You are on page 1of 15

1

“সমাজ হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করল সাময়িক বর্বরতার রাজ্যে; মনে হয় যেন দুর্ভি ক্ষ
লেগেছে, বিশ্বজনীন বিধ্বংসী যুদ্ধ, জীবিকার সমস্ত সরবরাহের মাধ্যম ছিন্ন; শিল্প ও
বানিজ্য সর্বতোভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত; এবং কেন? কারণ হলো মাত্রাতিরিক্ত সভ্যতার
বিকাশ, জীবিকার জন্য বহুবিধ উপকরণ, বড় বেশী শিল্প, অধিক পরিমাণে বানিজ্য।
সমাজের আওতায় থাকা উৎপাদক শক্তি আর বুর্জোয়া সম্পত্তির শর্ত গুলি সমাজের
বিকাশ ঘটাতে অপারগ হয়ে পড়ে; বিপরীতে তা (উৎপাদন শক্তি) যে শর্তাবলীর শৃঙ্খলে
সে বাঁধা পড়েছে, সেই শর্তাবলীর চেয়ে বেশী ক্ষমতাশালী হওয়ায় শিকল ছিঁ ড়ে ফেলতে
সফল হয়, সমগ্র বুর্জোয়া সমাজে ডেকে আনে অরাজকতা, বুর্জোয়া সম্পত্তির বিপদ
ডেকে আনে। বুর্জোয়া সমাজের শর্তাবলী এতো সংকীর্ন যে তাদের সৃষ্ট সম্পদ ধরে
রাখতে পারে না। তাহলে কি ভাবে বুর্জোয়ারা এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে
পারবে?” [কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো প্রথম অধ্যায়]

নয়া উদারীকরণের ব্যর্থতার ফলে আজকের বিশ্ব এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে।
স্বভাবতই ভারত তার বাইরে নয়। যেখানে বিতর্ক শুরু হয়েছে বিশ্ব বানিজ্য সংস্থাতে যে
এটাকে আর বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজন আছে কিনা, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের
পুঁজিবাদী অর্থনীতিবিদদের মধ্যে দোলাচল শুরু হয়েছে সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের বিকল্প
অর্থনীতি গ্রহণ করা হবে কিনা ! উগ্র সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদের পতন ঘটেছে ইউ
এস এ তে। আজকের ভারত কি এমনটা ভাবতে পারছে? নাকি বাতিল হওয়া
উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ ও বিশ্বায়নের পুঁজিবাদী পথে বিশেষ এক শ্রেণীর ধান্দার
পুঁজিবাদকেই প্রশ্রয় দিতে উগ্র সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদের পথে চলছে?

এই প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনকে ভেবে দেখতে হবে। এই নির্বাচন


গুরুত্বপূর্ণ এই জন্য যে (এক) এই রাজ্য
এক শতকের বামপন্থী আন্দোলনের পীঠভূ মি (দুই) একটি বুর্জোয়া রাস্ট্র
কাঠামোর মধ্যে থেকে সমাজতান্ত্রিক কার্যধারা সফল করতে যে যে পদক্ষেপ নেয়া
হয়েছিল তার প্রতিটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হাসিল করা হয়েছিল।.১৯৬৭ থেকে ১৯৭১
তিনবার প্রাদেশিক শাসন ক্ষমতা জয় করে ও হারিয়ে ফের ১৯৭৭ থেকে পশ্চিমবঙ্গে টানা
চৌত্রিশ বছর টানা বামপন্থী সরকার কায়েম ছিল যা বিগত দশ বছর ধরে রাজনৈতিক ও
সাংগঠনিক ভাবে হারিয়ে বসে আছে। (তিন) বামপন্থীদের সমাজতন্ত্রের তত্ত্বটাই
দাঁড়িয়ে আছে শ্রমজীবী মানুষের শ্রেণী সংগ্রামের ওপর। এই সংগ্রামের মূল উপাদান
শিল্প ও কৃ ষি, শ্রম, উৎপাদন, মজুরী ও সম্পত্তি জনিত সম্পর্ক । সেখানে পশ্চিম বঙ্গে

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার প্রাসঙ্গিকতা


বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
2

সংগঠিত শ্রমিকের সংখ্যা হ্রাসমান অসংগঠিত শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। শিল্প নেই কৃ ষি
তলানিতে।

বাজার অর্থনীতি পেট্রল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এখন কৃ ষি পণ্য নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আইন বলবৎ
করেছে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার। দেশের রাজধানীর সীমান্তে মাসাধিক কাল ধরে কৃ ষক
আন্দোলন চলছে। পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন প্রদেশে শিক্ষক ছাত্র যুব মহিলারা কাজের
দাবিতে আন্দোলন করছে। মহামারীর ভীতি অব্যাহত। চাকরি পাওয়া তো দূরের কথা
চাকরি চলে যাচ্ছে, বেতন কমে যাচ্ছে, দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, দক্ষিণপন্থী ক্ষমতাশালী
রাজনৈতিক দলের মধ্যে দুর্নীতি ও দলবদলের প্রতিযোগিতা চলছে। দুর্নীতি জিইয়ে রেখে
সামাজিক জাতি ধর্ম ও শ্রেণীর মেরুকরণ চলছে। জীবন সংগ্রামের সারার্থ দাঁড় করানো
হয়েছে দুর্নীতি করলেই ভালো ভাবে বেচে থাকা যায়। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষকে
কাজ নয় ডোল (অনুদান) দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রনীতি।

তাহলে ভোটের গণনায় শূন্যে নেমে যাওয়া, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে ঘরছাড়া, জীবিকা ও জীবন
বাঁচানোর তাগিদে কোনক্রমে ভীত হয়ে থাকা বামপন্থী শ্রমিক কৃ ষকদের কি ভাবে
আবারও একটি মঞ্চে এনে জীবন জীবিকা ও রাজনৈতিক সংগ্রামের পথে টেনে আনা
যায় ? এ লড়াই লড়বে কে ? শাসক দল বিরোধী যে কোন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি গোষ্ঠী দল
ও কৌম। শাসক দলের নীতি সাধারন মানুষের জীবন জীবিকার পরিপন্থী কি না সেটা
বিচার করে এগোতে গেলে ভারতের শাসক বিজেপি ও পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃ নমূল এই
দুই ক্ষমতাশালী শক্তির বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ লড়াই প্র্য়োজন আছে কি নেই?

যদি না থাকে তো যেমন চলছে চলুক এমন কথা তো মার্ক্সবাদিরা বলতে পারে না। তা
হলে একটাই বিকল্প রাস্তা- বিকল্প অর্থনীতি বিকল্প সমাজনীতি বিকল্প বাম গণতান্ত্রিক
ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির জোট। এই জোট যদি নির্বাচনে জয়ী হতে পারতো ভারতের অন্যান্য
প্রদেশের শ্রমিক কৃ ষক ছাত্র যুবদের কাছে সমাজতান্ত্রিক বিচারধারাকে ভারতের রাস্ট্র
পরিচালনার বিকল্প যা কোভিড পর্যায়ে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি দেখিয়েছিল তার ভিত্তি
রচনা করতো।

না, এই ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষার জোট ‘সংযুক্ত মোর্চা’ নির্বাচনে জয়ী হতে পারেনি।

বিশ্ব জুড়ে যখন একটিই প্রশ্ন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে- ২০০৮ এর মন্দা ও কোভিডের ক্ষতি
থেকে নিজেকে মুক্ত করে পুঁজিবাদী অর্থনীতি কি আবার আগের অবস্থানে ফিরে
আসতে পারবে?

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার প্রাসঙ্গিকতা


বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
3

তখন পশ্চিম বঙ্গে প্রশ্ন উড়ে বেড়াচ্ছে –

বামপন্থীরা কি আবার কোনদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?

পশ্চিম বঙ্গে বামেদের ভবিষ্যৎ কি?

তাদের তো এখন বিধি বাম। ২০২১ সালের বিধান সভা নির্বাচনে জনসমর্থন ভোটের
অংকে ৪.৭০ শতাংশ সংখ্যায় কম বেশি ৬০ লক্ষ । যে রাজনৈতিক দল প্রধান বিরোধী
নির্বাচিত হয়েছে তাদের জনসমর্থন ভোটের অংকে ৩৮.১০ শতাংশ সংখ্যায় ২ কোটি
২৮ লক্ষ। যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা ভোটের অংকে ৪৭.৯০ শতাংশ সংখ্যায় ২কোটি
৮০ লক্ষ। সবচেয়ে আশ্চর্যের যিনি ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী তিনি পরাজিত হয়েছেন।

প্রশ্ন চারটি- (১) ভারতীয়


জনতা পার্টি র উত্থান হচ্ছে কোন প্রেক্ষিতে? (২) তৃ নমূল
দলের বিশাল জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও তৃ নমূল নেত্রীর পরাজিত হলেন কেন?
(৩) তিরিশ বছর বিরোধী আসনে বসে চৌত্রিশ বছর ক্ষমতাসীন থেকে পরবর্তীতে মাত্র
দশ বছর বিরোধী আসনে আসীন হয়ে একটি বামপন্থী জোটের এতবড় বিপর্যয় হল কি
করে? (৪) এরপরেও কি আশা
করা যায় ৭৪ বছর ধরে মানুষের ব্যাপক সমর্থন পাওয়া বামপন্থীরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে
পারবে ?

প্রথম দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সম্ভবত প্রচার মাধ্যমের কার্যক্রমে অপ্রাসঙ্গিক। তাই এনিয়ে
কারও উচ্চবাচ্য নেই। অথচ ওই দুটি প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই লূকিয়ে আছে তৃ তীয় প্রশ্নের
উত্তর। তৃ তীয় প্রশ্নটি চতু র্থ প্রশ্নের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। অথচ চতু র্থ প্রশ্ন
আলোচনার দাবি রাখে। প্রসঙ্গটির পর্যালোচনা ও বিতর্ক শুধু দক্ষিণপন্থী শিবিরে নয়
আন্তর্জাতিক বাম শিবিরেও আলোড়ন এনেছে। কিন্তু কেন?

বামপন্থী দলের নেতৃ ত্বে আছে কমিউনিস্ট পার্টি সিপিআই ও সিপিআইএম। জাতীয় দল
হিসেবে বিজেপি ও কংগ্রেসের পরেই স্থান সিপিআইএমের। তারা পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা,
রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ, ওড়িশা, মহারাস্ট্র ও জম্মু-কাশ্মীরের বিধান সভায় আসীন
ছিল যার মধ্যে এই প্রথম তারা তাদের পীঠভূ মি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা থেকে উৎখাত
হয়ে গেলো। আরও একটি কমিউনিস্ট পার্টি সিপিআইএমএল ( লিবারেশন) বিহারে
শক্তিশালী তারাও সর্ব ভারতীয় প্রেক্ষিতে বাকি দুই কমিউনিস্ট পার্টি র সঙ্গে জোটে

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার প্রাসঙ্গিকতা


বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
4

আছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের সঙ্গে নেই। এই ধরণের প্রদেশে না থাকা কেন্দ্রীয়ভাবে
থাকার নীতিকে যুক্ত রাস্ট্রীয় কাঠমোতে সংসদীয় রাজনীতির বাধ্যকতার আঙ্গিকে বিচার
করা বাঞ্ছনীয়।

এই প্রশ্ন ১৯৭২ সালেও উঠেছিল। ১৯৭২ এর বিধান সভা নির্বাচন ব্যাপক রিগিং করে
সকাল দশটার মধ্যে সমাধা করে দিয়েছিল জাতীয় কংগ্রেস । সেখানেও বামপন্থীদের
বিভাজন ছিল। সিপিআই ছিল কংগ্রেসের সঙ্গে। বাস্তবে ছয় বামদল জোট বেঁধে লড়ে
রক্তাক্ত হয়ে সিপিআইএম এককভাবে ১২টি আসন পেয়েছিল এবং বিধানসভায় অংশ
গ্রহণ করেনি। পশ্চিম বঙ্গে সিপিআইএমের নাম নিশান মুছে গিয়েছিল। তখনও বাজারি
সংবাদ পত্র প্রশ্ন তু লেছিল আগামী ৫০ বছরে সিপিআইএমের বামপন্থা পশ্চিমবঙ্গে মাথা
তু লে দাঁড়াতে পারবে কি?

এই প্রশ্ন ১৯৪৬ সালেও উঠেছিল। বঙ্গীয় আইনসভার নির্বাচনে যে তিনজন সিপিআই


প্রার্থী জিতে আসেন, তারা হলেন জ্যোতি বসু, রতনলাল ব্রাহ্মণ, রূপচাঁদ রায়,। ভোটের
হার ২.৫ শতাংশর কাছে। তখনও প্রশ্ন উঠেছিল বামপন্থী ফ্রন্টের আন্দোলন তীব্র ছিল
জনপ্রিয়তার ব্যাপ্তি ছিল তবু কেন নির্বাচনে তার প্রতিফলন ঘটে নি। তখনও সংবাদ
মাধ্যম শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনের একমাত্র প্রতিনিধি বামপন্থী জোটের পক্ষে ছিল
না।

এই প্রশ্ন ১৯৪২ সালেও উঠেছিল। কমিউনিস্ট পার্টি , এআইটিউসি ও এআইকেএস


পরিচালিত শ্রমিক কৃ ষক আন্দোলনে সন্ত্রস্ত হয়ে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৪ সালে
কমিউনিস্ট পার্টি কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কমিউনিস্ট পার্টি র নেতাদের কারাগারে বন্দী
করে রাখা হয়। ক্রিপস দৌত্য ব্যর্থ করে মহাত্মা গান্ধী ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক
দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারের ( মিত্র শক্তি)
প্রত্যাখ্যান করে সুভাষ বোসের তথা জাপানের( অক্ষ শক্তি) আহবান প্রত্যাখ্যান করে।

সোভিয়েত রাশিয়া অক্ষ শক্তির বি্রুদ্ধে মিত্র শক্তির যুদ্ধকে বিশ্বব্যাপী “জনযুদ্ধ” ঘোষনা
করে। কমিনটার্নের পক্ষ থেকে জিবিসিপির সম্পাদক চিঠি পাঠান জেলবন্দী কমিউনিস্ট
নেতাদের। শর্ত ছিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ‘জনযুদ্ধ’ সমর্থন করে ব্রিটিশ
সরকারকে সমর্থন জানাবে এবং প্রকাশ্যে পার্টি করার সুযোগ পাবে। সেই অনুযায়ী
কমিউনিস্ট পার্টি র ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তু লে নেয় বৃটিশ সরকার। এআইটিউসি
শ্রমিক আন্দোলন ও এআইকেএস কৃ ষক আন্দোলন স্থগিত রাখে। ভারত ছাড়ো

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার প্রাসঙ্গিকতা


বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
5

আন্দোলনের সাংগঠনিক দুর্বলতাকে তু লে ধরায় জাপান বিরোধিতাকে কাজে লাগিয়ে


কমিউনিস্ট পার্টি কে জন বিচ্ছিন্ন করার জন্য কমিউনিস্ট পার্টি কে ব্রিটিশের দালাল নামে
চিহ্নিত করে। জেলের বাইরে বেরিয়ে বিপ্লবী ক্রিয়া কলাপ করার অভিযোগে বৃটিশ
সরকার নেতাদের আবার জেলে পোরে। তখনও ভাবা হয়েছিল কমিউনিস্টরা শেষ
বামপন্থাও শেষ।

বামপন্থার মৃত্যু হয় না প্রয়োগের পদ্ধতি বদল হয়। বামপন্থা হল শ্রমজীবী মানুষের বাঁচার
একমাত্র অবলম্বন। কার্ল মার্ক্স জন্মাবার আগে থেকেই। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মের
নাম শ্রমণ। উৎপাদন ও শ্রমকে কেন্দ্র করে এক বস্তুবাদী দর্শন- লোকায়ত বা চার্বাক।
বৈদিক ধর্মের আগ্রাসনে যার পুঁথি বিলুপ্ত হয়ে যায় কিন্তু তা পণ্ডিত সমাজে চর্চি ত হতে
থাকে।

কার্ল মার্ক্স নিজেই বলেছেন -আমি আর নতু ন কি বলেছি সবটাই তো আমার আগের
ঐতিহাসিকরা বলে গেছেন আমি শুধু তিনটি বিষয় আলাদা করে জুড়ে দিয়েছি। [ সুত্রঃ
৫ মার্চ ১৮৫২ নিউইয়রকে জে ওয়েডিমেয়ারকে লেখা চিঠির প্রথম প্যারাগ্রাফ]

একথা মনে রাখা দরকার কেরল, পশ্চিম বঙ্গ ও ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট সরকার দীর্ঘকাল
শাসন ক্ষমতায় থাকার ফলে তার বিরোধী পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে এমনটা ধরে নেওয়া
সঠিক নয়। বিকল্পের সন্ধান দিতে গিয়ে বামপন্থীরা বারংবার কায়েমি স্বার্থের রোষের মুখে
পড়েছে সব দেশে সব সর্ব কালে। সংঘাতটা শ্রেণী সংগ্রামের। শ্রমজীবী মানুষের রুটি
রুজির স্বার্থে যারাই এগিয়ে এসেছেন কমিউনিস্ট পার্টি তাদের মঞ্চে জায়গা দিয়েছে। এ
আইটি ইউ সির প্রথম প্রেসিডেন্ট লালা লাজপৎ রায় এবং এ আই কে এসের প্রথম
প্রেসিডেন্ট স্বামী সহজানন্দ। এখনও বহু সামাজিক প্রগতিশীল যুদ্ধ বিরোধী মুক্ত চিন্তার
সংগঠন বামপন্থীরা পরিচালনা করে যেখানে অ-বাম ব্যক্তি বা সংস্থা যুক্ত। জনসাধারণের
সংহতি মঞ্চে কোন দলীয় রাজনীতির ব্যবহার তারা করে না। কাজেই উগ্র
জাতীয়তাবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির মোকাবিলায় কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান সেকু লার ফ্রন্টের
সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা বামফ্রন্টের কাছে কোন নতু ন বিষয় ছিল না।

কোভিড মোকাবিলায় ও আম্ফান ঘূর্ণি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ কার্যে বামপন্থী কর্মীদের
ভূ মিকা সরকারি ব্যবস্থা ও শাসক দল দুটির প্রচেষ্টার থেকে অনেক এগিয়ে ছিল।
রাজ্যের শাসক দল ত্রাণ সামগ্রী ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহারে রত ছিল। এতদ সত্ত্বেও

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার প্রাসঙ্গিকতা


বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
6

জনগণ ভোটে জেতালো না। ১৯৪৬ সাল থেকে শুরু করে এই প্রথম বাংলার বিধান
সভা বামপন্থী প্রতিনিধি শূণ্য। কাজেই পর্যালোচনার অবকাশ আছে।

করোনা নোবেল ভাইরাস সংক্রমণের জের

“এটাই উল্লেখ করা যথেষ্ঠ যে বানিজ্যের সংকট পর্যায়ক্রমে ফিরে এসে বুর্জোয়া
সমাজের অস্তিত্বটাকে পরীক্ষার মধ্যে ফেলে, প্রতিবার তা আগেরবারের চেয়েও বেশী
ভয়াবহ হয়। এই সংকটের সময়, চালু উৎপাদিত পণ্যের এক বৃহৎ অংশ ছাড়াও পূর্বের
উৎপাদক শক্তির উৎপাদিত পণ্য , পর্যায়ক্রমে ধ্বংস হয়ে যায়। এই সংকট কালে এক
মহামারীর প্রাদুর্ভাব হয়, যা পূর্বেকার সময়কালে কিম্ভু ত বলে মনে হতো, এই মহামারী
অতি উৎপাদনের অসুখ”। [ কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো প্রথম অধ্যায়]

বিশ্বায়নের প্রবক্তাদের কেউ কেউ মনে করছেন – ‘করোনা ভাইরাস সমাজ জীবনকে
ধ্বংস করেনি, একটি ধ্বংসোন্মুখ ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদী সমাজ একটি প্রবল ইনফ্লু য়েঞ্জা
ভাইরাসের মোকাবিলা করছে মাত্র’। একটি
মার্কি ন গবেষণাপত্র ২০০৭ সালে এক ইনফ্লু য়েঞ্জা মহামারীর ভবিষ্যৎবানী করে। পরে

২০১৭ সালে তা পরিমার্জি ত হয় এবং নন ফারমাসিউটিক্যাল ইন্টারভেনশনকে (NPI)


নিরাময়ের একমাত্র উপায় বলে স্বীকৃ তি দেয় তারা।

২০১৭ থেকে ২০১৯ আমেরিকার সরকার কোন প্রস্তুতি নেয়নি। চীনের সিডিসি ৩১ শে
ডিসেম্বর ২০১৯ আমেরিকার সিডিসি কে বিপদের সম্ভাবনার কথা জানায়। এর কিছুদিন
পরে চীনের CDC প্রধান জর্জ জাও আমেরিকার সিডিসি প্রধান রবার্ট রেডফিল্ডের
থেকে বিপদের ভয়াবহতার বার্তা পেয়ে ফোন করা অবস্থায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
আমেরিকা নিশ্চিত ছিল যে এই করোনা ইনফ্লু য়েঞ্জা ভাইরাস আমেরিকার কোন ক্ষতি
করবে না তাই তারা চীন নিয়ে উপহাস ও নিয়মমাফিক রুটিনে ব্যস্ত ছিল। সিডিসির
২০০৭ এর গবেষণাপত্র প্রকাশের পর থেকে অনেক দেশেই পুঁজিবাদের পতনের
সম্ভাবনার গবেষণা শুরু হয়ে যায়। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি তাদের মতাদর্শ অনুসারে
খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসার ওপরে কাজ আগে করেছে পরে নিউক্লিয়ার
যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে কাজ করেছে। ফলে নোবেল করোনা ভাইরাসের প্রচণ্ড সংক্রমণের মুখে
দাঁড়িয়ে চীন, কিউবা, ভিয়েতনাম প্রাথমিক ধাক্কা কাটাতে সমর্থ হয় এবং চীনের পথেই
প্রায় সব সমাজতান্ত্রিক রাস্ট্র জানুয়ারি ২০২০ থেকে প্রতিরোধে নামে। একই সময়ে
ভারতের একটি রাজ্য কেরল প্রথমকোভিড সংক্রমণ প্রতিরোধে নেমেছিল। করোনা

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার প্রাসঙ্গিকতা


বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
7

ভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে চীনে ২০১৯ ডিসেম্বরের ৩০শে। জানুয়ারির মধ্য
ভাগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্যান্ডেমিক কন্টাজিয়ন ঘোষণা করে।

যে সত্য উন্মোচন হয়নি, কোনদিন হবে কিনা সন্দেহ আছে তা হল ২০১৭ সালে নভেল
করোনা ভাইরাসের নাম মার্কি ন জীবানু বিজ্ঞানীরা “ হুয়ান ভাইরাস” রেখেছিল কেন আর
২০১৯ এর ডিসেম্বরে চীনের হুয়ানে কেন এই ভাইরাস সংক্রমিত হল? এর উত্তর
আমেরিকা ও চীনের সিডিসি দিতে পারবে। আমেরিকার পরে চীন এখন তৃ তীয়
বৃহত্তম ক্ষমতাশালী রাস্ট্র। চীন রাশিয়া আমেরিকা মিলে বিশ্বের বৃহৎ সিদ্ধান্তগুলি গ্রহণ
করে। সাথে অবশ্য ইংলন্ড ও ফ্রান্স ও থাকে। এদেরকে পাওয়ার ফাইভ বলা হয়।

২০২০ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ( ILO ) ডাইরেক্টর জানিয়েছেন শ্রম বানিজ্যে
বিশাল মন্দা নেমে এসেছে। ৬.৭ শতাংশ শ্রম দিবস কমে যাবে এই বছরের মাঝামাঝি।
এর অর্থ হলো সংগঠিত ক্ষেত্রে ১৯৫ মিলিয়ন উচ্চ বেতনের চাকু রীর অবসান এবং
অসংগঠিত ক্ষেত্রের ২ বিলিয়ন শ্রমিকের কর্মচ্যুতি। ভারতে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন শ্রমিক
দারিদ্র্য সীমার নীচে চলে যাবেন। ইতোমধ্যে বৃহৎ পুঁজিপতিদের ব্যবসা ক্ষেত্রে চাকু রিচ্ছেদ
ছাড়াও ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন হ্রাস করা হয়েছে। বিশ্ব বানিজ্য সংস্থা (WTO) বলছে
সর্বাধিক আর্থিক মন্দার পরিমাণ ৩৫ শতাংশের কাছে।

অনেক দেরিতে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলি ( কেরল ব্যতীত) কোভিড


প্রতিরোধে নামে। ততক্ষণে প্রবাসী শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে রাস্তায় নেমেছে। কয়েক কোটি
প্রবাসী শ্রমিকের তাদের রাজ্যে ফিরে যাওয়ার কোন সংস্থান কোন সরকার করেনি। তারা
হাজার হাজার কিলোমিটার রাস্তা সপরিবারে হেঁটে বাড়ি ফিরেছে। অনেক পরে সরকার
কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিল। এদের ‘পরিযায়ী শ্রমিক’ আখ্যা দিয়ে এদের সঙ্গে নরাধমের মতন
আচরণ করা হয়েছে। এদের বিপদের সময়ে খাদ্য আশ্রয় ও অর্থ সাহায্য নিয়ে পাশে
দাঁড়িয়েছিল বিভিন্ন প্রদেশের বামফ্রন্টের কর্মীরা।

প্রবাসী শ্রমিকেরা এলাকায় ফিরলে তাদেরকে আর বাস্তুচ্যুত করে রাখা সম্ভব হয়নি।
এদের একটি বড় অংশ ছিল উৎখাত হওয়া বাম কর্মী। কোভিড পরিস্থিতির ভয়ে বাম
বিরোধী শক্তি এদের নির্ভীকতাকে দাবাতে পারেনি। ফলে পার্টি অফিস গুলো খোলা
শুরু হয়। বাম ফ্রন্টের বেস লাইনে প্রাণ ফিরে আসে। পার্টি থেকে ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’
গঠনের ডাক দেওয়া ছিল ছাত্র ফেডারেশন ও যুব ফেডারেশনের কর্মীরা কোভিড
সংক্রমিত মানুষের সেবার কাজে হাত লাগায়।

২০০৮ পরবর্তী জনসমর্থন হ্রাস – আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক তাৎপর্য

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার প্রাসঙ্গিকতা


বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
8

২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী মন্দা শুরু হয়েছিল তার প্রভাব ভারত এড়াতে পারেনি। স্বয়ং
প্রধানমন্ত্রীর নামে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলো। এদিকে ব্যাংক লিকু ডিটি দিয়ে মন্দা
ঠেকাচ্ছেন ওদিকে বলছেন কৃ ষি উন্নয়নের জন্য অর্থনীতি অস্থির নয়। ব্যাপকভাবে
ব্যাংক দুর্নীতিতে ব্যস্ত ক্রনি ক্যাপিটালিস্টদের দল। কৃ ষির ভূ মিকা ভারতীয় অর্থনীতিতে
মাত্র তিন শতাংশের কাছাকাছি বেশির ভাগটাই সারভিস সেক্টরের ( প্রায় ৭০ শতাংশ)
যার বহুলাংশ তথ্য প্রযুক্তির ভাগে যা কিনা বিদেশের মূলত আমেরিকান কোম্পানীর
আউট সোর্সিং এর উপর নির্ভ রশীল। নয়া উদারীকরণের বিরুদ্ধে দেশ ব্যাপী শ্রমজীবী
মানূষের ট্রেড ইউনিয়ন ও বামপন্থী জোট প্রতিবাদী আন্দোলনে সামিল হয়েছিল। ২০০৫
থেকেই জনরোষ সৃষ্টি করানো শুরু হয় বামফ্রন্ট সরকারের সাংগঠনিক সমস্যাগুলোকে
আলোকিত করে। সত্য মিথ্যা মিশিয়ে সংবাদ পরিবেশন করতে থাকে ক্রনি
পুঁজিপতিদের সংবাদ মাধ্যম।

ভু মি সংস্কার ও ত্রিস্তর পঞ্চায়েত আইন প্রয়োগে কৃ ষিতে যা সাফল্য এসেছিল তার


থেকে উত্তরণের আশায় পরিকাঠামো উন্নয়ন ও শিল্পায়নে বামফ্রন্ট সরকার উদ্যোগ
নিয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে বুদ্ধজীবি ( তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শিল্পায়ন
নীতির পক্ষাবলম্বী) বনাম বুদ্ধিজীবি ( এন জি ও গুলোর আঁতেলেকচ্যুয়াল) বিতর্কে
আপ্লুত হয়ে ২০০৪-০৫ নাগাদ এনজিও গুলো জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে সিভিক
সোসাইটি আন্দোলনে নামে। ২০০৬ সালে থেকে সারা রাজ্য জুড়ে বুদ্ধিজীবি ও সমস্ত
বামফ্রন্ট বিরোধী রাজনৈতিক দল সেই আন্দোলনে সামিল হয়। সেই আন্দোলন সামাল
দিতে পারেনি বামফ্রন্ট। সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলন শিরোনামে আসে। কেন্দ্রীয় সরকারের
জমি নীতি ছিল না সে কথা প্রকাশ্যে আসেনি। রাজ্য সরকারের জমি নীতি
সমালোচিত হয়েছে। যদিও জমি কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ তালিকাভু ক্ত বিষয়।

কেন্দ্রবিন্দুতে শিল্পায়ন বিরোধিতা থাকলেও আরও অনেক ঘটনা ঘটে যাতে বামফ্রন্ট ও
সরকার জড়িত না থাকলেও তা তৎকালীন সময়ে প্রতিপন্ন করতে পারেনি সংবাদ
মাধ্যমের পোস্ট ট্রুথ প্রচারের কারণে। যেমন রিজানুর রহমানের আত্মহত্যা, বাংলাদেশী
লেখিকা তসলিমা নাসরিনের ভিসা লঙ্ঘনের কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিক্রিয়া, তাপসী
মালিকের ধর্ষণ ও হত্যা, নেতাইয়ের হত্যা।

বামপন্থীদের প্রতিবাদী কন্ঠস্বরকে দাবিয়ে দিয়েছিল সংবাদ মাধ্যম ও বামফ্রন্ট বিরোধী


জোটের গোয়েবলসীয় প্রচার। ‘গোয়েবলসীয়’ কারণ পরবর্তীতে ২০২১ এর বিধানসভা
প্রচার কালে নন্দীগ্রামে তৃ নমূল প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অধিকারীদের দায়ী

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার প্রাসঙ্গিকতা


বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
9

করেন নন্দীগ্রামে “চটি পরা পুলিশ” ব্যবহার করার জন্য। পাল্টা শুভেন্দু অধিকারী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করেন “নেতাইয়ে ছত্রধর মাহাতোকে” ব্যবহার করার জন্য।
ছত্রধর মাহাতো তৃ নমূলের নেতা এবং জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা ঘটানোর অভিযোগে
জেল খাটছে। তাপসী মালিকের পিতা স্থানীয় তৃ ণমূল নেতাকে অভিযুক্ত করছেন তার
কন্যার ধর্ষণ ও মৃত্যুর জন্য। সিবিআই কোর্টে প্রমান করেছে রিজানুর আত্মহত্যা
করেছিল। তসলিমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করেছিল কেন্দ্রীয় সরকারের সামরিক বিভাগের
কম্যান্ডোরা, জিজ্ঞাসাবাদের পর তার ভিসা বাতিল করে দিইয়েছিল।

ভারতে দক্ষিণপন্থী উগ্র সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদের প্রথম ধাক্কা এসে পৌঁছায় ২০০৯
এর লোকসভা নির্বাচনে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের মুখ্য ভূ মিকায় থাকা বামফ্রন্টের ওপর।
লোকসভার নির্বাচন(২০০৯) থেকেই বামফ্রন্টের আসন সংখ্যা ও ভোট শতাংশ কমতে
শুরু করল। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পিছিয়ে পড়ার কারণগুলি চিহ্নিত
হলেও বামফ্রন্ট সেই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে পারেনি সাংগঠনিক দুর্বলতা ও
দীর্ঘকালীন ক্ষমতা ভোগের ফলে উদ্ভু ত রাজনৈতিক শ্লথতার কারণে। ফলে ২০১১
সালের বিধানসভা নির্বাচনে গো হারান হেরে যায়। সেই থেকে বামপন্থীদের পিছিয়ে পড়া
অব্যাহত থেকেছে। এর কারণ সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক ব্যর্থতা যা ২০২১ সালে এসে
চিহ্নিত করা হয়।

২০১১ সাল থেকে ব্যাপক অত্যাচার নেমে আসে বামফ্রন্ট কর্মীদের ওপর। ধর্ষণ, বাস্তু
ছাড়া করা, চাষের জমি দখল, জীবিকায় টান, বুকে প্ল্যাকার্ড ( আর কোন দিন সিপিএম
করবো না) টাঙিয়ে গ্রাম ঘোরানো, পার্টি অফিস দখল করা ছিল স্বাভাবিক শাস্তি বিধান।
গাঁজা কেস দিয়ে পুলিশ শেষ করে দেয় হাজারো কর্মীদের। ফলে বেস লাইন ‘লোকাল
কমিটি’ ‘ব্রাঞ্চ কমিটি’ নিঃশেষ হয়ে যায়। এটা চলেছে দশ বছর ধরে। পাশাপাশি গড়ে
তোলার, রুখে দাঁড়াবার আন্দোলন চালিয়েছে বামফ্রন্ট কর্মীরা। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমে তা
প্রতিফলিত হয় নি। ২০১৬ তে যেসব অঞ্চলে বামফ্রন্ট তার জমি আঁকরে ধরে রাখতে
পেরেছিল সে সব অঞ্চলে কমরেডদের ব্যাপক ভাবে খুন গৃহহীন করা হয়েছে, জেতা
ত্রিস্তর পঞ্চায়েত থেকে বামফ্রন্ট প্রতিনিধিদের উৎখাত করা হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে
মনোনয়ন পর্যন্ত জমা দিতে দেওয়া হয়নি।

বিজেপি ও তৃ নমূল সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিভ্রান্তি- প্রসঙ্গ বিজেমূল

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার প্রাসঙ্গিকতা


বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
10

২০১১ থেকে ২০২০ ‘গাজর ও লাঠি’ পদ্ধতি ব্যবহার করে নির্বাচিত প্রতিনিধি ও নেতা
সংগ্রহ করে রাজ্যের শাসক দল। কেন্দ্রীয় শাসক দল একই পথ অনুসরণ করে রাজ্যে ‘
ঘোড়া কেনা বেচা’ বা ‘আয়ারাম গয়ারাম’ এর রাজনীতি চালু করে যা আগে কোনদিন
পশ্চিমবঙ্গে ছিল না। রাজ্য বিজেপি দলটির নেতৃ ত্বে উঠে আসে প্রাক্তন তৃ নমূল
নেতারা। এই সময় সোশ্যাল সাইটে এদেরকে বিজেমূল বলে বিদ্রূপ করা শুরু হয়।
‘বিজেমূল’ শব্দটির পেছনে বামফ্রন্টের কোন অবদান ছিল না। সোশ্যাল মিডিয়া ও
তার সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এত ক্ষমতাশালী যে মেনস্ট্রিম মিডিয়া তার সঙ্গে
প্রতিযোগিতায় নেমেছে তাদের সোশ্যাল সাইটের মাধ্যমে।

সিপিআইএমের ২২ তম কংগ্রেসে গৃহীত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সমূহের পশ্চিমবঙ্গ অধ্যায়ে


স্পষ্ট করা হয়েছিল যে তৃ নমূল সরকার বামফ্রন্টের ওপর ফ্যাসিবাদী কায়দায় আক্রমণ
হানছে। তৃ নমূল ফ্যাসিবাদকে ডেকে আনছে। একথা বলা হয়নি তৃ নমূল ও বিজেপি
একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। কিন্তু ছাত্র যুব আন্দোলন থেকে উঠে আসা প্রতিষ্ঠান বিরোধী
হাওয়ায় ‘বিজেমূল’ শব্দের প্রচার বেশি হয়ে পড়ে।

তৃ নমূল ও বিজেপির মধ্যে বিরোধিতা মূলত সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের উদ্দেশ্যে


পরিচালিত এই প্রচার এবং বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক শক্তি চিহ্নিত করার প্রচার সস্তা
গ্রাফিতি ও শ্লোগান প্যারডির আড়ালে পরে যায়। এর কারণ ছাত্র যুব সমাজের বুর্জোয়া
মানসিকতায় বামপন্থী কর্মীরা আচ্ছন্ন এর থেকে মুক্ত করার প্রয়াস সে ভাবে সাড়া
জাগাতে পারেনি। সংবাদ মাধ্যমের উদ্যোগে এই মেরুকরণের উদ্দেশ্য স্পষ্টত শ্রমজীবী
আন্দোলনে ফাটল ধরানো এবং বামফ্রন্টকে অস্তিত্বহীন নগণ্য শক্তিতে প্রতিপন্ন করার
কাজে লেগেছে। ট্রাম্পের উত্থানের পর থেকে সারা বিশ্বে মার্ক্সবাদীদের শূণ্য করার যে
পদ্ধতি চালু হয়েছে সোসিওলজিতে তাকে মার্ক্সবাদ বিরোধী পোস্ট মর্ডানিজম বলে।

এই কাজে বিজেপি ও তৃ নমূল সফল। তারা বামেদের দাবি গুলি নিজেদের মতন জন
মোহিনী করে প্রচার করেছে। এছাড়া ছিল কিছু সরকারি প্রকল্প, নাগরিকতা আইন,
ভাষা, ধর্ম, আচার এরকম অনেক চোখে দেখা হাতে পাওয়া প্রত্যাশ্যায় থাকার মতন
বিষয়।

সরকারি প্রকল্পের সাফল্য

নির্বাচনে রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি ছিল দলগুলির সাংগঠনিক বিষয়। ভারতে প্রথম ট্রেড
ইউনিয়নকে ক্রপরেটাইজ করেন তৎকালীন বোম্বাইয়ের দত্ত সামন্ত। বর্ত মানে তার

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার প্রাসঙ্গিকতা


বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
11

কর্পরেটাইজেশন হয়ে গেছে আই প্যাকের কার্য কলাপের মাধ্যমে। ‘পি কে’ টিম আই
প্যাক এর উল্লেখ ছাড়া তৃ নমূল সরকারের প্রকল্প সাফল্য বর্ণনা করা যায় না। রাস্ট্রসঙ্ঘে
আট বছর রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজিস্ট (কু শলী) পদে আসীন ছিলেন নির্বাচন স্ট্র্যাটেজিস্ট
প্রশান্ত কিশোর (পি কে)। পিকের কৃ তিত্ব-

(১) ২০১১ সালে গুজরাতে নরেন্দ্র দামোদর মোদীকে দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রীর পদে ফিরিয়ে
আনা,

(২) ২০১৪ সালে ‘পি কে’র সিটিজেন্স ফর একাউন্টেবল গভরন্যান্স ( সিএজি) নরেন্দ্র
দামোদর মোদীকে ভারতের প্রধান মন্ত্রী পদে বসতে সহায়তা করে,

(৩) ২০১৫ সালে তিনি ও তার সি এ জির সদস্যরা মিলে আই-প্যাক নামের কু শলী
সংস্থা বানান। এবং এই বছরে একই ভাবে নীতিশ কু মারকে মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন
করেন।

(৪) ২০১৭ সালে আই প্যাক পঞ্জাবে কংগ্রেসের অমরিন্দর সিং কে মুখ্যমন্ত্রী পদে
জেতান। একই বছরে উত্তর প্রদেরশের কংগ্রেসের হয়ে কাজ করলেও কংগ্রেস জিততে
পারেনি, বিজেপি জেতে।

(৫) ২০১৯ সালে ওয়াই এস আর কংগ্রেস পার্টি র হয়ে আই প্যাক কাজ করে। ‘সমর
শঙ্খ রবম’ ( সমর শঙ্খ রব) ‘আন্না পিলুপু (দাদাকে ডাকো) ‘প্রজা সংকল্প যাত্রা’
প্রভৃ তি প্রচারের মাধ্যমে জগমোহন রেড্ডিকে মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন করেন।

(৬) ২০২০ সালে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে তার কু শলী ভূ মিকার ফল আম আদমির
অভূ ত পূর্ব জয়।

(৭) ২০২১ এর তামিলনাডু বিধান সভা নির্বাচনে ডি এম কে দলের হয়ে কাজ করে
জিতিয়েছেন।

পি কে ২০২২ সালে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করবেন। ২০২১ এ


এন সি পি নেতা শারদ পাওয়ার ও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেয় পশ্চিমবঙ্গে তৃ নমূল দল আই


প্যাককে। ‘আন্না পিলুপু’র অনুকরণে ‘দিদিকে বলো’ শেষে শ্রী ও সাথী যুক্ত প্রকল্পগুলি
ছাড়াও জল ধরো জল ভরো এবং নির্বাচনের প্রাক্কালে নগদ সাহায্য ও ছাত্রীদের ট্যাব

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার প্রাসঙ্গিকতা


বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
12

এর বদলে নগদ দশ হাজার এবং ‘দূয়ারে রেশনে’র প্রতিশ্রুতি ছাড়াও ‘দূয়ারে সরকার’
প্রোগ্রামের মাধ্যমে ১০ লাখ তপশীলী জাতি মানুষকে উপজাতিভু ক্ত সার্টি ফিকেট
প্রদানের ব্যবস্থা করেন। অন্যান্য রাজ্যের মতো ‘পি কে’র আই প্যাক এখানেও সফল
হয়ে যায়। মানুষের সঙ্গে কথা বলে তথ্য বা ডেটা সংগ্রহ করা যায় আবার স্পাইওয়ার
ব্যবহার করেও ডেটা সংগ্রহ করা যায়। সেই ডেটার ভিত্তিতে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প চালু
করে বা প্রতিশ্রুতি দিয়ে, বুথ লেভেল তৃ নমূল কর্মীদের সব রকম মাধ্যমে প্রচারের ট্রেনিং
দিয়ে ভোটারদের সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে প্রভাবিত করা হয়েছে এবং তা
সফল হয়েছে।

অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া দেশের জন্য ( ২০২১ এ ভারতের জিডিপি মাইনাস ২৪)
রাস্ট্র সংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃ ক চালু করা প্রকল্প কেন্দ্রীয় সরকারে মাধ্যমে রাজ্য
সরকারের কাছে আসে। কিছু প্রকল্প কেন্দ্রের হাতেও থাকে। এই প্রকল্প গুলি নিয়ে বেশ
একটা প্রধানমন্ত্রী বনাম মুখ্যমন্ত্রীর বাদানুবাদ যুদ্ধং দেহি মনোভাব এই নির্বাচনে তৃ নমূলকে
বিজেপি বিরোধী অবস্থানে এগিয়ে দেয়। নির্বাচনী কু শলীপনায় বামফ্রন্টের চেয়েও অতি
বামপন্থী বলে মানুষের সামনে গ্রহণ যোগ্যতা বাড়িয়ে নেয় তৃ নমূল। পশ্চিমবঙ্গের নেতা
বনাম দিল্লীর নেতা কিছুটা কাজ করেছে। আরও বেশি প্রভাব ফেলেছে পরিচিতি সত্ত্বার
রাজনীতি।

পরিচিতি সত্ত্বার বিজয়

ভারতে পরিচিতি সত্ত্বা মূলত চারটি- ধর্ম ভাষা জাতি ও উপজাতি। হিন্দুত্ববাদ অর্থাৎ
ধর্ম নিয়ে রাজনীতির প্রবক্তা বিজেপি। এটি আর এস এস এর সংসদীয় দল। এটাই রূঢ়
বাস্তব যে ভারতীয় সমাজে দুটি চলমানতা খুব স্পষ্টঃ

(১) আর্থিক দুর্নীতির মাধ্যমে আয়কর বহির্ভূ ত মুনাফার সমান্তরাল অর্থনীতি। যা


নোটবন্দীর মাধ্যমে ভারতীয় ঘোষিত অর্থনীতির সঙ্গে মিশে ক্রনি পুঁজির এক অর্থনীতি
সৃষ্টি করেছে যার নিয়ন্ত্রণে দেশটা চলছে

(২) হিন্দু ও মুসলমান এই দুই ধর্মীয় সমাজে প্রাচীন শ্রম ভিত্তিক শ্রেণী বিভাজন অর্থাৎ
জাত পাতের বিভাজন স্পষ্ট্ভাবে আজ বিরাজমান।

গান্ধীর ‘হরিজন সেবক সংঘ আন্দোলন’ অথবা আম্বেদকরের ‘দলিত বৌদ্ধ আন্দোলন’
অথবা বামপন্থীদের শ্রমিক-কৃ ষকদের আর্থ-সামাজিক ন্যায়ের আন্দোলন এই দুই

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার প্রাসঙ্গিকতা


বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
13

চলমানতার ওপর তেমন কিছু প্রভাব ফেলতে পারেনি। এ কথা সত্য যে শিক্ষার
অগ্রগতির সঙ্গে এবং সামন্ততান্ত্রিকতার অবসান ঘটিয়ে বুর্জোয়া গণতন্ত্রের অগ্রগতিতে
কিছুটা এবং বামপন্থীদের সাংস্কৃ তিক আর্থ-সামাজিক ন্যায়ের আন্দোলনে কিছুটা মুক্ত
মানসিকতার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। প্রাচীন কাল থেকেই ভারতে ধর্ম নিরপেক্ষ সহাবস্থান
ও সহযোগিতা চালু ছিল। কিন্তু সহমর্মিতার ক্ষেত্রে ঘাটতি থেকে গেছে। ধর্মকেন্দ্রিক
সামাজিক বিভাজনের মধ্যেও বৃত্তিকেন্দ্রিকতা তথা শ্রম কেন্দ্রিকতা বিভিন্ন ধর্মের
শ্রমজীবী মানুষকে এক মঞ্চে সংহত করে রেখেছে। এখানেই বামপন্থী আন্দোলনের
সাফল্য।

আর এস এস বিজেপি হিন্দুত্বর নামে যে প্রচার চালায় তাতে দুরকম ভাবে সামাজিক


ন্যায় বিঘ্নিত হয়ে পড়ে। এক বর্ণহিন্দু ও অন্তজ শ্রেণীর সংঘাত, দুই হিন্দু মুসলমান
সংঘর্ষ। এই দুই দাঙ্গার পরিস্থিতিকে নীরব থেকে সহায়তা দেয় রাস্ট্র ব্যবস্থা। এতে
শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য ও সংহতি বিঘ্নিত হবে। ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের ক্ষতি হবে।
এই মেরুকরণে বামপন্থীদের সামাজিক ন্যায় ও আর্থিক দাবি দাওয়ার আন্দোলন পিছিয়ে
পড়বে। লাভবান হবে ভারতের নয়া সামন্ততান্ত্রিক ক্রনি পুঁজিবাদী শক্তি। এই কাজেই
লাগানো হয়েছে মেইন স্ট্রিম মিডিয়াকে। অনেক মিডিয়া হাউস শুধু বিজ্ঞাপনের
প্রলোভনে নয় বড় বড় আর্থিক কেলেংকারির সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সরকারী
তদন্ত চলছে। কাজেই শাসক শ্রেণীর আনুকু ল্য এদের প্রয়োজন। বিজেপি বনাম তৃ নমূল,
বাঙালী বনাম অবাঙ্গালী, হিন্দি বনাম বাংলা, এছাড়াও গোর্খা কামতাপুরি, রাজবংশী,
লেপচা ভু টিয়া সাওতাল ওঁরাও মতু য়া নমশূদ্র বিভিন্নতায় মেরুকরণ করা হয়েছে।
ফলত ধাক্কা খেয়েছ শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য ও সংহতি।

অতঃ কিম

বস্তুবাদী শ্রেণী দ্বন্দ্ব সময় প্রবাহের সঙ্গে অবিরত চলতে থাকবে। সেই দ্বন্দ্ব সত্যকে সামনে
আনবে। বুর্জোয়ারা নিজেদের কবরের সরঞ্জাম নিজেরাই বানায়। কেইন্সের থিওরি
অনুযায়ী অর্থ বিলিয়ে সুবিধা বিলিয়ে আর্থিক সমস্যার সমাধান একটি সাময়িক পন্থা
এবং তা দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষের কাছে পৌঁছনো সম্ভব নয় তাহলে মুদ্রা সংকট ও
দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে বাধ্য। এই আর্থিক সংকটে ও কোভিড সংক্রমণে বামপন্থীদের
প্রাথমিক দায়িত্ব উপার্জ নহীন শ্রমজীবী মানুষের কাছে স্মবায় ভিত্তিক স্বেচ্ছা শ্রমের
মাধ্যমে খাদ্য স্বাস্থ্য শিক্ষার সহায়তা প্রদান। পাশাপাশি সরকারের ব্যর্থতা গুলকে তু লে
ধরা। সরকারের জনস্বার্থবাহী প্রকল্পে সহায়তা করা। নির্বাচনে জিতে সরকারী ক্ষমতা

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার প্রাসঙ্গিকতা


বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
14

দখল একটু বাড়ত সুবিধা দেয় বটে তবে তা কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বন্ধনে আবদ্ধ।
রাজ্য সরকার যতোই কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিকে শাসক দলের সপক্ষে চালাক না কেন, অর্থ
সংস্থান বন্ধ হয়ে গেলে প্রকল্পগুলো বন্ধ হতে বাধ্য। মানুষকে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার
আন্দোলনে সামিল করাই বামপন্থীদের মূল লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে পৌঁছতে কবে তারা সফল
হবে তার ভবিষ্যৎ বানী করা যায় না।

রেফারেন্সঃ

১[ “... And now as to myself, no credit is due to me for discovering the


existence of classes in modern society or the struggle between them. Long
before me bourgeois historians had described the historical development
of this class struggle and bourgeois economists, the economic economy of
the classes. What I did that was new was to prove: (1) that the existence of
classes is only bound up with particular historical phases in the
development of production (historische Entwicklungsphasen der
Production), (2) that the class struggle necessarily leads to the dictatorship
of the proletariat,[1] (3) that this dictatorship itself only constitutes the
transition to the abolition of all classes and to a classless society.”]


[ Interim Pre-pandemic Planning Guidance: Community Strategy for
Pandemic Influenza Mitigation in the United States: Early, Targeted,
Layered use of Nonpharmaceutical Interventions CDC 2007 ]


[Community Mitigation Guidelines to Prevent Pandemic Influenza —
United States, 2017 Recommendations and Reports / April 21, 2017 /
66(1);1–34)]

[পোস্ট মর্ডানিজম হল প্রচলিত সত্য থেকে মোহমুক্তির প্রাচীন দর্শন। সংশয়বাদ এর


ভিত্তি। আমেরিকায় বামপন্থী আন্দোলনকে রুখতে এই দার্শনিকতাকে স্থূলভাবে ব্যবহার


শুরু করে আমেরিকান রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর প্রয়োগ করতে
গিয়ে “ভিয়েতনাম সিন্ড্রোম” ট্রাম্পের পূর্বসূরিদের কাছে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল।]

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার প্রাসঙ্গিকতা


বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
15

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার প্রাসঙ্গিকতা


বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

You might also like