Professional Documents
Culture Documents
বাবরী মসজিদ মামলায় রায় দেওয়া অবসরপ্রাপ্ত সিবিআই বিচারপতি সুরেন্দ্র কু মার যাদবকে সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের উপ-
লোকাযুক্ত নিযুক্ত করা হয়েছে। গত ৬ই এপ্রিল ঐ রাজ্যের রাজ্যপাল আনন্দিবাঈ পটেল তাঁকে এই পদে নিযুক্ত করেছেন।নিয়ম
অনুযায়ী শ্রী যাদব ছয় বছর এই পদে বহাল থাকবেন ও উপ-লোকাযুক্ত হিসাবে সরকারী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অপশাসন ও দুর্নীতির
তদন্ত করতে পারবেন।
উল্লেখ্য গত ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে লক্ষ্ণৌয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতে বাবরী মসজিদ ধ্বংস সংক্রান্ত মামলার
অন্তিম রায় দেন এই বিচারপতিই। এই রায় দেওয়ার জন্য তাঁর অবসরের মেয়াদ বাড়িয়েছিল খোদ সুপ্রিম কোর্ট । ১৯৯২ সালের ৬ই
ডিসেম্বর বাবরী ধ্বংসে অভিযুক্ত হিসাবে নাম ছিল লালকৃ ষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশী, উমা ভারতী, কল্যাণ সিং সহ
সঙ্ঘপরিবারের বহু গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের। যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ঘটনাটির সমস্ত অডিও ও ভিডিও ক্লিপকে বিশ্বাসযোগ্য নয়
বলে বাতিল করে দেন সুরেন্দ্র। ২০০০ পাতার রায়ে তিনি বলেন যে বাবরী ধ্বংসের কোনও পূর্বপরিকল্পনা ছিল না এবং তার পিছনে
কোনও ষড়যন্ত্রও ছিল না। শুধু তাই নয়, এই বিচারপতি এ-ও রায় দেন যে উপরোক্ত অভিযুক্তরা নাকি আসলে মসজিদ ধ্বংসকামী
উন্মত্ত জনগণকে থামানোর চেষ্টা করেছিল! অতএব ৩২ জন অভিযুক্তকেই বেকসুর খালাস করেন তিনি। আরএসএসকে এহেন
উপকারের সুবাদে এবার এই মানুষটি উপলোকাযুক্ত পদ লাভ করলেন। ফলে একদিকে উগ্রহিন্দুত্ববাদী যোগীর মুখ্যমন্ত্রীত্ব ও
আরেকদিকে সঙ্ঘপরিবারের বিশ্বাসভাজন এই উপলোকাযুক্ত— দুইয়ে মিলে সাধারণ মানুষ যে ন্যায় পাবেন না, সেকথা বলার
অপেক্ষা রাখে না।
এই ঘটনা থেকে দু’-তিনটে জিনিস পরিষ্কার হয়। প্রথমতঃ এতদিন যেভাবে বিচারবিভাগকে তু লনায় স্বকীয় বলে ভাবা হত, সেই
জায়গাটা বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে র বোবড়ে থেকে শুরু করে বিভিন্ন
হাইকোর্টে র বিচারপতিরা কোনরকম রাখঢাক না করেই বিজেপি তথা সঙ্ঘের পক্ষ নিচ্ছেন। রায়ও দিচ্ছেন সেই অনুসারে। দুই, এভাবে
দিনের আলোয় মসজিদ ভেঙে নেতারা ছাড় পেয়ে যাওয়ায় সঙ্ঘপরিবারের সদস্যরা আরও উদ্বুদ্ধ হবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর
আক্রমণ নামিয়ে আনতে। ফলে এই ধরনের আক্রমণ আরও বাড়বে। তিন, প্রশাসনে একের পর এক উচ্চপদে হিন্দুত্ববাদীদের বসানো
হচ্ছে। বিজেপি সরাসরি রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে সরে গেলেও এরা নিজেদের মেয়াদকালে আরএসএসের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে ভিতর
থেকে সাহায্য করবে। সাধারণভাবেই প্রশাসন হয়ে উঠবে আরও হিন্দুত্ববাদী।
যে ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের গুণগান বিজেপি বাংলায় প্রচার করছে, এই হল তার বাস্তব স্বরূপ। প্রতিটা পদই সেখানে সঙ্ঘের দখলে,
বিরুদ্ধ মতামতের কোনও জায়গা নেই! তাই ন্যুনতম গণতান্ত্রিক পরিসরটু কু কেও বাঁচিয়ে রাখতে হলে বাংলায় সংঘপরিবারকে
আটকাতেই হবে। নাহলে উত্তরপ্রদেশের মতো এই ঘটনা অচিরেই বাংলাতেও শুরু হবে।