না করতেই কান্নার স্বর ভেসে আসে কানে। বৃদ্ধ খতিব। আজ
৬৫ পেরিয়ে মৃত্যুর দিকে ধীরে ধীরে এগোচ্ছেন তিনি। কে জানে আর
কতদিন এভাবে খুতবা দিতে পারবেন?
"বিনা হিসাবে জান্নাতী না হতে পারলে, জাহান্নামে কীভাবে থাকব আমরা?
এক মুহূর্তও পারব না আল্লাহ! আল্লাহ!"

সি ল ম ম্যাগাজিন 15
খতিবের কথা শেষ হয় না। চারদিকে কান্নার মৃদু গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
"৭০০০০। প্রত্যেক হাজারের জন্য আরো ৭০০০০। আরো ৭০০০০।
আরো ৭০০০০।"
ঘুমের ঘোরে কথাগুলো বলতে থাকে রায়হান। ইফতির ডাকে ঘুম ভাঙলেও
ঘুমের ঘোর কাটেনা তার। কী এক তীব্র আবেগ ভর করে তার উপর।
সবকিছু অবাস্তব মনে হতে থাকে তার কাছে। হয়তো আজকের পর আর সে
আগের মতো থাকবে না। মোহাচ্ছন্ন এই জীবনের মুহূর্তগুলো তার কাছে
অবাস্তবই মনে হবে। তার কাছে বাস্তবতা একটাই। সামনে যেন সে নিশ্চিত
দেখতে পাচ্ছে ৭০০০০। কেবলই ৭০০০০।

রেফারেন্সঃ
আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি রাসূলুল্লাহ ‫ ﷺ‬কে বলতে শুনেছিঃ আমার প্রভূ
আমার সাথে অঙ্গীকার করেছেন যে, তিনি আমার উম্মাতের মধ্যে সত্তরহাজার
লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যাদের কোন হিসাবও নেয়া হবে না এবং শাস্তিও
প্রদান করা হবে না। আর প্রতি হাজারের সাথে থাকবে আরো সত্তরহাজার। আর
আমার পরোয়ারদিগারের দুই হাতের মুঠির তিনমুঠি পরিমাণ। সহীহ, ইবনু মা-জাহ
(৪২৮৬)। ফু টনোটঃ আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। জামে' আত-
তিরমিজি, হাদিস নং ২৪৩৭ হাদিসের মান: সহিহ হাদিস Source: আল হাদিস
অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD

সি ল ম ম্যাগাজিন 16
আমার বিবেক

- রেজওয়ান আল সাইফ

অনেকদিন ধরে লক্ষ্য করছিলাম আদিল অনিককে এভয়েড করে চলছে।


দিল আমার সেই ছোট্টবেলাকার বন্ধু। তাই তার আচরণে কোনো
অসামঞ্জস্যতা হলফ করেই বুঝে নিতে পারি। অনিকের ৩ বছর হলো
আমাদের স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তার সাথে আমার তখন থেকেই পরিচয়।
তবে তার আর আদিল এর মধ্যে অনেক গভীর সম্পর্কের বন্ধুত্ব। কেননা
তারা দুজনে একই এলাকার ছেলে এবং স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই
তারা একে অপরকে চিনে।
প্রতিদিনই দেখতাম তারা একসাথে স্কুলে আসতো।গল্পের আসর দুজনে
মিলে মজিয়ে রাখতো।অনিক বেজায় মিশুক ছিলো তাই অল্প সময়ের মধ্যে
আমাদের সকলের সাথে তার ভাব গড়ে উঠেছিলো।
কিন্তু প্রকৃতিতে যেমন দুর্যোগের ডাক না আসলেও এটি ছাড়া প্রকৃতি পূর্ণতা
পায় না, তেমনি মানুষের জীবন ও কখনো পীচঢালা রাস্তার মত মসৃণ থাকে
না।
অনিক ক্লাস টেনে থাকতে এক মায়াবিনীর প্রেমে পড়েছিলো। তাকে
মায়াবিনী বলাই বাহুল্য।কেননা তার একসাথে ১২ টি ছেলেকে ব্যবহার
করার ক্ষমতা ছিল(ভালো বাংলায় বারো***)। প্রথম প্রেম।তাই মনের মধ্যে
উত্তাল ঢেউ এর লীলাখেলা চলছিল।কিন্তু এটাই যে তার সময়কে ধিরে ধীরে
নষ্ট করছিল সেটা সে বুঝেনি।আমরাও জানতাম না এবিষয়ে কেননা সে
এসব নিয়ে প্রচুর লাজুক এবং সেন্সিটিভ ছিলো। সুতরাং যা হওয়ার তাই

সি ল ম ম্যাগাজিন 17
হলো।এসএসসি তে ৪.৮৩ পেলো। অনেক কলেজের ওয়েটিং লিস্ট এ
থাকারো সুযোগ হয়নি। এবং সেই মায়াবিনীও তার লিস্ট এ কোনো
অর্ধশিক্ষিত ব্যক্তিকে রাখতে চান না(এটা মায়াবিনীর চিন্তাভাবনা, আমার
না), তাই তার ব্লকলিস্টে অনিক নামের আরেক সহৃদয় ব্যক্তি যোগ হলো।
এবং আগেই বলেছিলাম যে সে অনেক সেন্সিটিভ, এই লজ্জার কথা কাউকে
মুখ খুলে বলেনি। এবং যার ফলপ্রসূ সে ডিপ্রেশনে ভুগতে শুরু করে।
ক্লাসের সহপাঠীরাও তাকে কেমনজানি অবজ্ঞার চোখে দেখে। কোচিং এ
ক্লাস করার সময় দেখতাম সে সবার থেকে আলাদা হয়ে বসে থাকতো।
পড়ার উত্তর ও ঠিকমতো দিতে পারতো না। সবসময় কেমন মনমরা।
আদিলের একসময় প্রচুর গানবাজনার নেশা ছিলো। ইদানিং দেখি সে এসব
থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছে। এছাড়া নিয়মিত সালাত আদায়ের ও চেষ্টা
করে। আমাদের সাথে ইসলামিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলে।শুনতে
ভালোই লাগে। কিন্তু কয়েকদিন থেকে তার অনিকের থেকে দূরে থাকার
বিষয়টি দেখে ভালো লাগছে না। অনিককে দেখি মসজিদের সামনে ওর
জন্য দাঁড়ায় থাকে।কিন্তু অনিক তাকে একপ্রকার দূরেই সরিয়ে রাখার চেষ্টা
করে।
আজকেও তাকে এরকম করতে দেখে ক্যান্টিনে বলে ফেললাম, "তুই
অনিককে ইগ্নোর করছিস কেন? তার মধ্যে কি এমন খারাপ দেখে ফেললি
তুই?" হঠাৎ এমন কথায় চমকে উঠে বলল, "ওকে বলিস না। ওরে আমি
একদিন গলির চিপায় বাজে জিনিস খাইতে দেখসি। তুইও ওর সাথে আর
মিশিস না। দেখছিস না, ছ্যাকা খেয়ে খারাপ হয়ে গেসে। তার উপর ওই
সালাতই আদায় করে না। ওর সাথে না মিশাই ভালো।" আমি বললাম,

সি ল ম ম্যাগাজিন 18
"ওওওও। এই লাগি ওকে নরমাল লাগে না। ভালোই বললি, ওর থেকে
দূরে থাকাই ভাল তাইলে।"
[ঠিক এইভাবে আমার মতো অনেকের জীবনেই এরকম দু চারটা ঘটনা
শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই যে সব ঘটনা সেম তা কিন্তু নয়।
ইসলাম শান্তির ধর্ম, ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। এখানে আপনকে পর নয় বরং পরকে
আপন করে নেওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়। অনিক যে মানসিক অবস্থার মধ্যে
দিয়ে যাচ্ছে তার দোষ তারই। কিন্তু তাই বলে একজন বন্ধু হিসেবে,
একজন মুসলিম হিসেবে কি অপর মুসলিমকে ধর্মের সঠিক পথে আনাটা
জরুরি নয়? তাকে তো আমরা ইমানের পথে ডাক দিতেই পারি। আদিল
যেমন সালাত নিয়মিত আদায়ের চেষ্টা করে, তেমনি যদি সে অনিককে
সাথে নিয়ে সালাত আদায় করে, তাকে তার ভুলের জন্য আল্লাহ তায়ালার
কাছে ক্ষমা চাইতে বলে, তার মনে পরকালে জান্নাতের বাসনা তৈরি করে
এবং এর জন্য তার কী করণীয় তা বুঝিয়ে দেয়, তাহলে সে ইন শা আল্লাহ
ইসলামের পথে আসতে বাধ্য। এবং এমনি করে অসংখ্য মানুষ বিপথে
যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারে।]

‫ْٱد ُع ِإ َلى َس ِبي ِل َربّ َِك ِبٱ ْل ِح ْك َم ِة َوٱ ْل َم ْو ِع َظ ِة ٱ ْل َح َس َن ِة ۖ َوجَ ـ ِٰد ْل ُهم ِبٱ َّلتِ ى‬
ٰ
‫َأح َس ۚ ۦ‬ ‫ى‬ ِ
‫ۖ ه‬
‫َ ْ ُن‬
তু মি তোমরা রবের পথে আহবান কর হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং
তাদের সাথে বিতর্ক কর সুন্দরতম পন্থায়।

সূরা আন-নাহল, ১৬/১২৫

সি ল ম ম্যাগাজিন 19
এক চিলতে বিরিয়ানি

- লুবান মাহফু জ

"যাও তাড়তাড়ি সালাত পড়ে এসো, তোমাদের জন্য আজকে lunch এ


surprise আছে," খালিদের মা তার তিন সন্তানকে তাড়া দিলেন জামায়াতে
যাওয়ার জন্য।

খালিদ তার ছোট ২ ভাই হাসান আর আব্দুল্লহ কে নিয়ে মসজিদের দিকে


হাঁটা শুরু করলো। যেতে যেতে হাসান তাদের upcoming surprise
নিয়ে excitement দেখালে খালিদ বললো, "তোরা এসব চিন্তা এখন
করিস নাতো! সালাতে মনোযোগ নষ্ট হবে।"

"ঠিক আছে ভাইয়া," আব্দুল্লহ মুখে তার তর্জনী আঙ্গুল দেখিয়ে চুপ করার
ভান করল।

সালাত শেষে বাসায় এসে দেখলো খুব ভিন্ন রকম একটা খাবার সাজানো
আছে। মা বললেন, "এটা তোরা চিনবি না,আমাদের দাদাদের আমলের খুব
প্রিয় খাবার বলতে গেলে তাদের কাছে এটাই ছিল। এর নাম "বিরিয়ানি"।
তোরা একটু করে খেয়ে দেখতো কেমন লাগে?"

কথা শেষ হতে না হতেই হাসান ২ পিস এলাচ মুখে দিয়ে বললো,
"মাআআ! এটা তো খুব বিচ্ছিরি খেতে! উহু!"

সি ল ম ম্যাগাজিন 20
ওদিকে হাসান আর আব্দুল্লহ যথাক্রমে কিসমিস ও কাঁচা মরিচ মুখে নিল।
হাসান বললো, "বিরিয়ানি খেতে তো দারুণ মিষ্টি!" আর আব্দুল্লহ তো ঝালে
অস্থির হয়ে রীতিমতো পানি গ্লাসের পর গ্লাস পান করছে, "আম্মু! এটা কী
খাওয়ালা! এতো ঝাল।"

সবাই শান্ত হওয়ার পর মা বললেন, "তোমরা কি জানো, ২০২০ সালের


দিকে মানুষরা এভাবেই রসুল সল্লল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাহ পড়ে
তাঁকে Justify করতো??"

সবার মুখে অবাক হওয়ার স্পষ্ট ভাব দেখা গেল। রুমভর্তি এখন নীরবতা।
পিনপতন নীরবতা।

‫َو َما تَ ْوف ِيق ِ ـى ِإ اَّل ِبٱ ل ّل َِه ۚ َع َل ْي ِه تَ َولَّك ْ ُت َوِإ َل ْي ِه ُأ نِي ُب‬
ٓ
আমার কার্যসাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে ; আমি তা ঁরই উপর নির্ভ র করি
এবং তা ঁরই অভিমুখী।
সূরা হুদ, ১১/ ৮৮

সি ল ম ম্যাগাজিন 21
জীবন থেকে নেয়া

সি ল ম ম্যাগাজিন 22
মরণ

- বিচিত ও বিরচিত Bichito O Birochito

পৃথিবীতে একমাত্র নিশ্চিত সত্য হচ্ছে মৃত্যু আর তা একবারই আসবে।


প্রতিটি প্রাণির মৃত্যু হবে, আগে আর পরে। আর বাকি সব কিছুই অনিশ্চিত,
অজানা।
পৃথিবীর কোন বিপদ - আপদে পড়ে, ভাল - মন্দ খবর শুনে আমাদের
অনুভূতিতে যতটা দাগ কাটে, নিশ্চিত মৃত্যুর খবরে তা হয় না!! অথচ নির্মম
বাস্তবতা হলো, এটাই হবার ছিল, হবে, প্রত্যেকের সাথে। আল্লাহ তায়ালা
বলেই দিয়েছেন, মৃত্যুর দূত সবসময়ই আমাদের পেছনে নিয়োজিত
রয়েছেন।
তবুও, আমরা সবথেকে বেশি অবাক হই, কষ্ট পাই কাছের দূরের মানুষের
মৃত্যুর খবরগুলো পেয়ে। কিছুতেই যেন মেনে নিতে পারিনা। যেন ব্যাপার
টা এমন যে, এটা কীভাবে সম্ভব, কেন হল, মানিনা...।
অন্যদিকে, পরকালে পাপীরা শাস্তির তীব্রতায় অতিষ্ঠ হয়ে কতই না মৃত্যু
কামনা করবে,একটুর জন্য, এক মুহুর্তের জন্য মৃত্যু চাইবে যেন কষ্ট থেকে
মুক্তি পায়। কিন্তু, মৃত্যুকে আর আপন করে নেয়ার সুযোগ থাকবে না তখন।
সুতরাং, এ মৃত্যু আসলে আশির্বাদ, দুনিয়ার জীবনের শত কষ্ট, ক্লেশের পর
এই মৃত্যুর মাধ্যমেই তো আমাদের রবের কাছে, আমাদের প্রতিশ্রুত
পৈত্রিক ভিটাতে ফিরে যাবার পথ খুলে যায়, যদি আমরা দুনিয়ার জীবনটা
সেভাবে কাজে লাগাতে পারি, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

সি ল ম ম্যাগাজিন 23
আমাদের সবার তাই উচিত, মৃত্যু নিয়ে বেশি বেশি ভাবা। দুনিয়ায় জীবনের
মূল্যহীন আবেগ, দুশ্চিন্তা, পরিকল্পনা, সুখের আশা সব কমিয়ে মৃত্যু কে
আপন করে নেয়া, মৃত্যুর পরের অনন্ত জীবনের জন্য সব চিন্তা, ভাবনা,
দুশ্চিন্তা করা।
তুচ্ছ দুনিয়ার জীবনের নিশ্চিত সমাপ্তির ভয়ে না থেকে তার পরের জীবনের
অনিশ্চিত শুরুর ভয়ে থাকাই অনন্ত সুখের চাবিকাঠি। সে জীবনে সুখের
আশা করা, সেভাবে প্রস্তুতি নেয়াই প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ।
আর, এর মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনের প্রতিটি কাজ, সিদ্ধান্ত, পাওয়া না
পাওয়ার হিসাব সবকিছুই কেমন পানির মত সরল সহজ হয়ে যায়। ভয়,
দুশ্চিন্তা, কষ্ট, হতাশা সব যেন অনেক দূরে কোথাও চলে যায়। অপার্থিব
প্রশান্তি আচ্ছন্ন করে রাখে আত্মা কে। মন্দ কাজ, কথা, অপরাধ সবকিছু
থেকেই দূরে থাকা সম্ভব হয় মৃত্যুর পরের জীবনের শাস্তির ভয় থাকলে।
কেননা, "মৃত্যুর সাথে সাথেই তো এ জীবনের সব অর্থহীন হয়ে যাবে" - এ
একটি মাত্র চিন্তা বাকি সব চিন্তার উপর প্রভাব বিস্তার করে সেগুলোর মাত্রা
কমিয়ে দেয়।
এত টাকা পয়সা, বাড়ি -গাড়ি, বিলাসিতা সব অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায় যদি
মৃত্যুকে স্মরণে রেখে জীবনটাকে যাপন করা হয়। মিথ্যে সুখের পেছনে
ছোটাছুটি বন্ধ হয়ে যায়। আর তাই, দুনিয়ায় ক্ষুদ্র এ জীবনে অল্পতেই
অনেক সুখ শান্তির স্বাদ পাওয়া যায়, আর পরকালের অনন্ত অসীম জীবনের
অকল্পনীয় সুখের নিশ্চয়তারও আশা করা যায়।
একজন মানুষ যখন সবসময় এটা মাথায় রেখে প্রতিটি কাজ করবে যে,
যেকোন মুহূর্তে তার এ ক্ষণস্থায়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটবে, তাকে ফিরে যেতে
হবে, গিয়ে হিসাব বুঝিয়ে দিতে হবে, বিচারের মুখোমুখি হতে হবে, এক

সি ল ম ম্যাগাজিন 24
বিন্দু ছাড় পাবেনা- সে মানুষের পক্ষে কি কখনো কোন খারাপ কাজ করা
সম্ভব!! সে নিজে ভাল হবে, তার আশেপাশের সবাইকে নিয়ে জান্নাতের
পথে একটু করে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক।
দুনিয়ার পাওয়া না পাওয়া নিয়ে এত হতাশ হয়ে যাই আমরা, অথচ, যিনি
সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞাবান, মহান আল্লাহ তায়ালা, তিনি বার বার বলেছেন- যে
জান্নাতে প্রবেশ করল, সে ই প্রকৃত সফল।
তাহলে, দুনিয়ার কোন প্রাপ্তিই আসলে সফলতা নয়, হতে পারেনা। আর
তাই, এখানে সব থেকেও কেউ শান্তি পায়না, মনে করেনা যে সে এবার
সফল হয়ে গেছে। মনে হয়, আরো চাই, আরো পাওয়ার বাকি আছে অনেক
কিছুই।
আসলে, যে আত্মা জান্নাতের অপার অকল্পনীয় সুখের স্বাদ নিতে তৈরি
হয়েছে, যার প্রকৃত আবাস, নিবাস, গন্তব্য হচ্ছে জান্নাতের সুমিষ্ট ফলের
বাগান, মনোরম ঝর্ণাবেষ্টিত সোনা রূপা নির্মিত সুবিশাল প্রাসাদ-সমেত
সাত পৃথিবীর চেয়েও বিশাল সম্পদ, যার তৃপ্তি হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার পুরো
সন্তুষ্টি প্রাপ্তির মাঝে, সে আত্মাকে এ তুচ্ছ দুনিয়ায় কোন কিছু দিয়েই
কিছুতেই সন্তুষ্ট তৃপ্ত করা সম্ভব কি?? সে চেষ্টা করা বৃথা তাই।
মুসাফিরের মত কিছুদিনের জন্য এখানে আমাদের আসা। একটা মস্ত
পরীক্ষার হল, প্রতি মুহুর্তে প্রশ্নপত্র রচিত হচ্ছে, পরীক্ষা দিচ্ছি একের পর
এক। ওপেন বুক এক্সাম। সিলেবাস আল্লহই দিয়ে দিয়েছেন, সব প্রশ্নের
উত্তরও দেয়া আছে, পবিত্র কুরান ও হাদিস সে সহায়ক গ্রন্থ। চারদিকে
ফেরেশতা দের কড়া নজরদারি, পদে পদে শয়তানের ধোকা, সবকিছুর
মাঝে এ সিলেবাস ধরে এসব কঠিন পরীক্ষা শেষ করে দুনিয়া নামক এ
পরীক্ষার হল থেকে বের হতে পারাটাই আসল কথা। আর, এ পরীক্ষায় পাশ

সি ল ম ম্যাগাজিন 25
করে জান্নাতের দরজার চাবি হাতে পাওয়াই প্রকৃত সফলতা, বাকি সব
সফলতার সংজ্ঞা মিথ্যা। কিন্তু, সেজন্য সেই যে সহায়ক বইগুলো, কুরআন
ও হাদিস, এসবের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ জানা, বোঝা, মনে রাখা জরুরি।
আর,এর অভাব প্রকট হচ্ছে বলেই চারদিকে এত কষ্টের ছড়াছড়ি, এত
অসফলতার গ্লানি।
এ মুসাফিরের জীবনে টিকে থাকার জন্য খুব তো বেশি কিছুর দরকার নেই।
যতটা না হলেই নয়, অতটা নিয়ে আল্লাহর দেওয়া রিযকের উপর সন্তুষ্ট
থেকে, হালাল খেয়ে পরে ইবাদাত করে হেসে খেলে জীবনটা পার করে
দেয়াই যায়। যত সুখ তা আল্লাহরই দেয়া অনুগ্রহ, যত কষ্ট তা তাঁর তরফ
থেকেই আসা ক্ষনিকের পরীক্ষা মাত্র- এ কথাগুলো মনে গেঁথে নিয়ে ধৈর্য্য ও
কৃতজ্ঞতার সাথে হতাশা মুক্ত থাকার চেষ্টা করে প্রতিটি দিন পার করা
উচিত। কেননা, এটাই সরল পথ।
কিন্তু, আল্লাহ ও তাঁর দেয়া কিতাব, বিধান এসব থেকে দূরে থেকে থেকে,
রাসূল‫ ﷺ‬এর আদর্শিক জীবনাচরণ থেকে সরে যেতে যেতে আমরা আমাদের
চিন্তা ভাবনা জীবনযাপন সব জটিল করে ফেলেছি। কষ্ট, হতাশা, যন্ত্রণা,
অপরাধ, অশান্তি আমাদের ঘিরে ফেলেছে। শয়াতান আমাদের দুনিয়ায়
জীবনে সুখী হবার লোভ দেখিয়ে আদতে দু'জীবনেই অনন্ত কষ্টের দিকে
ঠেলে দিচ্ছে। অথচ, মানুষ হচ্ছে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। তাহলে, এ
শয়তানের বুদ্ধিতে কেন আমরা চলব, কেন বুদ্ধিমান হবো না, নিজের ভাল
কেন বুঝবনা!!
আল্লাহ তায়ালা বলেই দিয়েছেন, আমাদেরকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে
একমাত্র তাঁর ইবাদতেরই জন্য। অথচ, আমরা সেটা বাদ দিয়ে বাকি সবই
করি, সবকিছুর জন্যই সময় পাই, আর অপ্রাপ্তির বেলায় পুরোটা অভিযোগ

সি ল ম ম্যাগাজিন 26
ভাগ্য আর আল্লাহর দিকে!!! একবারও ভেবে দেখিনা, পদে পদে কতনা
ভুল করছি, পাপ করছি, রব কে অসন্তুষ্ট করছি।
সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, যেকোন মুহূর্তে নিভে যেতে পারে আমাদের যে কারোর
জীবন-প্রদীপ। কী নিয়ে যাচ্ছি, হিসাবের খাতা কী দিয়ে পূর্ণ, পারব কি সেই
প্রকৃত সফলদের কাতারে নাম লিখাতে? নাকি দুনিয়ায় মেকি সফলতার
আর শয়তানের ধোঁকায় পরে এপার ওপারের সব সুখ হেলায় হারাচ্ছি!!
মহান আল্লাহ আমাদের দুনিয়ায় জীবনের মায়া কাটিয়ে আখিরাতের,
জান্নাতের, আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রাপ্তির ও সময়ের বাধনহীন অপার অসীম সুখের
জীবনের জন্য ভাবতে ও প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করুন, প্রকৃত সফলদের
মাঝে আমাদের জায়গা হোক, সে দুয়াই করি।

‫َو َم يَقْ َن ُط ِم َّر ْح َم ِة َربّ ِٓۦِه ِإ اَّل ٱل َّض ٓا ّلُون‬


َ ‫ن‬ ‫ن‬
যারা পথভ্রষ্ট তারা ছাড়া আর কে তার রবের অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়?
সূরা হিজর, ১৫/৫৬

সি ল ম ম্যাগাজিন 27
বাহিরে প্রস্রাব, অতঃপর
- মিফতাহুল ইসলাম

—[১]—
দুপুর হতে চলেছে। প্রায় ১২টা বাজে তখন। বাড়ি থেকে বের হলাম অটোর
উদ্দেশ্যে। গন্তব্য নগর ভবন। ১২ঃ৩০ টার আজান দিবে। আমার কাজ হয়ে
যাওয়ার কথা তাড়াতাড়ি। দেখা যাক কী হয়। করোনার কারণে মাঝখানে
কিছুদিন দেরী করে জুম্মাতে যেতাম। অনেকদিন মসজিদে যাই নি। বাসায়
জামাত করে পড়তাম। কিছুদিন হলো মসজিদে যাওয়া শুরু করেছি।
করোনা যে কবে যাবে। একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লাই আমাদের
মুক্তি দিতে পারেন করোনা থেকে।
হাঁটতে হাঁটতে অটো পেয়ে গেলাম। অটোতে উঠে বসলাম। অটোওয়ালার
হাতে যতদূর সম্ভব সিগারেট ছিল। সিগারেটটা ফেলে দিলেন। সিগারেটের
আগে কাস্টমার। অবশ্য নিজে থেকে না ফেললে হয়তো বলতাম। সিগারেট
খাওয়া আল্লাহ হারাম করেছেন। হারামকে তো কেউ হালাল বলতে পারবেন
না।
লক্ষীপুর হয়ে অটো এগিয়ে চলল। সামনেই বোর্ড অফিস, তারপর জিপিও,
তারপর মেডিকেল হোস্টেলের বিশাল খেলার মাঠ তারপর..
"ভাই একটু দাঁড়ানতো। পেশাব করেই আসছি।"
জিপিওর একটু সামনেই একটা বিশাল পুকুর। এতো বড় পুকুরকে কি দীঘি
বলে? কে জানে! পুকুরের পাশ দিয়ে মেইন রোড চলে গেছে। উনি পুকুরের
পাশে এক জায়গায় অটো থামালেন। আমি অটো থেকে নেমে অন্যদিকে
সি ল ম ম্যাগাজিন 28
মুখ করে দাঁড়ালাম। আমার বের হতে খানিকটা দেরী হয়েছে। আমার এক
বন্ধু ওয়েইট করার কথা নগর ভবনের সামনে। সে কি এসে গেছে? আমার
আবার বাটন ফোনটাতে সমস্যা হয়েছে। ফোন অন থাকা অবস্থাতেও সিম
অফ হয়ে যায়। কল দিলেও তো বুঝতে পারব না। ইশ!
এদিকে উনি অটোতে এসে বসলেন। আমিও উঠে পড়লাম।

—[২]—
"আপনি জুম্মার সালাত পড়বেন না?"
আমি জিজ্ঞেস করলাম ওনাকে। উনি যেখানে প্রস্রাবের জন্য নামলেন
সেখানে স্যানিটারি ল্যাট্রিন নেই। আছে অবশ্য একটা - ন্যাচারাল
পায়খানা। খোলা আকাশের নিচে বিশাল বিস্তৃত এক পায়খানা। এখানে পর্দা
লাগে না। একটা ফাঁকা জায়গা পেলেই হয়। পেশাবের চাপতো কমাতে
হবে। দেরী করা চলবে না। তবে সমস্যা একটা। খুব বড় একটা সমস্যা।
"বাসায় গিয়ে গোসল করে নিব।"
"ওহ। বাসা কোথায় আপনার?"
"নওদাপাড়া।"
উনি উত্তর দিলেন। নওদাপাড়া আমাদের এখান থেকে খুব বেশি দূরে না।
উনি পৌঁছে যেতে পারবেন। যাক আলহামদুলিল্লাহ। অনেকে তো জুম্মার
সালাতও পড়ে না বোধহয়। উনি হয়তো পড়বেন। আমরা সামনে এগিয়ে
যাচ্ছি। এখনো অনেকটা রাস্তা বাকি। নগর ভবনে যেতে দেরী হয়ে যাবে
নাতো?
সি ল ম ম্যাগাজিন 29
—[৩]—
অনেকদিন আগের কথা। প্রায় ২বছর হবে। চিড়িয়াখানায় গেছি কয়েকজন
বন্ধু মিলে। আমি সাধারণত সালাত সিয়াম নিয়মিত করে এমন ছেলেদের
সাথেই বের হই। কারণ দ্বীনি বন্ধুদের সাথে বের হলে সালাত কাজা হওয়ার
সম্ভাবনা থাকে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কুরআনে বলেন,
‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’ (সুরা তাওবা :
আয়াত ১১৯)

হাদিসে এসেছে, "আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল‫ﷺ‬
বলেছেন, সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ মিস্‌ক বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপরের
ন্যায়। আতর বিক্রেতাদের থেকে শূন্য হাতে ফিরে আসবে না। হয় তু মি আতর খরিদ
করবে, না হয় তার সুঘ্রাণ পাবে। আর কর্মকারের হাপর হয় তোমার ঘর অথবা
তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, না হয় তু মি তার দুর্গন্ধ পাবে।"

(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২১০১)

সেদিন আমার ভুল হয়েছিল। বের হয়েছিলাম অন্যদের সাথে।


চিড়িয়াখানায় ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে আমার এক ফ্রেন্ডের প্রস্রাবের চাপ
উঠে। সে যায় প্রস্রাব করতে। প্রকৃতির নিচে। চিড়িয়াখানার সুন্দর পরিবেশ।
ফাঁকা জায়গা পেলে আর কী লাগে! লোকজন কম থাকে। নিমিষেই আরাম
পাওয়া যায়।

সি ল ম ম্যাগাজিন 30
—[৪]—
উপরের ঘটনা দুটোই সত্য। আংশিক পরিমার্জিত। আমাদের অনেক ভাই
আছেন যারা যেখানে সেখানে প্রস্রাব করেন। অথচ ভালো করে পানি নেন
না। অথচ পবিত্রতা একজন মুমিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন
মুসলিম সবসময় পবিত্র থাকার চেষ্টা করবে।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, এ দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া
হচ্ছে, কিন্তু কোন বিরাট গুনাহের জন্য শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। এদের একজন প্রস্রাব
করার সময় আড়াল করতো না।" সহীহ মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, প্রস্রাব
করার পর উত্তমভাবে পাক-পবিত্রতা অর্জ ন করতো না। আর অপরজন একজনের
কথা অন্যজনের কানে লাগাতো (চোগলখোরী করতো)।

[বুখারী ২১৮, মুসলিম ২৯২]

চলুন না আমরা পবিত্রতার ব্যাপারে যত্নবান হই? এভাবে যেখানে সেখানে


প্রস্রাব করা যেমন অন্যদের জন্য অস্বস্তিকর, তেমনি নিজের জন্যও ভয়াবহ
বিপদের কারণ। অনেকে বলতে পারেন- "আমিতো সালাতই পড়ি না। তাই
আরকি"
এক্ষেত্রে সালাত না পড়া যেমন একটা ভয়ংকর গোনাহের কাজ তেমনি
আপনার এ কাজটিও কবরে আজাবের কারণ হতে পারে। আসুন আজকে
থেকেই আমাদের এ বদভ্যাস পরিত্যাগ করি।
বিশ্বাস করুন, আল্লাহর বিধান মেনে চলার মধ্যেই প্রশান্তি আর আল্লাহর
সন্তুষ্টি। এ ক্ষুদ্র জীবনে আর কী চাই?

সি ল ম ম্যাগাজিন 31
ভার্চু য়াল অহংকার

- নাভিদ আহমেদ

—[১]—
বর্তমান সময়ে আমাদের দুইটা লাইফ আছে একটা হলো সাধারণ লাইফ
আরেকটা হলো ভার্চুয়াল লাইফ। ভার্চুয়াল লাইফ আমাদের জীবন কে সহজ
করে দিয়েছে। এই ভার্চুয়াল লাইফের জন্য ঘরে বসে কাজ করা যায় ঘরে
বসে স্টাডি করা যায় মোটকথা ভার্চুয়াল লাইফ আমাদের লাইফকে সহজ
করেছে।
কিন্তু এই ভার্রচুয়াল লাইফের ফলে আমাদের আরেকটা লাইফের ক্ষতি হচ্ছে
আর যেই লাইফটার ক্ষতি হচ্ছে সেটাই হলো আমাদের মূল লাইফ ওটাই
আসল জীবন আর সেই জীবনটি হলো আখিরাতের জীবন।
আর এই জীবনটায় আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছেন যার ফল পাবো
আমরা আখিরাতের জীবনে। কিন্তু মধ্যখানে এই ভার্চুয়াল লাইফ আমাদের
জীবন কে সহজ করলেও আমাদের মূল লাইফ অর্থাৎ আখিরাতের লাইফে
চরম ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারি।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন তোমাদেরকে পরীক্ষা করবার জন্য; কে তোমাদের
মধ্যে কর্মে সর্বোত্তম? আর তিনি পরাক্রমশালী, বড় ক্ষমাশীল। (সূরা মুলক, ৬৭/২)

সি ল ম ম্যাগাজিন 32
—[২]—
ভার্চুয়াল লাইফে কী বড় গোনাহ হতে পারে সেই সম্পর্কে আমাদের জানতে
হবে। শুধু যে বড় গোনাহ হয় সেটা না, ছোট ছোট গোনাহও হয় আর ছোট
ছোট গোনাহ কেও গুরুত্ব দিতে হবে কারণ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ
তায়ালা বলেছেন,
হে বৎস! কোন (পাপ অথবা পুণ্য) যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয়এবং তা যদি কোন
পাথরের ভিতরে অথবা আকাশমন্ডলীতে অথবা মাটির নীচে থাকে, তাহলে আল্লাহ
তাও উপস্থিত করবেন। আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সকল বিষয়ে অবগত। (সূরা লোকমান,
৩১/১৬)

তাই ছোট ছোট গোনাহকেও গুরুত্ব দিতে হবে। আর যেই বড় গোনাহ গুলো
হয় সেটার মধ্যে অন্যতম হলো 'অহংকার' যেটা মারাত্মক গোনাহ।
যেই গোনাহ করার ফলে আল্লাহ আবেদ জ্বীনকে ইবলিস শয়তান বানিয়ে
দিয়েছেন এবং অভিশপ্ত করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন,
এবং যখন আমি হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে
নির্দে শ দিলাম, তখন ইবলিস ব্যতিত সবাই সেজদা করলো। সে (নির্দে শ) পালন করতে
অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করলো। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূ ক্ত হয়ে
গেল।’ (সুরা বাকারা, ২/৩৪)

—[৩]—
অনেকেই হয়ত বলবেন, ভার্চুয়াল অহংকার- এটা আবার কী? কিন্তু ভার্চুয়াল
গোনাহের মধ্যে এটা অন্যতম। একটা উদাহরণ দিয়ে এটা বোঝানো যাবে।

সি ল ম ম্যাগাজিন 33
ধরি 'ক' নামক ব্যক্তি ফেসবুকে একটি ছবি আপলোড করেছে আর ওই
ছবিতে লাইক পড়েছে ৪০০০ এখন ওই ছবিটি ওনার কোনো পরিচিত
ব্যক্তি দেখেছেন যার ছবিতে ৬০০০ লাইক এসেছে। তখন এমনিতেই সেই
ব্যক্তিটির মনে অহংকার বোধ জন্ম নিবে।
যারা এতটুকু পড়ার পর ভাবছেন যে নাও তো হতে পারে তাদেরকে বলব
প্রাকটিক্যালি চেইক করেন জন্মানোর চান্স বেশি আর যাদের জন্মায় না
আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু যাদের অহংকার আসে তাদের জন্যই বলা এই
কথাগুলো।
আর এটা তো অহংকার জন্ম নেওয়ার একটা উদাহরণমাত্র। এরকম
হাজারো উদাহরণ আছে যার ফলে অহংকারের সৃষ্টি হতে পারে। এটা পড়ার
পর যারা ভাবছেন যে একটু তো অহংকার সৃষ্টি হবেই ওটাতে কী সমস্যা?
তাদের জন্য একটি হাদিস পেশ করি সেটা হলো:
রাসুলুল্লাহ‫ ﷺ‬বলেছেন,
"যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে যাবে না" [সহিহ
মুসলিম]

আর পবিত্র কোরআনে বলা মহান আল্লাহ,


নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারী কে পছন্দ করেন না। (সূরা লোকমান, ৩১/১৮)

অহংকার শুধু আল্লাহ করতে পারে আর কেউ পারে না। অল্প অহংকার
হলেও করা যাবে না।

সি ল ম ম্যাগাজিন 34
—[৪]—
আমরা যদি আমাদের বাস্তব জীবনে দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব
আমরা জীবনে প্রতিনিয়ত অহংকার করে চলেছি। আর এখন ভার্চুয়াল
লাইফের কারণে আরও অধিক পরিমাণে বেড়ে গেছে অহংকার।
আমরা ভার্চুয়ালী ছোট-বড় সব মিলিয়ে অনেক গোনাহ করি। কিন্তু বড়
গোনাহের মধ্যে অহংকার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
এজন্য এই গোনাহ থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে। ইসতিগফারের
পরিমাণ বাড়াতে হবে। ভার্চুয়ালি এবং ম্যানুয়ালি- দুই জায়গায়ই আমাদের
অহংকার থেকে বেঁচে থাকতে হবে আর বিগত করা অহংকার গুলো থেকে
আমাদের মাফ চাইতে হবে আল্লাহর কাছে কারণ নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল
ও পরম দয়ালু।

‫ِا َن ال ّل َٰہ َغ ُف ۡو ٌر َّر ِح ۡی ٌم‬


ّ
নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সূরা বাকারাহ, ২/১৭৩

সি ল ম ম্যাগাজিন 35
আমরা দুই ভাই

- মোঃ নাহিদ হাসান

আমরা দুই ভাই। আমি এবার একাদশ শ্রেণিতে আর আমার ভাই নবম
শ্রেণিতে উঠবে। আমরা দুই জনই একই সাথে কোরআন মাজিদ পড়তে
শিখি। অনেক কয়েকবার খতম ও করেছি দুই জনে। আমরা ছোট বেলা
থেকেই সালাত পড়তাম। কিন্তু বয়স যত বারতে লাগলো সালাত পড়া
কেমন জানি ছাড়তে লাগলাম। তবে হ্যাঁ বছরের কোনো সময় সালাত না
পড়লেও রমজান মাসে সবগুলো সিয়াম রাখার চেস্টা করতাম এবং ৫
ওয়াক্ত সালাত মসজিদে পরতাম। আমার স্কুলের বন্ধু গুলা সব ভাল ছিল ।
তারা সালাত পড়তো এবং আমাকেও সাথে নিয়ে যেত । এভাবে class 9
থেকে আমি আবার সালাত পড়তে শুরু করলাম। তবে বিভিন্ন সময়
প্রাইভেটে থাকার কারণে সালাত কাজা হয়ে যেত। কিন্তু পরে সেগুলা আর
পড়তাম না। কেমন জানি আলসেমি চলে আসত। এভাবে চলতে চলতে
আমি আবার সালাত পড়তে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম এবং আলহামদুলিল্লাহ
এখন আর আমার সালাত খুব একটা কাজা হয় না এবং আমি মসজিদে
গিয়েই সালাত পড়ি। কিন্তু আমার ভাই ততদিনে আর সালাত পড়া শুরু
করে নি। অবশেষে তাকে অনেক জোর জবরদস্তি করার ফলে সে এখন
সালাত পড়তে শুরু করেছে। কিন্তু ওই আমার আগের অবস্থা মতো যদি
কোন ওয়াক্ত কাজা হয় তাহলে আর পরে তা পড়েনা। এমনকি ফজরের
সময়ও অনেক ডেকে তাকে ঘুম থেকে তোলা যায় না। কিছু দিন আগের
কথা তাকে সকালে সালাত পড়ার জন্য অনেক ডাকা হলো কিন্তু সে উঠল

সি ল ম ম্যাগাজিন 36
না। বললো পানি অনেক ঠাণ্ডা, এই ঠাণ্ডা পানি দিয়ে সে ওযু করতে পারবে
না। এই বলে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু আর ৪৫ মিনিট পর তার প্রাইভেট
থাকার কারনে মাত্র ১৫ মিনিট ঘুমাইতে পারল। এরপর উঠে হাত মুখ
ধুইয়ে প্রাইভেটের জন্য চলে যায়। প্রাইভেট থেকে আসার পর আমি ওকে
জিজ্ঞাস করলাম হাত মুখত ধুইলিই, এই কাজটা ১৫ মিনিট আগে করলেই
তো আর সালাত কাজা হইত না। ও কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে
দাঁড়িয়ে থাকলো। পরের দিন সালাতের সময় দেখি এক ডাক দিতেই উঠে
গেসে এবং সালাত পরে তারপর প্রাইভেটে গেল।
বলা হয়ে থাকে মানুষ তার অভ্যাসের দাস। একবার কোন খারাপ অভ্যাস
তৈরি হয়ে গেলে তা থেকে ফিরে আসা খুব কঠিন। তার চাইতে ভাল
অভ্যাসটা না তৈরি করা। আমাদের বন্ধু নির্বাচনের সময়ও সাবধান হওয়া
উচিত। কারন বন্ধু যদি ভালো হয় তাহলে তার প্রভাব আমাদের ওপর পড়ে,
যেমনটি হয়েছে আমার সাথে। আমার বন্ধুদের সহযোগিতায় আমি আবার
সালাত পড়তে শুরু করেছি। আবার আমার সামনেই অনেকে বন্ধুদের সাথে
মিশে তাদের জীবন শেষ করে ফেলছে।

‫قُ ْل ِإ ن َصاَل ِ ى َو ُس ِكى َوم ْحياى َومما ِ ى ِل ّل َِه ر ِب ٱ ْلعـٰ َل ِمي‬


‫َن‬ َ ّ َ ‫َ َ َ َ َ ت‬ ُ‫ت ن‬ َّ
বলুন, ‘আমার সালাত, আমার কু রবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সৃষ্টিকু লের
রব আল্লাহরই জন্য।

সূরা আল-আন’আম, ৬/১৬২

সি ল ম ম্যাগাজিন 37
প্রত্যয়ে প্রতীতি

সি ল ম ম্যাগাজিন 38
গীবত

- ফারহান শাহরিয়ার সায়েম

—[১]—
আলহামদুলিল্লাহ আজ একটি মজার বিষয় নিয়ে আমি সাইম(সামান্য
মানুষ) সামান্য কিছু কথা বলব। আশা করি সবারই ভালো লাগবে। আজকে
আমি গীবত নিয়ে কিছু বলতে চাই। গীবত সরল তিনটি বর্ণ নিয়ে
গঠিত,কিন্তু এর ভয়াবহতা বিশাল। এই তিনটি অক্ষর নিয়ে আমরা এ‍্যতো
বেশি ছেলে খেলা করি যে আমরা বুঝতেই পারিনা এর মধ্যে কী বিষ
লুকিয়ে আছে।
"গীবত" বানান করা সহজ হলেও এর অর্থ বেশ জটিল। সমাজে এটি গাছের
শেকড়ের মতো চার দিকে ছড়িয়ে আছে। গীবত শব্দের অর্থ হলো পরনিন্দা,
কুৎসা রটানো ইত্যাদি। কারও অবর্তমানে দোষ বর্ণনা করাই হলো গীবত।
গীবত করতে করতে আমাদের দাঁত লাল হয়ে গেছে।
‫ ق ِ ي َل‬.‫اك ب َِم ا َي ْك َر ُه‬ َ َ‫ ِذ ْك ُر َك َأ خ‬: ‫ال‬ َ َ‫ ق‬.‫الله َو َر ُسو ُل ُه َأ ْع َل ُم‬
ُ ‫يب ُة؟ قَ ا ُلوا‬ ِ
َ ‫ون َما ا ْلغ‬ َ ‫تَ ْد ُر‬
‫َأ‬
ُ ُ‫ ِإ ْن اَك َن ف ِ ْي ِه َما تَق‬: ‫ال‬
‫ول فَ قَ ِد اغْ تَ ْبتَ ُه َوِإ ْن َل ْم‬ َ َ‫ول؟ ق‬ ُ ُ‫ت ِإ ْن اَك َن ف ِ ى َأ خِ ى َما َأ ق‬ َ ‫َأ فَ َر َْأي‬
‫َي ُك ف ِ ْي ِه فَ قَ ْد َب َهتَّ ُه‬
ْ‫ن‬
তোমরা কি জান ‘গীবত’ কী? তা ঁরা বললেন, আল্লাহ ও তা ঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত।
তিনি বললেন, তোমার ভাই যে কথা অপসন্দ করে তার সম্পর্কে সে কথা বলার নাম
গীবত। জিজ্ঞেস করা হ’ল, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে?

সি ল ম ম্যাগাজিন 39
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তু মি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে তবেই তু মি
তার ‘গীবত’ করলে। আর যদি না থাকে তাহলে তু মি তাকে অপবাদ দিলে’।

)মুসলিম; মিশকাত হা/৪৮২৮(

—[২]—
কাউকে টার্গেট করে বা ইঙ্গিত করে যদি কথাবার্তা বলি তাহলে সেটাও
গীবত। কারো প্রতি সন্দেহ প্রবণ হয়ে খারাপ ধারণা পোষণ করাও
অন্যায়[1]।
এবার একটু সমাজের দিকে ফিরে তাকান, দেখুন আমাদের কী পরিস্থিতি।
এমনকি যাদেরকে আমরা সব থেকে বেশি সম্মান করি.তাদের প্রতি
আমাদের শ্রদ্ধা সবসময় উপরে. যারা আমাদেরকে ইসলাম বিষয়ে শিক্ষা
দিয়ে থাকেন সেই সকল বড় বড় ওয়ায়েজগণ আজ তাদের মধ্যেও গীবত
চরম বিস্তার লাভ করেছে। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে দেখবেন অনেক জ্ঞানী
গুণী আলেমগণ যারা ইসলাম বিষয়ে অনেক পণ্ডিত। যাদের কথা ছিল
সমাজ থেকে গীবত দূর করা। কিন্তু তারা একে অপরের গীবতে লিপ্ত। আশা
করি সবাই বুঝতে পারছেন আমাদের মুসলিম জাতির কেন এত অধঃপতন।
আমরা কারো ভালো টা দেখতে পারিনা। কেউ যদি উপরে উঠে আমরা
তাদের টেনে টেনে নিচে নামাই। কারো ভালো আমরা মানতেই চাই না।
আমরা সব সময় নিজেদের কে সবার ঊর্ধ্বে দেখতে চাই। আর এই উপরে
ওঠার জন‍্য মই হিসেবে গীবত কে ব্যবহার করি। অথচ আমাদের উচিত
ছিল নিজেদের দক্ষতা দিয়ে যোগ্যতা দিয়ে সকলকে ছাড়িয়ে সামনে
যাওয়া। কিন্তু আমরা তা করি না।

সি ল ম ম্যাগাজিন 40
এই চরম পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।
গীবত মানুষের মধ্যে মানুষের সম্পর্ক নষ্ট করে। ভাইয়ের মধ্যে ভাইয়ের
ভ্রাতৃত্ব নষ্ট করে। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। একে অপরের প্রতি বিশ্বাস
নষ্ট করে। একে অপরের প্রতি ভরসা নষ্ট করে।
এবার আসুন একটি মজার বিষয় জানি। হয়তো এটি অনেকের না জানা।
কারো গীবত শুনে চুপ থাকা এবং প্রতিবাদ না করাও কানের গীবত।
দেখুন আমরা হালাল এবং হারাম সম্পর্কে নানা কথা শুনে থাকি। ওয়াজ
মাহফিল থেকে বইয়ের পাতা পর্যন্ত হালাল ও হারাম সম্পর্কে জেনে থাকি।
কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খাদ্যাভাস ও ব্যবসা নিয়ে কথা বলা হয়ে থাকে।
আমাদের অবশ্যই জেনে রাখা উচিত, গীবত চরম ভাবে হারাম।
পবিত্র কুরআনুল কারীমের সূরা হুজুরাতের ১২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ
তা'আলা বলেন, তোমরা একে অন্যের গীবত করো না, কেউ কি তোমার
মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? অবশ্যই তোমরা তা অপছন্দ
করবে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ অধিক তওবা কবুলকারী
দয়ালু।
এবার গীবত কঠিন শাস্তির দিকে একবার তাকাই চলুন,
‫ول ال َّل ِه صلى الله علي ه وس لم “ َل َّم ا ُع ِر َج بِ ي‬ ُ ‫ال َر ُس‬ َ َ‫ ق‬،‫س ْب ِ َما ِل ٍك‬
َ َ‫ال ق‬ ِ ‫ع َأ‬
‫َ نْ نَ ن‬
‫مررت ِب وم لهم َأ ار ِم ح اس ي ِم ون وج وههم وص دورهم َ لت م‬
ْ‫َ َ ْ ُ قَ ْ ٍ َ ُ ْ ظْ فَ ٌ نْ نُ َ ٍ َخْ شُ َ ُ ُ َ ُ ْ َ ُ ُ َ ُ ْ ف قُ ْ ُ َ ن‬
. ” ‫ون ف ِ ي َأ ْع َراض ِ هِ ْم‬ ‫وم النَّ ِ ي‬ ‫ِ َ ِ ي يْأ‬ َ َ‫َهُؤ َال ِء َيا ِج ْب ِري ُل ق‬
َ ‫اس َو َقَ ُع‬ َ ‫ون ُل ُح‬
َ ُ ‫ال َهُؤ َالء ا ّلذ نَ َ لُك‬
‫ان َع بَق ِ َّي َة َل ْي َس ف ِ ي ِه َأ نَ ٌس‬ ‫ال َأبو داود حد َ اه يحي ى ب ع م‬ َ َ‫ق‬.
ْ‫ُ َ ُ َ َ َّ ث نَ ُ َ ْ َ ْنُ ُ ثْ َ َ ن‬

সি ল ম ম্যাগাজিন 41
হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ‫ ﷺ‬এরশাদ
করেছেন মি’রাজের রাতে আমি এমন এক কওমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম
যাদের নখগুলো তামার তৈরী এবং তা দিয়ে তারা অনবরত তাদের মুখমণ্ডলে ও বুকে
আচড় মারছে। আমি বললাম, হে জিবরীল ! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা সেসব
লোক যারা মানুষের গোশত খেতো অর্থাৎ, মানুষের গীবত করত এবং মানুষের
ইজ্জতের উপর হামলা করত।” এবং তাদের মানসম্মানে আঘাত হানতো। (সুনানে
আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৮৭৮)

তাহলে আমাদের একটু অনুধাবন করা উচিত ভয়াবহ তা বহন করছে এই


গীবত।
চলুন ভাইয়েরা আমরা ভয়াবহতা থেকে ফিরে আসি। আজ থেকে আমরা
ওয়াদা করি আমরা আর গীবত করবো না[2]। আমার আল্লাহ দয়ালু, তিনি
তওবা কবুলকারী, তিনি তওবাকারী ভালোবাসেন। তওবার মাধ্যমে চলুন
আমরা আমাদের হৃদয় এবং মন পরিশুদ্ধ করি।
ফুটনোটঃ

[1]

মহান আল্লাহ বলেছেন,


﴿:‫الظ ِ ِإ ث ٌْم﴾ [الحج رات‬َ ‫الظ ِ ِإ َّن َب ْع َض‬
َ ‫َيا َُّأي َها ا َّل ِذي َآمنُوا اج ِب وا ك ِ يرا ِم‬
ّ‫ّ ن‬ ّ‫ْ تَن ُ َ ث ً َن ّ ن‬ َ‫ن‬
١٢

অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তোমরা বহুবিধ ধারণা হতে দূরে থাক; কারণ কোন কোন
ধারণা পাপ। (সূরা হুজুরাত, ৪৯/১২)

সি ল ম ম্যাগাজিন 42
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ‫ ﷺ‬বলেছেন, ‘‘তোমরা কু -
ধারণা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখ। কারণ কু -ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা।’’
(সহীহুল বুখারী ৫১৪৪, ৬০৬৪, ৬০৬৬, ৬৭২৪, মুসলিম ১৪১৩, ২৫৬৩, তিরমিযী
১৯৮৮, ইবনু মাজাহ ৩২৩৯-৩২৪২, আবূ দাউদ ৩২৮০, ইবনু মাজাহ ১৮৬৭, ২১৭৪,
আহমাদ ৭২৯২, ৭৬৪৩, ৭৬৭০, ৭৭৯৮, ৭৮১৫, ৮২৯৯, ৮৫০৫, ৮৮৬৫, ৮৮৭৬,
মুওয়াত্তা মালিক ১১১১, ১৬৮৪, দারেমী ২১৭৫)

[2]

গীবত থেকে বেচে থাকার উপায়ঃ-


গীবত থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরি। এ থেকে বাঁচার কয়েকটি উপায়
আছে
(১) প্রথম উপায় হচ্ছে অপরের কল্যাণ কামনা করা। কেননা, রাসূল‫ﷺ‬
বলেছেন, ‘দীন হচ্ছে নিছক কল্যাণ কামনা করা।’ [বুখারি ও মুসলিম]

(২) দ্বিতীয়ত, আত্মত্যাগ অর্থাৎ যেকোনো প্রয়োজনে অপর ভাইকে


অগ্রাধিকার দেয়া। যেমন আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন- ‘তারা নিজের
ওপর অন্যদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তারা অনটনের মধ্যে থাকে।’
(সূরা হাশর, ৫৯/৯)

(৩) তৃতীয়ত, অপরের অপরাধকে ক্ষমা করে দেয়া।


(৪) চতুর্থত কুরআন, হাদীস এবং মহৎ ব্যক্তিদের জীবনী বেশি বেশি করে
অধ্যয়ন করে অন্তরে আল্লাহপাকের ভয় সৃষ্টি করা ৷

সি ল ম ম্যাগাজিন 43
এ ক্ষেত্রে জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সর্বাগ্রে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ
হয়েছে- ‫ب َعتِي ٌد‬ ‫اَّل ي ِ ِ ي‬ ِ ِ ‫ي‬
ٌ ‫ َّما َ ْلف ُظ من قَ ْو ٍل ِإ َل َد ْه َرق‬সে যে কথাই উচ্চারন করে, তাই
গ্রহন করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে৷ (সূরা ক্বাফ, ৫০/১৮)

এক হাদীসে রাসূলে কারীম‫ ﷺ‬ইরশাদ করেছেন ‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার
জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’
[বুখারি]

সর্ব শেষ বিষয় হলো নিজে গীবত করবোনা এবং কারো গীবত শুনবো না
সর্বপরি যে ভাইয়ের গীবত করা হয় তার পক্ষ নিয়ে সাধ্যমত তাকে
সহযোগিতা করাও আবশ্যক। সম্ভব হলে ঐ মজলিসেই গীবতের বিরুদ্ধে
প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
নবী করীম‫ ﷺ‬বলেছেন, ‫ـار يَـ ْـو َم‬ ِ ‫ج‬ ِ ‫م ر َّد ع ِعـ ر ِ ِ ي‬
َ ‫ض َأ خ ه َر َّد اللـ ُـه َع ْن َو ْ هِ ـ ه ال َّنـ‬ ْ ‫َ ْن َ َ ْن‬
ِ‫ا ْل ِ يامة‬-
َ َ ‫ق‬
‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের মান-সম্ভ্রমের বিরুদ্ধে কৃ ত হামলাকে প্রতিহত করবে,
ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার থেকে জাহান্নামের আগুনকে প্রতিহত
করবেন’৷

(মুসনাদে আহমাদ হা/২৭৫৮৩; তিরমিযী )

Source:
https://www.ourislam24.com/

সি ল ম ম্যাগাজিন 44
If Freedom Of Speech Had A Face!

- Sheikh Shakil Shahriar

First of all, how much do we know about France? It is the same


country that has the love capital in it, Paris. It is the same
country which has the Eiffel tower in it. But do we know it is
one of the most vicious countries in world history?
Okay, let me tell you. Remember the British East India
Company? It ruled us for 2 centuries. But do you know that the
French colonial empire was much more brutal toward human
beings? In fact, still they are indirectly sucking their colonial
lands. Let me explain.
France shifted their interest in North Africa and the main reason
for its backlash is French colonization. They were so brutal that
they would cut off their heads and these skulls are still
showpieces in the museums of France. They did not even return
the skull when the family members asked their body parts of
their loved ones.
Another great example to understand the fact- have you heard of
Mali? It is the country where the richest man even being on
earth Mansa Musa used to rule sitting on his throne in his capital
Timbuktu. It is one of the most gold producing countries but it
সি ল ম ম্যাগাজিন 45
doesn't have a little in its vault. Whereas France has a huge vault
filled with gold but it is not even a gold producing country. In
the last century, the rising politicians against the French in the
African continent were brutally murdered by France.
Do you know why these histories stay covered? Because the
world does not even consider African people as human. They
are considered apes because they are blacks.
France was one of the countries which sent their troops against
the Muslims in the Crusades. The most people France
slaughtered were none other than the Muslims. Once France
organized a stage drama where the Prophet Sallallahu alaihi wa
sallam was supposed to be insulted. The Ottoman Sultan and the
Caliph of Islam Abdul Hamid Khan called for Jihade akbar
against France. France was so frightened that they were
compelled to cancel it.
But now unfortunately we do not have any Salahuddin al Aiyubi
or Abdul Hamid Khan to fight against those shits. We must
boycott France and French products. Just check out what
happened with Denmark when Muslim world boycott them in
2006. In shaa Allah, France will have to pay their deeds.
Allah subhanahu wa ta'ala said in Surah al Ahzab verse 57:
"Surely those who offend Allah and His Messenger are
condemned by Allah in this world and the Hereafter. And He
has prepared for them a humiliating punishment."

সি ল ম ম্যাগাজিন 46
ছন্দ খচিত সুগন্ধি

সি ল ম ম্যাগাজিন 47
রোমন্থন!

-শেখ শাকিল শাহরিয়ার

"বাবা,একটু বস তো কাছে,
একলা পড়ে রই-
আয়ুষ্কালের শেষ কথাগুলি
তোর সাথেই কই।"
হাসপাতালের বিছানাতে শুয়ে
ছেলেকে ডাকিল পিতা,
উঠতি তরুণ পুত্র তখন
স্কুল পড়িহিতা।
কথাখানি শুনে পুত্র দৌড়ে
ধরিল পিতার হাত,
মুমূর্ষু পিতার কষ্ট বুকে
ভীষণ আর্তনাদ।
পিতা বলিলেন, "আজ আমি তোকে এক কাহিনী বলব,"
জবাবে; "বলো, আজ আমি তোমার সব কথা শুনব।"
"বহুকাল আগে এক তরুণী তাহার

সি ল ম ম্যাগাজিন 48
পথ হারিয়া ফেলে,
পাঠশালা হতে ফিরিবারে কালে
একলা পড়ে যায় ভুলে।
আসমান চাহি দেখিল তাহাতে
আঁধার নামিয়া আসে,
পশ্চিমেতে লাল-তপনের
আবছা বিম্ব ভাসে।
রাত নামিছে, একলা তরুণী
বাহিরে নিরাপদ নয়।
তাড়াতাড়ি তাহার খুজিতে হবে
কোনো এক আশ্রয়।
অজানা এক কল্পনায় সে
কাপিতেছে থরথর,
অদূরেই দেখা পায় আশার আলো
ছোট এক কুড়েঘর।
এগিয়ে তরুণী, কুড়েঘর পানে,
দরজায় নাড়ে কড়া,
ভেতর হতে এক বলিষ্ঠ যুবক
দাঁড়াইল দ্বার খুলিয়া।
যুবক সেথায় একলাই থাকে

সি ল ম ম্যাগাজিন 49
শুনশান পরিবেশ;
বাধ্য হয়েই সে কুঠুরে
আশ্রয় শেষমেশ।
যুবক ঘরের মাঝ বরাবর
ব্যবধায়ক বাঁধায়
ওপারে তরুণী দোয়া পড়ে চলে
নিরাপত্তার প্রার্থনায়।
আতঙ্ক-ত্রাসে নির্ঘুম তরুণী
কাটায় সারারাত,
আড়াল হইতে দেখে যুবক তাহার
পুড়াইতেছে হাত।
অবসান ঘটে বিনিদ্র রজনীর
তরুণীর আশঙ্কায়,
প্রভাত লগণে যুবক তাকে
পৌছে দেয় ঠিকানায়।
তরুণীর পিতা জিজ্ঞাসে তাকে
শুনিয়া রাত্রির বিবরণ,
"কি নিমিত্তে ছিল যুবকের
এমন আচরণ!"
যুবক তখন হাসিমুখে বলে,

সি ল ম ম্যাগাজিন 50
"জাহান্নামের ভয়ে,
শয়তানের ওয়াসওয়াসায় মোর
চরিত্র যেত ক্ষয়ে।
এই আগুনের উত্তাপ যদি
সইতে পারি নাহি-
জাহান্নামের আগুন হতে তবে
বাঁচিতে পারিব চাহি?"
পুত্রের দিকে ফিরিয়া পিতা
বলিলেন,"দুনিয়ায়,
নারীর সম্মানের চেয়ে বড় কোনো
সম্মাননা নাই।
তক্ষক নয়, রক্ষক সাজি
করিস প্রতিরোধ,
যদি বা কভু করিতে হয়
পিশাচ-অসুর বধ।
দুনিয়া ছেড়ে চলে যাব আজ
রাখিয়া কেবল তোকে
আক্ষেপ শুধু থেকে যাবে মোর
পারিনি বাঁচাতে তোর বোনকে।"
সূর্য যখন আসমান হতে মাগরিবে ডুবিয়া যায়

সি ল ম ম্যাগাজিন 51
মৃত্যুর দূত নেমে আসে বুকে স্রষ্টার ইশারায়।
বিয়োগশোকে পাথর পুত্র, পিতার বিধাতার নিমন্ত্রণ
বিষাদস্মৃতির উৎসবে এ এক অদ্ভুত রোমন্থন!

ۖ ‫ور ُك ْم َي ْو َم ٱ ْلق ِ َيـ َٰم ِة‬ َ


َ ‫س َذٓاِئقَ ُة ٱ ْل َم ْو ِت ۗ َوِإ نّ ََما تُ َوفّ ْو َن ُأ ُج‬
ٍ ۢ ْ‫لُك ُّ نَف‬
‫فَ َم ُز ْحز ِ َح َع ِ ٱلنَّا ِر َوُأ ْدخِ َل ٱ ْل َج نَّ َة فَ قَ ْد َف َاز ۗ َو َما ٱ ْل َح َي ٰو ُة‬
‫ن‬ ‫ن‬
‫ٱلدنْ َيٓا ِإ اَّل َمتَـ ُٰع ٱ ْل ُغ ُرو ِر‬
ُّ
প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর ‘অবশ্যই কিয়ামতের দিনে তাদের
প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং
জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে। আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোঁকার
সামগ্রী।

সূরা আ’লে-ইমরান ৩/১৮৫

সি ল ম ম্যাগাজিন 52
সাড়ে তিন হাত জমি

- মো: শাহরিয়ার শান্ত

এই ধরণীতে বাবা কার কাছে তোমার


আদরের সাত রাজার ধনকে রেখে
চলে গেলে সাড়ে তিনহাত জমির মাঝে?
বাবা তোমার হাতেই হাতে খড়ি
আমার প্রথম পড়ালেখা
বিশ্বটাকে প্রথম আমার বাবার
চোখেই দেখা।
তোমার কি বাবা মনে আছে
তুমি লুঙ্গিটা উল্টা ভাঁজে, কোমরে গেড়ো দিয়ে
আগে আগে হাঁটতে, আমি পিছনে পিছনে।
তুমিতো বাবা নাবিক মোর জীবন তরীর
তুমি সাহস, তুমি প্রেরণা, তুমি বন্ধু শত আঘাতে।
তোমার শাসন,তোমার বারণ,তোমার ভালোবাসা
পাইনা খুঁজে হাতরে বেড়াই মনের হতাশায়।
বুঝিনি তো আমি
তুমি এমন করে দিবে ফাঁকি!!
আজ তুমি নেই তবুও আছো এই গহীন মনে
তোমার কথা মনে করে অশ্রু চোখের কোণে।
ও বাবা আজ যে মানতে পারছি না বিধির বিধান
কেন সৃষ্টি করে কেনই বা কেড়ে নিল তোমার প্রাণ
সি ল ম ম্যাগাজিন 53
আজ অবেলায় ছুটে যাই তোমার সেই
সাড়ে তিন হাত জমির কাছে
দুহাত তুলে বিধির কাছে চাইছি ক্ষমা
ও বিধি আমার বাবাকে করো ক্ষমা
রাখি ও আমার বাবাকে আদরের সাত রাজার ধন করে।

সে-ই মুসলিম, যার জিহবা ও হাত হতে সকল মুসলিম নিরাপদ


সহীহ বুখারি, ১০

সি ল ম ম্যাগাজিন 54
দ্বীনী মৃত্যু

- মোঃ আব্দল্ল
ু াহ আল নোমান

একদিন তো মরেই যাবো


রাখবে কি কেউ মনে?
কত কিছু ছিলো আমার
কত্ত পেয়েছি জীবনে।

সবাই হয়তো যাবে ভুলে


ছিলো যারা প্রাণ ভ্রমর,
দ্বীনি এলেম করবে আমায়
মরে গিয়েও সদা অমর।

মৃত্যু এক নির্মম সত্য


জানি সবাই এটা।
পরকালের কথা না ভেবে
তবুও চাই যে এটা-সেটা।

শান্তির ধর্ম ইসলাম আমায়


করবে যে পরিপূর্ণ।
যদি হারায় ইমান কারও,
তার কর যে শূন্য।

কত নিয়ামত দিয়েছেন রব
সি ল ম ম্যাগাজিন 55
কত সুন্দর যে দেহ।
এত কিছু পাওয়ার পরও
যায় না তোমার মোহ।

মহা গ্রন্থ কোরআনে পেয়েছি


পূর্ণাঙ্গ জীবন নীতি।
শরীয়ত কে ভালো না বেসে
অর্থকে করো প্রীতি।

যাবে কি তবে, মৃত্যুর পর


অর্থ তোমার সনে?
দ্বীনকে বাদ দিয়ে তুমি
ব্যস্ত পাপ অর্জনে।

ধন্য তোমার জীবন হবে


দ্বীনী মৃত্যু পেলে।
না হলে তুমি পতিত হবে
দোযখের কঠিন জেলে!

সি ল ম ম্যাগাজিন 56
জাগরণ

- তাহজির তানসীম

মুষ্টিমেয় লোকের হাতে আজ অনেক ক্ষমতা


আকাশেও যেন কম্পন দেয় তাদের দাম্ভিকতা।
একুশ শতকে বর্বরতার অন্যতম অধ্যায়
যেন রচিত হচ্ছে বসনিয়ায়।

আরও আছে উইঘুরের করুণ কান্নার স্বর


ফিলিস্তিন যেন আড্ডাখানা পিশাচদের পাশবিকতার।
যে বন্ধন ছিলো আল্লাহ-রাসুলের জন্য
তা-ই যেন আজ তামাশায় পরিপূর্ণ।

মোদের ভীরুতা আজ করেছে মোদের বেষ্টন


খুবই দরকার আজ উসমান উমরের গর্জন।
যুগের সাথে গা ভাসিয়ে হয়েছি মডারেট
তাই যেন অপশক্তি সাহস পাচ্ছেও খুব বেশ!

উত্তরণের জন্য তাই কুরআন ধরতে হবে,


গেলাম না হয় চৌদ্দশত বছর আগের ইতিহাসে!
সি ল ম ম্যাগাজিন 57
সংশয় যদি থাকে রে ভাই রাসুল‫ ﷺ‬এর আদর্শে
একবার তো পৃথিবীকে প্রশ্ন করো
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ কে?

আর নয় চুপ, গর্জে ওঠো হে মুসলিম জাতি


ফেলে দাও এই মর্ডানিজম এবং
হও কুরআনের সাথী!
যুক্তি তুমি আঁকড়ে ধরো, চেষ্টা করো বোঝার
এভাবেই আসবে জয় মুসলিম জাতির আবার
বিজয় সুনিশ্চিত ইন শা আল্লাহ!

সি ল ম ম্যাগাজিন 58
হে বিদ্বেষীগণ

- সৈয়দ শামস ইশতিয়াক নিয়াজ

বাকস্বাধীনতার আড়ালে
লিবারেলিজমের ডালে ডালে
বাসা বেধেছে বেশ
ইসলামবিদ্বেষ।

নবিকে করেছো অপমান


মুমিনের বুক খান খান
এরই নাকি নাম আবার
কথা বলার অধিকার।

আঁকিয়ে ব্যাঙ্গ কার্টুন


হৃদয়ে লাগিয়ে আগুন
ভাবিলে করেছো হত্যা
মুমিনের সত্ত্বা।

বড্ড ভুল ধারনা

সি ল ম ম্যাগাজিন 59
ইসলাম কভু হারে না
আসুক শার্লি হেবদো শত
মাথা করবো না নত।

হে ফ্রান্স, হে ম্যাক্রোন
এবার কান খুলে শোন
তোদের এই আগ্রাসন
চলবে না আজীবন।

ভদ্রতার আড়ালে
নীতিবাক্যের তালে তালে
কত মানুষ করেছো হত্যা
জানবে একদিন বিশ্বজনতা।

পরিশেষে একটি কথা


শুনে রাখো হে জনতা
ইসলাম বিজয়ী ও সবার সেরা
তুমি সহ, বা তোমাকে ছাড়া।

সি ল ম ম্যাগাজিন 60
‫ٱلد ْن َيا ۖ َواَل‬ ِ
ُّ ‫اس ِإ َّن َو ْع َد ٱل ّلَه َح ٌّ ۭق ۖ َف اَل تَ ُغ َّر َّن ُك ُم ٱ ْل َح َي ٰو ُة‬ ‫يٓ ي‬
ُ ‫َـَٰأ ُّ َها ٱل َّن‬
ِ ‫ب‬ ‫ي‬
ُ ‫َ ُغ َّر َّن ُكم ِٱ ل ّلَه ٱ ْلغَ ُر‬
‫ور‬
হে মানুষ! নিশ্চয় আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; কাজেই দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে
কিছু তেই প্রতারিত না করে এবং সে প্রবঞ্চক (শয়তান) যেন কিছু তেই তোমাদেরকে
আল্লাহর ব্যাপারে প্রবঞ্চিত না করে।

সূরা ফাতির ৩৫/৫

সমাপ্ত

সি ল ম ম্যাগাজিন 61

You might also like