You are on page 1of 8

খাজা বাবাঃ আপনি বাংলাদেশের একটা খুব সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ-কে বিডিআর হত্যাকান্ড

সম্পর্কে তার কি ধারনা জিজ্ঞেস করুন- দেখুন সে কি বলে।......... এখানে আপনার নিজের তথ্য
বা এনালাইসিস-তো কিছুই নেই।

ডঃ মুশফিকঃ বিডিআর হত্যাকান্ড না বলে বলুন বিডিআর বিদ্রোহ । খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে
এই বিদ্রোহের কোনই সম্পর্ক নেই। সুতরাং, এই বিদ্রোহ সম্পর্কে খেটে খাওয়া মানুষের কোন
মতামত অপ্রাসঙ্গিক। এই খেটে খাওয়া মানুষের তথ্য বা এনালাইসিস আপনার একান্ত ব্যক্তিগত
এবং এর কোন ভ্যালিড রেফারেন্স আপনার কাছে নেই। তবে, হ্যাঁ, খেটে খাওয়া মানুষ
বিডিআরের নিম্নপদস্থ কর্মচারীরাই, আর্মিদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নয়। সেই বিচারে, খেটে
খাওয়া মানুষ কখনো আরাম আয়েশ করা আর্মিদের পক্ষে কথা বলবেই না।

খাজা বাবাঃ আওয়ামী লীগ সরকার যে ভারতের সাথে যোগসাজসে সুপরিকল্পিত ভাবে এই
হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে- সেটা প্রমান করার জন্য এখন আর নতুন কোন এভিডেন্সের দরকার নেই,
এভিডেন্সের পাহাড় জমা হয়ে আছে; সময় আসলেই জনগনের কাছে সব প্রমান প্রকাশিত হবে।

ডঃ মুশফিকঃ এভিডেন্সের পাহাড়ের ১ টি এভিডেন্সও দিতে পারলেন না, খালি বড় বড় কথাই


বলে গেলেন, দাবীই করে গেলেন। আর সময় আসলে প্রমাণ প্রকাশিত হবে----এমন বক্তব্যের
মাধ্যমে এটাই প্রমাণ করলেন এখনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং প্রমাণ এখনো খুঁজে যাচ্ছেন,
তাই সময়ের বাহানা দিলেন।

খাজা বাবাঃ ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে সম্পূর্ণ একতরফা ভাবে শুকনা মৌসুমে বাংলাদেশ-এর পদ্মা নদীর
পানি তুলে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ-কে মরুভূমির মতো অবস্থায় পরিনত করে সমগ্র বাংলাদেশের
অর্থনীতি, কৃষি, যোগাযোগ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরিবেশ যে দেশ তৈরি করেছে, তাকে কি
আপনি আমাদের দেশের বন্ধু মনে করেন? এটাই কি আমাদের প্রতি ভারতের বন্ধুত্বের নমুনা?

ডঃ মুশফিকঃ ফারাক্কা বাঁধের কাজ বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার অনেক আগে পাকিস্তান আমলে ১৯৬১
সালে শুরু হয় এবং ১৯৭৫ সালে শেষ হয়। বন্ধুত্বরক্ষা মানে এই না যে, নিজের দেশের
স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাপারগুলোকে বিসর্জন দিয়ে বন্ধুত্ব পাতাতে হবে। আর বাংলাদেশ ১৯৭৫ পর্যন্ত
ন্যায্য হিস্যা পেয়েছে। তার প্রমাণ আওয়ামী বিরোধী মিজানুর রহমান খানের রিসার্চের ডাটাতেও
প্রমাণিত। মেজর জিয়াউর রহমানের পেছন থেকে কলকাঠি নাড়া এবং তার ইন্ধনে কিছু
বিপথগামী অফিসারদের দ্বারা বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর থেকে ভারতের সঙ্গে
বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি হয়, এই অবনতি হওয়ার পেছনে উগ্র ইসলামপন্থী শক্তির
মাথাচাড়া দেওয়া এবং রাজাকার ও উগ্রপন্থী ইসলামী শক্তিকে প্রশ্রয় দেওয়া জিয়াউর রহমানের
অবদান সবচেয়ে বেশি। যেভাবে বাংলাদেশের মানুষকে ভারতবিরোধী করে তোলা হয়, তাতে
ভারত সরকারও বিরক্ত হয়ে বাংলাদেশের মতই একইপন্থা অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা
যদি কথায় কথায় ভারত বিরোধী মন্তব্য না দিতাম, কথায় কথায় ধর্মের নামে ভারত বিরোধিতা
না করতাম, আজকে ভারতও আমাদের কথা বিবেচনা করে দেখতো। আমরা নিজেরাই এই
সমস্যা তৈরি করেছি। তারপর ১৯৯৬ সালে গঙ্গা পানি চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনা গঙ্গার পানির
ন্যায্য হিস্যা আদায় করে কৃষক সমাজের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন।

খাজা বাবাঃ আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী শান্তি বাহিনী কে সৃষ্টি করেছে বলে আপনি
মনে করেন? কে তাদেরকে ট্রেনিং, অর্থ এবং অস্ত্র দিযে দশকের পর দশক ধরে আমাদের সাথে
যুদ্ধ করার খরচ যুগিয়েছে বলে আপনি মনে করেন? যে দেশ আমাদের দেশের সাথে এই রকম
শত্রুতা করতে পারে, তাকে আপনি আমাদের বন্ধু মনে করেন কি না?

ডঃ মুশফিকঃ ১৯৬২ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের সময় ৯৮.৫ % পাহাড়ি জনসংখ্যা অধ্যুষিত
পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের সেখান থেকে পাকিস্তান সরকার উৎখাত করে, ১০০০০০ (এক
লক্ষ) পার্বত্য আদিবাসীদের ভূমি বিতাড়িত করা হয় এবং তাদের জমিজমা আর তারা ফেরত
পায়নি, ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি, পাকিস্তান সরকারের এই কাজে সহযোগিতা করে কুখ্যাত
রাজাকার ফজলুল কাদের চৌধুরী ও অনেক স্থানীয় মুসলিম লীগার পূর্বপাকিস্তানী। বঙ্গবন্ধুর
আমলেও তাদের স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিন্তু জিয়া আমলে তাদের সঙ্গে
চরমভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করা হয়। আর্মি দিয়ে অজস্র বাংলাদেশীকে পার্বত্য চট্টগ্রামে
সেটল করানো হয় আর আর্মিদের পেছন থেকে সাহায্য সহযোগিতা ও মদদ পেয়ে বাংলাদেশী
অভিবাসীরা দখলদারিত্বের উন্মত্ততায় ফেটে পড়ে। অনেক পার্বত্য আদিবাসী জমিবিতাড়িত হয়,
৯৮.৫ % সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্বত্য আদিবাসীরা হয়ে পড়ে ৪৮% এবং ১.৫% বাংলাদেশীরা হয়ে পড়ে
৫২%। এভাবে জিয়া আমলে পার্বত্য আদিবাসীদের এথনিক ক্লিনজিং চলে। জিয়া আমলেই
১৯৭৭ সালে জনসংহতি কমিটি অন্যায় অত্যাচার সহ্য করতে করতে আর না পেরে তাদের প্রথম
আক্রমণ চালায় আর্মি কনভয়ের ওপর। পার্বত্য আদিবাসী প্রশ্নে দোষ পাকিস্তান সরকারের, দোষ
আওয়ামী লীগ সরকারের, দোষ জিয়া সরকারের। সবচেয়ে বেশি দোষ পাকিস্তান এবং জিয়া
সরকারের কেননা বঙ্গবন্ধু নিজে তাদের স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বার বিরোধী হলেও তাদের ওপর
দমনপীড়ন নীতি প্রয়োগ করেননি যার কারণে তারা আমাদের ওপর হামলাও করেনি, দমনপীড়ন
নীতি শুরু হয় জিয়া আমলে, যার কারণে প্রথম হামলাও হয় জিয়া আমলে। ভারত এই ব্যাপারে
কোন ভূমিকায় রাখেনি, পার্বত্য আদিবাসীরা ত্রিপুরায় পালিয়ে যায় কিন্তু সেখানে ভারত সরকারের
শাসন তেমন চলেনা অবস্থানগত জটিলতার কারণে, আর পার্বত্য আদিবাসীরা নিজেরাই নিজেদের
অর্থে অস্ত্রশস্ত্র কেনে, ভারত সরকার তাদের অস্ত্র বা ট্রেনিং কোনটাই দেয়নি, এগুলো মিথ্যে
অপপ্রচার এবং এগুলোর সপক্ষে কোন প্রমাণ কেউ হাজির করতে পারবেনা। এগুলো বিএনপিও
জামাত পন্থীদের প্রোপাগান্ডামূলক দাবী।

খাজা বাবাঃ আমাদের সুরমা এবং কুশিয়ারা নদীর উজানে যৌথ নদী বরাকের উপর টিপাইমুখ
এবং ফুলের তলে বাঁধ দিয়ে সম্পূর্ণ একতরফা এবং অন্যায় ভাবে ভারত যে পানি সরিয়ে নেওয়ার
জন্য কাজ করছে- সেটিকে আপনি কি একটি বন্ধু রাষ্ট্রের প্রতি আরেকটি বন্ধু রাষ্ট্রের আচরন মনে
করেন?

ডঃ মুশফিকঃ টিপাইমুখ ভারতের মিজোরামে অবস্থিত, এটি বাংলাদেশের কোন এলাকা নয়। তাই
ভারতের নিশ্চিতভাবেই তাদের এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করার অধিকার রয়েছে, আন্তর্জাতিক নদী
আইনে কোথাও এমন কোন ধারা নেই যা ভারতকে এই বাঁধ নির্মাণ থেকে প্রতিহত করতে পারে।
তাই আইনের দৃষ্টিতে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে আইনগত কোন বাধা নেই। এখন প্রশ্ন হলো,
টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ করা হলে, তাতে বাংলাদেশের দুটি নদীর নাব্যতা হ্রাস পাবে যা এদেশের
কৃষিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তাই এটি হয়ে গেছে একটি হিউম্যানিটারিয়ান কনসার্ন। আবার
এটাও তো ঠিক যে, পানির ধর্ম সর্বদা উচ্চ থেকে নিম্ন স্থানের দিকে প্রবাহিত হওয়া, অর্থাৎ, বরাক
নদীর পানি আর বরাক নদীতে থাকেনা, প্রবাহিত হয় বাংলাদেশে সুরমা ও মেঘনা নদীর ধারা
হিসেবে। ফলে বাংলাদেশী কৃষকসমাজ পর্যাপ্ত পানি পেলেও মিজোরামের কৃষকসমাজ পর্যাপ্ত
পানি পায়না, ফলে একতরফাভাবে পানিপ্রাপ্তির পূর্ণ সুবিধা তোলে বাংলাদেশ আর মিজোরাম হয়ে
থাকে খরাপূর্ণ এলাকা। বন্যার সময় ভারত এবং বাংলাদেশ দুইদেশেরই সমস্যা হয়। সুতরাং,
সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত পন্থা হলো এমন একটি পন্থা অবলম্বন করা যাতে বাংলাদেশ ও ভারত
দুইদেশের স্বার্থই রক্ষিত হয়। সেক্ষেত্রে ভারত যদি টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করে (যেহেতু আইনগত
কোন বাধা নেই) এবং বাংলাদেশ সরকার যদি তাদের সাথে দক্ষ কূটনীতির মাধ্যমে এমন একটি
চুক্তি করিয়ে নেয় যে, যে কোন সময়ে বাংলাদেশকে নির্ধারিত পরিমাণ পানি দিতে ভারত সরকার
বাধ্য থাকবে এবং এই চুক্তির লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক আদালতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত
হবে, তাহলে দুটি দেশের স্বার্থই সমুন্নত থাকে।

খাজা বাবাঃ আমাদের-কে তিনবিঘা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের কাছ থেকে ভারত
বেরুবাড়ি নিয়ে গেলো কিন্তু কোন দিনই আর তিনবিঘা দিলো না- এটাকে আপনি কি ধরনের
বন্ধুত্বের নিদর্শন বলে মনে করেন?
ডঃ মুশফিকঃ একেবারেই অসত্য অভিযোগ। তিনবিঘা করিডোর জুন ২৬, ১৯৯২ সালে
বাংলাদেশ সরকারের কাছে অফিশিয়ালি ট্রান্সফার করা হয় This Corridor was formally
transferred to Bangladesh on June 26, 1992
(http://en.wikipedia.org/wiki/Tin_Bigha_Corridor) বেরুবাড়ি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ
এলাকা এবং তা পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির সীমারেখার সঙ্গেই অধিকতর সম্পর্কিত হওয়ায় তা
যুক্তিযুক্তভাবেই ভারতের প্রাপ্য। দহগ্রাম এবং আঙ্গরপোতা যে বাংলাদেশ পেল, সেই ব্যাপারটি
আপনি গোপন করে গেলেন। বাংলাদেশ ৩ টি এলাকা পেল, ভারত পেল ১ টি ।

খাজা বাবাঃ ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে বিশাল বানিজ্য ঘাটতি- সেটা কমাতে ভারত কোন
দিনই রাজি হয় নি- এটা কি আপনার কাছে একটি বন্ধুত্বের লক্ষন?

ডঃ মুশফিকঃ বন্ধুত্ব মানে নিজের সবকিছু বেচে দিয়ে নিঃস্ব হয়ে বন্ধুকে সাহায্য করা নয়। ভারত
তার নিজগুণে, পরিশ্রমে এবং দক্ষ পরিকল্পনার মাধ্যমে তার বানিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক
অবস্থানকে সুসংহত করেছে, বাংলাদেশ তা আলস্য এবং যথাযথ সুনিপুণ পরিকল্পনা এবং
উদ্যোগ গ্রহণের অভাবে করতে পারেনি। যেই বাংলাদেশই ১৯৭৫ এর পরে ভারত বিরোধিতায়
রত হয়েছে, একবারো ভেবে দেখেনি ভারত ছাড়া বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভবই হতো না, সেই ক্ষুব্ধ
ভারত কেন অকৃতজ্ঞ বাংলাদেশকে ছাড় দিয়ে কথা বলবে ?

খাজা বাবাঃ আমাদের দেশের উপর দিয়ে আমাদের খরচে তৈরি করা যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার
করে বিনা শুল্কে ভারত ট্রানজিট সুবিধা আদায় করে নিয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ-কে নেপাল এবং
ভুটানের সাথে সেই রকম কোন ট্রানজিট দিচ্ছে না- বলুন, এটাই কি বাংলাদেশের প্রতি ভারতের
বন্ধুত্বের নিদর্শন?

ডঃ মুশফিকঃ ট্রানজিট সুবিধার বিনিময়ে ভারত বাংলাদেশকে ৭০০০ কোটি টাকা/১০০ কোটি
মার্কিন ডলার ঋণসুবিধা দিচ্ছে, তাও মাত্র ১.৭ % হার সুদে ।ভারত তিন লাখ টন চাল এবং ২
লাখ টন গম বাংলাদেশে রফতানি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর আগে বাংলাদেশে ঘুর্নিঝড়
সিডরের আঘাত হানার পর বাংলাদেশকে ৫ লাখ টন খাদ্য শস্য রফতানি করেছিল ভারত। যদিও
ভারত থেকে কোন দেশে খাদ্য শস্য রফতানি নিষিদ্ধ।পণ্য পরিবহনে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয়
রাজ্যগুলোকে ট্রানজিট দিলে বছরে বাংলাদেশ আয় করবে ৭০০/৮০০ কোটি টাকা। এছাড়া
২০১২ সালের মধ্যে ভারতের কাছ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।ভারত এত
সুবিধা কাউকে কখনো দেয়নি, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু বলেই ভারত এত সুবিধা বাংলাদেশকে
দিচ্ছে। দেখুনঃ http://www.ittefaq.com.bd/content/2010/08/15/news0675.htm
খাজা বাবাঃ বিডিআর হত্যাকান্ড, আপনার ভাষায় ’কতিপয় জওয়ান’ এই হত্যাকান্ডটি
ঘটিয়েছে। আপনি একজন শিক্ষিত মানুষ, আপনার বিবেক এবং বুদ্ধিতে কি এই মনে হয় যে,
বিডিআর-এর কতিপয় জওয়ান এই রকম সুপরিকল্পিত ভাবে তাদের নিজেদের এতগুলো
সিনিয়র অফিসারকে এক সাথে মেরে ফেলতে করতে পারে? পৃথিবীর ইতিহাসে ’কতিপয়
সাধারন সৈনিক’-দের দ্বারা এতগুলো সিনিয়র অফিসার একসাথে মেরে ফেলার আর একটি
উদাহরন কি দেখাতে পারবেন?

ডঃ মুশফিকঃ বিডিআরে কেন বাংলাদেশ আর্মির লোকজন বড় বড় পোস্টে থাকবে ? বিডিআর


এবং বাংলাদেশ আর্মি দুটো আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান, তাদের ভিন্ন ভিন্ন সেটাপ বা ব্যবস্থাপনা
থাকবে, আর্মির কর্মকর্তারা কেন বিডিআরের মহাপরিচালক এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হবে ?
এগুলোই তো অন্যায়, আর্মি থেকে আসা এই সিনিয়র কর্মকর্তাগণ বিডিআরের সাধারণ
কর্মচারীদের উপর অন্যায় অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে এবং বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে বিধায়
বিডিআর ক্ষেপে উঠে এই বিদ্রোহটি করেছিল। এমনি এমনি কেউ ক্ষেপেনা, অত্যাচার নির্যাতন
হলেই, বৈষম্যমূলক আচরণ হলেই মানুষ ক্ষেপে। সিনিয়র কর্মকর্তাদের কোন কাজ নেই, তারা
বসে বসে খায় দায় আর হম্বিতম্বি ছাড়ে, অর্ডার দিয়েই খালাস হয়। আর্মিরা দেশের জন্য বলতে
গেলে কিছুই করেনা, তারা ১২ মাস খায় দায়, ফুর্তি করে, লং ড্রাইভে যায়, গলফ খেলে, টেনিস
খেলে ইত্যাদি। বিডিআরের ছাপোষা কর্মচারীদের বছরের পর বছর অমানুষিক খাটাখাটুনি করতে
হয়। বর্ডারে সারাবছর দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। যুদ্ধ এবং এপিডেমিক জাতীয় বিষয় ছাড়া সাড়া বছর
আর্মিদের কিছুই করতে হয়না, আর যুদ্ধ বাংলাদেশে লাগেও না, অর্থাৎ শুধু ত্রাণ কর্মকাণ্ডে
আর্মিদের কিছু ভূমিকা রয়েছে, বাকি বিষয়ে নেই। আর্মিরা অসংস্কৃত, পড়াশোনায় বিদ্যাবুদ্ধিতে
অষ্টরম্ভা, এদের মত স্বৈরাচারী এবং নারীলোভী যৌনলোভী লোকজন অন্য পেশায় দেখা যায়না !

খাজা বাবাঃ আপনি বিডিআর হত্যাকান্ড ’রক্তপাতবিহিন’ (!!!!!!!) ভাবে ম্যানেজ করার জন্য শেখ
হাসিনার প্রশংসা করেছেন। শেখ হাসিনার অহিংস মনোভাবের জন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন, মহাত্মা
গান্ধী’র অহিংস নীতির সাথে শেখ হাসিনার ’অহিংস নীতি’র তুলনা করেছেন।

ডঃ মুশফিকঃ খুনের বদলে খুন কোন গ্রহণযোগ্য উপায় নয়, যদি কেউ অন্যায় করে থাকে,
তাহলে তার জন্য বিচারব্যবস্থা রয়েছে, শেখ হাসিনা বিচারব্যবস্থা তথা আইনের শাসনের প্রতি
শ্রদ্ধাশীল বলেই রেডি হয়ে থাকা আর্মিদের দিয়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ পরিচালিত হতে দেননি। এতে
সংঘাতই বাড়ে, দেশের কোন উপকার হয়না। আর্মিদেরকে সেসময় না রুখলে আর্মিরা অজস্র
বিডিআর কর্মচারীদের নৃশংসভাবে হত্যা করতো বিডিআরদের চেয়েও আরো নৃশংসভাবে কেননা
তাদের কাছে সেরকম অস্ত্র এবং শক্তি ছিল, বিডিআরের কর্মচারীরা আর্মি বড় বড় অফিসারদের
মত দুর্নীতিবাজ এবং খেয়ে বসে ঘুমিয়ে আয়েশি জীবনযাপন করে দিনাতিপাত করার মত লোক
ছিলোনা । শেখ হাসিনা দেশকে নিশ্চিতভাবেই বিডিআর বনাম আর্মির মত একটি ভয়াবহ যুদ্ধ
পরিস্থিতির হাত থেকে দেশকে বাঁচিয়েছেন । শেখ হাসিনা চাইলেই পারতেন, নিজের পিতার
হত্যাকারীদের এমনিতেই শাস্তি দিতে, কিন্তু তিনি আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই সংযত
থেকে বিচারবিভাগের কাছে বিচারের দায়িত্ব সঁপে দিয়েছিলেন। তাদের বিচার আইনসম্মতভাবে
করেছেন।

খাজা বাবাঃ (অহিংস নীতির নমুনা দেখুনঃ http://www.youtube.com/watch?


v=W9pfPeKONYY)

ডঃ মুশফিকঃ ভিডিওটিতে অনেক ইঞ্জিনিয়ারিং করা হয়েছে।শুধু আমি নই, ইউটিউব ভিডিওর
ইউজাররাও একই মত দিয়েছেন। আর জামাতের মত রাজাকার পাকিস্তানপন্থীদের জন্য আপনার
এত সহানুভূতি কেন ? আপনি রাজাকার না হলেও রাজাকারদের সমর্থক, এটা পরিষ্কার। মতিউর
রহমান নিজামীর মত শীর্ষ রাজাকার এবং তাদের সমর্থকদের তো আমাদের দেশের দেশপ্রেমিক
নিরপেক্ষ জনতা পেটাতে চাইবেই, কেননা এই মতিউর রহমান নিজামী ১৯৭১ সালে নির্বিচারে
বাঙালি হত্যা করেছে,তাদের সমর্থকেরাও একই মনোভাবাপন্ন হবে, এতে আশ্চর্য কি ? ২০০১-
২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি জামাত জোট যে সীমাহীন দুর্নীতি করে গেছে, তাতে নিরপেক্ষ জনতা
আওয়ামী লীগের প্রতি ঝুঁকেছিল,এদের অনেকেই আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলোনা,কিন্তু তারাও
রাজপথে নেমে এসেছিল, কেননা ২০০১-২০০৬ এর নিকৃষ্টতম শাসনব্যবস্থার সীমাহীন দুর্নীতিতে
তাদের নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিল, তারই ক্ষুব্ধ বহিঃপ্রকাশ বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার দিনে জনতার
নজীরবিহীন গণজোয়ার,নৌকা প্রতীকধারী যুবকের ছবি দেখা গেছে ১-২ বার, তাতে সে কোন
আক্রমণের সঙ্গে জড়িত ছিলোনা, আর যারা আক্রমণের সঙ্গে জড়িত ছিল, তারা যে আওয়ামী
লীগ তারও প্রমাণ নেই, তাদের গায়ে কি আওয়ামী সীল দেওয়া ছিল ? এরা যে বিএনপি জামাত
নয়, তারই বা প্রমাণ কি ? আবার বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সংবাদে দেখা যায়, আক্রমণকারীরা
বিএনপি জামাতের কর্মী ছিল, আরটিভির সংবাদে প্রচারিত হয় যে,আওয়ামী কর্মী নিহত,
সেটাকেও ভিডিওতে জামাত শিবিরের কর্মী বলে প্রচার করার চেষ্টা করা হয়, বলা হয় মৃতের
পিতার মুখ দেখে কি মনে হয়, তার ছেলে নিহত হয়েছে ? মুখ দেখে কিছুই প্রমাণ হয়না, চরম
খারাপ মানুষের থাকতে পারে সুন্দর একটি চেহারা, চরম ভালো মানুষ দেখতে হতে পারে
কুৎসিত আর কথায় বলে “ অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর” – মৃতের বাবা যে অধিক
শোকে পাথর নয়, সেটাই বা জামাতপন্থী ভিডিও ইঞ্জিনিয়ার জানলো কি করে ? ভিডিও
কমেন্টারের ভাষা শুনেও স্পষ্ট হয়, এগুলো তাদের রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডামূলক ভিডিও। এই
ভিডিওগুলো সত্য হলে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিএনপি জামাতকেই ভোট দিতো, ২০০৮ সালের
নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৮ সিট পেয়ে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হতো না।

খাজা বাবাঃ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’র বেঁচে থাকা অফিসার-দের জিজ্ঞেস করে দেখুন- ওরা শেখ
হাসিনার এই 'অহিংস নীতি' সম্পর্কে কি বলেন! (http://www.youtube.com/watch?
v=X4B2qv4oOQA).

ডঃ মুশফিকঃ আর্মিরা বাংলাদেশে কবে ভালো কিছু করেছে ? বঙ্গবন্ধুর খুনিরা কতিপয় বিপথগামী
আর্মি, জিয়াউর রহমানের হাত অজস্র সৈনিকদের রক্তে রঞ্জিত, যেই কর্নেল তাহের তাকে বাঁচালো
এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করলো, সেই তাহেরকেই সে ফাঁসি দিয়ে তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা
করলো, এরশাদের মত লোভী কুমির ১০ বছর স্বৈরশাসনের মাধ্যমে অজস্র জনমানুষের রক্তে
নিজের হাত রঞ্জিত করলো, এরশাদকে আওয়ামী লীগের অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ
করেনা,কিন্তু দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে বিএনপি জামাতের মত দেশবিরোধী শত্রু ও
পাকিস্তানপন্থী দল থেকে দেশকে বাঁচাতে এরশাদকে ব্যবহার করা হয়।বিএনপিও এরশাদকে
দলে টানতে চায়, আর্মিরা সুযোগসন্ধানী, দেশের মানুষ তাদের পছন্দ করেনা, তারা নিজেদেরকে
ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য হাজারটি মিথ্যাচার করে বেড়ায়।

খাজা বাবাঃ হিলারী ক্লিনটন কি মনে করে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেন নি, সেটা আপনি
জানলেন কি ভাবে? আপনার বক্তব্যের স্বপক্ষে আপনার অনুমান ছাড়া আর কোন রেফারেন্স
আছে কি?

ডঃ মুশফিকঃ খালেদা জিয়ার বিশ্বভ্রমণ এবং বিদেশীদের কাছে দেশ সম্পর্কে শিশুর মত নালিশ
তথা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার ওপর রচিত ২ টি আর্টিকেল দেখুন, সবকিছু পানির মত পরিষ্কার
হয়ে যাবেঃ

http://blog.priyo.com/saifullah-mahmud-dulal/2011/06/02/2889.html এবং

http://www.canadabdnews.com/index.php?
option=com_content&view=article&id=532:2011-05-28-13-28-23

খাজা বাবাঃ বিডিআর হত্যাকান্ড নিয়ে আপনাকে এই আলোচনায় আগেও একবার প্রশ্ন
করেছিলাম; আপনি সেই প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে আমাকে গালিগালাজ করেছেন। আপনার
’ফেলানী হত্যাকান্ডের জন্য বাংলাদেশিরাই দায়ী, ভারত নয়’ শিরোনামের কমেন্টেও আপনি
আমি সহ বিভিন্ন ব্লগার-এর সম্পর্কে খারাপ ভাষায় সুদীর্ঘ মন্তব্য করেছেন। একই মন্তব্যে আপনি
আবার এও লিখেছেন, "গালাগালি সবাই দেয়না, দেয় কতিপয় লোকজন এবং দেখা যাচ্ছে,
বিএনপি সমর্থিত লোকজন গালাগালি এবং হুমকি প্রদানে বিশেষ পারদর্শী ।"

ডঃ মুশফিকঃ আপনি এবং আপনার সাঙ্গোপাঙ্গ গাজা বাবা অমুক বাবা তমুক বাবা, জোকার
সকলে মিলে আমাকে প্রথমে গালাগালি করেছেন বলেই আমি সেগুলোর প্রত্যুত্তর দিয়েছিলাম,
কিন্তু তাও সেগুলো আপনাদের গালিগালাজের মত যৌনমূলক গালিগালাজ ছিলোনা, আপনি এই
পোস্টে যে ওয়াচডগকে উদ্দেশ্য করে আমার সম্পর্কে সবার আগে নোংরা কথা বলেছেন, তার
প্রমাণও টাইমসহ একদম প্রথম দিকের পেজে উল্লেখ রয়েছে। আপনারাই সূচনাকারী, আমি নই।
ফেলানী ইস্যু নিয়ে আমার একটি আর্টিকেল রয়েছে,পড়ে নেবেন, কেন ফেলানীরা মারা যায়, কেন
বাংলাদেশীরাই অবৈধভাবে বর্ডার ক্রস করে ! আর আমি ভদ্রভাষায় কমেন্ট করলেও আপনাদের
দোসর আইসিহট, রবিন মজুমদার, উড়ালপঙ্খি, এমডিবিডি কথায় কথায় যেভাবে গালাগালি
করে, তার প্রমাণ প্রিয় ব্লগেই দৃশ্যমান । তাই বিএনপি সমর্থিত লোকজন গালাগালি ও হুমকি
প্রদানে বিশেষ পারদর্শী এতে কোন সন্দেহই নেই।

খাজা বাবাঃ নিজে একজন বাংলাদেশী হয়ে আপনার শিরোনামে বাংলাদেশী বানান ভুল করে
বাংলাদেশি লিখেছেন। বলুন, পাঠক-দের কাছ থেকে এবার আপনার সম্পর্কে আপনি কি মন্তব্য
আশা করেন?

ডঃ মুশফিকঃ বাংলাদেশী, বাংলাদেশি, বাঙলাদেশি, বাঙলাদেশী প্রত্যেকটি বানানই সঠিক,


বাঙলা অভিধানগুলোতে চেক করে দেখুন।

You might also like