You are on page 1of 11

ভারতের কৃ ষি অয়ন

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

কৃ ষির দুরারোগ্যতা
“ This could not have happened had not the greed for wealth divided the members of the gens into rich and poor:
had not ‘property differences in a gens changed the community of interest into antagonism between members of
the gens’(Marx); and had not the growth of slavery already begun to brand working for a living as slavish and
more ignominious than engaging in plunder.” [ Frederick Engles ]

দুরারোগ্যতাই কি কৃ ষকের দুর্ভাগ্য ! সময়ের পরিবর্ত নে ভারতীয় কৃ ষির পরিবর্ত ন সেই বৃহৎ পুঁজির ক্রীড়নক হয়ে
কাটিয়ে গেল ! ১৯২৮ সাল থেকে ২০২০; এই বিরানব্বই বছর ধরে সরকার যা যা পদক্ষেপ নিয়েছে সব ভু ল?
নয়া কৃ ষি বিল কি সত্যিই বিকল্প?
কর্পোরেট কৃ ষি যদি আরোগ্যের ওষধি হতো তাহলে আমেরিকা সমেত প্রথম বিশ্বের দেশগুলিকে কি ভারতীয় ও চীনা
খাদ্যশস্যের ওপর নির্ভ র করতে হতো? একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।
সাম্প্রতিক যে তিনটি আইন কেন্দ্রীয় সরকার চালু করেছে এবং ভারতব্যাপী কর্পোরেট কৃ ষির বিরুদ্ধে কৃ ষক
আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সেই আইন হোল-

(1) The Farmers' Produce Trade and Commerce (Promotion and Facilitation) Act, 2020
(2) The Farmers (Empowerment and Protection) Agreement on Price Assurance and
Farm Services Bill, 2020
(3) The Essential Commodities (Amendment) Bill, 2020
তিনটি আইনের প্রকাশ জুন মাসে প্রয়োগ ২৭ শে সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ও কৃ ষিমন্ত্রী , এবং শাসক দল ও বৃহৎ পুঁজিপতিদের সংগঠন ও সংস্থাগুলি দাবি
করেছেন যে এই আইন (ক) অবাধ আন্ত রাস্ট্রীয় শস্য বানিজ্য সুগম করে দেবে কোন রাজ্যের কোন এ এম সি বিধি নিষেধ
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না, (খ) কন্ট্রাক্ট ফারমিং এর কাঠামো সংজ্ঞায়িত করবে (গ) খুচরো দর বৃদ্ধির তীব্রতা রুখতে
মজুত সীমা নির্দিষ্ট করে দেবে।
কি ছিল ডাব্লিং ফার্মারস ইনকাম কমিটির (২০১৬) সুপারিশে যা মেনে লোকসভায় ও রাজ্যসভায় কৃ ষি সংস্কার বিধি
চালু করা হোল?
নয়া উদারীকরণ ও বাজারী পুঁজি
মূলত এটা পুঁজিবাদী আর্থিক সংস্কারের অঙ্গ ছিল প্রথম থেকেই। ১৯৯১ সাল থেকে উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ ও
বিশ্বায়নের উদ্দেশ্যে ধাপে ধাপে এগোনো চলছিল। মনমোহন সিং সরকার কৃষি নীতি গ্রহণ করতে অতিরিক্ত বিলম্ব করাতে
পশ্চিমবঙ্গে ওড়িশায় অন্ধ্র প্রদেশে সিঙ্গুর কৃ ষক আন্দোলন তীব্রতর হয়েছিল। রাজ্য সরকারের স্বাধীনতা আছে কৃ ষি নীতি
ভু মি সংস্কার ও শিল্প নীতি গ্রহণ করার। রাজ্য নীতি যদি কেন্দ্রীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় না রাখে তো যুক্ত রাস্ট্রীয়
ব্যবস্থায় রাজ্য-কৃ ষি বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে বাধ্য।
কৃ ষির কর্পোরেটাইজেশন ( বৃহৎ পুঁজিপতিদের দ্বারা নামে বা বেনামে অধিগ্রহণ) ধনতান্ত্রিক দেশের কৃ ষকদের কোন উন্নয়ন
ঘটায়নি। সর্বত্র কৃষক আন্দোলন হয়েছে স্বল্প কিছ ু রিলিফ আদায় হয়েছে। কর্পোরেটাইজেশন যদি কৃষকের দারিদ্র্য মক্তি
ু র একমাত্র
সমাধান হতো তাহলে আমেরিকাকে ভারত ও চীন থেকে খাদ্যশস্য আমদানির উপর ভরসা করে দেশ চালাতে
হতো না। কারণ আমেরিকা ও ভারতে কৃ ষি জমির পরিমাণ প্রায় কাছাকাছি।
দ্য ফারমারস প্রোডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স ( প্রমোশন অ্যান্ড ফেসিলিটেশন) অর্ডি ন্যান্স ২০২০ চালু হয় ২৭শে সেপ্টেম্বর
২০২০ থেকে।
এই আইন বলে একজন কৃ ষক বা কৃ ষক সমবায় সমিতি এপিএমসির (APMC) নিয়ম মেনে শুধু মণ্ডিতে নয় দেশের সর্বত্র
তাদের খাদ্য শস্য হিসেবে বিক্রি করতে পারবেন। তালিকাভুক্ত বিশেষ অঞ্চল থেকে কৃষকেরা অন লাইন ট্রেডিং করতেও পারবেন।
রাজ্য সরকার এই ধরণের শস্য বিক্রির উপর কোন শুল্ক আদায় করতে পারবে না। এই আইন মোতাবেক কন্ট্রাক্ট ফারমিং
এর নিয়ম মেনে , অর্থাৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া পূর্ববর্তী, চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে যে কোন কমিশন এজেন্ট( ফঁ ড়ে),
আড়তদার, পাইকার এবং রপ্তানিকারক সংস্থার সঙ্গে চু ক্তি বদ্ধ হয়ে, খাদ্যশস্য বিক্রি করতে পারবেন। এই চক্তি
ু বদ্ধতার ফলে
নাকি কৃ ষকদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে। আইনগত জটিলতার বিচার করবেন সালিশি বোর্ড , মহকু মা শাসক, ও আপেলেট
অথরিটি।
দ্য ফারমারস ( এমওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রোটেকশন) এগ্রিমেন্ট অন প্রাইস অ্যাসিউর‍্যান্স অ্যান্ড ফার্ম সার্ভি স অ্যাক্ট ২০২০
একই দিনে আইনে পরিণত হয়।
উৎপাদনের পূর্বে বা পরে বা চলাকালীন ক্রেতারা কন্ট্রাক্ট ফারমিং এর সুযোগ পাবে। কৃষকের সাথে দাদন ভিত্তিক ন্যায্য মূল্য
সূচক চুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ ফসলের অধিকার পাবে কৃ ষি ব্যবসায়ে যুক্ত সংস্থা তথা সরবরাহকারী,আড়তদার,
পাইকার, রপ্তানিকারক কোম্পানি, বৃহৎ খুচরো ব্যবসায়ী । এতে নাকি কৃষকের স্বার্থ সরু ক্ষিত হবে।

দ্য এসেন্সিয়াল কমোডিটিজ ( অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট ২০২০ একই দিনে আইনে পরিণত হয়।

পুরানো অত্যাবশকীয় পণ্য আইন ১৯৫৫ (Essential Commodities Act (ECA), 1955) কে সংশোধন করে তালিকা
থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ডাল তৈলবীজ, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, এবং আলু।
উদ্দেশ্য ঃ

 যাতে অত্যধিক বিধি নিষেধের জালে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের হুজ্জত পোয়াতে না হয়।
 যুদ্ধ, দুর্ভি ক্ষ, অত্যধিক মূল্য বৃদ্ধি, প্রাকৃ তিক দুর্যোগের সময়ে উপভোক্তাদের স্বার্থ নিশ্চিত করা যায়।
 মূল্য সোপানের কোন সংস্থার (দালাল, আড়তদার, পাইকার প্রমুখ) পণ্য মজুতের ক্ষমতা বা রপ্তানিকারক
সংস্থার বিদেশে পণ্যের চাহিদা এই আইনে ছাড় দেয়া থাকছে যাতে তাদের বিনিয়োগের উৎসাহে
ভাঁটা না পড়ে।
 ১৯৫৫ সালের মূল আইনে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের হাতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধের যে ক্ষমতা দেয়া ছিল
তা রদ করা হল।
১৯৫৫ সালের মূল আইনে ভারত খাদ্যে আত্মনির্ভ র হয়েছিল যার ফলে খাদ্য পণ্য উৎপাদন অতিরিক্ত হয়ে এসেছে,
কাজেই আর অতিরিক্ত উৎপাদন নয় এবার কৃ ষকদের আয় দ্বিগুন করতে আইন সংশোধন করা হল। সরকারী নিয়ন্ত্রণ উঠে
যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা খুশি মতো ক্রয় মজুত ও বিক্রয় করে অর্থনীতি চাঙ্গা করবে, প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি করবে,
এতে নাকি কৃ ষক ও উপভোক্তার কাছে দরের স্থিতিশীলতা বা ভারসাম্য বজায় থাকবে।
যেহেতু এটি কেন্দ্রীয় সরকারের আইন তাই এতে রাজ্য সরকারের কোন ভূ মিকা আর থাকবে না। অর্থাৎ কৃষি যৌথ তালিকাভুক্ত
হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যের ক্ষমতা খর্ব করা হল।
কর্পোরেট কৃ ষি
সাম্প্রতিক চালু হওয়া এই তিনটি আইনের বিরুদ্ধে ভারতব্যাপী কৃ ষক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে।এই আইন
তিনটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক দানা বেঁধেছে। কিন্তু কর্পোরেট কৃ ষির আইনানুগতা নিয়ে এখন আর কোন প্রশ্ন থাকছে না।
আগেও প্রশ্ন ছিল কি?
আহমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক সুখপাল সিং এর ২০০৬ সালে প্রকাশিত গবেষণা পত্র (কর্পোরেট
ফারমিং ইন ইন্ডিয়া ঃ ইজ ইট মাষ্ট ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট ?) অনেকেই উল্লেখ করছেন। সেই সময়েই
কর্পোরেট ফারমিং এর জন্য ও ট্রেডিং এর জন্য হাজার একর জমি নাম মাত্র মূল্যে লিজ নিয়েছে বা কিনেছে
কোম্পানিগুলো।
1. Ion Exchange Enviro Farms Limited (IEEFL), Pune, subsidiary of the Ion Exchange India set up
in 1995, (Maharashtra, Tamilnadu, and Goa. Plantations mainly fruit trees) ;
2. Jamnagar Farms Pvt. Ltd.- a subsidiary of Reliance Industries, Mukesh Ambani group
(Gujarat, and Punjab; agroforestry, and horticultural crop);
3. Reliance Anil Dhirubhai Ambani Group (Punjab; Fruits and vegetables);
4. SYP Agro, Ahmedabad (Gujarat; Onions and other spices and vegetables);
5. Agri Gold Hyderabad (A.P.) ;
6. Field Fresh an equal partnership venture between Bharti Enterprises(Airtel group) and
Rothschild (Punjab; fresh fruits and vegetables)
এছাড়াও আছে বিভিন্ন নামী দামি বদনামি কর্পোরেট জায়েন্ট তথা আন্তর্জাতিক বহুজাতিক কোম্পানি ও তাদের জাতীয়
এজেন্ট যেমন-
1) DuPont India Private Limited,
2) Rallis India Limited,
3) Nuziveedu Seeds Limited,
4) Lemken India Agro Equipments Private Limited,
5) Advanta India Limited, Monsanto India Limited,
6) Poabs Organic Estates,
7) National Agro Industries,
8) Godrej Agrovet Limited,
9) Rasi Seeds Private Limited
এদের অনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাস্ট্রে এমনকি আমেরিকাতেও অনেক বিক্ষোভ হয়েছে ১৯৯০-৯৯ নাগাদ।ঐ সময়ে এদের
অনেকের অনেক রকম ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিল বিভিন্ন রাস্ট্রের শীর্ষ আদালত ও ডেমোক্রাট সরকার।
কোন কোন রাজ্যের শাসক গোষ্ঠীর মদদে এদের সঙ্গে কৃ ষি সমবায় সমিতি, খামারের মালিক বা কৃ ষি কোম্পানির ‘চু ক্তিবদ্ধ
চাষে’র, অর্থাৎ সরবরাহের (প্রয়োজনীয় বীজ, সার কীটনাশক, পৌস্টিক ঔষধ), সংগ্রহের, মজুতের, বন্টনের, বিক্রয়ের
ও রপ্তানির ঐক্যমত্য হয় পূর্ব নির্ধারিত দরে। এখানেও ফঁড়েদের ভূমিকায় থাকে শাসক দলের আনক ু ু ল্য পাওয়া কোম্পানি। কারণ
কৃ ষি যৌথ তালিকাভূ ক্ত বিষয় তাই রাজ্যের ভু মিকা কেন্দ্রের থেকেও বেশী ছিল;। দু পঁ বা মন সান্তোর মতন আন্তর্জাতিক
কোম্পানি সরবরাহ করে রাউন্ড আপ, গ্যামাক্সিন, জীন বিবর্তি ত বীজ, সার ও কীটনাশক।
চু ক্তিবদ্ধ চাষ (কন্ট্রাক্ট ফারমিং)
চু ক্তিবদ্ধ চাষ হলো ভারত সরকার কৃ ত এক ব্যবস্থা যাতে কৃ ষক ( শস্য উৎপাদনকারী ব্যক্তি বা সংস্থা), দালাল (ফঁ ড়ে),
আড়তদার, পাইকার এসকলের মধ্যে চু ক্তির বলে পূর্ব নির্ধারিত মূল্যে ও পূর্ব নির্ধারিত গুনমানের শস্য এক বিশেষ সময়ে
এক বিশেষ স্থানে কৃ ষক উৎপাদন করে দেবে। কন্ট্রাক্ট ফারমিং তিন প্রকারের হয়ে থাকে।
(ক) সংগ্রহ (আহরণ) ভিত্তিক চু ক্তি যেখানে শস্যের ক্রয় ও বিক্রয় নির্দি ষ্ট করা হয়ে থাকে ;
(খ) আংশিক চু ক্তি যেখানে দাদনদার কোম্পানি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় নিবেশ (বীজ সার কীটনাশক ইত্যাদি) সরবরাহ
করবে এবং ফসল ক্রয় করবে পূর্ব নির্ধারিত দরে।
(গ) সম্পূর্ণ চুক্তি যেখানে দাদনদার কোম্পানি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় নিবেশ সরবরাহ করবে, এবং ফসলের
মালিকানা কিনে নেবে। এক্ষেত্রে কৃষক শুধমু াত্র জমি ও শ্রম সরবরাহ করবে অর্থাৎ নিজভূমে পরবাসী।
বিভিন্ন প্রকারের ফসল ফলনের সাপেক্ষে চু ক্তিও বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। এই চক্তিু ভিত্তিক কৃষি চালু হয় প্রাক্তন প্রধান
মন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর শাসন কালে। চুক্তিবদ্ধ চাষের সুবিধা পেয়েছে কৃ ষকদের যৌথ খামার ও বণ্টনকারী
আড়তদার কোম্পানি ও রপ্তানিকেন্দ্রিক কোম্পানি। পাঞ্জাব হরিয়ানায় সবুজ বিপ্লবের সাময়িক সাফল্যের ভিত্তি এই
চু ক্তিবদ্ধ চাষ। এটি যৌথখামার ভিত্তিক চাষ ও কর্পোরেটকেন্দ্রিক চাষের মধ্যবর্তী পর্যায়।
এগ্রিকালচার প্রডিউসিং এন্ড মারকেটিং অ্যাক্ট (APMA)২০০৩ এর দ্বারা বিধিবদ্ধ না হয়েও এগ্রিকালচার প্রোডিউসিং
এন্ড মারকেটিং কমিটিকে (APMC) এই চু ক্তি রেকর্ড করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল।
শস্য মূল্য সোপান
১) উৎপাদন

 ভু মিকায় কৃ ষক ও সরবরাহকারী
 বীজ, সার, সেচ, সার, কীটনাশক ক্রয় মূল্য ও ক্ষেতে শ্রম দিবস
 ফসল কাটা ও মণ্ডিতে বহন
 পুরনো হয়ে যাওয়া যন্ত্র ও ভারবাহী জন্তু ব্যবহার
অন্নদাতা কৃ ষকের ভূ মিকা
মূল ভূ মিকায় অবশ্যই কৃ ষক সমাজ যারা কৃ ষি সভ্যতার আদি যুগ থেকে ফসল ফলাচ্ছে, আম জনতাকে খাদ্য
যোগাচ্ছে। কোন কোন প্রদেশে এদেরকে অন্নদাতা বলা হয়েছে। হলধর বলরাম এসব আখ্যায় ভূষিত করা হয়েছে। কৃষিশাস্ত্রে বা
লোককথায় কৃ ষকরা যতই প্রশংসা পেয়ে থাকু ক না কেন রাজতন্ত্র, সামন্ততন্ত্র, ধনতন্ত্রে এরা বেগার শ্রমিক ও ক্রীতদাস
হিসেবে সমাজে স্বীকৃ তি পেয়েছে।এর মধ্যে বর্জ ু োয়া গণতন্ত্রে অপেক্ষাকৃত কম শোষিত। এরা সমাজের মূল কেন্দ্রে অধিষ্ঠিত হলেও
যে কোন শ্রেণীবিভক্ত সমাজব্যবস্থায় এদের পরিশ্রমের ফসল এরা ঘরে তু লতে পারে না। এর ওপর আছে প্রাকৃ তিক
বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। এদের মধ্যে জমির মালিকানা অনুযায়ী ফসলের অধিকার ও মুনাফার পরিমাণ সাপেক্ষে রয়েছে
সম্পন্ন চাষি ( কু লাক)ও দরিদ্র চাষি ও প্রান্তিক চাষি। এছাড়া আছে ক্ষেত মজরে ু রা। শ্রেণীবিভক্ত সমাজব্যবস্থায় ও প্রচলিত
গণতন্ত্রে এদের সরকার ও ব্যাংক থেকে সহায়তা প্রদান করা হয়। উৎপন্ন ফসলের খরচ অপেক্ষা ফসল বিক্রির মূল্য
মুনাফা আনতে পারে না ফলে ব্যাংক ঋণ শোধে কৃ ষকরা অপারগ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছিল।
সরবরাহকারীর ভূ মিকাঃ
কৃ ষকের কাছে কাছে বীজ, সার, সেচ, সার, কীটনাশক মূলত সরবরাহ করে প্রাদেশিক( রাজ্য) সরকারের কৃ ষি দপ্তর বা
অনুসারী নিগম। সে সব কাঁচামাল সাধারণত গুনমানে উন্নত হয় না। বেসরকারি বানিজ্য সংস্থাগুলি উন্নত গুণমানের কাঁচামাল বিক্রি
করলেও তার দর অনেক বেশি ও কৃ ষককে প্রতারিত করে থাকে।
২) হাট (মণ্ডি)

 ভূ মিকায় কৃ ষক ও কমিশন এজেন্ট (ফঁ ড়ে) ।


 ফঁ ড়ে পণ্যের দর হাঁকে ( ন্যুনতম ক্রয় মূল্য বেঁধে দেয় সরকার)।
 কৃ ষকের হাতে বিনিময় মূল্য বেশির ভাগ সময়ে দেরিতে এসে পৌঁছায় ।
ফোঁড়ের( কমিশন এজেন্ট) ভূ মিকাঃ
এরা কৃ ষক ও আড়তদারের মাঝে সেতু বন্ধনে দালালি করে। এরাই মধ্যমণি। এদের স্বীকৃত ভূমিকা আড়তদারেদের কাছ থেকে
সর্বোচ্চ দর আদায় করে , মোটা কমিশন ( ব্রোকারেজ ,কাট মানি, মার্জিন মানি, দালালি) নেয়, বাস্তবে সাধারণ
কৃ ষকদের কাছে ‘সর্বোচ্চ দর’এর ফলশ্রুতি ঘটে না।
৩) বিক্রয়

 কমিশন এজেন্ট ( ফঁ ড়ে) ও প্রসেসর ( আড়তদার)


 প্রসেসর ( আড়তদার) পণ্য ক্রয়ের মূল্য নিয়ে দরাদরি করে ও কমিশন এজেন্ট ( ফঁ ড়ে) থেকে পণ্য কেনে
 কৃ ষকের সাথে আড়তদারদের দেখা সাক্ষাৎ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কারণ শস্য-পণ্যের বিক্রয়ের চু ক্তি মূলত
কমিশন এজেন্টদের মারফৎ হয়ে থাকে।্নডি.২০২০ সালে রয়েছে ১৩১০০০ মধ্যবর্তী ক্রেতাগোষ্ঠী, ১০০০টি
অন লাইন ট্রেডিং মণ্ডি। ।
৪) প্রসেসর ( আড়তদার)

 আড়তদার পণ্য কিনে গোদামে মজুত করে, পরিমার্জ ন করে ও প্যাকিং করে পাইকারকে অথবা সরাসরি খুচরো
বিক্রেতাকে পণ্য সরবরাহ করে থাকে।
 জাহাজ, বিমান, রেল ও সড়ক পথে বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহণ করে থাকে।
৫) ডিস্ট্রিবিউটার (পাইকার) ও রিটেলার (খুচরো বিক্রেতা)

 পাইকার শষ্য কেনে আড়তদারের কাছ থেকে। তার কাছে পণ্য মজত ু রাখার ক্ষমতা বেশী।
 খুচরো বিক্রেতারা পাইকারের থেকে শষ্য বা পণ্য কেনে। এদের মজতু করার ক্ষমতা সীমিত।
 খুচরো বিক্রেতার থেকে উপভোক্তা কেনে।
অন্নদাতা অন্নহীন

ভারত সরকারের প্রতিপালন


সুত্রঃ Document prepared by the Committee on Doubling Farmers’ Income, Department of Agriculture,
Cooperation and Farmers’ Welfare, Ministry of Agriculture & Farmers’ Welfare. August 2017 Doubling Farmers’
Income – Volume IV Post-production interventions: Agricultural Marketing .

১) দ্য রয়্যাল কমিশন অফ এগ্রিকালচার ২০২৮ –


গ্রামগুলি স্বনির্ভ র ব্যবস্থায় ছিল এবং মোট জন সংখ্যার ১১ শতাংশ ছিল শহরের জনসংখ্যা। যোগাযোগব্যবস্থা
অপ্রতু ল ছিল। কৃ ষি জমি ছিল ৯১.৮৫ মিলিয়ন হেক্টর যার মধ্যে খাদ্যশস্যের চাষ হতো ৭৫ শতাংশ জমিতে ও
রবিশস্যের চাষ হতো ২০ শতাংশ জমিতে। ২.৫ শতাংশ জমি ব্যবহৃত হতো সব্জি ও ফলমূলের জন্য। এইসব
জমি বর্ত মানে ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশ ও মায়নামারের অন্তর্গত।
২) ন্যাশনাল কমিশন অফ এগ্রিকালচার ১৯৭০ -
চল্লিশ বছর পরে স্বাধীন ভারতে জাতীয় কৃ ষি কমিশন গঠিত হয়। এদের রিপোর্ট প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ সালে। এই
কমিশন কৃ ষিকে এক বিস্তৃ ত পরিসরে বিশ্লেষণ করেন। এই পরিসরে শুধু শষ্য নয় , মৎস চাষ, অরণ্য সম্পদ,
প্রাণী সম্পদ, জল সম্পদ এসবকেও অন্তর্ভু ক্ত কড়া হয়। শ্রমজীবী মানষে
ু র ৭০ শতাংশ এই বিস্তৃত কৃষি ক্ষেত্র থেকে
জীবন জীবিকা নিরবাহ করতেন। দেশের অর্থনীতিতে কৃ ষির ভূ মিকা ও উৎপাদন বৃদ্ধির তত্ত্ব এবং সামাজিক
ন্যায়ের তত্ত্ব এই কমিশনের বিচার্য বিষয় ছিল। দেশে তখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার তু ঙ্গে। দুটি পঞ্চ বার্ষিক
পরিকল্পনা অতিক্রান্ত। ১৯৬০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে খাদ্য সংকট তীব্র হয়ে পড়ে। কৃ ষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
ব্যবহারের সুপারিশ করেন কমিটি।
৩) ন্যাশনাল কমিশন ফর ফারমারস ২০০৪-
তিরিশ বছর পরে আবার জাতীয় কৃ ষক কমিশন গঠিত হয়। এই কমিশন ভূমি সংস্কার, মাটি পরীক্ষা, সেচের
সুবিধা, কৃ ষি উপাদন
ৎপা দন , কৃ ষি ঋণ ও বীমা, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃ ষকদের মধ্যে আভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির
সুপারিশ করেন। ২০০৬ সালের অক্টোবর চূড়ান্ত রিপোর্টে কমিশন কয়েকটি সরু াহার পথ নির্দেশ করেন। সেগুলি হলঃ
(ক) কৃ ষকদের ন্যুনতম আয় সুনিশ্চিত করা,
(খ) মনুষ্যজনোচিত ও লিংগকেন্দ্রিক সাম্য নির্ধারণের মূলস্রোতে কৃ ষককে স্থান দেয়া,
(গ) কৃ ষকদের জীবন জীবিকার প্রতি মনোযোগ দেয়া,
(ঘ) কৃ ষি কার্যে ও ফসল উৎপাদন পরবর্তী কার্যক্রমে যুবাদের সক্রিয় অংশ গ্রহণে উৎসাহদান,
(ঙ) কৃ ষকদের জীবন জীবিকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ,
(চ) দেশে একটি মাত্র কৃ ষক-বন্ধু বাজার সৃষ্টি যাতে স্থানীয় কৃ ষকদের হাটগুলো উন্নত হতে পারে।
(৪) ডাব্লিং ফার্মারস ইনকাম কমিটি ২০১৬
এই কমিটি পূর্বের চেয়ে কম সময় ব্যবধানে গঠিত হয় এপ্রিল ২০১৬ সালে। রিপোর্ট প্রকাশিত হয় আগস্ট ২০১৭
সালে। এই কমিটির সুপারিশ কার্যকর করার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয় ছয় বছর (২০১৬-১৭ থেকে ২০২২-
২৩)। ভারতে কৃষি যোগ্য জমির পরিমাণ ১৪১ মিলিয়ন হেক্টার যার ৫৫ শতাংশ জমি খাদ্যশষ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
কমিটি উল্লেখ করেছে যে ভূ মিহীন কৃ ষকের সংখ্যা ১৯৫১ সালের হিসেবে ছিল ২৭.৩০ মিলিয়ন ২০১১ সালে
হয়েছে ১৪৪.৩০ মিলিয়ন। ২০১১ সাল্র হিসেব অনযু ায়ী ১১৯ মিলিয়ন পরিবার কৃষিতে নিয়োজিত। সম্ভবত ২০১১ সালের
পরের তথ্য পাওয়া যায়নি, সংখ্যাটা আরও বেশী হতো এবং কৃ ষকের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান যুক্ত
হতো।
খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভ রতা এসেছে। খাদ্য শস্য রপ্তানিতে ভারতের স্থান বিশ্বে সপ্তমে। তবও
ু কৃষকদের আয়ের পরিমাণে
অসাম্য থেকে গেছে। ২০১২ (জুলাই) থেকে ২০১৩ ( জুন) কৃ ষকদের গড় মাসিক আয় ছিল ৬৪২৬ রুপি, এবং
মাসিক ঘরোয়া খরচ ছিল ৬২২৩ রুপি। সরকারী দারিদ্র্য সীমা রেখার নীচে বাস করে ২২. ৫০ শতাংশ কৃ ষক।
জমির অনুর্বরতা ( লবণাক্ত, ক্ষারীয়, আম্লিক প্রকৃ তি), সেচের জলের অপ্রতু লতা, বিশ্ব উষ্ণায়ন, প্রাকৃ তিক
বিপর্যয় ও দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি কৃ ষি ক্ষেত্রে বিশাল প্রভাব ফেলছে।
২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বেরিলিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কৃ ষি বিপণনের ওপর গুরুত্ব দেন। কৃ ষি একটি উৎপাদন ব্যবস্থা
কাজেই এর উৎপাদন ও বন্টনের ক্ষেত্রে অন্যান্য শিল্পের মতই কৃ ষিপণ্য বিপণনের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া আবশ্যিক হয়ে
পড়েছে। তাতে কৃ ষকদের আয় বৃদ্ধি দ্বিগুন হয়ে যাবে।
এই কমিটি তিনটি সংস্থার উপর কৃ ষি পরিষেবার দায়িত্ব বর্তাতে চায়।
 NIAP - ICAR-National Institute (formerly Centre) of Agricultural Economics and Policy Research (NIAP)
was established by the Indian Council of Agricultural Research (ICAR) in March 1991 to strengthen
agricultural economics and policy research in the national agricultural research system.
 National Council of Applied Economic Research : Established in 1956, NCAER is India’s oldest and
largest independent, non-profit, economic policy research institute.
 NCCD - National Calamity Contingent Duty is levied as a duty of excise on certain manufactured goods
specified under the Seventh Schedule of Finance Act, 2001

এই কমিটি প্রধানমন্ত্রীর সাত দফা কর্মসূচীকে ব্যবহার করে তিনটি অ-ধ্রুবক (variables), উৎপাদন জনিত মুনাফা, কৃ ষি
ক্ষেত্রে খরচ কমানো, উপযুক্ত পারিশ্রমিক, মোট চারটি পদক্ষেপ বিবেচনা করেছে।
১) উৎপাদন বজায় রাখা
২) কৃ ষকের উৎপাদিত ফসলের নগদীকরণ (মূল্য নির্ধারণ)
৩) বর্ধিত পরিষেবা আরও শক্তিশালী করা
৪) কৃ ষিকে শিল্পোদ্যোগ নামে স্বীকৃ তি দেয়া এবং নির্মাণগত দুর্বলতা জয় করে উদ্যোগ কার্যকর করা।
অশোক দালুয়াই এর নেতৃ ত্বে গঠিত এই কমিটি ১২ আগস্ট ২০১৭ সালের চতু র্থ পর্ব রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে চতু র্দ শ
পর্বে রিপোর্ট শেষ হয়। অশোক দালয়ু াই হলেন কৃষি মন্ত্রকের অধীন ন্যাশানাল রেনফেড এরিয়া অথরিটির প্রধান। অন্য সদস্যদের
মধ্যে ছিলেন ভারতীয় কিষাণ সঙ্ঘের ( আর এসে এসের শাখা সংগঠন) প্রতিনিধি, ভারতীয় মৎসজীবি সঙ্ঘের
একজন, একজন অর্থনীতিবিদ ও নাবার্ডে র একজন প্রতিনিধি। দুটি সংগঠনের বাস্তবে সদস্য সংখ্যা সারা ভারতের কৃষকদের
প্রতিনিধিত্ব করে না।
সাম্প্রতিক যে তিনটি আইন কেন্দ্রীয় সরকার চালু করেছে এবং ভারতব্যাপী কৃ ষক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে
তা হোল-
 The Farmers' Produce Trade and Commerce (Promotion and Facilitation) Act, 2020
 The Farmers (Empowerment and Protection) Agreement on Price Assurance and Farm
Services Act , 2020
 The Essential Commodities (Amendment) Act, 2020
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ও কৃ ষিমন্ত্রী , এবং শাসক দল ও বৃহৎ পুঁজিপতিদের সংগঠন ও সংস্থাগুলি দাবি
করেছেন যে এই আইন (ক) অবাধ আন্ত রাস্ট্রীয় শস্য বানিজ্য সুগম করে দেবে কোন রাজ্যের কোন এ এম সি বিধি নিষেধ
প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না, (খ) কন্ট্রাক্ট ফারমিং এর কাঠামো সংজ্ঞায়িত করবে( গ) খুচরো দর বৃদ্ধির তীব্রতা রুখতে
মজুত সীমা নির্দিষ্ট করে দেবে।
কি আছে এই কমিটির সুপারিশ মেনে লোকসভায় ও রাজ্যসভায় কৃ ষি সংস্কার বিধি চালু করার পেছনে? মূলত এটা
পুঁজিবাদী আর্থিক সংস্কারের অঙ্গ ছিল প্রথম থেকেই। ১৯৯১ সাল থেকে উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ ও বিশ্বায়নের উদ্দেশ্যে
ধাপে ধাপে এগোনো চলছিল। মনমোহন সিং সরকার কৃষি নীতি গ্রহণ করতে অতিরিক্ত বিলম্ব করায় সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের মত ঘটনা
ঘটেছিল। রাজ্য সরকারের ও স্বাধীনতা আছে কৃ ষি নীতি ভু মি সংস্কার ও শিল্প নীতি গ্রহণ করার। রাজ্য নীতি যদি কেন্দ্রীয়
নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় না রাখে তো যুক্ত রাস্ট্রীয় ব্যবস্থায় রাজ্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে বাধ্য।
কৃ ষির কর্পোরেটাইজেশন ( বৃহ ৎ পুঁজির অধিগ্রহণ) কোন ধনতান্ত্রিক দেশের কৃ ষকদের কোন উন্নয়ন ঘটায়নি। সর্বত্র কৃষক
আন্দোলন হয়েছে স্বল্প কিছু রিলিফ আদায় হয়েছে। কর্পোরেটাইজেশন ( বৃহ ৎ পুঁজির অধিগ্রহণ) যদি কৃ ষকের দারিদ্র্য মুক্তির
সোপান হতো তাহলে আমেরিকাকে ভারত ও চীন থেকে খাদ্যশস্য আমদানির উপর ভরসা করে দেশ চালাতে
হতো না। কারণ কৃষি জমির পরিমাণ আমেরিকা ও ভারতে প্রায় কাছাকাছি।

এপিএমসি ( APMC)
নয়া কৃ ষি আইনে এপিএমসি ( APMC) এক মুখ্য ভূ মিকায় থাকবে। তার আগে এপিএমআর(APMR) সম্বন্ধে জেনে
নেয়া আবশ্যক।
১৯৩৮ সালে কৃ ষি পণ্যের ন্যায্যমূল্যে বিক্রয়ের জন্য সরকার নিয়ন্ত্রিত মন্ডি(হাট) বিল প্রকাশ করা হয়। এই আইনের নাম
এগ্রিকালচারাল প্রডিউস মার্কে টস রেগুলেশন বিল ( APMR), পূর্ববর্তী প্রবক্তা ছিল রয়্যাল কমিশন অন এগ্রিকালচার,
১৯২৮ তাদের সুপারিশ ছিল এর সারা দেশে একটি কৃ ষি মণ্ডি তৈরি করার। স্বাধীনতার পর তা আইনে রূপান্তরিত হয়। বিভিন্ন
রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় সব্জি মণ্ডি যা এপিএমআর আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং এর দায়ভার এতকাল ছিল রাজ্য সরকার দ্বারা
নিযুক্ত এগ্রিকালচারাল প্রডিউস মার্কে টস কমিটির (APMC) উপর। কৃষকরা এই মণ্ডিতে ফসল নিলাম করার সয ু োগ পেত ও
ক্রেতাদের মণ্ডি থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে হোত। শপিং মল বা উপভোক্তারা এখান থেকে সরাসরি কিনতে পারতো না।
এপিএমসি মডেল অ্যাক্ট ২০০৩ এর উপযোগিতা ছিল-
১) চু ক্তিবদ্ধ চাষের ( কন্ট্রাক্ট ফারমিং) এর সুবিধা
২) দ্রুত পচনশীল শস্যের হাট
৩) কৃ ষকেরা নিজেদের জন্য মণ্ডি গঠন করতে পারত
৪) লাইসেন্সের নিয়ম কানুন শিথিল করা হয়েছিল
৫) একবারের মতন মার্কে ট ফি
৬) এপিএমসি থেকে সংগৃহীত শুল্ক মণ্ডির পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহৃত হতো।
কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৫ সালে রা।জ্য সরকার ও নীতি আয়োগের যৌথ উদ্যোগে United National Agriculture Market
গঠনের জন্য আইন প্রণয়ন করেন।
কৃ ষককে ভারতে গর্ব করে বলা হয় অন্নদাতা। এরা সমাজের ভিত্তি। খাদ্যের উৎপাদন এদের শ্রমের বিনিময়ে হয়। অত্যন্ত আদিম
উৎপাদন ব্যবস্থা যা কিনা সংস্কৃ তিতে পরিণত হয়েছে । কৃ ষি থেকেই এসেছে কৃ ষ্টি। দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় এর ‘ভারতীয়
দর্শণ’ গ্রন্থে বলেছেন- কৃ ষি উৎপাদন ছিল সিন্ধু সভ্যতার অর্থনৈতিক ভিত্তি। তাই এ সভ্যতায় শষ্যদায়িনী বসমু াতার,
শাকম্ভরীর উপাসনা অস্বাভাবিক নয়। …প্রাচীন মাত ৃপ্রধান সমাজব্যবস্থার অর্থনৈতিক ভিত্তি কি? উত্তরে বলা হয়েছে, প্রাথমিক
পর্যায়ের কৃ ষি উৎপাদন। কেননা কৃষি কাজ মেয়েদের আবিষ্কার আদিম কৃষিভিত্তিক সমাজও তাই মাত ৃ প্রধান”।
ভারতে তথা এশিয়া মাইনরে তাই কৃ ষি, শস্য ফলান, শুধুমাত্র একটি উদ্যোগ বা ব্যবসায় নয়। জমির সঙ্গে ফসলের সঙ্গে
আবেগের এক সম্পর্ক এখনও টিকে আছে। এই আবেগকে সমমান দিয়ে ভারতে প্রথম কৃ ষি কমিশন বসে ১৯২৮ সালে,
দ্য রয়্যাল কমিশন অফ এগ্রিকালচার । তখন মায়নামার, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ভারতের অন্তর্ভু ক্ত ছিল। আপাত সর্বশেষ
কৃ ষি কমিশন বসে ২০১৬ সালে, ডাব্লিং ফার্মারস ইনকাম কমিটি। এটি নিয়ে মোট চারটি কৃষি কমিশন ছাড়াও স্বাধীন ভারতের
পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনাতেও কৃ ষকের স্বার্থে অনেক কথা বলা হয় অনেক পদক্ষেপও নেয়া হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে চতু র্থ
কমিশনের সুপারিশে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হল ২৭ শে সেপ্টেম্বর।
এই কমিটি পুরানো কমিটির সব কিছু নস্যাৎ করে শুধু এপিএমসি (APMC)ও চু ক্তিভিত্তিক চাষ(Contract Farming)
বজায় করে আধুনিকীকরণের নামে কৃ ষি ব্যবস্থা লিমিটেড কোম্পানি অর্থাৎ বৃহৎ পুঁজির কর্পোরেট সেক্টরের ,বাজার
অর্থনীতির প্রতিযোগিতায় কৃ ষকদের ঠেলে দিল। এতে নাকি ভারতের কৃষক সমাজ আরও বেশী আয় করবে ও সামাজিক ন্যায়
পাবে। কর্পোরেট সেক্টরের বৃহৎ পুঁজির মালিকেরা হলেন রিলায়েন্স এর দুই আম্বানি, গৌতম আদানি, গোদরেজ, আমাজন,
বিদেশি দু পঁ ও মন সান্তো এরকম সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী ব্যবসায়ী থেকে নামতে নামতে স্থানীয় লিমিটেড কোম্পানির মালিকেরা যারা
রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রন ও প্রতিপালন করে থাকে। কৃষকদের পক্ষে যারা কুলাক অর্থাৎ হেক্টর হেক্টর জমির মালিক তারা আগে
থেকেই ‘চু ক্তিভিত্তিক চাষ’ এর মাধ্যমে পঞ্জাব হরিয়ানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু মধ্য প্রদেশ গুজরাতে সীমিত ক্ষেত্রে
বিনিয়োগ করে রেখেছিল কারণ আইনের সহায়তা সীমিত ছিল। সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে কর্পোরেট ফারমিং এর জন্য আইনের
সহায়তা সীমাহীন হয়ে গেল। ধনী মধ্য ক্ষু দ্র প্রান্তিক কৃ ষকের গলায় বকলস পরিয়ে দিল নয়া কৃ ষি আইন।
হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্টে র কাছে তাদের বিচার প্রার্থনা করার অধিকারটু কু ছিনিয়ে নিল এই আইন।
ভূ মি সংস্কারের পরে ক্ষু দ্র চাষির সংখ্যা বেড়ে গেছে সারা ভারতে, আমূল ভু মি সংস্কারের কাজ শুরু হয় কাশ্মীরে
ন্যাশানাল কনফারেন্স ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি র উদ্যোগে। তারপরে বামফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে কেরলে, পশ্চিমবঙ্গে ও
ত্রিপুরায়। সেখানে প্রান্তিক চাষিকেও কৃষি ক্ষেত্রের মালিকানা সরকারীভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এর সঙ্গে রয়েছে ক্ষেত মজরু দের সস্থু
ভাবে বেঁচে থাকা। পরবর্তীতে প্রধান মন্ত্রী রাজীব গান্ধী পশ্চিমবঙ্গের ধারা অনু্সরণ করে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ভূ মি সংস্কারকে
জাতীয় স্তরে আইন করে পৌঁছে দেন।
চাষ ও ফসল উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কৃ ষকের সংখ্যা ২০২০ সালে ১৬.৬ মিলিয়ন। সরবরাহ (ঋণ সমেত) ও বন্টন
ব্যবস্থা কৃ ষকের স্বার্থ রক্ষা না করতে পারায় বছরে কৃ ষক আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। সম্পূর্ণ চক্তি
ু বদ্ধতা অর্থাৎ
যেক্ষেত্রে দাদনদার কোম্পানি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় নিবেশ সরবরাহ করবে, এবং ফসলের মালিকানা কিনে নেবে।
সেক্ষেত্রে কৃ ষক শুধু জমি ও শ্রম সরবরাহ করবে মাত্র। কর্পোরেট দাদনদারদের ইচ্ছে মতন শস্য চাষ হবে, মজুত
হবে, দর স্থির হবে ও বিক্রি হবে। অনেকটা নীল চাষের ইতিহাসের পনু রাব ৃত্তি।
দু পঁ, মন সান্তো, সিবা জিজি, র‍্যানবাক্সির মত বৃহৎ বিতর্কি ত কোম্পানিগুলির প্রতিনিধিত্বকারী ভারতীয় কোম্পানিগুলি
সার, কীটনাশক, জীনবিবর্তি ত শস্য দানা কৃ ষকদের বিক্রয় করে। ‘বিতর্কিত’ হওয়ার কারণ আটের দশকে বিশ্ব ব্যাপী এই
কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে কৃ ষক বিক্ষোভ ও বিভিন্ন দেশের এমনকি আমেরিকার শীর্ষ আদালত এদের অনেকের বিরুদ্ধে
রায় ঘোষণা। তারপরে কম্পোস্ট সারের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। এদের সার, রাসায়নি্‌কীটনাশক কয়েক বছরে জমির
উর্বরতা শেষ করে দেয়। তার শিকার আমেরিকার কৃষক ও মৎসচাষকারীরা। আমেরিকাকে খাদ্য শস্যের জন্য ভারত ও চীনের ওপর
নির্ভ র করতে হয়। মার্কি ন প্রেসিডেন্ট থাকালীন জর্জ বুশ এবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, আমেরিকার খাদ্য ঘাটতি
ঘটছে কারণ ভারতীয়রা বেশী খাচ্ছে তার জন্যে।
বিশাল সংখ্যক ভারতীয় গরীব মধ্যবিত্ত কৃ ষকের সামনে নয়া কৃ ষি আইন যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েক কোটি সাধারণ
মানুষের ন্যুনতম খাদ্য ( চাল, ডাল গম, তেল আলু পেঁয়াজ) যা অত্যাবশ্যক পণ্য তালিকা থেকে বাতিল করে বাজার
অর্থনীতির হাতে ছেড়ে দেয়া। এক কথায় প্রথম বিশ্বের খাদ্য সরবরাহ বজায় রাখতে এবং সারা বিশ্বের ধনিক শ্রেণীর খাদ্যের
যোগান অপ্রতিহত রাখতে এই আইন বিশেষ করে কার্যকর হবে। পেট্রলজাত পণ্য বাজারী অর্থনীতির হাতে তু লে দেয়াতে
পেট্রলের দাম কমেনি ভারতবর্ষে। কৃ ষি পণ্য বাজার অর্থনীতির হাতে তু লে দেয়াতেও খাদ্য শস্যের দাম তো কমবেই না,
অসম প্রতিযোগিতায় কৃ ষক ক্রমশ জমি হারাবে আরও গরীব হবে। যা ও বা জমি থেকে নিজের পরিবারের পেটের দায় মেটানো
যাচ্ছিল তাও ক্রমশ হারিয়ে যাবে। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করতে পারলে বা বেসরকারি সংস্থার চাহিদা পূরণ করতে না
পারলে কৃ ষকের আত্মহত্যা বেড়ে যাবে। অন্যদিকে জমি হাঙরেরা সুযোগ খুঁজবে কি করে জমি হাতানো যায়। এটা
পশ্চিমবঙ্গের কৃ ষক হাড়ে হাড়ে টের পায়নি কারণ তারা দু এক হেক্টর জমির মালিক, তারা ছোট জোতের মালিক। কিন্তু
পঞ্জাব হরিয়ানা গুজরাত মহারাস্ট্র অন্ধ্রপ্রদেশ তামিলনাড়ু যেখানে সীমিত আকারে কর্পোরেট চাষ হচ্ছিল সেখানকার বড়
জোতের মালিক (কু লাকরা) কন্ট্রাক্ট ফারমিং ব্যবহার করে বিপদটা টের পেয়ে গেছে বলেই তারা রাস্তায় নেমে ক্ষু দ্র ও
মাঝারি চাষীদের আন্দোলনে সামিল হয়েছে। খবু স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের সোশ্যাল ডেমোক্রাটরা ও সোশ্যালিস্টরা এই
আন্দোলনে সহায়ক শক্তির ভূ মিকা পালন করেছে কারণ তাদের কৃ ষক সংগঠনগুলো কৃ ষকের আত্মহত্যা, ফসলের ন্যায্য
দা্‌স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ প্রণয়ন নিয়ে বিগত পাঁচ বছর ধরে টানা আন্দোলন করে ৪০টি কৃ ষক ইউনিয়নের ‘সংযুক্ত
কিষাণ মোর্চা’ ও ২৫০টি কিষাণ ইউনিয়নের ‘সারা ভারত কিষাণ সঙ্ঘর্ষ সমন্বয় কমিটি’ গড়ে তু লেছে এবং এই দুটি মঞ্চ
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন পরিচালনায় নেতৃ ত্ব দিচ্ছে ।
[এর পর তৃ তীয় পর্ব]

কৃ ষকদের দাবীর কি ও কেন


কেন্দ্রীয় কৃ ষি মন্ত্রীকে দেয়া (২৮শে জানুয়ারি ২০২১) লিখিত দাবি সনদ

১ কৃ ষি সংক্রান্ত আইনগুলির উপর আলোচনার জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশনে তিনটি নয়া কৃ ষি আইন রদ করতে
হবে।

তাদের বক্তব্য এই তিনটি আইন কৃ ষির উপর কর্পোরেট প্রাধান্য বাড়াবে এবং জমির মালিক কৃ ষক থেকে কৃ ষি
শ্রমিক সকলেই কর্পোরেট শোষণের শিকার হবে। উচ্চতর আদালতে কৃ ষকদের বিচার প্রার্থনার অধিকার খর্ব
করা হয়েছে নয়া কৃ ষি আইনে।

২ ফসলের ন্যুনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণ এবং রাজ্যের হাতে ফসল সংগ্রহের আইনগত অধিকার দিতে হবে ।
রাজ্যের হাত থেকে কৃ ষি সংক্রান্ত সমস্ত অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে নয়া কৃ ষি আইনে। যৌথ তালিকাভুক্ত ক্ষমতার
বিকেন্দ্রীকরণ বজায় রাখতে হবে।
৩ প্রচলিত সংগ্রহ ব্যবস্থা জারি রাখার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
ফসল সংগ্রহের অধিকার কর্পোরেট বেনিয়াদের এক্তিয়ারভু ক্ত করা হয়েছে। তা যেমন ছিল তেমন রাখতে হবে অর্থাৎ রাজ্য
সরকারের এক্তিয়ারেই রাখতে হবে।
৪ স্বামীনাথন প্যানেল রিপোর্ট লাগু করতে হবে এবং ইত্যবসরে উৎপন্ন ফসলের গড় ওজনকৃ ত দরের ৫০ শতাংশ
বাড়তি হিসেবে সমমানের ন্যুনতম সহায়ক মূল্য দিতে হবে।
৫ কৃ ষিতে ব্যবহারযোগ্য ডিজেলের মূল্য ৫০ শতাংশ কম করতে হবে
সারা বিশ্বে পেট্রল ডিজেলের দর নিম্নমুখী অথচ ভারতে এই খনিজ তেলের নিয়ন্ত্রণ বাজার পুঁজির নিয়ন্ত্রণে থাকায়
এবং সরকার শুল্ক বাড়িয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির বন্দোবস্ত করায় সব সময়ে জ্বালাই তেলের দর উর্ধমুখী। ডিজেলের দর ব ৃদ্ধি কৃষিতে
পরিবহনে বাড়তিমূল্য যোগ করে ফলে ফসলের বিক্রয় মূল্য বেশি হলেও উৎপাদন খরচের সঙ্গে মণ্ডিতে বিক্রয় দরের
মুনাফার বিশেষ তারতম্য থাকে না। কৃ ষক তার পারিবারিক খরচ জোটাতেই হিমশিম খায় এবং ব্যাংকের বা
মহাজনের ঋণ শোধে অপারগ হয়ে আত্মহত্যার পথে যায়। স্বামীনাথন কমিটির ফর্মুলাতে ফসলের ন্যুনতম
সহায়ক মূল্য নির্ধারণ জরুরী হয়ে পড়েছে।
৬ দ্য কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট ইন দ্য ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়ন (এন সি আর) এন্ড
অ্যাডজয়েনিং এরিয়াস অর্ডি ন্যান্স ২০২০ বাতিল করতে হবে এবং নারা পোড়া ( পারালি) সংক্রান্ত শাস্তি ও জরিমানা রদ
করতে হবে
এর সঙ্গে দিল্লির রাজ্য সরকার ,গ্রীন ট্রাইবুনাল ও সুপ্রিম কোর্টে র রায় জড়িত। দিল্লির ( এন সি আর) পরিবেশ দূষণ কাটাতে
যে যে ফ্যাক্টর গুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল তা হল পরিবহণ, শিল্প, কারখানা, ও পারালি। পরিবহনে সি এন জি ব্যবহার
বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিছু কারখানা দিল্লির উপকন্ঠে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল এবং কৃ ষি জমিতে ফসলাবশেষ
জ্বালানো ( পারালি) বন্ধে উদ্যোগ নেয়া হয়। কোনটাই পূর্ণ সার্থক হয়ে ওঠেনি। পারালি বন্ধ করাতে পসু া বায়ো ডিক্মপোজার ব্যবহার
চালু করা হয়। এসব ছিল কংগ্রেসি সরকারের আমলে। ২০২০ সালে পার্শ্ববর্তি অঞ্চলে (অ্যাডজয়েনিং এরিয়াস) যুক্ত হয়
হরিয়ানা পঞ্জাব রাজস্থান হিমাচল প্রদেশ ও উত্তর প্রদেশ। এই রাজ্যগুলিতে নতুন শিল্প স্থাপনে নতুন কমিটির নো অবজেকশন
সারটিফিকেট নিয়ে কাজ শুরুর কথা বলা হয়েছে যদিও চালু পরিবহণ ও শিল্প কারখানায় তেমন কোন
উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। বরঞ্চ ঐ রাজ্যের গ্রামে গ্রামে পারালির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার ও শাস্তি জরিমানা জারি হয়েছে।
কমিশন একমেবাদ্বিতিয়ম এবং স্থায়ী বন্দোবস্ত যেখানে কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের আধিক্য বেশী বাকি সকলের জন্য এমন কি
রাজ্য সরকারের ও প্রতিনিধি মাত্র একজন। এখানেও অভিযুক্ত কৃ ষকদের উচ্চ আদালতে যাবার এক্তিয়ার আটকানো
হয়েছে।
৭ নারা পোড়ানোর অভিযোগে প্রেফতার হওয়া কিষাণদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। দিল্লি হরিয়ানা পঞ্জাব রাজস্থান হিমাচল
প্রদেশ ও উত্তর প্রদেশ অন্যান্য প্রদূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শম্বুক গতিতে চলছে। দিল্লিতে পরিবহনে সি এন জি ব্যবহার
ইউপিএ ১ সরকারের আমল থেকে চালু ছিল এবং তা এখন সম্পুর্ণ হয়েছে এছাড়া বাকি সবরাজ্যে দূষণ পরিস্থিতি একই
আছে। কেন্দ্রীয় স্তরে বা রাজ্য স্তরে ‘পুসা বায়ো ডিকম্পোজার’ ( দ্বারভাঙ্গার পুসাতে রাজেন্দ্রলাল এগ্রিকালচার
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবিষ্কৃ ত) সরবরাহ প্রভু ত না থাকায় দিল্লি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের কৃ ষকেরা অনেকেই নারা পোড়াতে বাধ্য
হয়েছিলেন। তাদেরকে নারা [পোড়ানো আইন লঙ্ঘনের জন্য গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠানো হয়।
৮ বিদ্যুৎ আইন ( সংশোধনী) ২০২০ বাতিল করতে হবে
এই সংশোধনী কেন্দ্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং যৌথ তালিকা ভু ক্ত হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যের ক্ষমতা সংকোচন করবে।
বিদ্যুৎ বিতরণ রাজ্যের এক্তিয়ারে পড়ে তাই বিতরণের অংশটিকে বেসরকারিকরণ করে কর্পোরেট সেক্টরের হাতে তু লে
দেয়া হবে। ভরতু কি সরাসরি উপভোক্তার খাতায় পৌঁছে যাবে যার দায়িত্বে থাকবে কর্পোরেট সেক্টর। ২০১৪ থকে ২০১৮ যে
সব সংশোধনী কেন্দ্রীয় সরকার এনেছিল তার উপকার পরিলক্ষিত হয়নি এবারের সংশোধনী আসলে বিদ্যুৎ
উৎপাদন থেকে বিতরণ সবটাই কর্পোরেট সেক্টরের হাতে তু লে দেয়ার পদক্ষেপ।
৯ কেন্দ্র রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ জারী থাকবে
বর্ত মানে যৌথ তালিকায় ৫২টি বিষয় নথিভু ক্ত আছে। এর মধ্যে আছে শিক্ষা, অরণ্যাঞ্চল, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ,
বিদ্যুৎ , শ্রম উন্নয়ন, আইন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, পরিবার পরিকল্পনা , স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ইত্যাদি।

(ক) বিধানিক সম্বন্ধিত ( অনুচ্ছেদ ২৪৫-২৫৫) ( খ) প্রশাসনিক সম্বন্ধিত ( অনুচ্ছেদ ২৫৬-২৬৩) (গ) আর্থিক সম্বন্ধিত (
অনুচ্ছেদ ২৬৮-২৯৩) এ ছাড়া আছে রাজ্য তালিকার ৯৮টি বিষয় সূচী।

যৌথ তালিকার ক্ষেত্রে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে আইন প্রণয়ন ও সংশোধন করা বাঞ্ছনীয় বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্র
বিশেষ সাংসদীয় পদ্ধতি মেনে একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে পারে যা সারকারিয়া কমিশনের সুপারিশে কেন্দ্রের বিশেষ ক্ষমতা
প্রয়োগে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে যাতে যুক্ত রাস্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী না হয়।

১০ কৃ ষক আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে আনা মামলা প্রত্যাহার করে তাদের কারা মুক্ত করতে হবে।
কৃ ষক আন্দোলনে সহযোগ ও সংযোগের কারণে বিভিন্ন প্রদেশে শতাধিক কৃ ষক নেতা প্রেপ্তার হয়েছেন এবং তা বেশির
ভাগ রাস্ট্রদ্রোহ আইনে সন্ত্রাস দমন আইনে। এর মধ্যে শিখদের খালিস্তানি, মুসলিমদের পাকিস্তানি এবং কমিউনিস্টদের
রাস্ট্রদ্রোহী চিহ্নিত করে ইউ এ পি এ ১৯৬৭ আইনে কারও কারও বিরুদ্ধে এন এস এ ১৯৮০ আইনে মামলা আনা হয়েছে।

“এত বিদ্রোহ কখনো দেখেনি কেউ, দিকে দিকে ওঠে অবাধ্যতার ঢেউ”
( সুকান্ত ভট্টাচার্য)
কিষাণ সংযুক্ত মোর্চা ও কোঅর্ডি নেশন কমিটি ২৪ শে সেপ্টেম্বর ও ২৩শে অক্টোবর ২০২০ রেল রোকো
আন্দোলন করে। রাজ্য সরকারের বাধ্যবাধক্তার কথা মাথায় রেখে ২৫ শে নভেম্বর দিল্লি চলো আন্দোলনে ব্রতী
হয়। ২৬শে নভেম্বর কিষাণদের দাবির সমর্থনে ভারত বন্ধ পালন করে ২৫ কোটি শ্রমজীবী মানুষ। ২৭শে নভেম্বর
দিল্লি সীমান্তে একজন কৃ ষক পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শত নিপীড়ন তু চ্ছ করে পুলিশের জল কামান দখল
করে । তাকে হত্যার অভিযোগ দাগিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। আন্দোলন তীব্রত্র হতে থাকে ১৫ থেকে ৩০ লাখ
কিষাণ দিল্লির প্রতিবেশি রাজ্য পঞ্জাব হরিয়ানা হিমাচল প্রদেশ ও উত্তর প্রদেশ থেকে দিল্লি সীমান্তে জড়ো হতে
থাকে। কেন্দ্রীয় সরকার দমন পীড়ন বন্ধ রেখে আলচনায় রাজি হয় ৩রা ডিসেম্বরে।
কিষাণ আত্মহত্যা ছেড়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে পাঁচ বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে, এতগুলো বছর আবেদন
নিবেদনে কেটেছে। অল ইন্ডিয়া কিষাণ সভা (এ আই কে এস) এই কাজে বিশাল বিশাল কিষাণ জাঠা সংঘটিত
করেছে দেশ ব্যাপী। ৪০টি কিষাণ ইউনিয়নের এই সত্যাগ্রহ আন্দোলনে নেতৃ ত্ব দিচ্ছেন সাতজন নেতা হান্নান
মোল্লা ও অশোক দাভলে ( এ আই কে এস) জগজিত সিং দালিয়া ( বি কে ইউ- সিধুপুর), ডঃ দর্শন পাল (
ক্রান্তিকারী কিষাণ ইউনিয়ন), বলবির সিং রাজেওয়াল ( বিকে ইউ-রাজেওয়াল), যোগেন্দ্র যাদব ( স্বরাজ ইন্ডিয়া)
ও গুমনাম সিং(শিব কু মার কাক্কা) ।
এছাড়াও কমিটিতে আছেন রাকেশ টিকায়েত ( বিকে ইউ -টিকায়েত), হরিন্দর সিং লাখোয়াল( বিকে ইউ-
লাখোয়াল), কু লবন্ত সিং সান্ধু ( জামহুরি কিষাণ সভা), বুটা সিং বুরগিল( বি কে ইউ বুটা সিং বুরগিল),প্রেম
সিং ভাঙ্গু( কু ল হিন্দ কিষাণ ফেডারেশন)।
আইনি পরামর্শদাতা – কলিন গঞ্জালভেস, দুশ্মন্ত দাভে , এইহ এস ফু ল্কা, এবং প্রশান্ত ভূ ষণ।
প্রচন্ড শীতে জাতীয় সড়কের ওপর সত্যাগ্রহে বসে আছে পঞ্জাব হরিয়ানা হিমাচল ও উত্তর প্রদেশের কৃ ষক
পরিবার লাঠি, গুল, কাঁদানে গ্যাস, জল কামান তু চ্ছ করে। ২রা জানুয়ারি পর্যন্ত স্বীকৃ ত মৃত্যুর সংখ্যা ১২০
ছাড়িয়েছে। একদিকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কৃ ষকদের সঙ্গে আলোচনা্র রসিকতা করছে অন্যদিকে
যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বিএস এফ, সি আর পি, কাঁটা পেরেকে, কাঁটা তার দিয়ে দিল্লি সীমানাকে ভারতের সীমান্ত
বানাচ্ছে। মুসলিম কৃ ষকদের পাকিস্তানি শিখ কৃ ষকদের খালিস্তানি, কমিউনিস্ট বা সোশ্যালিস্ট পতাকাধারী
কৃ ষকদের দেশদ্রোহী আখ্যা দিচ্ছে। রাস্ট্রদ্রোহীতা ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনে দেশের কৃ ষকদের গ্রেপ্তার করছে।
২৬শে জানুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকার সংযুক্ত কিষাণ মোর্চাকে অনুমতি দিলো প্রজাত্নত্রের কু চকাওয়াজের পরে
কৃ ষকদের শান্তি পূর্ণ ট্রাক্টর জাঠা প্রদর্শনের। অথচ বিজেপির কিছু সদস্য কৃ ষকদের ছদ্মবেশে সেই প্রদর্শনকে
কালিমালিপ্ত করতে লাল কেল্লায় শিখ ধর্মের পতাকা তু লে দিলও যাতে কৃ ষক আন্দোলনের উপর এবং
শিখদের উপর ফৌজদারি কেস করে বিব্রত করা যায়। যে সাংবাদিক এই সত্য প্রকাশ করলেন তাকে আটক করা
হল এবং দোষী ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দিয়ে সরিয়ে দেয়া হল।
কৃ ষক নেতাদের বিরুদ্ধে এবং তাদের সমর্থক বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে দেশের সব কালা কানুন লাগু
করা হয়েছে।
স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এত বড় কৃ ষক বিদ্রোহ এই প্রথম। ভারতের সংবিধান ভারতের গণতন্ত্র ভারতের অন্ন
সুরক্ষা করতে কৃ ষকদের এত বড় আত্ম বলিদান এই প্রথম। রাস্ট্রপুঞ্জ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড,
মার্কি ন যুক্তরাষ্ট্র সমেত সা্রা বিশ্ব উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে আছে এই অভিনব সত্যাগ্রহের দিকে। সেখানকার বামপন্থী
ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী সংগঠনগুলো ভারতের কৃ ষক বিদ্রোহকে সমর্থন জানিয়েছে।
“বেয়নেট হোক যত ধারালো কাস্তেটা ধার দিয়ো বন্ধু
শেল আর বম হোক ভারালো কাস্তেটা শান দিয়ো বন্ধু
নতু ন চাঁদের বাকা ফালিটি তু মি বুঝি খুব ভালো বাসতে
চাঁদের শতক আজ নহে তো এ যুগের চাঁদ হল কাস্তে”। (দীনেশ দাস)

You might also like